Home Blog Page 3

কালী কথা – বর্ধমানের সিধুমার পুজো 

কালী কথা – বর্ধমানের সিধুমার পুজো

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

বর্ধমানের কোলসরা গ্রামের একমাত্র আরাধ্যা দেবী সিধু মা। এই দেবী এখানে এতটাই প্রসিদ্ধ এবং জাগ্রত যে অন্য অন্য দেবীর পুজোর এখানে এক প্রকার নিষিদ্ধ বলা যায়। সিধুমার প্রতি স্থানীয়দের ভয় এবং ভক্তি এতটাই বেশি যে পুজো তো দূরস্ত, সোশ্যাল মিডিয়ায় দেবী কালীর ছবি দেখলেও মুছে দেওয়া হয় এই গ্রামে!

পঞ্জিকাতেও লাল কালি দিয়ে মা কালীর নাম কেটে দেওয়া হয়। আজকের কালী কথা এই

সিধু মাকে নিয়ে।

 

দেবী এই স্থানে সিদ্ধেশ্বরী রূপে বিরাজ করছেন যাকে সবাই সিধুমা বলেই ডাকেন।এই সিধুমা দেবী কালীরই একটি রূপ ।দেবী খড়্গহস্তা, অসুরের মুণ্ডহাতে এবং মুণ্ডমালিনী।

 

এই দেবীর পুজো মূলত ঘোষাল বাড়ির কালীপুজো নামেই পরিচিত ছিলো পরে এই পুজো সমস্ত এলাকা বাসি আপন করে নেয়। আজ এই সিধুমা সমগ্র এলাকার একমাত্র আরাধ্যা দেবী হয়ে গেছেন।

 

গ্রামবাসীরা মনে করেন অন্য কোনো দেবী পূজায় সিধু মা রুষ্ট হতে পারেন। সেই ভয়ে পূজিতা হয় না অন্য কোনো দেবী। গ্রামের কোনো বাড়িতেই ছবি, ক্যালেন্ডারে কিংবা মূর্তিতে কালীর ছবি কেউ রাখেন না। পাঁচ শতাব্দী ধরে এই প্রথা

চলে আসছে কোলসরায়।

 

এই পুজোর ইতিহাস অতী প্রাচীন এবং পুজোর সাথে জড়িত আছে সম্রাট শের শাহর নাম।

জনশ্রুতি আছে পাঁচশো বছর আগে ঘোষাল পরিবারের দিগম্বর ঘোষাল সম্রাট শের শাহের নির্দেশে গ্রাণ্ড ট্রাঙ্ক রোড বা বর্তমানের জি টি রোড তৈরীর কাজ দেখাশোনা করতে আসেন এখানে তিনি সেই সময়ে এই অঞ্চলে দিয়ে বয়ে যাওয়া কংস নদীর তীরে একদিন রাত কাটান। সেইদিনই দেবী সিদ্ধেশ্বরী তাঁকে স্বপ্নাদেশ দিয়ে প্রতিষ্ঠা মন্দির করার নির্দেশ দেন। পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দিগম্বর ঘোষাল তাঁর স্বপ্নাদেশের কথা জানান সম্রাট শের শাহকে। শের শাহের দান করা পাঁচশো বিঘা জমিতে এই কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়।

 

সেই থেকে দেবী এই স্থনের একমাত্র স্বীকৃত

এবং রক্ষাকত্রী দেবী রূপে অধিষ্ঠান করছেন।

 

ফিরে আসবো কালী কথা নিয়ে আগামী পর্বে। থাকবে এমনই এক ঐতিহাসিক কালী পুজো নিয়ে আলোচনা। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী কথা – ইন্দ্রগাছার বামা কালীর পুজো 

কালী কথা – ইন্দ্রগাছার বামা কালীর পুজো

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

বীরভূমের ইন্দ্রগাছা গ্রামের কালীপুজো আলাদা ঐতিহ্য বহন করে। এখানকার কালী পুজোর এক সমৃদ্ধ ইতিহাস আছে অনেক জনশ্রুতি। সেসব নিয়েই আজকের কালী কথা।

 

এই গ্রামে বাস করতেন রাম কানাই।কথিত আছে হরকুনার গভীর জঙ্গলে সাধনা করতে গিয়ে মায়ের সাক্ষাৎ পান সাধক রামকানাই। মায়ের জীবন্ত সাক্ষাৎ সেই রূপ তিনি একটি থালায় এঁকে নেন। জীবন্ত মায়ের সেই রূপের ছবি দেখে বানানো হয় মায়ের মৃন্ময়ী মূর্তি যা পরবর্তীতে মূর্তি বানিয়ে মন্দিরে স্থাপন করে শুরু হয় পুজো।

 

এই মন্দিরের প্রধান দুটি আকর্ষণ হলো সাধক রাম কানাইয়ের লেখা দুর্বধ্য ভাষায় লেখা একটি প্রাচীন পুঁথি যে পুঁথিতে আছে অনেক প্রাচীন উপাচার এবং পূজা পদ্ধতি এবং সেই থালা যে থালায় মায়ের জীবন্ত রূপ দেখে ছবি এঁকেছিলেন।

 

এই কালী কে বামা কালী নাম ডাকেন সবাই। দীপান্বিতা অমাবস্যা বা দীপাবলী এই মন্দিরের প্রধান উৎসব। ইন্দ্রগাছার এই বামাকালী প্রায় পাঁচশো বছর ধরে পুজিত হয়ে চলেছে। প্রায় তেরো ফুটের এই বামকালীর গায়ের রং ও চক্ষুদান করা হয় পুজোর দিনেই প্রাচীন প্রথা মেনে। গায়ের রং করা হয় কাঠে আগুন জ্বালিয়ে তৈরি ভুসোকালি থেকে। আজও এই ক্ষেত্রে কৃত্তিম উপায়ে তৈরী রঙ ব্যাবহার হয়না।

 

প্রতি বছর কালী পুজোর দিন মধ্যরাতে মূর্তিকে চল্লিশ ফুট বড় লাল কাঠের ওপর চাপিয়ে কাঁধে করে নিয়ে আসা হয় মূল মন্দিরে। পুজোর পর ভাইফোঁটার দিন বিসর্জন হয়।বিগত প্রায় পাঁচশো বছরে এই পুজোর রীতি নীতি পরিবর্তন হয়নি।

 

আজও এই পুজো দেখতে ভিড় করেন অসংখ্য মানুষ।বামা কালীর প্রতি তাদের অগাধ বিশ্বাস এবং শ্রদ্ধা রয়েছে।

 

আগামী দিনে আবার ফিরে আসবো কালী কথা নিয়ে। দীপান্বিতা অমাবস্যা উপলক্ষে চলতে

থাকবে কালী কথা। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী কথা – শেফালীর কালী পুজো

কালী কথা – শেফালীর কালী পুজো
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
মালদায় এক অদ্ভুত এবং বৈচিত্রপূর্ণ কালী পুজোর ইতিহাস এবং সেই পুজো সংক্রান্ত কিছু অলৌকিক ঘটনা নিয়ে আজকের কালী কথা।
আজ থেকে বেশ কয়েক দশক আগে ভিন্ন সম্প্রদায়ের এক গৃহস্ত রমণী তার স্বপ্নে দেবীর কাছ থেকে নির্দেশ পেয়ে কালী পূজার আয়োজন করেছিলেন।শুরুতে বেশ কিছু বাঁধা এলেও পুজো বন্ধ হয়নি।
খুব দ্রুত এই কালী পুজো জাতী ধর্ম এবং বর্ণ নির্বিশেষে সবার মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করে।জনশ্রুতি আছে পুজো শুরু হওয়ার পর সেই রমণীর মধ্যে অলৌকিক শক্তি বিকশিত হয়। তিনি তার অতিপ্রাকৃতিক ক্ষমতা দিয়ে মানুষের সেবা করতেন। গ্রামে কেউ অসুস্থ হয়ে তার কথা মেনে চললেই সেরে উঠত।
শোনা যায় একবার সেই রমণী নিজে খুব অসুস্থ্য হয়ে পড়েন এবং সেই সময়ে দেবী তাকে স্বপ্নে দর্শন দিয়ে কিছু নির্দেশ দেন। সেই দৈব নির্দেশ পালন করলে তিনি সুস্থ্য হয়ে ওঠেন।
সমগ্র জেলায় তার নাম ছড়িয়ে পরে। দুর দুর থেকে মানুষ আসতে শুরু করেন তাদের দুঃখ কষ্ট নিয়ে এবং দেবীর কাছে মনোস্কামনা জানিয়ে সুফল পান অনেকই।
পরবর্তী কালে গ্রামবাসীদের চেষ্টায় পৃথক একটি মন্দির তৈরী করে পুজোর প্রচলন হয় এবং আজও সেই পুজো চলে আসছে।এখানে পূজার পর চোদ্দ দিন পর্যন্ত মূর্তিটি বেদীতে থাকে এবং তারপরে সেই রমণীর বাড়ির পাশের পুকুরে বিসর্জন হয়।
সেই তথাকথিত অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্না নারী নাম অনুসারে এই কালীকে শেফালী কালী নামে ডাকা হয়।
যথা সময়ে ফিরে আসবো কালী কথার পরবর্তী পর্ব নিয়ে। দীপান্বিতা অমাবস্যা উপলক্ষে চলতে
থাকবে কালী কথা। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন।ধন্যবাদ।

বাংলার কালী – আউস গ্রামের ডাকাত কালী 

বাংলার কালী – আউস গ্রামের ডাকাত কালী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

বর্ধমানের আউশগ্রামে আছে এক প্রাচীন ডাকাত কালীর মন্দির যে মন্দিরের সাথে জড়িয়ে আছে সাধক কমলাকান্তের নাম আছে এক অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ। আজ জানাবো সেই ইতিহাস এবং এক অদ্ভুত ঘটনা।

 

শোনা যায় সাধক কমলাকান্ত এখানে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এই কালী মূর্তি ।এই গ্রাম তখন জঙ্গলাকীর্ণ নির্জন এলাকা ছিল। সাধক কমলাকান্ত এখানে একটি বটগাছতলায় সাধনা করতেন। এক রাতে তিনি স্বপ্নাদেশ পেয়ে একটি নির্দিষ্ট শিলাখণ্ড সেখান থেকে সংগ্রহ করেন। তারপর একটি মাটির ঘরে সেই শিলাখণ্ড প্রতিষ্ঠা করে দেবীরূপে পুজো করতে শুরু করেন। সেই সময়ে দেবী মাথার উপরে ছাউনি ছিলোনা।

পরবর্তীতে কিছুটা দূরে একটি গাছের নীচে ফের শিলাখণ্ডটি প্রতিষ্ঠা করেন সাধক কমলাকান্ত। সেখানেই দেবীর পুজো শুরু হয়।

 

এই কালী মন্দিরে কালী ও শিবের শিলামূর্তি এক সঙ্গে পূজিত হয়।তাঁর সঙ্গে অধিষ্ঠান করছেন মহাদেব। এলাকাবাসীর কাছে তা ভৈরবনাথ নামে পরিচিত।এই কালী পরিচিত।

 

এই কালী কে অনেকে অন্ধ কালীও বলেন।

দেবীর নাম কেনো অন্ধকালী হলো তার পিছনেও রয়েছে একটি ঘটনা।জনশ্রুতি আছে এই মন্দিরে পুজো শুরু হওয়ার পর এক দল ডাকাত এসেছিল এই গাছতলায়। তাদের লক্ষ্য ছিল গর্ভ গৃহে স্থাপিত শিলাখণ্ডটি নিজেদের সাথে নিয়ে যাওয়া কিন্তু সেই শিলাখণ্ডে হাত দেওয়ার চেষ্টা করতেই ডাকাতরা অন্ধ হয়ে যায়। আর ফিরে যেতে পারেনি তারা।

পরে দেবীর কাছে ক্ষমা চেয়ে মন্দির পার্শবর্তী একটি নীম গাছতলার মাটি চোখে বুলিয়ে নিতে। তারা আবার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পায়। সেই থেকেই অন্ধকালী নামে পরিচিত হন এই দেবী।

 

আজও দেবী অন্ধকালীর অসংখ্য ভক্ত আসেন মন্দিরে নিজেদের মনোস্কামনা নিয়ে। দেবী অত্যন্ত দয়া ময়ী এবং তাদের প্রার্থনা তিনি শোনেন এবং মনোস্কামনা পূরণ করেন বলেই বিশ্বাস।

 

আগামী পর্বে আবার ফিরে আসবো অন্য

এক কালী মন্দিরের অলৌকিক ইতিহাস নিয়ে।

পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী কথা – ব্রহ্মময়ী কালী মন্দিরের ইতিহাস

কালী কথা – ব্রহ্মময়ী কালী মন্দিরের ইতিহাস

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

দক্ষিনেশ্বর মন্দিরের ইতিহাস এবং মন্দিরের সাথে জড়িত বহু ঘটনা হয়তো আপনারা অনেকেই জাননেন। আজ আপনাদের সেই প্রাচীন কালী মন্দিরের ইতিহাস জানাবো যে মন্দিরের অনুকরনে তৈরী হয়েছিলো রানী রাসমণি এবং ঠাকুর শ্রীরাম কৃষ্ণের দক্ষিনেশ্বর মন্দির।

 

আজ থেকে আড়াইশ বছর আগে এই মন্দির তৈরী হয়। মন্দির তৈরী করেছিলেন সেযুগের অন্যতম ধনী ব্যবসায়ী পরিবার নিয়োগী পরিবার। সেই সময় ব্রিটিশ কোম্পানির সাথে ব্যবসা চলতো নিয়োগী পরিবারের। মুলত চিনির ব্যবসা করে প্রচুর অর্থ সম্পদ লাভ করেন তারা।

সেই সময়ে এই পরিবারের কর্তা কৃষ্ণচন্দ্র নিয়োগী স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।দেবী এখানে ব্রহ্মময়ী রূপে বিরাজ করছেন। পূজা পাঠ সবই হয় তন্ত্র মতে।

 

শোনা যায় ব্রহ্মময়ী মন্দির প্রতিষ্ঠার প্রায় সাতাশ বছর পরে রানী রাসমনির জামাই মথুরবাবুকে এই মন্দির সম্পর্কে জানার জন্য এখানে আসতে বলেন এবং মথুরবাবু নিজে এসে এই মন্দির সম্বন্ধে জ্ঞাতব্য বিষয়গুলি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জেনে যান এবং পরবর্তীতে এই মন্দিরের আদলে দক্ষিণেশ্বরের মন্দির স্থাপিত হয়।

 

নবরত্ন শৈলী তে নির্মিত ব্রহ্মময়ী মন্দিরটি বাংলার প্রসিদ্ধ কালী মন্দিরগুলির অন্যতম।

মন্দিরের মূল বেদী থেকে চৌশট্টি ফুট উঁচুতে অর্থাৎ তন্ত্রমতে চৌশট্টি যোগিনী স্তর পার হয়ে মন্দিরের সর্বোচ্চ তলের মধ্যভাগে শ্বেতবর্ণের হংসেশ্বর শিবলিঙ্গের অবস্থান। একতলায় মা ব্রহ্মময়ী কালী। মন্দিরের চারকোণে চারটি কালো পাথরের শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত আছে। মন্দিরের অভ্যন্তরে পঞ্চমুণ্ড আসনের উপর বেদীতে শবরূপী মহাদেবের উপর কালো পাথরের খড়গমুণ্ডধারিণী ব্রহ্মময়ী মা অধিষ্ঠিন করছেন।

 

মন্দিরের প্রথম তলে সমতল ছাদের চারকোণে চারটি চূড়া। মন্দিরের বেদীমূলে সিংহাসনে নারায়ণ শিলা এবং শ্রী শ্রী ঠাকুর রামকৃষ্ণ ও মাতা শ্রী শ্রী সারদা দেবীর চিত্র বর্তমান। মূল মন্দিরের তিনটি প্রবেশপথ তন্ত্রমতে ঈড়া, পিঙ্গলা ও সুষুম্নার প্রতীক। কেবলমাত্র বছরে একবার শিবরাত্রির দিন মন্দিরের উপরে দর্শনার্থীদের যেতে দেওয়া হয়।বাকি দিন গুলি ওই স্থানে প্রবেশ নিষিদ্ধ।

 

প্রতি অমাবস্যায় বিশেষ পুজো এবং তন্ত্র মতে সমস্ত উপাচার নিষ্ঠা সহকারে পালন করা হয়।

বহু দর্শণার্থী সেই সময় এই মন্দিরে ভিড় করেন।

 

আবার কালী কথার পরবর্তী পর্বে অন্য এক প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক কালী মন্দিরের ইতিহাস

নিয়ে ফিরে আসবোআপনাদের জন্য।পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী কথা – বদ্যি কালী মাতা

কালী কথা – বদ্যি কালী মাতা

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আসন্ন দীপান্বিতা অমাবস্যা উপলক্ষে আরো একবার আপনাদের জন্য কালী কথা নিয়ে ফিরে এলাম। বাংলার প্রসিদ্ধ এবং জাগ্রত কালী মন্দির গুলি নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে আলোচনা করবো। থাকবে কালী সংক্রান্ত নানা পৌরাণিক এবং শাস্ত্রীয় তথ্য।আজ জানাবো হুগলীর বিখ্যাত

বদ্যি কালী মন্দিরের কথা।

 

বাংলার হুগলি জেলার জনাইয়ে অবস্থিত এই বদ্যিমাতা মন্দির। আজ থেকে প্রায় ২০০ বছর আগে এই মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়।মন্দিরের পাশেই আছে এক রহস্যময় পুকুর যে পুকুর নিয়ে একটি কিংবদন্তী এলাকায় প্রচলিত আছে। তবে সব থেকে বেশি যে কারণে এই মন্দির প্রসিদ্ধ তা একটি প্রচলিত বিশ্বাস।

 

আজও এও অঞ্চলে কারুর কোনও রোগ-ব্যাধি হলেআগে সে দেবীর কাছে প্রার্থনা জানান।

দেবী নাকি স্মরনাগত ভক্তদের স্বপ্নাদেশ দেন। সেই স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী ওষুধ খেলে ভক্তদের যাবতীয় রোগ-ব্যাধি সেরে যায়। গত দুশো বছর ধরেই এমনটা চলছে। আর এই সব কারণে ভক্তদের কাছে দেবী বদ্যি কালী নামেই বেশি জনপ্রিয়।

 

কে এবং ঠিক কবে এই মন্দির তৈরী করে দেবীকে এখানে স্থাপন করেন তা স্পষ্ট নয় তবে আগে এখানে ছিল টালির চাল। সেখানেই এখন তৈরি হয়েছে পাকা দালানের পরিপূর্ণ সাজানো-গোছানো মন্দির। ভক্তদের অর্থ সাহায্যে ধীরে ধীরে নতুন রূপে গড়ে উঠেছে এই মন্দির।দেবীর এখানে দক্ষিণাকালীর রূপে বিরাজ করছেন।

 

এবার আসি সেই রহস্যময় পুকুর প্রসঙ্গে। মন্দিরের কাছে রয়েছে একটি বহু প্রাচীন জলাশয়।

ভক্তদের বিশ্বাস আজও দেবী এখানে নিত্যরাতে পাশের পুকুরে স্নান করেন। সেই জন্য এই মন্দিরে ভক্তরা সচরাচর রাত্রিবাস করেন না।সারাদিন ভক্ত দের ভিড় থাকলেও রাতে এই মন্দিরের পরিবেশ একদম পাল্টে যায়। শান্ত এবং জনমানব শুন্য এই মন্দির তখন একেবারেই দেবীর ব্যাক্তিগত বিচরণ ক্ষত্রে পরিণত হয়।

 

অমাবস্যায় মন্দিরে বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়।সেই সময় রাতে ভক্তদের মন্দিরে প্রবেশের অধিকার দেয়া হয়।ভক্তদের বিশ্বাস অমাবস্যার দিনগুলোয় দেবী তাঁদের মন্দিরে রাত্রিবাসের ছাড়পত্র দিয়েছেন।সেই সময় বিশেষ পুজো এবং শাস্ত্র মতে হোম যজ্ঞর পাশাপাশি ভক্তদের ভোগের প্রসাদও খাওয়ানো হয়।

 

দীপান্বিতা অমাবস্যা উপলক্ষে চলত থাকবে

ধারাবাহিক কালী কথা। ফিরে আসবো অন্য

একটি মন্দিরের ইতিহাস নিয়ে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

লক্ষী পুজোর বিধি নিষেধ 

লক্ষী পুজোর বিধি নিষেধ

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

বিগত কয়েকদিন ধরে দেবী লক্ষী প্রসঙ্গে শাস্ত্রীয় এবং পৌরাণিক নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা এবং ব্যাখ্যা করছি।আজকের পর্বে জানবো লক্ষী পুজো সংক্রান্ত কিছু বিধি নিষেধ এবং তার শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা|

 

দেবী দেবী লক্ষী অন্নদাত্রী এখানে অন্ন শুধু খাদ্য নয় সমৃদ্ধির প্রতীক। লক্ষী পুজোর দিন অন্ন বা যেকোনও খাবার নষ্ট করবেন না। এতে মা অসন্তুষ্ট হন। দেবী লক্ষ্মী অন্নের অপচয় সহ্য করেন না ফলে বাড়িতে অর্থ ও খাবারের অভাব দেখা দিতে পারে। এই দিনে সম্ভব হলে অন্ন দান করুন তাতে সমৃদ্ধি লাভ করবেন।

 

লক্ষ্মী দেবীকে সাদা রঙের ফুল দিয়ে পুজো না করে লাল, হলুদ, গোলাপি রঙের ফুল ব্যবহার করা যাবে। এই রঙগুলি দেবীর বেশি প্রিয়।লক্ষ্মীপুজো করার সময় কোনওভাবেই কালো পোশাক পরা যাবে না। কারন সাদা ও কালো রঙ দেবী পছন্দ করেননা তার প্ৰিয় রঙ হলুদ ও লাল|

মা লক্ষ্মীর পুজোয় সাদা ফুল যেমন ব্যবহার করা যায় না, তেমনই আসনে সাদা বা কালো কাপড় পাতার নিয়ম নেই। ব্যবহার করা যেতে পারে লাল, গোলাপি প্রভৃতি রঙের কাপড়।

 

মনে করা হয়, শ্রীলক্ষ্মীর পূজতে তুলসী ব্যবহার করলে দেবী অসন্তুষ্ট হন| এর ব্যাখ্যা হলো তুলসির সঙ্গে শালগ্রাম শিলার বিবাহ হয়। শালগ্রাম গ্রাম শিলা নারায়ণের প্রতিভূ। যেহেতু শ্রীলক্ষ্মীও বিষ্ণুপত্নী তাই দুজনের সম্পর্ক মধুর নয় তাই এই পুজোয় তুলসির ব্যবহার চলে না।

 

পুজোর পর মন্দির বা ঠাকুর ঘরের দক্ষিণমুখে প্রসাদ অর্পণ করার কথা বলে থাকেন অনেকে। এর শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা না থাকলেও বাস্তু শাস্ত্র মতে শুভ| লক্ষ্মীপুজোর প্রসাদে না বলতে নেই। অল্প হলেও মুখে তুলতে হয়।এতে দেবী প্রসন্ন হন|পুজোর প্রসাদ ফেরালে দেবী অসন্তুষ্ট হন।

 

ঢাক – ঢোল- কাঁসর ঘণ্টা লক্ষ্মীপুজোয় বাজানো যাবে না। অত্যধিক শব্দ পছন্দ করেন না শ্রীলক্ষ্মী। সব পুজোতেই বাদ্যি বাজানো হয়। কিন্তু মা লক্ষ্মীর পুজোয় কাঁসর ঘণ্টা বাজালে দেবীর অসন্তুষ্ট হন বলে মনে করা হয়।এবিষয়ে একটি পৌরাণিক ব্যাখ্যা আছে|

 

পুরাণ মতে ঘণ্টাকর্ণ নামে এক দেবতা দেবীকে দেবীকে অসম্মান করেছিলেন। যে দেবীকে গোটা দেবলোক পুজো করেন সেই দেবীকেই কিনা অপমান করেন ঘণ্টাকর্ণ। এই ঘটনায় দেবী লক্ষ্মী ঘণ্টাকর্ণের উপর বেজায় ক্রুদ্ধ হন।বলা হয় সেই থেকেই অন্যান্য সমস্ত পুজোতে ঘণ্টা বাজালেও, লক্ষ্মী পুজোতে ঘণ্টা বাজানো নিষিদ্ধ। সেই থেকেই মা লক্ষ্মীর পুজোয় কোন ব্যক্তি ঘন্টা বাজালে, তাঁর উপর বেজায় ক্ষিপ্ত হন পদ্মাসনা দেবী লক্ষ্মী। ঘন্টার বদলে শঙ্খ ব্যাবহার করুন। দেবী লক্ষী শঙ্খ পছন্দ করেন।

 

আপনাদর সবাইকে কোজাগরী লক্ষী পুজোর অনেক শুভেচ্ছা। আগামী পর্ব গুলিতে এমনই গুরুত্বপূর্ণ কিছু শাস্ত্রীয় এবং পৌরাণিক বিষয় নিয়ে ফিরে আসবো। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

দেবী লক্ষীর বাহন

দেবী লক্ষীর বাহন

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

সনাতন ধর্মে প্রত্যেক দেব দেবীর একটি নিদ্দিষ্ট বাহন আছে। যেমন শিবের নন্দী। বিষ্ণুর গড়ুর। সরস্বতীর রাজ হংস। বিশ্বকর্মার হাতি। তেমনই দেবী লক্ষীর বাহন পেঁচক বা প্যাঁচা। লক্ষী

পুজো উপলক্ষে এই বিশেষ পর্বে আজ আলোচনা করবো দেবী লক্ষীর বাহন প্যাঁচা নিয়ে। জানবো এর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য এবং শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা।

 

দেবী লক্ষীর বাহন কেনো প্যাঁচা তার অনেক গুলি কারন ও ব্যাখ্যা আছে|

 

দেবী লক্ষী সমৃদ্ধির দেবী।বলা হয় ধান বাঙালির কাছে লক্ষী বা সমৃদ্ধির প্রতীক।কিন্তু এই ধান ইঁদুরে খেয়ে ফেলে ধানের গোলায় ইঁদুর ঢুকে নষ্ট করে খাদ্যশস্য তাই ধানের শত্রু ইঁদুর। আর ইঁদুরকে খায় পেঁচা অর্থাৎ ধানকে রক্ষা করে ইঁদুরের হাত থেকে। তাই লক্ষ্মী দেবীর বাহন এই নিশাচর এবং মাংশাসি পাখি।

 

তবে লক্ষ্মীদেবীর বাহন হিসেবে পন্ডিতদের যে মতটি সর্বাধিক গ্রহনযোগ্য তা হলো যিনি লক্ষ্মী গুন অর্থাৎ সত্য প্রেম পবিত্রতা তপস্যা তিতিক্ষা পেতে চান তাকে পেচক ধর্ম পালন করতে হবে অর্থাৎ জাগতিক বস্তু থেকে একটু দূরে থেকে নির্জনে যোগৈশ্বর্য ও সাধন সম্পদ রক্ষা

করতে হবে। পেঁচা যদি দিনের বেলায় বের হয় অন্যান্য পাখিরা তাকে তাড়া করে তাই অতি গোপনে পেচা বাস করে। সেরকমই সম্পূর্ণ জ্ঞান বা পূর্ণতা লাভ না করা পর্যন্ত জাগতিক বিষয় ব্যক্তির দৈব সম্পদ নষ্ট করে।এসব কারনে পেচাকে লক্ষীর বাহন হিসেবে নির্ধারন করা হয়েছে।কারন পেঁচা নিঃশব্দে এবং অন্ধকারে নিজের লক্ষ্যে অবিচল থেকে এগিয়ে যায়। সে অন্তর মুখী এবং একই সাথে শক্তিশালী।

 

ঋগ্বেদে বলা হয়েছে, পেঁচা আসলে যমের দূত। যম অর্থ সংযম, যম মানে ধর্ম। ধনোপার্জনের ক্ষেত্রেও সংযমবুদ্ধি ও ধর্মীয় চেতনা জাগ্রত রাখার প্রতীক পেঁচা। যমদূত পেচক তাঁর নিজের বৃত্তি ও প্রভুর ধর্মের কথা স্মরণ করিয়ে মৃত্যুচিন্তা ও আত্মচিন্তা জাগ্রত করে মানুষের মনে। তাই সে লক্ষীর বাহন হিসেবেও স্থান পেয়েছে।

 

আবার লৌকিক মতে কোজাগরীর রাতে মা লক্ষ্মী খোঁজ নেন কে জাগ্রত রয়েছে। জেগে থাকা ব্যক্তিকেই তিনি ধনের সন্ধান দেন। পেঁচা প্রতি রাতেই জেগে থাকে। দিনে ঘুমায় তাই প্যাঁচাকে দেবী নির্বাচন করেছেন তার বাহন রূপে|

 

আগামী পর্বে লক্ষী পুজো সম্পর্কে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে ফিরে আসবো। জানাবো লক্ষী পুজোর কিছু শাস্ত্রীয় নিয়ম নীতি এবং তার ব্যাখ্যা।পড়তে থাকুন। ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

দেবী লক্ষীর পুজোর প্রচলন

দেবী লক্ষীর পুজোর প্রচলন

 

পন্ডিত জি ভৃগুর শ্রী জাতক

 

আগামী কালই কোজাগরী লক্ষী পুজো|দেবী আসবেন আমাদের গৃহে|তার আশীর্বাদে ও কৃপায় ধন্য হবে আমাদের জীবন|সুখ ও সমৃদ্ধি আসবে ঘরে ঘরে|সেই উপলক্ষে দেবী লক্ষীর মাহাত্ম নিয়ে এই কয়েকটি দিন আলোচনা করছি।

 

আগের পর্বে দেবী লক্ষীর আবির্ভাব এবং তার বিবাহ নিয়ে পৌরাণিক যা ব্যাখ্যা আছে তা আপনাদের শুনিয়াছিলাম আজ জানবো লৌকিক দেবী হিসেবে তার মাহাত্ম্য এবং মর্তে দেবীর পুজোর প্রচলন নিয়ে এক অলৌকিক ঘটনা।

 

কথিত আছে একবার দোলপূর্ণিমার রাতে নারদ বৈকুণ্ঠে লক্ষ্মী ও নারায়ণের কাছে গিয়ে মর্ত্যের অধিবাসীদের নানা দুঃখকষ্টের কথা বললেন। লক্ষ্মী মানুষের নিজেদের কুকর্মের ফলকেই এই সব দুঃখের কারণ বলে চিহ্নিত করলেন। কিন্তু নারদের অনুরোধে মানুষের দুঃখকষ্ট ঘোচাতে তিনি মর্ত্যলোকে লক্ষ্মীব্রত প্রচার করতে এলেন।

 

এই সময়ে অবন্তী নগরে ধনেশ্বর নামে এক ধনী বণিক বাস করতেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর ছেলেদের মধ্যে বিষয়সম্পত্তি ও অন্যান্য ব্যাপার নিয়ে ঝগড়া চলছিল। ধনেশ্বরের বিধবা পত্নী সেই ঝগড়ায় অতিষ্ট হয়ে বনে আত্মহত্যা করতে এসেছিলেন। লক্ষ্মী তাঁকে দেখা দেন এবং লক্ষ্মীব্রত করার উপদেশ দিয়ে ফেরত পাঠালেন। ধনেশ্বরের স্ত্রী নিজের পুত্রবধূদের দিয়ে লক্ষ্মীব্রত করাতেই তাঁদের সংসারের সব দুঃখ ঘুচে গেল। ফলে লক্ষ্মীব্রতের কথা অবন্তী নগরে প্রচারিত হয়ে গেল। একদিন অবন্তীর সধবারা লক্ষ্মীপূজা করছেন, এমন সময় এক যুবক বণিক এসে তাদের ব্রতকে ব্যঙ্গ করল। ফলে লক্ষ্মী তার উপর কুপিত হলেন। সেও সমস্ত ধনসম্পত্তি হারিয়ে অবন্তী নগরে ভিক্ষা করতে লাগল। তারপর একদিন সধবাদের লক্ষ্মীপূজা করতে দেখে সে অনুতপ্ত হয়ে লক্ষ্মীর কাছে ক্ষমা চাইল। লক্ষ্মী তাকে ক্ষমা করে তার সব ধনসম্পত্তি ফিরিয়ে দিলেন। এই ভাবে সমাজে লক্ষ্মীব্রত প্রচলিত হল|

 

কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো দক্ষিণ ভারত ও পূর্ব ভারতে অত্যন্ত জনপ্রিয় হলেও উত্তর ও পশ্চিম-ভারতে মা লক্ষ্মীর আবাহন মূলত হয় ধনতেরাস-দিওয়ালি তিথিকে কেন্দ্র করে|বাংলায় লক্ষ্মীপুজোর সংস্কৃতি ভারতের অন্যান্য রাজ্যের থেকে একটু অন্যরকম। যেমন ভারতের বেশিরভাগ অঞ্চলে শুক্রবার মহালক্ষ্মীর উপবাস রাখা হয় ও বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়। ওদিকে বাংলার ঘরে ঘরে বৃহস্পতিবারই লক্ষ্মীবার তবে শাস্ত্র মতে প্রতি বৃহস্পতিবারই নিষ্ঠা সহকারে দেবী লক্ষীর পুজো করলে গৃহের কল্যাণ হয়|

 

লক্ষী পুজোর এই বিশেষ সময়ে জ্যোতিষ পরামর্শ বা প্রতিকার অনেক বেশি কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে। তাছাড়া গ্রহ দোষ খণ্ডন। বাস্তু দোষ নিবারণ এবং শ্রী যন্ত্র স্থাপন করার জন্যও এটি আদৰ্শ সময়।

 

সবাইকে কোজাগরী লক্ষী পুজোর আগাম শুভেচ্ছা। ফিরে আসবো দেবী লক্ষীকে নিয়ে শাস্ত্রীয় আলোচনায় আবার আগামী পর্বে।

পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

দেবী লক্ষীর আবির্ভাব এবং বিবাহ

দেবী লক্ষীর আবির্ভাব এবং বিবাহ

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

এবছরের মতো দূর্গা পুজো শেষ। আবার এক বছরের অপেক্ষা তবে মা দূর্গা কৈলাশ পাড়ি দিলেও রেখে গেছেন তার কন্যা লক্ষীকে। আর কয়েক দিন পরেই লক্ষী পুজো। লক্ষী পুজো উপলক্ষে আজ থেকে শুরু করছি দেবী লক্ষী কে নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা।আজকের পর্বে জানাবো কে দেবী লক্ষীর আবির্ভাবএবং

তার বিবাহ সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

 

দুর্বাসা মুনির শাপে স্বর্গ একদা শ্রীহীন বা লক্ষ্মী-ছাড়া হয়ে যায়। তখন বিষ্ণুর পরামর্শে স্বর্গের ঐশ্বর্য ফিরে পাবার জন্য দেবগণ অসুরদের সাথে নিয়ে সমুদ্র-মন্থন শুরু করেন। সেই ক্ষীর-সমুদ্র মন্থনের ফলে উঠে আসল নানা রত্ন, মণি-মাণিক্য, অমৃতসুধা আরও কত কি। এসব ছাড়াও সমুদ্র-মন্থনের ফলে উঠে আসলেন লক্ষ্মী দেবী এবং ঠাই পেলেন বিষ্ণুর বক্ষে।

 

স্কন্দ পুরানে নারায়ণ লক্ষীর বিবাহের উল্লেখ আছে।লক্ষ্মী দেবী নারায়ণ বা বিষ্ণুকে পতি রূপে পাওয়ার জন্য সমুদ্রের মধ্যে প্রবেশ করে বহুকাল কঠোর তপস্যা করেন।তখন ইন্দ্রা বিষ্ণুর ছদ্মবেশে লক্ষ্মীর নিকট উপস্থিত হলে লক্ষ্মী দেবী তাকে বিশ্বরূপ দেখাতে বলেন। কারণ লক্ষ্মী দেবী জানতেন যে, একমাত্র বিষ্ণুই বিশ্বরূপ দেখাতে সক্ষম। কিন্তু কেউই বিশ্বরূপ দেখাতে না পেরে লজ্জিত হয়ে চলে যান। তাঁরপর লক্ষ্মীর তপস্যায় তুষ্ট হয়ে একদিন বিষ্ণু নিজে লক্ষ্মীর নিকট উপস্থিত হলেন এবং তাঁর ইচ্ছায় বিশ্বরূপ দেখালেন। তারপর তাদের বিবাহ সম্পন্ন হয়।

 

আবার লৌকিক মতে দেবী লক্ষী শিব দুর্গার সন্তান তাই দেবী দুর্গার সাথে মর্তে আসেন দূর্গা পুজোর সময়ে এবং বিজয়ার পর কোজাগরী পূর্ণিমায় দেবীর পুজো হয়। দেবী লক্ষী প্রসন্ন হলে অর্থ সম্পদ এবং সমৃদ্ধি লাভ হয়।

 

ফিরে আসবো পরের পর্বে দেবী লক্ষীর পুজো সংক্রান্ত আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সাথে নিয়ে।

পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।