Home Blog Page 4

মাহেশের রথ যাত্রার ইতিহাস

মাহেশের রথ যাত্রার ইতিহাস

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

পুরীর মতো অত প্রাচীন না হলেও বাংলার রথ যাত্রার রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস এবং সেই ইতিহাসের অনেকটাই জুড়ে রয়েছে মাহেশের

বিখ্যাত রথ যাত্রা। আজ এই রথ যাত্রা

নিয়ে লিখবো।

 

ইতিহাস বলছে পাঁচশো বছর আগে সন্ন্যাসী ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী পুরীতে গিয়েছিলেন নিজের হাতে জগন্নাথ দেবকে ভোগ রেঁধে খাওয়াবেন বলে। কিন্তু সেখানকার সেবকরা তাতে রাজি না হওয়ায় রাগে, শোকে সন্ন্যাসী স্নান-খাওয়া ত্যাগ করেন। তখন একদিন স্বপ্নে তাঁর দেবদর্শন হয়। জগন্নাথ দেব তাঁকে নির্দেশ দেন মাহেশে যেতে। সেখানে গিয়ে এক বৃ্ষ্টিভেজা রাতে ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী গঙ্গায় ভাসমান তিনটি নিমগাছের কাঠ পান। এই কাঠ দিয়ে তিনি তৈরি করেন জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার মূর্তি। এই মূর্তি আজও পুরীর মন্দিরের মতোই মাহেশে পূজিত হয়। এবং ১২ বছর অন্তর মূর্তিগুলির অঙ্গ মার্জনা করা হয়।

 

তবে পুরীতে যেখানে তিনটি রথ সাজিয়ে শোভাযাত্রা করে বের করা হয় মাহেশে হয় একটি। প্রথমে এই রথ তৈরি হয়েছিল কাঠের। পরে পুরনো হয়ে সেই রথ ভেঙে গেলে ১২৯২ সনে নতুন রথ বানিয়ে দেন শ্যামবাজারের দেওয়ান কৃষ্ণরাম বসু। এই রথ সম্পূর্ণ লোহার তৈরি। রথটি তৈরি করে দেয় তৎকালীন  মার্টিনবার্ন কোম্পানি। ৫০ ফুট উঁচু এই রথের ৯টি চুড়ো, ১২টি চাকা। ওজন ১২৫ টন। রথের সামনে তামার দু-টি ঘোড়া আর কাঠের দু-টি রাজহাঁস আছে।

 

এই রথ তৈরি করতে তখনকার দিনে খরচ হয়েছিল কুড়ি হাজার টাকা। এই রথে চড়েই জগন্নাথ দেব তাঁর ভাই-বোনদের নিয়ে মাসির বাড়ি যান। একসপ্তাহ পরে উল্টোরথের দিনে তিন দেব-দেবী রথ ফিরে আসে নিজের জায়গায়।আবার শুরু হয় আগামী বছরের প্রতীক্ষা|

 

মাহেশের এই রথ পরিচিত নীলাচল নামে। শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু একাধিকবার এই রথ যাত্রায় অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি মাহেশের নাম দেন নব নীলাচল। সেই অনুযায়ী মাহেশের রথ পরিচিত নীলাচল রথ নামে। ঐতিহাসিক এই রথ যাত্রায় রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবও যোগদান করেছিলেন।

 

আবার পরের পর্বে রথ যাত্রার অন্য এক ইতিহাস এবং অনেক তথ্য নিয়ে ফিরে আসবো। পড়তে

থাকুন। ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

পুরীর রথ যাত্রার প্রাচীন ইতিহাস

পুরীর রথ যাত্রার প্রাচীন ইতিহাস

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

পুরীর রথের রয়েছে এক প্রাচীন এবং সমৃদ্ধ ইতিহাস। বিভিন্ন প্রাচীন পুঁথি এবং গ্রন্থ থেকে পাওয়া সেই ইতিহাস আজ আপনাদের সামনের তুলে ধরবো।

ভগবান বাসুদেবের রথ গরুড় ধ্বজ সুভদ্রার রথ পদ্মধ্বজ বলরামের রথ তালধ্বজ নামে পরিচিত।

কখন পুরীর রথযাত্রা শুরু হয়েছিল তা বলা কঠিন। গবেষকমন্ডলী এবং ইতিহাসবিদগণের রথযাত্রার উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন শাস্ত্র থেকে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পেয়েছি।

‘মাদলা পঞ্জি’ নামে ষোড়শ শতাব্দীতে প্রণীত এক পঞ্জিকায় উল্লেখ আছে, একদা জগন্নাথ মন্দির এবং গুন্ডিচা মন্দিরের মধ্যে মালিনী নামে একটি নদী ছিল যা বড় নাই অথবা বড় নদী নামেও খ্যাত।

সে সময়ের রাজা ৬টি রথ নির্মাণ করেন। সুদর্শন চক্রসহ জগন্নাথ এবং বলরাম ও সুভদ্রার বিগ্রহের জন্য তিনটি রথ নদী পর্যন্ত আনতে ব্যবহৃত হতো। তারপর বিগ্রহগণ নদীর অপর প্রান্তে আনা হলে, সেই স্থান থেকে জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রাকে গুন্ডিচা মন্দিরে আনতে তিনটি অতিরিক্ত রথ নিযুক্ত করা হতো। রাজা বীর নরসিংহের শাসনামলে নদীটি মাটি দ্বারা পূর্ণ বরা হয় এবং তারপর থেকে গুন্ডিচা মন্দির পর্যন্ত যাওয়ার জন্য শুধু তিনটি রথ প্রয়োজন হয়, আধুনিক হিসাব অনুসারে সেটি প্রায় ২.৮ কিলোমিটার।

মাদলা পঞ্জি অনুসারে গুন্ডিচা মন্দিরটি পূর্বে নরসিংহ এটি পাথর দিয়ে পুননির্মাণ করেন। কিন্তু যখন পুরীর রথযাত্রা শুরু হয়, এর কোনো সঠিক তথ্য নেই। তবে, ক্রয়োদশ শতাব্দীতে যে রথযাত্রা উদযাপিত হতো তার ঐতিহাসিক প্রামাণ রয়েছে।

‘রথ চকড়’ নামে একটি গ্রন্থ প্রাচীন মন্দিরে পাওয়া যায়। এটি প্রতিপন্ন করে যে, রাজা যযাতি কেশরী ৮ম শতাব্দীতে রথযাত্রা উদযাপন করেন।

স্কন্দপুরাণ অনুসারে, মহারাজ ইন্দ্রদ্যুম্নের শাসনামলে রথযাত্রা উদযাপিত হয়, যখন তিনি জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রা বিগ্রহ স্থাপন করেন।

এখানে এক জায়গায় নারদমুনি বললেন, “প্রিয় রাজা, ভগবানের ভ্রমণের জন্য সুন্দরভাবে সজ্জিত তিনটি রথ প্রস্তুত করতে হবে। এই রথ গুলো রত্ন, অলঙ্কার, পাটের শাড়ি, মালা এবং বিভিন্ন মূল্যবান রত্নদ্বারা আবৃত করতে হবে। স্কন্দ পুরাণে আরো বর্ণিত আছে যে, স্বর্গের স্থপতি বিশ্বকর্মা নারদ মুনি কর্তৃক নির্দেশিত হয়ে একই দিনে তিনটি রথ নির্মাণ করেন। তখন নারদ মুনি বৈদিক রীতি অনুসারে রথসমূহ স্থাপন করেন। এই বর্ণনা হতে আমরা জানতে পারি, রথযাত্রা সুপ্রাচীনকাল থেকে প্রচলিত|

পুরীর রথ সংক্রান্ত আরো অনেক তথ্য আপনাদের জন্য নিয়ে আসবো আপনাদের জন্য আগামী পর্ব গুলিতে। পড়তে থাকুন। ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

জগন্নাথ ব্রতর মাহাত্ম

চলছে রথ যাত্রা। চলছে বললাম কারন রথযাত্রা সমাপ্ত হয় উল্টো রথের মধ্যে দিয়ে। সোজা রথ থেকে উল্টো রথ পর্যন্ত নানা উপাচার এবং আধ্যাত্মিক কর্ম কান্ড অনুষ্ঠিত হয় পুরী ধামে। শুধু পুরী নয় যেখানেই প্রভু জগন্নাথ বিরাজমান সেখানেই এই দিন গুলিতে নানা রকম ব্রত বা
শাস্ত্রীয় উপাচার পালন হয়। এমনই এক ব্রত জগন্নাথ ব্রত।

রথযাত্রার দিনে জগন্নাথ ব্রত শুরু হয়।এতে সুখ সমৃদ্ধি আসে।বাড়িতে নারায়ণ থাকলে তার সামনেও এই ব্রত পালন করতে পারেন। একটি পেতলের বাটিতে একটু আতপ চাল, দুটো কাঁচা হলুদ এবং এক টাকার একটি কয়েন দিন। এরপর এই বাটিটি জগন্নাথ দেবের সামনে রেখে দিন। উল্টো রথের শেষ লগ্নে এই বাটিটি তুলে নিন এবং বাটিতে থাকা সমস্ত ভূজ্যি কোনও মন্দির বা ভিক্ষুককে দান করে। প্রভু জগন্নাথকে প্রনাম করে নিজের মনোস্কামনা জানান।

জগন্নাথ ব্রত পালন কালে জগন্নাথ দেবকে তুলসী অর্পণ করতে পারেন।তুলসি জগন্নাথদেবের সবচেয়ে প্রিয় জিনিস। একশো আট টি তুলসী পাতা দিয়ে মালা গড়ুন। তুলসি পাতার ডগাগুলিকে বেঁধে বেঁধে এই মালা তৈরি করতে হবে। রথের দিন মালা জগন্নাথদেবের গলায় পরিয়ে দিতে হবে।
এবং উল্টো রথে তা বিসর্জন দিতে হবে।
এতে জগন্নাথদেবের বিশেষ কৃপা পাবেন।

আবার রথ যাত্রা এবং জগন্নাথ দেব সংক্রান্ত শাস্ত্রীয় আলোচনা নিয়ে ফিরে আসবো।
আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

বিপদ তারিণী পুজোর শাস্ত্রীয় তাৎপর্য 

বিপদ তারিণী পুজোর শাস্ত্রীয় তাৎপর্য

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

যিনি দুর্গা তিনিই বিপদতারিনী।আষাঢ় মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে বিপদতারিনী পুজো হয়। তিথি অনুসারে আজ বিপদতারিণী পুজো।

 

শাস্ত্র মতে বিপত্তারিণীর ব্রত পালনের অর্থ দেবী দুর্গার আরাধনা করা। দেবী দুর্গা হিন্দুধর্মের দেবী। দেবাদীদেব মহাদেবের অর্ধাঙ্গিনী আদি শক্তি। অন্যান্য দেবী তাঁরই অবতার বা ভিন্ন রূপ। সিংহবাহিনী দেবী দুর্গা কখনও অসুরনাশিনী, আবার কখনও বা মাতৃ রূপিণী। মা বিপত্তারিণী দেবী দুর্গার ১০৮ অবতারের একটি রূপ।

 

বিপত্তারিণী ব্রত পালনের মাধ্যমে দেবী বিপদতারিণীর আরাধনা করা হয়।পুজোর আগের দিন নিরামিষ আহার করতে হয়।

১৩ রকম ফুল, ১৩ রকম ফল, ১৩টি পান, ১৩টি সুপারি এবং ১৩ গাছা লাল সুতোতে ১৩ গাছা দূর্বা সহযোগে ১৩টি গিঁট বেঁধে ডুরি তৈরি করতে হয়। আম্রপল্লব-সহ ঘট স্থাপন করে ব্রাহ্মণ দ্বারা নাম গোত্র সহযোগে পূজা দিতে হয়। পূজার পরে বিপত্তারিণী দেবীর ব্রতকথা শোনা পুজারই অঙ্গ।

পুজোর পর বিপদ তারিণীর নামাঙ্কিত লাল সুতোর ডুরি পুরুষদের ডান এবং মহিলাদের বাম হাতে ধারণ করাই নিয়ম।

 

বিপত্তারিণী ব্রত সাধারাণত মহিলাদের ব্রত। এই ব্রত কমপক্ষে ৩ বছর পালন করা নিয়ম।বিপত্তারিণী ব্রত পালনে মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয়। সাংসারিক বিপদ থেকে রক্ষা করে জীবনে সুখ, শান্তি এবং সমৃদ্ধি দান করেন মা বিপত্তারিণী।

 

গ্রামাঞ্চলে বিপদতারিনী পুজো চারদিন ধরে চলে। প্রথম দিনে দেবীর “আরাধনা” করা হয়। তারপর দুই রাত্রি ধরে রাতে বাংলা লোকগান, ভজন ও কীর্তন চলে। চতুর্থ দিনে বিসর্জন হয়।পুজোর পর বিপদ তারিণীর নামাঙ্কিত লাল সুতোর ডুরি পুরুষদের ডান এবং মহিলাদের বাম হাতে ধারণ করাই নিয়ম।

 

এই পুজোর নিয়ম অনুসারে মা বিপদতারিনী পুজো করা ভক্তরা সুখ ও শান্তি লাভ করে। শাস্ত্রে যেমন মা লক্ষ্মী মাকে ধন সম্পদের দেবী হিসাবে বিবেচনা করা হয়। তেমনি এটা বিশ্বাস করা হয় যে মা বিপদতারিনী উপাসনা করলে তিনি সকলের উপর আশির্বাদ বজায় রাখেন। একই সঙ্গে সমস্ত ঝামেলা, অর্থ সঙ্কট থেকে মুক্তি দেন। ঘরে সুখ এবং সমৃদ্ধি লাভ হয়।

 

সবাইকে মা বিপদ তারিণী পুজোর শুভেচ্ছা।

শাস্ত্র মতে বিপদ তারিণী ব্রত পালন করুন।

ফিরে আসবো আগামী পর্বে অন্য শাস্ত্রীয়

বিষয় নিয়ে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন।ধন্যবাদ।

রথযাত্রার শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন

রথযাত্রার শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আজ পবিত্র রথযাত্রা মনে করা হয় দীর্ঘ বিরতির পর শ্রী কৃষ্ণর বৃন্দাবন যাত্রাকেই উদযাপন করা হয় রথ যাত্রা পালনের মাধ্যমে|

 

পুরীতে আজ জগন্নাথ দেব তার রাজকীয় রথে করে পথে নামেন তার অগণিত ভক্তদের দর্শন দিতে।এই রথ যাত্রার এক সুদীর্ঘ ইতিহাস আছে।প্রথমে রাজ পরিবারের পৃষ্ঠপোষকতায় ও পরবর্তীতে সরকার জনসাধারণএর উদ্যোগে প্রতি বছর পুরীতে ওই বিশেষ তিথী তে বিরাট আকারে পালিত হয় রথ যাত্রা|

 

এই পরম্পরা চলে আসছে যুগ যুগ ধরে|

বোন সুভদ্রা ও দাদা বলরাম বা বলভদ্রকে নিয়ে রথে চড়ে রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের পত্নী গুন্ডিচারবাড়ি যান জগন্নাথদেব। সেখান থেকে সাতদিন পরে আবার নিজের মন্দিরে ফিরে আসেন।

 

রথের দিন তিনটি রথ পর পর যাত্রা করে মাসির বাড়ি। প্রথমে যায় বলরামের রথ, তারপর সুভদ্রা এবং সবশেষে জগন্নাথের রথ। রথে চড়ে এই গমন ও প্রত্যাগমনকে সোজা রথ এবং উল্টোরথ বলে|তিনটি রথের প্রত্যেকের নিজস্ব বৈশিষ্ট আছে|জগন্নাথের রথের নাম নন্দী ঘোষ, বলরামের রথের নাম তালধ্বজ ও সুভদ্রার রথের নাম দর্পদলন।আজও পুরীর বর্তমান রাজা সোনার ঝাড়ু ব্যবহার করে রথের যাত্রার আগে তার পথ পরিষ্কার করে থাকেন|

 

শ্রীচৈতন্যদেবের নীলাচল অর্থাৎ পুরী যাওয়ার পর থেকে বাংলায় রথ যাত্রার জনপ্রিয়তা বাড়ে।চৈতন্যভক্ত বৈষ্ণবরা বাংলায় পুরীর অনুকরণে রথযাত্রার শুরু করেন এবং দেখতে দেখতে বহু রাজপরিবার ও এই মহা সমারোহে এই উৎসব পালন করতে শুরু করে|আরো কিছু কাল পরে ইসকন ও শ্রীল প্রভুপাদের হাত ধরে রথ যাত্রা দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতে পা রাখে ও ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে সারা বিশ্ব জুড়ে|

এবছর থেকে দিঘার নব নির্মিত জগন্নাথ ধামের রথ যাত্রা পালনের মাধ্যমে বাংলার রথ

যাত্রা উৎসব নিঃসন্দেহে অন্য মাত্রা পেলো।

 

পবিত্র রথ যাত্রা যেকোনো শুভ শাস্ত্রীয় বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সূচনার পবিত্র দিন হিসেবে গণ্য করা হয়| বাঙালির অন্যতম শ্রেষ্ঠ উৎসব দূর্গাপূজোর সূচনাও হয় এই রথ কিংবা উল্টোরথের দিন|

 

আজ আপনাদের সবাইকে জানাই পবিত্র

এই রথ যাত্রার অসংখ্য শুভেচ্ছা এবং

অভিনন্দন। জয় জগন্নাথ।রথ যাত্রা সংক্রান্ত আরো অনেক তথ্য এবং আলোচনা নিয়ে আবার ফিরে আসবো আগামী সময়ে ধারাবাহিক ভাবে।

পড়তে থাকুন। ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

অম্বুবাচির প্রকৃত অর্থ

অম্বুবাচির প্রকৃত অর্থ

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

অম্বুবাচি নিয়ে বিগত সপ্তাহে বিভিন্ন আঙ্গিকে আলোচনা করেছি জানিয়েছি তার শাস্ত্রীয় এবং আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা এবং বিধিনিষেধ।

বলেছি অম্বুবাচী মেলার কথা।আজ অম্বুবাচী পরবর্তী এই পবিত্র সময়ে জানাবো অম্বুবাচির প্রকৃত বা অন্তর নিহিত অর্থ।

 

অম্বুবাচীর সময়ে কৃষকরা কৃষি কাজ থেকে বিরত থাকেন ও ধরিত্রী কে বিশ্রাম দেন|আবার অম্বুবাচী

উপলক্ষে উড়িষ্যায় ভূদেবীর বিশেষ পূজা মেলা ও উৎসবের আয়োজন করা হয় ও ব্যাপক জন সমাগম হয়|ভূদেবী কে উড়িষ্যায় স্বয়ং জগন্নাথ দেবের স্ত্রী হিসেবে কল্পনা করা হয় এবং তার ঋতুমতী হওয়ার সময় কাল কে চারদিনের রজ উৎসব হিসেবে পালন করা হয়|

 

পুরানে পৃথিবীকে নানা রূপে দেখানো হয়েছে।

শাস্ত্র মতে তিনি কশ্যপ প্রজাপতির কন্যা ভূদেবী। আবার রামায়ণে তিনি সীতার মা। অন্য একটি পৌরাণিক ব্যাখ্যা অনুসারে দ্বাপরযুগে কৃষ্ণের স্ত্রী সত্যভামা রূপে এই ভুদেবী জন্মেছিলেন।আবার বরাহ অবতারে এই বসুন্ধরাকেই অতল সাগর থেকে রক্ষা করেছিলেন স্বয়ং বিষ্ণু।ধরিত্রী জড় বস্তু নয় তিনি দেবী রূপে পূজিতা হন এবং সৃষ্টি শক্তির আধার।

 

অম্বু বাচীতে উড়িষ্যায় চারদিনের উৎসব কে চারটি আলাদা পর্যায় উদযাপন করা হয় প্রথম দিনকে বলা হয় পহিলি রজ। দ্বিতীয় দিন মিথুন সংক্রান্তি| তৃতীয় দিন ভূদহ বা বাসি রজ এবং চতুর্থ দিন বসুমতী স্নান।

 

সনাতন ধর্মে চন্দ্র সূর্য বায়ু পর্বত বা গঙ্গা যেমন দেবতা বা দেবী রূপে পূজিত হন তেমনই প্রকৃতি

এখানে দেবীর মর্যাদা পায়। যে প্রকৃতি আমাদের খাদ্য দেয় অক্সিজেন দেয় জল দেয় সেই প্রকৃতিকে মাতৃ শক্তি রূপে পুজো করা এবং তার জীবনের একটি বিশেষ পর্যায়কে সন্মান জানানোই অম্বুবাচির প্রকৃত উদ্দেশ্য।

 

আগামী কাল রথ যাত্রা উপলক্ষে বিশেষ পর্ব নিয়ে আবার ফিরে আসবো। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

অম্বুবাচি মেলা এবং উৎসব 

অম্বুবাচি মেলা এবং উৎসব

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

প্রতি বছর অম্বুবাচী উপলক্ষে কামাখ্যা মন্দিরের কাছে অনুষ্ঠিত অম্বুবাচী মেলা যা পূর্ব ভারতের অন্যতম বড় ধর্মসভা যা সনাতন ধর্মের মানুষদের এক বিরাট মিলন উৎসব বা মেলার রূপ নেয়।

আজকের পর্বে এই মেলার কিছু বৈশিষ্ট আপনাদের সামনে আনবো।

 

দেবী কামাখ্যা মাতৃ শক্তিকে মূর্ত করে। প্রতি

বছর আষাঢ় মাসের সপ্তমী থেকে দশম দিন পর্যন্ত অম্বুবাচীর সময়কালে মন্দিরের দরজা সকলের জন্য বন্ধ থাকে। অম্বুবাচির নিবৃত্তির আবার আনুষ্ঠানিক ভাবে দরজা খুলে দেওয়া হয় এবং সেই দিন মন্দির চত্বরে অম্বুবাচী মেলা বসে।

 

শাস্ত্র পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত কামাখ্যা মন্দির যেখানে অবস্থিত সেখানেই পতিত হয়েছিলো দেবীর যোনি তাই অম্বুবাচি উৎসব এই অঞ্চলের প্রধান উৎসব তবে সারা ভারত, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার এবং আসাম থেকে হাজার হাজার মানুষ এই উৎসবটি দেখতে আসেন এবং দেবীর কাছ থেকে আশীর্বাদ গ্রহণ করেন।

 

আসামের এই অঞ্চলকে তন্ত্রের রাজ ধানী বললেও কম বলা হয়না কারন প্রাচীন কাল থেকে এখানে নানা রকম তন্ত সাধনা চলে আসছে।আজও

অম্বুবাচি উপলক্ষে বহু তন্ত্র সাধক আসেন এখানে।

আজও এখানে একটি গুপ্ত তান্ত্রিক সমাজ রয়েছে বলে মনে করা হয় এবং তাদের সমস্ত তান্ত্রিক আচার অনুষ্ঠান গোপনে পরিচালিত হয় কোন রূপ বাহ্যিক প্রদর্শন নেই অম্বুবাচি মেলায় তাদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকেন বলে ধরে নেয়া হয়।

 

সেদিক দিয়ে দেখতেগেলে অম্বুবাচি উৎসব বা অম্বুবাচি মেলা আধ্যাত্মিক জগৎ বিশেষ করে তন্ত্র জগতের সব থেকে বড়ো মিলন উৎসব।

 

আগামী পর্বে আবার এমনই আধ্যাত্মিক এবং

শাস্ত্রীয় বিষয় নিয়ে ফিরে আসবো। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

অম্বুবাচী এবং মহা পীঠ কামাখ্যা

অম্বুবাচী এবং মহা পীঠ কামাখ্যা

 

পন্ডিতজি ভৃগুর শ্রী জাতক

 

প্রতি বছর অম্বুবাচী উপলক্ষে আসামের কামাখ্যায় দেশের সর্ব বৃহৎ উৎসবটি আয়োজন করা হয় যা অম্বুবাচী মেলা নামে প্রসিদ্ধ|সে নিয়ে পরে আলোচনা করবো।আজ জানবো শক্তি পীঠ কামাখ্যা ও তার সাথে জড়িয়ে থাকা অম্বুবাচী সংক্রান্ত নানা প্রথা, কিংবদন্তি ও তার আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা।

 

কামরূপ হচ্ছে তীর্থচূড়ামণি। তীর্থচূড়ামনির অর্থ হলো সব তীর্থের মধ্যে সেরা তীর্থ স্থান। যেখানে সতীর যোনি মন্ডল পতিত হয়েছিল সেই জায়গাটাকে বলে কুব্জিকাপীঠ। কথিত আছে যোনিরূপ যে প্রস্তরখণ্ডে মা কামাক্ষা অবস্থান করছেন সেই শিলা স্পর্শ করলে মানুষ মুক্তিলাভ করে।

 

পুরান অনুসারে স্বয়ং কাম দেব এই সতী পীঠ আবিষ্কার করেন এবং দেবীর পুজো করে শাপমুক্ত হন এবং নিজের হারানো রূপ যৌবন ফিরে পান।

তার নামে স্থানটির নাম হয় কামরুপ।

শাস্ত্র মতে যেহেতু দেবী সতীর গৰ্ভ ও যোনি পতিত হয়েছিল এই স্থানে এই কারণে এই দেবীকে অনেকে উর্বরতার দেবী বা রক্ত ক্ষরণ কারী দেবীও বলে থাকেন তাই স্বাভাবিক ভাবেই অম্বুবাচী যা দেবীর ঋতু মতি হওয়ার উৎসব এই স্থানে সর্বাধিক গুরুত্ব সহকারে পালন হয়|

 

অম্বুবাচির সময়ে বিশেষ কিছু প্রথা পালন করা হয় এখানে অম্বুবাচীর দিন থেকে পরবর্তী তিন দিন দেবীর মন্দির বন্ধ থাকে|এই সময় দেবীর দর্শন নিষিদ্ধ|এই সময়ে একটি লাল কাপড় দিয়ে

দেবীকে ঢেকে রাখা হয় ভক্তরা মন্দিরের বাইরে থেকে দেবীকে প্রনাম করেন ও নিজের মনোস্কামনা ব্যক্ত করেন|শোনা যায় নিয়ম অমান্য করে এই সময়ে মন্দিরে ঢুকলে অপুরণীয় ক্ষতি হয়।

 

অম্বুবাচীর চতুর্থ দিন থেকে দেবীর স্নান এর পর তার দর্শন ও স্বাভাবিক পূজা প্রক্রিয়া পুনরায় আরম্ভ হয়|এই পরম্পরা অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে যুগ যুগ ধরে পালিত হয়ে আসছে|অম্বুবাচী নিবৃত্তির পর দেবীর রক্ত বস্ত্র ভক্ত দের মধ্যে দান করা হয়, প্রচলিত বিশ্বাস মতে এই রক্ত বস্ত্র লাভ করলে জীবনের অনেক সমস্যা দুর হয় ও বহু মনোস্কামনা পূর্ন হয়|

 

এই শক্তি পীঠে দশমহাবিদ্যার মন্দিরও বিদ্যমান।তাই নব গ্রহের প্রতিকারের জন্য অনেকেই এই স্থান নির্বাচন করেন।তাছাড়া তন্ত্র মন্ত্র এবং নানা বিধ গুপ্ত বিদ্যার জন্য কামাখ্যা চিরকাল বিখ্যাত।

 

সারা সপ্তাহ ধরে চলত থাকবে অম্বুবাচি নিয়ে আলোচনা। ফিরে আসবো আগামী পর্বে।

পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

অম্বুবাচীর কিছু বিধি নিষেধ

অম্বুবাচীর কিছু বিধি নিষেধ

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

অম্বুবাচী সংক্রান্ত নানা শাস্ত্রীয় বিধি নিষেধ বা নিয়ম কানুন আছে আজকের পর্বে জানাবো এই সব নিয়ম এবং সেগুলির অন্তর্নিহিত তাৎপর্য|

আসলে এই বিশেষ সময় ধরিত্রী যেহেতু ঋতুমতী হয় তাই লৌকিক আচার বা প্রথা গুলিকে সাময়িক ভাবে স্থগিত রাখা হয় এর পেছনে আছে বা বিশ্বাস, শ্রদ্ধা এবং হাজার হাজার বছরের প্রাচীন পরম্পরা সাথে শাস্ত্রীয় বিধান|যদিও চতুর্থ দিন অম্বুবাচির নিভৃতির পর থেকে শুভ কাজে আর কোনো রকম বাধা থাকেনা।

শাস্ত্র মতে অম্বুবাচীর প্রথম তিন দিন কৃষি কাজ ছাড়াও আরো অনেককিছুই করা নিষেধ। এই সময় কোনো শুভ বা মাঙ্গলিক কাজের সূচনা করা হয়না যেমন বিবাহ,অন্নপ্রাসন গৃহ প্রবেশ বা মন্দিরের স্বাভাবিক পূজাঅর্চনা ইত্যাদি|

আদি শক্তির বিভিন্ন রূপকে যারা পূজা করেন অর্থাৎ কালী, চন্ডি, দূর্গা জগদ্ধাত্রী ইত্যাদি তারা দেবীমূর্তি কে একটি লাল কাপড়ে ঢেকে রাখতে পারেন।এই সময় দেবী মূর্তিকে স্পর্শ করা বা মন্ত্রউচ্চারণ করা উচিৎ নয়|গৃহী রা এই সময় কয়েকটি নিয়ম মেনে চললে গৃহের কল্যাণ হয় যেমন নতুন বৃক্ষ রোপন না করা বা দাম্পত্য জীবনে সংযম এবং শুদ্ধতা বজায় রাখা ইত্যাদি।

গ্রাম বাংলার বহু স্থানে নিষ্ঠার সাথে অম্বুবাচী পালন করা হয়|সাধারণত বিধবা মহিলারা অম্বুবাচী চলা কালীন আগুন জ্বালিয়ে খাবার রান্না করেন না|যারা ব্রহ্মচর্য পালন করেন তাদের এই সময় আমিষ খাবার বর্জন করে মূলত ফল মুল খেয়ে থাকতে হয়|এই কটাদিন বেদ পাঠ করা যায়না এবং উপনয়ন অনুষ্ঠান করা যায়না|অম্বুবাচীর আগের দিনটিকে বলা হয় ‘অম্বুবাচী প্রবৃত্তি’। তিন দিনের পরের দিনটিকে বলা হয় ‘অম্বুবাচী নিবৃত্তি’ যার পর আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার সূচনা হয় ধীরে ধীরে|

আবার তন্ত্র বা জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে অম্বুবাচী নিবৃত্তির সময় তন্ত্র সাধনা এবং শাস্ত্র মতে
গ্রহ দোষ খণ্ডনের উপযুক্ত সময়।

আগামী পর্বে আবার অম্বুবাচি সংক্রান্ত একটি বিশেষ পর্ব নিয়ে আপনাদের সামনে আসবো।
চলতে ধারাবাহিক এই শাস্ত্রীয়
আলোচনা। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

বৈকুণ্ঠ পুরের অম্বুবাচী উৎসব

বৈকুণ্ঠ পুরের অম্বুবাচী উৎসব

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

শুধু আসাম বা কামাখ্যা নয়। বাংলার বৈকুণ্ঠ পুরে বহু কাল ধরে অম্বুবাচী উৎসব পালন হয়। এই পুজোর রয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্য এবং ইতিহাস। আজকের পর্ব এই পুজোর ইতিহাস নিয়ে।

 

জলপাইগুড়ি জেলার তিস্তা নদীর দু’পার জুড়ে দেবী চৌধুরানী কে নিয়ে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য লোককথা । এখানে যেমন রয়েছে প্রাচিন বনদুর্গার পুজো, তেমনই রয়েছে ফালাকাটা, তুলাকাটা, ঢেনাকাটার পুজো। যা মূলত রাজবংশী সমাজের কৃষকেরাই করে থাকে এবং এই সব স্থানে অম্বুবাচীতে বিশেষ কিছু উপাচার অনুষ্ঠিত হয়।

 

শোনা যায় একবার শিব ঠাকুর কৈলাশ থেকে মর্তে এসে এই স্থানে লুকিয়ে ছিলেন এবং দেবী পার্বতী এই অঞ্চল থেকে শিবকে খুঁজে বের করতে মেছেনি রুপ ধারন করেছিলেন।

 

আবার প্রতি বছর আষাঢ় মাসে অম্বুবাচির পরের সপ্তাহে তিস্তা নদীর পথ ধরে জলপাইগুড়ি বৈকুন্ঠপুরে বজরায় চেপে আসতেন দেবী চৌধুরানী এবং পুজো সেরে উৎসব পালন করে আবার ফিরে যেতেন।

 

অম্বুবাচী নিবৃত্তির পর গ্রামের কৃষকরা এখানে পুজো দেন এবং তারপর আবার কৃষি কাজ শুরু করেন।একশো বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসছে এই পূজো। স্থানীয় কৃষকেরা এই পুজো না দিয়ে আমন ধান চাষ করেন না।এখানে অম্বুবাচীই প্রধান উৎসব সব অত্যন্ত পবিত্র এই সময়।

 

ফিরে আসবো ধারাবাহিক অম্বুবাচী সংক্রান্ত আলোচনা নিয়ে আবার আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।