Home Blog Page 9

কালী কথা – প্রসন্নময়ী কালী

কালী কথা – প্রসন্নময়ী কালী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

বাংলার বিখ্যাত কালী মন্দির গুলির মধ্যে অনেকগুলি ব্রিটিশ আমলের জমিদারদের পৃষ্ঠেপোষকতায় গড়ে উঠেছিল যাদের ঘিরে আছে নানা রকম অলৌকিক ঘটনা এবং ইতিহাস । এমনই এক কালী মন্দির আছে উত্তর চব্বিশ পরগনার গোবর ডাঙায় যা প্রসন্ন ময়ী কালী নামে খ্যাত।আজকের কালী কথায় এই প্রসন্নময়ী কালী নিয়ে লিখবো।

 

শোনা যায় স্থানীয় জমিদারবাবুর স্ত্রীর গর্ভে কোন পুত্রসন্তান না হওয়ায় তিনি খুবই মনঃকষ্টে ছিলেন। সেই সময় এক সন্ন্যাসী এসে তাঁকে কালীমাতার প্রসাদী ফুল দৈব,ওষুধ হিসাবে ধারণ করতে বলেন। ওই ওষুধ ধারণের ফলে তার স্ত্রী একটি পুত্রসন্তান লাভ করেন। কালী মাতা প্রসন্ন হয়ে এই পুত্রসন্তান দেওয়ায় সেই পুত্রের নাম রাখা হয় কালীপ্রসন্ন এবং কালীমাতার প্রসাদে পুত্রসন্তান লাভ করায় জমিদার বাবু কালীমূর্তি ও কালীমন্দির স্থাপনে উদ্যোগী হন। কিন্তু মন্দির নির্মাণ কার্য শেষ হওয়ার আগেই তার মৃত্যু হয় এবং পরবর্তীতে পুত্র কালীপ্রসন্ন জমিদার হন এবং মন্দির নির্মাণ কার্য শেষ করেন। পরবর্তীতে জমিদারবাবুর নাম অনুসারে এই কালী মন্দির প্রসন্ন ময়ী কালী মন্দির নাম প্রসিদ্ধ হয়।

 

প্রসন্ন ময়ী কালী মন্দির উঁচু ভিত্তিবেদির উপর প্রতিষ্ঠিত। দক্ষিণমুখী মন্দিরটি একটি দালান বিশিষ্ট।গর্ভগৃহে শ্বেত পাথরের বেদির উপর শায়িত স্বেত পাথরের শিবের উপর দণ্ডায়মানা প্রায় আড়াই ফুট উঁচু কষ্টি পাথরের সুন্দর কালিকা মূর্তি প্রতিষ্ঠিত।

 

আজও সেই জমিদার বংশের পূর্বসুরিরা বংশ পরম্পরায় পুজোর দায়িত্ব গ্রহণ করে আসছেন। সব রীতি নীতি প্রায় আগের মতোই আছে।

আজও রীতি মেনে সেই জমিদার বংশের প্রতিটি পুরুষের নামের সঙ্গে ‘প্রসন্ন’ শব্দ যুক্ত করা হয়।

 

প্রায় চারশো বছরের পুরোনো এই মন্দিরে প্রতিটি বিশেষ তিথি যেমন কৌশিকী বা দীপান্বিতা অমাবস্যায় উৎসব উপলক্ষ্যে আশেপাশের বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেক লোকের সমাগম হয়। শনি-মঙ্গলবারে অনেকে মনোস্কামনা পূরণের জন্য পূজাও দিয়ে থাকেন।দেবী প্রসন্নময়ীর প্রতি এই অঞ্চলের মানুষের রয়েছে অগাধ আস্থা।

 

ফিরে আসবো পরের পর্বে। অন্য কোনো মন্দিরের ইতিহাস নিয়ে ।থাকবে অজানা অনেক জনশ্রুতি এবং অলৌকিক ঘটনা। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

রাখী পূর্ণিমার শুভেচ্ছা

 

রাখী পূর্ণিমার শুভেচ্ছা

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

আজ সারা দেশ জুড়ে পালিত হচ্ছে পবিত্র রাখী পূর্ণিমা উৎসব।ভারতীয় সনাতন সভ্যতায় বহু প্রাচীন কালথেকে চলে আসছে এই উৎসব|ভারতের পুরাণ, মহাকাব্য থেকে ইতিহাস ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখী বন্ধনের গল্প|

মহাভারতে, মা কুন্তী যখন কর্ণকে জন্মের পর জলে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন সদ্যোজাতের হাতে বেঁধে দিয়েছিলেন একটি সুতো যা রাখীর মতোই রক্ষা কবচ হিসেবে রক্ষা করেছিলো তার সন্তানকে|শিশুপালের দিকে সুদর্শন চক্র ছুড়ে দেওয়ার সময় কৃষ্ণের হাতের আঙ্গুল কেটে রক্ত বের হতে শুরু করে। কৃষ্ণসখী দ্রৌপদী তাঁর শাড়ির আঁচল খানিকটা ছিঁড়ে তাঁর হাতে বেঁধে দেন। বড়ো ভাইয়ের ন্যায় শ্রীকৃষ্ণও দ্রৌপদীকে সব বিপদ থেকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দেন|এও তো একপ্রকার রাখী বন্ধন|

রামায়নে মহর্ষি বাল্মীকির আশ্রমে রাম-সীতার দুই সন্তান লব-কুশের জন্মের পর তাদের হাতে সুরক্ষা কবচ হিসেবে একটি বিশেষ সুতো বেঁধে দেন বাল্মীকি|আবার পুরান অনুসারে দেবী লক্ষী রাজা বলীর হাতে রাখী পড়িয়ে বিষ্ণু কে বৈকুন্ঠ লোকে ফিরিয়ে এনেছিলেন|

এই দিনে অনেকেই নিজের ইষ্ট দেবকে রাখী
অর্পণ করেন। এতে খুব ভালো এবং দ্রুত
নিজের মনোস্কামনা পূর্ণ হয়।

রাখী বন্ধন প্রতিশ্রুতি রক্ষার উত্সব। ভাইবোনের মধ্যেই হোক কিংবা প্রিয় দুই মানুষের মধ্যে। সেই জন্যই তো প্রেম পর্যায়ের গানেও রবি ঠাকুর লিখেছেন … ” মনে ক’রে সখী, বাঁধিয়া রাখিয়ো আমার হাতের রাখী–তোমার কনককঙ্কনে|

আপনাদের সকলকে জানাই এই পবিত্র রাখী বন্ধন উৎসবের অনেক শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন।
ভালো থাকুন। পড়তে থাকুন।ধন্যবাদ।

কালী কথা – ভবতারিণী কালী

কালী কথা – ভবতারিণী কালী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

ভবতারিণী কালী বলতে অনেকেই শুধু দক্ষিনেশ্বর কালী মন্দিরের কথা ভাবেন আজ কালী কথার এই পর্বে আপনাদের কলকাতার এমন একটি প্রাচীন কালীর পুজোর কথা আপনাদের জানাবো।

যেখানে দেবী ভবতারিণী রূপেই বিরাজ করছেন যদিও এখানে দেবী ঘোমটায় ঢাকা থাকেন তাই তিনি ঘোমটা কালী নামে বেশি প্রসিদ্ধ।

 

বলরাম ঘোষের উত্তরসূরি তুলসীরাম ঘোষকে স্বপ্নে দেখা দিয়েছিলেন দেবী।স্বপ্নে দেখা রূপ অনুযায়ীই এখানে দেবী কালীর মূর্তি তৈরি হয়েছে। মন্দিরটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ প্রথম গ্রহণ করেন সারদা প্রসাদ ঘোষের মা দয়াময়ী দাসী। তুলসীরাম ঘোষ স্বপ্নে দেখা কালী মূর্তি অনুযায়ী একটি ছবি আঁকিয়েছিলেন। সেই ছবিটি এখনও মন্দিরে রাখা আছে। তুলসীরামের পুত্রবধূ দয়াময়ী দেবী স্বামীর মৃত্যুর পর ছেলের সঙ্গে কলকাতায় এসে জমি কিনে মন্দির তৈরি শুরু করেন এবং তুলসীরামের আঁকানো ছবি অনুযায়ী কালী মূর্তি তৈরি করান। পরবর্তীতে মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয় স্থাপিত হয় একটি কষ্টি পাথরের কালী মূর্তি এবং নিয়মিত পুজো

শুরু হয়।

 

ঐতিহাসিক এই মন্দিরটি ১৮৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত।

বর্তমানে এই মন্দিরটি হেরিটেজ ঘোষিত হয়েছে।

গর্ভগৃহে কষ্টিপাথরের দক্ষিণাকালী ভবতারিণী নামেই নিত্য পূজিতা। মন্দিরের  গর্ভগৃহের একদিকে শ্রীধর অর্থাৎ নারায়ণ শিলা, কৃষ্ণ-রাধিকা মূর্তি, গণেশ, কৃষ্ণ মূর্তিও নিত্য পূজিত হয়।  মন্দিরটি দক্ষিণমুখী। দক্ষিণেশ্বরের আদলে নবরত্নশৈলীতে মন্দিরটি নির্মিত।

 

ভবতারিণী মন্দিরে বৈষ্ণব মতে পুজো হয়।

প্রতি অমাবস্যায় বিশেষ পুজো হয় তবে

কার্তিক অমাবস্যায় বেশি ধূমধাম করে কালী পুজো হয়। এছাড়াও জন্মাষ্টমী, দুর্গাপুজো এবং জগদ্ধাত্রী পুজো হয়ে থাকে। মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বাসন্তী পঞ্চমীর দিন সেই কারণে, প্রতি বছর বসন্ত পঞ্চমীর দিন মন্দিরের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষ্যে জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে পুজো হয়।

 

স্থানীয় বাসিন্দারা বিপদে-আপদে মন্দিরে ছুটে আসেন তাদের ঘোমটা কালী মা বা ভবতারিণী মায়ের মন্দিরে ভক্তদের বিশ্বাস দেবীর কৃপায় যেকোনও বিপদ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।

 

ফিরে আসবো পরবর্তী পর্বে অন্য এক কালী মন্দিরের ইতিহাস নিয়ে ।ধারাবাহিক ভাবে চলতে থাকবে কালী কথা।পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী কথা – দেবী যোগমায়া

কালী কথা – দেবী যোগমায়া

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন কালী মন্দিরকে ঘিরে রয়েছে বহু ইতিহাস।বহু অলৌকিক ঘটনা।সেইরকমই এক অলৌকিক ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে ঝাড়গ্রামের যোগমায়া মন্দিরের সাথে রয়েছে এক অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ।আজকের কালী কথায় লিখবো এই দেবী

যোগমায়ার মন্দির নিয়ে।

 

দেবী যোগ মায়া আসলে দেবী কালী স্বয়ং।

এই যোগ মায়া মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা হাড়িরাম দাস নামে এক মাতৃ সাধক।শোনা যায় তিনি তন্ত্রসিদ্ধ হয়ে স্বপ্নাদেশে দেবীকে কন্যারূপে পেয়েছিলেন।

 

সে আজ থেকে প্রায় একশ বছর আগের ঘটনা হাড়িরামের কন্যা মাত্র দেড় বছর বয়সে অসুস্থ হয়ে মারা যায় মেয়েকে হারিয়ে উন্মাদের মতো হয়ে যান হাড়িরাম। গ্রামের অদূরে এক শ্মশানে মাটি চাপা দিয়ে সমাহিত করেন মেয়েকে। কিন্তু সন্তানহারা বাবার মন সর্বক্ষণই মেয়ের জন্য কেঁদে উঠত। রাত হলেই শ্মশানে গিয়ে মাটি সরিয়ে মেয়ের দেহ বুকে চেপে কান্নায় ভেঙে পড়তেন তিনি। এই শ্মশানে এক গভীর রাতে দেবী যোগমায়ার দর্শন পেলেন হাড়িরাম। দেবী জানালেন এভাবে রোজ মেয়ের দেহ দেখতে আসার দরকার নেই। তিনিই যোগ মায়া নামে কন্যারূপে হাড়িরামের ঘরে আসবেন।

 

তারপর দেবীর আদেশে বাড়ির উঠোনে বেলগাছের তলায় পঞ্চমুণ্ডির আসনে সাধনা শুরু করলেন তিনি। এক অমাবস্যায় তন্ত্র সাধনায় সিদ্ধিলাভ হল।তারপর ধীরে ধীরে সাধকের চেষ্টায় তৈরী হলো মাটির একটি ছোট্ট মন্দির এবং সেখানে যোগমায়াকে প্রতিষ্ঠা করেন তিনি । নিজের কন্যা রূপে যোগ মায়া কে দেখতেন তিনি এবং সারা জীবন তার পুজো করেই কাটিয়ে দেন।

হাড়িরামের মৃত্যুর পর মন্দিরের পাশেই তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। পরে তাঁর স্ত্রী মনোরমার মৃত্যু হলে তাঁকেও হাড়িরামের সমাধির পাশেই সমাধিস্থ করা হয়।

 

খুব দ্রুত যোগমায়া দেবীর মাহাত্ম্য ছড়িয়ে পরে চারিদিকে।বহু মানুষ আসতে শুরু করেন দেবী যোগ মায়ার মন্দিরে।পরবর্তীতে ভক্তদের দানে সেখানে তৈরি হয়েছে সমাধি মন্দির। মন্দিরে মায়ের বিগ্রহের পাশেই রয়েছে হাড়িরামের মূর্তিও। দেবীর পুরনো মাটির মূর্তি প্রতি বছর নবকলেবর ধারণ করে।আজও বংশ পরম্পরায় হাড়িরামের পরিবারের সদস্যরাই পুজো করেন।

 

প্রতিটি অমাবস্যায় বিশেষ পুজো হয় তবে কালীপুজোর রাতে এখানে প্রচুর ভক্ত আসেন। গভীর রাতে হয় পুজো।ভক্তিভরে মায়ের কাছে প্রার্থনা জানালে মা ভক্তের কথা শোনেন।

সেই বিশ্বাসেই বহু মানুষ আসেন।

 

ফিরে আসবো আগামী পর্বে কালী কথা নিয়ে।

আসন্ন কৌশিকী অমাবস্যা উপলক্ষে চলতে থাকবে এই ধারাবাহিক আলোচনা।পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন।ধন্যবাদ।

কালী কথা – দুবরাজপুরের শ্মশান কালী

কালী কথা – দুবরাজপুরের শ্মশান কালী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

বীরভূমের মাটি শক্তি স্বাধনার জন্য বরাবরই প্রসিদ্ধ। একাধিক সিদ্ধ পীঠ এবং তারাপীঠের ন্যায় জগৎ বিখ্যাত শক্তি পীঠ যেমন আছে তেমনই আছে তিনশো বছরের প্রাচীন এক শ্মশান কালী মন্দির। আজকের পর্বে এই শ্মশান কালী মন্দির নিয়ে লিখবো।

 

আনুমানিক সাড়ে তিনশ থেকে চারশ বছরের প্রাচীন বীরভূমের দুবরাজপুরের পাহাড়েশ্বরের শ্মশান কালীর প্রধান বিশেষত্ব হলো এখানে কালী পুজো শুরু করেছিলেন বৈষ্ণবরা এবং বৈষ্ণবরা আজও এই পুজোর দায়িত্ব ভার গ্রহণ করে আসছেন।

 

দুবরাজপুরের এই শ্মশান কালীর পুজোর দায়িত্বে থাকা বৈষ্ণব পরিবারের পূর্বপুরুষ হারাধন চক্রবর্তী কামাখ্যা থেকে এই শ্মশান কালীকে এনে দুবরাজপুরের শ্মশানের পাশে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

সেই সময় এই জায়গা ছিল সম্পূর্ণ জঙ্গলে ঘেরা এবং শ্মশান। পরবর্তীকালে ধীরে ধীরে জনবসতি বাড়তে থাকায় শ্মশান কিছুটা দূরে সরে গিয়েছে।

 

সনাতন ধর্মে সাধারণত শাক্ত এবং বৈষ্ণবদের মধ্যে এক ধরণের বিরোধ লক্ষ্য করা যায়। একে অন্যের সমালোচনা এবং মত বিরোধ থাকে কিন্তু এই শ্মশানকালীর পুজোয় শাক্ত এবং বৈষ্ণব ভাবধারা মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে

বহু পূর্বে।

 

বীরভূমের দুবরাজপুরের এই শ্মশান কালীর প্রতিমা তৈরি থেকে পুজো এবং বিসর্জন সবক্ষেত্রেই রয়েছে আলাদা বৈশিষ্ট্য। সারা বছর এই শ্মশান কালী বৈষ্ণব পরিবারের হাতে পূজিত হলেও দুর্গাপুজোর পর একাদশীর দিন এলাকার দাস পরিবারের হাত দিয়ে এখানকার প্রতিমা বিসর্জন করা হয়। বৈষ্ণবদের হাতে এখানকার শ্মশানকালী পূজিত হলেও পুজো হয় তন্ত্র মতে।

কালী পুজো এবং দুর্গাপুজো দুই পালিত হয় বেশ জাঁকজমক পূর্ণ ভাবে। বহু মানুষের সমাগম হয়।

 

আবার পরবর্তী পর্বে ফিরে আসবো কালী কথার আরেক পর্ব নিয়ে। থাকবে আরেকটি প্রাচীনএবং ঐতিহাসিক কালী পুজোর ইতিহাস।পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী কথা – যোগেশ্বরী কালী 

কালী কথা – যোগেশ্বরী কালী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার মথুরাপুরের সাতঘরা ঠাকুরঝি গ্রামের যজ্ঞবাটি মহাশ্মশানে কয়েকশো বছর ধরে পূজিত হয়ে আসছেন মা যজ্ঞেশ্বরী কালী।আজকের কালী কথায় জানাবো এই যোগেশ্বরী কালীর মাহাত্ম এবং এই পুজোর ইতিহাস।

 

অতীতে এক সময় এই স্থান দিয়ে বয়ে যেতো আদি গঙ্গা।অধুনালুপ্ত আদি গঙ্গার তীরে অবস্থিত এই শ্মশান। শ্মশানে রয়েছে তিন চূড়া বিশিষ্ট মন্দির। সেখানেই পূজিত হন মা যোগেশ্বরী কালী।

এই শ্মশানে কালীর আরাধনা শুরু করেছিলেন তান্ত্রিকরা। কালের নিয়মে জঙ্গল না থাকলেও এখনও শ্মশান চত্বরে নির্জন পরিবেশ। চারিদিকে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য সমাধি। তারই মধ্যে মাথা তুলেছে লতাপাতার জঙ্গল সব মিলিয়ে এই যোগেশ্বরী কালী মন্দিরের পরিবেশ বেশ রহস্যময় এবং গা ছমছমে।এই স্থানে তন্ত্র সাধনার রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস।এখানে তন্ত্র সাধনা করতে প্রথম আসেন শিবানন্দ ব্রহ্মচারী নামে এক তন্ত্র সাধক। তিনিই প্রথম একশো আটটি টি নরমুণ্ড দিয়ে তন্ত্র সাধনা শুরু করেন বলে জনশ্রুতি আছে।

ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে মায়ের মন্দির। শুরু হয় মা যজ্ঞেশ্বরী কালীর নিত্যপূজা।

 

সাধক শিবানন্দের দেখানো পথ ধরেই মূলত সুন্দরবন এলাকার তান্ত্রিকরা তন্ত্র সাধনার জন্য এই শ্মশানে আসতেন।আগে এই জায়গায় বৈরাগী সম্প্রদায়ের মানুষের সমাধি দেওয়া হত। অনেকের ধারণা বৈরাগীরা সমাধিকে ‘যজ্ঞবাড়ি’ বলত, তাই এই এলাকার নাম হয়ে যায় যজ্ঞবাটি এবং যজ্ঞবাটির প্রতিষ্ঠিত কালী জনসাধারনের

কাছে হয়ে ওঠেন দেবী যজ্ঞেশ্বরী।আবার কথিত আছে, পৌরাণিক কালে ভাগীরথ মর্তে গঙ্গা আনয়নের সময় অধুনা যজ্ঞবাটি শ্মশানের কাছে বিশ্রাম নিয়ে যজ্ঞ করেছিলেন। সেই থেকে এই এলাকার নাম যজ্ঞবাটি। নাম করণের ইতিহাস যাই হোক। দেবী যজ্ঞেশ্বরী এই অঞ্চলের প্রধান দেবী।

 

মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্যদেবের সাথেও এই স্থানের যোগসূত্র আছে এক সময় ছত্রভোগ হয়ে নীলাচলে যাওয়ার পথে এই শ্মশানেই নাকি বিশ্রাম নিয়েছিলেন স্বয়ং চৈতন্য মহাপ্রভু।

 

এখানে আজও রীতি মেনে তন্ত্র মতে নৈবেদ্য হিসেবে দেবীকে অর্পন করা হয় মদ, মাংস ও ছোলা।বিশেষ বিশেষ অমাবস্যাতিথিতে বিশেষ পুজোর আয়োজন হয় বহু ভক্তের সমাগম হয়।

 

কালী কথায় বাংলার কয়েকটি প্রসিদ্ধ এবং প্রাচীন কালী মন্দিরের কথা ইতিমধ্যে আপনাদের বলেছি।এই ধারাবাহিকতাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবো আজ আগামী দিনে।চলতে থাকবে কালী কথা।

পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা 

স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

স্বাধীনতা দিবস পালন হয় দেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে|এই তিরঙ্গা জাতীয় পতাকার ও একটা ইতিহাস আছে|এই পতাকা সৃষ্টির সাথে জড়িয়ে আছে অনেক ঘটনা ও অনেক গল্প|

 

ভারতের জাতীয় পতাকার রূপটি অতি সুন্দর এবং অর্থবহ|এই পতাকারা কেন্দ্রে চব্বিশটি দণ্ডযুক্ত নীল “অশোকচক্র” সহ গেরুয়া, সাদা ও সবুজ আনুভূমিক আয়তাকার ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা। ১৯৪৭ সালের ২২ জুলাই গণপরিষদের একটি অধিবেশনে এই পতাকার বর্তমান রূপটি ভারত অধিরাজ্যের সরকারি পতাকা হিসেবে গৃহীত হয়েছিল|

 

স্বাধীনতারা কিছু বছর আগে আগে ১৯১৬ সালে অধুনা অন্ধ্রপ্রদেশের মছলিপত্তনম শহরের নিকটস্থ ভাটলাপেনামারু গ্রামের বাসিন্দা পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়া একটি সাধারণ জাতীয় পতাকার রূপদানের চেষ্টা করেন|অনেক ঘটনা ও টানা পোড়েনের পর তিনিই হন দেশের জাতীয় পতাকার স্রষ্টা বা রূপকার|

 

ভেঙ্কাইয়া এই পতাকার জন্য মহাত্মা গান্ধীর অনুমোদন চাইতে গেলে গান্ধীজি তাঁকে “ভারতের মূর্তপ্রতীক ও দেশের সকল অমঙ্গলহারী” চরকার চিত্র পতাকায় যোগ করার পরামর্শ দেন গান্ধীজি|যদিও তা বাস্তবায়িত হয়নি|

 

পরবর্তীকালে ১৯৩১ সালের করাচি কংগ্রেস অধিবেশনে পতাকা সংক্রান্ত সর্বশেষ প্রস্তাবটি পাস হয়। পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়া অঙ্কিত একটি ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা গৃহীত হয়। এই পতাকায় আনুভূমিক গেরুয়া, সাদা ও সবুজের মধ্যস্থলে একটি চরকা খচিত ছিল। গেরুয়া ত্যাগ; সাদা সত্য ও শান্তি এবং সবুজ বিশ্বাস ও প্রগতির প্রতীক তথা চরকা ভারতের অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন ও দেশবাসীর শ্রমশীলতার প্রতীক হিসেবে গৃহীত হয়।

 

ওই বছরই ২ রা এপ্রিল কংগ্রেস কর্মসমিতি একটি সাত সদস্যের পতাকা সমিতি গঠন করে। পতাকায় ব্যবহৃত তিনটি রং নিয়ে আপত্তি আছে ওঠে কারণ এই রংগুলি সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে চিহ্নিত এই মর্মে একটি প্রস্তাব পাস হয়। পতাকার রঙ আবার পরিবর্তন করা হয়|আবার সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হচ্ছে এই অভিযোগের ভিত্তিতে পতাকার এই রঙ বাতিল করা হয়|

 

স্বাধীনতা প্রাপ্তির কয়েকদিন পূর্বে ভারতের জাতীয় পতাকার বিষয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার জন্য গণপরিষদ স্থাপিত হয়। গণপরিষদ রাজেন্দ্র প্রসাদের নেতৃত্বে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করে। এই কমিটির সদস্যরা ছিলেন মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, সরোজিনী নাইডু, চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী, কে এম মুন্সি ও বি আর আম্বেডকর। পতাকা কমিটি স্থাপিত হয় ১৯৪৭ সালের ২৩ জুন।

 

এই কমিটি পতাকা নিয়ে আলোচনা শুরু করে। তিন সপ্তাহ পরে ১৯৪৭ সালের ১৪ জুলাই তাঁরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের পতাকাটি উপযুক্ত সংস্কারের পর সব দল ও সম্প্রদায়ের কাছে গ্রহণীয় করে তুলে জাতীয় পতাকা হিসেবে গৃহীত হবে। পরে এমন প্রস্তাবও গৃহীত হয় যে ভারতের জাতীয় পতাকার কোনো সাম্প্রদায়িক গুরুত্ব থাকবে না। চরকার পরিবর্তে সারনাথ স্তম্ভ থেকে ধর্মচক্র-টি গৃহীত হয় পতাকায়।এই পতাকাই ভারতের জাতীয় পতাকা রূপে স্বীকৃত হয় এবং ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট স্বাধীন ভারতে প্রথমবার এই পতাকাটি উত্তোলিত হয়|

 

স্বাধীনতা দিবস পালন করুন এবং অবশ্যই জাতীয় পতাকাকে যথাযত সন্মান দিন। সবাইকে স্বাধীনতা দিবসের অনেক শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন। জয় হিন্দ। ভারত মাতার জয়।

কালী কথা – শকুন্তলা কালী

কালী কথা – শকুন্তলা কালী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

স্বপ্নাদেশে পেয়ে শুরু হয়েছিল কোন্নগরে শকুন্তলা কালী পুজো । প্রায় দেড়শো বছর ধরে

আজও হয়ে আসছে সেই পুজো।

আজকের পর্বে শকুন্তলা কালী।

 

লোকশ্রুতি আছে শ্রী চৈতন্যদেব প্রায় ৫৩৪ বছর আগে পানিহাটিতে এসেছিলেন রাঘব পন্ডিতের টোলে ।তখন তিনি গঙ্গাস্নান করে উল্টো দিকে জনপথ দেখতে পান। তখন তিনি প্রশ্ন করেন উহা কোন নগর এরপরেই নাকি কোন্নগরের নামকরণ হয়েছিল। সেই সময়ে কোন্নগরে তেমন মানুষের বাস ছিল না।চক্রবর্তী পরিবার ছিলো এই অঞ্চলের আদি বাসিন্দাদের অন্যতম।

 

এই পরিবারের পূর্বপুরুষ ইন্দ্রনাথ চক্রবর্তী পুজো করে ফেরার পথে এক রাতে তিনি দেখতে পান সাদা কাপড় পরে খোলা চুলে কোন এক রমণী রাতের অন্ধকারে হেঁটে আসছিলেন। তাঁকে অনুসরণ করে পূজারী খানিক দূর আসতেই দেখতে পান সুন্দরী রমণী এক ভাগাড়ের মধ্যে থাকা অশ্বত্থ গাছের নিচে এসে বিলীন হয়ে গেলেন। ওইদিন রাতেই ওই পূজারীকে দেবী স্বপ্নাদেশ দেন, ভাগাড়ের সেই অশ্বত্থ গাছের নিচে যেখানে শকুনের বাসা রয়েছে তার তলায় দেবীর ঘট স্থাপন করে পুজো করার জন্য। তারপর

অশ্বত্থ গাছের শকুনের বাসার নিচে হোগলা পাতা তালপাতার মণ্ডপ সাজিয়ে শুরু হয় দেবীর আরাধনা।খুব সম্ভবত শকুনের বাসস্থানে এই কালীর পুজো শুরু হয় তাই লোকমুখে নাম হয় শকুন্তলা কালী।

 

এখানে পুজোর দিন। সূর্য অস্ত যাওয়ার পরে কাঁধে করে দেবীকে নিয়ে আসা হবে তার বেদীতে। আবারো সূর্য ওঠার আগেই শকুন্তলা কালী মায়ের বিসর্জন হয়।

 

কয়েকশো বছরের প্রাচীর এই পুজোকে ঘিরে প্রচুর ভক্তের সমাগম ঘটে মন্দির চত্বরে। প্রতিবছর বাংলা বৈশাখ মাসের কৃষ্ণপক্ষের দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় শনিবার এই পুজো আয়োজন করা হয়। পুজোর দিন রাতভর চলে গঙ্গাস্নান।

 

আবার আগামী পর্বে কালী কথা নিয়ে ফিরে আসবো আপনাদের জন্য থাকবে অন্য একটি কালী মন্দিরের ইতিহাস এবং

অলৌকিক ঘটনা। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী কথা – কাঠের কালী

কালী কথা – কাঠের কালী
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
সে আজ থেকে প্রায় তিনশো বছর আগের কথা মুড়াগাছার জমিদার বরদাপ্রসাদ রায়চৌধুরীর প্রতিপত্তি ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা দক্ষিণ বঙ্গে যদিও তিনি ছিলেন শিবের ভক্ত তবে আজ আলোচনা করবো তার প্রতিষ্ঠিত একটি কালী মন্দির নিয়ে।এই কালী মন্দিরটি রয়েছ ডায়মন্ড হারবারের সরিষা গ্রামে এবং এখানে দেবী কালী কাঠের কালী নামে প্রসিদ্ধ
স্থানীয়দের মধ্যে এই প্রাচীন কালী মন্দির নিয়ে একাধিক জনশ্রুতি প্রচলিত আছে। শোনা যায় এক সময় এই সব অঞ্চলে বসন্ত রোগের ভয়ানক প্রকোপ দেখা দেয়। প্রজারা আসেন জমিদার বাবুর কাছে সমাধানের জন্য । চিন্তিত হয়ে পড়েন বরদাপ্রসাদ। তখনই এক রাতে দেবীর স্বপ্নাদেশ পান। তিনি স্বপ্নে জানতে পারেন একটি নিদিষ্ট স্থানে কালী মন্দিরে বানাতে হবে। সেই স্থানের কাছেই আছে একটি পুকুর যার জলে একটি কাঠ আছে এবং সেই কাঠ দিয়ে বানাতে হবে কালী মূর্তি। জমিদার কথা মতো কালী মন্দির নির্মাণ করেন।দেবীর নির্দেশেই মন্দিরের জন্য নির্বাচিত স্থানের পশের এক পুকুর থেকে কাঠ উদ্ধার করে সেই কাঠ দিয়ে তৈরি হয় কালীমূর্তি। সেই কাঠের কালীমূর্তিকেই আজও পুজো করেন সরিষা গ্রামের মানুষ।এই কারণে এই দেবীকে অনেকেই কাঠের কালী নামে চেনেন।
পরবর্তীতে বরদাপ্রসাদের বিরাট জমিদারির অধিকাংশ জমি এবং প্রভাব প্রতিপত্তি চলে যায় স্থানীয় হালদার পরিবারের হাতে সেই সঙ্গে মন্দিরের পুজো এবং রক্ষনাবেক্ষণের দায়িত্ব চলে যায় এই হালদার পরিবারের হাতে। সেই থেকে মন্দির ও মূর্তি দুই আগলে রেখেছেন হালদার পরিবারের সদস্যরা ।
আজও এই পুজো একই রীতিনীতি মেনে পালন করে আসছেন হালদার পরিবার। এই পুজোকে কেন্দ্র করে রয়েছে একাধিক রীতি নীতি।
এখানে কালীপুজোর দিন এই গ্রামে অন্য কোথাও কালী পুজো হয় না। আগে একাধিকবার গ্রামবাসীরা বারোয়ারি কালীপুজোর উদ্যোগ নিলেও বিভিন্ন অঘটন ঘটেছে। সেই থেকে এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলে কাঠের কালীর পুজোই প্রায় একমাত্র এবং প্রধান পুজো।
সব নিয়ম মেনে দেবীর নিত্যপুজো হয় এখানে। তবে কালীপুজোর সময় বিশেষ পুজোর আয়োজন হয়। দেবীকে প্রতিদিন অন্নভোগ দেওয়া হয়। তবে কালীপুজোর সময় দেবীমূর্তির সামনে তন্ত্র মতে পশু বলির রীতি আছে।বর্তমানে নিয়ম রক্ষা করে প্রতি বছর মাছ বলি হয় । এছাড়া সবজি বলি দেওয়া হয়। সেই বলীর মাছ ও সবজি নিয়ে মায়ের অন্নভোগের আয়োজন করা হয় মন্দিরে।
পরবর্তীতে ভোগ বিতরণ হয়। কালীপুজোর সময়ে বিশেষ পুজো উপলক্ষে সারারাত ধরে এখানে ভক্তদের ভিড় হয়।
ফিরে আসবো কালী কথা নিয়ে যথা সময়ে। থাকবে এমনই এক ঐতিহাসিক এবং প্রাচীন কালী পুজোর কথা।পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী কথা – হাজার হাত কালী

কালী কথা – হাজার হাত কালী

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

সাধারণত কালী বলতেই আমরা দেবীর চতুর্ভুজা রূপের কথা ভেবে থাকি।তবে বেশ কিছু শাস্ত্রে দেবীর হাজার হাত রূপের উল্লেখ রয়েছে|
দেবীর এই বিশেষ রূপের পুজো হয় হাওড়ার এক কালী মন্দিরে।আজকের পর্বে হাওড়ায় অবস্থিত এই হাজার হাত কালীর মন্দির নিয়ে লিখবো।

চণ্ডীপুরাণের বাইশ তম অধ্যায়ে কালীর এই রূপের কথা উল্লেখ আছে|চণ্ডীপুরাণ অনুযায়ী, অসুর বধের সময় দেবী দুর্গা অনেক রূপ ধারন করেছিলেন। তার মধ্যে অন্যতম হাজার হাতের রূপ। কাত্যায়নী এবং মহামায়ার পরেই অসুর নিধন করতে আসেন হাজার হাত রূপী মা কালী|দেবী কালীর এই রূপটি খুব একটা জনপ্রিয় বা পরিচিত রুপ নয়, এই রূপ খুব কম কালী মন্দিরেই রয়েছে, দেবীর এই বিশেষ রূপই দেখা যায় হাওড়ার শিব পুরের এই প্রাচীন কালী মন্দিরে|

এই কালী মন্দিরের প্রতিষ্টা নিয়েও একটি লোককথা প্রচলিত আছে।শোনা যায় স্থানীয় মুখোপাধ্য়ায় বাড়ির ছেলে তান্ত্রিক আশুতোষ মুখোপাধ্যায় মা চণ্ডীর স্বপ্নাদেশে কালীর এই হাজার হাত রূপ দেখতে পান এবং মন্দির প্রতিষ্ঠা করে দেবীর এই রূপের পুজো করতে ব্যাকুল হয়ে ওঠেন|কিন্তু এই মন্দির নির্মাণের বিপুল ব্যয় ভার বহন করার সাধ্য ছিলোনা তান্ত্রিক আশুতোষ মুখোপাধ্যায় বা তার পরিবারের|তবে স্বয়ং দেবী যার সহায় তার আর চিন্তা কি! আশুতোষ মুখোপাধ্য়ায়ের এই ইচ্ছাপূরণের জন্য এগিয়ে আসেন স্থানীয় ধনী হালদার পরিবার এবং তাদের চেষ্টায় ১৮৭০ সালে স্থাপিত হয় এই মন্দির এবং দেবীর এই বিশেষ রূপ এখানে প্রতিষ্টিত হয়|এই রূপে দেবী নীল বর্ণা, বাহন সিংহের উপর তাঁর ডান পা|

এই কালী মন্দির পশ্চিম বঙ্গ এবং হাওড়া ছাড়াও দক্ষিণ ভারতীয়দের মধ্যে বিশেষ ভাবে জনপ্রিয়, তার কারন জানতে হলে একটি অলৌকিক ঘটনা জানতে হবে।শোনা যায়, প্রায় ৬০ বছর আগে শ্রাবণ মাসের শুক্লপক্ষের এক শুক্রবার দক্ষিণ ভারতের বাসিন্দা এক দৃষ্টি হীন ব্যাক্তি এই মন্দিরে এসেছিলেন এবং তিনি হাজার হাত কালীর কাছে দৃষ্টি ফিরিয়ে দেওয়ার প্রার্থনা করেন|অলৌকিক ভাবে এক বছরের মধ্যে তিনি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পান। তার পর থেকে তিনি মায়ের মাহাত্ম্য প্রচার শুরু করেন দক্ষিণ ভারত জুড়ে। এখন প্রচুর দক্ষিণ ভারতীয় মানুষ এই দেবীর কাছে নিজেদের মনোস্কামনা নিয়ে আসেন।শ্রাবণে শুক্লপক্ষের শুক্রবারে বহু ভক্ত পুজো দেন এই
বিখ্যাত হাজার হাত কালীর মন্দিরে|

এখানে দেবী পূজিত হন তন্ত্র মতে তবে বলী প্রথা এখানে নেই এবং প্রাচীন প্রথা মেনে আজ ও মুখোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যরা এখানে পুজো করে আসছেন|দৈনন্দিন পুজোর পাশাপাশি বুদ্ধ পূর্ণিমা ও দীপাবলিতে এখানে বিশেষ পুজো হয় এবং সেই উপলক্ষে ব্যাপক জনসমাগম হয়|

কালী কথায় কলকাতার এবং জেলার কয়েকটি প্রসিদ্ধ এবং প্রাচীন কালী মন্দিরের কথা ইতিমধ্যে আপনাদের বলেছি।এই ধারাবাহিকতাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবো আজ আগামী দিনে।
চলতে থাকবে কালী কথা। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।