ভক্তের ভগবান – শ্রী রামকৃষ্ণ এবং মা কালী

102

ভক্তের ভগবান – শ্রী রামকৃষ্ণ এবং মা কালী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ এমন এক কালী সাধক ছিলেন যার কাছে তার আরাধ্যা মা কালী ছিলেন পরম ব্রহ্মস্বরূপ এবং তাকে সাক্ষাৎ কালী রূপে তিনি দেখা দিয়েছিলেন মৃন্ময়ী মা কালী তার কাছে হয়ে চিন্ময়ী রূপে ধরা দিয়ে ছিলেন। ভক্ত এবং ভগবানের মধ্যে মুছে গিয়ে ছিলো সব ব্যাবধান। শুধু তাই নয় শ্রী কৃষ্ণ তার ভক্তদের সাথে মা কালীর সাক্ষাৎ ও করিয়ে দিতে পারতেন। যেমন স্বামী বিবেকানন্দর সৌভাগ্য হয়েছিলো সেই অদ্ভুত অনুভূতির।

 

রানী রাসমণি দক্ষিনেশ্বর মন্দির প্রতিষ্ঠা করার পর দাদা রামকুমারের হাত ধরে গদাধর দক্ষিনেশ্বরে এসে ছিলেন পুরোহিত হিসেবে পুজোর কাজে সাহায্য করতে। প্রথম যেদিন মন্দির বিগ্রহের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিলেন, সেদিন কিন্তু তিনি সাধক ছিলেন না। শুরুর দিকে তিনি নির্জনে ধ্যান জপ করতেন, তন্ময় হয়ে গান গাইতেন, শিবপূজা করতেন এবং মাঝেমধ্যে ভাবসমাধিতেও ডুবে যেতেন। ধীরে ধীরে মা ভবতারিণীর সান্নিধ্যে এসে তার মধ্যে মা কালীর প্রতি অমোঘ টান জন্মায় এবং বহু অভিজ্ঞতা এবং সাধনার মধ্যে দিয়ে গিয়ে তিনি হয়ে উঠলেন মাতৃ সাধক রামকৃষ্ণ। ভবতারিণীর মধ্যে খুঁজে পেলেন সাক্ষাৎ জগৎ জননীকে।

 

একেকজন ভক্ত ভক্তি মার্গে একেকরকম পন্থা অবলম্বন করেন।কেউ শাস্ত্রকে প্রাধান্য দেন কারুর সাধনা আবার ভাব সর্বস্ব।শ্রী রামকৃষ্ণর পুজো পক্রিয়া ছিলো ব্যতিক্রমী।পুজোর জন্য সকালে ফুল তুলে মালা গেঁথে দেবীকে সাজাতেই অনেকটা সময় চলে যেত। পূজায় বসে যথাবিধি নিজের মাথায় একটা ফুল দিয়েই ধ্যানস্থ হয়ে মাঝে মাঝে বসে থাকতেন আবার অন্ননিবেদন করে মা গ্রহণ করছেন ভেবে অনেকক্ষণ কাটিয়ে দিতেন । দেবীকে প্রসন্না করতে কখনও পূজার মাঝখানে গান ও গেয়ে উঠতেন।কাঁদতে কাঁদতে চোখের জলে বুক ভেসে যেত মাঝে মাঝে।তার এই মতী গতি দেখে অনেকেই তাকে পাগল ভাবতেন। অনেকে সমালোচনা করতেন আবার বিজ্ঞ জনেরা বুঝতেন এ মহান সাধকের লক্ষণ।সাধনার চরম পর্যায় পৌঁছে গেছেন শ্রী রামকৃষ্ণ।

 

একাধিক বার তিনি মা কালীকে আকুল ভাবে বলতেন ‘মা তুই রামপ্রসাদকে দেখা দিয়েছিস, আমায় কেন তবে দেখা দিবি না? আমি ধন, জন, সুখভোগ কিছুই চাই না, আমায় দেখা দে’অর্থাৎ মা কালী কে সাক্ষাৎ দর্শন করার এক ব্যাকুলতা তার মধ্যে সৃষ্টি হয়ে ছিলো।ভক্তের ডাকে সাড়াও দিয়েছিলেন মা। দেখা দিয়ে তার জীবন ধন্য করেছিলেন।

 

মা ভবতারিণী ছিলেন শ্রী রামকৃষ্ণর ভক্তির শেষ কথা। মায়ের পুজো করতেন নিজের মতো করে। কারুর কথা শুনতেন না।কখনো পূজাসন ছেড়ে মা-র কাছে গিয়ে তাঁর চিবুক ধরে আদর করছেন। নানা রকম পরিহাস করছেন। হাত ধরে নাচছেন।পূজা না করে ভোগ নিবেদন করে দিচ্ছেন কিংবা নিবেদিত ভোগ নিজহাতে দেবীকে খাওয়াতে যাচ্ছেন আবার কখনো নৈবেদ্যর খানিকটা নিজেই খেয়ে দেবীকে খাওয়াতে চেষ্টা করছেন। বৈষ্ণব দর্শনে এই অবস্থা কে বলে সখা ভাব। অর্থাৎ ভক্ত এবং ভগবানের মধ্যে তৈরী হয় এক প্রকার বন্ধুত্ব মুছে যায় সব রকম ভেদাভেদ।

 

পরবর্তীতে ঠাকুর তন্ত্র সাধনা করেছেন। ইসলাম এবং খিস্টান মতে সাধনা করেছেন। আবার তোতা পুরী মহারাজের সান্নিধ্যে এসে দীক্ষা ও নিয়েছেন। সব শেষে তিনি আবিষ্কার করেছেন যত মত ততো পথ। সব পথ গিয়ে সেই পরম শক্তিতে মিশেছে সেই শক্তি তার কাছে মা কালী স্বয়ং যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে মাতৃ রূপে। স্বয়ং মা সারদার মধ্যেও তিনি মা কালীকে দেখছেন তার পুজোও করছেন তিনি।আজ যারা ভক্তি মার্গের সাধক তাদের কাছে শ্রী রামকৃষ্ণ এবং তার মাতৃ

ভক্তি এক প্রকার আদর্শ স্বরূপ।

 

আবার এমনই এক ভক্ত এবং তার সাধনার কথা নিয়ে ফিরে আসবো আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।