শক্তি পীঠ – উজানী

673

শক্তি পীঠ নিয়ে লিখতে বসা মানে এক অনন্য সাধারণ আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা|আর সব থেকে ভালো লাগে এই অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে ভাগ করে নিতে পেরে|এর আগের পর্ব গুলিতে আমি দেশ বিদেশের কিছু শক্তি পীঠের কথা বলেছি কিন্তু এখনো এই বাংলার সবগুলো শক্তি পীঠের কথাই শেষ করা হয়নি তাই বিগত কয়েকটি পর্ব ধরে বাংলার শক্তি পীঠ গুলিকে আপনাদের সামনে নিয়ে আসছি,জানাচ্ছি সেই পীঠগুলি সম্পর্কে নানা গল্প ও পৌরাণিক ঘটনা|আজও এই পরম্পরাকে কিছুটা এগিয়ে নিয়ে যাবো|আজ বলবো বাংলার অন্যতম একটি শক্তি পীঠ উজানীর কথা|

পীঠনির্ণয় তন্ত্রে বলা হয়েছে –

“উজ্জয়িন্যাং কূর্পারশ্চ মাঙ্গল্য কপিলাম্বর।
ভৈরবঃ সিদ্ধিদঃ সাক্ষাদ্দেবী মঙ্গলচণ্ডিকা।।”

অর্থাৎ, উজ্জয়িনীতে কূর্পার অর্থাৎ কনুই পতিত হয়েছিল। দেবী মঙ্গলচণ্ডিকা ও ভৈরব কপিলাম্বর।

এই পীঠ নির্ণয়তন্ত্র ছাড়াও শিবচরিত গ্রন্থে উজানীর উল্লেখ আছে|জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাসের বাঙ্গালা ভাষার অভিধানে পীঠস্থানের তালিকায় ২৭ নম্বরে রয়েছে উজানীকে|কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম ১৬শ শতাব্দীতে রচিত চণ্ডীমঙ্গল কাব্যে মঙ্গলচণ্ডীর বন্দনা করেছেন|এই মঙ্গল চন্ডী উজানীর উজানীর অধিষ্টাত্রী দেবী|

পশ্চিম বর্ধমানের মঙ্গলকোটের কোগ্রামে, অজয় নদীর তীরে উজানী শক্তি পীঠের অবস্থান|গুসকরা থেকে কোগ্রামের দূরত্ব ২১ কিলোমিটারের কিছু বেশি, গাড়িতে সময় লাগে মিনিট চল্লিশেক|

এই পীঠের মুল মন্দির ও গর্ভগৃহ বহু প্রাচীন|কবে কখন ও কে তা নির্মাণ করিয়েছিলেন তা স্পষ্ট করে বলা দুস্কর|বর্তমানে মন্দিরের কিছু অংশ নতুন করে নির্মাণ করানো হয় বা সংস্কার হয়|মুল ও প্রাচীন মন্দির টি দালান রীতির, দালান টি দাঁড়িয়ে রয়েছে বড়ো বড়ো থামের উপর|অভ্যন্তরে রয়েছে আয়াতকার গৰ্ভ গৃহ|এই গর্ভগৃহের মধ্যে একটি পিতলের দোতলা সিংহাসন রয়েছে তাতে মা সর্বমঙ্গলা বা মঙ্গলচণ্ডীর ছোটো কালো পাথরের দশভূজা সিংহবাহিনী মূর্তি|দেবীমূর্তির বাঁদিকে কিছুটা দূরে ফুট তিনেক উঁচু কালো রঙের পাথরের একটি শিবলিঙ্গ, ইনিই দেবীর ভৈরব কপিলাম্বর|এছাড়াও রয়েছে একটি অতি প্রাচীন পাথরের বুদ্ধ মূর্তি|

মনে করা হয় এক কালে এই স্থান ছিলো বৌদ্ধ তান্ত্রিকদের অবাধ বিচরন ভূমি|মঙ্গলকোটের দেবী হিসাবেই দেবীর নাম এখানে মঙ্গলচন্ডী|

মন্দির খোলা থাকার সময় সকাল ৬টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত এবং স্বাভাবিক ভাবেই প্রতি শনি ও মঙ্গলবার এখানে বহু দর্শনার্থী আসেন ও পূজা দেন এখানে শিবরাত্রি,দুর্গাপূজা,নবরাত্রি,দীপাবলি ও কালী পূজা প্রতি বছর মহাসমারোহে পালিত হয়|

কতোই না রহস্য লুকিয়ে আছে দেশের নানা প্রান্তে অবস্থিত এই শক্তি পীঠ গুলি কে কেন্দ্র করে রয়েছে কতো গল্প, কতো পৌরাণিক ব্যাখ্যা আর কতটুকুই বা জানি আমরা|তবে জানতে হবে|আমি জানাবো আপনাদের,এইভাবে, পর্বে পর্বে|আপনারা যারা জ্যোতিষ ও তন্ত্র সংক্রান্ত কাজের জন্য আমার সাথে যোগাযোগ করছেন তাদের জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ তবে তার পাশাপাশি এই আধ্যাত্মিক লেখা ও ইউটিউব এর অনুষ্ঠান আপনাদের কেমন লাগছে সেটাও জানাতে ভুলবেন না|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|