ভক্তের ভগবান – মা তারা এবং শ্রী শ্রী বামা ক্ষ্যাপা

16

ভক্তের ভগবান

 

মা তারা এবং শ্রী শ্রী বামা ক্ষ্যাপা

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আজ আপনাদের তারা মায়ের সর্বশ্রেষ্ঠ ভক্ত বামা

ক্ষ্যাপার কথা বলবো যিনি তারা মাকে বলতেন বড়মা।তারা পীঠ ছিলো বামা ক্ষ্যাপার কাছে মায়ের কোলের মতো। বামা তারা মাকে বলতেন বড়মার এবং মা মৌলাক্ষীকে বলতেন ছোটমা।

 

বামা ক্ষ্যাপার পুজোর নিদ্দিষ্ট নিয়ম ছিলোনা।কখনো কখনো সারাদিন পূজা করতেন।আবার কখনও কখনও তিনি দু তিন দিন পূজা করতেন

না। কখনো দেবীকে মালা পরাতেন আবার কখনো নিজে পরতেন।কখনো নিজে খেয়ে ভোগ দিতে যাচ্ছেন আবার কখনো ভোগ তুলে নিজে খেয়ে নিচ্ছেন। সাধনার এই পর্যায়কে শাস্ত্রীয় পূজা পদ্ধতির সাথে বাকি পান্ডারা মেলাতে পারতেন না। তারা ভাবতেন বামা উন্মাদ। অশাস্ত্রীয় আচরণ করছেন।যদিও পরে তাদের ভুল ভাঙে।তারা বুঝতে পারেন বামা সাধারণ ভক্ত নয় তিনি মাতারার স্নেহ ধন্য এবং তারই সন্তান সম।

 

একদিন খবর রটে যায় বামা ভোগ নিবেদন করার আগেই দেবীর প্রসাদ খেয়েছেন এবং এতে ঘোর পাপ হয়েছে।দেবী রাগান্বিত হবেন, সারা গ্রামকে তার ক্রোধ বহন করতে হবে তাই গ্রামবাসীরা বামাচরণকে কঠোরভাবে মারধর করে। তাকে শ্মশানে নিয়ে গিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। তার মন্দিরে প্রবেশ কার্যত নিষিদ্ধ ঘোষণা হয়।

 

প্রহারের চোটে বেশ কিছুক্ষন অজ্ঞান থাকার পর যখন জ্ঞান ফিরল তখন বামাক্ষ্যাপা মায়ের উপর রেগে গেল।মনে মনে তারা মাকে বললো ওরা অকারণে আমাকে মারধর করেছ তাই আমি এখন আর তোমার কাছে আসব না।ঠিক অবোধ সন্তান যেমন মায়ের উপর রাগ করে তেমনই বামা মা তারার উপর রেগে গেছিলেন।

 

তারা মা তার সন্তানের যন্ত্রণা সইতে পারেননি।

সেই রাতেই মন্দিরের দায়িত্বে থাকা জমিদার বংশের রানীর স্বপ্নে দেখা দিল মা তারা

রাগান্বিত মা রাণীকে ভর্ৎসনা করলো-তোমার পুরোহিতরা আমার ছেলেকে আঘাত করেছে। আমি তোমার মন্দির ছেড়ে চলে যাচ্ছি। এখন তোমাকে ও তোমার রাজ্যকে আমার ক্রোধ সইতে হবে, তুমি যদি তা এড়াতে চাও, কাল আমার ছেলেকে ফিরিয়ে এনে মন্দিরে পূজার দায়িত্ব দাও, নইলে পরিণতি ভোগ করতে প্রস্তুত থাকো।

 

পরদিন তারাপীঠে গিয়ে রানীমা আদেশ দিলেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বামাখেপাকে নিয়ে আসতে। বামাকে অনুরোধ করে মন্দিরে ফিরিয়ে আনা হলো।সেই দিন রানীমা আদেশ জারি করেন এই মন্দিরের পুরোহিত বামাক্ষ্যাপা। সে স্বাধীন। তার পথে কেউ আসলে তাকে শাস্তি দেওয়া হবে।শুধু তাই না তারাপীঠে আগে বামা ক্ষ্যাপাকে ভোগ নিবেদন হবে তারপর তারা মাকে ভোগ দেয়া হবে।অর্থাৎ সন্তানকে খাইয়ে তারপর মা খাবেন। এই রীতি আজও একই ভাবে চলছে।

 

এমনই হয় পরম ভক্ত এবং তার ভগবানের সম্পর্ক। সেখানে আচার উপাচার। রীতি নীতি গৌণ হয়ে যায়। প্রধান বিষয় হল অন্তরের ভক্তি এবং ভাব।

 

আবার এক মহান ভক্ত ও তার জীবনী নিয়ে যথা সময়ে ফিরে আসবো এই ধারাবাহিক আলোচনায়।

থাকবে আরো এক অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।