ভক্তের ভগবান – শিব এবং নন্দী ভৃঙ্গী

18

ভক্তের ভগবান – শিব এবং নন্দী ভৃঙ্গী

 

পন্ডিতজি ভৃগুর শ্রী জাতক

 

দেবাদিদেব মহাদেবের অনেক বিখ্যাত এবং কুখ্যাত ভক্ত আছে তবে তার দুই ছায়া সঙ্গী

নন্দী ও ভৃঙ্গী তার মহানতম ভক্তদের অন্যতম

শিবের পাশে সর্বদা থাকেন এই দুজন প্রায় সব শিবমন্দিরের সামনে নন্দীর মূর্তিও থাকে। আজ শিবের এই দুই মহান ভক্ত সম্পর্কে লিখবো।

 

নন্দী ও ভৃঙ্গী কে নিয়ে পুরানে অনেক কথাই বলা আছে কূর্মপুরাণে নন্দী প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, মহাদেবের এই প্রধান অনুচরটি করালদর্শন, বামন, বিকটাকার, মুণ্ডিতমস্তক, ক্ষুদ্রবাহু ও মহাবল।পূর্বে নন্দী মহারাজ পৃথক দেবতা হিসেবেও পূজিত হতেন পরবর্তীতে তিনি শিবের বাহন হিসেবে স্থান পান। নন্দীর পিঠেই দেবাদিদেব বিরাজ করেন।

 

শিব মহাপুরাণ মতে, নন্দী শিলাদ মুনির পুত্র। শিলাদ ছিলেন ভগবান শিবের পরম ভক্ত এবং শিবের আশীর্বাদেই নন্দীর জন্ম হয়েছিলো এবং শিব স্বয়ং তাকে চিরঞ্জীবী হওয়ার বর দেন ও নিজের বাহন হিসেবে স্থান দেন|রামায়ণেও নন্দীর উল্লেখ পাওয়া যায় যেখানে অহংকারী রাবন কৈলাশ এসে নন্দীকে তার চেহারার জন্যে অপমান করেন ও বানর বলেন, নন্দী তাকে অভিশাপ দিয়েছিলো যে এক বানর তার পতন ডেকে আনবেন, পরে তাই হয়েছিলো। শিবের রূদ্র অবতার বজরংবলীর হাতেই রাবনের পতন হয়ে ছিলো।

 

নন্দীর ন্যায় ভৃঙ্গীও শিবের অনুচর। নন্দী যেমন হৃষ্টপুষ্ট, ভৃঙ্গী তেমনই রুগ্ন , কঙ্কালসার। ভৃঙ্গী আগে ছিলেন এক মুনি, শিবের উপাসক। তিনি শিবের সাথে পার্বতীর পুজোয় কিছুতেই রাজি নন। ক্রুদ্ধ পার্বতী অভিশাপ ভৃঙ্গী কে অভিশাপ দিলেন। সেই অভিশাপে ভৃঙ্গী কঙ্কালে পরিণত হলেন। দু’পায়ে আর দাঁড়াতে পারেন না তিনি, তখন শিবের আশীর্বাদে তাঁর তৃতীয় চরণের সৃষ্টি হল। কিন্তু তবু ভৃঙ্গী পার্বতীর পুজো করবেন না। তখন শিব তাঁকে নিজের অর্ধনারীশ্বর রূপ দেখালেন, যাতে তিনি বুঝতে পারেন যে পার্বতী শিবেরই অংশ। পরবর্তীতে তিনিও হয়ে উঠলেন শিবের অনুচর, একত্রে উচ্চারি হতে শুরু হয় নন্দী ও ভৃঙ্গীর নাম।

 

নন্দী এবং ভৃঙ্গীর নাম একত্রে উচ্চারিত হয় এবং শিবের সাথে তার এই দুই ভক্তও একত্রে পূজিত হন সর্বত্র। ভক্ত এবং ভগবান এক্ষেত্রে এক এবং অভিন্ন।

 

আবার পরের পর্বে ভক্ত এবং ভগবানের এমনই এক মেল বন্ধন এবং সেই সংক্রান্ত পৌরাণিক ঘটনা নিয়ে ফিরে আসবো।পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন।