Home Blog Page 7

পুরান এবং নবগ্রহ – বুধ

পুরান এবং নবগ্রহ – বুধ

 

পন্ডিতজি ভৃগুর শ্রী জাতক

 

শাস্ত্রে তিন রকমের দেবতার উল্লেখ আছে। বৈদিক দেবতা, পৌরাণিক দেবতা এবং লৌকিক দেবতা। নব গ্রহের প্রত্যেক দেবতা হয়ে বৈদিক অর্থাৎ বেদে তাদের উল্লেখ আছে আবার পুরানেও তাদের পাওয়া যায়। আজ আলোচনা করবো নব গ্রহের অন্যতম বুধ গ্রহকে নিয়ে।

 

পুরান অনুসারে বুধ চন্দ্র দেব এবং দেব গুরু বৃহস্পতির স্ত্রী দেবী তারার অবৈধ সন্তান|বুদ্ধের জন্ম নিয়ে আছে এক বিতর্কিত পৌরাণিক কাহিনী|সেই কাহিনী সংখ্যে কিছুটা নিম্নরূপ –

 

দেবগুরু বৃহস্পতির বহু শিষ্য ছিল এবং চন্দ্রও ছিলেন ওনার এক শিষ্য,সৌন্দর্যের অপর নাম ছিলো চন্দ্র |অন্যদিকে বৃহস্পতির স্ত্রী তারা ছিলেন পরম সৌন্দর্যের অধিকারিণী|তারা দেবী ও চন্দ্র পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হন ও এক প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠ|পরবর্তীতে বৃহস্পতি সব জানতে পারলে চন্দ্রের সঙ্গে তার যুদ্ধ বাঁধে এই যুদ্ধে দৈত গুরু শুক্র বা শুক্রাচার্য চন্দ্রের পক্ষ নেন|অন্যদিকে দেবতারা তাদের গুরু বৃহস্পতির পক্ষ নেন|অবশেষে এই যুদ্ধ থেকে ব্রম্হান্ডকে রক্ষা করতে ব্রহ্মদেব মদ্ধস্ততা করেন ও যুদ্ধ থামে|ইতিমধ্যে চন্দ্রের ঔরসে তারার গর্ভে জন্মনেন এক পুত্র|চন্দ্র তার নাম রাখেন বুধ|পরবর্তীকালে চন্দ্রদেব বুধের দায়িত্ব সঁপে দেন ওনার প্রিয় পত্নী রোহিণীকে। তাই বুধদেবকে রৌহিণেয়ও বলা হয়| আবার চন্দ্র বা সোমদেবের পুত্র হওয়ায় বুধের অপর নাম সৌম|

 

পুরানে পাওয়া বর্ননা অনুসারে দেবতা বুধের শরীর কিয়দ পিঙ্গল বর্ণের কিংবা সবুজাভ,তিনি পিঙ্গল পোশাক পরিহিত। আগুন ও বাতাসের তৈরি তার রথ|এই রথ টেনে নিয়ে যায় আটটি বাতাসের তৈরি ঘোড়া|কিছু গ্রন্থে বুধ কে বুদ্ধিদাতা ও গন্ধর্বদের প্রণেতাও মানা হয়|শ্রীবুধের বাহন সিংহ|তিনি বুধ গ্রহের অধিপতি|

 

বাংলায় আমাদের বুধবার এসেছে বুধ দেবতার নাম অনুসারে। বুধ শব্দের অর্থ পন্ডিত, বিদ্বান বা জ্ঞানী|বৈদিক জ্যোতিষ শাস্ত্রে বুধ একটি অন্যতম শক্তিশালী এবং শুভ গ্রহ যা মূলত বুদ্ধি এবং অর্থের কারক গ্রহ হিসেবে স্বীকৃত|জ্যোতিষ শাস্ত্রে বুধ গ্রহটিকে বালকের সাথে তুলনা করা হয়ে থাকে এবং কুমার গ্রহ বলে ধরা হয়েথাকে কারন বুধের মধ্যে রয়েছে বালক সুলভ চপলতা , কর্মে চঞ্চলতা|

 

বুধের শুভ প্রভাবে জাতক জাতিকার জ্ঞান বিজ্ঞান , কাব্য , সাহিত্য চর্চা, জ্যোতিষ বিদ্যা , চিকিৎসা বিদ্যা , আইন জীব , গণিত ইত্যাদি বিষয়ে ব্যাপক উন্নতি সম্ভব আবার বুধ  অশুভ হলে অস্থিরতা , মূর্খতা , উদাসীনতা ,বাচালতা খারাপ কোনো বাবস্যার সাথে যুক্ত হওয়া  ইত্যাদি প্রবনতা লক্ষ্য করা যায়|এছাড়া বুধ একাধিক শুভ যোগের মুল কারক গ্রহ যার মধ্যে রয়েছে বুধাদিত্য যোগ|বুধ কন্যা ও মিথুন রাশির স্বামী বা অধিপতি|বুধের প্রধান রত্ন হিসেবে পান্নাকে নির্ধারিত করা হয়েছে|

 

নবগ্রহ সংক্রান্ত আলোচনা ধারাবাহিক ভাবে চলতে থাকবে। ফিরে আসবো পরবর্তী গ্রহ নিয়ে আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

পুরান এবং নবগ্রহ – চন্দ্রদেব 

পুরান এবং নবগ্রহ – চন্দ্রদেব

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

পুরান অনুসারে নয়টি গ্রহের আলাদা সত্ত্বা রয়েছে, কেউ দেবতা, কেউ দেবতা দের গুরু কেউ আবার অসুর|আজকের পর্ব চন্দ্রদেব কে নিয়ে|

 

ঠিক সূর্যদেবের মতো চন্দ্রদেব ও একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রহ এবং পাশাপাশি তিনি সনাতন ধর্মের এক বৈদিক দেবতা হিসেবেও বেদে এবং পুরানে উল্লেখিত|বহু পৌরাণিক ঘটনা ও কিংবদন্তী প্রচলিত আছে চন্দ্রদেবকে নিয়ে।

 

শাস্ত্রে চন্দ্রের জন্ম বৃত্তান্ত সম্পর্কে সেই ভাবে বিস্তারিত আলোচনা না থাকলেও স্পষ্ট করে উল্লেখিত আছে যে চন্দ্র ব্রহ্মদেবের মানস পুত্র এবং ঋষি অত্রির পুত্রদের একজন|

চন্দ্র সাতাশটি নক্ষত্রের স্বামী এবং তিনি বুধগ্রহের পিতা আবার দক্ষের জামাতা।

 

পুরান অনুসারে চন্দ্র দেবগুরু বৃহস্পতির পত্নী তারার রূপে মুগ্ধ হয়ে তাকে প্রেম নিবেদন করেন ও বিবাহের প্রস্তাব দেন। কিন্তু তিনি গুরুপত্নী তাই বিবাহের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। কিন্তু চন্দ্রের ভালোবাসার কাছে আত্মসমর্পণ করেন তারা এবং তাদের মধ্যে এক বিবাহ বহির্ভুত প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে|পরবর্তীতে চন্দ্রের এবং তারার পুত্রের নাম বুধ|অর্থাৎ বুধ ও চন্দ্রের পিতা পুত্রের সম্পর্ক।

 

সমুদ্র মন্থন কালে অসুরদের অমৃত পানে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় চন্দ্র এবং সূর্য যার ফল স্বরূপ আজও নিদ্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে চন্দ্রগ্রহনের মাধ্যমে প্রতিশোধ নেয় রাহু ও কেতু|যদিও এ এক দর্শন, হাজার হাজার বছর ধরে প্রচলিত এক কিংবদন্তী যার সাথে জড়িত অসংখ্য মানুষের বিশ্বাস|

 

বৈদিক জ্যোতিষ শাস্ত্রে চন্দ্র যে নক্ষত্রে অবস্থান করে সেই নক্ষত্রর ফলপ্রাপ্ত হয়|চন্দ্র মনকে নির্দেশ করে,মানসিক শান্তি, মানসিক স্থিরতা, ধৈর্য, সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা সবই চন্দ্রের উপর নির্ভরশীল|জন্মছকে চন্দ্র অশুভ হলে,মানসিক অশান্তি, অস্থিরতা, অবসাদ, দুশ্চিন্তা জাতক জাতিকার জীবনের নিত্য সঙ্গী হয়ে ওঠে|চন্দ্র যখন রাহু বা কেতু যুক্ত হয় তখন আমরা তাকে গ্রহণ দোষ বলি|আবার চন্দ্রর অবস্থানের উপর নির্ভর করে নির্ধারিত হয় অশুভ কেমদ্রুম দোষ|আবার চন্দ্রের সাথে শুভ গ্রহের সংযোগে সৃষ্টি হয়ে গজকেশরী যোগ, জীব যোগ বা লক্ষী যোগ|চন্দ্র আবার মাতৃ কারক গ্রহ|চন্দ জন্ম কালীন সময়ে যে রাশি তে অবস্থান করে সেটাই জাতক বা জাতিকার জন্ম রাশি|

 

জ্যোতিষ শাস্ত্রে চন্দ্রের অবস্থান কে বিচার করে চন্দ্র কুন্ডলী নির্মাণ হয়। চন্দ্রের উপর নির্ভর করে একজন জাতক বা জাতিকার ভবিষ্যত জীবনের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

 

আবার আগামী পর্বে ফিরে আসবো নবগ্রহ নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনায়। থাকবে নানা

পৌরাণিক ঘটনা। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

পুরান এবং নবগ্রহ – সূর্যদেব 

পুরান এবং নবগ্রহ – সূর্যদেব

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

পুরানের সাথে জ্যোতিষ শাস্ত্রের রয়েছে গভীর সম্পর্ক। পুরান অনুসারে প্রতিটি গ্রহ এক একটি দেবতা। তাদের নিয়ে রয়েছে অনেক পৌরাণিক ঘটনার উল্লেখ। আজ নবগ্রহের সূর্যদেব বা রবি কে নিয়ে আজ আলোচনা করবো। জানাবো জ্যোতিষ শাস্ত্রে তার ভূমিকা এবং পুরান ও অন্যান্য শাস্ত্রে সূর্যদেব সম্পর্কে কি লিপিবদ্ধ আছে|

 

সূর্যদেব মূলত বৈদিক দেবতা, বৈদিক যুগে ইনি প্রধান দেবতারূপে পূজিত হতেন ইনি কশ‍্যপ মুনির এবং অদিতি দেবীর পুত্র|সূর্যের অপর নাম হল আদিত‍্য|শাস্ত্র মতে সূর্য দেব জগতের সকল শক্তির উৎস এবং তিনি অন্ধকারকে নাশ করেন|সূর্য দেবের চারটি হাত । তিনি শঙ্খ, চক্র , ধনুক ও বাণ ধারনকারী |সূর্যদেব সাতটি ঘোড়া যুক্ত রথে চড়ে ব্রহ্মান্ডে ভ্রমণ করেন| তার সারথির নাম অরুণ দেব |সূর্য দেবের সাতটি ঘোড়া সাতটি কিরণকে নির্দেশ করে| কথিত আছে , তার রথ কখনো থামে না |সৌরজগতের রাজা বা অধিপতি হলেন সূর্যদেব|সূর্যদেবের দুই জন স্ত্রী ছায়া ও সংজ্ঞা মতান্তরে , সংজ্ঞা ও সন্ধ‍্যা|জম,শনি, যমুনা সূর্যের সন্তানদের অন্যতম|অস্বীনি কুমার এবং সুগ্রীব ও সূর্যদেবেরই সন্তান|সূর্যদেব থেকেই সূর্য বংশের সৃষ্টি|

 

কথিত আছে- সূর্যপত্নী সংজ্ঞা সূর্যের তাপ সহ্য করতে অসমর্থ হলে, সংজ্ঞার পিতা বিশ্বকর্মা সূর্যকে মোট ১২টি ভাগে ভাগ করেন এবং এই আটটি ভাগ পৃথিবীতে পতিত হলে বিশ্বকর্মা এগুলি থেকে শক্তি সঞ্চয় করে বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র, শিবের ত্রিশূল, কুবেরের অস্ত্র, কার্তিকেয়ের তরবারি ও অন্যান্য দেবতাদের অস্ত্র নির্মাণ করে দেন|

 

অমৃত পানকালে প্রতারক দানব রাহুকে চিহ্নিত করেন সূর্যদেব ও চন্দ্রদেব এবং এইজন্য তাঁরা রাহুর চিরশত্রুতে পরিণত হন ও প্রতিশোধ স্বরূপ রাহু সাময়িকভাবে সূর্য ও চন্দ্রকে গ্রাস করেন| এ ক্ষেত্রে কোনো দেবগণ সূর্যদেবকে সাহায‍্য না করায় সূর্যদেব ক্রোধিত হলেন এবং এর ফলে তিনি অসীম তেজবৃদ্ধি করলেন|সূর্যের তেজের ফলে সৃষ্টি ধ্বংস হবার উপক্রম হলে ব্রহ্মাদেব অরুণ দেবকে সূর্যের সারথি করলেন এবং তাকে শান্ত হতে অনুরোধ করলেন|অবশেষে তিনি শান্ত হলেন ও রক্ষা পেলো ব্রম্হান্ড|অর্থাৎ সূর্যের তেজ যেমন সৃষ্টির উৎস তেমনই অতিরিক্ত তেজ সৃষ্টির ধ্বংসের কারনও হতে পারে|

 

রামায়ণ এবং মহাভারত দুটিতেই সূর্যের উল্লেখ আছে।একবার রাবণ দিগ্বিজয়ে বের হয়ে, সুমেরু শিখরে রাত্রি যাপন করেন এবং পরদিন পুষ্পক রথে চড়ে সূর্যলোকে যান। সেখানে সূর্যের তেজে কাতর হয়ে তিনি প্রহস্ত নামক এক অনুচরকে দিয়ে সূর্যের সাথে যুদ্ধ করার প্রস্তাব পাঠান। সূর্য তার দণ্ডী নামক এক অনুচরকে রাবনের কাছে পাঠিয়ে সুকৌশলে যুদ্ধ এড়িয়ে যান।মহাভারতে উল্লেখ আছে- কুন্তী দেবী দুর্বাসার কাছ থেকে বর পেয়ে সূর্যকে আবাহন করলে, সূর্য কুন্তীর সাথে মিলিত হন। এই মিলনের ফলে কর্ণর জন্ম হয়|

 

বৈদিক জ্যোতিষ শাস্ত্রে সূর্য সবথেকে প্রভাব শালী ও গুরুত্বপূর্ণ গ্রহগুলির অন্যতম|সূর্য একা ধারে পিতৃ কারক গ্রহ এবং কর্ম, প্রভাব, প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠাকে নির্দেশ করে|সূর্য ভালো থাকলে জাতক জাতিকার নাম, যশ ও অর্থাৎ লাভের পথ প্রশস্ত হয়ে|সূর্যের অশুভ প্রভাব বা অবস্থান জাতক জাতিকার জীবনে সাফল্য অর্জনে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়| পিতার স্বাস্থ বা আর্থিক অবস্থাও নির্ভর করে সূর্যের অবস্থানের উপর|জ্যোতিষ শাস্ত্রে চন্দ্র যেমন মন মানসিকতা কে প্রভাবিত করে সূর্য তেমন দেহ ও ব্যক্তিত্ব কে প্রভাবিত করে|আবার কোনো গ্রহ যদি সূর্যের অতিরিক্ত কাছে এসে পরে তা সূর্যের তেজে শক্তিহীন হয়ে পরে তখন তাকে আমরা দগ্ধ গ্রহ বলি|

 

পুরান এবং গ্রহদের সম্পর্ক নিয়ে আবার ফিরে আসবো আগামী পর্বে। থাকবে চন্দ্র নিয়ে শাস্ত্রীয় আলোচনা।পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

গণেশ চতুর্থীর আধ্যাত্মিক মাহাত্ম

গণেশ চতুর্থীর আধ্যাত্মিক মাহাত্ম

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

পৌরাণিক বিশ্বাস অনুসারে, যেদিন ভগবান শিব ও মা পার্বতীর পুত্র গণেশের জন্ম হয়েছিল, সেই দিনটি ছিল ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের চতুর্থী। তাই এই দিনটিকে গণেশ চতুর্থী বা বিনায়ক চতুর্থী রূপে পালন করা হয়।আজ সেই পবিত্র দিন।আজ গণেশ চতুর্থী।

তবে বিভিন্ন শাস্ত্রে গণেশের আবির্ভাব নিয়ে বিভিন্নরকম তথ্য পাওয়া যায়। শিব পুরাণে ভাদ্রমাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্থীকে গণেশের জন্মদিন হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। যেখানে গণেশ পুরাণের মতানুযায়ী গণেশের আবির্ভাব ঘটেছিল ভাদ্রপদ শুক্লা চতুর্থীতে।তবে একটি বিষয় সব গ্রন্থেই লিপিবদ্ধ তা হলো সিদ্ধিদাতা গণেশের পূজা ঘরে সুখ, সমৃদ্ধি ও বৃদ্ধি নিয়ে আসে।

পার্বতী পুত্র গণেশ প্রারম্ভের দেবতা। তিনি বিঘ্ননাশক দেবতা তাই তার অপর নাম বিঘ্নেশ বা বিঘ্নেশ্বর, আবার তিনিই শিল্পকলা ও বিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষক, এবং মহাবল, মেধা ও বুদ্ধির দেবতা। শাস্ত্র মতে পূজা ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের সময় গণেশের পূজা সর্বাগ্রে করার কথা বলা হয়েছে তাতে কাজ সফল এবং সার্থক হয়।

বিভিন্ন পুরানে গণেশের একাধিক নামের অস্তিত্ব পাওয়া যায় যেমন হেরম্ব, বক্রতুণ্ড, একদন্ত, মহোদর, গজানন, লম্বোদর, বিকট ও বিঘ্নরাজ।
এদের মধ্যে একদন্ত নামটি নামটি হয়েছে তার একটি গজ দন্তের জন্য। এনিয়ে একটি পৌরাণিক ব্যাখ্যাও আছে।

একটি ব্যাখ্যা অনুসারে একবার পরশুরাম দেবাদিদেব মহাদেবের সঙ্গে দেখা করার জন্য তাঁর গৃহে যান। কিন্তু গণপতি দরজাতেই তাঁকে আটকে দেন। ভেতরে প্রবেশ করতে দেন না। কারণ সেই সময় মহাদেব ধ্যানে মগ্ন ছিলেন। তখনই ক্রোধান্বিত হয়ে পরশুরাম গণপতির একটি দাঁত কেটে দেন তার অস্ত্র দিয়ে|

আবার অন্য একটি ব্যাখ্যা অনুসারে বেদব্যাসের সঙ্গে মহাভারত লিখতে বসে গণেশের কলম ভেঙে গিয়েছিল। যেহেতু ব্যাসদেব তাঁকে শর্ত দিয়েছিলেন যে, লেখা থামাতে পারবেন না। তাই গণপতি নাকি নিজের একটা দাঁত ভেঙে সেটিকে কলম হিসেবে ব্যবহার করে লেখা চালিয়ে যান।সেই থেকে গণেশ একদন্ত এবং এই রূপেই তাকে পুজো করা হয়।

আগামী কাল শাস্ত্র মতে গণেশ পুজো করুন। বিঘ্নহর্তার আশীর্বাদে সব বিঘ্ন দূর হবে। সবাইকে জানাই গণেশ চতুর্থীর শুভেচ্ছা।আবার একটি পৌরাণিক এবং শাস্ত্রীয় বিষয় নিয়ে ফিরে আসবো আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

গণেশ কুবের এবং চন্দ্র

গণেশ কুবের এবং চন্দ্র

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

আসন্ন গণেশ চতুর্থী উপলক্ষে আজ আরো একটি গণেশ দেবের মহিমা আপনাদের জন্য লিখবো।
আজকের এই পৌরাণিক ঘটনার প্রধান তিনটি চরিত্র হলেন গণেশ, কুবের এবং চন্দ্র।

সনাতন ধর্মে কুবের অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন দেবতা ছিলেন কারণ তিনি মহাবিশ্বের সমস্ত ধনসম্পদের অধীশ্বর।তার তার কাছে ছিল অগাধ গুপ্তধন এবং তার ভান্ডারে সবকিছুই ছিল যার জন্য তিনি খুবই গর্বিত ছিলেন।নিজের ধন সম্পদ ও বৈভব দেখানোর জন্য একদিন কুবের সমস্ত দেবতাদের নৈশভোজে আমন্ত্রণ করেন এবং তাদের মধ্যে শিব এবং পার্বতীও ছিলেন।কিন্তু তারা দুজনেই সেই ভোজ সভায় উপস্থিত না হয়ে তারা গণেশকে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে পাঠান।গণেশ কুবেরের ব্যবহার লক্ষ্য করেন এবং সিদ্ধান্ত নেন তার গর্ব খর্ব করার।তিনি সমস্ত খাবারই দ্রুত খেয়ে ফেলেন এবং তার ফলে অন্যান্য আমন্ত্রিতদের জন্য কিছুই অবশিষ্ট থাকে না যদিও তাতেও তার ক্ষুধানিবৃত্তি হয়নি।তখন সে কুবেরের সঞ্চিত সম্পদ এবং ঐশ্বর্যগুলি খেতে শুরু করেন এর মধ্যে ছিল স্বর্ণ এবং অন্যান্য দামি বস্তু সমূহ। তাতেও তার পেট না ভরাতে তিনি কুবেরকে খেতে চান|নিজেকে বাঁচাতে সেইসময় কুবের কৈলাস পর্বতে দৌড়ে যান আশ্রয়ের খোঁজে এবং মহাদেবের কাছে স্মরণ নেন|মহেশ্বর গণেশের এই রূপ আচরনের প্রকৃত কারণ বুঝতে পেরে ক্ষুদার্থ গণেশকে তৎক্ষণাৎ অন্ন পরিবেশন করেন ।গণেশ সেই অন্ন গ্রহণের সাথে সাথে তার ক্ষুধা নিবৃত্তি ঘটে।তিনি শান্ত হয়ে কুবের দেবকে ছেড়ে দেন|ঘটনার পর কুবের বুঝতে পারেন লোভীর মতো সম্পদ গ্রহণ করা উচিত নয় এবং সেই সম্পদ নিয়ে গর্ব বা অহংকার অনুচিত তিনি সম্মত হন তার সমস্ত সম্পদ প্রয়জনে সকলের মধ্যে বিলিয়ে দিতে সম্মত হলেন।

গণেশ যখন কুবেরকে শিক্ষা দিছিলেন তখন আকাশ থেকে সমগ্র বিষয়টি দেখে চন্দ্র দেব হেসে ফেলেন এবং গনেশ এতে প্রচণ্ড রেগে যান এবং চন্দ্র দেবকে অভিশাপ দিয়ে বলেন গণেশ চতুর্থীর দিন চন্দ্রকে দেখতে পাবেন না কেউ যদিও বা
কেউ চন্দ্রকে দেখেন তা অশুভ বলে চিহ্নিত হবে।
এই ভাবে গণেশ একই সাথে কুবের এবং চন্দ্রকে দন্ড দিয়েছিলেন।

গণেশ চতুর্থী উপলক্ষে বিশেষ পর্ব নিয়ে আবার ফিরে আসবো আগামী দিনে। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

শিক্ষক দিবসের শুভেচ্ছা

শিক্ষক দিবসের শুভেচ্ছা

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

সমাজে শিক্ষকদের ভূমিকায় সম্পর্কে শ্রদ্ধেয়

এ পি জে আবদুল কালাম বলেছিলেন, ‘যদি একটি দেশকে বা জাতীতে দুর্নীতিমুক্ত এবং উন্নত হতে হয়, তাহলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এ ক্ষেত্রে তিনজনের ভূমিকা সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তারা হলেন বাবা, মা এবং শিক্ষক।’

 

ভারতের প্রাচীন গুরু শিষ্য পরম্পরার দেশ। আমরা বিশ্বাস করি একজন মানুষের সফতার পেছনে শিক্ষকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন আদর্শ শিক্ষক কেবলমাত্র পড়াশোনার ক্ষেত্রে নয়, তিনি ছাত্রকে জীবনে চলার পথে পরামর্শ দেবেন, ব্যর্থতায় পাশে দাঁড়িয়ে উৎসাহ দেবেন, সাফল্যের দিনে নতুন লক্ষ্য স্থির করে দেবেন। তিনি তাকে শুধুমাত্র জীবনে সফল হওয়া নয়, কিভাবে একজন ভাল মানুষ হতে হয় শেখাবেন।

 

শিক্ষাবিদ ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর তার গুণমুগ্ধ ছাত্র ও বন্ধুরা তাঁর জন্মদিন পালন করতে চাইলে তিনি বলেন ‘জন্মদিনের পরিবর্তে ৫ই সেপ্টেম্বর যদি শিক্ষক দিবস উদ্‌যাপিত হয় তবে আমি বিশেষরূপে অনুগ্রহ লাভ করবো।’ তাই আজও এই দিনটি শিক্ষক দিবস রূপে পালিত হয়।

 

আজ জাতীয় শিক্ষক দিবস এবং আদর্শ

শিক্ষক ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের জন্মদিন।

সকল শিক্ষককে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা এবং

শিক্ষক দিবসের শুভেচ্ছা।

রহস্যময় এক গনেশ মন্দির

গণেশে চতুর্থী উপলক্ষে বিশেষ পর্ব

 

রহস্যময় এক গণেশ মন্দির

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আসন্ন গণেশচতুর্থী উপলক্ষে আজ থেকে শুরু করছি গণেশকে ধারাবাহিক আলোচনা। আজ প্রথম পর্বে আপনাদের একটি রহস্যময় গণেশ মন্দিরের কথা লিখবো।কেনো রহস্যময় বলছি তা পড়লে বুঝতে পারবেন।

 

সিদ্ধিদাতা গণেশের মাথা ধর থেকে আলাদা হওয়ায় পরে কোথায় গেলো তা সত্যি এক রহস্য|আদি বিনায়ক মন্দিরে গণেশের যে আদি রূপ আছে সেই রূপে তার যে মাথা আমরা দেখতে পাই মাথা নাকি এই মর্তেরই এক মন্দিরে আছে।

 

শিব পুরাণ পড়লে জানা যায় মস্তক ছিন্ন করার পরে তা অপ্সরাগণ নিয়েছিলেন কিন্তু তারপর তা কোথায় গেল তার শিব পুরাণে বলা নেই।আবার”ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণের” ‘গণপতি খন্ডে’ উল্লেখ আছে গণেশের মুন্ড গোলকধাম এ চলে যায় শ্রী হরির কাছে। আর শ্রী হরির দেহের সঙ্গে সেই মস্তক মিশে যায়। গনপতি শ্রী হরির আরেক অংশ। তাই শ্রী হরির এই তেজ অর্থাৎ গণেশের কাটা মুন্ডু শ্রী হরির শরীরেই মিশে যায়।

 

একটি প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী ভারতের উত্তরাখণ্ডের পাতাল ভুবনেশ্বর মন্দিরে আছে গণেশের কেটে যাওয়া মুন্ড আর সেই মুন্ড পাহারা দিচ্ছেন স্বয়ং দেবাদিদেব মহাদেব।

 

উত্তরাখণ্ডের পিথোরাগড় থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে ভূবণেশ্বর গ্রাম‌। এই ভুবনেশ্বর মন্দিরের ভূগর্ভে একাধিক গুহা রয়েছে। আর এই একাধিক গুহা গুলি একটি জায়গায় গিয়ে মিলিত হয়েছে।জনশ্রুতি অনুযায়ী এই সকল গুহার মিলনস্থলে যে উঁচু পাথরের ঢিবিটি রয়েছে সেটি গণেশের মনুষ্য মুন্ড।বলা হয় এই মন্দিরে একজন মানুষ একবারই প্রবেশ করতে পারেন। তাই কোন মানুষ যদি এই মন্দিরের শ্রী গণেশের চ্ছেদ করা মুন্ড রাখার মূল স্থলে না গিয়ে মাঝপথ থেকে ফিরে আসেন তবে তিনি দ্বিতীয়বার আর ওই মন্দিরে প্রবেশ করতে পারেন না

 

আবার এমনটাও বলা হয় যে এই মন্দিরের গুহার দেওয়াল ধরে হাঁটলে পূণ্য অর্জন হয় এবং দুঃখ-দুর্দশা দূর হয়‌। সরযু, রামগঙ্গা ও গুপ্তগঙ্গার মিলনস্থলে গড়ে উঠেছে এই মন্দির। এই মন্দির প্রদক্ষিণ করলে পাপ ক্ষয় হয় বলেও অনেকে মনে করেন।শুদ্ধ মনে ভক্তি সহকারে এই মন্দির দর্শন করলে গণেশের কৃপায় সকল বিঘ্ন কেটে যায় বলেও অনেকে বিশ্বাস করেন।সব মিলিয়ে এক অজানা রহস্য ঘিরে আছে এই মন্দিরকে এবং এই রহস্যর কেন্দ্রে আছেন পার্বতী পুত্র গণেশ।

 

গণেশ চতুর্থী উপলক্ষে আরো একটি বিশেষ পর্ব নিয়ে আগামী দিনে ফিরে আসবো। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী কথা – হংস গেড়িয়ার কালী মন্দির

কালী কথা – হংস গেড়িয়ার কালী মন্দির

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

মগরাহাটের গোখুণ্ডি গ্রাম পঞ্চায়েতে মধ্যে পড়ে হংসগেড়িয়া গ্রাম। বহু কাল আগে এই অঞ্চল ছিলো দক্ষিণ সুন্দরবনের অংশ। সেই সময়ে

এই গ্রাম ছিল হেতাল, গড়ান, গেঁওয়া গাছে ঘেরা আর হিংস্র জীব জন্তুর আস্তানা। তার সাথে ছিলো ডাকাতের ভয় সেই সময়ে সেই সময়

থেকেই হংসগেড়িয়ার শ্মশানে দেবী কালীর অধিষ্টান।

 

গভীর জঙ্গলের মধ্য থেকে পাওয়া দু ফুট

পাথরের মা কালীর প্রথম পুজো করেন তান্ত্রিক কৈলাস পণ্ডিত।সেই সময়ে আদিগঙ্গার তীরে বটগাছের কোঠরে বাস করতেন পণ্ডিত কৈলাস । জঙ্গল থেকে আবির্ভাব হয় পাথরের কালী মূর্তির। পরে সেই মা কালী কৈলাস পণ্ডিতের হাত ধরেই প্রতিষ্ঠিত হন। এমনই মানুষের বিশ্বাস।এই স্থানে পঞ্চ মুন্ডির আসনে বসে তন্ত্র সাধনা করতেন কৈলাশ পন্ডিত। বহু জটিল সাধনায় সিদ্ধি লাভ করে তিনি হয়ে উঠেছিলেন অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী।

 

এই কৈলাশ পন্ডিত পরবর্তীতে বীরভূমে গিয়ে তারাপীঠে তন্ত্র সাধনা শুরু করেন এবং তার খ্যাতি ছড়িয়ে পরে চারদিকে। তার শিষ্য হন স্বয়ং বামা ক্ষেপা।

 

তবে সেই কালী পুজো কখনো বন্ধ হয়নি

ভক্তের ভক্তি আর বিশ্বাস থেকে চলে আসছে হংসবেড়িয়া মহাশ্মশানের কালী আরাধনা। বছরের প্রতিদিনই কালী ভক্তের সমাগম থাকলেও  হাজার হাজার ভক্তের সমাগম ঘটে অমাবস্যা

তিথি গুলিতে।

 

পার্শবর্তী বনসুন্দরী নিবাসি এক ধনী ব্যাবসায়ী ১৩৬৬ সালে নির্মাণ করেন ৬ ফুট উচ্চতার মা কালীর মূর্তি । নির্মিত হয় মন্দিরও। আজও নির্মিত মূর্তির পাশে বিরাজমান পাথরের ২ ফুট কালী।

বর্তমানে তান্ত্রিক পরম্পরা মেনে সেবায়েতরা সব দেখাশোনা করেন।দীপান্বিতা অমাবস্যায় পঞ্চমুণ্ডি আসনে পুজোর পর শুরু হয় দেবীর আরাধনা। আজও আদি গঙ্গা থেকেই তোলা হয় পুজোর জল।বেল গাছ, অশ্বথ্থ গাছ, নিম গাছ তিনটি গাছের নিচে থাকা পণ্ডিত কৈলাসের বেদিতে পুজোর পর শুরু হয় কালী আরাধনা। দৈনন্দিন পুজো হয় এখানে।  বলি প্রথা নেই এই মন্দিরে। পুজো ঘিরে উৎসব মুখর হয় গ্রামের মানুষ।  মনস্কামনা পূর্ণ করতে কেবল দক্ষিন সুন্দরবন নয়। দুর দুর থেকে হাজার হাজর ভক্তরা

আসেন হংসগেড়িয়ার মা কালীর কাছে।

 

আবার পরের পর্বে এমনই এক প্রাচীন এবং

ঐতিহাসিক কালী মন্দিরের ইতিহাস নিয়ে

ফিরে আসবো।পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী কথা – মহাকালী 

কালী কথা – মহা কালী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

বাংলা হলো শক্তি সাধনার আদি ভূমি। তাই বাংলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য কালী মন্দির। দেবী বিভিন্ন রূপে বিরাজ করছেন বিভিন্ন স্থানে। আজ আজ কালী কথায় আপনাদের যে দেবীর কথা বলবো তিনি দশ মাথা

বিশিষ্ট মহা কালী এবং এই পুজো হয় মালদায়।

 

দেবীর এই রূপে পূজিতা হন মালদার ইংরেজ বাজার এলাকায়।শাস্ত্রে দেবীর এই রূপ মহাকালী নামে পরিচিত।মালদার এই পুজোর ইতিহাস বেশ রোমাঞ্চকর এবং কিছু রীতি নীতি বেশ অদ্ভুত। আজও প্রথা মেনে দিনের আলোয় পূজিতা হন দশ মাথা কালী। বলি প্রথা আজও আছে এবং শোল মাছের টক বিশেষ প্রসাদ হিসেবে চলে আসছে বহু দিন থেকে।এই দেবী খুবই জাগ্রত বলে মানুষের বিশ্বাস।

 

দেবীর ১০ মাথা, ১০ হাত এবং ১০ পা রয়েছে। প্রতিমায় শিবের কোন অস্তিত্ব নেই। দেবীর পায়ের তলায় রয়েছে অসুরের কাটা মুণ্ডু।কিছু ধর্ম শাস্ত্রে এই রূপের উল্লেখ থাকলেও দেবীর এই রূপের পুজোর প্রচলন খুব একটা হয়নি।শোনা যায় বিহারের বিন্দুবাসিনীতে পাহাড়ের গায়ে প্রাচীন যুগে খোদাই করা রয়েছে এই মূর্তি।

 

তখন ১৯৩০ সাল, দেশে তখন শাসন করছে ইংরেজরা।সারা দেশের সাথে মালদহে চরম অত্যাচার চালিয়েছিল ব্রিটিশ সরকার।ব্রিটিশের অত্যাচারের বিরুদ্ধে মানুষজন বিদ্রোহ করার সিদ্ধান্ত নেন। তখন নিজেদের মধ্যে শক্তি আর সাহস বৃদ্ধি করতে শুরু হয় এই কালীপুজো।

 

স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে যেখানে মহাকালীর মন্দির রয়েছে, সেখানে তন্ত্র সাধনা করতেন এলাকার এক তন্ত্র সাধক।সাধনার জন্য তৈরি করেন পঞ্চমুণ্ডির আসন। সেই আসনের ওপরে দেবীর বেদি নির্মিত হয়েছে। আজও তন্ত্র মতেই দেবীর পুজো হয়।

 

প্রতিবছর কালী পুজোয় প্রথা মেনে এখানে শোভাযাত্রা সহকারে মন্দির পর্যন্ত মাকে নিয়ে যাওয়া হয়। দেবীর পুজো দেখতে আসেন দূর দূরান্তর মানুষ।মালদা সহ গোটা উত্তর বঙ্গের মানুষের কাছে এই দেবীর বিশেষ মাহাত্ম রয়েছে।

 

আবার ফিরে আসবো কালী কথার পরের পর্বে।

সামনেই কৌশিকী অমাবস্যা তাই চলতে

থাকবে কালী কথা। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

বিশেষ পর্ব – কৌশিকী অমাবস্যা এবং তন্ত্র সাধনা

বিশেষ পর্ব – কৌশিকী অমাবস্যা এবং তন্ত্র সাধনা

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

আগের পর্বে আপনাদের দেবী কৌশিকীর মাহাত্ম শুনিয়ে ছিলাম আজকের এই বিশেষ পর্বে আপনাদের জানাবো কেনো কৌশিকী অমাবস্যা এতো গুরুত্বপূর্ণ এবং জ্যোতিষ বা তন্ত্রে কৌশিকী অমাবস্যার ভূমিকা কি।

শাস্ত্র মতে এই কৌশিকী অমাবস্যা বছরের আর বাকি অমাবস্যাগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ।
এই অমাবস্যায় গোটা ব্রহ্মাণ্ডের দশ মহাবিদ্যার দ্বিতীয় মহাবিদ্যা ‘তারা দেবী’কে ‘মহাকালী’ রূপে আহ্বান করা হয়। কথিত আছে, এই দিনেই নাকি সাধক শ্রেষ্ঠ বামাক্ষ্যাপা তাঁর ‘বড় মা’ অর্থাৎ ‘তারা দেবী’র দর্শন পেয়ে ছিলেন এবং এই তিথিতেই তারাপীঠের মহাশ্মশানের শ্বেতশিমূল গাছের তলায় বসে সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন তিনি।

বলা হয়, এই দিনে কোনও ভক্ত ‘তারা দেবী’কে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করলে তার মনঃস্কামনা পূর্ণ হয়।প্রতিবছরই কৌশিকী অমাবস্যারা দিনে বীরভূমের তারাপীঠ মন্দিরেও ‘মহাকালী’র আহ্বান করা হয়।
এবং দেবী তারার বিশেষ পুজো করা হয়।

কথিত রয়েছে কৌশিকী অমাবস্যায় বিভিন্ন তন্ত্র এবং গুপ্ত সাধনা করলে, মেলে আশাতীত ফলাফল। এছাড়া বৌদ্ধ মতেও এই দিনের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। অনেকেই এই কৌশিকী অমাবস্যার রাতকে ‘তারা রাত্রি’ বলে থাকেন। বলা হয়, তন্ত্রের ধনাত্মক ও ঋণাত্মক শক্তি দিয়ে এই রাতে সাধক চাইলে স্বর্গ ও নরক যেকোনও দিকেই যেতে পারেন। তবে তা নির্ভর করে তাঁর সাধনার ওপর।

এই তিথি তন্ত্র ও জ্যোতিষ জগতের জন্যে অত্যান্ত তাৎপর্য পূর্ণ তিথি|যারা বিভিন্ন গ্রহগত দোষের ফলে জীবনে পিছিয়ে পড়ছেন|চাকরি ব্যবসা শিক্ষা ও শরীর সংক্রান্ত সমস্যায় ব্যাতিব্যাস্ত তারা যদি তন্ত্র ও শাস্ত্র মতে গ্রহ দোষ খণ্ডন করিয়ে সমস্যার সমাধান চান তাহলে কৌশিকী অমাবস্যা তাদের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ সময়।

দেবী কৌশিকী যেমন এই তিথিতে অবির্ভুতা হয়ে অসুরদের নাশ করেছিলেন তেমনই এই তিথিতে বিশেষ হোম যজ্ঞ এবং পুজো পাঠের মাধ্যমে করা গ্রহের প্রতিকার সব অশুভ প্রভাবকে নাশ করে জীবনের সব বাঁধা বিপত্তি দুর করতে সক্ষম।

ফিরে আসবো আগামী পর্বে। থাকবে আরো একটি বিশেষ পর্ব। চলত থাকবে আধ্যাত্মিক এবং শাস্ত্রীয় আলোচনা। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।