ভক্তের ভগবান – শ্রী কৃষ্ণ এবং মীরা বাই

83

ভক্তের ভগবান – শ্রী কৃষ্ণ এবং মীরা বাই

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

শ্রী কৃষ্ণ প্রেমের প্রতীক হিসেবে সারা বিশ্বে মীরা বাই এক পরিচিত নাম। তাকে নিয়ে লেখা হয়েছে অসংখ্য ভজন। বহু গান এবং কবিতা। আজকের পর্বে এই মহান ক্রিস ভক্ত এবং তার ভক্তি

প্রসঙ্গ নিয়ে লিখবো।

 

রাজস্থানের একটি রাজপুত পরিবারে রাজা রতন সিং এবং বীর কুমারীর ঘরে 1498 সালে মীরা বাই জন্মগ্রহন করেছিলেন। শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন আধ্যাত্মিক প্রকৃতির এবং তার কণ্ঠে ছিলো অদ্ভুত সুর। ভক্তি গীতি গাইতে পারতেন এবং ভজন তৈরী করতে পারতেন।

 

চার বছর বয়সে তিনি তার মাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে তার বর কে হবে? তার মা মজা করে শ্রী কৃষ্ণের মূর্তির দিকে ইঙ্গিত করে বলেছিলেন যে তিনিই তার বর হবেন।

 

সেই মুহূর্ত থেকে মীরা শ্রী কৃষ্ণের প্রেমে হারিয়ে যান তিনি যখন বড় হচ্ছিলেন তিনি বিশ্বাস করেছিলেন যে শ্রী কৃষ্ণ তাকে বিয়ে করতে চলেছেন। মনে মনে তিনি তার আরাধ্য কৃষ্ণকে প্রেমিক বা স্বামী হিসেবে চেয়ে ছিলেন।

 

পরবর্তীতে তার বিয়ে হয় মেওয়ারের রানা সাঙ্গার সাথে। যদিও তিনি বিয়ে করতে চাননি কারণ তিনি শ্রী কৃষ্ণকে তার স্বামী বলে মনে করেন কিন্তু তিনি তার পরিবারের পীড়াপীড়িতে বিয়ে করেছিলেন। বিবাহিত হওয়ার পরেও কৃষ্ণের প্রতি তার ভালবাসা কমেনি এবং তিনি তার কৃষ্ণ মূর্তিটিকে তার স্বামীর বাড়িতে নিয়ে যান।দিন রাত তিনি কৃষ্ণ প্রেমেই ডুবে থাকতেন।

 

সংসারের মীরা তার দৈনন্দিন সব কাজ শেষ করে প্রতিদিন শ্রী কৃষ্ণের মন্দিরে যেতে শুরু করে।তিনি শ্রীকৃষ্ণের পূজা করতেন এবং তার সুরেলা কণ্ঠে ভজন গাইতেন। এটা দেখে তার শাশুড়ি চিন্তিত হয়ে পড়েন এবং কৃষ্ণের পরিবর্তে

তাকে কালী মাতার পূজা করতে বলেন।

 

মীরা তা করতে অস্বীকার করেন এবং তাদের জানান যে তিনি ইতিমধ্যেই কৃষ্ণকে তার

জীবন উৎসর্গ করেছেন। ধীরে ধীরে ভক্ত মীরা এবং তার ভগবানের মধ্যে প্রাচীর তৈরী করার চেষ্টা শুরু হয়। তার কৃষ্ণ প্রেম নিয়ে সংসারে অশান্তি দেখা দেয়। তা এতটাই চরমে পৌছায় যে মীরা বাইকে হত্যার চেষ্টা করা হয়।

 

একবার তাকে হত্যা করার জন্য সাপ সহ একটি মালা পাঠানো হয় কিন্তু ঝুড়িটি খুললেই মীরা বাই মালাগুলির মধ্যে একটি কৃষ্ণের মূর্তি দেখতে পান।

 

মীরাকে হত্যা করার জন্য আরও বেশ কয়েকটি প্রচেষ্টা করা হয়েছিল কিন্তু কৃষ্ণ সর্বদা তাকে রক্ষা করেছিলেন। এক সময় প্রসাদ আকারে তাকে বিষ খাওয়ানো হয় এই বলে যে এটা কৃষ্ণের প্রসাদ। যদিও তিনি জানতেন যে এটি বিষ ছিল কিন্তু তবুও তিনি এটি খেয়েছিলেন এবং শ্রীকৃষ্ণের দ্বারা সেই বিষটি অমৃতে পরিণত হয়েছিল।

 

এরপর মীরা তুলসীদাসকে চিঠি লিখে তার মতামত জানতে চান। এর জবাবে তুলসীদাস বললেন শুধুমাত্র ঈশ্বরের জন্য ভালবাসা বাস্তব এবং অন্য সব সম্পর্ক এই প্রেমের কাছে তুচ্ছ।

এরপর মীরা কৃষ্ণের চরণে নিজেকে সম্পূর্ণ

ভাবে উৎসর্গ করতে দ্বারকা চলে যান।

 

মীরা বাইয়ের অন্তর্ধান ও বেশ অলৌকিক মনে করা হয় মীর বাইয়ের আত্মা চিরকালের জন্য শ্রী কৃষ্ণের মূর্তিতে বিলীন হয়েছিল।

 

আবার এক ভক্ত এবং তার ভক্তির কথা নিয়ে আগামী পর্বে ফিরে আসবো। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।