Home Blog

শিব মাহাত্ম – বুধেশ্বর মহাদেব

শিব মাহাত্ম – বুধেশ্বর মহাদেব

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

শুরু হতে চলেছে পবিত্র শ্রাবন মাস। সামনেই শ্রাবনের প্রথম সোমবার। প্রতি বছরের ন্যায় গোটা শ্রাবন মাস জুড়ে থাকবে। দেশ তথা বাংলার বিখ্যাত শিব মন্দিরের কথা সাথে শিব সংক্রান্ত নানা পৌরাণিক তথ্য এবং আলোচনা। আজ শুরু করবো বুধেশ্বর মহাদেব দিয়ে।

 

ছত্তিশগড়ের রাজধানী রায়পুরে চার দিকে ভোলেনাথের অনেক বিখ্যাত শিব মন্দির রয়েছে, কিন্তু ঐতিহাসিক মন্দিরগুলির মধ্যে বুধেশ্বর মহাদেব মন্দির দেখার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।

ছত্রিশ গড়ের রায়পুরের এই শিব মন্দিরের ইতিহাস প্রায় ছয়শো বছরের পুরনো। অনেকে মনে করেন বুধেশ্বর মহাদেবের নামকরণ করা হয়েছে আদিবাসী দেবতার নামে।

 

এখানে একটি বহু প্রাচীন জলাশয় আছে। স্থানীয় আদিবাসীদের আরাধ্য দেবতা বুদ্ধদেবের নামানুসারে পুকুরটির নাম বুধতালাব। এক কালে পুকুরের পাড়ে একটি শিবলিঙ্গ ছিল এবং তার চারপাশে ভয়ঙ্কর বিষধর সাপ বাস করত এবং শিবলিঙ্গের চারপাশে সাপগুলি সর্বদা আবৃত থাকত। বুধতালাবের তীরে থাকায় শিবলিঙ্গটির নাম হয় বুধেশ্বর মহাদেব। পরবর্তীতে স্থানীয় আদিবাসিদের উদ্যোগে পুকুরের পাড়ে একটি ছোট মন্দির তৈরি করে শিবলিঙ্গকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। বুধেশ্বর মন্দিরে দুশো বছরের পুরনো একটি বটগাছ রয়েছে।

 

শ্রাবন মাসে ভক্তরা আসেন মহাদেবকে জল অর্পণ করতে তাছাড়া মহাশিবরাত্রির সময়ে অসংখ্য

ভক্ত এই মন্দির দেখার জন্য ভিড় করেন।মহাশিবরাত্রির সকালে শিবলিঙ্গে ভস্ম আরতি করা হয়।বহু নারী এখানে ছুটে আসেন বট সাবিত্রী ব্রত পূজা করতে।সব মিলিয়ে শ্রাবন মাসে বুধেশ্বর মহাদেব প্রাঙ্গন উৎসবের আকার নেয়।

 

ফিরে আসবো পরের পর্বে। সঙ্গে থাকবে

নতুন এক শিব মন্দিরের কথা পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

গুরু মাহাত্ম – তোতাপুরী মহারাজ

গুরু মাহাত্ম – তোতাপুরী মহারাজ

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

আজ ভারতের মহান আধ্যাত্মিক গুরুদের নিয়ে এই ধারাবাহিক লেখনীতে লিখবো ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণদেবের দীক্ষা গুরু তোতাপুরী মহারাজের কথা।

তোতাপুরীর সন্ন্যাস পূর্ব জীবন,তার জন্ম কাল জন্মস্থান ও পরিবার সম্পর্কে সঠিক তথ্য কমই পাওয়া যায়।

তোতাপুরী লম্বা-চওড়া সুদীর্ঘ পুরুষ ছিলেন।দীর্ঘ সময় ধ্যান ও যোগ সাধনার মাধ্যমে তিনি সাধনার অত্যন্ত উচ্ছ পর্যায়ে আরোহন করেছিলেন, পুরী সম্প্রদায় ভুক্ত এই নাগা সন্ন্যাসী ছিলেন অলৌকিক শক্তির অধিকারী।

তোতাপুরী তিন দিনের বেশি কোথাও থাকতেননা কিন্তু ব্যতিক্রম হয়েছিলো দক্ষিনেশ্বর এসে|এখানে বেশ দীর্ঘ সময় তিনি কাটিয়েছিলেন রামকৃষ্ণর সান্নিধ্যে|গুরুর নাম গ্রহণ করা শাস্ত্রমতে বারণ তাই শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁকে ‘ল্যাংটা’ বা ‘ন্যাংটা’ বলে উল্লেখ করতেন|গঙ্গার ধারে পঞ্চবটি উদ্যানে ধুনী জ্বালিয়ে তিনি সাধনা করতেন এখানেই তার কাছে দীক্ষা নিয়ে নিয়ে ছিলেন স্বয়ং রামকৃষ্ণ আবার আশ্চর্য জনক ভাবে ঠাকুরের অলৌকিক ক্ষমতা ও তার অগাধ জ্ঞানের পরিচয় পেয়ে গুরু তোতাপুরী বিদায় নেয়ার আগে শিষ্য রামকৃষ্ণর কাছে দীক্ষা নিয়ে যান। ভারতের গুরু শিষ্য পরম্পরার ইতিহাসে এ এক ব্যাতিক্রমী ঘটনা।

তোতাপুরীর মতে সকলই ছিল মায়া। দেব-দেবীর মূর্তিপূজাকেও তিনি উপহাস করতেন। বিশ্বাস করতেন এক ও অদ্বিতীয় ব্রহ্মে কিন্তু রামকৃষ্ণ তার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দেন, এক্ষেত্রে এক অলৌকিক ঘটনার ও উল্লেখ পাওয়া যায়, একবার দক্ষিনেশ্বরে থাকা কালীন পেটের যন্ত্রনায় কাবু তোতাপুরী গভীর রাতে গঙ্গায় প্রান বিসর্জন দিতে গিয়ে দেখলেন কোথাও ডুবজল নেই, হেঁটেই পার হওয়া যায় গঙ্গা, তিনি উপলব্ধি করলেন ভবতারিনীর লীলা, সাক্ষাৎ করলেন স্বয়ং মা জগদম্বাকে, শরীরের সব যন্ত্রনা মুহূর্তে গায়েব হয়ে গেলো|
শিষ্য কে বললেন সব কথা মেনে নিলেন মায়ের উপস্থিতি|মেনে নিলেন ঠাকুর রামকৃষ্ণের শ্রেষ্ঠত্ব তারপরই পাল্টা দীক্ষাও নিলেন তাঁর কাছে।

যেহেতু তোতাপুরী ছিলেন পুরী সম্প্রদায়
ভুক্ত তাই আজও রামকৃষ্ণ মিশন এবং মঠের সাধু সন্ন্যাসীরা পুরী সম্প্রদায় ভুক্ত সন্ন্যাসী হিসেবে
গণ্য হন।

আজকের পর্ব এই মহান সাধককে প্রনাম জানিয়ে শেষ করলাম। গুরু মাহাত্ম নিয়ে ফিরে আসবো আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

গুরু মাহাত্মা – আদি গুরু শংকরাচার্য্য

গুরু মাহাত্মা – আদি গুরু শংকরাচার্য্য

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

শাস্ত্র মতে সনাতন ধর্মের অভিভাবক এবং রক্ষক। আদি গুরু শংকরাচার্য্য। ভারতীয় গুরু শিষ্য পরম্পরা তার দেখানো পথেই অগ্রসর হয়েছে।আজকের পর্ব আদি শংকরাচার্য্যকে নিয়ে।

 

আদি গুরুর পিতার নাম শিবগুরু ও মায়ের নাম আর্যাম্বা|কথিত আছে ত্রিশূরের বৃষভচল শিবমন্দিরে পুত্রকামনা করে পূজা দিয়ে আশীর্বাদ স্বরূপ শংকরকে পেয়ে ছিলেন তাঁরা।

তিনি মাত্র আট বছর বয়সে তিনি চারটি বেদ আয়ত্ত্ব করে ফেলেন অতি সহজে|অল্প বয়সে পিতৃ বিয়োগের পর চরম আর্থিক দুর্দশার

সম্মুখীন হতে হয় তাকে|

 

কৈশোর থেকেই শঙ্করের ইচ্ছে ছিলো সন্ন্যাস নেয়ার কিন্তু মা রাজি ছিলেন না পরবর্তীতে তাকে রাজি হতে হয়,এ নিয়েও আছে এক অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ|একবার বালক শংকর পূর্ণা নদীতে স্নান করছিলেন। এমন সময় একটি কুমির তার পা কামড়ে ধরে। শঙ্করের মা তখন সেখানেই উপস্থিত ছিলেন|তিনি মা-কে বলেন, মা যদি সন্ন্যাস গ্রহণের অনুমতি দেন, তাহলে কুমিরটি তার পা ছেড়ে দেবে। ছেলের প্রাণ বাঁচাতে মা তাকে সন্ন্যাস গ্রহণের অনুমতি দিলেন|কুমির ও সাথে সাথে পা ছেড়ে অদৃশ্য হলো|এরপর সন্যাস নিয়ে গৃহ ত্যাগ করলেন শঙ্করাচার্য্য|গুরুর খোঁজে বেড়িয়ে পড়লেন পথে|

 

দীর্ঘ সময় পদব্রজে সারা উত্তর ভারত পরিভ্রমণ করার পর অবশেষে গুরুর সাথে সাক্ষাৎ হলো|নর্মদানদীর তীরে ওঙ্কারেশ্বরে তিনি গৌড়পাদের

শিষ্য গোবিন্দ ভগবদপাদের শিষ্যত্ব গ্রহন করলেন শঙ্করাচার্য্য|গুরু শঙ্করাচার্য্যকে অদ্বৈত মত প্রচার করতে বলেন|পরবর্তীতে তিনি কাশী,বদ্রিনাথ সহ বহু স্থানে ঘুরে বেড়ান|অসংখ্য ভাষ্য ও গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেন এবং তার পাশাপাশি চালিয়ে যান

অদ্বৈতবাদের প্রচার|এই সময় অসংখ্য অনুগামী ও ভক্ত তার সংস্পর্শে আসেন ও তার শিষ্যত্ব গ্রহন করেন|বহু ধর্মীয় বিতর্কে অংশগ্রহন করে সেকালের ধর্মজগতের বহু সনামধন্য পন্ডিতকে শাস্ত্র আলোচনায় পরাস্ত করে শংকরাচার্য্য হয়ে ওঠেন এক অতি পরিচিত কিংবদন্তী স্বরূপ|মনে করা হয় কাশীতে বিশ্বনাথ মন্দিরদর্শন করতে যাওয়ার সময় স্বয়ং শিব এক চন্ডাল রূপে

তাকে দর্শন দিয়ে ছিলেন|

 

শঙ্করাচার্য্য সারাটা জীবন ধরে অদ্বৈতত্ত্বের প্রচার করে বেদ বিমুখী সমাজকে আবার বেদান্তের পথে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন| শঙ্করাচারজ্যর অদ্বৈত ত্বত্ত্বের মূল কথা ছিল- ব্রহ্ম সত্য, জগৎ মিথ্যা। জীব ও ব্রহ্মে কোনো প্রভেদ নেই|অর্থাৎ, জীব ও ব্রহ্মকে এক ভাবাই অদ্বৈতবাদ।সকল জীবের অভ্যন্তরে যে আত্মা বিরাজমান, তা পরমাত্মারই প্রকাশ। এ তত্ত্বে জীবাত্মা ও পরমাত্মা এক|

 

শঙ্করাচার্য্য দেশের চার প্রান্তে চারটি মঠ প্রতিষ্ঠা করেন|পুরী, জোশীমঠ, দ্বারকা এবং শৃঙ্গেরী।

আজও এই পরম্পরা মেনে চারটি মঠের প্রধান অর্থাৎ চারজন শঙ্করাচার্য্য পদাধিকারী সনাতন ধর্মের কল্যানে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছেন সর্বদা|চার টি মঠের একেটির অধীনে একেকটি বেদ কে রাখা হয়েছে।

 

সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা এবং সম্প্রদায়কে এক সূত্রে গেথে সনাতন ধর্মকে একটি নিরাপদ এবং মজবুত ভিত্তি প্রদান করতে মহাদেব স্বয়ং আদি শঙ্করাচার্য্য রূপে পৃথিবীতে এসেছিলেন। তিনিই আদি গুরু। তার দেখানো পথেই এগিয়েছে সনাতন ধর্মের ঐতিহ্য।

 

গুরু মাহাত্ম আজ এখানেই শেষ করলাম। তবে গুরু পূর্ণিমা উপলক্ষে ভারতের আধ্যাত্মিক গুরুদের সাধনা এবং তাদের জীবনী নিয়ে আবার পরবর্তী পর্বে ফিরে আসবো। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

গুরু মাহাত্ম – শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর

গুরু মাহাত্ম – শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

গুরু মাহাত্মর আজকের উপস্থিত হয়েছি এক মহান আধ্যাত্মিক গুরুর জীবন কাহিনী নিয়ে|আজকের পর্বে শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর কে নিয়ে।

অবিভক্ত বাংলার গোপালগঞ্জ জেলায়
যশোমন্ত ও অন্নপূর্ণা দেবীর গৃহে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন কলি যুগের এই অন্যতম শ্রেষ্ট মহাপুরুষ|তাঁর পরিবার ছিলো নিষ্ঠাবান বৈষ্ণব পরিবার|ফলে শৈশব থেকেই শাস্ত্র পাঠ ও ধর্ম আলোচনার প্রতি তার এক গভীর আগ্রহ ও নিষ্ঠা
বর্তমান ছিলো|যত বয়স বাড়তে লাগলো শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের মধ্যে এক ঐশরিক শক্তির বিকাশ হতে থাকলো|যথাযত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই তিনি একজন জ্ঞানী শাস্ত্রজ্ঞ ও বৈষ্ণব শাস্ত্রে অগাধ পান্ডিত্যের অধিকারী হয়ে উঠেছিলেন|
মূলত প্রেম-ভক্তির কথা সহজ-সরলভাবে প্রচার করতেন তিনি|

পরবর্তীতে তার প্রচলিত সাধন পদ্ধতি মতুয়াবাদ রূপে ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে|তিনি মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রান পুরুষ|সারা জীবন তিনি উৎসর্গ করেন মতুয়া আদর্শের প্রচারে এবং প্রসারে|তিনি মনে করতেন ঈশ্বর প্রাপ্তির জন্য সন্ন্যাস নেয়ার প্রয়োজন নেই অন্তরে শ্রদ্ধা ও ভক্তি থাকলে এবং নিষ্ঠা সহকারে ঈশ্বর চিন্তা করলে গৃহীরও ঈশ্বর লাভ সম্ভব|নানা শ্রেণী ও জাতি তে বিভক্ত হিন্দু সমাজ কে তিনি ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছিলেন মতুয়াবাদের দ্বারা|তৎকালীন হিন্দু সমাজের অসংখ্য নিপিড়িত, দরিদ্র ও তথা কথিত নিম্ন শ্রেণীর মানুষ দের তিনি পরম স্নেহে বুকে টেনে নিয়েছিলেন এবং তাদের সার্বিক উন্নতি সাধনই ছিলো তার জীবনের প্রধান লক্ষ্য|

আজ দেশে বিদেশে ছড়িয়ে থাকা কোটি কোটি মতুয়াদের কাছে  শ্রী শ্রী হরিচাঁদ চাঁদ ঠাকুর কলি যুগের শেষ এবং শ্রীহরি-র পূর্ণ অবতার|যথার্থ অর্থেই তিনি পতিতপাবন|

শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের মহা প্রয়ানের পর তার পুত্র শ্রী শ্রী গুরুচাঁদ ঠাকুর মতুয়া সমাজের উন্নতি সাধনে ব্রতী হন|আজও বংশ পরম্পরার শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরহরিচাঁদ ঠাকুরের সুযোগ্য বংশধরেরা মতুয়া সমাজ কে নেতৃত্ব দান করে চলেছেন|

আজ অসংখ্য মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁরঠাকুরবাড়ি ও মতুয়া ধাম একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

প্রনাম জানাই এই মহান আধ্যাত্মিক গুরু এবং পরম ব্রহ্ম স্বরূপ আধ্যাত্মিক ব্যাক্তিত্বকে।
আবার ফিরে আসবো গুরু মাহাত্ম নিয়ে যথা সময়ে। পড়তে থাকুন। ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

গুরু মাহাত্ম – শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র 

গুরু মাহাত্ম – শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র

 

পন্ডিতজি ভৃগুর শ্রী জাতক

 

আগামী সপ্তাহে গুরু পূর্ণিমা। এই পবিত্র আধ্যাত্মিক উৎসব উপলক্ষে গুরু তত্ব নিয়ে বা জগৎ বিখ্যাত গুরুদের বলা এক অনন্য সাধারণ অনুভূতি যে অনুভূতি আপনাদের সাথে প্রতিবার ভাগ করে নিই। এবারের গুরু পূর্ণিমা পর্ব শুরু করবো আমার অন্যতম প্রিয় আধ্যাত্মিক গুরু ঠাকুর শ্রী অনুকূল চন্দ্রকে দিয়ে

 

জন্ম সূত্রে আমার পরিবার ওপার বাংলার অর্থাৎ অধুনা বাংলাদেশ|পারিবারিক সূত্রেও আমরা অনুকূল ঠাকুরের আশীর্বাদধন্য কারন আমার নিজের বড়োমামা ছিলেন স্বয়ং ঠাকুরের ছায়া সঙ্গী ও তার একজন একনিষ্ট ভক্ত|সেই সূত্রে ছোটো থেকেই ঠাকুরের মহিমাশুনে বড়ো হওয়া| তাঁর আধ্যাত্মিক শক্তির উপর আস্থা ও শ্রদ্ধা সেই সময় থেকেই পরবর্তীতে জীবনের এক কঠিন সময়ে অনুকূল ঠাকুরের অনুগত হয়ে দীক্ষিত হই|আশ্চর্য ভাবে দীক্ষা গ্রহনের পর থেকেই জীবনে ভালো সময় আসতে শুরু করলো|অন্ধকার কাটিয়ে আলোয় ফিরলাম, সকল দিক দিয়েই সফল হলাম জীবনে|একে ঠাকুরের মহিমা ছাড়া আর কিবা বলি|আজও ঠাকুরের প্রতিকৃতি বিরাজমান আমার গৃহ মন্দিরের সিংহাসনে|আজও প্রতিটা দিন তাঁর কাছে প্রার্থনা করে আমার দিন শুরু হয়|

 

অনুকূলচন্দ্র চক্রবর্তী ১৮৮৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের পাবনা জেলার হিমায়তপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন|তাঁর পিতার নাম শিবচন্দ্র চক্রবর্তী এবং মাতার নাম ছিলো মনমোহিনী দেবী|

হিমায়তপুর গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাঁর শিক্ষা জীবন শুরু হয় পরে নৈহাটী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে স্কুল জীবনের পড়া শেষ করে তিনি কলকাতা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন|

 

অনুকূল চন্দ্রের ছিলো উত্তর ভারতের যোগীপুরুষ শ্রী শ্রী হুজুর মহারাজের শিষ্য তবে ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র মায়ের কাছেই দীক্ষা গ্রহন করেন|কঠোর পরিশ্রম ও দক্ষতার সঙ্গে তিনি জীবনে এগিয়ে চলেন, অনুকূলচন্দ্র ছিলেন একাধারে কবি, লেখক, ডাক্তার ও সর্বোপরি এক আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় গুরু|তিনি ছিলেন হিন্দু সমাজের একজন মহাপুরুষ, বিশ্ব মানবতাবাদী এবং পরম কৃষ্ণ ভক্ত।সারা জীবন তিনি চেষ্টা করে গেছেন কি ভাবে মানুষ ভাল থাকবে, সুস্থ থাকবে, শান্তিপূর্ণ ভাবে সবাই মিলে মিশে থাকবে|সেজন্য ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র সব সময় চাইতেন, তার অনুসারিরা সব সময় কৃষ্ণ ভক্তির পথে থাকুক|তাঁর এই দর্শন ও আদর্শ সাফল্যের সাথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তাঁর পরিবার ও অগণিত ভক্ত শিষ্যরা|

 

লোক শিক্ষার জন্য অনুকূলচন্দ্র ঠাকুর প্রায় ৪৬টি পুস্তক রচনা করেন|এগুলোতে ধর্মশিক্ষা, সমাজ সংস্কার প্রচলন প্রভৃতি বিষয়ে আদর্শ ও উপদেশসমূহ বর্ণিত হয়েছে|এগুলি ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রে অত্যান্ত গুরুত্ব পুর্ন গ্রন্থ হিসেবে সর্বত্র সমাদৃত |বই গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য, সত্যানুসরণ, পুণ্যপুথি, অনুশ্রুতি, চলার সাথী, শাশ্বতী, বিবাহ বিধায়না,সমাজ সন্দীপন ইত্যাদি|

 

পাবনা শহরের কাছে হেমায়েতপুর গ্রামে শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন সৎসঙ্গ আশ্রম ও মন্দির যা আজ লক্ষ লক্ষ ভক্ত শিষ্যর কাছে এক মহান তীর্থ ক্ষেত্র|1946 সালে অনুকূল ঠাকুর পাবনা থেকে দেওঘর আসেন ও দেওঘর আশ্রম তৈরি করেন|এই দেওঘরেই 1969 সালে ঠাকুর পরলোক গমন করেন|আজ এই আশ্রম ও ঠাকুরের সংগ্রহশালা দেও ঘরের মুখ্য আকর্ষণ হয়ে উঠেছে|

 

আমার পরম পূজনীয় গুরুকে প্রনাম ও শ্রদ্ধা জানিয়ে এই পর্ব শেষ করলাম|তবে চলবে আমার এই ধারাবাহিক লেখা গুরু পূর্ণিমা অবধি পড়তে থাকুন। ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

জগন্নাথদেবের উল্টো রথের শুভেচ্ছা 

জগন্নাথদেবের উল্টো রথের শুভেচ্ছা

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আজ উল্টো রথ।বাস্তবে রথ যাত্রা ঠিক একদিনের উৎসব নয়। আসলে রথ যাত্রার সূচনা হয় দেবস্নান পূর্ণিমায় প্রভু জগন্নাথের স্নানের মধ্যে দিয়ে আর শেষ হয়উল্টো রথ যাত্রার দিনে।

 

জনশ্রুতি আছে এই দিন মন্দিরে ঢুকতে গেলেই লক্ষ্মী দেবী সটান মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেন কারণ তিন ভাইবোন মাসির বাড়ি থেকে আনন্দ করে এসেছেন অথচ তাঁকে নিয়ে যাননি। অভিমানী লক্ষ্মী দেবী এই কয়দিন একা একা শ্রীমন্দিরে ছিলেন। সেই থেকে তিন দিন এরকম ভাবেই বাইরে থাকে রথ সহ বিগ্রহ। এই তিন দিন পালিত হয় কিছু অনুষ্ঠান তারপর মহালক্ষীর মান ভঞ্জন হলে পুনরায় মন্দিরের রত্ন বেদিতে স্থান পান জগন্নাথ শুভদ্রা এবং বলরাম।

 

একাধিক শাস্ত্রীয় উপাচার আছে এই উল্টো রথ নিয়ে।সাধারণত উল্টো রথে যখন জগন্নাথ ফিরে আসেন এই যাত্রাকে বহুদা যাত্রা বলা হয়। এরপর আছে অধরপানা এবং নীলাদ্রি বিজয়। অধরপানায় জগন্নাথকে বিশেষ পানীয় পান করানো হয়। সেটাকে ঘিরেও উৎসব হয় । এর পরদিন নীলাদ্রি বিজয় উৎসব হয়। এক হিসেবে এই দিনেই রথযাত্রা শেষ হয়।

 

উল্টো রথ উপলক্ষে প্রভু জগন্নাথ

সহ সুভদ্রা-বলরাম ও সেজে ওঠেন নানা সোনার

গয়নার সাজে।এই বেশ কে সোনা বেশ বলা হয়।

মন্দিরে ফিরলে জগন্নাথদেবের উদ্দেশ্যে

নিবেদন করা হয় কয়েকশ হাড়ি রসগোল্লা নানা রকম মিষ্টান্ন সর্বশেষে নীলাদ্রিবিজয় উৎসবের

মাধ্যমে শেষ হয় এই সমস্ত রীতি -রেওয়াজ এবং তার পর জগন্নাথ-সুভদ্রা-বলরাম কে মন্দিরের

মূল রত্নবেদি-তে তোলা হয়।

 

আপনাদের সবাইকে উল্টোরথ যাত্রার অনেক শুভেচ্ছা। ফিরে আসবো আগামী পর্বে ধারাবাহিক শাস্ত্রীয় ওব পৌরাণিক নানা বিষয় নিয়ে

আলোচনা নিয়ে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

প্রভু জগন্নাথের নব কলেবর

প্রভু জগন্নাথের নব কলেবর

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

প্রভু জগন্নাথ সংক্রান্ত রহস্যগুলির মধ্যে অন্যতম তাঁর নব কলেবর। আজ এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো।

 

শ্রী কৃষ্ণের অন্তেষ্টি ক্রিয়া সাঙ্গ করেন পাণ্ডবরা। কিন্তু চিতা নিভে গেলেও দেখা যায় তাঁর হৃদপিণ্ডটি অক্ষত আছে । তখন সেটিকে নদীর জলে ভাসিয়ে দ্বারকার সব মহিলা ও শিশুদের নিয়ে হস্তিনাপুর ফিরে যান পাণ্ডবরা। সমুদ্রের জল এসে ভাসিয়ে নিয়ে দ্বারকাকে। সমুদ্রের নিচে ডুবে যায় দ্বারকা।কিন্তু কৃষ্ণের হৃদপিণ্ড সাগরের জলে জীবিত অবস্থায় নিমজ্জিত হয়|

 

এরপর কেটে যায় বহু কাল, একদিন নদীর জলে স্নান করতে করতে কৃষ্ণের দিব্য হৃদয় উদ্ধার করেন পুরীর মহারাজ ইন্দ্রদ্যুম্ন। সেই হৃদয় হাতে নিতেই স্বয়ং বিষ্ণু তাঁর কানে ফিসফিস করে বসেন যে এই হৃদয় তাঁরই। এই পৃথিবীতে এটি বরাবর থাকবে। দ্রুত জগন্নাথ মন্দিরে এসে জগন্নাথ দেবের মুর্তির মধ্যেই তা স্থাপন করেন ইন্দ্রদ্যুম্ন।বিষ্ণুর আদেশে এমন ভাবে তা করা হয়, যাতে তা কেউ দেখতে না পায়|মনে করা হয় আজও সেই দিব্য বস্তু, স্বজত্নে এবং গোপনে সংরক্ষিত আছে প্রভু জগন্নাথের মূর্তির মধ্যে যাকে বলা হয় ব্রহ্ম পদার্থ।

 

‘নব-কলেবর’ নামের রহস্যময় এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিয়মিত নিদ্দিষ্ট সময়ের ব্যাবধানে দেবতার পুরোনো মূর্তি সরিয়ে নতুন মূর্তি বসানো হয় আর পুরোনো মূর্তির ‘আত্মা’ নতুন মূর্তিতে সঞ্চারিত হবে – এটাই পূজারীদের বিশ্বাস।

এ জন্য ইতিমধ্যেই জগন্নাথ, সুভদ্রা আর বলভদ্রের নতুন কাঠের মূর্তি তৈরী হয়েছে।জগন্নাথ মন্দিরে ‘গর্ভগৃহ’ বা মূল কেন্দ্রস্থলে এই অতি গোপনীয় প্রথার সময়ে পুরোহিতদের চোখ আর হাত বাঁধা থাকে – যাতে পুরোনো মূর্তি থেকে ‘আত্মা’ নতুন মূর্তিতে গিয়ে ঢুকছে – এটা তাঁরাও দেখতে না পান।

 

যদিও বিষয়টি বিতর্কিত এবং নানা রকম বিরুদ্ধ মতবাদ আছে। তবুও জনশ্রুতি বা লোককথা রূপে এই তত্ত্ব বেশ জনপ্রিয় এবং বহুল প্রচারিত।

 

প্রভু জগন্নাথ সংক্রান্ত আরো এমন অনেক তথ্য নিয়ে ফিরে আসবো আগামী পর্বগুলিতে।

পড়তে থাকুন। ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

রথযাত্রা এবং উল্টো রথের শাস্ত্রীয় মাহাত্ম

রথযাত্রা এবং উল্টো রথের শাস্ত্রীয় মাহাত্ম

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে প্রতিবছর রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। ৯ দিন পর উল্টো রথ।রথযাত্রার দিন বলরাম এবং সুভদ্রাকে নিয়ে রথে চড়ে অর্থাৎ মাসির বাড়ি যান জগতের নাথ জগন্নাথ মাসির বাড়ি মানে সমুদ্রোপকূলবর্তী জগন্নাথ মন্দির থেকে প্রায় তিন মাইল দূরে গুণ্ডিচা মন্দিরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে|

 

যাত্রার এক সপ্তাহ পরে তিনি ফেরেন নিজ স্থানে।জগন্নাথ দেবের সপরিবারের রথে চড়ে এই ফিরে আসাই উল্টোরথ নামে খ্যাত

এই মুহূর্তে জগন্নাথদেব বিরাজ করছেন গুন্ডিচা মন্দিরে। আর কয়েকদিন পরেই উল্টো রথের মাধ্যমে তার রাজকীয় প্রত্যাবর্তন ঘটবে।

 

শাস্ত্রে রথ যাত্রা সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে, “রথস্থ বাম নং দৃষ্টাপুনর্জন্ম ন বিদ্যতে”৷ অর্থাৎ রথের উপর অধিষ্ঠিত বামন জগন্নাথকে দর্শন করলে তাঁর পুনর্জন্ম হয় না৷ তাই রথের দড়ি টানাকেও পুণ্যের কাজ হিসাবে গণ্য করেন ধর্মপ্রাণ হিন্দুরা|।

 

শুধু তাই নয় শাস্ত্র মতে যেকোনো শুভ কাজে যেমন গৃহ প্রবেশ, ব্যাবসার শুরু সবই করা যায় এই শুভ সময়ে।জগন্নাথ দেব স্বয়ং শ্রী কৃষ্ণ। তিনিই জগতের নাথ। শাস্ত্র মতে তিনি বামন অবতার রূপে পুরীতে বিরাজমান।এই সমগ্র সময় জুড়ে জগন্নাথ মাহাত্ম শ্রবণ করা এবং প্রভু জগন্নাথ

দেবের আরাধনা করা শাস্ত্র মতে মহা পুন্যর কাজ।

 

ফিরে আসবো জগন্নাথেদেব সংক্রান্ত আরো তথ্য এবং পৌরাণিক আলোচনা নিয়ে। দেখতে থাকুন।

মাহেশের রথ যাত্রার ইতিহাস

মাহেশের রথ যাত্রার ইতিহাস

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

পুরীর মতো অত প্রাচীন না হলেও বাংলার রথ যাত্রার রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস এবং সেই ইতিহাসের অনেকটাই জুড়ে রয়েছে মাহেশের

বিখ্যাত রথ যাত্রা। আজ এই রথ যাত্রা

নিয়ে লিখবো।

 

ইতিহাস বলছে পাঁচশো বছর আগে সন্ন্যাসী ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী পুরীতে গিয়েছিলেন নিজের হাতে জগন্নাথ দেবকে ভোগ রেঁধে খাওয়াবেন বলে। কিন্তু সেখানকার সেবকরা তাতে রাজি না হওয়ায় রাগে, শোকে সন্ন্যাসী স্নান-খাওয়া ত্যাগ করেন। তখন একদিন স্বপ্নে তাঁর দেবদর্শন হয়। জগন্নাথ দেব তাঁকে নির্দেশ দেন মাহেশে যেতে। সেখানে গিয়ে এক বৃ্ষ্টিভেজা রাতে ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী গঙ্গায় ভাসমান তিনটি নিমগাছের কাঠ পান। এই কাঠ দিয়ে তিনি তৈরি করেন জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার মূর্তি। এই মূর্তি আজও পুরীর মন্দিরের মতোই মাহেশে পূজিত হয়। এবং ১২ বছর অন্তর মূর্তিগুলির অঙ্গ মার্জনা করা হয়।

 

তবে পুরীতে যেখানে তিনটি রথ সাজিয়ে শোভাযাত্রা করে বের করা হয় মাহেশে হয় একটি। প্রথমে এই রথ তৈরি হয়েছিল কাঠের। পরে পুরনো হয়ে সেই রথ ভেঙে গেলে ১২৯২ সনে নতুন রথ বানিয়ে দেন শ্যামবাজারের দেওয়ান কৃষ্ণরাম বসু। এই রথ সম্পূর্ণ লোহার তৈরি। রথটি তৈরি করে দেয় তৎকালীন  মার্টিনবার্ন কোম্পানি। ৫০ ফুট উঁচু এই রথের ৯টি চুড়ো, ১২টি চাকা। ওজন ১২৫ টন। রথের সামনে তামার দু-টি ঘোড়া আর কাঠের দু-টি রাজহাঁস আছে।

 

এই রথ তৈরি করতে তখনকার দিনে খরচ হয়েছিল কুড়ি হাজার টাকা। এই রথে চড়েই জগন্নাথ দেব তাঁর ভাই-বোনদের নিয়ে মাসির বাড়ি যান। একসপ্তাহ পরে উল্টোরথের দিনে তিন দেব-দেবী রথ ফিরে আসে নিজের জায়গায়।আবার শুরু হয় আগামী বছরের প্রতীক্ষা|

 

মাহেশের এই রথ পরিচিত নীলাচল নামে। শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু একাধিকবার এই রথ যাত্রায় অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি মাহেশের নাম দেন নব নীলাচল। সেই অনুযায়ী মাহেশের রথ পরিচিত নীলাচল রথ নামে। ঐতিহাসিক এই রথ যাত্রায় রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবও যোগদান করেছিলেন।

 

আবার পরের পর্বে রথ যাত্রার অন্য এক ইতিহাস এবং অনেক তথ্য নিয়ে ফিরে আসবো। পড়তে

থাকুন। ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

পুরীর রথ যাত্রার প্রাচীন ইতিহাস

পুরীর রথ যাত্রার প্রাচীন ইতিহাস

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

পুরীর রথের রয়েছে এক প্রাচীন এবং সমৃদ্ধ ইতিহাস। বিভিন্ন প্রাচীন পুঁথি এবং গ্রন্থ থেকে পাওয়া সেই ইতিহাস আজ আপনাদের সামনের তুলে ধরবো।

ভগবান বাসুদেবের রথ গরুড় ধ্বজ সুভদ্রার রথ পদ্মধ্বজ বলরামের রথ তালধ্বজ নামে পরিচিত।

কখন পুরীর রথযাত্রা শুরু হয়েছিল তা বলা কঠিন। গবেষকমন্ডলী এবং ইতিহাসবিদগণের রথযাত্রার উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন শাস্ত্র থেকে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পেয়েছি।

‘মাদলা পঞ্জি’ নামে ষোড়শ শতাব্দীতে প্রণীত এক পঞ্জিকায় উল্লেখ আছে, একদা জগন্নাথ মন্দির এবং গুন্ডিচা মন্দিরের মধ্যে মালিনী নামে একটি নদী ছিল যা বড় নাই অথবা বড় নদী নামেও খ্যাত।

সে সময়ের রাজা ৬টি রথ নির্মাণ করেন। সুদর্শন চক্রসহ জগন্নাথ এবং বলরাম ও সুভদ্রার বিগ্রহের জন্য তিনটি রথ নদী পর্যন্ত আনতে ব্যবহৃত হতো। তারপর বিগ্রহগণ নদীর অপর প্রান্তে আনা হলে, সেই স্থান থেকে জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রাকে গুন্ডিচা মন্দিরে আনতে তিনটি অতিরিক্ত রথ নিযুক্ত করা হতো। রাজা বীর নরসিংহের শাসনামলে নদীটি মাটি দ্বারা পূর্ণ বরা হয় এবং তারপর থেকে গুন্ডিচা মন্দির পর্যন্ত যাওয়ার জন্য শুধু তিনটি রথ প্রয়োজন হয়, আধুনিক হিসাব অনুসারে সেটি প্রায় ২.৮ কিলোমিটার।

মাদলা পঞ্জি অনুসারে গুন্ডিচা মন্দিরটি পূর্বে নরসিংহ এটি পাথর দিয়ে পুননির্মাণ করেন। কিন্তু যখন পুরীর রথযাত্রা শুরু হয়, এর কোনো সঠিক তথ্য নেই। তবে, ক্রয়োদশ শতাব্দীতে যে রথযাত্রা উদযাপিত হতো তার ঐতিহাসিক প্রামাণ রয়েছে।

‘রথ চকড়’ নামে একটি গ্রন্থ প্রাচীন মন্দিরে পাওয়া যায়। এটি প্রতিপন্ন করে যে, রাজা যযাতি কেশরী ৮ম শতাব্দীতে রথযাত্রা উদযাপন করেন।

স্কন্দপুরাণ অনুসারে, মহারাজ ইন্দ্রদ্যুম্নের শাসনামলে রথযাত্রা উদযাপিত হয়, যখন তিনি জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রা বিগ্রহ স্থাপন করেন।

এখানে এক জায়গায় নারদমুনি বললেন, “প্রিয় রাজা, ভগবানের ভ্রমণের জন্য সুন্দরভাবে সজ্জিত তিনটি রথ প্রস্তুত করতে হবে। এই রথ গুলো রত্ন, অলঙ্কার, পাটের শাড়ি, মালা এবং বিভিন্ন মূল্যবান রত্নদ্বারা আবৃত করতে হবে। স্কন্দ পুরাণে আরো বর্ণিত আছে যে, স্বর্গের স্থপতি বিশ্বকর্মা নারদ মুনি কর্তৃক নির্দেশিত হয়ে একই দিনে তিনটি রথ নির্মাণ করেন। তখন নারদ মুনি বৈদিক রীতি অনুসারে রথসমূহ স্থাপন করেন। এই বর্ণনা হতে আমরা জানতে পারি, রথযাত্রা সুপ্রাচীনকাল থেকে প্রচলিত|

পুরীর রথ সংক্রান্ত আরো অনেক তথ্য আপনাদের জন্য নিয়ে আসবো আপনাদের জন্য আগামী পর্ব গুলিতে। পড়তে থাকুন। ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।