কল্কি অবতার

1718

আজ পুরান রহস্যর এই পর্বে ভগবান বিষ্ণুর কল্কি অবতার নিয়ে লিখছি, যা নিয়ে মানুষের কৌতূহল ও প্রশ্নের শেষ নেই|

অবতারবাদ বা অবতার তত্ব হিন্দু ধর্মের অন্যতম বৈশিষ্ট | যুগে যুগে ভগবান ভগবান অবতীর্ন হন একটি বিশেষ রূপে, কোনো একটি বিশেষ কার্য সম্পন্ন করতে বা জগৎ কে কোনো একটি ভয়ানক সংকট থেকে রক্ষা করতে|কাজ টি মিটে যাওয়ার পর তিনি আবার সেই বিশেষ অবতার রূপ ত্যাগ করেন যথা সময়ে |গীতা, পুরান এবং ভাগবত এ এই অবতার তত্বর ব্যাখ্যা পাওয়া যায় |

হিন্দু ধর্মে দশ অবতারের কথা বলা হয়েছে যথা মৎস্য , কূর্ম , বরাহ , নৃসিংহ , বামন , পরশুরাম , রাম , বলরাম , বুদ্ধ এবং কল্কি । এখানে , দশ অবতারের মধ্যে শ্রীকৃষ্ণের উল্লেখ নেই, কিন্তু কেনো? এর কারণ হচ্ছে , অন্যান্য অবতার ভগবানের অংশবিশেষ কিন্তু শ্রীমদ্ভাগবতপুরাণে বলা হয়েছে ” কৃষ্ণস্তু ভগবান্ স্বয়ম্ “। অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণ নিজেই ভগবান । তাই দশ অবতারের মধ্যে শ্রীকৃষ্ণের উল্লেখ নেই ।

এই দশ আবতারের সর্বশেষ অবতার হচ্ছে ‘কল্কি অবতার’ কল্ক’ অর্থ ‘পাপ’ আর ‘কল্কি’ অর্থ পাপ বিনাশকারী । কলিযুগের শেষে পৃথিবী যখন পাপে পরিপূর্ণ হবে, চারিদিকে যখন অন্যায় আর অধর্ম বিরাজ করবে তখন কল্কি বা পাপ বিনাশকারী অবতার আগমণ করবেন ।

মহা পুরান নয় তবে হিন্দু শাস্ত্রের আঠেরো টি উপপুরানের মধ্যে অন্যতম কল্কি পুরান | কল্কি পুরানে ভগবানের কল্কি অবতার এর আগমন বার্তা আছে আর আছে তার মহিমা| তার রূপ, স্বভাব, বৈশিষ্ট এবং সকল গুণাবলী ও আবির্ভাব এর উদ্দেশ্য আমরা বিস্তারিত জানতে পারি কল্কি পুরান থেকে |

কল্কি পুরানে একটি শ্লোকে বলা আছে –

“শম্ভলে বিষ্ঞুযশামে গৃহে প্রার্দুভাবাম্যহম সুমাতাং বিষ্ঞু যশম্য গর্ভ মাধব বৈষ্ঞবম ” ।

অর্থাৎ এখানে বলা হচ্ছে ভগবানের কল্কি অবতার শম্ভল শহরের প্রধান পুরোহিত গৃহে জন্মগ্রহণ করবেন । তার পিতার নাম হবে বিষ্ণুযশম এবং মাতার নাম হবে সুমতী|

শুধু তার জন্ম স্থান বা অভিভাবক নয় আরো অনেক তথ্য আছে কল্কি পুরানে | বৈশাখ মাসের শুক্লা পক্ষে তিনি জন্ম গ্রহন করবেন|আটটি গুন বর্তমান থাকবে তার চরিত্রে যথা প্রজ্ঞা, কুলীনতা, ইন্দ্রিয় দমন, শ্রুতি জ্ঞান,পরাক্রম,বাগ্মিতা, দান এবং কৃতজ্ঞতা । সাদা ঘোরা হবে তার বাহন,নানাবিধ অস্ত্র দ্বারা সজ্জিত হয়ে তিনি দুষ্টের দমন করবেন | সকল পাপ বিনাশ করে ধর্ম ও ন্যায় পুনর্স্থাপন করবেন তিনি | এই লড়াইয়ে সব দেবতারা তাকে সাহায্য করবেন |

বাকি অবতাররা পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়ে গেছেন অর্থাৎ তারা অতীত । এক মাত্র বাকি আছেন কল্কি তিনি আসবেন ভবিষ্যত থেকে |কলির শেষ প্রান্তে অন্যায় দমন করতে শ্রীবিষ্ণু কল্কিরুপে আবির্ভূত হবেন । কল্কি অবতার নিয়ে নানা মুনির না না মত কেউ বলেন তিনি এসে গেছেন কেউ আবার মনে করেন তিনি আমাদের অর্থাৎ প্রতিটি জীবের অন্তরে সদা বিরাজমান তবে গোটা বিশ্ব এবং সনাতন ধর্মে বিশ্বাসীরা কল্কি অবতারের প্রতীক্ষা করছেন এবং দৃঢ় বিশ্বাস তিনি আসবে |যারা মনে করেন শাস্ত্র সত্যি শাস্ত্রের প্রতিটি শব্দ ব্রহ্ম স্বরূপ তারা নিশ্চিত তার আগমনেই কলির সমাপ্তি ঘটবে|কল্কি পুরানে যা লিখিত আছে তা অক্ষরে অক্ষরে ফলে যাবে | শুধু সময়ের অপেক্ষা |

আবার লিখবো পরের পর্বে নতুন কোনো পৌরাণিক রহস্য নিয়ে|সঙ্গে থাকুন,পড়তে থাকুন আর অবশ্যই উল্লেখিত নাম্বারে যোগাযোগ করুন সঠিক জ্যোতিষ পরামর্শ ও প্রতিকারের জন্যে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|