Home Blog Page 4

দেবী লক্ষীর আবির্ভাব এবং বিবাহ

দেবী লক্ষীর আবির্ভাব এবং বিবাহ

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

এবছরের মতো দূর্গা পুজো শেষ। আবার এক বছরের অপেক্ষা তবে মা দূর্গা কৈলাশ পাড়ি দিলেও রেখে গেছেন তার কন্যা লক্ষীকে। আর কয়েক দিন পরেই লক্ষী পুজো। লক্ষী পুজো উপলক্ষে আজ থেকে শুরু করছি দেবী লক্ষী কে নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা।আজকের পর্বে জানাবো কে দেবী লক্ষীর আবির্ভাবএবং

তার বিবাহ সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

 

দুর্বাসা মুনির শাপে স্বর্গ একদা শ্রীহীন বা লক্ষ্মী-ছাড়া হয়ে যায়। তখন বিষ্ণুর পরামর্শে স্বর্গের ঐশ্বর্য ফিরে পাবার জন্য দেবগণ অসুরদের সাথে নিয়ে সমুদ্র-মন্থন শুরু করেন। সেই ক্ষীর-সমুদ্র মন্থনের ফলে উঠে আসল নানা রত্ন, মণি-মাণিক্য, অমৃতসুধা আরও কত কি। এসব ছাড়াও সমুদ্র-মন্থনের ফলে উঠে আসলেন লক্ষ্মী দেবী এবং ঠাই পেলেন বিষ্ণুর বক্ষে।

 

স্কন্দ পুরানে নারায়ণ লক্ষীর বিবাহের উল্লেখ আছে।লক্ষ্মী দেবী নারায়ণ বা বিষ্ণুকে পতি রূপে পাওয়ার জন্য সমুদ্রের মধ্যে প্রবেশ করে বহুকাল কঠোর তপস্যা করেন।তখন ইন্দ্রা বিষ্ণুর ছদ্মবেশে লক্ষ্মীর নিকট উপস্থিত হলে লক্ষ্মী দেবী তাকে বিশ্বরূপ দেখাতে বলেন। কারণ লক্ষ্মী দেবী জানতেন যে, একমাত্র বিষ্ণুই বিশ্বরূপ দেখাতে সক্ষম। কিন্তু কেউই বিশ্বরূপ দেখাতে না পেরে লজ্জিত হয়ে চলে যান। তাঁরপর লক্ষ্মীর তপস্যায় তুষ্ট হয়ে একদিন বিষ্ণু নিজে লক্ষ্মীর নিকট উপস্থিত হলেন এবং তাঁর ইচ্ছায় বিশ্বরূপ দেখালেন। তারপর তাদের বিবাহ সম্পন্ন হয়।

 

আবার লৌকিক মতে দেবী লক্ষী শিব দুর্গার সন্তান তাই দেবী দুর্গার সাথে মর্তে আসেন দূর্গা পুজোর সময়ে এবং বিজয়ার পর কোজাগরী পূর্ণিমায় দেবীর পুজো হয়। দেবী লক্ষী প্রসন্ন হলে অর্থ সম্পদ এবং সমৃদ্ধি লাভ হয়।

 

ফিরে আসবো পরের পর্বে দেবী লক্ষীর পুজো সংক্রান্ত আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সাথে নিয়ে।

পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

বিজয়া দশমীর শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা

বিজয়া দশমীর শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা

পন্ডিত ভৃগুর শ্রী জাতক

বিজয়া দশমী মানে মা ফিরে যাবেন কৈলাশে|তারপর আবার এক বছরের প্রতীক্ষা|তবে প্রকৃত অর্থে এটি দুক্ষের দিন নয় গৌরবের দিন|অন্তত শাস্ত্র তাই বলছে|আসুন জেনে নিই এই বিজয়া দশমী সম্পর্কে আমাদের সনাতন ধর্ম শাস্ত্র
ঠিক কি বলছে|

বিজয়া ও দশমী এই দুই শব্দের মধ্যেই লুকিয়ে আছে সব প্রশ্নের উত্তর ও শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা|আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের দশমী তিথিতে পিতৃ গৃহ ছেড়ে কৈলাসে স্বামীগৃহে পাড়ি দেন দেবী|তাই দশমী শব্দটি ব্যবহিত হয়|

এবার যদি বিজয়া শব্দটির বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখা যাবে পুরান অনুসারে নয় দিন ও নয় রাত্রি যুদ্ধ করার পর দশম দিনে দেবী মহিষাসুরকে বধ করে বিজয় লাভ করেন|অর্থাৎ বিজয়া রূপে আত্মপ্রকাশ করেন|তাই এই দিন টি বিজয়া দশমী রূপে চিহ্নিত হয়|

বিজয়া দশমীর সাথে সম্পর্ক রয়েছে নীল কণ্ঠ পাখির। আগে রাজা জমিদার রা তাদের বাড়ির পুজোতে দশমীর দিন নীল কণ্ঠ পাখি ওড়াতো। এই নিয়মের ও শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা আছে।

রামায়ণ অনুসারে রাবণকে বধ করার সময়
রাম নীলকন্ঠ পাখি দেখতে পেয়েছিলেন। তাই এই পাখিকে শুভ শক্তির প্রতীক বলে মনে করা হয়ে থাকে। দশমীর দিন যদি নীলকন্ঠ পাখি দেখতে পাওয়া যায় তাহলে পাপ মুক্তি ঘটে এবং মনের সমস্ত সাধ পূরণ হয় বলে বিশ্বাস করা হয়।

আবার পুরান অনুসারে সমুদ্র মন্থন করা হয়, তখন দেবাদিদেব সেই বিষ পান করেন এবং তাঁর কণ্ঠ নীল বর্ণের হয়ে যান। তাই তাঁকে নীলকন্ঠ বলা হয়ে থাকে। আর এই নীলকন্ঠ পাখিকে তাঁরই প্রতিরূপ মনে করা হয় বাংলায়। আর তাই হিন্দু মতে মনে করা হয় দশমীর দিন দেবীর নিরঞ্জনের আগে যদি নীলকন্ঠ পাখি ওড়ানো হয় তাহলে সেই পাখি কৈলাশে গিয়ে মহাদেবকে খবর দেবে যে তাঁর ঘরণী ফিরছে।

আবার উত্তর ও মধ্য ভারতে এই দিনে দশেরা উদযাপিত হয়|’দশেরা’ শব্দটির উৎপত্তি সংস্কৃত শব্দ ‘দশহর’ থেকে এবং এখানে মূলত রাম কতৃক দশানন রাবন বোধের দিনটিকে উদযাপন করা হয়|বাল্মীকি রামায়ণ অনুসারে আশ্বিন মাসের শুক্লা দশমী তিথিতেই লঙ্কেশ্বর রাবণকে বধ করেছিলেন রাম ওই দিনটাই দশেরা এবং আশ্বিন মাসের তিরিশ তম দিনে যে দিন অযোধ্যা প্রত্যাবর্তন করেন রাম সেদিনটি দীপাবলি রূপে পালিত হয়|

অর্থাৎ এই দিন টা যথার্থ অর্থেই গৌরবের|
তাই হয় তো স্নেহের আলিঙ্গন এবং মিষ্টি বিতরণের প্রচলন|তবু মন খারাপ থাকতেই পারে কারন নয় দিন ব্যাপী উৎসবের আজ সমাপ্তি|সবাইকে জানাই শুভ বিজয়া।

দীপাবলি আসছে, আলোর উৎসবে আবার মেতে উঠবে দেশ|জ্যোতিষ ও তন্ত্র জগতের ক্ষেত্রে সর্ব শ্রেষ্ট সময় দীপান্বিতা অমাবস্যা আর কদিন পরেই|দীপান্বিতা অমাবস্যা উপলক্ষে। বিশেষ
পর্বগুলি নিয়ে ফিরে আসবো যথা সময়ে।
পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

নব রাত্রি – দেবী কাল রাত্রি

নব রাত্রি – দেবী কাল রাত্রি

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

নব দুর্গার সপ্তম রূপ হল কালরাত্রি।যার পুজো হয় নব রাত্রির সপ্তম রাতে।আজকের পর্বে দেবীর এই রূপের ব্যাখ্যা আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।

 

বিভিন্ন অস্ত্র ও গহনায় সজ্জিত হয়ে দেবী ধরা দেন কালরাত্রি রূপে|দেবী কৃষ্ণবর্ণা ও ত্রিনয়না|দেবীর বাহন গর্ধব|চতুর্ভুজা দেবী ভীষণদর্শনা|দেবীর তিন হাতে অস্ত্র | এক হাতে ভক্তদের প্রতি বরাভয়।

 

দেবীর কালরাত্রি রূপের আরাধনায় কেটে যায় সব সংকট| শাক্ত শাস্ত্রানুযায়ী, “সেই দিন সাধকের মন সহস্রার চক্রে অবস্থান করে। তাঁর জন্য ব্রহ্মাণ্ডের সকল সিদ্ধির দ্বার উন্মুক্ত হয়ে যায়। এই চক্রে অবস্থিত সাধকের মন কাল রাত্রির আবির্ভাবের রাতে সম্পূর্ণভাবে মাতা কালরাত্রির স্বরূপে বিলীন হয়ে যায়।

 

শাস্ত্র মতে তাঁর সাক্ষাৎ পেলে সাধক মহাপুণ্যের ভাগী হন। তাঁর সমস্ত পাপ ও বাধাবিঘ্ন নাশ হয় এবং তিনি অক্ষয় পুণ্যধাম প্রাপ্ত হন।হিন্দুদের বিশ্বাস করেন, কালরাত্রি দুষ্টের দমন করেন, গ্রহের বাধা দূর করেন এবং ভক্তদের আগুন, জল, জন্তুজানোয়ার, শত্রু ও রাত্রির ভয় থেকে মুক্ত করেন।তারা বিশ্বাস করেন, কালরাত্রির উপাসক তাকে স্মরণ করলেই দৈত্য, দানব, রাক্ষস, ভূত ও প্রেত পালিয়ে যায়।কালরাত্রির রূপ ভয়ংকর হলেও তিনি শুভফলের দেবী।তার অপর নাম শুভঙ্করী|

 

বাংলার দুর্গাপুজোর পাশাপাশি দেশ জুড়ে চলছে নব রাত্রি। এখনো দেবীর কয়েকটি রূপের বর্ণনা বাকি আছে আগামী পর্বে ফিরবো দেবীর পরবর্তী রূপ নিয়ে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

নব রাত্রি – দেবী কাত্যায়নী

নব রাত্রি – দেবী কাত্যায়নী

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

নব রাত্রির ষষ্ঠ রাতে পুজো করা হয় দেবী কাত্যায়নীর। আজকের পর্বে জানবো দেবী দুর্গার কাত্যায়নী রূপ সম্পর্কে।জানাবো তার রূপের মাহাত্ম এবং ব্যাখ্যা।

পুরান অনুসারে ঋষি কাত্যায়ন দেবী দুর্গাকে কন্যারূপে লাভ করার জন্য তপস্যা করেছিলেন। তাঁর তপস্যায় তুষ্ট হয়ে দেবী দুর্গা কাত্যায়নের কন্যা রূপে জন্মগ্রহণ করে ‘কাত্যায়নী’ নামে পরিচিতা হন।

দ্বিতীয় ব্যাখ্যাঅনুসারে ঋষি কাত্যায়ন প্রথম দেবী দুর্গাকে পূজা করেছিলেন বলে তার নাম অনুসারে দেবীর নাম হয় ‘কাত্যায়নী’।

দেবী কাত্যায়নী চতুর্ভুজা–তাঁর ডানদিকের দুটি হাত বর ও অভয়মুদ্রা প্রদর্শন করে, বাঁ দিকের দুই হাতে পদ্ম ও খড়্গ। দেবী সিংহবাহিনী। তাঁর গায়ের রং সোনার মতো উজ্জ্বল।

তন্ত্রসার-এর ধ্যানমন্ত্রে তাঁকে বর্ণনা করা হয়েছে দশভুজা মহিষাসুরমর্দিনী রূপে। আবার হরিবংশ গ্রন্থের বর্ণনা অনুযায়ী, তিনি অষ্টাদশভুজা।পতঞ্জলির মহাভাষ্য ও কৃষ্ণযজুর্বেদীয় তৈত্তিরীয় আরণ্যক-এ কাত্যায়নীর উল্লেখ রয়েছে। দেবীর মাহাত্ম বর্ণিত হয়েছে মার্কণ্ডেয় পুরাণ-এর অন্তর্গত শ্রীশ্রীচণ্ডী, দেবীভাগবত পুরাণ, কালিকা পুরাণ এবং বামন পুরানে।

শাস্ত্রে উল্লেখ আছে আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশীর দিন দেবী কাত্যায়নীর জন্ম। তারপর শুক্লা সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীর দিন ঋষি কাত্যায়নের পূজা গ্রহণ করে দশমীর দিন তিনি যুদ্ধ খেত্রে অসুররাজকে বধ করেছিলেন।

গৃহস্তরা দেবী কাত্যায়নীর পূজা করলে ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ–এই চার ফল লাভ করে এবং তার সমস্ত রোগ-শোক-ভয়এবং জন্ম-জন্মান্তরের পাপ দুর হয় ।

ভাগবত পুরাণ-এ আছে, বৃন্দাবনের গোপীগণ কৃষ্ণকে পতিরূপে পাওয়ার জন্য সারা মাঘ মাস জুড়ে কাত্যায়নী ব্রত পালন করেছিলেন। তাই মনোমত স্বামী প্রার্থনায় এক মাস ধরে কাত্যায়নী ব্রত পালনেরও প্রথা রয়েছে।তাছাড়া শাস্ত্র মতে যাদের সন্তান লাভ করতে সমস্যা হয় দেবী কাত্যায়নীর পুজো করলে তাদের সমস্যা দুর হয়|

কাশীর আত্মাবীরেশ্বর মন্দিরের গর্ভগৃহের একটি কুলুঙ্গিতে দেবী কাত্যায়নীর মূর্তি প্রতিষ্ঠিত।স্বামী বিবেকানন্দের মা ভুবনেশ্বরী দেবী এই আত্মাবীরেশ্বর মন্দিরে মানত করেই স্বামীজিকে পুত্ররূপে লাভ করেছিলেন বলে জনশ্রুতি আছে|আত্মাবীরেশ্বর মন্দিরে অষ্টভূজা মহিষাসুরমর্দিনীর মূর্তি রয়েছে|মূর্তিটি কষ্টিপাথরে নির্মিত, উচ্চতা এক হাত।আত্মাবীরেশ্বর শিবই দেবী কাত্যায়নীর ভৈরব। শারদীয়া ও বাসন্তী নবরাত্রির ষষ্ঠ দিনে এখানে প্রচুর ভক্তসমাগম হয়।

যারা দেবী কাত্যায়নীর পুজো করবেন তারা সকালে ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে শুদ্ধ ভাবে লাল বস্ত্র পড়ে এই বেদীর পূজা করবেন ।পূজার আগে ঠাকুররে আসন ভালো করে পরিস্কার করে দেবীর মূর্তি বা ছবিতে লাল কাপড় পড়াতে হয়। দেবীর উদ্যেশ্যে লাল ফুল নিবেদন করে এবং হাতে চন্দন মালা নিয়ে ১০৮ বার দেবীর বীজ মন্ত্র জপ করলে, দেবীর আশর্বাদ পাওয়া যায়।

নব রাত্রি উপলক্ষে চলবে ধারাবাহিক ভাবে দেবীর নয়টি রূপ নিয়ে আলোচনা|আবার ফিরে আসবো আগামী পর্বে|দেবীর পরবর্তী রূপ নিয়ে|পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

নবরাত্রি – দেবী স্কন্দ মাতা

নবরাত্রি – দেবী স্কন্দ মাতা

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

নবরাত্রির পঞ্চম দিনে দেবী স্কন্দ মাতার পূজা

করা হয়।আজ দেবী স্কন্দ মাতার মাহাত্ম এবং দেবীর স্বরূপ ব্যাখ্যা করবো।

 

শিব এবং দেবী পার্বতীর পুত্র কার্তিকের আরেক নাম স্কন্দ তাই স্কন্দমাতা পার্বতীজির অপর নাম। দেবী স্কন্দমাতা শিশু স্কন্দকে কোলে নিয়ে থাকেন।

 

দেবী চতুর্ভুজা এক হাতে তিনি স্কন্দকে ধরে রেখেছে। যেখানে অন্য দুটি হাতে তিনি দুটি পদ্ম ধারণ করেন এবং তার চতুর্থ হাতটি আশীর্বাদ দেয়ার জন্য ব্যাবহিত হয়|

 

পুরাণ অনুযায়ী দেবী স্কন্দমাতা আগুনের দেবী।স্বেত বর্ণের দেবী। তিনি একটি পদ্মের উপর উপবিষ্ট। তিনি তার ভক্তদের অমূল্য জ্ঞান দান করেন।যারা নবরাত্রির পঞ্চম দিনে বাড়িতে স্কন্দমাতার পুজো করবেন তারপর প্রথমে গঙ্গাজল দিয়ে গৃহ শুদ্ধ করুন। একটি রৌপ্য, তামা বা মাটির পাত্রে নারকেল রেখে তার পাশে একটি কলস স্থাপন করুন তাতে সাতটি সিন্দুর বিন্দু স্থাপন করুন।পুজোর সময়ে নীল বর্ণের পোশাক পড়বেন এবং ভোগে কলা অবশ্যই রাখবেন।

 

তারপর বৈদিক ও সপ্তশতী মন্ত্রের মাধ্যমে ষোড়শপচার সহ দেবীর ধ্যান করুন।

তারপর পুজোর সময় মাতৃদেবীর এই মন্ত্রটি এগারো বার জপ করা উচিত। স্কন্দমাতার এই মন্ত্রটি জপ করলে আপনার বাড়িতেও সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধি বিরাজ করবে।

 

“যা দেবী সর্বভূতেষু মা স্কন্দমাতা রূপেন সংস্থা।নমস্তস্য নমস্তস্য নমস্তস্য নমো নমঃ ”

 

এই দিনে দুর্গা সপ্তশতী কথার সপ্তম অধ্যায় পাঠ করা উচিত এবং পুজোর পর প্রসাদ শিশুদের মধ্যে বিলিয়ে দিন।

 

মা স্কন্দমাতা তাঁর ভক্তদের প্রতি অগাধ ভালবাসা এবং স্নেহ বর্ষণ করেন। দেবীর আশীর্বাদে সন্তান ভাগ্য ভালো হয় এবং দাম্পত্য জীবন সুখের হয়।

 

দেবীর পরবর্তী রূপ নিয়ে ফিরে আসবো আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

নবরাত্রি – দেবী কুষ্মান্ডা

নবরাত্রি – দেবী কুষ্মান্ডা

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

নব রাত্রি উপলক্ষে পূজিতা দেবী দুর্গার চতুর্থ রূপ হলো কুষ্মাণ্ডা রূপ এই রূপে দেবী পূজিতা হন নব রাত্রির চতুর্থ রাত্রে|আজকের পর্বে দেবীর এই রূপ নিয়ে লিখবো।

 

দেবীর এইরকম অদ্ভুত নাম এর নিদ্দিষ্ট শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা আছে ‘কু’ শব্দের অর্থ কুৎসিত এবং ‘উষ্মা’ শব্দের অর্থ ‘তাপ’; ‘কুষ্মা’ শব্দের একত্রিত অর্থ কুৎসিত বা তাপ কে হরণ করেন যিনি। কুষ্মান্ডা রূপে দেবী জগতের সকল দুঃখ কষ্ট বা কিছু আপাত দৃষ্টিতে কুৎসিত সব কিছুকে গ্রাস করে নিজের উদরে ধারণ করেন তাই তার নাম ‘কুষ্মাণ্ডা’।

 

মহাপ্রলয়ের পরে যখন সর্বত্র শুধু নিশ্ছিদ্র অন্ধকার ছেয়ে রয়েছে, তখন এই দেবী কুষ্মাণ্ডা নব রূপে ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করেছিলেন|

দেবী অষ্টভুজা” নামেও পরিচিতা আবার দেবীকে “কৃষ্ণমাণ্ড” নামেও ডাকা হয়|

দেবী সিংহবাহিনী ও ত্রিনয়নী দেবীর হাতে থাকে সুদর্শনচক্র, ধনুর্বাণ, রক্তপদ্ম, কমণ্ডলু, অমৃত কলস ও জপমালা|মনে করা হয়, দেবী কুষ্মাণ্ডা অল্প পূজাতেই সন্তুষ্ট হন। তার পূজায় কুষ্মাণ্ড বা কুমড়ো বলি দেওয়ার রীতি প্রচলিত আছে।

 

কাশীতে দেবী কুষ্মাণ্ডার মন্দির বিখ্যাত। কাশীতে তিনি দুর্গা রূপেই পূজিতা হন।

তিনি কাশীর দক্ষিণ দিকের রক্ষয়িত্রী। কাশীখণ্ড তে উল্লেখ রয়েছে, অসি নদীর সঙ্গমস্থলে কুষ্মাণ্ডার অধিষ্ঠান।

 

নব রাত্রিতে যারা দেবীর কুষ্মান্ডা রূপের পুজো করবেন তারা প্রথমে একটি কলস স্থাপন করবেন তারপর হাতে ফুল নিয়ে দেবীর ধ্যান করা উচিত।দেবী কুষ্মান্ডার ধ্যান করার পর, তাঁকে ধূপ, লাল ফুল, সাদা ফল নিবেদন করুন। এই ভাবে পুজো করলে দেবীর আর্শীবাদ এবং সৌভাগ্যবান হয়ে উঠতে পারেন।দেবী কুষ্মান্ডার ভোগ হিসেবে হালুয়া এবং দই দিন। আপনি এটিকে প্রসাদ হিসেবে দরিদ্র নরনারায়নের মধ্যে বিতরণ করুন।

পুজোর শেষে দেবীর আরতি করুন।এতে দেবী খুশি হন।

 

শাস্ত্র মতে দেবীর কুষ্মান্ডা রূপের আরাধনায় বৈভব, সুখ সমৃদ্ধি ও যশ এবং খ্যাতি বাড়ে

বলে মনে করা হয়|

 

আপনারাও নবরাত্রির এই পবিত্র সময়কে শাস্ত্র মতে ব্যবহার করে নিজের জীবনের যাবতীয় সমস্যা দূর করতে পারেন কারন নবরাত্রির এই সময় গ্রহ দোষ খন্ডন এবং প্রতিকার ধারনের শ্রেষ্ঠ সময়।

 

ফিরেআসবো আগামী পর্বে দেবীর পরবর্তী রুপ নিয়ে।সবাইকে নব রাত্রির শুভেচ্ছা।পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

নবরাত্রি – দেবী চন্দ্র ঘন্টা

নবরাত্রি – দেবী চন্দ্র ঘন্টা

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

দেবীর প্রথম ও দ্বিতীয় রুপ নিয়ে আগে লিখেছি ।

আজ দেবীর তৃতীয় রুপ নিয়ে লিখবো।

শাস্ত্র মতে শুক্লপক্ষের প্রতিপদ থেকে নবমী পর্যন্ত ন’টি রাত্রি পর্যন্ত দুর্গার নয়টি রূপের পুজো করা হয়ে থাকে।যেহেতু শরৎকালে এই উত্‍সব হয় তাই অনেক জায়গায় একে শারদ নবরাত্রিও বলা হয়।

 

শারদ নবরাত্রিতে তৃতীয় দিনে পূজিতা হন নব দুর্গার তৃতীয় রূপ অর্থাৎ চন্দ্র ঘন্টা|পুরান অনুসারে শিব পার্বতীর বিবাহের সময় হঠাৎ তারকাসুর প্রেত পিশাচ দৈত দানব সহ আক্রমণ করে বসে তখন দেবী পার্বতী এক দশ ভুজা রুপী মঙ্গলময়ী দেবী রূপে চন্দ্র সম বিশাল শুভ ঘণ্টা বাজিয়ে সকল অশুভ শক্তি কে নিরস্ত্র করেন।

দেবীর এই রূপ চন্দ্র ঘন্টা নামে পরিচিত|

 

দেবীর আবির্ভাব সম্পর্কে আরো একটি ব্যাখ্যা প্রচলিত আছে যেখানে মনে করা হয় শিব

বিবাহ কালে চন্ড রূপ ধারণ করলে তাকে দেখে মেনকা সহ উপস্থিত অথিতিরা ভীত হয়ে পড়েন তখন দেবী পার্বতী শিবের এই রূপের প্রত্যুত্তরে চন্দ্রঘণ্টা রূপ ধারণ করেন। দেবীর এই রনমূর্তি দেখে শিব তার নিজের চন্ড রূপ ত্যাগ করে বিবাহের জন্যে নিজের সৌম ও শান্ত রূপে ফিরে আসেন|

 

দেবী চন্দ্রঘন্টা তৃতীয় নয়ন দ্বারা সমৃদ্ধ যা শুধুমাত্র যুদ্ধের সময় খোলে।দেবীর মস্তকে অর্ধচন্দ্র থাকে , তাই দেবীকে চন্দ্রঘণ্টা নামে ডাকা হয় । দেবীর শরীরের রং স্বর্ণের মতো উজ্জ্বল । এই দেবী দশভুজা । দেবীর হাতে কমণ্ডলু , তরোয়াল , গদা , ত্রিশূল , ধনুর্বাণ , পদ্ম , জপ মালা থাকে| দেবীর বাহন সিংহ|

 

দেবীর চন্দ্র ঘন্টার পুজোয় একটি প্রদীপ ঘি বা তিলের তেল দিয়ে জ্বালান এবং দেবীর মূর্তি মূর্তির কাছে বেদীতে রাখুন।গন্ধম, পুষ্পম, দীপম, সুগন্ধম এবং নৈবেদ্যম অর্থাৎ পঞ্চোপচার মতে দেবীর পুজো করতে পারেন।

 

দেবী চন্দ্র ঘন্টার আহ্বানে নিম্নলিখিত মন্ত্রটি উচ্চারন করতে পারেন- ওম দেবী চন্দ্রঘণ্টায় নমঃ ॥পিন্ডজা প্রভাররুধা চন্দকোপাস্ত্রকৈর্যুতা।প্রসাদম্ তনুতে মহ্যম চন্দ্রঘণ্টেতি বিশ্রুতা ॥ইয়া দেবী সর্বভূতেষু মা চন্দ্রঘণ্টা রূপেন সংস্থিতা। নমস্তস্যায় নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ॥

 

দেবী দুর্গার এই রূপ তার ভক্তদের অশুভ শক্তি থেকে রক্ষা করেন। এই দেবীর আরাধনা জীবনে সাংসারিক সুখ ও শান্তি এনে দেয়।জীবন সবদিক থেকে পরিপূর্ণ হয় দেবীর আশীর্বাদে|

 

আগামী দিনের পর্বে দেবীর চতুর্থ রূপ নিয়ে ফিরে আসবো। নব রাত্রি উপলক্ষে চলতে থাকববে এই ধারাবাহিক আলোচনা। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

নবরাত্রি – দেবী ব্রহ্মচারিনী

নবরাত্রি – দেবী ব্রহ্মচারিনী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

চলছে নবরাত্রি আজকের পর্বে দেবী দুর্গার দ্বিতীয় রূপ নিয়ে আলোচনা করবো।

দেবীর দ্বিতীয় রূপটি হলো ব্রহ্মচারিনী।

 

নব রাত্রির দ্বিতীয় দিনে ব্রহ্মচারিনীর বেশে ধরা দেন মা|এখানে ‘ব্রহ্ম’ শব্দের অর্থ হল তপস্যা। ব্রহ্মচারিণী অর্থাৎ তপস্বীনি|ভগবান শঙ্করকে পতিরূপে লাভ করার জন্য দেবী পার্বতী কঠিন তপস্যা করেন। সেই কঠিন তপস্যার জন্য তাকে তপশ্চারিনী বা ব্রহ্মচারিণী বলা হয়। দেবীর এই রূপের পুজো হয় নবরাত্রির দ্বিতীয় দিনে।

 

দেবীর তপস্যা সার্থক হয় এবং বিবাহ হয় শিব ও পার্বতীর। বিবাহের পরে জন্ম নেন তাঁদের সন্তান কার্তিক বা ষড়ানন যিনি দেব সেনাপতি হন এবং বধ করেন তারকাসুরকে।

 

দেবীর ব্রহ্মচারিণীর রূপ জ্যোতিতে পূর্ণ, অতি মহিমামণ্ডিত। তিনি ডান হাতে জপের মালা এবং বাঁ হাতে কমণ্ডলু ধারণ করে আছেন। প্রেম, আনুগত্য, প্রজ্ঞা এবং জ্ঞানের প্রতীক হিসেবেও তিনি পরিচিত। সাদা রঙ দেবীর প্রিয় তাই দেবী ব্রহ্মচারিনীর পুজোয় স্বেত চন্দন ও সাদা ফুল ব্যাবহার হয়|

 

যারা দেবীর ব্রহ্মচারীনি রূপের পুজো করবেন তারা এই মন্ত্রটি জপ করতে পারেন|”ইয়া দেবী সর্বভূতেষু মা ব্রহ্মচারিণী রূপেন সংস্থিতা নমস্তস্যই নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ”

 

শাস্ত্রে আছে এই রূপের পূজায় বৃদ্ধি পায় মনোসংযোগ এবং সব ভয় সংশয় ও মানসিক দুর্বলতা দূর হয়|এছাড়া এই দেবীর আশীর্বাদে বিবাহিত জীবন সুখের হয় এবং সন্তান ভাগ্য ভালো হয়।

 

জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে দেবী ব্রহ্মচারিণী মঙ্গল গ্রহ শাসন করেন। যাদের মঙ্গল সংক্রান্ত কোনো গ্রহ দোষ আছে তারা দেবীর এই রূপের পুজো করলে ভালো ফল পাবেন।

 

আগামী দিনের পর্বে দেবীর তৃতীয় রূপ এবং তার শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা নিয়ে ফিরে আসবো যথা সময়ে। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

নব রাত্রি – দেবী শৈল পুত্রী

  • নব রাত্রি – দেবী শৈল পুত্রী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

শুরু হয়ে গেছে দেবীপক্ষের।বাংলার দূর্গা পূজার পাশাপাশি একই সময়ে সারা দেশ জুড়ে পালিত হয় নব রাত্রি উৎসব|মূলত দেবী দুর্গার নয় টি ভিন্ন রূপের পূজা হয় নয় দিন ধরে| বাংলার অনেক দূর্গা পূজা তেও নব দুর্গার আরাধনা হয়|দেবী আদ্যা শক্তি মহামায়ার প্রতিটি রূপের আছে নিজস্ব শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা এবং আধ্যাত্মিক তাৎপর্য। আজথেকে শুরু করছি দেবীর নয়টি রূপ নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা।আজ লিখবো

দেবীর প্রথম রূপ শৈল পুত্রী নিয়ে|

 

নবরাত্রি উৎসবের প্রথমদিনের পুজো হয় দেবী শৈলপুত্রীর। দেবী শৈলপুত্রী আসলে প্রকৃতির দেবী। শৈলপুত্রীর বাহন বৃষ । এঁনার দক্ষিণ হস্তে ত্রিশূল আর বাম হস্তে কমল আছে তাই দেবীর অপর নাম শুলধারিনি|আবার তাকে দেবী হৈমবতী বলে ডাকা হয়।

 

দেবী শৈলপুত্রীর আবির্ভাব হয়েছিলো একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে।প্রজাপতি দক্ষএকবার বিরাট যজ্ঞ করেন ।তার যজ্ঞে সতী কে নিমন্ত্রণ করা হয়নি । সতী পিতৃ গৃহে যাবার জন্য অস্থির হলেন কিন্তু ভগবান শঙ্কর সাবধান করলেন যে কোন কারনে তিনি উমার উপর রেগে আছেন । কিন্তু সতীর মন মানল না তখন মহাদেব অনুমতি দিলেন যাবার জন্য । কিন্তু পিতৃ গৃহে গিয়ে পৌঁছে দেখলেন কেউ তাকে সেরকম স্নেহ ভরে কাছে ডাকছে না । একমাত্র মা জড়িয়ে ধরলেন । স্বয়ং দক্ষ তাকে নানা খারাপ কথা বললেন । তখন রাগে দুঃখে যজ্ঞাগ্নির সাহায্যে নিজে কে ভস্মীভূত করলেন ।সতীর এই পরিনতির সংবাদ শুনে শিব ও তার অনুগামীরা প্রচন্ড ক্রোধে দক্ষের যজ্ঞ ধ্বংস করলেন এবং দক্ষকে উচিৎ শিক্ষা দিলেন।

 

কিন্তু শিব আর পার্বতী এক এবং অভিন্ন তাই শিবের সঙ্গে পুনরায় মিলিত হতে সতীর পুনর্জন্ম হলো শৈলরাজ হিমালয়ের কন্যা রুপে।শৈলরাজ হিমালয়ের কন্যা হবার জন্য দেবীর এক নাম হয় শৈলপুত্রী এবং এই জন্মেই তিনিই পার্বতী রূপে শিবের অর্ধাঙ্গিনী হলেন|

 

শাস্ত্র অনুযায়ী ব্রহ্মার শক্তির প্রতীক হলেন দেবী শৈলপুত্রী কারন একবার দেব ও অসুরের যুদ্ধে ব্রহ্মা দেবতাদের জয়ী করেছিলেন। কিন্তু ব্রহ্মার শক্তি ভুলে দেবতারা জয়ের গৌরব নিজেরাই নিতে উদ্যত হলেন। ব্রহ্ম তখন নিজে এলেন দেবতাদের দর্পচূর্ণ করতে। তিনি একখণ্ড তৃণ রাখলেন দেবতাদের সম্মুখে। কিন্তু দেবতারা আশ্চর্য হয়ে দেখলেন, অগ্নি সেই তৃণখণ্ডটি দহন করতে বা বায়ু তা একচুল পরিমাণ স্থানান্তরিত করতে অসমর্থ হলেন। তখন ইন্দ্র এলেন সেই অনন্ত শক্তির উৎসকে জানতে। সেই মুহূর্তে ব্রহ্মশক্তি শৈলপুত্রীর রূপ ধারন করে দেবরাজ ইন্দ্র কে দেখা দিলেন।

 

দেবী শৈলপুত্রী সম্পর্কে বর্ণনা আছে কালিকা পুরাণে|শাস্ত্র মতে এই রূপের আরাধনায় বৃদ্ধি পায় মনোবল|মানসিক অস্থিরতা ও অবসাদ মুক্তি হয় দেবী শৈল পুত্রীর আরাধনায়|নব রাত্রির প্রথম দিনে দেবীর কাছে নিজের মনোস্কামনা জানান। দেবী ভক্তি ভরে প্রার্থনা করলে সব মনোস্কামনা পূর্ণ করেন।

 

নব রাত্রি উপলক্ষে ধারাবাহিক ভাবে চলবে এই আলোচনা|আগামী পর্বে দেবীর পরবর্তী রূপ

নিয়ে আলোচনা করবো। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

মহালয়ার আধ্যাত্মিক তাৎপর্য

মহালয়ার আধ্যাত্মিক তাৎপর্য

প্রথম পর্ব

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

মহালয়া অর্থাৎ পিতৃ পক্ষের অবসান এবং দেবী পক্ষের সূচনা লগ্ন।আজকের এই বিশেষ পর্বে আপনাদের জানাবো শাস্ত্রীয় দৃষ্টি ভঙ্গী থেকে কি এই মহালয়া এবং কেনো পালন করা হয় কিবা এই মহালয়ার আধ্যাত্মিক গুরুত্ব।

সহজ ভাবে বলতে গেলে বলতে হয় মহালয়া হলো সেই বিশেষ অমাবস্যা তিথি যে তিথিতে আমাদের পূর্ব পুরুষের আত্মার আমাদের কাছাকাছি আসেন এবং আমরা খুব সহযে তর্পনের মাধ্যমে তাদের আত্মাকে চির শান্তি প্রদান করতে পারি।এই তর্পনের শাস্ত্র সম্মত তিথি হলো মহালয়া তিথি|

মহাভারতে উল্লেখ আছে যে কর্ণের মৃত্যুর পরে তার আত্মা স্বর্গে গমন করলে, তাকে স্বর্ণ ও রত্ন খাদ্য হিসেবে প্রদান করা হয়। কর্ণ ইন্দ্রকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে ইন্দ্র বলেন, কর্ণ সারা জীবন স্বর্ণ এবং রত্ন দান করেছেন, তিনি পিতৃপুরুষের আত্মার উদ্দেশ্যে কোনোদিনো কোনো খাদ্য দান করেননি।তাদের কাছে প্রার্থনা করেননি তাই স্বর্গে তাকে স্বর্ণই খাদ্য হিসেবে প্রদান করা হয়েছে। পিতৃ পুরুষের আশীর্বাদ থেকেও তিনি বঞ্চিত। তার পুন্য সঞ্চয় অসম্পূর্ণ।
তার উত্তরে কর্ণ বলেন, তিনি যেহেতু তার পিতৃপুরুষ সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না। তাই তিনি অসহায় এবং অজ্ঞানতা বসত এই অন্যায় করে ফেলেছেন।তারপর কারণে কর্ণকে ষোলো দিনের জন্য মর্ত্যে গিয়ে পূর্ব পুরুষদের উদ্দেশ্যে অন্ন ও জল প্রদান করার অনুমতি দেওয়া হয়। সেই সময়
কালকে পিতৃপক্ষ বলা হয়।

রামায়ণ অনুসারে শ্রী রাম ও তার পিতা দশরথের মৃত্যুর পর তার আত্মার শান্তির জন্য ফল্গু নদীর ধারে একটি ডুমুর গাছের নিচে তর্পন অনুষ্ঠান করেছিলেন এবং আত্মার শান্তি কামনা করে ছিলেন।

একটি শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা অনুসারে জীবিত ব্যক্তির পূর্বের তিন পুরুষ পর্যন্ত পিতৃলোকে বাস করেন। এই লোক স্বর্গ ও মর্ত্যের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত। পিতৃ পক্ষে এই আত্মারা উত্তর পুরুষের তর্পনের মাধ্যমে চীরমুক্তি লাভ করে এবং পরম ব্রহ্মর সাথে বিলীন হয়।

মহালয়া নিয়ে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা এবং জ্যোতিষ শাস্ত্রে এই মহা লয়া অমাবস্যার গুরুত্ব নিয়ে পরের পর্বে আবার ফিরে আসবো। পড়তে থাকুন। ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।