Home Blog Page 102

কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ

বেশ কিছুদিন হলো ভারতের কোনো সিদ্ধ পুরুষ বা সাধকের কথা আপনাদের বলা হয়নি, তবে ধারাবাহিক ভাবে লেখা যখন শুরু যখন করেছি এগিয়ে তো নিয়ে যেতে হবে এবং আধ্যাত্মিকতার দেশ ভারতে এমন অসংখ্য সাধক রয়েছেন যাদের কথা আপনাদের জানাবো বলে ঠিক করেই রেখেছি|তাই আজ পেশাগত ব্যাস্ততা থেকে কিছুটা সময় বের করে দেশের তথা বাংলার এক প্রসিদ্ধ এবং জগৎ বিখ্যাত তন্ত্র সাধকের কথা আপনাদের বলবো,তান্ত্রিক কালী-সাধক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ

তন্ত্র সাধক কৃষ্ণানন্দ সপ্তদশ শতকে পশ্চিমবঙ্গের নবদ্বীপে এক পণ্ডিত-বংশে জন্মগ্রহণ করেন। মনে করা হয় বাংলার সাধকগণ যখন তন্ত্রের মূলধারা থেকে বিচ্যুত হয়ে যাচ্ছিলেন তখন আদ্যাশক্তি মহামায়া স্বয়ং তাঁকে তন্ত্রশাস্ত্রের পুনরুদ্ধার এবং তাঁর মাতৃরূপিণী বিগ্রহের পূজা করার নির্দেশ দেন।এনিয়ে অনেক অলৌকিক কাহিনীও প্রচলিত রয়েছে যার কিছু আজ আমিও আপনাদের বলবো|

কথিত আছে, কৃষ্ণানন্দ কোনো এক ধনী ব্যক্তির বাড়ি দুর্গাপূজা করতে গিয়েছিলেন, সেখানে দুর্গাপূজার শেষে ওই বাড়ির কর্তা নিজের অহংবোধের বশবর্তী হয়ে কৃষ্ণানন্দকে বলেন যে তিনি প্রতিমার প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেননি। কৃষ্ণানন্দ ক্রুদ্ধ হয়ে বলেন যে তিনি যদি প্রাণপ্রতিষ্ঠা না করে থাকেন এক্ষুনি তার প্রমাণ দেবেন, তবে প্রমাণ হওয়ার পরে ওই গৃহের কেউ আর জীবিত থাকবেনা। কর্তা তাতেই রাজি হলেন,কৃষ্ণানন্দ একটি কুশি ছুঁড়ে দেন দেবী প্রতিমার ঊরুতে। সঙ্গে সঙ্গে প্রতিমার ঊরু ফেটে রক্তপাত হয়; এবং ওই গৃহের প্রত্যেকেও মুখে রক্ত উঠে তৎক্ষণাৎ মারা যান|এমন অসংখ্য অলৌকিক ঘটনা রয়েছে এই মহান মাতৃ সাধকের জীবন জুড়ে|

সাধনার শুরুতে কৃষ্ণানন্দ মহামায়াকে বললেন, ‘‘মা, তোমার যে রূপের পূজা আমি করব আমাকে সে রূপ দেখিয়ে দাও’’। তখন মা বললেন, ‘‘যে ভঙ্গীতে আমার এই বিগ্রহের পূজা তোমার দ্বারা প্রচলিত হবে, তা আমি মানবদেহের মাধ্যমেই দেখিয়ে দেব। এই রাত শেষে সর্ব প্রথম যে নারীকে যে রূপে যে ভঙ্গীতে দেখবে, ঐরকম মূর্তিতে আমার পূজার প্রচলন করবে। মায়ের নির্দেশমত পরদিন ভোরে কৃষ্ণানন্দ গঙ্গার দিকে কিছু দূর অগ্রসর হওয়ার পর এক শ্যামাঙ্গিনী বালিকাকে দেখতে পান। ওই বালিকা তখন অপরূপ ভঙ্গীতে কুটিরের বারান্দার উপরে এবং বামপদ ভূতলে দিয়ে দাড়িয়ে ছিলেন। তিনি একতাল গোময়যুক্ত ডান হাত এমনভাবে উচু করে ধরেছিলেন যা দেখে বরাভয় মুদ্রার মত মনে হয়েছিল। বাম হাত দিয়ে তিনি কুটিরের দেয়ালে মাটির প্রলেপ দিচ্ছিলেন। তিনি ক্ষুদ্র পরিসরে একটি শাড়ি পড়ে ছিলেন। তাই কৃষ্ণানন্দকে দেখে তিনি লজ্জায় জিভ কেটেছিলেন।তাঁর এরকম ভঙ্গী দেখে কৃষ্ণানন্দের মায়ের প্রত্যাদেশের কথা মনে পড়ে গেল। তারপরই তিনি মায়ের ঐরকম মূর্তি রচনা করে পূজার প্রচলন করলেন।

এর পর একে একে কঠিন সব সাধনা ও তাতে সিদ্ধি লাভ করে ধীরে ধীরে তন্ত্র জগতে তিনি হয়ে উঠলেন কিংবদন্তী, প্রবাদপ্রতিম|তিনি ছিলেন শ্রীশ্রী রামপ্রসাদ সেনের তন্ত্রগুরু, পরবর্তীতে তার জীবন নিয়ে লেখা হয়েছে গল্প হয়েছে সিনেমা|

সারা জীবন ব্যাপী তন্ত্র সাধনার পাশাপাশি কৃষ্ণানন্দ তন্ত্রসার ও শ্রীতত্ত্ববোধিনী নামক দুখানা গুরুত্বপূর্ণ বই লিখেছিলেন যা সর্বত্র সমাদৃত হয়েছিলো এবং আজও তন্ত্র সাধনার ক্ষেত্রে ও আধ্যাত্মিক চর্চার ক্ষেত্রে এই বই দুটির ভূমিকা অপরিসীম|

এই মহান তন্ত্র সাধক ও মাতৃ সাধককে আমার সশ্রদ্ধ প্রনাম জানিয়ে আজকের পর্ব শেষ করছি, যারা আমার কাছে আসতে চান জ্যোতিষ সংক্রান্ত কাজ নিয়ে তাদের বলবো উল্লেখিত নাম্বারে একবার ফোন করে নিতে, আমাকে কখন কোথায় ও কবে পাওয়া যাবে সব জানতে পারবেন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ| 

পক্কানেশ্বরী কালী মন্দির

মৌনী অমাবস্যার ব্যস্ততা বা রটন্তী কালীপুজোর যাবতীয় কাজ শেষ আপাতত তবে বাংলার কালী মন্দির ও সেই সংক্রান্ত রহস্যর কোনো শেষ নেই তাই নিয়মিত টিভির অনুষ্ঠান ও জ্যোতিষ চর্চার পাশাপাশি আজ লিখবো আরেকটি রহস্যময় কালীমন্দিরের কথা|আজকের পর্বে শান্তিপুরের পক্কানেশ্বরী কালী মন্দির|

শান্তিপুরের এই ঐতিহ্যশালী জজ-পন্ডিত বাড়ীতে আনুমানিক ১৮৭০ খ্রীষ্টাব্দে আদি পুরুষ স্বর্গীয় শ্রী পিতাম্বর চট্টোপাধ্যায় মহাশয় পক্কানেশ্বরী দেবীর এই পূজার শুরু করেন|দেবী কালীকেই এখানে পক্কানেশ্বরী নামে ডাকা হয়, কেনো এই নাম সেই প্রসঙ্গে পরে আসছি|

কথিত আছে দেবী এখানে অতি সাধারণ বেশে বিরাজিতা, তিনি ধন দৌলত, জাঁকজমক বা রাজকীয় সাজ চান না, তিনি এই অতি সাধারণ রূপেই থাকতে চান এমন কি অসাধারণ রূপে তাকে গড়ে তোলার চেষ্টা হতেই তিনি হয়ে উঠেছেন ভয়ঙ্করী|আর এখানেই এই মন্দিরের রহস্য|

এখানে দেবীর আসন মাটি দিয়ে তৈরি ও অতি প্রাচীন ওই আসন এবং বেদি মার্বেল পাথর দিয়ে সাজাতে গিয়েই মারাত্মক ভৌতিক ঘটনার সাক্ষী হন পরিবারের মানুষ। মৃত্যু হয় পরিবারের সদস্যরেও। সেই থেকেই মাটির আসনেই পূজিতা হন জজ পণ্ডিত বাড়ির কালী পুজো|

শোনা যায়, একবার মায়ের এই পঞ্চমুন্ডীর আসন বাঁধাই করে নির্ম্মাণ করার কাজে বাড়ীর এক পূর্ব্বপুরুষ উৎসাহী হয়েছিলেন। তাঁর আদেশানুসারে শ্রমিকরা কাজও শুরু করেছিল। কিন্তু এরপর থেকেই বিভিন্ন ভৌতিক কান্ড কারখানায় ভীত হয়ে শ্রমিকরা পালায়। নানা রকম ভৌতিক অভিজ্ঞতা হয়েছিল পরিবারের সদ্যদেরও। কিন্তু এতেও না দমে ওই সদস্য নিজেই কোদাল দিয়ে ওই বেদী বাঁধাই করতে যান। বেদীত একটি কোপ পড়া মাত্র তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সেখানেই মারা যান, আর কখনো কেউ এই দুঃসাহস দেখান নি, দেবীর ইচ্ছে মেনে নিয়ে সেই থেকে বেদীর চারপাশ বাঁধানো হলেও প্রধান বেদীটি আজও গোবর এবং মাটি দ্বারা নির্ম্মাণ করা হয় প্রতি বৎসর।

দেবী পক্কানেশ্বরী কে নিয়ে ভয় ও ভক্তি দুই ই আছে তার ভক্ত দের মধ্যে, আর দেবীর প্রতি শ্রদ্ধা ও আস্থা অগাধ|এক কালে ১৮ টি মোষ এবং ১০৮ টি পাঁঠা বলি হতো পুজোয় তবে কেবলমাত্র পাঁঠাবলির রীতি প্রচলিত আছে, দেবীর পুজোয় থাকে ২০ থেকে ২২ প্রকার নানাবিধ রকমারি পদ সহকারে নৈবেদ্য আর থাকে দেবীর অতি প্ৰিয় গজা ও পক্কান্ন এবং এই পক্কান্ন থেকেই দেবীর নাম পক্কানেশ্বরী|

আবার ফিরবো পরের পর্বে অন্য কোনো মন্দিরের রহস্য নিয়ে|পড়তে থাকুন, সঙ্গে থাকুন আর জ্যোতিষ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আমার কাছে আসতে হলে বা অনলাইনে সমস্যার সমাধান চাইলে যোগাযোগ করুন উল্লেখিত নাম্বারে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

শেকলে বাঁধা কালী

মৌনী অমাবস্যা, রটন্তী কালী পূজা, সব মিলিয়ে এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক সময়ের মধ্যে দিয়ে আমরা এগিয়ে চলেছি, জ্যোতিষ এবং তন্ত্র জগতে এই সময়ের তাৎপর্য অপরিসীম তাই এই বিশেষ সময়ে আমার আধ্যাত্মিক লেখালেখিও কালী এবং তার মহাত্ম কে কেন্দ্র করেই চলছে, আজ এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে লিখবো একটি অদ্ভুত কালী মন্দিরের কথা, মুর্শিদাবাদের লাল গোলার প্রসিদ্ধ শিকলে বাঁধা কালী বা শৃঙ্খলিত কালী|

মুর্শিদাবাদের লালগোলার শ্রীমন্তপুরের এই কালী মন্দির এখন সর্বত্র জনপ্রিয়, সালটা 1790, স্বপ্নাদেশে তৎকালীন লালগোলার রাজা রামশঙ্কর রায় নির্দেশ পান,এই রাজ পরিবারের দ্বারা অধিষ্ঠিত হয়েই কালীমন্দির পূজিত হবেন দেবী। সেইমতো এই কালীমন্দিরের পিছন দিয়ে প্রবাহিত পদ্মার শাখা নদীতে হটাৎই একটি দেবীর কাঠামো ভাসতে দেখা যায়। পরে এতেই মাটি লাগিয়ে দেবীর প্রায় ৪ফুট উচ্চতার একটি মূর্তি তৈরি করা হয়।

অদ্ভুত ভাবে এই মন্দিরে লোহার শিকল দিয়ে বাঁধা আছেন মা। যেই কারণে ‘শৃঙ্খলিতা কালী’ নামে ডাকা হয় দেবীকে কিন্তু কেনো এই শৃঙ্খল? তার পেছনেও রয়েছে কয়েকটি অদ্ভুত জনশ্রুতি|

শোনা যায় পদ্মা থেকেই স্বপ্নাদেশে ভেসে আসা দেবী আবার সেই পথ ধরেই পদ্মাতেই ফিরে যেতে চেয়েছিলেন ,আর তার ফিরে যাওয়া আটকাতে এই শেকলের ব্যবহার|

তবে মা কালীর এই শৃঙ্খলিত রূপ বাংলার আরো এক স্থানে দেখা যায়, বাঁকুড়ার সোনামুখির ধর্মতলার রায় পরিবারের খেপা কালী মন্দিরেও মা কালী কে শেকলে বেঁধে রাখা হয়েছে বহু কাল ধরে|

কথিত আছে মন্দিরে কালী প্রতিমা নাকি মন্দির থেকে পালিয়ে ‌যান। আগেরকার দিনে অনেক সময় দেখা গেছে রাতে পুজো শেষে মন্দিরে আর মূর্তির দেখা মেলেনি। অনেকবার রাতে পায়ের নুপুরের শব্দও শোনা গেছে। পরে মন্দিরে ‘খেপা কালী’কে আটকে রাখতে প্রতিমার পায়ের শিকল বাঁধার ব্যবস্থা করা হয় এবং এই প্রথা এখানে আজও বজায় আছে|

কতইনা না রহস্য, দেবী কে ঘিরে কতইনা অলৌকিক ঘটনা, আবার লিখবো, অন্য কোনো দেবী মন্দির ও দেবীর মহাত্ম নিয়ে, আজ বিদায় নিলাম, অমাবস্যার পুন্য তিথিকে কাজে লাগিয়ে শাস্ত্র মতে জ্যোতিষ প্রতিকার হোক বা ভাগ্যগণনা, যোগাযোগ করতে পারেন উল্লেখিত নাম্বারে|মা হৃদয়েশ্বরী সর্ব মঙ্গলা মন্দিরে মৌনী অমাবস্যার বিশেষ পুজোতে আপনাদের স্বাগত|ভালো থাকুন ধন্যবাদ|

মৌনী অমাবস্যা

নমস্কার আমি পন্ডিত ভৃগুর শ্রী জাতক|শুরু করছি আজকের বিশেষ পর্ব|আর কয়েকটা দিন পরই মৌনী অমাবস্যা, আমাদের তন্ত্র ও জ্যোতিষ জগতে এই মৌনী অমাবস্যা একটি গুরুত্বপূর্ণ তিথি হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে|আজ আপনাদের জানাবো মৌনী অমাবস্যার প্রকৃত অর্থ ও এর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য|

সাধারন ভাবে মাঘ মাসের অমাবস্যা তিথিকে মৌনী অমাবস্যা বলা হয়|মৌনী অমাবস্যা হলো মকর সংক্রান্তির পরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ন র্তিথি আবার অন্যদিক দিয়ে দেখলে মহা শিব রাত্রির আগের শেষ অমাবস্যাই হলো মৌনী অমাবস্যা ৷ অর্থাৎ মাঘ মাসের কৃষ্ণপক্ষের অমাবস্যাই মৌনী অমাবস্যা এই তিথিতেই জন্মে ছিলেন মহান ঋষি মনু বলা হয় ঋষি মনুর নাম থেকেই মৌনী অমাবস্যা নামকরন|শাস্ত্র মতে মৌনী অমাবস্যার এই বিশেষ দিনেই সূচনা হয়েছিল দ্বাপর যুগের|

সংস্কৃতে মৌন শব্দের অর্থ হলো “যে কথা বলতে বা শব্দ উচ্চারণ করতে পারে না অর্থাৎ যে চুপ অর্থাৎ নিস্তব্ধ অবস্থায় থাকে ” অন্যদিকে নিঃশ্বব্দ কথার অর্থ হলো” বিশ্বভ্রমান্ডের নিঃসীম শুন্যতাকে যদি জানতে হয় এবং ঈশ্বরের স্বরূপ যদি অন্তরে উপলব্ধি করতে হয় তবে হতে হবে মৌন|এই উদ্দেশ্যে মৌনী অমাবস্যার এই তিথিতে সাধকেরা মৌনব্রত পালন করে থাকেন শাশ্বত জ্ঞানকে উপলব্ধি করতে প্রকৃত সাধক এই তিথিতে মৌন ব্রত পালনের মাধ্যমে কুন্ডলিনী জাগ্রত করতে পারেন এবং অসীম শক্তির অধিকারী হতে পারেন তাই যুগ যুগ ধরে তন্ত্র সাধনার ক্ষেত্রে মৌনী অমাবস্যা একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে|

জ্যোতিষ শাস্ত্রে এই দিন টির আলাদা তাৎপর্য আছে, এদিন সূর্য ও চন্দ্র মকর রাশিতে অবস্থান করে ৷প্রায় একমাস ধরে সূর্য এই অবস্থানে থাকে এবং অন্যদিকে চাঁদ থাকে আড়াই দিন|চন্দ্র ও সূর্যের এই অবস্থান ও রাশি পরিবর্তন মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে নানান ভাবে|

আধ্যাত্মিক দৃষ্টি ভঙ্গি থেকে এই মৌনী অমাবস্যার পূণ্য তিথিতে মৌনব্রত পালন করলে জীবনের সব আকাঙ্খা, মোহ এবং ইন্দ্রিয়কে নিজের অধীনে রাখা যায় এমনকি এই তিথিকে সঠিক ভাবে কাজে লাগালে একজন সাধক জন্ম মৃত্যুর আবর্ত থেকে মুক্তি লাভ করে মোক্ষ লাভ ও করতে পারেন|

বহু মানুষের বিশ্বাস এই তিথিতে স্বর্গের দেবতারা নেমে আসেন মর্তে এবং প্রয়াগরাজের গঙ্গা-যমুনা-স্বরস্বতীর মিলনস্থল ত্রিবেনীসঙ্গমে পূণ্য স্নান করেন|

নিজেদের কর্মফল থেকে মুক্তি লাভের আশায় ত্রিবেনী সহ দেশের বিভিন্ন নদী সঙ্গমে স্নান করেন লক্ষ লক্ষ মানুষ|মাঘ মাসে পবিত্র গঙ্গা বা অন্য নদীতে স্নান করা মানেই শুভ। কিন্তু মনে করা হয়, মৌনী অমাবস্যায় এই স্নানের মাহাত্ম্য ও গুণ আরও অনেক বেশি। জ্যোতিষীদের মতে, মৌন ব্রত পালন করে, অমাবস্যায় যদি গঙ্গা স্নান করা যায় তাহলে মানব জীবনের বহু জন্মের পাপ ধুয়ে যায়|এদিন নৈঃশব্দ্য পালন করলে মানসিক শান্তি পাওয়া যায় এবং রোগমুক্তি ঘটে|

এই বছর ১১ ফেব্রুয়ারি পড়েছে এই বিশেষ তিথি|১০ ফেব্রুয়ারি রাত ১২.৪৩ মিনিট থেকে, ১১ ফেব্রুয়ারি রাত ১২.১২ মিনিট পর্যন্ত অমাবস্যা তিথি থাকবে|এর মধ্যেই রয়েছে রটন্তী অমাবস্যা ও কালী পূজা|এই গুরুত্বপূর্ণ তিথিকে আপনারাও চাইলে কাজে লাগাতে পারেন সেক্ষেত্রে মেনে চলতে হবে কয়েকটি শাস্ত্রীয় নিয়ম|

যারা গঙ্গা স্নান করবেন তারা প্রথমে কপালে পবিত্র জল ঠেকিয়ে উপাসনা করুন এবং তারপরে সম্পূর্ণ স্নান করুন। সর্বদা পরিষ্কার বস্ত্র পরে সূর্য দেবতাকে তিল ও জল উৎসর্গ করুন। এবারে মন্ত্র জব করে আপনার সামর্থ্য মতো দান করুন।

এই দিন উপোস চলাকালীন মৌনতা পালন করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।নির্জলা উপোস রাখতে না পারলে, শুধুমাত্র ফল ও জল খেলেও এই দিন উপোস রাখা যায়|

এই অমাবস্যা তিথিতে নেশা থেকে দুরে থাকুন, কাউকে কুকথা বলবেন না, যথা সম্ভব সৎ চিন্তায় নিজেকে নিয়োজিত রাখুন, পবিত্র দেহ ও মনে ঈশ্বরকে স্মরণ করুন এবং পারলে দরিদ্র মানুষকে কিছু দান করুন|

সব শেষে বলবো যার জ্যোতিষ শাস্ত্রে আস্থা রাখেন ও নিজেদের জীবনের গ্রহগত কুপ্রভাব কে দূর করে জীবনে সফল হতে চান তারা এই তিথিকে চাইলে কাজে লাগাতে পারেন|শাস্ত্র মতে তন্ত্র ক্রিয়ার মাধ্যমে গ্রহ দশ খণ্ডনের জন্যে এই মৌনী অমাবস্যা একটি প্রসস্থ তিথি|এই দিন আপনাদের মা হৃদয়েশ্বরী সর্বমঙ্গলা মন্দিরে শাস্ত্র মতে গ্রহ দোষ খণ্ডনের উদ্দেশ্যে বিশেষ পুজো পাঠের আয়োজন করা হয়েছে|যোগদানের জন্যে যোগাযোগ করতে পারেন আমার সাথে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ| 

নৈহাটির বড়োমা

অনেক প্রাচীন কালী মন্দিরের কথা আপনাদের ইতিমধ্যে বলেছি , লিখেছি সেই সব মন্দির সৃষ্টির ইতিহাস ও তাদের সাথে জড়িয়ে থাকা অনেক অলৌকিক ঘটনা|আজ আপনাদের বলবো বাংলার একটি প্রাচীন ও জনপ্রিয় কালী পূজার কথা|যেহেতু আমার বড়ো হয়ে নৈহাটী অঞ্চলেই তাই শৈশব থেকেই নৈহাটির বড়োমার পুজো দেখে আসছি এই বড়ো মাকে নিয়ে বিশেষ কৌতূহল ও তার প্রতি একটা আলাদা রকমের বিশ্বাস এবং শ্রদ্ধা রয়েছে আমার অন্তরে|আজকের পর্বে নৈহাটির বড়মা|

শোনা যায় আজ থেকে প্রায় একশ বছর আগে এই বড়মার পুজোর প্রচলন করেছিলেন ভবেশ চক্রবর্তী নামে এক নিষ্ঠাবান মাতৃ সাধক,একবার তিনি নদিয়ার কৃষ্ণনগরে রাস উৎসবে গিয়ে সেই সময় বেশি উচ্চতাবিশিষ্ট দেবী মূর্তি দর্শন করেছিলেন তারপরই ফিরে এসেছে তিনি নৈহাটিতে বড়মা কালী মূর্তি তৈরি করে পুজো করার সিদ্ধান্ত নেন এবং তার ইচ্ছায় ও প্রচেষ্টায় সূচনা হয়ে এই বড়মার পুজো|

বড়মার পুজো শুধু নৈহাটি নয়, সারা উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা তথা বাংলার বৃহত্তম কালী পুজোগুলোর মধ্যে অন্যতম|এখানে কালী মূর্তি ১৪ হাত লম্বা অর্থাৎ ২১ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট হয়|

প্রত্যেক বছর লক্ষ্মী পুজোর দিন কাঠামো পুজোর মধ্যে দিয়েই বড়মার পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয় এবং রীতি অনুসারে বড়মার পুজো শুরু হওয়ার পরই অন্যান্য বারোয়ারি কালী পুজোগুলি শুরু হয় এবং
একইভাবে বড়মার বিসর্জনের পরই নৈহাটিতে অন্যান্য কালী প্রতিমার বিসর্জন হয়|

কথিত আছে নৈহাটির বড়মার কাছে শ্রদ্ধা ভরে কিছু প্রার্থনা করলে সেই মনস্কামনা পূর্ণ করেন দেবী তাই প্রতি বছর কালী পুজো উপলক্ষে এখানে অসংখ্য মানুষ আসেন তাদের মনোস্কামনা নিয়ে|
এছাড়াও দেশ বিদেশ থেকে বহু ভক্তরা আসেন বড়মার পুজো দেখতে|

আগামী দিনে আরো অনেক কালী পুজো ও কালী মন্দিরের কথা নিয়ে আমিও আবার আপনাদের সামনে ফিরে আসবো|দেখতে থাকুন আমার টিভির ও ইউটিউব এর অনুষ্ঠানগুলি ও পড়তে থাকুন আমার লেখা লেখি আর জ্যোতিষ সংক্রান্ত প্রশ্ন বা সমস্যা নিয়ে উল্লেখিত নাম্বারে ফোন করে সরাসরি কথা বলুন আমার সাথে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

ঐতিহাসিক লাল কালী মন্দির

আপনারা হয়তো জানেন আবার আগের মতোই জ্যোতিষ কার্যে নিয়ম করে চেম্বারে বসা শুরু হয়েছে, এমনকি কলকাতার বাইরে জেলাতেও যাচ্ছি নিয়ম করে পাশাপাশি মা হৃদয়েশ্বরী সর্ব মঙ্গলা মন্দিরের নানান কাজে প্রায়ই এখানে ওখানে ছুটে বেড়াতে হয়, এমনই একটি দরকারে কাল গিয়ে ছিলাম উত্তর কলকাতার শোভাবাজার অঞ্চলে গাড়ি করে রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে দেখলাম উত্তর কলকাতার একটি প্রসিদ্ধ কালী মন্দির যে মন্দিরের সাথে জড়িয়ে আছে অনেক গল্প, কিংবদন্তী ও অলৌকিক ঘটনা, মনে পড়লো এই মন্দিরের কথা এখনো বলা হয়নি, তাই আজকের পর্বে কলকাতার বিখ্যাত লাল কালী মন্দির|

যেখানে সেন্ট্রাল এভিনিউয়ের রাস্তা দুভাগে ভাগ হয়ে নাম হয়েছে চিত্তরঞ্জন এভিনিউ ও যতীন্দ্র মোহন এভিনিউ সেখানে অবস্থিত এই প্রাচীন কালী মন্দির বর্তমানে মন্দিরটি যতীন্দ্র মোহন এভিনিউ-তে পড়ে|কোনও মন্দিরই দেখা যায় সাধারণত রাস্তার একধারে কিন্তু অদ্ভুত ভাবে এখানে রাস্তায় মাঝখানে রয়েছে মন্দিরটি|এই মন্দির তৈরির পেছনে রয়েছে বহু কাহিনী|

২৫০ বছর আগে এই মন্দির একটা মাটির ঘর ছিল তখন অমরকৃষ্ণ ঠাকুর চক্রবর্তী নামে এক মাতৃ সাধক রাজা নবকৃষ্ণের বাড়িতে চণ্ডীপাঠ করতেন আর ওই মাটির ঘরে তিনি তন্ত্রসাধনা করতেন|

শোনা যায় রঘু ডাকাত একবার হাটখোলা থেকে ডাকাতি করে ফেরার সময় লুঠ করা যোগমায়ার মূর্তি রাজা নবকৃষ্ণের পুকুরে ফেলে দেয় পরবর্তীতে অমরকৃষ্ণ ঠাকুর চক্রবর্তী স্বপ্নাদেশ পেয়ে মাকে নিয়ে এসে সেই মাটির ঘরে পুজো শুরু করেন|

ব্রিটিশ আমলে রাস্তা তৈরি করার সময় ইংরেজরা মন্দির টি সরাতে চাইলে অমরকৃষ্ণ ঠাকুর চক্রবর্তী মন্দির সরিয়ে নিয়ে যেতে অস্বীকার করেন৷ তখন ব্রিটিশ গভনর্মেন্ট তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করে৷ তিনদিন তাঁকে হাজতে আটকে রেখেছিল৷শোনা যায় যোগমায়াকে কোলে নিয়েই হাজতে ছিলেন তিনি ৷ রাজকৃষ্ণদেব তাঁর হয়ে মামলা লড়েন এবং সেই মামলায় তাঁর জয় হয়৷ তারপর ইংরেজরাই ওনাকে প্রস্তাব দেয় মন্দিরটা সুন্দর করে বানিয়ে দেওয়ার৷ তাতে ঠাকুরদা রাজি হয়েছিলেন৷ ইংরেজরাই এই লাল রঙের মন্দির তৈরি করে দেয়|

শোনা যায় ব্রিটিশরা যখন পুরোনো মন্দির ভেঙে দেয়া প্রচুর জল বেরিয়েছিলো এখান থেকে যদিও আশ্চর্যজনক ভাবে জলের কোনো উৎস খুঁজে পাওয়া যায়নি|

কলকাতায়া মেট্রো রেলের কাজ শুরু হওয়ার সময় এই মন্দিরের গায়ে কোনও আঁচড় লাগেনি৷ সেইসময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী, তিনি মন্দিরটা চিনতেন,ইন্দিরা গান্ধী বলেছিলেন, এই মন্দিরটা রেখেই মেট্রোর কাজ হবে৷ তার জন্য আলাদা করে তিনি তিন কোটি টাকা অনুমোদন করেছিলেন বলেও শোনা যায়|ইন্দিরা গান্ধীর পরেও এই নিয়ম মেনেই মেট্রোর কাজ এগিয়েছে এখানে|

এই মন্দিরে মাকে যোগমায়া রূপে পুজো করা হয়৷ তন্ত্রমতে সেই পুজো হয়৷ আগে ছাগ বলি হত৷ এখন ফল পুজো হয়৷ আর প্রতিবছর কালীপুজোর আগে মন্দিরের রঙ লাল করা হয়|

আজকের এই পর্ব এখানেই শেষ করছি আবার পরের পর্বে নতুন কোনো কালী মন্দির নিয়ে লিখবো|যারা ফেসবুকে মেসেজ বা কমেন্ট করে জানতে চাইছেন আমাকে জ্যোতিষ পরামর্শ বা ভাগ্যবিচারের জন্যে কবে ও কখন পাবেন তাদের অনুরোধ করবো পোস্টে উল্লেখিত নাম্বারে একবার ফোন করে নিতে|ভালো থাকবেন|ধন্যবাদ|

আম ডাঙ্গার ঐতিহাসিক কালী মন্দির

বাংলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য প্রাচীন কালী মন্দির আর প্রত্যেকটি কালী মন্দিরের সাথে জড়িয়ে আছে কিছু অলৌকিক ঘটনা, কিছু কিংবদন্তী রয়েছে অনেক রহস্য|কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী বেশ কয়েকটি কালী মন্দিরের কথা আপনাদের ইতিমধ্যে জানিয়েছি তবে ঝুলিতে রয়েছে এখনো অনেক গুলো কালী মন্দির তাদের অনেক অজানা ইতিহাস, গল্প আজকের পর্বে বলবো উত্তর চব্বিশ পরগনার আম ডাঙায় অবস্থিত একটি প্রাচীন কালী মন্দিরের কথা|

উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যে অবস্থিত কালী মন্দির গুলির প্রাচীন আমডাঙা কালী মন্দির অন্যতম|
এই কালী মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেন রাজা মান সিংহ|এই মন্দির প্রতিষ্ঠার সাথে জড়িয়ে আছে ইতিহাসের এক অধ্যায়|

মুঘল সম্রাট আকবরের সৈনদল দু’বার রাজা প্রতাপাদিত্যের কাছে পরাজিত হন। মুঘল সম্রাটের বিশ্বাস ছিল, যশোরের যশোরেশ্বরী মন্দিরে পুজো দিয়ে তার পর যুদ্ধ শুরু করতেন বলেই জয়লাভ করতেন প্রতাপাদিত্য। প্রতাপাদিত্যের এই রণকৌশল ভবিষ্যতে যাতে আর সফল না হয়, সেই পরিকল্পনা করতে মান সিংহকে নিয়োগ করেন সম্রাট আকবর। মান সিংহ শুরুতেই যশোরেশ্বরী মন্দির থেকে বিগ্রহ সরিয়ে দেন। প্রতাপাদিত্য সে কথা জানতে পারার পরেই রেগে ফেটে পড়েন এবং মন্দিরের পূজারী রামানন্দ গিরি গোস্বামীকে নির্বাসিত করে দণ্ড দেন|

নির্বাসিত হয়ে রামানন্দ এই আমডাঙ্গায় এসে উপস্থিত হন এখানে তখন ঘন জঙ্গল তার পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে সুখবতী নদী|পরবর্তীতে মান সিংহ স্বপ্নাদেশ পান, মায়ের ভক্ত রামানন্দ উন্মাদ অবস্থায় সুখবতী নদীর তীরে রয়েছেন, তাকে সুস্থ করে পুনরায় সাধন মার্গে ফিরিয়ে আনার জন্য ১৫৬১ খ্রিস্টাব্দে আমডাঙা কালী মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেন ও কষ্টিপাথর দিয়ে কালীর শান্ত মূর্তি মন্দিরে স্থাপন করেন করেন মান সিংহ|

পরোক্ষ ভাবে বাংলার নবাব সিরাজ উদ্ দৌলা ও একটি বিশেষ কারনে রাজা কৃষ্ণ চন্দ্রর নাম ও জরিয়ে আছে প্রাচীন এই কালী মন্দিরের সাথে|১৭৫৬ সালে নবাব সিরাজউদ্দৌলার কলকাতা অভিযানের সময় রাজা কৃষ্ণচন্দ্র এই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় এখানকার এই কালীমূর্তি দেখতে পান এবং প্রার্থনা করেন|পরবর্তীতে মনস্কামনা পূর্ণ হওয়ার পর তিনি এই মন্দিরে প্রায় ৩৬৫ বিঘা জমি দান করেন|

প্রায় পাঁচশো বছরের প্রাচীন এই কালী মন্দিরে দেবীর শান্ত রূপ বিরাজমান, মূর্তিটি কষ্টি পাথরে নির্মিত এবং এখানে রয়েছে কয়েকটি প্রাচীন শিব মন্দির|বহু মানুষ এখানে আসেন তাদের মনোস্কামনা নিয়ে, মনোস্কামনা পূরণ হলে পুজো দেন তবে কালী পুজো উপলক্ষে ভিড় হয় সবথেকে বেশি|

আজ এই পর্ব এখানেই শেষ করছি আবার পরের পর্বে নতুন কোনো কালী মন্দিরের কথা লিখবো আপনাদের জন্যে, তবে ভুলবেন না সামনেই মৌনী অমাবস্যা এবং রটন্তী কালী পূজা, তাই যারা জ্যোতিষ সংক্রান্ত প্রয়োজনে বা গ্রহ দোষ খণ্ডনের জন্যে যোগাযোগ করতে চাইছেন আমার উল্লেখিত নম্বরে ফোন করে একবার কথা বলে নেবেন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ| 

শিবানী পীঠ

আজ কলকাতার কাছেই বারুইপুরে অবস্থিত একটি সুন্দর এবং প্রসিদ্ধ কালী মন্দিরের কথা আপনাদের বলবো|আজকের পর্বে শিবানী পিঠ কালী মন্দির|

দক্ষিণ ২৪ পরগণার বারুইপুরে অবস্থিত শিবানী পীঠ মন্দিরটি সাধারণ মানুষের কাছে অতি পরিচিত। ভারী সুন্দর এই মন্দিরের পরিবেশটা ।ভট্টাচার্য্য পরিবারের এই মন্দিরটি স্থাপিত হয়েছিল ১৯৬৬ সালের কালিপূজার দিন|

শিবানী পীঠ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শ্রী দূর্গাদাস ভট্টাচার্য্য মহাশয়।শিবানী পীঠ হল দেবী শিবানীর মন্দির।দেবী শিবানী মা কালিরই একটি অংশ।খুবই জাগ্রত মন্দির বলে প্রচুর ভক্ত এখানে আসেন তাদের মনষ্কামনা পূরণের উদ্দেশ্যে।বিশেষ বিশেষ দিনে খুবই ভীড় হয় এখানে।শণি,মঙ্গলবার ও অমাবশ্যার দিনে এখানে প্রচুর ভক্ত সমাগম ঘটে

মন্দিরের ভেতরে প্রতিষ্ঠাতা শ্রী দুর্গাদাস ভট্টাচার্যর বেশ কয়েকটি মূর্তি বর্তমান। এখানে নাট মন্দিরের ভেতরে অনেক মুণি ঋষিদের মূর্তি বর্তমান।নাটমন্দিরে বসে একমনে মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকলে মনে প্রশস্তি পাওয়া যায়।

সুপ্রাচীন ইতিহাস বা অলৌকিক ঘটনাবলীর উল্লেখ সেই ভাবে না থাকলেও এই শিবানী পীঠ স্থানীয় মানুষের কাছে এক বিশ্বাস ও ভরসার স্থান|আপনারাও চাইলে যেকোনো দিন ঘুরে আসতে পারেন শিবানী পীঠ থেকে|

আজ শেষ করলাম তবে আবার ফিরবো আর জ্যোতিষ সংক্রান্ত কাজে আমাকে সর্বদা পাবেন আমাদের পাশে, চেম্বারে ও অনলাইনে, শুধু ফোন করতে হবে উল্লেখিত নাম্বারে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

হাজার হাত কালী

মাঘী পূর্ণিমার ব্যস্ততা কাটিয়ে আবার ফিরে এলাম কলকাতার কালীর একটি নতুন পর্ব নিয়ে|কিছুদিন পরই মৌনী অমাবস্যা তারপর রটন্তী অমাবস্যা, অর্থাৎ সব মিলিয়ে শক্তি সাধনার আদর্শ সময়|কলকাতার কিছু বিখ্যাত কালী মন্দিরের গল্প আপনাদের আগেই বলেছি, জেলার কয়েকটি প্রসিদ্ধ ও প্রাচীন কালী মন্দিরে কথাও বলেছি, এই পরম্পরা কে আরেকটু এগিয়ে নিয়ে যাবো আজ|আজকের পর্বে হাওড়ায় অবস্থিত হাজার হাত কালীর মন্দির|

দেবী কালীর এই রূপটি খুব একটা জনপ্রিয় বা পরিচিত রুপ নয়, এই রূপ খুব কম কালী মন্দিরেই রয়েছে, তবে শাস্ত্রে এই রূপের উল্লেখ রয়েছে|
চণ্ডীপুরাণের ২২তম অধ্যায়ে কালীর এই রূপের কথা উল্লেখ আছে|চণ্ডীপুরাণ অনুযায়ী, অসুর বধের সময় দেবী দুর্গা অনেক রূপ ধারন করেছিলেন। তার মধ্যে অন্যতম হাজার হাতের রূপ। কাত্যায়নী, মহামায়ার পরেই অসুর নিধন করতে আসেন হাজার হাত রূপী মা কালী|দেবীর এই রূপই দেখা যায় হাওড়ার শিব পুরের এই বিশেষ মন্দিরে|

মন্দিরের প্রতিষ্টা নিয়েও একটি লোককথা প্রচলিত আছে, শোনা যায় স্থানীয় মুখোপাধ্য়ায় বাড়ির ছেলে তান্ত্রিক আশুতোষ মুখোপাধ্য়ায় মা চণ্ডীর স্বপ্না দেশে কালীর এই রূপ দেখতে পান এবং মন্দির প্রতিষ্ঠা করে দেবীর এই রূপের পুজো করতে ব্যাকুল হয়ে ওঠেন|কিন্তু এই মন্দির নির্মাণের বিপুল ব্যয় ভার বহন করার সাধ্য ছিলোনা তান্ত্রিক আশুতোষ মুখোপাধ্যায় বা তার পরিবারের|তবে স্বয়ং দেবী যার সহায় তার আর চিন্তা কি! আশুতোষ মুখোপাধ্য়ায়ের এই ইচ্ছাপূরণের জন্য এগিয়ে আসেন স্থানীয় ধনী হালদার পরিবার এবং তাদের চেষ্টায় 1870 সালে স্থাপিত হয় এই মন্দির এবং দেবীর এই বিশেষ রূপ এখানে প্রতিষ্টিত হয়|

এই কালী মন্দির দক্ষিণ ভারতীয়দের মধ্যে বিশেষ ভাবে জনপ্রিয়, তার একটা কারন আছে, একটা ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়, শোনা যায়, প্রায় ৬০ বছর আগে শ্রাবণ মাসের শুক্লপক্ষের এক শুক্রবার দক্ষিণ ভারতের বাসিন্দা জনৈক কৃষ্ণা সুব্রহ্মণ্যম এই মন্দিরে এসেছিলেন। তখন তিনি দৃষ্টিহীন। হাজার-হাত কালীর কাছে দৃষ্টি ফিরিয়ে দেওয়ার প্রার্থনা করেন|অলৌকিক ভাবে এক বছরের মধ্যে তিনি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পান। তার পর থেকে তিনি মায়ের মাহাত্ম্য প্রচার শুরু করেন দক্ষিণ ভারত জুড়ে। এখন প্রচুর দক্ষিণ ভারতীয় মানুষ শ্রাবণে শুক্লপক্ষের শুক্রবারে পুজো দেন এই হাজার হাত কালীর মন্দিরে|

এই রূপে দেবী নীল বর্ণা, বাহন সিংহের উপর তাঁর ডান পা|এখানে দেবী পূজিত হন তন্ত্র মতে তবে বলী প্রথা এখানে নেই এবং প্রাচীন প্রথা মেনে আজ ও মুখোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যরা এখানে পুজো করে আসছেন|দৈনন্দিন পুজোর পাশাপাশি বুদ্ধ পূর্ণিমা ও দীপাবলিতে এখানে বিশেষ পুজো হয় ও সেই উপলক্ষে ব্যাপক জনসমাগম হয়|

আজ এখানেই শেষ করছি, আবার ফিরবো পরের পর্বে নতুন কোনো কালী মন্দিরের কথা নিয়ে, যারা আগামী গুরুত্বপূর্ণ তিথি গুলিতে জ্যোতিষ প্রতিকারের কথা ভাবছেন দ্বিধা না করে যোগাযোগ করবেন আমার সাথে এবং যারা ভাগ্যবিচার ও জ্যোতিষ পরামর্শর জন্যে সাক্ষাৎ চান, উল্লেখিত নাম্বারে ফোন করে জেনে নেবেন আমাকে কবে কখন ও কোথায় পাবেন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|