Home Blog Page 7

অষ্ট লক্ষীর শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা 

অষ্ট লক্ষীর শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

লক্ষীপুজো উপলক্ষে আজ আপনাদের দেবী লক্ষীর আটটি ভিন্ন রূপে ব্যাখ্যা করবো।একত্রে এই রুপ গুলিকে অষ্ট লক্ষী বলা হয়।

 

১- আদি লক্ষ্মী বা মহালক্ষ্মী — তিনি বিষ্ণুপ্রিয়া। বিষ্ণুর সঙ্গেই তিনি চিত্রিত হন।আদি লক্ষী বা মহা লক্ষী হলো মা লক্ষীর আদি রূপ । এই মা লক্ষী হলেন অফুরন্ত ধনসম্পদের অধিষ্ঠাত্রী|

 

২. ধনলক্ষ্মী বা ঐশ্বর্য্যলক্ষ্মী — সম্পদ ও সমৃদ্ধির দেবী।এই দেবীর ছটি হাত এবং মূলত লাল শাড়িতেই অধিষ্ঠাত্রী। প্রতিটি হাতে থাকে একে একে চক্র, শঙ্খ, একটি ঘট বা পবিত্র কলসি, তীর ধনুক এবং একটি পদ্ম। সর্বশেষ হাতটি অভয় মুদ্রার ন্যায় রাখা এবং তা থেকে সোনার মোহর বা মুদ্রা উৎপন্ন হয়।

 

৩.ধান্যলক্ষ্মী—ইনি শস্যর দেবী।শস্য ভালো হয়

আর্থিক কষ্ট লাঘব হয় এই রূপের পুজো করলে|এই দেবী খাদ্যশস্যর প্রতীক।ধান্য লক্ষী দেবীর দুই হাতে থাকে শস্য এবং এই দেবীর পরনে থাকে শস্যের রঙের সবুজ শাড়ি|

 

৪. গজলক্ষ্মী— গজ বা হাতির সঙ্গে তাঁকে কল্পনা করা হয়। ব্যক্তির শ্রীবৃদ্ধি ঘটে তাঁর কল্যাণে|। এই দেবী হাতির ওপর সরাসরি অধিষ্ঠাত্রী না হলেও, তার চারিদিক বেষ্টিত থাকে হাতি দ্বারা। রাজকীয় ধন সম্পদের প্রতীক এই দেবী। কথিত আছে সমুদ্র মন্থন কালে ভগবান ইন্দ্রের হারিয়ে যাওয়া ধন সম্পদ ফিরিয়ে দিয়েছিলেন এই দেবী|

 

৫. সন্তানলক্ষ্মী— সন্তানভাগ্য নিরূপণ করেন এই দেবীরূপ। ভালো সন্তান লাভ হয় এই দেবী সন্তুষ্ট হলে।

 

৬. বীরলক্ষ্মী— সাহসদাত্রী দেবী।সাহস ও আত্মবিশ্বাস যোগান|এই দেবীর আরাধনা মনের শক্তি এবং ধৈর্য্য যোগায় যা জীবনের কঠিন এবং ভালো সময়কে সঠিকভাবে পরিচালনা করার শক্তি যোগায়|

 

৭. বিদ্যালক্ষ্মী—বিদ্যা লক্ষী জ্ঞানের দেবী। বিদ্যা লাভ হয় এই দেবীর পূজায়|বিদ্যার প্রতীক এই দেবী। সরস্বতী ঠাকুরের মতোই এই দেবী পদ্মের ওপর সাদা শাড়িতে অধিষ্টাত্রী হন|

 

৮. বিজয়লক্ষ্মী বা জয়লক্ষ্মী— ইনি বিজয়ের অধিষ্ঠাত্রী|বিজয় লাভ হয় এই দেবীর আশীর্বাদে|

এই দেবী সর্বদা বিজয়এর প্রতীক স্বরূপ। কোনো সমস্যার থেকে মুক্তি পেতে বা বড়ো সাফল্য পেতে এই দেবীর পূজা হয়ে থাকে|

 

অর্থাৎ দেবী লক্ষীর এই প্রতিটি রূপের নিজস্ব ব্যাখ্যা ও পুজোর উদ্দেশ্য রয়েছে।

 

আগামী পর্বে দেবী লক্ষী সংক্রান্ত আরো অনেক পৌরাণিক এবং শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা নিয়ে ফিরে আসবো।

 

সবাইকে জানাই লক্ষী পুজোর শুভেচ্ছা।পড়তে থাকুন। ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

দেবী লক্ষীর বাহন এবং তার শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা 

দেবী লক্ষীর বাহন এবং তার শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

দেবী দুর্গা কইলাশে ফিরে যাওয়ার পরেই আবার ফিরে আসেন তার কন্যা লক্ষী। অনেকে মজা করে বলেন ব্যয়বহুল দুর্গাপুজোর পর বাঙালির অর্থ ভাণ্ডারে যখন টান পরে তখন ধন সম্পদের দেবী লক্ষী আসেন অর্থ এবং সম্পদ দান করতে। তবে তিনি একা আসেন না। সঙ্গে আসেন তার বাহন প্যাঁচা।কিন্তু এতো প্রাণী থাকতে কেনো দেবী লক্ষীর বাহন প্যাঁচা? তার অনেক গুলি কারন ও শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা আছে।আজ সেই নিয়ে লিখবো।

 

একটি সাধারণ ব্যাখ্যা মতে বলা হয় ধান বাঙালির কাছে লক্ষী কিন্তু এই ধান ইঁদুরে খেয়ে ফেলে ধানের গোলায় ইঁদুর ঢুকে নষ্ট করে খাদ্যশস্য তাই ধানের শত্রু ইঁদুর। আর ইঁদুরকে খায় পেঁচা অর্থাৎ ধানকে রক্ষা করে ইঁদুরের হাত থেকে। তাই লক্ষ্মী দেবীর বাহন এই রাত জাগা পাখি।

 

তবে লক্ষ্মীদেবীর বাহন হিসেবে পন্ডিতদের যে মতটি সর্বাধিক গ্রহনযোগ্য তা হলো যিনি লক্ষ্মী গুন অর্থাৎ সত্য প্রেম পবিত্রতা তপস্যা তিতিক্ষা পেতে চান তাকে পেচক ধর্ম পালন করতে হবে অর্থাৎ জাগতিক বস্তু থেকে একটু দূরে থেকে নির্জনে যোগৈশ্বর্য ও সাধন সম্পদ রক্ষা করতে হয়। পেঁচা যদি দিনের বেলায় বের হয় অন্যান্য পাখিরা তাকে তাড়া করে তাই অতি গোপনে পেচা বাস করে। সেরকমই পূর্ণতা লাভ না করা পর্যন্ত জাগতিক বিষয় ব্যক্তির দৈব সম্পদ নষ্ট করে।এসব কারনে পেচাকে লক্ষীর বাহন হিসেবে রেখে দিয়েছেন কারন পেঁচা নিঃশব্দে, অন্ধকারে নিজের লক্ষ্যে অবিচল থেকে এগিয়ে যায় এবং প্রচারের আড়ালে থাকে।

 

শাস্ত্রে আরো বিস্তারিত ব্যাখ্যা আছে।ঋগ্বেদে বলা হয়েছে, পেঁচা আসলে যমের দূত। যম মানে সংযম, যম মানে ধর্ম। ধনোপার্জনের ক্ষেত্রেও সংযম,বুদ্ধি এবং ধর্মীয় চেতনা অপরিহার্য এই গুনগুলির প্রতীক পেঁচা। যমদূত পেচক তাঁর নিজের বৃত্তি ও প্রভুর ধর্মের কথা স্মরণ করিয়ে মৃত্যুচিন্তা ও আত্মচিন্তা জাগ্রত করে মানুষের মনে তাই সে লক্ষীর বাহন হিসেবেও স্থান পেয়েছে।

 

আবার লৌকিক মতে কোজাগরী পূর্ণিমার রাতে মা লক্ষ্মী খোঁজ নেন কে জাগ্রত রয়েছে। জেগে থাকা ব্যক্তিকেই তিনি ধন সম্পদ দেন।পেঁচা নিশাচর, প্রতি রাতেই জেগে থাকে। দিনে ঘুমায় তাই প্যাঁচাকে দেবী নির্বাচন করেছেন তার বাহন রূপে|

 

আগামী পর্ব গুলিতে লক্ষী পুজো সম্পর্কে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে ফিরে আসবো। পড়তে থাকুন। ভালো থাকুন।ধন্যবাদ।

বিজয়া দশমীর শাস্ত্রীয় এবং আধ্যাত্মিক তাৎপর্য 

বিজয়া দশমীর শাস্ত্রীয় এবং আধ্যাত্মিক তাৎপর্য

পন্ডিত ভৃগুশ্রী জাতক

আজ বিজয়া দশমী। আজ সব বাঙালির মন খারাপ করা একটা দিন কারন মা দুর্গা ফিরে যাবেন কৈলাশে। তবে শাস্ত্র মতে দিনটি গৌরবের। আজ আসুন জেনে নিই এই বিজয়া দশমীর শাস্ত্রীয় এবং আধ্যাত্মিক তাৎপর্য

আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের দশমী তিথিতে পিতৃ গৃহ ছেড়ে কৈলাসে স্বামীগৃহে পাড়ি দেন দেবী|তাই দশমী শব্দটি ব্যবহিত হয়। আবার পুরান অনুসারে নয় দিন ও নয় রাত্রি যুদ্ধ করার পর দশম দিনে দেবী মহিষাসুরকে বধ করে বিজয় লাভ করেন|অর্থাৎ বিজয়া রূপে আত্মপ্রকাশ করেন|তাই এই দিন টি বিজয়া দশমী রূপে চিহ্নিত হয়|

আগে রাজা জমিদার রা তাদের বাড়ির পুজোতে দশমীর দিন নীল কণ্ঠ পাখি ওড়াতো কারন

রামায়ণ অনুসারে রাবণকে বধ করার সময়

রাম নীলকন্ঠ পাখি দেখতে পেয়েছিলেন। তাই এই পাখিকে শুভ শক্তির প্রতীক বলে মনে করা হয়ে থাকে। দশমীর দিন যদি নীলকন্ঠ পাখি দেখতে পাওয়া যায় তাহলে পাপ মুক্তি ঘটে এবং মনের সমস্ত সাধ পূরণ হয় বলে বিশ্বাস।

আবার পুরান অনুসারে সমুদ্র মন্থন করা হয়, তখন দেবাদিদেব সেই বিষ পান করেন এবং তাঁর কণ্ঠ নীল বর্ণের হয়ে যান। তাই তাঁকে নীলকন্ঠ বলা হয়ে থাকে। আর এই নীলকন্ঠ পাখিকে তাঁরই প্রতিরূপ মনে করা হয়। গ্রাম বাংলার লৌকিক রীতি অনুযায়ী বিজয়ার দিন দেবীর নিরঞ্জনের আগে যদি নীলকন্ঠ পাখি ওড়ানো হয় তাহলে সেই পাখি কৈলাশে গিয়ে মহাদেবকে খবর দেবে যে তাঁর ঘরণী ফিরছে।

আবার উত্তর ও মধ্য ভারতে এই দিনে দশেরা উদযাপিত হয়|’দশেরা’ শব্দটির উৎপত্তি সংস্কৃত শব্দ ‘দশহর’ থেকে এবং এখানে মূলত রাম কতৃক দশানন রাবন বোধের দিনটিকে উদযাপন করা হয়|বাল্মীকি রামায়ণ অনুসারে আশ্বিন মাসের শুক্লা দশমী তিথিতেই লঙ্কেশ্বর রাবণকে বধ করেছিলেন।

অর্থাৎ এই দিনর শাস্ত্রীয় এবং আধ্যাত্মিক মাহাত্ম অপরিসীম। এটি শুভ শক্তির বিজয়ের দিন

তাই হয় তো স্নেহের আলিঙ্গন এবং মিষ্টি বিতরণের প্রচলন|তবু মন খারাপ থাকতেই পারে কারন নয় দিন ব্যাপী উৎসবের আজ সমাপ্তি|

সবাইকে জানাই শুভ বিজয়া।আধ্যাত্মিক, পৌরাণিক এবং শাস্ত্রীয় নানা বিষয় নিয়ে ধারাবাহিক লেখা চলতে থাকবে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

নব রাত্রি – দেবী সিদ্ধিদাত্রী

নব রাত্রি – দেবী সিদ্ধিদাত্রী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

নব রাত্রি উপলক্ষে শুরু করা বিশেষ ধারাবাহিক অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে আপনাদের স্বাগত।নবদুর্গার নবম তথা শেষ রূপ হল সিদ্ধিদাত্রী।

আজকের পর্বে দেবীর এই বিশেষ রূপটি

নিয়ে লিখবো।

 

দেবী সিদ্ধিদাত্রী সিংহবাহিনী দেবীর চার হাতে আশীর্বাদ মুদ্রা। তিনি সিদ্ধি দান করেন। তিনি সবাইকে বরাভয় দেন।সিদ্ধি দাত্রী রূপে দেবী

স্নিগ্ধ এবং শান্ত।

 

দেবী সিদ্ধি দান করেন তাই তিনি সিদ্ধিদাত্রী |

দেবী ভগবত্‍ পুরাণে আছে, স্বয়ং মহাদেব দেবী পার্বতী কে সিদ্ধিদাত্রী রূপে পুজো করেছিলেন|এবং তার ফলে মহাদেব সকল সিদ্ধি লাভ করেন|

 

যদিও বিভিন্ন পুরাণে দেবীর ভিন্ন রূপ বর্ণিত, কোথাও তিনি অষ্টভুজা, তো কোথাও তিনি অষ্টাদশভুজা আবার কোথাও দেবী ‘সিদ্ধিদাত্রী’ চতুর্ভুজা রূপেও পূজিত।দেবীর চতুর্ভুজা রূপটি শাস্ত্র সম্মত ভাবে সর্বাধিক জনপ্রিয় এবং সর্বত্র পূজিতা।

 

দেবীর উপাসনায় সংসারে আসে সুখ এবং সমৃদ্ধি এবং সকল সিদ্ধি লাভ হয়| যারা কর্ম ক্ষেত্রে উন্নতি চায় শিক্ষা ক্ষেত্রে সমস্যা থেকে মুক্তি চায় এবং প্রকৃত জ্ঞান লাভ করতে চায় তারা দেবীর এই রূপের আরাধনা করতে পারেন|

 

দেবী সিদ্ধিদাত্রীর আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য,নব রাত্রিতে দেবীর উদ্দেশ্যে গন্ধম, পুষ্পম, দীপম, সুগন্ধম এবং ভোগ নিবেদন করে পঞ্চোপচার পূজা করতে পারেন।তাছাড়া সিঁদুর, মেহেন্দি, কাজল নিবেদন করতে পারেনা তাতে আপনাদের বিবাহিত জীবনে সুখের হবে দেবীর আশীর্বাদে|

 

পদ্মাসনে বসা দেবীকে তিলের তৈরি নাড়ু বা খাবার ভোগ হিসেবে দেওয়ার চল রয়েছে। মনে করা হয়, তাতে ভক্তের শারীরিক ও মানসিক পীড়া দুর হয়|পরিবারের ও কল্যান হয়|

 

আসন্ন লক্ষী পুজো এবং কালী পুজো উপলক্ষে নানা শাস্ত্রীয় এবং পৌরাণিক বিষয় নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে আলোচনা চলতে থাকবে। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

নব রাত্রি – দেবী মহাগৌরী

নব রাত্রি – দেবী মহাগৌরী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

দেবীর অষ্টম রূপ হল মহাগৌরী রূপ।দেবী কালরাত্রির উগ্রতা এবং ক্রোধ ত্যাগ করে দেবী মহা গৌরী রূপে শান্তি এবং মৈত্রীর বার্তা দেন।

 

মহাগৌরী শব্দের আভিধানিক অর্থ ধরলে মহা মানে মহান। আর গৌরী মানে ফর্সা।এই দেবীর রূপ এতই ফর্সা যে তাঁকে শঙ্খ, চাঁদ আর জুঁই ফুলের সঙ্গে তুলনা করা হয়।

 

শাস্ত্র মতে হিমায়লকন্যা ছিলেন গৌরবর্ণা। শিবের জন্য কঠোর তপস্যা করে রৌদ্রে তিনি কৃষ্ণবর্ণা হন| মহাদেব যখন গঙ্গাজল দিয়ে তাকে স্নান করান, তখন তিনি হয়ে ওঠেন পুনরায় গৌর বর্ণা|দেবীর এই রূপের নাম হয় মহাগৌরী|

 

দেবী এই রূপে হাতির পিঠে চার হাতে অস্ত্র নিয়ে বিরাজ করেন |আগেই বলেছি মহা গৌরী গায়ের রং শ্বেতবর্ণ, তিনি শান্ত প্রকৃতির দেবী। আট বছরের বালিকা রূপে তিনি পূজিতা হন। দেবীর এক হাত শোভিত বরাভয় মুদ্রায়। বাকি তিন হাতে থাকে পদ্ম, ত্রিশূল এবং ডমরু।

 

শাস্ত্র মতে এই রূপের পুজোয় কেটে যায় বিবাহ সম্পর্কিত বাধা।যাদের বিবাহে বিলম্ব বা বাঁধা আসছে অথবা বিবাহিত জীবন সুখের নয় তারা এই দেবীর আশীর্বাদে সমস্যার সমাধান পেতে পারেন।দেবী পরম পবিত্রতার প্রতীক এবং

অত্যন্ত করুণাময়ী।সাধকরা মনে করেন দেবী পার্বতীর এই স্বরূপ পরমসাত্ত্বিকের আধার।

তার দর্শন মাত্র মনের ভয় এবং অশান্তি দুর হয়।

 

কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের কাছে অন্নপূর্ণা মন্দিরে দেবী মহা গৌরী বিরাজ করছেন।অনেকেই কাশীতে আসেন দেবীর আশীর্বাদ পেতে।

 

নব রাত্রি উপলক্ষে বিশেষ পর্বে দেবীর পরবর্তী রূপ নিয়ে।ফিরে আসবো। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

নব রাত্রি – দেবী কাল রাত্রি

নব রাত্রি – দেবী কাল রাত্রি

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

নব দুর্গার সপ্তম রূপ হল কালরাত্রি।যার পুজো হয় নব রাত্রির সপ্তম রাতে।আজ দেবীর এই রূপের শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা আপনাদের জানাবো।

 

বিভিন্ন অস্ত্র ও গহনায় সজ্জিত হয়ে দেবী ধরা দেন কালরাত্রি রূপে|দেবী কৃষ্ণবর্ণা ও ত্রিনয়না|দেবীর বাহন গর্ধব|চতুর্ভুজা দেবী ভীষণদর্শনা|দেবীর তিন হাতে অস্ত্র | এক হাতে ভক্তদের প্রতি বরাভয়।

অর্থাৎ একই সাথে দেবী ক্রোধন্বিতা আবার দয়াশীলা।

 

দেবীর কালরাত্রি রূপের আরাধনায় কেটে যায় সব সংকট| শাক্ত শাস্ত্রানুযায়ী একজন প্রকৃত সাধকের

মন কাল রাত্রির আবির্ভাবের রাতে সম্পূর্ণভাবে মাতা কালরাত্রির স্বরূপে বিলীন হয়ে যায় যদি তার সাধনা শাস্ত্র সম্মত এবং ত্রুটি মুক্ত হয়।

 

শাস্ত্র মতে দেবীর সাক্ষাৎ পেলে সাধক মহাপুণ্যের ভাগী হন। তাঁর সমস্ত পাপ ও বাধাবিঘ্ন নাশ হয় এবং তিনি অক্ষয় পুণ্যধাম প্রাপ্ত হন।দেবী কালরাত্রি দুষ্টের দমন করেন, অশুভ গ্রহের বাধা দূর করেন এবং ভক্তদের আগুন, জল, হিংস্র জন্তু জানোয়ার, শত্রু ও রাত্রির ভয় থেকে মুক্ত করেন।দেবী কালরাত্রির উপাসনা করলেই দৈত্য, দানব, রাক্ষস, ভূত ও প্রেত পালিয়ে যায়।কালরাত্রির রূপ ভয়ংকর হলেও তিনি শুভফলের দেবী।তার অপর নাম শুভঙ্করী।

 

চলছে নব রাত্রি।এখনো দেবীর কয়েকটি রূপের বর্ণনা বাকি আছে আগামী পর্বে ফিরবো দেবীর পরবর্তী রূপ নিয়ে|পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

নব রাত্রি – দেবী কাত্যায়নী

নব রাত্রি – দেবী কাত্যায়নী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আজ নব রাত্রির ষষ্ঠ রাত। আজ পুজো করা হয় দেবী কাত্যায়নীর। আজকের পর্বে জানবো দেবী দুর্গার কাত্যায়নী রূপ সম্পর্কে।জানাবো তার রূপের মাহাত্ম এবং ব্যাখ্যা।

 

একটি ব্যাখ্যাঅনুসারে ঋষি কাত্যায়ন প্রথম দেবী দুর্গাকে পূজা করেছিলেন বলে তার নাম অনুসারে দেবীর নাম হয় ‘কাত্যায়নী’।আবার অনেকে বলেন ঋষি কাত্যায়ন দেবী দুর্গাকে কন্যারূপে লাভ করার জন্য তপস্যা করেছিলেন। তাঁর তপস্যায় তুষ্ট হয়ে দেবী দুর্গা কাত্যায়নের কন্যা রূপে জন্মগ্রহণ করে ‘কাত্যায়নী’ নামে পরিচিতা হন।

 

দেবী কাত্যায়নী চতুর্ভুজা–তাঁর ডানদিকের দুটি হাত বর ও অভয়মুদ্রা প্রদর্শন করে, বাঁ দিকের দুই হাতে পদ্ম ও খড়্গ। দেবী সিংহবাহিনী। তাঁর গায়ের রং সোনার মতো উজ্জ্বল।তন্ত্রসার-এর ধ্যানমন্ত্রে তাঁকে বর্ণনা করা হয়েছে দশভুজা মহিষাসুরমর্দিনী রূপে। আবার হরিবংশ গ্রন্থের বর্ণনা অনুযায়ী, তিনি অষ্টাদশভুজা।পতঞ্জলির মহাভাষ্য ও কৃষ্ণযজুর্বেদীয় তৈত্তিরীয় আরণ্যক-এ কাত্যায়নীর উল্লেখ রয়েছে। দেবীর মাহাত্ম বর্ণিত হয়েছে মার্কণ্ডেয় পুরাণ-এর অন্তর্গত শ্রীশ্রীচণ্ডী, দেবীভাগবত পুরাণ, কালিকা পুরাণ এবং বামন পুরানে।

 

শাস্ত্রে উল্লেখ আছে আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশীর দিন দেবী কাত্যায়নীর জন্ম। তারপর শুক্লা সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীর দিন ঋষি কাত্যায়নের পূজা গ্রহণ করে দশমীর দিন তিনি যুদ্ধ খেত্রে অসুররাজকে বধ করেছিলেন।

 

গৃহস্তরা দেবী কাত্যায়নীর পূজা করলে ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ–এই চার ফল লাভ করে এবং তার সমস্ত রোগ-শোক-ভয়এবং জন্ম-জন্মান্তরের পাপ দুর হয় ।

 

ভাগবত পুরাণ-এ আছে, বৃন্দাবনের গোপীগণ কৃষ্ণকে পতিরূপে পাওয়ার জন্য সারা মাঘ মাস জুড়ে কাত্যায়নী ব্রত পালন করেছিলেন। তাই মনোমত স্বামী প্রার্থনায় এক মাস ধরে কাত্যায়নী ব্রত পালনেরও প্রথা রয়েছে।

 

কাশীর আত্মাবীরেশ্বর মন্দিরের গর্ভগৃহের একটি কুলুঙ্গিতে দেবী কাত্যায়নীর মূর্তি প্রতিষ্ঠিত।স্বামী বিবেকানন্দের মা ভুবনেশ্বরী দেবী এই আত্মাবীরেশ্বর মন্দিরে মানত করেই স্বামীজিকে পুত্ররূপে লাভ করেছিলেন বলে জনশ্রুতি আছে|আত্মাবীরেশ্বর মন্দিরে অষ্টভূজা মহিষাসুরমর্দিনীর মূর্তি রয়েছে|মূর্তিটি কষ্টিপাথরে নির্মিত, উচ্চতা এক হাত।আত্মাবীরেশ্বর শিবই দেবী কাত্যায়নীর ভৈরব।নবরাত্রির ষষ্ঠ দিনে এখানে

প্রচুর ভক্তসমাগম হয়।

 

নব রাত্রি উপলক্ষে চলবে ধারাবাহিক ভাবে দেবীর নয়টি রূপ নিয়ে আলোচনা|আবার ফিরে আসবো আগামী পর্বে|দেবীর পরবর্তী রূপ নিয়ে|পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

নবরাত্রি – দেবী স্কন্দ মাতা

নবরাত্রি – দেবী স্কন্দ মাতা

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

চলছে নব রাত্রি।আজ নবরাত্রির পঞ্চম দিনে দেবী স্কন্দ মাতার পূজাকরা হয়।আজ দেবী স্কন্দ মাতার মাহাত্ম এবং দেবীর স্বরূপ ব্যাখ্যা করবো।

 

শিব এবং দেবী পার্বতীর পুত্র কার্তিকের আরেক নাম স্কন্দ তাই স্কন্দমাতা পার্বতীজির অপর নাম। দেবী স্কন্দমাতা শিশু স্কন্দকে কোলে নিয়ে থাকেন।

দেবী চতুর্ভুজা এক হাতে তিনি স্কন্দকে ধরে রেখেছে। যেখানে অন্য দুটি হাতে তিনি দুটি পদ্ম ধারণ করেন এবং তার চতুর্থ হাতটি আশীর্বাদ দেয়ার জন্য ব্যাবহিত হয়|

 

পুরাণ অনুযায়ী দেবী স্কন্দমাতা আগুনের দেবী।তিনি স্বেত বর্ণের দেবী। দেবী একটি পদ্মের উপর বিরাজ করছেন।তিনি তার ভক্তদের অমূল্য জ্ঞান দান করেন।

 

যারা নবরাত্রির পঞ্চম দিনে বাড়িতে স্কন্দমাতার পুজো করবেন তারপর প্রথমে গঙ্গাজল দিয়ে গৃহ শুদ্ধ করুন। একটি রৌপ্য, তামা বা মাটির পাত্রে নারকেল রেখে তার পাশে একটি কলস স্থাপন করুন তাতে সাতটি সিন্দুর বিন্দু স্থাপন করুন।পুজোর সময়ে নীল বর্ণের পোশাক পড়বেন এবং ভোগে কলা অবশ্যই রাখবেন।

 

তারপর বৈদিক ও সপ্তশতী মন্ত্রের মাধ্যমে ষোড়শপচার সহ দেবীর ধ্যান করুন।

তারপর পুজোর সময় মাতৃদেবীর এই মন্ত্রটি এগারো বার জপ করা উচিত-

 

“যা দেবী সর্বভূতেষু মা স্কন্দমাতা রূপেন সংস্থা।নমস্তস্য নমস্তস্য নমস্তস্য নমো নমঃ ”

 

স্কন্দমাতার এই মন্ত্রটি জপ করলে আপনার বাড়িতেও সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধি বিরাজ করবে।

সন্তান ভাগ্য ভালো হবে।দেবীর পুজোর পর প্রসাদ শিশুদের মধ্যে বিলিয়ে দিন এতে দেবী সন্তুষ্ট হবেন এবং কৃপা করবেন।

 

 

দেবীর পরবর্তী রূপ এবং তাঁর শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা নিয়ে ফিরে আসবো আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

নবরাত্রি – দেবী কুষ্মান্ডা

নবরাত্রি – দেবী কুষ্মান্ডা

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

নব রাত্রি উপলক্ষে পূজিতা দেবী দুর্গার চতুর্থ রূপ হলো কুষ্মাণ্ডা রূপ এই রূপে দেবী পূজিতা হন আজ অর্থাৎ নব রাত্রির চতুর্থ রাত্রে।আজকের পর্বে দেবীর এই রূপ নিয়ে লিখবো।জানাবো এই রূপের শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা।

 

দেবীর এই নাম এর যুক্তি সম্মত নিদ্দিষ্ট শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা আছে ‘কু’ শব্দের অর্থ কুৎসিত এবং ‘উষ্মা’ শব্দের অর্থ ‘তাপ’; ‘কুষ্মা’ শব্দের একত্রিত অর্থ কুৎসিত বা তাপ কে হরণ করেন যিনি। কুষ্মান্ডা রূপে দেবী জগতের সকল দুঃখ কষ্ট বা কিছু আপাত দৃষ্টিতে কুৎসিত সব কিছুকে গ্রাস করে নিজের উদরে ধারণ করেন তাই তার নাম ‘কুষ্মাণ্ডা’।

 

মহাপ্রলয়ের পরে যখন সর্বত্র শুধু নিশ্ছিদ্র অন্ধকার ছেয়ে রয়েছে, তখন এই দেবী কুষ্মাণ্ডা নব রূপে ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করেছিলেন|

দেবী অষ্টভুজা” নামেও পরিচিতা আবার দেবীকে “কৃষ্ণমাণ্ড” নামেও ডাকা হয়|

দেবী সিংহবাহিনী ও ত্রিনয়নী দেবীর হাতে থাকে সুদর্শনচক্র, ধনুর্বাণ, রক্তপদ্ম, কমণ্ডলু, অমৃত কলস ও জপমালা|

 

কাশীতে দেবী কুষ্মাণ্ডার মন্দির বিখ্যাত রয়েছে এবং কাশীতে তিনি দুর্গা রূপেই পূজিতা হন।

তিনি কাশীর দক্ষিণ দিকের রক্ষয়িত্রী। কাশীখণ্ড তে উল্লেখ রয়েছে, অসি নদীর সঙ্গমস্থলে কুষ্মাণ্ডার অধিষ্ঠান।

 

শাস্ত্র মতে দেবীর কুষ্মান্ডা রূপের আরাধনায় বৈভব, সুখ সমৃদ্ধি ও যশ এবং খ্যাতি বাড়ে

বলে মনে করা হয়|মনে করা হয়, দেবী কুষ্মাণ্ডা অল্প পূজাতেই সন্তুষ্ট হন। তার পূজায় কুষ্মাণ্ড বা কুমড়ো বলি দেওয়ার রীতি প্রচলিত আছে।

 

আপনারাও নবরাত্রির এই পবিত্র পবিত্র তিথিতে দেবীকে স্মরণ করে প্রনাম করুন এবং শুদ্ধ দেহ এবং শুদ্ধ চিত্তে মনোস্কামনা জানান। আপনার মনোস্কামনা দেবীর আশীর্বাদে পূর্ন হবে।

 

ফিরেআসবো আগামী পর্বে দেবীর পরবর্তী রুপ নিয়ে শাস্ত্রীয় আলোচনায়।পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

নবরাত্রি – দেবী চন্দ্র ঘন্টা

নবরাত্রি – দেবী চন্দ্র ঘন্টা

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

নব রাত্রি উপলক্ষে দেবীর প্রথম ও দ্বিতীয় রুপ নিয়ে আগে লিখেছি আজ দেবীর তৃতীয় রুপ

নিয়ে লিখবো।

 

নবরাত্রিতে তৃতীয় দিনে পূজিতা হন নব দুর্গার তৃতীয় রূপ অর্থাৎ চন্দ্র ঘন্টা|পুরান অনুসারে শিব পার্বতীর বিবাহের সময় হঠাৎ তারকাসুর প্রেত পিশাচ দৈত দানব সহ আক্রমণ করে বসে তখন দেবী পার্বতী এক দশ ভুজা রুপী মঙ্গলময়ী দেবী রূপে চন্দ্র সম বিশাল শুভ ঘণ্টা বাজিয়ে সকল অশুভ শক্তি কে নিরস্ত্র করেন।দেবীর এই রূপ চন্দ্র ঘন্টা নামে পরিচিত|

 

দেবীর আবির্ভাব সম্পর্কে আরো একটি ব্যাখ্যা প্রচলিত আছে যেখানে মনে করা হয় শিব

বিবাহ কালে চন্ড রূপ ধারণ করলে তাকে দেখে মেনকা সহ উপস্থিত অথিতিরা ভীত হয়ে পড়েন তখন দেবী পার্বতী শিবের এই রূপের প্রত্যুত্তরে চন্দ্রঘণ্টা রূপ ধারণ করেন। দেবীর এই রনমূর্তি দেখে শিব তার নিজের চন্ড রূপ ত্যাগ করে বিবাহের জন্যে নিজের সৌম ও শান্ত রূপে ফিরে আসেন|

 

দেবী চন্দ্রঘন্টা তৃতীয় নয়ন দ্বারা সমৃদ্ধ যা শুধুমাত্র যুদ্ধের সময় খোলে।দেবীর মস্তকে অর্ধচন্দ্র থাকে , তাই দেবীকে চন্দ্রঘণ্টা নামে ডাকা হয় । দেবীর শরীরের রং স্বর্ণের মতো উজ্জ্বল । এই দেবী দশভুজা । দেবীর হাতে কমণ্ডলু , তরোয়াল , গদা , ত্রিশূল , ধনুর্বাণ , পদ্ম , জপ মালা থাকে| দেবীর বাহন সিংহ যা তেজ এবং পরাক্রমের প্রতীক আবার একই সঙ্গে দেবীর প্রতি সম্পূর্ণ স্মরনাগতি বা পূর্ন সমর্পনকে প্রকাশিত করে।

 

নব রাত্রির তৃতীয় দিনে দেবী চন্দ্র ঘন্টাকে মনে মনের স্মরণ করুন এবং দেবীকে প্রনাম জানিয়ে দেবীর উদ্দেশ্যে একটি প্রদীপ ঘি বা তিলের তেল দিয়ে জ্বালান এবং দেবীর কাছে প্রার্থনা করুন। সংসারের মঙ্গল হবে।

 

আগামী দিনের পর্বে দেবীর চতুর্থ রূপ নিয়ে ফিরে আসবো। নব রাত্রি উপলক্ষে চলতে থাকববে এই ধারাবাহিক আলোচনা। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।