ভক্তের ভগবান – কৃষ্ণ সুদামা
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
ভক্ত এবং ভগবানের সম্পর্ক নিয়ে কথা বলতে গেলে শ্রী কৃষ্ণ এবং তার সখা এবং ভক্ত সুদামার প্রসঙ্গ উঠবেই।আজকের পর্বে এই দুই জনের বন্ধুত্ব নিয়ে লিখবো।
বৃন্দাবনের একটি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণকারী সুদামা এবং ভগবান কৃষ্ণ ছিলেন সহপাঠী যারা বৃন্দাবনে আচার্য সন্দীপনের আশ্রমে অধ্যয়ন করতেন এবং তখন থেকেই তাদের বন্ধুত্ব তৈরী হয়। কৃষ্ণের বাল লীলার প্রায় প্রতিটি পর্বে সুদামা স্বমহিমায় বিরাজমান।
কৃষ্ণ এবং সুদামা উভয়েই শিক্ষা সমাপ্ত করে নিজ নিজ গৃহে চলে যান। পরবর্তীতে যেখানে কৃষ্ণ দ্বারকা রাজ্যের সিংহাসন লাভ করেন অন্যদিকে সুদামা দারিদ্র্যতার জীবনে আবদ্ধ হয়ে পড়েন । এতো কিছুর পরেও তার ভক্তি, অনুরাগ এবং কৃষ্ণপ্রেম অব্যাহত ছিল।তিনি জানতেন বন্ধু তাকে ভুলবেননা। একদিন আবার ভক্ত এবং ভগবানের মিলন ঘটবেই।
সুদামার সর্বদা অর্থের অভাব ছিল। প্রায়শই তার বাচ্চারা রাতে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। বহু বছর পরেও কৃষ্ণের প্রতি সুদামার ভালোবাসা কমেনি এবং প্রভুর গল্প তার বাচ্চাদের শোনাতেন। তার স্ত্রী সুশীলা একবার তাকে জোর করে ভগবান কৃষ্ণের সাথে দেখা করতে পাঠান।
সুদামা তার স্বাভাবিক মলীন এবং ছেঁড়া কাপড় পরে সম্পূর্ণ খালি পায়ে দ্বারকার উদ্দেশ্যে রওনা হলেন।মনে অনেক প্রশ্ন ভগবান কৃষ্ণ কি তাকে চিনবেন? তাঁকে দেখে কৃষ্ণের প্রতিক্রিয়া কী হবে? প্রহরীরা কি তাকে কৃষ্ণের সাথে দেখা করতে দেবে? কেউ কি বিশ্বাস করবে যে আমি কৃষ্ণের বন্ধু?
অবশেষে ক্ষুধার্ত এবং ক্লান্ত সুদামা দ্বারকায় পৌঁছেন।দ্বারকার সৌন্দর্যে বিস্মিত হয়ে সুদামা কৃষ্ণের দুর্গ খুঁজতে থাকেন। রক্ষীরা তাকে অপমান করে দুর্গে প্রবেশ করতে বাধা দেয়।কীভাবে একজন ভিক্ষুকের সাথে কৃষ্ণর বন্ধুত্ব থাকতে পারে তা ভেবে তারা অবাক।
এদিকে কৃষ্ণের আগমনের খবর পৌছায় দ্বারকার অন্দর মহলে।সুদামা প্রধান ফটকে দাঁড়িয়ে আছেন শুনে কৃষ্ণ সরাসরি মূল ফটকের দিকে দৌড়ে গেলেন। কৃষ্ণের চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে শুরু করে।আবেগে ভরা হৃদয় নিয়ে কৃষ্ণ সুদামাকে জড়িয়ে ধরে তাঁর সিংহাসন অর্পণ করেন । তিনি তার অশ্রু দিয়ে সুদামার পা ধুয়ে দিলেন। বসালেন স্ত্রী রুক্মিণীর আসনে। কিছু দিন সেবা এবং আতিথ্য গ্রহন করে সুদামা জাগতিক কিছু না চেয়ে খালি হাতেই ফিরে এলেন।
গ্রামে ফিরে দেখলেন তার পুরানো এবং ভাঙা কুঁড়েঘরটি একটি জমকালো প্রাসাদে রূপান্তরিত হয়েছে। স্ত্রীও রাজ রানী হয়েছেন। দারিদ্রতার অভিশাপ মুছে গেছে।সুদামা বুঝতে পেরেছিলেন যে এটি তাঁর লীলা ধর , তাঁর প্রিয় ভগবান শ্রী কৃষ্ণের লীলা। ভক্তের প্রতি ভগবানের অসীম করুন হয়েছে।
একদিকে কৃষ্ণের মতো বন্ধু পেয়ে সুদামা যেমন ভাগ্যবান তেমনই সুদামার ন্যায় ভক্ত বা বন্ধু পেয়ে কৃষ্ণও ধন্য।
আবার অন্য এক ভক্ত এবং তার ভগবানের কথা নিয়ে ফিরে আসবো আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন। ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।