Home Blog Page 130

অম্বুবাচী – প্রথম পর্ব

আগামী সাতই আষাঢ় অর্থাৎ 22 এ জুন এবছর অম্বুবাচী|আষাঢ় মাসে মৃগশিরা নক্ষত্রের তিনটি পদ শেষ হলে অম্বুবাচী কালের সূচনা হয় হন|শুরুর দিনটি অম্বুবাচী প্রবৃত্তি ও ও শেষের দিনটি হলো অম্বুবাচী নিবৃত্তি|পৃথিবী আমাদের কাছে কোনো জড় বস্তু নয় আমরা আগাগোড়াই প্রথিবী কে এক দেবী বা মাতৃ রূপে দেখি ও পূজা করি তাই স্বাভাবিক ভাবেই এক নারী যেমন সন্তান ধারনের পূর্বে ঋতুমতী হয় ধরিত্রী ও তেমন ফসল উৎপাদনের পূর্বে রজঃস্বলা হয় ও পরবর্তীতে ফসল উৎপাদনের জন্য আরো বেশি উর্বর হয়ে ওঠে|এই সময়ে কৃষকরা কৃষি কাজ থেকে বিরত থাকেন ও ধরিত্রী কে বিশ্রাম দেন|ধরিত্রীর এই ঋতুমতী হওয়াকেই অম্বুবাচী হিসেবে পালন করা হয়|

আমাদের দেশে যেকোনো ধার্মীক ও আধ্যাত্মিক ঘটনাই উৎসবের আকার নেয়,এর প্রধান কারন মানুষের উৎসাহ ও উদ্দীপনা তার সাথে অবশই জড়িয়ে আছে বহু প্রাচীন কিছু রীতি নীতি ও পরম্পরা|অম্বুবাচীও তার ব্যতিক্রম নয়|সারা দেশে নানা স্থানে নানা ভেবে উৎসব ও উদ্দীপনার মাধ্যমে পালন করা হয় অম্বুবাচী, আজ এই ধারাবাহিক লেখনীর তৃতীয় পর্বে আলোচনা করবো সেই সব বর্ণময় উৎসব নিয়ে, জানবো কোথায় কিভাবে পালন হয় অম্বুবাচী|

অম্বুবাচী উপলক্ষে উড়িষ্যায় ভূদেবীর বিশেষ পূজা মেলা ও উৎসবের আয়োজন করা হয় ও ব্যাপক জন সমাগম হয়|ভূদেবী কে উড়িষ্যায় স্বয়ং জগন্নাথ দেবের স্ত্রী হিসেবে কল্পনা করা হয়|এই দেবীর ঋতুমতী হওয়ার সময় কাল কে চারদিনের রজ উৎসব হিসেবে পালন করা হয়|চারদিনের এই উৎসব কে চারটি আলাদা পর্যায় উদযাপন করা হয় প্রথম দিনকে বলা হয় পহিলি রজ। দ্বিতীয় দিন মিথুন সংক্রান্তি| তৃতীয় দিন ভূদহ বা বাসি রজ এবং চতুর্থ দিন বসুমতী স্নান। প্রাচীন কাল থেকে এই চার দিনব্যাপী উত্সব উদযাপিত হয়ে আসছে উড়িষ্যায়|এনিয়ে মেতে ওঠেন রাজ্যবাসী|নারীর ঋতু চক্র কে প্রাকৃতিক নিয়ম হিসেবে মেনে নিয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয় এই উৎসবের মাধ্যমে|

অম্বুবাচী উপলক্ষে গ্রামবাংলার বিধবা মহিলারা তিন দিন ধরে ব্রত রাখেন|দেশ তথা বাংলার প্রায় সব গুলো শক্তি পীঠেই নিষ্ঠার সাথে অম্বুবাচী পালন হয় ও সেই উপলক্ষে বিশেষ উৎসব এবং কোথাও কোথাও মেলার আয়োজন করা হয়|
এই প্রথা চলে আসছে হাজার হাজার বছর ধরে|

অম্বুবাচী সব থেকে বৃহৎ ভাবে এবং জাঁকজমক পূর্ণ ভাবে পালন করা হয় আসামে|দেশের অন্যতম শক্তি পীঠ কামরূপ কামাখ্যায় অম্বুবাচী একটি মহোৎসবের রূপ নেয়|কামাখ্যার অম্বুবাচী পালন নিয়ে আছে অসংখ্য রহস্য, কিংবদন্তি ও গল্প যার সাথে জড়িয়ে আছে সনাতন ধর্মের বহু গূঢ় তত্ত্ব|
সে সব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো তবে আজ নয়,পরের পর্বে|

অম্বুবাচিতে দেবী পুজো হয়না তবে অম্বুবাচী তন্ত্র সাধনার ও শাস্ত্র মতে গ্রহ দোষ খণ্ডনের উপযুক্ত তিথি|এবছর এই তিথিতে আপনাদের মা হৃদয়েশ্বরী সর্বমঙ্গলা মায়ের মন্দিরের হোম যজ্ঞ ও গ্রহ দোষ খণ্ডনের সকল ব্যবস্থা থাকবে|সঙ্গে থাকুন আর অবশই এই বিশেষ সময়ে সঠিক বিধি মেনে,সঠিক জ্যোতিষ পরামর্শ ও প্রতিকারের মাধ্যমে নিজের জীবনের যাবতীয় বাধা বিপত্তিকে দূরে সরিয়ে জীবনে সফল হন,তার জন্য আমি আপনাদের সাথে, আপনাদের পাশে প্রয়োজন মনে করলেই ফোন করুন উপরে দেয়া নাম্বারে বাকিটা আমার ও জ্যোতিষ শাস্ত্রের উপর ছেড়ে দিন আর আস্থা রাখুন ঈশ্বরে|ভালো থাকুন, আনন্দে থাকুন|ধন্যবাদ | 

জামাই ষষ্ঠীর শুভেচ্ছা

আজ জামাই ষষ্টি, বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বনের এও এক অন্যতম পার্বন|আজকের দিন টায় জামাই রা তাদের শশুর বাড়িতে যান নতুন পোশাকে সেজে উপহার নিয়ে, আবার শশুর বাড়ির পক্ষ থেকেও জামাইকে আপ্যায়ন করা হয় উপহার দিয়ে|আরো উপাচার আছে যা এই দিন বাংলার ঘরে ঘরে পালিত হয়|তবে এতো গেলো উৎসবের বাহ্যিক দিক|আসলে এই জামাই ষষ্ঠীর একটি আধ্যাত্মিক দিক আছে, ধর্মীয় ব্যাখ্যা আছে|

জামাই ষষ্টি নিয়ে সুন্দর লোককাহিনী প্রচলিত আছে বহু প্রাচীন কাল থেকে, কথিত রয়েছে, একবার এক গৃহবধূ স্বামীর ঘরে নিজে মাছ চুরি করে খেয়ে দোষ দিয়েছিলেন বিড়ালের উপর। ফলে তাঁর সন্তান হারিয়ে যায়। তাঁর পাপের ফলেই এই ঘটনা ঘটে বলে মনে করা হয়। তখন সেই মহিলা বনে গিয়ে ষষ্ঠীদেবীর আরাধনা শুরু করেন৷ দেবী তুষ্ট হন৷ ফলে বনেই তিনি নিজের সন্তানকে ফিরে পান। এই জন্যই ষষ্ঠীদেবীর অপর নাম অরণ্যষষ্ঠী। এদিকে মাছ চুরি করে খাওয়ার জন্য শ্বশুর-শাশুড়ি ওই বধূর পিতৃগৃহে যাওয়া বন্ধ করে দেন। এই অবস্থায় মেয়েকে দেখার জন্য ব্যাকুল মা-বাবা একবার ষষ্ঠীপুজোর দিন জামাইকে সাদরে নিমন্ত্রণ জানান। জামাইষষ্ঠী পুজোর দিনে সস্ত্রীক উপস্থিত হলে আনন্দের বন্যা বয়ে যায় বাড়িতে।ষষ্ঠীপুজো রূপান্তরিত হয় জামাইষষ্ঠীতে।

অর্থাৎ ষষ্ঠীদেবীর পার্বণ থেকে এই প্রথার উদ্ভব।
শাস্ত্রে বর্ণনা আছে, ষষ্ঠীদেবী দ্বিভুজা, দুনয়না, গৌরবর্ণা, দিব্যবসনা, সর্বসুলক্ষণা ও জগদ্ধাত্রী শুভপ্রদা। তিনি মাতৃত্বের প্রতীক। বিড়াল তাঁর বাহন। মূলত সন্তানের কল্যাণ ও সংসারের সুখ-শান্তি নিশ্চিত করাই এই পুজোর উদ্দেশ্য|

সঠিক ভাবে সূচনা কাল বলা মুশকিল তবে মনে করা হয় বৈদিক যুগ থেকেই জামাইষষ্ঠী পালন
হয়ে আসছে। প্রতিবছর জ্যৈষ্ঠ মাসের ষষ্ঠী তিথিতে প্রথম প্রহরে ষষ্ঠী পুজার আয়োজন করা হয়। ষষ্ঠীর প্রতিমা কিংবা আঁকা ছবিতে পুজা নিবেদন করা হয়। কেউ কেউ ঘট স্থাপন করেও এই পুজো করে থাকেন।

বাঙালি হিন্দুসমাজে এ উৎসবের সামাজিক গুরুত্ব অনস্বীকার্য। বিশেষত যে পরিবারে সদ্য বিবাহিতা কন্যা রয়েছে সেই পরিবারে এই পার্বণটি ঘটা করে পালন করা হয়। পুজোর সময় পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের জন্য পৃথক মালসার মধ্যে নতুন বস্ত্র, ফলফলাদি, পান-সুপারি, ধান-দূর্বা ও তালের পাখা রাখা হয়। ভক্তরা উপোস রেখে মায়ের পূজা করেন। মালসা থেকে নতুন বস্ত্র পরিধান করে ফলফলাদি খেতে হয়।

আনন্দে কাটান জামাই ষষ্টি, অনেক শুভেচ্ছা 

দেবতাদের অস্ত্র শস্ত্র – খড়গ

সামনেই আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তিথি অম্বুবাচী, এই তিথিতে তন্ত্রে ও জ্যোতিষ জগতের বহু গুরুত্বপূর্ণ কাজ পূর্ণতা পায়|যদিও শাস্ত্র মতে এই সময়ে একটি বিশেষ কারনে কয়েকটিদিন দেবীর পুজো বন্ধ থাকে কিন্তু কামাখ্যা তারাপীঠ সহ একাধিক স্থানে অসংখ্য তান্ত্রিক ও জ্যোতিষীরা সমবেত হন, বিশেষ যজ্ঞ ও পুজো পাঠের মাধ্যমে গ্রহদোষ খণ্ডন ও হয়|এবছর মা হৃদয়েশ্বরী সর্বমঙ্গলার মন্দিরেও বিশেষ পুজো ও গ্রহদোষ খণ্ডনের ব্যবস্থা থাকবে|যাই হোক এবার আসি আজকের পর্বে|আজ লিখবো মা কালীর অস্ত্র খড়গ নিয়ে|

কাল-এর স্ত্রীলিঙ্গ কালী। কাল বলতে বোঝায় সময়। অর্থাৎ অতীত-বর্তমান ও ভবিষ্যতকে যিনি কলন করেন তিনি মহাকাল। আর সেই মহাকালের নিয়ন্ত্রক যিনি, তিনিই মহাকালী। এই কালী যে নরমুণ্ড মালা ধারন করেন তা আসলে মানুষের অহং ছিন্ন করার প্রতীক। তাঁর এক হাতে তাই অস্ত্র হিসেবে থাকে খড়গ এই খড়গ দিয়েই তিনি মানুষের যাবতীয় অহং কে সমাপ্ত করেন এবং প্রয়োজনে দুষ্টের দমন করেন|খড়গে আঁকা চোখ অনন্ত জ্ঞানের তথা প্রজ্ঞার প্রতীক।

শুধু কালী নয় রাবনের ও খড়গ ছিলো, সে নিয়ে একটি পৌরাণিক ঘটনাড় উল্লেখও করা যায় এই প্রসঙ্গে, সর্বক্ষণ শিবের সান্নিধ্য পাওয়ার লক্ষ্যে একবার রাবন কৈলাস পর্বতকে লংকায় প্রতিস্থাপনের জন্য নিজ তপোবলের দ্বারা দুই হস্তে তুলে নেন তখন মহাদেব তাঁর পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি কৈলাসে স্পর্শ করলে রাবণের দুইহাত কৈলাসে চাপা পড়ে যায়। রাবণ তখন প্রচন্ড চিৎকার করতে থাকেন এবং শিবকে শান্ত করার নিমিত্তে একটি গীত রচনা করেন যা পরে “শিবতান্ডব স্ত্রোত্র” নাম পরিচিত হয়। শিবের ক্রোধ শান্ত হয় এবং মহাদেব রাবনকে চন্দ্রোহাস নামক একটি খড়গ উপহার দেন|

বাস্তু শাস্ত্র মতে দেবীর খড়গ যদি গৃহের প্রধান দরজাড় উপর রাখা যায় গ্রহের কল্যাণ হয় ও কোনো রকমের অশুভ শক্তি গৃহে প্রবেশ করতে পারেনা|আমাদের মহাকাব্য, পুরান, বেদ সহ একাধিক শাস্ত্রে অস্ত্র হিসেবে খড়গের উল্লেখ আছে, প্রাচীন সমরাস্ত্র হিসেবে খড়গ অত্যন্ত জনপ্রিয় ও কার্যকরী|আজও যেখানে যেখানে যেখানে বলীপ্রথা প্রচলিত আছে সেখানে বলীর অস্ত্র হিসেবে খড়গই ব্যবহার হয়|দেবীকে তুষ্ট করতে তার আশীর্বাদ পেতে অনেক ভক্ত আজও দেবীর উদ্দেশ্যে মূলবান খড়গ দান করে থাকে|এক কথায় দেবী কালীর অত্যন্ত প্ৰিয় তারপর খড়গ|

আগামী পর্বে আবার অন্য কোনো অস্ত্র নিয়ে লিখবো জানবো তার ব্যাখ্যা ও তার সাথে জড়িয়ে থাকা নানা পৌরাণিক কাহিনী|পড়তে থাকুন|জ্যোতিষ সংক্রান্ত প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন উল্লেখিত নাম্বারে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ| 

দেবতাদের অস্ত্র শস্ত্র – ত্রিশূল

বিগত ফল হারিনীর কর্মব্যাস্ততা ও মন্দিরের কাজকর্ম শেষ করে আপাতত আবার লেখালেখিতে কিছুটা মননিবেশ করেছি, নিয়ে এসেছি একটি সম্পূর্ণ নতুন ধারাবাহিক লেখনী দেবতাদের বিচিত্র সব অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে, প্রথম পর্ব ছিলো বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র নিয়ে আজ দ্বিতীয় পর্ব লিখবো ত্রিশূল নিয়ে|

ত্রিশূল বলতেই প্রথমে মনে ভেসে ওঠে দেবাদিদেব মহাদেবের নাম|পুরান অনুসারে শিব হলেন স্বয়ম্ভু যিনি নিজের চেতনায় নিজ ইচ্ছায় সৃৃষ্ট হন এবং যাকিছু অশুভ বা সৃষ্টির জন্যে বিপদজনক তা সংহার করার দায়িত্বে থাকেন তিনি স্বয়ং কিন্তু সংহার কর্তার এই সংহার লীলার জন্যে প্রয়োজন অস্ত্র, এই অস্ত্র নির্মাণের ভার স্বাভাবিক ভাবেই গিয়ে পরে দেব শিল্পী বিশ্বকর্মার উপর|বিষ্ণুপুরান অনুসারে সূর্যের তেজ ও রশ্মির ব্যবহার করে দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা ত্রিশূল নির্মাণ করেন এবং তা শিবকে প্রদান করেন|এতে শিব ও তার অস্ত্র পান এবং সূর্যের তেজ কিছুটা কমায় বিশ্বকর্মার কন্যা এবং সূর্যপত্নী সংজ্ঞাও কিছুটা স্বস্তি পান|

ত্রিশূল শুধু শিবের নয় দেবী দূর্গারও অস্ত্র কারন
মহিষাসুর বধের জন্য বিভিন্ন দেবতা যখন দেবীকে বিভিন্ন অস্ত্রদান করেন তখন ভগবান শিব তাকে এই ত্রিশূলটি দান করেছিলেন,দেবী মহিষাসুরকে ত্রিশূল দিয়েই বধ করেন|আবার ত্রিশূল দিয়ে শিব দ্বারা গণেশের মুন্ড ছেদের ঘটনারও উল্লেখ আছে শাস্ত্রে|

ত্রিশূল শুধু অস্ত্র নয় সনাতন ধর্মে ত্রিশূল সমৃৃদ্ধির প্রতীক আবার ত্রিশূলের তিনটি ফলার আলাদা আলাদা ব্যাখ্যা ও তাৎপর্য রয়েছে|মনে করা হয় তিনটি ফলা যথাক্রমে সৃষ্টি-স্থিতি-বিনাশ কে চিহ্নিত করে আবার অন্য একটি বাখ্যা অনুসারে তিনটি ফলার অর্থ যথাক্রমে অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যত যা শিব তথা মহাকালের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে|শিবের ত্রিশূলে সব সময় বাঁধা থাকে ডমরু। এই ডমরু বেদ এবং তার উপদেশের প্রতীক যা আমাদের জীবনে এগিয়ে চলার রাস্তা দেখায়|

শুধু হিন্দু নয় বৌদ্ধ ধর্মেও ত্রিশূল একটি পবিত্র প্রতীক হিসেবে সমাদৃত|বৈদিক বাস্তু শাস্ত্রেও ত্রিশূল ব্যাবহার হয়|বাস্তু শাস্ত্র মতে গৃহের প্রধান ফটকে ত্রিশূল চিহ্ন বা ত্রিশূল রাখলে গৃহে অশুভ শক্তি প্রবেশ করেনা ও গৃহে সুখ ও সমৃদ্ধি বিরাজ করে|

আগামী পর্বে আবার কোনো নতুন বিষয় নিয়ে আসবো আপনাদে সামনে|জানাবেন কেমন লাগছে এই নতুন ধারাবাহিক লেখা|যেকোনো জ্যোতিষ সংক্রান্ত কাজের জন্যে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন উল্লেখিত নাম্বারে ফোন করে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ| 

দেবতাদের অস্ত্র সস্ত্র – সুদর্শন চক্র

আমাদের সনাতন ধর্মের দেবদেবীদের প্রত্যেকের যেমন নিজস্ব বাহন রয়েছে, সৃষ্টি কার্যে বিশেষ ভূমিকা রয়েছে, তেমনই তাদের প্রত্যেকের নিজস্ব অস্ত্র রয়েছে, যেমন শিবের ত্রিশূল, ইন্দ্রের বজ্র, পরশুরামের কুঠার, হনুমানের গদা, এই অস্ত্র গুলিরও নিজস্ব ইতিহাস ও পৌরাণিক ব্যাখ্যা আছে, আধ্যাত্মিক তাৎপর্য আছে, নাম ও
আছে|আজ থেকে শুরু করা এই নতুন ধারাবাহিক লেখনীর মাধ্যমে দেবতাদের এই অস্ত্রগুলি নিয়ে আলোচনা করবো একেকটি পর্বে জানবো তাদের সাথে জড়িত অনেক পৌরাণিক ঘটনা ও কাহিনী|আজ প্রথম পর্বে বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র|

হিন্দু বর্ষপঞ্জি অনুসারে, প্রতি বছর কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের চতুর্দশীতে বৈকুণ্ঠ চতুর্দশী পালিত হয়, পুরান অনুসারে এই দিনে ভগবান শিব ভগবান বিষ্ণুকে সুদর্শন চক্র দিয়েছিলেন|সুদর্শন চক্র দানের প্রধান উদ্দেশ্য পালনকর্তা যেনো দৃঢ় হাতে সিস্টের পালন ও দুষ্টের দমন করতে পারেন|
সু শব্দের অর্থ মঙ্গল এবং দর্শন মানে দেখা দেয়া অর্থাৎ সুদর্শন হলো মঙ্গলময় দর্শন এবং চক্র মানে যা নিজে থেকে ধাবিত হতে পারে|

সুদর্শন চক্রের সাথে জড়িয়ে আছে বিষ্ণুর আরেক অবতার পরশুরামের নাম , ত্রেতাযুগে সীতার স্বয়ংবর সভায় যখন রাম হরধনু ভঙ্গ করে ফেলেন তখন রুষ্ট হয়ে তাঁকে শাস্তি দিতে মহেন্দ্র পর্বত থেকে সেখানে উপস্থিত হন পরশুরাম।কিন্তু বিষ্ণুর আর এক অবতার রামের আসল প্রকৃতি জানতে পেরে তাঁকে সম্মান প্রদর্শন করেন তিনি। সেই সময় রাম তাঁকে সুদর্শন চক্রটি গচ্ছিত রাখতে অনুরোধ করেন। তিনি বলেন যে দ্বাপর যুগে তিনি যখন আবার জন্ম নেবেন, তখন যেন পরশুরাম সেটি ফিরিয়ে দেন। দ্বাপর যুদে শ্রীকৃষ্ণের রূপ ধরে বিষ্ণু ধরাধামে অবতীর্ণ হলে ধর্ম রক্ষা করার জন্য তাঁকে সুদর্শন চক্রটি ফিরিয়ে দেন পরশুরাম।

সুদর্শনচক্র তৈরি করেছিলেন স্বয়ং বিশ্বকর্মা, বৈষ্ণবরা বিশ্বাস করেন সুদর্শন চক্র ও বিষ্ণু এক এবং অভিন্ন|ভয়ংকর অসুররের কাছ থেকে সৃষ্টি কে রক্ষা করা হোক বা ক্রোধে উন্মত্ত মহাদেব কে শান্ত করতে সতীর দেহকে খণ্ডিত করা হোক সুদর্শন চক্র থাকে মুখ্য ভূমিকায়|প্রকৃত অর্থে সুদর্শন চক্র শুভ শক্তির প্রতীক যা অশুভ শক্তিকে বার বার পরাজিত করেছে|

আগামী পর্বে আবার নতুন কোনো দৈব অস্ত্রের অজানা কথা নিয়ে লিখবো|টিভির অনুষ্টানের পাশাপাশি পড়তে থাকুন আমার আধ্যাত্বিক লেখাগুলি এবং অবশ্যই নিজের মতামত জানান|আর জ্যোতিষ সংক্রান্ত প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন উল্লেখিত নাম্বারে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ

হৃদয়েশ্বরী মা সর্বমঙ্গলা

আগামী কাল ফলহারিনী অমাবস্যা, ফলহারিণী অমাবস্যা তন্ত্র ও জ্যোতিষ জগতে একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিন।জ্যৈষ্ঠমাসের অমাবস্যা তিথিতে ফলহারিণী মাতারূপে দেবী কালী পূজিতা হন। ধরিত্রীজাত ফলের সঙ্গে এই মাতৃপুজোর কোনও সম্পর্ক নেই। এই ফল মানবজাতির কর্মফলের কথা স্মরণ করায়।দিনটিতে মা স্বয়ং ভক্তদের সুকর্মের জন্য আশীর্বাদ প্রদান করেন। অপরদিকে সন্তানের কুকর্মের জন্য উদ্ভূত অশুভ ফলের প্রভাব থেকে তিনিই আবার সন্তানদের মুক্ত করেন। অর্থাৎ ওই দিনে মা স্বয়ং যেমন সন্তানদের শুভ ফল প্রদান করেন, তেমনি তিনি সন্তানদের অশুভ ফলও হরণ করে থাকেন। এই তিথিতে যেকোনো গ্রহ দোষ খণ্ডন বা প্রতিকার ধারন অনেক বেশি কার্যকরী হয় বলে শাস্ত্রে বর্ণিত আছে|

কয়েক বছর আগে এমনই এক ফল হারিনী অমাবস্যার পুন্য সময়ে আপনাদের হৃদয়েশ্বরী সর্ব মঙ্গলা মন্দিরের দ্বার উন্মুক্ত হয়েছিলো সর্ব সাধারণের জন্যে, যদিও আমি নিজে ব্যাক্তিগত ভাবে দীর্ঘ তিন দশকের বেশি সময় ধরে সেবক এবং উপাসক হিসেবে মা সর্বমঙ্গলা পুজোয় নিয়োজিত রয়েছি, আপনারা জানেন আমার জীবনে ঘটে যাওয়া এক অলৌকিক ঘটনা থেকেই, দেবী সর্বমঙ্গলার আগমন এবং পরবর্তীতে হৃদয়েশ্বরী দেবী সর্বমঙ্গলার মন্দির প্রতিষ্ঠা|শুরুর দিন থেকেই অসংখ্য মানুষ যুক্ত হয়েছেন এই আধ্যাত্মিক কর্মকান্ডের সাথে, শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, সমর্থক করেছেন নানা ভাবে|বর্তমান পরিস্থিতিতে শারীরিক সম্ভব না হলেও মানসিক ভাবে লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষ পাশে থেকেছেন|প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে দেবীকে দর্শন করেছেন, পূজা দিয়েছেন|

আপনারা হয়তো জানেন জ্যোতিষ সংক্রান্ত সমস্যার প্রতিকার যেমন রত্ন বা কবজ ধারনের মাধ্যমে হয় তেমনি সঠিক পদ্ধতিতে মন্ত্র উচ্চারণ পূজা পাঠ ও হোম যজ্ঞের মাধ্যমে গ্রহদোষ খণ্ডনের মাধ্যমেও হয়|আর এই পদ্ধতিতে অত্যন্ত কার্যকর হয় প্রতিকার|এই প্রতিকারে জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা থাকবে আপনাদের হৃদয়েশ্বরী মা সর্বমঙ্গলা মন্দিরে|বিশেষ তিথি তে হবে বিশেষ পুজো,যজ্ঞ আহুতি দান ও শাস্ত্র মতে গ্রহ দোষ খণ্ডন|সবই হবে প্রয়োজন অনুসারে|সামনেই বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তিথি যার মধ্যে অন্যতম ফলহারিনী অমাবস্যা|আসুন এই সময় কে কাজে লাগান| আধ্যাত্মিক পদ্ধতিতে মা সর্বমঙ্গলার আশীর্বাদে জীবনের সব বাঁধা দুর করে সাফল্য লাভ করুন|

যারা জ্যোতিষ সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে যোগাযোগ করেছেন তাদের অনেকেরই শাস্ত্র মতে গ্রহদোষ খণ্ডন করে প্রতিকারের ব্যবস্থা হয়েছে এই মন্দিরে, প্রযুক্তির ব্যবহারে তারা সাক্ষী থেকেছেন সেই বিরল মুহূর্তের|সাফল্য এসেছে, এসেছে ধন্যবাদ, শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা|আমিও ধন্য হয়েছি তাদের মুখে হাসি ফোটাতে পেরে, তাদের জীবনের সমস্যা দুর করতে পেরে|এই পদ্ধতিতে মানুষের পাশে থাকা এই ভাবে চলতে থাকবেন আগামী দিনেও|জীবনে হতাশ হবেননা, আস্থা হারাবেননা, এগিয়ে চলুন, বাকিটা ছেড়ে দিন মা সর্ব মঙ্গলার উপর|তিনি মঙ্গল করেন সবার, দুর করেন দুঃক্ষ কষ্ট|

আপনারা হয়তো জানেন জ্যোতিষ সংক্রান্ত সমস্যার প্রতিকার যেমন রত্ন বা কবজ ধারনের মাধ্যমে হয় তেমনি সঠিক পদ্ধতিতে মন্ত্র উচ্চারণ পূজা পাঠ ও হোম যজ্ঞের মাধ্যমে গ্রহদোষ খণ্ডনের মাধ্যমেও হয়|আর এই পদ্ধতিতে অত্যন্ত কার্যকর হয় প্রতিকার|এই প্রতিকারে জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা থাকবে আপনাদের হৃদয়েশ্বরী মা সর্বমঙ্গলা মন্দিরে|বিশেষ তিথি তে হবে বিশেষ পুজো,যজ্ঞ আহুতি দান ও শাস্ত্র মতে গ্রহ দোষ খণ্ডন|সবই হবে প্রয়োজন অনুসারে|সামনেই বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তিথি যার মধ্যে অন্যতম ফলহারিনী অমাবস্যা|আসুন এই সময় কে কাজে লাগান| আধ্যাত্মিক পদ্ধতিতে মা সর্বমঙ্গলার আশীর্বাদে জীবনের সব বাঁধা দুর করে সাফল্য লাভ করুন|

আমাদের দেশে প্রাচীনতম ও সর্বাধিক জনপ্রিয় সর্ব মঙ্গলা মন্দির অবস্থিত বর্ধমানে|যাকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছে বেশ কিছু অলৌকিক লোককাহিনী বা কিংবদন্তী|কথিত আছে, প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে শহর বর্ধমানের উত্তরাংশে বাহির সর্বমঙ্গলা পাড়ায় বাগদিরা পুকুরে মাছ ধরতে গিয়ে একটি শিলামূর্তি পেয়েছিল। সেটিকে প্রস্তর খণ্ড ভেবে তার উপরে শামুক–গুগলি থেঁতো করতো। পরবর্তীতে বর্ধমান মহারাজা সঙ্গম রায় স্বপ্নাদেশ পেয়ে শিলামূর্তিটিকে নিয়ে এসে সর্বমঙ্গলা নামে পুজো শুরু করেন।যদিও এই নিয়ে কিঞ্চিৎ মতপার্থক্য রয়েছে| পরবর্তীকালে ১৭০২ সালে টেরাকোটার নিপুণ কারুকার্য খচিত সর্বমঙ্গলা মন্দির নির্মাণ করেন মহারাজাধিরাজ কীর্তিচাঁদ মহতাব|মন্দিরের তুলনায় দেবী মূর্তি বহু প্রাচীন|কারুর কারুর মতে দেবী মূর্তি হাজার বা দুহাজার বছরের পুরোনো|পরবর্তীতে শেষ যুবরাজ উদয়চাঁদ মহতাব ট্রাস্ট কমিটি গঠন করেন এবং প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের পরম্পরা আজও চলে আসছে একি নিষ্ঠা ও ভক্তির সাথে|

বর্ধমানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী দেবী সর্বমঙ্গলা মূলত বাংলার লৌকিক দেবতা হলেও অনেকেই
মন্দিরটিকে শক্তিপীঠ বলেন|সেই মতে এখানে দেবীর নাভি পরেছিল।দেবী সর্বমঙ্গলার ভৈরব এখানে মহাদেব|সর্বমঙ্গলা দেবীর মুল মূর্তিটি কষ্টি পাথরের অষ্টাদশভূজা সিংহবাহিনী ‘মহিষমর্দিনী’ মহালক্ষীরূপিণী|কষ্টি পাথরে নির্মিত হওয়ায় দেবী মূর্তি স্বাভাবিক ভাবেই ঘোর কৃষ্ণবর্ণের|তাছাড়া তিনি আদ্যা শক্তি মহামায়ার রূপ বিশেষ তাই করল বদনা হওয়াটাই স্বাভাবিক|

আমার গৃহমন্দিরে স্থাপিত হৃদয়েশ্বরী সর্বমঙ্গলার রূপ সৃষ্টির খেত্রে তার আদি ও প্রাচীনতম প্রচলিত রূপকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে|দেবী করাল বদনা এবং আদ্যা শক্তি মহা মায়ার একটি রূপ বিশেষ তিনি দূর্গা ও কালীর সম্মিলিত রূপ|এই ফল হারিনী অমাবস্যায় দেবী ফলহারিনী রূপে বিরাজ করেন ও কর্মফল থেকে মুক্তি দিয়ে তার ভক্তদের মনোস্কামনা পূর্ণ করেন|

প্রতিটা বিশেষ তিথিতেই বিশেষ পূজা, হোম যজ্ঞ, চণ্ডী পাঠ ও প্রসাদ বিতরনের সু ব্যবস্থা থাকে মা হৃদয়েশ্বরী সর্বমঙ্গলার মন্দিরে|শাস্ত্র মতে হয় গ্রহ দোষ খণ্ডন|এবারও এই ফলহারিনী অমাবস্যায় একি রকম ব্যবস্থা থাকছে মন্দিরে|আপনাদের এই মন্দির, আপনাদের এই আধ্যাত্মিক কর্মযজ্ঞ আপনাদেরকেই এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে|আমি পাশে থাকবো আর সবার উপরে থাকবেন মা হৃদয়েশ্বরী সর্বমঙ্গলা|ভালো থাকুন|নমস্কার| 

ফলহারিনী অমাবস্যা ও জ্যোতিষ শাস্ত্র

আগামী 9 তারিখ অর্থাৎ বুধবার,ফল হারিনী অমাবস্যা, এবারও আপনাদের সবাইকে মাহৃদয়েশ্বরী সর্বমঙ্গলা মন্দিরে বিশেষ পুজোর আয়োজন হয়েছে, প্রথমেই আমার সব পাঠক ও অনুরাগীদের আমন্ত্রণ জানিয়ে রাখি এই বিশেষ পুজো ও হোমযজ্ঞ অনুষ্ঠানে|মহামারী সংক্রান্ত বিধিনিষেধ ও লকডাউন চলার জন্যে এবার জনসমাগম হবেনা, কিন্তু শাস্ত্র মতে পুজোপাঠে কোনো ত্রুটি হবে না, প্রতি বারের ন্যায় গ্রহ দোষ খণ্ডনের আয়োজন ও থাকছে এবং প্রযুক্তির সাহায্যে আপনারা সমগ্র পুজো পক্রিয়া ঘরে বসে দেখতে পারবেন ও অংশ নিতে পারবেন, গ্রহদোষ খণ্ডন ও করাতে পারবেন বাড়িতে বসেই|এই সংক্রান্ত সব তথ্য মন্দিরের ওয়েবসাইট ও ফেসবুকে নিয়মিত দেয়া থাকবে|

এবার এই তিথির আধ্যাত্মিক এবং শাস্ত্রীয় তাৎপর্য সংক্ষেপে জেনে নেয়া যাক|
জ্যৈষ্ঠ মাসের অমাবস্যা তিথিতে ফলহারিণী কালীপুজো অনুষ্ঠিত হয়।মানুষ সারা জীবন কর্ম করে যান। কিন্তু মনে করা হয়, এই কর্মসমূহের ফল দান করেন দেবী কালিকা|ফলহারিণী কালী পুজোর দিন মা কালী স্বয়ং তাঁর সন্তানদের শুভ ফল প্রদান করেন এবং সেই সঙ্গে তাঁদের অশুভ ফলও হরণ করে থাকেন, একদিকে ফলহারিণী রূপে তিনি সাধকের কর্মফল হরণ করেন। অন্য দিকে তাদের অভীষ্টফল, মোক্ষফল প্রদান করেন|
স্বাভাবিক ভাবেই এই তিথিতে দেবীকে পুজো করে তার কৃপা লাভ করলে জীবনের সব দুক্ষ, কষ্ট ও পাপ দূর হয়|

জ্যোতিষ শাস্ত্রে যতরকম প্রতিকারের কথায় উল্লেখ আছে তার মধ্যে শাস্ত্র মতে পুজো পাঠ ও মন্ত্র উচ্চারনের মধ্যে দিয়ে গ্রহদোষ খণ্ডনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে|এক্ষেত্রে তিথি খুব গুরুত্বপূর্ণ|সঠিক তিথিতে করা শাস্ত্রীয় মতে দোষ খণ্ডন সবথেকে বেশি প্রভাব শালী হয়, এবং এই তিথি গুলির মধ্যে ফলহারিনী অমাবস্যা কে অন্যতম শ্রেষ্ঠ তিথি হিসেবে দেখা হয়|

বিগত বছর থেকে কৌশিকী অমাবস্যা, ফলহারিনী অমাবস্যা দীপান্বিতা অমাবস্যা সহ প্রায় প্রতিটি তিথিতেই আপনাদের মা হৃদয়েশ্বরী সর্বমঙ্গলার মন্দিরে বিশেষ পুজো হয়ে আসছে, অসংখ্য মানুষ ইতিমধ্যে অংশ নিয়েছেন, নিজেদের গ্রহ দোষ খণ্ডন করিয়েছেন|মা সর্বমঙ্গলার একজন উপাসক ও সেবক হিসেবে আমি শুধু উপস্থিতি থেকেছি এবং মাধ্যম হিসেবে কাজ করে গেছি|আসন্ন ফলহারিনী অমাবস্যাতেও একি ভাবে থাকবো|যারা ইতিমধ্যে যোগাযোগ করেছেন তাদের ধন্যবাদ|যারা এখনো যোগাযোগ করে উঠতে পারেননি কিন্তু ইচ্ছে আছে তারা উল্লেখিত নাম্বারে ফোন করে কথা বলতে পারেন যেকোনো সময়ে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

ফলহারিণী অমাবস্যা ও মা হৃদয়েশ্বরী সর্বমঙ্গলা

মানব জীবনে জন্মছক বিশ্লেষণ করলে অথবা হস্তরেখা বিচার করলে দেখা যায় অনেকেরই কিছু না কিছু গ্রহদোষ রয়েছে। অর্থাৎ কিছু শুভ গ্রহ এবং কিছু অশুভ গ্রহের গ্রহগত সংযোগ ও তার কুপ্রভাব দেখা যায় এবং সেই প্রভাব আজীবন বয়ে বেড়াতে হয় যদি না সঠিক সময়ে শাস্ত্র সম্মত ভাবে সেই গ্রহ দোষ খণ্ডন হয় । সমস্যা থাকলে সমাধানও রয়েছে, তবে এই গ্রহ দোষ খণ্ডনের ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্থান, সময় ও পদ্ধতি|

তন্ত্র মতে বা শাস্ত্র সম্মত ভাবে গ্রহ দোষ খণ্ডনের ক্ষেত্রে যে বিশেষ অমাবস্যা তিথি গুলি রয়েছে তার মধ্যে দীপান্বিতা অমাবস্যা, কৌশিকী অমাবস্যা বা মৌনী অমাবস্যার থেকেও কিছুটা এগিয়ে থাকে ফল হারিনী অমাবস্যা কারন এই অমাবস্যার অর্থাৎই হলো জন্ম জন্মান্তরের পাপের ফল থেকে মুক্তি লাভ|শাস্ত্র মতে এই সময়ে করা যেকোনো তন্ত্র ক্রিয়া বা গ্রহ দোষ খণ্ডনের উপাচারের ফলে দেবী কালীর কৃপা সহজেই লাভ করা যায় এবং তিনি সমস্ত গ্রুহ গত কুপ্রভাব ও তার খারাপ ফল হরণ করে নেন, তাই এই অমাবস্যা ফলহারিনী নামে পরিচিত|

এই অমাবস্যার অন্য একটি ঐতিহাসিক তাৎপর্যও রয়েছে, দক্ষিনেশ্বরে রামকৃষ্ণদেব ফলহারিণী কালী পুজোর দিনই স্ত্রী সারদা দেবীকে পুজো করেছিলেন জগৎ কল্যাণের জন্য। এদিন শ্রীমা সারদাকে ষোড়শীরূপে পুজো করেছিলেন বলে আজও রামকৃষ্ণমঠ ও আশ্রমে এই পুজো ‘ষোড়শী’ পুজো নামেও পরিচিত|

একটা সময় ছিলো যখন এই বিশেষ অমাবস্যায় কামাখ্যা, তারাপীঠ সহ একাধিক স্থানে তান্ত্রিক জ্যোতিষীরা উপস্থিত হয়ে বিশেষ পুজো,হোম যজ্ঞর মাধ্যমে বহু মানুষের গ্রহগত দোষ খণ্ডন করতেন|বর্তমানে সেই সুযোগ আর নেই তবে মানুষের সমস্যা আছে এবং তার সমাধানের পথ ও আছে, বিগত কয়েক বছর ধরেই প্রায় প্রতিটি বিশেষ তিথিতে আপনাদের মা হৃদয়েশ্বরী সর্বমলঙ্গলা মায়ের মন্দিরে বিশেষ হোম যজ্ঞ, ও পূজা পাঠের মাধ্যমে শাস্ত্র মতে গ্রহগত দোষ খণ্ডন হয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়া এবং মন্দিরের ওয়েবসাইট কে ব্যবহার করে লখ্য লখ্য মানুষ ও মায়ের ভক্তরা দূর থেকেই এই বিশেষ পুজোয় অংশ নিয়েছেন ও মায়ের কৃপায় জীবনের সমস্যাথেকে মুক্তি লাভ করেছেন|

আগামী 9 ই জুন ফলহারিনী অমাবস্যা, এবছর প্রথা মেনে মা হৃদয়েশ্বরী সর্বমঙ্গলা মায়ের মন্দিরে বিশেষ পূজা ও গ্রহ দোষ খণ্ডনের আয়োজন করা হয়েছে, আমি থাকবো নিমিত্ত হিসেবে বাকিটা মায়ের কৃপা ও আপনাদের আস্থা এবং শ্রদ্ধা|কিভাবে অংশগ্রহণ করবেন, এই আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতার সাক্ষী হবেন বা নিজেদের গ্রহদোষ খণ্ডন করাবেন জানতে যোগাযোগ করুন উল্লেখিত নাম্বারে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

বাংলার কালী – বুড়িমা

ফলহারিনী অমাবস্যা যত এগিয়ে আসছে, পেশা গত ব্যাস্ততা ততো বাড়ছে, সেটাই স্বাভাবিক কারন বহু মানুষ এখন থেকেই এই অমাবস্যা তিথীতে নিজেদের গ্রহদোষ খণ্ডনের জন্যে যোগাযোগ করছেন , অন্যদিকে মা হৃদয়েশ্বরী সর্বমঙ্গলা মায়ের মন্দিরে বিশেষ পুজো ও হোম যজ্ঞর আয়োজন এখন থেকেই প্রায় শুরু হয়ে গেছে|এতো কিছুর মাঝে আজ আরো একটি প্রাচীন ও প্রসিদ্ধ কালী মন্দিরের কথা নিয়ে আমি আপনাদের সামনে উপস্থিত|আজকের পর্বে বালুরঘাটের বুড়িমা|

দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটে অবস্থিত এই প্রাচীন কালী মন্দির,ভক্তরা কেউ কেউ এখানে দেবীকে বুড়ামা বা বুড়ি মা কালী বলেও ডাকেন। অনেকে বলেন সতীর একান্ন পীঠের একটা গুপ্ত পীঠ হলো বালুরঘাটের এই বুড়িমা কালী মন্দির।
মাটির কোনও প্রতিমা নয় দেবী এখানে স্বয়ংভূ। কালো প্রস্তর খণ্ডকেই এখানে মা রূপে পুজো করা হয়ে থাকে।

মন্দির সৃষ্টির সাথে জড়িয়ে আছে এক অলৌকিক ঘটনা, কথিত আছে, বহু বছর আগে জনৈক এক বাসিন্দার গাভী হারিয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুজির পরেও সেটিকে পাওয়া যায় না। পরে বৃদ্ধারূপী মা কালী তাঁকে স্বপ্নে দেখা দিয়ে নির্দেশ দেন আত্রেয়ী নদী পাড়ের জঙ্গলে গিয়ে খুঁজতে। তাঁর দেখানো দিক-নির্দেশ অনুযায়ী সেই ব্য়ক্তি যান। গিয়ে দেখেন, জঙ্গলের ভিতর বালির মধ্যে পড়ে থাকা একটি পাথরের খণ্ডকে গরুটি নিজে থেকে দুধ ঝরিয়ে স্নান করিয়ে দিচ্ছে। এর পরেই তিনি পাথরটি স্বযত্নে এনে আত্রেয়ীর পাড়েই সেটিকে প্রতিষ্ঠা করে মা বুড়িমা কালীর পুজো শুরু করেন।

কয়েকশো বছর ধরে পূজিতা হয়ে আসছেন অবিভক্ত দিনাজপুর জেলার অধিষ্ঠাত্রী দেবী মা বুড়িমা কালী। ৩৬৫ দিন সকাল সন্ধ্যে দেবীর পূজা হলেও মূল পূজা কার্তিকী অমাবস্যার রাতেই হয়ে থাকে। কার্তিকী অমাবস্যার রাতে বুড়ামা কালী মন্দিরে লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম হয়ে থাকে। এছাড়া প্রতিটি বিশেষ তিথিতেই বিশেষ পুজো অনুষ্ঠিত হয় এবং সেই উপলক্ষে দেবীকে সোনার গহনা দিয়েই সাজানো হয় এবং রুপো-চাঁদির বাসনে পুজোর ভোগ নিবেদন করা হয়|

সারাবছরই আমি আপনাদের সামনের বিভিন্ন কালী মন্দির ও কালী পুজো নিয়ে নানা তথ্য নিয়ে আসি,তাই এই ফল হারিনী অমাবস্যার পবিত্র সময়েও সেই পরম্পরা বজায় থাকবে|যারা আমার পোস্টে কমেন্ট করে আসন্ন অমাবস্যার বিশেষ পুজো, গ্রহদোষ খণ্ডন বা কোনো জ্যোতিষ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশ্ন করছেন তাদের জানিয়ে রাখি পেশাগত ভাবে আমি সর্বদা এই কাজে লিপ্ত আছি, বিস্তারিত জানতে উল্লেখিত নাম্বারে যোগাযোগ করে নেবেন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ| 

বাংলার কালী – মা সিদ্ধেশ্বরী

প্রতিবছর এই সময় অর্থাৎ এই ফলহারিনী অমাবস্যার আগের সময়টা পেশাগত ব্যাস্ততা প্রায় তুঙ্গে থাকে কারন এই সময় তন্ত্র ও জ্যোতিষ সংক্রান্ত কাজের জন্যে শ্রেষ্ট সময়,জ্যোতিষ শাস্ত্রে তিথি নক্ষত্র সব সময় গুরুত্বপূর্ণ, অন্য কোনো তিথীতর তুলনায় এই বিশেষ তিথি গুলিতে প্রতিকার গ্রহণ বা গ্রহ দোষ খণ্ডন অনেক বেশি কার্যকরী হয়|তাই বহু মানুষে যোগাযোগ করেন, তাছাড়া মা হৃদয়েশ্বরী সর্বমঙ্গলার মন্দির প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই অমাবস্যায় মন্দিরে বিশেষ পুজো, হোম যজ্ঞ ও গ্রহদোষ খণ্ডনে অংশ নেন বহু মানুষে|সশরীরে না হলেও প্রযুক্তির ব্যাবহারে বহু দূর থেকেও অনেক মানুষ এই প্রক্রিয়ায় অংশ নেন এবং উপকৃত হন|এবছর ও ব্যাতিক্রম নয়|তবু এই বাবস্ততার মধ্যেও আজ বাংলার কালী নিয়ে লিখবো, লিখবো কালনার বিখ্যাত সিদ্ধেশ্বরী মায়ের কথা|

প্রাচীন তন্ত্র সাধনার পীঠস্থান হিসাবে এই অঞ্চলের উল্লেখ আছে বহু প্রাচীন গ্রন্থে, আসল মন্দির এখানে কবে তৈরি হয়েছিলো ঠিক জানা যায়না, তবে আনুমানিক ১৭৪০ খ্রিষ্টাব্দে বর্ধমানের জমিদার চিত্রসেনের আমলে মন্দিরটি সংস্কার করা হয়|মনে করা জৈনদেবী অম্বুয়া বা অম্বিকাই পরে সিদ্ধেশ্বরীতে রূপান্তরিত হয়েছেন এবং বর্তমানে এখানে সিদ্বেশ্বরী কালী রূপে পূজিতা হন, আবার অন্য একটি মত অনুসারে সিদ্ধেশ্বরী দেবীকে বিখ্যাত মাতৃ সাধক অম্বরীশের আরাধ্য দেবী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়|

এই মন্দিরে দেবী মূর্তি নির্মিত নিমকাঠ দিয়ে।
দেবী এখানে বামাকালী মূর্তিতে বিরাজমান, দেবী শবরুপী শিবের উপর ভয়ঙ্করী রূপে দণ্ডায়মান |
বহু প্রাচীন রীতি অনুসারে সারা বছর দেবীকে দর্শন করা গেলেও শুধুমাত্র কোজাগরী পূর্ণিমার পরের কৃষ্ণা পঞ্চমী থেকে কৃষ্ণা ত্রয়োদশী পর্যন্ত দেবী দিগম্বরী থাকেন বলে ওই সময়ে মন্দিরের দরজা বন্ধ থাকে পুজো হয় তবে বাইরে থেকে|

মন্দিরের বাইরে রয়েছে একটি রহস্যময় বিরাট পুকুর যার নাম অম্বিকা পুকুর|শোনা যায় এক কালে পুকুরের জলের মধ্যে রাখা থাকত প্রচুর বাসনপত্র। গরিব মানুষ সেই বাসনপত্র বিয়ে বা অন্য কোনও সামাজিক অনুষ্ঠানে ব্যবহার করে, ফের জলের মধ্যে রেখে যেতেন। মন্দিরের নানা কাজে ওই পুকুরের জলই ব্যবহার করা হত। ওই পুকুরেই ছাগ স্নান করিয়ে মন্দিরে নিয়ে আসা হত বলির জন্য|

এক কালের তন্ত্র সাধনার জন্যে বিখ্যাত সিদ্বেশ্বরী কালী মন্দির বর্তমানেও সমান প্রসিদ্ধ ও বহু মানুষের আস্থার স্থল|প্রতি বছর কৌশিকী অমাবস্যা, দীপান্বিতা অমাবস্যা এবং ফলহারিনী অমাবস্যা উপলক্ষে এখানে বিশেষ পুজো হয় ও দূর দূর থেকে মানুষ আসেন দেবীকে দর্শন করতে, তার আশীর্বাদ নিতে ও নিজের মনোস্কামনা জানাতে|

আজ এখানেই শেষ করছি, আপনাদের জানিয়ে রাখি যারা আসন্ন ফলহারিনী অমাবস্যার এই বিশেষ সময়ে শাস্ত্র মতে নিজের জীবনের গ্রহগত কুপ্রভাব কাটাতে আগ্রহী, যারা আমার উপর এবং মা হৃদয়েশ্বরী সর্বমঙ্গলার মন্দিরের উপর আস্থা রাখতে ও বিশেষ পুজোয় অংশনিতে চান তারা উল্লেখিত নাম্বারে ফোন করে একবারে সরাসরি আমার সাথে কথা বলে নেবেন| ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|