শক্তি পীঠ – যোগ্যদা

666

রথযাত্রা, গ্রহন, অম্বুবাচী এই সব নিয়ে গত সপ্তাহটা পেশাগত ভাবে বেশ ব্যস্ততার মধ্যে কাটলো|নতুন পুরানো মিলিয়ে বহু ক্লাইন্টের অভাব অভিযোগ ও সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে কেটে গেলো কয়েকটা দিন,আর পেশাগত সাফল্যের সাথে জড়িয়ে থাকে এক তৃপ্তি ও মানিসক শান্তি যা আবার নতুন করে কাজে নামতে আরো বেশি পরিশ্রম করতে উৎসাহ যোগায়|এসবের পাশাপাশি টিভির ও ইউটিউবের অনুষ্ঠানের কাজও চলছে পুরোদমে তারমধ্যেই আপনাদের সামনে নিয়ে এসেছিলাম রথ যাত্রা তারাপীঠ নিয়ে কয়েকটি বিশেষ লেখা|আপনাদের তা বেশ ভালো লেগেছে জেনে আমি অত্যান্ত আনন্দিত ও উৎসাহিত|কয়েকদিনের বিরতির পর আজ আবার আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি শক্তিপীঠ পর্ব গুলির একটি বিশেষ পর্ব নিয়ে আজ বলবো এই বাংলারই পূর্ব বর্ধমানে অবস্থিত অত্যান্ত জাগ্রত শক্তি পীঠ দেবী যোগ্যদার কথা|জানবো তাকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হওয়া বেশ কিছু কিংবদন্তী ও রহস্যময় কাহিনী|জানবো দেবী যোগ্যদার আধ্যাত্মিক ও ধার্মিক তাৎপর্য|

পুরানে বর্ণিত একান্ন সিদ্ধ সতীপীঠের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পীঠ হল বর্ধমানের এই ক্ষীরগ্রামে অবস্থিত দেবী যোগ্যদার মন্দির|বাংলার শক্তি পীঠ গুলির মধ্যে এই পীঠটি অন্যতম|পীঠ নির্নয় তন্ত্র মতে দেবী সতীর ডান পায়ের একটি আঙ্গুল পতিত হয়েছিলো এই স্থানে|একটি প্রচলিত কিংবদন্তী অনুসারে এই দেবীকে প্রতিষ্ঠিত করে ছিলেন স্বয়ং বীর হনুমান, এবং তিনি স্বয়ং পুরাকালে দেবীকে দর্শন করতে ও তার পূজা করতে আসতেন|এই দেবী যোগ্যদা বর্তমানে ক্ষীর গ্রামের অধিষ্টাত্রী কুলদেবী|এলাকায় অন্যান্য লৌকিক দেবদেবীর মন্দির ও পূজার প্রচলন থাকলেও দেবী যোগ্যদাকে এখানে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়|সংরক্ষিত একটি প্রাচীন ধার্মীক পুঁথি থেকে দেবী যোগ্যতা সম্পর্কে বলা হয়েছে

“বাম স্কন্ধে লক্ষণ নিল,
দক্ষিণ স্কন্ধে রাম,
মাথায় প্রতিমা করে চলে হনুমান ।
শ্রীরাম বলি হুংকার ছাড়িলো হনুমান ।ক্ষীরগ্রাম মধ্যে হনু দিলা দরশন।”

শোনা যায় এক কালে পার্শবর্তী অঞ্চলে বলি প্রথা প্রচলন থাকলেও বৈষ্ণব প্রভাবের ফলে যোগ্যদা দেবীর কাছে পশু বলি হয়না|অবশ্য এ নিয়ে একটি রোমাঞ্চকর অলৌকিক কাহিনীও প্রচলিত আছে এই এলাকায়|প্রাচীন কালে স্থানীয় রাজা দেবীকে প্রতিষ্ঠা করে প্রতিশ্রুতি দিলেন যে তিনি দেবী প্রতিদিন বলি দেবেন, কথামতো রাজা রাজ্যে পালার ব্যবস্থা করলেন, বলি শুরু হলো, প্রতিদিন একটি করে বলি|এইভাবে একটি ব্রাহ্মণের ঘরে এল পালা|প্রান ভয়ে আগের দিন ব্রাহ্মণ গ্রাম ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করলেন এবং এক অলৌকিক ঘটনা ঘটলো, ব্রাহ্মণ কে বাধা দিলেন ব্রাহ্মনী বেশি দেবী । ব্রাহ্মণ কে অভয় দিয়ে দেবী বললেন, ” আমি সেই যোগ্যদা ।আর আমি মানুষের রক্ত খাই না ।খাবোনা। রাজা নিজের মত চাপিয়ে দিয়েছে তোমাদের ওপর। তুমি ঘরে ফিরে যাও” এরপর দেবী যোগ্যতা তখন দশভুজা মূর্তি ধারণ করে ব্রাহ্মণ কে দেখা দিলেন|সেই থেকে ক্ষীর গ্রামের দেবী যোগ্যতার উদ্দেশ্য বলি বন্ধ হয়|

গোটা অঞ্চলে একাধিক স্থানে দেবী যোগ্যতার পূজা হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে|মূলত তন্ত্র মতেই দেবীর পূজা হয়|দেবী দুর্গার স্বরূপ আবার ভদ্রকালী হিসেবেও তার পূজা হয় |একটি অতি প্রাচীন পাথর খন্ডের উপর চিত্রিত দেবীকে মূলত পূজা করা হয় বিশেষ বিশেষ তিথীতে|দেবীর একটি প্রতিরূপকে প্রয়োজনে জনসমক্ষে আনা হয়|ক্ষীর গ্রামের দেবী যোগ্যতা কে নিয়ে আরো একটি রহস্যময় প্রথা প্রচলিত আছে,দেবীর মুল বিগ্রহ টি একটি পুকুরে ডুবিয়ে রাখা হয় ও পূজার সময় জল থেকে তুলে এনে তা পূজা করা হয় এবং পূজা হয় মধ্যরাতে|অত্যান্ত গোপনীয়তার সাথে এই পক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়|

বাংলা এবং দেশ বিদেশে নানা স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শক্তিপীঠ গুলির তাৎপর্য ব্যাখ্যা, অজানা কথা ও রোমাঞ্চকর বহু ঘটনা সহজ সরল ভাবে আপনাদের সামনে তুলে ধরতে যে বিশেষ শক্তি পীঠ সিরিজ শুরু করেছি তা আগামী দিনেও চলতে থাকবে আর থাকবে আমার জ্যোতিষ ও তন্ত্র সাধনা নিয়ে আপনাদের পাশে থাকা, যেমনটা থেকেছি এতো বছর ধরে|পড়তে থাকুন আমার লেখা, দেখতে থাকুন আমার অনুষ্ঠান ও যেকোনো সমস্যা ও পরামর্শর জন্য যোগাযোগ করুন আমার নাম্বারে|ভালো থাকুন |ধন্যবাদ|