Home Blog Page 112

দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ : কেদারনাথ

ইতিমধ্যে এর আগের পর্ব গুলিতে আমি তিনটি জ্যোতির্লিঙ্গর কথা লিখেছি অর্থাৎ সোমনাথ, বৈদ্যনাথ ও রামেশ্বরম|আজ বলবো আমার অন্যতম প্ৰিয় একটি তীর্থক্ষেত্র ও দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম কেদারনাথ এর কথা|তবে ধন্যবাদ জানাই আমার সব দর্শক, অনুরাগী ও পাঠক দের যাদের উৎসাহে ও সমর্থনে আমার প্রতিটি অনুষ্ঠান ও আধ্যাত্মিক লেখা এক অন্য মাত্রা পায়|আর কথা না বাড়িয়ে চলুন শুরু করি আজকের পর্ব “কেদারনাথ ” কথা দিচ্ছি ভালো লাগবেই আপনাদের|

উত্তরাখণ্ডের গাড়োয়াল জেলায়,হিমালয়ের পাদদেশে,কেদার পর্বতের নিচে সমুদ্রস্পৃষ্ট থেকে 3584 মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই কেদারনাথ মন্দির|মন্দিরের কিছু দুর দিয়ে বয়ে গেছে মন্দাকিনী নদী|পঞ্চ কেদারের অন্যতম এই প্রাচীন তীর্থের জন্ম লগ্নের রহস্য জানতে গেলে আমাদের পিছিয়ে যেতে হবে হাজার হাজার বছর আগে মহাভারতের সময় কালে|

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে জিতে ছিলো পান্ডবরা কিন্তু বহু স্বজন কে হত্যা করতে হয়েছিলো যুদ্ধ ক্ষেত্রে,যুদ্ধ শেষে সেই পাপ থেকে মুক্তি পেতে পান্ডবরা শিবের শরণাপন্ন হন কিন্তু শিব তাদের ক্ষমা করতে প্রস্তুত ছিলেন না তাই তিনি একটি ষাঁড় এর রূপ ধরে গা ঢাকা দেন |কিছুকাল অনুসন্ধান চালানোর পর পান্ডব রা তার স্বরূপ চিনতে পারেন ও ভীম বহু চেষ্টার পর ষাঁড়রুপি শিব কে ধরে ফেলেন তখন শিব বাধ্য হয়ে নিজ মূর্তিতে আবির্ভুত হন, এই আবির্ভাবের মুহূর্তে ষাঁড়রুপি শিবের শরীরের যে অংশ যেখানে অবস্থান করছিলো সেখানে একটি করে সৃষ্টি হয় যেমন মাথা পশুপতি নাথে, বাহু তুঙ্গ নাথে,মুখ রূদ্রনাথে,নাভি মধ্য মহেশ্বরে চুল জল্পেশ্বরে ও পৃষ্ঠদেশ কেদারনাথে|এই পাঁচ টি মন্দির কে একত্রে পঞ্চকেদার ও বলা হয় |

আধ্যাত্মিক তাৎপর্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দুদিক থেকেই কেদারনাথ অতি গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় এক তীৰ্থস্থান|মনে করা করা হয় শিব স্বয়ং বাস করেন এখানে, তার এটি অত্যন্ত প্ৰিয় স্থান|স্কন্দ পুরান অনুসারে কেদারনাথ এর এই পবিত্র স্থানেই শিব তার জটা থেকে মুক্ত করে ছিলো গঙ্গাকে|দেবাদিদেব এখানে পূজিত হন কেদার হিসেবে|প্রাচীন কালে এই অঞ্চলের নাম ছিলো কেদারখন্ড|

স্বাভাবিক ভাবেই আদি কেদারনাথ মন্দির প্রকৃতপক্ষে কবে নির্মাণ হয়েছিলো তার কোনো নিদ্দিষ্ট নথি নেই|মন্দির প্রাঙ্গনে আছে বিশালাকার নন্দীর মূর্তি, অভ্যন্তরে কৃষ্ণ ও স্বস্ত্রীক পঞ্চ পাণ্ডবের মূর্তি খোদাই করা আছে|ত্রিকোণাকৃতি জ্যোতির্লিঙ্গ টি রয়েছে মুলমন্দিরের এক বিশেষ গর্ভগৃহে|মনে করা হয় এক হাজার বছর আগে আদি শংকরাচার্য মন্দিরটির সংস্কার করেন ও বদ্রিনাথের পূজারী কে এনে কেদারে পূজার প্রচলন করেন|তার আগে কেদারনাথ এ কোনো নিদ্দিষ্ট পূজারী ছিলো না, পরে পাঁচ জন পূজারী নিয়োগ করা হয়, যে পরম্পরা আজও চলছে|

চারপাশে তুষার ঢাকা পর্বত মাঝ খানে কেদারনাথ মন্দির এক অপূর্ব অনুভূতি জাগায় মনে|একাধিক বার প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হয়েও আশ্চর্য ভাবে প্রতিবার রক্ষা পেয়েছে মুল মন্দিরটি|এক কালে অতি কষ্ট সাধ্য ছিলো এই মন্দির দর্শন কারন প্রতিকূল পরিবেশ ও দুর্গম পথ|তবুও সব বাধা বিপত্তি কাটিয়ে বাবার ভক্ত রা দলে দলে ছুটে আসতেন কেদারনাথ দর্শনে|আজও আসেন |কেদারনাথ ভারতের চারধাম তীর্থের মধ্যে অন্যতম|এই অঞ্চলের তীব্র শীতের ও প্রতিকূল পরিবেশের জন্য মন্দিরটি কেবল এপ্রিল মাসের শেষ থেকে কার্তিক পূর্ণিমা অবধি দর্শনার্থী দের জন্য খোলা থাকে। শীতকালে কেদারনাথ মন্দিরের মূর্তিগুলিকে ছয় মাসের জন্য উখিমঠে নিয়ে গিয়ে পূজা করা হয়|পরে আবার নিদ্দিষ্ট সময়ে মূর্তিগুলি কেদারনাথ মন্দিরে ফিরিয়ে আনা হয়|যুগ যুগ ধরে এই পরম্পরা চলে আসছে|

আজ এই বিশেষ জ্যোতির্লিঙ্গ কেদারনাথ নিয়ে এটুকুই,ফিরে আসবো পরের পর্বে, জ্যোতিষ সংক্রান্ত অনুষ্ঠান গুলি দেখতে থাকুন আর চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন উল্লেখিত নাম্বারে|অনলাইনে ও চেম্বারে দুভাবেই আমি আছি আপনাদের পাসে|ধন্যবাদ|ওঁম নমঃ শিবায়ঃ| 

শক্তি পীঠ : বিমলা

শক্তি পীঠ নিয়ে লেখালেখি আপনাদের বেশ ভালো লাগে তা আপনারা নানা ভাবে আমাকে জানিয়েছেন এবং আরো বেশি লিখতে উৎসাহিত করেছেন এজন্য আমি কৃতজ্ঞ|তবে আবার ব্যস্ত কর্ম জীবনে ফিরে আসার পর এবং নিয়মিত টিভির অনুষ্ঠানে হাজিরা দেয়া,ইউটিউব ও ফেসবুক লাইভ করা আর অনলাইন ও চেম্বারে ক্লাইন্ট দেখার পর লেখার জন্য সময়ের কিছুটা অভাব দেখা দিয়েছে|তবুও সময় পেলেই হাতে কলম তুলে নিই আপনাদের জন্য কারন এখনো অনেক গুলি শক্তি পীঠের কথা লেখা বাকি রয়েছে|আজ নিয়ে এসেছি শক্তি পীঠ বিমলা,আলোচনা করবো এই বিশেষ শক্তি পীঠ নিয়ে, বিস্তারিত ভাবে, সঙ্গে থাকুন|

উড়িষ্যা বা পুরীর কথা উঠলেই আমাদের মাথায় আসে প্রভু জগন্নাথের নাম, এমন বাঙালি কমই আছে যে একবার হলেও পুরী যায়নি, পুরীকে বলা হয় বাঙালির সেকেন্ড হোম|তবে অনেকেই হয়তো জানেন না বা সেই ভাবে লক্ষ্য করেন না যে এই পুরীর জগন্নাথ মন্দির প্রাঙ্গনেই বিরাজ করছে একটি অন্যতম শক্তি পীঠ দেবী বিমলার মন্দির|জগন্নাথ মন্দির চত্ত্বরের দক্ষিণ পশ্চিম কোনে অবস্থান করছে দেবী বিমলার ছোট্ট কিন্তু সুন্দর এই মন্দির টি|শাক্ত ও তান্ত্রিক দের কাছে এই দেবী ও তার মন্দির অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ|মনে করা হয় দেবী বিমলা প্রভু জগন্নাথের রক্ষাকতৃ|জগন্নাথ দেবের পূজার পূর্বে দেবী বিমলার পূজা হয় এবং জগন্নাথ দেবের প্রসাদ বিমলা দেবীকে নিবেদন করার পর তা মহাপ্রসাদ হিসেবে গণ্য হয়|

কালিকা পুরাণ গ্রন্থে তন্ত্র-সাধনার কেন্দ্র হিসেবে যে চারটি প্রধান পীঠের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলি ভারতের চার দিকে অবস্থিত। এর মধ্যে পশ্চিম দিকের পীঠটি হল বিমলা দেবী পুরান মতে এখানে দেবী সতীর পা পতিত হয়েছিলো|এই পীঠের ভৈরব স্বয়ং জগন্নাথ কারন এখানে জগন্নাথদেব ও শিব অভিন্ন|এছাড়াও হেবজ্র তন্ত্র, মহাপীঠ নির্ণয় তন্ত্র, বামন পুরান, মৎস পুরান ও দেবী ভাগবত পুরান ইত্যাদি গ্রন্থেও এই শক্তি পীঠের উল্লেখ আছে|তন্ত্রগ্রন্থ কুব্জিকাতন্ত্র মতে, বিমলা ৪২টি সিদ্ধপীঠের একটি| নামাষ্টোত্তরশত গ্রন্থেও পুরুষোত্তমের বিমলার নাম পাওয়া যায়|যদিও এই পীঠের স্বরূপ এবং দেবীর দেহের কোন অংশ এখানে পতিত হয়েছিলো তা নিয়ে পন্ডিত দের মধ্যে ও কিছু গ্রন্থের মধ্যে কিঞ্চিৎ মত পার্থক্য ও বিরোধিতা আছে তবে এই শক্তি পীঠের অস্তিত্ব ও গুরুত্ব সর্বত্র স্বীকৃত|শঙ্করাচার্য বিমলা দেবীকে প্রতিষ্ঠা করে গোবর্ধন মঠ স্থাপন করেছিলেন|

মনে করা হয় বিমলা দেবীর মন্দিরটি জগন্নাথদেবের মন্দিরের থেকেও প্রাচীন|স্থাপত্য শৈলী ও প্রাচীনত্বের দিক থেকে বলা যায় সোমবংশী রাজবংশের রাজা যযাতি কেশরী এই মন্দিরটি নির্মাণ করিয়েছিলেন পরে তা সংস্কার হয় নানা সময়ে|এক কালে শৈব্য ও তান্ত্রিক দের প্রভাব এখানে বেশি ছিলো এমনকি দেবী কে আমিষ ভোগ ও দেয়া হতো পরে তা বন্ধ হয়|যদিও বিশেষ বিশেষ তিথিতে এখনো দেবী বিমলা কে আমিষ ভোগ নিবেদন করা হয়|জগন্নাথের মিনারের পশ্চিম কোনে বেলে পাথর ও ল্যাটেরাইট নির্মিত পূর্ব মুখী মন্দির টি অবস্থিত |মন্দিরটি চারটি অংশে বিভক্ত, সভা কক্ষ,গর্ভ গৃহ,উৎসব কক্ষ ও ভোগ বিতরন কক্ষ |পাশেই রয়েছে রোহিনী কুন্ড|বর্তমানে মন্দিরের রক্ষনাবেক্ষন এর দায়িত্বে রয়েছে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া|

মন্দিরের কেন্দ্রীয় গর্ভগৃহে রাখা আছে দেবী বিমলার মূর্তিটি। দেবী এখানে চতুর্ভূজা। তাঁর তিন হাতে জপমালা,বরমুদ্রা ও অমৃতকুম্ভ। চতুর্থ হাতের বস্তুটি ঠিক কী, তা এখনো স্পষ্ট নয় | তবে দেবী দুর্গার যে মূর্তি আমরা সচরাচর দেখতে অভ্যস্থ, দেবী বিমলার মূর্তি আদৌ সে রকম নয়। শুধু দেবী পার্বতীর দুই সখি জয়া ও বিজয়াকে দেবী বিমলার দুই পাশে দেখা যায়। মূর্তির উচ্চতা ৪ ফুটের কিছু বেশি।বিমলা মন্দিরের বিমানটির উচ্চতা ৬০ ফুট|

প্রতি বছর আশ্বিন মাসে ষোলো দিন ধরে দুর্গাপূজা উদ্‌যাপিত হয়|নানান উৎসবের মধ্যে দুর্গাপূজা বিমলা মন্দিরের প্রধান উৎসব|দুর্গাপূজার শেষ দিন, অর্থাৎ বিজয়াদশমীতে পুরীর রাজা প্রথা মেনে বিমলাকে মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গা রূপে পূজা করেন|এই প্রথা চলে আসছে যুগ যুগ ধরে|

আজ শক্তি পীঠ বিমলা নিয়ে লেখা এখানেই শেষ করলাম|ফিরে আসছি শিগ্রই অন্য কোনো শক্তি পীঠের কথা নিয়ে, ততদিন চোখ রাখুন আমার ইউটিউব চ্যানেল ও টেলিভিশন এর অনুষ্ঠানে আর কেমন লাগছে জানাতে ভুলবেন না|জ্যোতিষ সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে আসতে চাইলে উল্লেখিত নাম্বারে যোগাযোগ করবেন নির্দ্বিধায়, আমি ছিলাম, আছি, থাকবো|আপনাদের সাথে, আপনাদের পাশে|ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন|

তারাপীঠ – তন্ত্র সাধনার প্রান কেন্দ্র

আজ আমি ব্যক্তিগত ভাবে বেশ আনন্দিত কারন দেশ জুড়ে করোনা আতঙ্ক ও লকডাউন এর জেরে দীর্ঘ 93 দিন পর অবশেষে আজ রথের দিন ভক্ত দের জন্য খুলে দেয়া হলো তারাপীঠ মন্দির|অবশ্যই থাকবে কিছু বাড়তি বিধি নিষেধ ও সতর্কতা|স্থগিত থাকবে মা তারা কে রথে চাপিয়ে পরিক্রমা,হবেনা মন্দির সংলগ্ন চাতালে সেই পরিচিত জনসমাগম আর স্পর্শ করা যাবেনা মায়ের বিগ্রহ|তবু অন্তরে শ্ৰদ্ধা থাকবে, ভক্তি থাকবে, থাকবে ভক্তদের প্রার্থনা ও সবার উপরে থাকবেন জাগ্রতা মা তারা ও তার মাহাত্ম যে মাহাত্মর ও আধ্যাত্মিক শক্তির সাক্ষী হয়েছি আমি নিজে ব্যক্তিগত ভাবে বহু বার,আমার দীর্ঘ বত্রিশ বছরের জ্যোতিষ জীবনে|সে আলোচনায় পরে আসছি আগে তারাপীঠ ও মা তারা সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও কাহিনী আপনাদের সামনে তুলে ধরা যাক|জানার চেষ্টা করা যাক তারাপীঠ ও তারাপীঠে অধিষ্টাত্রী দেবী আধ্যাত্মিক ও ধার্মীক তাৎপর্য|

তারাপীঠ সিদ্ধ পীঠ না কেবল মাত্র একটি জাগ্রত শক্তি পীঠ বা উপপীঠ এ নিয়ে বিতর্ক ও মতান্তর বহু যুগ ধরে চলে আসছে|কথিত আছে বশিষ্ট দেব সাধনা করতেন কামাখ্যায় কিন্তু কোনো কারনে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি কামাখ্যা ত্যাগ করেন ও বাংলার বীরভূমের এই বিশেষ স্থানে এসে পঞ্চমুন্ডীর আসন প্রতিষ্ঠা করে দেবী উগ্রতারার সাধনা শুরু করেন ও সিদ্ধি লাভ করেন|পরবর্তীতে ধীরে ধীরে এই স্থান মাহাত্ম লোক মুখে প্রচারিত হয় ও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে তারাপীঠ|

পরবর্তীতে আরেক মহাপুরুষের আবির্ভাব ঘটে এই মহা তীর্থে, তিনি সিদ্ধ পুরুষ বামা ক্ষেপা|বামা ক্ষেপাও তারাপীঠে পঞ্চমুন্ডীর আসনে বসে সিদ্ধি লাভ করেন ও দেবীর দর্শন লাভ করে ধন্য হন|সেই পরম্পরা চলেছে বহু যুগ ধরে একাধিক তান্ত্রিক সাধক ও মাতৃ সাধকের সাধনার প্রধান কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে তারাপীঠ|হয়ে উঠেছে দেশের আধ্যাত্মিক সাধনা ও বিশেষত তন্ত্র সাধনার অন্যতম প্রান কেন্দ্র|লাল মাটির দেশ বীরভূমে অবস্থিত তারাপীঠের পরিবেশ ও অতি মনোরম ও তন্ত্র সাধনার আদর্শ|রয়েছে মন্দির সংলগ্ন মহাশ্মশান ও অদূরেই অতি পবিত্র দ্বারকা নদী|

মাতারার মুল প্রস্তর নির্মিত মূর্তি টি রয়েছে একটি ধাতব মূর্তির অভ্যন্তরে|এই মূর্তিটি ভীষণা চতুর্ভূজা, মুণ্ডমালাধারিণী এবং লোলজিহ্বা মূর্তি। এলোকেশী দেবীর মস্তকে রয়েছে একটি রৌপ্যমুকুট |বহির্মূর্তিটি সাধারণট শাড়ি-জড়ানো অবস্থায় গাঁদা ফুলের মালায় ঢাকা অবস্থায় থাকে। মূর্তির মাথার উপরে থাক একটি রূপোর ছাতা|প্রতিকৃতি বিগ্রহের নিচে গোলাকার বেদীতে দুটি রূপোর পাদপদ্ম থাকে|যারা তারা পীঠ মন্দির ও দেবীকে দর্শন করেছেন তারা জানেন উত্তরমুখী আটচালা মন্দিরটি লাল ইঁটে নির্মিত এবং মন্দিরের চূড়ায় একটি তামার পতাকাসহ ত্রিশূল ত্তিনটি পদ্ম ভেদ করে উঠেছে|প্রাচীন কালে বণিক জয় দত্তের তৈরি করে দেওয়া তারামায়ের মন্দিরটি আজ আর নেই। বর্তমানের মন্দিরটি ১২২৫ বঙ্গাব্দে তৈরি করান মল্লারপুরের জগন্নাথ রায়|যারা বিশ্বাস করেন তারাপীঠ একটি সিদ্ধ পীঠ তারা মনে করেন দেবী সতীর চোখের ঊর্ধ্বনেত্রের মণি অর্থাৎ তারা পড়ায় দ্বারকা নদীর পুব পাড়ের চণ্ডীপুর আজ তারাপীঠ|

তন্ত্র সাধনায় তারাপীঠের গুরুত্ব অপরিসীম কারন
তন্ত্রে তারাকে বলা হয়েছে দ্বিতীয় মহাবিদ্যা|এই বিষয়ে আমি আগেই আলোচনা করেছি দশমহাবিদ্যা লেখনীর মাধ্যমে|তারাপীঠ শ্মশান তন্ত্র সাধনার এক উৎকৃষ্ট স্থান কারন এটি কোনো সাধারণ শ্মশান নয় এটি মহা শ্মশান এই মহাশ্মশানেই জীবন আর মৃত্যুর পটভূমি নিত্য রচনা করে চলেন দেবী তারা|প্রচলিত বিশ্বাস বলে তারাপীঠের মহাশ্মশানেও জ্যোতিরূপে বাস করেন দেবী|কিংবদন্তী অনুসারে দ্বারকা নদী মহাশক্তির উৎস। এই নদীজলে স্নান করলেই সিদ্ধিলাভের যোগ্যতা অর্জন করেন মানুষ। দূর হয় সব পাপ|আশ্চর্যজনক ভাবে এই নদী উত্তর মুখী|তারাপীঠের পঞ্চমুন্ডীর আসন ও জগৎ প্রসিদ্ধ এই পঞ্চমুণ্ডের আসন আলাদা। এখানে পাঁচটি মুণ্ড সাপের, ব্যাঙের, খরগোশের, শিয়ালের এবং মানুষের। এই আসনে বসেই বহু যুগ পূর্বে দেবীকে তুষ্ট করে তারাপীঠকে সিদ্ধপীঠে পরিণত করেছিলেন ঋষি বশিষ্ঠ পরবর্তীতে বামা ক্ষেপা|

আমি নিজে আমার জ্যোতিষ ও তন্ত্র সংক্রান্ত কাজে বহুবার গিয়েছি তারাপীঠ চেষ্টা করেছি জ্যোতিষ ও তন্ত্র মতে বিশেষ ক্রিয়ার মাধ্যমে ক্লাইন্ট দের মনোস্কামনা পূর্ন করতে ও তাদের জীবনের যাবতীয় সমস্যার সমাধান করে সুস্থ স্বাভাবিক ও সুন্দর জীবনে ফিরিয়ে দিতে|একবারও নিরাশ হইনি, মাতারা এক বারো শূন্য হাতে ফেরাননি|এই বিশ্বাস ও পরম্পরা বজায় রাখবো আজীবন|আপনাদেরও যদি অন্তরে শ্রদ্ধা ও মা তারার প্রতি আস্থা থাকে জীবনের যেকোনো জটিল সমস্যার সমাধানের জন্য অবশ্যই যোগাযোগ করুন আমার সাথে,প্রতিবারের মতো আমি থাকবো আপনাদের পাশে|মা তারার আশীর্বাদে শুভ দিন আসবেই, দুর হবে সব সমস্য|জয় মা তারা|ধন্যবাদ|

শক্তি পীঠ – যোগ্যদা

রথযাত্রা, গ্রহন, অম্বুবাচী এই সব নিয়ে গত সপ্তাহটা পেশাগত ভাবে বেশ ব্যস্ততার মধ্যে কাটলো|নতুন পুরানো মিলিয়ে বহু ক্লাইন্টের অভাব অভিযোগ ও সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে কেটে গেলো কয়েকটা দিন,আর পেশাগত সাফল্যের সাথে জড়িয়ে থাকে এক তৃপ্তি ও মানিসক শান্তি যা আবার নতুন করে কাজে নামতে আরো বেশি পরিশ্রম করতে উৎসাহ যোগায়|এসবের পাশাপাশি টিভির ও ইউটিউবের অনুষ্ঠানের কাজও চলছে পুরোদমে তারমধ্যেই আপনাদের সামনে নিয়ে এসেছিলাম রথ যাত্রা তারাপীঠ নিয়ে কয়েকটি বিশেষ লেখা|আপনাদের তা বেশ ভালো লেগেছে জেনে আমি অত্যান্ত আনন্দিত ও উৎসাহিত|কয়েকদিনের বিরতির পর আজ আবার আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি শক্তিপীঠ পর্ব গুলির একটি বিশেষ পর্ব নিয়ে আজ বলবো এই বাংলারই পূর্ব বর্ধমানে অবস্থিত অত্যান্ত জাগ্রত শক্তি পীঠ দেবী যোগ্যদার কথা|জানবো তাকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হওয়া বেশ কিছু কিংবদন্তী ও রহস্যময় কাহিনী|জানবো দেবী যোগ্যদার আধ্যাত্মিক ও ধার্মিক তাৎপর্য|

পুরানে বর্ণিত একান্ন সিদ্ধ সতীপীঠের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পীঠ হল বর্ধমানের এই ক্ষীরগ্রামে অবস্থিত দেবী যোগ্যদার মন্দির|বাংলার শক্তি পীঠ গুলির মধ্যে এই পীঠটি অন্যতম|পীঠ নির্নয় তন্ত্র মতে দেবী সতীর ডান পায়ের একটি আঙ্গুল পতিত হয়েছিলো এই স্থানে|একটি প্রচলিত কিংবদন্তী অনুসারে এই দেবীকে প্রতিষ্ঠিত করে ছিলেন স্বয়ং বীর হনুমান, এবং তিনি স্বয়ং পুরাকালে দেবীকে দর্শন করতে ও তার পূজা করতে আসতেন|এই দেবী যোগ্যদা বর্তমানে ক্ষীর গ্রামের অধিষ্টাত্রী কুলদেবী|এলাকায় অন্যান্য লৌকিক দেবদেবীর মন্দির ও পূজার প্রচলন থাকলেও দেবী যোগ্যদাকে এখানে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়|সংরক্ষিত একটি প্রাচীন ধার্মীক পুঁথি থেকে দেবী যোগ্যতা সম্পর্কে বলা হয়েছে

“বাম স্কন্ধে লক্ষণ নিল,
দক্ষিণ স্কন্ধে রাম,
মাথায় প্রতিমা করে চলে হনুমান ।
শ্রীরাম বলি হুংকার ছাড়িলো হনুমান ।ক্ষীরগ্রাম মধ্যে হনু দিলা দরশন।”

শোনা যায় এক কালে পার্শবর্তী অঞ্চলে বলি প্রথা প্রচলন থাকলেও বৈষ্ণব প্রভাবের ফলে যোগ্যদা দেবীর কাছে পশু বলি হয়না|অবশ্য এ নিয়ে একটি রোমাঞ্চকর অলৌকিক কাহিনীও প্রচলিত আছে এই এলাকায়|প্রাচীন কালে স্থানীয় রাজা দেবীকে প্রতিষ্ঠা করে প্রতিশ্রুতি দিলেন যে তিনি দেবী প্রতিদিন বলি দেবেন, কথামতো রাজা রাজ্যে পালার ব্যবস্থা করলেন, বলি শুরু হলো, প্রতিদিন একটি করে বলি|এইভাবে একটি ব্রাহ্মণের ঘরে এল পালা|প্রান ভয়ে আগের দিন ব্রাহ্মণ গ্রাম ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করলেন এবং এক অলৌকিক ঘটনা ঘটলো, ব্রাহ্মণ কে বাধা দিলেন ব্রাহ্মনী বেশি দেবী । ব্রাহ্মণ কে অভয় দিয়ে দেবী বললেন, ” আমি সেই যোগ্যদা ।আর আমি মানুষের রক্ত খাই না ।খাবোনা। রাজা নিজের মত চাপিয়ে দিয়েছে তোমাদের ওপর। তুমি ঘরে ফিরে যাও” এরপর দেবী যোগ্যতা তখন দশভুজা মূর্তি ধারণ করে ব্রাহ্মণ কে দেখা দিলেন|সেই থেকে ক্ষীর গ্রামের দেবী যোগ্যতার উদ্দেশ্য বলি বন্ধ হয়|

গোটা অঞ্চলে একাধিক স্থানে দেবী যোগ্যতার পূজা হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে|মূলত তন্ত্র মতেই দেবীর পূজা হয়|দেবী দুর্গার স্বরূপ আবার ভদ্রকালী হিসেবেও তার পূজা হয় |একটি অতি প্রাচীন পাথর খন্ডের উপর চিত্রিত দেবীকে মূলত পূজা করা হয় বিশেষ বিশেষ তিথীতে|দেবীর একটি প্রতিরূপকে প্রয়োজনে জনসমক্ষে আনা হয়|ক্ষীর গ্রামের দেবী যোগ্যতা কে নিয়ে আরো একটি রহস্যময় প্রথা প্রচলিত আছে,দেবীর মুল বিগ্রহ টি একটি পুকুরে ডুবিয়ে রাখা হয় ও পূজার সময় জল থেকে তুলে এনে তা পূজা করা হয় এবং পূজা হয় মধ্যরাতে|অত্যান্ত গোপনীয়তার সাথে এই পক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়|

বাংলা এবং দেশ বিদেশে নানা স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শক্তিপীঠ গুলির তাৎপর্য ব্যাখ্যা, অজানা কথা ও রোমাঞ্চকর বহু ঘটনা সহজ সরল ভাবে আপনাদের সামনে তুলে ধরতে যে বিশেষ শক্তি পীঠ সিরিজ শুরু করেছি তা আগামী দিনেও চলতে থাকবে আর থাকবে আমার জ্যোতিষ ও তন্ত্র সাধনা নিয়ে আপনাদের পাশে থাকা, যেমনটা থেকেছি এতো বছর ধরে|পড়তে থাকুন আমার লেখা, দেখতে থাকুন আমার অনুষ্ঠান ও যেকোনো সমস্যা ও পরামর্শর জন্য যোগাযোগ করুন আমার নাম্বারে|ভালো থাকুন |ধন্যবাদ| 

দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ – কাশী বিশ্বনাথ

মাত্র তিনটি দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ নিয়ে লিখে এই বিশেষ ধারাবাহিক লেখনী থেকে সাময়িক বিরতি নিতে হয়েছিলো,এর কারন কিছুটা আমার পেশাগত ব্যস্ততা ও অবশ্যই কিছুটা দায়ী একের পর এক ধার্মীক উৎসব যেমন অম্বুবাচী রথযাত্রা ইত্যাদি,প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিশেষ পর্বের লেখা নিয়ে হাজির হয়েছি আপনাদের সামনে তাছাড়া আপনাদের সমস্যা সমাধান ও জ্যোতিষ পরামর্শ তো রয়েছেই|পাশাপাশি ইউটিউব ও টিভির অনুষ্ঠানেও অনেকটা সময় ব্যয় করতে হচ্ছে|যাই হোক এতো পরিশ্রম ও কর্মকাণ্ডের পর এটা ভেবে ভালো লাগে যে আপনাদের ভালো লাগছে,আমার পেশা ও আধ্যাত্মিক পড়াশোনা দুটো নিয়েই আপনাদের পাশে থাকতে পারছি এ আমার পরম পাওয়া|আজ আর কথা না বাড়িয়ে শুরু করি আমার দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ পর্বের চতুর্থ পর্ব, আজ লিখবো কাশী বিশ্বনাথ নিয়ে|

ভারতের উত্তর প্রদেশের বারাণসী তে গঙ্গার পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত “কাশী বিশ্বনাথ ” দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম|বারাণসীর অপর নাম কাশী তাই এই মন্দির কে কাশী বিশ্বনাথ বলা হয়|শিব এখানে বিশ্বনাথ বা বিশ্বেস্বর রূপে প্রতিষ্ঠিত|
মন্দির ও শিব লিঙ্গ এখানে কবে থেকে প্রতিষ্ঠিত তা সঠিক ভাবে বলা যায়না|স্কন্দ পুরাণেও এই জ্যোতির্লিঙ্গের উল্লেখ আছে|কথিত আছে, সতীর দেহত্যাগের পর শিব মণিকর্ণিকা ঘাট দিয়ে কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরে এসেছিলেন|বিশ্বাস করা হয় শিব স্বয়ং এখানে বাস করতেন|এই মন্দির ও শিব লিঙ্গ নিয়ে যুগ যুগ ধরে চলে আসছে অসংখ্য প্রচলিত কিংবদন্তী যা প্রতিটি শিব ভক্তের কাছে ধ্রুব সত্য|এই মন্দিরের ইতিহাসও বৈচিত্রময় ও বর্ণময়|বহু ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী কাশী বিশ্বনাথ মন্দির|

অতীতে বিশেষত মুসলিম শাসন কালে বহুবার ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে এই মন্দির এবং পুনরায় নতুন করে সৃষ্টিও হয়েছে|পুরাকাল থেকে এই মন্দিরের অস্তিত্ব থাকলেও একাদশ শতাব্দীতে হরি চন্দ্র মন্দিরটি পুনর্নির্মাণ করেছিলেন|তারপর পর্যায়ক্রমে মোহাম্মদ ঘোরী,কুতুবুদ্দিন আইবক, ফিরোজ শাহ তুঘলক ও ঔরংযেব মন্দির টি ধ্বংস করেন|প্রতিবারই অবশ্যই পুনরায় মাথা তুলে দাঁড়ায় কাশী বিশ্বনাথ মন্দির|বর্তমান সময়ে যে মন্দিরটি রয়েছে তা ১৭৮০ সালে ইন্দোরের মহারানি অহিল্যা বাই হোলকর তৈরি করে দিয়েছিলেন|পরবর্তীকালে ১৮৩৫ সালে পাঞ্জাবের শিখ সম্রাট রঞ্জিত সিংহমন্দিরের চূড়াটি ১০০০ কিলোগ্রাম সোনা দিয়ে মুড়ে দেন|বর্তমান মন্দিরটির উচ্চতা 15.5 মিটার এবং চুড়োটি সোনায় মোড়ানো বলে অনেকে এই মন্দির কে স্বর্ন মন্দিরও বলেন|

প্রধান মন্দিরের মধ্যে একটি ৬০ সেন্টিমিটার উঁচু ও ৯০ সেন্টিমিটার পরিধির শিবলিঙ্গ রুপোর বেদির উপর স্থাপিত।মুল মন্দিরের আশেপাশে আরো অনেক গুলি ছোটো মন্দির অবস্থিত|অঞ্চলটি স্থানীয় দের কাছে বিশ্বনাথ গলি নামে খ্যাত|এই মন্দির গুলির মধ্যে কালভৈরব, দণ্ডপাণি, অবিমুক্তেশ্বর, বিষ্ণু, বিনায়ক, শনীশ্বর, বিরূপাক্ষ অন্যতম|

মুল মন্দির প্রাঙ্গনে একটি প্রাচীন কূপ লখ্য করা যায়, কথিত আছে অতীতে একবার শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে মন্দিরের পুরোহিত শিব লিঙ্গ নিয়ে ওই কূপে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন|

সনাতন ধর্মে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলির মধ্যে একদম প্রথম সারিতে রয়েছে বারাণসী বা কাশী আর এই প্রাচীন ধর্মীয় নগরীর ধর্মচর্চার প্রানকেন্দ্র হচ্ছে কাশী বিশ্বনাথ মন্দির|হিন্দু ধর্মে মনে করা হয় একবার গঙ্গায় স্নান করে কাশী বিশ্বনাথ দর্শন করলে সব পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ও মোক্ষ লাভ হয়|আদি শঙ্করাচার্য থেকে আধুনিক সময়ের স্বামী বিবেকানন্দ সকলেই এই জ্যোতির্লিঙ্গ দর্শন করে পুন্য সঞ্চয় করেছেন|

আজ এই বিশেষ জ্যোতির্লিঙ্গ নিয়ে এই পর্ব এখানেই শেষ করছি ফিরবো পরের পর্বে এক নতুন জ্যোতির্লিঙ্গের কথা নিয়ে|আপনাদের জানিয়ে রাখি আগামী কাল থেকে শুরু করছি একটি বিশেষ ধারাবাহিক লেখা, দক্ষিনেশ্বর মন্দির ও তার ইতিহাস নিয়ে, থাকবে অনেক গল্প অনেক জানা অজানা কথা|অবশই পড়বেন আর জানাবেন কেমন লাগে|আমার নাম্বার আশা করি আছে আপনাদের কাছে, না থাকলে নিয়ে রাখতে পারেন আর যোগাযোগ করতে পারেন, যেকোনো জ্যোতিষ সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান ও পরামর্শ নিয়ে আমি আছি আপনাদের পাশে|ভালো থাকবেন|ধন্যবাদ|

দক্ষিনেশ্বর – মন্দিরের ইতিহাস

আগেই কথা দিয়েছিলাম একটি বিশেষ ধারাবাহিক লেখনীর সূচনা করবো আজ যা হবে দক্ষিনেশ্বর মন্দির নিয়ে|কথা রাখতে আজ শুরু করছি এই বিশেষ লেখা থাকবে মন্দির সংক্রান্ত প্রাচীন ইতিহাস, মন্দিরের সাথে জড়িত অসংখ্য গল্প প্রচলিত কিংবদন্তি|আলোচনা করবো ঠাকুর রামকৃষ্ণ, রানী রাসমণি, তোতাপুরী মহারাজ, বিবেকানন্দ ও ভগিনী নিবেদিতা কে নিয়ে|কারন এই বিখ্যাত ব্যক্তিত্বরা ও তাদের জীবন নানা ভাবে জড়িয়ে আছে এই বিশেষ তীৰ্থ ক্ষেত্রর সাথে তাই তাদের বাদ দিয়ে আলোচনা সম্ভব নয়|তবে এই বিস্তৃত আলোচনা মাত্র একটি পর্বে সম্ভব নয় কারন পেশা গত ব্যস্ততা ইদানিং কিছুটা বেড়েছে|টিভির অনুষ্ঠান, ইউটিউব এর অনুষ্ঠান সামলে অনলাইন ও চেম্বারে জ্যোতিষ চর্চা করে যেটুকু সময় পাবো লিখবো আপনাদের জন্য|মোট পাঁচটি পর্বে দক্ষিনেশ্বর নিয়ে আলোচনা করবো| আজ প্রথম পর্ব|

দক্ষিনেশ্বর সম্পর্কে জানতে হলে এই মন্দিরের রূপকার রানী রাসমণি সম্পর্কে আগে জেনে নেয়া ভালো|১৭৯৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর অধুনা উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার হালিশহরের কোনা গ্রামে এক দরিদ্র কৃষিজীবী পরিবারে রাণী রাসমণির জন্ম হয়|মাত্র এগারো বছর বয়সে কলকাতার জানবাজারের ধনী জমিদার বাবু রাজচন্দ্র দাসের সঙ্গে তার বিবাহ হয়। তাদের চার কন্যা- পদ্মমনি,কুমারী,করুণাময়ী, জগদম্বা।পদ্মমণির স্বামী রামচন্দ্র দাশ, কুমারীর স্বামী প্যারিমোহন চৌধুরী,করুণার বিয়ে হয় মথুরবাবুর সাথে|১৮৩৬ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর রাসমণি দেবী স্বহস্তে তার জমিদারির ভার তুলে নেন এবং অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তা পরিচালনা করতে থাকেন|তিনি ছিলেন এক দানশীলা, কর্তব্যপরায়ণা ও ধার্মীক মহিলা|প্রজাকল্যানে ও ধর্মে কর্মে তিনি মুক্ত হস্তে বহু অর্থ ব্যয় করেছিলেন|তার অনন্য সাধারণ সৃষ্টি কর্ম গুলির মধ্যে অন্যতম অবশই দক্ষিনেশ্বর মন্দির|

হিন্দুদের কাছে অত্যান্ত পবিত্র ও জনপ্রিয় এই মন্দির তৈরির পেছনেও একটি ইতিহাস আছে|
সাল 1847 কলকতার জানবাজারের রানী রাসমণি কাশী যাবেন স্থির করলেন তীৰ্থ করার উদ্দেশ্যে|সঙ্গে যাবে অনেক গুলি নৌকা, দাস দাসী, আত্মীয় স্বজন|সব কিছুই প্রায় তৈরি কিন্তু মা কালীর ইচ্ছের উপর তো আর কেউ নন|যাত্রার আগের রাতেই ঘটলো এক অলৌকিক ঘটনা|রানীমাকে দেবী স্বপ্নাদেশ দিলেন যে তিনি যেনো গঙ্গার তীরে তার একটি মন্দির নির্মাণ করেন ও তাকে প্রতিষ্ঠিত করেন|স্থগিত রইলো যাত্রা|খোঁজ শুরু হলো গঙ্গার তীরে একটি আদর্শ স্থান তা পাওয়াও গেলো|এক ইংরেজ সাহেবের কাছ থেকে গঙ্গার তীরে একটি কুড়ি একরের জায়গা কিনে নেন রানীমা|শুরু হয় মন্দির তৈরির কাজ|

1847 সালে শুরু হয়ে মন্দির নির্মাণ শেষ হয় 1855 সালে|খরচ পড়েছিলো আনুমানিক প্রায় দশ লক্ষ টাকা|মন্দিরের উচ্চতা হয় একশো ফুটের বেশি|গৰ্ভ গৃহে সুদৃশ্য রুপোর পদ্মের উপর প্রতিষ্ঠিতা হন দেবী ভবতারিণী|তার চরন তলে বাবা মহাদেব|যা আজও দর্শন করতে আসেন হাজার হাজার ভক্ত দেশ বিদেশ থেকে|

মন্দির প্রতিষ্ঠা হলেও পুজো শুরুর আগে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় রানী রাসমণি কে কারন তিনি অব্রাহ্মন ছিলেন ব্রাহ্মণ পূজারী রা তাই জাত পাতের কথা তুলে শুরুতে পুজো করতে অস্বীকার করেন|অবশেষে পুজো করতে রাজি হলেন রামকুমার চট্টোপাধ্যায়|তিনি সঙ্গে নিয়ে এলেন তার ছোটো ভাই গদাধর চট্টোপাধ্যায় কে|এই ভাবে প্রথম মন্দিরে প্রবেশ করলেন ঠাকুর রামকৃষ্ণ যিনি পরবর্তীতে হয়ে উঠলেন প্রেমের ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংস|

আজ প্রথম পর্বে এটুকুই দক্ষিনেশ্বর নিয়ে এখনো অনেক কথা বলার আছে, অনেক কিছু জানার আছে জানবো সে সব কিছু আগামী পর্ব গুলিতে|পড়তে থাকুন, সঙ্গে থাকুন আর অবশ্যই যোগাযোগ রাখুন জ্যোতিষ ও তন্ত্র সংক্রান্ত কাজের জন্য|আপনাদের পন্ডিতজি সর্বদা আপনাদের পাশে আছে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ

শক্তি পীঠ – উজানী

শক্তি পীঠ নিয়ে লিখতে বসা মানে এক অনন্য সাধারণ আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা|আর সব থেকে ভালো লাগে এই অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে ভাগ করে নিতে পেরে|এর আগের পর্ব গুলিতে আমি দেশ বিদেশের কিছু শক্তি পীঠের কথা বলেছি কিন্তু এখনো এই বাংলার সবগুলো শক্তি পীঠের কথাই শেষ করা হয়নি তাই বিগত কয়েকটি পর্ব ধরে বাংলার শক্তি পীঠ গুলিকে আপনাদের সামনে নিয়ে আসছি,জানাচ্ছি সেই পীঠগুলি সম্পর্কে নানা গল্প ও পৌরাণিক ঘটনা|আজও এই পরম্পরাকে কিছুটা এগিয়ে নিয়ে যাবো|আজ বলবো বাংলার অন্যতম একটি শক্তি পীঠ উজানীর কথা|

পীঠনির্ণয় তন্ত্রে বলা হয়েছে –

“উজ্জয়িন্যাং কূর্পারশ্চ মাঙ্গল্য কপিলাম্বর।
ভৈরবঃ সিদ্ধিদঃ সাক্ষাদ্দেবী মঙ্গলচণ্ডিকা।।”

অর্থাৎ, উজ্জয়িনীতে কূর্পার অর্থাৎ কনুই পতিত হয়েছিল। দেবী মঙ্গলচণ্ডিকা ও ভৈরব কপিলাম্বর।

এই পীঠ নির্ণয়তন্ত্র ছাড়াও শিবচরিত গ্রন্থে উজানীর উল্লেখ আছে|জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাসের বাঙ্গালা ভাষার অভিধানে পীঠস্থানের তালিকায় ২৭ নম্বরে রয়েছে উজানীকে|কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম ১৬শ শতাব্দীতে রচিত চণ্ডীমঙ্গল কাব্যে মঙ্গলচণ্ডীর বন্দনা করেছেন|এই মঙ্গল চন্ডী উজানীর উজানীর অধিষ্টাত্রী দেবী|

পশ্চিম বর্ধমানের মঙ্গলকোটের কোগ্রামে, অজয় নদীর তীরে উজানী শক্তি পীঠের অবস্থান|গুসকরা থেকে কোগ্রামের দূরত্ব ২১ কিলোমিটারের কিছু বেশি, গাড়িতে সময় লাগে মিনিট চল্লিশেক|

এই পীঠের মুল মন্দির ও গর্ভগৃহ বহু প্রাচীন|কবে কখন ও কে তা নির্মাণ করিয়েছিলেন তা স্পষ্ট করে বলা দুস্কর|বর্তমানে মন্দিরের কিছু অংশ নতুন করে নির্মাণ করানো হয় বা সংস্কার হয়|মুল ও প্রাচীন মন্দির টি দালান রীতির, দালান টি দাঁড়িয়ে রয়েছে বড়ো বড়ো থামের উপর|অভ্যন্তরে রয়েছে আয়াতকার গৰ্ভ গৃহ|এই গর্ভগৃহের মধ্যে একটি পিতলের দোতলা সিংহাসন রয়েছে তাতে মা সর্বমঙ্গলা বা মঙ্গলচণ্ডীর ছোটো কালো পাথরের দশভূজা সিংহবাহিনী মূর্তি|দেবীমূর্তির বাঁদিকে কিছুটা দূরে ফুট তিনেক উঁচু কালো রঙের পাথরের একটি শিবলিঙ্গ, ইনিই দেবীর ভৈরব কপিলাম্বর|এছাড়াও রয়েছে একটি অতি প্রাচীন পাথরের বুদ্ধ মূর্তি|

মনে করা হয় এক কালে এই স্থান ছিলো বৌদ্ধ তান্ত্রিকদের অবাধ বিচরন ভূমি|মঙ্গলকোটের দেবী হিসাবেই দেবীর নাম এখানে মঙ্গলচন্ডী|

মন্দির খোলা থাকার সময় সকাল ৬টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত এবং স্বাভাবিক ভাবেই প্রতি শনি ও মঙ্গলবার এখানে বহু দর্শনার্থী আসেন ও পূজা দেন এখানে শিবরাত্রি,দুর্গাপূজা,নবরাত্রি,দীপাবলি ও কালী পূজা প্রতি বছর মহাসমারোহে পালিত হয়|

কতোই না রহস্য লুকিয়ে আছে দেশের নানা প্রান্তে অবস্থিত এই শক্তি পীঠ গুলি কে কেন্দ্র করে রয়েছে কতো গল্প, কতো পৌরাণিক ব্যাখ্যা আর কতটুকুই বা জানি আমরা|তবে জানতে হবে|আমি জানাবো আপনাদের,এইভাবে, পর্বে পর্বে|আপনারা যারা জ্যোতিষ ও তন্ত্র সংক্রান্ত কাজের জন্য আমার সাথে যোগাযোগ করছেন তাদের জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ তবে তার পাশাপাশি এই আধ্যাত্মিক লেখা ও ইউটিউব এর অনুষ্ঠান আপনাদের কেমন লাগছে সেটাও জানাতে ভুলবেন না|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

শ্রাবনী অমাবস্যা ও কালসর্প দোষ

বৈদিক জ্যোতিষ শাস্ত্র গণিত,আধ্যাত্মিকতা ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের এক অপূর্ব সংমিশ্রনে সৃষ্টি যা মানুষের জীবনের উপর গ্রহ নক্ষত্রর প্রভাব নির্নয় করে|স্বাভাবিক ভাবেই গ্রহ নক্ষত্রর অবস্থান ও মহাজাগতিক কিছু ঘটনা জ্যোতিষ শাস্ত্রের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত|তেমনি দুটি তিথি বা গ্রহগত অবস্থান হলো অমাবস্যা ও পূর্ণিমা|সামনেই শ্রাবনী অমাবস্যা যা একটি বিশেষ কারনে জ্যোতিষ শাস্ত্রে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে|সে বিষয়ে পরে আসছি আগে এই অমাবস্যা ও পূর্ণিমা ব্যাপার টা একটু সহজ করে বুঝে নেয়া যাক|

পূর্ণিমা চন্দ্রের একটি কলা। এটি তখনই ঘটে যখন চাঁদ, পৃথিবীর যে পাশে সূর্য অবস্থিত তার ঠিক উল্টো পাশে অবস্থান করে|এর ফলে আমরা পূর্ণালোকিত চন্দ্র কে দর্শন করি|
আর অমাবস্যা হচ্ছে চন্দ্রকলার প্রথম ধাপ। এটি মূলত সেই সময় যখন চাঁদ ও সূর্য একই বরাবর থাকে। ফলে, পৃথিবী থেকে চাঁদকে তার কক্ষপথে দেখা যায় না|এই দুটি তিথির বিশেষ গুরুত্ব আছে আমাদের তন্ত্র ও জ্যোতিষ শাস্ত্রে|

শ্রাবন মাস চলছে, এই শ্রাবন মাসের অমাবস্যা কে বলা হয় শ্রাবনী অমাবস্যা|দেশের অনেক স্থানে এই অমাবস্যা কে হরিয়ালি অমাবস্যাও বলা হয়|আগামী 19 এ জুলাই অর্থাৎ রবিবার রাত 11:29 থেকে শুরু হবে শ্রাবনী অমাবস্যা|চলবে পরদিন অর্থাৎ সোমবার বার 20 এ জুলাই রাত 10:56 অবধি |এই শ্রাবনী অমাবস্যা বা হরিয়ালি অমাবস্যা দুটি কারনে জ্যোতিষ শাস্ত্রে বা আধ্যাত্মিক দৃষ্টি ভঙ্গী থেকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ, প্রথমত এ দিন শ্রাদ্ধ ও তর্পনের মাধ্যমে পিতৃ দোষ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, দ্বিতীয়ত এই তিথীতে বিশেষ পূজা ও যজ্ঞর মাধ্যমে কাল সর্প দোষ খণ্ডন করা হয়|এবার আসুন কি এই কালসর্প দোষ আর কেনোই বা তা খণ্ডন প্রয়োজন|

কোনও ব্যক্তির জন্মকুণ্ডলিতে রাহু ও কেতুর অবস্থান বিন্দু দু’টির মাঝখানে যদি বাকি গ্রহগুলি আটকে পড়ে, তাঁর কালসর্পযোগ ঘটেছে ধরে নিতে হবে|জ্যোতিষ শাস্ত্রে কালসর্প যোগকে ভয়াবহ বলে বর্ণনা করা হয়েছে|এই দোষে দুষ্ট জাতক জাতিকারা জীবনে পদে পদে নানান বাঁধা ও প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হন|সাফল্য আসতে চায়না সহজে|এমনকি কুন্ডলি তে কোনো ভালো যোগ থাকলে তার শুভ ফল পাওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে|

রাহু ও কেতুর অবস্থান অনুসারে মোট বারো রকমের কালসর্প দোষ রয়েছে জ্যোতিষ শাস্ত্রে|এগুলি হলো – অনন্ত কাল সর্প দোষ, কুলিক কালসর্প দোষ,বাসুকি কালসর্প দোষ,শঙ্খপাল কালসর্প দোষ,পদ্ম কালসর্প দোষ,মহাপদ্ম কালসর্প দোষ,তক্ষক কালসর্প দোষ,কর্কটক কালসর্প দোষ,শঙ্খচূড় কালসর্প দোষ,ঘটক কালসর্প দোষ,বিষধর কালসর্প দোষ এবং শেষনাগ কালসর্প দোষ|এদের প্রতিটির প্রভাব অশুভ এবং জীবনের ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিকূলতার সৃষ্টি করে|

সমস্যা যেমন আছে তার সমাধান ও আছে প্রয়োজন শুধু সঠিক জ্যোতিষ পরামর্শ ও প্রতিকার বিধান আর অবশ্যই উপযুক্ত তিথি মেনে তা করলে জীবনের সব বাঁধা কে অতিক্রম করে সাফল্য আসতে বাধ্য|কালসর্প হোক বা অন্য কোনো দোষ, ভয় পাবেননা|আসন্ন শ্রাবনী অমাবস্যা কে কাজে লাগান|আর কিভাবে তা সম্ভব তাবলে দেয়ার জন্য আমি আছি আমার তিন দশকের বেশি জ্যোতিষ চর্চার অভিজ্ঞতা নিয়ে|আর দেরি করবেন না, হাতে সময় খুব কম|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

হৃদয়েশ্বরী মা সর্বমঙ্গলা মন্দির উদ্বোধন ও প্রান প্রতিষ্ঠা

শ্রাবনী অমাবস্যার এই পবিত্র তিথীতে যে আধ্যাত্মিক কর্ম কান্ড আমি শুরু করতে চলেছি তা নিয়ে ব্যস্ততা তুঙ্গে|মা সর্বমঙ্গলার আশীর্বাদে আজ মন্দির প্রতিষ্ঠা ও শাস্ত্র মতে দেবীর প্রান প্রতিষ্ঠার কাজ সম্পন্ন হবে|বিগত পর্বে আমি এই মন্দির প্রতিষ্ঠার কারন ও আগামী দিনের পরিকল্পনা আপনাদের সাথে ভাগ করেনিয়েছিলাম|আজ দেবী সর্বমঙ্গলা সম্পর্কে বিশদে জানাবো|জানবো তার স্বরূপ ও মর্তে তার পূজার প্রচলন নিয়ে এক অলৌকিক ঘটনা|

আপনারা হয়তো জানেন যে প্রাচীনতম ও সর্বাধিক জনপ্রিয় সর্ব মঙ্গলা মন্দির অবস্থিত বর্ধমানে|যাকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছে বেশ কিছু অলৌকিক লোককাহিনী বা কিংবদন্তী|কথিত আছে, প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে শহর বর্ধমানের উত্তরাংশে বাহির সর্বমঙ্গলা পাড়ায় বাগদিরা পুকুরে মাছ ধরতে গিয়ে একটি শিলামূর্তি পেয়েছিল। সেটিকে প্রস্তর খণ্ড ভেবে তার উপরে শামুক–গুগলি থেঁতো করতো। পরবর্তীতে বর্ধমান মহারাজা সঙ্গম রায় স্বপ্নাদেশ পেয়ে শিলামূর্তিটিকে নিয়ে এসে সর্বমঙ্গলা নামে পুজো শুরু করেন।যদিও এই নিয়ে কিঞ্চিৎ মতপার্থক্য রয়েছে| পরবর্তীকালে ১৭০২ সালে টেরাকোটার নিপুণ কারুকার্য খচিত সর্বমঙ্গলা মন্দির নির্মাণ করেন মহারাজাধিরাজ কীর্তিচাঁদ মহতাব|মন্দিরের তুলনায় দেবী মূর্তি বহু প্রাচীন|কারুর কারুর মতে দেবী মূর্তি হাজার বা দুহাজার বছরের পুরোনো|পরবর্তীতে শেষ যুবরাজ উদয়চাঁদ মহতাব ট্রাস্ট কমিটি গঠন করেন এবং প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের পরম্পরা আজও চলে আসছে একি নিষ্ঠা ও ভক্তির সাথে|

বর্ধমানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী দেবী সর্বমঙ্গলা মূলত বাংলার লৌকিক দেবতা হলেও অনেকেই
মন্দিরটিকে শক্তিপীঠ বলেন|সেই মতে এখানে দেবীর নাভি পরেছিল।দেবী সর্বমঙ্গলার ভৈরব এখানে মহাদেব|সর্বমঙ্গলা দেবীর মুল মূর্তিটি কষ্টি পাথরের অষ্টাদশভূজা সিংহবাহিনী ‘মহিষমর্দিনী’ মহালক্ষীরূপিণী|কষ্টি পাথরে নির্মিত হওয়ায় দেবী মূর্তি স্বাভাবিক ভাবেই ঘোর কৃষ্ণবর্ণের|তাছাড়া তিনি আদ্যা শক্তি মহামায়ার রূপ বিশেষ তাই করল বদনা হওয়াটাই স্বাভাবিক|

আমার গৃহমন্দিরে স্থাপিত হৃদয়েশ্বরী সর্বমঙ্গলার রূপ সৃষ্টির খেত্রে তার আদি ও প্রাচীনতম প্রচলিত রূপকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে|আগামী দিনে প্রতিটি বিশেষ ও গুরুত্বপূর্ণ তিথীতে থাকবে বিশেষ পূজা, যজ্ঞ ও প্রসাদ বিতরনের সু ব্যবস্থা|পাশাপাশি হোম যজ্ঞ ও পূজার মাধ্যমে গ্রহদোষ খণ্ডন হবে নিয়মিত|আর যতদিন না সশরীরে উপস্থিত হওয়া সম্ভব হচ্ছে ততদিন প্রযুক্তির ব্যবহারে আপনারা এই সব কিছুই স্বচক্ষে দর্শন করতে পারবেন|সাক্ষী থাকতে পারবেন নিজেদের গ্রহদোষ খণ্ডনের দিব্য মুহূর্তের|পারবেন অঞ্জলি দিতে ও মা সর্বমঙ্গলার আশীর্বাদ নিতে|আর সমস্ত প্রশ্নের উত্তর জানতে বা আরো বিশদে জানতে চোখ রাখুন আমার টিভির অনুষ্ঠানে, সাবস্ক্রাইব করুন আমার ইউটিউব চ্যানেল এবং অবশ্যই পড়তে থাকুন আমার ফেসবুকে আমার লেখাগুলি|ভালো থাকুন|যুক্ত হন এই আধ্যাত্মিক কর্মকান্ডের সাথে|জয় হৃদয়েশ্বরী মা সর্বমঙ্গলার জয়|

জ্যোতির্লিঙ্গ – ঘৃষ্ণেশ্বর

আজ শ্রাবনের দ্বিতীয় সোম বার গোটা দেশ শিবের আরাধোনায় মগ্ন|এই পবিত্র মাসের এই পবিত্র দিনে মহাদেব কে তুষ্ট করে তার কৃপা লাভ করলে কেটে যায় জীবনের অধিকাংশ বাঁধা বিপত্তি|এর আগে আমি এগারোটি জ্যোতির্লিঙ্গর কথা আপনাদের বলেছি|আজ বলবো দ্বাদশতম জ্যোতির্লিঙ্গ ঘৃষ্ণেশ্বরের কথা|

ঘৃষ্ণেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির বা ঘুশ্মেশ্বর মহারাষ্ট্র রাজ্যের আওরঙ্গাবাদ থেকে ৩০ কিলোমিটার এবং দৌলতাবাদ বা দেবগিরি থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে ইলোরা গুহার কাছে অবস্থিত|অতি প্রাচীন এই জ্যোতির্লিঙ্গের উল্লেখ পাওয়াযায় শিব পুরানে|

পুরান মতে এই স্থানে ঘুশ্মা নামে এক শিব ভক্ত নারী বাস করতেন শিবের আশীর্বাদে তার এক পুত্র হয়েছিলো যে পুত্রকে পরবর্তীতে চক্রান্ত করে হত্যা করে ঘুশ্মার বোন সুহেদা|ঘুশ্মা বিচলিত না হয়ে শিব সাধনা শুরু করেন ও শিব সন্তুষ্ট হয়ে তার পুত্র কে জীবিত করে দেন|শিব আরেকটি বর দিতে চাইলে ঘুশ্মা তাঁর আরাধ্য দেবতা কে অনুরোধ করেন তিনি যেন চিরকালের জন্য সেই স্থানে বিরাজ করেন|শিব সেই অনুরোধ মেনে নেন|ঘুশ্মার নাম অনুসারে এই জ্যোতির্লিঙ্গের নাম হয় ঘুশ্মাস্বর বা ঘৃষ্ণেশ্বর|

মনে করা হয় বেরুলের শিবভক্ত উপজাতিদের প্রধান ঘৃষ্ণেশ্বরের কৃপায় এখানে গুপ্তধনখুঁজে পেয়েছিলেন। এই টাকায় তিনি অষ্টাদশ শতাব্দীতে নির্মিত প্রাচীন মন্দিরটির সংস্কার করান ও শিখরসিঙ্গনপুরে একটি হ্রদ প্রতিষ্ঠা করেন|পরবর্তীতে অহল্যাবাই হোলকারও ঘৃষ্ণেশ্বরের মন্দির সংস্কার করিয়েছিলেন|মন্দিরটি লাল পাথরের তৈরি। এতে পাঁচটি চূড়া দেখা যায়।
মন্দিরের উপরে লাল পাথরে দশাবতারের মূর্তি দেখা যায়|চব্বিশটি সুদৃশ্য স্তম্ভ নিয়ে তৈরি হয়েছে দরবার কক্ষটি|মন্দির প্রাঙ্গনে নন্দিকেশ্বরের মূর্তিও আছে|শিবলিঙ্গ এখানে পূর্ব মুখী|প্রায় সারাবছর জনসমাগম হলেও শ্রাবন মাস ও শিব রাত্রি এখানে বিশেষ ভাবে পালিত হয় যা দেখতে দুর দূরান্ত থেকে মানুষ আসেন|

আজ এখানেই শেষ করছি,তবে আর এক বার বলে রাখি যারা এই শ্রাবন মাসে আধ্যাত্মিক উপায়ে নিজেদের গ্রহ দোষ খণ্ডন করাতে চান তারা আর দেরি না করে যোগাযোগ করুন|দ্রুত ফিরবো এক নতুন এবং ভিন্ন স্বাদের ধারাবাহিক লেখনী নিয়ে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ