Home Blog

জগন্নাথদেব এবং ভক্ত রঘু

জগন্নাথদেব এবং ভক্ত রঘু

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

চন্দন যাত্রার মধ্যে দিয়ে পুরী সহ গোটা বিশ্বে শুরু হয়ে গেছে রথ যাত্রার প্রস্তুতি। বিশেষ এই সময়ে আমি শুরু করছি জগন্নাথ দেবকে নিয়ে ধারাবাহিক লেখালেখি ।আজ প্রভু জগন্নাথের একটি বিশেষ লীলা আপনাদের সামনে উপস্থাপন করবো। এই লীলাতে প্রভুর সখা ভাব ফুটে উঠেছে।

 

গ্রীষ্মে বাঙালির অন্যতম প্রিয় ফল কাঁঠাল। এই কাঁঠাল জগন্নাথদেবের ও অত্যন্ত প্রিয়। নিজের প্রিয় ফলপেতে একবার এক কান্ড ঘটিয়েছিলেন জগন্নাথ।একবার ভগবান জগন্নাথ তার এক ভক্ত রঘুকে বালক রূপে দর্শন দিলেন এবং তাঁকে রাজার বাগান থেকে কাঁঠাল চুরি করতে তাঁর সঙ্গে যেতে বললেন। রঘু বলল, “তুমি কেন কাঁঠাল চুরি করতে চাও? তোমার যদি কাঁঠাল খাবার ইচ্ছা হয়, আমাকে বল-আমি তোমার জন্য সুন্দর একটি কাঁঠাল এনে দেব।” বালকরূপী জগন্নাথ সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বললেন কৃষ্ণরূপে আমি অন্যদের বাড়িতে মাখন চুরি করতে যেতাম। চুরি করা দ্রব্য ভোজনে বিশেষ আনন্দ আছে। আজ তোমাকে আমি উপলব্ধি করাব-চুরি করা কি আনন্দের। আমার সঙ্গে এসো।” রঘু বুঝলো এ প্রভুর লীলা|নিরুপায় হয়ে রঘু প্রভুর প্রস্তাবে সম্মত হল এবং তাঁর সঙ্গ নিল।

 

এরপর চুপিসারে তারা দুজনে রাজার বাগানে প্রবেশ করলেন। জগন্নাথ রঘুকে বললেন, “তুমি গাছে চড়বে। আমি মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকব। তুমি সবচেয়ে সুন্দর ও বড় কাঁঠালটি পাড়বে এবং মাটিতে ফেলবে। আমি এখানে দাঁড়িয়ে থাকব। তারপর আমরা উভয়ে কাঁঠাল নিয়ে পালাব।” রঘু যথাযথভাবে প্রভুর নিদের্শ অনুসরণ করল। রঘু কাঁঠাল গাছে উঠে সবচেয়ে বড় ও ভাল কাঁঠালটি খুঁজে বের করল এবং সেটা পাড়ল। ‘জগন্নাথ’, চাপাস্বরে রঘু জগন্নাথকে ডাকল। ‘তুমি কি তৈরি?’ জগন্নাথ উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি তৈরি, নিচে ফেল !’ রঘু কাঁঠাল নিচে ফেলল- জগন্নাথ সেটা ধরবেন ভেবে। কিন্তু কোথায় জগন্নাথ ! তিনি ইতিমধ্যেই বাগান থেকে অদৃশ্য হয়েছেন।কাঁঠাল ধরার জন্য কেউই সেখানে ছিল না। সশব্দে কাঁঠালটি মাটিতে পড়ে ফেটে চৌচির হল। যখন রাজার বাগানের মালী ঐ শব্দ শুনল তখন রঘু

ধরা পড়লো এবং রাজার কাছে খবর গেলো|

 

রাজা তাঁর মন্ত্রীদের সাথে নিয়ে বাগানে গেলেন। রাজা জানতেন রঘু জগন্নাথদেবের অত্যন্ত প্রিয় ভক্ত। নিছক চুরি করার জন্য তিনি এই কাজ করবেন না। নিশ্চই এর পেছনে অন্য কোনো রহস্য আছে।রাজা রঘুকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘প্রভু, তোমার যদি কাঁঠাল খাওয়ার ইচ্ছা হয়ে থাকে, তাহলে গভীর রাত্রে আমার বাগানে এসে গাছে চড়ার কি প্রয়োজন ছিল? তুমি আমাকে একবার বলতে পারতে। আমি কাঁঠাল পাড়ার ব্যবস্থা করে তোমার বাড়িতে পাঠিয়ে দিতাম!’ রঘু তখন প্রভু জগন্নাথ কিভাবে তাঁকে ঠকিয়েছে- সব বৃত্তান্ত বলল। সেখানে উপস্থিত সবাই প্রভুর রম্য এই লীলা শুনে খুবই আনন্দ পেল এবং সকলেই হাসতে লাগল। তাঁরা রঘুর সৌভাগ্যর জন্য তাঁর গুনগান করলেন।

 

সখ্যরসে এই ভাবে প্রভু জগন্নাথ তার ভক্ত দের সঙ্গে বহু বার বহু লীলা করেছেন।পরবর্তী পর্বে আবার ফিরে আসবো প্রভু জগন্নাথ সংক্রান্ত ধারাবাহিক আলোচনা নিয়ে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

জগন্নাথ দেব এবং কর্মাবাই

জগন্নাথ দেব এবং কর্মাবাই

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

জগন্নাথ ধাম নানা কারণে প্রসিদ্ধ তার মধ্যে অন্যতম প্রভুর ছাপ্পান্ন ভোগ।কথিত আছে চার ধামের মধ্যে এই জগন্নাথ ধামে বিষ্ণু জগন্নাথ রূপে আসেন আহার করতে। জগন্নাথদেবের অন্যতম প্রিয় খাদ্য খিচুড়ি। তবে এই খিচুড়ি কোনো সাধারণ খিচুড়ি নয়।এই খিচুড়ির নাম কর্মাবাই খিচুড়ি’। কেনই বা এই নাম আর কিবা এই খিচুড়ির ইতিহাস জানবো আজকের পর্বে।

 

পুরীতে এক সময়ে কর্মাবাই নামে একজন বৃদ্ধা বাস করতেন। তিনি জগন্নাথকে নিজের পুত্র রূপে দেখতেন এবং তাঁকে বালক রূপে সেবা করতেন। বৃদ্ধার মনে হত সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই জগন্নাথ দেবের খিদে পেয়ে যায়। তাই তিনিও খুব সকালে ঘুম থেক উঠে স্নান না করেই খিচুড়ি রান্না করতে বসতেন।প্রতিদিন ভোরে বালক রূপ ধরে জগন্নাথদেব কর্মাবাইয়ের খিচুড়ি খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করতেন। এই খিচুড়ির স্বাদ ছিল জগন্নাথদেবের বড়ই প্রিয়।

 

একদিন মন্দিরের এক পূজারী কর্মাবাইকে স্নান

না করেই খিচুড়ি রান্না করে জগন্নাথদেবকে ভোগ নিবেদন করতে দেখেন। তিনি কর্মাবাইকে নিষেধ করে বলেন যে প্রভুর ভোগ রান্না এবং নিবেদনের আগে দেহে এবং মনে বিশুদ্ধ হওয়া জরুরি।স্নান না করে ভোগ রান্না শাস্ত্র বিরুদ্ধ।পরদিন সাধুর কথামতো কর্মাবাই স্নান সেরে নিয়ম মেনে যখন জগন্নাথ দেবকে খিচুড়ি ভোগ দেন।তাতে দেরি হয়ে যায় অনেকটা। সকাল থেকে ক্ষুদার্থ জগন্নাথ দেব

কর্মা বাইয়ের বানানো গরম খিচুড়ি খেয়ে দুপুরে আর ভোগ গ্রহণ করলেন না।পরে অনুসন্ধান করে দেখা যায় প্রভুর মুখে খিচুড়ি লেগে আছে।

 

পরবর্তীতে জগন্নাথদেব স্বয়ং তার বিশেষ এবং ঘনিষ্ট কয়েকজন সেবককে কর্মাবাইয়ের বৃত্তান্ত শোনান এবং তাদের আদেশ করেন তিনি যেন আগের মতোই সকালে স্নানের আগেই জগন্নাথের জন্য খিচুড়ি রান্না করে ভোগ নিবেদন করেন।

সেবকরা কর্মাবাই এর কাছে ছুটে গিয়ে ক্ষমা চান এবং প্রভুর আদেশ শোনান।

 

শুরু হয় খুব সকালে বাল্য ভোগে জগন্নাথ দেবকে খিচুড়ি দেওয়ার নিয়ম।যতদিন কর্মা বাই জীবিত ছিলেন তিনি নিজেই খিচুড়ি বানাতেন।শোনা যায় কর্মাবাইয়ের মৃত্যুতে জগন্নাথদেব কেঁদে ছিলেন।

কর্মা বাইয়ের অনুপস্থিতিতে পুরীর রাজার নির্দেশে পুরী মন্দিরের বাল্যভোগে ” কর্মাবাই খিচুড়ি ” রান্না চালু হয়।সেই প্রথা আজও চলছে।

 

জগন্নাথদেব সংক্রান্ত আরো অনেক এমন তথ্য এবং ইতিহাস নিয়ে ফিরে আসবো আগামী পর্ব গুলিতে। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন।ধন্যবাদ।

জগন্নাথ দেবের চন্দন যাত্রা

জগন্নাথ দেবের চন্দন যাত্রা

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

বাঙালির দূর্গাপুজোর সূচনা যেমন মহালয়া থেকে হয়ে যায় তেমনই প্রভু জগন্নাথের রথ যাত্রার তোড়জোড় শুরু হয়ে যায় পবিত্র চন্দন যাত্রার দিন থেকেই। এই চন্দন যাত্রা নিয়ে নানা পৌরাণিক কাহিনী প্রচলিত আছে। আজ থেকে এক সপ্তাহ জুড়ে চন্দন যাত্রা সহ জগন্নাথদেব সংক্রান্ত নানা শাস্ত্রীয় বিষয় নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে লিখবো। আজ শুরু করবো স্নান যাত্রার মহাত্ম দিয়ে।

কথিত আছে শ্রীজগন্নাথদেব মহারাজ ইন্দ্রদ্যুম্নকে স্বপ্নে দর্শন দিয়ে বৈশাখী শুক্লা অক্ষয় তৃতীয়াতে সুগন্ধি চন্দন দ্বারা তার শ্রী অঙ্গে লেপন করার নির্দ্দেশ দিয়েছিলেন। সেদিন থেকে শুরু হয় চন্দন যাত্রা। উৎসব। গ্রীষ্ম ঋতুতে প্রভু জগন্নাথ কর্পূর এবং চন্দন লেপনের মাধ্যমে গরমের কষ্ট থেকে রেহাই পান তাই এই রীতি তিনি নিজে শুরু করেছিলেন বলে মনে করা হয়।আয়ুর্বেদ মতে
চন্দন হল সর্বশ্রেষ্ঠ প্রলেপন। যেহেতু ভারতে বৈশাখ মাস অত্যন্ত উষ্ণ থাকে তাই চন্দনের শীতল গুণ ভগবানের আনন্দ প্রদান করে। জগন্নাথের দুই চক্ষু ব্যতীত সর্বাঙ্গে চন্দন লেপন করা হয়ে থাকে। এই সময়ে বিগ্রহগকে নিয়ে শোভাযাত্রা করা হয় এবং জগতের নাথকে মন্দির পুষ্করিণীতে নৌকাবিহার করানো হয়ে থাকে।

প্রতি বছর অসংখ্য ভক্তদের উপস্থিতিতে বিখ্যাত চন্দন যাত্রা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
ঐতিহ্য অনুসারে এই দিনই বিখ্যাত রথযাত্রার
রথ নির্মাণের সূচনা হয়।

শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতে চন্দন যাত্রা সম্পর্কে এই সুন্দর অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ আছে যেখানে দেখা যাচ্ছে বৃন্দাবনে পরম বৈষ্ণব শ্রীমাধবেন্দ্র পুরীকে স্বপ্নে তাঁর আরাধ্য শ্রীগোপাল বলছেন, “আমার শরীরের তাপ জুড়োচ্ছে না। শ্রী ক্ষেত্র থেকে চন্দন নিয়ে এসো এবং তা ঘষে আমার অঙ্গে লেপন কর, তা হলে তাপ জুড়োবে।” বৃদ্ধ মাধবেন্দ্র পুরী পূর্বভারতে নীলাচলে জগন্নাথধাম পুরীতে এসে রাজার কাছে পূর্ব স্বপ্নগত সমস্ত কথা বললেন। রাজা তার আরাধ্য গোপালের জন্য এক মণ সুগন্ধি চন্দন দেন। চন্দন নিয়ে ফেরার মাধবেন্দ্র পুরী রেমুনা নামক স্থানে অবস্থিত শ্রীগোপীনাথ মন্দিরে আসেন। সেই রাত্রে তার আরাধ্য গোপাল তার স্বপ্নে এসে বলেন “হে মাধবেন্দ্র পুরী, আমি ইতিমধ্যেই সমস্ত চন্দন ও কর্পূর গ্রহণ করেছি। এখন কর্পূর সহ এই চন্দন ঘষে ঘষে শ্রীগোপীনাথের অঙ্গে লেপন কর। গোপীনাথ ও আমি অভিন্ন।

পরের দিন মাধবেন্দ্র পুরী পুরীরর রাজা কে সব বলেন এবং ঠিক হয় দীর্ঘ ২১ দিন ধরে প্রত্যহ একজন পূজারী প্রভু গোপীনাথের শ্রীঅঙ্গে চন্দন লেপন করবেন । তাই হয়। সেইদিন থেকেই চন্দন যাত্রা শুরু হয়। সেই রীতি নীতি আজও সমান ভাবে চলছে।তবে বর্তমানে পুরীর জগন্নাথ দেবের চন্দন যাত্রা সর্বাধিক জনপ্রিয় এবং প্রসিদ্ধ। চন্দন যাত্রার পর দেবস্নান পূর্ণিমায় হবে স্নান যাত্রা এবিং সব শেষে রথ যাত্রা

প্রভু জগন্নাথ সম্পর্কে আরো অনেক তথ্য এবং ঘটনা নিয়ে চলতে থাকবে ধারাবাহিক আলোচনা। ফিরে আসবো আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী কথা – বুড়া কালীর পুজো

কালী কথা – বুড়া কালীর পুজো

 

পন্ডিতজী ভৃগুশ্রী জাতক

 

দক্ষিণ দিনাজপুরের শতাব্দী প্রাচীন কালী পুজোর মধ্যে অন্যতম হল বালুরঘাট এলাকার বুড়া কালীর পুজো।আজকের কালী কথায় এই পুজো নিয়ে লিখবো।

 

লোক মুখে শোনা যায় কয়েকশো বছর আগে বর্তমান বালুরঘাট বুড়া কালী মাতার মন্দিরের পাশ দিয়ে নাকি আত্রেয়ী নদী বইত। মন্দির ও বাজারের জায়গায় ছিল ঘন জঙ্গল।সেই সময় শুরু হয় এই পুজো।

 

শতাব্দী প্রাচীন পুজো হলেও এর সঠিক বয়স কত তা কেউ বলতে পারে না।তবে একটি অলৌকিক ঘটনার কথা শোনা যায়। জনশ্রুতি আছে এক সময় আত্রেয়ী নদীর ধারে নিজে থেকেই নাকি ভেসে ওঠে বুড়া কালী মাতার বিগ্রহ বা শিলা খন্ড। এক তান্ত্রিক সেই সময় ওই বিগ্রহকে তুলে নিয়ে এসে পুজো দেন। তারপর থেকেই শুরু পুজোর।

 

একটা সময় নাকি কলকাতার রানি রাসমণি এই মন্দিরে পুজো দিতে আসতেন। বজরায় করে এসে তিনি আত্রেয়ী নদী থেকে জল নিয়ে এসে মায়ের পুজো দিয়ে আবার ফিরে যেতেন কলকাতায়।

 

প্রথম দিকে টিনের ঘেরা দিয়ে বুড়া কালী মাতার পুজো শুরু হয়। বর্তমানে বিশাল আকার মন্দিরের পুজিত হন বুড়া কালী। পুজোর দিন মায়ের মূর্তিতে সারা গায়ে সোনা থেকে রুপোর অলঙ্কারে সুসজ্জিত থাকে।

 

জনশ্রুতি আছে আগে নাকি কুড়ি কিলো ওজনের শোল মাছ বলি দেওয়া হত। এই পুজোকে ঘিরে শুধুমাত্র দক্ষিণ দিনাজপুরবাসীর নয় সমগ্র উত্তর বঙ্গের মানুষ এই পুজোয় অংশ নেন।

 

আজও বুড়াকালীকে নিয়ে নানারকম জনশ্রুতি আছে সন্ধ্যের পর নাকি অপরূপ ফুলের সুগন্ধি পাওয়া যায় এই এলাকা থেকে। কিন্তু কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত কোনও জঙ্গল বা গাছপালা ছিল না।অতীতে গভীর রাতে শোনা যেত নুপুরের আওয়াজ। সব মিলিয়ে জেলাবাসীর অগাধ বিশ্বাস বুড়া কালীর উপর।

 

কালী পুজোর দিন এই পুজোকে ঘিরে দর্শনার্থীদের ঢল চোখে পরার মতো। এছাড়াও, প্রতি সপ্তাহে মঙ্গলবার ও শনিবার বুড়া কালীবাড়িতে পুজো দেওয়ার জন্য লম্বা লাইন পরে ভক্তদের।

 

কালী কথা নিয়ে পরবর্তী পর্বে আবার ফিরে আসবো। সঙ্গে থাকুন। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী কথা – কূলেশ্বরী কালীর পুজো

কালী কথা – কূলেশ্বরী কালীর পুজো

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

বাংলায় জাগ্রত মন্দিরের অভাব নেই আর এই সব মন্দিরকে কেন্দ্র করে আছে অসংখ্য অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ।এমনই এক মন্দির টাকির কূলে শ্বরী কালী মন্দির যা নিয়ে আমার আজকের কালী কথা।

 

স্থানীয় জমিদার রায়চৌধুরি পরিবারের হাত ধরেই টাকির কুলেশ্বরী কালীবাড়ির পুজো শুরু হয়েছিল। সেই থেকে আজও একইভাবে কুলেশ্বরী মায়ের পুজো চলে আসছে।

 

জনশ্রুতি আছে বহুবছর আগে ইছামতীতে জেলেদের জালে উঠে এসেছিল একটি সুন্দর নকশা করা ঘট। সেকথা জানতে পারেন টাকির জমিদার রায়চৌধুরীরা। জমিদার গিন্নি সেই রাতেই স্বপ্ন দেখেছিলেন চালাঘর তৈরি করে ঘটটি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। খড়, বিচালি, গোলপাতা দিয়ে মাটির দেওয়ালের মন্দির বানিয়ে কালীপুজোর আয়োজন করা হয়েছিল। পরবর্তীতে মন্দিরটি নতুন করে সংস্কার করা হয়।নদীর কূল থেকে ঘটটি পাওয়া গিয়েছিল বলে মন্দিরের নাম হয় কুলেশ্বরী কালীবাড়ি।

 

আবার কেউ কেউ বলেন এক মাতৃ সাধক ইছামতীর পাড়ে মা কালীর সাধনা করতেন এবং তার প্রতিষ্ঠিত ঘট নদীর পাড়ে পড়েছিল। এরপর টাকির জমিদারকে দেবী স্বপ্নাদেশ দেন ওই ঘট প্রতিষ্ঠা করার। তখনই টাকির জমিদার কালীমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। নাম দেওয়া হয় কুলেশ্বরী কালীমন্দির। কারণ, নদীর কুলেই এই মন্দিরের ঘট পাওয়া গিয়েছিল।

 

চারশো বছর ধরে এখানে চলে নিত্যপুজো ও অন্নভোগ। বছরের বিশেষ তিথিতে এই মন্দিরে বড় আকারে পুজো করা হয়। একটা সময় এই পুজোয় কামান দাগা হত তন্ত্র মতে বলী দিয়ে পুজো হতো। সেই সব রীতির কিছু কিছু আজও বজায় আছে।টাকির এই কুলেশ্বরী কালী মন্দিরের পুজো দেখতে আজও ভিড় করেন অগণিত ভক্ত। কারণ, ভক্তরা বিশ্বাস করেন দেবী এখানে অত্যন্ত জাগ্রত এবং তিনি ভক্তদের মনোস্কামনা পূরণ করেন।

 

চলতে থাকবে কালী কথা। এখনো অনেক দেবী মন্দির নিয়ে আলোচনা বাকি আছে। ফিরে আসবো আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

অক্ষয় তৃতীয়ার শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা 

অক্ষয় তৃতীয়ার শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আজ অক্ষয় তৃতীয়া।পুরান এবং বিভিন্ন শাস্ত্রে এই তিথি সম্পর্কে অনেক তথ্য আছে। এই দিনটি নানা কারনে গুরুত্বপূর্ণ। আসুন আজ জেনে নিই অক্ষয় তৃতীয়ার শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা।

 

সনাতন ধর্মে ধন ও সম্পদের দেবতা হলেন রাবনের ভ্রাতা এবং মহাদেবের অন্যতম ভক্ত কুবেরদেব|আসলে কুবের হলেন দেবতাদের কোষাধক্ষ্য তাকে প্রতারিত করে লঙ্কা থেকে বিতাড়িত করেন রাবন এবং ছিনিয়ে নেন তার পুস্পক রথ যা ব্যবহিত হয়েছিলো পরবর্তীতে রামায়নের সময়ে যুদ্ধে |তবে কুবের হাল ছাড়েননি কঠোর তপস্যায় মহাদেবকে সন্তুষ্ট করে তিনি জগতের সমস্ত বৈভব ও ঐশ্বর্যর দেবতা হন|পুরাণ মতে আজকের এই অক্ষয় তৃতীয়ার তিথিতেই কুবেরকে তাঁর অনন্ত বৈভব দান করেছিলেন স্বয়ং মহাদেব। পরবর্তীতে দেব শিল্পী বিশ্বকর্মা কৈলাসের কাছে অলকায় কুবেরের প্রাসাদ তৈরি করে দেন যা অলোকাপুরী নামে খ্যাত|তাই আজ বিশ্বাস করা হয় আজ তার পুজো করলে এবং তার কাছে নিজের অভাব অভিযোগ জানালে তিনি কাউকে শুন্য হাতে ফেরান না।

 

আবার এই দিনই মহাভারত রচনা শুরু করেছিলেন ব্যসদেব। তিনি এই চান্দ্র বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথিতেই মহাভারতের শ্লোক উচ্চারণ শুরু করেন আর সিদ্ধিদাতা গণেশ তা লিখতে শুরু করেন।মূলত এই কারনেই যে কোনও শুভ কাজ আরম্ভের জন্য এই দিনটিই প্রশস্ত বলে মনে করা হয়|আজ যেকোনো শুভ কাজ শুরু হলে তা

সফল এবং স্বার্থক হয়।

 

বিষ্ণুর দশাবতারের ষষ্ঠ অবতার পরশুরামের জন্ম চান্দ্র বৈশাখ মাসের শুক্লা তৃতীয়া তিথিতে অর্থাৎ এই অক্ষয়তৃতীয়ার দিনে হয়েছিলো।

তাই দেশের বহু স্থানে আজকের দিনটি

‘পরশুরাম জয়ন্তী’ হিসেবেও পালিত হয়|

 

মহাভারতে উল্লেখ আছে যে অক্ষয় তৃতীয়া তিথিতেই যুধিষ্ঠিরকে অক্ষয় পাত্র দান করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। এই অক্ষয় পাত্রের খাবার কখনও ফুরোয় না। এই পাত্র থেকে দরিদ্র মানুষদের খাবার বিতরণ করতেন যুধিষ্ঠির। সেই কারণে অক্ষয় তৃতীয়ায় দান করলে তার শুভ ফল লাভ করা।

এই শুভ দিনেই মর্ত্যে আগমন হয় দেবী গঙ্গার।

আবার এই তিথিতেই ত্রেতা যুগের সূচনা হয়।

 

আজ দিনটি অতি পবিত্র।আজ লক্ষী ও কুবেরের পুজোর মাধ্যমেও সৌভাগ্য লাভ করা যায়|আপনার সবাই আজ দেবী লক্ষী এবং কুবের দেবের কাছে নিজের মনোস্কামনা জানান।

সবাইকে জানাই শুভ অক্ষয় তৃতীয়া।

ফিরে আসবো পরের পর্বে কালী কথা নিয়ে সঙ্গে থাকুন। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী কথা – তারাশঙ্করী পীঠ

কালী কথা – তারাশঙ্করী পীঠ

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আজ কালী কথায় কলকাতার বেলগাছিয়া অঞ্চলে অবস্থিত এক প্রসিদ্ধ কালী মন্দির

নিয়ে লিখবো যা তারাশঙ্করী পীঠ নামে প্রসিদ্ধ।

 

শাস্ত্রে উল্লেখিত শক্তি পীঠ নাহলেও তারাপীঠের মতো এটিকেও একটি সিদ্ধপীঠ রূপে দেখা হয়। ১৯৫২ সালে মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন যোগী মহারাজ পরেশচন্দ্র রায় মৌলিক এবং তন্ত্রমতে মায়ের আরাধনা শুরু করেন ।

 

শোনা যায় অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন যোগী মহারাজ পরেশচন্দ্র রায় মৌলিক। তিনি ভবিষ্যত দেখতে পারতেন|একবার তৎকালীন এক নামি রাজনীতি বিদ এই মন্দিরে এসেছিলেন তখন মাতৃ সাধক ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেছিলেন তিনি সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হবেন এবং মন্ত্রী হবেন।পরবর্তীতে বাস্তবে হয়েছিল ঠিক তেমনটাই। তিনি মালদা থেকে সাংসদ হন এবং কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী হন। নাম না করলেও আশা করছি দর্শক বন্ধুরা বুঝতে পারছেন আমি কার কথা বলছি।

 

বহু প্রাচীন কাল থেকে একটি অদ্ভুত রীতি পালিত হয় এই মন্দিরে|মন্দির প্রতিষ্ঠার সময় বারাণসীর মণিকর্নিকা মহাশ্মশান থেকে এক সধবার চিতার আগুন আনা হয় এখানে সেই থেকে আজ পর্যন্ত জ্বলছে সেই চিতার আগুন|অত্যন্ত পবিত্র অগ্নি রূপে এই আগুন কে শ্রদ্ধা করা হয় এই মন্দিরে|

 

মা তারার পাশাপাশি এই মন্দিরের পূজিত হন যশমাধব।তার মূর্তি নিমকাঠের তৈরি যা আনা হয়েছিলো বাংলাদেশ থেকে।নিত্য পুজোয়

যশমাধবকে দেওয়া হয় নিরামিষ ভোগ।

একই সঙ্গে তারাশঙ্করী পীঠে পূজিত হন কালভৈরব|তারাশঙ্করী পীঠের আরও এক আকর্ষণ হল ‘নরমুণ্ডি আসন’। বাঘ, হাতি, শেয়াল, সাপ, অপঘাতে মৃত ব্যক্তি, চণ্ডাল ইত্যাদির ৯টি মাথার খুলি দিয়ে সজ্জিত এই আসন তন্ত্র সাধনায় ব্যাবহিত হতো।

 

প্রায় প্রত্যেক বিশেষ তিথি এবং দীপান্বিতা অমাবস্যায় এখানে বিশেষ পুজো এবং হোম যজ্ঞর আয়োজন হয়।সেই সময়ে বহু মানুষের ভিড় হয় এই মন্দির প্রাঙ্গনে।

 

আগামী পর্বে আবার ফিরে আসবো অন্য কোনো কালী মন্দিরের কথা নিয়ে কালী কথায়।ধারাবাহিক ভাবে চলতে থাকবে এই আধ্যাত্মিক আলোচনা। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

পঁচিশে বৈশাখ উপলক্ষে বিশেষ পর্ব 

পঁচিশে বৈশাখ উপলক্ষে বিশেষ পর্ব

 

জানা অজানা রবীন্দ্রনাথ

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্য নিয়ে যতো না আলোচনা হয় তার দৈনন্দিন জীবন, স্বভাব, ভালো লাগা মন্দ লাগা, অর্থাৎ মানুষ রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে ততটা আলোচনা হয়না। আজ জন্ম জয়ন্তীতে তার মানবিক দিক গুলি যেমন রস বোধ, খাওয়া দাওয়া, প্রকৃতি প্রেম নিয়ে একটু লেখার চেষ্টা করছি।

 

অসাধারণ রসিক মানুষ ছিলেন কবিগুরু।

একবার চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় গেছেন শিলাইদহে জমিদার রবীন্দ্রনাথের কাছে লেখা আনতে। চারুচন্দ্র তখন ‘প্রবাসী’ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত। রবীন্দ্রনাথ তখন অবস্থান করছিলেন পদ্মার ওপারে বজরায়। নদীর ঘাট থেকে বজরা পর্যন্ত একটা তক্তার সাঁকো পেতে দেয়া হয়েছে।

চারুচন্দ্র পা টিপে টিপে নৌকায় উঠে আসছেন। বজরার ছাদ থেকে এ দৃশ্য দেখে রবীন্দ্রনাথ সাবধান করলেন চারুকে, ‘সাবধানে পা ফেলো। এ জোড়াসাঁকো নয়!’ তার এই মন্তব্য শুনে আশপাশের সবাই হেসে উঠে ছিলেন|

 

রবীন্দ্রনাথের রসনা বিলাস নিয়েও বহু মিথ চালু আছে। অনেকে বলেন কবি রাজি কাটলেট এর কবি আসলে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। এই নিয়ে একটি গল্পও আছে।একবার তিনি বিখ্যাত বসন্ত কেবিনে গিয়েছিলেন কাটলেট খেতে।কাটলেটের উপরে থাকা পাউরুটির প্রলেপ কবির একেবারে পছন্দ হয়নি। বাবুর্চি তা জানতে পেরে ডিমের গোলায় ডুবিয়ে বানিয়ে দিলেন এক নতুন কাটলেট। সেটা খেয়ে কবির বেশ পছন্দ হয়েছিল।কবির মন রাখতে যেহেতু আবিষ্কার তাই সেই থেকে এই কাটলেটের নাম দেওয়া হয় ‘কবিরাজি কাটলেট’|

 

বর্ষা ছিলো কবির প্রিয় ঋতু।বর্ষা ঋতু কবির অজান্তেই যেন তাঁর অন্তর সত্তায় স্থায়ী আসন গেড়ে বসেছিল। তাই রবীন্দ্র সঙ্গীতে ও সাহিত্যে সর্বত্রই তার প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।বর্ষায় কবি শান্তি নিকেতনেই থাকতে পছন্দ করতেন। সেই সময় বর্ষার বোলপুর যেনো এক স্বপ্নের জগৎ। সেই জগৎ ধরা দিতো তার গানে তার কবিতায়।

 

জন্ম দিনে তার চরিত্রের কিছু বিশেষ দিক ছুঁয়ে যেতে চেষ্টা করলাম। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। গুরুদেব কে জানাই প্রণাম এবং শ্রদ্ধাঞ্জলি। ভালো থাকুন। পড়তে থাকুন।

কালী কথা – বিদ্যাসুন্দর কালী মন্দিরের ইতিহাস

কালী কথা – বিদ্যাসুন্দর কালী মন্দিরের ইতিহাস

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

বাংলার ইতিহাসের সাথে, সমাজ জীবনের

সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত আছে অসংখ্য কালী মন্দির এবং দেবী কালী সংক্রান্ত নানা পৌরাণিক এবং ঐতিহাসিক ঘটনাবলী|সেই সব ইতিহাস নিয়েই কালী কথা।আজ লিখবো বর্ধমানের প্রসিদ্ধ এবং প্রাচীন বিদ্যাসুন্দর কালী মন্দিরের ইতিহাস নিয়ে|

 

বর্ধমানের বিদ্যাসুন্দর কালীপুজোর পেছনে জড়িয়ে রয়েছে এক অলৌকিক ঘটনা যা অনেকটা সাহিত্য বা চলচ্চিত্রর কাহিনীর মতো শোনায়।আসুন প্রথমে জেনে নিই কি সেই ঘটনা।

 

তখন বর্ধমানের মহারাজা তেজচাঁদের আমল । রাজার এক কন্যা ছিল, নাম বিদ্যা ৷ আর রাজবাড়ির পুজারি ছিলেন সুন্দর নামে এক যুবক। সুন্দরের আর্থিক অবস্থা মোটেই ভাল ছিল না । রাজবাড়িতে ফুল দিতে আসত মালিনী মাসি নামে জনৈক ভদ্র মহিলা|তিনি প্রতিদিন রাজ পরিবারের ঠাকুর বাড়িতে ফুলের মালা দিতেন। যথারীতি একদিন মালিনী মাসি মন্দিরে ফুলের মালা নিয়ে এসেছেন । সেই মালা দেখে পুজারি সুন্দর খুব আকৃষ্ট হন । তিনি মালিনী মাসিকে জিজ্ঞাসা করেন, এত সুন্দর ফুলের মালা কে গেঁথেছে। যে মালা গেঁথেছে তাকে দেখতে চায় সুন্দর । মালিনী মাসি তাকে বলে, রাজকুমারী বিদ্যা মালা গেঁথেছে কিন্তু তাকে দেখা সম্ভব নয়।ঘটনা চক্রে পরবর্তীকালে বিদ্যার সঙ্গে সুন্দরের পরিচয় হয় । তাদের মধ্যে প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠে । এমনকী তারা নাকি মন্দিরের পাশ থেকে রাজবাড়ি পর্যন্ত একটা সুড়ঙ্গ বানিয়ে তার ভিতর দিয়ে একে-অপরের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করতে যেত।

 

একদিন এক গুপ্ত চরের মাধ্যমে তেজচাঁদ বিদ্যা ও সুন্দরের প্রণয়ের ব্যাপারে জেনে ফেলেন । খবরটা কানে যেতেই রাজা প্রচণ্ড রেগে যান । তিনি বিদ্যা এবং সুন্দরকে কালীর সামনে বলি দেওয়ার আদেশ দেন ৷সেই সময়ে দামোদর তীরবর্তী গভীর জঙ্গলে ছিলো এক কালী মন্দির। ওই কালী মন্দিরে কেউ সচরাচর যেতেন না। জনশ্রুতি আছে যারা অন্যায় অত্যাচার করত, তাদের এই মন্দিরে দেবীর সামনে হাঁড়িকাঠে নরবলি দেওয়া হত । তাই সেই সময় এই কালী দক্ষিণ মশান কালী নামে পরিচিত ছিল ।রাজার হুকুম মতো তাদেরকে বলি দিতে নিয়ে যাওয়া হয় সেই মন্দিরে|বলি দেওয়ার আগের মুহূর্তে বিদ্যা ও সুন্দর সেই মন্দিরের কাপালিকের কাছে অনুরোধ জানায়, মৃত্যুর আগে তারা দেবীকে প্রণাম করে আসতে চায় । কাপালিক সেই অনুমতি দেন । প্রণাম করতে যাওয়ার সময় কাপালিক অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যান । তারপরেই বিদ্যা ও সুন্দর নাকি কোথায় যেন মিলিয়ে যায় । এরপর থেকে তাদের আর খোঁজ পাওয়া যায়নি । সেই সময় থেকেই মন্দিরের নামকরণ হয় বিদ্যাসুন্দর কালী মন্দির । তার পর থেকে বন্ধ হয়ে যায় নরবলি প্রথা।

 

বর্তমানে এখানে দেবীর মন্দির ছাড়াও দুটো শিব মন্দির আছে যা ভৈরব এবং পঞ্চানন্দ নামে পরিচিত। নরবলি বন্ধের পরে মন্দিরে মেষ বলি ও পরে ভেড়া বলি দেওয়া হত । এখন ছাগল বলি দেওয়া হয়। প্রতিটি বিশেষ তিথিতে তন্ত্র মতে বিশেষপুজোর আয়োজন হয়।

 

এমন বহু অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী রয়েছে

বাংলার বহু প্রাচীন কালী মন্দির। সেই সব ইতিহাস নিয়ে চলতে থাকবে ধারাবাহিক কালী কথা।

ফিরে আসবো আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী কথা – নলহাটির কালী পুজো

কালী কথা – নলহাটির কালী পুজো
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
গোটা বাংলার মধ্যে কালী সাধনার ক্ষেত্রে বীরভূম জেলার আলাদা মহাত্ম আছে কারন এই জেলায় রয়েছে সর্বাধিক সিদ্ধপীঠ। আজ এই বীরভূমের নলহাটির এমন এক কালী পুজোর কথা আপনাদের জানাবো যা খুব একটা প্রাচীন নয় এবং মাত্র কিছুকাল আগেই একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে বেশ আলোচিত হয়েছিলো।
নলহাটির অন্তর্গত একটি ছোট্ট গ্রাম জুঙ্গল। এই গ্রামে বসবাস করে আচার্য পরিবার। এই পরিবারের এক সদস্য স্বপ্নাদেশ পেয়ে মা কালীর মৃন্ময়ী মূর্তি গড়ে পুজো করার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসেন গ্রামবাসীরা। সেই মতো বাড়িতে মৃত শিল্পী ডেকে মূর্তিও তৈরি করানো হয়। সিদ্ধান্ত হয় গ্রামের মধ্যে প্রাচীন কাল থেকে অবস্থিত একটি বেদিতেই মা কালীর পুজো করা হবে।সেই মতো ব্যবস্থা হয়।
যথা সময়ে মাকালীর মৃন্ময়ী মূর্তি প্রস্তুত হয় কিন্তু মূর্তি বেদিতে তোলার সময়ই চোখে পড়ে আশ্চর্য ঘটনা।দেখা যায় পাঁচ ফুটের মূর্তি গড়া হলেও সেই মূর্তি রাতারাতি ছয় ফুটের বেশি উচ্চতার হয়ে গিয়েছে।কিভাবে রাতারাতি মূর্তির উচ্চতা বৃদ্ধি পেলো তা কারুর বোধগম্য হলোনা।স্বাভাবিক ভাবেই এই ঘটনা একটি অলৌকিক ঘটনা রূপে চারপাশে ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়লো।
তবে অলৌকিক ঘটনা এখানেই শেষ নয়।পুজোর স্থানের কাছাকাছি পুকুর বলতে বেদির পাশে একটি ছোট্ট জলাশয় ছিলো তাতে জল বেশি ছিলো না তাই ভরা থেকে প্রতিমা নিরঞ্জন নিয়েও চিন্তিত ছিলো এলাকাবাসী।পুজোর কিছু দিন আগেই গ্রামবাসীরা দেখেন সেই পুকুর রাতারাতি জলে ভরে উঠেছে। এসব দেখে গ্রাম বাসীরা সবই দেবীর কৃপা বলে মেনে নেন।
নলহাটি অঞ্চলে এই কালী পুজো বেশ জনপ্রিয়তা পায় এবং বহু দূর দূর থেকে মানুষ এই পুজো এবং সেই অলৌকিক জলাশয় দর্শন করতে আসেন।
এই সব থেকে আরো ঘটনা থেকে আরো একবার প্রমান হয় প্রতিনিয়ত কতো অলৌকিক ঘটনা ঘটে চলেছে আমাদের আসে পাশে। জনশ্রুতি হোক বা আস্থা যেখানে শ্রদ্ধা এবং বিশ্বাস জড়িত
থাকে তাকে অবহেলা করা যায়না।
এমন আরো অনেক কালী পুজোর ইতিহাস নিয়ে চলতে থাকবে কালী কথা। ফিরে আসবো পরবর্তী পর্বে। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।