দেবী মাহাত্ম বা মন্দির রহস্য পর্বে যতগুলি মন্দির বা প্রাচীন পুজো নিয়ে আলোচনা করেছি তার অনেকগুলিই স্বপ্নাদৃষ্ট বা স্বপ্নে দেখা দেবীর আদেশ এবং নির্দেশ অনুসারে তৈরী হয়েছে।শাস্ত্রে দেবী কালীর দর্শন দেয়া কে নানা ভাবে ব্যাখ্যা করা।যদি স্বপ্নে কালীর মূর্তি দেখা যায় তাহলে স্বপ্নকে খুব ভালো স্বপ্ন বলে মনে করা হয়। যিনি এই স্বপ্ন দেখবেন জীবনে সুখ এবং সমৃদ্ধি থাকবে।তার পরিবারে সুখ বৃদ্ধি পাবে। মনে করা হয় যিনি স্বপ্নে দেবীকে দেখেন তার উপর দেবীর বিশেষ কৃপা আছে। আজকের পর্বে বর্ধমানের এক প্রাচিন রক্ষা কালীর পুজোর কথা জানাবো এবং এই পুজোর সাথেও স্বপ্নের গভীর সম্পর্ক রয়েছে।আজ থেকে প্রায় দুশো বছরের আগের কথাবর্ধমানের বিস্তীর্ণ অঞ্চল তখন কলেরা প্রকোপে প্রায় জন শুন্য হয়ে পড়েছে। সেই সময়ে বর্ধমানের এক প্রত্যন্ত গ্রামের এক রাখাল বালক জঙ্গলে গরু চরাতে গিয়ে কিশোরী রূপে মায়ের দর্শন পান। সেদিন রাতে স্বপ্নাদেশ পায় ওই কিশোর সেই কিশোরী রূপেই মা কালী তাকে দর্শন দিয়ে শীঘ্রই গ্রামে তাঁর মন্দির প্রতিষ্ঠা করে পূজা করার আদেশ দেন।মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়ে সে গ্রামের এক ছোট্ট মাটির কুটিরে মায়ের পুজো শুরু করে গ্রামে মায়ের পুজো শুরু হতেই মহামারী থেকে রক্ষা পায় গ্রাম। মনে করা হয় মহামারি থেকে গ্রামের মানুষ কে রক্ষা করেছিলেন বলেই এখানে মা রক্ষা কালী রূপে পূজিত হন।বহু অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী এই প্রাচীন রক্ষা কালী মন্দির। শোনা যায় একসময় যে জলাশয় থেকে মায়ের জল আনা হত সেটি খরার কারণে জল শূন্য হয়ে পড়ে। তারপর গ্রামবাসীরা একটি বিরাট জলাশয় খনন করেন তবে সেখান থেকে এক ফোঁটাও জল পাওয়া যায়নি। আবার এক গ্রামবাসীর স্বপ্নে দেখা দেন মা কালী মা তাকে রাত্রির নিদিষ্ট একটি সময়ে খনন করা জলাশয়ের নিদ্দিষ্ট একটি স্থানে অস্ত্র দিয়ে আঘাত করার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হয় এবং পরদিন জলাশয়টি জলে পরিপূর্ণ অবস্থায় দেখা যায়।এমন বহু প্রচলিত জনশ্রুতি এই অঞ্চলের মানুষের মুখে আজও শোনা যায়। দেবী রক্ষা কালীর প্রতি সবারই অগাধ আস্থা এবং শ্রদ্ধা।তাই তার কাছে পুজো দিতে এবং মনোস্কামনা জানতে আসেন অসংখ্য মানুষ।সামনেই জগন্নাথদেবের স্নান যাত্রা তারপর অম্বুবাচি। সব মিলিয়ে আধ্যাত্মিক ভাবে অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সময়ে আরো নতুন নতুন বিষয় এবং তথ্য নিয়ে চলতে থাকবে এই বিশেষ পর্বগুলি। দেবী মাহাত্মর পরের পর্ব নিয়ে ফিরে আসবো যথা সময়ে। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।
বিশেষ পর্ব – জগন্নাথদেবের স্নান যাত্রা
প্রতিবছর অক্ষয় তৃতীয়ার দিন থেকে শুরু হয় চন্দনযাত্রা উৎসব এই সময়ে প্রভু জগন্নাথের শরীরে চন্দনের প্রলেপ দেয়া হয় এবং তারপর দেবস্নানা পূর্ণিমা তিথিতেই পালিত হয় মহাপ্রভু জগন্নাথদেবের স্নানের উৎসব আগামী চার তারিখ অর্থাৎ রবিবার এই বছরের স্নান যাত্রার উৎসব পালিত হবে।প্রতিবারের মতো এবারও আমার গৃহ মন্দিরে পালিত হবে স্নান যাত্রা উপলক্ষে প্রভু জগন্নাথের বিশেষ পুজো। যার সরাসরি সম্প্রচার আপনারা দেখেতে পাবেন আমার সোশ্যাল মিডিয়া পেজে।আজ স্নান যাত্রা উপলক্ষে এই বিশেষ পর্বে জগতের নাথ জগন্নাথে স্নান যাত্রা ও তার গজ বেশ নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও ইতিহাস আপনাদের জানাবো।দুটি বিশেষ উপাচার ও থাকবে যা আপনারা পালন করে জগন্নাথ কৃপা লাভ করতে পারেন।স্নান যাত্রার উল্লেখ স্কন্দপুরানে আছে। শাস্ত্র মতে পুরীর মন্দির প্রতিষ্ঠার পর পুরি নরেশ ইন্দ্রদ্যুম্নএই অনুষ্ঠান শুরু করেন। যে পূর্ণিমা তিথিতে স্নান যাত্রা অনুষ্ঠিত হয় তাকে বলা হয় দেব স্নান পূর্ণিমা। এই দেবস্নান পূর্ণিমা আবার জগন্নাথদেবের আবির্ভাব তিথি । জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা এবং মদনমোহনের বিগ্রহ শোভাযাত্রা সহকারে মন্দিরের গর্ভগৃহ থেকে পবিত্র স্নানবেদীতে আনা হয় তারপর একশো আট কলস জলে বিগ্রহ স্নান করানো হয়।শুধুমাত্র জগন্নাথ দেবেকে স্নান করানোর জন্য পুরীতে রয়েছে সোনাকুয়া নামের এক বিশেষ ধরনের কুয়া। শোনা যায় এই কুয়াতে নাকি কখনো সুর্যের আলো পড়েনা। স্নানপর্বের পর বিগ্রহ সাজানো হয় গজবেশে।এই গজবেশের ও একটি ইতিহাস আছেবহু শতক আগে পুরীর রাজার রাজদরবারে এসেছিলেন বিখ্যাত পণ্ডিত গণেশ ভট্ট।পুরীর রাজা তাঁকে জহগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রা দেখবার জন্য আহ্বান জানান। তবে তা দেখতে যাওয়ার ইচ্ছা ছিলনা গনেশ ভট্টর। কারণ তাঁর আরাধ্য দেবতা ছিলেন গণপতি।কিন্তু স্নানযাত্রায় গিয়ে গণেশ ভট্ট জগন্নাথকে গণেশ রূপেই দেখতে পান।প্রভু জগন্নাথের মায়ায় তিনি অভিভূত হয়ে পড়েন। মনে করা হয় ভক্তের মনবাসনা পূর্ণ করতে স্বয়ং জগন্নাথ গজ বেসে তাকে দেখা দিয়েছিলেন।শাস্ত্র মতে স্নান যাত্রার সময়ে জগন্নাথ দর্শন করলে সব পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় স্নানযাত্রার পরে শুরু হয় অনসর সেই সময়ে অসুস্থতার কারণে ভক্তগণের অন্তরালে গোপন স্থানে চিকিৎসাধীন থাকেন তিনি স্বেচ্ছায় তিনি গৃহবন্দি হন রাজ বৈদ্যরা বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক ঔষধদ্বারা তার সেবা সুশ্রশা করেন। এই সময়ে জগতের নাথ প্রবল জ্বরে আক্রান্ত হন এমনকি তাকে উষ্ণতা দেয়ার জন্য কম্বল চাপা দিয়ে রাখা হয়।তারপর সুস্থ হয়ে রথযাত্রার দিন রাজবেশে সামনে আসেন জগতের নাথ জগন্নাথ।অক্ষয় তৃতীয়ায় চন্দন যাত্রার মধ্যে দিয়ে শুরু হওয়া উৎসব শেষ হয় রথ যাত্রায় রাজ বেশে প্রভু জগন্নাথের মন্দিরে প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে।যদি সম্ভব হয় স্নান যাত্রা থেকে রথযাত্রার দিন পর্যন্ত জগন্নাথ ব্রত করুন বাড়িতে নারায়ণ থাকলে তার সামনেও এই ব্রত পালন করতে পারেন। একটি পেতলের বাটিতে একটু আতপ চাল, দুটো কাঁচা হলুদ এবং ১ টাকার একটি কয়েন দিন। এরপর এই বাটিটি জগন্নাথ বা নারায়ণ মূর্তির সামনে রেখে দিন। উল্টো রথের শেষ লগ্নে এই বাটিটি তুলে নিন এবং বাটিতে থাকা উপাদান কোনও মন্দির বা ভিক্ষুককে দান করলেই ব্রত সম্পন্ন হবে এবং মনস্কামনা পূরণ হবে।পাশাপাশি ১০৮টি তুলসী পাতা দিয়ে মালা তৈরী করুন এবং ওই মালা মালা স্নান যাত্রার দিন জগন্নাথদেবের গলায় পরিয়ে দিতে হবে এবং গঙ্গা জল নিবেদন করতে হবে তাহলেও অশেষ পুন্য সঞ্চয় করবেন।আমার গৃহ মন্দিরে স্বমহিমায় বিরাজ করছেন প্রভু জগন্নাথ। চন্দন যাত্রা থেকে রথ যাত্রা পর্যন্ত সবগুলি শাস্ত্রীয় উপাচার নিষ্ঠা সহকারে নিখুঁত ভাবে পালিত হয়। দেখেত এবং জানতে হলে চোখ রাখুন আমার পেজে। ফিরে আসবো দেবী মাহাত্ম নিয়ে আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ভালো থাকুন।ধন্যবাদ।
দেবী মাহাত্ম – বৈকুণ্ঠ পুরের বনদুর্গা
শাস্ত্র মতে অম্বুবাচির গুরুত্ব অপরিসীম কারন অম্বুবাচীর পর ধরিত্রী শস্য শ্যামলা হয়ে ওঠেন। অম্বুবাচির আরম্ভ কাল কে বলে অম্বুবাচী প্রবৃত্তিএবং সমাপ্তিকে বলে অম্বুবাচি নিবৃত্তি|অম্বুবাচীর সময় দেবী পূজা বন্ধ থাকলেও বিভিন্ন রকমতন্ত্র ক্রিয়া ও মন্ত্র শক্তির সাহায্যে আদি শক্তির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। কারন জগতের সব সৃষ্টির মুলে রয়েছে এই আদি শক্তি। আজ যে তীর্থ ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করবো তার সাথে অম্বুবাচির বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে।আজকের পর্বে জলপাইগুড়ির বনদুর্গা।প্রাচীন এই দেবী মন্দির বর্তমানে তিস্তার পারে বৈকুণ্ঠ পুরে অবস্থিত যার সাথে জড়িয়ে আছে দস্যুরানী দেবী চৌধুরানীর নাম। শুধু তাই নয় একাধিক প্রাচীন গ্রন্থে এই তীর্থের উল্লেখ আছে। শোনা যায় প্রতিবছর আষাঢ় মাসে অম্বুবাচির পরের সপ্তাহে তিস্তা নদী দিয়ে বজরায় চেপে বৈকুণ্ঠ পুরে বন দূর্গার মন্দিরে আসতেন দেবী চৌধুরানী। তারপর পুজো দিয়ে নদী পথে ফিরে যেতেন নিজের গোপন ডেরায়। সঙ্গে থাকতো বিরাট বহর। সেই দৃশ্য দেখতে ভিড় জমে যেতো।এই প্রাচীন মন্দির ও দেবীকে কেন্দ্র করে একটি পৌরাণিক ঘটনাও শোনা যায় কথিত আছে একবার কোনো কারণে কৈলাশ ছেড়ে শিব ছদ্মবেশে এই অঞ্চলে আত্ম গোপন করেছিলেন তখন দেবী পার্বতী মেছেনি রুপ ধারন করে এই স্থানে আসেন এবং শিবকে খুঁজে বের করেন।ঠিক কবে এবং কে এই মন্দির ও দেবী মূর্তি স্থাপন করেন তার সুনিদিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়না তবে কয়েকশো বছর ধরে এখানে পুজো হচ্ছেএবং স্থানীয় কৃষকেরা এই পুজো না দিয়ে আমন ধান চাষ করা শুরু করেন না।বিশেষ বিশেষ তিথিতে পুজো উপলক্ষে মেলা বসে।ফিরে আসবো নতুন পর্ব নিয়ে। ধারাবাহিক ভাবে দেবী মাহাত্ম ও মন্দির রহস্য নিয়ে আলোচনা। চলবে।সঙ্গে থাকবে অম্বুবাচি নিয়েঅনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।
দেবী মাহাত্ম- দেবী কঙ্কালেস্বরীর ইতিহাস
সনাতন ধর্মে পৃথিবীলে মাতৃ শক্তি রূপে দেখা হয়।সেই জীবন্ত মাতৃ শক্তির একটি বিশেষ অবস্থাকেইঅম্বুবাচি বলা হয়।অম্বুবাচী’ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল ‘অম্বু’ বা জল ‘বাচি ‘অর্থাৎ সূচনা|অর্থাৎ অম্বুবাচির সময় থেকে প্রকৃতির নব সৃষ্টি কার্যর সূচনা হয়|জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে আষাঢ় মাসে মৃগশিরা নক্ষত্রের চতুর্থ পদে অম্বুবাচির সূচনা হয়।এই অম্বু বাচি চলা কালীন দেশের মাতৃ মন্দির গুলিতে কিছু নিষেধাজ্ঞা থাকে। এমনই এক মাতৃ মন্দির হলো কঙ্কালেশ্বরী কালী মন্দির যা বর্ধমানেঅবস্থিত।আজ থেকে কয়েকশো বছর আগে বর্ধমানে থাকতেন কমলানন্দ নামে এক মাতৃসাধক তন্ত্র বিশারদ হিসেবে তার বেশ খ্যাতি ছিলো। শোনা যায় তিনি একবার মায়ের স্বপ্নাদেশ পান। স্বপ্নে আদেশ হয় যে দামোদর নদে শীল রূপে দেবী কালী অবস্থান করছেন এবং তিনি যেনো ওই মাতৃ মূর্তি উদ্ধার করে আনেন এবং মন্দির প্রতিষ্ঠা করে সেই মূর্তি স্থাপন করে পুজো শুরু করেন।স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী তিনি দামোদরের তীরে গিয়ে কৃষ্ণ বর্ণের সেই পাথরটি উদ্ধার করেন। সেই পাথরে দেবী মূর্তি খোদাই করা ছিলো । পাথরের এই দেবী মূর্তি পেয়ে তিনি বর্ধমানের তৎকালীন মহারাজ বিজয়চাঁদ মহাতাবকে খবর দেন।তারপর রাজার উদ্যোগে সেই মূর্তি মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করা হয়। ইতিহাস অনুসারে নবরত্ন শৈলীতে নির্মিতদেবীর মন্দির আগে থেকেই তৈরী ছিলো। যেনো দেবীর আগমনের অপেক্ষায় ছিলো বহুদিন।পাথরে খোদাই দেবী কঙ্কালের মতো দেখতে। নাম তাই কঙ্কালেশ্বরী কালী। দেবী এখানে অষ্টভূজা। শায়িত শিবের নাভি থেকে উৎপত্তি হয়েছে পদ্মের। সেই পদ্মার ওপর দেবী বিরাজমানা।দেবী মূর্তির সাথে একটি হাতিও লক্ষ্য করা যায়।সব থেকে আশ্চর্য জনক বিষয় পাথরের কালী মূর্তিতে মানব শরীরের সব শিরা উপশিরা এবং প্রত্যেকটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ নিখুঁত ভাবে খোদাই করা।প্রতি কালীপুজোয় এখানে লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম হয়। প্রায় কুড়ি হাজার ভক্ত অন্নভোগ গ্রহণ করেন। চামুণ্ডা মতে পুজো হয় এখানে। তবে গোড়া থেকেই বলি প্রথা নেই।অম্বুবাচিতে দেবী পুজো এবং প্রতিমা দর্শন নিষিদ্ধ।তবে অম্বুবাচি পরবর্তী সময়ে বিশেষ পুজো হয়।দেবী মাহাত্ম নিয়ে ফিরে আসবো আগামী পর্ব গুলিতে ।থাকবে বহু রহস্যময় মন্দিরের কথা কথা এবং অম্বুবাচি নিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।
দেবী মাহাত্ম- জোড়া কালীর পুজো
সাধারণত অম্বুবাচিতে দেবী পুজো নিষিদ্ধ তবে অম্বুবাচি নিবৃত্তির পর যখন শাস্ত্র মতে হোম যজ্ঞ ও দেবী আরাধনার আয়োজন করা হয় সেই সময়ে তন্ত্র মতে গ্রহের প্রতিকার ও হয় এবং সেই তিথি গ্রহ দোষ খণ্ডন ও বিভিন্ন তান্ত্রিক উপাচারের জন্য আদৰ্শ বলে ধরা হয়।আর মাত্র কয়েকটি দিন পরেই অম্বুবাচি। সারা দেশের মাতৃ মন্দির গুলিতে পরিলক্ষিত হবে কিছু বিশেষ রীতি নীতি। আমিও আমার এই অনুষ্ঠানে তাই দেবী মাহাত্ম নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি অম্বুবাচি নিয়ে কিছু লিখবো । যাই হোক শুরু করাযাক আজকের দেবী মাহাত্ম পর্ব।বাংলার কালী পুজো বেশ বৈচিত্র পূর্ণ। অনেক অলৌকিক ঘটনা ও প্রাচীন ইতিহাসের সাক্ষী একেকটা কালী ক্ষেত্র। আজ এমন দুটি কালী পুজোর কথা লিখবো যেখানে দুটি বা জোড়া কালী মূর্তি একত্রে পূজিত হয়। আমতায় দুই কালী মূর্তি দুই বোন রূপে একসাথে পূজিতা হয়ে আসছেন বহু বছর ধরে। একজন মা ভদ্রকালী ও অন্যজন মা বিমলা। স্থানীয় এক বনেদি পরিবারের কুলদেবী এই জোড়া কালী।শোনা যায় প্রায় তিনশ বছর আগে এই পরিবারের এক বৃদ্ধা পাশ্ববর্তী নদীতে স্নান করতে গিয়েছিলেন এবং স্নানের পর তার দুই হাত ধরে নাকি দুই মা নদী থেকে উঠেছিলেন।এই মন্দিরে ডানদিকের বড়ো মা বা বড়ো বোন হলেন ভদ্রকালী আর তাঁর পাশে ছোট বোন হচ্ছেন মা বিমলা।মা এর মন্দিরে মূল অনুষ্ঠান হয় প্রতিবৎসরের ফাল্গুনের প্রথম শনিবার।এখানে দেবীর প্রিয় ভোগ মাছ পোড়া আর ভেড়ার মাংস। তাই দিয়েই হয় পুজো এবং প্রসাদ ও বিতরণ করা হয়।দ্বিতীয় জোড়া কালীর পুজোটি হয় বর্ধমানের কাটোয়ায়। সেখানে শর্মা পরিবার এক কালে ছিলো বাংলার নবাবদের স্নেহধন্য।এই পরিবারের এক সদস্য স্বপ্নাদেশ পেয়ে সাড়ে তিনশো বছর আগে কালীপুজো শুরু করেন। প্রথমে একটি মূর্তি পুজো হত। তারপর পরিবার ভাগ হওয়ার পর পারিবারিক অশান্তির জেরে একবছর পৃথকভাবে এক সদস্য কালীপুজো শুরু করেন। তখনই ঘটে বেশ কিছু অলৌকিক ঘটনা শোনা যায় একের পর এক বিপদ আসতে থাকে পরিবারে। তারপর একরাতে দেবী স্বপ্নাদেশে নাকি জানিয়েছিলেন একই বেদিতে জোড়া প্রতিমার পুজো করতে হবে। তখন থেকেই একই মন্দিরে জোড়া প্রতিমার পুজো হয়ে আসছে।আগে বলী প্রথা থাহলেও একবার অদ্ভুত ভাবে বলী প্রদত্ত মাংস থেকে কটু গন্ধ বের হওয়ার ফলে কুলো পুরোহিত বিধান দেন যে মা আর বলী চাননা তাই বন্ধ হয় বলী।বর্তমানে বৈষ্ণব মতে পুজো হয়।দেবী মাহাত্ম নিয়ে ফিরে আসবো আগামী পর্ব গুলিতে । সঙ্গে থাকবে অম্বুবাচি নিয়ে অনেক তথ্য।এবং মন্দির রহস্য। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।
দেবী মাহাত্মা – দেবী মৌলিক্ষা
সামনেই অম্বুবাচি। এই পবিত্র সময়ে বাংলা তথা গোটা রাজ্যর প্রতিটি মাতৃ মন্দিরে কিছু বিশেষ রীতি নীতি পালন করা হয়। শাস্ত্র মতে পুজো অম্বুবাচি চলা কালীন পুজো বন্ধ থাকলেও এই সময় কালী কথার প্রচার ও দেবী মাহাত্মা শোনার জন্য অতি উত্তম সময়। তাই ধারাবাহিক ভাবে চলে আসা দেবী মাহাত্মা পর্ব গুলি চলতে থাকবে। পাশাপাশি অম্বুবাচি এবং কালী তত্ত্ব নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আপনাদের সামনে নিয়ে আসবো। আজকের পর্বে দেবী মৌলিক্ষা ও তার মাহাত্মা।বাংলা যখন অবিভক্ত ছিলো তখন বাংলা বিহার সীমান্তে অবস্থান করতেন মাতা মৌলক্ষী তবে বর্তমানে ঝাড়খণ্ডের অন্তর্ভুক্ত মলুটি গ্রাম আর এই গ্রামেই রয়েছে দেবী মৌলিক্ষার মন্দির। ‘মৌলি’ অর্থে মাথা এবং ‘ইক্ষা’ শব্দের অর্থ দেখা।দেবীর মূর্তি বলতে শুধু মস্তক-ই দেখতে পাওয়া যায়।খুব সম্ভবত এই কারণেই দেবী এখানে মৌলিক্ষা নামে পরিচিতা।দেবী মূর্তিটি ল্যাটেরাইট পাথর দ্বারা নির্মিত এবং দেবী মৌলিক্ষার মন্দিরটি অতি প্রাচীন এবং টেরাকোটার কাজের অপূর্ব নিদর্শন এই মৌলিক্ষা দেবীর মন্দির।দেবী মৌলিক্ষার সাথে তারা পিঠের দেবী তারার রয়েছে গভীর সম্পর্ক। দেবী মৌলক্ষীকে তারা পিঠের তারা মায়ের বোন বলে মনে করা হয় করা হয়।অনেকেই মৌলিক্ষা মাকে ছোটোবোন এবং তাঁরা মাকে বড়োবোনও বলে ডাকেন। শুধু তাই নয় তারাপীঠের বামা ক্ষেপা মৌলিক্ষা মায়ের কাছেই প্রথম সিদ্ধি লাভ করেন বলেও শোনা যায় তিনিই ছিলেন এই মন্দিরের প্রথম পুরোহিত পরবর্তীতে বামাখ্যাপা তারাপীঠ চলে যান । মৌলীক্ষা মন্দিরে বামদেবের যে সাধনা কক্ষটি রয়েছে সেখানে আজও বামদেবের ত্রিশূল ও বামদেব ব্যবহৃত বৃহৎ শঙ্খটি সেই ইতিহাসের সাক্ষী বহন করে চলেছে।আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের চতুর্দশী তিথি তারামায়ের আবির্ভাব তিথি হিসেবে পালিত হয় এবং ওই দিন তারাপীঠে মা তারাকে পশ্চিমদিকে মুখ করে বসানো হয়। কারণ মলুটি তারাপীঠের পশ্চিমে। বছরের একটি দিনে দুই বোন মুখোমুখি হন এবং নিজে দের মধ্যে গল্প গুজব করেনবলে মানুষের বিশ্বাস। ঠিক কিভাবে এবং কবে থেকে এই প্রথার সূচনা সেই নিয়েও একটি অলৌকিক ঘনার উল্লেখ পাওয়া যায়।কথিত আছে মলুটির রাজা রাখরচন্দ্র তারা মায়ের সামনে একবার আরাধনায় বসেন। সেই সময়ে মন্দিরের পুরোহিত ও পান্ডারা বাঁধা দেন রাজাকে আসন থেকে তুলে পুজোপাঠ বন্ধ করে দেন। রাজা মায়ের প্রতি অভিমান করে চলে এসে দ্বারকা নদের পশ্চিম পাড়ে ঘট প্রতিষ্ঠা করে মায়ের পুজো করে মলুটি গ্রামে ফিরে যান।সেই রাতেই প্রধান পুরোহিতকে তারা মা স্বপ্ন দিয়ে বলেন রাজা রাখরচন্দ্র আমার ভক্ত, সে অভিমান করে চলে গিয়েছে। এবার থেকে পুজোর সময় আমার মুখ যেন পশ্চিমমুখে মলুটির কালীবাড়ির দিকে হয়। সেই থেকে বিশেষ এই তিথিতে তারাপীঠে মা তারাকে পশ্চিমমুখী বসিয়েপুজো করা হয়।এমন অনেক অজানা আধ্যাত্মিক ইতিহাস এবং দেবী মাহাত্ম নিয়ে ফিরে আসবো আগামী পর্ব গুলিতে । সঙ্গে থাকবে অম্বুবাচি নিয়ে অনেক তথ্য। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।
দেবী মাহাত্ম – বর্ধমানের জীবন্ত কল্যাণী কালীর কথা
বাংলার কালী মন্দিরগুলিকে কেন্দ্র করে যেসব অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায় তার সবই যে বহু প্রাচীন কালে ঘটেছে তা নয়। আজও অনেক অবিশ্বাস্য এবং অলৌকিক ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে। অনেকে জনশ্রুতি বা প্রচলিত কিংবদন্তী বা কাল্পনিক ঘটনা হিসেবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করলেও যারা আস্থাশীল ও শ্রদ্ধাশীল তাদের কাছে সবই সত্যি।এমনই এক কালী মন্দিরের কথাই আজকের পর্বে লিখবো যেখানে দেবীর নিত্য লীলা দর্শন হয়।
তবে সবার আগে বলে রাখি যে অলৌকিক ঘটনা গুলির কথা এখন বলতে চলছি সেগুলি মূলত স্থানীয় দের কাছে শোনা যার বেশি ভাগই লোক মুখে প্রচারিত জনশ্রুতি বা প্রচলিত কিংবদন্তী।
বর্ধমানের কল্যাণী কালী মন্দিরের দেবী কালী ভক্তদের কাছে জীবন্ত কালী নামেই বেশি পরিচিত।
কারণ তাঁদের বিশ্বাস দেবী কল্যাণী আজও জীবন্ত। তিনি কালীরূপে এই মন্দিরে বিরাজিতা।
তিনি আছেন মানেই, সব আছে। সব নিরাপত্তা আছে। ভয় এলে তা দূরে চলে যেতে বাধ্য।
এবং এই বিশ্বাস বা শ্রদ্ধা একদিনে আসেনি
এসেছে বহু অলৌকিক ঘটনার মধ্যে দিয়ে। এসেছে দেবীর ভক্তদের প্রত্যক্ষ উপলব্ধি এবং নানাবিধ অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে।
এই অঞ্চলে কান পাতলেই শোনা যায় এক ঘটনা এই মন্দিরে এক চোর চুরি করেছিল। তবে আশ্চর্য জনক ভাবে প্রণামীর অর্থ সে আর নিয়ে যেতে পারেনি। পথেই আচমকা সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। চোর হলেও সে নিজের ভুল বুঝতে পারে এবং অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও কোনো রকমে মন্দিরে ফিরে এসে দেবী কল্যাণীকে তার প্রণামীর অর্থ ফিরিয়ে দেয় এবং ক্ষমা চেয়ে নেয় দেবীর কাছে। শুনতে অদ্ভুত লাগলেও পর মুহূর্তে সেরে যায় ওই চোরের রোগ । সে নিশ্চিন্তে ফিরে যায় সুস্থ শরীর নিয়ে।
এমন অদ্ভুত জনশ্রুতি আরো অনেক আছে। শোনা যায় একবার এক মহিলা কঠিন ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। যখন তাঁর মৃত্যু প্রায় নিশ্চিত। সেই সময়ে তিনি দেবীর কাছে নিজের জীবনভিক্ষা করেন দয়াময়ী কল্যাণী কালী সেই আবেদন যেন কান পেতে শুনেছিলেন ।দেখা যায় হটাৎ সেরে গিয়েছেন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত ওই মহিলা। পরবর্তীতে তিনি সুস্থ্য শরীরে বহু দিন জীবিত ছিলেন।
দেবী কল্যাণী যেমন দয়াময়ী তেমনই আবার তিনি
ক্রোধ ও করেন। দেবীর ভক্তরা একটা ঘটনার কথা বলেন। গল্পটি এই রকম – একবার দেবী জীবন্ত কালীর ছবি মোবাইলে বন্দি করেছিলেন কোনো এক ভক্ত সেই সময় তিনি হটাৎ জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে দেবীর ছবিতে যখন প্রণাম করেন তখন বুঝতে পারেন তাঁর জ্বর আচমকা উধাও হয়ে গিয়েছে।আজও অনেক ভক্ত অনুভব করতে পারেন যে দেবী তাঁদের আশপাশেই আছেন। আশপাশেই ঘোরাঘুরি করছেন। এভাবেই এই মন্দিরের দেবী কালী যেন বুঝিয়ে দেন, তিনি জড় বিগ্রহ নন। তিনি জীবন্ত।প্রয়োজন শুধু আস্থা আর তার প্রতি সম্পূর্ণ সমর্পন।তিনি পরম দয়াময়ী এবং শুন্য হাতে কাউকে ফেরান না।
কথায় বলে বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহু দূর।সবই বিশ্বাস এর ব্যাপার।বিশ্বাস ও আস্থা যেখানে প্রাধান্য পায় সেখানে বিজ্ঞান বা যুক্তিবাদের প্রশ্ন না তোলাই ভালো। তাই কোনো কুসংস্কার বা অন্ধ বিশ্বাসকে পশ্রয় না দিয়ে শুধু জনশ্রুতি গুলি যেমন প্রচলিত আছে তেমন তুলে ধরার চেষ্টা করলাম।
ফিরে আসবো পরের পর্বে। দেবী মাহাত্ম নিয়ে ধরাবাহিক আলোচনা চলতে থাকবে। আগামী দিনে এমন অনেক অজানা অবিশ্বাস্য ঘটনা জানতে পারবেন। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন।
ধন্যবাদ।
দেবী মাহাত্ম – জরাসন্ধ কালীর ইতিহাস
আজ আপনাদের বাংলার এমন এক প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক কালী মন্দিরের কথা বলবো যার সাথে জড়িয়ে আছে মগধরাজ জরাসন্ধর নাম আবার রানী অহল্য বাই এবং মহারাজা নন্দ কুমারের সাথেও এই মন্দিরের সম্পর্ক আছে।তখন বর্তমানের বিহার ছিল ইতিহাসের মগধ ক্ষেত্রকষ্টিপাথরে তৈরি পদ্মাসনা কালীমূর্তিকে মগধ রাজপুজো করতেন।তার নামেই নাম হয় জরাসন্ধ জরাসন্ধের মৃত্যুর পর সেই মূর্তি স্থান পায়পাতালে থেকে যায়।কেটে যায় বহু বছর। পরবর্তীতে রানি অহল্যাবাই কিছুদিন মগধে থাকাকালীন স্বপ্নাদেশে পাতালে শিবমূর্তির সন্ধান পান।তার নির্দেশে একটি নিদ্দিষ্ট স্থানে শুরু হয় খনন। সেখান থেকে উদ্ধার হয় জরাসন্ধের এই প্রাচীন কালী মূর্তি।দেবী মূর্তিটি কোষ্টি পাথরের তৈরী সাপের কুণ্ডলীর উপর পদ্মাসনে বসেন দেবী। মাথায় তার সহস্র নাগের ফনা। হাতে পায়ে সাপের নকশা।মূর্তিটি যেহেতু মগধে মিলেছে এবং সেই সময়ে ওই স্থান কাশী রাজের অধীনে তাই রানি অহল্যা সেটি তৎকালীন কাশীরাজ চৈতসিংকে দান করেন। সেই সময়ে ব্রিটিশ শাসনধীন ভারতের বড়লাট অর্থাৎ তৎকালীন ইংরেজ শাসক ওয়ারেং হেস্টিংসের নজরে পড়ে মূর্তিটির উপরে তার মনেইংল্যান্ডের মিউজিয়ামে সেটি নিয়েযাওয়ার বাসনা জাগে। সেকথা জানতে পেরে কাশীরাজ চৈত সিং তখন মূর্তিটি বাঁচাতেসেটিকে কাশীর দশাশ্বমেধ ঘাটে গঙ্গার পবিত্র জলে লুকিয়ে দেন।এক কথায় পাতাল থেকে খুঁজে আনা মূর্তির সলীল সমাধি ঘটে।আবার কিছুকাল অতিক্রান্ত হয়। তখন মহারাজ নন্দকুমার বাংলার দেওয়ান।তিনি কাশীধামে যান। তীর্থ করতে এবং গঙ্গাবক্ষ থেকে কালী মূর্তি তুলে আনার স্বপ্নাদেশ পান।আবার উদ্ধার হয় মূর্তিসেই মূর্তি তিনি নলহাটির এই আকালীপুরে এনে প্রতিষ্ঠা করেন এবং পুজোর ব্যাবস্তা করেন।আজও এই আকালীপুরের মন্দিরে পুজো হয় দিনের বেলা। সমস্ত তান্ত্রিক নিয়ম অনুসরণ হয় । তবে সব কিছুই দিনের বেলা। রাতে মা নৈশলীলা করেন। তাই নিঝুম অন্ধকার থাকে এবং পরিবেশ থাকে নিস্তব্ধ।ফিরে আসবো পরের পর্বে। দেবী মাহাত্ম নিয়ে ধরাবাহিক আলোচনা চলতে থাকবে।বাকি আছে বহু এমন অলৌকিক অ ঐতিহাসিক দেবী মাহাত্ম নিয়ে আলোচনা। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।
দেবীমাহাত্ম – মানিকোড়ের ডাকাত কালী পুজো
বাংলার ডাকাতদের কালী পুজো নিয়ে বহু কিংবদন্তী প্রচলিত আছে যার কিছু কিছু আমি আপনাদের আগেই বলেছি। আজও একটি প্রসিদ্ধ ডাকাত কালীর পুজোর কথাই লিখবো যা অবস্থিত ভারত বাংলা দেশ সীমান্তের একটি প্রত্যন্ত এবং ছোট্ট গ্রামে। গ্রামটির নাম মান কোড়।কালী পুজোর রাতে অমাবস্যার তিথিতে আজও দেবী মাতাকে শিকলে বেঁধে এবং সামনে সাদা কাপড় ঝুলিয়ে প্রথম পাঠাবলি দেওয়া হয়। আর যতক্ষণ পাঠাবলির রীতি চলবে ততক্ষণ জ্বলবে দাউদাউ করে অসংখ্য মশাল । অখন্ড ভারত থাকাকালীন ডাকাতদের হাতে শুরু হওয়া এই পুজোর আজও প্রাচীন নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে আসছেন হবিবপুর ব্লকের মানিকোড়া কালী পুজো কমিটির সদস্যরা। মালদার আদিবাসী অধ্যুষিত হাবিবপুর ব্লক ।পুজোড় বয়স প্রায় প্রায় ৫০০ বছর।এই কালীপুজো নিয়ে অনেক অদ্ভুত এবং অলৌকিক ঘটনা শোনা যায় । শোনা যায়পুজোর সময় আশ্চর্যজনক ভাবে দেবী রূদ্র মূর্তি ধারণ করেন। দেবী কালী এখানে ঘোর কৃষ্ণ বর্ণের নরমুন্ডধারিণী তার দিগম্বরী ও এলো কেশি মূর্তি দেখলেই ভক্তি ও শ্রদ্ধা জাগরিত হয় ভক্তদের মধ্যে।প্রতি অমাবস্যায় বিশেষ করে কালী পুজোর রাতে আজও দেবী মাতাকে শিকলে বেঁধে এবং সামনে সাদা কাপড় ঝুলিয়ে পাঠাবলি দেওয়া হয় এবং বিভীন্ন তান্ত্রিক উপাচার পালন করা হয়।যতক্ষণ এই সব উপাচার চলে ততক্ষণ দাউদাউ করে অসংখ্য মশাল জ্বলে চার পাশে।আঞ্চলিক ইতিহাস থেকে জানা যায় ব্রিটিশ আমলে দুর্ধর্ষ এক ডাকাত দল মানিকোড়া গ্রামে এসে জঙ্গলের মধ্যে দেবী কালীর পুজো শুরু করেন। সেই সময়ে এইখান দিয়ে বয়ে যেতো পুনরভবা নদী সেই নদী দিয়ে যেসব বণিকেরা বাণিজ্য করতে যেতেন এবং তাদের ওপর লুঠপাট চালাতো ডাকাত দল।তারপর তন্ত্র মতে চলতো মাতৃ সাধনা। সেই মাতৃ সাধনা আজও চলছে সমান ভাবে।দেবী মূর্তিকে বেঁধে রাখার কারন পাঠাবলির সময় সামনের দিকে অদ্ভুত ভাবে কিছুটা ঝুঁকে যায় মায়ের রুদ্রমূর্তি। মাকে শান্ত করার জন্য ভক্তেরা দেবী মাতাকে পিছনে শিকল দিয়ে কিছুটা সময়ের জন্য বেঁধে রাখেন।অন্তত প্রত্যক্ষদর্শী এবং প্রাচীন কাল থেকে চলে আসা জনশ্রুতি তাই বলছে।প্রথম পাঠাবলির সময় সামনে সাদা কাপড় টাঙিয়ে দেওয়া হয়। আর চতুর্দিকে জলে মশাল। এমন ভাবেই যুগ যুগ ধরেই মানিকোড়া গ্রামের দেবী কালীমাতা পূজিত হয়ে আসছেন।মানকোড়েড় ডাকাত কালী খুবই জাগ্রতা এবং সব ভক্তের মনোস্কামনা পূর্ণ করেন বলে বিশ্বাস তাই বহু মানুষ আসেন পুজো দিতে। প্রার্থনা জানাতে।ফিরে আসবো পরের পর্ব নিয়ে। থাকবে এমনই অদ্ভুত ও রোমাঞ্চকর কালী পুজোর কথা। থাকবে নতুন কোনো মন্দিরের রহস্য। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।
দেবী মাহাত্ম – পাতুন গ্রামের জ্যান্ত কালীর পুজো
বাংলায় এমন কিছু কালী মন্দির আছে এমন কিছু দেবী মূর্তি আছে যেগুলি নানা কারণে বেশ বিখ্যাত বা আলোচিত আবার এমন অনেক মন্দির বা শতাব্দী প্রাচীন পুজোও আছে যার জনপ্রিয়তা স্থানীয় অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ সেই ভাবে প্রচার মাধ্যমে আসনি। এমনই এক কালী পুজো হয় বর্ধমানের পাতুন নামে ছোট্ট একটি গ্রামে।আজকের পর্বে এই পুজো এবং পুজোর সাথে জড়িত কিছু অদ্ভুত প্রথা নিয়ে লিখবো ।এই গ্রামে প্রায় চারশো বছর ধরে পূজিতা হয়ে আসছেন জ্যান্ত কালী। জ্যান্ত কালী মানে সত্যি সত্যি মানব রুপী কালী অর্থাৎ কোনও মূর্তি নয় মানুষই কালীর সাজে সেজে থাকেন এখানে । তাঁকে ঘিরেই চলে পূজা অর্চনা এবং যাবতীয় তান্ত্রিক উপাচার। শুনতে অদ্ভূত লাগলেও এই গ্রামের মানুষের কাছে এটা স্বাভাবিক রীতি।এখানে নেই কোনও কালী মন্দির আছে উৎসব এবং অদ্ভুত সব প্রথা। মূল উৎসব অনুষ্ঠিত হয়চৈত্র সংক্রান্তিতে এই সময়ে মা কালীর বেশে বহুরূপী গ্রামে ঘুরে ঘুরেই করেন গাজনের নাচ। সেই সময়ে ওই শোভা যাত্রায় নানা রকম লোকগান এবং মন্ত্র উচ্চারণ করা হয়। মা কালীর এক হাতে থাকে খাঁড়া বা তরোয়াল এবং অন্য হাতে থাকে কাগজ বা মাটির তৈরি নরমুণ্ড।অদ্ভুত সেই রূপ এবং শোভা যাত্রা দেখতে আসেন বহু মানুষ।তবে একটি নিদ্দিষ্ট পরিবারের সদস্য ছাড়া অন্য কেউ দেবী কালীর মুখোশ পড়ে কালী সাজতে পারেননা। এই মুখোশও রাখা থাকে ওই পরিবারের কাছেই। মুখোশকে নিত্য পুজো করা হয়। এবং বছরের এই নিদ্দিষ্ট সময়ে মুখোশ জনসমক্ষে আনা হয়।গ্রামের বাকি পরিবারের সদস্যরাও অংশ নেন তবে তারা সাজেন কালীর চ্যালাচামুণ্ডা আর একজন সাজেন শিব।স্থানীয় রা বলেন পুজোর কিছু বিশেষ সময়ে এবং বিসর্জনের সময়ে একজন ব্যক্তিকে দেবীকে ধরে রাখতে হয়। কারন দেবীর মুখোশ পড়ার পরে সেই দেবীর সাজে সজ্জিত মানুষটির মধ্যে অদ্ভুত শক্তি সঞ্চারিত হয় যা যেকোনো সময়ে নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যেতে পারে এবং কোনো বিপত্তি ঘটে যেতে পারে। তাই সতর্ক থাকতে হয়।গভীর রাতে দেবীর পুজো অনুষ্ঠিত হয়। নিয়ম নিষ্ঠা মেনে সব রীতি পালিত হয়।ঢাকের শব্দ। ধুনীর ধোঁয়া। নাচ গান। সব মিলিয়ে এক অদ্ভুত এবং মায়াবী পরিবেশ সৃষ্টি হয়।এমন কতই না অদ্ভুত সব পুজো এবং রীতি নীতি আছে সারা বাংলা জুড়ে। রয়েছে কতো রহস্যময় দেবী মন্দির।আবার এমন কোনো পুজো বাদেবীর মাহাত্ম নিয়ে ফিরে আসবো যথা সময়ে। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।