ভক্তের ভগবান – সাধক কমলাকান্ত এবং মা কালী

92

ভক্তের ভগবান

 

সাধক কমলাকান্ত এবং মা কালী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

বাংলার মাতৃ সাধকদের মধ্যে সাধক কমলা কান্ত ছিলেন মাকালীর সাক্ষাৎ বরপুত্র। একাধিক বার তাকে নানা বিপদ থেকে স্বয়ং মা কালী রক্ষা করেছেন। আজ এই মহান কালী ভক্ত এবং তার জীবনে মা কালীর ঘটানো কিছু অলৌকিক ঘটনার কথা জানাবো।

 

কমলাকান্তের জন্মস্থান বর্ধমান জেলার গঙ্গাতীরস্থ অম্বিকা কালনা। মাতার নামা মহামায়া, পিতার নাম মহেশ্বর। দশ বছর বয়সে তাঁর পিতৃবিয়োগ হয়। বালক কমলাকান্ত সুগায়ক ছিলেন এবং রামপ্রসাদের গানে বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন। তিনি মাঠে ঘাটে আপনমনে গান গেয়ে বেড়াতেন। শোনা যায়, একদিন রাত্রে গঙ্গাতীরের শ্মশানের অন্ধকারে আত্মমগ্ন হয়ে গান গাইবার সময় এক অশরীরী তান্ত্রিক কাপালিক তাঁকে কালীনামে দীক্ষা দিয়ে যান এবং সেই মন্ত্র জপ করতে করতে সেখানেই আনন্দময়ী নৃত্যরতা শ্যামা মায়ের দর্শন পান।

 

বর্ধমানের মহারাজ তেজ চাঁদ কমলাকান্তের গানে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে সভা পণ্ডিত করে বর্ধমান রাজবাড়িতে নিয়ে যান।মহারাজ তেজচাঁদ কমলাকান্তকে এই কালীমন্দির গড়ে দেন। এখানেই সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেন সাধক কমলাকান্ত।

 

তার তন্ত্র এবং অলৌকিক ক্ষমতা জানতে মহারাজ তেজ চাঁদ অমাবস্যার রাতে তার কাছে চাঁদ দেখতে চেয়েছিলেন। কমলাকান্ত তাকে চাঁদ দেখিয়ে ছিলেন।

 

একদিন রাজা জানতে পারেন কাজকর্ম ভুলে মদ্যপান করছেন কমলাকান্ত। রাজা সেখানে পৌঁছে ক্ষোভ প্রকাশ করলে কমলাকান্ত কমণ্ডলু থেকে রাজার হাতে ঢেলে দেন সুরা। কমলাকান্তের অলৌকিক ক্ষমতায় সেই সুরা পরিণত হয় দুধে।

 

মা কালীর মূর্তির প্রাণ রয়েছে দাবি করেছিলেন কমলাকান্ত। রাজা প্রমাণ চাইলে প্রতিমার পায়ে বেল কাঁটা ফুটিয়ে দেন কমলাকান্ত। রাজা দেখেন সেই ক্ষতস্থান থেকে রক্ত ঝরছে।এমনই ছিলো তার ভক্তি এবং তার আরাধ্যা মা কালীর সাথে তার সম্পর্ক।

 

দেহত্যাগের সময় কমলাকান্তকে গঙ্গায় নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন রাজা। কমলাকান্ত যেতে চাননি। তারপরই দেখা যায় মাটি ভেদ করে উঠে জলের ধারা পড়ছে কমলাকান্তের মুখে। কমলাকান্ত নিজে যেতে না চাওয়ায় মা গঙ্গা এসেছিলেন তাঁর কাছে।

আজও সেই স্থান সংরক্ষিত আছে।

 

আগামী দিনে আরো অনেক ভক্ত এবং তাদের কর্মকান্ড নিয়ে ফিরে আসবো। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।