আজ আমি ব্যক্তিগত ভাবে বেশ আনন্দিত কারন দেশ জুড়ে করোনা আতঙ্ক ও লকডাউন এর জেরে দীর্ঘ 93 দিন পর অবশেষে আজ রথের দিন ভক্ত দের জন্য খুলে দেয়া হলো তারাপীঠ মন্দির|অবশ্যই থাকবে কিছু বাড়তি বিধি নিষেধ ও সতর্কতা|স্থগিত থাকবে মা তারা কে রথে চাপিয়ে পরিক্রমা,হবেনা মন্দির সংলগ্ন চাতালে সেই পরিচিত জনসমাগম আর স্পর্শ করা যাবেনা মায়ের বিগ্রহ|তবু অন্তরে শ্ৰদ্ধা থাকবে, ভক্তি থাকবে, থাকবে ভক্তদের প্রার্থনা ও সবার উপরে থাকবেন জাগ্রতা মা তারা ও তার মাহাত্ম যে মাহাত্মর ও আধ্যাত্মিক শক্তির সাক্ষী হয়েছি আমি নিজে ব্যক্তিগত ভাবে বহু বার,আমার দীর্ঘ বত্রিশ বছরের জ্যোতিষ জীবনে|সে আলোচনায় পরে আসছি আগে তারাপীঠ ও মা তারা সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও কাহিনী আপনাদের সামনে তুলে ধরা যাক|জানার চেষ্টা করা যাক তারাপীঠ ও তারাপীঠে অধিষ্টাত্রী দেবী আধ্যাত্মিক ও ধার্মীক তাৎপর্য|
তারাপীঠ সিদ্ধ পীঠ না কেবল মাত্র একটি জাগ্রত শক্তি পীঠ বা উপপীঠ এ নিয়ে বিতর্ক ও মতান্তর বহু যুগ ধরে চলে আসছে|কথিত আছে বশিষ্ট দেব সাধনা করতেন কামাখ্যায় কিন্তু কোনো কারনে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি কামাখ্যা ত্যাগ করেন ও বাংলার বীরভূমের এই বিশেষ স্থানে এসে পঞ্চমুন্ডীর আসন প্রতিষ্ঠা করে দেবী উগ্রতারার সাধনা শুরু করেন ও সিদ্ধি লাভ করেন|পরবর্তীতে ধীরে ধীরে এই স্থান মাহাত্ম লোক মুখে প্রচারিত হয় ও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে তারাপীঠ|
পরবর্তীতে আরেক মহাপুরুষের আবির্ভাব ঘটে এই মহা তীর্থে, তিনি সিদ্ধ পুরুষ বামা ক্ষেপা|বামা ক্ষেপাও তারাপীঠে পঞ্চমুন্ডীর আসনে বসে সিদ্ধি লাভ করেন ও দেবীর দর্শন লাভ করে ধন্য হন|সেই পরম্পরা চলেছে বহু যুগ ধরে একাধিক তান্ত্রিক সাধক ও মাতৃ সাধকের সাধনার প্রধান কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে তারাপীঠ|হয়ে উঠেছে দেশের আধ্যাত্মিক সাধনা ও বিশেষত তন্ত্র সাধনার অন্যতম প্রান কেন্দ্র|লাল মাটির দেশ বীরভূমে অবস্থিত তারাপীঠের পরিবেশ ও অতি মনোরম ও তন্ত্র সাধনার আদর্শ|রয়েছে মন্দির সংলগ্ন মহাশ্মশান ও অদূরেই অতি পবিত্র দ্বারকা নদী|
মাতারার মুল প্রস্তর নির্মিত মূর্তি টি রয়েছে একটি ধাতব মূর্তির অভ্যন্তরে|এই মূর্তিটি ভীষণা চতুর্ভূজা, মুণ্ডমালাধারিণী এবং লোলজিহ্বা মূর্তি। এলোকেশী দেবীর মস্তকে রয়েছে একটি রৌপ্যমুকুট |বহির্মূর্তিটি সাধারণট শাড়ি-জড়ানো অবস্থায় গাঁদা ফুলের মালায় ঢাকা অবস্থায় থাকে। মূর্তির মাথার উপরে থাক একটি রূপোর ছাতা|প্রতিকৃতি বিগ্রহের নিচে গোলাকার বেদীতে দুটি রূপোর পাদপদ্ম থাকে|যারা তারা পীঠ মন্দির ও দেবীকে দর্শন করেছেন তারা জানেন উত্তরমুখী আটচালা মন্দিরটি লাল ইঁটে নির্মিত এবং মন্দিরের চূড়ায় একটি তামার পতাকাসহ ত্রিশূল ত্তিনটি পদ্ম ভেদ করে উঠেছে|প্রাচীন কালে বণিক জয় দত্তের তৈরি করে দেওয়া তারামায়ের মন্দিরটি আজ আর নেই। বর্তমানের মন্দিরটি ১২২৫ বঙ্গাব্দে তৈরি করান মল্লারপুরের জগন্নাথ রায়|যারা বিশ্বাস করেন তারাপীঠ একটি সিদ্ধ পীঠ তারা মনে করেন দেবী সতীর চোখের ঊর্ধ্বনেত্রের মণি অর্থাৎ তারা পড়ায় দ্বারকা নদীর পুব পাড়ের চণ্ডীপুর আজ তারাপীঠ|
তন্ত্র সাধনায় তারাপীঠের গুরুত্ব অপরিসীম কারন
তন্ত্রে তারাকে বলা হয়েছে দ্বিতীয় মহাবিদ্যা|এই বিষয়ে আমি আগেই আলোচনা করেছি দশমহাবিদ্যা লেখনীর মাধ্যমে|তারাপীঠ শ্মশান তন্ত্র সাধনার এক উৎকৃষ্ট স্থান কারন এটি কোনো সাধারণ শ্মশান নয় এটি মহা শ্মশান এই মহাশ্মশানেই জীবন আর মৃত্যুর পটভূমি নিত্য রচনা করে চলেন দেবী তারা|প্রচলিত বিশ্বাস বলে তারাপীঠের মহাশ্মশানেও জ্যোতিরূপে বাস করেন দেবী|কিংবদন্তী অনুসারে দ্বারকা নদী মহাশক্তির উৎস। এই নদীজলে স্নান করলেই সিদ্ধিলাভের যোগ্যতা অর্জন করেন মানুষ। দূর হয় সব পাপ|আশ্চর্যজনক ভাবে এই নদী উত্তর মুখী|তারাপীঠের পঞ্চমুন্ডীর আসন ও জগৎ প্রসিদ্ধ এই পঞ্চমুণ্ডের আসন আলাদা। এখানে পাঁচটি মুণ্ড সাপের, ব্যাঙের, খরগোশের, শিয়ালের এবং মানুষের। এই আসনে বসেই বহু যুগ পূর্বে দেবীকে তুষ্ট করে তারাপীঠকে সিদ্ধপীঠে পরিণত করেছিলেন ঋষি বশিষ্ঠ পরবর্তীতে বামা ক্ষেপা|
আমি নিজে আমার জ্যোতিষ ও তন্ত্র সংক্রান্ত কাজে বহুবার গিয়েছি তারাপীঠ চেষ্টা করেছি জ্যোতিষ ও তন্ত্র মতে বিশেষ ক্রিয়ার মাধ্যমে ক্লাইন্ট দের মনোস্কামনা পূর্ন করতে ও তাদের জীবনের যাবতীয় সমস্যার সমাধান করে সুস্থ স্বাভাবিক ও সুন্দর জীবনে ফিরিয়ে দিতে|একবারও নিরাশ হইনি, মাতারা এক বারো শূন্য হাতে ফেরাননি|এই বিশ্বাস ও পরম্পরা বজায় রাখবো আজীবন|আপনাদেরও যদি অন্তরে শ্রদ্ধা ও মা তারার প্রতি আস্থা থাকে জীবনের যেকোনো জটিল সমস্যার সমাধানের জন্য অবশ্যই যোগাযোগ করুন আমার সাথে,প্রতিবারের মতো আমি থাকবো আপনাদের পাশে|মা তারার আশীর্বাদে শুভ দিন আসবেই, দুর হবে সব সমস্য|জয় মা তারা|ধন্যবাদ|