Home Blog Page 3

আবির্ভাব তিথি উপলক্ষে বিশেষ পর্ব : শ্রী শ্রী বামা ক্ষ্যাপার শৈশবের অলৌকিক ঘটনা 

শিবচতুর্দশীর আর দেরি নেই। শিব চতুর্দশী যেমন আদি শিব লিঙ্গের আবির্ভাব তিথি তেমনই মহান সাধক শ্রী শ্রী বামা ক্ষ্যাপার আবির্ভাব তিথি সেই উপলক্ষে শুরু করেছি তার অলৌকিক জীবন নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা। শ্রী শ্রী বামা ক্ষ্যাপার শৈশব এবং পরবর্তী সাধক জীবন অসংখ্য জনশ্রুতি এবং কিংবদন্তী প্রচলিত আছে।আজকের পর্বে তার শৈশবের একটি বিশেষ ঘটনা নিয়ে লিখবো।

 

কিশোর বামাচরণ একবার আটলা গ্রামের নিজের বাড়ি থেকে তারাপীঠ মহাশ্মশানের দিকে যাচ্ছেন। এই সময় পিছন থেকে তাঁর নাম ধরে শিশুকন্ঠের ডাক। ডাকটি এলো পথের ধারে অবস্থিত চক্রবর্তীর বাড়ির দোতলা থেকে।বামা সেদিকে তাকিয়ে দেখেন বাড়ির দোতলায় জানালার ওপাশে এক দিব্য দর্শন ছেলে দাঁড়িয়ে।

বামা তখন এগিয়ে এসে তাকে পরিচয় জিজ্ঞেস করলে ছেলেটি জবাব দেয়, “আমি এ বাড়ির নারায়ণ। কিন্তু এরা আমাকে জলটুকুও দেয় না। তুই আমাকে নিয়ে চল।” কিন্তু দোতালায় বামা পৌঁছাবেন কিকরে। আবার স্বয়ং নারায়ণ তাকে এই অবস্থা থেকে উদ্ধার করতে বলছেন।

বামার অসহায় অবস্থা বুঝে সেই শিশু নিজেই একটি কাপড় ঝুলিয়ে দিলেন। উপরে উঠে এলেন বামা তারপর সেই শিশু নারায়ণ তাঁর হাতে রুপোয় বাঁধানো একটি শালগ্রাম শিলা ধরিয়ে দিয়ে বললেন, “এক্ষুনি এটা নিয়ে চলে যা।”

 

আদেশ অনুসারে বামা অবিলম্বে সেই শালগ্রাম শিলা নিয়ে চলে আসেন দ্বারকা নদীর পাড়ে।এবং নদীর জলে শালগ্রাম শিলাকে বেশ খানিকক্ষণ ডুবিয়ে রেখে তারপর তাঁকে বালির ওপর শুইয়ে দিয়ে বললেন, “তুমি এবার একটু ঘুমোও, ঠাকুর। আমি আমার বড়মাকে এই বলে বামা চলে গেলেন।তারা পীঠে তারা মায়ের কাছে।

 

চক্রবর্তী বাড়ির নারায়ণ শিলা উধাও হয়েছে এই সংবাদ রটতে দেরি হয়নি গোটা এলাকা তন্ন তন্ন করে খুঁজে সবাই প্রায় হাল ছেড়ে দিয়েছে সেই সময়ে কোনো ভাবে বাড়ির কর্তা বামার খবর পায়

ক্ষ্যাপা হিসেবে তার কিছুটা খ্যাতি ছিলই

তাই সবাই ভাবলো এই কাজ তার পক্ষে মোটেই অসম্ভব নয়।

 

সকলে মিলে চড়াও হয় ব্রজবাসী কৈলাসপতির কুটীরে।তার কাছে প্রায় আসে বামা একথা সবার জানা।নিজ কুটিরেই ছিলেন কৈলাশপতি বাবা তিনি ভাবী শিষ্য বামাকে ডেকে জিজ্ঞেস করেন, “এরা যা বলছে, তা কি সত্য?” সবাই বলছিল বামা নারায়ণ শিলা চুরি করে এনেছিলেন। বামা বলেন, “চুরি করতে যাব কেন? এঁদের নারায়ণ নিজেই আমাকে বলেছে, সে সামান্য জলটুকুও পায়না। তাই আমি তাঁকে জল খাওয়াতে নিয়ে এসেছিলাম।

সবাই সব শুনে হতবাক। যে নারায়নের দর্শন পেতে সাধক দের বছরের পর বছর সাধনা করতে হয় তিনি নিজে যে কিশোরের কাছে ধরা দিয়েছেন তিনি নিশ্চই কোনো সাধারণ মানুষ নয়। একথা সবাই সেদিন উপলব্ধি করেছিলেন।

 

সারা জীবনে বামা ক্ষ্যাপা অসংখ্য অলৌকিক ঘটনা ঘটিয়েছেন। তার কিছু নিয়ে আলোচনা হবে

সারা সপ্তাহ ধরে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

বিশেষ পর্ব – বামাক্ষ্যাপার আবির্ভাব

বাংলার ১২৪৪ সনে তারাপুরের কাছে আটলা গ্রামে সর্বানন্দ চট্টোপাধ্যায় এবং রাজকুমারী দেবীর সংসারে বামা চরণ নামে এই অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন শিশুর জন্ম হয়।সেদিন ছিলো শিব চতুদর্শীর দিন। বামচরণ এর আরো এক ভাই এবং চারজন বোন ছিলেন কনিষ্ঠ ভাই ছিলেন রামচন্দ্র এবং চার বোনের নাম যথাক্রমে জয়কালী, দূর্গা, দ্রবময়ী এবং সুন্দরী।বাকিরা গৃহস্ত জীবনে সাধারণ জীবন যাপন করলেও শৈশব থেকে বামা ছিলেন ব্যতিক্রমী। অন্তরমুখী এবং আধ্যাত্মিক প্রকৃতির এই ছেলেই পরবর্তীতে তারাপীঠে গিয়ে আশ্রয় নেন। ধীরে ধীরে মহান সাধক কৈলাশপতির সান্নিধ্যে এবং মাতৃ সাধনা করে হয়ে ওঠেন জগৎ বিখ্যাত বামা ক্ষ্যাপা।

 

আজ তারা পীঠ আর বামা ক্ষ্যাপা যেনো সমার্থক।

তার অসংখ্য ভক্ত অনুরাগীরা এই শিব চতুর্দশীর সময়ে তারাপীঠে জমা হন কারন শিবচতুর্দশী তিথিতে বামাক্ষেপার আবির্ভাব তিথি পালন শুরু হয়। চারদিন ধরে চলে উৎসব। আটলা গ্রামে বসে মেলা এবং বামা ক্ষ্যাপার জন্মভিটেয় হয়চণ্ডীপাঠ।

দ্বারকা নদীর জলে স্নান করানো হয় বামা ক্ষ্যাপার মূর্তি। বিশেষ পুজো এবং হোম যজ্ঞে অংশ নেন

বহু দর্শণার্থী।

 

তন্ত্র সাধনায় যে উচ্চতায় বামা ক্ষ্যাপা পৌঁছে ছিলেন তা বহু সাধকের কাছেই স্বপ্ন। বামা যখন তারা পীঠে অবাধ বিচরণ করছেন তখন প্রায় প্রতিদিনই নানা অলৌকিক কান্ড ঘটাতেন তিনি।

কখনো বামা চরণ শ্মশানে জ্বলন্ত চিতার কাছে বসে থাকতেন, কখনো বাতাসে কথা বলতেন। তার অদ্ভুত আচরণ বা ক্ষ্যাপামির কারণে

তার নাম বামাচরণ থেকে বামাক্ষ্যাপা হয়। খেপা মানে পাগল। অর্থাৎ গ্রামবাসীরা তাকে অর্ধ পাগল মনে করত। আসলে তিনি ছিলেন অতি উচ্চ মানের সাধক এই ক্ষ্যাপামি ছিলো তার সত্ত্বার বাইরের আবরণ।

 

স্বয়ং তারা মা তাকে দেখা দিয়ে আশীর্বাদে করেছিলেন।সেটি ছিল ভাদ্রপদ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথি।ভগবতী তারার সিদ্ধির জন্য চূড়ান্ত সিদ্ধ মুহুর্ত। তখন রাতের সময় বামাখেপা জ্বলন্ত চিতার পাশে শ্মশানে বসে ছিল, যখন নীল আকাশ থেকে আলো ফুটে চারদিকে আলো ছড়িয়ে পড়ে।

এই আলোকে বামাচরণ মা তারার দর্শন পেয়েছিলেন। কোমরে বাঘের চামড়া পরা! এক হাতে অস্ত্র।এক হাতে মাথার খুলি, এক হাতে নীল পদ্ম ফুল, এক হাতে খড়গ। সেই দিন মা তারা বামার মাথায় হাত রাখাতে বামাক্ষ্যাপা সেখানে সমাহিত হয়। সমাধি অবস্থায় তিনি তিন দিন তিন রাত শ্মশানে অবস্থান করেন। তিন দিন পর জ্ঞান ফেরে এবং জ্ঞান ফেরার সাথে সাথে বামা চিৎকার করে এদিক ওদিক দৌড়াতে থাকে। গ্রামবাসীরা নিশ্চিত হয় যে বামা সম্পূর্ণ পাগল হয়ে গেছে। বামার এই অবস্থা একমাস ধরে চলে বলে শোনা যায়। তারপর ধীরে কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থায়

ফিরে আসেন বামা ক্ষ্যাপা।

 

তার শৈশব থেকে কৈশোর এবং পরবর্তীতে জীবনের শেষ দিন অবধি নানা বিধ অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে তারাপীঠে। আবির্ভাব তিথি উপলক্ষে প্রায় সারা সপ্তা ধরে বামা ক্ষ্যাপার মহিমা বর্ণনা করবো। থাকবে তার জীবনের নানা অধ্যায় এবং নানা অলৌকিক ঘটনা।পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

আজকের বাংলার কালী পর্বে কলকাতার একটি প্রাচীন কালীর পুজোর কথা আপনাদের জানাবো।

দেবী কালিকার এলোকেশী, করলবদনা রূপ দেখতেই আমরা অভ্যস্ত কিন্তু উত্তর কলকাতার শ্যামপুকুরে রয়েছেন মা ভবতারিণী এখানে দেবী ঘোমটায় ঢাকা থাকেন, তাই তিনি ঘোমটা কালী।

ঐতিহাসিক এই মন্দিরটি ১৮৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত দেবী কালিকা আদপে দক্ষিণাকালীরই ভিন্নরূপ। সাধক, সন্ন্যাসীরা দেবীকে ভবতারিণী বলেন। গর্ভগৃহে কষ্টিপাথরের দক্ষিণাকালী ভবতারিণী নামেই নিত্য পূজিতা। মন্দিরের  গর্ভগৃহের একদিকে শ্রীধর অর্থাৎ নারায়ণ শিলা, কৃষ্ণ-রাধিকা মূর্তি, গণেশ, কৃষ্ণ মূর্তিও নিত্য পূজিত হয়।  মন্দিরটি দক্ষিণমুখী। দক্ষিণেশ্বরের আদলে নবরত্নশৈলীতে মন্দিরটি নির্মিত।

বলরাম ঘোষের উত্তরসূরি তুলসীরাম ঘোষকে স্বপ্নে দেখা দিয়েছিলেন দেবী।স্বপ্নে দেখা রূপ অনুযায়ীই এখানে দেবী কালীর মূর্তি তৈরি হয়েছে। মন্দিরটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ প্রথম গ্রহণ করেন সারদা প্রসাদ ঘোষের মা দয়াময়ী দাসী। তুলসীরাম ঘোষ স্বপ্নে দেখা কালী মূর্তি অনুযায়ী একটি ছবি আঁকিয়েছিলেন। সেই ছবিটি এখনও মন্দিরে রাখা আছে। তুলসীরামের পুত্রবধূ দয়াময়ী দেবী স্বামীর মৃত্যুর পর ছেলের সঙ্গে কলকাতায় এসে জমি কিনে মন্দির তৈরি শুরু করেন এবং তুলসীরামের আঁকানো ছবি অনুযায়ী কালী মূর্তি তৈরি করান। পরবর্তীতে মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয় স্থাপিত হয় একটি কষ্টি পাথরের কালী মূর্তি এবং নিয়মিত পুজো
শুরু হয়।

ভবতারিণী মন্দিরে বৈষ্ণব মতে পুজো হয়।
মন্দিরে প্রতিদিন নিত্য পুজো হয়। কার্তিক অমাবস্যায় ধূমধাম করে কালী পুজো হয়। এছাড়াও জন্মাষ্টমী,দুর্গাপুজো ও জগদ্ধাত্রী পুজো হয়ে থাকে। মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বাসন্তী পঞ্চমীর দিন, সেই কারণে, প্রতি বছর বসন্ত পঞ্চমীর দিন মন্দিরের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষ্যে জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে পুজো হয়।

স্থানীয় বাসিন্দারা বিপদে-আপদে মন্দিরে ছুটে আসেন। ভক্তদের বিশ্বাস, দেবীর কৃপায় যেকোনও বিপদ থেকে পরিত্রাণ মেলে।বর্তমানে এই
মন্দিরটি হেরিটেজ ঘোষিত হয়েছে।

ফিরে আসবো পরের অনুষ্ঠানে ।
বাংলার কালীর পরবর্তী পর্ব নিয়ে।
পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

বাংলার কালী – অর্ধকালীর পুজো

শাস্ত্রে যতগুলি মাকালীর রূপের উল্লেখ আছে যেমন ভদ্র কালী, দক্ষিনা কালী ইত্যাদি তার বাইরেও বাংলায় নানা রূপে পূজিতা হন দেবী কালী। কোথাও তিনি সাদা কালী, কোথাও আবার ব্যাঘ্র কালী। এই প্রতিটি রূপের সাথে জড়িয়ে আছে কিছু ইতিহাস কিছু অলৌকিক ঘটনা আজ এমনই এক কালী পুজোর কথা জানাবো ।

 

আজ থেকে প্রায় ছশো বছর আগে

অবিভক্ত বাংলার ময়মনসিংহের প্ৰখ্যাত কালীসাধক দ্বিজদেব নিজের নিঃসন্তান অবস্থা ঘোচানোর জন্য তার আরাধ্যা দেবী কালীর কাছে প্রার্থনা করেন।দীর্ঘ সময় ধরে প্রার্থনা করার পরে তার ডাকে সাড়া দেন মা কালী এক রাতে তিনি স্বপ্ন দেখলেন তাঁর পরমারাধ্যা তাঁর কাছে কন্যারূপে আসবেন। যথা সময়ে সন্তান সম্ভবা হলেন তার স্ত্রী এবং এক মাঘী পূর্ণিমার দিন এক কন্যা সন্তান ভূমিষ্ঠ হল। লোকমুখে শোনা যায় বিচিত্র ছিলো সেই কন্যা সন্তানের রূপ। সে না পুরোপুরি গৌরাঙ্গী আবার না সম্পূর্ণ শ্যামাঙ্গী। তার দেহের অর্ধেক গৌরবর্ণা আর বাকি অর্ধ ঘন শ্যামবর্ণা ।

 

তিনি আদর করে কন্যার নাম দিলেন জয়দুর্গা। তবে নিজে কন্যাকে অর্ধকালী বলে ডাকতেন। আসলে এই কন্যা কোনো সাধারণ কন্যা নন। তিনি বিশ্বাস করতেন এই কন্যা দেবী কালীর মানবী রূপ

এবং দেবী রূপেই তাকে মনে মনে ভক্তি করতেন।

 

কন্যা বড় হয়ে বিবাহযোগ্যা হলে দ্বিজ ঠাকুরের টোলের শিষ্য রাঘবরাম ভট্টাচার্যর সাথে জয় দুর্গার বিবাহ হয়। রাঘবরাম ভট্টাচার্য তন্ত্র জ্যোতিষ

চর্চা করতেন এবং পরবর্তীতে মাতৃ সাধক রূপে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।

 

বিবাহ পরবর্তী জীবনেও জয় দূর্গা বা

অর্ধকালীকে কেন্দ্র করে একাধিক অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়।শোনা যায় একবার নব বধূর ঘোমটা জন সমক্ষে পড়ে যাওয়ায় তৎক্ষণাৎ এক জোড়া অদৃশ্য হাত সেই ঘোমটা আবার স্বস্থানে বসিয়ে দেয় যা দেখে হতবাক হায্য সবাই আবার একবার তাদের গৃহে কোনো এক কারণে দূর্গাপুজোর সময়ে চন্ডী পাঠ থেকে বিরত থাকেন সেই সময় তাদের কুল দেবী দুর্গা দক্ষিণমুখী

থেকে ঘুরে পশ্চিমমুখী হন আর কাঁচা হলুদ বর্ণা দেবী ক্রুদ্ধ রক্তবর্ণা রূপ ধারণ করেন।আজও নাকি অর্ধকাকালীর পরিবারের এই রূপেই

দেবীর পুজো হয়। হয়না চন্ডী পাঠ।

আজও এখানে পরম্পরা মেনে মৃন্ময়ী দুর্গাপূজা হয় শারদীয়া দুর্গা পুজোয় আর মাতা অর্ধকালীকে স্মরণ করা হয় গৃহদেবী রূপে।

 

ফিরে আসবো পরবর্তী পর্বে। থাকবে বাংলার অন্য এক ঐতিহাসিক কালী পুজো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

বাংলার কালী – বসিরহাটের দক্ষিনা কালীর পুজো

বসিরহাটের পাশ দিয়ে বয়ে চলা ইছমতী নদীর পাড়ে সংগ্রামপুর নামক ছোট্ট জনপদটি বেশ প্রাচীন শোনা যায় ইছামতীর তীরে মানসিংহের সঙ্গে বাংলার এক রাজা প্রতাপাদিত্যের যুদ্ধ হয়। সেই যুদ্ধ বা সংগ্রাম থেকে এই জায়গার নাম হয় সংগ্রামপুর।আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয় সেই ইতিহাস নয় বরং এই বসিরহাটের সংগ্রামপুরে দক্ষিণাকালীর একটি মন্দির।

 

জঙ্গলের মধ্যে ছিল কালীর থান। কালীভক্ত রাজা কৃষ্ণচন্দ্র একবার ইছামতীর বুকে নৌকো বিহারের সময়ে রাতে স্বপ্ন দেখেন ইছামতীর উত্তর দিকের জঙ্গলের মধ্যে আলো ঠিকরে বেরোচ্ছে। তার মধ্যে দাঁড়িয়ে এক মহিলা বলছেন এখানে কালীমন্দির প্রতিষ্ঠা করতে। পর দিন সকালে স্বপ্নের কথা শুনে মন্ত্রীর পরামর্শে কৃষ্ণচন্দ্র জঙ্গল পরিষ্কার করে সেখানে দক্ষিণাকালীর মূর্তি প্রতিষ্ঠার জন্য মন্ত্রীকে বলেন।রাজার নির্দেশ মতো বন জঙ্গল পরিষ্কার করে তৈরী হয় মন্দির শুরু হয় তৈরী। মন্দির তৈরী হলে দেবী দক্ষিনা কালীর মূর্তি স্থাপন করে শুরু হয় দেবী আরাধনা। সেই পরম্পরা আজও চলছে। যদিও সেই রাজাও নেই সেই রাজত্ব ও নেই। তবু দেবী দক্ষিনা কালী স্বমহিমায় বিরাজ করছেন এই মন্দিরে।

 

একাধিক কিংবদন্তী এবং অলৌকিক ঘটনার কথা শোনা যায় এই পুজোকে কেন্দ্র করে। শোনা যায় কৃষ্ণ চন্দ্র পরবর্তী সময়ে মন্দিরের কাঠামো ভেঙে পড়লে সেখানে টাকির রায়চৌধুরী জমিদারেরা কাছারিবাড়ি করেন।স্থানীয় এক সাধককে সাময়িক ভাবে পুজোর দায়িত্ব দেয়া হয়।এক রাতে দেবী সেই সাধককে স্বপ্নে জানান যে এখানে কালী মন্দির নির্মাণের করতে হবে । জমিদার বাবুর কানে পৌছায় সেই খবর। সাথে সাথে একটি অস্থায়ী মন্দির করে আবার দেবীকে সেখানে শাস্ত্র মতে স্থাপন করা হয়।পরবর্তীকালে টাকির জমিদার সূর্যকান্ত রায়চৌধুরী পাকা মন্দির তৈরি করেন।

 

কয়েক শতাব্দী ধরে দেবী এখানে পূজিতা হচ্ছেন একই ভাবে।ভক্তদের বিশ্বাস, মা কালী এখানে লালপাড় শাড়ি পরে ভক্তদের খোঁজ নিতে গভীর রাতে গ্রামে ঘুরে বেড়ান।

 

এই মন্দিরে পুজোর ক্ষেত্রে বিশেষ করে ভোগের ক্ষেত্রে কিছু বৈচিত্র চোখে পড়ে।মটর ডালে কচুরমুখির সঙ্গে এঁচোড়-চিংড়ি ও সাদা ভাতের ভোগ রান্না হয় মাটির হাঁড়িতে।জনশ্রুতি আছে

এক বার মন্দিরের পুকুরের পোনা মাছ ধরে রান্না হয়। ভোগ খেতে খেতে বসে সবাই দেখেন, তা চিংড়ি মাছ। সেই থেকে সেবাইতদের রান্না করা ভোগে চিংড়ি মাছ দেওয়ার রীতি চালু করেন।

 

বসিরহাট সংলগ্ন একাধিক গ্রামে এই দেবী সর্বাধিক জাগ্রত এবং প্রসিদ্ধ। এই পুজোই একমাত্র বড়ো পুজো হিসেবে পালিত হয়।

দ্বিতীয় মৃন্ময়ী মূর্তি তৈরী হয়না এই মন্দির সংলগ্ন এলাকায়।

 

পরবর্তী পর্বে ফিরে আসবো বাংলার এক অন্য প্রাচীন কালী মন্দিরের ইতিহাস এবং

অনেক অলৌকিক ঘটনানিয়ে।

পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

বাংলার কালী – যোগমায়া কালীর পুজো

বাংলার জেলায় জেলায় বিভিন্ন কালী মন্দিরকে ঘিরে রয়েছে বহু ইতিহাস। সেইরকমই এক অলৌকিক ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে ঝাড়গ্রামের যোগমায়া মন্দিরের সাথে রয়েছে এক অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ।

 

এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা হাড়িরাম দাস নামে এক মাতৃ সাধক।শোনা যায় তিনি তন্ত্রসিদ্ধ হয়ে স্বপ্নাদেশে দেবীকে কন্যারূপে পেয়েছিলেন।

আজ থেকে প্রায় একশ বছর আগের ঘটনা হাড়িরামের কন্যা মাত্র দেড় বছরে অসুস্থ হয়ে মারা যায় মেয়েকে হারিয়ে উন্মাদের মতো হয়ে যান হাড়িরাম। গ্রামের অদূরে শ্মশানের মাটি চাপা দিয়ে সমাহিত করেন মেয়েকে। কিন্তু সন্তানহারা বাবার মন সর্বক্ষণই মেয়ের জন্য কেঁদে উঠত। রাত হলেই শ্মশানে গিয়ে মাটি সরিয়ে মেয়ের দেহ বুকে চেপে কান্নায় ভেঙে পড়তেন তিনি। এই শ্মশানে এক গভীর রাতে দেবী যোগমায়ার দর্শন পেলেন হাড়িরাম। দেবী জানালেন, এভাবে রোজ মেয়ের দেহ দেখতে আসার দরকার নেই। তিনিই কন্যারূপে হাড়িরামের ঘরে আসবেন।

 

তারপর দেবীর আদেশে বাড়ির উঠোনে বেলগাছের তলায় পঞ্চমুণ্ডির আসনে সাধনা শুরু করলেন তিনি। এক অমাবস্যায় সিদ্ধিলাভ হল।

তৈরী হলো মাটির একটি ছোট্ট মন্দির যোগমায়াকে প্রতিষ্ঠা করেন হাড়িরাম। নিজের কন্যা রূপে যোগ মায়া কে পেয়েছিলেন তিনি।

 

দ্রুত যোগমায়া দেবীর মাহাত্ম্য ছড়িয়ে পড়ল চারিদিকে। হাড়িরামের মৃত্যুর পর মন্দিরের পাশেই তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। পরে তাঁর স্ত্রী মনোরমার মৃত্যু হলে তাঁকেও হাড়িরামের সমাধির পাশেই সমাধিস্থ করা হয়। পরবর্তীতে ভক্তদের দানে সেখানে তৈরি হয়েছে সমাধি মন্দির। মন্দিরে মায়ের বিগ্রহের পাশেই রয়েছে হাড়িরামের মূর্তিও। দেবীর পুরনো মাটির মূর্তি প্রতি বছর নবকলেবর ধারণ করে।আজও বংশ পরম্পরায় হাড়িরামের পরিবারের সদস্যরাই পুজো করেন।

 

কালীপুজোর রাতে এখানে প্রচুর ভক্ত আসেন। গভীর রাতে হয় পুজো।ভক্তিভরে মায়ের কাছে প্রার্থনা জানালে মা ভক্তের কথা শোনেন।

সেই বিশ্বাসেই বহু মানুষ আসেন।

 

ফিরে আসবো আগামী পর্বে বাংলার কালী নিয়ে।

চলতে থাকবে এই ধারাবাহিক আলোচনা।

পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

বাংলার কালী – ধন্যন্তরী কালীর পুজো

আজ আপনাদের দক্ষিন বঙ্গের জয়নগরে অবস্থিত অতি প্রাচীন ধন্যন্তরী কালীর কথা জানাবো । এই পুজোর সাথে জড়িত আছে

তান্ত্রিক ভৈরবানন্দ এবং স্থানীয় চক্রবর্তী পরিবারের নিষ্ঠাবান মাতৃ সাধক রাজন্যনাথ চক্রবর্তীর নাম।

 

ইতিহাস বলছে বারো ভুঁইঞার এক ভুঁইঞা ছিলেন রাজা প্রতাপাদিত্য। তাঁর সঙ্গে সম্রাট জাহাঙ্গিরের বিবাদ হয়। প্রতাপাদিত্যকে বন্দি করেছিলেন দিল্লির সম্রাট। বন্দি অবস্থাতেই মৃত্যু হয় রাজার। রাজা প্রতাপাদিত্যর সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিলো চক্রবর্তী পরিবারের তাই এই পরিবারের সদস্যদেরও তখন হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে বাদশার সেনা বাহিনী ধরা পরলে তাদের কড়া শাস্তি হবে প্রায় মৃত্যু দন্ড নিশ্চিত।এই পরিস্থিতিতে বংশকে রক্ষা করতে জলে জঙ্গলে ঘেরা দক্ষিণ বঙ্গের জয়নগর অঞ্চলে এসে বসবাস করতে শুরু করেন তারা।

 

একবার হঠাৎ করে কী ভাবে যেন তান্ত্রিক ভৈরবানন্দের সন্ধান পেয়ে গেলেন চক্রবর্তী বংশের অন্যতম প্রাণ পুরুষ রাজন্যনাথ চক্রবর্তী৷

তিনি শুনলেন গভীর জঙ্গলে সাধনা করছেন সাধক ভৈরবানন্দ। তিনি পৌঁছে গেলেন সেই গহন অরণ্যে ভৈরবানন্দ তখন সেখানে তপস্যারত দু’জনের মুখোমুখি সাক্ষাৎ হল। সাধক ভৈরবানন্দ রাজন্যনাথ বললেন, ‘‘আমি স্বপ্নাদেশ পেয়েছি৷ জেনেছি, মা আদি গঙ্গায় রয়েছেন।’’ তারপরে, রাজনন্যনাথের চেষ্টায় সেই আদি গঙ্গা থেকে উদ্ধার হল মা কালীর কষ্টি পাথরের মূর্তি৷ সেই মূর্তি তুলে নিয়ে এসে প্রাণ প্রতিষ্ঠা হল পর্ণকুটিরে।রাজন্যনাথের হাতে মা ধন্বন্তরির পুজোর দায়িত্ব দিয়ে অন্যত্র চলে যান ভৈরবানন্দ৷ তারপর ধীরে ধীরে গড়ে উঠলো মন্দির দ্রুত ছড়িয়ে পড়লো মায়ের খ্যাতি আজও জয়নগরে দেবী পূজিত হচ্ছেন মা ধন্বন্তরি কালী রূপে৷

 

দেবী এখানে ধন্যন্তরী নামে কেনো পূজিতা হন তারও একটা কারন আছে।লৌকিক বিশ্বাস মতে এই মায়ের আশীর্বাদী ওষুধে সেরে যায় বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা ৷ ফলে দূর দূরান্ত থেকে মানুষ আসতে শুরু করেন মায়ের আশীর্বাদি প্রসাদ পেতে এখানে মা হয়ে ওঠেন ধন্বন্তরি কালী মা৷

 

আজও সেই চক্রবর্তী পরিবার পুজোর দায়িত্বে আছে যদিও এই পুজো এখন সমগ্র দক্ষিণ বঙ্গের মানুষের পুজো। এখানে কালী পুজোয় নিষ্ঠাভরে তন্ত্র মতে মায়ের পুজো হয়। ঐতিহ্য মেনে দীপান্বিতা অমাবস্যার রাতে ছাগ বলি হয় এখানে। এছাড়া, মায়ের আবির্ভাব তিথি উপলক্ষে

বৈশাখ মাসেও বিশেষ পুজো হয়। বিশেষ

পুজোর সময়ে মাকে ষোড়শী, জগদ্ধাত্রী, মালিনী

সহ নানা রূপে সাজানো হয়।

 

ফিরে আসবো বাংলার অন্য একটি ঐতিহাসিক এবং প্রাচীন কালী পুজোর ইতিহাস নিয়ে। থাকবে বহু অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

বাংলার কালী – সরিষার কাঠের কালীর পুজো

সে আজ থেকে প্রায় তিনশো বছর আগের কথা মুড়াগাছার জমিদার বরদাপ্রসাদ রায়চৌধুরীর প্রতিপত্তি ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা দক্ষিণ বঙ্গে তিনি ছিলেন শিবের তবে আজ আলোচনা করবো তার প্রতিষ্ঠিত একটি কালী মন্দির নিয়ে।এই কালী মন্দিরটি রয়েছ ডায়মন্ড হারবারের সরিষা গ্রামে

 

স্থানীয়দের মধ্যে এই প্রাচীন কালী মন্দির নিয়ে একাধিক জনশ্রুতি প্রচলিত আছে। শোনা যায় এক সময় এই সব অঞ্চলে বসন্ত রোগের ভয়ানক প্রকোপ দেখা দেয়। প্রজারা আসেন জমিদার বাবুর কাছে সমাধানের। চিন্তিত হয়ে পড়েন বরদাপ্রসাদ। তখনই এক রাতে দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে কালী মন্দির নির্মাণ করেন।

 

দেবীর নির্দেশেই মন্দিরের জন্য নির্বাচিত স্থানের পশের এক পুকুর থেকে কাঠ উদ্ধার করে সেই কাঠ দিয়ে তৈরি হয় কালীমূর্তি। সেই কাঠের কালীমূর্তিকেই আজও পুজো করেন সরিষা গ্রামের মানুষ।এই কারণে এই দেবীকে অনেকেই কাঠের কালী নামে চেনেন।

 

পরবর্তীতে বরদাপ্রসাদের বিরাট জমিদারির অধিকাংশ জমি এবং প্রভাব প্রতিপত্তি চলে যায় স্থানীয় হালদার পরিবারের হাতে সেই সঙ্গে মন্দিরের পুজো এবং রক্ষনাবেক্ষণের দায়িত্ব চলে যায় এই হালদার পরিবারের হাতে। সেই থেকে মন্দির ও মূর্তি দুই আগলে রেখেছেন হালদার পরিবারের সদস্যরা ।

 

আজও এই পুজো একই রীতিনীতি মেনে পালন করে আসছেন হালদার পরিবার। এই পুজোকে কেন্দ্র করে রয়েছে একাধিক রীতি নীতি।

শোনা যায় কালীপুজোর দিন এই গ্রামে অন্য কোথাও কালী পুজো হয় না। আগে একাধিকবার গ্রামবাসীরা বারোয়ারি কালীপুজোর উদ্যোগ নিলেও বিভিন্ন অঘটন ঘটেছে। সেই থেকে এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলে কাঠের কালীর পুজোই প্রায় একমাত্র এবং প্রধান পুজো।

 

সব নিয়ম মেনে দেবীর নিত্যপুজো হয় এখানে। তবে কালীপুজোর সময় বিশেষ পুজোর আয়োজন হয়। দেবীকে প্রতিদিন অন্নভোগ দেওয়া হয়। তবে কালীপুজোর সময় দেবীমূর্তির  সামনে হয় তন্ত্র মতে পশু বলির রীতি আছে। নিয়ম রক্ষা করে প্রতি বছর মাছ বলি হয় । এছাড়া সবজি বলি দেওয়া হয়। সেই বলির মাংস, মাছ ও সবজি নিয়ে মায়ের অন্নভোগের আয়োজন করা হয় মন্দিরে।

পরবর্তীতে ভোগ বিতরণ হয়। কালীপুজোর সময়ে বিশেষ পুজো উপলক্ষে সারারাত ধরে এখানে ভক্তদের ভিড় হয়।

 

ফিরে আসবো বাংলার কালীর পরবর্তী পর্ব নিয়ে যথা সময়ে। থাকবে এমনই এক ঐতিহাসিক এবং প্রাচীন কালী পুজোর কথা।পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন।ধন্যবাদ।

 

 

বাংলার কালী – উগ্র তারা মায়ের পুজো

আজকের বাংলার কালীতে আপনাদের জানাবো মেদিনীপুর জেলা তথা শহরের অন্যতম কালী মন্দির বা শ্মশানকালী মন্দির নিয়ে যা উগ্র তারা মায়ের মন্দির নামেও খ্যাত।

 

আজ থেকে দেড়শো বছর আগে।তান্ত্রিক পশুপতি মুখোপাধ্যায়ের তন্ত্র মতে তারা মায়ের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে এখানে পুজোর সূচনা করেন। সেই পুজোই আজও চলে আসছে।শোনা যায় তারও অনেক আগে এক অজ্ঞাতনাম তান্ত্রিক এখানে শব সাধনা করেছিলেন এবং সেই সময়ে তিনি তান্ত্রিক মতে এক শবের অস্থি সংগ্রহ করে সাধনার জন্য মায়ের মূর্তি তৈরি করে এখানে পুজো শুরু করেন ৷ সেই পরম্পরা পরবর্তীতেও বজায় থাকে।

 

বর্তমানেও অস্থি দ্বারাই মায়ের মূর্তি তৈরি হয়।

প্রতি বারো বছর অন্তর নবকলবরে এই মূর্তি বিসর্জন দিয়ে নতুন মূর্তি তৈরি হয়। পঞ্চমুণ্ডের আসনে বসে উগ্রতারা মায়ের পুজো করেন বর্তমান পুরোহিতরা সব কিছুই পরিচালিত হয় তন্ত্র মতে।

 

এই পুজোর বিশেষত্ব হলো এই পুজোয় দেওয়া হয় মায়ের প্রিয় খাবার শোল মাছ পোড়া । এছাড়াও এই প্রতিমার দুই পাশে তাঁর দুই সহচরী সর্বদা বিরাজমান।বারো বছর অন্তর নব কলেবরের সময় শুধু অস্থি রেখে দেওয়া হয় ৷ সেই অস্থি দিয়ে আবার নতুন করে প্রতিমা তৈরি করা হয়।

 

শোনা যায়।এখানে মা কালী অত্যন্ত জাগ্রত। মন থেকে কোনও কিছু প্রার্থনা করলে মা খালি হাতে ফেরান না।শহর ছাড়াও ভিন রাজ্য থেকে অনেকে আসেন মায়ের মন্দিরে পুজো দিতে।

 

বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত কালী পুজো

গুলির ইতিহাস নিয়ে চলতে থাকবে বাংলার কালী।

ফিরে আসবো আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

বাংলার কালী : ভৈরবেশ্বরী কালীর পুজো

আজ আপনাদের বর্ধমানের আরো এক প্রসিদ্ধ কালী ক্ষেত্রর কথা জানাবো যা প্রায় তিনশো বছরের প্রাচীন। শুধু তাইনা এই দেবী মূর্তি নীম কাঠ দিয়ে তৈরী।

 

বর্ধমান রাজ পরিবারের এক পূৰ্ব্ব পুরুষ ভৈরবচাঁদ কাপুর ছিলেন নিঃসন্তান। মা কালীর প্রতি যেমন তাঁর অগাধ ভক্তি ছিল।তেমনই তিনি মা কালীর আরাধনাও করতেন।তিনি ছিলেন নিঃসন্তান সন্তান। সন্তান কামনায় প্রতিদিন মায়ের কাছে প্রার্থনা জানাতেন। তাঁর কাতর প্রার্থনায় মা কালী একদিন রাতে ভৈরবচাঁদ কাপুরকে স্বপ্ন দেন এবং দেবী বলেন যে “তোর সন্তানের জন্য দুঃখ কিসের। আমিই তোর সন্তান হয়ে, তোর মেয়ে হয়ে তোর কাছে থাকব কথা দিচ্ছি”।

 

তারপরই এক মাঘ মাসের রটন্তী চতুদ্দশীর দিন নিমকাঠের কালী মূর্ত্তি তৈরী করে মন্দির নির্মাণ করে মাকে প্রতিষ্ঠা করেন ভৈরবচাঁদ কাপুর। সেই থেকেই মায়ের পুজোর শুরু।খুব সম্ভবত ভৈরবের

নাম থেকেই দেবীর নাম ভৈরবেশ্বরী হয়।

 

ভৈরবেশ্বরী মন্দির দক্ষিণমুখী। মন্দিরে নিম কাঠের তৈরী প্রাচীন কালী মূৰ্ত্তি আছে।

এছাড়াও রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহ, গৌর নিতাই মূর্ত্তি, নারায়ণ শিলা এবং আরো, অনেক বিগ্রহের নিত্য পুজো এই মন্দিরে হয়। বাৎসরিক কালী পূজায় এবং প্রতিষ্ঠা দিবসে অর্থাৎ মাঘ মাসের রটন্তী চতুর্দশীতে পশু বলী সহ তন্ত্র মতে মহা সমারোহে পুজো অনুষ্ঠিত হয় এবং সেই উপলক্ষে

বহু ভক্তের সমাগম হয়।

 

বিশেষজ্ঞদের মতে এই ধরনের নিম কাঠে

দিয়ে তৈরী কালী মূর্ত্তি নাকি একমাত্র পুরীর জগন্নাথ দেবের মন্দিরেই আছে। অনেকের মতে এই কালী মূর্তি ভারতবর্ষের মধ্যে দ্বিতীয়

নিম কাঠের কালী মূৰ্ত্তি।

 

ফিরে আসবো আগামী পর্বে। থাকবে অন্য

এক কালী মন্দিরের ইতিহাস এবং নানা

অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ।পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।