ভক্তের ভগবান
জগন্নাথদেব এবং কর্মা বাই
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
শাস্ত্রে আছে শ্রী ক্ষেত্র পুরী ভগবানের ভোজনের স্থান। অন্যান্য খাদ্যের মধ্যে জগন্নাথ দেবের প্রিয় খাদ্য খিচুড়ি এবং খিচুড়ি সাধারণ খিচুড়ি নয়।এই খিচুড়ির নাম কর্মাবাই খিচুড়ি’। এই খিচুড়ির সাথে জড়িয়ে আছে ভক্তের সাথে ভগবানের এক অপূর্ব লীলা। আজকের পর্বে সেই লীলা এবং তার শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।
পুরীতে এক সময়ে কর্মাবাই নামে একজন বৃদ্ধা বাস করতেন। তিনি জগন্নাথকে নিজের পুত্র রূপে দেখতেন এবং তাঁকে বালক রূপে সেবা করতেন।
মনে করা হয় ভগবানকে ভক্ত যে রূপে পুজো করবে ভগবান সেই রূপেই ধরা দেবে।জগন্নাথও কর্মা বাইকে পুত্র রূপে ধরা দিয়েছিলেন।
কর্মা বাইয়ের মনে হত সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই জগন্নাথ দেবের খিদে পেয়ে যায়। তাই তিনিও খুব সকালে ঘুম থেক উঠে স্নান না করেই খিচুড়ি রান্না করতে বসতেন।প্রতিদিন ভোরে বালক রূপ ধরে জগন্নাথদেব কর্মাবাইয়ের খিচুড়ি খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করতেন। এই খিচুড়ির স্বাদ ছিল জগন্নাথদেবের বড়ই প্রিয়।
খুব ভরে বৃদ্ধা কর্মা বাইয়ের পক্ষে প্রতিদিন স্নান করা সম্ভব হতোনা।একদিন মন্দিরের এক পূজারী কর্মাবাইকে স্নান না করেই খিচুড়ি রান্না করে জগন্নাথদেবকে ভোগ নিবেদন করতে দেখেন। তিনি কর্মাবাইকে নিষেধ করে বলেন যে প্রভুর ভোগ রান্না এবং নিবেদনের আগে দেহে এবং মনে বিশুদ্ধ হওয়া জরুরি।স্নান না করে ভোগ রান্না শাস্ত্র বিরুদ্ধ।পরদিন সাধুর কথামতো কর্মাবাই স্নান সেরে নিয়ম মেনে যখন জগন্নাথ দেবকে খিচুড়ি ভোগ দেন।তাতে দেরি হয়ে যায় অনেকটা। সকাল থেকে ক্ষুদার্থ জগন্নাথ দেব বেলার দিকে
কর্মা বাইয়ের বানানো গরম খিচুড়ি খেয়ে দুপুরে আর ভোগ গ্রহণ করলেন না।
পরে সেবাইতএ অনুসন্ধান করে দেখেন যে
প্রভুর মুখে খিচুড়ি লেগে আছে।পরবর্তীতে জগন্নাথদেব স্বয়ং তার বিশেষ এবং ঘনিষ্ট কয়েকজন সেবককে স্বপ্নে কর্মাবাইয়ের বৃত্তান্ত শোনান এবং তাদের আদেশ করেন তিনি যেন আগের মতোই খুব ভোরে স্নানের আগেই জগন্নাথের জন্য খিচুড়ি রান্না করে ভোগ নিবেদন করেন।সেবকরা কর্মাবাই এর কাছে ছুটে গিয়ে ক্ষমা চান এবং প্রভুর আদেশ শোনান।
তারপর থেকে শুরু হয় খুব সকালে বাল্য ভোগে জগন্নাথ দেবকে খিচুড়ি দেওয়ার নিয়ম।যতদিন কর্মা বাই জীবিত ছিলেন তিনি নিজেই খিচুড়ি বানাতেন।শোনা যায় কর্মাবাইয়ের মৃত্যুতে জগন্নাথদেব কেঁদে ছিলেন।
কর্মা বাইয়ের অনুপস্থিতিতে পুরীর রাজার নির্দেশে পুরী মন্দিরের বাল্যভোগে ” কর্মাবাই খিচুড়ি ” রান্না চালু হয়।আজও জগতের নাথের দিন শুরু হয় তার ভক্তের নামাঙ্কিত ভোগ দিয়ে।
ভক্তের ভক্তি যদি নিখুঁত হয় ভগবান তাকে বুকে টেনে নেন এবং ভক্তের দুঃখে ভগবানের চোখেও জল আসে। এই ঘটনা তা আরো একবার প্রমান করে।
ভক্ত এবং ভগবানের এমন নিবিড় সম্পর্ক এবং লীলা নিয়ে আবার ফিরে আসবো যথা সময়ে।
পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।