দেবী লক্ষীর পুজোর প্রচলন

20

দেবী লক্ষীর পুজোর প্রচলন

 

পন্ডিত জি ভৃগুর শ্রী জাতক

 

আগামী কালই কোজাগরী লক্ষী পুজো|দেবী আসবেন আমাদের গৃহে|তার আশীর্বাদে ও কৃপায় ধন্য হবে আমাদের জীবন|সুখ ও সমৃদ্ধি আসবে ঘরে ঘরে|সেই উপলক্ষে দেবী লক্ষীর মাহাত্ম নিয়ে এই কয়েকটি দিন আলোচনা করছি।

 

আগের পর্বে দেবী লক্ষীর আবির্ভাব এবং তার বিবাহ নিয়ে পৌরাণিক যা ব্যাখ্যা আছে তা আপনাদের শুনিয়াছিলাম আজ জানবো লৌকিক দেবী হিসেবে তার মাহাত্ম্য এবং মর্তে দেবীর পুজোর প্রচলন নিয়ে এক অলৌকিক ঘটনা।

 

কথিত আছে একবার দোলপূর্ণিমার রাতে নারদ বৈকুণ্ঠে লক্ষ্মী ও নারায়ণের কাছে গিয়ে মর্ত্যের অধিবাসীদের নানা দুঃখকষ্টের কথা বললেন। লক্ষ্মী মানুষের নিজেদের কুকর্মের ফলকেই এই সব দুঃখের কারণ বলে চিহ্নিত করলেন। কিন্তু নারদের অনুরোধে মানুষের দুঃখকষ্ট ঘোচাতে তিনি মর্ত্যলোকে লক্ষ্মীব্রত প্রচার করতে এলেন।

 

এই সময়ে অবন্তী নগরে ধনেশ্বর নামে এক ধনী বণিক বাস করতেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর ছেলেদের মধ্যে বিষয়সম্পত্তি ও অন্যান্য ব্যাপার নিয়ে ঝগড়া চলছিল। ধনেশ্বরের বিধবা পত্নী সেই ঝগড়ায় অতিষ্ট হয়ে বনে আত্মহত্যা করতে এসেছিলেন। লক্ষ্মী তাঁকে দেখা দেন এবং লক্ষ্মীব্রত করার উপদেশ দিয়ে ফেরত পাঠালেন। ধনেশ্বরের স্ত্রী নিজের পুত্রবধূদের দিয়ে লক্ষ্মীব্রত করাতেই তাঁদের সংসারের সব দুঃখ ঘুচে গেল। ফলে লক্ষ্মীব্রতের কথা অবন্তী নগরে প্রচারিত হয়ে গেল। একদিন অবন্তীর সধবারা লক্ষ্মীপূজা করছেন, এমন সময় এক যুবক বণিক এসে তাদের ব্রতকে ব্যঙ্গ করল। ফলে লক্ষ্মী তার উপর কুপিত হলেন। সেও সমস্ত ধনসম্পত্তি হারিয়ে অবন্তী নগরে ভিক্ষা করতে লাগল। তারপর একদিন সধবাদের লক্ষ্মীপূজা করতে দেখে সে অনুতপ্ত হয়ে লক্ষ্মীর কাছে ক্ষমা চাইল। লক্ষ্মী তাকে ক্ষমা করে তার সব ধনসম্পত্তি ফিরিয়ে দিলেন। এই ভাবে সমাজে লক্ষ্মীব্রত প্রচলিত হল|

 

কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো দক্ষিণ ভারত ও পূর্ব ভারতে অত্যন্ত জনপ্রিয় হলেও উত্তর ও পশ্চিম-ভারতে মা লক্ষ্মীর আবাহন মূলত হয় ধনতেরাস-দিওয়ালি তিথিকে কেন্দ্র করে|বাংলায় লক্ষ্মীপুজোর সংস্কৃতি ভারতের অন্যান্য রাজ্যের থেকে একটু অন্যরকম। যেমন ভারতের বেশিরভাগ অঞ্চলে শুক্রবার মহালক্ষ্মীর উপবাস রাখা হয় ও বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়। ওদিকে বাংলার ঘরে ঘরে বৃহস্পতিবারই লক্ষ্মীবার তবে শাস্ত্র মতে প্রতি বৃহস্পতিবারই নিষ্ঠা সহকারে দেবী লক্ষীর পুজো করলে গৃহের কল্যাণ হয়|

 

লক্ষী পুজোর এই বিশেষ সময়ে জ্যোতিষ পরামর্শ বা প্রতিকার অনেক বেশি কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে। তাছাড়া গ্রহ দোষ খণ্ডন। বাস্তু দোষ নিবারণ এবং শ্রী যন্ত্র স্থাপন করার জন্যও এটি আদৰ্শ সময়।

 

সবাইকে কোজাগরী লক্ষী পুজোর আগাম শুভেচ্ছা। ফিরে আসবো দেবী লক্ষীকে নিয়ে শাস্ত্রীয় আলোচনায় আবার আগামী পর্বে।

পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।