গরুড় পুরান ও নরক

1822

আমাদের হিন্দু শাস্ত্রে গরুড় পুরান নামে একটি পুরান শাস্ত্র আছে|এই গরুড় পুরান আঠেরো টি মহা পুরানের অন্যতম |অনেক রহস্য অনেক অনেক গল্প ছড়িয়ে আছে গরুড় পুরানে যা নানা পন্ডিত না না ভাবে ব্যাখ্যা করে থাকে |আজ পুরান রহস্যর এই পর্বে আমি গরুড় পুরানের একটি রহস্যময় বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো|

পাপ পুন্য কি, নরক কেমন বা কোন পাপের কি শাস্তি, এই সব প্রশ্নের উত্তর অতি সুন্দর ভাবে দেয়া হয়েছে গরুড় পুরানে |এই প্রাচীন গ্রন্থে লিখিত আছে , খগরাজ গরুড় বিষ্ণুর কাছে জানতে চেয়েছিলেন পাপ ও তার শাস্তি বিষয়ে। বিষ্ণু যথাযত উত্তর দিয়েছেন সেই প্রশ্নের| অতি সুন্দর ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, বর্ণনা করেছেন | এই বর্ণনা সনাতন ধর্ম শাস্ত্রের এক অমূল্য সম্পদ |

ঋগবেদ, ব্রহ্ম পুরান ও ভাগবত পুরানে নরকের উল্লেখ আছে | নরক মর্ত ও পাতাল এর মধ্য বর্তী স্থানে দক্ষিণ দিশায় অবস্থিত|সেখানে পাপ পুণ্যের হিসেব হয় ও শাস্তি নির্বাচন হয় এই স্থানের শাসক স্বয়ং জমরাজ |কিন্তু নরকের সব থেকে বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায় গরুড় পুরানে | শুধু নরক বর্ণনা নয় প্রতিটি পাপের স্বাস্তি ও উল্লেখ করা আছে গরুড় পুরানে |যা এই পুরান কে এক অন্য মাত্রা দান করেছে |

গরুড় পুরানে বর্ণিত বিভিন্ন পাপের স্বাস্তি গুলি কিছুটা এইরূপ –

শুকরমুখম— যারা অন্যের উপরে অত্যাচার করে, বিশেষত যে সব রাজা প্রজাপীড়ন করেন। তাঁদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে এই নরক। এখানেও শাস্তি প্রহার।বেদম প্রহার করে যমদূতরা।

তমিশ্রম— অন্যের সম্পদ যদি কেউ আত্মসাৎ করেন, তাঁর জন্য রয়েছে এই নরক। যমদূত রা যমলোকে তাঁকে হাত বেঁধে ক্রমাগত প্রহার করবে । তাদের রক্তপাত হতে থাকবে এবং তারা জ্ঞান হারানো পর্যন্ত এই প্রহার চলবে।আদি অনন্ত কাল চলতে পারে এই প্রহার |

রৌরব— অন্যের সম্পদে বিলাসিতা, করা বা ভোগ ইত্যাদির জন্য রয়েছে এই শাস্তি। সাপে পরিপূর্ণ এই নরকে তাদের নিক্ষেপ করা হবে।

কুম্ভীপাক— জ্বলন্ত কুণ্ডে বসানো মহাকুম্ভে ফুটন্ত তেলে পাপী দের সেদ্ধ করা হবে, যারা নিজের আনন্দের জন্য পশুহত্যা করে।

মহারৌরব— এখানেও সাপ। এবং সমান যন্ত্রনা দায়ক । যারা উত্তরাধিকারী রাখে না, তাদের জন্য নির্ধারিত এই নরক।বিষধর সাপের হাতে তুলে দেয়া হবে এই পাপী দের

অন্ধকুপ— সৎ ব্যক্তকে যাঁরা পীড়ন করে এবং নিজের সামর্থ্য থাকতেও যারা কাউকে সাহায্য করে না, তাদেরই এখানে নিয়ে এসে এক কুয়োয় ফেলে দেওয়া হয়। সেখানে সিংহ, বাঘ, ঈগল থেকে শুরু করে বিষধর সাপ, বিছে ইত্যাদি তাদের নিরন্তর কামড়াতে থাকে।খুবলে খুবলে খায় ও যন্ত্রনা দেয় পাপী কে |

তপ্তমূর্তি— সোনা-রুপো চুরি করলে নরকের এই বিভাগে নিয়ে আসা হয়। লেলিহান আগুনে তাদের নিক্ষেপ করা হয়।

শাল্মলী— অসৎ ও ব্যাভিচারী স্ত্রী-পুরুষকে পাঠানো হয় এখানে। জ্বলন্ত থামকে আলিঙ্গন করতে বলা হয়। না করলে যমদূতরা জ্বলনত কাঠ দিয়ে পেটায়। মারতে থাকে যতদিন না শাস্তি সম্পূর্ণ হয় |

বজ্রকন্টকশালী— পশুকামিতার শাস্তি বিধান হয় এই নরকে। তীক্ষ্ণ হীরক-খচিত লৌহমানবকে আলিঙ্গন করতে বলা হয়। অত্যন্ত যন্ত্রনা দায়ক এই শাস্তি |

পুয়োদকম— অবৈধ যৌনতা এবং স্ত্রী দের ঠকানোর শাস্তি | রক্ত ও বিষাক্ত দ্রব্যে পূর্ন জলাধারে তাদের নিক্ষেপ করা হয়।

কালসূত্র— এই নরকও দারুণ উত্তপ্ত। গুরুজনদের ভক্তি না-করলে, অসম্মান করলে এখানে নিক্ষেপ করা হবে।

শুধু শাস্তি নয় প্রতিটি বিভাগ, যমদূত দের বর্ণনা ও জমরাজের ভূমিকা অতি সুন্দর ও নিখুঁত ভাবে চিত্রিত হয়েছে গরুড় পুরানে |গরুড় পুরান কে আত্মস্থ করে জীবনে প্রয়োগ করলে মানব সভ্যতা পাপ থেকে দূরে থাকবে এবং স্বর্গ লাভ করবে |তাই আমি বলি শাস্ত্র পড়ুন জানুন তার ব্যাখ্যা|আমি আবার ফিরে আসবো আগামী পর্বে নতুন এক রহস্য নিয়ে|যারা জ্যোতিষ সংক্রান্ত কাজের জন্যে কথা বলতে চান ফোন করুন উল্লেখিত নাম্বারে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|