কালী কথা – মগনেশ্বরী কালীবাড়ি
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
সতীপীঠের ভূমি বীরভূমে রয়েছে এক
ঐতিহাসিক কালী ক্ষেত্র যা মগনেশ্বরী কালীবাড়ি নামে পরিচিত।আজকের কালী কথা এই
ঐতিহাসিক কালী মন্দির নিয়ে।
শুরু করবো একটি অলৌকিক ঘটনা দিয়ে।
সে বহু বছর আগের কথা বীরভূমের কোনো এক ছোট্ট রেলস্টেশনের স্টেশনমাস্টার স্বপ্ন দেখেন, এক মহিলা বিনা টিকিটে আমোদপুরে আসছেন।তার বিপদ হতে পারে তিনি যেনো সাহায্যে এগিয়ে যান।সেই স্বপ্ন অনুযায়ী পরদিন ভোরে এক মহিলাকে খুঁজে পান স্টেশন মাস্টার।তার কাছে কোনও টিকিটও ছিল না।জিজ্ঞাসা করে জানা যায় তিনি যাবেন প্ৰখ্যাত সাধক এবং আধ্যাত্মিক গুরু কৈলাসপতি বাবার কাছে। তাঁর কাছ থেকে তিনি দীক্ষা গ্রহণ করবেন।স্টেশন মাস্টার তার সাধ্য মতো সব ব্যাবস্থা করে দেন।
সেদিনের এই অজ্ঞাত মহিলা ছিলেন বিখ্যাত তন্ত্র সধিকা মৃণালিনী দেবী। এই মৃণালিনী দেবী ছোট থেকেই প্রচন্ড সংযমী এবং ধার্মিক চরিত্রের ছিলেন তিনি। মাত্র আট বছর বয়সে বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে সাধনা করতে চলে যান।শোনা যায় তার জন্মের পর কৈলাসপতিবাবা তার পরিবারকে জানান “এই মেয়ে একদিন বিখ্যাত সন্ন্যাসিনী হবে” পরবর্তীতে সেই মেয়ে কৈলাশ পতি বাবার কাছেই দীক্ষা নিয়ে এক সাথে সাধনা করে।তার সন্ন্যাসীনী জীবনে নাম হয় মগনানন্দ।মগনানন্দ সাধক বামাক্ষ্যাপার সমসাময়িক ছিলেন দুজনের দেখাও হয়। দীক্ষা লাভের পর নিজের গ্রাম আমোদপুর ফিরে মৃণালিনী দেবী ওরফে মগনানন্দ ভক্তদের সাহায্যে দক্ষিণেশ্বর কালীর আদলে দেবীর শিলা মূর্তি স্থাপনা করেন।এবং পাকাপাকিভাবে আমোদপুরেই থাকতে শুরু করেন।চলতে থাকে তন্ত্র সাধনা। মাতৃ আরাধনা।
শোনা যায় একবার তারাপীঠে বামদেবের সেবা করতে ছুটে যান মগদানন্দ গিরি।সেবা করে তাকে সুস্থ করে তোলেন। তার ভক্তদের মুখে তার একাধিক অলৌকিক শক্তির কথা শোনা যায়। ভক্তদের কাছে তিনি ছিলেন ‘গুরুমা’। ভাল কাজের যেমন বিধান দিতেন, ঠিক তেমনি খারাপ কাজেও শাসন করতেন। তিনি একশো চৌত্রিশ বছর বয়সে দেহত্যাগ করেন এবং তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী, তাঁকে ত্রিবেণী সঙ্গমে সমাধিস্থ করা হয়।গুরুমা মগদানন্দ গিরির নামানুযায়ী তার সাধন স্থল ও সেই সংলগ্ন কালী ক্ষেত্র আজ সবার কাছে মগনেশ্বরী কালী বাড়ি রূপে পরিচিত।
আসন্ন কৌশিকী অমাবস্যা উপলক্ষে
ধারাবাহিক ভাবে চলতে থাকবে কালী কথা।
ফিরে আসবো আগামী পর্বে।পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।