Home Blog

কালী কথা – মুক্ত কেশি কালী

কালী কথা – মুক্ত কেশি কালী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

বাংলায় এমন অনেক কালী মন্দির আছে যেগুলি শাস্ত্র মতে সিদ্ধ পীঠ না হলেও অতি জাগ্রত এবং শক্তি পীঠের মর্যাদা পায়।এমনই এক পীঠস্থান আরিয়াদহর মুক্তকেশী কালী মন্দির।

 

বহু প্রাচীন কাল থেকেই আড়িয়াদহ শ্মশান তান্ত্রিক সাধকদের সাধনক্ষেত্র হিসেবে বিখ্যাত। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের মায়ের শেষকৃত্য এই শ্মশানে সম্পন্ন হয়েছিল।এই শ্মশানের কাছেই রয়েছে মুক্তকেশী কালী মন্দির। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ এই মন্দিরে আসতেন এবং পুরোহিতের আসনে বসে তিনি দেবীর পূজাও করেছেন।

 

প্রথমদিকে একটি তালপাতার এবং মাটির ছোট্ট কুঠিরে দেবী বিরাজ করতেন পরে, ১২৪৭ বঙ্গাব্দে স্থায়ী ভাবে পাকা মন্দির নির্মাণ হয় । এই মন্দিরের বিশেষত্ব হলো দেবীর গর্ভগৃহ দক্ষিণমুখী। তবে মন্দিরটি পশ্চিমমুখী। মন্দিরের প্রবেশ পথের প্রতিদিন নিত্য সেবা হয় তাছাড়া শ্যামাপূজা, দুর্গাপূজা, অক্ষয় তৃতীয় ও অন্নকূট উৎসবে এই মন্দির সারাদিন খোলা থাকে।সেই সময়ে বহু দর্শক সমাগম হয়।

 

পুজো তন্ত্র মতে হয় এবং আগে এখানে পাঁঠা বলি হত। বর্তমানে পশু বলি নিষিদ্ধ তার বদলে এখন দেওয়া হয় চালকুমড়া, আখ, কলা বলি।বাকি সব রীতি নীতি আগের মতোই আছে।

 

জ্যৈষ্ঠ মাসে ফলহারিণী কালী পূজা, কার্তিক মাসে দীপান্বিতা কালী পূজা, মাঘ মাসের কৃষ্ণা চতুর্থীতে রটন্তী কালী পূজা এখানে মহাসমারোহে আয়োজিত হয়।

 

এই শক্তিপীঠের ভৈরব শান্তিনাথ। যাঁকে শিবলিঙ্গ রূপে নিত্য পুজো করা হয়। ভক্তরা বিশ্বাস করেন, দেবী মুক্তকেশী অত্যন্ত জাগ্রত।

তিনি ভক্তের প্রতিটি কামনা,

বাসনা পূরণ করেন।

 

ফল হারিণী অমাবস্যা উপলক্ষে চলতে থাকবে কালী কথা থাকবে।ফিরে আসবো কালীকথার নতুন পর্ব নিয়ে।পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী কথা – দয়াময়ী কালী 

কালী কথা – দয়াময়ী কালী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

দেবী কালী নানা রূপে নানা নানা নামে এই বঙ্গের নানা প্রান্তে পূজিতা হন। আজ দেবীর যে রূপটির কথা বলবো তা দয়াময়ী নামে খ্যাত।

বর্তমান হুগলি জেলার চুঁচুড়ায় দয়াময়ী কালী মন্দির যার পথ চলা শুরু সেই মোঘল যুগে।

 

বাদশা আকবরের বিশ্বস্ত কর্মচারী

রাজা টোডরমল চুঁচুড়া অঞ্চলটি রেখেছিলেন তার অনুগত জায়গীরদার জিতেন রায়ের তত্ত্বাবধানে। শাক্ত জিতেন ছিলেন দেবী কালিকার ভক্ত।

তিনিই এইখানে নির্মাণ করেন মন্দির এবং দেবী দয়াময়ীকে প্রতিষ্ঠা করেন শাস্ত্র মতে।

 

প্রাচীন এই মন্দির নির্মাণ হয় বাংলার পরিচিত স্থাপত্য শৈলীতে।সেই আমলে তৈরী বিশেষ পাতলা ইট দিয়ে গড়ে ওঠে এই মন্দির।অনেকটা জায়গা জুড়ে রয়েছে মন্দিরপ্রাঙ্গণ। উন্মুক্ত প্রাঙ্গনের পূর্বদিকে দেবী দয়াময়ীর মন্দির।পাশেই পরপর দাঁড়িয়ে চারটি শিবমন্দির। সে যুগে কালী মন্দিরের সাথে ভৈরব রূপে শিব মন্দির নির্মাণের রীতি ছিলো। দেবী মন্দিরের চুড়ো গম্বুজাকৃতি। ছোট ছোট সিঁড়ির ধাপের মতো উঠে গিয়েছে নিচ থেকে উপর পর্যন্ত। মন্দির বিশাল নয় তবে ভারী সুন্দর গঠনশৈলী এবং প্রাচীনত্ত্ব এবং ঐতিহাসিক তাৎপর্যর দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই দয়াময়ী দেবীর মন্দির।

 

পুরোনো এই মন্দিরের গর্ভগৃহে দেবী দক্ষিনা

কালীর একটি বিগ্রহ রয়েছে যার উচ্চতা প্রায় দেড় থেকে পৌনে দু-হাত এবং মূর্তিটি কষ্টিপাথরে নির্মিত। পাথরের বেদিতে মহাদেব শুয়ে আছেন দয়াময়ীর পদতলে। কষ্টি পাথরের হলেও এখানে দেবী মূর্তি হাল্কা খয়েরি আভাযুক্ত তাই বিগ্রহের আকর্ষণই আলাদা।তীক্ষ্ণ নাক। উন্মুক্ত কেশ রাশি।বিগ্রহের মুখমণ্ডল সামান্য লম্বাটে।দেবীর ত্রিনয়ন এবং জিহ্বা স্বর্ণমণ্ডিত। কণ্ঠহার মুণ্ডমালা, হাতের খড়গ রুপোয় তৈরি।সব মিলিয়ে দয়াময়ী কালীর অপরূপ রূপ প্রত্যক্ষ করলে হৃদয় ও চোখ জুড়িয়ে যায়।

 

স্থানীয় দের কাছে অত্যান্ত জাগ্রত দেবী দয়াময়ী।

প্রতিদিন দূর দূরান্ত থেকে অগণিত ভক্তের সমাগম ঘটে।প্রতি ফল হারিণী অমাবস্যায় বিশেষ পুজোর আয়োজন হয়।

 

ফল হারিণী অমাবস্যা উপলক্ষে চলবে কালী কথা

ফিরে আসবো আগামী দিনে।কালী কথার নতুন পর্ব নিয়ে।পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী কথা – অরন্যা কালী

কালী কথা – অরন্যা কালী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

সুন্দর বনের ইতিহাস যতটা প্রাচীন মনে হয় বাস্তবে এই অঞ্চলের ইতিহাস তার থেকেও বেশি প্রাচীন। আজও এই নদী কেন্দ্রিক সুন্দর বনের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাচীন মন্দির এবং সভ্যতার নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়। এই সুন্দর বনেই রয়েছে প্রাচীন অরন্যা কালী মন্দির। আজকের কালী কথায় জানাবো এই মন্দিরের ইতিহাস এবং মাহাত্ম।

 

আজ থেকে আড়াইশো বছর আগে জঙ্গলে বিদ‍্যাধরী নদীর পাশে এক সাধু জঙ্গলের মঙ্গলের জন্য এই অরণ‍্য কালীর যজ্ঞ শুরু করেছিলেন।

তখন ভীষণ বন্যায় ভেসে যাচ্ছে এই এলাকা। শোনা যায় পুজোর পরে দেবী কালীর কৃপায় সে যাত্রায় রক্ষা পান এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষ। তারপর এলাকার মানুষের প্রচেষ্টায় একটু একটু করে ধাপে ধাপে তৈরি হয়েছে এই মন্দির। বর্তমানে অরণ্য কালিবাড়ি বলে প্রসিদ্ধি লাভ করছে এই কালী ক্ষেত্র।অরণ্যের মধ্যে অবস্থান বলেই হয়তো দেবীকে অরন্যা কালী বলা হয়।

 

সেই সময় এই অঞ্চল ছিলো ভীষণ দুর্গম। জল দস্যু বাঘ, কুমির আর বিষাক্ত সাপের ভয় ছিলো পদে পদে।এখন অনেক টাই উন্নয়ন হয়েছে। মন্দিরের জনপ্রিয়তা এবং প্রসিদ্ধিও বেড়েছে।

 

মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়ার পর এই পুজোর দায়িত্ব গ্রামেরই ভট্টাচার্য্য পরিবারের হাতে হস্তান্তর করে গ্রামবাসীরা। তখন থেকেই ভট্টাচার্য্য পরিবার এই পূজার দেখাশোনা করে আসছে।স্থানীয় দের মতে এখানকার মা কালী খুবই জাগ্রত। তার কাছে মন থেকে যা চাওয়া হয় তাই পাওয়া যায়।আজও দেবী অরন্যা কালী এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের আশা ভরসার কেন্দ্র বিন্দুতে অবস্থান করছে।

 

প্রতি বছর শ‍্যামা পুজোর দিন পশু বলী হয় পাশাপাশি ফলও বলি দেওয়া হয়। খিচুড়ি ভোগ তৈরি হয়। পুজো উপলক্ষে এই সময়ে কালী মায়ের কাছে প্রার্থনা করতে বহু দূর দূরান্ত থেকে পূণ‍্যার্থীদের আগমন ঘটে।

 

এমন বহু প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক কালী মন্দির আছে এই বাংলার বুকে। পরবর্তী পর্বে অন্য

এক কালী মন্দিরের কথা নিয়ে ফিরে আসবো কালী কথায়। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

ফলহারিণী অমাবস্যার তাৎপর্য 

ফলহারিণী অমাবস্যার তাৎপর্য

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

স্বাগত জানাই আজকের বিশেষ পর্বে।

সামনেই জ্যোতিষ ও তন্ত্র জগতের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ও দুর্লভ তিথি ফল হারিণী অমাবস্যা তিথি।শাস্ত্র মতে এই অমাবস্যা তিথিতে যেকোনো তান্ত্রিক এবং শাস্ত্রীয় ক্রিয়া সঠিক ভাবে সম্পাদিত হলে তা নিশ্চিত এবং স্থায়ী ভাবে আমাদের জীবনকে প্রভাবিত করে। আজ জানাবো এই অমাবস্যা তিথির আধ্যাত্মিক তাৎপর্য।

 

জ্যৈষ্ঠমাসের অমাবস্যা তিথিতে ফলহারিণী রূপে দেবী কালী পূজিতা হন।এই দিন আমরা যদি মা কালীর পুজো করি এবং তাকে সন্তুষ্ট করতে পারি, তা হলে তাঁর আশীর্বাদ সর্বদা আমাদের ওপর থাকবে।

 

দক্ষিনেশ্বরে থাকা কালীন ঠাকুর রামকৃষ্ণদেব ফলহারিণী কালী পুজোর দিনই স্ত্রী সারদা দেবীকে পুজো করেছিলেন জগৎ কল্যাণের জন্য। এদিন শ্রীমা সারদাকে ষোড়শীরূপে পুজো করেছিলেন বলে আজও রামকৃষ্ণমঠ ও আশ্রমে এই পুজো ‘ষোড়শী’ পুজো নামে পরিচিত|

 

ধরিত্রীজাত ফলের সঙ্গে এই মাতৃপুজোর কোনও সম্পর্ক নেই। এই ফল মানবজাতির কর্মফলের কথা স্মরণ করায়।দিনটিতে মা স্বয়ং ভক্তদের সুকর্মের জন্য আশীর্বাদ প্রদান করেন। অপরদিকে সন্তানের কুকর্মের জন্য উদ্ভূত অশুভ ফলের প্রভাব থেকে তিনিই আবার সন্তানদের মুক্ত করেন। অর্থাৎ ওই দিনে মা স্বয়ং যেমন সন্তানদের শুভ ফল প্রদান করেন, তেমনি তিনি সন্তানদের অশুভ ফলও হরণ করে থাকেন।

 

জ্যোতিষ এবং তন্ত্রের জগতে এই দিনের অন্য মাহাত্ম রয়েছে। তন্ত্র শাস্ত্র মতে যেকোনো তন্ত্র ক্রিয়া বেশি প্রভাবশালী হয় এই তিথিতে।আবার আগেই বলেছি শাস্ত্র মতে যেকোনো অশুভ গ্রহদোষ খণ্ডন বা কোনো বিশেষ প্রতিকার গ্রহণের ক্ষেত্রে এই অমাবস্যাকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ হিসেবে দেখা হয়|

এ নিয়ে পরবর্তী কালে আরো বিস্তারিত আলোচনা করবো।

 

বিশেষ করে যাদের জন্মছকে বিষ যোগ।

গ্রহণ দোষ, কালসর্প দোষ, দারিদ্র যোগ

মাঙ্গলিক দোষ, গুরু চণ্ডাল যোগ ইত্যাদি

অশুভ গ্রহগত সংযোগ আছে তারা এই

তিথিকে কাজে লাগিয়ে সব গ্রহ গত

অশুভ প্রভাব থেকে নিস্তার লাভ করতে পারেন।

 

প্রতি বছরের ন্যায় এবছর ও তারাপীঠ এবং আপনাদের মা হৃদয়েশ্বরী সর্ব মঙ্গলা মন্দিরে শাস্ত্র মতে গ্রহ দোষ খন্ডনের সব ব্যাবস্থা থাকবে।

চলতে থাকবে কালী কথা এবং ফল হারিণী অমাবস্যা নিয়ে শাস্ত্রীয় আলোচনা।

ফিরে আসবো পরের পর্বে।পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

বুদ্ধ পূর্ণিমার শুভেচ্ছা

বুদ্ধ পূর্ণিমার শুভেচ্ছা

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আজ বুদ্ধ পূর্ণিমা। আজ শুধু গৌতম বুদ্ধের জন্ম নয় আজকের এই বিশেষ তিথিতে সাধনায় সিদ্ধি লাভও করে ছিলেন গৌতম বুদ্ধ।এই বিশেষ তিথি বৈশাখী পূর্ণিমা নামেও পরিচিত।

 

নেপালের লুম্বিনী তে শুদ্ধধন ও মায়াদেবীর সন্তান হিসেবে জন্মে ছিলেন সিদ্ধার্থ |যৌবনে রাজকুমারী যশোধরা দেবীর সাথে বিবাহ হয় সিদ্ধার্থর এক পুত্র ও হয়, নাম রাহুল |কিন্তু তিনি তো সংসার করতে আসেননি তিনি বুদ্ধ, তিনি আবির্ভুত হয়েছিলেন মানুষ কে সংসারের যাবতীয় দুক্ষ, কষ্ট ও মায়া থেকে মুক্তি দিয়ে মহানির্বানের পথ দেখাতে |

 

একবার রাজকুমার সিদ্ধার্থ প্রাসাদ থেকে ভ্রমণে বেরোলে, প্রথমে দেখলেন একজন বৃদ্ধ মানুষ তারপর একজন অসুস্থ মানুষ শেষে একজন মৃত মানুষ ও এই সবের পর এক সন্ন্যাসীকে দেখতে পান। এই দিন জীবনের এক চরম সত্য উপলব্ধি করলেন সিদ্ধার্থ, ভোগের রাস্তা ত্যাগ করে বেড়িয়ে পড়লেন ত্যাগের পথে, মুক্তির পথে এবং কঠোর সাধনার পর অবশেষে সিদ্ধি লাভ অর্থাৎ তার বুদ্ধ হয়ে ওঠা এবং বিশ্ববাসীকে মুক্তির পথ দেখানো যে পথে আজ হাটছে কোটি কোটি মানুষ |

 

বৈষ্ণব মতে বুদ্ধকে আবার ভগবানের নবম অবতার মনে করা হয় বেদ অমান্য কারীদের ভিন্ন পথ প্রদর্শন করতে ও প্রানী হত্যা বন্ধ করতে তিনি আবির্ভূত হয়ে ছিলেন।

 

আসলে বুদ্ধ বলতে শুধু একজন ব্যাক্তিকে বোঝায় না। বুদ্ধ একটি আধ্যাত্মিক অবস্থা। সাধনার একটি বিশেষ স্তরে পৌঁছে সাধক বুদ্ধত্ব অর্জন করেন। গৌতম বুদ্ধ ছিলেন সেই সাধন মার্গের পথ প্রদর্শক।

তিনি বিশ্বকে শান্তির এবং ত্যাগের পথ দেখাতে এসেছিলেন। আজ এই অশান্তি এবং যুদ্ধের সময়ে তিনি আরো বেশি প্রাসঙ্গিক এবং প্রণম্য।

 

আজও সারা পৃথিবীতে অসংখ্য মানুষ বিশেষ ভাবে পালন করে এই দিনটা |বৌদ্ধ মঠ গুলিতে সন্ন্যাসীরা প্রদীপ জ্বালিয়ে সমবেত ভাবে বিশেষ প্রার্থনা করেন।

 

আজ বুদ্ধের চরণে আমার প্রনাম জানাই

সবাইকে জানাই বুদ্ধ পূর্ণিমার শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন।

ধন্যবাদ।

কালী কথা – ফল হারিণী কালি

কালী কথা – ফল হারিণী কালি

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

ফল হারিণী অমাবস্যা উপলক্ষে চলছে কালী কথা। আজকের কালী কথায় বলবো এমন এক কালী পুজোর কথা যাকে অনেকই ফল হারিণী কালী পুজো বলেন অবশ্য এই পুজোর আরো অনেক বিশেষত্ব আছে।

 

কুলটির লালবাজারের ফলহারিনী কালী মন্দির বেশ বিখ্যাত এখানে সাদা রঙের কালী মূর্তি ফলহারিণী কালী রূপে পূজিতা হয়। দেবী কালীর এই স্বেত বর্ণা রুপ খুবই দুর্লভ।

কথিত আছে এইরূপে ভবতারিণী দর্শন দিয়েছিলেন রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবকে

 

পুজোর প্রতিষ্ঠাতা পরিবার এবং পূজারীদের থেকে জানা যায় বহুকাল আগে স্বপ্নাদেশ পেয়ে পুজো শুরু হয়।দেবী স্বপ্নে স্বয়ং এইরূপ আগে থেকেই নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন। তারপর থেকে নিয়মিত পুজো নিয়ে আসছেন কুলটির ফলহারিনী কালী। বিশেষ একটি পরিবার নিত্য পুজো করেন দেবীর। পাশাপাশি গ্রামের মানুষও দেবী কালিকার সাধনায় মেতে ওঠেন।

 

প্রত্যেক ফল হারিণী অমাবস্যায় জাঁকজমক সহকারে হয় পুজো। স্থানীয় মানুষজন ছাড়াও গোটা জেলার মানুষ সেই পুজোয় অংশগ্রহণ করেন

 

মন্দিরে সম্পূর্ণ প্রস্থর নির্মিত মূর্তি রয়েছে দেবীর। পাশের জেলা বাঁকুড়ার শুশুনিয়া থেকে মূর্তিটি নিয়ে এসে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। সেই মূর্তির নিত্য পুজো হয়।প্রতিষ্ঠাতা ঘোষ পরিবারের কথায় স্বপ্নাদেশ পাওয়ার পরেই তিনি বাঁকুড়ায় উদ্দেশ্যে রওনা দেন তাদের পরিবারের এক সদস্য সেখানে গিয়ে তিনি মায়ের মূর্তিটি পান এই রূপেই। তাই সেই রুপেরই আরাধনা শুরু হয়

 

পশ্চিম বর্ধমান জেলায় একমাত্র এখানেই রয়েছে সাদা রংয়ের কালীমূর্তি। বাংলা জুড়ে সাদা রংয়ের কালীমূর্তি বিশেষ দেখতে পাওয়া যায় না। পাশের জেলা বাঁকুড়া একটি জায়গায় এই রূপে কালীপুজো হয়। তবে কুলটির ফলহারিনী কালী জেলার একমাত্র সাদা রূপের কালীপুজো এবং ফল হারিনি অমাবস্যা এখানে প্রধান উৎসব।

 

সামনেই ফল হারিণী অমাবস্যা|চলতে থাকবে কালীকথা|ফিরে আসবো নতুন

পর্ব নিয়ে।পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী কথা – বাঘেশ্বরী কালী

কালী কথা – বাঘেশ্বরী কালী

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

বাংলার জাগ্রত কালী মন্দির গুলির মধ্যে অন্যতম
হাওড়ার প্রাচীন একটি দক্ষিনা কালী মন্দির। যে মন্দিরে দেবী বাঘেশ্বরী রূপে পূজিতা হন।আজকের কালী কথায় এই বাঘেশ্বরী কালী মন্দির নিয়ে লিখবো।

ইতিহাস বলছে মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বর্ধমানের মহারাজা কন্দর্পনারায়ণ।যদিও পুজো হতো অনেক আগে থেকেই।এক সময় এই অঞ্চলে বাঘের উৎপাত ছিলো। বাঘের হাত থেকে বাঁচতে শুরু হয় দেবীর পুজো।

শোনা যায় কালীভক্ত মহারাজা কন্দর্পনারায়ণ এক রাতে দক্ষিণা কালীকে স্বপ্নে দেখেছিলেন এবং স্বপ্নে মা দক্ষিণা কালী স্বয়ং মহারাজাকে দামোদরের তীরে তাঁর মন্দির প্রতিষ্ঠা এবং নিমকাঠের মূর্তি তৈরী করার নির্দেশ দেন শুধু তাই নয় দেবী এও বলেন মূর্তির জন্য প্রয়োজনীয় নিমকাঠ নিজে থেকেই ভেসে আসবে দামোদর নদীতে। বাস্তবেও তাই হয়।নদীতে ভেসে আসে নীম কাঠ। সেই কাঠেই তৈরী হয় বিশাল আকৃতির দক্ষিণা কালী এবং দেবীর পদতলে থাকা মহাদেব।

তবে অলৌকিক ঘটনা যে শুধু শুরুতেই ঘটেছে তা নয়। তারপরেও ঘটেছে।পরবর্তীতে দু বার এই বাগেস্বরী কালী মন্দিরের সংস্কার হয় এবং আশ্চর্য জনক ভাবে প্রতিবারই দেবীর মূর্তির জন্য প্রয়োজনীয় নীম কাঠ ভেসে এসেছিলো পার্শবর্তী দামোদর নদীর স্রোতে।

শাস্ত্র মতে প্রাণ প্রতিষ্ঠার পর শুরু হয়েছিলো পুজো এবং দ্রুত বাঘেশ্বরী কালীর নাম ছড়িয়ে পড়েছিল দিকে দিকে। তাঁর করুণা লাভ করার জন্য তাঁর দরবারে আসতে শুরু করেছিলেন দেশ বিদেশের ভক্তের দল।

রাজ পরিবারের সহযোগিতায় শুরু হয় পুজো। আজ রাজা নেই তবুও সেই জনপ্রিয়তা এবং শ্রদ্ধা ভক্তি আজও অটুট আছে।আজও প্রতিটি অমাবস্যা তিথিতে মহা সমারোহে দেবীর পুজোর আয়োজন করা হয়। দূর দূর থেকে দেবীর পুজো অংশ নিতে আসেন মানুষ। কথিত আছে বাগনানের দক্ষিনা কালী কাউকে খালি হাতে ফেরান না।

দেবী বাঘেশ্বরী আদতে দক্ষিনাকালীর এক রূপ।
স্থানীয় দের বিশ্বাস দেবী এই অঞ্চলের অভিভাবিকা তাই তাঁর অনুমতি ছাড়া ওই অঞ্চলে কোনও শুভকাজ হয় না। আশেপাশের অঞ্চলে কোনও শুভকাজ হলে আগে মায়ের পুজো দিয়ে তাঁর আশীর্বাদ নেওয়াটা বাধ্যতামূলক হয়ে গেছে স্থানীয়দের জন্য।

ফল হারিণী অমাবস্যা উপলক্ষে চলতে থাকবে
এই কালী কথা। ফিরে আসবো আগামী দিনে
নতুন পর্ব নিয়ে। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী কথা – হ্যাপা কালী

কালী কথা – হ্যাপা কালী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

ফল হারিনি অমাবস্যা উপলক্ষে শুরু করেছি কালী কথা। বেশ কয়েকটি কালী মন্দিরের ইতিহাস ইতিমধ্যে আপনাদের বলেছি। আজ হুগলির হ্যাপা কালী নিয়ে লিখবো।

 

পান্ডুয়ার বেলুন ধামাসিন গ্রাম পঞ্চায়েতের বেলুন গ্রামে হয় এই হ্যাপা কালীর পুজো।কেনো নাম হ্যাপা কালী হলো সে নিয়েও এক জনশ্রুতি প্রচলিত আছে।শোনা যায় মা কালী প্রতিষ্ঠা করতে অনেক হ্যাপা পোহাতে হয়েছিল। বহু বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় দেবীর মন্দির তাই নাম হয়েছে হ্যাপা কালী।

 

কথিত আছে, এলাকার বাগদিপাড়ার কয়েকজন ডাকাত এই পুজোর সূচনা করেন। মা কালীর পুজো দিয়ে তাঁরা ডাকাতি করতে যেতেন ডাকাতরা। পরবর্তী কালে এলাকার সাধারণ মানুষ পুজোর দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নেন।

 

এখানে তন্ত্র মতে দেবীর পুজো হয়। ছাগ বলি হয় পুজোর রাতে।প্রাচীন এই পুজোয় ব্যবহৃত গঙ্গাজল থেকে আলতা সিঁদুর, সবই নীলাম হয় পুজোর পরের দিন। নিলামে ওঠা প্রসাদ নিতে ভিড় জমান পার্শ্ববর্তী দশ বারোটি গ্রামের মানুষ। নিলাম থেকে আয় হওয়া অর্থ কাজে লাগানো হয় পুজোতে।

 

এই ভাবেই নিলামের অর্থে পাতার ছাউনি থেকে গড়ে উঠছে সুন্দর পাথরের মন্দির। তাছাড়া নিলামে কেনা পূজা সামগ্রী বাড়িতে রাখা শুভ বলে বিশ্বাস করেন স্থানীয়রা।

 

ফিরে আসবো পরবর্তী কালী কথা নিয়ে আগামী পর্বে। থাকবে আরেকটি প্রাচীন মন্দিরের ইতিহাস পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী কথা – তারাশঙ্করী পীঠের কালী

কালী কথা – তারাশঙ্করী পীঠের কালী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

শুরু করেছি কালী ঘাটের কালীদিয়ে আজ কালী কথায় কলকাতার বেলগাছিয়া অঞ্চলে অবস্থিত আরো এক প্রসিদ্ধ কালী মন্দির

নিয়ে আলোচনা করবো কালী কথায়।আজকের পর্বে জাগ্রত তারা শঙ্করী পীঠ সম্পর্কে লিখবো।

 

শাস্ত্রে উল্লেখিত শক্তি পীঠ নাহলেও তারাপীঠের মতো এটিকেও একটি সিদ্ধ পীঠ রূপে দেখা হয়। ১৯৫২ সালে মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন যোগী মহারাজ পরেশচন্দ্র রায় মৌলিক এবং তন্ত্রমতে মায়ের আরাধনা শুরু করেন ।

 

শোনা যায় অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন যোগী মহারাজ পরেশচন্দ্র রায় মৌলিক। তিনি ভবিষ্যত দেখতে পারতেন|একবার তৎকালীন এক নামি রাজনীতি বিদ এই মন্দিরে এসেছিলেন তখন মাতৃ সাধক ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেছিলেন তিনি সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হবেন এবং মন্ত্রী হবেন।পরবর্তীতে বাস্তবে হয়েছিল ঠিক তেমনটাই। তিনি প্রথমে সাংসদ হন এবং পরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হন।

 

বহু প্রাচীন কাল থেকে একটি অদ্ভুত রীতি পালিত হয় এই মন্দিরে|মন্দির প্রতিষ্ঠার সময় বারাণসীর মণিকর্নিকা মহাশ্মশান থেকে এক সধবার চিতার আগুন আনা হয় এখানে সেই থেকে আজ পর্যন্ত জ্বলছে সেই চিতার আগুন|অত্যন্ত পবিত্র অগ্নি রূপে এই আগুন কে শ্রদ্ধা করা হয় এই মন্দিরে|

 

মা তারার পাশাপাশি এই মন্দিরের পূজিত হন যশমাধব।তার মূর্তি নিমকাঠের তৈরি যা আনা হয়েছিলো বাংলাদেশ থেকে।নিত্য পুজোয়

যশমাধবকে দেওয়া হয় নিরামিষ ভোগ।

একই সঙ্গে তারাশঙ্করী পীঠে পূজিত হন কালভৈরব|তারাশঙ্করী পীঠের আরও এক আকর্ষণ হল ‘নরমুণ্ডি আসন’। বাঘ, হাতি, শেয়াল, সাপ, অপঘাতে মৃত ব্যক্তি, চণ্ডাল ইত্যাদির ৯টি মাথার খুলি দিয়ে সজ্জিত এই আসন তন্ত্র সাধনায় ব্যাবহিত হতো।

 

তারাশঙ্করী পীঠ কলকাতা তথা দেশের অন্যতম প্রসিদ্ধ এবং জাগ্রত কালী ক্ষেত্র।প্রায় প্রত্যেক বিশেষ তিথি এবং দীপান্বিতা অমাবস্যায় এখানে বিশেষ পুজো এবং হোম যজ্ঞর আয়োজন হয়।সেই সময়ে বহু মানুষের ভিড় হয় এই মন্দির প্রাঙ্গনে।

 

আগামী পর্বে আবার ফিরে আসবো অন্য

একটি কালী মন্দিরের কথা নিয়ে কালী কথায়।ফল হারিণী অমাবস্যা পর্যন্ত

চলবে কালী কথা।পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী কথা – দেবী ঝিংলেস্বরী

কালী কথা – দেবী ঝিংলেস্বরী

 

কালী কথায় আজ বলবো পূর্ব মেদিনীপুরে অবস্থিত ঝিংলেস্বরী মায়ের মন্দিরের কথা|

 

একান্ন সতী পীঠের অন্যতম তমলুক বর্গভীমা মায়ের সঙ্গে ঝিঙলেশ্বরী মায়ের গভীর যোগাযোগ রয়েছে বলে। লোকমুখে প্রচলিত। দেবী বর্গভীমাকে ভীমা মা বলা হয়। কথিত আছে ভীমা মায়ের বোন দেবী ঝিংলেশ্বরী।শোনা যায় এক কালে নদীর গভীরে গোপন সুড়ঙ্গ পথে ভীমা মা এবং ঝিঙলেশ্বরী মায়ের মন্দিরে যাওয়ার পথ ও ছিলো।সেই পথ আজ লুপ্ত তবে বহু জনশ্রুতি আজও রয়ে গেছে।

 

কথিত আছে আগে এই স্থান দিয়ে বয়ে যেতো হলদি নদী, নদীতে যাতায়াত করতো বিরাট বিরাট জাহাজ, একবার এমনই একটি জাহাজ নোঙর ফেলেছিলো এই স্থানে|জাহাজের নাবিকরা যখন ধূমপান করতে ব্যাস্ত তখন হটাৎ একটি মেয়ের আবির্ভাব হয় সেখানে, মেয়েটি নাবিকদের কাছে আগুন চায়|নাবিকরা মেয়েটিকে আগুন নিতে জাহাজে আসতে বলে|মেয়েটির রহস্যময়ী ভাবে হেসে বলে সে জাহাজে উঠলে বিপর্যয় ঘটতে পারে|নাবিকরা ছোট্ট মেয়েটির কথায় গুরুত্ব না দিলে অবশেষে মেয়েটিকে জাহাজে উঠতে হয়|মেয়েটি জাহাজে পা দেয়ার সাথে সাথে জাহাজ বসে যায় এবং মাস্তলে দেখা যায় দেবী মূর্তি|

 

এই অলৌকিক ঘটনা আজও লোকের মুখে শোনা যায়|মানুষের বিশ্বাস ওই স্থানেই নির্মিত হয়েছে এই প্রাচীন ঝিংলেস্বরী মন্দির|দেবী সেদিন বালিকার বেশে নাবিক দের জাহাজে উঠেছিলেন|আজও তিনি ঝিংলেস্বরী রূপে সেই স্থানে স্বমহিমায় বিরাজমান|

 

বর্তমানে পূর্ব মেদিনীপুরের ভবানীপুর নামক স্থানে রয়েছে এই প্রাচীন মন্দির যা কোনো শক্তি পীঠ না হয়েও স্থানীয়দের কাছে বিশেষ শ্রদ্ধার এবং অত্যন্ত প্রসিদ্ধ|

 

প্রাচীন মন্দিরটি ঠিক কবে নির্মিত হয়েছিলো এবং কে নির্মাণ করেছিলেন তা সঠিক ভাবে জানা যায়না তবে পরবর্তীতে মহিষাদলের রাজা প্রচুর জমি দান করেন মন্দিরের উদ্দেশ্যে এবং মন্দিরের পূজার ভার অর্পণ করা হয় একটি বিশেষ পরিবারকে যে পরম্পরা আজও চলছে|দেবী এখানে উগ্রতারা রূপে বিরাজিতা|দূর্গা পুজো উপলক্ষে এখানে বহু মানুষের সমাগম হয় এবং নিষ্ঠা সহকারে পুজো হয়|তাছাড়া সারাবছরই সূর্য দয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিত্য পুজোর

আয়োজন হয়।

 

ফিরে আসবো কালী কথার আগামী পর্ব নিয়ে। থাকবে আরো একটি প্রাচীন মন্দিরের ইতিহাস এবং তার মাহাত্ম। দেখতে থাকুন।