শক্তিপীঠ প্রয়াগ
আজ বেশ কিছুদিন পর কলম ধরলাম একটি শক্তি পীঠ পর্ব আপনাদের সামনে আনবো বলে, তবে বাংলায় অবস্থিত শক্তি পীঠ গুলির কথা সবই আগের পর্ব গুলিতে লিখে ফেলেছি, যারা এখনো পড়েননি তারা আমার ওয়েবসাইটে গিয়ে পড়তে পারেন|আজ লিখবো বাংলার বাইরে অবস্থিত দেশের একটি অন্যতম শক্তি পীঠ নিয়ে|আজকের পর্বে প্রয়াগে অবস্থিত শক্তি পীঠ অর্থাৎ মাতা ললিতা বা আলপী|
সঙ্গম এমনিতেই সনাতন ধর্মে বিশ্বাসী মানুষদের কাছে ওতি পবিত্র স্থান যা উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদে অবস্থিত|পীঠ নির্নয় তন্ত্র সহ একাধিক শাস্ত্রে উল্লেখ আছে যে সঙ্গমের কাছে দেবীর হাতের আঙ্গুল পতিত হয়|এই পবিত্র স্থানেই সৃষ্টি হয়েছে এক শক্তি পীঠ| দেবী এখানে ললিতা নামে পূজিতা এবং দেবীর ভৈরবের নাম ভব। এই স্থানকে এমনিতেও তীর্থরাজ বলা হয় কারন এখানে তিনটি প্রধান নদী গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতী মিলিত হয়।মন্দিরের স্থাপত্য ওতি সুন্দর তবে এই মন্দিরের এক বিশেষত্ব আছে। এখানে কোন মূর্তি নেই|একটা কাঠের দোলনা আছে। তার ওপরেই দেবীকে কল্পনা করে নেওয়া হয়। এখানে দেবীকে ‘ আলোপী মাতা ’ও বলা হয় কারন দেবী এখানে অদৃশ্য|শঙ্করাচার্য্যর অষ্টাদশ পীঠ স্তোত্র তেও এই শক্তি পীঠের উল্লেখ আছে|
পুর্ন লাভের আশায় প্রয়াগে আসা অসংখ্য দর্শনার্থী এই শক্তি পীঠ দর্শন করেন|প্রায় সারা বছরই এখানে ভক্ত দের আনাগোনা লেগে থাকে|নবরাত্রি ও শিব রাত্রি উপলক্ষে এখানে বিশেষ পূজা হয় এবং বহু ভক্তের সমাগম হয়|
এলাহাবাদ স্টেশন ও এয়ারপোর্ট থেকে অল্প দূরেই অবস্থিত এই শক্তি পীঠ যা প্রতিদিন সকাল সাড়ে সাতটা থেকে সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা অবধি দর্শনার্থী দের জন্য খোলা থাকে|চাইলে সময় সুযোগ বুঝে একবার ঘুরে আসতে পারেন|এক অদ্ভুত আধ্যাত্মিক প্রশান্তি অনুভব করবেন নিজের অন্তরে|
আজ এই শক্তি পীঠ পর্বের লেখা এখানেই শেষ করছি আগামী পর্বে অন্যকোনো শক্তি পীঠের কথা নিয়ে ফিরে আসবো|সঙ্গে থাকুন, জ্যোতিষ পরামর্শ ও প্রতিকারের জন্য ফোন করুন উল্লেখিত নাম্বারে|সরাসরি কথা হবে আমার সাথে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|
ভারতের সাধক – স্বামী আত্মস্থানন্দ
রু হচ্ছে উৎসবের দিন, সামনেই দুর্গোৎসব, তার পর দীপাবলি, এ বছর টা একটু আলাদা হলেও ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরছে মানুষের জীবন|অনেকেই আগের মত জ্যোতিষ পরামর্শ বা ভাগ্য বিচারের জন্য চেম্বারে আসতে চাইছেন|অনেকে আবার অনলাইনেই ভরসা রাখছেন|যাই হোক আমি কিন্তু দুভাবেই আছি সমান ভাবে|আর কিছু দিনের মধ্যেই আরো কয়েকটা নতুন ধরনের ভিন্ন স্বাদের অনুষ্ঠান নিয়ে হাজির হবো আপনাদের সামনে|তবে এখন লিখতে চলেছি ভারতের এক মহান সন্যাসীকে নিয়ে|তিনি রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের পঞ্চদশ অধ্যক্ষ স্বামী আত্মস্থানন্দ|
স্বামী আত্মস্থানন্দর বাবা মার দেওয়া নাম ছিল সত্যকৃষ্ণ ভট্টাচার্য তার জন্ম হয় ১৯১৯ সালে ওপার বাংলায়| জন্ম স্থান ছিলো বাংলাদেশের ঢাকা শহরের কাছে সবজপুর|স্বামী আত্মস্থানন্দ শৈশব থেকেই ছিলেন মেধাবী ও আধ্যাত্মিকতার আলোকে আলোকিত| কলেজজীবনে তিনি যুক্ত হন দিনাজপুর রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের সঙ্গে। ১৯৩৮ সালে স্বয়ং শ্রীরামকৃষ্ণের সন্ন্যাসী শিষ্য বিজ্ঞানানন্দের কাছে দীক্ষা নেন আত্মস্থানন্দ। ১৯৪১ সালের ৩ জানুয়ারি ২২ বছর বয়সে বেলুড় মঠে যোগ দেন।১৯৪৫ সালে ব্রহ্মচর্য গ্রহণ। ১৯৪৯ সালে সন্ন্যাস গ্রহণ। স্বামী বিজ্ঞনানন্দজীর কাছে মন্ত্র দীক্ষা নিয়ে সত্যকৃষ্ণই হয়ে গেলেন স্বামী আত্মস্থানন্দ|দীর্ঘ দিন একাধিক গুরুদায়িত্ব সামলেছেন, ছিলেন গুজরাটের রাজকোট শাখার প্রেসিডেন্ট|২০০৭ সালের ৩ ডিসেম্বর রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের ১৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করেন|
দীর্ঘ সন্যাস জীবনে বহুমানুষের আশ্রয়স্থল ছিলেন তিনি। সুখ,দুঃখে তিনিই ছিলেন শান্তির আশ্রয়|
যারাই এঁসেছেন তারাই তার পরম স্নেহের স্পর্শ পেয়েছেন। স্পর্শ পেয়েছেন বিশাল হূদয়ের। যে হৃদয় দিয়ে লক্ষ মানুষের মন ছুঁয়ে যেতেন এই সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী| স্বামীজীর আদর্শ অনুসারে লক্ষ্যে অবিচল থেকে এগিয়ে চলেছেন সারাটা জীবন|কঠোর পরিশ্রম করেছেন|নিজের গোটা জীবন দিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছেন| রামকৃষ্ণ ভাবাদর্শর প্রচারে নিবেদন করেছেন নিজের জীবন|
ভারতের বর্তমান প্রধান মন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীজির আধ্যাত্মিক গুরু তিনি|রাজ কোটে থাকা কালীন যুবক নরেন্দ্র তার সংস্পর্শে আসেন এবং সন্ন্যাস নিতে চান|সেদিন সেই যুবককে সন্যাস না দিয়ে দেশের কাজ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন স্বামী আত্মস্থানন্দ|বাকিটা ইতিহাস|
১৮ জুন ২০১৭ ৯৮ বছর বয়সে
কলকাতায় মহা সমাধি লাভ করেন এই মহান সন্ন্যাসী|সমাপ্ত হয় এক গৌরব ময় অধ্যায়|প্রনাম জানাই এই মহান সাধককে|আজ আপাতত এখানেই থামছি|ফিরবো পরের পর্বে|সঙ্গে থাকুন|প্রয়োজন বোধ করলে যোগাযোগ করুন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|
ভারতের সাধক – আদি গুরু শঙ্করাচার্য্য
ভারত আধ্যাত্মিকতার দেশ|হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসছে আধ্যাত্মিকতা ও ধর্মীয় চর্চা|বহু মহান সাধক ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব জন্ম গ্রহণ করেছেন এই দেশের পুন্যভূমি তে|নিজেদের মেধা পান্ডিত্য ও সাধনা দিয়ে তারা এগিয়ে নিয়ে গেছে সনাতন সংস্কৃতি কে|ধর্মীয় পরম্পরা ও ঐতিহ্যকে নিজের জীবন ও সাধনা দিয়ে তারা সম্পৃক্ত করেছেন|এমন বেশ কিছু মহান সাধক ও মহাপুরুষের কথা আমি ইতি মধ্যেই এই ভারতের সাধক শীর্ষক ধারাবাহিক লেখনীতে বলেছি|আজকের পর্বে লিখবো এমন একজনকে নিয়ে যার কথা না বললেন ভারতের আধ্যাত্মিক পরম্পরা বা ভারতের সাধকদের নিয়ে লেখা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে|আজকের পর্বে আদি গুরু শঙ্করাচার্য্য|
প্রথমেই বলে রাখি আদিগুরু শঙ্করাচার্য্যর প্রারম্ভিক জীবন এবং বাল্যকাল নিয়ে নানা মুনির নানা মত|তবে এ বিষয়ে সব থেকে গ্রহন যোগ্য প্রামাণ্য হিসেবে ধরা হয় শংকর বিজয়ম নামক প্রাচীন গ্রন্থকে|1788 খ্রিস্টাব্দে, কেরল রাজ্যের কালাডি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন শঙ্করাচার্য্য|তার বাবার নাম ছিল শিবগুরু ও মায়ের নাম আর্যাম্বা|কথিত আছে ত্রিশূরের বৃষভচল শিবমন্দিরে পুত্রকামনা করে পূজা দিয়ে আশীর্বাদ স্বরূপ শংকরকে পেয়ে ছিলেন তার বাবা মা|তিনি ছিলেন শিবের বর পুত্র এবং পরবর্তীতে তাকে শিবের অবতার হিসেবেই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে|রক্ষন শীল হিন্দু পরিবারে তার বড়ো হয়ে ওঠা|বাল্যকাল থেকেই শংকর ছিলেন অত্যান্ত মেধাবী ও আধ্যাত্মিক মানসিকতার|মনে করা হয় মাত্র আট বছর বয়সে তিনি চারটি বেদ আয়ত্ত্ব করে ফেলেন অতি সহজে|অল্প বয়সে পিতৃ বিয়োগের পর চরম আর্থিক দুর্দশার সম্মুখীন হতে হয় তাকে|
কৈশোর থেকেই শঙ্করের ইচ্ছে ছিলো সন্ন্যাস নেয়ার কিন্তু মা রাজি ছিলেন না পরবর্তীতে তাকে রাজি হতে হয় এ নিয়েও আছে এক অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ|একবার বালক শংকর পূর্ণা নদীতে স্নান করছিলেন। এমন সময় একটি কুমির তার পা কামড়ে ধরে। শঙ্করের মা তখন সেখানেই উপস্থিত ছিলেন|তিনি মা-কে বলেন, মা যদি সন্ন্যাস গ্রহণের অনুমতি দেন, তাহলে কুমিরটি তার পা ছেড়ে দেবে। ছেলের প্রাণ বাঁচাতে মা তাকে সন্ন্যাস গ্রহণের অনুমতি দিলেন|কুমির ও সাথে সাথে পা ছেড়ে অদৃশ্য হলো|এরপর সন্যাস নিয়ে গৃহ ত্যাগ করলেন শঙ্করাচার্য্য|গুরুর খোঁজে বেড়িয়ে পড়লেন পথে|
দীর্ঘ সময় পদব্রজে সারা উত্তর ভারত পরিভ্রমণ করার পর অবশেষে গুরুর সাথে সাক্ষাৎ হলো|নর্মদানদীর তীরে ওঙ্কারেশ্বরেতিনি গৌড়পাদের
শিষ্য গোবিন্দ ভগবদপাদের শিষ্যত্ব গ্রহন করলেন শঙ্করাচার্য্য|গুরু শঙ্করাচার্য্যকে অদ্বৈত মত প্রচার করতে বলেন|পরবর্তীতে তিনি কাশী,বদ্রিনাথ সহ বহু স্থানে ঘুরে বেড়ান|অসংখ্য ভাষ্য ও গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেন এবং তার পাশাপাশি চালিয়ে যান
অদ্বৈতবাদের প্রচার|এই সময় অসংখ্য অনুগামী ও ভক্ত তার সংস্পর্শে আসেন ও তার শিষ্যত্ব গ্রহন করেন|বহু ধর্মীয় বিতর্কে অংশগ্রহন করে সেকালের ধর্মজগতের বহু সনামধন্য পন্ডিতকে শাস্ত্র আলোচনায় পরাস্ত করে শংকরাচার্য্য হয়ে ওঠেন এক অতি পরিচিত কিংবদন্তী স্বরূপ|মনে করা হয় কাশীতে বিশ্বনাথ মন্দিরদর্শন করতে যাওয়ার সময় স্বয়ং শিব এক চন্ডাল রূপে তাকে দর্শন দিয়ে ছিলেন|
শঙ্করাচার্য সারাটা জীবন ধরে অদ্বৈতত্ত্বের প্রচার করে বেদ বিমুখী সমাজকে আবার বেদান্তের পথে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন| শঙ্করাচারজ্যর অদ্বৈত ত্বত্ত্বের মূল কথা ছিল- ব্রহ্ম সত্য, জগৎ মিথ্যা। জীব ও ব্রহ্মে কোনো প্রভেদ নেই|অর্থাৎ, জীব ও ব্রহ্মকে এক ভাবাই অদ্বৈতবাদ।সকল জীবের অভ্যন্তরে যে আত্মা বিরাজমান, তা পরমাত্মারই প্রকাশ। এ তত্ত্বে জীবাত্মা ও পরমাত্মা এক|
বিভিন্ন সম্প্রদায়, শাখা ও উপশাখায় বিভক্ত সনাতন ধর্ম কে একটা সুসংবদ্ধ রূপ দান করেন এবং এর মাধ্যমে হিন্দু ধর্মকে তিনিই রক্ষা করেন|পরবর্তীতে হিন্দু ধর্মের পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করার জন্য দেশের চার প্রান্তে চারটি মঠ প্রতিষ্ঠা করেন|এবং দশনামি সম্প্রদায়কে সুসংবদ্ধ ভাবে এই মঠের অধীনে এনে তিনি সনাতন ধর্মকে একটি সুসংগঠিত ভিত্তি প্রদান করেন|আজও এই পরম্পরা মেনে চারটি মঠের প্রধান অর্থাৎ চারজন শঙ্করাচার্য্য পদাধিকারী সনাতন ধর্মের কল্যানে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছেন সর্বদা|
এই মহামানবের জীবনের আরো অনেক বিষয়ের ন্যায়ে তার দেহ ত্যাগের প্রকৃত স্থান নিয়েও পন্ডিতদের মধ্যে মত পার্থক্য রয়েছে| কেদারনাথ মন্দিরের পিছনে আদি শঙ্করের প্রতি উৎসর্গীকৃত সমাধি মন্দির রয়েছে মনে করা হয় 1820 খ্রিস্টাব্দে শঙ্করাচার্য্য মাত্র বত্রিশ বছর বয়সে এই স্থানেই দেহত্যাগ করেন|
আজ এই মহান সাধককে নিয়ে লেখা এখানেই শেষ করছি|আমার সব লেখা, ভিডিও ও সর্বমঙ্গলা মায়ের মন্দির সংক্রান্ত সব তথ্য পেতে এখন থেকে আমার ফেসবুক প্রোফাইল ও ইউটিউব ছাড়াও নজর রাখুন আমার ওয়েবসাইটে|আর জ্যোতিষ সংক্রান্ত পরামর্শ, ভাগ্যবিচার ও প্রতিকারের জন্য ফোন করুন উল্লেখিত নাম্বারে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|
ভারতের সাধক – স্বামী প্রনবানন্দ স্বরস্বতী
সম্প্রতি আরো একটি নতুন সংযোজন হলো আমার আধ্যাত্মিক কর্মকাণ্ডে|বিগত মহালয়ার পবিত্র তিথিতে প্রকাশ্যে এলো আপনাদের সর্বমঙ্গলা মায়ের মন্দিরের ওয়েবসাইট|এবার থেকে এই ওয়েবসাইট এর মাধ্যমেও আপনারা যুক্ত হতে পারবেন মন্দিরের সকল কর্ম সুচির সাথে, পাবেন সব তথ্য সবার আগে|থাকবে আরো অনেক চমক|সে নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো একটি বিশেষ পর্বে, জানাবো সবকিছু, আগামী রবিবার|চোখ রাখুন আমার ফেসবুক প্রোফাইলে|সব জানতে পারবেন|আপাতত আজ ভারতের সাধক শীর্ষক ধারাবাহিক লেখনীতে আলোচনা করবো দেশের অন্যতম বিখ্যাত ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধ যোগী পুরুষ স্বামী প্রনবানন্দ সরস্বতী কে নিয়ে|জানবো তার জীবন কাহিনী ও আধ্যাত্মিক কর্মকান্ড|
১৮৯৬ সালে ২৯ জানুয়ারি একে মাঘী পূর্ণিমার দিন তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার মাদারীপুরে অত্যান্ত সাধারন এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন বালক প্রনবানন্দ|পিতার নাম বিষ্ণুচরন ভূইঞা ও মাতা ও মাতা সারদা দেবী|কথিত আছে স্বয়ং বাবা মহাদেবের বরপুত্র ছিলেন প্রনবানন্দ|বাল্যকালে তার নাম ছিলো বিনোদ|ছোটো বেলা থেকেই ঈশ্বর চিন্তা ও আধ্যাত্মিকতায় গভীর আকর্ষণ ছিলো তার|মাত্র সতেরো বছর বয়সে স্বামী গম্ভীরনাথ এর কাছে দীক্ষা নেন তিনি|মাত্র ২০ বৎসর বয়সে সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেন এবং ১৯২৪ সালে প্রয়াগে অর্দ্ধকুম্ভমেলায় স্বামী গোবিন্দানন্দ গিরির নিকট আনুষ্ঠানিক সন্ন্যাস গ্রহণ করেন ও হয়ে যান
স্বামী প্রনবানন্দ|
নানা দিক থেকে বর্ণময় ও তাৎপর্যপুর্ন ছিলো স্বামী প্রনবানন্দর আধ্যাত্মিক জীবন|একাধারে তিনি ছিলেন সন্যাসী, সমাজ সংস্কারক এবং স্বাধীনতার যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী এক বীর সন্ন্যাসী|একজন বিপ্লবী দলের সক্রিয় সদস্য হিসেবে 1914 সাল গ্রেপ্তার ও হয়ে ছিলেন স্বামী প্রনবানন্দ|সারা জীবন তিনি একাধিক প্রাচীন তীর্থ ক্ষেত্র সংস্কার করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন|তবে স্বামী প্রনবানন্দর সর্ব শ্রেষ্ঠ অবদান অবশ্যই ভারত সেবাশ্রম তৈরি|তিনি ভারত সেবাশ্রম সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন 1917 সালে|বিশ্ব জুড়ে সমাজ সংস্কার, সেবা মূলক কর্ম সূচি ও সনাতন ধর্মের প্রচারে ভারত সেবাশ্রম আজ এক অতি পরিচিত নাম|
সারাটা জীবন ধরে স্বামী প্রনবানন্দ সক্রিয় ছিলেন দেশের হিন্দু সমাজকে ঐক্য বদ্ধ করতে এবং সংকীর্ণ জাতপাতের বেড়া জাল থেকে সনাতন ধর্ম ও সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে|তিনি সকল রকম ধর্মীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ছিলেন|তিনি ব্যক্তি চরিত্র নির্মাণ, আদর্শ পরিবার গঠন যথাযত শিক্ষা ইত্যাদিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতেন|তিনি বলেছিলেন – হিন্দুদের মধ্যে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, চণ্ডাল আদির কোন ভেদ নেই|অর্থাৎ সব হিন্দু সমান, সবার সমান অধিকার এবং সবাইকে সমান চোখে দেখতে হবে|সনাতন ঐক্য ও বৈদিক সংস্কৃতি রক্ষার উদ্দেশ্যে তিনি হিন্দু মিলন মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন যা নানা রকম জন কল্যাণ মূলক কাজে নিয়োজিত ছিলো|
স্বামী প্রণবানন্দর জীবন এক আদর্শ স্বরূপ|নিজেকে সম্পূর্ণ রূপে তিনি উৎসর্গ করে ছিলেন দেশ সেবায় ও সনাতন ধর্ম রক্ষার কাজে|আজও তিনি ঘরে ঘরে পূজিত হন এক আদর্শ গুরু ও এক অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাধক হিসেবে|১৯৪১ সালে ৮ জানুয়ারি মাত্র ৪৫ বৎসর বয়সে তিনি দেহ ত্যাগ করেন|কিন্ত তিনি অমরত্ব লাভ করেছেন তার ত্যাগ, জন সেবা ও আদর্শের মাধ্যমে|.
এই মহান সাধক কে প্রনাম জানিয়ে আজকের পর্ব
এখানেই শেষ করছি|যুক্ত হন হৃদয়েশ্বরী মা সর্ব মঙ্গলা মায়ের মন্দির ও প্রতিটি আধ্যাত্মিক কর্মসূচির সাথে, দেখতে থাকুন আমার সব অনুষ্ঠান ও অবশ্যই চোখ রাখুন মা সর্বমঙ্গলার ওয়েবসাইটে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|
দেব শিল্পী বিশ্বকর্মা
আমাদের সনাতন ধর্মে ভগবান বিষ্ণু তার সৃষ্টি কর্মের একএকটি গুরু দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন এক একজন দেবতার উপর|অর্থাৎ ও বাণিজ্যর ভার দেবী লক্ষীর উপর, শিক্ষা ও সংস্কৃতির দায়িত্ব স্বরস্বতীর আবার প্রতিরক্ষার দায়িত্বে রয়েছেন দেবী দূর্গা|এদের মধ্যে বিশ্বকর্মা হলেন স্থাপত্য ও নির্মাণের দেবতা|তিনি দেব শিল্পী|আজ বিশ্বকর্মা পূজা|সাধারনত ভাদ্র মাসের সংক্রান্তি তেই বিশ্বকর্মা পূজা হয়ে থাকে|আজ সারা বাংলা তথা দেশের শিল্প ও নির্মানশিল্প কেন্দ্র গুলিতে মহাসমারোহে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকর্মাপূজার|আসুন আজকের এই পবিত্র দিনে জেনে নেই দেব শিল্পী বিশ্বকর্মার আধ্যাত্মিক স্বরূপ ও তার সাথে জড়িত কিছু পৌরানিক ঘটনা|
বিশ্বকর্মা মূলত বৈদিক দেবতা|ঋগ বেদ সহ একাধিক ধর্ম গ্রন্থে এবং রামায়ন মহাভারতের মত মহাকাব্যে উল্লেখ রয়েছে বিশ্বকর্মার|তিনি ব্রহ্মা সৃষ্টি কর্মের অন্যতম সহযোগী|সৃষ্টির একদম আদি লগ্ন থেকে বিভিন্ন সৃষ্টি কর্মের মাধ্যমে তিনি জগৎ নির্মাণের কাজে যুক্ত|বিশ্বকর্মার পুত্র বিশ্বরূপকে ইন্দ্র বধ করেছিলেন এবং ইন্দ্র ও বিশ্বকর্মার শত্রুতাও দেখা দিয়েছিলো|যদিও নিজের কর্তব্যে সদা অবিচল বিশ্বকর্মা এবং নিজের সৃষ্টিকর্মে সর্বদা মগ্ন তিনি|
পুরান ও অন্যান্য শাস্ত্রে বর্ণিত একাধিক অস্ত্র, ও গুরুত্বপূর্ণ বস্তুর প্রধান কারিগর বিশ্বকর্মা|বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র, কুবেরের পুস্পক রথ, শিবের ত্রিশূল
পরশুরামের ধনুক, ইন্দ্রের প্রথম বজ্র এসবই বিশ্বকর্মার সৃষ্টি|রাবনের লংকা নগরী, কুবেরের অলোকা পুরী,এমনকি পুরীর বিখ্যাত জগন্নাথ বিগ্রহও বিশ্বকর্মার স্বহস্তে নির্মিত|
যখনই দেব লোকে কোনো বিশেষ স্থাপত্য বা দৈব নিদর্শন সৃষ্টির প্রয়োজন হয় ডাক পড়ে বিশ্বকর্মার|কখনো নিরাশ করেন না বিশ্বকর্মা|নিজের অলৌকিক শিল্প সত্ত্বা ও কঠোর পরিশ্রমের দ্বারা নির্মান করেন একের পর এক শিল্প কর্ম তথা স্থাপত্য শিল্পের সর্বশ্রেষ্ঠ নিদর্শনগুলি|
বিশ্বকর্মা পুজো নিষ্ঠা সহকারে পালন করেন দেশের শিল্পীরা, শ্রমিকরা এবং স্থাপত্য শিল্পের সাথে যুক্ত শ্রমিকেরা|প্রান ভোরে তার আশীর্বাদ চান যাতে আগামী সময়ে আরো কঠোর পরিশ্রম ও দক্ষতার সাথে নির্মান শিল্পে বা কারিগরি ও যান্ত্রিক বিভাগে প্রভূত উন্নতি লাভ করা যায়|
দেব শিল্পী বিশ্বকর্মাকে নিয়ে আপাতত এটুকুই|যারা বিগত দিনে যুক্ত হলেন হৃদয়েশ্বরী সর্বমঙ্গলা মন্দিরের বিশেষ পুজোর সাথে তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ|এভাবেই পাশে থাকুন আগামী দিনে, আরো অনেক চমক নিয়ে ফিরে আসবো আপনাদের সামনে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|
মহিষাসুরমর্দিনী : পন্ডিতজি ভৃগুর শ্রী জাতক (চন্ডীপাঠ ও নেপথ্য কণ্ঠ )
মা হৃদয়েশ্বরী মন্দির থেকে সরাসরি চন্ডীপাঠ করলেন পন্ডিতজি ভৃগুর শ্রী জাতক
মহিষাসুর মর্দিনী দেবী দূর্গা
মহালয়া মানে পুজোর আর দেরি নেই, মহালয়া মানে মা আসছে কৈলাস ছেড়ে, সপরিবারে|এই মহালয়া হলো পিতৃ পক্ষের শেষ ও দেবী পক্ষের শুরু|মহালয়ার ঠিক আগেই মহিষাসুর কে নিয়ে লিখেছি, লিখেছি শুম্ভ নিশুম্ভ, চন্ডমুন্ড ও রক্ত বীজের কথা|জেনেছি দেবী কিভাবে একাধিক রূপে আবির্ভুত হয়ে এই ভয়ঙ্কর অসুরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলেন ও তাদের বধ করলেন|মহিষাসুর বধের পূর্বে দেবীর সকল রূপ একত্রিত হয়ে মিলিত হয়েছিলো মহিষাসুরমর্দিনী রূপে|দেবীর এই দশ ভুজা রূপই আমরা বাঙালিরা পূজা করি এই দুর্গা পূজায়|আজ জানবো এই রূপের মাহাত্ত্য ও তার অন্তর্নিহিত আধ্যাত্মিক তাৎপর্য|
ব্যাকরণগত ও উৎপত্তিগত ভাবে বিশ্লেষণ করলে দূর্গা শব্দের অর্থ হয় যা দুর্গতি নাশ করে বা যা বিঘ্ন নাশ করে|আবার শাস্ত্র মতে দুর্গং নাশয়তি যা নিত্যং সা দুর্গা বা প্রকীর্তিতা”। অর্থাৎ, যিনি দুর্গ নামে অসুরকে বধ করেছিলেন, তিনি দূর্গা|একাধিক পুরানে এই অসুর দুর্গম ও দেবী দুর্গার যুদ্ধের কথা উল্লেখিত আছে|আবার শ্রী শ্রী চণ্ডী অনুসারে শ্রীশ্রীচণ্ডী অনুসারে সকল দেবতার সম্মিলিত শক্তির প্রতিমূর্তি দুর্গা|
দূর্গা শব্দের তাৎপর্য ব্যাখ্যার পর দেবী দুর্গার স্বরূপ সম্পর্কে বলা যায় একাধিক পুরান ও দেবীমাহাত্ম গ্রন্থ থেকে তার একাধিক রূপ ও বৈশিষ্ট লখ্য করা যায়|দুর্গা মূলত শক্তি দেব আবার তিনি জয়দুর্গা, জগদ্ধাত্রী, গন্ধেশ্বরী, বনদুর্গা, চণ্ডী, নারায়ণী প্রভৃতি নামে ও রূপে পূজিতা হন|মৎস্যপুরাণ, মার্কণ্ডেয় পুরাণ, দেবীপুরাণ, কালিকাপুরাণ ও দেবী ভাগবত পুরানে দুর্গার রূপ ও ধর্মীয় তাৎপর্য বিস্তারিত ভাবে আলোচিত হয়েছে|দেবী দূর্গা একাধারে শাক্তদের প্রধান আরাধ্য দেবী, পাশাপাশি তিনিই বৈষ্ণবদের আরাধ্য শ্রী বিষ্ণুর অনন্ত মায়া, আবার দেবী দূর্গাই শৈবদের আরাধ্য শিবের অর্ধাঙ্গিনী পার্বতী|
দেবীর দশ ভুজা মহিষাসুর মর্দিনী রূপটিও বিশেষ তাৎপর্য পুর্ন|দেবীর দশ টি হাত ক্ষমতার বিস্তারকে নির্দেশ করে|দেবীর বাহন সিংহ তেজ ও পরাক্রমের প্রতিক|দেবীর সাথে পরাজিত মহিষাসুর আসলে অশুভ শক্তির উপর শুভ শক্তির জয়লাভের প্রতীক রূপে ব্যবহিত হয়|দেবী শুধু একা নন আরো অনেক দেবদেবী সহ সপরিবারে পূজিত হন এর ফলে এক সম্মিলিত ঐশ্বরিক শক্তির প্রকাশ হয় দেবী দুর্গার পুজোর মাধ্যমে|দুর্গাপূজা এই ভাবে একটি মহাশক্তির পূজায় পরিণত হয়|
প্রাচীন বাংলায় শুরু হয় দুর্গাপূজা মূলত বনেদি জমিদার বাড়ি বা রাজবাড়ীর পূজা হলেও পরবর্তীতে তা বারোয়ারি পূজার রূপ নিয়ে ছড়িয়ে পরে গোটা বাংলায়|আজ থিম পুজোর জৌলুসে সেই সাবেকি পূজার গুরুত্ব ও জনপ্রিয়তা কিছুটা ম্লান হলেও শাস্ত্রমতে নিষ্ঠা সহকারে এখনো বহু গৃহে দুর্গাআরাধনা হয়ে আসছে|
আগামী দিনে দূর্গাপূজা কে কেন্দ্র করে আরো কয়েকটি পর্ব হয়তো লিখতে হবে, বলতে হবে আরো কয়েকটি তাৎপর্যপুর্ন ধর্মীয় বিষয় নিয়ে|তবে এই বিশেষ পর্বে আজ এতটাই|যারা আগামী দিনে হৃদয়েশ্বরী সর্বমঙ্গলা মন্দিরের সাথে যুক্ত হতে চান, বা কেনো রকম জ্যোতিষ পরামর্শ ও প্রতিকার চান যোগাযোগ করুন উল্লেখিত নাম্বারে|এই উৎসবের দিন গুলিকে, এই গুরুত্বপূর্ণ সময়কে কাজে লাগান|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|