জন্মাষ্টমী উপলক্ষে বিশেষ পর্ব – কৃষ্ণ কালী

15

জন্মাষ্টমী উপলক্ষে বিশেষ পর্ব – কৃষ্ণ কালী

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

আজ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে শ্রী কৃষ্ণের এমন এক লীলার কথা আপনাদের বলবো যেখানে শ্রী কৃষ্ণ স্বয়ং দেবী কালীর রূপ ধরে ছিলেন।তার এই বিশেষ রূপ কে বলা হয় কৃষ্ণ কালী।

বৃন্দাবনের কুঞ্জবনে কৃষ্ণের বাঁশি শুনে ঘর ছেড়ে রোজ বেরিয়ে যান রাধা। নীরবে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে মিলিত হন কৃষ্ণের সঙ্গে। কেউ কিছু জিগেস করলে বলতেন তিনি কালিন্দী নদীর ধরে শ্যামা মায়ের পুজো করতে যান। প্রসঙ্গত বলে রাখি এই শ্যামা মা অর্থাৎ দেবী কালী রাধার স্বামী আয়ানের পরিবারের ইষ্ট দেবী। তাই তারাও বিষয়টি সহজ ভাবে মেনে নেন।

কিন্তু একদিন রাধার দুই সহচরি জটিলা কুটিলা
আসল কথাটা তুলে দিল রাধার স্বামী আয়ানের কানে। ক্রুদ্ধ আয়ান রাধাকে হাতেনাতে ধরতে ।সারাদিন তিনি তক্কে তক্কে থাকলেন এবং রাধা বেরোলেই তিনি তাঁর পিছু নেন।কিন্তু ভগবান কৃষ্ণ সর্ব জ্ঞানী। তার কাছে আয়ানের এই আগমন বার্তা গোপন রইল না। তিনি সেদিন রাধা আসতেই তাঁকে বললেন, যা বলছি করো, তুমি দ্রুত আমাকে লতাপাতা ফুল-ফল দিয়ে সাজিয়ে দাও। আর আমার পায়ের কাছে ভক্তের মতো বিনীত ভাবে বসে থাকো।

শ্রী রাধা প্রশ্ন না করে কৃষ্ণর কথা মতো দ্রুত সবটা করলেন।তারপর চোখের পলকে শ্যাম পরিবর্তিত হলেন শ্যামায়।তার নিজের দ্বিভুজ দেহ একেবারে চতুর্ভুজ রূপ হয়ে গেল। তার উন্মুক্ত কেশ রাশি দুলতে আরম্ভ করলো । তাঁর গলায় থাকা পদ্মের মালা খানি নৃমুণ্ড মালার রূপ নিলো।বাঁশি হল খরগ এবং কপালের তিলক চন্দ্র রূপে শোভা পাচ্ছিলো।তিনি কৃষ্ণ থেকে কালীতে সম্পূর্ণ
ভাবে রূপান্তরিত হন। তিনি তখন আর কৃষ্ণ নন তিনি হয়ে গেছেন কৃষ্ণ কালী।

আয়ান এসে দেখলেন ঘন বনের মধ্যে এসে তাঁর বউ রাধা তাঁরই ইষ্টের আরাধনা করছেন! তাঁর মনটা আনন্দে ভরে গেল। তিনি রাধার আচরণে খুশিই হলেন এবং নিজের ইষ্ট দেবী শ্যামাকে দর্শন
করে ধন্য হলেন।

এই বিশেষ কালী রূপ কৃষ্ণ কালী রূপে বহু স্থানে পূজিত হয়। বৈষ্ণব এবং শাক্ত দর্শনের অপূর্ব সমম্মিলিত রূপ হলেন কৃষ্ণ কালী যা ভগবানের অদ্ভুত এক লীলার প্রকাশ।সংক্ষেপে এই কৃষ্ণ কালী রূপ প্রমান করে দেয় যিনি কৃষ্ণ কালী তিনিই কালী সব ভেদাভেদ এবং তর্ক বিতর্ক অর্থহীন।

সবাইকে জানাই জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন। আজ এই পর্ব এখানেই শেষ করছি। আবার ফিরে আসবো কালী কথা নিয়ে।
যথা সময়ে। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন।ধন্যবাদ।