Home Blog Page 138

শিবানী পীঠ

আজ কলকাতার কাছেই বারুইপুরে অবস্থিত একটি সুন্দর এবং প্রসিদ্ধ কালী মন্দিরের কথা আপনাদের বলবো|আজকের পর্বে শিবানী পিঠ কালী মন্দির|

দক্ষিণ ২৪ পরগণার বারুইপুরে অবস্থিত শিবানী পীঠ মন্দিরটি সাধারণ মানুষের কাছে অতি পরিচিত। ভারী সুন্দর এই মন্দিরের পরিবেশটা ।ভট্টাচার্য্য পরিবারের এই মন্দিরটি স্থাপিত হয়েছিল ১৯৬৬ সালের কালিপূজার দিন|

শিবানী পীঠ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শ্রী দূর্গাদাস ভট্টাচার্য্য মহাশয়।শিবানী পীঠ হল দেবী শিবানীর মন্দির।দেবী শিবানী মা কালিরই একটি অংশ।খুবই জাগ্রত মন্দির বলে প্রচুর ভক্ত এখানে আসেন তাদের মনষ্কামনা পূরণের উদ্দেশ্যে।বিশেষ বিশেষ দিনে খুবই ভীড় হয় এখানে।শণি,মঙ্গলবার ও অমাবশ্যার দিনে এখানে প্রচুর ভক্ত সমাগম ঘটে

মন্দিরের ভেতরে প্রতিষ্ঠাতা শ্রী দুর্গাদাস ভট্টাচার্যর বেশ কয়েকটি মূর্তি বর্তমান। এখানে নাট মন্দিরের ভেতরে অনেক মুণি ঋষিদের মূর্তি বর্তমান।নাটমন্দিরে বসে একমনে মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকলে মনে প্রশস্তি পাওয়া যায়।

সুপ্রাচীন ইতিহাস বা অলৌকিক ঘটনাবলীর উল্লেখ সেই ভাবে না থাকলেও এই শিবানী পীঠ স্থানীয় মানুষের কাছে এক বিশ্বাস ও ভরসার স্থান|আপনারাও চাইলে যেকোনো দিন ঘুরে আসতে পারেন শিবানী পীঠ থেকে|

আজ শেষ করলাম তবে আবার ফিরবো আর জ্যোতিষ সংক্রান্ত কাজে আমাকে সর্বদা পাবেন আমাদের পাশে, চেম্বারে ও অনলাইনে, শুধু ফোন করতে হবে উল্লেখিত নাম্বারে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

হাজার হাত কালী

মাঘী পূর্ণিমার ব্যস্ততা কাটিয়ে আবার ফিরে এলাম কলকাতার কালীর একটি নতুন পর্ব নিয়ে|কিছুদিন পরই মৌনী অমাবস্যা তারপর রটন্তী অমাবস্যা, অর্থাৎ সব মিলিয়ে শক্তি সাধনার আদর্শ সময়|কলকাতার কিছু বিখ্যাত কালী মন্দিরের গল্প আপনাদের আগেই বলেছি, জেলার কয়েকটি প্রসিদ্ধ ও প্রাচীন কালী মন্দিরে কথাও বলেছি, এই পরম্পরা কে আরেকটু এগিয়ে নিয়ে যাবো আজ|আজকের পর্বে হাওড়ায় অবস্থিত হাজার হাত কালীর মন্দির|

দেবী কালীর এই রূপটি খুব একটা জনপ্রিয় বা পরিচিত রুপ নয়, এই রূপ খুব কম কালী মন্দিরেই রয়েছে, তবে শাস্ত্রে এই রূপের উল্লেখ রয়েছে|
চণ্ডীপুরাণের ২২তম অধ্যায়ে কালীর এই রূপের কথা উল্লেখ আছে|চণ্ডীপুরাণ অনুযায়ী, অসুর বধের সময় দেবী দুর্গা অনেক রূপ ধারন করেছিলেন। তার মধ্যে অন্যতম হাজার হাতের রূপ। কাত্যায়নী, মহামায়ার পরেই অসুর নিধন করতে আসেন হাজার হাত রূপী মা কালী|দেবীর এই রূপই দেখা যায় হাওড়ার শিব পুরের এই বিশেষ মন্দিরে|

মন্দিরের প্রতিষ্টা নিয়েও একটি লোককথা প্রচলিত আছে, শোনা যায় স্থানীয় মুখোপাধ্য়ায় বাড়ির ছেলে তান্ত্রিক আশুতোষ মুখোপাধ্য়ায় মা চণ্ডীর স্বপ্না দেশে কালীর এই রূপ দেখতে পান এবং মন্দির প্রতিষ্ঠা করে দেবীর এই রূপের পুজো করতে ব্যাকুল হয়ে ওঠেন|কিন্তু এই মন্দির নির্মাণের বিপুল ব্যয় ভার বহন করার সাধ্য ছিলোনা তান্ত্রিক আশুতোষ মুখোপাধ্যায় বা তার পরিবারের|তবে স্বয়ং দেবী যার সহায় তার আর চিন্তা কি! আশুতোষ মুখোপাধ্য়ায়ের এই ইচ্ছাপূরণের জন্য এগিয়ে আসেন স্থানীয় ধনী হালদার পরিবার এবং তাদের চেষ্টায় 1870 সালে স্থাপিত হয় এই মন্দির এবং দেবীর এই বিশেষ রূপ এখানে প্রতিষ্টিত হয়|

এই কালী মন্দির দক্ষিণ ভারতীয়দের মধ্যে বিশেষ ভাবে জনপ্রিয়, তার একটা কারন আছে, একটা ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়, শোনা যায়, প্রায় ৬০ বছর আগে শ্রাবণ মাসের শুক্লপক্ষের এক শুক্রবার দক্ষিণ ভারতের বাসিন্দা জনৈক কৃষ্ণা সুব্রহ্মণ্যম এই মন্দিরে এসেছিলেন। তখন তিনি দৃষ্টিহীন। হাজার-হাত কালীর কাছে দৃষ্টি ফিরিয়ে দেওয়ার প্রার্থনা করেন|অলৌকিক ভাবে এক বছরের মধ্যে তিনি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পান। তার পর থেকে তিনি মায়ের মাহাত্ম্য প্রচার শুরু করেন দক্ষিণ ভারত জুড়ে। এখন প্রচুর দক্ষিণ ভারতীয় মানুষ শ্রাবণে শুক্লপক্ষের শুক্রবারে পুজো দেন এই হাজার হাত কালীর মন্দিরে|

এই রূপে দেবী নীল বর্ণা, বাহন সিংহের উপর তাঁর ডান পা|এখানে দেবী পূজিত হন তন্ত্র মতে তবে বলী প্রথা এখানে নেই এবং প্রাচীন প্রথা মেনে আজ ও মুখোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যরা এখানে পুজো করে আসছেন|দৈনন্দিন পুজোর পাশাপাশি বুদ্ধ পূর্ণিমা ও দীপাবলিতে এখানে বিশেষ পুজো হয় ও সেই উপলক্ষে ব্যাপক জনসমাগম হয়|

আজ এখানেই শেষ করছি, আবার ফিরবো পরের পর্বে নতুন কোনো কালী মন্দিরের কথা নিয়ে, যারা আগামী গুরুত্বপূর্ণ তিথি গুলিতে জ্যোতিষ প্রতিকারের কথা ভাবছেন দ্বিধা না করে যোগাযোগ করবেন আমার সাথে এবং যারা ভাগ্যবিচার ও জ্যোতিষ পরামর্শর জন্যে সাক্ষাৎ চান, উল্লেখিত নাম্বারে ফোন করে জেনে নেবেন আমাকে কবে কখন ও কোথায় পাবেন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

নবদ্বীপের পোড়ামা ভবানীর মন্দির

বৈষ্ণব তীর্থ ক্ষেত্র নবদ্বীপ এ রয়েছে এক জাগ্রত কালী মন্দির আজ বলবো এই কালী মন্দির নিয়ে একটি বিশেষ পর্বে,

নবদ্বীপ শহরের মা ভবতারিণী মন্দির প্রায় দ্বিশতাধিক প্রাচীন একটি কালী মন্দির|

এই মন্দিরের ইতিহাস বেশ প্রাচীন|পঞ্চদশ শতাব্দীতে বৃহদ্রথ নামে এক তন্ত্রসাধক ও সিদ্ধ সন্ন্যাসী বাস করতেন এই নবদ্বীপে। তিনি একসময় এখানকার এক বোনের মধ্যে দেবী কালীকে স্থাপন করেন একটি ঘটে। সেই সময়ে নবদ্বীপের বিখ্যাত পন্ডিত ছিলেন বাসুদেব সার্বভৌম যাঁর পিতামহ ছিলেন বৃহদ্রথের মন্ত্রশিষ্য। তিনি বন থেকে দেবীর ঘটটি এনে নবদ্বীপ শহরের এক বৃক্ষ তলে দক্ষিণাকালীর ঘটটি স্থাপন করেন। পরবর্তী সময়ে দেবীর সেবার ব্যবস্থা করলেন নদীয়ার রাজবংশ|

দেবী পোড়ামা ভবতারিণী নামে খ্যাত,এই নামের সাথেও জরিয়ে আছে একটি অদ্ভুত গল্প, শোনা যায় , বাসুদেব সার্বভৌম প্রতিষ্ঠিত সেই মা কালিকা স্বরূপিনী ঘটে নিত্য পূজা ও ভক্ত সমাগম ঘটত বৃক্ষ তলে। হঠাৎ একদিন প্রচন্ড অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেল বৃক্ষটি, শোনা যায় আগুন লেগেছিল বাজ পড়ে। সেই থেকে দেবী হয়ে গেলেন”পোড়ামা ভবানী”।

পোড়ামা রূপে পূজিতা এই দেবী বিগ্রহটি এক অনন্য সাধারণ রূপ। বিশাল ফালা-ফালা চোখ ও লকলকে জিভ হলেও মা বসন পরিহিতা এবং তাঁর হাতে নেই খাঁড়া। মা বাবু হয়ে বসে আছেন শিবের বুকের উপর|

একাধিক বার মন্দির সংস্কার হয়েছে , কিন্তু প্রায় দুশো বছরের প্রাচীন মন্দির কে ততোধিক প্রাচীন এক বট গাছের ঝুরি আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে। কিন্তু ওই বটগাছ নবদ্বীপের গ্রাম্য দেবী পোড়ামা বলে কয়েকশো বছর ধরে পূজিত হয়ে আসছে। ফলে বৃক্ষ দেবতারূপী ওই বট গাছ কেটে মন্দির সংস্কারের কাজ করা কখনোই সম্ভব হয়নি|

আগামী সময়ে নবদ্বীপ ভ্রমণে গেলে , এই বিশেষ মন্দির দর্শন করতে ভুলবেন না|আর বিশেষ তিথিতে গেলে বিশেষ পূজার সাক্ষী থাকবেন|
শেষ করার আগে জানিয়ে রাখি আবার আগের মতো চেম্বারে বসা, শুরু হয়েছে, অনলাইনের পাশাপাশি যারা জ্যোতিষ সংক্রান্ত প্রয়োজনে চেম্বারে আসতে চান, ফোন করুন উল্লেখিত নাম্বারে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

পন্ডিতজিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা

স্যার, আপনার জন্য আমরা গর্বিত — আপনার জন্মদিনে শুভেচছা রইলো, সুস্থ্য থাকুন , ভালো থাকুন। আপনার অনুরাগীবৃন্দ ও Media Team

তারাপীঠ ভ্রমণ

এতক্ষনে নিশ্চই সবাই বুঝেই গেছেন কোন বিশেষ কারনে আমার এই ছুটি কাটানো বা স্বপরিবারে তীর্থ ভ্রমণ|হ্যাঁ আজ তেইশে জানুয়ারি আমার জন্মদিন|যারা ফোন করে, ম্যাসেজ করে বা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আমাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন তাদের জানাই অনেক ধন্যবাদ|আপনাদের ভালোবাসা, সমর্থন ও আশীর্বাদ আমার আগামী দিনের পথ চলা আরো সুগম করবে|

বিগত দুদিন ধরে বর্ধমান ও বীরভূমের বেশ কিছু উল্লেখ যোগ্য তীর্থ ক্ষেত্র দর্শন করেছি এবং সেই অভিজ্ঞতাও আপনাদের সাথে ছবি ও লেখার মাধ্যমে|আপনাদের তা বেশ ভালো লেগেছে বুঝতে পেরে স্বাভাবিক ভাবেই উৎসাহ বেড়ে গেছে কয়েক গুন|তাই আজ অর্থাৎ এই বারের ভ্রমণের শেষ দিনের ভ্রমণের অভিজ্ঞতাও আপনাদের সামনে তুলে ধরবো|

আজ এসে পৌঁছেছি বীরভূমের অন্যতম আকর্ষণ তারাপীঠে|বহু বার এসেছি তারাপীঠে, কাজে বা নিছক ঘুরতে বা মা তারার দর্শন লাভ করে ধন্য হতে|তবে যতবারই আসি নতুন করে রোমাঞ্চ অনুভব করি, মুগ্ধ হই|তারাপীঠ একা ধারে বাংলার তন্ত্র সাধনার প্রান কেন্দ্র, বশিষ্ঠমুনির সিদ্ধি লাভের স্থান আবার বামা খেপার লীলা ক্ষেত্র|এখানে আসা বা থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা নিয়ে তো আর নতুন কিছু বলার নেই তাই আজ নতুন করে বরং তারাপীঠের আধ্যাত্মিক তাৎপর্য ও ইতিহাস আপনাদের সাথে ভাগ করে নিই|

তন্ত্র সাধনায় তারাপীঠের গুরুত্ব অপরিসীম কারন
তন্ত্রে তারাকে বলা হয়েছে দ্বিতীয় মহাবিদ্যা|এই বিষয়ে আমি আগেই আলোচনা করেছি দশমহাবিদ্যা লেখনীর মাধ্যমে|তারাপীঠ শ্মশান তন্ত্র সাধনার এক উৎকৃষ্ট স্থান কারন এটি কোনো সাধারণ শ্মশান নয় এটি মহা শ্মশান এই মহাশ্মশানেই জীবন আর মৃত্যুর পটভূমি নিত্য রচনা করে চলেন দেবী তারা|প্রচলিত বিশ্বাস বলে তারাপীঠের মহাশ্মশানেও জ্যোতিরূপে বাস করেন দেবী|কিংবদন্তী অনুসারে দ্বারকা নদী মহাশক্তির উৎস। এই নদীজলে স্নান করলেই সিদ্ধিলাভের যোগ্যতা অর্জন করেন মানুষ। দূর হয় সব পাপ|আশ্চর্যজনক ভাবে এই নদী উত্তর মুখী|তারাপীঠের পঞ্চমুন্ডীর আসন ও জগৎ প্রসিদ্ধ এই পঞ্চমুণ্ডের আসন আলাদা। এখানে পাঁচটি মুণ্ড সাপের, ব্যাঙের, খরগোশের, শিয়ালের এবং মানুষের। এই আসনে বসেই বহু যুগ পূর্বে দেবীকে তুষ্ট করে তারাপীঠকে সিদ্ধপীঠে পরিণত করেছিলেন ঋষি বশিষ্ঠ পরবর্তীতে বামা ক্ষেপা|

মাতারার মুল প্রস্তর নির্মিত মূর্তি টি রয়েছে একটি ধাতব মূর্তির অভ্যন্তরে|এই মূর্তিটি ভীষণা চতুর্ভূজা, মুণ্ডমালাধারিণী এবং লোলজিহ্বা মূর্তি। এলোকেশী দেবীর মস্তকে রয়েছে একটি রৌপ্যমুকুট |বহির্মূর্তিটি সাধারণট শাড়ি-জড়ানো অবস্থায় গাঁদা ফুলের মালায় ঢাকা অবস্থায় থাকে। মূর্তির মাথার উপরে থাক একটি রূপোর ছাতা|প্রতিকৃতি বিগ্রহের নিচে গোলাকার বেদীতে দুটি রূপোর পাদপদ্ম থাকে|যারা তারা পীঠ মন্দির ও দেবীকে দর্শন করেছেন তারা জানেন উত্তরমুখী আটচালা মন্দিরটি লাল ইঁটে নির্মিত এবং মন্দিরের চূড়ায় একটি তামার পতাকাসহ ত্রিশূল ত্তিনটি পদ্ম ভেদ করে উঠেছে|প্রাচীন কালে বণিক জয় দত্তের তৈরি করে দেওয়া তারামায়ের মন্দিরটি আজ আর নেই। বর্তমানের মন্দিরটি ১২২৫ বঙ্গাব্দে তৈরি করান মল্লারপুরের জগন্নাথ রায়|যারা বিশ্বাস করেন তারাপীঠ একটি সিদ্ধ পীঠ তারা মনে করেন দেবী সতীর চোখের ঊর্ধ্বনেত্রের মণি অর্থাৎ তারা পড়ায় দ্বারকা নদীর পুব পাড়ের চণ্ডীপুর আজ তারাপীঠ|

তারাপীঠ সিদ্ধ পীঠ না কেবল মাত্র একটি জাগ্রত শক্তি পীঠ বা উপপীঠ এ নিয়ে বিতর্ক ও মতান্তর বহু যুগ ধরে চলে আসছে|কথিত আছে বশিষ্ট দেব সাধনা করতেন কামাখ্যায় কিন্তু কোনো কারনে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি কামাখ্যা ত্যাগ করেন ও বাংলার বীরভূমের এই বিশেষ স্থানে এসে পঞ্চমুন্ডীর আসন প্রতিষ্ঠা করে দেবী উগ্রতারার সাধনা শুরু করেন ও সিদ্ধি লাভ করেন|পরবর্তীতে ধীরে ধীরে এই স্থান মাহাত্ম লোক মুখে প্রচারিত হয় ও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে তারাপীঠ|

পরবর্তীতে আরেক মহাপুরুষের আবির্ভাব ঘটে এই মহা তীর্থে, তিনি সিদ্ধ পুরুষ বামা ক্ষেপা|বামা ক্ষেপাও তারাপীঠে পঞ্চমুন্ডীর আসনে বসে সিদ্ধি লাভ করেন ও দেবীর দর্শন লাভ করে ধন্য হন|সেই পরম্পরা চলেছে বহু যুগ ধরে একাধিক তান্ত্রিক সাধক ও মাতৃ সাধকের সাধনার প্রধান কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে তারাপীঠ|হয়ে উঠেছে দেশের আধ্যাত্মিক সাধনা ও বিশেষত তন্ত্র সাধনার অন্যতম প্রান কেন্দ্র|লাল মাটির দেশ বীরভূমে অবস্থিত তারাপীঠের পরিবেশ ও অতি মনোরম ও তন্ত্র সাধনার আদর্শ|রয়েছে মন্দির সংলগ্ন মহাশ্মশান ও অদূরেই অতি পবিত্র দ্বারকা নদী|
কিছু দুরে আটলা গ্রামে বামদেবের জন্মভিটেও একটি দর্শনীয় স্থান|

লক ডাউনে তিন মাস বন্ধ ছিলো তারাপীঠ মন্দির|লক ডাউন খোলার পর এই আমার প্রথম তারাপীঠ দর্শন তাই আনন্দ ও উৎসাহ ভাষায় প্রকাশ করা যায়|তবে ভাবলে একটু খারাপ লাগছে আবার ফিরে যেতে হবে কর্মব্যাস্ত জীবনে, আবার পেশাদার জ্যোতিষ চর্চা|সে যাই হোক কর্ম ও এক ধরণের সাধনা|কর্ম তো করে যেতে হবে|কাল থেকে আবার আপনারা আমার উল্লেখিত নাম্বারে যোগাযোগ করতে পারেন জ্যোতিষ সংক্রান্ত কাজ নিয়ে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

লাল মাটির দেশে

লাল মাটির দেশ, মানে বীরভূম আমার বরাবরই বেশ প্ৰিয় স্থান, বহু বার এসেছি পেশাগত কারনে তবে এবার নিছক ঘুরতে, স্বপরিবারে, ছুটির মেজাজে, বীরভূমের প্রতি আমার বিশেষ টানের একটি কারন অবশ্যই আধ্যাত্মিক কারন এই একটি ছোট্ট জেলায় রয়েছে বেশ কয়েকটি শক্তি পীঠ|

বিগত দিনে বর্ধমানের সর্বমঙ্গলা মায়ের মন্দির ও সাধক কমলা কান্তের মন্দির দর্শন করেছি আপনাদের সাথে সেই অপূর্ব অভিজ্ঞতা ভাগও করে নিয়েছি, আজ প্রথমে এলাম একান্ন পীঠের সর্ব শেষ পীঠ কঙ্কালী তলা দর্শনে|

পীঠ নির্ণয় তন্ত্র কঙ্কালী তলায় দেবীর কঙ্কাল পড়েছিলো তাই এই পীঠঠের নাম হয় কঙ্কালী তলা তবে ভরত চন্দ্রের অন্যদামঙ্গল এ আবার অন্য কথা বলা হচ্ছে,ভরত চন্দ্রের মতে এখানে দেবীর কাঁক বা কোমর পড়ে ছিলো,সেই থেকেই কঙ্কালী তলা|

মন্দিরের পাশেই এক রহস্য ময় কুন্ডর অবস্থান, প্রচলিত বিশ্বাস এই কুন্ডর জল কোনো দিনও শোকায় না আর এই কুন্ডর মধ্যেই আছে এক শীলা খন্ড বা জীবাশ্ম যা প্রকৃত পক্ষে দেবীর কাঁক বা কোমরের প্রস্তরীভূত রূপ, এই শীলা খন্ড কিছু কিছু বিশেষ বিশেষ তিথি তে তুলে এনে ভক্তিভরে পূজা করা হয় |

দেবী এখানে দেবগর্ভা রূপে পূজিতা হন,তার কোনো মূর্তি নেই, তিনি একটি পটে চিত্রিত |কিংবদন্তী অনুসারে কোনো এক অলৌকিক কারণে দেবীর মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয় নি, এবং এই ভাবেই দেবীর পূজা হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে|মন্দিরের পাশেই শিব একটি বিশেষ রূপে পূজিত, তার এই বিশেষ রূপ টির নাম “রুরু ” |

এরপরের গন্তব্য শক্তি পীঠ ফুল্লরা, দেবী ভাগবত পুরান অনুসারে দেবী সতীর খণ্ডিত ওষ্ঠের নিম্ন ভাগ পড়ে ছিলো যে স্থানে সেখানেই সৃষ্টি হয়েছে ফুল্লরা নামক শক্তি পিঠ টি |আশ্চর্যর অত্যন্ত প্রসিদ্ধ ও জনপ্রিয় এই মন্দিরে দেবীর কোনো বিগ্রহ নেই তার বদলে আছে এক রহস্যময় শিলা খন্ড যা দেবীর প্রতিভূ হিসেব পূজিতা হয়ে আসছেন যুগ যুগ ধরে|দেবীর আরেক নাম অট্টহাস |আর মন্দিরের পাশেই আছে এক বিরাট পুকুর, কিংবদন্তী যদি সত্যি হয় রাম যখন দূর্গা পূজা করে ছিলেন এই পুকুর থেকে হনুমান সংগ্রহ করে নিয়ে গিয়ে ছিলেন একশ আট টি পদ্ম |এই পুকুরের আরেকটি নাম দেবী দহ, কথিত আছে এই পুকুরের জল কখনো শোকায় না|

কিছু ইতিহাসকার মনে করেন, সুলতান গজনীর ভারত আক্রমণ এর সময়ে একদল নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ আশ্রয় নিতে আসেন বাংলার এই স্থানে তাদের মধ্যেই কেউ সাথে নিয়ে আসেন এই বিগ্রহ|পরে বর্মন রাজারা এই দেবীকে প্রতিষ্ঠিত করেন |প্রথম মন্দির তৈরা করান কৃষ্ণা নন্দ গিরি, বর্তমান মন্দির টি তৈরী করান যাদব লাল বন্দোপাধ্যায় |

শোনা যায় এক সময় মন্দির চূড়ায় শোভা পেতো স্বর্ণ কলস, কালের নিয়মে সেই জৌলুস হয়তো অনেকটাই ম্লান কিন্তু এই স্থানের আধ্যাত্মিক ও ধার্মীক গুরুত্ব কমে নি এতোটুকু

বোলপুরে এসে কোপাই নদীর কথা না বললেই নয়, এই কঙ্কালী তলার পাশ দিয়েই বয়ে গেছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্ৰিয় নদী কোপাই|শান্তি নিকেতনে থাকা কালীন রবীন্দ্রনাথ বলতেন, কোপাই আমার প্রতিবেশী|রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই নদীর বর্ণনায় লিখেছেন-

” আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকেবৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে”

এ কবিতা ছোটবেলায় আমরা প্রায় সবাই পড়েছি, এই কোপাই এর তীরে কিছুটা সময় কাটানো মনে এক অদ্ভুত প্রশান্তি এনে দেয়, আমি তা বেশ অনুভব করছি|

এরপরে কিছুটা নদীর গতি পথ ধরেই পৌঁছে যাবো সোনাঝুরির হাটে, সেই বিখ্যাত গ্রামীণ হাট যেখানে গেলে শোনা যায় বাউল গান আর পাওয়া যায় গ্রামের শিল্পী দের নিজে হাতে তৈরি রকমারি সব জিনিস… সে অভিজ্ঞতাও আপনাদের সাথে ভাগ করে নেবো যথা সময়ে|আপাতত এই টুকু থাক|

বুঝতেই পারছেন আপাতত একটু অবসর যাপন, তাই যারা জ্যোতিষী ভৃগুশ্রী জাতক কে খুঁজছেন বা যোগাযোগ করছেন, তারা তারা দুদিন পর থেকে আবার যোগাযোগ করতে পারেন যেমন টা করে থাকেন, আর ফোন করতে চাইলে পোস্টে উল্লেখিত নাম্বার টি ব্যবহার করবেন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

ভারতের সাধক – কালী সাধক কমলাকান্ত

ভারতের সাধকদের নিয়ে লেখা মানে এক গুরুদায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেয়া,কারন আমাদের দেশ আধ্যাত্বিক চর্চার পুন্য ভূমি, বহু মহান সাধক জন্মেছেন এই দেশে, কাকে রাখবো তালিকায় আর কাকে বাদ দেবো! তবে শুরু যখন করেছি এগিয়ে তো নিয়ে যেতে হবে,আজ লিখবো বাংলার এক মহান কালী সাধক কমলাকান্তের অলৌকিক জীবনের কথা|

এই লেখার জন্যে আজকের দিনটাই কেনো বেছে নিলাম তার ও একটি বিশেষ কারন আছে, আজ আমার জীবনের একটি বিশেষ দিন এবং আজ আমি ঘটনাচক্রে সাধক কমলাকান্তের সাধন ভূমি ও তার মন্দিরেই উপস্থিত|তাই ভাবলাম এটাই শ্রেষ্ঠ সময় এই মহান সাধক ও অলৌকিক জীবনের কথা আপনাদের সামনে তুলে ধরার জন্যে|

সাধক কমলাকান্তের সাধন ক্ষেত্র ছিলো বর্ধমান, তার নানান অলৌকিক কর্মকান্ড ও সাধনার সাথে জড়িয়ে আছে বর্ধমান রাজপরিবার ও তার সমসাময়িক রাজা তেজচাঁদের নাম|

কমলাকান্ত ছিলেন তন্ত্র সাধক তবে গান ছিলো তার সাধনার অন্যতম মাধ্যম, শ্যামা সংগীত ও তন্ত্র সাধনা এই দুই ছিলো কমলাকান্তের জীবনের প্রধান অঙ্গ|মহারাজ তেজ চাঁদ কমলাকান্তের গানে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে সভা পণ্ডিত করে বর্ধমান রাজবাড়িতে নিয়ে যান|পরবর্তীতে তেজ চাঁদ কমলাকান্তের তন্ত্রসাধনার কথা জানতে পারেন এবং রাজার উদ্যোগেই কমলাকান্তের সাধনার জন্য তৈরি হয় এই কালী মন্দির।

বাঁকা নদীর ধারে অবস্থিত পঞ্চমুন্ডির আসনে বসে তন্ত্র সাধনা করতেন সাধক কবি কমলাকান্ত আর গান গাইতেন প্রান খুলে|

কথিত আছে একবার অমাবস্যার রাতে রাজা তেজচাঁদকে পূর্ণিমার চাঁদ দেখিয়েছিলেন সাধক কমলাকান্ত|সাধকের অলৌকিক ক্ষমতার কথা জেনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছিলেন রাজা|

লোক মুখে শোনাযায় একবার মা কালীর মূর্তির প্রাণ রয়েছে দাবি করেছিলেন কমলাকান্ত|রাজা এই দাবীর স্বপক্ষে প্রমাণ চাইলে প্রতিমার পায়ে বেল কাঁটা ফুটিয়ে দেন কমলাকান্ত|রাজা দেখেন সেই ক্ষতস্থান থেকে রক্ত ঝরছে|এমনই ছিলো সাধক কমলাকান্তের অলৌকিক ব্যাক্তিত্ব|

কমলাকান্তের জীবনে ঘটে যাওয়া আরো অনেক অলৌকিক ঘটনার কথা জানা যায়, যার মধ্যে একটি কাহিনী বেশ জনপ্রিয়, শোনা যায় একবার
একদিন রাজা জানতে পারেন কাজকর্ম ভুলে সর্বক্ষণ মদ্যপান করছেন কমলাকান্ত। রাজা সেখানে পৌঁছে ক্ষোভ প্রকাশ করলে কমলাকান্ত কমণ্ডলু থেকে রাজার হাতে ঢেলে দেন সুরা|অবাক হয়ে রাজা দেখলেন এতো সুরা নয়, খাঁটি দুধ| কমলাকান্তের অলৌকিক ক্ষমতায় সুরা পরিণত হয়ে ছিলো দুধে|

এই মহান সাধকের মৃত্যুর সঙ্গেও জড়িয়ে আছে অলৌকিক ঘটনা|দেহত্যাগের সময় কমলাকান্তকে গঙ্গায় নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন রাজা। কমলাকান্ত যেতে চাননি। তারপরই দেখা যায় মাটি ভেদ করে উঠে জলের ধারা পড়ছে কমলাকান্তের মুখে|সেই স্থান বাঁধিয়ে কুয়ো তৈরি করা হয়|সেই অলৌকিক জলাধার আজও আছে|সেই কুয়োর জল আজও গঙ্গাজল হিসেবে কাজে লাগানো হয় এবং সেই জল ব্যবহার করা হয় পুজো, ভোগ রান্নার কাজে|

সাধক কমলাকান্তকে মৃত্যুর পর মন্দিরে সমাধিস্থ করা হয় এবং তাঁর সমাধির ওপরই রয়েছে মায়ের বেদি যেখানে প্রতিষ্ঠিত কষ্টি পাথরের কালী প্রতিমা|বিশেষ বিশেষ তিথিতে বিশেষ পূজার পাশাপাশি দীপান্বিতা কালীপুজোয় তিনদিন ধরে উৎসব চলে এখানে যা দেখতে আসেন দূরদূরান্তের মানুষ|আমি এলাম, দর্শন করলাম ও মুগ্ধ হলাম আপনারাও চাইলে ঘুরে আসতে পারেন|

আজকের পর্ব এখানেই শেষ করছি, আশা করি ভালো লাগলো|পড়তে থাকুন|সঙ্গে থাকুন আর যেকোনো জ্যোতিষ ও তন্ত্র সংক্রান্ত কাজের জন্যে নির্দ্বিধায় যোগাযোগ করুন উল্লেখিত নাম্বারে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|