Home Blog Page 115

দশ মহা বিদ্যা : দেবী মাতঙ্গী

দশ মহাবিদ্যা পর্ব গুলির শেষ পর্ব অর্থাৎ মাতঙ্গী সম্পর্কে আলোচনা নিয়ে ফিরতে একটু বেশি বিলম্ব হয়ে গেলো কারন গত কুড়ি তারিখের আমফান ঝড় সব কিছু তছনছ করে দিয়ে ছিলো,বিদ্যুৎ সহ যোগাযোগ ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পরে ছিলো আর মানসিক ভাবে আমরা অনেকেই বিপর্যস্ত ছিলাম, তবে ধীরে ধীরে আমরা খারাপ সময় টা কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছি বা ফেরার চেষ্টা করছি |তাই ফিরে এলাম নিজের প্রতিশ্রুতি রাখতে, দশ মহাবিদ্যার শেষ পর্ব নিয়ে|এই অবাঞ্চিত বিলম্বর জন্য আমি ক্ষমা প্রার্থী|

ইংরেজি তে বলে all good things come to an end অর্থাৎ সব ভালো কিছুর একটা শেষ আছে, সেই নিয়ম মেনে আজ দশ মহাবিদ্যা সিরিজের শেষ রূপ অর্থাৎ মাতঙ্গী কে নিয়ে আলোচনা করবো|

দেবী মাতঙ্গী সরস্বতীরই তান্ত্রিক রূপ বলে মনে করা হয় তাই স্বাভাবিক ভাবেই ইনি শিক্ষা, কলা ও জ্ঞানের দেবী হিসেবে পূজিতা|ইনি বিনা বাদনরতা মূর্তি তে বিরাজমান |প্রচলিত বিশ্বাস মতে এই দেবীর আরাধনার মাধ্যমে শিল্প সাহিত্য ও সংগীতের জগতের মানুষ দের ব্যাপক উন্নতি সাধন হয়,ইনি বাগদেবী ও একাধারে সংগীতের দেবী|

দেবী কে দুটি ভিন্ন রূপে পাওয়া যায় প্রথম টিতে দেবীর রূপ রক্তবসনা ও গলায় শোভিত গুঞ্জার মালা |দেবী মাতঙ্গী দ্বিভুজা, দেবীর একহাতে নরমুন্ড ও অন্য হাতে উন্মুক্ত তরোয়াল|দেবীর হরিৎ গাত্র বর্ণ পরম জ্ঞানের প্রতীক |আরেক টি রূপ অনুসারে তিনি চতুর্ভুজা ও তার চারটি হাত চারটি বেদের প্রতীক|হাত গুলিতে রয়েছে অঙ্কুশ, ওসি, পাশ ও ঢাল |দেবী রত্নসিংহাসনএ বিরাজমান|

পুরান মতে দেবীর উৎপত্তি হয় যখন দেবতারা ভয়ঙ্কর অসুর শুম্ভ ও নিশুম্ভর অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে মাতঙ্গ মুনির আশ্রমে স্মরণ নেয়|তাদের আরাধনায় মাতঙ্গ ঋষির স্ত্রীর শরীর থেকে সৃষ্টি হয় দেবী মাতঙ্গির|

বৈদিক জ্যোতিষ মতে দেবী মাতঙ্গী সূর্য গ্রহের ইষ্ট দেবী |তন্ত্রেও তার গুরুত্ব পূর্ন অপরিসীম |তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা বা জ্যোতিষ সংক্রান্ত ব্যাখ্যা ও মানব জীবনে তার প্রভাব নিয়ে আলোচনা এখানে নয় |তার জন্য আমার নাম্বার পোস্টের সাথে দেয়াই আছে, প্রয়োজন হলে যোগাযোগ করতেই পারেন |

এবার ফিরে আসবো এক সম্পূর্ণ নতুন ধারাবাহিক লেখনী নিয়ে এবং সেই ধারাবাহিক হবে দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ নিয়ে |নিশ্চই ভালো লাগবে আপনাদের|পাসে থাকবেন বরাবরের মতোই, এ আমার বিশ্বাস |অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাদের |

জ্যোতির্লিঙ্গ : বৈদ্য নাথ

কথা দিয়েছিলাম এক সম্পূর্ণ নতুন বিষয় নিয়ে এক ধারাবাহিক লেখনী শুরু করবো, শুরু করেও দিয়েছি ইতিমধ্যে, হ্যাঁ দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ নিয়ে সূচনা পর্ব এর আগে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করেছি এবং যে উৎসাহ ও ভালোবাসা আপনারা দেখিয়েছেন তাতে লেখার উৎসাহ কয়েক গুন বেড়ে গেছে, তাই আর বিলম্ব না করে শুরু করা যাক |আজ বলবো জ্যোতির্লিঙ্গ বৈদ্যনাথ এর কথা, স্ববিস্তারে|

দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে বৈদ্যনাথ মন্দির বা বৈদ্যনাথ ধাম অন্যতম|হিন্দু ধর্মের অতি পবিত্র এই স্থান অবস্থিত ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের দেওঘর জেলায়|শুধু বৈদ্যনাথ নয় এই স্থানে রয়েছে আরো কয়েকটি ছোটো বড়ো মন্দির যার ফলে প্রায় সারা বছর তীর্থ যাত্রী দের ভিড়ে জমজমাট থাকে এই স্থান|এই মন্দিরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে দ্বার কেশী নদী ও কাছেই রয়েছে ত্রিকুট পাহাড়|

এখানে শিবের নাম বৈদ্যনাথ কেনো হলো তার পেছনেও আছে এক পৌরাণিক কাহিনী|কথিত আছে এই স্থানে রাবন একবার শিব কে তুষ্ট করতে কঠোর তপস্যা শুরু করেন এবং নিজের দশ টি মাথার এক একটি কে যজ্ঞে আহুতি দিতে থাকেন|একটা সময়ের পর যখন রাবন অসুস্থ হয়ে পড়েন তখন শিব স্বয়ং এসে তার সেবা শুশ্রুষা করে তাকে সুস্থ করে তোলেন, যেহেতু শিব চিকিৎসক বা বৈদ্যর ভূমিকায় অবতীর্ন হয়েছিলেন তাই এই স্থানে তিনি বৈদ্যনাথ নামে পূজিত হন|

কিভাবে এই স্থানে এই বিশেষ জ্যোতির্লিঙ্গ স্থাপিত হলো তা নিয়ে শিব পুরানে একটি রোমাঞ্চকর ঘটনার উল্লেখ আছে|রাবন চেয়ে ছিলেন তার লংকা কে সর্ব শক্তি তে শক্তিমান করে গড়ে তুলতে এবং তপস্যায় শিব কে তুষ্ট করে তিনি একটি শিব লিঙ্গ লাভ করেন কিন্তু শিব বলেন এই বিশেষ শিব লিঙ্গ টি লংকা ছাড়া অন্য কোনো স্থানে রাখা বা স্থাপিত করা যাবে না|রাবনের এই কর্মকান্ডের সকল দেবতারা ভীত হয়ে পড়েন কারন কার্য সিদ্ধি হলে রাবন হবেন অপরাজেয় তাই বরুন দেব এর চক্রান্তে পথের মধ্যে রাবনের মূত্র ত্যাগ করার প্রয়োজন হয়ে সেই সময় বিষ্ণু ব্রাহ্মণ এর ছদ্মবেশে সেখানে আসেন ও কিছু ক্ষণের জন্য শিব লিঙ্গ নিজের হাতে রাখতে সম্মতি দেন |কিন্তু রাবন ফিরে এসে দেখেন শিব লিঙ্গ টি ভূমিতে স্থাপিত করা হয়ে গেছে |শত চেষ্টা তেও তিনি শিব লিঙ্গ কে এক চুল ও সরাতে পারলেন না |ব্যর্থ হয়ে হাল ছেড়ে দিয়ে শূন্য হাতে লংকায় ফিরে গেলেন |সেই শিব লিঙ্গ স্থাপন করার স্থানটি হচ্ছে এই বিশেষ স্থান যেখানে রয়েছে জ্যোতির্লিঙ্গ বৈদ্যনাথ মন্দির |কথিত আছে জীবিত কালে রাবন স্বয়ং প্রতিদিন এই শিব লিঙ্গের পূজা করতে আসতেন |

যদিও কিছু জ্যোতির্লিঙ্গর প্রকৃত স্থান নিয়ে কিছু বিতর্ক ও মতপার্থক্য আছে এবং বৈদ্যনাথ ধাম ও তার ব্যতিক্রম নয়|তবে ভবিষ্য পুরান, শিব পুরান ও আদি শংকরাচার্য্যর দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ স্তোত্রম্ এ জ্যোতির্লিঙ্গ বৈদ্যনাথ ধামের উল্লেখ পাওয়া যায়|নানা দিক দিয়ে বৈদ্য নাথ ধাম প্রতিটি শিব ভক্ত তথা সমগ্র সনাতন ধর্ম এ বিশ্বাসী মানুষের কাছে এক অতি পবিত্র তীর্থ ক্ষেত্র|

ফিরে আসছি পরের পর্বে এক নতুন জ্যোতির্লিঙ্গের জানা অজানা নানা কথা নিয়ে, পড়তে থাকুন পাশে থাকুন আর জ্যোতিষ সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যার সমাধান ও পরামর্শর জন্য অবশ্যই যোগাযোগ করবেন উল্লেখিত নাম্বার এ|ধন্যবাদ |

শক্তি পীঠ : কালী ঘাট

কলকাতার ইতিহাস অতি প্রাচীন ও বর্ণময়, দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ থেকে নকশাল আন্দোলন,ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রাম থেকে ক্লাইভ -সিরাজ যুদ্ধ বহু ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে গেছে এই শহর, তার সাথে আরো একটি দিক আছে শহর কলকাতার তা হলো তার আধ্যাত্মিকতা ও ধর্মীয় সাধনা যার অনেক টাই রয়ে গেছে প্রচারের আড়ালে|আপনারা হয়তো ভাবছেন একান্ন পীঠ পর্বে হটাৎ কলকাতার ইতিহাস নিয়ে লিখতে বসলাম কেনো|কারন টা হচ্ছে আজ যে জনপ্রিয় শক্তি পীঠ টির কথা লিখবো তা এই ধর্ম ও আধ্যাত্মিক চর্চার একপ্রকার প্রান কেন্দ্র, হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন আজ বলবো শক্তি পীঠ কালীঘাটের কথা|তবে একটি পর্বে কালী ঘাটের কথা বলে শেষ করা যাবেনা, তাই ঠিক করেছি শক্তি পীঠ পর্ব গুলির এই বিশেষ পর্ব কে দুটি পর্বে আপনাদের সামনে আনবো|

শক্তি পীঠ গুলির অন্যতম কালীঘাট নানা দিক দিয়ে তাৎপর্যপূর্ন,হিন্দু দের কাছে এটি একটি প্রধান ও জনপ্রিয় তীর্থ ক্ষেত্র||র|পীঠ মালা তন্ত্র মতে সতীর ডান পায়ের চারটি আঙ্গুল পতিত হয়েছিলো এই পবিত্র স্থানে|যদিও অন্য একটি মত অনুসারে সতীর একটি মাত্র আঙ্গুল পতিত হয়েছিলো কালীঘাট এর পবিত্র স্থানে|দেবীর ভৈরব রূপে এখানে বিরাজমান নকুলেশ্বর|দেবী এখানে দক্ষিনা কালী নামে জনপ্রিয়|

এখানে দক্ষিনা কালী সম্পর্কে কয়েকটি কথা বলে রাখা ভালো| দক্ষিণাকালী করালবদনা, ঘোরা, মুক্তকেশী, চতুর্ভূজা এবং মুণ্ডমালাবিভূষিতা। তার বামকরযুগলে সদ্যছিন্ন নরমুণ্ড ও খড়্গ দক্ষিণকরযুগলে বর ও অভয় মুদ্রা।দক্ষিণা কালীর ডান পা শিবের বুকে। তিনি কালীর অন্যান্য রূপ থেকে কিছুটা ভিন্ন এবং তাকে সাধারণত ঘর এবং মন্দিরে পূজা করা হয়। তার গাত্রবর্ণ গভীর নীল,তিনি দিগম্বরী। তার গলায় মুণ্ডমালার হার শোভা পায় |এই রূপ ও এক রহস্য নানা ভাবে যার ব্যাখ্যা করা হয়|

কালী ঘাট মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত দেবী মূর্তি কষ্ঠি পাথরে নির্মিত|দেবীর জিভ, দাঁত মুকুট, এমনকি মুন্ড মালাটিও সবই স্বর্ণ দ্বারা নির্মিত |মন্দিরের মধ্যে একটি বিশেষ কক্ষে একটি সুরক্ষিত সিন্দুকে দেবীর প্রস্তরীভূত অঙ্গ টিও স্বজত্নে রক্ষিত আছে যা কখনো জন সমক্ষে আনা হয় না|

আজ কালীঘাট নিয়ে প্রথম পর্বে এটুকুই, ফিরে আসছি পর্বে এই বিশেষ শক্তি পীঠের নানা অজানা কথা ও ইতিহাস নিয়ে, সঙ্গে থাকুন পড়তে থাকুন আর নতুন করে বলবো না শুধু মনে করিয়ে দেবো জ্যোতিষ সংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ে পরামর্শ ও সমস্যা সমাধানের জন্য উল্লেখিত নাম্বারে যোগাযোগ করতে পারেন আর অবশ্যই চোখ রাখুন আমার ইউটিউব চ্যানেল ও সি টি ভি এন এর পর্দায় আমার অনুষ্ঠানে |আমি সর্বদা আছি আপনাদের পাসে |ধন্যবাদ |

শক্তি পীঠ : কালী ঘাট (দ্বিতীয় ও অন্তিম পর্ব )

শক্তি পীঠ কালীঘাট নিয়ে এই বিশেষ পর্বের প্রথম পর্বে আমি আলোচনা করেছি দেবীর রূপ ও তার ব্যাখ্যা নিয়ে আর জেনেছি সনাতন ধর্মে এই বিশেষ পীঠটির তাৎপর্য |আপনাদের প্রথম পর্বে টি যথেষ্ট ভালো লেগেছে জেনে আমি আনন্দিত তাই দ্বিগুন উৎসাহ নিয়ে শুরু করছি কালীঘাট নিয়ে দ্বিতীয় ও অন্তিম পর্ব|আজকের পর্বে জানবো কালীঘাটের ইতিহাস তারসাথে জড়িয়ে থাকা নানা অজানা গল্প সাথে মন্দির নির্মাণের গোড়ার কথা|

কলকাতার ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করা ব্যক্তি দের একটি বড়ো অংশ মনে করেন এই কলকাতা নাম টির উৎপত্তি হয়েছে কালী ক্ষেত্র থেকে আর এই কালী কালী ঘাটের কালী|অর্থাৎ কলকতার নামের পেছনেও আছে এই বিশেষ পীঠ টির অবদান|

কথিত আছে বহু প্রাচীন কালে যখন এই অঞ্চল ছিলো ঘন অরণ্যে ঢাকা তখন এই গঙ্গা তীরবর্তী দুর্গম অঞ্চলে কষ্টি পাথরের দেবী মূর্তি গড়ে তাতে প্রান প্রতিষ্ঠা করেন ব্রহ্মনন্দ গিরি ও আত্মারাম ব্রহ্মচারি নামে দুই সন্ন্যাসী|বর্তমানে আমরা যে কালীঘাট মন্দির টি দেখতে পাই তা নির্মাণ করেন বিখ্যাত সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবারের শিবদাস চৌধুরী 1809 সালে ও পরবর্তীতে মন্দির টি সংস্কার করেন এই পরিবারের অন্য আরেক জমিদার সন্তোষ চৌধুরী|

বর্তমান মন্দির টি তৈরী হয়েছে এক বিঘের কিছু বেশি পরিমান জমিতে এবং আনুমানিক খরচ হয়েছিলো 300000 টাকা |মন্দির টির উচ্চতা নব্বই ফুট|পাশ দিয়ে বয়ে গেছে আদি গঙ্গা ও অদূরে কেওড়া তলা মহা শ্মশান|চার পাশে ছড়িয়ে রয়েছে আরো অনেক গুলি রাধা কৃষ্ণ ও শিবের মন্দির|সব মিলিয়ে সর্বদা এক ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক পরিবেশ বিরাজ করছে এই বিশেষ শক্তি পীঠ কে কেন্দ্র করে যা ঠিক ভাষায় প্রকাশ করা যায়না অনুভব করতে হয়, শ্রদ্ধা ও ভক্তি দিয়ে|

এমনিতে প্রায় প্রতিদিনি ভক্ত দের ভিড় উপচে পড়ে কালীঘাটে তবে কিছু বিশেষ বিশেষ তিথিতে বিশেষ পূজাঅর্চনা অনুষ্ঠিত হয় |প্রতি বছর পয়লা বৈশাখ, দুর্গাপূজা ও দীপান্বিতা কালীপূজার দিন মন্দিরে প্রচুর ভক্ত ও পু্ণ্যার্থীর সমাগম ঘটে|

আজ এইখানেই শেষ করলাম এই বিশেষ শক্তি পীঠ নিয়ে লেখা আগামী পর্বে নিয়ে আসবো নতুন কোনো শক্তি পীঠের কথা|অপেক্ষা করুন আর দেখতে থাকুন আমার ইউটিউব চ্যানেল ও সি টি ভি এন এর পর্দায় আমার জোতিষ সংক্রান্ত অনুষ্ঠান |আর প্রয়োজন এ যোগাযোগ করতে ভুলবেন না, নাম্বার দেয়াই আছে |ধন্যবাদ| 

দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ : সোমনাথ

করোনার আতঙ্ক ও আমফানের ভয়াবহ স্মৃতি কে দূরে সরিয়ে রেখে আবার কর্ম ব্যস্ত জীবনের দিকে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছি বা বলা ভালো এগিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছি কারন এটাই স্বাভাবিক,থেমে থাকলে তো চলবেনা|তাই আর কোনো উপায় নেই, আবার চ্যানেলে বসা নিয়ম করে ইউটিউব এ বা ফেসবুকে লাইভে আসা, সবই প্রায় শুরু হয়ে গেলো আর কদিনের মধ্যে চেম্বার ও শুরু হয়ে যাবে আশা করি|আর তার সাথে তো চলতেই থাকছে আমার আধ্যাত্মিক লেখা লেখি|আজ সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ফিরে এলাম দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের এক সম্পূর্ণ নতুন এক পর্ব নিয়ে|আজ লিখবো সোমনাথ মন্দির নিয়ে|

গুজরাটের বেরাবলে অবস্থিত সোমনাথ মন্দির দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম|এর ইতিহাস অতি প্রাচীন ও ঘটনাবহুল|ভারতের জনপ্রিয় তীর্থ ক্ষেত্র গুলির মধ্যে একদম প্রথম সারি তে আছে এই বিশেষ মন্দিরটি|সোমনাথ কে ঘিরে আছে নানা গল্প, ঐতিহাসিক ও পৌরাণিক ঘটনা আর সব কিছুর উপরে আছে এই তীর্থ ক্ষেত্র কে কেন্দ্র করে অসংখ্য মানুষের বিশ্বাস ও শ্ৰদ্ধা|সোমনাথ শব্দের প্রকৃত অর্থ হলো চন্দ্র দেবতার রক্ষা কর্তা, এই মন্দির চিরন্তন পীঠ নামেও পরিচিত কারন অতীতে একাধিক বার আক্রান্ত হয়েছে এই মন্দির, ধ্বংস প্রাপ্ত হয়েছে কিন্তু প্রতিবারই পুনরায় মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে সোমনাথ মন্দির|

পুরান মতে দক্ষ প্রজাপতি একবার চন্দ্র কে অভিশাপ দিয়েছিলেন এবং সেই অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে চন্দ্রদেব শিবের আরাধনা শুরু করেন|তার আরাধনায় তুষ্ট হয়ে শিব প্রকট হন ও চন্দ্র কে অভিশাপ থেকে নিষ্কৃতি দেন|চন্দ্র পরবর্তীতে শিব কে সন্তুষ্ট করার জন্য একটি স্বর্ণ নির্মিত শিব মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন যা সোমনাথ মন্দির নামে খ্যাত|সোমনাথ মন্দিরের শিব সোমেশ্বর মহাদেব নামে পরিচিত |বহুকাল পড়ে শিব ভক্ত রাবন রুপো এবং চন্দন কাঠ দিয়ে এই মন্দির পুনর্নির্মাণ করেন বলে বিশ্বাস করা হয়|তারও অনেক পড়ে ভীমদেব নামে এক রাজপূত রাজা সোমনাথ মন্দিরের সংস্কার করে পুনর্নির্মাণ করেন|তবে বর্তমান সময়ে আমরা যে মন্দির টি দেখতে পাই তার নির্মাণের রূপকার ভারতের লৌহ পুরুষ সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল|

কথিত আছে মন্দিরটি খ্রিস্টের জন্মের আগেও বিদ্যমান ছিলো|আরবের শাসক জুনায়েদ, আলাউদ্দিন খিলজি, মামুদ গজনী ও সুলতান মুজাফ্ফর শাহ পর্যায় ক্রমে সোমনাথ মন্দির আক্রমণ করেন লুঠপাঠ চালান ও ধ্বংস করেন|সোমনাথ মন্দির তবু অক্ষয় ও অমর |সনাতন ধর্মের প্রতীক হয়ে তা আজও স্বমহিমায় বিরাজমান|এথেকে এও প্রমান হয় যে ধ্বংসের থেকে সৃষ্টি বড়ো|বর্তমানে সোমনাথ মন্দির শ্রীসোমনাথ ট্রাস্ট দ্বারা পরিচালিত হয়|

গুজরাট তথা ভারতের অন্যতম দর্শনীয় স্থান এই জ্যোতির্লিঙ্গ যা দেখতে দেশ বিদেশ থেকে প্রতি বছর অসংখ্য ভক্ত ও দর্শনার্থী ভীড় জমান সোমনাথ প্রাঙ্গনে|আপনারাও চাইলে সময় সুযোগ বুঝে ঘুরে আসতে পারেন কোনো এক সময়ে|এক অপূর্ব আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতার সাক্ষী থাকবেন|

জ্যোতির্লিঙ্গ সোমনাথ নিয়ে আজ এটুকুই তবে আমি আপনাদের পাসে আছি সর্বদা, ইউটিউব ফেসবুক ও টেলিভিশিন এর মাধ্যমে,যেকোনো জ্যোতিষ সংক্রান্ত বিষয়ে নির্দ্বিধায় যোগাযোগ করতে পারেন উল্লেখিত নাম্বারে|ফিরবো পরের পর্বে অন্য কোনো জ্যোতির্লিঙ্গের কথা নিয়ে, এক নতুন পর্বে |ধন্যবাদ| 

শক্তি পীঠ : সুগন্ধা

শক্তি পীঠ নিয়ে আলোচনায় আমরা দেশ ও দেশের বাইরে ও অবস্থিত কয়েকটি পীঠ নিয়ে ইতিমধ্যে আলোচনা করেছি যা আপনাদের বেশ ভালো লেগেছে জেনে আমি উৎসাহিত ও গর্বিত|আজ যে বিশেষ পীঠটির কথা লিখবো তা বর্তমানে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশে অবস্থিত,আজকের পর্বে জানবো শক্তি পীঠ সুগন্ধার কথা|সঙ্গে থাকুন, পড়তে থাকুন, আশা করি ভালো লাগবে|

বাংলাদেশ এর বরিশালের শিকারপুর গ্রামে অবস্থিত এই বিশেষ শক্তি পীঠ সুগন্ধা|বাংলাদেশ তথা গোটা বিশ্বে বসবাস কারী হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে এটি একটি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ তীর্থ ক্ষেত্র|পুরান মতে দেবীর নাসিকা পতিত হয়েছিলো এই স্থানে|দেবীর ভৈরব এখানে ত্র্যম্বক|মন্দিরের স্থান টি অতি সুন্দর, পাশ দিয়ে বয়ে গেছে সুগন্ধা নদী|দেবী এখানে সুনন্দা নামেও প্রসিদ্ধা|অন্নদা মঙ্গল কাব্যে সুগন্ধা নামক শক্তি পীঠের উল্লেখ আছে, সেখানে বলা হচ্ছে –

সুগন্ধায় নাসিকা পড়িল চক্রহতা|
ত্র্যম্বক ভৈরব তাহে সুনন্দা দেবতা|

এছাড়া শিব চরিত ও পীঠ নির্নয় তন্ত্রেও শক্তি পীঠ সুগন্ধার উল্লেখ আছে|

মনে করা হয় শিকার পুরের জমিদার শ্রীরাম রায় স্বপ্নাদেশ পেয়ে গভীর জংগলের মধ্যে খুঁজে পান ত্রম্বকেশ্বর মহাদেবের মূর্তি এবং ওই স্থানেই নির্মাণ করান শিব মন্দির |অন্য একটি প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে শিকারপুর গ্রামে পঞ্চানন চক্রবর্তী নামে একজন নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ বাস করতেন|দেবী কালী এই ব্রাহ্মণ কে স্বপ্নাদেশ দিয়ে সুগন্ধা নামক এই বিশেষ শক্তি পীঠের সন্ধান দেন|পড়ে এই ঘটনা লোক মুখে প্রচারিত হয় ও দেবীর মন্দির স্থাপিত হয়|

অত্যন্ত দুক্ষের বিষয় প্রাচীন সুগন্ধার মন্দির টি বহুদিন আগেই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে, এমনকি প্রাচীন দেবী মূর্তি ও আর নেই|বর্তমান মন্দির ও মূর্তি দুটোই আধুনিক সময়ে নতুন করে নির্মিত|দেবীর প্রস্তুরীভূত দেহাংশ ও এখানে সংরক্ষিত নেই যা অন্য অনেক শক্তি পীঠে আছে|বর্তমানে এখানে দেবী উগ্রতারার মূর্তি বিরাজিতা। তাকেই দেবী সুগন্ধা রূপে পূজা করা হয় । মাথার ওপর কার্ত্তিক, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব , গণেশ বিরাজমান |দেবী খড়্গ, খেটক, নীলপদ্ম, নর মুণ্ডের কঙ্কাল ধারন করে আছেন |এককালে স্থান টি ছিলো অতি দুর্গম, দুর দুর থেকে তন্ত্র সাধকরা আসতেন এখানে তন্ত্র সাধনা করতে|

সুগন্ধা মন্দিরে নিষ্ঠা সহকারে ও মহা সমারোহে পালিত হয় শিব চতুর্দশী|সেই উপলক্ষে ব্যাপক জন সমাগম হয় কটা দিন|

আজ এখানেই শেষ করছি শক্তি পীঠ সুগন্ধা নিয়ে লেখা,পরের পর্বে অন্য কোনো শক্তি পীঠ নিয়ে ফিরে আসবো|আপনাদের সুচিন্তিত মতামত আমাকে উৎসাহ যোগায় আরো বেশি কাজ করতে সে জ্যোতিষ হোক বা আধ্যাত্মিক লেখালেখি তাই যোগাযোগ করবেন প্রয়োজন হলেই, নাম্বার দেয়াই আছে|আমি আছি আপনাদের জন্যে, অসংখ্য ধন্যবাদ|

দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ : রামেশ্বরম

পড়াশোনা, আধ্যাত্মিক চর্চা ও আমার পেশা জ্যোতিষ এর বাইরে যে জিনিষ টা আমাকে সব থেকে বেশি টানে তা হলো ভ্রমন,তবে আমার ভ্রমণ শুধুই আনন্দ লাভ বা পরিবারের সাথে সময় কাটানো তে সীমাবদ্ধ থাকে না তার সাথে যোগ হয় আধ্যাত্মিক চেতনা ও অনুসন্ধিৎসা যার জন্য ব্যাস্ত পেশাগত জীবন থেকে ছুটি নিয়ে একাধিক বার ছুটে গেছে নানান ধর্মীয় স্থানে,তীৰ্থ ক্ষেত্রে|মুগ্ধ হয়েছি প্রতিবার, ফিরেছি নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে|গত বছর অক্টবর মাসের সতেরো তারিখে অর্থাৎ লক্ষী পূজার ঠিক পরেই পাড়ি জমিয়ে ছিলাম রামেশ্বরম|আজ দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গগুলির মধ্যে যে মন্দিরটি নিয়ে আলোচনা করবো তা হলো ভারতের শেষ প্রান্তে অবস্থিত এই বিশেষ জ্যোতির্লিঙ্গ রামেশ্বরম|

ভারত ধর্মীয় বিশ্বাস ও আধ্যাত্মিকতার দেশ|বিশ্বাস ও শ্ৰদ্ধা নিয়ে দেখলে বা উপলব্ধি করলে কোনো এক অলৌকিক শক্তির অদৃশ্য উপস্থিত সর্বদাই লক্ষ করা যায় ভারতের আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় কেন্দ্র গুলির চারপাশে, এ আমি নিজে ব্যক্তিগত ভাবে বহুবার অনুভব করেছি|উত্তর এ কেদারনাথ ও দক্ষিনে রামেশ্বরম,এক সরল রেখায় অবস্থান করছে,তার সাথে আরো অনেক গুলি শিব মন্দির মিলিত হয়েছে ওই একি সরলরেখায় এও এক বিস্ময়|

রামেশ্বরম ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের রামনাথপুর জেলার পাম্মান দ্বীপে অবস্থিত|এই দ্বীপ পাম্মান সেতু দ্বারা ভারতের মূল ভূখণ্ডের সাথে যুক্ত এই সেতু কে অনেকে রামেশ্বর ব্রিজ ও বলে থাকেন|অপূর্ব সুম্দর এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বিশেষত সমুদ্র ও তার দুদিকের দুটি ভিন্ন রং দেখলে অবাক হতে হয়|সমুদ্র সৈকতটিওঅতি সুম্দর|এখান থেকে শ্রীলংকার মান্নার দ্বীপের দূরত্ব মাত্র চল্লিশ কিলোমিটার যা দূরবীনে চোখ রাখলে বেশ স্পষ্ট দেখা যায়|রামেশ্বর চেন্নাই ও মাদুরাইয়ের রেলপথের
টার্মিনাস|

রামানায়নে রাম ও রাবনের যুদ্ধতে রাবন বধ হন রামের হাতে, কিন্তু রাবন ছিলো নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ ও বড়ো শিব ভক্ত তাই রাবন কে হত্যা করে ব্রহ্ম হত্যার জন্য দায়ী হন শ্রী রাম এবং সেই মহা পাপ থেকে মুক্তি পেতে তিনি ভারতের মাটিতে পা রেখে একটি শিব লিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করে তার আরাধনা করেন|শ্রী রাম দ্বারা স্থাপিত সেই বিশেষ শিব লিঙ্গটি হলো এই রামেশ্বর শিব লিঙ্গ যা দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম|এই শিব লিঙ্গ শ্রীরামনাথস্বামী হিসাবে পরিচিত|

রামায়ন মহাভারতের ন্যায় সনাতন ধর্মশাস্ত্র গুলি যে নিছক মহাকাব্য নয়, তার প্রতিটি অক্ষর সত্যি তা উপলব্ধি করতে হলে একবার না একবার এখানে আসতেই হবে|আজও ভগ্নপ্রায় অবস্থায় টিকে থাকা রাম সেতু প্রমান করে কোনো একদিন যোগ সূত্র স্থাপন হয়েছিলো এই দুই দেশের মধ্যে|NASA র স্যাটেলাইটে তোলা ছবিতে এটা প্রমানিত
হয়েছে। ১৯৮০ সালের আগে কিছুদূর এতে হাটাও যেতকিন্তু ১৯৮০ সালের এক ভয়াবহ সামুদ্রিক ঝড়ে এটা পুরোপুরি ধ্বংস হয়। আরো অসংখ্য ভৌগোলিক ব্যাখ্যা রয়েছে যা প্রমান করে রামায়ন সত্য, সত্য রামের মহিমা|আর সব থেকে বড়ো সাক্ষী হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে স্বয়ং রামেশ্বর মহাদেব|

রামেশ্বর ভারতের জনপ্রিয় চারধাম তীর্থের মধ্যে অন্যতম|ভারতের এই প্রান্তিক ভূখণ্ডে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আরো অসংখ্য মন্দির ও ধর্মীয় স্থান অনতি দূরেই অবস্থিত বিখ্যাত কন্যাকুমারী মন্দির|প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও আধ্যাত্মিক তাৎপর্য দুয়ে মিলে স্থান টি তীর্থ যাত্রীদের স্বর্গরাজ্য বললে কম বলা হয় না|স্বামী বিবেকানন্দর খুব প্ৰিয় স্থান ছিলো রামেশ্বরম, জীবনে দুবার এসেছিলেন তিনি এখানে|

আজ রামেশ্বর নিয়ে এটুকুই,আবার ফিরে আসবো পরের পর্বে নতুন এক জ্যোতির্লিঙ্গের কথা নিয়ে, ভাগ করে নেবো আমার অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে,আর একটা কথা,টেলিভিসন ও লাইভ ভিডিওর পাশাপাশি আজ থেকে এক নতুন অনুষ্ঠান নিয়ে আসছি আমার ইউটিউব চ্যানেল এ প্রতিদিন সকাল পাঁচটায় দেখতে ভুলবেন না|আর অবশ্যই যোগাযোগ করবেন নিজের প্রয়োজন মতো|ধন্যবাদ|

শক্তি পীঠ : বেহুলা

শক্তি পীঠ নিয়ে আমার আধ্যাত্মিক লেখালেখি বেশ কিছুদিন হলো চলছে আপনাদের সাথে নিয়ে, এর আগে এই আধ্যাত্মিক যাত্রায় আমি আপনাদের ঘুরিয়ে এনেছি রাজ্যর সীমানা ছাড়িয়ে অন্য রাজ্য তথা অন্য দেশ থেকেও|তবে এই সোনার বাংলায় এখনো অনেক গুলি শক্তি পীঠ আছে যার কথা বলা হয়নি তবে অবশ্যই বলা দরকার তাই আবার ফিরে আসতে হলো বাংলায়, এবারের গন্তব্য বর্ধমান এর কেতুগ্রামের শক্তি পীঠ “বেহুলা”|আজ বলবো এই বিশেষ এবং কিছুটা প্রচারের আড়ালে থেকে যাওয়া পীঠটির কথা|

পীঠটি বর্ধমান জেলার কেতুগ্রাম এ অজয় নদীর তীরে একটি মনোরম স্থানে অবস্থিত,দেবী স্থানীয় মানুষের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং জাগ্রত, তিনি বেহুলা বা বহুলা নামে খ্যাত|দেবীর ভৈরব এখানে ভীরুক|পীঠ নির্ণয় তন্ত্র ও অন্যান্য শাস্ত্র মতে বেহুলায় দেবীর বাম বাহু পতিত হয়েছিলো|

প্রাচীন কালে বর্ধমানের এক রাজার নাম ছিলো চন্দ্রকেতু যার নাম অনুসারে এই অঞ্চলের নামকরণ হয় কেতুগ্রাম|এই রাজা চন্দ্রকেতু স্বয়ং দেবী বেহুলার বর্তমান মন্দির টি নির্মাণ করান|
দেবী এখানে ত্রিনয়নী, বহুলারূপী, কিরীটধারী, চতুর্ভুজা দুর্গা। দেবীর বাঁ দিকে কোষ্ঠীপাথরের অষ্টভুজ গণেশ।মনে করা হয় রাজা চন্দ্রকেতু কার্তিক এবং গণেশ সহ দেবী
বাহুলার পাথরের মূর্তিটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন|

মানুষের বিশ্বাস অনুসারে অত্যান্ত জাগ্রতা দেবী বেহুলা,নিষ্ঠা সহকারে নিয়মিত তার পূজা ও প্রসাদ বিতরণ হয় এছাড়া বিশেষ তিথি গুলিতে বিশেষ পূজাঅর্চনার আয়োজন করা হয়|এখানে মহা সমারোহে শিব রাত্রি পালন হয় এবং গাজন উপলক্ষে মেলা বসে ও দুর দূরান্ত থেকে বহু মানুষ আসেন সেই সময়|কেতুগ্রাম থেকে কিছু দূরে খন্ড গ্রামে ভৈরব ভীরুক স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত|

এখনো অসংখ্য শক্তি পীঠের কথা বলা বাকি রয়ে গেলো, সব বলবো আগামী পর্ব গুলিতে|অনেক অজানা কথা,গল্প ও পৌরাণিক ঘটনা তুলে ধরবো আপনাদের সামনে যেমন টা করে আসছি এতদিন, তার সাথে থাকবো আমার পেশা ও জীবনের অঙ্গ জ্যোতিষ নিয়ে আপনাদের পাশে, অনলাইনে এবং চেম্বারে আর চোখ রাখুন আমার সি টি ভি এন এর অনুষ্ঠান ও ইউটিউব চ্যানেল এবং পড়তে থাকুন ফেসবুক পোস্ট গুলি|ধন্যবাদ| 

দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ : কেদারনাথ

ইতিমধ্যে এর আগের পর্ব গুলিতে আমি তিনটি জ্যোতির্লিঙ্গর কথা লিখেছি অর্থাৎ সোমনাথ, বৈদ্যনাথ ও রামেশ্বরম|আজ বলবো আমার অন্যতম প্ৰিয় একটি তীর্থক্ষেত্র ও দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম কেদারনাথ এর কথা|তবে ধন্যবাদ জানাই আমার সব দর্শক, অনুরাগী ও পাঠক দের যাদের উৎসাহে ও সমর্থনে আমার প্রতিটি অনুষ্ঠান ও আধ্যাত্মিক লেখা এক অন্য মাত্রা পায়|আর কথা না বাড়িয়ে চলুন শুরু করি আজকের পর্ব “কেদারনাথ ” কথা দিচ্ছি ভালো লাগবেই আপনাদের|

উত্তরাখণ্ডের গাড়োয়াল জেলায়,হিমালয়ের পাদদেশে,কেদার পর্বতের নিচে সমুদ্রস্পৃষ্ট থেকে 3584 মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই কেদারনাথ মন্দির|মন্দিরের কিছু দুর দিয়ে বয়ে গেছে মন্দাকিনী নদী|পঞ্চ কেদারের অন্যতম এই প্রাচীন তীর্থের জন্ম লগ্নের রহস্য জানতে গেলে আমাদের পিছিয়ে যেতে হবে হাজার হাজার বছর আগে মহাভারতের সময় কালে|

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে জিতে ছিলো পান্ডবরা কিন্তু বহু স্বজন কে হত্যা করতে হয়েছিলো যুদ্ধ ক্ষেত্রে,যুদ্ধ শেষে সেই পাপ থেকে মুক্তি পেতে পান্ডবরা শিবের শরণাপন্ন হন কিন্তু শিব তাদের ক্ষমা করতে প্রস্তুত ছিলেন না তাই তিনি একটি ষাঁড় এর রূপ ধরে গা ঢাকা দেন |কিছুকাল অনুসন্ধান চালানোর পর পান্ডব রা তার স্বরূপ চিনতে পারেন ও ভীম বহু চেষ্টার পর ষাঁড়রুপি শিব কে ধরে ফেলেন তখন শিব বাধ্য হয়ে নিজ মূর্তিতে আবির্ভুত হন, এই আবির্ভাবের মুহূর্তে ষাঁড়রুপি শিবের শরীরের যে অংশ যেখানে অবস্থান করছিলো সেখানে একটি করে সৃষ্টি হয় যেমন মাথা পশুপতি নাথে, বাহু তুঙ্গ নাথে,মুখ রূদ্রনাথে,নাভি মধ্য মহেশ্বরে চুল জল্পেশ্বরে ও পৃষ্ঠদেশ কেদারনাথে|এই পাঁচ টি মন্দির কে একত্রে পঞ্চকেদার ও বলা হয় |

আধ্যাত্মিক তাৎপর্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দুদিক থেকেই কেদারনাথ অতি গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় এক তীৰ্থস্থান|মনে করা করা হয় শিব স্বয়ং বাস করেন এখানে, তার এটি অত্যন্ত প্ৰিয় স্থান|স্কন্দ পুরান অনুসারে কেদারনাথ এর এই পবিত্র স্থানেই শিব তার জটা থেকে মুক্ত করে ছিলো গঙ্গাকে|দেবাদিদেব এখানে পূজিত হন কেদার হিসেবে|প্রাচীন কালে এই অঞ্চলের নাম ছিলো কেদারখন্ড|

স্বাভাবিক ভাবেই আদি কেদারনাথ মন্দির প্রকৃতপক্ষে কবে নির্মাণ হয়েছিলো তার কোনো নিদ্দিষ্ট নথি নেই|মন্দির প্রাঙ্গনে আছে বিশালাকার নন্দীর মূর্তি, অভ্যন্তরে কৃষ্ণ ও স্বস্ত্রীক পঞ্চ পাণ্ডবের মূর্তি খোদাই করা আছে|ত্রিকোণাকৃতি জ্যোতির্লিঙ্গ টি রয়েছে মুলমন্দিরের এক বিশেষ গর্ভগৃহে|মনে করা হয় এক হাজার বছর আগে আদি শংকরাচার্য মন্দিরটির সংস্কার করেন ও বদ্রিনাথের পূজারী কে এনে কেদারে পূজার প্রচলন করেন|তার আগে কেদারনাথ এ কোনো নিদ্দিষ্ট পূজারী ছিলো না, পরে পাঁচ জন পূজারী নিয়োগ করা হয়, যে পরম্পরা আজও চলছে|

চারপাশে তুষার ঢাকা পর্বত মাঝ খানে কেদারনাথ মন্দির এক অপূর্ব অনুভূতি জাগায় মনে|একাধিক বার প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হয়েও আশ্চর্য ভাবে প্রতিবার রক্ষা পেয়েছে মুল মন্দিরটি|এক কালে অতি কষ্ট সাধ্য ছিলো এই মন্দির দর্শন কারন প্রতিকূল পরিবেশ ও দুর্গম পথ|তবুও সব বাধা বিপত্তি কাটিয়ে বাবার ভক্ত রা দলে দলে ছুটে আসতেন কেদারনাথ দর্শনে|আজও আসেন |কেদারনাথ ভারতের চারধাম তীর্থের মধ্যে অন্যতম|এই অঞ্চলের তীব্র শীতের ও প্রতিকূল পরিবেশের জন্য মন্দিরটি কেবল এপ্রিল মাসের শেষ থেকে কার্তিক পূর্ণিমা অবধি দর্শনার্থী দের জন্য খোলা থাকে। শীতকালে কেদারনাথ মন্দিরের মূর্তিগুলিকে ছয় মাসের জন্য উখিমঠে নিয়ে গিয়ে পূজা করা হয়|পরে আবার নিদ্দিষ্ট সময়ে মূর্তিগুলি কেদারনাথ মন্দিরে ফিরিয়ে আনা হয়|যুগ যুগ ধরে এই পরম্পরা চলে আসছে|

আজ এই বিশেষ জ্যোতির্লিঙ্গ কেদারনাথ নিয়ে এটুকুই,ফিরে আসবো পরের পর্বে, জ্যোতিষ সংক্রান্ত অনুষ্ঠান গুলি দেখতে থাকুন আর চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন উল্লেখিত নাম্বারে|অনলাইনে ও চেম্বারে দুভাবেই আমি আছি আপনাদের পাসে|ধন্যবাদ|ওঁম নমঃ শিবায়ঃ|