কালী কথা – বর্ধমানের সিধুমার পুজো
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
বর্ধমানের কোলসরা গ্রামের একমাত্র আরাধ্যা দেবী সিধু মা। এই দেবী এখানে এতটাই প্রসিদ্ধ এবং জাগ্রত যে অন্য অন্য দেবীর পুজোর এখানে এক প্রকার নিষিদ্ধ বলা যায়। সিধুমার প্রতি স্থানীয়দের ভয় এবং ভক্তি এতটাই বেশি যে পুজো তো দূরস্ত, সোশ্যাল মিডিয়ায় দেবী কালীর ছবি দেখলেও মুছে দেওয়া হয় এই গ্রামে!
পঞ্জিকাতেও লাল কালি দিয়ে মা কালীর নাম কেটে দেওয়া হয়। আজকের কালী কথা এই
সিধু মাকে নিয়ে।
দেবী এই স্থানে সিদ্ধেশ্বরী রূপে বিরাজ করছেন যাকে সবাই সিধুমা বলেই ডাকেন।এই সিধুমা দেবী কালীরই একটি রূপ ।দেবী খড়্গহস্তা, অসুরের মুণ্ডহাতে এবং মুণ্ডমালিনী।
এই দেবীর পুজো মূলত ঘোষাল বাড়ির কালীপুজো নামেই পরিচিত ছিলো পরে এই পুজো সমস্ত এলাকা বাসি আপন করে নেয়। আজ এই সিধুমা সমগ্র এলাকার একমাত্র আরাধ্যা দেবী হয়ে গেছেন।
গ্রামবাসীরা মনে করেন অন্য কোনো দেবী পূজায় সিধু মা রুষ্ট হতে পারেন। সেই ভয়ে পূজিতা হয় না অন্য কোনো দেবী। গ্রামের কোনো বাড়িতেই ছবি, ক্যালেন্ডারে কিংবা মূর্তিতে কালীর ছবি কেউ রাখেন না। পাঁচ শতাব্দী ধরে এই প্রথা
চলে আসছে কোলসরায়।
এই পুজোর ইতিহাস অতী প্রাচীন এবং পুজোর সাথে জড়িত আছে সম্রাট শের শাহর নাম।
জনশ্রুতি আছে পাঁচশো বছর আগে ঘোষাল পরিবারের দিগম্বর ঘোষাল সম্রাট শের শাহের নির্দেশে গ্রাণ্ড ট্রাঙ্ক রোড বা বর্তমানের জি টি রোড তৈরীর কাজ দেখাশোনা করতে আসেন এখানে তিনি সেই সময়ে এই অঞ্চলে দিয়ে বয়ে যাওয়া কংস নদীর তীরে একদিন রাত কাটান। সেইদিনই দেবী সিদ্ধেশ্বরী তাঁকে স্বপ্নাদেশ দিয়ে প্রতিষ্ঠা মন্দির করার নির্দেশ দেন। পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দিগম্বর ঘোষাল তাঁর স্বপ্নাদেশের কথা জানান সম্রাট শের শাহকে। শের শাহের দান করা পাঁচশো বিঘা জমিতে এই কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়।
সেই থেকে দেবী এই স্থনের একমাত্র স্বীকৃত
এবং রক্ষাকত্রী দেবী রূপে অধিষ্ঠান করছেন।
ফিরে আসবো কালী কথা নিয়ে আগামী পর্বে। থাকবে এমনই এক ঐতিহাসিক কালী পুজো নিয়ে আলোচনা। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।