ভক্তের ভগবান – গদাধর পন্ডিতের কথা
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
শ্রী চৈতণ্যদেব যদি যদি সাক্ষাৎ বিষ্ণু অবতার হন তবে শ্রী গদাধর পন্ডিত ছিলেন রাধারানীর অবতার। তার মধ্যে রাধা তত্ত্বের প্রকাশ ঘটেছিলো। আজ ভক্তের ভগবানের এই পর্বে শ্রী গদাধর পন্ডিতের ভক্তি নিয়ে লিখবো।
গদাধর পন্ডিত বয়সে নিমাই পন্ডিতের চেয়ে সামান্য ছোটো ছিলেন। শৈশব থেকেই তাদের মধ্যে সখ্যাতা গড়ে ওঠে। নিমাই জননী শচীমাতা গদাধরকে তার আরেক পুত্র রূপেই দেখতেন।
একবার কৃষ্ণ প্রেমে উন্মাদ প্রায় গৌরাঙ্গ যখন নিজের বুক চিরে কৃষ্ণ দর্শন করানোর উপক্রম করেন তখন গদাধর পন্ডিত বহু চেষ্টায় তাকে থামান এবং এই জন্যে শচি মাতা তাকে অত্যাধিক স্নেহ করতেন।
সন্ন্যাস নেয়ার পর নিয়মিত গদাধর পন্ডিত চৈতণ্যদেবকে ভাগবত পাঠ করে শোনাতেন।
চৈতণ্য দেব তার সান্নিধ্যে এলেই কৃষ্ণ বিরহ অনুভব করতেন এবং ভাব তন্ময় হয়ে যেতেন।
শ্রী রাধিকার সমস্ত গুন ফুটে উঠতো গদাধর পন্ডিতের মধ্যে।
একবার পুরীতে থাকা কালীন শ্রীমদ্ভাগবত শোনার পর মহাপ্রভু গদাধর পণ্ডিতাকে বললেন, “গদাধর, আমি তোমাকে আমার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পত্তি দিতে চাই। তুমি কি তা গ্রহণ করবে?” গদাধর পণ্ডিত রাজি হলে মহাপ্রভু বললেন, “এটা আমার হৃদয়ের সম্পত্তি।” এরপর তিনি বালি সরাতে শুরু করলেন এবং সেখান থেকে বেরিয়ে এলো এক সুন্দর কৃষ্ণ মূর্তি মহাপ্রভু তখন শ্রী গদাধর পণ্ডিতকে অনুরোধ করলেন, “দয়া করে তাঁকে নিয়ে যাও এবং মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত করে নিত্য পুজোর ব্যাবস্থা করো।
বাগান বা টোটার মধ্যে থেকে এই গোপীনাথ মূর্তি প্রকট হয়েছিলো তাই নাম হয় টোটা গোপীনাথ। তারপর থেকে নিজের দেহ মন সর্বস্ব গদাধর পন্ডিত সমর্পন করেন টোটা গোপীনাথকে। মহাপ্রভু যতদিন জীবিত ছিলেন তিনি নিয়মিত গদাধর পন্ডিতের গৃহে টোটা গোপীনাথ দর্শনে যেতেন।
মহাপ্রভুর অন্তর্ধানের পর বিমর্শ গদাধর পন্ডিত আর বেশি দিন দেহ ধারণ করেননি।ভগবানের বিরহ ভক্তের কাছে অসহানীয়।আজও টোটা গোপীনাথ মন্দির গদাধর পন্ডিত এবং মহাপ্রভুর স্মৃতি ধরে রেখেছে যা সব বৈষ্ণবের কাছে একটি অত্যন্ত পবিত্র এবং দর্শনীয় স্থান।
ফিরে আসবো ভক্তের ভগবানের পরবর্তী
পর্ব নিয়ে। থাকবে আরো এক ভক্ত এবং একটি
বিশেষ লীলা। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।