Home Blog Page 4

শক্তি পীঠ – হিংলাজ

শক্তি পীঠ – হিংলাজ

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

প্রথম শক্তি পীঠ কোনটি এই নিয়ে বহু বিতর্ক আছে। তবে বেশিভাগের মত কে প্রাধান্য দিলে বলতে হয় মরু তীর্থ হিংলাজই প্রথম শক্তিপীঠ।পীঠ নির্ণয় তন্ত্র মতেও হিংলাজ পীঠস্থানটি একান্ন পীঠের প্রথম পীঠ। আজ শক্তি পীঠ হিংলাজ

নিয়ে লিখবো।

পীঠ নির্ণয় তন্ত্র মতে একান্ন পীঠের অন্যতম প্রধান পীঠ হিংলাজ। বর্তমানে এই শক্তিপীঠ অবস্থিত আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তানে।পাকিস্তানের বালোচিস্তান প্রদেশের লাসবেলা জেলায় হিঙ্গোল নদীর ধারে এই শক্তি পীঠটি রয়েছে।

শাস্ত্র মতে রাবন কে বধ করে রামের যখন

ব্রহ্ম হত্যার পাপ হয়েছিলো তখন এই হিংলাজ শক্তি পিঠে এসে দেবীকে দর্শন করে সেই পাপ

দূর হয়েছিলো।

পাকিস্তানে হিন্দুরা ছাড়াও মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে দেবীর প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা এবং

ভক্তি দেখা যায় তারা দেবী হিংগুলা বা দেবী কোট্টরা কে ‘নানী’ বলে ডাকে। মন্দিরের দেবীর নামেই পুরো গ্রামটির নাম হয়ে গিয়েছে হিংলাজ গ্রাম।

শাস্ত্র মতে এই স্থানে দেবী সতীর ব্রহ্মরন্ধ্রটি পড়েছিল তাই দেবীকে এখানে “কোট্টারী”  রূপে পুজো করা হয়। দেবীর ভৈরবকে এখানে “ভীমলোচন” রূপে পূজা করা হয়।

এক সময়ে অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করে মরুভুমির মধ্যে দিয়ে উটের পীঠে চেপে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এই মন্দিরে যেতে হতো। এই কষ্ট সাধ্য যাত্রা নিয়ে একটি সিনেমাও হয়েছে যার নাম মরুতীর্থ হিংলাজ

ওই তীর্থ যাত্রাকে স্থানীয়র বলতো “নানী কি হজ “

দুর্গম অঞ্চলে একটি গুহায় দেবী ও তার ভৈরব অবস্থান করছেন। দীর্ঘ সিঁড়ি অতিক্রম করে সেখানে প্রবেশ করতে হয়। একটি বেদীতে

শিলা রূপে দেবী অধিষ্টান করছেন।

এখানে সিঁদুর দানের রীতি আছে।

বাস্তবে হিংগুলা শব্দের অর্থই সিঁদুর।

বহু ভক্ত এখানে আসেন নিজের মনোস্কামনা নিয়ে এবং বিশ্বাস করেন তাদের সব দুঃখ কষ্ট দূর হবে

দেবীর আশীর্বাদে।

বালোচিস্থান এবং পাকিস্তানে বসবাসকারী হিন্দুদের তো বটেই সমগ্র বিশ্বের সনাতনীদের কাছেই হিংলাজ শক্তিপীঠ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং

পবিত্র তীর্থ স্থান।

ফিরে আসবো আগামী পর্বে। সাথে থাকবে অন্য একটি শক্তি পীঠের মাহাত্ম এবং

পৌরাণিক ব্যাখ্যা।পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

শক্তি পীঠের ইতিহাস

শক্তি পীঠের ইতিহাস

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

সনাতন ধর্মে বিশেষ করে শাক্তদের মধ্যে শক্তি পীঠ গুলি অতি পবিত্র তীর্থ স্থান। তবে এই শক্তি পীঠ নিয়ে বিশেষ করে তাদের প্রকৃত অবস্থান এবং সংখ্যা সংক্রান্ত বিতর্ক বহু প্রাচীন। শক্তিপীঠ নিয়ে ধারাবাহিক লেখনীর মাধ্যমে এই ইতিহাস এবং পৌরাণিক ব্যাখ্যা গুলি আপনাদের সামনে তুলে ধরবো। থাকবে প্রতিটি শক্তি পীঠ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা।আজ শুধু ভূমিকা।

জামাতা মহাদেবকে পছন্দ হয়নি পার্বতীর জনক দক্ষ রাজার। জামাতাকে অপমান করতে যজ্ঞর আয়োজন হয়। নিমন্ত্রণ আমন্ত্রণ পাননি কৈলাশপতি ।সেই অপমানে যজ্ঞের আগুনে আত্মঘাতী হন সতী। ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে ওঠেন মহাদেব। সতীর দেহ নিয়ে তান্ডব নৃত্য শুরু করেন শিব।পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার ভয়ে ভগবান বিষ্ণু প্রলয় থামাতে, সুদর্শন চক্র পাঠিয়ে দেন। দেবীর দেহ ৫১টি খণ্ডে বিভক্ত হয়ে মর্তে বিভিন্ন জায়গায় পতিত হয় । এই সব কটি জায়গাকে সতীপীঠ বা শক্তি পীঠ বলা হয়।

বাংলায় রয়েছে তেরোটি শক্তিপীঠ যার অধিকাংশ রয়েছে বীরভূম জেলায়। আবার কিছু শাস্ত্রে আবার একশো আটটি সতী পীঠের উল্লেখ আছে। রয়েছে বেশ কিছু উপপীঠ এবং সিদ্ধ পীঠ।তবে পীঠ নির্ণয় তন্ত্রের একান্নটি সতী পীঠকেই মান্যতা দেয়া হয়েছে।তন্ত্র চূড়ামনি এবং শিব চরিত গ্রন্থতেও একান্ন পীঠের কথা আছে। দেবী ভাগবতে আবার ১০৮ টি পীঠকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।

আগামী পর্ব গুলিতে ধারাবাহিক ভাবে একেকটি শক্তি পীঠ নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে লিখবো।পড়তে থাকুন। ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

দেবী জগদ্ধাত্রীর শাস্ত্রীয় মাহাত্ম

দেবী জগদ্ধাত্রীর শাস্ত্রীয় মাহাত্ম

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

চলছে জগদ্ধাত্রী পুজো। দেবী একাধারে শাস্ত্রীয় এবং বৈদিক সত্ত্বা নিয়ে সনাতন ধর্মে বিরাজ করছেন। তার আবির্ভাব তার রূপ এবং পুজো পদ্ধতি সবই শাস্ত্র মতে বিশেষ তাৎপর্য পূর্ন। আজ আসুন জেনে নিই সেই শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা।

 

আগেই উল্লেখ করেছি দেবী করীন্দ্রাসুরকে বধ করতে অবির্ভুত হন।জগদ্ধাত্রীর বাহন সিংহ এক হাতির উপর দাঁড়িয়ে, আবার কোথাও পদতলে হাতির কাটা মাথা দেখা যায়।সংস্কৃতে হাতির একটি নাম করী, সেই অনুসারে অসুরটির নাম করীন্দ্রাসুর। তাকে বধ করেন দেবী জগদ্ধাত্রীর তাই তাঁর অপর নাম করীন্দ্রাসুরনিসূদিনী।

 

শ্রীশ্রীচণ্ডীতে দেবীর উল্লেখ আছে সেখানে বলা হয়, যুদ্ধের সময় মত্ত মহিষাসুর হাতির মায়ারূপ ধরেন।তখন দেবী জগদ্ধাত্রী রূপে চক্রদ্বারা তিনি ছেদন করেন হাতির শুঁড়।

 

আবার উপনিষদে এবং কাত্যায়নী তন্ত্রে দেবী হৈমবতী রূপে বিরাজ করছেন।বিভিন্ন

পুরানেও শঙ্খ এবং চক্র হাতে দেবী বৈষ্ণবীর যে বর্ণনা পাওয়া যায় তাও মিলে যায় দেবী জগদ্ধাত্রীর সাথে।সব মিলিয়ে বলাই যায় দেবী দূর্গা তথা আদ্যাশক্তির একটি রূপ বিশেষ।

 

শাস্ত্র মতে দেবী জগদ্ধাত্রীর আরাধনা করুন।

দেবীর কাছের নিজের প্রার্থনা জানান। তিনি

সব কষ্ট দুর করবে।

 

ফিরে আসবো আগামী পর্বে। ধারাবাহিক শাস্ত্রীয় এবং পৌরাণিক আলোচনা নিয়ে। পড়তে থাকুন। ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

জগদ্ধাত্রী পুজো এবং চন্দননগর

জগদ্ধাত্রী পুজো এবং চন্দননগর

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

বর্তমানে সারা বাংলায় জগদ্ধাত্রী পুজোর জনপ্রিয়তা বাড়লেও চন্দন নগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর আলাদা খ্যাতি এবং ইতিহাস আছে। আজও অনেকের কাছেই জগদ্ধাত্রী পুজো মানেই হুগলীর চন্দন নগর।আজ জগদ্ধাত্রী পুজোর সাথে চন্দনগরের ঐতিহাসিক সম্পর্ক আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।

 

একটা মতানুসারে চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রচলন করেন ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী।তিনি ছিলেন  ফরাসি সরকারের দেওয়ান। জনশ্রুতি অনুসারে, কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির জগদ্ধাত্রী পুজো দেখে ইন্দ্রনারায়ণ মুগ্ধ হয়েছিলেন তিনি তার ইচ্ছে ছিলো নিজের জমিদারিতে গিয়ে এমন জগদ্ধাত্রী পুজোর আয়োজন করবেন।

 

কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের ঘনিষ্ঠ ছিলেনএই ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী। তার হাত ধরেই রাজা কৃষ্ণ চন্দ্রের শুরু করা জগদ্ধাত্রী পুজো চন্দননগরে পাকাপাকি স্থান করে নেয় এবং ক্রমেই এই অঞ্চলের প্রধান পুজো এবং উৎসবের রূপ নেয়।

 

অন্য একটি মত অনুসারে চন্দননগর নয়, ভদ্রেশ্বরে প্রথম জগদ্ধাত্রী পুজোর সূচনা হয়েছিল। আনুমানিক ১৭৬২- সাল নাগাদ মহারাজা কৃষ্ণ চন্দ্রের দেয়ান দাতারামের এক বিধবা মেয়ে তাঁর বাড়িতে জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু করেছিলেন এবং সেটাই সম্ভবত এই জেলার জগদ্ধাত্রী পুজো।

 

আবার নবাবী আমলে কৃষ্ণনগরের সঙ্গে সেকালের ফরাসডাঙা বা চন্দননগরের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল। নদীপথে এই বাণিজ্য চলত। কৃষ্ণনগরের চাল ব্যবসায়ীরা ফরাসডাঙ্গায় আসতেন বাণিজ্য করতে অনেকে মনে করেন সেই ব্যাবসায়ীদের হাত ধরেই হুগলীতে জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু হয়।

 

শুরু যেভাবেই হোক। আজ চন্দন নগরের জগদ্ধাত্রী পুজো এবং সেই উপলক্ষে আলোক শিল্প গোটা রাজ্যে জনপ্রিয় এবং সমাদৃত।

 

ফিরে আসবো ধারাবাহিক লেখনী নিয়ে আবার

আগামী পর্বে। থাকবে আরো অনেক তথ্য। পড়তে থাকুন। ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

দেবী জগদ্ধাত্রীর পৌরাণিক ব্যাখ্যা

দেবী জগদ্ধাত্রীর পৌরাণিক ব্যাখ্যা

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

পুরান মতে মা দুর্গা মর্ত্য থেকে কৈলাসে ফিরে যাওয়ার পর আবার মর্ত্যে ফেরেন দেবী জগদ্ধাত্রী রূপে।কিন্তু এই দেবীর উৎপত্তি ও তার পুজোর কারন নিয়ে একটি পৌরাণিক ব্যাখ্যাও আছে|

 

শাস্ত্র মতে মা দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করার পর দেবতারা আবার নিজেদের পুরানো গর্বে অভিভূত অবতারে ফিরে যান। নিজেদের ক্ষমতার অহংয়ে তারা আবার অন্ধ হয়ে পড়েন। যেন তাঁরাই দণ্ডমুণ্ডের কর্তা, তাঁরা ছাড়া আর কারও কোনও শক্তিই নেই আর কী!দেবতাদের এই অহংকার দেখে ভারী ক্রুদ্ধ হয়ে যান ব্রহ্মা।

 

তিনি দেবতাদের একে একে ডেকে পাঠান। একটি সামান্য ঘাসকে রেখে তিনি পবনদেবকে বলেন তা নিজ ক্ষমতায় সরিয়ে দেখাতে। পবনদেব হাজারো চেষ্টার পরেও বিফল হন। এরপর বরুনদেবকে ডেকে পাঠানো হয় এবং বলা হয় ঘাসটিকে ভিজিয়ে দেখাতে। তিনিও অসফল হন। তারপরে ডাক পরে অগ্নিদেব, তিনিও ঘাসটিকে জ্বালাতে সক্ষম হন না।এই ভাবে দেবতাদের অহংকার চূর্ণ হয়|

 

প্রত্যেকে অসফল হওয়ার পর নিজরূপে হাজির হন ব্রহ্মা। এবং তিনি দেবতাদের বোঝান যে সবার ওপরে ব্রহ্মাই সত্যি। তাহার ওপর কেহ না। তিনি আরও বলেন, দেবতাই হোক কিংবা মানব অথবা দৈত্য, এই জগতে সবচেয়ে বড় একটি অসুরের বিরুদ্ধে তাঁদের লড়াই করতে হবে আর সেটি হল তাঁদের মানসিক অহংয়ের অসুর।করিন্দ্রাসুর আসলে এই অহং বোধের প্রতিফলন|আর এই অসুরকে বধ করতেই পরম ব্রহ্ম যে দেবীর রূপ নেন, তিনিই জগদ্ধাত্রী।

 

আপনাদের সবাইকে আরো একবার জগদ্ধাত্রী পুজোর শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন|দেবী জগদ্ধাত্রী সংক্রান্ত আরো অনেক তথ্য থাকবে পরবর্তী পর্ব গুলিতে। পড়তে থাকুন। ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

বাংলায় জগদ্ধাত্রী পুজোর ইতিহাস

বাংলায় জগদ্ধাত্রী পুজোর ইতিহাস

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

দুর্গা পুজো, লক্ষী পুজো এবং সর্বপরি কালী পুজোর পর বঙ্গবাসি জগদ্ধাত্রী রূপে মা আদ্যা শক্তির আরাধনা করে। জগদ্ধাত্রী পুজোর শাস্ত্রীয় এবং ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম।

 

জগদ্ধাত্রী পূজার ইতিহাস বেশ প্রাচীন এবং পৌরানিক দৃষ্টি কোন থেকে বেশ তাৎপর্য পূর্ন তবে আজ বাংলার জগদ্ধাত্রী পুজোর ইতিহাস নিয়ে লিখবো।

 

নদীয়া জেলার সদর কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রী পূজার সূচনা করেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়। কিংবদন্তী অনুসারে নবাব আলীবর্দী তার রাজত্বকালে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রর কাছ থেকে বারো লক্ষ টাকা নজরানা দাবি করেন।টাকা না দেয়ায় নবাব রাজা কৃষ্ণচন্দ্রকে মুর্শিদাবাদ এ নিয়ে যান এবং কিছুদিন বন্দী করে রাখেন।তারপর মুক্তির পর নদীপথে যখন কৃষ্ণনগরে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় নিজের রাজ্যে প্রত্যাবর্তন করেন সেই সময় ঘাটে বিজয়া দশমীর বিসর্জনের বাজনা শুনে তিনি বুঝতে পারেন যে তিনি দুর্গাপূজার সময় অতিক্রম করে এসেছেন। এবছর তিনি দুর্গাপুজো দেখতে পেলেন না, দূর্গা পূজার আয়োজন করতে না পেরে অত্যন্ত দুঃখিত হয়েছিলেন।সেই রাতে দেবী দুর্গা জগদ্ধাত্রী রূপে রাজাকে স্বপ্নে দেখা দেন এবং পরবর্তী শুক্লা নবমী তিথিতে জগদ্ধাত্রী দুর্গার পূজা করার আদেশ দেন সেই মত কৃষ্ণনগরে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় জগদ্ধাত্রী পূজার সূচনা করেন।

 

প্রথমে রাজ পরিবারের পরবর্তীতে বনেদি বাড়িগুলিতে শুরু হওয়া জগদ্ধাত্রী ধীরে ধীরে বাংলায় বারোয়ারী পুজোর রূপ নেয় এবং বর্তমানে বাংলার বিভিন্ন স্থানে এবং বিশেষ করে হুগলীর চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পুজো ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

 

জগদ্ধাত্রী পুজো উপলক্ষে আগামী পর্ব গুলিতে দেবী জগদ্ধাত্রী সংক্রান্ত পৌরাণিক ঘটনা এবং শাস্ত্রীয় নানা দিক নিয়ে লিখবো।পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন।ধন্যবাদ

কৃষ্ণ কথা – শ্রী কৃষ্ণের জন্ম বৃত্তান্ত

কৃষ্ণ কথা – শ্রী কৃষ্ণের জন্ম বৃত্তান্ত

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

সনাতন ধর্মে দেবতা অনেক তবে স্বয়ং ভগবান একমাত্র শ্রী কৃষ্ণ। অধর্ম নাশ করতে ধর্ম পুনঃরস্থাপন করতে পৃথিবীতে তার আগমন।

 

ভাদ্রমাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে মথুরায় জন্ম হয় তাঁর। সেই সময় মথুরার রাজা ছিলেন দেবকীর ভাই কংস। তাঁকে ভবিষ্যবাণী করা হয়েছিল, দেবকী ও বাসুদেবের অষ্টম পুত্র তাঁকে হত্যা করবে।

 

কথিত আছে, কংস তাঁর বোন ও ভগ্নি-পতীকে ভালোবাসতেন। কিন্তু, তাঁদের অষ্টম পুত্র তাঁকে হত্যা করবে, এই ভবিষ্যবাণী শোনার পর তাঁদের সব সন্তানকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন কংস। প্রথম ছয় সন্তানকে হত্যা করতে সক্ষমও হন। সপ্তম সন্তানের হদিশ পাননি কংস। অষ্টম সন্তান, অর্থাৎ কৃষ্ণের জন্মের সময় গোটা রাজ্য ঘুমিয়ে পড়েছিল। বাসুদেব গোপনে সেই সন্তানকে বৃন্দাবনের নন্দ বাবা ও যশোধাকে হস্তান্তরিত করেন।তার পরিবর্তে এক কন্যাসন্তানকে নিয়ে আসনে বাসুদেব ও দেবকী। যাতে তাঁদের অষ্টম সন্তান কৃষ্ণের কোনও খোঁজ না পান কংস। ওই কন্যাসন্তানকে নিয়ে এসে অসুরের হাতে তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু, তিনি যখন তাকে হত্যা করতে উদ্যত হন, সেই সময় ওই কন্যাসন্তান দেবী দুর্গায় রূপ ধারণ করেন। তিনি কংসকে সব কুকর্মের জন্য সতর্ক করে দেন।এদিকে বৃন্দাবনে বেড়ে ওঠেন কৃষ্ণ। সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর কোনও ধারণা ছিল না। যখন আরও বড় হয়ে ওঠেন, গোটা বিষয়টি তিনি শোনেন। তার পর সোজা মথুরা চলে আসেন। এখানে এসে কংসকে হত্যা করেন। দেখা হয় মা বাবা দেবকী ও বাসুদেবের সঙ্গে।পরবর্তীতে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে তার ভূমিকা ও দ্বারকায় জীবনের শেষ অধ্যায় নিয়ে শাস্ত্রে বিস্তারিত ব্যাখ্যা আছে। আছে দ্বারকা নগরীর দিব্য উপস্থিতি।

 

দামোদর মাস উপলক্ষে শ্রী কৃষ্ণ সংক্রান্ত নানা ঘটনা এবং ব্যাখ্যা আপনাদের সামনে তুলে ধরেছি আগামী দিনেও সেই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।

পড়তে থাকুন। ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

ছট পুজোর শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন 

ছট পুজোর শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আজ ছট পুজো। ছট পুজো বা ছট উৎসব সনাতনী দের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক শাস্ত্রীয় উৎসব।আজ ছট পুজো নিয়ে কিছু আধ্যাত্মিক কথাবার্তা এবং কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাচার আপনাদের সামনে উপস্থাপন করবো।

 

কার্তিক শুক্লা চতুর্থী থেকে কার্তিক সপ্তমী পর্যন্ত চারদিন ধরে চলে ছটপুজো।ধন, বৈভব, যশের কামনা করে থাকলে ছট পুজোর দিন প্রত্যক্ষ দেবতা সূর্যের সাধনা করতে ভুলবেন না। এদিন, বিধি অনুযায়ী পুজো ও উপোস করলে সমস্ত বাধা দূর হয় ও সরকারি চাকরি ও ব্যবসায় সাফল্য হাতে আসে।

 

আজকের দিনে স্নান করে সূর্যকে জলের অর্ঘ্য দেওয়া উচিত। রোজ এই অর্ঘ্য দেওয়া যেতে পারে। ধর্মীয় ধ্যান-ধারণা অনুযায়ী, নিয়মিত জলের অর্ঘ্য দিলে সূর্য দেব খুশি হন।

 

ছট পুজোর দিন সূর্য্য প্রনাম, গঙ্গা স্নান এবং ফুল ফল সহযোগে নানা বিধ মিষ্টান্ন সূর্য্য দেবকে অর্ঘ্য রূপে নিবেদন করতে পারেন।

 

সূর্যকে প্রসন্ন করার জন্য ছট পুজোর দিন গুড় দান করা উচিত। এদিন দান করার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। ব্যক্তি নিজের ইচ্ছানুযায়ী দান করতে পারেন।

 

আপনাদের সবাইকে জানাই ছট পুজোর শুভেচ্ছা। ফিরে আসবো কৃষ্ণ কথা নিয়ে আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

কৃষ্ণ কথা – গীতা মাহাত্ম 

কৃষ্ণ কথা – গীতা মাহাত্ম

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

শ্রী কৃষ্ণ রূপে ভগবান বিশ্বকে যে অমূল্য জ্ঞান প্রদান করেছিলেন তার সমস্তটাই সমাহিত আছে গীতায়। এই দামোদর মাসে গীতা শ্রবণ বা গীতা পাঠের বিশেষ মাহাত্ম আছে।

 

গীতা কোনো ধর্মীয় পুস্তক নয়, গীতা আধ্যাত্মিক জ্ঞানের ভান্ডার এবং পৃথিবীর শ্রেষ্ট মোটিভেশনাল বুক যা মানব সমাজকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসতে পারে।

 

গীতা কি? এক কথায় এর উত্তর কুরুক্ষেত্র ময়দানে অর্জুনকে ভগবান কৃষ্ণ প্রদত্ত জ্ঞান|গীতায় ভগবান কৃষ্ণ প্রায় ৪৫ মিনিট পর্যন্ত এই জ্ঞান দিয়েছিলেন তিনি।গীতায় মোট 18 টি অধ্যায় ও 700 শ্লোক আছে যার মধ্যে কৃষ্ণ ৫৭৪, অর্জুন ৮৫, সঞ্জয় ৪০ ও ধৃতরাষ্ট্র ১টি শ্লোক বলেছিলেন।

প্রতিটি শ্লোক এবং অধ্যায়ের রয়েছে বিশেষ তাৎপর্য।

 

পৃথিবীর সমস্ত আধ্যাত্মিক গ্রন্থের মধ্যে শ্রীমদ্ভগবত গীতাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। এতে জীবনের সার নিহিত রয়েছে। আবার দ্বাপর যুগে কৃষ্ণের সমস্ত লীলার বর্ণনাও পাওয়া যায় গীতায়। অর্জুন ও কৃষ্ণ সম্বাদ গীতায় স্থান পেয়েছে। গীতায় জ্ঞানযোগ, কর্মযোগ, ভক্তিযোগ, রাজযোগ, একেশ্বরবাদ ইত্যাদির আলোচনা করা হয়েছে। ব্যক্তিকে কর্মের গুরুত্ব বোঝায় গীতা। এমনকি শ্রেষ্ঠ মানব জীবনের সার রয়েছে এই গীতার মধ্যে। ও জীবনের সঙ্গে জড়িত প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর এবং সমস্যার সমাধান পাওয়া যেতে পারে|

 

পবিত্র দামোদর মাসে গীতাকে জানুন। ভগবানেকে জানা সহজ হবে। পরম আধ্যাত্মিক প্রাপ্তি হবে।

 

ফিরে আসবো কৃষ্ণ কথার পরবর্তী পর্ব নিয়ে পড়তে থাকুন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ।

কৃষ্ণ কথা – শ্রী কৃষ্ণের বিবাহ

কৃষ্ণ কথা – শ্রী কৃষ্ণের বিবাহ

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

দামোদর মাস উপলক্ষে শুরু করছি কৃষ্ণ কথা।

আজকের পর্বে শ্রী কৃষ্ণের প্রেম এবং

বিবাহ প্রসঙ্গে আলোচনা করবো।

 

শ্রী কৃষ্ণের যে ষোলো হাজার গোপিনীর কথা বলা হয় তারা আসলে নরকাসুরের বন্দিনী। নরকাসুরকে বধ করে শ্রী কৃষ্ণ তাদের উদ্ধার করেন এবং সামাজিক মর্যাদা দিতে তাদের বিবাহ করেন।

 

আবার অন্যদিকে রুক্মিণী ছিলেন বিদর্ভরাজ ভীষ্মকের কন্যা।রুক্মিণীকে লক্ষ্মীর অবতার হিসেবে গণ্য করা হয় এবং তিনি শ্রীকৃষ্ণের প্রধান মহিষী ছিলেন।

 

শ্রী কৃষ্ণের প্রেম লীলা নিয়ে এবং শ্রী রাধার সাথে তার সম্পর্ক নিয়ে যতটা আলোচনা হয় তাদের বিবাহ নিয়ে ততটা আলোচনা হয়না কারণ অনেকই মনে করেন বিষয়টি বিতর্কিত এবং শাস্ত্রে নানা রকম যুক্তি এবং ব্যাখ্যা আছে।

 

যারা মনে করেন কৃষ্ণ রাধাকে বিবাহ করেননি তাদের মত শ্রী কৃষ্ণ এবং রাধা এক এবং অভিন্ন একই শক্তির দুই রূপ তাই তাদের বিবাহর প্রয়োজন নেই। তবে শাস্ত্রে রাধা কৃষ্ণর বিবাহের কথা আছে। সে বিষয়ে পরে আসছি আগে রাধার সাথে আয়ান ঘোষের বিবাহ নিয়ে বলা প্রয়োজন।

 

আয়ানের আসল নাম অভিমন্যু। গোকুলের বাসিন্দা আয়ান পেশায় ছিলেন দুধের ব্যবসায়ী। সম্পর্কে কৃষ্ণের পালিকা মা যশোদার তুতো ভাই ছিলেন আয়ান। তাঁর সঙ্গে রাধার বিয়ের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন কৃষ্ণের পালক পিতা নন্দ। কালী-ভক্ত আয়ান পুজো-অর্চনা নিয়েই থাকতেন। অন্য কোনও বিষয়ে তাঁর বিশেষ আগ্রহ ছিল না।

তাই বিবাহ হলেও রাধা এবং আয়ান ঘোষের মধ্যে দাম্পত্য জীবন সেই ভাবে গড়ে ওঠেনি।

 

শ্রী রাধা এবং কৃষ্ণের প্রেম পবিত্র এবং তা পূর্ব নির্ধারিত কারণ কৃষ্ণ আসলে নারায়ণের একটি রূপ এবং রাধা লক্ষ্মীর রূপ। রাধা-কৃষ্ণের প্রেম যুগ যুগ ধরে চলে আসছে রাধা-রূপী লক্ষ্মী কৃষ্ণের সঙ্গীনি হতেই মর্ত্যে অবতীর্ণ হয়েছিলেন।

 

আবার শাস্ত্রে এও আছে যে ছোটবেলায় খেলার ছলে রাধা কৃষ্ণের বিবাহ সম্পন্ন হয় এবং সেই বিয়ের আচার সম্পূর্ণ করেন স্বয়ং ব্রহ্মা।

বিয়ের সাক্ষী ছিলেন সব দেবতাগণ। কৃষ্ণের সঙ্গে আগেই বিয়ে হয়ে যাওয়ায় আয়ানের সঙ্গে রাধার বিয়ে বৈধ নয় এবং রাধা কৃষ্ণের সম্পর্ক বিবাহ বহির্ভূত নয়। শাস্ত্র সম্মত।

 

ফিরে আসবো কৃষ্ণ কথা নিয়ে আগামী পর্বে।

শ্রী কৃষ্ণ কে নিয়ে আরো অনেক আলোচনা

বাকি আছে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।