Home Blog Page 107

কল্কি অবতার

আজ পুরান রহস্যর এই পর্বে ভগবান বিষ্ণুর কল্কি অবতার নিয়ে লিখছি, যা নিয়ে মানুষের কৌতূহল ও প্রশ্নের শেষ নেই|

অবতারবাদ বা অবতার তত্ব হিন্দু ধর্মের অন্যতম বৈশিষ্ট | যুগে যুগে ভগবান ভগবান অবতীর্ন হন একটি বিশেষ রূপে, কোনো একটি বিশেষ কার্য সম্পন্ন করতে বা জগৎ কে কোনো একটি ভয়ানক সংকট থেকে রক্ষা করতে|কাজ টি মিটে যাওয়ার পর তিনি আবার সেই বিশেষ অবতার রূপ ত্যাগ করেন যথা সময়ে |গীতা, পুরান এবং ভাগবত এ এই অবতার তত্বর ব্যাখ্যা পাওয়া যায় |

হিন্দু ধর্মে দশ অবতারের কথা বলা হয়েছে যথা মৎস্য , কূর্ম , বরাহ , নৃসিংহ , বামন , পরশুরাম , রাম , বলরাম , বুদ্ধ এবং কল্কি । এখানে , দশ অবতারের মধ্যে শ্রীকৃষ্ণের উল্লেখ নেই, কিন্তু কেনো? এর কারণ হচ্ছে , অন্যান্য অবতার ভগবানের অংশবিশেষ কিন্তু শ্রীমদ্ভাগবতপুরাণে বলা হয়েছে ” কৃষ্ণস্তু ভগবান্ স্বয়ম্ “। অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণ নিজেই ভগবান । তাই দশ অবতারের মধ্যে শ্রীকৃষ্ণের উল্লেখ নেই ।

এই দশ আবতারের সর্বশেষ অবতার হচ্ছে ‘কল্কি অবতার’ কল্ক’ অর্থ ‘পাপ’ আর ‘কল্কি’ অর্থ পাপ বিনাশকারী । কলিযুগের শেষে পৃথিবী যখন পাপে পরিপূর্ণ হবে, চারিদিকে যখন অন্যায় আর অধর্ম বিরাজ করবে তখন কল্কি বা পাপ বিনাশকারী অবতার আগমণ করবেন ।

মহা পুরান নয় তবে হিন্দু শাস্ত্রের আঠেরো টি উপপুরানের মধ্যে অন্যতম কল্কি পুরান | কল্কি পুরানে ভগবানের কল্কি অবতার এর আগমন বার্তা আছে আর আছে তার মহিমা| তার রূপ, স্বভাব, বৈশিষ্ট এবং সকল গুণাবলী ও আবির্ভাব এর উদ্দেশ্য আমরা বিস্তারিত জানতে পারি কল্কি পুরান থেকে |

কল্কি পুরানে একটি শ্লোকে বলা আছে –

“শম্ভলে বিষ্ঞুযশামে গৃহে প্রার্দুভাবাম্যহম সুমাতাং বিষ্ঞু যশম্য গর্ভ মাধব বৈষ্ঞবম ” ।

অর্থাৎ এখানে বলা হচ্ছে ভগবানের কল্কি অবতার শম্ভল শহরের প্রধান পুরোহিত গৃহে জন্মগ্রহণ করবেন । তার পিতার নাম হবে বিষ্ণুযশম এবং মাতার নাম হবে সুমতী|

শুধু তার জন্ম স্থান বা অভিভাবক নয় আরো অনেক তথ্য আছে কল্কি পুরানে | বৈশাখ মাসের শুক্লা পক্ষে তিনি জন্ম গ্রহন করবেন|আটটি গুন বর্তমান থাকবে তার চরিত্রে যথা প্রজ্ঞা, কুলীনতা, ইন্দ্রিয় দমন, শ্রুতি জ্ঞান,পরাক্রম,বাগ্মিতা, দান এবং কৃতজ্ঞতা । সাদা ঘোরা হবে তার বাহন,নানাবিধ অস্ত্র দ্বারা সজ্জিত হয়ে তিনি দুষ্টের দমন করবেন | সকল পাপ বিনাশ করে ধর্ম ও ন্যায় পুনর্স্থাপন করবেন তিনি | এই লড়াইয়ে সব দেবতারা তাকে সাহায্য করবেন |

বাকি অবতাররা পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়ে গেছেন অর্থাৎ তারা অতীত । এক মাত্র বাকি আছেন কল্কি তিনি আসবেন ভবিষ্যত থেকে |কলির শেষ প্রান্তে অন্যায় দমন করতে শ্রীবিষ্ণু কল্কিরুপে আবির্ভূত হবেন । কল্কি অবতার নিয়ে নানা মুনির না না মত কেউ বলেন তিনি এসে গেছেন কেউ আবার মনে করেন তিনি আমাদের অর্থাৎ প্রতিটি জীবের অন্তরে সদা বিরাজমান তবে গোটা বিশ্ব এবং সনাতন ধর্মে বিশ্বাসীরা কল্কি অবতারের প্রতীক্ষা করছেন এবং দৃঢ় বিশ্বাস তিনি আসবে |যারা মনে করেন শাস্ত্র সত্যি শাস্ত্রের প্রতিটি শব্দ ব্রহ্ম স্বরূপ তারা নিশ্চিত তার আগমনেই কলির সমাপ্তি ঘটবে|কল্কি পুরানে যা লিখিত আছে তা অক্ষরে অক্ষরে ফলে যাবে | শুধু সময়ের অপেক্ষা |

আবার লিখবো পরের পর্বে নতুন কোনো পৌরাণিক রহস্য নিয়ে|সঙ্গে থাকুন,পড়তে থাকুন আর অবশ্যই উল্লেখিত নাম্বারে যোগাযোগ করুন সঠিক জ্যোতিষ পরামর্শ ও প্রতিকারের জন্যে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

কালভৈরব

আজ পুরান রহস্যের এই পর্বে লিখবো কাল ভৈরব নিয়ে, জানবো কে এই কাল ভৈরব? কি ভাবেই বা তার আবির্ভাব হলো?এবং কি তার ধার্মিক ও আধ্যাত্মিক গুরুত্ব? কেনই বা তাকে নিয়ে এতো রহস্য|

শিব পুরানে আমরা এক ব্যতিক্রমী দেবতার নাম পাই, তিনি কাল ভৈরব, এছাড়া তন্ত্রেও আলাদা করে তার উল্লেখ পাওয়া যায়, সাধারণত প্রত্যেক শিব মন্দিরেই থাকে কালভৈরবের মূর্তি। দাঁড়িয়ে থাকেন কালভৈরব। তাঁর চার হাত। হাতে থাকে ডোমরু, পাশা, নরমুণ্ড ও ত্রিশূল। কোনও কোনও মূর্তিতে চারটির বেশি হাতও থাকে। তাঁর এই মূর্তি দিগম্বর|

হিন্দু পুরাণ গুলির পাশাপাশি বৌদ্ধ শাস্ত্র এবং জৈন ধর্মগ্রন্থ গুলির মাধ্যমে আমরা জানতে পারি কাল ভৈরব এর একটি বিশেষ ভূমিকা |প্রচলিত ধর্ম বিশ্বাস মতে মহাজগতের বিশেষ স্থানগুলি ভৈরব রক্ষা করেন এবং ভৈরবের মোট সংখ্য ৬৪। এই ভৈরব দের ৮টি শ্রেণিতে ভাগ করা হয় প্রত্যেক ভৈরবের একজন করে ভৈরবী থাকেন। অষ্টাঙ্গ ভৈরবের নামগুলি এই রকম —

অসিতাঙ্গ ভৈরব, রুরু ভৈরব, চণ্ড ভৈরব, ক্রোধ ভৈরব, উন্মত্ত ভৈরব, কপাল ভৈরব, ভীষণ ভৈরব এবং সংহার ভৈরব।প্রতিটি শ্রেণির আবার একজন করে প্রধান ভৈরব রয়েছেন। প্রধান ৮ ভৈরবকে ‘অষ্টাঙ্গ ভৈরব’ বলা হয়। এই আটজন মহাবিশ্বের আটটি দিকের অধিপতি। এই আট জন আবার নিয়ন্ত্রিত হন মহা স্বর্ণ কালভৈরবের দ্বারা। তিনি সাধারণভাবে কালভৈরব নামেই পরিচিত।অর্থাৎ ভৈরব ও কাল ভৈরব আলাদা এবং ভিন্ন তাদের স্বরূপ ও তাৎপর্য|

“কাল” অর্থাৎ সর্ব শক্তি মান সময় এবং “ভৈরব” একটি সংস্কৃত শব্দ যার অর্থ ‘ভয়ঙ্কর’ বা ‘ভয়াবহ’। শিবের একটি বিশেষ রূপকে বলা হয় ‘কাল ভৈরব’ শিব পুরাণবা ও অন্যান্য শাস্ত্রে কাল ভৈরব এর বিস্তৃত ব্যাখ্যা আছে |

কালভৈরব আসলে শিবেরই একটি বিশেষ রূপ বা শিবের অংশ বিশেষ । শিব অনুসারে কোনো একসময় ব্রহ্মা নাকি কোনও ধর্মবিরোধী কাজ করেছিলেন যার ফলে শিব অত্যন্ত রেগে যান ব্রহ্ম দেবের উপর। তাই সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মাকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য কালভৈরবকে সৃষ্টি করেছিলেন করেছিলেন শিব। অর্থ্যাৎ শিবের ক্রোধ থেকে জন্ম কাল ভৈরবের আর সেই কালভৈরবই ব্রহ্মার একটি মাথা কেটে নিয়েছিল। কিন্তু তারপর সেই ছিন্ন মস্তক ছুঁড়ে ফেলতে চাইলেও কালভৈরনের হাতেই আটকে ছিল সেটি।সেই অবস্থায় কিছু কাল ভ্রাম্যমান অবস্থায় কাটান তিনি |এদিকে ব্রহ্ম হত্যার পাপ অন্য দিকে এই অসহায় অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে কপাল ব্রত পালন করতে হয় তাঁকে।তাতেও তেমন ফল হয়না, অবশেষে কাশীতে আসার পর তাঁর হাত থেকে হটাৎ খোশে পড়ে যায় সেই মস্তক। তার পর শিব কাল ভৈরব কে নিষ্ঠা সহকারে কাশী তেই স্থাপন করেন এবং কাশীকে রক্ষা করার দায়িত্ব দেন কালভৈরবকে। তাই শিব হলেন কাশীর রাজা আর কালভৈরব তাঁর কোতোয়াল। তিনিই আশীর্বাদ করেন, তিনিই অভিশাপ দেন। এমনকি স্বয়ং যমরাজেরও নাকি কাশীবাসীকে শাস্তি দেওয়ার কোনও অধিকার নেই।কাশী তে কাল ভৈরব ই শেষ কথা |

তন্ত্রে এবং বৌদ্ধ ধর্মে কাল ভৈরব যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ, কাশীর কালভৈরব মন্দির নিয়েও রয়েছে নানা রহস্য|আসবো সে সব নিয়ে আলোচনায় তবে একটি অন্য পর্বে|আজ এই টুকুই|পড়ুন ভালো লাগলে জানান ও শেয়ার করুন আর জ্যোতিষ সংক্রান্ত কাজ বা সমস্যা নিয়ে কথা বলতে চাইলে যোগাযোগ করুন উল্লেখিত নাম্বারে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

বিদেশের শক্তি পীঠ – ইন্দ্রাক্ষ্মী

বিদেশের মাটিতে অবস্থিত শক্তি পীঠ গুলো নিয়ে আগের কয়েকটি পর্বে লিখেছি, আজকের পর্বে আরেকটি শক্তি পীঠ আপনাদের সামনে আনবো যা ভারতের প্রতিবেশি রাষ্ট্র শ্রীলংকায় অবস্থিত|

পুরাকালে শ্রীলংকা ছিলো রাবনের সোনার লঙ্কা এই লংকার জাফনার অন্যতম ধর্মীয় স্থান নাইনাতিভু৷ সেখানেই আছে এক প্রাচীন কালী মন্দির৷ বহু প্রাচীন এই এলাকা এক সময় কানদারোদাহ বা ভাল্লিপুরম রাজ্যের রাজধানী ছিল|এই স্থানেই রয়েছে এক প্রসিদ্ধ শক্তি পীঠ|

পৌরাণিক মত অনুযায়ী,প্রাচীন সিংহলের ওই স্থানেই পড়েছিল সতীর পায়ের মল৷ সতী এখানে ইন্দ্রাক্ষ্মী আর শিব হলেন রক্ষশেশ্বর৷ পৌরাণিক মত অনুসারে ইন্দ্রাক্ষ্মীর মূর্তি বানিয়ে পুজো করতেন স্বয়ং দেবরাজ ইন্দ্র|

আজও ধুমধাম করে কালীর আরাধনা হয় বৌদ্ধপ্রধান শ্রীলঙ্কাতে অবস্থিত ওই মন্দিরে|সারা বছর বহু দর্শনার্থীর আগমন ঘটে এই শক্তি পিঠে, তার পাশাপাশি বিশেষ বিশেষ কিছু তিথিতে বিশেষ পুজো ও সেই উপলক্ষে ব্যাপক জন সমাগমও চোখে পড়ে|

আবার কোনো নতুন শক্তি পিঠের অজানা কথা নিয়ে ফিরে আসবো আপনাদের সামনে|আপনাদের জানিয়ে রাখি নিয়মিত টিভির অনুষ্ঠানের পাশাপাশি আবার নিয়মিত ইউটিউব এ ফিরে আসবো শীগ্রই আর অনলাইন জ্যোতিষ পরামর্শ বা ভাগ্য গণনার পাশাপাশি কলকাতা ও জেলার চেম্বারেও আমাকে পাবেন আগামী দিনে|এই সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য পেতে ও ভাগ্যবিচারের জন্যে যোগাযোগ করতে পারেন উল্লেখিত নাম্বারে ভালো থাকুন

গরুড় পুরান ও নরক

আমাদের হিন্দু শাস্ত্রে গরুড় পুরান নামে একটি পুরান শাস্ত্র আছে|এই গরুড় পুরান আঠেরো টি মহা পুরানের অন্যতম |অনেক রহস্য অনেক অনেক গল্প ছড়িয়ে আছে গরুড় পুরানে যা নানা পন্ডিত না না ভাবে ব্যাখ্যা করে থাকে |আজ পুরান রহস্যর এই পর্বে আমি গরুড় পুরানের একটি রহস্যময় বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো|

পাপ পুন্য কি, নরক কেমন বা কোন পাপের কি শাস্তি, এই সব প্রশ্নের উত্তর অতি সুন্দর ভাবে দেয়া হয়েছে গরুড় পুরানে |এই প্রাচীন গ্রন্থে লিখিত আছে , খগরাজ গরুড় বিষ্ণুর কাছে জানতে চেয়েছিলেন পাপ ও তার শাস্তি বিষয়ে। বিষ্ণু যথাযত উত্তর দিয়েছেন সেই প্রশ্নের| অতি সুন্দর ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, বর্ণনা করেছেন | এই বর্ণনা সনাতন ধর্ম শাস্ত্রের এক অমূল্য সম্পদ |

ঋগবেদ, ব্রহ্ম পুরান ও ভাগবত পুরানে নরকের উল্লেখ আছে | নরক মর্ত ও পাতাল এর মধ্য বর্তী স্থানে দক্ষিণ দিশায় অবস্থিত|সেখানে পাপ পুণ্যের হিসেব হয় ও শাস্তি নির্বাচন হয় এই স্থানের শাসক স্বয়ং জমরাজ |কিন্তু নরকের সব থেকে বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায় গরুড় পুরানে | শুধু নরক বর্ণনা নয় প্রতিটি পাপের স্বাস্তি ও উল্লেখ করা আছে গরুড় পুরানে |যা এই পুরান কে এক অন্য মাত্রা দান করেছে |

গরুড় পুরানে বর্ণিত বিভিন্ন পাপের স্বাস্তি গুলি কিছুটা এইরূপ –

শুকরমুখম— যারা অন্যের উপরে অত্যাচার করে, বিশেষত যে সব রাজা প্রজাপীড়ন করেন। তাঁদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে এই নরক। এখানেও শাস্তি প্রহার।বেদম প্রহার করে যমদূতরা।

তমিশ্রম— অন্যের সম্পদ যদি কেউ আত্মসাৎ করেন, তাঁর জন্য রয়েছে এই নরক। যমদূত রা যমলোকে তাঁকে হাত বেঁধে ক্রমাগত প্রহার করবে । তাদের রক্তপাত হতে থাকবে এবং তারা জ্ঞান হারানো পর্যন্ত এই প্রহার চলবে।আদি অনন্ত কাল চলতে পারে এই প্রহার |

রৌরব— অন্যের সম্পদে বিলাসিতা, করা বা ভোগ ইত্যাদির জন্য রয়েছে এই শাস্তি। সাপে পরিপূর্ণ এই নরকে তাদের নিক্ষেপ করা হবে।

কুম্ভীপাক— জ্বলন্ত কুণ্ডে বসানো মহাকুম্ভে ফুটন্ত তেলে পাপী দের সেদ্ধ করা হবে, যারা নিজের আনন্দের জন্য পশুহত্যা করে।

মহারৌরব— এখানেও সাপ। এবং সমান যন্ত্রনা দায়ক । যারা উত্তরাধিকারী রাখে না, তাদের জন্য নির্ধারিত এই নরক।বিষধর সাপের হাতে তুলে দেয়া হবে এই পাপী দের

অন্ধকুপ— সৎ ব্যক্তকে যাঁরা পীড়ন করে এবং নিজের সামর্থ্য থাকতেও যারা কাউকে সাহায্য করে না, তাদেরই এখানে নিয়ে এসে এক কুয়োয় ফেলে দেওয়া হয়। সেখানে সিংহ, বাঘ, ঈগল থেকে শুরু করে বিষধর সাপ, বিছে ইত্যাদি তাদের নিরন্তর কামড়াতে থাকে।খুবলে খুবলে খায় ও যন্ত্রনা দেয় পাপী কে |

তপ্তমূর্তি— সোনা-রুপো চুরি করলে নরকের এই বিভাগে নিয়ে আসা হয়। লেলিহান আগুনে তাদের নিক্ষেপ করা হয়।

শাল্মলী— অসৎ ও ব্যাভিচারী স্ত্রী-পুরুষকে পাঠানো হয় এখানে। জ্বলন্ত থামকে আলিঙ্গন করতে বলা হয়। না করলে যমদূতরা জ্বলনত কাঠ দিয়ে পেটায়। মারতে থাকে যতদিন না শাস্তি সম্পূর্ণ হয় |

বজ্রকন্টকশালী— পশুকামিতার শাস্তি বিধান হয় এই নরকে। তীক্ষ্ণ হীরক-খচিত লৌহমানবকে আলিঙ্গন করতে বলা হয়। অত্যন্ত যন্ত্রনা দায়ক এই শাস্তি |

পুয়োদকম— অবৈধ যৌনতা এবং স্ত্রী দের ঠকানোর শাস্তি | রক্ত ও বিষাক্ত দ্রব্যে পূর্ন জলাধারে তাদের নিক্ষেপ করা হয়।

কালসূত্র— এই নরকও দারুণ উত্তপ্ত। গুরুজনদের ভক্তি না-করলে, অসম্মান করলে এখানে নিক্ষেপ করা হবে।

শুধু শাস্তি নয় প্রতিটি বিভাগ, যমদূত দের বর্ণনা ও জমরাজের ভূমিকা অতি সুন্দর ও নিখুঁত ভাবে চিত্রিত হয়েছে গরুড় পুরানে |গরুড় পুরান কে আত্মস্থ করে জীবনে প্রয়োগ করলে মানব সভ্যতা পাপ থেকে দূরে থাকবে এবং স্বর্গ লাভ করবে |তাই আমি বলি শাস্ত্র পড়ুন জানুন তার ব্যাখ্যা|আমি আবার ফিরে আসবো আগামী পর্বে নতুন এক রহস্য নিয়ে|যারা জ্যোতিষ সংক্রান্ত কাজের জন্যে কথা বলতে চান ফোন করুন উল্লেখিত নাম্বারে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

ইতু পুজো নিয়ে কিছু কথা

বাংলার পুজো এবং ব্রত গুলির মধ্যে একটি জনপ্রিয় ব্রত ইতু পুজোর ব্রত|আজ সেই শুভদিন, এই পবিত্র দিনে আপনাদের ইতু পুজোর ব্রত নিয়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবো|

সবার আগে জানা দরকার এই ইতু শব্দের প্রকৃত অর্থ হলো মিত্র এবং এখানে সূর্য কেই মূলত মিত্র নামেই অভিহিত করা হয় ।

অবশ্য ইতু পুজো সূর্য উপাসনা হলেও এই পুজোর রীতিও উপাচার বিশ্লেষণ করে ইতুকে মাতৃকাদেবী রূপেই গণ্য করে গ্রাম বাংলার মানুষ এবং এই পরম্পরা চলে আসছে যুগ যুগ ধরে|

এবার পুজোর রীতি নীতি বা উপাচার নিয়ে বলতে গেলে প্রথমেই যা উল্লেখ করতে হয় তা হলো ঘট|ইতুর ঘটের গায়ে পুতুল আঁকা এবং ভেতরে শস্যদানা ও তৃণগুচ্ছ রাখা হয়|প্রতীকী অর্থে শষ্যক্ষেত্র কে মাতৃ রূপে পুজো করা হয় ইতু পুজোর মাধ্যমে| শাস্ত্রীয় নিয়ম অনুসারে পুজো সম্পন্ন হলে ইতুকে বা ঘটকে বিসর্জন দিতে হয়|

এই পুজো সংক্রান্ত নিয়ম ও উপাচারে পার্থক্য চোখে পরে স্থান ভেদে|অর্থাৎ এক এক স্থানে এক একটি গোষ্ঠীর মধ্যে নিয়মের কিঞ্চিৎ রকমফের থাকতেই পারে|এই দিন পুজো চলাকালীন বাড়ির গৃহিনীরা ইতুর পাঁচালি বা ব্রত কথা পাঠও করেন কোথাও কোথাও|

তবে নিয়মের পার্থক্য যাই থাক এই পুজোর উদ্দেশ্য কিন্তু সর্বত্র একই তা হলো সূর্যদেব তথা প্রকৃতির আশীর্বাদ লাভ করে গৃহের কল্যাণ ও শ্রীবৃদ্ধি|

সবাইকে আমার পক্ষ থেকে ইতু পুজোর অনেক শুভেচ্ছা|পড়তে থাকুন আমার প্রতিটি পোস্ট এবং যোগাযোগ রাখুন যেকোনো জ্যোতিষ সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানের জন্য|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ

শুভ নানক জয়ন্তী

আজ ৩০ নভেম্বর সারা দেশ জুড়ে পালিত হবে শিখ সম্প্রদায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব নানক জয়ন্তী।কোথাও কোথাও এটি গুরু পর্ব বা প্রকাশোৎসব নামেও পরিচিত|

১৪৬৯ সালে তালবন্ডী নামক স্থানে শিখ ধর্মের অন্যতম ধর্মগুরু, গুরু নানক জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে এটি পাকিস্তানে অবস্থিত ও নানকানা সাহিব হিসেবে পরিচিত|গুরুনানকের জন্ম তিথিতেই প্রতি বছর পালিত হয় নানক জয়ন্তী|

আজ এই বিশেষ দিনে আসুন নতুন করে আরো একবার জানার চেষ্টা করি এই মহান গুরুর জীবন ও তার আধ্যাত্মিক কর্মকান্ড|

শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন উদাসীন প্রকৃতির|মনে করা হয় মাত্র ৭-৮ বছর বয়সে তিনি স্কুলে যাওয়া ছেড়ে দেন|এই সময়ে থেকেই তার মধ্যে ভগবত প্রাপ্তি সম্পর্কে নানান প্রশ্ন উঁকি দিতে থাকে|পরবর্তীতে গুরু নানক অধিকাংশ সময় আধ্যাত্মিক চিন্তাভাবনা ও সৎসঙ্গে কাটাতে শুরু করেন|

একটা সময়ের পর তার মধ্যে দৈব শক্তির প্রকাশ লক্ষ্য করা যায়|বোঝাযায় তিনি কোনো সাধারণ মানুষ নয়|তার জন্ম হয়েছে একটি বিশেষ লক্ষ্য পূরণের উদ্দেশ্য নিয়ে|কালক্রমে, আধ্যাত্মিক চর্চা ও সাধনার মধ্যে দিয়ে তিনি হয়ে উঠলেন সকলের শ্রদ্ধেয় গুরুনানক|শিখ সম্প্রদায় তথা সমগ্র মানব জাতীর কাছে এক প্রণম্য ব্যাক্তিত্ব|

এই মহান গুরুকে আমার প্রণাম ও শ্রদ্ধা জানাই|সবাইকে জানাই নানক জয়ন্তীর অনেক শুভেচ্ছা|দেখতে থাকুন আমার অনুষ্ঠান, পড়তে থাকুন আমার প্রতিটি লেখা, যোগাযোগ করুন প্রয়োজন মনে করলে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

দেবী জগদ্ধাত্রী

বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বন আর এই ধর্মীয় উৎসব গুলির অন্যতম জগৎধাত্রী পুজো|কিভাবে বাংলায় জগৎধাত্রী পুজোর প্রচলন হলো তা নিয়ে মতপার্থক্য থাকলেও নদিয়ার রাজা কৃষ্ণ চন্দ্রের হাত ধরে যে এই পুজো বাংলায় জনপ্রিয়তা লাভ করে সে বিষয়ে প্রায় সবাই একমত|

দুর্গাপুজোর একমাস পর কার্তিকের শুক্লা নবমী তিথিতে তাঁর স্বপ্নাদিষ্টের রূপের প্রতিমা নির্মাণ করিয়ে পুজোর আদেশ দেন কৃষ্ণচন্দ্রকে। সেই থেকেই নদিয়ায় জগদ্ধাত্রী পুজোর সূচনা। যা পরবর্তী কালে গোটা বাংলা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে|চন্দন নগরে প্রায় প্রধান উৎসব বলা হয় জগৎধাত্রী পুজোকে যা মহাসমারোহে পালিত হয়|ভিড় জমান দূর দূরান্তের মানুষ|

দেবী জগদ্ধাত্রী দূর্গারই এক রূপ তার বাহন সিংহের পদতলে একটি হস্তীমুণ্ড থাকে। প্রচলিত বিশ্বাস, জগদ্ধাত্রী করীন্দ্রাসুর অর্থাৎ মহাহস্তীরূপী অসুরকে বধ করেছিলেন। এই কারণে জগদ্ধাত্রী ‘করীন্দ্রাসুরনিসূদিনী’ নামে পরিচিত|

এবছর স্বাস্থ সংক্রান্ত বিধি নিষেধ বজায় রেখেই হচ্ছে জগৎধাত্রী পুজো|সেজে উঠছে মণ্ডপ|নিষ্ঠা ও ভক্তির অভাব নেই এতো টুকু|আপনারাও যোগ দিন এই পুজোয়|প্রার্থনা করুন দেবীর কাছে, নিজেদের মনোস্কামনা জানান|সবাইকে জগৎধাত্রী পুজোর শুভেচ্ছা|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

বনেদি বাড়ির দূর্গা পূজা – ছাতু বাবু লাটু বাবুর দূর্গা পুজো

আর হাতে গোনা কয়েকটা দিন বাকি তারপর শুরু হয়ে যাবে দুর্গোৎসব, যে উৎসবের জন্য সারাটা বছর অপেক্ষা করে বসে থাকেন প্রতিটা বাঙালি|এবছর দূর্গা পুজোয় নিশ্চই কিছু স্বাস্থ সংক্রান্ত বিধি নিষেধ থাকবে কিন্তু তবু পুজো কে ঘিরে মানুষের উৎসাহে ভাটা পড়েনি|যদিও আজ কাল থিম পুজোর ভিড়ে দূর্গা পুজোর আসল অন্তর্নিহিত অর্থ বা শাস্ত্রীয় আচার অনেকটাই ম্লান তবুও ব্যতিক্রম আছে|আজও বাংলার বহু জমিদার বাড়ি বা রাজবাড়ি সহ একাধিক বনেদি বাড়িতে নিষ্ঠা সহকারে, শাস্ত্রীয় মতে দূর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়|এই সব পুজোর রয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্য এবং এক গৌরবময় ইতিহাস|আজ থেকে এক নতুন ধারাবাহিক লেখনী শুরু করছি যেখানে পর্বে পর্বে এই সব বনেদি বাড়ির পুজোর কথা লিখবো|আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে এই পর্ব গুলি|আজ প্রথম পর্বে কলকাতার ছাতু বাবু লাটু বাবুর বাড়ির পুজো|

আজকের বিডন স্ট্রিটে রয়েছে একটি প্রাচীন ভগ্নপ্রায় অট্টালিকা যার পোশাকি নাম রামদুলাল নিবাস|এই বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা রাম দুলাল দে ছিলেন|পুরোনো কলকাতার বাবু সমাজের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র|শোনা যায় তিনি ছিলেন বাংলার প্রথম লাখপতি|তিন ব্রিটিশ আমলে আমদানি রপ্তানির ব্যবসা করে এই অগাধ সম্পত্তি করেছিলেন|তিনিই প্রথম এই বাড়িতে দূর্গা পূজা শুরু করেছিলেন|তার অবর্তমানে তার দুই পুত্র আশুতোষ দেব ওরফে ছাতুবাবু এবং প্রমথনাথ দেব ওরফে লাটুবাবুর সময়েই এই পুজো বিখ্যাত হয়|প্রতি বছর প্রচুর অর্থ ব্যায় করে ও ব্যাপক ধুম ধাম করে দূর্গা পুজো হতো এই বাড়িতে|দূর্গা পূজা উপলক্ষে প্রায় গোটা কলকাতার নিমন্ত্রণ থাকতো এই বাড়িতে|পুজোর সময় যাত্রা হত এমন কি বাঈ নাচের আসর ও বসতো|

সেই পুরোনো জৌলুস আর নেই তবু নিষ্ঠা সহকারে সকল প্রথা মেনে দূর্গা পুজো হয়|রথের দিন কাঠামো পুজোর পর প্রতিপদ থেকে শুরু হয় পুজো|এখানে শুরুর দিন থেকে ষষ্ঠী পর্যন্ত গৃহদেবতা শালগ্রাম শিলার পুজো করা হয় এবং তৃতীয়াতে দেবীকে আসনে বসানো হয়|এই বাড়িতে শাক্ত শৈব এবং বৈষ্ণব তিনটি মতেই পুজো হয়|উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো এই বাড়ির পুজোয় দেবীর পাশে লক্ষ্মী সরস্বতী থাকেন না এবং পদ্মের উপর থাকেন মা দুর্গার দুই সখী জয়া আর বিজয়া|

শোনা যায় এককালে এখানে পশু বলীও দেয়া হতো কিন্তু একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে বলী প্রথা বন্ধ হয়ে যায় বহু কাল আগে|বলা হয় একবার বলি দেওয়ার সময় পাঁঠাটি ছুটে চলে আসে সামনে দাঁড়ানো রামদুলাল দের কাছে। সেই থেকে এই পুজোয় পাঁঠাবলি বন্ধ হয়ে তার বদলে এখন আঁখ, চালকুমড়ো, শসা বলি হয় পুজোর তিন দিন|এছাড়া এখানে কুমারী পুজোও হয় নিষ্ঠা সহকারে|

আজকের পর্ব এখানেই শেষ করছি|দেখা হবে পরের পর্বে অন্য কোনো বনেদি বাড়ির পূজা কথা নিয়ে ফিরে আসবো|কেমন লাগছে অবশ্যই জানাবেন আর যারা আসন্ন নবরাত্রি বা দীপাবলি উপলক্ষে জ্যোতিষ পরামর্শ এবং গ্রহ দোষ খণ্ডনের কথা ভাবছেন অবশ্যই যোগাযোগ করতে পারেন উল্লেখিত নাম্বারে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

বনেদি বাড়ির দূর্গা পূজা – দাঁ পরিবারের পুজো

শুরু হয়ে গেলো নব রাত্রি উৎসব|চলবে নয় দিন|সারা দেশ জুড়ে পালিত হয় এই উৎসব যদিও আমরা বাঙালিরা সাধারণত চারদিন অর্থাৎ ষষ্ঠী থেকে নবমী দূর্গা পূজা হিসেবে পালন করে থাকি|এই দুর্গোৎসব এর পুন্য সময়ে আমি চেষ্টা করছি আপনাদের সামনে তুলে ধরতে আমাদের বাংলার তথা কলকাতার এক হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস যে ইতিহাসের সাথে যুক্ত রয়েছে অসংখ্য গল্প ও ঘটনা|আজ বনেদি বাড়ির পুজোতে বলবো দাঁ পরিবারের পুজোর কথা|

সেকালের কলকাতায় দূর্গা পুজো কে ঘিরে একটি প্রবাদ প্রচলিত ছিলো যে দেবী মর্ত লোকে পা রেখে প্রথমে সাজতে আসেন দাঁ বাড়িতে তার পর এখান থেকে অন্য কোথাও যান|কেনো এই প্রবাদ সৃষ্টি হলো তার পেছনেও একটি কারন আছে|সে বিষয়ে পড়ে আসছি আগে আগে এই এই পরিবার দুর্গাপূজার প্রচলন নিয়ে কয়েকটা কথা জানিয়ে রাখি|

কালী প্রসন্ন সিংহ তার বিখ্যাত হুতোম পেঁচার নকশা গ্রন্থে এই পরিবার সম্পর্কে অনেক তথ্যই দিয়েছেন|এই বংশের প্রতিষ্ঠা ও দূর্গা পুজোর প্রচলন করেন এই বংশের গোকুলচন্দ্র দাঁ সময় টা খুব সম্ভবত 1840 সাল| তিনি পরবর্তীতে শিবকৃষ্ণ দাঁ কে দত্তক নেন|এই শিব কৃষ্ণ দাঁ এর আমলে এই পরিবারের ও তাদের দূর্গা পুজোর নাম ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র|পারিবারিক লোহা, কয়লা আর হার্ডওয়ারের ব্যবসায় প্রভূত লাভ করেন তিনি এবং লাভের একটা বড়ো অংশ ব্যয় করেন নিজের সৌখিনতা ও পরিবারের দূর্গা পুজোয়|শোনা যায় শিবকৃষ্ণ দাঁ সাজগোজ করতে বড় ভালবাসতেন এবং দূর্গা পুজোয় দেবীর রূপ সজ্জায় তিনি প্রচুর অর্থ ব্যয় করতেন|

তার আমলে তিনি ফ্রান্স এবং জার্মানি থেকে বিশেষ কাজ করা অলঙ্কার ও পোশাক আনালেন ঠাকুরকে পরানোর জন্য|সোনা রুপো ও মূল্যবান রত্ন দিয়ে তৈরী পোশাকs ও গয়নায় দেবীকে সাজানো হতো|

আর একটি মজার ঘটনা এখানে উল্লেখ করা যায়|শোনা যায় জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ির সঙ্গে ছিলো এই দাঁ পরিবারের খুব রেষারেষি তাই তাদের দেখিয়ে দেখিয়ে ঠাকুরবাড়ির সামনে দেবীকে বেশ কয়েকবার ঘুরিয়ে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে তারপর গঙ্গায় নিয়ে যাওয়া হতো বিসর্জনের জন্য|

সেই রাজা আর নেই, রাজত্বও নেই|সবই ধূসর অতীত|তবু দাঁ বাড়িতে পুজো হয়|দেবীর সেই বিখ্যাত সাজ আজও হয়|এখানে রথের দিন গড়ানকাঠ পুজোর মধ্য দিয়ে প্রতিমা গড়ার কাজ শুরু হয় এবং জন্মাষ্টমীর দিন কাঠামোতে দেবীর মস্তক স্থাপন করা হয়|এ বাড়ির রীতি অনুসারে
দেবীর প্রাণ প্রতিষ্ঠার সময় তেরোটি শাড়ি ও তেরোটি কাঁসার পাত্র দেওয়া হয়। এছাড়াও একশো আটটি পেতলের প্রদীপ সাজানো হয়|এখানে বলী প্রথা নেই কারন পুজো হয় বৈষ্ণব মতে|কুমারী পুজোও এই বাড়ির পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট|

আজকের বনেদি বাড়ির পুজোর এই পর্ব এখানেই শেষ করলাম|ফিরবো আগামী পর্বে|যারা বিগত অমাবস্যায় মা হৃদয়েশ্বরী সর্বমঙ্গলা মন্দিরের বিশেষ পুজোয় অংশগ্রহণ করলেন তাদের ধন্যবাদ|আগামী দিনেও বিশেষ তিথি গুলিতে বিশেষ পুজোর ও গ্রহদোষ খণ্ডনের সু ব্যবস্থা থাকবে|মহাষ্টমী উপলক্ষে আপনারা অঞ্জলিও দিতে পারবেন অনলাইনে|সঙ্গে থাকুন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

কলকাতার কালী – ব্রহ্মময়ী কালী মন্দির

My documents, [18.10.20 08:37]
কলকাতার কালী – ব্রহ্মময়ী কালী মন্দির

পন্ডিতজি ভৃগুর শ্রীজাতক

অনেকেই হয়তো ভাবছেন এই কলকাতার কালী শীর্ষক ধারাবাহিক লেখনীর পর্ব গুলিতে আমি এখনো কেনো কালীঘাট বা দক্ষিনেশ্বর নিয়ে লিখলাম না|আসলে শক্তি পীঠ পর্ব গুলির মধ্যে ইতিমধ্যে কালী ঘাট নিয়ে দুটি বিশেষ পর্বে লেখা হয়ে গেছে এবং দক্ষিনেশ্বর নিয়েও কয়েকটি পর্বে একটি বিশেষ লেখা আগেও লিখেছি|যারা পড়েন নি অনুগ্রহ করে আমার ফেসবুক প্রোফাইলে বা ওয়েবসাইটে লেখাগুলি খুঁজে পড়তে পারেন|এই কলকাতার কালী পর্ব গুলিতে কলকাতা ও পার্শবর্তী অঞ্চলের সেই অর্থে কম প্রচারিত কিছু প্রসিদ্ধ এবং জাগ্রত কালী মন্দিরের কথা আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরছি|আজকের পর্বে ব্রহ্মময়ী কালী মন্দির|

উত্তর চব্বিশ পরগনার শ্যামনগর স্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি প্রাচীন গ্রাম যার নাম মুলজোড়া|এই গ্রামেই অবস্থিত প্রসিদ্ধ ব্রহ্মময়ী কালী মন্দির|
অবশ্য এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কলকাতার পাথুরিয়াঘাটার জমিদার গোপীমোহন ঠাকুর|এই মন্দির প্রতিষ্ঠার সাথে জড়িত আছে এক অলৌকিক কাহিনী|

প্রাচীন জনশ্রুতি অনুসারে গোপীমোহন ঠাকুরের মেয়ের নাম ছিল ব্রহ্মময়ী|মেয়ের যখন নয় বছর বয়েস তখন তার বিবাহের দিন নির্ধারিত হয়|বিবাহের দিন ব্রহ্মময়ী প্রথা অনুসারে গঙ্গাস্নানে গিয়ে হঠাৎই ডুবে যায় গঙ্গার জলে|অনেক খোঁজা খুঁজির পরেও তাকে আর পাওয়া যায় না|পড়ে দেখা যায় কলকাতার গঙ্গাঘাট থেকে স্রোতের টানে শবদেহ ভেসে এসেছে মূলাজোড়ের ঘাটে|

সেই রাতেই দেবী গোপীমোহনকে স্বপ্নাদেশ দেন যে তিনি স্বয়ং তার গৃহে এতদিন ব্রহ্মময়ী রূপে ছিলেন এবং গোপী মোহন যেনো শোক ভুলে মূলাজোড়ে ‘ব্রহ্মময়ী’ নামে একটি কালীমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন|দেবীর আদেশ গোপীমোহন অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন|প্রতিষ্ঠিত হয় এই ব্রহ্মময়ী কালী মন্দির ও কন্যা জ্ঞানে ব্রহ্মময়ীর পূজা শুরু হয়|সেই পুজো চলে আসছে আজও|

ভাগীরথী তীরে অবস্থিত কালী মন্দিরটি নবরত্ন শিল্পশৈলীতে নির্মিত রয়েছে উদ্যান ও ১২টি শিবমন্দি|মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রতিষ্ঠিত দেবী বিগ্রহটি কালোপাথরের নির্মিত যা উচ্চতায় প্রায় ফুট তিনেক|দেবী এখানে স্বর্ণালঙ্কারভূষিতা ও সবসনা|দেবী এখানে প্রসন্ন মুখমণ্ডলে বিরাজিতা ও ঘরের মেয়ে রূপে পূজিতা হন|

প্রতি অমাবস্যায় ও রটন্তী-চতুর্দশীতে বিশেষ কালীপূজা হয় এখানে এছাড়াও গোটা পৌষমাস ব্যাপী এখানে উৎসব হয় যা দেখতে আসেন অসংখ্য মানুষ|

আজকের পর্ব এখানেই শেষ করছি|তবে যাওয়ার আগে আরো একবার মনে করিয়ে দিয়ে যাই সামনেই কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তিথি রয়েছে|যারা এই সময়ে জ্যোতিষ পরামর্শ বা শাস্ত্র মতে গ্রহদোষ খণ্ডন করাতে চান তারা নির্দ্বিধায় যোগাযোগ করুন উল্লেখিত নাম্বারে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|