Home Blog

শিব মাহাত্ম – সিদ্ধেশ্বর শিব মন্দিরের ইতিহাস 

শিব মাহাত্ম – সিদ্ধেশ্বর শিব মন্দিরের ইতিহাস

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

শিব মাহাত্মর আজকের পর্বে আপনাদের বীরভূম জেলার মল্লারপুরে অবস্থিত বিখ্যাত সিদ্ধেশ্বর শিবমন্দিরের ইতিহাস এবং তার পৌরাণিক তাৎপর্য সম্পর্কে নিয়ে আলোচনা করবো।

 

শোনা যায় মহাভারতের পাণ্ডবজননী কুন্তী এখানেই মহাদেবের পূজা করেছেন। মহালিঙ্গেশ্বর তন্ত্র যেখানে স্বয়ম্ভূ শিবমন্দিরের তালিকা আছে, সেখানেও সিদ্ধিনাথ নামে এখানকার ওঁ আকৃতি যুক্ত মহাদেবের উল্লেখ আছে। এই মন্দির এমন এক তীর্থ যেখানে পুরাণ ও ইতিহাস একসাথে মিশে গেছে।

 

সিদ্ধেশ্বর শিব মন্দিরে বিরাজ করছেন এক

অনাদি এবং অখণ্ড শিবলিঙ্গ।আজ থেকে প্রায় এক হাজার বছর আগে মল্লারপুরের রাজা ছিলেন মল্লেশ্বর। তিনি এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই শয়ম্ভু শিবই নাকি তারাপীঠের দেবী তারার ভৈরব।

 

এখানকার শিবলিঙ্গর ওপরে রয়েছে ওঁ চিহ্ন যা খুবই দুর্লভ।মল্লেশ্বর শিবমন্দিরের পাশের মন্দিরেই রয়েছেন দেবী মল্লেশ্বরী বা সিদ্ধেশ্বরী। এই মল্লেশ্বর শিব মন্দিরের পিছনে তান্ত্রিকাচার্য শ্রীকৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের জীবন্ত সমাধি বা ইচ্ছাসমাধির বেদী রয়েছে। এই কৃষ্ণানন্দই ছিলেন কালীসাধক রামপ্রসাদের গুরুদেব।তিনি বৃহৎতন্ত্রসার গ্রন্থ রচনা করে প্রসিদ্ধ হয়ে ছিলেন।

 

সিদ্ধেশ্বর শিব মন্দিরের কারুকাজ এবং সৌন্দর্য এক কথায় অপূর্ব। এই মন্দির চত্বরে রয়েছে চারচালা রীতি মেনে স্থাপিত আরও কিছু মন্দির।এই মন্দির তৈরির পর থেকে সেবাইতরা বংশ পরস্পরায় এখানে পুজো করে আসছেন। অন্যান্য শিবলিঙ্গ মাটির ওপরে থাকে। এখানে শিবলিঙ্গের বেশিটাই রয়েছে মাটির নীচে। তাই একে গুপ্ত শিবলিঙ্গ বলা হয়। এখানে শিবকে মাটি খুঁড়ে পাওয়া গিয়েছে বা স্বয়ং প্রকট হয়েছেন দেবাদিদেব এই শিবলিঙ্গ আলাদা করে এনে প্রতিষ্ঠা করা হয়নি।

 

এখানে শিব লিঙ্গের চার পাশে বিশেষ বিশেষ সময়ে জল লক্ষ করা যায়।শিবলিঙ্গকে ঘিরে যে জলধারা অবস্থান করছে তা আসলে গঙ্গা।শুধু জল নয় মাঝে মাঝে শিবের অনুচর নাগ দেবতার দর্শন ও পাওয়া যায়।সব মিলিয়ে সিদ্ধেশ্বর শিব মন্দিরে অলৌকিকতা, পৌরাণিক প্রেক্ষাপট এবং ইতিহাসের সংমিশ্রনে সৃষ্টি এক অদ্ভুত আধ্যাত্মিক

পরিবেশ অনুভব করা যায়।প্রতি বছর চৈত্র এবং শ্রাবন মাসে এই সিদ্ধেশ্বর শিব মন্দিরে বিশেষ পুজো উপলক্ষে বহু ভক্তের ভিড় হয়।

 

আবার আগামী পর্বে অন্য এক প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক শিব মন্দির নিয়ে আলোচনা হবে। চলতে থাকবে শিব মাহাত্ম। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

শিব মাহাত্ম – জটেশ্বর শিব

শিব মাহাত্ম – জটেশ্বর শিব

 

পন্ডিতজি ভৃগুর শ্রীজাতক

 

বাংলার অন্যতম প্রসিদ্ধ এবং জাগ্রত শিব মন্দির জটেশ্বর শিব মন্দির।এই শিব মন্দির নিয়ে আছে বহু অদ্ভুত এবং অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ।

আজকের শিব মহাত্ম এই জটেশ্বর শিব মন্দির নিয়ে।

 

আলিপুরদুয়ারে অবস্থিত জটেশ্বর শিব মন্দিরের বয়স আনুমানিক প্রায় দুশো বছর এই দীর্ঘ সময়ে একাধিকবার মন্দিরের সংস্কার হয়েছে।এই জটেশ্বর শিব লিঙ্গের আবিষ্কারের ঘটনাটিও বেশ অলৌকিক এবং রোমাঞ্চকর।

 

শোনা যায় একবার মন্দির সংলগ্ন কাঠালবাড়ি গ্রামের গ্রামবাসীরা লক্ষ্য করেন জঙ্গলের ভিতর একটি স্বেত বর্ণের দুগ্ধবতীর আবির্ভাব হয় মাঝে মাঝে।এই গোমাতা কোথা থেকে যে আসে এবং আবার কোথায় মিলিয়ে যায় তা বোঝা যায়না। অনেকেই গোপনে এই গভীর উপর নজর রাখতে শুরু করেন।একদিন গ্রামবাসিরা গোমাতার পিছু নিয়ে গভীর জঙ্গলে প্রবেশ করে লক্ষ করেন সেই গাভী গভীর জঙ্গলে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা এক শিব লিঙ্গের অভিষেক করছে নিজের দুধ দিয়ে।সবাই এই অলৌকিক দৃশ্য দেখে মোহিত হয়ে যায় এবং দ্রুত এই খবর চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে।

 

পরবর্তীতে স্থানীয় জমিদারের আদেশে লোক জন গিয়ে শয়ম্ভু শিব লিঙ্গটি উদ্ধার করে এবং সেটি বহন করে জমিদার বাড়িতে আনার সময় পথে এক স্থানে তা নামিয়ে রাখলেন বিশ্রামের জন্যে। অলৌকিক ভাবে পরে সেই স্থান থেকে শিব লিঙ্গকে ওঠানো আর সম্ভব হয়নি।এমনকি জমিদারের হাতিও ওই স্থান থেকে শিব লিঙ্গ এক চুল নাড়াতে পারেনি। সবাই বোঝেন এই স্থানেই বাবা মহাদেব বিরাজ করতে চান। পরে ঐখানেই ছোট শিব মন্দির বানিয়ে পুজো শুরু হয়|

 

এর পর দীর্ঘ সময় কেটে যায়|একদিন হঠাত্‍ করে এক দিগম্বর সাধুর আবির্ভাব ঘটলো সেই গ্রামে। তিনি শিব পুজোর দায়িত্ব নেন।সাধু দীর্ঘদিন পুজো দিয়েছিলন এই শিব মন্দিরে তারপর একদিন তিনি অন্তর্ধান হন |এরপর একদিন মিথিলা থেকে এক পুরোহিত এলেন তিনি এসে স্থানীয়দের জানালেন তিনি স্বপ্নাদেশ পেয়েছেন এখানে আসার জন্য এবং এই স্থানে তিনি এসে দেখেন স্বপ্নে যা যা দেখেছেন সব একশো শতাংশ সত্যি। তিনি স্থানীয় লোকেদের সাথে কথা বলে নিয়মিত পুজোর ব্যাবস্থা করেন তৈরি হয় সুন্দর এক বৃহৎ শিব মন্দির। জটেশ্বর মহাদেব নামে এখানে পূজিত হন শিব|

 

আজও সেই শুরুর দিনের মতো শাস্ত্র মতে এখানে পুজো হয়। বাবার বহু ভক্ত আসেন নিজের নিজের মনোস্কামনা নিয়ে। বাবার দয়ায় সবার মনোস্কামনা পূর্ণ হয়।বিশেষ করে শ্রাবন মাসে এবং চৈত্র মাসে ভিড় হয় সব থেকে বেশি।

 

বাংলায় শিব মন্দিরের সংখ্যা অসংখ্য। অলৌকিক ঘটনার সংখ্যাও প্রচুর।আবার শিব মাহাত্মর পরবর্তী পর্বে বলবো অন্য কোনো প্রাচীন শিব মন্দিরের কথা।পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

শিব মাহাত্ম – নর্তকেশ্বর শিব

শিব মাহাত্ম – নর্তকেশ্বর শিব
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
দক্ষিণভারতে যেমন শিব নটরাজ রূপে পূজিত হন পূর্বভারতে তেমনই ‘নর্তকেশ্বর’ নামক নৃত্যরত শিবমূর্তির পূজা প্রচলিত ছিল।আজকের পর্বে আপনাদের এমনই এক শিবমূর্তির ইতিহাস জানাবো।
দশম শতকের শেষভাগে পালবংশের রাজা যখন মহীপাল। তখন বাংলা আক্রমণ করলেন সে যুগের ভারতবর্ষের সবচেয়ে শক্তিশালী রাজা চোলরাজ রাজেন্দ্র।চোলরাজ রাজেন্দ্র ছিলেন শিব ভক্ত ।
তাই তার সেনাবাহিনী সোনাদানা বা মূল্যবান রত্ন ছাড়াও বঙ্গবিজয়ের আরও একটি স্মারক নিয়ে যান নিজের রাজ্যে। সেটি হল, নর্তকেশ্বরের বিগ্রহ।
সেই অদ্ভুত সুন্দর শিব মূর্তি দেখে অত্যান্ত খুশি হন চোল রাজা। তার ইচ্ছায় তামিলনাড়ুর অমৃতঘটেশ্বর মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত হলেন বাংলার শিবঠাকুর।
এই নর্তকেশ্বর শিব মূর্তি মূর্তি মূলত দুইপ্রকার। দশভুজ নর্তকেশ্বর এবং দ্বাদশভুজ নর্তকেশ্বর।
বাংলা থেকে নিয়ে যাওয়া সেই শিব মূর্তি ছিলো দশভুজ নর্তকেশ্বর।
অপূর্ব সেই ধাতব বিগ্রহ বৃষরূপী নন্দীশ্বরের পৃষ্ঠে ললিত তাণ্ডবে মত্ত নর্তকরাজ, তাঁর বাহনটি ঊর্ধ্বমুখ হয়ে দেখছে সেই নৃত্যলীলা। মহেশ্বরের মাথায় জটামুকুট, স্কন্ধে নাগ-উপবীত তাঁর মুখ্য দক্ষিণহস্তে রয়েছে গজহস্ত মুদ্রা, বাম হাত উপরে তুলে পতাকামুদ্রায় তার ভক্তদের অভয় দিচ্ছেন। অন্য আটটি হাতে রয়েছে ধনুর্বাণ, খড়গ-চর্ম, ত্রিশূল, খট্টাঙ্গ, কপালপাত্র আর অঙ্কুশ।
তাঁর পায়ের কাছে, তাঁকে ঘিরে রয়েছেন গণপতি, স্কন্দ এবং অন্যান্য অদ্ভুতদর্শন শিবানুচরের দল। মহাদেবের প্রভামণ্ডলের দক্ষিণাংশে শূন্যে মরালপৃষ্ঠে বিরাজ করছেন বীণাধারিণী সরস্বতী, ঊর্ধ্বভাগে হাতে পুষ্পমালা নিয়ে ভেসে রয়েছেন দুই বিদ্যাধর।
ঐতিহাসিকদের মতে এমন নর্তকেশ্বর রূপে শিব মূর্তি প্রাচীনকালে বাংলার আরো অনেক স্থানে দেখা যেতো তবে বর্তমান সময়ে এই মূর্তি বাংলায় খুব একটা দেখা যায়না। বাংলার নর্তকেশ্বর শিব মূর্তির একটি বৈশিষ্ট ছিলো দুইপাশে দণ্ডায়মানা দুই দেবী দক্ষিণভাগে মকরবাহিনী গঙ্গা এবং বামভাগে সিংহবাহিনী উমা।এই মূর্তির দর্শন পাওয়া খুবই সৌভাগ্যের বিষয় কারণ অতি দুর্লভ এই
শিব মূর্তি
বাংলার শিব মূর্তি এবং শিব মন্দির নিয়ে আছে এমন বহু ইতিহাস এবং অলৌকিক ঘটনা।
ফিরে আসবো আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

শিব মাহাত্ম – হাইকোর্টেশ্বর মহাদেব

শিব মাহাত্ম – হাইকোর্টেশ্বর মহাদেব
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
সনাতন ধর্মে তিন জনকেই ভগবানের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। ব্রম্হা বিষ্ণু এবং মহেশ্বর।সৃষ্টি কর্তা,পালন কর্তা এবং সংহার কর্তা।এদের মধ্যে ব্রম্হা এবং বিষ্ণুর ক্ষেত্রে বৈদিক বা পৌরাণিক দেবতার স্তর থেকে খুব একটা অবতরন দেখা যায়নি।
যদিও বিষ্ণু একাধিক অবতারে মর্তে এসেছেন কিন্তু ভগবান ভগবানই থেকে গেছেন। শিব ব্যাতিক্রম। তিনি কোথাও কোথাও লৌকিক দেবতা রূপেও ধরা দিয়েছেন আবার একাধিক নামে এবং পরিচয়ে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে পূজিত হয়েছেন। যেমন কোথাও তিনি পঞ্চানন আবার কোথাও তিনি বাবা বড়ো কাছারি।শিবের এমনই এক ব্যাতিক্রমী রূপ
হলো হাইকোর্টেশ্বর।আজকের শিব মাহাত্মতে আলোচনা করবো বাংলার এই হাইকোর্টেশ্বর মহাদেব নিয়ে।
কলকাতার কিরণশঙ্কর রোডে অবস্থিত এই হাইকোর্টেশ্বর মহাদেবের মন্দির।শোনা যায় প্রায় একশো বছর আগে উড়িষ্যার থেকে আসা জগদীশ চন্দ্র গিরি নামক জনৈক ব্যক্তি হাইকোর্ট অঞ্চলের একটি গাছের তলায় এই শিবলিঙ্গ খুঁজে পান। তখন থেকেই চলে আসছে এই হাইকোর্টেশ্বর বাবার পুজো। তবে মন্দির প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৫৬ সালে এবং তখন থেকে বাবা হাই কোর্টেশ্বর মহাদেবের জনপ্রিয়তা আরো বাড়ে।
বহু মানুষ বিশ্বাস করেন বাবা হাইকোর্টেশ্বর সহায় থাকলে জয় নিশ্চিত এবং তার আদালতে সুবিচার পাওয়া যাবেই।
আজও মামলা মোকদ্দমার রায় বেরনোর আগে, উকিল থেকে মক্কেল সবাই জয়ের আশায় একবার এই দেবতার থানে মাথা ঠেকিয়ে যান এমনকি বাদ যান না বিচারপতিরাও।মামলায় ফেঁসে গিয়ে এখানে অনেকেই মানত। করেনআবার সেই মানত পূর্ণ হলে ফিরে আসেন পুজো দিতে।
বর্তমানে শ্রাবন এবং চৈত্র মাসে এই মন্দিরে বিশেষ পুজো হয় এছাড়া শিব রাত্রিতে বহু ভক্ত এবং দর্শণার্থী আসেন বাবার বিশেষ পুজোয় অংশ যোগ দিতে। সব মিলিয়ে ওই শিব মন্দির এখন বেশ জাগ্রত এবং প্রসিদ্ধ।
বাংলার এমন বহু প্রসিদ্ধ শিব মন্দিরে ইতিহাস এবং তাদের সাথে জড়িত অলৌকিক সব ঘটনা নিয়ে আবার ফিরে আসবো
আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

শিব মাহাত্ম – বাবা পঞ্চমুখী শিব ধাম

শিব মাহাত্ম – বাবা পঞ্চমুখী শিব ধাম

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

শ্রাবন মাস শিবের মাস। এই মাসে আমি সাধারণত শিব নিয়েই আলোচনা করে থাকি। আজ শ্রাবনের সোমবার আবার শুরু করছি শিব মহাত্ম নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা। আজকের পর্বে আপনাদের পুরুলিয়ায় অবস্থিত এমন এক প্রাচীন শিব মন্দিরের কথা জানাবো যেখানে শিবের একটি ব্যতিক্রমী রূপ দেখতে পাওয়া যায়। পুজো পদ্ধতিও একটু আলাদা।

পুরুলিয়ায় কংসাবতী নদীর উত্তরপাড়ে অবস্থিত ‘বাবা পঞ্চমুখী ধাম’। শোনা যায় মহাভারতের যুগে পান্ডবদের সময়কাল থেকে এই মন্দিরের অস্তিত্ব রয়েছে । এই মন্দিরের সঠিক বয়স সম্বন্ধে কারুরই কোনো ধারণা নেই। এই মন্দিরে অধিষ্ঠান রয়েছে চতুর্মুখী একটি শিবলিঙ্গের কিন্তু এখানে শিব পূজিত হন পঞ্চমুখী রূপে কারণ শিবের পঞ্চম তম মুখটি পুরোহিত নিজের মুখ হিসাবে পরিকল্পনা করেইপূজা করে থাকেন।যুগ যুগ ধরে চলে আসছে
এই প্রথা।

শাস্ত্রে পঞ্চমুখি শিব কে পাঁচটি তত্ত্বর প্রতীক রূপে দেখা হয় আবার অনেকের কাছে পঞ্চমুখি সদাশিব শিবের পঞ্চাক্ষরি মন্ত্রের প্রতিনিধিত্ব করছে।শিবের এই রূপকে পঞ্চানন্দ ও বলা হয়। প্রতিটি মুখের রয়েছে নিজস্ব নাম। নামগুলি যথাক্রমে ইশানা, তৎপুরুষ,অঘোর,বাম দেব এবং ব্রম্হা বা সদ্যজাত।আবার অনেকে মনে করেন এই পাঁচটি মুখ পাঁচটি গুনের প্রতিনিধিত্ব করে জথা সৃষ্টি, সংরক্ষণ, ধ্বংস, গোপনীয়তা এবং অনুগ্রহ।

হিন্দু সনাতন ধর্মে একাধিক দেব দেবীর পুজোর প্রচলন থাকলেও মানুষের মধ্যে ভগবান বসবাস করেন এমনটাই বিশ্বাস রয়েছে। মানুষের মধ্যে যে সত্যিই যে ঈশ্বর বিরাজমান সেই তত্বকে এই মন্দিরে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তাই শিব মূর্তির মধ্যে নিজের প্রতিচ্ছবিকে কল্পনা করে পুজো করেন পুরোহিত। ভক্ত ও ভগবান এই ভাবে এখানে মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়। এই পুজো পদ্ধতি সম্ভবত বাংলা তথা দেশের আর কোনো শিব মন্দিরে দেখা যায়না সেদিক দিয়ে পঞ্চ মুখী শিব ধাম অনন্য এক শিব মন্দির এবং তার গুরুত্ব অপরিসীম।

পঞ্চ মুখী শিব ধামে সারা বছর দর্শণার্থীরা আসেন তবে চৈত্র মাস এবং শ্রাবন মাসে বহু দুর দূরান্ত থেকে ভক্তদের সমাগম হয় এই মন্দিরে। ভক্তদের বিশ্বাস বাবা পঞ্চমুখী শিব ভক্তদের সমস্ত মনোবাসনা পূরণ করে থাকেন এবং কাউকেই খালি হাতে ফেরান না কারন তিনি পরম দয়াময়।

শ্রাবন মাস জুড়ে বাংলার এমন বহু শিব মন্দির নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে আলোচনা করবো।
ফিরে আসবো শিব মাহাত্ম নিয়ে
আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

গুরু কথা – আদি গুরু শঙ্করাচার্য

গুরু কথা – আদি গুরু শঙ্করাচার্য

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা এবং সম্প্রদায়কে এক সূত্রে গেথে সনাতন ধর্মকে একটি নিরাপদ এবং মজবুত ভিত্তি প্রদান করতে মহাদেব স্বয়ং আদি শঙ্করাচার্য্য রূপে পৃথিবীতে এসেছিলেন। তিনিই আদি গুরু। তার দেখানো পথেই এগিয়েছে সনাতন ধর্ম।তিনিই সনাতন ধর্মের অভিভাবক এবং রক্ষক। আজকের পর্ব আদি শংকরাচার্য্যকে নিয়ে।

 

শংকর বিজয়ম নামক প্রাচীন গ্রন্থ অনুসারে 1788 খ্রিস্টাব্দে কেরল রাজ্যের কালাডি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন শঙ্করাচার্য্য|তার বাবার নাম ছিল শিবগুরু ও মায়ের নাম আর্যাম্বা|কথিত আছে ত্রিশূরের বৃষভচল শিবমন্দিরে পুত্রকামনা করে পূজা দিয়ে আশীর্বাদ স্বরূপ শংকরকে পেয়ে ছিলেন তার বাবা মা|তিনি ছিলেন শিবের বর পুত্র এবং পরবর্তীতে তাকে শিবের অবতার হিসেবেই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে|রক্ষন শীল হিন্দু পরিবারে তার বড়ো হয়ে ওঠা|বাল্যকাল থেকেই শংকর ছিলেন অত্যান্ত মেধাবী ও আধ্যাত্মিক মানসিকতার|মনে করা হয় মাত্র আট বছর বয়সে তিনি চারটি বেদ আয়ত্ত্ব করে ফেলেন অতি সহজে|অল্প বয়সে পিতৃ বিয়োগের পর চরম আর্থিক দুর্দশার সম্মুখীন হতে হয় তাকে|

 

কৈশোর থেকেই শঙ্করের ইচ্ছে ছিলো সন্ন্যাস নেয়ার কিন্তু মা রাজি ছিলেন না পরবর্তীতে তাকে রাজি হতে হয়,এ নিয়েও আছে এক অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ|একবার বালক শংকর পূর্ণা নদীতে স্নান করছিলেন। এমন সময় একটি কুমির তার পা কামড়ে ধরে। শঙ্করের মা তখন সেখানেই উপস্থিত ছিলেন|তিনি মা-কে বলেন, মা যদি সন্ন্যাস গ্রহণের অনুমতি দেন, তাহলে কুমিরটি তার পা ছেড়ে দেবে। ছেলের প্রাণ বাঁচাতে মা তাকে সন্ন্যাস গ্রহণের অনুমতি দিলেন|কুমির ও সাথে সাথে পা ছেড়ে অদৃশ্য হলো|এরপর সন্যাস নিয়ে গৃহ ত্যাগ করলেন শঙ্করাচার্য্য|গুরুর খোঁজে বেড়িয়ে পড়লেন পথে|

 

দীর্ঘ সময় পদব্রজে সারা উত্তর ভারত পরিভ্রমণ করার পর অবশেষে গুরুর সাথে সাক্ষাৎ হলো|নর্মদানদীর তীরে ওঙ্কারেশ্বরে তিনি গৌড়পাদের

শিষ্য গোবিন্দ ভগবদপাদের শিষ্যত্ব গ্রহন করলেন শঙ্করাচার্য্য|গুরু শঙ্করাচার্য্যকে অদ্বৈত মত প্রচার করতে বলেন|পরবর্তীতে তিনি কাশী,বদ্রিনাথ সহ বহু স্থানে ঘুরে বেড়ান|অসংখ্য ভাষ্য ও গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেন এবং তার পাশাপাশি চালিয়ে যান

অদ্বৈতবাদের প্রচার|এই সময় অসংখ্য অনুগামী ও ভক্ত তার সংস্পর্শে আসেন ও তার শিষ্যত্ব গ্রহন করেন|বহু ধর্মীয় বিতর্কে অংশগ্রহন করে সেকালের ধর্মজগতের বহু সনামধন্য পন্ডিতকে শাস্ত্র আলোচনায় পরাস্ত করে শংকরাচার্য্য হয়ে ওঠেন এক অতি পরিচিত কিংবদন্তী স্বরূপ|মনে করা হয় কাশীতে বিশ্বনাথ মন্দিরদর্শন করতে যাওয়ার সময় স্বয়ং শিব এক চন্ডাল রূপে

তাকে দর্শন দিয়ে ছিলেন|

 

শঙ্করাচার্য সারাটা জীবন ধরে অদ্বৈতত্ত্বের প্রচার করে বেদ বিমুখী সমাজকে আবার বেদান্তের পথে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন| শঙ্করাচারজ্যর অদ্বৈত ত্বত্ত্বের মূল কথা ছিল- ব্রহ্ম সত্য, জগৎ মিথ্যা। জীব ও ব্রহ্মে কোনো প্রভেদ নেই|অর্থাৎ, জীব ও ব্রহ্মকে এক ভাবাই অদ্বৈতবাদ।সকল জীবের অভ্যন্তরে যে আত্মা বিরাজমান, তা পরমাত্মারই প্রকাশ। এ তত্ত্বে জীবাত্মা ও পরমাত্মা এক|

 

শঙ্করা চার্য্য দেশের চার প্রান্তে চারটি মঠ প্রতিষ্ঠা করেন|পুরী, জোশীমঠ, দ্বারকা এবং শৃঙ্গেরী।

আজও এই পরম্পরা মেনে চারটি মঠের প্রধান অর্থাৎ চারজন শঙ্করাচার্য্য পদাধিকারী সনাতন ধর্মের কল্যানে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছেন সর্বদা|চার টি মঠের একেটির অধীনে একেকটি বেদ কে রাখা হয়েছে।যদিও কাঞ্চি এই চারটি মঠের অন্তর্গত নয় তবে যেহেতু আদি শঙ্করাচার্য্য স্বয়ং এই মঠে তার জীবনের বেশিভাগ সময় কাটিয়েছেন এবং এই মঠের সাথে যুক্ত ছিলেন তাই এই মঠের আচার্য্যকেও শংকরাচার্য্য রূপে স্বীকৃতি দেয়া হয়।আদি গুরু শংকরাচার্য্য পরম ব্রহ্মতে বিলীন হলেও গুরু শিষ্য পরম্পরার মধ্যে দিয়ে তিনি আজও সনাতন ধর্মের শ্রেষ্ঠ স্থান অধিকার করে আছেন।

 

এই মহামানবের জীবনের আরো অনেক বিষয়ের ন্যায়ে তার দেহ ত্যাগের প্রকৃত স্থান নিয়েও পন্ডিতদের মধ্যে মত পার্থক্য রয়েছে| কেদারনাথ মন্দিরের পিছনে আদি শঙ্করের প্রতি উৎসর্গীকৃত সমাধি মন্দির রয়েছে মনে করা হয় 1820 খ্রিস্টাব্দে শঙ্করাচার্য্য মাত্র বত্রিশ বছর বয়সে এই স্থানেই দেহত্যাগ করেন|এই স্থান আজ এক পবিত্র তীর্থ স্থানে পরিণত হয়েছে।

 

গুরু কথা আজ এখানেই শেষ করলাম। তবে ভারতের আধ্যাত্মিক গুরুদের সাধনা এবং

তাদের জীবনী নিয়ে আবার পরবর্তী সময়ে

আলোচনা করবো। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

গুরু কথা – শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী বাবা 

গুরু কথা – শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী বাবা

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আজকের গুরু কথায় পরম শ্রদ্ধেয় এবং মহান গুরু শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর জীবন এবং সাধনা নিয়ে লিখবো।

 

১৭৩৫ খ্রিস্টাব্দে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার

চাকলা গ্রামে লোকনাথ বাবার জন্ম হয়েছিল। তার পিতার নাম ছিল রামনারায়ন এবং মায়ের নাম ছিল কমলাদেবী। পিতা-মাতার চতুর্থ সন্তান ছিলেন তিনি। ছোটো থেকেই তার মধ্যে আধ্যাত্মিক জগৎ এবং পরম ব্রহ্মকে জানার অন্তত জিজ্ঞাসা দেখা যায়।তার যখন এগারো বছর বয়সে তখন তাকে উপনয়ন করিয়ে পাশের গ্রামের ভগবান গাঙ্গুলীর হাতে সন্ন্যাস এর জন্য তুলে দেওয়া হয়েছিল। তার বাল্যবন্ধু ছিল বেণীমাধব।ছোট্ট বেণীমাধব এবং লোকনাথ গুরুর হাত ধরে নানা স্থান পরিক্রমা করে বেড়াতে শুরু করেন। এই সময় তিনি ধ্যান জপ এবং সাধনার আরো অনেক কৌশল শেখেন।

 

গুরু ভগবান গাঙ্গুলি নানা ভাবে তার শিষ্যর পরীক্ষা নিয়েছেন।তিনি বালক লোকনাথের মনোসংযোগের পরীক্ষা নেয়ার জন্য প্রতিকূল পরিবেশে তাকে ধ্যানে বসতে বলতেন। এমনকি ধ্যান চলা কালীন চিনি চড়িয়ে পিঁপড়ে দের আকর্ষণ করতেন। প্রথম দিকে ধ্যান ভঙ্গ হলেও ধীরে ধীরে লোকনাথ তার ইন্দ্রিয় জয় করতে শিখলেন এবং একে একে সাধনার একেকটি কঠিন ধাপ পেরিয়ে হয়ে উঠলেন সিদ্ধ যোগী।

 

একাধিক অলৌকিক ঘটনা আছে বাবা লোকনাথের জীবনে। বরোদাতে থাকার সময়ে একবার অহংকারী সাধক লোকনাথ বাবাকে সিদ্ধিলাভের প্রমাণ দিতে বলেন। তিনি বলেছিলেন লোকনাথ বাবা যদি সিদ্ধপুরুষ হন তবে তিনি তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করবেন। লোকনাথ বাবাকে ধুতরা ফুল ও ভয়ংকর সাপের বিষ দেওয়া হয়েছিল। সেই বিষকে পরাজিত করে বাবা লোকনাথ অক্ষত ছিলেন।

 

বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের বারদী আশ্রমে তিনি সমাধিস্থ হয়েছিলেন। জানা যায় যে এক ভক্ত পুত্রের যক্ষ্মারোগ তিনি নিজের শরীরে ধারণ করেছিলেন তাতে বালকটি পুরো সুস্থ হয়ে ওঠে এবং এই ঘটনার কিছুদিন পর যক্ষ্মা রোগে বাবা লোকনাথের মৃত্যু ঘটে। একশো ষাট বছর বয়সে লোকনাথ বাবা পরলোক গমন করেন।

 

আজ সারা দেশে তার অসংখ্য ভক্ত।অনেকেই তাঁকে শিবের অবতার বলে মনে করেন।প্রতি বছর তার জন্ম তিথি এবং তিরোধান দিবসে জন্ম স্থান চাকলা ধাম সহ প্রতিটি লোকনাথ

বাবার মন্দিরে বহু ভক্তের সমাগম হয়। আজীবন তিনি মানুষকে সর্বদা সত্যের পথে চলতে নির্দেশ দিয়ে গেছেন।

 

আবার গুরু কথার আগামী পর্বে অন্য এক মহান গুরুর জীবন এবং সাধনার কথা নিয়ে

ফিরে আসবো। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

গুরু কথা – মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্য দেব

গুরু কথা – মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্য দেব

 

পন্ডিতজি ভৃগুর শ্রী জাতক

 

ভারতের মহান আধ্যাত্মিক গুরুদের কথা বলা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে যদি বাংলার নবজাগরনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব ও মহান বৈষ্ণব সাধক শ্রী চৈতন্যদেবের কথা না বলা হয়।আসুন আজকের পর্বে জেনে নিই তার জীবনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ

দিক এবং কিছু অলৌকিক ঘটনা|

 

১৪৮৬ সালের এক দোল পূর্ণিমায় বাংলার শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চার তৎকালীন পীঠস্থান নবদ্বীপে জন্মে ছিলেন গৌরাঙ্গ যিনি কৃষ্ণ সাধনায় নিজেকে সম্পূর্ণ রূপে বিলিয়ে দিয়ে হয়ে উঠলেন মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্য|নিম গাছের ছায়ায় তিনি জন্মে ছিলেন তাই নাম রাখা হয়ে ছিলো নিমাই।তার জন্মের বহু পূর্বেই একাধিক প্রাচিন শাস্ত্রে তার আবির্ভাব সম্পর্কে ভবিষ্যতবাণী করা হয়েছে।

 

বৈষ্ণবরা মহাপ্রভুকে বিষ্ণুর অংশ হিসেবেই দেখেন এবং তার সাথে নৃসিংহ অবতারের তুলনাও করা হয়। যুক্তি হিসেবে বলা হয় মহাপ্রভু সিংহ রাশিতে জন্মে ছিলেন। তার দেহের রঙ্গ ছিলো সিংহের ন্যায় সোনালী এবং উজ্জ্বল। তার কেশরাশি এবং হাঁটা চলার সাথেও সিংহের তুলনা করা হয়। সর্বোপরি তার ব্যাক্তিত্ব ছিলো রাজকীয়।

 

টোলে অধ্যাপনা ছেড়ে, সংসার ছেড়ে নিমাই যখন কৃষ্ণ প্রেমে মজেছেন তখন তার কৃষ্ণনাম এবং নগর সংকীর্তন সেই সময়ে অসংখ্য যুবককে আকর্ষণ করে এবং তারা মহাপ্রভুর শিষ্যত্ত গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে শ্রী ক্ষেত্রে মহাপ্রভু মহা প্রভু

হয়ে ওঠেন অসংখ্য বৈষ্ণবের গুরু এবং পরম আশ্রয়।

 

একবার মহপপ্রভু শ্রীনিবাস ঠাকুরেরর বাড়িতে এক অপূর্ব অলৌকিক লীলা প্রদর্শন করেন। তখন প্রবলভাবে সংকীর্তন হচ্ছিল। তিনি ভক্তদের জিজ্ঞাসা করলেন যে, তাঁরা কি খেতে চান, এবং তাঁরা জানালেন যে, তাঁরা আম খেতে চান, তখন তিনি আমের আটি চাইলেন। তখন আমের সময় ছিল না, আঁটিটি যখন তাঁর কাছে আনা হল, তখন তিনি সেটি শ্রীনিবাস ঠাকুরের অঙ্গনে পুঁতলেন এবং তৎক্ষণাৎ সেই আঁটিটি অঙ্কুরিত হয়ে ক্রমন্বয়ে বর্ধিত হতে লাগল। অচিরেই সেটি একটি আম গাছে পরিণত হল এবং সেই গাছে এত সুপক্ব আম ধরল যে, ভক্তরা তা খেয়ে শেষ করতে পারলেন না। গাছটি শ্রীনিবাস ঠাকুরের অঙ্গনেই রইল এবং ভক্তরা সেটি থেকে তাঁদের যত ইচ্ছে আম নিয়ে খেল। ভক্তরা মহাপ্রভুর এই অপ্রাকৃত লীলা দেখে মুগ্ধ হলো|এখনও সেই গাছ শ্রীনিবাস গৃহের উঠোনে বর্তমান|

 

শোনা যায় মহাপ্রভু যখন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে হরি নাম করতে করতে এগোতেন তখন বনেরা হিংস্র পশুরাও তার হিংসা ভুলে মোহিত হয়ে তার নাম সংকীর্তন শুনতো।

 

সারা বিশ্ব কে তিনি দিয়েগেছেন কৃষ্ণ নাম যে

নাম আজ ছড়িয়ে পড়ছে দাবানলের মতো সারা পৃথিবীতে|জাতী ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মহা প্রভু সবাইকে আপন করে নিয়ে ছিলেন|তার সাধনা ছিলো একটাই মানুষকে ভালো বাসা, আর কৃষ্ণের চরণ যুগলে নিজেকে সম্পূর্ণ রূপে সপেঁ দেয়া, তার সাধনার পদ্ধতিও ছিলো সরল মৃদঙ্গ ও হরে কৃষ্ণ মহা মন্ত্র|আজও গুরু পরম্পরার মধ্যে দিয়ে গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজ এবং ইস্কন মহাপ্রভুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে কৃষ্ণ নাম কে জগতের সর্বত্র পৌঁছে দিচ্ছে।

 

গুরু কথায় এখনো অনেক এমন মহান

আধ্যাত্মিক গুরুদের নিয়ে আলোচনা

বাকি আছে।ফিরে আসবো আগামী পর্বে।

অন্য এক গুরুকে নিয়ে।পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

গুরু কথা – যোগী রাজ শ্যামাচরণ লাহিড়ী

গুরু কথা – যোগী রাজ শ্যামাচরণ লাহিড়ী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

সংসার ধর্ম পালন করেও যে আধ্যাত্মিক মার্গে সফল ভাবে হাঁটা যায় এবং সাধনার সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছানো যায় তা ভারতের বেশ কয়েকজন সিদ্ধ যোগী হাতে কলমে প্রমান করে দিয়েছেন।

এমনই এক আধ্যাত্মিক গুরু ছিলেন যোগীরাজ শ্যামা চরণ লাহিড়ী।

 

বর্তমানে গোটা বিশ্ব জুড়ে ক্রিয়া যোগ যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে তার জন্য লাহিড়ী মশাইয়ের অবদান অসামান্য।তার দেখানো পথে পরবর্তীতে তার বহু শিষ্য অগ্রসর হয়েছেন এবং অসামান্য সাফল্য লাভ করেছেন।সব অর্থেই তিনি ছিলেন এক মহান যোগী এবং আদৰ্শ গুরু।

 

ব্রিটিশ ভারতবর্ষে 1895 সালে শ্যামাচরণ নদীয়া জেলায় এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শ্যামচরণ। তার জীবন ছিলো আর পাঁচটা সাধারণ গৃহস্ত বঙ্গ সন্তানের মতোই। চাকরি করতেন একটি বেসরকারি সংস্থায়। একবার কর্মসূত্রে তাকে যেতে হয় হিমালয়ের পাদদেশে এক এলাকায় এর এখানেই ঘটে এক অদ্ভূত ঘটনা।একদিন পাহাড়ে চলার সময় তিনি তাঁর গুরু কিংবদন্তী স্বরূপ মহাবতার বাবাজির দেখা পেলেন। মহাবতার বাবাজিকে নিয়ে ইতিমধ্যে গুরু কথার একটি পর্বে আমি আলোচনা করেছি। মহাবতার বাবা শ্যামাচরণ কে ক্রিয়া যোগের কৌশলগুলো শিখিয়ে দিলেন এবং দীক্ষা দিলেন।দীক্ষার পর চললো কঠোর অনুশীলন ধীরে ধীরে শ্যামচরণ হয়ে উঠলেন যোগীরাজ শ্যামাচরণ।

 

পরবর্তীতে গৃহস্ত জীবনে থেকে তিনি সাধনা করেছেন। অসংখ্য ভক্ত শিষ্য হয়েছে। ঘটিয়েছেন বহু অলৌকিক ঘটনা যা নিয়ে আজও আলোচনা হয়।

 

শোনা যায় একবার তাঁরই এক শিষ্যা অভয়া গুরুর সঙ্গে দেখা করতে হাওড়া থেকে বারাণসী আসছেন। মালপত্র নিয়ে ছুটতে ছুটতে হাওড়া স্টেশনে পৌঁছতেই দেখলেন, বারাণসী এক্সপ্রেস স্টেশন ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। কাঁদতে কাঁদতে স্টেশনেই বসে পড়লেন তিনি। আস্তে আস্তে প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে ট্রেন। চূড়ান্ত হতাশ অভয়া তখন অঝোরে কাঁদছেন আর গুরুদেব শ্যামাচরণ লাহিড়িকে স্মরণ করছেন।হটাৎ অভয়া দেখলেন, ট্রেন থেমে গিয়েছে।ড্রাইভার ও গার্ড ও অবাক তৎক্ষণাৎ মালপত্র নিয়ে দৌড় দিলেন তিনিও। অভয়া ট্রেনে ওঠামাত্র থেমে যাওয়া বারাণসী এক্সপ্রেস আবার গড়গড় করে চলতে শুরু করল।বারাণসী পৌঁছে অভয়া তাঁর গুরুদেবের কাছে গেলেন। পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করা মাত্র যোগীরাজ শ্যামাচরণ বললেন, ‘ট্রেন ধরতে গেলে একটু সময় হাতে নিয়ে বেরোতে হয় মা,অত বড়ো ট্রেনকে কি আটকে রাখা যায়?গুরুর অলৌকিক ক্ষমতায় দেখে অবাক হলেন শিষ্যা অভয়া|বলা হয় তিনি যোগ বলে সুক্ষ দেহে যেখানে খুশি যেতে পারতেন। একবার তিনি বিলেতে থাকা অফিসের বড়ো বাবুর স্ত্রীর সব খবর কলকাতায় বড়ো বাবুকে বর্ণনা করেছিলেন। বিশ্বাস হয়নি বড়ো বাবুর। কিন্তু যখন স্ত্রী বিদেশ থেকে চিঠি লিখলেন জানা গেলো শ্যামচরণ যা যা বলেছেন সব সত্যি। পরবর্তীতে যখন সেই সাহেবের স্ত্রী বিলেত থেকে স্বামীর কাছে আসেন সেখানে শ্যামাচরণ কে দেখে অবাক হয়ে বলেন ইনি তো সেই ব্যাক্তি যিনি অসুস্থতার সময়ে তার সেবা করতে তার খবর নিতে গেছিলেন তার কাছে।অথচ শ্যামাচরণ কখনোই স্বশরীরে বিলেত জাননি।

 

এখানে আরো একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করতে হয় একবার বেঙ্গল নাগপুর রেলওয়ের বড়সাহেব ভগবতীচরণ ঘোষের অধস্তন কর্মচারী ছুটি নিয়ে বারাণসী যাবেন তাঁর গুরু শ্যামাচরণ লাহিড়ীর কাছে। ভগবতীবাবু ছুটি দেননি সেদিন।সন্ধ্যায় ঘরে ফেরার পথে আচমকা শূন্য থেকে ফুটে উঠল একটি ব্যাক্তি । দীপ্ত কণ্ঠে ভর্ৎসনা করে বললেন ‘ভগবতী, তুমি কর্মচারীদের প্রতি খুব নির্দয়।’ পরক্ষণেই মিলিয়ে গেল সেই মূর্তি। অধস্তন কর্মীটি তত ক্ষণে আবেগ চেপে রাখতে পারেননি, গুরুদেব বলে কেঁদে ফেলেছেন।কারন যিনি এসেছিলেন তিনি স্বয়ং শ্যামাচরণ লাহিড়ী। ছুটি মঞ্জুর হয় । পরবর্তীতে পুরো রহস্যটা ভাল ভাবে বুঝতে সেই কর্মচারীর সঙ্গে সস্ত্রীক বারাণসীতে রওনা হলেন ভগবতীবাবু। গিয়ে দেখেন, চৌকিতে পদ্মাসনে বসা সেই লোক। আবার শ্যামচরণ মৃদু ভৎসনা করলেন ভগবতী বাবুকে সে দিনই সস্ত্রীক লাহিড়ীমশাইয়ের কাছে দীক্ষা নিলেন।

 

দেশ কাল সীমানার গণ্ডী শ্যামাচরণ অতিক্রম করে ছিলেন তার যোগ বলে এবং স্থূল দেহ ছেড়ে তিনি সুক্ষ দেহে বিচরণ করতে পারতেন অবলীলায় এবং তার সব শিষ্যদের কাছে তিনি পৌঁছে যেতেন তাদের প্রয়োজনে।

 

এমন অনেক আরো গুরুর কথা বলা বাকি আছে।

ফিরে আসবো আগামী পর্বে।

গুরু কথায়।পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

গুরু কথা – মহাবতার বাবাজি

গুরু কথা – মহাবতার বাবাজি

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

সাধনার জোরে অমরত্ত্ব লাভ করেছেন এমন নজির খুব কমই আছে জগতে। মহাবতার বাবাজি এমনই একজন সিদ্ধ যোগী।আজকের গুরু কথার এই পর্বে ভারতের এই অন্যতম রহস্যময় এবং মহানতম যোগী পুরুষ মহাবতার বাবাজির অলৌকিক জীবন এবং সাধনা নিয়ে লিখবো।

 

মহাবতার বাবাজিকে বলা হয় গুরুদের গুরু বা জগৎ গুরু|ক্রিয়া যোগের তিনি প্রান পুরুষ|ধ্যান, আধ্যাত্মিকতা এবং যোগাসন কে তিনি এক সূত্রে গেথেছেন কয়েক হাজার বছর আগে|পরবর্তীতে তার পথ অনুসরণ করে আধ্যাত্মিক পথে এগিয়েছেন তার সুযোগ্য শিষ্যরা যার মধ্যে শ্যামাচরণ লাহিড়ী, যুক্তেশ্বর গিরি, পরমহংস যোগানন্দ প্রমুখ।

 

মহাবতার বাবাজি কে নিয়ে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য গল্প, কিংবদন্তি এবং রহস্য|কেউ কেউ মনে করেন ক্রিয়া যোগের মাধ্যমে তিনি অমরত্ব লাভ করেছেন|কঠোর সাধনার মাধ্যমে তিনি সময় কে জয় করে জন্ম মৃত্যুর বন্ধন থেকে মুক্তি লাভ করেছেন এবং আশ্চর্য জনক ভাবে হাজার হাজার বছর ধরে স্বশরীরে বিরাজ করছেন এই পৃথিবীতে| একাধিক বার তার সাক্ষাৎ লাভ করে ধন্য হয়েছেন একাধিক সাধক|শোনা যায় হিমালয়ের এক দুর্গম স্থানে শ্যামাচরণ লাহিড়ী মহাশয় কে দীক্ষা দিয়েছিলেন স্বয়ং মহাবতার বাবাজি|পরমহংস যোগানন্দ তার ” অটো বায়োগ্রাফি অফ এ যোগী ” বইয়ে তার মহাবতার বাবাজির দর্শনের কথা বলেছেন|একাধিক বার সামনে এসেছে হিমালয়ের দুর্গম অঞ্চলে তার রহস্যময় উপস্থিতির কথা|

 

বাবাজির জন্ম বৃত্তান্ত নিয়ে সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না তবে মনে করা হয় তামিলনাড়ুর কোনো গ্রামে তার জন্ম হয়েছিলো, তার সঠিক বয়স নিয়েও মতপার্থক্য রয়েছে|কারুর মতে 5000 তো কারুর মতে 2000 বছরের কিছু বেশি তার বয়স|যোগ বলে তিনি তারুণ্য কে ধরে রেখেছেন তাই দেখলে মনে হয় এক যুবক|বাবাজির ইচ্ছে না থাকলে তাকে দর্শন করা যায়না|তিনি ঝড়ের গতিতে প্রকট হন আবার মহাশূন্যে মিলিয়ে যান|একটি প্রচলিত বিশ্বাস মতে হিমালয়ের কোনো এক অজ্ঞাত স্থানে রয়েছে জ্ঞানগঞ্জ নামে এক রহস্যময় মঠ, যেখানে সিদ্ধ পুরুষ ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারেনা, বাবাজির সেই মঠেই থাকেন, শুধু তাই নয় তিনি জ্ঞান গঞ্জের আচার্য|সুক্ষ দেহে তিনি সর্বত্র বিচরণ করেন আবার প্রয়োজন হলে নিজ দেহ ধারন করে প্রকট হন, তবে তার দর্শন করে অতি দুর্লভ ঘটনা, এবং সৌভাগ্যর হাতে গোনা কয়েকজন আজ অবধি তার দর্শন করতে পেরেছেন|

 

বর্তমানে হিমালয়ের দুর্গম এক স্থানে অবস্থিত একটি গুহাকে মহাবতার বাবাজির গুহা হিসেবে

চিহ্নিত করা হয়েছে। শোনা যায় এটি তার সাধনার স্থল এবং এখানে তিনি মাঝে মাঝে আসতেন। আজ বহু মানুষ এই দুর্গম পথ পেরিয়ে আসেন বাবাজির এই গুহা দর্শন করতে এবং তাদের কাছে এই স্থান অতি পবিত্র এক মন্দির স্বরূপ।

 

গুরু পূর্ণিমা উপলক্ষে আগামী পর্ব গুলিতে

এরকম রহস্যময় সাধক দের জীবন এবং সাধনা সম্পর্কে নানা তথ্য আপনাদের সামনে নিয়ে আসবো। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।