Home Blog Page 8

নবরাত্রি – দেবী ব্রহ্মচারিনী

নবরাত্রি – দেবী ব্রহ্মচারিনী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

নব রাত্রির দ্বিতীয় দিনে ব্রহ্মচারিনীর বেশে

ধরা দেন মা অর্থাৎ দেবীর দ্বিতীয় রূপটি হলো ব্রহ্মচারিনী।

 

এখানে ‘ব্রহ্ম’ শব্দের অর্থ হল তপস্যা। ব্রহ্মচারিণী অর্থাৎ তপস্বীনি|ভগবান শঙ্করকে পতিরূপে লাভ করার জন্য দেবী পার্বতী কঠিন তপস্যা করেন। সেই কঠিন তপস্যার জন্য তাকে তপশ্চারিনী বা ব্রহ্মচারিণী বলা হয়। দেবীর এই রূপের পুজো হয় নবরাত্রির দ্বিতীয় দিনে।

 

দেবীর তপস্যা সার্থক হয় এবং বিবাহ হয় শিব ও পার্বতীর। বিবাহের পরে জন্ম নেন তাঁদের সন্তান কার্তিক বা ষড়ানন যিনি দেব সেনাপতি হন এবং বধ করেন তারকাসুরকে।

 

দেবীর ব্রহ্মচারিণীর রূপ জ্যোতিতে পূর্ণ, অতি মহিমামণ্ডিত কিন্তু স্নিগ্ধ এবং শান্ত।তিনি ডান হাতে জপের মালা এবং বাঁ হাতে কমণ্ডলু ধারণ করে আছেন। প্রেম, আনুগত্য, প্রজ্ঞা এবং জ্ঞানের প্রতীক হিসেবেও তিনি পরিচিত। সাদা রঙ দেবীর প্রিয় তাই দেবী ব্রহ্মচারিনীর পুজোয় স্বেত চন্দন ও সাদা ফুল ব্যাবহার হয়|

 

শাস্ত্রে আছে এই রূপের পূজায় বৃদ্ধি পায় মনোসংযোগ এবং সব ভয় সংশয় ও মানসিক দুর্বলতা দূর হয়|এছাড়া এই দেবীর আশীর্বাদে বিবাহিত জীবন সুখের হয় এবং সন্তান ভাগ্য ভালো হয় তাছাড়া দেবী পরম শান্তি এবং জ্ঞান দান করেন।

 

জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে দেবী ব্রহ্মচারিণী মঙ্গল গ্রহ শাসন করেন। যাদের মঙ্গল সংক্রান্ত কোনো গ্রহ দোষ আছে তারা দেবীর এই রূপের পুজো করলে ভালো ফল পাবেন।

 

পরবর্তী পর্বে দেবীর তৃতীয় রূপ এবং তার শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা নিয়ে ফিরে আসবো যথা সময়ে। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

নবরাত্রি – দেবী শৈলপুত্রী

নবরাত্রি – দেবী শৈলপুত্রী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

নবরাত্রি উপলক্ষে আজ

থেকে শুরু করছি দেবীর নয়টি রূপ নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা।আজ লিখবো

দেবীর প্রথম রূপ শৈল পুত্রী নিয়ে|

 

নবরাত্রি উৎসবের প্রথমদিনের পুজো হয় দেবী শৈলপুত্রীর।দেবী শৈলপুত্রীর আবির্ভাব হয়েছিলো একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে।প্রজাপতি দক্ষএকবার বিরাট যজ্ঞ করেন ।তার যজ্ঞে সতী কে নিমন্ত্রণ করা হয়নি । সতী পিতৃ গৃহে যাবার জন্য অস্থির হলেন কিন্তু ভগবান শঙ্কর সাবধান করলেন যে কোন কারনে তিনি উমার উপর রেগে আছেন । কিন্তু সতীর মন মানল না তখন মহাদেব অনুমতি দিলেন যাবার জন্য । কিন্তু পিতৃ গৃহে গিয়ে পৌঁছে দেখলেন কেউ তাকে সেরকম স্নেহ ভরে কাছে ডাকছে না । একমাত্র মা জড়িয়ে ধরলেন । স্বয়ং দক্ষ তাকে নানা খারাপ কথা বললেন । তখন রাগে দুঃখে যজ্ঞাগ্নির সাহায্যে নিজে কে ভস্মীভূত করলেন ।সতীর এই পরিনতির সংবাদ শুনে শিব ও তার অনুগামীরা প্রচন্ড ক্রোধে দক্ষের যজ্ঞ ধ্বংস করলেন এবং দক্ষকে উচিৎ শিক্ষা দিলেন।

 

কিন্তু শিব আর পার্বতী এক এবং অভিন্ন তাই শিবের সঙ্গে পুনরায় মিলিত হতে সতীর পুনর্জন্ম হলো শৈলরাজ হিমালয়ের কন্যা রুপে।শৈলরাজ হিমালয়ের কন্যা হবার জন্য দেবীর এক নাম হয় শৈলপুত্রী এবং এই জন্মেই তিনিই পার্বতী রূপে শিবের অর্ধাঙ্গিনী হলেন|

 

 

দেবী শৈলপুত্রী সম্পর্কে বর্ণনা আছে কালিকা পুরাণে।দেবী শৈলপুত্রী আসলে প্রকৃতির দেবী। শৈলপুত্রীর বাহন বৃষ । এঁনার দক্ষিণ হস্তে ত্রিশূল আর বাম হস্তে কমল আছে তাই দেবীর অপর নাম শুলধারিনি|আবার তাকে দেবী হৈমবতী

বলেও ডাকা হয়।

 

শাস্ত্র অনুযায়ী ব্রহ্মার শক্তির প্রতীক হলেন দেবী শৈলপুত্রী কারন একবার দেব ও অসুরের যুদ্ধে ব্রহ্মা দেবতাদের জয়ী করেছিলেন। কিন্তু ব্রহ্মার শক্তি ভুলে দেবতারা জয়ের গৌরব নিজেরাই নিতে উদ্যত হলেন। ব্রহ্মদেব তখন নিজে এলেন দেবতাদের দর্পচূর্ণ করতে। তিনি একখণ্ড তৃণ রাখলেন দেবতাদের সম্মুখে। কিন্তু দেবতারা আশ্চর্য হয়ে দেখলেন, অগ্নি সেই তৃণখণ্ডটি দহন করতে বা বায়ু তা একচুল পরিমাণ স্থানান্তরিত করতে অসমর্থ হলেন। তখন ইন্দ্র এলেন সেই অনন্ত শক্তির উৎসকে জানতে। সেই মুহূর্তে ব্রহ্মশক্তি শৈলপুত্রীর রূপ ধারন করে দেবরাজ ইন্দ্র কে দেখা দিলেন।এই রূপেরই পুজো হয়। নবরাত্রির সূচনা লগ্নে।

 

নব রাত্রি উপলক্ষে ধারাবাহিক ভাবে চলবে এই আলোচনা|আগামী পর্বে দেবীর পরবর্তী রূপ

নিয়ে লিখবো । পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

দেবী পক্ষের আধ্যাত্মিক তাৎপর্য

দেবী পক্ষের আধ্যাত্মিক তাৎপর্য

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আজ মহালয়া অর্থাৎ পিতৃ পক্ষের অবসান এবং দেবী পক্ষের সূচনা। আজকের এই বিশেষ পর্বে আপনাদের জানাবো মহালয়া বা দেবী পক্ষের সূচনার আধ্যাত্মিক তাৎপর্য এবং শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা।

 

মহাভারতে উল্লেখ আছে যে কর্ণের মৃত্যুর পরে তার আত্মা স্বর্গে গমন করলে তিনি জানতে পারেন যে পিতৃ পুরুষের আশীর্বাদ থেকে তিনি বঞ্চিত কারন পিতৃপুরুষের আত্মার উদ্দেশ্যে কোনোদিনো কোনো খাদ্য দান করেননি।তাদের কাছে প্রার্থনা করেননি তাই তার পুন্য সঞ্চয় অসম্পূর্ণ।

তার উত্তরে কর্ণ বলেন, তিনি যেহেতু তার পিতৃপুরুষ সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না। তাই তিনি অসহায় এবং অজ্ঞানতা বসত এই অন্যায় করে ফেলেছেন।তারপর কারণে কর্ণকে ষোলো দিনের জন্য মর্ত্যে গিয়ে পূর্ব পুরুষদের উদ্দেশ্যে অন্ন ও জল প্রদান করার অনুমতি দেওয়া হয়। সেই সময়

কালকে পিতৃপক্ষ বলা হয়।

 

এই তিথিতে তর্পন একটি শাস্ত্রীয় বিধি।

একটি শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা অনুসারে জীবিত ব্যক্তির পূর্বের তিন পুরুষ পর্যন্ত পিতৃলোকে বাস করেন। এই লোক স্বর্গ ও মর্ত্যের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত। পিতৃ পক্ষে এই আত্মারা উত্তর পুরুষের তর্পনের মাধ্যমে চীরমুক্তি লাভ করে এবং পরম ব্রহ্মর সাথে বিলীন হয়।

 

জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুসারে অনুযায়ী আবার সূর্য কন্যারাশিতে প্রবেশ করলে পিতৃপক্ষ সূচিত হয়।এই সময় পূর্বপুরুষগণ আত্মা রূপে পিতৃলোক পরিত্যাগ করে তাদের উত্তরপুরুষদের গৃহে বা আশেপাশে অবস্থান করেন। এর পর সূর্য বৃশ্চিক রাশিতে প্রবেশ করলে, তারা পুনরায় পিতৃলোকে ফিরে যান এবং দেবী পক্ষের সূচনা হয়।

 

যেহেতু মহালয়া মৃত্যু ও শোকের সাথে সংযুক্ত তাই শুভ মহালয়া বলা যায় কিনা তা নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে যেহেতু এই তিথিতে পিতৃ পক্ষের অবসান হয়ে দেবী পক্ষের সূচনা হয় তাই আসন্ন দেবী পক্ষের শুভেচ্ছা এবং শারদৎসবের আগাম শুভেচ্ছা দেয়াই যায়।

 

আবার যাদের জন্মছকে পিতৃ দোষ আছে তারা এই সময়ে গ্রহ দোষ খণ্ডন করালে পিতৃ দোষ থেকে স্থায়ী ভাবে রেহাই পেতে পারেন।

 

শুরু হচ্ছে নব রাত্রি ফিরে আসবো আগামী পর্বে নবরাত্রি উপলক্ষে বিশেষ ধারাবাহিক লেখনী নিয়ে।পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

সেনগুপ্ত বাড়ির দূর্গা পুজো

সেনগুপ্ত বাড়ির দূর্গা পুজো

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

ঝাড়গ্রামের বনেদি জমিদার পরিবার সেনগুপ্ত পরিবার। তাদের দূর্গাপুজোর ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ এবং বর্নময়। আজকের পর্বে এই প্রাচীন দুর্গাপূজা নিয়ে লিখবো।

দেশভাগের পরে সেনগুপ্ত বাড়ির বংশধররা ঝাড়গ্রামে এসে জমিদারি কিনে বসবাস শুরু করেন। তখন থেকেই ধুমধাম করে শুরু হয় দুর্গাপুজো। এই জমিদার বংশের অন্যতম প্রান পুরুষ রামগতি সেনগুপ্ত ছিলেন বেশ ধনি এবং প্রভাব শালী তাঁর সময় থেকে বাড়ির দুর্গাপুজোর জাঁকজমকের শুরু। সেই জাঁকজমক আজ ম্লান হলেও চলছে সেই প্রবাহমান ঐতিহ্য।

এই বাড়ির পুজোয় একচালার মূর্তি তৈরি হয়। দুর্গার ডানদিকে লক্ষ্মী ও কার্তিক আর দুর্গার বাঁ পাশে সরস্বতী ও গণেশ থাকেন। মূর্তির পাশাপাশি পুজোর বেশ কিছু বিশেষত্ব আছে যেমন কাঁচা ভোগ এবং শত্রু বলীর রীতি।

নবাবী আমলে মারাঠা বর্গীরা যখন বাংলার জমিদার বাড়ি গুলিকে নিশানা করছে তখন অত্যন্ত গোপনে পুজোর আয়োজন করা হতো। এমনকি ভোগ রান্না করা হতো না।সেই থেকেই কাঁচা ভোগ নিবেদনের রীতি আরম্ভ হয়।
এই বাড়িতে নবমীর দিন ‘শত্রু’ বলি’ দেওয়া হয়।
অর্থাৎ প্রতীকী অর্থে বলীর আয়োজন। এও এক বিশেষত্ব।

কাঁচা ভোগে থাকে আলু ,ফুলকপি, বেগুন, মুলো, কাঁচকলার মতো অন্তত পাঁচ রকম কাঁচা আনাজ।
আর শত্রু বলিতে কচুপাতার উপরে চালের গুঁড়ি দিয়ে তৈরি করা হয় মানুষের অবয়ব। তারপর সেই অবয়বকে বলি দেয়া হয় অশুভ শক্তির প্রতিক রূপে।

আজও সব রীতি নীতি বজায় রাখা হয়ে। পুজোর সময় নতুন করে সেজে ওঠে বাড়ির চন্ডী মণ্ডপ। পাড়া প্রতিবেশী সবাই যোগ দেন এই বাড়ির সেনগুপ্ত বাড়ির পুজোয়।

ফিরে আসবো এরকম একটি বনেদি বাড়ির দূর্গা পুজোর বর্ণময় ইতিহাস এবং ঐতিহ্য নিয়ে। পড়তে থাকুন। ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

তমলুকের ঘোষ বাড়ির দূর্গা পুজো

তমলুকের ঘোষ বাড়ির দূর্গা পুজো

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

পূর্ব মেদিনীপুর জেলার অন্যতম প্রাচীন এবং জনপ্রিয় পারিবারিক পুজো হলো তমলুকের ঘোষবাড়ির দুর্গাপুজো। আজকের পর্বে জানবো এই পুজোর ইতিহাস এবং বিশেষত্ব।

 

এই দুর্গাপুজোর দূর্গা পুজোর দুটি বিশেষত্ব আছে প্রথমটি হলো এই বাড়িতে মহালয়ার আগে কৃষ্ণানবমী তিথিতে দেবীর বোধন হয় দ্বিতীয়টি হলো এখানে পুজো হয় বৃহৎ নন্দীকেশ্বর পদ্ধতিতে।

 

মহালয়ার আগেই কৃষ্ণ নবমী তিথি থেকে প্রতিদিন চলে লক্ষাধিক বার দুর্গানাম জপ, মধুসূদন নামজপ আর চণ্ডীপাঠ।সব নিয়ম মানা হয় শাস্ত্র মতে।সব নিয়ম সেই শুরুর দিন থেকে চলে আসছে। আজও পুকুর থেকে মাটি তুলে এনে মায়ের গায়ে ছোঁয়ানো হয়। এটা এ বাড়ির রীতি।

 

জমিদারি আমলে পুজো ঘোষ বাড়ির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো পরে ধীরে ধীরে তা পুরো গ্রামের পুজো হয়ে দাঁড়িয়েছে।বর্তমানে এই থিম পুজোর ভিড়েও দূর্গা পুজো মানে এই বাড়ির ঠাকুর দালানে মা দুর্গার উজ্জ্বল উপস্থিতি।

 

ঘোষ বাড়ির দূর্গাপুজোয় কুমারী পুজোতেও রয়েছে বৈচিত্র।সপ্তমী অষ্টমী ও নবমী এবং সন্ধি পুজোর সময় চার বার আলাদা আলাদা করে কুমারী পুজো হয়।

 

সব শেষে বলতে হয়। যে নন্দীকেশ্বর পদ্ধতিতে এ বাড়িতে দূর্গাপুজো হয়ে তা বর্তমানে বাংলার হাতে গোনা কয়েকটি রাজ বাড়িতে হয়ে থাকে যার মধ্যে আছে শোভাবাজার রাজবাড়ি, কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি এবং সাবর্ণ রায়চৌধুরী বাড়ি।

 

আজও ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং শাস্ত্রের অপূর্ব মেল বন্ধন ঘটে এই তমলুকের ঘোষ বাড়িরর দূর্গা পুজোয়।

 

ফিরে আসবো এমনই একটি ঐতিহাসিক বনেদি বাড়ির দূর্গা পুজোর ইতিহাস নিয়ে আগামী পর্বে। দেখতে থাকুন। ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কিশোর নগর রাজবাড়ির দূর্গা পুজো 

কিশোর নগর রাজবাড়ির দূর্গা পুজো

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

অবিভক্ত মেদিনীপুরের অন্যতম প্রভাবশালী রাজ পরিবার ছিলো কিশোর নগরের রাজা যাদবরাম রায়ের পরিবার।দান শীল এবং ধার্মিক রাজা দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে শুরু করেন দুর্গাপুজো।

আজকের পর্বে সেই দূর্গা পুজোর ইতিহাস

নিয়ে লিখবো।

 

দেবী দূর্গা এখানে অত্যন্ত জাগ্রত শোনা যায় একবার পুজোর রাতে এক মা ষোড়শী কন্যার বেশে রাজবাড়ির পুজো দেখতে আসেন। সেই সময় এখানে নদী পেরিয়ে আসতে হতো। এক গরীব মাঝি মা দূর্গাকে নদী পার করান প্রতিদানে মা তাঁকে নিজের দিব্য রূপ দর্শন করান এবং রায় বাড়িতে পুজো দেখতে আমন্ত্রণ জানান।

 

প্রায় তিনশো বছরের প্রাচীন এই পুজোয়

পঞ্চমুণ্ডির আসনে ষোড়শী রূপে পূজিত হন দেবী দূর্গা।পুজোর সময় চলে চণ্ডীপাঠ। বলি প্রথা আগে থাকলেও বর্তমানে নেই।

 

একবার পুজোর সময় নাকি বাড়ির সদস্যরা দেখেন মন্দিরের পশ্চিম দিকের দেওয়ালে ফাটল ধরেছে। আর দেবীর ঘট পশ্চিম দিকে ঘুরে গিয়েছে। সেই থেকে এখনও পশ্চিম মুখে ঘট বসিয়েই পুজো করা হয়।

 

আজও পুরোনো দিনের স্মৃতি রূপে প্রাচীন নাটমন্দিরটি আর পুজো মন্ডপটি রয়ে গেছে। এখনো দূর্গা পুজো উপলক্ষে মেলা বসে। নানারকম উৎসব হয়। স্থানীয়রা বিশ্বাস করেন কিশোর নগরের পুজোয় অঞ্জলি না

দিলে দূর্গা পুজো সম্পূর্ণ হয় না।

 

এমনই সব বনেদি বাড়ির দুর্গাপূজার গৌরবময় ইতিহাস নিয়ে চলতে থাকবে এই ধারাবাহিক লেখা লেখি। পড়তে থাকুন। ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

বিশ্বকর্মা পুজোর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য 

বিশ্বকর্মা পুজোর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আজ বিশ্বকর্মাপূজা|

আসুন আজকের এই পবিত্র দিনে জেনে নেই দেব শিল্পী বিশ্বকর্মার আধ্যাত্মিক স্বরূপ, তাঁর পুজোর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য এবং বিশ্বকর্মার সাথে জড়িত কিছু পৌরানিক ঘটনা|

 

আমাদের সনাতন ধর্মে ভগবান বিষ্ণু তার সৃষ্টি কর্মের এক একটি গুরু দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন এক একজন দেবতার উপর যেমন বাণিজ্যর ভার দেবী লক্ষীর উপর, শিক্ষা ও সংস্কৃতির দায়িত্ব স্বরস্বতীর আবার প্রতিরক্ষার দায়িত্বে রয়েছেন দেবী দূর্গা|এদের মধ্যে বিশ্বকর্মা হলেন স্থাপত্য ও নির্মাণের দেবতা|তিনি দেব শিল্পী|

 

বিশ্বকর্মা মূলত বৈদিক দেবতা|ঋগ বেদ সহ একাধিক ধর্ম গ্রন্থে এবং রামায়ন মহাভারতের মত মহাকাব্যে উল্লেখ রয়েছে বিশ্বকর্মার|তিনি ব্রহ্মা সৃষ্টি কর্মের অন্যতম সহযোগী|সৃষ্টির একদম আদি লগ্ন থেকে বিভিন্ন সৃষ্টি কর্মের মাধ্যমে তিনি

জগৎ নির্মাণের কাজে যুক্ত|

 

পুরান অনুসারে দেবগুরু বৃহস্পতির একমাত্র বোন যোগসিদ্ধার পুত্র বিশ্বকর্মা এবং তাঁর বাবা অষ্টম বসুর শ্রেষ্ঠ বসু প্রভাস। আবার ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে বলা আছে, প্রজাপতি ব্রহ্মার নাভিকোষ থেকে বিশ্বকর্মার উৎপত্তি।বিশ্বকর্মার স্ত্রীর নাম ঘৃতচী।

 

বিশ্বকর্মা চতুর্ভুজ এবং তাঁর বাহন হাতি। পুরাণ মতে, বিশ্বকর্মা মহাবীর তাকে বহন করার জন্য প্রয়োজন প্রচুর শক্তি তাই জগতের অন্যতম বলশালী প্রাণী হাতিকে তার বাহন রূপে

নির্বাচিত করা হয়েছে।

 

পুরান ও অন্যান্য শাস্ত্রে বর্ণিত একাধিক অস্ত্র, ও গুরুত্বপূর্ণ বস্তুর প্রধান কারিগর বিশ্বকর্মা|বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র, কুবেরের পুস্পক রথ, শিবের ত্রিশূল

পরশুরামের ধনুক, ইন্দ্রের প্রথম বজ্র এসবই বিশ্বকর্মার সৃষ্টি|রাবনের লংকা নগরী, কুবেরের অলোকা পুরী,এমনকি পুরীর বিখ্যাত জগন্নাথ বিগ্রহও বিশ্বকর্মার স্বহস্তে নির্মিত|

 

যখনই দেব লোকে কোনো বিশেষ স্থাপত্য বা দৈব নিদর্শন সৃষ্টির প্রয়োজন হয় ডাক পড়ে বিশ্বকর্মার|কখনো নিরাশ করেন না বিশ্বকর্মা|নিজের অলৌকিক শিল্প সত্ত্বা ও কঠোর পরিশ্রমের দ্বারা নির্মান করেন একের পর এক শিল্প কর্ম তথা স্থাপত্য শিল্পের সর্বশ্রেষ্ঠ নিদর্শনগুলি|

 

বিশ্বকর্মা পুজো নিষ্ঠা সহকারে পালন করেন দেশের শিল্পীরা, শ্রমিকরা এবং স্থাপত্য শিল্পের সাথে যুক্ত শ্রমিকেরা|আজ ভাদ্র সংক্রান্তি তার পুজোর দিন।শাস্ত্র মতে দেব শিল্পী বিশ্বকর্মার পুজোয় এবং তাঁর কৃপায় শৈল্পিক নৈপুণ্য এবং কর্ম দক্ষতা লাভ হয়। সব গঠনমূলক কাজে

সাফল্য আসে।

 

সবাইকে জানাই বিশ্বকর্মা পুজোর শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন।দেব শিল্পী বিশ্বকর্মার জয়।ফিরে আসবো আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন।ধন্যবাদ।

ভাঙ্গর রাজবাড়ির দূর্গাপুজো

ভাঙ্গর রাজবাড়ির দূর্গাপুজো

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

দক্ষিণ বঙ্গের অন্যতম পুরোনো ভাঙ্গর জমিদার বাড়ির দূর্গা পুজো নিয়েআজকের পর্বে লিখবো।

 

ভাঙড়ের স্বস্ত্যয়নগাছি গ্রামে রয়েছে শতাব্দী প্রাচীন মজুমদার বাড়ি এই মজুমদাররাই ছিলেন ভাঙ্গর অঞ্চলের জমিদার। তাদের বিরাট প্রাসাদপ্রম জমিদার বাড়ির দূর্গা মণ্ডপে শুরু হয়েছিলো দূর্গা পুজো। তবে কবে এবং কোন জমিদারের আমলে এই বাড়িতে দূর্গা পুজো প্রথম শুরু হয় তা নিয়ে নিদ্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়না।

 

জমিদারি প্রথা যখন চলছে সেই সময়ে সর্বদা লোকজনে গমগম করত মজুমদারদের এই বিশাল জমিদার বাড়ি।পুর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণ মিলে তিন মহলার দ্বিতল বাড়ি ছিল মজুমদারদের। নাট মন্দির ছিলো অপূর্ব সুন্দর। বিশাল আকার দূর্গা মণ্ডপে হতো দুর্গাপুজো। সব কিছুরই এখন ভগ্নদশা। একটি মহলার অস্তত্বই বিলোপ হয়েছে। তবে দুটি মহলার দ্বিতল জমিদার বাড়ি এখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তবু নিয়ম মেনে প্রতি বছরই সাধারণ গ্রামবাসী ও জমিদার বাড়ির বর্তমান সদস্যরা মিলে দূর্গা পুজোর

আয়োজন করেন।

 

আজও এই বাড়িতে গোবিন্দের নিত্যপুজো হয় এবং দূর্গা পুজোর জন্য একজন আলাদা পুরোহিত রাখা আছে সেই শুরুর সময় থেকে। আদতে বিষ্ণু উপাসক হলেও শক্তি সাধনা হয় তন্ত্র মতে যদিও আগের মতো এখন আর পশু বলী হয়না।

 

প্রতি বছর জন্মাষ্টমীতে কাঠামো পুজোর পর শুরু হয় মূর্তি গড়ার কাজ।সনাতন ধর্মাবলম্বী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের একসাথে অংশগ্রহণ এই পুজোয় অন্য মাত্রা যোগ করে।বলা যায় এটাই এই পুজোর বৈশিষ্ট্য। দূর্গা পুজোতে সবাই এক সাথে আনন্দে মেতে ওঠেন।

 

অষ্টমীর দিনে সবাই মিলে একসঙ্গে বসে হয় খাওয়াদাওয়ার রীতি সেই জমিদারির স্বর্ণ যুগ থেকে আজও চলে আসছে।

 

আবার যথা সময়ে ফিরে আসবো পরের পর্বে। অন্য কোনো বনেদি বাড়ির পুজোর ইতিহাস নিয়ে। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

বারুইপুর রাজ বাড়ির দূর্গা পুজো

বারুইপুর রাজ বাড়ির দূর্গা পুজো

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

নবাবী আমলে বাংলার বারো ভুঁইয়া দের এক ভূঁইয়া ছিলেন বারুইপুরের রায়চৌধুরীরা যদিও তারা গোড়ার দিকে রায় ছিলেন পরবর্তীতে ব্রিটিশ দের দের সাথে সম্পর্ক এবং নিজেদের প্রভাব ও প্রতিপত্তির জোরে রায় চৌধুরী উপাধি লাভ করেন।

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা এবং বর্তমান দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকা ছিলো তাদের জমিদারির অংশ।

 

তাদের সেই জমিদারীর স্বর্ণ যুগ আজ আর হয়তো নেই তবে তাদের দুর্গাপূজা আজও আছে। বারুইপুর জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো নানা কারণে ঐতিহাসিক। এই পূজোর ইতিহাস নিয়ে এই পর্বে আলোচনা করবো।

 

প্রায় তিনশো বছর আগে রাজা রাজবল্লভ রায়চৌধুরী এই দুর্গাপুজোর সূচনা করেছিলেন। এখনও তিন জন পুরোহিত রীতি মেনে এখানে পুজো করেন।প্রতিপদ থেকে শুরু হয়ে যায় পুজো।

সেই শুরুর দিন থেকে যা যা রীতি আছে সবই আজও নিষ্ঠার সাথে পালিত হয় এখানে।

 

বেশ কিছু বছর আগেও বারুইপুর আদি গঙ্গার জলে প্রতিমার বিসর্জনের সময় দুটি করে নীলকন্ঠ পাখি ওড়াতেন বারুইপুর রায়চৌধুরী বাড়ির কর্তারা। যদিও সরকারী কারণে নীল কণ্ঠ পাখি ওড়ানোর মতো কিছু রীতিতে বর্তমানে অনিচ্ছা সত্ত্বেও লাগাম টানতে হয়েছে তবুও বাপ ঠাকুর্দার আমল থেকে চলে আসা ঐতিহ্য যতটা সম্ভব ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়।

 

যেহেতু পুজো হয় তন্ত্র মতে তাই সপ্তমী থেকে নবমী নিশি পর্যন্ত প্রতিদিন এখানে পশু হয় বলি হয়। অষ্টমীতে পরিবারের সবার একসাথে বসে ভোগ খাওয়ার নিয়ম আছে।অতীতে জমিদার বাড়িতে নৈবেদ্যর ডালা সাজিয়ে প্রজারা আসতেন এখন সেই পরম্পরা আর চোখে পড়েনা তবে জেলা থেকে বহু দর্শণার্থী আজও আসেন।

 

চারপাশের অসংখ্য বারোয়ারী পুজোর ভিড়, থিমের চমক থাকলেও আজও অমলিন বারুইপুরের রায়চৌধুরী বাড়ির দুর্গাপুজো এবং তাদের গৌরব।আজও তাই রীতি মেনে

বারুইপুরে প্রতি বছরই রায়চৌধুরীদের প্রতিমা সবার আগে বিসর্জন হয়। তারপর অন্যান্য প্রতিমা বিসর্জিত হয়।

 

ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট থাকা কালীন সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ও একসময় কিছুদিন বারুইপুরের এই জমিদার বাড়িতে কাটিয়েছিলেন। এই বাড়িতে বসেই তিনি কপাল কুণ্ডলা এবং দূর্গেশনন্দিনীর মতো ঐতিহাসিক উপন্যাস

গুলি লিখেছেন। তার ব্যাবহিত টেবিল এবং

চেয়ার এখানে এখনও রাখা আছে।

 

প্রভু জগন্নাথেদেবের রথ যাত্রা এবং দূর্গা পুজো দুটোই এই পরিবারের বেশ জাঁকজমক করে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে যা গোটা জেলার মধ্যে বেশ জনপ্রিয় এবং সমাদৃত।

 

সারা বাংলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এমন সব ঐতিহাসিক দূর্গা পূজো নিয়ে চলতে থাকবে এই ধারাবাহিক অনুষ্ঠানে।ফিরে আসবো

আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

পাথুরিয়াঘাটা জমিদার বাড়ির দূর্গা পুজো

পাথুরিয়াঘাটা জমিদার বাড়ির দূর্গা পুজো

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

এই ধারাবাহিক লেখনীরা শুরু দিকে বেশ কয়েকটি কলকাতার বনেদি বাড়ির পুজো নিয়ে লিখেছিলাম।তবে কিছু দূর্গাপুজো নিয়ে না লিখলে বনেদি বাড়ির পুজোর কথা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।

কলকাতার পাথুরিয়াঘাটার রাজবাড়ির পুজো তার মধ্যে অন্যতম।

 

নবাবী আমলে বর্ধমান থেকে ব্যবসা সূত্রে কলকাতায় এসে পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটে বাড়ি তৈরি করেন রামরাম ঘোষ। পলাশীর যুদ্ধের কয়েক বছর পরে তৈরি হয় পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটের বাড়িটি। পাথুরিয়াঘাটা ঘোষ বংশের প্রতিষ্ঠাতা রামরামের ছেলে রামলোচন ঘোষ ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানির সাথেও ব্যবসা করেছেন পরে তিনি কোম্পানির দেওয়ান নিযুক্ত হন ।রামলোচনের তিন পুত্র শিবনারায়ণ, দেবনারায়ণ এবং আনন্দনারায়ণ।রামলোচনের মেজো ছেলে দেবনারায়ণের ছেলে খেলাৎচন্দ্র ঘোষ উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি পুরনো বাড়ির পাশেই দুর্গাদালানসহ নতুন বাড়ি তৈরি করে উঠে যান এবং সেখানে দুর্গাপুজো শুরু করেন আজও সেই পুজো খেলাৎ ঘোষের পুজো নামে জনপ্রিয়।

 

এই বাড়ির দূর্গা পুজোতে আসতেন সস্ত্রীক ওয়ারেন হেস্টিংস পরবর্তীতে ঘোষ বাড়ির পুজোতে এসেছেন শ্রীরামকৃষ্ণ এবং গান্ধীজির মতো ব্যাক্তিত্বরা।খেলাৎ ঘোষের ছেলে রামনাথ ঘোষ যখন বাড়ির কর্তা তখন কথা সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় পুজোর সময় এই বাড়িতে আসতেন।কালীপ্রসন্ন সিংহ মানে হুতোম প্যাঁচার লেখায় প্রায়ই উঠে আসত বাবু খেলাত চন্দ্র ঘোষের বৈভবের কথা। ঘোষ বাড়ির বিখ্যাত দুর্গাপুজোর কথা।

 

পুজো হয় শাস্ত্র মতে এবং বেশ নিষ্ঠার সাথে। এবাড়িতে আশ্বিনের কৃষ্ণপ্রতিপদে দেবীর বোধন শুরু হয়। তার আগে মধুসূদন ও রামকৃষ্ণ দেবের পুজো করা হয়।পুজোর প্রতিদিনই কুমারী পুজো হয়।সপ্তমীর দিন কলাবউ স্নান হয়।অষ্টমীর দিন হাজার একটা পদ্ম নিবেদন করা হয় দেবীকে।ঘোষ বাড়ির পুজোতে পশু বলি নিষিদ্ধ তার বদলে এখানে বলি দেওয়া হয় চিনির মঠ যা বিশেষ ভাবে কাশী থেকে বানিয়ে আনা হয়।শোনা যায় অতীতে সাতবার বন্দুক দেগে প্রতিমা ঘাটের দিকে নিয়ে যাওয়া হত কালের নিয়মে কিছু রীতি নীতিতে পরিবর্তন আনতে হয়েছে তবে আজও আন্তরিকতা এবং নিষ্ঠা একই রকম আছে।

 

ফিরে আসবো অন্য কোনো ঐতিহাসিক বনেদি বাড়ির পুজো নিয়ে আগামী পর্বে। চলবে এই ধারাবাহিক আলোচনা। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।