Home Blog Page 42

দশ অবতার রহস্য – বুদ্ধ অবতার

ভগবান যখন নশ্বর দেহে অবর্ভুত হন তখন তাকে বলা হয় অবতার|যুগে যুগে তিনি অবতীর্ণ হন বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে|যখন পরিপূর্ণ ভাবে বিষ্ণু আবির্ভুত হন তাকে বলে পূর্ণবতার আর আংশিক ভাবে আবির্ভুত হলে অংশাবতার বলা হয়|বিভিন্ন শাস্ত্রে অবতারের সংখ্যা বিভিন্ন রকম তবে|গরুর পুরান অনুসারে পূর্ণাবতার দশটি যারা মধ্যে আটটি নিয়ে আগে আলোচনা করেছি|আজ নবম অবতার অর্থাৎ বুদ্ধ অবতার নিয়ে আলোচনা করবো|বৈষ্ণব মতে বুদ্ধ ভগবানের নবম অবতার এবং মনে করা হয় বেদ অমান্য কারীদের ভিন্ন পথ প্রদর্শন করতে ও প্রানী হত্যা বন্ধ করতে তিনি আবির্ভূত হয়ে ছিলেন|তার প্রধান উদ্দেশ্য ছিলো জাতি ও বর্ন ভেদ থেকে সনাতন ধর্মকে রক্ষা করা এবং অহিংসার বানী প্রচার করা|নেপালের লুম্বিনী তে শুদ্ধধোন ও মায়াদেবীর সন্তান হিসেবে জন্মে ছিলেন সিদ্ধার্থ |যৌবনে রাজকুমারী যশোধরা দেবীর সাথে বিবাহ হয় সিদ্ধার্থর এক পুত্র ও হয়, নাম রাহুল |কিন্তু তিনি তো সংসার করতে আসেননি তিনি বুদ্ধ, তিনি আবির্ভুত হয়েছিলেন মানুষ কে সংসারের যাবতীয় দুক্ষ, কষ্ট ও মায়া থেকে মুক্তি দিয়ে মহানির্বানের পথ দেখাতে |বুদ্ধর বুদ্ধ হয়ে ওঠার ঘটনাটি ও বেশ রোমাঞ্চকর| যুবক রাজকুমার সিদ্ধার্থ প্রাসাদ থেকে ভ্রমণে বেরোলে, প্রথমে দেখলেন একজন বৃদ্ধ মানুষ তারপর একজন অসুস্থ মানুষ শেষে একজন মৃত মানুষ ও এই সবের পর এক সন্ন্যাসীকে দেখতে পান। এই দিন জীবনের এক চরম সত্য উপলব্ধি করলেন সিদ্ধার্থ, ভোগের রাস্তা ত্যাগ করে বেড়িয়ে পড়লেন ত্যাগের পথে, মুক্তির পথে এবং কঠোর সাধনার পর অবশেষে সিদ্ধি লাভ অর্থাৎ তার বুদ্ধ হয়ে ওঠা এবং বিশ্ববাসীকে মুক্তির পথ দেখানো যে পথে আজ হাটছে কোটি কোটি মানুষ |যদিও বুদ্ধ অবতার নিয়ে কিছু ভিন্ন মতও আছে|সনাতন ধর্ম ও বৌদ্ধ ধর্ম একাধিক বার সংঘাতে জড়িয়েছে বুদ্ধের অবতার তত্ত্ব নিয়ে|আবার বিতর্ক ও হয়েছে বুদ্ধের জীবন দর্শন নিয়ে|তবে শাস্ত্র কে যদি প্রামান্য হিসেবে দেখা হয় তাহলে গৌতম বুদ্ধ নিঃসন্দেহে বিষ্ণুর দশ অবতারের মধ্যে স্বার্থক ও অন্যতম শ্রেষ্ঠ অবতার রূপে স্বীকৃত|পরবর্তী অবতারের কথা নিয়ে ফিরে আসবো যথাসময়ে |চলতে থাকবে আধ্যাত্মিক ও পৌরাণিক বিষয় নিয়ে আলোচনা|যারা জ্যোতিষ সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ বা প্রতিকার চান তারা সরাসরি উল্লেখিত নাম্বারে ফোন করে কথা বলতে পারেন|পড়তে থাকুন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

দশ অবতার রহস্য – বলরাম অবতার

দশঅবতার পর্বে আজ আপনাদের বলরামের কথা বলবো যিনি দ্বাপর যুগে কৃষ্ণের ভ্রাতা ও লীলা সঙ্গী রূপে এসেছিলেন|বলরামের জন্ম বৃত্তান্ত নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন কিছু মত প্রচলিত আছে যদিও শাস্ত্র মতে কৃষ্ণের সত্‍ মা রোহিণীর গর্ভে জন্ম হয় বলরামের। যদিও তিনি ছিলেন আসলে কংসের কারাগারে বন্দি বসুদেব ও দেবকীর সপ্তম গর্ভের সন্তান। কংসের হাত থেকে তাঁকে বাঁচানোর জন্য শ্রীহরি নির্দেশে সপ্তম গর্ভের ভ্রুণ রোহণীর গর্ভে প্রতিস্থাপিত করা হয়। কংসকে জানানো হয় যে দেবকী মৃত সন্তান প্রসব করেছেন। কৃষ্ণের থেকে বলরামের চরিত্র ছোটবেলা থেকেই ভিন্ন। শান্ত প্রকৃতির বলরাম রেগে গেলে মারাত্মক রূপ ধারণ করতেন আবার কৃষ্ণ যেমন কালো, বলরাম ফর্সা। কৃষ্ণের পছন্দ হলুদ বর্ণের কাপড়়, বলরামের পরনে সব সময় নীল বস্ত্র। বলরামের অস্ত্র এক বিশাল লাঙল। তিনি এ কারণে ‘হলধারী’ নামেও পরিচিত। অস্ত্রবিদ্যায় তিনি অত্যন্ত পারদর্শী ছিলেন। ভীম এবং দুর্যোধন তাঁর কাছে গাদচালনা শিখেছিলেন।বলরাম ছিলেন অত্যান্ত বলশালী ও বীর যোদ্ধা|শক্তি ও আধ্যাত্মিকতার মিলন হয়েছে বলে তাঁর নাম বলরাম। অনেকের মতে বিষ্ণুর এক অবতার রামের ছোট ভাই লক্ষ্মণ দ্বাপর যুগে তাঁর বড় ভাই বলরাম হিসেবে জন্মগ্রহণ করেন।পুরাণ মতে বলরাম নীলবস্ত্র পরিহিতা , কনক ভূষনা ,তার অস্ত্র লাঙল বা হাল।তাই তাঁকে” হলধর”ও বলা হয়। কোনো কোনো মূর্তিতে তাঁর হাতে গদা দেখা যায় । শাস্ত্রে তাঁকে বিষ্ণুর দশ অবতাররের মধ্যে অন্যতম অবতার রূপে স্থান দেয়া হয়েছে|তিনি ভগবানের অষ্টম অবতার|মহাভারতের বন পর্বে উল্লেখিত হয়েছে- বলরাম হলেন বিষ্ণুর অবতার এবং অন্যদিকে, কৃষ্ণ হলেন সমস্ত অবতার এবং অস্তিত্বের উৎস।বলরাম স্বতন্ত্র ও স্বাধীনচেতা|মহাভারতে কৃষ্ণের পাণ্ডবদের পছন্দ করলেও বলরাম কিন্তু কৌরবদের প্রতি দুর্বল ছিলেন। ভীমের তুলনায় দুর্যোধন ছিলেন তাঁর প্রিয় ছাত্র। এমনকি নিজের বোন সুভদ্রার সঙ্গে দুর্যোধনের বিয়ে দিতেও চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কৃষ্ণ তা বানচাল করে অর্জুনের সঙ্গে সুভদ্রার বিয়ের ব্যবস্থা করেন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে বলরাম কোনও পক্ষ অবলম্বন না করলেও ভীম যখন অনৈতিক ভাবে দুর্যোধনের ঊরুভঙ্গ করেন, তখন বলরাম এতটাই রেগে যান যে নিজের লাঙল তুলে ভীমকে আক্রমণ করতে উদ্যত হন তিনি। কিন্তু কৃষ্ণের কথায় তিনি নিজেকের সংবরণ করে নেন।বলরাম অবতার আসলে কৃষ্ণের ছায়া সঙ্গী হিসেবে তার সাথে প্রতিটি লীলায় অংশগ্রহন করতে আবির্ভূত হয়েছিলেন|সব দিক দিয়ে স্বার্থক ও সফল তার এই রূপ যা আমাদের বার বার শ্রী রাম ও লক্ষণের কথা মনে করিয়ে দেয়|যদু বংশ ধ্বংসের এবং কৃষ্ণের মৃত্যুর পূর্বে বলরাম দ্বারকার এক বটবৃক্ষের নিচে যোগসমাহিত অবস্থায় কাটান।কিছু শাস্ত্রে উল্লেখ আছে এই সময় বলরামের মুখ থেকে রক্তবর্ণ ও সহস্রমুখ এক সাপ নির্গত হয়ে সমুদ্রে চলে যায়।এরপর তাঁর মৃত্যু ঘটে।এই ঘটনার কারণে অনেকে তাঁকে নাগরাজের শেষ অবতার হিসাবে মান্য করে থাকেন। ইনি রাজা রৈবতের কন্যা রেবতীকে বিবাহ করেছিলেন।রেবতীর গর্ভে তাঁর নিশধ ও উল্মক নামে দুটি পুত্র জন্মায়|বুদ্ধ অবতারের কথা নিয়ে ফিরে আসবো আগামী পর্বে|চলতে থাকবে আধ্যাত্মিক ও পৌরাণিক বিষয় নিয়ে আলোচনা|পড়তে থাকুন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

রাসপূর্ণিমার শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা

আজ সনাতন ধর্মের তথা সারা বিশ্বের বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব, রাস উৎসব বা রাস পূর্ণিমা|আক্ষরিক অর্থে রাস শব্দের আরেক অর্থ অনেকের সঙ্গে একসঙ্গে আনন্দঘন নৃত্যবিশেষ|যদিও রাস শব্দর উৎপত্তি হয়েছেন ‘ রস’ শব্দ থেকে, এখানে রস মানে আনন্দ, দিব্য অনুভূতি, দিব্য প্রেম বা ভক্তি রস|বাংলায় চৈতন্যদেব রাধাকৃষ্ণের রাস উৎসবের সূচনা করেছিলেন নবদ্বীপে|পুরান মতে রাস মূলতঃ শ্রীকৃষ্ণের ব্রজলীলার অনুকরণে বৈষ্ণবীয় ভাবধারায় অনুষ্ঠিত ধর্মীয় উৎসব। ভগবান কৃষ্ণ কার্তিক মাসের এই পূর্ণিমাতেই বৃন্দাবনে রাধা-সহ সখীদের মেতেছিলেন রাসলীলায়, সেই তিথিকেই পালন করা হয়, রাস পূর্ণিমা রূপে,অনেকে মনে করেন, ঈশ্বরের সঙ্গে আত্মার মহামিলনই রাস, চীরহরণের’ পর গোপীদের সঙ্গে শ্রী কৃষ্ণর এই লীলা অনুষ্ঠিত হয়েছিলো বৃন্দাবনে, গোপীরা অধীর অপেক্ষা করছিলো কবে শ্রীকৃষ্ণের কাছ থেকে, তাদের ডাক আসবে, অবশেষে এই পূর্ণিমা তিথিতে কৃষ্ণ তাদের সেই আশা পূর্ণ করেন রাস নৃত্যর মাধ্যমে, একদিক দিয়ে দেখতে গেলে এই উৎসব ভক্ত ও ভগবানের মিলন উৎসব|শ্রীমদ্ভাগবতে একটি বিশেষ অংশ হল রাসলীলা।বিশেষ এই তিথি আরো বিশেষ হয়ে ওঠে যখন রাস পূর্ণিমার সাথে যুক্ত হয়|গ্রহন|এবারের রাস পূর্ণিমা টাই জ্যোতিষ ও তন্ত্র জগতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ|শাস্ত্রে মতে এই তিথিতে রাস উৎসব পালন করুন|রাধাকৃষ্ণর একত্রে পুজো করুন এবং নিজের মনোস্কামনা জানান|যদি পারেন আজকের তিথিতে রাধা কৃষ্ণ বিগ্রহের উদ্দেশ্যে বাঁশি, ময়ুরের পালক অথবা দোলনা নিবেদন করুন|এই দিন গঙ্গা স্নান ও স্বাত্তিক আহার করতে পারলে আরো ভালো হয়|সব রকম তামসিক অভ্যাস থেকে দূরে থাকুন|সবাইকে জানাই রাস পূর্ণিমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন|ফিরে আসবো আগামী পর্বে|পড়তে থাকুন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

দশ অবতার রহস্য – রাম অবতার

ত্রেতা যুগে রাম ভগবান বিষ্ণুর সপ্তম অবতার রূপে জণ্মেছিলেন|তার জন্ম নবমী তিথিতে সেই দিনটি প্রতি বছর পালিত হয় রামনবমী রূপে অর্থাৎ রাম নবমী পালন করার মূল উদ্দেশ্য হল অধর্মকে নিক্ষেপ করে ধর্মকে স্থাপন করা। মন্দ শক্তির বিনাশ করে শুভ শক্তির সূচনা উদযাপন|রাম বিষ্ণুর অবতার, কিন্তু মনুষ্যরূপে জন্ম নিয়ে মানুষকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য তিনি মানবীয় আচরণই করেছেন|রাম-চরিত্রে পরোপকারের বিষয়টি তাঁর বাল্যকাল থেকেই লক্ষ্য করা যায়। তপোবনে এক সময় মুনি-ঋষিরা দানবদের অত্যাচারে যজ্ঞ করতে পারছিলেন না। তখন বিশ্বামিত্রের আহবানে অনুজ লক্ষ্মণসহ রাম সেখানে যান এবং দানবদের হত্যা করে ঋষিদের যজ্ঞক্রিয়া নির্বিঘ্ন করেন।পুত্র হিসেবে পিতার প্রতি এবং রাজা হিসেবে প্রজাদের প্রতি কর্তব্য কি হওয়া উচিত তার চমৎকার দৃষ্টান্ত রাম-চরিত্রে প্রতিফলিত হয়েছে। রামের যেদিন যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত হওয়ার কথা, সেদিন পিতৃসত্য পালন এবং পিতার সম্মান রক্ষার জন্য তিনি স্বেচ্ছায় রাজত্ব ত্যাগ করে চৌদ্দ বছরের জন্য বনবাসে যানভগবান রামের উল্লেখ যে শুধুমাত্র প্রাচীন হিন্দু গ্রন্থে পাওয়া যায় তা নয়, জৈন এবং বৌদ্ধ ধর্ম গ্রন্থেও ভগবান রামের উল্লেখ আছে। বিশ্বের বহু দেশেই রামের মন্দির আছে,ইন্দোনেশিয়ায় রয়েছে পৃথিবীর বৃহত্তম রাম মূর্তি|শ্রী রাম সততার প্রতীক, ত্যাগের প্রতীক,অসত্যর উপর সত্যর জয়ের প্রতীক|রাজ ধর্ম পালন করতে তিনি যে আত্মত্যাগ করেছেনতা এক দৃষ্টান্ত|রাম নামকে বলা হয় কলিযুগের সব অন্ধকারকে দূর করে এগিয়ে যাওয়ার প্রধান অস্ত্র|অযোধ্যার রাজা দশরথ ও তার প্রধান স্ত্রী কৌশল্যার জ্যেষ্ঠপুত্র হলেন রাম। হিন্দুরা রামকে বলেন “মর্যাদা পুরুষোত্তম” অর্থাৎ, “শ্রেষ্ঠ পুরুষ” বা “আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিপতি” বা “গুণাধীশ”পিতৃ আজ্ঞা পালন করতে শ্রী রাম সীতাকে উদ্ধার করে অযোধ্যায় ফিরে আসেন। সেখানে তার রাজ্যাভিষেক হয়। পরে তিনি একজন সম্রাটে পরিণত হন।তার রাজ্যে প্রজারা সুখে, শান্তিতে বাস করত এবং রাজ্যের সমৃদ্ধি ও ন্যায়বিচার অব্যাহত ছিল। এই জন্য রামের শাসনের অনুসরণে সুশাসিত রাজ্যকে “রামরাজ্য” বলার প্রবণতা চালু হয়।অন্যদিকে, রামের ছোটো তিন ভাই লক্ষ্মণ, শত্রুঘ্ন ও ভরতও পবিত্রতা, ভ্রাতৃপ্রেম ও শক্তির আদর্শ।তারাও “মর্যাদা পুরুষোত্তম” ও সপ্তম অবতারের অংশ।পৌরাণিক ও অধ্যাত্মিক বিষয় নিয়ে চলতে থাকবে|আলোচনা|আগামী পর্বে যথা সময়ে ভগবানের পরবর্তী রূপ সহ তার বিশেষ লীলা নিয়ে ফিরে আসবো|দেখতে থাকুন|

দশ অবতার রহস্য – বামন অবতার

বিষ্ণুর মৎস ও কুর্ম অবতারের অবতারের পর আজ বামন অবতার।বামন বিষ্ণুর পঞ্চম অবতার।এবং ত্রেতাযুগে আবির্ভুত বিষ্ণুর প্রথম অবতার।প্রতিটি অবতার এর আগমনের কারন দুষ্টের দমন করে অরাজকতা এবং অন্যায়ের হাত থেকে বিশ্বকে রক্ষা করে ধর্ম ও সত্য কে পুনঃ প্রতিষ্ঠিত করা|ত্রেতা যুগে অত্যাচারী দৈত্যরাজ বলিকে দমন করার জন্য বিষ্ণু বামনরূপে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। পুরাণে তার এই রূপ বামনাবতার নামে পরিচিত।মৎস্য পুরাণের অনুসারে অসুরদের দ্বারা দেবতারা পরাজিত হয়ে আশ্রয়হীন হলে, দেবমাতা অদিতি পুনরায় শক্তিশালী পুত্রের জন্য বিষ্ণুর আরাধনা করেন। আরাধনায় সন্তুষ্ট হয়ে, বিষ্ণু তাঁকে জানান যে, তিনি কশ্যপের ঔরসে অদিতির গর্ভে জন্মগ্রহন করবেন। যথাসময়ে বিষ্ণু বামন রূপে জন্মগ্রহণ করেন|তিনি জন্ম গ্রহণ করেছিলেন ভাদ্র মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বাদশী বা বিজয়া দ্বাদশী তিথিতে, শ্রবণা নক্ষত্রে অভিজিৎ মুহূর্তে। শিশুর জন্মের সাথে সাথে তাঁর দেহের দিব্য দ্যুতিতে কাশ্যপ মুনির আশ্রমের চর্তুদিক আলোয় উদ্ভাসিত হয়|পুরাণ মতে মহামতী রাজা বালী শ্রীহরি ভক্ত প্রহ্লাদের পৌত্র্র এবং বিরোচনের পুত্র ছিলেন। দৈত্যগুরু শুক্রাচার্য্যের আশীর্বাদে পরম শক্তিশালী দৈত্যরাজে পরিণত হন। মহা পরাক্রমশালী রাজা বালী মর্ত্যলোক এবং পাতাল অধিকারের পর স্বর্গের রাজধানী অমরাবতীর সিংহাসনে নিজেকে আসীন দেখার জন্য নানাবিধ পরিকল্পনা করেন|যখন দেবতাদে বিরুদ্ধে লড়তে লড়তে অসুরেরা ক্রমে নিস্তেজ হয়ে পড়ে সেই সময়ের অসুর অধিপতি বলি একটি যজ্ঞের আয়োজন করলে, বামনরূপী বিষ্ণু উক্ত যজ্ঞানুষ্ঠানে গিয়ে ত্রিপাদ-ভূমি অর্থাৎ তিন পা রাখার মতো ভূমি প্রার্থনা করেন।অহংকারী অসুর রাজ বলী বলি সম্মত হয়ে ভূমি দান করলে এবং বামন অবতার রূপে বিষ্ণু তাঁর দেহবর্ধিত করে বিশাল আকার ধারণ করেন। বিষ্ণু স্বর্গে-মর্তে দুই পা রেখে নাভি থেকে তৃতীয় পা বের করেন। এই তৃতীয় পা কোথায় রাখবেন তা বলিকে জিজ্ঞাসা করলে, বলি তাঁর মাথা নত করে তৃতীয় পা রাখার অনুরোধ করেন। বিষ্ণু তৃতীয় পদ বলির মাথায় রাখার সাথে সাথে বলি বিষ্ণুর স্তব করতে থাকেন।ঠিক সেই সময়ে সময় প্রহ্লাদ এসে বলির বন্ধন মুক্তির জন্য অনুরোধ করলে, বিষ্ণু বলিকে মুক্তি দেন এবং বলি তার প্রতিজ্ঞা রক্ষার জন্য বহুকষ্ট স্বীকার করেছেন বলে, বিষ্ণু তাকে ক্ষমা করেন এবং রসাতল বা পাতাল লোক তার বাসের জন্য দান করেন।শুধু তাই নয় শ্রীবিষ্ণু ও রাজা বালীকে আশীর্বাদ করলেন যে তিনি চিরঞ্জিবী হবেন এবং দৈত্যকুলের শ্রেষ্ঠ সম্রাট এবং শ্রীহরির প্রিয়ভক্ত হিসাবে মর্ত্যলোকে পূজিত হবেন|তাই কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের প্রতিপদ তিথিতে বা বালী প্রতিপদ তিথিতে প্রতি বছর রাজা বালীর পূজা হয়|যথা সময়ে আবার আগামী পর্বে ভগবানেরপরবর্তী অবতার এবং তার বিশেষ লীলা নিয়ে ফিরে আসবো|চলতে থাকবে এই পৌরাণিক আলোচনা|যারা জ্যোতিষ পরামর্শ বা প্রতিকার সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলতে চান সরাসরি ফোন করুন উল্লেখিত নাম্বারে|পড়তে থাকুন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

দশ অবতার রহস্য – পরশুরাম

দশ অবতার পর্বে আজ পরশুরাম ও পরশুরাম অবতারের কথা বলবো|পুরাণ অনুযায়ী বিশ্বে শান্তি আনতে ধরিত্রিকে ২১ বার ক্ষত্রিয়শূন্য করেছিলেন বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরাম তবে নিজের মাতৃ হত্যার জন্যও তিনি সমালোচিত|তার কর্ম কাণ্ডের সাথে জড়িত তার বিখ্যাত কুঠার যার কথা আমি আগে আলাদা করে বলেছি|ঋষি জমদগ্নি ও স্ত্রী রেণুকার পাঁচ সন্তান। বসু, বিশ্বাসবসু, বৃহৎ-ভানু, বৃহৎ-কণ্ব ও পরশুরাম। পরশুরাম ছিলেন তাদের কনিষ্ঠ সন্তান। শাস্ত্রে পরশুরামের জন্ম নিয়ে নানা কাহিনী প্রচলিত রয়েছে। ভাগবত পুরাণ অনুসারে, একসময় সমাজে ক্ষত্রিয় রাজাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি খুবই বেড়ে যায়। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে সকলে ব্রক্ষা ও বিষ্ণুর কাছে অভিযোগ জানায়। ক্ষত্রিয়দের শায়েস্তা করার জন্য ব্রহ্মা ও বিষ্ণুর বরে পরশুরাম জন্মগ্রহণ করেন।তিনি বিষ্ণুর অবতার রূপেই এসেছিলেন|পরশুরাম ব্রাহ্মণ ঘরে জন্মগ্রহণ করলেও কর্মে তিনি হয়েছিলেন ক্ষত্রিয়। তিনিই প্রথম যোদ্ধা ব্রাহ্মণ।মহাদেবকে তুষ্ট করে পরশু অর্থাৎ কুঠার অস্ত্রটি লাভ করেন। সেই থেকে তার নাম হয় পরশুরাম। তার প্রকৃত নাম ছিল রাম। মহাদেবের নির্দেশে এ অস্ত্র দিয়ে তিনি অনেক অসুর নিধন করেন। ধীরে ধীরে তিনি হয়ে উঠলেন এক পরাক্রমশালী যোদ্ধা এবং অমর ও অজেয়| জমদগ্নি একবার নিজ স্ত্রীর উপর ক্ষুব্ধ হয়ে পুত্রকে মাতৃ হত্যার আদেশ দিলেন|পরশুরাম পিতৃ আজ্ঞা পালন করেন ও কুঠার দিয়ে মাতৃহত্যা করলেন এই পাপে তার কুঠার তার হাতে সংযুক্ত হয়ে যায়|পরবর্তীতে পুত্রের কাজে জমদগ্নি খুশি হয়ে তাকে বর প্রার্থনা করতে বলেন এবং অন্য সন্তানদের অভিশাপ দেন। পরশুরাম মায়ের পুনর্জন্ম, মাতৃহত্যাজনিত পাপ ও মাতৃহত্যা স্মৃতি বিস্মৃত হওয়া, ভাইদের জড়ত্বমুক্তি, নিজের দীর্ঘায়ু ও অজেয়ত্বের বর প্রার্থনা করেন। জমদগ্নি তাঁকে সবগুলো বরই প্রদান করেন এবং ব্রহ্মকুণ্ডে স্নান করার পর হাত থেকে কুঠার বিচ্ছিন্ন হয়েছিল পরশুরামের|ক্ষত্রিয়দের হত্যা করে তাদের রক্ত দিয়ে তিনি সমস্তপঞ্চক প্রদেশের পাঁচটি হ্রদ পূর্ণ করেন।তার সব কর্মকান্ড সম্পাদিত হয়েছিলো তার অস্ত্র কুঠারের মাধ্যমে|পরশুরাম ও তার কুঠার যেনো বীরত্বের প্রতিশব্দ|সনাতন ধর্ম শাস্ত্র গুলিতে অন্যতম আলোচিত ও শক্তিশালী অস্ত্র পরশুরামের বিখ্যাত কুঠার যা অন্যতম শক্তিশালী প্রাচীনতম পৌরাণিক অস্ত্র|শাস্ত্রে যে কজন অমরত্বের অধিকারী হয়েছেন, তাদের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও বর্ণময় এক চরিত্র হলেন পরশুরাম। রামায়ণ ও মহাভারতেও পরশুরামের কথা উল্লেখ রয়েছে।পরবর্তী পর্বে যথারীতি অন্য একটি অবতার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো|পড়তে থাকুন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

দশ অবতার রহস্য – নৃসিংহ দেব

বিগত পর্বে আপনাদের বলেছি বিষ্ণু বরাহ অবতারে হিরণ্যাক্ষ নামে এক রাক্ষসকে বধকরেন ও পৃথিবীকে রক্ষা করেন এই হিরণ্যাক্ষের ভাই হিরণ্যকশিপু স্বাভাবিক ভাবেই প্রবল বিষ্ণুবিদ্বেষী হয়ে ওঠেন। তিনি বিষ্ণুকে হত্যা করার পথ খুঁজতে থাকেন।তিনি বহু বছর ব্রহ্মার কঠোর তপস্যা করেন। ব্রহ্মাও হিরণ্যকশিপুর তপস্যায় সন্তুষ্ট হন। তিনি হিরণ্যকশিপুর সম্মুখে উপস্থিত হয়ে তাঁকে বর দিতে চান। হিরণ্যকশিপু বলেন, আপনি আমায় এমন বর দিন যে বরে আপনার সৃষ্ট কোনো জীবের হস্তে আমার মৃত্যু ঘটবে না, আমার বাসস্থানের অন্দরে বা বাহিরে আমার মৃত্যু ঘটবে না, দিবসে বা রাত্রিতে, ভূমিতে বা আকাশে আমার মৃত্যু হবে না, শস্ত্রাঘাতে, মনুষ্য বা পশুর হাতে আমার মৃত্যু হবে না,।বাধ্য হয়ে ব্রম্হা তাকে ইচ্ছা মতো বর দেন|অত্যাচারি রাজা হিরণ্য কশিপু কে বধ করে অধর্মের উপর ধর্ম কে প্রতিষ্ঠা করতে বিষ্ণু অবতার নৃসিংহ দেব পৃথিবীতে অবতীর্ন হয়ে ছিলেন |তিনি বিষ্ণুর চতুর্থঅবতার|সাধারণত দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের অন্যতম প্রতীক তিনি, তিনি বীরত্ব ও শৌর্যর ও প্রতীক তাই প্রাচীন কাল থেকে রাজারা বা শাসক রা তার উপাসনা করে আসছেন|পরবর্তীতে হিরণ্য কশিপুর পুত্র প্রহ্লাদ হয়ে ওঠেন পরম বিষ্ণুভক্ত।এতে তাঁর পিতা হিরণ্যকশিপু অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। ক্রমে প্রহ্লাদের বিষ্ণুভক্তিতে হিরণ্যকশিপু এতটাই ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত হন যে তিনি নিজ পুত্রকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। বিষ্ণু স্বয়ং নৃসিংহ অবতারে হিরণ্য কশিপুরকে বধ করে প্রহ্লাদকে রক্ষা করেন|দেবতা মানুষ বা পশু হলে হবেনা কারন ব্রহ্মার বর হিরণ্য কশিপুর কে রক্ষা করবে তাই নৃসিংহ পরিপূর্ণ দেবতা, মানব বা পশু নন; হিরণ্যকশিপুকে দিবসে বা রাত্রিতে বধ করা যাবে না, তাই নৃসিংহ দিন ও রাত্রির সন্ধিস্থল গোধূলি সময়ে তাঁকে বধ করেন; হিরণ্যকশিপু ভূমিতে বা আকাশে কোনো শস্ত্রাঘাতে বধ্য নন, তাই নৃসিংহ তাঁকে নিজ জঙ্ঘার উপর স্থাপন করে নখের আঘাতে হত্যা করেন; হিরণ্যকশিপু নিজ গৃহ বা গৃহের বাইরে বধ্য ছিলেন না, তাই নৃসিংহ তাঁকে বধ করেন তাঁরই নিজের গৃহদ্বারে।নৃসিংহ দেবের হাতে হিরণ্য কশিপুর বধ হলো কিন্তু নৃসিংহদেবের ক্রোধ কম হল না। তিনি ভয়ানক ধ্বংসলীলা চালিয়ে যেতে থাকেন। এই সময়ে সব দেবতারা একসাথে শিবের শরণ নেন। তাঁরা বুঝতে পারেন, একমাত্র মহাদেবই পৃথিবীকে রক্ষা করতে পারেন। শিব বীরভদ্র ও ভদ্রকালীকে প্রেরণ করেন নৃসিংহকে থামানোর জন্য। কিন্তু মহাপ্রতাপ নৃসিংহ সেই দুই মহাশক্তিকেও বিপর্যস্ত করে ফেলেন। এমতাবস্থায় মহাদেব নিজেই শরভ নামের এক বিচিত্রদর্শন প্রাণীর রূপ নিয়ে আবির্ভূত হন।শরভ এক সুবিশাল পাখি। তাঁর সহস্রবাহু এবং পশুর মতো দেহ|নৃসিংহ ও শরভ অবতারের মধ্যে ভয়ানক যুদ্ধ হয়|শরভের আঘাতে নৃসিংহ আত্মসংবরণ করেন। শরভই শেষ করেন নৃসিংহের লীলা।নৃসিংহ দেবের ক্রোধ থেকে রক্ষা পায় সৃষ্টি |শিব নিজে একজন পরম বৈষ্ণব এবং নৃসিংহ দেব স্বয়ং বিষ্ণু| ভক্তের দ্বারা ভগবানের বধ বা ভক্ত এবং ভগবানের যুদ্ধ সনাতন ধর্ম শাস্ত্রের অতি বিরল ঘটনা|এই যুদ্ধ ও দুর্লভ অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায় নৃসিংহ পুরান ও শিব পুরানে |আগামী পর্বে যথা সময়ে ভগবানের পরবর্তী রূপ সহ তার বিশেষ লীলা নিয়ে আবার ফিরে আসবো|চলতে থাকবে এই পৌরাণিকআলোচনা|পড়তে থাকুন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

দশ অবতার রহস্য – বরাহ অবতার

দশ অবতার পর্বে আজ ভগবানের বরাহ অবতারের কথা লিখবো |নাম থেকেই বোঝা যায় যে এই অবতারে বিষ্ণু বন্য শূকরের রূপ ধারণ করেছিলেন। পুরাণ বলে, তিনি হিরণ্যাক্ষ নামক রাক্ষসের হাত থেকে ভূদেবী অর্থাৎ পৃথিবীকে উদ্ধার করতে বরাহর রূপ ধারণ করেন|অত্যাচারী অসুর রাজ হিরণ্যাক্ষ পৃথিবীকে মহাজাগতিক সমুদ্রের তলায় লুকিয়ে রেখেছিলেন নিজ স্বার্থে তাকে ব্যবহার করতে ও নিজের অহংকার ও দম্ভ কে প্রকাশ করতে|যদিও পৃথিবীর মহা সমুদ্রে পতিত হওয়ার আরো একটি কারন শাস্ত্রে উল্লেখ আছে|কোনো একটি সময়ে যম রাজের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে ছিলেন স্বয়ং শ্রী হরি|পৃথিবীতে সেই সময় শুধুই জন্ম ছিলো মৃত্যু ছিলোনা|অতিরিক্ত প্রাণী কুলের সম্প্রসারণ যে চাপ সৃষ্টি করে ছিলো তার ফলেই অন্ধকার সাগরের অতলে তলিয়ে যায় পৃথিবী|পৃথিবীকে স্ব মহিমায় পুনপ্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে আবির্ভাব হয় বরাহ অবতারের|তার এই কাজে প্রধান বাঁধা হয় অসুর রাজ হিরনাক্ষ|যিনি মহা সমুদ্রে নিমজ্জিত পৃথিবীকে অধিকার করে বসেছিলেন|বিষ্ণু বরাহর বেশ ধারণ করে এক হাজার বছর ধরে হিরণ্যাক্ষের সঙ্গে যুদ্ধ করে তাকে পরাজিত ও নিহত করেন তারপর পৃথিবীকে অন্ধকার সমুদ্রের তলা থেকে উদ্ধার করেন।শাস্ত্রে বর্ণনা আছে কিভাবে বরাহ দেব তার বিশাল দাঁত দিয়ে পৃথিবীকে জলের উপর তুলে ধরলেন । পৃথিবী রক্ষা পেল ।বরাহ রূপে শ্রীবিষ্ণু দৈত্যরাজ হিরণ্যাক্ষকে হত্যা করে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন ।পুরান অনুসারে ভগবান বিষ্ণু বরাহ অবতারে ভূদেবী বা পৃথিবী কে পত্নী হিসাবে গ্ৰহণ করেন।বরাহ পুরানে বরাহ অবতারের রূপের উল্লেখ আছে|বরাহ অবতারের চারটি হাত, চার হাতে শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্ম-ত্রিশূল এবং বরাহদন্তে ধরা থাকে পৃথিবী।বরাহ দেব সৃষ্টিশীলতা ও ন্যায়ের প্রতিক রূপে পূজিত হন|দশ অবতারের আগামী পর্বে ভগবানেরপরবর্তী অবতার এবং তার বিশেষ লীলা নিয়ে ফিরে আসবো|পড়তে থাকুন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

জগদ্ধাত্রী পূজোর শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন

বাংলায় জগদ্ধাত্রী পুজো শুরুর ইতিহাস নিয়ে আপনাদের আগেই বলেছি|আজ জগদ্ধাত্রী পূজোর শাস্ত্রীয় ও পৌরাণিক তাৎপর্য আপনাদের জানাবো|শাস্ত্র মতে মা দুর্গা মর্ত্য থেকে কৈলাসে ফিরে যাওয়ার পর আবার মর্ত্যে ফেরেন দেবীজগদ্ধাত্রী রূপে।পুরান মতে মা দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করার পর দেবতারা আবার নিজেদের পুরানো গর্বে অভিভূত অবতারে ফিরে যান। নিজেদের ক্ষমতার অহংয়ে তারা আবার অন্ধ হয়ে পড়েন। যেন তাঁরাই দণ্ডমুণ্ডের কর্তা, তাঁরা ছাড়া আর কারও কোনও শক্তিই নেই আর কী!দেবতাদের এই অহংকার দেখে ভারী ক্রুদ্ধ হয়ে যান ব্রহ্মা। তিনি যক্ষরূপ ধারণ করে দেবতাদের একে একে ডেকে পাঠান। একটি সামান্য ঘাসকে রেখে তিনি পবনদেবকে বলেন তা নিজ ক্ষমতায় সরিয়ে দেখাতে। পবনদেব হাজারো চেষ্টার পরেও বিফল হন। এরপর বরুনদেবকে ডেকে পাঠানো হয় এবং বলা হয় ঘাসটিকে ভিজিয়ে দেখাতে। তিনিও অসফল হন। তারপরে ডাক পরে অগ্নিদেব, তিনিও ঘাসটিকে জ্বালাতে সক্ষম হন না।এই ভাবে দেবতাদের অহংকার চূর্ণ হয়|প্রত্যেক দেবতা একে একে অসফল হওয়ার পরে আসেন ব্রহ্মা। এবং তিনি দেবতাদের বোঝান যে সবার ওপরে পরম ব্রহ্মই সত্যি। তাহার ওপর কেহ না। তিনি সৃষ্টি কর্তা|তিনি আরও বলেন, দেবতাই হোক কিংবা মানব অথবা দৈত্য, এই জগতে সবচেয়ে বড় একটি অসুরের বিরুদ্ধে তাঁদের লড়াই করতে হবে আর সেটি হল তাঁদের মানসিক অহংয়ের অসুর।করিন্দ্রাসুর আসলে এই অহং বোধের প্রতিফলন|আর এই অসুরকে বধ করতেই পরম ব্রহ্ম যে দেবীর রূপ নেন, তিনিই জগদ্ধাত্রী। সেই দেবীর আরাধনা হয় এই শুক্লা নবমী তিথিতে|আজ আপনাদের সবাইকে জগদ্ধাত্রী পুজোর শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন|দশ অবতার রহস্য নিয়ে আবার ফিরে আসবো যথা সময়ে|ভালো থাকুন|পড়তে থাকুন|ধন্যবাদ |

দশ অবতার রহস্য – কুর্ম অবতার 

ভগবানে বিষ্ণুর কুর্ম অবতারের আবির্ভাব নিয়ে দুটি পৌরাণিক ব্যাখ্যা আছে|দুটোই আজ সংক্ষেপে আপনাদের বলবো|প্রথম ব্যাখ্যা অনুসারে পাতালবাসী অসুরেরা একবার দেবতাদের পরাজিত করে স্বর্গরাজ্য দখল করে । তখন ব্রহ্মদেব ও ইন্দ্র নিপীড়িত দেবতাদের সঙ্গে নিয়ে শ্রীবিষ্ণুর কাছে গেলেন । অসুরদের অত্যাচারের কথা বললেন । শ্রীবিষ্ণু দেবতাদেরকে অসুরদের সঙ্গে নিয়ে ক্ষিরােদ সাগর মন্থনের পরামর্শ দিলেন । তিনি বললেন , সাগর মন্থনের ফলে যে অমৃত উঠে আসবে , তা পান করে দেবতাগণ অসুরদের পরাজিত করার শক্তি ফিরে পাবেন|দ্বিতীয় ব্যাখ্যা অনুসারে দুর্বাশা মুনির দেয়া মালা ইন্দ্রের ঐরবত দ্বারা অবহেলিত হওয়ায় রেগে গেলেন দুর্বাশা মুনি এবং ইন্দ্র কে অভিশাপ দিলেন দেবতারা তাদের শক্তি হারাবে, শ্রীহীন হয়ে যাবে এই স্বর্গরাজ্য।শ্রীহীন, সৌন্দর্য্যহীন, লক্ষ্মীহীন হয়ে পড়বে স্বর্গ।উপায় না দেখতে পেয়ে সমস্ত দেবতাগণ প্রজাপতি ব্রহ্মার শরণাপন্ন হলেন|প্রজাপতি বললেন সমুদ্র মন্থন করে অমৃতকে বের করে নিয়ে আস্তে হবে।কিন্তু দেবতাদের একার পক্ষে সমুদ্র মন্থন করা সম্ভব নয়।অমৃতের সমান বন্টনে ঠিক করা হয় দেব-অসুর উভয় মিলে সমুদ্র মন্থন করবে।দুটি ক্ষেত্রেই সমুদ্র মন্থনের কথা বলা হয়|ভগবান বিষ্ণু এই সমুদ্র মন্থনের কাজ সুসম্পন্ন করার জন্য এক বিরাট কচ্ছপের অবতারে আবির্ভুত হয়েছিলেন।যা তার কূর্ম অবতার রূপে জগৎ বিখ্যাত ।তার ওই বিরাট পৃষ্ঠদেশের ওপরে তিনি সমুদ্রমন্থনের সময় মন্দার পর্বতকে ধরে রাখেন।বাসুকি নাগ কে ব্যবহার করা হয় মন্থনের রজ্জু বা দড়ি রূপে|তারপর একে একে বিষ্ণুদেবের রাগিনী শক্তি অর্থাৎ পরমাপ্রকৃতি শ্রীলক্ষ্মী উঠে এলেন।বাসুকী নাগের শরীর মন্দার পর্বতে ঘর্ষণের ফলে যে বিষ উঠে এসেছিলো তা স্বয়ং মহাদেব পান করেছিলেন এবং নীলকণ্ঠ হয়ে সারা জগৎকে এই বিষের প্রভাব থেকে রক্ষা করেছিলেন।তৎপরবর্তীতে ধন্বন্তরি আবির্ভুত হয়েছিলেন অমৃত ভাণ্ড নিয়ে।সেযাত্রায় অমৃত পান করে দেবতারা রক্ষা পেয়েছিল অসুর দের হাত থেকে|জ্যোতিষ শাস্ত্রে এই কঠিন কর্মের সাথে শনিদেবের সম্পর্ক স্থাপন করা হয়। কূর্ম অবতারের বন্দনায় গ্রহ রাজ শনিগ্রহের শুভ ফল প্রাপ্ত হয়।হিন্দুধর্মে কূর্ম হল বিষ্ণুর দ্বিতীয় অবতার|মৎস অবতারের মত এটিও সত্যযুগের অবতার ।শ্রী বিষ্ণুর কূর্ম অবতারের জন্য উৎসর্গীকৃত মন্দির হল অন্ধ্রপ্রদেশের চিত্তুর জেলার কুর্মাই মন্দির তাছাড়া শ্রীকুর্মাম মন্দির ও বেশ জনপ্রিয়|যথা রীতি আগামী পর্বে ভগবানেরপরবর্তী অবতার এবং তার বিশেষ লীলা নিয়ে ঠিক সময়ে ফিরে আসবো|চলতে থাকবে এই পৌরাণিক আলোচনা|পড়তে থাকুন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|