কালী কথা – প্রসন্নময়ী কালী
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
বাংলার বিখ্যাত কালী মন্দির গুলির মধ্যে অনেকগুলি ব্রিটিশ আমলের জমিদারদের পৃষ্ঠেপোষকতায় গড়ে উঠেছিল যাদের ঘিরে আছে নানা রকম অলৌকিক ঘটনা এবং ইতিহাস । এমনই এক কালী মন্দির আছে উত্তর চব্বিশ পরগনার গোবর ডাঙায় যা প্রসন্ন ময়ী কালী নামে খ্যাত।আজকের কালী কথায় এই প্রসন্নময়ী কালী নিয়ে লিখবো।
শোনা যায় স্থানীয় জমিদারবাবুর স্ত্রীর গর্ভে কোন পুত্রসন্তান না হওয়ায় তিনি খুবই মনঃকষ্টে ছিলেন। সেই সময় এক সন্ন্যাসী এসে তাঁকে কালীমাতার প্রসাদী ফুল দৈব,ওষুধ হিসাবে ধারণ করতে বলেন। ওই ওষুধ ধারণের ফলে তার স্ত্রী একটি পুত্রসন্তান লাভ করেন। কালী মাতা প্রসন্ন হয়ে এই পুত্রসন্তান দেওয়ায় সেই পুত্রের নাম রাখা হয় কালীপ্রসন্ন এবং কালীমাতার প্রসাদে পুত্রসন্তান লাভ করায় জমিদার বাবু কালীমূর্তি ও কালীমন্দির স্থাপনে উদ্যোগী হন। কিন্তু মন্দির নির্মাণ কার্য শেষ হওয়ার আগেই তার মৃত্যু হয় এবং পরবর্তীতে পুত্র কালীপ্রসন্ন জমিদার হন এবং মন্দির নির্মাণ কার্য শেষ করেন। পরবর্তীতে জমিদারবাবুর নাম অনুসারে এই কালী মন্দির প্রসন্ন ময়ী কালী মন্দির নাম প্রসিদ্ধ হয়।
প্রসন্ন ময়ী কালী মন্দির উঁচু ভিত্তিবেদির উপর প্রতিষ্ঠিত। দক্ষিণমুখী মন্দিরটি একটি দালান বিশিষ্ট।গর্ভগৃহে শ্বেত পাথরের বেদির উপর শায়িত স্বেত পাথরের শিবের উপর দণ্ডায়মানা প্রায় আড়াই ফুট উঁচু কষ্টি পাথরের সুন্দর কালিকা মূর্তি প্রতিষ্ঠিত।
আজও সেই জমিদার বংশের পূর্বসুরিরা বংশ পরম্পরায় পুজোর দায়িত্ব গ্রহণ করে আসছেন। সব রীতি নীতি প্রায় আগের মতোই আছে।
আজও রীতি মেনে সেই জমিদার বংশের প্রতিটি পুরুষের নামের সঙ্গে ‘প্রসন্ন’ শব্দ যুক্ত করা হয়।
প্রায় চারশো বছরের পুরোনো এই মন্দিরে প্রতিটি বিশেষ তিথি যেমন কৌশিকী বা দীপান্বিতা অমাবস্যায় উৎসব উপলক্ষ্যে আশেপাশের বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেক লোকের সমাগম হয়। শনি-মঙ্গলবারে অনেকে মনোস্কামনা পূরণের জন্য পূজাও দিয়ে থাকেন।দেবী প্রসন্নময়ীর প্রতি এই অঞ্চলের মানুষের রয়েছে অগাধ আস্থা।
ফিরে আসবো পরের পর্বে। অন্য কোনো মন্দিরের ইতিহাস নিয়ে ।থাকবে অজানা অনেক জনশ্রুতি এবং অলৌকিক ঘটনা। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।