Home Blog

শক্তি পীঠ – কঙ্কালী তলা

শক্তি পীঠ – কঙ্কালী তলা

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

শক্তি পীঠ সংক্রান্ত আলোচনায় দেশ বিদেশ পরিভ্রমণ আজ আবার বাংলায় ফিরে এলাম।

বাংলায় অবস্থিত শক্তি পীঠের অন্যতম

শক্তিপীঠ হল বীরভূম জেলার বোলপুর মহকুমায় অবস্থিত বিখ্যাত কঙ্কালীতলা মন্দির।

 

জনশ্রুতি আছে যে আজ থেকে কয়েকশো

বছর আগে এক সাধু স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই পীঠের অস্তিত্ব অনুধাবন করেছিলেন। তার পরে অন্য এক মাতৃসাধক দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই পীঠে পুজোর শুরু করেন।

 

তন্ত্রচূড়ামতির মতে কঙ্কালী তলা আঠাশ তম সতীপীঠ। প্রাচীনকালে এই জায়গাটি কাঞ্চি নামে প্রসিদ্ধ ছিল।পুরান মতে মতে দেবী সতীর কাঁখাল অর্থাৎ কোমর পড়েছিল বীরভূম জেলার বোলপুরের কোপাই নদীর তীরে । মতান্তরে দেবী সতীর কঙ্কাল পড়েছিল এই স্থানে।তাই পরবর্তীকালে কঙ্কালীতলা নামেই জনপ্রিয়তা লাভ করে।ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল কাব্যগ্রন্থে লেখা রয়েছে, এখানে সতীর কটিদেশ বা কোমরের অংশটি পরেছিল।এখানে দেবীর নাম দেবগর্ভা। দেবীর রক্ষক ভৈরবের নাম রুরু ।

 

এই শক্তি পীঠে রয়েছে একটি রহস্যময় জলাশয় বা কুন্ড।শোনা যায় কঙ্কালীতলার কুন্ডের সঙ্গে কাশীর মণিকর্ণিকা ঘাটের সরাসরি সংযোগ আছে । এই জলাশয়েই আছে দেবী সতীর প্রস্তুরীভূত দেহের অংশ যা কুড়ি বছর অন্তর কুন্ড থেকে তোলা হয় পুজার্চনার জন্য। পুজোর পরে আবার কুন্ডের জলে ডুবিয়ে রাখা হয়।

 

দেবীর কোনও মূর্তি নেই কঙ্কালী তলায় তার বদলে এখানে রয়েছে শ্মশান কালী মায়ের বড় বাঁধানো ছবি। যাকে দেবী রূপে পুজো করা হয়।

 

নিত্য পুজো ও ভোগ বিতরণ হয় এই কালী ক্ষেত্রে। এই কঙ্কালীতলা গুপ্ত তন্ত্রসাধনার জন্য খুবই বিখ্যাত।তন্ত্র সাধকদের পাশাপাশি এখানে প্রায় সারা বছর সাধারণ পর্যটকদের ভিড় লেগে

থাকে এই শক্তি পীঠে।

 

ফিরে আসবো পরের পর্বে অন্য একটি শক্তি পীঠ সংক্রান্ত আলোচনা নিয়ে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

শক্তিপীঠ – জয়ন্তী

শক্তিপীঠ – জয়ন্তী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

বেশ কয়েকটি শক্তি পীঠের সঠিক অবস্থান নিয়ে কিঞ্চিৎ বিতর্ক আছে।যেমন শক্তি পীঠ জয়ন্তী।আজকের পর্বে এই শক্তি পীঠ জয়ন্তী

নিয়ে লিখবো ।

 

বেশিভাগ শাস্ত্র বিশেষজ্ঞ মনে করেন বাংলা দেশের শ্রীহট্টর জয়ন্তী অঞ্চলে এই শক্তি পীঠ অবস্থিত বলেই বেশি ভাগ শাস্ত্রজ্ঞ মনে করেন এবং এখানেই আছে দেবীর মন্দির।জ্ঞানার্ণব তন্ত্র ও বিশ্বসার তন্ত্রে এই স্থানের উল্লেখ আছে ।

 

পুরান মতে এই স্থানে সতীর ‘বামজঙ্ঘা’ পতিত হয়ে ছিলো । দেবী জয়ন্তীর ভৈরব ক্রমদীশ্বর শ্রীহট্ট জেলার অন্তর্গত জয়ন্তিয়া নামক পার্বত্য অঞ্চলে

রয়েছে দেবীর মন্দির। দুর্গম পাহারে চারকোণা অগভীর গর্তের মধ্যে একটি চৌকো পাথরের মধ্যে দেবীর অবস্থান ।

 

বহু কাল পূর্বে এই পাহাড়ে জয়ন্তীর রাজা দেবীর পুজো করতেন । পাহাড় কেটেই এক কালে তৈরী হয়েছিলো মন্দির যা আদতে গুহারই অংশ বলে মনে করা হয়।মন্দির তৈরীর সাথে জড়িয়ে আছে এক অলৌকিক ঘটনা।স্থানীয় আদিবাসী গ্রামের এক আদিবাসী সর্দার স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই স্থানে দেবীর পুজো শুরু করেন সেই সময়ে আদিবাসী মেয়েরা খড় বাঁশের মন্দির নির্মাণ করে দেবী আদ্যা শক্তি ও শিবের পূজা করতেন। পড়ে স্থানীয় রাজা মন্দির নির্মাণ এবং পুজোর দায়িত্ব নিজের হাতে নেন। সেই থেকে এই দেবী রাজ পরিবারের পৃষ্ঠেপোষকতায় পূজিতা হন।

 

মন্দিরের অনতিদূরে আর একটি কুণ্ড আছে। স্বচ্ছ জলের এই কুন্ডের জলে দেবীর পূজো হয় । মন্দিরের থেকে অল্প দূরে আর একটি শিবলিঙ্গ দেখা যায়।পাহাড়ে তিনটি গুহা । খুব সরু এবং দুর্গম প্রবেশ পথ । তিনটি প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্টি প্রাচীন গুহা আছে । একটি হল মহাকাল ভৈরবের গুহা। একটি জয়ন্তী রূপী মহাকালী মায়ের গুহা। অপর একটি গুহাতে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ দেখা যায়।এখানে শিবলিঙ্গ ও শয়ম্ভু।

 

শোনা যায় এক সময়ে শ্রীহট্টের এই মন্দিরে জয়ন্তীর রাজা দুর্গাপূজার নবমীর দিন নিজে দাঁড়িয়ে থেকে বলী দিতেন।পুজো হতো তন্ত্র মতে।পরবর্তীতে ব্রিটিশ আমলে রাজ তন্ত্রর অবসান ঘটলে বলী প্রথা বন্ধ হয়।

 

আজও এই শক্তি পীঠ অসংখ্য তন্ত্র সাধক ও মাতৃ সাধকদের আস্তানা। বিশেষ বিশেষ তিথিতে এখানে আগত ভক্তরা আজও পদে পদে অলৌকিক শক্তির উপস্থিতি অনুভব করেন

 

ফিরে আসবো অন্য এক শক্তি পীঠের কথা নিয়ে আগামী পর্বে। যথা সময়ে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

শক্তিপীঠ – দাক্ষায়নী

শক্তিপীঠ – দাক্ষায়নী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

তিব্বত ঘিরে সৃষ্টির আদি লগ্ন থেকে রয়েছে অসংখ্য রহস্য। একাধারে বৌদ্ধ এবং হিন্দু ধর্মে এটি একটি পবিত্র স্থান।একান্ন পীঠ এর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য সতীপীঠ হল মানস সতীপীঠ অথবা মানস শক্তিপীঠ যা তিব্বতের মানস সরোবরের কাছে অবস্থিত

 

শাস্ত্র মতে এখানে সতীর ডান হাত পতিত হয়েছিল।

মানস সতী পীঠে অধিষ্ঠিত দেবী হলেন দাক্ষায়নী এবং হর হলেন ভৈরব।

 

মানস সতী পীঠের মাহাত্ম্যের সবচেয়ে বড় একটি কারন পার্শ্ববর্তী মানস সরোবর। এই হ্রদের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক পৌরাণিক কাহিনী।অল্প দূরেই কৈলাশ পর্বত তিব্বতে অবস্থিত এই কৈলাস এবং মানস সরোবরকে কেন্দ্র করেই এই মানস শক্তি পীঠটি গড়ে উঠেছে।মানস সরবরের পবিত্র কুণ্ডকেই সতী পীঠ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

 

দাক্ষায়নী দেবী সাক্ষাৎ এখানে বিরাজ করছেন বলে মনে করা হয়।অনেকে রাত্রে কৈলাস পর্বতের উপরে দুটি আলোকছটা দেখতে পান। যাকে দৈব আলোক জ্যোতিও বলা হয়। সেই আলোক ছটা পরস্পরের অনুগামী। মানুষের বিশ্বাস অনুসারে এই আলোক ছটাই আসলে শিব এবং পার্বতীর প্রতিরূপ বা দেবী দাক্ষায়নী এবং তার ভৈরব এই অঞ্চলে নিত্য লীলা করে চলেছেন।

 

প্রচলিত বিশ্বাস মতে স্বর্গের দেবতা, দেবী, গন্ধর্ব, অপ্সরা সকলেই আসেন এই শক্তি পীঠে পাশাপাশি

সারা বছরজুড়ে প্রায় সব সময় এই শক্তি পীঠে ভক্তদের আনাগোনা চলতেই থাকে।

 

পবিত্র কৈলাস পর্বতের অপার সৌন্দর্য আর মানস সরোবরের প্রশান্তি এই সতী পীঠের অন্যতম বৈশিষ্ট্য বলাই যায়। এখানে আলাদা করে কোনরকম মন্দির নির্মাণ করা হয়নি। নেই কোনো আলাদা মূর্তি। দেবী মহামায়া এখানে পরম প্রকৃতির রূপে ধরা দেন ভক্তদের কাছে।

 

ফিরে আসবো আগামী শক্তিপীঠ পর্ব নিয়ে

পরের পর্বে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

শক্তি পীঠ – রত্নাবলী

শক্তি পীঠ – রত্নাবলী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আজকের শক্তি পীঠ পর্বে হুগলির খানাকুলে অবস্থিত রত্নাবলী নিয়ে আলোচনা করবো। জানাবো এই পীঠের ইতিহাস গুরুত্ব।

 

পুরান অনুসারে রত্নাবলীতে শ্বেত পলাশ গাছের নিচে দেবীর দক্ষিণ স্কন্ধ অর্থাৎ ডান দিকের কাঁধ পড়েছিল।পরবর্তীতে স্বপ্নাদেশ পেয়ে এখানে মন্দির বানান সাধক স্বরূপানন্দ ব্রহ্মচারী।

 

এই অঞ্চলের ভৌগোলিক ইতিহাস অনুসারে এক সময়ে খানাকুলের উপর দিয়ে রত্নাকর নদী বয়ে যেত। সেই নদী আজ আর নেই। নদীর চিহ্ন হিসেবে পড়ে রয়েছে মজা এক খাল।

নদীর শুকিয়ে যাওয়া নিয়েও একটি অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়। শোনা যায় একসময় এই নদী ছিল বিশাল চওড়া। একবার প্রসিদ্ধ সাধক অভিরাম গোস্বামী এই নদীতটে স্নান করছিলেন। হঠাৎই নদীর জল ফুলে ফেঁপে জোয়ার আসে। সেই জোয়ারের জলে অভিরামের কৌপিন ভেসে চলে যায়। প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ সাধক তখন নদীকে শাপ দেন। বলেন, এই মুহূর্তে তুই অন্ধ হয়ে যা। আমি যতদিন বেঁচে থাকব ততদিনই তুই অন্তর্বর্তী শিলা হয়ে মাটির তলা দিয়ে বইবি। ওপরে ব্যাপ্তি আর থাকবে না। তারপর থেকেই নদীর জল শুকোতে থাকে। নদী শুকিয়ে হয়ে যায় খাল যাকে এলাকায় কানা দ্বারকেশ্বর খাল বলেই ডাকা হয় ।

আদিকালের সেই রত্নাকর নদী তথা বর্তমানের কানা দ্বারকেশ্বর খালের ধারেই রত্নাবলী কালীমন্দিরটি অবস্থিত । এখানে আগে থেকেই ছিলো ঘন্টেশ্বর শিবমন্দির। পরবর্তীতে মা কালীর মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন সাধক স্বরূপানন্দ ব্রহ্মচারী। তখন থেকেই দেবীর পূজা হয়ে আসছে।

প্রতিষ্ঠার সময় এই মন্দিরটি ছিল একটি তালপাতার কুঁড়েঘর।

 

বহু বছর পর বর্ধমানের মহারাজা এই মন্দিরটি পাকা করেন। সেই কাঠামোই এখনও রয়েছে।স্বপ্নাদেশ পাওয়া স্বরূপানন্দ ব্রহ্মচারী প্রস্তুরীভূত দেবীর দক্ষিণ স্কন্ধটি মঙ্গলঘটের নীচে রেখে পুজো শুরু করেন।রত্নাকর নদীর তীরে মন্দিরটি গড়ে উঠেছিল বলেই এখানে মায়ের নাম রত্নাবলী।

সাধক স্বরূপানন্দ মহারাজ পঞ্চমুণ্ডির আসনে ঘটে পুজো শুরু করেন। তার বহু কাল পরে মায়ের মূর্তি স্থাপন করা হয়।এখানে মায়ের চার হাত।

যথারীতি এই মন্দিরের প্রথম পূজারী স্বরূপানন্দ মহারাজের দেখানো পথেই আজও পুজো অনুষ্ঠিত হয়। সেই মতোই সব রীতি নীতি পালন হয় । আজও এখানে নিত্য পুজোর পাশাপাশি অমাবস্যায় হোম যজ্ঞ সহ বিশেষ পুজোর আয়োজন হয়।বহু ভক্ত আসেন।

 

ফিরে আসবো আগামী পর্বে। শক্তি

পীঠের পরবর্তী পর্ব নিয়ে।পড়তে থাকুন ।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

শক্তি পীঠ – অবন্তিকা

শক্তি পীঠ – অবন্তিকা

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

আজকের শক্তিপীঠ পর্ব মধ্যপ্রদেশের উজ্জ্বয়ীনীতে অবস্থিত অবন্তীকা শক্তি পীঠ নিয়ে।

দেবী ভগবৎ পুরান মতে এই শক্তিপীঠে সতীর উপরের ঠোঁট পড়ে যদিও শ্রী অঙ্গ খুঁজে পাওয়া যায়নি আবার অনেকে বলেন দেবীর শ্রী অঙ্গ থেকেই ভৈরব পর্বতের জন্ম হয়েছে।এখানে

দেবী হলেন অবন্তি এবং ভৈরব হলেন লম্বকর্ণ।

ভরতচন্দ্র তার অন্নদা মঙ্গলে লিখেছেন –

” লম্বকর্ণ ভৈরব অবন্তী দেবী তায় “

এই অবন্তী শক্তি পীঠ শিপ্রা নদীর তীরে ভৈরব পাহাড়ে অবস্থিত।এই ভৈরব পর্বত প্রায় পৌরাণিক সময়ের।

এক কালে এই তীর্থ হরসিদ্ধি নামেও পরিচিত ছিলো।বন, শ্মশান, নদী সবই ঘিরে আছে এই শক্তি পীঠকে তাই অনেকে শাস্ত্রজ্ঞ মনে করেন এটি একটি আদর্শ তীর্থ ক্ষেত্র।

পুরান অনুসারে ত্রিপুরাসুরকে বধ করার আগে মহাদেব দেবী অবন্তীর পুজো করেছিলেন এবং দেবী তাকে খুশি হয়ে পশুপত অস্ত্র দিয়ে ছিলেন সেই অস্ত্র দিয়েই মহাদেব অত্যাচারী ত্রিপুরাসুরকে বধ করে দেবতা এবং সৃষ্টি রক্ষা করেছিলেন।

ভৈরব পর্বতে রয়েছে রঙিন পাথর দিয়ে তৈরী এক প্রাচীন মন্দির যার নির্মাণের সঠিক সাল তারিখ পাওয়া যায়না।মন্দিরের ছাদে এবং দেওয়ালে খুব সুন্দর পাথরের কাজ করা আছে

যা দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়।

দেবী দশভুজা এবং সিংহ বাহিনী রূপে পূজিতা হন দেবী অবন্তী দেবী দশভূজার দশটি হাতে দশ রকমের অস্ত্রশস্ত্র থাকে।দেবীর মাথায় রয়েছে মুকুট এবং গায়ে রয়েছে অনেক অনেক অলংকার বিশেষ তিথিতে ফুলের মালা এবং লাল রঙের শাড়িতে দেবীকে সাজানো হয়।

প্রত্যেক বারো বছর অন্তর শিপ্রা নদীর তীরে এই স্থানে কুম্ভ মেলা অনুষ্ঠিত হয়।সেই উপলক্ষ্যে লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী আসেন।

আজকের শক্তি পীঠ নিয়ে আলোচনা এখানেই শেষ করছি ফিরে আসবো আগামী পর্বে অন্য একটি শক্তিপীঠ নিয়ে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

শক্তি পীঠ – যোগ্যদা

শক্তি পীঠ – যোগ্যদা

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আজ জানাবো এই বাংলারই পূর্ব বর্ধমানে অবস্থিত অত্যান্ত জাগ্রত শক্তি পীঠ দেবী যোগ্যদার কথা|জানবো তাকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হওয়া বেশ কিছু কিংবদন্তী ও রহস্যময় কাহিনী|জানবো দেবী যোগ্যদার আধ্যাত্মিক ও ধার্মিক তাৎপর্য|

 

এলাকায় অন্যান্য লৌকিক দেবদেবীর মন্দির ও পূজার প্রচলন থাকলেও দেবী যোগ্যদাকে এখানে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়|সংরক্ষিত একটি প্রাচীন ধার্মীক পুঁথি থেকে দেবী যোগ্যতা সম্পর্কে বলা হয়েছে

 

“বাম স্কন্ধে লক্ষণ নিল,

দক্ষিণ স্কন্ধে রাম,

মাথায় প্রতিমা করে চলে হনুমান ।

শ্রীরাম বলি হুংকার ছাড়িলো হনুমান ।ক্ষীরগ্রাম মধ্যে হনু দিলা দরশন।”

 

বাংলার শক্তি পীঠ গুলির মধ্যে এই পীঠটি অন্যতম|পীঠ নির্নয় তন্ত্র মতে দেবী সতীর ডান পায়ের একটি আঙ্গুল পতিত হয়েছিলো এই স্থানে|একটি প্রচলিত কিংবদন্তী অনুসারে এই দেবীকে প্রতিষ্ঠিত করে ছিলেন স্বয়ং বীর হনুমান, এবং তিনি স্বয়ং পুরাকালে দেবীকে দর্শন করতে ও তার পূজা করতে আসতেন|এই দেবী যোগ্যদা বর্তমানে ক্ষীর গ্রামের অধিষ্টাত্রী কুলদেবী।

 

শোনা যায় এক কালে পার্শবর্তী অঞ্চলে বলি প্রথা প্রচলন থাকলেও বৈষ্ণব প্রভাবের ফলে যোগ্যদা দেবীর কাছে পশু বলি হয়না|অবশ্য এ নিয়ে একটি রোমাঞ্চকর অলৌকিক কাহিনীও প্রচলিত আছে এই এলাকায়|প্রাচীন কালে স্থানীয় রাজা দেবীকে প্রতিষ্ঠা করে প্রতিশ্রুতি দিলেন যে তিনি দেবী প্রতিদিন বলি দেবেন, কথামতো রাজা রাজ্যে পালার ব্যবস্থা করলেন, বলি শুরু হলো, প্রতিদিন একটি করে বলি|এইভাবে একটি ব্রাহ্মণের ঘরে এল পালা|প্রান ভয়ে আগের দিন ব্রাহ্মণ গ্রাম ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করলেন এবং এক অলৌকিক ঘটনা ঘটলো, ব্রাহ্মণ কে বাধা দিলেন ব্রাহ্মনী বেশি দেবী । ব্রাহ্মণ কে অভয় দিয়ে দেবী বললেন, ” আমি সেই যোগ্যদা ।আর আমি মানুষের রক্ত খাই না ।খাবোনা। রাজা নিজের মত চাপিয়ে দিয়েছে তোমাদের ওপর। তুমি ঘরে ফিরে যাও” এরপর দেবী যোগ্যতা তখন দশভুজা মূর্তি ধারণ করে ব্রাহ্মণ কে দেখা দিলেন|সেই থেকে ক্ষীর গ্রামের দেবী যোগ্যতার উদ্দেশ্য বলি বন্ধ হয়|

 

গোটা অঞ্চলে একাধিক স্থানে দেবী যোগ্যতার পূজা হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে|মূলত তন্ত্র মতেই দেবীর পূজা হয়|দেবী দুর্গার একটি রুপ দেবী যোগ্যদা।আবার ভদ্রকালী হিসেবেও তার পূজা হয় একটি অতি প্রাচীন পাথর খন্ডের উপর চিত্রিত দেবীকে মূলত পূজা করা হয় বিশেষ বিশেষ তিথীতে|দেবীর একটি প্রতিরূপকে প্রয়োজনে জনসমক্ষে আনা হয়|ক্ষীর গ্রামের দেবী যোগ্যতা কে নিয়ে আরো একটি রহস্যময় প্রথা প্রচলিত আছে,দেবীর মুল বিগ্রহ টি একটি পুকুরে ডুবিয়ে রাখা হয় ও পূজার সময় জল থেকে তুলে এনে তা পূজা করা হয় এবং পূজা হয় মধ্যরাতে|অত্যান্ত গোপনীয়তার সাথে এই পক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়|

 

বাংলা এবং দেশ বিদেশে নানা স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শক্তিপীঠ গুলির তাৎপর্য ব্যাখ্যা, অজানা কথা এবং রোমাঞ্চকর বহু ঘটনা নিয়ে চলতে থাকবে এই ধারাবাহিক লেখা। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন।ধন্যবাদ।

শক্তি পীঠ – বর্গভীমা

শক্তি পীঠ – বর্গভীমা

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

পুরাণে কথিত একান্ন সতীপীঠের একপীঠ তমলুকের দেবী বর্গভীমা।আজকের পর্বে এই

শক্তিপীঠ নিয়ে আলোচনা করবো।

 

কথিত আছে বিষ্ণুর সুদর্শন চক্রের খন্ডিত দেবী সতীর বাম পায়ের গোড়ালি এখানে পড়েছিল। পুরান মতে দেবী বর্গভীমার এই মন্দির নির্মাণ করেছিলেন স্বয়ং দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা।

 

দেবী বর্গভীমা মায়ের মন্দির নির্মাণের সাথে একটি অলৌকিক ঘটনা জড়িত আছে এবং এই ঘটনাটি চন্ডীমঙ্গল কাব্যের নায়ক ধনপতি সওদাগরকে নিয়ে। ধনপতি সওদাগর তাম্রলিপ্ত বন্দর হয়ে বাণিজ্যতরী নিয়ে সিংহল বা আজকের শ্রী লঙ্কায় যাত্রাকালে দেখতে পান এক জন সোনার কলসি নিয়ে যাচ্ছে। ধনপতি সওদাগর কৌতূহলবশত ওই লোককে জিজ্ঞেস করেন এই সোনার কলসি কোথায় পেয়েছে, উত্তরে তিনি বলেন জঙ্গলের মধ্যে একটি পবিত্র কুণ্ড আছে যেখানে পেতলের পাত্র ডোবালে সোনার পাত্র হয়ে যায়। এরপর ধনপতি সওদাগর সেই কুন্ড খুঁজে বের করেন এবং অনেক পেতলের পাত্র পবিত্র কুন্ডের জলে ডুবিয়ে সোনায় রূপান্তরিত করে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। বাণিজ্যে প্রভূত লাভ হয়। ফিরে আসার সময় তাম্রলিপ্ত বন্দরে নোঙ্গর করে ঐ পবিত্র কুণ্ড ঘিরে দেবী মায়ের মূর্তি ও মন্দির নির্মাণ করেন।সেই মন্দিরই আজকের বর্গভীমা মন্দির।

 

আরো একটি কিংবদন্তী অনুসারে তাম্রলিপ্ত নগরীর রাজা তাম্রধ্বজ দেবীবরণ মায়ের মন্দির নির্মাণ করে। রাজা তাম্রধ্বজের নিয়োজিত এক জেলেপরিবার প্রত্যহ রাজপরিবারে মাছ সরবরাহ করত। রাজ পরিবারে প্রতিদিন জ্যান্ত মাছ নিয়ে যাওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ঐ জেলে বউয়ের প্রতিদিন জ্যান্ত মাছ রাজ পরিবারের জন্য জোগাড় করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এরকম একদিনে ওই জেলে বউ মরা মাছ নিয়ে জঙ্গলের সম্পুর্ন পথ দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে রাজপরিবারের উদ্দেশ্যে যাওয়ার সময় রাস্তায় অপরিচিতা নারীর দেখা পান। ঐ জেলে বউ তার সমস্যার কথা সবিস্তারে সেই নারীকে বলেন। তখন সেই অপরিচিতা নারী জেলে বউকে বলেন তার মরা মাছ জীবিত করা সম্ভব। জঙ্গলের মধ্যে এক কুন্ড আছে সেই কুন্ডের জল মাছের উপর ছড়ালেই মরা মাছ জ্যান্ত হয়ে যাবে। এই কথা বলার পর ওই অপরিচিতা নারীর দেখা আর পাননি ঐ জেলে বউ। অপরিচিতা নারীর বর্ণিত পবিত্র কুন্ডু খুঁজে পান জেলে বউ এবং কোন সেই কুণ্ডের জল মরা মাছের ওপর ছড়াতেই মাছ জ্যান্ত হয়ে যায়। এরপর জেলে বউ প্রতিদিনই কুন্ডে জল ছিটিয়ে মরা মাছ জ্যান্ত করে রাজপরিবারের জন্য নিয়ে যায়। প্রতিদিন জ্যান্ত মাছ সরবারহ দেখে তাম্রলিপ্ত রাজার সন্দেহ। জেলে বউকে জিজ্ঞেস করতেই সে সব সত্যি কথা বলে দেয়। রাজা তাম্রধ্বজ সপারিষদ সেই কুণ্ড দেখতে এলে দেখতে পান একটি বেদী ও বেদীর উপর অধিষ্ঠিত দেবী মূর্তি। রাজা তাম্রধ্বজ জঙ্গল পরিষ্কার করে ওই জায়গায় মন্দির নির্মাণ করেন। অনেকের মতে এটি দেবী বর্গভীমা মন্দির রূপে বর্তমানে পুজিত হয়।

 

বর্তমানে মন্দিরের গর্ভগৃহে কালো পাথরে তৈরি বর্গভীমা মায়ের মূর্তি বিরাজ করছে দেবী উগ্রতারা রূপে।পুরান মতে দেবী ধর্ম-অর্থ-কাম এবং মোক্ষ এই চারটি বর্গ দান করেন বলেই

এখানে মায়ের নাম দেবী বর্গভীমা।

 

চলবে শক্তি পীঠ নিয়ে ধারাবাহিক লেখা

ফিরে আসবো আগামী পর্বে অন্য কোনো

শক্তি পীঠ নিয়ে। পড়তে থাকুন|

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

শক্তি পীঠ – সুগন্ধা

শক্তি পীঠ – সুগন্ধা

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

শক্তি পীঠ পর্বে আজ যে বিশেষ পীঠটির কথা লিখবো তা বর্তমানে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের বরিশালের শিকারপুর গ্রামে অবস্থিত এই বিশেষ শক্তি পীঠর নাম সুগন্ধা।

 

পুরান মতে দেবীর নাসিকা পতিত হয়েছিলো এই স্থানে|দেবীর ভৈরব এখানে ত্র্যম্বক|মন্দিরের স্থান টি অতি সুন্দর, পাশ দিয়ে বয়ে গেছে সুগন্ধা নদী।

এককালে স্থান টি ছিলো অতি দুর্গম, দুর দুর থেকে তন্ত্র সাধকরা আসতেন এখানে তন্ত্র সাধনা করতে|

 

অন্নদা মঙ্গল কাব্যে সুগন্ধা নামক শক্তি পীঠের উল্লেখ আছে, সেখানে বলা হচ্ছে –

 

সুগন্ধায় নাসিকা পড়িল চক্রহতা|

ত্র্যম্বক ভৈরব তাহে সুনন্দা দেবতা|

 

এছাড়া শিব চরিত এবং পীঠ নির্নয় তন্ত্রেও শক্তি পীঠ সুগন্ধার উল্লেখ আছে।

 

বহু কাল পূর্বে শিকার পুরের জমিদার শ্রীরাম রায় স্বপ্নাদেশ পেয়ে গভীর জংগলের মধ্যে খুঁজে পান ত্রম্বকেশ্বর মহাদেবের মূর্তি এবং ওই স্থানেই নির্মাণ করান শিব মন্দির।সেই সময়ে ত্রম্বকেশ্বর শিব ছিলেন এখানে আরাধ্য দেবতা।

পরবর্তীতে আরো একটি অলৌকিক ঘটনা ঘটে।শিকারপুর গ্রামে পঞ্চানন চক্রবর্তী নামে একজন নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ বাস করতেন|দেবী কালী এই ব্রাহ্মণ কে স্বপ্নাদেশ দিয়ে সুগন্ধা নামক এই বিশেষ শক্তি পীঠের সন্ধান দেন|পরবর্তীতে এই ঘটনা লোক মুখে প্রচারিত হয় এবং দেবীর মন্দির স্থাপিত হয়|

 

অত্যন্ত দুক্ষের বিষয় প্রাচীন সুগন্ধার মন্দির টি বহুদিন আগেই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে, এমনকি প্রাচীন দেবী মূর্তি ও আর নেই|বর্তমান মন্দির ও মূর্তি দুটোই আধুনিক সময়ে নতুন করে নির্মিত|দেবীর প্রস্তুরীভূত দেহাংশ ও এখানে সংরক্ষিত নেই যা অন্য অনেক শক্তি পীঠে আছে|

 

বর্তমানে এখানে দেবী উগ্রতারার মূর্তি বিরাজিতা। তাকেই দেবী সুগন্ধা রূপে পূজা করা হয় । মাথার ওপর কার্ত্তিক, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব , গণেশ বিরাজমান |দেবী খড়্গ, খেটক, নীলপদ্ম, নর মুণ্ডের কঙ্কাল ধারন করে আছেন |

 

সুগন্ধা মন্দিরে নিষ্ঠা সহকারে ও মহা সমারোহে পালিত হয় শিব চতুর্দশী|সেই উপলক্ষে ব্যাপক জন সমাগম হয়।

 

আজ এখানেই শেষ করছি শক্তি পীঠ সুগন্ধা

নিয়ে আলোচনা।যথা সময়ে পরের পর্বে

অন্য একটি শক্তি পীঠ নিয়ে

ফিরে আসবো।পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

শক্তি পীঠ – নলাটেশ্বরী

শক্তি পীঠ – নলাটেশ্বরী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

বাংলার শক্তি পীঠ গুলির অধিকাংশই অবস্থিত বীরভূমে।আজকের একান্ন পীঠ পর্বে লিখবো

বাংলার শক্তি পীঠেগুলির অন্যতম একটি পীঠ নিয়ে যা বীরভূমের নলহাটিতে অবস্থিত এবং নলাটেশ্বরী নামে প্রসিদ্ধ।

 

অনেকে বলেন, ২৫২ বঙ্গাব্দে ব্রহ্মচারী কামদেব স্বপ্নাদেশে কাশী থেকে এসে এই পীঠস্থানটি আবিষ্কার করেন। আবার জনশ্রুতি আছে যে আজ থেকে প্রায় পাঁচশো বছর আগে স্মরনাথ শর্মা নামে এক সাধক, স্বপ্নে দেবী নলাটেশ্বরীর দেখা পেয়ে জানতে পারেন, এখানেই সতীর খণ্ডিত দেহাংশ শিলারূপে অবস্থান করছে। তারপর সাধক স্মরনাথই এই জায়গা আবিষ্কার করে দেবীর নিত্যপুজার ব্যবস্থা করেন। তারপর ধীরে ধীরে প্রচারিত হয় দেবী নলাটেশ্বরীর মহাত্ম।

 

শাস্ত্র মতে এখানে সতীর গলার নলি পড়েছিল। নলাটেশ্বরী থেকেই এলাকার নাম নলহাটি।

 

নলহাটিতে আছে ছোট্ট জঙ্গলাবৃত এক প্রাচীন টিলা। তারই এক প্রান্তে দেবী নলাটেশ্বরীর অধিষ্ঠান।এককালে বহু সাধকের সাধনার সাক্ষী জঙ্গল ঘেরা এই পাহাড়। এক সময়ে এখানে সাধারণ মানুষের তেমন আনাগোনা ছিল না। কেবলমাত্র যাতায়াত ছিল দুর্ধর্ষ দস্যু এবং বীরাচারী তান্ত্রিকদের।

 

ইতিহাস বলছে কোনো এক সময়ে নাটোরের রানি ভবানী বর্তমান মন্দির তৈরি করান।বর্তমানে এখানে গণেশও পাহাড়ে গায়ে শিলারূপে অধিষ্ঠিত।রয়েছে সিদ্ধিদাতা গণেশের প্রাচীন একটি মন্দির।কথিত আছে, ভৈরব মন্দির স্থাপনের সময়, মাটির নীচ থেকে উঠে এসেছিল শ্রীবিষ্ণুর পদচিহ্ন আঁকা শিলাখণ্ড! আজও দেবী ও ভৈরবের আগে প্রতিদিন এই শিলাখণ্ডের পুজো হয়।

 

বিশেষ বিশেষ অমাবস্যা তিথিতে খুব সূর্য ওঠার আগে দেবীর মঙ্গলারতি হয়।

তারপর শুরু হয় নিত্যপুজো।গভীর রাতে একশো আটটি টি প্রদীপ জ্বালিয়ে মায়ের বিশেষ আরতি হয়।যুগ যুগ ধরে এই প্রথা চলে আসছে।

 

ফিরে আসবো আগামী পর্বে। শক্তি পীঠের পরবর্তী পর্ব নিয়ে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

শক্তি পীঠ – ভ্রামরী

শক্তি পীঠ – ভ্রামরী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

জলপাইগুড়ির জল্পেশ ধামেই রয়েছে একটি জাগ্রত সতী পীঠ ভ্রামরী।স্বয়ং জল্পেশ্বর মহাদেব এই শক্তি পীঠের ভৈরব। একান্ন পীঠের অন্যতম এই শক্তিপীঠে নিয়ে আজকের পর্বে।

 

ভ্রামরী সতীপীঠ উত্তর বঙ্গের ত্রিস্রোতা বা তিস্তা নদীর ধারে অবস্থিত চার পাশে বৈকুণ্ঠ পুরের জঙ্গল।

 

পীঠনির্ণয়তন্ত্র মতে এখানে দেবীর বাম চরণ পড়েছিল। বর্তমান মন্দিরটির নির্মাণ নিয়েও একটি জনশ্রুতি আছে।কয়েক দশক আগে লাল শালু পরা এক সাধক এসেছিলেন। তাঁর জটা পা পর্যন্ত ঠেকত। তিনি দীর্ঘদিন এই মন্দিরে পূজা ও যজ্ঞ করতেন। ওই সাধকই তিনটি মোটা গাছের গুঁড়ির নীচে দেবীর পাথররূপী বাম পায়ের সন্ধান পান।

তারপরই সতী পীঠ হিসেবে এই মন্দিরের জনপ্রিয়তা গোটা উত্তর বঙ্গ জুড়ে দাবা নলের মতো ছড়িয়ে পরে।নতুন করে মন্দির সংস্কার হয়।ভক্ত সমাগম বাড়তে শুরু করে।

 

পুরাণ অনুসারে অরুণাসুর নামে এক অসুর ব্রহ্মার থেকে বরদান পেয়েছিল যে কোনো দ্বিপদী বা চতুষ্পদী প্রাণী তাকে হত্যা করতে পারবে না। এই বরের অহংকারে মত্ব হয়ে সে কৈলাস আক্রমণ করেছিল তখন দেবী পার্বতী ভ্রামরী রূপ ধরে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন এবং সাথে নেন শতসহস্র ভ্রমরকে। তারা অরুণাসুরকে দংশন করে এবং শেষে বধ করে। দেবীর এই ভ্ৰমরী রূপেরই পুজো হয় জলপাইগুড়ির এই শক্তি পীঠে।

 

স্থানীয় বাসিন্দাদের বিশ্বাস, দেবী এখানে অত্যন্ত জাগ্রত। যাঁর কৃপায় বহু বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।তা সে আইনি বিবাদই হোক বা রোগ ব্যাধি ।

শোনা যায় দেবীর মন্দিরে জানানো সব গুলি মনোস্কামনা আজ অবধি পূর্ণ হয়েছে।

ভ্রামরী দেবীর মন্দিরে দুর্গাপুজো এবং মাঘি পূর্ণিমায় বিশেষ পুজোপাঠ হয়। এই সময় দূর-দূরান্ত থেকে এখানে বহু ভক্ত আসেন।

 

ফিরে আসবো শক্তি পীঠের পরবর্তী পর্ব নিয়ে। আগামী দিনে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন।ধন্যবাদ।