Home Blog

মিত্র বাড়ির দূর্গাপুজো

মিত্র বাড়ির দূর্গাপুজো

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

বাংলার বিশেষ করে কলকাতার বনেদি বাড়ির পুজো গুলির মধ্যে উত্তর কলকাতার নীলমণি মিত্র স্ট্রিটের মিত্রবাড়ির পুজো ঘিরে রয়েছে

সাধক রামপ্রসাদ এবং মা সারদার স্মৃতি।এই বংশেরই অন্যতম সফল ব্যাক্তিত্ব নীল মণি মিত্রের নামেই এই অঞ্চলের নাম হয়। এ থেকেই বেশ বোঝা যায় এক কালে এই অঞ্চলে মিত্রদের কতোটা দাপট ছিলো।

 

নবাবী আমলে মিত্ররা নানা রকম ব্যবসা করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন।পরবর্তী পরিবারের বংশধররা রত্নের ব্যবসায় নামেন। এমনকি এই বংশের লোকেরাই পলাশীর যুদ্ধের আগে সিরাজউদ্দৌলার ‘কোর্ট জুয়েলার’ ছিলেন অর্থাৎ রত্ন সরবরাহকারী।

 

ইতিহাস বলছে এই বাড়ির কাছারী বাড়িতে কাজ করতে আসেন সাধক-কবি রামপ্রসাদ সেন। হিসেবের খাতায় তাঁর লেখা গান পড়ে খুশি হয়ে হয়ে তৎকালীন জমিদার দুর্গাচরণ রামপ্রসাদকে আজীবন মাসোহারার ব্যবস্থা করে দেন এবং গ্রামে ফিরে সাহিত্য এবং সঙ্গীত চর্চার পরামর্শ দেন।

তার অনুপ্রেরণাতেই সাধক রামপ্রসাদ হয়ে ওঠেন বিশ্ববন্দিত সাধক ও বহু কাল জয়ী শ্যামা সংগীতের স্রষ্টা।

 

সেকালে ধনী জমিদার বাড়িতে ধুমধান করে দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হবে এটাই ছিলো রীতি।

সেই রীতি মেনে জমিদার রাধাকৃষ্ণ মিত্র ১৮০৬ সাল নাগাদ মিত্রবাড়ির দুর্গোৎসবের সূচনা করেন।শুধু দূর্গাপুজো নয় দূর্গাপুজো এবং কালী পুজো দুই এখানে বেশ জাঁকজমক সহকারে পালিত হতো।

 

সেকালে মিত্র বাড়ির পুজোতে নামজাদা সাহেবদের ও আমন্ত্রণ জানানো হতো।

একবার এসেছিলেন লর্ড কর্নওয়ালিস স্বয়ং।ইতিহাস বলছে একবার মা সারদা এই বাড়ির পুজোর জন্য পরমান্ন রেঁধেছিলেন। আজও তাই প্রতি বছর সারদা মঠের সন্ন্যাসিনীরা এই পুজোয় আসেন।

 

এখানে তিনচালার প্রতিমায় পুজো হয়।

দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতীর দেবীমুখ এবং কার্তিক ও অসুরের মুখ বাংলা ধাঁচের হয় অর্থাৎ স্বাভাবিক মানুষের অবয়ব।সিংহের মুখ হয় ঘোড়ার মতো।

পদ্ম নয়, ১০৮টি নীল অপরাজিতা ফুলে সন্ধিপুজো হয়। এখানে চাল ও ফলের সঙ্গে মিছড়ি-মাখনের নৈবেদ্য দেওয়া হয়।অন্ন ভোগের পরিবর্তে বর্তমানে কাঁচা অনাজের ভোগ দেয়া হয়।

বর্তমানে এখানে পুজো পরিচালনা করেন বাড়ির মহিলারা।এখানে মা দূর্গাকে একটি বিশেষ পদ্ধতিতে সাজিয়ে পান নিবেদন করা হয়।

 

যেহেতু রত্ন বা দামী প্রসাধনীর ব্যবসারা সাথে যুক্ত ছিলেন এই বাড়ির সদস্যরা তাই ঘরের মেয়ে দূর্গাকেও খুব সুন্দর করে সাজানো হতো। তাই সেকালে বলা হতো মা দূর্গা এই বাড়িতে সাজতে আসেন।

 

সেই রাজকীয় জাঁকজমক আগের মতো না থাকলেও এই পুজো বাংলার ঐতিহাসিক বনেদি বাড়ির পুজো গুলির মধ্যে আজও অন্যতম।

 

এমন অনেক বনেদি বাড়ির পূজোর কথা এখনো বাকি আছে। চলতে থাকবে এই ধারাবাহিক পর্ব গুলি। অনেক ইতিহাস অনেক কিংবদন্তী থাকবে আগামী দিনে।পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

দাঁ বাড়ির দূর্গা পুজো

দাঁ বাড়ির দূর্গা পুজো

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

বনেদি বাড়ির দূর্গাপুজো। বিশেষ করে কলকাতার বনেদি বাড়ির পুজোর কথা বলতে গেলে আগে যে তিনটে বাড়ির পুজোর কথা বলতে হয় তার মধ্যে শোভা বাজার রাজ বাড়ির কথা আগেই বলেছি। আজ বলবো বিখ্যাত দাঁ বাড়ির পুজো নিয়ে।

 

কালী প্রসন্ন সিংহ তার বিখ্যাত হুতোম পেঁচার নকশা গ্রন্থে এই পরিবার সম্পর্কে অনেক তথ্যই দিয়েছেন|এই বংশের প্রতিষ্ঠা ও দূর্গা পুজোর প্রচলন করেন এই বংশের সবথেকে প্রভাবশালী ব্যাক্তি গোকুলচন্দ্র দাঁ।সময় টা খুব সম্ভবত 1840 সাল| তিনি পরবর্তীতে শিবকৃষ্ণ দাঁ কে দত্তক নেন|এই শিব কৃষ্ণ দাঁ এর আমলে এই পরিবারের ও তাদের দূর্গা পুজোর নাম ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র|পারিবারিক লোহা, কয়লা আর হার্ডওয়ারের ব্যবসায় প্রভূত লাভ করেন তিনি এবং লাভের একটা বড়ো অংশ ব্যয় করেন নিজের সৌখিনতা ও পরিবারের দূর্গা পুজোয়|শোনা যায় শিবকৃষ্ণ দাঁ সাজগোজ করতে বড় ভালবাসতেন এবং দূর্গা পুজোয় দেবীর রূপ সজ্জায় তিনি প্রচুর অর্থ ব্যয় করতেন তাই রটে গেছিলো দেবী মর্ত লোকে পা রেখে প্রথমে সাজতে আসেন দাঁ বাড়িতে।

 

শিব কৃষ্ণ দাঁ ফ্রান্স এবং জার্মানি থেকে বিশেষ কাজ করা অলঙ্কার ও পোশাক আনালেন ঠাকুরকে পরানোর জন্য|সোনা রুপো ও মূল্যবান রত্ন দিয়ে তৈরী ঝলমলে পোশাকে ও গয়নায় দেবীকে সাজানো হতো|তাই দাঁ বাড়ির পুজোয় দেবীর সাসজ্জা বাকি সব বনেদি বাড়িকে টেক্কা দিতো।

 

আর একটি মজার ঘটনা এখানে উল্লেখ করা যায়|শোনা যায় জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ির সঙ্গে ছিলো এই দাঁ পরিবারের খুব রেষারেষি তাই তাদের দেখিয়ে দেখিয়ে ঠাকুরবাড়ির সামনে দেবীকে বেশ কয়েকবার ঘুরিয়ে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে তারপর গঙ্গায় নিয়ে যাওয়া হতো বিসর্জনের জন্য। সেকালে জমিদার বাড়ি গুলির মধ্যে এমন প্রতিযোগিতা ছিলো খুবই সাধারণ বিষয়।

 

সেই রাজা আর নেই, রাজত্বও নেই|সবই ধূসর অতীত|তবু দাঁ বাড়িতে পুজো হয়|দেবীর সেই বিখ্যাত সাজ আজও হয়|এখানে রথের দিন গড়ানকাঠ পুজোর মধ্য দিয়ে প্রতিমা গড়ার কাজ শুরু হয় এবং জন্মাষ্টমীর দিন কাঠামোতে দেবীর মস্তক স্থাপন করা হয়|এ বাড়ির রীতি অনুসারে

দেবীর প্রাণ প্রতিষ্ঠার সময় তেরোটি শাড়ি ও তেরোটি কাঁসার পাত্র দেওয়া হয়। এছাড়াও একশো আটটি পেতলের প্রদীপ সাজানো হয়|এখানে বলী প্রথা নেই কারন পুজো হয় বৈষ্ণব মতে|কুমারী পুজোও এই বাড়ির পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট|

 

আজকের এই পর্ব এখানেই শেষ করলাম|

ফিরবো আগামী পর্বে|বনেদি বাড়ির দূর্গা পূজোর পরবর্তী পর্ব নিয়ে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

ঐতিহাসিক শোভা বাজার রাজবাড়ির দূর্গা পুজো

ঐতিহাসিক শোভা বাজার রাজবাড়ির দূর্গা পুজো

 

পন্ডিতজি ভৃগুর শ্রীজাতক

 

বাংলার বনেদি বাড়ির পুজো ঐতিহাসিক পুজোর মধ্যে শোভাবাজার রাজবাড়ীর পুজো থাকবে একদম প্রথম শাড়িতে|আগের একটি পর্বে জানিয়েছি যে সেকালে বলা হতো দেবী মর্তে থাকাকালীন তার মনোরঞ্জনের জন্য এই বাড়িতেই আসতেন।কিন্তু কেনো এমন ভাবনা। জানতে হলে এই পুজো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে।

 

এই পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন বিজয় হরি দেব তবে এই পরিবারের স্বর্ণযুগ বলা হয় রাজা নবকৃষ্ণ দেবের সময় কে এবং তার আমলেই শুরু হয় এই দূর্গা পূজা|নব কৃষ্ণদেব ছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন সাধারণ কর্মচারী যিনি নিজের দক্ষতায় ও পরিশ্রমে কোম্পানির মুন্সী হয়ে ছিলেন|পলাশীর যুদ্ধে তিনি নানা ভাবে ক্লাইভ কে সাহায্য করেন ও পুরুস্কার স্বরূপ প্রচুর অর্থ লাভ করেন|

 

মূলত পলাশীর যুদ্ধ জয় কে স্মরণীয় করে রাখতেই নবকৃষ্ণ দেবে দূর্গা পুজো শুরু করেছিলেন তাছাড়াও তার উদেশ্য ছিলো ক্লাইভ কে খুশি করে নিজের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা|এই উদ্দেশ্যে তিনি সফল হয়েছিলেন|তার দূর্গা পুজোয় অংশগ্রহণ করেছিলেন স্বয়ং লর্ড ক্লাইভ|আজও অনেক জায়গায় এই পুজো কে গোরা দের পুজো বা কোম্পানির পুজো বলা হয়|

 

উদেশ্য যাই থাকুক নিষ্ঠা সহকারে পুজো করতেন নবকৃষ্ণ দেব|প্রচুর অর্থ ব্যায় হতো এই পরিবারের দূর্গা পুজোয়|বসতো গান বাজনার আসর, নাচ, কবি গানের ও ব্যবস্থা থাকতো|দূর্গা পুজো উপলক্ষে অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি, ভোলা ময়রার মতো কবিয়ালরা এখানে এসেছেন কবির লড়াই করতে আবার গহরজান, মালকাজান, নুর বক্স প্রমুখ নামী নর্তকী এই বাড়িতে এসেছেন নাচ করতে|

সব মিলিয়ে এলাহী আয়োজন হতো শোভাবাজার রাজ বাড়ির দূর্গা পুজোয় আর এই কারণেই মনে করা হতো যে এটা মর্তে দেবী দুর্গার মনোরঞ্জনের স্থান|

 

শুরুর দিকে সন্ধিপুজোতে কামানের গোলার শব্দে শুরু হত পুজো এবং শেষও হত একই ভাবে|মা দুর্গা এই বাড়িতে বৈষ্ণবী হিসেবে পূজিতা হন। তাই শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজোয় অন্নভোগ থাকে না। গোটা ফল, গোটা আনাজ, শুকনো চাল, কচুরি, খাজা, গজা, মতিচুর-সহ নানা ধরনের মিষ্টি দেবীকে উত্সর্গ করা হয়|বর্তমানে এখানে বলী প্রথা নেই|এবাড়ির পুজোয়|প্রতিমার সামনে একটা বড় হাড়িতে জল রাখা হয়। সেই জলে দেবীর পায়ের প্রতিবম্বের ছবি দেখে সবাই প্রণাম করে। একে দর্পণ বিসর্জন বলা হয়|তারপর প্রথা মেনে দশমীর দিনই হয় বিসর্জন|আগে নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানোর রীতি থাকলেও সরকারি নিয়মে তা এখন বন্ধ।

 

পারিবারিক পুজো হলেও বহু সাধারণ মানুষ এবং দর্শণার্থী এই পুজো দেখতে আসেন।দুর্গাপূজার সময়ে এখানে এলে পাওয়া যায় ইতিহাসের গন্ধ এবং ঐতিহ্যর স্পর্শ।

 

আপাতত কলকাতার বনেদি বা জমিদার বাড়ির পুজোর কথা লিখলেও আগামী দিনে জেলা গুলির ঐতিহ্য সম্পন্ন পুজোর কথাও লিখবো|জানবো অনেক গল্প অনেক ইতিহাস|আজকের পর্বে শোভাবাজার রাজ বাড়ির পুজো।

পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন।ধন্যবাদ।

গণেশ চতুর্থীর শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা

গণেশ চতুর্থীর শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আজ গণেশ চতুর্থী। গণেশ শুধু আর মহারাষ্ট্র বা হিন্দি বলয়ের আরাধ্য দেবতা নন। তিনি বাঙালির খুব কাছের। সারা বাংলা জুড়ে এখন মহা সমারোহে গণেশ পুজো হয়।আজ আসুন জেনে নেয়া যাক এই তিথির আধ্যাত্মিক তাৎপর্য।

 

পৌরাণিক বিশ্বাস অনুসারে, যেদিন ভগবান শিব ও মা পার্বতীর পুত্র গণেশের জন্ম হয়েছিল, সেই দিনটি ছিল ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের চতুর্থী। তাই এই দিনটিকে গণেশ চতুর্থী ও বিনায়ক চতুর্থী নামে নামকরণ করা হয়।

 

সিদ্ধিদাতা গণেশের পূজা ঘরে সুখ, সমৃদ্ধি ও বৃদ্ধি নিয়ে আসে। শিব পুরাণে ভাদ্রমাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্থীকে গণেশের জন্মদিন হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। যেখানে গণেশ পুরাণের মতানুযায়ী এই গণেশাবতারের আবির্ভাব ঘটেছিল ভাদ্রপদ শুক্লা চতুর্থীতে।

 

পার্বতী পুত্র গণেশ প্রারম্ভের দেবতা, বিঘ্ননাশক দেবতা তাই তার অপর নাম বিঘ্নেশ বা বিঘ্নেশ্বর, আবার তিনিই শিল্পকলা ও বিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষক, এবং মহাবল, মেধা ও বুদ্ধির দেবতা। শাস্ত্র মতে পূজা ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের সময় গণেশের পূজা সর্বাগ্রে করার কথা বলা হয়েছে তাতে কাজ সফল এবং সার্থক হয়।

 

বিভিন্ন পুরানে গণেশের একাধিক নামের অস্তিত্ব পাওয়া যায় যেমন হেরম্ব, বক্রতুণ্ড, একদন্ত, মহোদর, গজানন, লম্বোদর, বিকট ও বিঘ্নরাজ।

এদের মধ্যে একদন্ত নামটি নামটি হয়েছে তার একটি গজ দন্তের জন্য। এনিয়ে একটি পৌরাণিক ব্যাখ্যাও আছে।

 

একটি ব্যাখ্যা অনুসারে একবার পরশুরাম দেবাদিদেব মহাদেবের সঙ্গে দেখা করার জন্য তাঁর গৃহে যান। কিন্তু গণপতি দরজাতেই তাঁকে আটকে দেন। ভেতরে প্রবেশ করতে দেন না। কারণ সেই সময় মহাদেব ধ্যানে মগ্ন ছিলেন। তখনই ক্রোধান্বিত হয়ে পরশুরাম গণপতির একটি দাঁত কেটে দেন তার অস্ত্র দিয়ে|

 

আবার এটাও মনে করা হয় যে বেদব্যাসের সঙ্গে মহাভারত লিখতে বসে, গণেশের কলম ভেঙে গিয়েছিল। যেহেতু ব্যাসদেব তাঁকে শর্ত দিয়েছিলেন যে, লেখা থামাতে পারবেন না। তাই গণপতি নাকি নিজের একটা দাঁত ভেঙে তা কলম হিসেবে ব্যাবহার করে লেখা চালিয়ে যান।

সেই থেকে গণেশ একদন্ত এবং এই

রূপেই তাকে পুজো করা হয়।

 

আজ শাস্ত্র মতে গণেশ পুজো করুন। বিঘ্নহর্তার আশীর্বাদে সব বিঘ্ন দূর হবে। সবাইকে জানাই গণেশ চতুর্থীর শুভেচ্ছা। ফিরে আসবো দূর্গা পুজো সংক্রান্ত লেখা নিয়েআগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

বনেদি বাড়ির দুর্গাপূজার সুবর্ণ যুগ

বনেদি বাড়ির দুর্গাপূজার সুবর্ণ যুগ

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

বাংলায় দূর্গাপুজো প্রথম শুরু হয় বনেদি বাড়ি গুলিতে। বিশেষ করে উত্তর কলকাতার সমৃদ্ধ জমিদার বাড়ি গুলিতে। পলাশী যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সেই পুজোর সুবর্ণ যুগ বলা যায় কারন সেই সময়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে সু সম্পর্ক স্থাপন করতে এই পরিবার গুলি দূর্গা পুজো খুব ধুম ধাম করে করতো এবং সাহেবদের আমন্ত্রণ করে সুনাম অর্জন করতো।

 

তবে শুধু তাই নয়। নিজেদের মধ্যে সম্পদ এবং ক্ষমতা নিয়ে প্রতিযোগিতা বা প্রভাব বিস্তারের জন্যও দূর্গাপুজোর জাঁকজমককে বেছে নিতো কেউ কেউ। এর মধ্যে শাস্ত্র বা ধর্মকে যে প্রাধান্য দেয়া হতোনা তা নয়। পুজো হতো শাস্ত্র মেনে নিষ্ঠা সহকারে। বহু বনেদি বাড়িতেই ভক্তি ছিলো প্রধান আর মা দুর্গার প্রতি অমোঘ আস্থা।

 

পুরোনো বাংলার বিশেষ করে কলকাতার পুজো নিয়ে একটি প্রবাদ প্রচলিত ছিলো। যেখানে বলা হতো মা দাঁ বাড়িতে সাজতে আসেন।মিত্র বাড়িতেখেতে আসেন এবং শোভাবাজারে মনরঞ্জনের জন্য আসেন।

 

আসলে পরিবারের এই সদস্য সাজতে ভালোবাসতেন। ঠিক করেছিলেন মাকেও সাজাবেন। সেই মতো ফ্রান্স এবং জার্মানি থেকে বিশেষ কাজ করা অলঙ্কার ও পোশাক আনালেন ঠাকুরকে পরানোর জন্য। সেই সাজ হয়ে উঠলো বিখ্যাত।অন্যদিকে মিত্র বাড়িতে মাকে নিবেদন করা হয় ৩০ থেকে ৫০ মণ চালের নৈবেদ্য। এছাড়াও থাকে নানা রকম মিষ্টি, গজা, নিমকি,লুচি, রাধাবল্লভীর ইত্যাদি খাবার।আবার শোভা বাজার রাজ বাড়িতে টানা ১৫ দিন ধরে চলতো এই নাচ গান যাত্রার আসর বসতো পুজো উপলক্ষে।

 

আগামী পর্বগুলিতে এই বাড়ি গুলির পুজো

নিয়ে আরো বিস্তারিত আলোচনা করবো।

তবে শুধু কলকাতা নয়। বাংলার বহু বনেদি জমিদার বাড়ির পুজোর রয়েছে এমন বর্নময় ইতিহাস। সেসব নিয়ে চলবে এই ধারাবাহিক আলোচনা। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

বাংলায় দুর্গা পুজোর বিবর্তন

বাংলায় দূর্গাপুজোর বিবর্তন

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আর কিছুদিন পরেই বাংলা তথা সারাদেশে পালিত হবে দূর্গাপুজো|যে দূর্গা পুজোকে কেন্দ্র করে আমাদের এতো আবেগ এতো তোড়জোড় আজ সেই দূর্গা পুজোর শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা এবং এবং বঙ্গে এই পুজোর বিবর্তন কিভাবে হয়েছিলো তা

নিয়ে লিখবো|

 

পুরান অনুসারে যখন মহিষাসুরের অত্যাচারে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হয়ে দেবতারা শ্রীবিষ্ণু ও মহাদেবের কাছে সাহায্যের জন্য উপস্থিত হন। প্রবল পরাক্রমশালী মহিষাসুরকে বধ করার জন্য সকল দেবতার তেজ থেকে এক অপূর্ব নারীর সৃষ্টি হয়।এই নারীই দেবী দূর্গা|সকল দেবতারা তাঁকে নিজেদের অস্ত্র ও অলংকার দিয়ে সজ্জিত করেন। এই নারীই মহিষাসুরকে যুদ্ধে আবাহন করেন। প্রচণ্ড যুদ্ধের পর ত্রিশূল দিয়ে গেঁথে মহিষাসুরকে বধ করেন দুর্গা। শুধু মহিষাসুর নয়, মধু কৈটভ, শুম্ভ-নিশুম্ভকেও পরাজিত করেন দেবী দূর্গা|

 

আবার তন্ত্র শাস্ত্ররা সাথেও দেবী দূর্গারা গভীর সম্পর্ক আছে।শাস্ত্র মতে সতী বা দেবি দূর্গার দশ হাতে আছেন দশ মহাবিদ্যা । এই দশমহাবিদ্যার উপর ভিত্তি করেই অনেকটা তন্তশাস্ত্র গড়ে উঠেছে।

 

আবার বঙ্গে দেবীদুর্গার রূদ্র রূপের চেয়ে সৌম স্নিগ্ধ রুপী বেশি জনপ্রিয়। যদিও দেবী অসুর নিধন করছেন। তবু তিনি ঘরের মেয়ে। এক্ষেত্রে তাঁর মর্তে আসাকে স্বামীর গৃহ থেকে পিতার গৃহে আসার সাথে তুলনা করা হয়।

 

বাংলারা বনেদি জমিদার বাড়ি গুলোতেই একসময় দূর্গা পুজো সীমাবদ্ধ ছিলো। তার ঐতিহাসিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক কারন ছিলো যথেষ্ট। ধীরে ধীরে নানা বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে গিয়ে দুর্গাপুজো বারোয়ারী পুজোর রূপ নেয়। তবে আজও আদি অকৃত্তিম এবং শাস্ত্র সম্মত দুর্গাপূজা দেখতে হলে পুরোনো পারিবারিক পুজো গুলো দেখতে হয়।

 

আজ শুধু ভূমিকা করলাম।পরবর্তীতে বিস্তারিত আলোচনা করবো।শুরু করবো সেই দুর্গাপূজারা বিবর্তনের ইতিহাস সাথে থাকবে নানা বনেদি বাড়ির পুজোর বর্ণময় ইতিহাস এবং নানা ঐতিহাসিক ঘটনা। ধারাবাহিক এই লেখনী আপনাদের আশা করি ভালো লাগবে। পড়তে থাকুন। ভালো থাকুন।ধন্যবাদ।

বাংলার দূর্গা পুজোর ইতিহাস

দেবী দূর্গা বাংলার প্রধান আরাধ্যা দেবী বললে বেশি বলা হয়না। আর কিছুদিন পরই শুরু হবে দেবী পক্ষ। তার আগের এই সময়টায় আমি ধারাবাহিক ভাবে বাংলার বনেদি বাড়ি গুলির দূর্গা পুজোর কথা লিখবো। থাকবে দূর্গাপুজোর নানা ইতিহাস। পৌরাণিক ঘটনা এবং একাধিক বিখ্যাত পুজোর বিভিন্ন জানা অজানা তথ্য। আজ শুরুতে কিভাবে বাংলায় দূর্গা পুজো শুরু হলো সেই কথা জানাবো।
দেবী দুর্গার মহিমা বর্ণিত হয়েছে মার্কন্ডেয় পুরাণ এবং শ্রীশ্রী চন্ডীতে।শ্রীশ্রী চন্ডীতে বলা হয়েছে তিনি জগত্পালিকা আদ্যাশক্তি ও সনাতনী।মহাভারত, বিষ্ণু পুরাণ, দেবী পুরাণ, ভাগবত পুরানেও দেবীর গুনকীর্তন আছে, মহাভারতের বিরাটপর্বে ও ভীষ্মপর্বেও দুর্গাস্তব আছে। ভীষ্মপর্বে ত্রয়োবিংশ অধ্যায়ে অর্জুন দেবী দুর্গার স্তবপাঠ করেন। বিষ্ণু পুরাণের পঞ্চম অংশে দেবকীর গর্ভে দুর্গার জন্মানোর বৃত্তান্ত আছে।
মহাকাব্য রামায়ণ অনুসারে শারদীয়া দুর্গাপুজো বা অকাল বোধনের সূচনা করেছিলেন শ্রীরামচন্দ্র। তিনি রাবণের হাত থেকে সীতাকে উদ্ধার করার জন্য লংকা গমন করার আগে অকাল বোধন করে শরত্কালে দুর্গার পুজো করেন। রামচন্দ্রের আরাধনায় সন্তুষ্ট হয়ে তাকে বর দেন দেবী। শ্রীশ্রী চন্ডীতে বর্ণিত আছে প্রাচীনকালে রাজা সুরথ ও সমাধি বৈশ্য সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে বনে যান|সেখানে তারা এক মুনির দর্শন পান|মেধা মুনি নামে ওই ঋষি সব শোনার পর তাঁদের বলেন যে “বিষ্ণুর যে মহামায়া শক্তি তারই প্রভাবে এই রকম হয়। সেই মহামায়া প্রসন্না হলে মানবের মুক্তি লাভ ঘটে ” মুনির উপদেশ পেয়ে সুরথ ও সমাধি মাটির প্রতিমা গড়ে ৩ বছর কঠোর তপস্যা করেন তারপর পর দেবী তুষ্ট হয়ে তাদের দেখা দেন এবং মনোবাঞ্ছনা পূর্ণ করেন।পরবর্তীতে বসন্তকালকে দুর্গাপূজার উপযুক্ত সময় নির্ধারণ করে তারা বাসন্তী পূজার প্রচলন করেন।
বাংলায় কবে ও কারা প্রথম দূর্গাপুজোর প্রচলন করেন তা নিয়ে অনেক মতভেদ রয়েছে। তবে কিছু ঐতিহাসিক তথ্য অনুসারে ১৫০০ সালে বাংলায় প্রথম দূর্গাপুজো হয়। দিনাজপুর ও মালদহের জমিদাররা প্রথম দূর্গাপুজোর শুরুর পরিকল্পনা নেন। কারও মতে, তাহেরপুরের রাজা কংসনারায়ণ প্রথম সাড়ম্বের দূর্গাপুজো শুরু করেন।আবার অনেকে মনে করেন নদিয়ার রাজা কৃষ্ণ চন্দ্রের উত্তরসূরি ভবানন্দ ১৯০৬ সালে প্রথম দুর্গা পুজা করেন
বারোয়ারি পুজো সম্পর্কে বলা হয়ে একবার হুগলীর গুপ্তি পাড়ায় এক ধনি ব্যাক্তির বাড়ির দুর্গা পুজায় অংশ নিতে না পেরে বারো জন মানুষ রাগ করে সেখান থেকে বেড়িয়ে আসেন এবং নিজেরাই চাঁদা তুলে শুরু করেন দুর্গা পুজা । এই বারো জন বন্ধুর মাধ্যমে শুরু হয় বাংলার বারোয়ারী দুর্গা পুজা|সেই পুজোয় ক্রমশ শাখা প্রশাখা বিস্তার করে আজকের থিম পুজোর রুম নিয়েছে|
চলতে থাকবে এই ধারাবাহিক লেখনী।পরের পর্বে দেবী দূর্গা সংক্রান্ত আরো অনেক পৌরাণিক তথ্য, ইতিহাস এবং আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা নিয়ে ফিরে আসবো|পড়তে থাকুন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

বিশেষ পর্ব – দেবী কৌশিকী 

বিশেষ পর্ব – দেবী কৌশিকী

 

পন্ডিতজি ভৃগুর শ্রীজাতক

 

জ্যোতিষ শাস্ত্রে বিশেষ করে তন্ত্র শাস্ত্রে

কৌশিকী অমাবস্যা একটি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ তিথি।কৌশিকী অমাবস্যার ঠিক প্রাক্কালে আজকের এই বিশেষ পর্বে আসুন জেনে নিই কে এই দেবী কৌশিকী এবং শাস্ত্রে তার সম্পর্কে কি কি তথ্য আছে।

 

শ্রীশ্রীচণ্ডীতে বর্ণিত মহা সরস্বতী দেবীর কাহিনীতে বলা আছে পুরাকালে একবার শুম্ভ ও নিশুম্ভ কঠিন সাধনা করে ব্রহ্মাকে তুষ্ট করলে চতুরানন তাঁদের বর দেন যে কোনও পুরুষ তাঁদের বধ করতে পারবেন না৷ শুধু কোনও অ-যোনি সম্ভূত নারী তাঁদের বধ করতে পারবেন। অর্থাৎ এমন এক নারী, যিনি মাতৃগর্ভ থেকে জন্ম নেননি, তাঁর হাতেই এই দুই অসুর ভাই-এর মৃত্যু হবে। এই বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য আবির্ভাব হয় দেবী কৌশিকীর।

 

শাস্ত্রে আছে পূর্ব জন্মে দেবী পার্বতী যখন সতী রূপে দক্ষ যজ্ঞ স্থলে আত্মাহুতি দেন তখন দেবীর গাত্র বর্ণ কালো মেঘের মতো। তাই ভোলানাথ তাঁকে কালিকা ডাকতেন। একদিন দানব ভাইদের দ্বারা পীড়িত ক্লান্ত দেবতারা যখন কৈলাশে আশ্রয় নিলেন, শিব সব দেবতাদের সামনেই পার্বতীকে বললেন, “কালিকা তুমি ওদের উদ্ধার করো।” সবার সামনে ‘কালী’ বলে ডাকায় পার্বতী অত্যন্ত ক্ষুব্ধ, অপমানিত ও ক্রোধিত মনে মানস সরোবরের ধারে কঠিন তপস্যা করলেন।

 

তপস্যান্তে শীতল মানস সরোবরের জলে স্নান করে নিজের দেহের সব কালো রঙ পরিত্যাগ করলেন ও পূর্ণিমার চাঁদের মতো গাত্র বর্ণ ধারণ করলেন।দেবীর দেহ হতে নির্গত ওই কালো কোশিকাগুলি থেকে এক অপূর্ব সুন্দর কৃষ্ণবর্ণ দেবীর সৃষ্টি হয়। ইনি দেবী কৌশিকী| এই কৌশিকী অমাবস্যার তিথিতেই দেবীর উৎপত্তি হয় এবং তিনি শুম্ভ ও নিশুম্ভকে বধ করেন। তাই এই অমাবস্যার নাম কৌশিকী অমাবস্যা|

 

মৎস পূরাণ এবং মার্কন্ডেয় পূরাণে বলা হয়,অত্যাচারি অসুর দ্বয় শুম্ভ ও নিশুম্ভকে বধ করতে দেবী পার্বতী সাধনা শুরু করেন। তপস্যার পর, নিজের শ্বেতশুভ্র গায়ের রঙ পরিত্যাগ করে ,উজ্জ্বল কালো বর্ণে ভয়াল রূপ ধারণ করেন দেবী। সেই রূপে দেবী পার্বতী হয়ে ওঠেন ‘কৌশিকী’। আর এই কৌশিকীই অমাবস্যার এক বিশেষ কালক্ষণে দেবী বধ করেন শুম্ভ ও নিশুম্ভ নামের দুই অসুরকে। সেই কালক্ষণকে স্মরণ করেই অনুষ্ঠিত হয় কৌশিকী অমাবস্যার পূজা।

 

সহজ ব্যাখ্যায় কৌশিকী অমাবস্যা অশুভ শক্তির উপর শুভ শক্তির জয়কে উদযাপন করার একটি ধর্মীয় উৎসব যা মহাসমারোহে পালিত হয়ে আসছে দেশের শক্তি উপাসকদের দ্বারা যুগ যুগ ধরে|

 

শাস্ত্র মতে গ্রহ দোষ খণ্ডনের ক্ষেত্রে এই অমাবস্যা অন্যান্য সব অমাবস্যার থেকে অনেকটাই এগিয়ে।

কারন কৌশিকী অমাবস্যার একটি বিশেষ মুহূর্তে সাধকের করা তন্ত্র সাধনা সব দিক দিয়ে সফল হয় এবং দেবী কৌশিকীর আশীর্বাদে সব

অন্ধকার দুর হয়।

 

যারা কৌশিকী অমাবস্যায় গ্রহ দোষ খণ্ডন করাতে চান এখনো যোগাযোগ করতে পারেন। তারাপীঠে এবং হৃদয়েস্বরী সর্বমঙ্গলা মায়ের মন্দিরে থাকছে বিশেষ হোম যজ্ঞর ব্যবস্থা।

 

আবার পরের পর্বে কৌশিকী অমাবস্যা সংক্রান্ত কিছু শাস্ত্রীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা থাকবে।

থাকবে জ্যোতিষ এবং তন্ত্র জগৎ নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী কথা – জহুরা কালী

কালী কথা – জহুরা কালী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

বাংলার অন্যতম প্রাচীন কালী মন্দির জহুরা কালীর মন্দির মালদায় অবস্থিত এই কালী মন্দিরে অধিষ্টান করছেন মা জহুরা।আজকের কালী কথায় এই দেবীর মাহাত্মা বর্ণনা করবো।

 

মালদায় ইংরেজবাজার থানা এলাকায় একটি প্রাচীন আমবাগানের মধ্যে রয়েছে জহুরা কালী মন্দির।

 

শোনো যায় এক কালে এই অঞ্চলে ছিলো ঘন অরণ্য|ডাকাতরাই একপ্রকার শাসন করতো এই এলাকা এবং এই দেবী এক সময়ে ছিলেন ডাকাতদের আরাধ্যা। এখানে দেবী চণ্ডীর পুজো করে ডাকাতরা যেত ডাকাতি করতে। ডাকাতি করে প্রচুর ধনরত্ন আনত তারা, তারপর সেগুলোকে এখানেই মাটির তলায় রাখত। সেই ধনরত্নের ওপরই দেবীমূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয় যেহেতু ধনরত্নকে হিন্দিতে বলে ‘জওহর’। দেবীমূর্তির নিচে প্রচুর ধনরত্ন রাখা থাকত বলেই এখানে দেবী চণ্ডী ‘জহরা’ বা ‘জহুরা’ নামে বিখ্যাত|

 

আজও কিছু ইতিহাস বিদ মনে করেন এই দেবীর পুজোর সূচনা হয়েছিলো সেন বংশের রাজা বল্লাল সেনের আমলে আবার মন্দিরের গায়ে যে পাথরের ফলক আছে তা থেকে অনুমান করা যায়,আজ থেকে তিনশো বছর আগে উত্তরপ্রদেশের কোনো এক মাতৃ সাধক স্বপ্নাদেশ পেয়ে এখানে দেবী জহরা চণ্ডীর বেদি স্থাপন করেছিলেন|

 

কথিত আছে এক কালে এখানে দেবীর পূর্ণ অবয়ব মূর্তি ছিলো তবে বিদেশী শত্রুর আক্রমণের ভয়ে তা মাটির নিচে লুকিয়ে ফেলেন পুরোহিতরা|

বর্তমানে মন্দিরের অভ্যন্তরে লাল রঙের ঢিবির ওপর রয়েছে এক মুখোশ এবং ঢিবির দু’পাশে আরও দু’টি মুখোশ দেখা যায়। এছাড়া গর্ভগৃহে আছে শিব আর গণেশের মূর্তি|

 

দেবী জহুরা চন্ডিরই রূপ তিনি অত্যন্ত জাগ্রত ও প্রসিদ্ধ তার পুজো উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চল ছাড়াও বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ সমবেত হন এই মন্দির প্রাঙ্গনে|

 

এখানে বৈশাখ মাসের মঙ্গল ও শনিবার থাকে বিশেষ পুজোর আয়োজন|উল্লেখযোগ্য বিষয় অন্যান্য কালীমন্দিরের মতো এখানে রাত্রিবেলা কোনো পুজো এখানে হয় না পুজো হয় দিনে|

 

আজ লেখা এখনেই শেষ করলাম। শুধু আরো একবার মনে করিয়ে দিই।আগামী ২২ এ আগস্ট কৌশিকী অমাবস্যা। যারা তন্ত্র মতে গ্রহের প্রতিকার চান তাদের জন্য এটি শ্রেষ্ঠ সময়।

ফিরে আসবো কালী কথার পরবর্তী পর্ব নিয়ে। যথা সময়ে।পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী কথা – আদ্যা কালী

কালী কথা – আদ্যা কালী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

দক্ষিনেশ্বর কালী মন্দিরের কাছেই রয়েছে আদ্যাপীঠ কালী মন্দির যে মন্দির কে কেন্দ্র করে রয়েছে অনেক জনশ্রুতি এবং কিংবদন্তী। আজকের কালী কথায় এই আদ্যা কালীমাকে নিয়ে আলোচনা করবো।

 

অন্নদা ঠাকুর বা শ্রী অন্নদাচরণ ভট্টাচার্য এই আদ্যাপীঠ কালী মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা।

যৌবনে লেখাপড়ার জন্য কলকাতায় এসেছিলেন। কলকাতায় থাকাকালীন শ্রীরামকৃষ্ণের স্বপ্ন দেখেন। বাংলাদেশের বাড়িতে মা-বাবার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েও দেখেন সেই

শ্রীরামকৃষ্ণের স্বপ্ন।

 

ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব তার ভক্ত তথা শিষ্য অন্নদা ঠাকুরকে নির্দেশ দিয়ে ছিলেন কলকাতার একটি দীঘি থেকে দেবী মূর্তি উদ্ধার করে নিয়ে এসে দক্ষিনেশ্বর এর অদূরে আরিয়া দহে এক মন্দির নির্মাণ করতে এবং শর্ত ছিলো বারো বছরের মধ্যে মন্দির নির্মাণ সম্পন্ন করতে হবে না হলে সর্ব সাধারণের জন্য মন্দিরের দ্বার উন্মুক্ত থাকবেনা|

 

অন্নদা ঠাকুর আদেশ পালন করে ছিলেন কিন্তু বারো বছরের জায়গায় পঁয়ত্রিশ বছর লেগে ছিলো মন্দির নির্মাণ সম্পূর্ণ করতে।সেই মন্দির হলো আজকের আদ্যাপীঠ মন্দির।

যেহেতু বারো বছরে মন্দিরের কাজ সম্পন্ন হয়নি তাই আজও সর্ব সাধারণের জন্য মুল মন্দিরের দ্বার বন্ধই আছে|

 

শোনা যায় এক রাম নবমীর রাতে মা আদ্যা শক্তি অন্নদা ঠাকুর কে দর্শন দিয়েছিলেন এবং আদ্যা স্তোত্র পাঠ করে শুনিয়েছিলেন এবং অন্নদা ঠাকুর এই আদ্যা স্তোত্র লিখে রাখেন যা আজও এই মন্দিরে স্বযত্নে রাখা আছে এবং নিয়মিত তা পাঠ করা হয় মন্দিরে।

 

মাত্র আটত্রিশ বছর বয়সে পুরীতে প্রয়াত হন অন্নদাঠাকুর।তবে তার দ্বারা শুরু হওয়া কর্মকান্ড আজও তার তৈরি প্রতিষ্ঠান নিষ্ঠার সঙ্গে করে চলেছে।অন্নদা ঠাকুর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত রামকৃষ্ণ সংঘ মন্দিরের পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে।

প্রতি বছর আদ্যা নবমী তে মন্দিরে বিশেষ পূজা এবং কালী পূজা উপলক্ষে মহা পূজার আয়োজন করা হয়|প্রতিদিন দেবী কে সাড়ে বাইশ সের চালের অন্ন ভোগ ঠাকুর রামকৃষ্ণদেবকে সাড়ে বারো সের চালের অন্ন ভোগ দেয়া হয় আদ্যাপিঠে|

 

আদ্যা শক্তি যখন তার ভক্তকে কৃপা করেন এবং তাকে দিয়ে বিশেষ কাজ করাবেন স্থির করেন তখন সেই ভক্ত হয়ে ওঠেন নিমিত্ত মাত্র সমস্ত কাজ অলৌকিক উপায়ে পরিচালিত হতে থাকে। অন্নদা ঠাকুর তার বড়ো প্রমান।

 

আসন্ন কৌশিকী অমাবস্যা উপলক্ষে চলতে থাকবে কালী কথা । ফিরবো

আগামী পর্বে আরো একটি কালী কথা নিয়ে।

যারা কৌশিকী অমাবস্যায় শাস্ত্র মতে গ্রহ দোষের প্রতিকার চান তারা এই সময়ে

যোগাযোগ করতে পারেন।পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।