বাংলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য প্রাচীন কালী মন্দির আর প্রত্যেকটি কালী মন্দিরের সাথে জড়িয়ে আছে কিছু অলৌকিক ঘটনা, কিছু কিংবদন্তী রয়েছে অনেক রহস্য|কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী বেশ কয়েকটি কালী মন্দিরের কথা আপনাদের ইতিমধ্যে জানিয়েছি তবে ঝুলিতে রয়েছে এখনো অনেক গুলো কালী মন্দির তাদের অনেক অজানা ইতিহাস, গল্প আজকের পর্বে বলবো উত্তর চব্বিশ পরগনার আম ডাঙায় অবস্থিত একটি প্রাচীন কালী মন্দিরের কথা|
উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যে অবস্থিত কালী মন্দির গুলির প্রাচীন আমডাঙা কালী মন্দির অন্যতম|
এই কালী মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেন রাজা মান সিংহ|এই মন্দির প্রতিষ্ঠার সাথে জড়িয়ে আছে ইতিহাসের এক অধ্যায়|
মুঘল সম্রাট আকবরের সৈনদল দু’বার রাজা প্রতাপাদিত্যের কাছে পরাজিত হন। মুঘল সম্রাটের বিশ্বাস ছিল, যশোরের যশোরেশ্বরী মন্দিরে পুজো দিয়ে তার পর যুদ্ধ শুরু করতেন বলেই জয়লাভ করতেন প্রতাপাদিত্য। প্রতাপাদিত্যের এই রণকৌশল ভবিষ্যতে যাতে আর সফল না হয়, সেই পরিকল্পনা করতে মান সিংহকে নিয়োগ করেন সম্রাট আকবর। মান সিংহ শুরুতেই যশোরেশ্বরী মন্দির থেকে বিগ্রহ সরিয়ে দেন। প্রতাপাদিত্য সে কথা জানতে পারার পরেই রেগে ফেটে পড়েন এবং মন্দিরের পূজারী রামানন্দ গিরি গোস্বামীকে নির্বাসিত করে দণ্ড দেন|
নির্বাসিত হয়ে রামানন্দ এই আমডাঙ্গায় এসে উপস্থিত হন এখানে তখন ঘন জঙ্গল তার পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে সুখবতী নদী|পরবর্তীতে মান সিংহ স্বপ্নাদেশ পান, মায়ের ভক্ত রামানন্দ উন্মাদ অবস্থায় সুখবতী নদীর তীরে রয়েছেন, তাকে সুস্থ করে পুনরায় সাধন মার্গে ফিরিয়ে আনার জন্য ১৫৬১ খ্রিস্টাব্দে আমডাঙা কালী মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেন ও কষ্টিপাথর দিয়ে কালীর শান্ত মূর্তি মন্দিরে স্থাপন করেন করেন মান সিংহ|
পরোক্ষ ভাবে বাংলার নবাব সিরাজ উদ্ দৌলা ও একটি বিশেষ কারনে রাজা কৃষ্ণ চন্দ্রর নাম ও জরিয়ে আছে প্রাচীন এই কালী মন্দিরের সাথে|১৭৫৬ সালে নবাব সিরাজউদ্দৌলার কলকাতা অভিযানের সময় রাজা কৃষ্ণচন্দ্র এই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় এখানকার এই কালীমূর্তি দেখতে পান এবং প্রার্থনা করেন|পরবর্তীতে মনস্কামনা পূর্ণ হওয়ার পর তিনি এই মন্দিরে প্রায় ৩৬৫ বিঘা জমি দান করেন|
প্রায় পাঁচশো বছরের প্রাচীন এই কালী মন্দিরে দেবীর শান্ত রূপ বিরাজমান, মূর্তিটি কষ্টি পাথরে নির্মিত এবং এখানে রয়েছে কয়েকটি প্রাচীন শিব মন্দির|বহু মানুষ এখানে আসেন তাদের মনোস্কামনা নিয়ে, মনোস্কামনা পূরণ হলে পুজো দেন তবে কালী পুজো উপলক্ষে ভিড় হয় সবথেকে বেশি|
আজ এই পর্ব এখানেই শেষ করছি আবার পরের পর্বে নতুন কোনো কালী মন্দিরের কথা লিখবো আপনাদের জন্যে, তবে ভুলবেন না সামনেই মৌনী অমাবস্যা এবং রটন্তী কালী পূজা, তাই যারা জ্যোতিষ সংক্রান্ত প্রয়োজনে বা গ্রহ দোষ খণ্ডনের জন্যে যোগাযোগ করতে চাইছেন আমার উল্লেখিত নম্বরে ফোন করে একবার কথা বলে নেবেন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|