বিশেষ পর্ব – দেবী কৌশিকীর মাহাত্ম 

23

বিশেষ পর্ব – দেবী কৌশিকীর মাহাত্ম

 

পন্ডিতজি ভৃগুর শ্রীজাতক

 

বছরের যত গুলো অমাবস্যা আমরা পালন করি তার মধ্যে ভদ্র মাসের কৌশিকী অমাবস্যা একটি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ তিথি।আধ্যাত্মিক দৃষ্টি ভঙ্গী থেকে এবং তন্ত্র সাধনার প্রেক্ষাপটে কৌশিকী অমাবস্যার তাৎপর্য অপরিসীম। কৌশিকী অমাবস্যার ঠিক প্রাক্কালে আজকের এই বিশেষ পর্বে আসুন জেনে নিই কে এই দেবী কৌশিকী এবং শাস্ত্রে তার সম্পর্কে কি কি তথ্য আছে।

 

শ্রীশ্রীচণ্ডীতে বর্ণিত মহা সরস্বতী দেবীর কাহিনীতে বলা আছে পুরাকালে একবার শুম্ভ ও নিশুম্ভ কঠিন সাধনা করে ব্রহ্মাকে তুষ্ট করলে চতুরানন তাঁদের বর দেন, কোনও পুরুষ তাঁদের বধ করতে পারবেন না৷ শুধু কোনও অ-যোনি সম্ভূত নারী তাঁদের বধ করতে পারবেন। অর্থাৎ এমন এক নারী, যিনি মাতৃগর্ভ থেকে জন্ম নেননি, তাঁর হাতেই এই দুই অসুর ভাই-এর মৃত্যু হবে|

 

অন্যদিকে পূর্ব জন্মে পার্বতী যখন সতী রূপে দক্ষ যজ্ঞ স্থলে আত্মাহুতি দেন, তার কারণে এই জন্মে ওঁর গাত্র বর্ণ কালো মেঘের মতো। তাই ভোলানাথ তাঁকে কালিকা ডাকতেন। একদিন দানব ভাইদের দ্বারা পীড়িত ক্লান্ত দেবতারা যখন কৈলাশে আশ্রয় নিলেন, শিব সব দেবতাদের সামনেই পার্বতীকে বললেন, “কালিকা তুমি ওদের উদ্ধার করো।” সবার সামনে ‘কালী’ বলে ডাকায় পার্বতী অত্যন্ত ক্ষুব্ধ, অপমানিত ও ক্রোধিত মনে মানস সরোবরের ধারে কঠিন তপস্যা করলেন।

 

তপস্যান্তে শীতল মানস সরোবরের জলে স্নান করে নিজের দেহের সব কালো পরিত্যাগ করলেন ও পূর্ণিমার চাঁদের মতো গাত্র বর্ণ ধারণ করলেন।দেবীর দেহ হতে নির্গত ওই কালো কোশিকাগুলি থেকে এক অপূর্ব সুন্দর কৃষ্ণবর্ণ দেবীর সৃষ্টি হয়। ইনি দেবী কৌশিকী| এই কৌশিকী অমাবস্যার তিথিতেই দেবীর উৎপত্তি হয় এবং তিনি শুম্ভ ও নিশুম্ভকে বধ করেন। তাই এই অমাবস্যার নাম কৌশিকী অমাবস্যা|

 

মৎস পূরাণ এবং মার্কন্ডেয় পূরাণে বলা হয়,অত্যাচারি অসুর দ্বয় শুম্ভ ও নিশুম্ভকে বধ করতে দেবী পার্বতী সাধনা শুরু করেন। তপস্যার পর, নিজের শ্বেতশুভ্র গায়ের রঙ পরিত্যাগ করে ,উজ্জ্বল কালো বর্ণে ভয়াল রূপ ধারণ করেন দেবী। সেই রূপে দেবী পার্বতী হয়ে ওঠেন ‘কৌশিকী’। আর এই কৌশিকীই অমাবস্যার এক বিশেষ কালক্ষণে দেবী বধ করেন শুম্ভ ও নিশুম্ভ নামের দুই অসুরকে। সেই কালক্ষণকে স্মরণ করেই অনুষ্ঠিত হয় কৌশিকী অমাবস্যার পূজা।

 

সহজ ব্যাখ্যায় কৌশিকী অমাবস্যা অশুভ শক্তির উপর শুভ শক্তির জয়কে উদযাপন করার একটি ধর্মীয় উৎসব যা মহাসমারোহে পালিত হয়ে আসছে দেশের শক্তি উপাসকদের দ্বারা যুগ যুগ ধরে|শাস্ত্র মতে গ্রহ দোষ খণ্ডনের ক্ষেত্রে এই অমাবস্যা অন্যান্য সব অমাবস্যার থেকে অনেকটাই এগিয়ে।

কারন কৌশিকী অমাবস্যার একটি বিশেষ মুহূর্তে সাধকের করা তন্ত্র সাধনা সব দিক দিয়ে সফল হয় এবং দেবী কৌশিকীর আশীর্বাদে সব

অন্ধকার দুর হয়।যুগ যুগ ধরে এমনটাই হয়ে আসছে।

 

আবার পরের পর্বে কৌশিকী অমাবস্যা সংক্রান্ত কিছু শাস্ত্রীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা থাকবে।

থাকবে জ্যোতিষ এবং তন্ত্র জগৎ নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।