Home Blog Page 8

বিশেষ পর্ব – দেবী কৌশিকীর মাহাত্ম 

বিশেষ পর্ব – দেবী কৌশিকীর মাহাত্ম

 

পন্ডিতজি ভৃগুর শ্রীজাতক

 

বছরের যত গুলো অমাবস্যা আমরা পালন করি তার মধ্যে ভদ্র মাসের কৌশিকী অমাবস্যা একটি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ তিথি।আধ্যাত্মিক দৃষ্টি ভঙ্গী থেকে এবং তন্ত্র সাধনার প্রেক্ষাপটে কৌশিকী অমাবস্যার তাৎপর্য অপরিসীম। কৌশিকী অমাবস্যার ঠিক প্রাক্কালে আজকের এই বিশেষ পর্বে আসুন জেনে নিই কে এই দেবী কৌশিকী এবং শাস্ত্রে তার সম্পর্কে কি কি তথ্য আছে।

 

শ্রীশ্রীচণ্ডীতে বর্ণিত মহা সরস্বতী দেবীর কাহিনীতে বলা আছে পুরাকালে একবার শুম্ভ ও নিশুম্ভ কঠিন সাধনা করে ব্রহ্মাকে তুষ্ট করলে চতুরানন তাঁদের বর দেন, কোনও পুরুষ তাঁদের বধ করতে পারবেন না৷ শুধু কোনও অ-যোনি সম্ভূত নারী তাঁদের বধ করতে পারবেন। অর্থাৎ এমন এক নারী, যিনি মাতৃগর্ভ থেকে জন্ম নেননি, তাঁর হাতেই এই দুই অসুর ভাই-এর মৃত্যু হবে|

 

অন্যদিকে পূর্ব জন্মে পার্বতী যখন সতী রূপে দক্ষ যজ্ঞ স্থলে আত্মাহুতি দেন, তার কারণে এই জন্মে ওঁর গাত্র বর্ণ কালো মেঘের মতো। তাই ভোলানাথ তাঁকে কালিকা ডাকতেন। একদিন দানব ভাইদের দ্বারা পীড়িত ক্লান্ত দেবতারা যখন কৈলাশে আশ্রয় নিলেন, শিব সব দেবতাদের সামনেই পার্বতীকে বললেন, “কালিকা তুমি ওদের উদ্ধার করো।” সবার সামনে ‘কালী’ বলে ডাকায় পার্বতী অত্যন্ত ক্ষুব্ধ, অপমানিত ও ক্রোধিত মনে মানস সরোবরের ধারে কঠিন তপস্যা করলেন।

 

তপস্যান্তে শীতল মানস সরোবরের জলে স্নান করে নিজের দেহের সব কালো পরিত্যাগ করলেন ও পূর্ণিমার চাঁদের মতো গাত্র বর্ণ ধারণ করলেন।দেবীর দেহ হতে নির্গত ওই কালো কোশিকাগুলি থেকে এক অপূর্ব সুন্দর কৃষ্ণবর্ণ দেবীর সৃষ্টি হয়। ইনি দেবী কৌশিকী| এই কৌশিকী অমাবস্যার তিথিতেই দেবীর উৎপত্তি হয় এবং তিনি শুম্ভ ও নিশুম্ভকে বধ করেন। তাই এই অমাবস্যার নাম কৌশিকী অমাবস্যা|

 

মৎস পূরাণ এবং মার্কন্ডেয় পূরাণে বলা হয়,অত্যাচারি অসুর দ্বয় শুম্ভ ও নিশুম্ভকে বধ করতে দেবী পার্বতী সাধনা শুরু করেন। তপস্যার পর, নিজের শ্বেতশুভ্র গায়ের রঙ পরিত্যাগ করে ,উজ্জ্বল কালো বর্ণে ভয়াল রূপ ধারণ করেন দেবী। সেই রূপে দেবী পার্বতী হয়ে ওঠেন ‘কৌশিকী’। আর এই কৌশিকীই অমাবস্যার এক বিশেষ কালক্ষণে দেবী বধ করেন শুম্ভ ও নিশুম্ভ নামের দুই অসুরকে। সেই কালক্ষণকে স্মরণ করেই অনুষ্ঠিত হয় কৌশিকী অমাবস্যার পূজা।

 

সহজ ব্যাখ্যায় কৌশিকী অমাবস্যা অশুভ শক্তির উপর শুভ শক্তির জয়কে উদযাপন করার একটি ধর্মীয় উৎসব যা মহাসমারোহে পালিত হয়ে আসছে দেশের শক্তি উপাসকদের দ্বারা যুগ যুগ ধরে|শাস্ত্র মতে গ্রহ দোষ খণ্ডনের ক্ষেত্রে এই অমাবস্যা অন্যান্য সব অমাবস্যার থেকে অনেকটাই এগিয়ে।

কারন কৌশিকী অমাবস্যার একটি বিশেষ মুহূর্তে সাধকের করা তন্ত্র সাধনা সব দিক দিয়ে সফল হয় এবং দেবী কৌশিকীর আশীর্বাদে সব

অন্ধকার দুর হয়।যুগ যুগ ধরে এমনটাই হয়ে আসছে।

 

আবার পরের পর্বে কৌশিকী অমাবস্যা সংক্রান্ত কিছু শাস্ত্রীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা থাকবে।

থাকবে জ্যোতিষ এবং তন্ত্র জগৎ নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী কথা – আদ্যা কালী 

কালী কথা – আদ্যা কালী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আজকের কালী কথায় আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি বাংলা তথা দেশের অন্যতম জাগ্রত এবং প্রসিদ্ধ কালী ক্ষেত্র আদ্যাপীঠের কথা।

 

দক্ষিনেশ্বর মন্দিরের কিছুটা দূরেই অবস্থিত এই আদ্যাপীঠ মন্দির যেখানে বিরাজ করছেন আদ্যা কালী।ঠাকুর রামকৃষ্ণ দেবের প্ৰিয় শিষ্য অন্নদা ঠাকুর অর্থাৎ অন্নদা চরণ ভট্টাচার্য এই মন্দির নির্মাণ করেছিলেন তার গুরুদেব অর্থাৎ রামকৃষ্ণ দেবের আদেশে|

 

ঠাকুর তার ভক্ত ও শিষ্য অন্নদা ঠাকুরকে নির্দেশ দিয়ে ছিলেন কলকাতার একটি দীঘি থেকে দেবী মূর্তি উদ্ধার করে নিয়ে এসে দক্ষিনেশ্বর এর অদূরে আরিয়া দহে এক মন্দির নির্মাণ করতে এবং শর্ত ছিলো বারো বছরের মধ্যে মন্দির নির্মাণ সম্পন্ন করতে হবে না হলে সর্ব সাধারণের জন্য মন্দিরের দ্বার উন্মুক্ত থাকবেনা|অন্নদা ঠাকুর আদেশ পালন করে ছিলেন কিন্তু বারো বছরের জায়গায় পঁয়ত্রিশ বছর লেগে ছিলো মন্দির নির্মাণ সম্পূর্ণ করতে|তাই আজও সর্ব সাধারণের জন্য মুল মন্দিরের দ্বার বন্ধই আছে|

 

ঠাকুর রামকৃষ্ণ ও অন্নদা ঠাকুরের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত এই মন্দির 10 কাটা জমির উপর নির্মিত তবে প্রায় 27 বিঘা জমি জুড়ে রয়েছে আদ্যাপীট সংঘ|মুল মন্দির প্রায় একশো ফুট উঁচু|সামনে রয়েছে সু দৃশ্য নাট মন্দির|প্রতিদিন দুপুরে ও সন্ধ্যায় মা আদ্যার আরতি হয় এই সময় ছাড়া বন্ধ থাকে মন্দিরের প্রধান দরজা|তবে সর্ব সাধারণ কে দেবীর দর্শন করতে হয় সামনের নাট মন্দির থেকে কারন মুল মন্দিরে সর্ব সাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ|মুল মন্দিরে আদ্যা শক্তির অষ্ট ধাতুর মূর্তি রয়েছে এবং তার নিচে রয়েছে রামকৃষ্ণ দেবের মূর্তি|এছাড়াও মন্দিরের পশ্চিম প্রান্তে রয়েছে ছয় টি আটচালা শিব মন্দির।

 

কথিত আছে এক রাম নবমীর রাতে মা আদ্যা শক্তি অন্নদা ঠাকুর কে দর্শন দিয়েছিলেন এবং আদ্যা স্তোত্র পাঠ করে শুনিয়েছিলেন এবং অন্নদা ঠাকুর এই আদ্যা স্তোত্র লিখে রাখেন যা আজও পাঠ করা হয় মন্দিরে।

 

অন্নদা ঠাকুর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত রামকৃষ্ণ সংঘ মন্দিরের পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে।

প্রতি বছর আদ্যা নবমী তে মন্দিরে বিশেষ পূজা এবং কালী পূজা উপলক্ষে মহা পূজার আয়োজন করা হয়|প্রতিদিন দেবী কে সাড়ে বাইশ সের চালের অন্ন ভোগ ঠাকুর রামকৃষ্ণদেবকে সাড়ে বারো সের চালের অন্ন ভোগ দেয়া হয় আদ্যাপিঠে|

 

চলতে থাকবে কালী কথা ফিরবো আগামী পর্বে কৌশিকী অমাবস্যা উপলক্ষে বিশেষ পর্ব

নিয়ে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী কথা – সিঙ্গুরের ডাকাত কালী

কালী কথা – সিঙ্গুরের ডাকাত কালী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

এককালে হুগলি ছিলো ডাকাতদের জন্য বিখ্যাত। এই জেলার সিঙ্গুরের কাছেই আছে এক প্রাচীন ডাকাত কালীমন্দির যেখানে এককালে ডাকাতদের দ্বারাই পূজিতা হতেন দেবী।আজকের কালী কথায় এই ডাকাত কালীর কথাই জানাবো।

 

প্রাচীন সরস্বতী নদীর তীরে অবস্থিত সিঙ্গুর এককালে বেশ সমৃদ্ধ অঞ্চল ছিল। তার আদি নাম ছিল সিংহপুর। এখানে রাজত্ব করতেন মহারাজা সিংহবাহু। তাঁর নামানুসারেই রাজধানীর নাম হয় সিংহপুর যা পরবর্তীতে লোক মুখে বিকৃত হয়ে সিঙ্গুর হয়।

 

সিঙ্গুরের ডাকাত কালীমন্দির সুপ্রাচীন তাতে সন্দেহ নেই। ডাকাতদের প্রতিষ্ঠিত পুজো বলেই মায়ের নাম ডাকাত কালী। এই মন্দিরে ডাকাত সনাতন বাগদি ডাকাত কালী পুজো করতেন। মনে করা হয় প্রাচীন ডাকাতকালী মন্দিরের তিনিই ছিলেন শেষ সেবক। তাঁর মৃত্যুর পরে পরেই এই মন্দিরের নিত্যপুজো বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে রঘু ও গগন ডাকাত ঘট স্থাপন করে আবার সেই মন্দির চত্তরে মা কালীর পুজো শুরু করেছিলেন।

 

নিয়মিত শ্যামা মায়ের পুজো দিত তারা। কালী পুজো দিয়ে তবেই বের হত ডাকাতি করতে। খুনজখম লুঠতরাজ শেষে ফিরে এসে ডাকাতি করা সামগ্রী সব অর্পণ করত মায়ের চরণে। সেই সেই সময়ে তন্ত্রমতে পুজো হত মায়ের। হত নরবলিও যা নিয়ে এলাকায় অনেক কিংবদন্তী প্রচলিত আছে।

 

এখনো স্থানীয়রা এই ডাকাত কালীকে এতটাই জাগ্রত মনে করেন যে মন্দিরের নিত্যপুজো ছাড়া আশেপাশের তিনটি গ্রামে আর কোনও কালীমূর্তির পুজো হয় না। মূর্তি তো দূরের কথা, গ্রামের কোনও বাড়িতে মা কালীর ছবি লাগানো ক্যালেন্ডারও টাঙায় না কেউ।

 

সনাতন ডাকাত গোষ্ঠী দ্বন্দে মারা যাওয়ার পর কিছুকাল পুজো বন্ধ থাকে পরবর্তীতে আবার মন্দির প্রতিষ্ঠা হয় এবং পুজো শুরু হয় মায়ের স্বপ্নাদেশে। কোনও এক সময় পাশের গ্রামের এক অবস্থাপন্ন গৃহস্থ চাষের সামগ্রী নিয়ে বেচাকেনার জন্য শেওড়াফুলি হাটে যাচ্ছিলেন। গরুর পিঠে শস্য বোঝাই করে সিঙ্গুরের ওই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় ক্লান্ত অবসন্ন হয়ে গাছের ছায়ায় বসে ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। ঘুমের মধ্যেই মা ডাকাত কালী তাঁকে স্বপ্ন দেন বাড়ি ফিরে যেতে এবং ওই স্থানে তাঁর মন্দির প্রতিষ্ঠা করতে।তিনি বাড়ি ফিরে গিয়ে গ্রামের সবাইকে ডেকে ঘটনাটি বলেন। যে শস্যের বস্তা বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল তিনি

সেই বস্তায় সোনার মোহর পাওয়া যায়। তা দিয়েই দেবীর ইচ্ছানুসারে তৈরি করা হয় একচালার ছোট মন্দির। এই ঘটনার কিছুকাল পরে বর্ধমানের রাজাকে মা স্বপ্ন দেন বড় মন্দির গড়ে পুজোর ব্যবস্থা করতে। স্বপ্নাদেশ পেয়ে পুজোর জন্য জমি দান করেন বর্ধমানের রাজা। সেবাইত রেখে দেবীর নিত্যপূজার ব্যবস্থা করা হয়। সেই সেবাইতের বংশধরেরা এখনও পুজো চালিয়ে যাচ্ছেন।

 

প্রাচীনকালে টেরাকোটার কাজ থাকলেও আজ তা বিলুপ্তপ্রায়। মন্দিরের সামনে রয়েছে নাটমন্দির। তবে এই মন্দিরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় গর্ভগৃহের কাঁঠাল কাঠের তৈরি দরজাটি। কারুশিল্পের সুন্দর নিদর্শন এই প্রাচীন দরজা।

প্রসঙ্গত বলে রাখি এইস্থানেই ডাকাতদের হাতে বন্দি হয়েছিলেন মা সারদা এবং তার স্বরূপ বুঝতে পেরে ডাকাতরা তাকে স্বসম্মানে তার গন্তব্যে পৌঁছে দেন।

 

ফিরে আসবো কালী কথার পরবর্তী পর্বে। থাকবে বাংলার অন্য এক ঐতিহাসিক কালী পুজো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা।পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

জন্মাষ্টমী উপলক্ষে বিশেষ পর্ব – কৃষ্ণ কালী

জন্মাষ্টমী উপলক্ষে বিশেষ পর্ব – কৃষ্ণ কালী

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

আজ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে শ্রী কৃষ্ণের এমন এক লীলার কথা আপনাদের বলবো যেখানে শ্রী কৃষ্ণ স্বয়ং দেবী কালীর রূপ ধরে ছিলেন।তার এই বিশেষ রূপ কে বলা হয় কৃষ্ণ কালী।

বৃন্দাবনের কুঞ্জবনে কৃষ্ণের বাঁশি শুনে ঘর ছেড়ে রোজ বেরিয়ে যান রাধা। নীরবে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে মিলিত হন কৃষ্ণের সঙ্গে। কেউ কিছু জিগেস করলে বলতেন তিনি কালিন্দী নদীর ধরে শ্যামা মায়ের পুজো করতে যান। প্রসঙ্গত বলে রাখি এই শ্যামা মা অর্থাৎ দেবী কালী রাধার স্বামী আয়ানের পরিবারের ইষ্ট দেবী। তাই তারাও বিষয়টি সহজ ভাবে মেনে নেন।

কিন্তু একদিন রাধার দুই সহচরি জটিলা কুটিলা
আসল কথাটা তুলে দিল রাধার স্বামী আয়ানের কানে। ক্রুদ্ধ আয়ান রাধাকে হাতেনাতে ধরতে ।সারাদিন তিনি তক্কে তক্কে থাকলেন এবং রাধা বেরোলেই তিনি তাঁর পিছু নেন।কিন্তু ভগবান কৃষ্ণ সর্ব জ্ঞানী। তার কাছে আয়ানের এই আগমন বার্তা গোপন রইল না। তিনি সেদিন রাধা আসতেই তাঁকে বললেন, যা বলছি করো, তুমি দ্রুত আমাকে লতাপাতা ফুল-ফল দিয়ে সাজিয়ে দাও। আর আমার পায়ের কাছে ভক্তের মতো বিনীত ভাবে বসে থাকো।

শ্রী রাধা প্রশ্ন না করে কৃষ্ণর কথা মতো দ্রুত সবটা করলেন।তারপর চোখের পলকে শ্যাম পরিবর্তিত হলেন শ্যামায়।তার নিজের দ্বিভুজ দেহ একেবারে চতুর্ভুজ রূপ হয়ে গেল। তার উন্মুক্ত কেশ রাশি দুলতে আরম্ভ করলো । তাঁর গলায় থাকা পদ্মের মালা খানি নৃমুণ্ড মালার রূপ নিলো।বাঁশি হল খরগ এবং কপালের তিলক চন্দ্র রূপে শোভা পাচ্ছিলো।তিনি কৃষ্ণ থেকে কালীতে সম্পূর্ণ
ভাবে রূপান্তরিত হন। তিনি তখন আর কৃষ্ণ নন তিনি হয়ে গেছেন কৃষ্ণ কালী।

আয়ান এসে দেখলেন ঘন বনের মধ্যে এসে তাঁর বউ রাধা তাঁরই ইষ্টের আরাধনা করছেন! তাঁর মনটা আনন্দে ভরে গেল। তিনি রাধার আচরণে খুশিই হলেন এবং নিজের ইষ্ট দেবী শ্যামাকে দর্শন
করে ধন্য হলেন।

এই বিশেষ কালী রূপ কৃষ্ণ কালী রূপে বহু স্থানে পূজিত হয়। বৈষ্ণব এবং শাক্ত দর্শনের অপূর্ব সমম্মিলিত রূপ হলেন কৃষ্ণ কালী যা ভগবানের অদ্ভুত এক লীলার প্রকাশ।সংক্ষেপে এই কৃষ্ণ কালী রূপ প্রমান করে দেয় যিনি কৃষ্ণ কালী তিনিই কালী সব ভেদাভেদ এবং তর্ক বিতর্ক অর্থহীন।

সবাইকে জানাই জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন। আজ এই পর্ব এখানেই শেষ করছি। আবার ফিরে আসবো কালী কথা নিয়ে।
যথা সময়ে। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন।ধন্যবাদ।

কালী কথা – জহুরা কালী 

কালী কথা – জহুরা কালী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আজ কালী কথায় বাংলার অন্যতম প্রাচীন কালী মন্দির জহুরা কালীর মন্দির নিয়ে লিখবো।

এই ঐতিহাসিক কালী মন্দির উত্তরবঙ্গের মালদায় ইংরেজবাজার থানা এলাকায় একটি প্রাচীন আমবাগানের মধ্যে অবস্থান করছে।

 

দেবীর নাম কেনো জহুরা হলো আগে সেটা জেনে নেয়া যাক।শোনো যায় এক কালে এই অঞ্চলে ছিলো ঘন অরণ্য।ডাকাত রাই একপ্রকার শাসন করতো এই এলাকা এবং এই দেবী এক সময়ে ছিলেন ডাকাতদের আরাধ্যা। এখানে দেবী চণ্ডীর পুজো করে ডাকাতরা যেত ডাকাতি করতে। ডাকাতি করে প্রচুর ধনরত্ন আনত তারা, তারপর সেগুলোকে এখানেই মাটির তলায় রাখত। সেই ধনরত্নের ওপরই দেবীমূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয় যেহেতু ধনরত্নকে হিন্দিতে বলে ‘জওহর’। দেবীমূর্তির নিচে প্রচুর ধনরত্ন রাখা থাকত বলেই এখানে দেবী চণ্ডী ‘জহরা’ বা ‘জহুরা’ নামে বিখ্যাত।

 

বর্তমানে মন্দিরের অভ্যন্তরে লাল রঙের ঢিবির ওপর রয়েছে এক মুখোশ এবং ঢিবির দু’পাশে আরও দু’টি মুখোশ দেখা যায়। এছাড়া গর্ভগৃহে আছে শিব আর গণেশের মূর্তি|এক কালে এখানে দেবীর পূর্ণ অবয়ব মূর্তি ছিলো তবে বিদেশী শত্রুর আক্রমণের ভয়ে তা মাটির নিচে লুকিয়ে ফেলেন পুরোহিতরা। সেই থেকে এই রূপেই পূজিতা হচ্ছেন দেবী জহুরা।

 

দেবী জহুরা চন্ডিরই রূপ তিনি অত্যন্ত জাগ্রত

তার পুজো উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চল ছাড়াও বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ সমবেত হন এই মন্দির প্রাঙ্গনে।এখানে বৈশাখ মাসের মঙ্গল ও শনিবার থাকে বিশেষ পুজোর আয়োজন|উল্লেখযোগ্য বিষয় অন্যান্য কালীমন্দিরের মতো এখানে রাত্রিবেলা কোনো পুজো এখানে হয় না পুজো হয় দিনে|

 

আবার ফিরে আসবো কালী কথার পরবর্তী পর্ব নিয়ে। কৌশিকী অমাবস্যা উপলক্ষে চলতে

থাকবে কালী কথা।পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী কথা – অর্ধ কালী

কালী কথা – অর্ধ কালী

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

শাস্ত্রে যতগুলি মাকালীর রূপের উল্লেখ আছে যেমন ভদ্র কালী, দক্ষিনা কালী ইত্যাদি তার বাইরেও বাংলায় নানা রূপে পূজিতা হন দেবী কালী। দেবীর এমনই এক রূপ অর্ধ কালী।
আজ কালী কথায় আপনাদের দেবী অর্ধকালীর কথা লিখবো।

আজ থেকে প্রায় ছশো বছর আগে
অবিভক্ত বাংলার ময়মনসিংহের প্ৰখ্যাত কালীসাধক দ্বিজদেব নিজের নিঃসন্তান অবস্থা ঘোচানোর জন্য তার আরাধ্যা দেবী কালীর কাছে প্রার্থনা করেন।দীর্ঘ সময় ধরে প্রার্থনা করার পরে তার ডাকে সাড়া দেন মা কালী এক রাতে তিনি স্বপ্ন দেখলেন তাঁর পরমারাধ্যা তাঁর কাছে কন্যারূপে আসবেন। যথা সময়ে সন্তান সম্ভবা হলেন তার স্ত্রী এবং এক মাঘী পূর্ণিমার দিন এক কন্যা সন্তান ভূমিষ্ঠ হল। লোকমুখে শোনা যায় বিচিত্র ছিলো সেই কন্যা সন্তানের রূপ। সে না পুরোপুরি গৌরাঙ্গী আবার না সম্পূর্ণ শ্যামাঙ্গী। তার দেহের অর্ধেক গৌরবর্ণা আর বাকি অর্ধ ঘন শ্যামবর্ণা ।

তিনি আদর করে কন্যার নাম দিলেন জয়দুর্গা। তবে নিজে কন্যাকে অর্ধকালী বলে ডাকতেন। আসলে এই কন্যা কোনো সাধারণ কন্যা নন। তিনি বিশ্বাস করতেন এই কন্যা দেবী কালীর মানবী রূপ
এবং পিতা হয়েও দেবী রূপেই তাকে মনে মনে ভক্তি করতেন দ্বিজদেব।কন্যা বড় হয়ে বিবাহযোগ্যা হলে দ্বিজ ঠাকুরের টোলের শিষ্য রাঘবরাম ভট্টাচার্যর সাথে জয় দুর্গার বিবাহ হয়। রাঘবরাম ভট্টাচার্য তন্ত্র জ্যোতিষ
চর্চা করতেন এবং পরবর্তীতে মাতৃ সাধক রূপে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।

বিবাহ পরবর্তী জীবনেও জয় দূর্গা বা
অর্ধকালীকে কেন্দ্র করে একাধিক অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়।শোনা যায় একবার তাদের পরিবারে এক নব বধূর ঘোমটা জন সমক্ষে পড়ে যাওয়ায় তৎক্ষণাৎ এক জোড়া অদৃশ্য হাত সেই ঘোমটা আবার স্বস্থানে বসিয়ে দেয় যা দেখে হতবাক হয় সবাই। এই পরিবারে নিয়মিত দূর্গা পুজো এবং চন্ডী পাঠ হতো একবার তাদের পুজোয় একটি বিশেষ কারণে চন্ডী পাঠ বন্ধ
থাকে সেই সময় তাদের কুল দেবী দুর্গা দক্ষিণমুখী
থেকে ঘুরে পশ্চিমমুখী হন আর কাঁচা হলুদ বর্ণা দেবী ক্রুদ্ধ রক্তবর্ণা রূপ ধারণ করেন।আজও নাকি অর্ধকাকালীর পরিবারের এই রূপেই
দেবীর পুজো হয়। হয়না চন্ডী পাঠ।

আজও এখানে পরম্পরা মেনে দুর্গাপূজা হয় শারদীয়া দুর্গা পুজোর সময়ে দেবী
অর্ধকালীকে স্মরণ করা হয় গৃহদেবী রূপে।

ফিরে আসবো কালী কথার পরবর্তী পর্বে। থাকবে বাংলার অন্য এক ঐতিহাসিক কালী পুজো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী কথা – ভৈরবেশ্বরী কালী

কালী কথা – ভৈরবেশ্বরী কালী

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

আজ কালী কথায় আপনাদের বর্ধমানের এক প্রসিদ্ধ কালী ক্ষেত্রর কথা জানাবো যা প্রায় তিনশো বছরের প্রাচীন।আজকের পর্বে দেবী ভৈরবেশ্বরী।

বর্ধমান রাজ পরিবারের এক পূর্বপুরুষ ভৈরবচাঁদ ছিলেন নিঃসন্তান। মা কালীর প্রতি যেমন তাঁর অগাধ ভক্তি ছিল। তিনি নিয়মিত মা কালীর আরাধনা করতেন।তিনি ছিলেন নিঃসন্তান সন্তান কামনায় প্রতিদিন মায়ের কাছে প্রার্থনা জানাতেন। তাঁর কাতর প্রার্থনায় মা কালী একদিন রাতে ভৈরবচাঁদ কাপুরকে স্বপ্ন দেন এবং দেবী বলেন যে “তোর সন্তানের জন্য দুঃখ কিসের। আমিই তোর সন্তান হয়ে তোর মেয়ে রূপে তোর কাছে
থাকব কথা দিচ্ছি”।

তারপরই এক মাঘ মাসের রটন্তী চতুদ্দশীর দিন নিমকাঠের কালী মূর্ত্তি তৈরী করে মন্দির নির্মাণ করে মাকে প্রতিষ্ঠা করেন ভৈরবচাঁদ। সেই থেকেই মায়ের পুজোর শুরু।খুব সম্ভবত ভৈরবের
নাম থেকেই দেবীর নাম ভৈরবেশ্বরী হয়।
ভৈরবেশ্বরী মন্দির দক্ষিণমুখী।এখানকার বিশেষত্ব মন্দিরে নিম কাঠের তৈরী প্রাচীন কালী মূৰ্ত্তি।

বিশেষজ্ঞদের মতে এই ধরনের নিম কাঠে
দিয়ে তৈরী কালী মূর্ত্তি নাকি একমাত্র পুরীর জগন্নাথ দেবের মন্দিরেই আছে। অনেকের মতে এই কালী মূর্তি ভারতবর্ষের মধ্যে দ্বিতীয়
নিম কাঠের কালী মূৰ্ত্তি যা অত্যান্ত দুর্লভ।

এছাড়াও রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহ, গৌর নিতাই মূর্ত্তি, নারায়ণ শিলা এবং আরো, অনেক বিগ্রহের নিত্য পুজো এই মন্দিরে হয়। বাৎসরিক কালী পূজায় এবং প্রতিষ্ঠা দিবসে অর্থাৎ মাঘ মাসের রটন্তী চতুর্দশীতে পশু বলী সহ তন্ত্র মতে মহা সমারোহে পুজো অনুষ্ঠিত হয় এবং সেই উপলক্ষে
বহু ভক্তের সমাগম হয়।

ফিরে আসবো কালী কথা নিয়ে আগামী পর্বে। থাকবে অন্যএক কালী মন্দিরের ইতিহাস এবং নানা অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ।পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন।ধন্যবাদ।

কালী কথা – মগনেশ্বরী কালীবাড়ি

কালী কথা – মগনেশ্বরী কালীবাড়ি

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

 

সতীপীঠের ভূমি বীরভূমে রয়েছে এক

ঐতিহাসিক কালী ক্ষেত্র যা মগনেশ্বরী কালীবাড়ি নামে পরিচিত।আজকের কালী কথা এই

ঐতিহাসিক কালী মন্দির নিয়ে।

 

শুরু করবো একটি অলৌকিক ঘটনা দিয়ে।

সে বহু বছর আগের কথা বীরভূমের কোনো এক ছোট্ট রেলস্টেশনের স্টেশনমাস্টার স্বপ্ন দেখেন, এক মহিলা বিনা টিকিটে আমোদপুরে আসছেন।তার বিপদ হতে পারে তিনি যেনো সাহায্যে এগিয়ে যান।সেই স্বপ্ন অনুযায়ী পরদিন ভোরে এক মহিলাকে খুঁজে পান স্টেশন মাস্টার।তার কাছে কোনও টিকিটও ছিল না।জিজ্ঞাসা করে জানা যায় তিনি যাবেন প্ৰখ্যাত সাধক এবং আধ্যাত্মিক গুরু কৈলাসপতি বাবার কাছে। তাঁর কাছ থেকে তিনি দীক্ষা গ্রহণ করবেন।স্টেশন মাস্টার তার সাধ্য মতো সব ব্যাবস্থা করে দেন।

 

সেদিনের এই অজ্ঞাত মহিলা ছিলেন বিখ্যাত তন্ত্র সধিকা মৃণালিনী দেবী। এই মৃণালিনী দেবী ছোট থেকেই প্রচন্ড সংযমী এবং ধার্মিক চরিত্রের ছিলেন তিনি। মাত্র আট বছর বয়সে বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে সাধনা করতে চলে যান।শোনা যায় তার জন্মের পর কৈলাসপতিবাবা তার পরিবারকে জানান “এই মেয়ে একদিন বিখ্যাত সন্ন্যাসিনী হবে” পরবর্তীতে সেই মেয়ে কৈলাশ পতি বাবার কাছেই দীক্ষা নিয়ে এক সাথে সাধনা করে।তার সন্ন্যাসীনী জীবনে নাম হয় মগনানন্দ।মগনানন্দ সাধক বামাক্ষ্যাপার সমসাময়িক ছিলেন দুজনের দেখাও হয়। দীক্ষা লাভের পর নিজের গ্রাম আমোদপুর ফিরে মৃণালিনী দেবী ওরফে মগনানন্দ ভক্তদের সাহায্যে দক্ষিণেশ্বর কালীর আদলে দেবীর শিলা মূর্তি স্থাপনা করেন।এবং পাকাপাকিভাবে আমোদপুরেই থাকতে শুরু করেন।চলতে থাকে তন্ত্র সাধনা। মাতৃ আরাধনা।

 

শোনা যায় একবার তারাপীঠে বামদেবের সেবা করতে ছুটে যান মগদানন্দ গিরি।সেবা করে তাকে সুস্থ করে তোলেন। তার ভক্তদের মুখে তার একাধিক অলৌকিক শক্তির কথা শোনা যায়। ভক্তদের কাছে তিনি ছিলেন ‘গুরুমা’। ভাল কাজের যেমন বিধান দিতেন, ঠিক তেমনি খারাপ কাজেও শাসন করতেন। তিনি একশো চৌত্রিশ বছর বয়সে দেহত্যাগ করেন এবং তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী, তাঁকে ত্রিবেণী সঙ্গমে সমাধিস্থ করা হয়।গুরুমা মগদানন্দ গিরির নামানুযায়ী তার সাধন স্থল ও সেই সংলগ্ন কালী ক্ষেত্র আজ সবার কাছে মগনেশ্বরী কালী বাড়ি রূপে পরিচিত।

 

আসন্ন কৌশিকী অমাবস্যা উপলক্ষে

ধারাবাহিক ভাবে চলতে থাকবে কালী কথা।

ফিরে আসবো আগামী পর্বে।পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী কথা – কঙ্কালেশ্বরী কালী

কালী কথা – কঙ্কালেশ্বরী কালী

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

বর্ধমানের অন্যতম এক জাগ্রত এবং ঐতিহাসিক মাতৃ মন্দির হলো কঙ্কালেশ্বরী কালী মন্দির। এই প্রাচীন কালী মন্দির নিয়ে রয়েছে একাধিক কিংবদন্তী এবং অলৌকিক ঘটনা যা নিয়ে আজকের কালী কথায় লিখবো।

আজ থেকে কয়েকশো বছর আগে বর্ধমানে থাকতেন কমলানন্দ নামে এক মাতৃসাধক।
তন্ত্র বিশারদ হিসেবে তার বেশ খ্যাতি ছিলো। শোনা যায় তিনি একবার মায়ের স্বপ্নাদেশ পান। স্বপ্নে আদেশ হয় যে দামোদর নদে শীল রূপে দেবী কালী অবস্থান করছেন এবং তিনি যেনো ওই মাতৃ মূর্তি উদ্ধার করে আনেন এবং মন্দির প্রতিষ্ঠা করে সেই মূর্তি স্থাপন করে পুজো শুরু করেন।

স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী তিনি দামোদরের তীরে গিয়ে ঘোর কৃষ্ণ বর্ণের সেই পাথরটি উদ্ধার করেন। সেই পাথরে দেবী মূর্তি খোদাই করা ছিলো।
পাথরের এই দেবী মূর্তি পেয়ে তিনি বর্ধমানের তৎকালীন মহারাজ বিজয়চাঁদ মহাতাবকে খবর দেন।তারপর রাজার উদ্যোগে সেই মূর্তি মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করা হয়।

সেই কৃষ্ণ বর্ণের পাথরে খোদাই দেবী কঙ্কালের মতো দেখতে। নাম তাই কঙ্কালেশ্বরী কালী। দেবী এখানে অষ্টভূজা। শায়িত শিবের নাভি থেকে উৎপত্তি হয়েছে পদ্মের। সেই পদ্মার ওপর দেবী বিরাজমানা।দেবী মূর্তির সাথে একটি হাতিও লক্ষ্য করা যায়।সব থেকে আশ্চর্য জনক বিষয় পাথরের কালী মূর্তিতে মানব শরীরের সব শিরা উপশিরা এবং প্রত্যেকটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ নিখুঁত ভাবে
খোদাই করা আছে।

বিশেষ বিশেষ অমাবস্যা তিথি এবং
প্রতি কালীপুজোয় এখানে অসংখ্য
ভক্তের সমাগম হয়। সেই সময়ে এখানে
প্রায় কুড়ি হাজার ভক্ত অন্নভোগ গ্রহণ করেন। চামুণ্ডা মতে পুজো হয় এখানে।
তবে শুরু থেকেই বলি প্রথা নেই।

আবার কালী কথার পরবর্তী পর্বে ফিরে আসবো অন্য এক প্রাচীন কালী মন্দিরের ইতিহাস।
থাকবে নানা অলৌকিক ঘটনা। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী কথা – বর্গেশ্বরী

কালী কথা – বর্গেশ্বরী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আজ কালী কথায় যে দেবীর কথা বলবো তার সাথে বাংলার ইতিহাসের একটি অধ্যায় জড়িত আছে।তার নাম টিও ভারী অদ্ভুত।

আজকের পর্বে দেবী বর্গেশ্বরীর মহিমা এবং ইতিহাস।

 

তখন বাংলায় বার বার বর্গী আক্রমণ হচ্ছে

এই বর্গি শব্দটা এসেছে ফারসি ‘বারগিস’ থেকে, যেটার অর্থ ‘প্রাচীন মারাঠা যোদ্ধা’। তারা ছিলো বেজায় কট্টর হিন্দু। মাতৃ শক্তির আরাধনা করতো

তারা।মুঘলরা ছিলো তাদের প্রধান শত্রু।

 

বাংলায় তখন নবাবী যুগ চলছে। অবিভক্ত বাংলা বিহার উড়িষ্যার রাজধানী মুর্শিদাবাদ। মসনদে বৃদ্ধ নবাব আলিবর্দি খান। দৌহিত্র সিরাজুদ্দউল তখন কিশোর। সেই সময়ে রাতের আঁধারে একদল বর্গী ঘোড়া টগবগিয়ে হানা দিতে থাকল বাংলায়। তারা গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিতে থাকল, লোকজনকে মেরে-ধরে সবকিছু কেড়ে নিতে থাকল। দোকানপাট বাজার সব তাদের অত্যাচারে বন্ধ হয়ে গেল। সবাই তাদের ভয়ে ঘর থেকে বেরুনো বন্ধ করে দিল। শান্ত বাংলা যেন হঠাৎ করেই আতঙ্কের বাংলা হয়ে উঠল।

 

ইতিহাস বলছে ১৭৪০ খিস্টাব্দে মারাঠা অশ্বারোহী বর্গিরা কংসাবতী নদী অতিক্রম করার উদ্দেশ্যে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমারের বরগোদা গ্রামে অস্থায়ী সৈন্য শিবির স্থাপন করে। তাদের আগ্রহেই তখন প্রতিষ্ঠিত হয় দেবী বর্গশ্বেরী মন্দির। আর তখন থেকেই মায়ের আরাধনা শুরু হয়।যেহেতু বর্গীরা দেবীর প্রতিষ্ঠা করে ছিলো তাই নাম হয়

বর্গেশ্বরী।

 

সব জাতি ও সম্প্রদায় মিলেমিশে পালন করে আসছে এই দেবীর পুজো।কাছেই তমলুকে রয়েছে বর্গভীমার মন্দির।মানুষের বিশ্বাস বর্গভীমার

বোন হন দেবী বর্গশ্বেরী। প্রাচীন এই পুজোকে ঘিরে সমস্ত ধর্মের মানুষ একাত্ম। একসঙ্গে আরাধনা করে পুজোর কটা দিন।

 

বিশেষ বিশেষ তিথিতে ধুম ধাম করে দেবী বর্গেশ্বরীর পুজোর আয়োজন করা হয়। দূর্গা এবং কালী পুজোর সময় এখানে পুজো উপলক্ষে বিরাট উৎসব হয় পুজোতে ভোগ হিসেবে দেওয়া হয় গুড়পিঠে। এই প্রসাদ পাওয়ার জন্য ভিড়ও হয় খুব।বহু মানুষ আসেন মনোস্কামনা জানাতে আবার মনোস্কামনা পূর্ণ হলে পুজো দিয়ে যান।

 

সামনেই কৌশিকী অমাবস্যা। আগামী দিন গুলিতে এই রূপ কালী কথা। চলতে থাকবে।ফিরে আসবো আগামী পর্বে।পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।