মাত্র তিনটি দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ নিয়ে লিখে এই বিশেষ ধারাবাহিক লেখনী থেকে সাময়িক বিরতি নিতে হয়েছিলো,এর কারন কিছুটা আমার পেশাগত ব্যস্ততা ও অবশ্যই কিছুটা দায়ী একের পর এক ধার্মীক উৎসব যেমন অম্বুবাচী রথযাত্রা ইত্যাদি,প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিশেষ পর্বের লেখা নিয়ে হাজির হয়েছি আপনাদের সামনে তাছাড়া আপনাদের সমস্যা সমাধান ও জ্যোতিষ পরামর্শ তো রয়েছেই|পাশাপাশি ইউটিউব ও টিভির অনুষ্ঠানেও অনেকটা সময় ব্যয় করতে হচ্ছে|যাই হোক এতো পরিশ্রম ও কর্মকাণ্ডের পর এটা ভেবে ভালো লাগে যে আপনাদের ভালো লাগছে,আমার পেশা ও আধ্যাত্মিক পড়াশোনা দুটো নিয়েই আপনাদের পাশে থাকতে পারছি এ আমার পরম পাওয়া|আজ আর কথা না বাড়িয়ে শুরু করি আমার দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ পর্বের চতুর্থ পর্ব, আজ লিখবো কাশী বিশ্বনাথ নিয়ে|
ভারতের উত্তর প্রদেশের বারাণসী তে গঙ্গার পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত “কাশী বিশ্বনাথ ” দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম|বারাণসীর অপর নাম কাশী তাই এই মন্দির কে কাশী বিশ্বনাথ বলা হয়|শিব এখানে বিশ্বনাথ বা বিশ্বেস্বর রূপে প্রতিষ্ঠিত|
মন্দির ও শিব লিঙ্গ এখানে কবে থেকে প্রতিষ্ঠিত তা সঠিক ভাবে বলা যায়না|স্কন্দ পুরাণেও এই জ্যোতির্লিঙ্গের উল্লেখ আছে|কথিত আছে, সতীর দেহত্যাগের পর শিব মণিকর্ণিকা ঘাট দিয়ে কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরে এসেছিলেন|বিশ্বাস করা হয় শিব স্বয়ং এখানে বাস করতেন|এই মন্দির ও শিব লিঙ্গ নিয়ে যুগ যুগ ধরে চলে আসছে অসংখ্য প্রচলিত কিংবদন্তী যা প্রতিটি শিব ভক্তের কাছে ধ্রুব সত্য|এই মন্দিরের ইতিহাসও বৈচিত্রময় ও বর্ণময়|বহু ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী কাশী বিশ্বনাথ মন্দির|
অতীতে বিশেষত মুসলিম শাসন কালে বহুবার ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে এই মন্দির এবং পুনরায় নতুন করে সৃষ্টিও হয়েছে|পুরাকাল থেকে এই মন্দিরের অস্তিত্ব থাকলেও একাদশ শতাব্দীতে হরি চন্দ্র মন্দিরটি পুনর্নির্মাণ করেছিলেন|তারপর পর্যায়ক্রমে মোহাম্মদ ঘোরী,কুতুবুদ্দিন আইবক, ফিরোজ শাহ তুঘলক ও ঔরংযেব মন্দির টি ধ্বংস করেন|প্রতিবারই অবশ্যই পুনরায় মাথা তুলে দাঁড়ায় কাশী বিশ্বনাথ মন্দির|বর্তমান সময়ে যে মন্দিরটি রয়েছে তা ১৭৮০ সালে ইন্দোরের মহারানি অহিল্যা বাই হোলকর তৈরি করে দিয়েছিলেন|পরবর্তীকালে ১৮৩৫ সালে পাঞ্জাবের শিখ সম্রাট রঞ্জিত সিংহমন্দিরের চূড়াটি ১০০০ কিলোগ্রাম সোনা দিয়ে মুড়ে দেন|বর্তমান মন্দিরটির উচ্চতা 15.5 মিটার এবং চুড়োটি সোনায় মোড়ানো বলে অনেকে এই মন্দির কে স্বর্ন মন্দিরও বলেন|
প্রধান মন্দিরের মধ্যে একটি ৬০ সেন্টিমিটার উঁচু ও ৯০ সেন্টিমিটার পরিধির শিবলিঙ্গ রুপোর বেদির উপর স্থাপিত।মুল মন্দিরের আশেপাশে আরো অনেক গুলি ছোটো মন্দির অবস্থিত|অঞ্চলটি স্থানীয় দের কাছে বিশ্বনাথ গলি নামে খ্যাত|এই মন্দির গুলির মধ্যে কালভৈরব, দণ্ডপাণি, অবিমুক্তেশ্বর, বিষ্ণু, বিনায়ক, শনীশ্বর, বিরূপাক্ষ অন্যতম|
মুল মন্দির প্রাঙ্গনে একটি প্রাচীন কূপ লখ্য করা যায়, কথিত আছে অতীতে একবার শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে মন্দিরের পুরোহিত শিব লিঙ্গ নিয়ে ওই কূপে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন|
সনাতন ধর্মে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলির মধ্যে একদম প্রথম সারিতে রয়েছে বারাণসী বা কাশী আর এই প্রাচীন ধর্মীয় নগরীর ধর্মচর্চার প্রানকেন্দ্র হচ্ছে কাশী বিশ্বনাথ মন্দির|হিন্দু ধর্মে মনে করা হয় একবার গঙ্গায় স্নান করে কাশী বিশ্বনাথ দর্শন করলে সব পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ও মোক্ষ লাভ হয়|আদি শঙ্করাচার্য থেকে আধুনিক সময়ের স্বামী বিবেকানন্দ সকলেই এই জ্যোতির্লিঙ্গ দর্শন করে পুন্য সঞ্চয় করেছেন|
আজ এই বিশেষ জ্যোতির্লিঙ্গ নিয়ে এই পর্ব এখানেই শেষ করছি ফিরবো পরের পর্বে এক নতুন জ্যোতির্লিঙ্গের কথা নিয়ে|আপনাদের জানিয়ে রাখি আগামী কাল থেকে শুরু করছি একটি বিশেষ ধারাবাহিক লেখা, দক্ষিনেশ্বর মন্দির ও তার ইতিহাস নিয়ে, থাকবে অনেক গল্প অনেক জানা অজানা কথা|অবশই পড়বেন আর জানাবেন কেমন লাগে|আমার নাম্বার আশা করি আছে আপনাদের কাছে, না থাকলে নিয়ে রাখতে পারেন আর যোগাযোগ করতে পারেন, যেকোনো জ্যোতিষ সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান ও পরামর্শ নিয়ে আমি আছি আপনাদের পাশে|ভালো থাকবেন|ধন্যবাদ|