কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ

1700

বেশ কিছুদিন হলো ভারতের কোনো সিদ্ধ পুরুষ বা সাধকের কথা আপনাদের বলা হয়নি, তবে ধারাবাহিক ভাবে লেখা যখন শুরু যখন করেছি এগিয়ে তো নিয়ে যেতে হবে এবং আধ্যাত্মিকতার দেশ ভারতে এমন অসংখ্য সাধক রয়েছেন যাদের কথা আপনাদের জানাবো বলে ঠিক করেই রেখেছি|তাই আজ পেশাগত ব্যাস্ততা থেকে কিছুটা সময় বের করে দেশের তথা বাংলার এক প্রসিদ্ধ এবং জগৎ বিখ্যাত তন্ত্র সাধকের কথা আপনাদের বলবো,তান্ত্রিক কালী-সাধক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ

তন্ত্র সাধক কৃষ্ণানন্দ সপ্তদশ শতকে পশ্চিমবঙ্গের নবদ্বীপে এক পণ্ডিত-বংশে জন্মগ্রহণ করেন। মনে করা হয় বাংলার সাধকগণ যখন তন্ত্রের মূলধারা থেকে বিচ্যুত হয়ে যাচ্ছিলেন তখন আদ্যাশক্তি মহামায়া স্বয়ং তাঁকে তন্ত্রশাস্ত্রের পুনরুদ্ধার এবং তাঁর মাতৃরূপিণী বিগ্রহের পূজা করার নির্দেশ দেন।এনিয়ে অনেক অলৌকিক কাহিনীও প্রচলিত রয়েছে যার কিছু আজ আমিও আপনাদের বলবো|

কথিত আছে, কৃষ্ণানন্দ কোনো এক ধনী ব্যক্তির বাড়ি দুর্গাপূজা করতে গিয়েছিলেন, সেখানে দুর্গাপূজার শেষে ওই বাড়ির কর্তা নিজের অহংবোধের বশবর্তী হয়ে কৃষ্ণানন্দকে বলেন যে তিনি প্রতিমার প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেননি। কৃষ্ণানন্দ ক্রুদ্ধ হয়ে বলেন যে তিনি যদি প্রাণপ্রতিষ্ঠা না করে থাকেন এক্ষুনি তার প্রমাণ দেবেন, তবে প্রমাণ হওয়ার পরে ওই গৃহের কেউ আর জীবিত থাকবেনা। কর্তা তাতেই রাজি হলেন,কৃষ্ণানন্দ একটি কুশি ছুঁড়ে দেন দেবী প্রতিমার ঊরুতে। সঙ্গে সঙ্গে প্রতিমার ঊরু ফেটে রক্তপাত হয়; এবং ওই গৃহের প্রত্যেকেও মুখে রক্ত উঠে তৎক্ষণাৎ মারা যান|এমন অসংখ্য অলৌকিক ঘটনা রয়েছে এই মহান মাতৃ সাধকের জীবন জুড়ে|

সাধনার শুরুতে কৃষ্ণানন্দ মহামায়াকে বললেন, ‘‘মা, তোমার যে রূপের পূজা আমি করব আমাকে সে রূপ দেখিয়ে দাও’’। তখন মা বললেন, ‘‘যে ভঙ্গীতে আমার এই বিগ্রহের পূজা তোমার দ্বারা প্রচলিত হবে, তা আমি মানবদেহের মাধ্যমেই দেখিয়ে দেব। এই রাত শেষে সর্ব প্রথম যে নারীকে যে রূপে যে ভঙ্গীতে দেখবে, ঐরকম মূর্তিতে আমার পূজার প্রচলন করবে। মায়ের নির্দেশমত পরদিন ভোরে কৃষ্ণানন্দ গঙ্গার দিকে কিছু দূর অগ্রসর হওয়ার পর এক শ্যামাঙ্গিনী বালিকাকে দেখতে পান। ওই বালিকা তখন অপরূপ ভঙ্গীতে কুটিরের বারান্দার উপরে এবং বামপদ ভূতলে দিয়ে দাড়িয়ে ছিলেন। তিনি একতাল গোময়যুক্ত ডান হাত এমনভাবে উচু করে ধরেছিলেন যা দেখে বরাভয় মুদ্রার মত মনে হয়েছিল। বাম হাত দিয়ে তিনি কুটিরের দেয়ালে মাটির প্রলেপ দিচ্ছিলেন। তিনি ক্ষুদ্র পরিসরে একটি শাড়ি পড়ে ছিলেন। তাই কৃষ্ণানন্দকে দেখে তিনি লজ্জায় জিভ কেটেছিলেন।তাঁর এরকম ভঙ্গী দেখে কৃষ্ণানন্দের মায়ের প্রত্যাদেশের কথা মনে পড়ে গেল। তারপরই তিনি মায়ের ঐরকম মূর্তি রচনা করে পূজার প্রচলন করলেন।

এর পর একে একে কঠিন সব সাধনা ও তাতে সিদ্ধি লাভ করে ধীরে ধীরে তন্ত্র জগতে তিনি হয়ে উঠলেন কিংবদন্তী, প্রবাদপ্রতিম|তিনি ছিলেন শ্রীশ্রী রামপ্রসাদ সেনের তন্ত্রগুরু, পরবর্তীতে তার জীবন নিয়ে লেখা হয়েছে গল্প হয়েছে সিনেমা|

সারা জীবন ব্যাপী তন্ত্র সাধনার পাশাপাশি কৃষ্ণানন্দ তন্ত্রসার ও শ্রীতত্ত্ববোধিনী নামক দুখানা গুরুত্বপূর্ণ বই লিখেছিলেন যা সর্বত্র সমাদৃত হয়েছিলো এবং আজও তন্ত্র সাধনার ক্ষেত্রে ও আধ্যাত্মিক চর্চার ক্ষেত্রে এই বই দুটির ভূমিকা অপরিসীম|

এই মহান তন্ত্র সাধক ও মাতৃ সাধককে আমার সশ্রদ্ধ প্রনাম জানিয়ে আজকের পর্ব শেষ করছি, যারা আমার কাছে আসতে চান জ্যোতিষ সংক্রান্ত কাজ নিয়ে তাদের বলবো উল্লেখিত নাম্বারে একবার ফোন করে নিতে, আমাকে কখন কোথায় ও কবে পাওয়া যাবে সব জানতে পারবেন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|