Home Blog Page 2

শক্তি পীঠ – বিশ্বেসী

শক্তি পীঠ – বিশ্বেসী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

দক্ষিন ভারতের গোদাবরী নদীর তীরে অবস্থিত বিশ্বেসী শক্তিপীঠ নিয়ে আজকের শক্তি পীঠ পর্ব।

 

প্রাচীন কুব্জিকা তন্ত্র গ্রন্থে স্বয়ং শিব একটি শক্তি পীঠের উল্লেখ করে দেবী পার্বতীকে বলছেন –

 

” কামগিরি মহাপিঠঙ তথা গোদাবরী প্রিয়ে ”

 

এই শক্তি পীঠই বিশ্বেসী নামে খ্যাত।

 

জনশ্রুতি আছে যে কয়েকশো বছর আগে বিশু নাথ নামে এক সিদ্ধ যোগী এই দুর্গম অরণ্যঘেরা অঞ্চলে তপস্যা করতেন।এক রাতে তার আরাধ্যা দেবী কালী তাকে স্বপ্নে দেখা দেন এবং বলেন কাছেই দক্ষিণ দিকে এক জলাশয়ে একটি রুপোর ঘটে দেবী বিরাজ করছেন এবং তিনি যেনো তাকে উদ্ধার করে মন্দিরে স্থাপন করেন। আদেশ অনুসারে সেই মাতৃ সাধক পুকুর থেকে ঘট তুলে এনে পুজো শুরু করেন।

 

এর কিছুদিন পরে আবার এক সপ্নাদেশ এলো।

দেবী বললেন সামনেই আছে এক নীম গাছ সেই নীম গাছের ডাল থেকে যেনো দেবীর মূর্তি তৈরী হয়।একই সাথে রাজাও সেই রাতে স্বপ্ন দেখলেন যে মাতৃ সাধক বিশুনাথকে তিনি যেনো দেবীর মূর্তি নির্মাণ এবং মন্দির তৈরীতে সাহায্য করেন।

শুধু তাই নয় ভৈরব দন্ডপানি কে প্রতিষ্ঠা করে পুজো করার কথাও দেবী বলে দেন।সব কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন হয়।

 

শাস্ত্র মতে এখানেই পড়েছিলো দেবীর গন্ডদেশ। যদিও দেবীর শ্রী অঙ্গ এবং স্থান টি নিয়ে কিঞ্চিৎ মতপার্থক্য আছে।তবে একাধিক শাস্ত্রে এই স্থানকে একান্ন পীঠের অন্যতম স্থানের মর্যাদা দেয়া হয়েছে।

 

দেবী এখানে বিশ্বেশী। শান্ত, স্নিগ্ধ এবং মমতাময়ী রূপে দেবী এখানে বিরাজ করছেন। এই স্থান তন্ত্র সাধনার উপযুক্ত বলে মনে করা হয়। তাই বহু তন্ত্র সাধক তাদের সাধনার জন্য এই পবিত্র স্থানকে বেছে নেন।জনশ্রুতি আছে বহু মানুষ এই স্থানে পুজো দিয়ে স্বপ্নে।দেবীকে দর্শন করেছেন এবং তাদের সমস্যার সমাধান পেয়েছেন।

 

ফিরে আসবো আগামী পর্বে চলতে থাকবে

শক্তি পীঠ নিয়ে ধারাবাহিক বিস্তারিত আলোচনা। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

শক্তি পীঠ – কিরিটেশ্বরী

শক্তি পীঠ – কিরিটেশ্বরী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

বাংলার এককালীন রাজধানী মুর্শিদাবাদে রয়েছে অন্যতম জাগ্রত এবং প্রসিদ্ধ এক শক্তি পীঠ

যার নাম কিরীটেশ্বরী। এই পীঠকে কেন্দ্র করে অলৌকিক ঘটনা বা কিংবদন্তীর শেষ নেই।

সেসব নিয়েই আজকের পর্ব।

 

প্রাচীন ইতিহাস অনুসারে এই স্থানের নাম

ছিল কিরীটকণা। অনেকে মনে করেন এখনে সতীর মুকুটের বা কিরিটের কণা পড়েছিল। আবার কেউ বলেন কিরীট অর্থে এখানে ললাট বা কপাল বোঝানো হয়েছে।তবে মন্দিরের সঙ্গে যুক্ত সেবাইত দের অনেকেই বলেন কিরীট কথাটি এসেছে করোটি বা মাথার খুলি থেকে। সেই থেকে দেবীর করোটি এখানে পতিত হয়ে ছিলো।

শুধু তাই নয় সেই করোটির টুকরো প্রস্তুরীভূত অবস্থায় আছে বলেই অনেকে মনে করেন।

তাই করোটি থেকে কিরীটী নাম হয়েছে বলেই তাদের ধারনা।

 

আদি কিরিটেশ্বরী মন্দির ঠিক কবে কে স্থাপন করেছেন তা স্পষ্ট ভাবে বলা না গেলেও বর্তমান মন্দিরটি বাংলার ১১০৪ সালে নাটোরের রানি ভবানী প্রতিষ্ঠা করেন।পরবর্তী সময়ে মহারাজা

যোগেন্দ্রনারায়ণ রাই ১৩৩৭ বঙ্গাব্দে নবরূপে

এই মন্দিরের সংস্কার করেন।

 

তিন ধর্মের স্থাপত্যের মিশেল রয়েছে এই মন্দিরে। হিন্দু, বৌদ্ধ ও ইসলাম ধর্মের স্থাপত্য শৈলীর অতি সুন্দর এবং যথাযত ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়

এই মন্দিরে।মা কিরীটেশ্বরী এখানে

দক্ষিণাকালী রূপে ধ্যানআসনে পূজিতা।

নিয়ম প্রত্যেক নিশি রাতেই মায়ের পুজো হয়।

 

শোনা যায় পলাশীযুদ্ধে বিস্বাসঘাতকতার করার শাস্তি পেতে হয় মীরজাফরকে।বৃদ্ধ বয়সে নবাব মীরজাফর দুররোগ্য কুষ্ট রোগে আক্রান্ত হন এবং অত্যন্ত কষ্ট পান।সেই সময়ে কিরিটেশ্বরী মন্দিরের চরণামৃত গ্রহণ করে কুষ্ঠ রোগ

থেকে মুক্তি পান তিনি।পরবর্তী সময়ে কিরীটেশ্বরীতে একটি পুস্করিণী খনন করে দেন

নবাব মীরজাফর। মন্দিরের পাশে করা সেই পুষ্করিণী কালী সাগর নামে পরিচিত।

 

বহু শক্তি পীঠ নিয়ে আলোচনা এখনো

বাকি আছে।চলতে থাকবে একান্ন পীঠ নিয়ে এই

বিশেষ ধারাবাহিক লেখনী।ফিরে আসবো পরের পর্বে।পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

শক্তি পীঠ – ত্রিপুরা সুন্দরী

শক্তি পীঠ – ত্রিপুরা সুন্দরী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দির সতীর একান্ন শক্তিপীঠের মধ্যে এটি অন্যতম।শাস্ত্র মতে দেবী সতীর ডান পা এই স্থানে পতিত হয়েছিল। দেবী সতীকে এই মন্দিরে ত্রিপুরা সুন্দরী বা ত্রিপুরেশ্বরী হিসাবে পুজো করা হয়।আজকের একান্ন পীঠ পর্বে

ত্রিপুরা সুন্দরী বা ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির নিয়ে লিখবো।

 

মধ্যযুগে মহারাজা ধন্য মানিক্য দেবীর

স্বপ্নাদেশের পর চট্টগ্রাম থেকে দেবী বিগ্রহ নিয়ে এসে মাতাবাড়ির একটি ছোট পাহাড়ের উপর স্থাপন করেন।

 

এই মন্দিরের গর্ভগৃহে দুটি দেবীমূর্তি রয়েছে।

পাঁচ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট মূর্তিটি ত্রিপুরাসুন্দরী নামে পরিচিত এবং দু ফুট লম্বা ছোট মূর্তিটিকে ছোটমা বা চন্ডীমাতা বলা হয় ।ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরে দেবী মূর্তির পাশাপাশি নারায়ণ শিলা রয়েছে।

ভারতের স্বাধীনতার পর ত্রিপুরা রাজ্যর ভারতে অন্তর্ভুক্তির সময় ত্রিপুরার তৎকালীন রানী কাঞ্চন প্রভাদেবীর ইচ্ছেতে রাজ্য সরকার ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দিরের পরিচালনার দায়িত্ব নেয়।

 

আজও বিশেষ বিশেষ তিথিতে পুজোর সময়

রাজ পরিবারের সদস্যদের অর্ঘ্য আহুতি দিতে হয়।

ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির চত্বরে থাকা কল্যাণ সাগর এই শক্তি পীঠের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এই দিঘিতে আছে প্রচুর পরিমাণে কচ্ছপ।এই দীঘিকে খুবই পবিত্র মনে করা হয় এবং ভক্তরা বিশ্বাস করেন এই দীঘির কচ্ছপদের খেতে দিলে তাদের মনোস্কামনা পূর্ণ হবে।

 

শক্তি পীঠ ত্রিপুরাসুন্দরীকে ‘কূর্ম পীঠ’ ও বলা হয়। অনেকে মনে করেন এই কল্যাণ সাগরের কচ্ছপদের উপস্থিতির জন্যই এইরুপ নাম আবার অনেকে বিশ্বাস করেন যেখানে মন্দির অবস্থিত সেই পাহাড়ের আকৃতি ঠিক কচ্ছপের মত ছিল বলে এই শক্তিপীঠের নামকরণ করা হয় কুর্ম পীঠ।

 

এখনো অনেকগুলি শক্তিপীঠ নিয়ে আলোচনা বাকি আছে। পরবর্তী শক্তিপীঠ নিয়ে ফিরে আসবো আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

সিদ্ধ পীঠ – তারাপীঠ

সিদ্ধ পীঠ – তারাপীঠ

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

অমাবস্যা উপলক্ষে আজ সাধনপীঠ তারাপীঠ নিয়ে বিশেষ পর্বে আপনাদের স্বাগত।

পীঠ নির্ণয় তন্ত্র মতে তারাপীঠ একান্নটি সতী পীঠের অন্তর্ভুক্ত না হলেও তারাপীঠকে বলা হয় সাধন পীঠ বা সিদ্ধ পীঠ। তারাপীঠের গুরুত্ব শাক্ত সম্প্রদায়ের মধ্যে এতটাই বেশি যে এই পীঠকে মহা পীঠ আখ্যা দেয়া হয়। আদতে তারাপীঠ দশ মহাবিদ্যা দেবী তারার জাগ্রত মন্দির।

 

তারাপীঠ মন্দিরের ইতিহাস বেশ প্রাচীন।

আজ থেকে প্রায় আটশো বছর আগের ঘটনা।রাজা জয়দত্ত বাণিজ্যে প্রভূত সম্পদ, অর্থ লাভ করে বাড়ি ফিরছিলেন। চলার পথে অসুস্থতায় মৃত্যু হল তাঁর সঙ্গে থাকা প্ৰিয় পুত্রের। বাড়ি ফিরেই ছেলের অন্ত্যেষ্টি করবেন স্থির করে তিনি মাঝিদের বললেন, পুত্রের দেহটাকে ভালো করে সংরক্ষণ করে রাখতে।এদিকে সন্ধ্যা নেমেছে। রাত্রিটা তাই পথেই বিশ্রাম নিতে হবে। চলতে চলতে থামলেন এক বিশাল জঙ্গলের পাশে। স্থানটির নাম চণ্ডীপুর।নিদ্রাহীন জয় দত্ত তখন মৃত ছেলের দেহ আঁকড়ে রাত জাগছেন। সেই সময় এক কুমারী মেয়ে নৌকার কাছে এসে দাঁড়ালেন। দেখা গেলো রাত্তির আকাশজুড়ে অপূর্ব এক জ্যোতি। অপূর্ব সুন্দরী সেই মেয়েটি জয়দত্তকে জিজ্ঞাসা করলেন,‘ও বাছা, এত নৌকা ভরে কী নিয়ে চলেছো গো?’ পুত্রশোকে জয়দত্তের মন ভারাক্রান্ত ছিল। তাই তিনি রাগত স্বরে মেয়েটিকে বললেন, ‘ছাই আছে’। সে কথা শুনে মেয়েটি ‘আচ্ছা’ বলে চলে গেলেন। কিছুক্ষণ পরে জয়দত্ত দেখলেন তাঁর নৌকার সব বাণিজ্যসামগ্রী, অর্থ ছাইতে পরিণত হয়েছে। পরদিন সকালে মাঝিরা রান্নায় বসল। খেয়েদেয়ে নৌকা নিয়ে যাত্রা করতে হবে। কাটা শোল মাছ কাছেই এক কুণ্ডের জলে ধুতে গেল তারা। কী আশ্চর্য! জলের স্পর্শ পেয়ে মাছটি জ্যান্ত হয়ে সাঁতরে চলে গেল। মাঝিরা দৌড়ে এসে জয়দত্তকে সব কথা জানাল। জয়দত্তের মনে পড়ল আগের রাতের সেই মেয়েটির কথা। তিনি বুঝতে পারলেন কোনো দেবী এসেছিলেন তার কাছে। অজ্ঞানতা বসত তিনি বুঝতে পারেননি।সেই রাতে দেবী তারা স্বপ্নে দেখা দিলেন এবং বললেন কুণ্ডের জল ছেলের গায়ে ছড়ালেই সে বেঁচে উঠবে। পরদিন বশিষ্ঠকুণ্ডের জল ছেলের গায়ে ছেটাতেই ছেলে ‘তারা তারা’ বলে বেঁচে উঠল সে। শুধু তাই নয় তিনি হারানো সম্পদও ফিরে পেলেন। সেদিন রাতে বী তাঁকে স্বপ্নে দর্শন দিলেন। তাঁকে আদেশ করে বললেন যে এই জঙ্গলের মধ্যে একটা শ্বেতশিমুল গাছের নীচে একটা শিলাবিগ্রহ রয়েছে। সেই বিগ্রহ একটা মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করে তার পুজোর ব্যবস্থা করবি। আমি হলাম উগ্রতারা। জঙ্গলের মধ্যে শ্মশানে আমার বাস।’ পরদিন সকালে জয় দত্ত আদেশ অনুসারে জঙ্গলে খুঁজে খুঁজে শ্বেতশিমুল গাছের নীচ থেকে শিলাবিগ্রহ আবিষ্কার করলেন এবং তার কাছেই পেলেন চন্দ্রচূড় শিবের মূর্তি। বশিষ্ঠকুণ্ড বা জীবিতকুণ্ডের সামনে তাড়াতাড়ি মন্দির নির্মাণ করে সেই শিলামূর্তি ও চন্দ্রচূড় শিবের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করলেন এবং কাছেই মহুলা গ্রামের এক ব্রাহ্মণকে নিত্যপূজার দায়িত্ব দিয়ে বিদায় নেন।এই ছিলো তারাপীঠ মন্দির সৃষ্টির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।

 

আবার শাস্ত্র মতে এখানে সতীর ঊর্ধ্ব নয়নতারা বা প্রজ্ঞানয়ন পড়েছিল।শাস্ত্র মতে তারাপীঠে পুজো দিলে সর্ব কার্য সিদ্ধি হয়। এমনকি কিছু

শাস্ত্রে উল্লেখ আছে তারাপীঠে পুজো দিলে অশ্বমেধ যজ্ঞর ফল লাভ হয়।

 

সাধক বামা ক্ষেপা থেকে সাধক কমলা কান্ত সবার ও অন্যতম প্ৰিয় সাধন স্থল ছিলো এই তারাপীঠ। বামা ক্ষেপা তো তার সারাটা জীবনই কাটিয়েছেন এই তারা পীঠ মহাশ্মশানে এবং সিদ্ধি লাভ করেছেন।আজও প্রতি অমাবস্যায় বহু কাপালিক তান্ত্রিকদের সাধনায় মুখরিত হয় তারাপীঠের এই

পুন্য ভূমি।

 

ফিরে আসবো আগামী পর্বে শক্তি পীঠ নিয়ে ধারাবাহিক লেখায়। পড়তে থাকুন। ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

শক্তিপীঠ – শ্রী শৈল

শক্তিপীঠ – শ্রী শৈল

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

দেশ বিদেশে উপস্থিত শক্তি পীঠ ও তাদের সাথে জড়িত নানান গল্প নিয়ে চলছে শক্তিপীঠ ধরাবাহিক।আজ জানাবো প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশে অবস্থিত শক্তিপীঠ শ্রীশৈল নিয়ে|

বাংলাদেশের সিলেটের কাছে জৈনপুর গ্রামে এই তীর্থস্থান অবস্থিত। এই স্থান শ্রী শৈল নামে বিখ্যাত তাই শক্তিপীঠ টিও শ্রী শৈল নামে চেনেন অনেকে|শাস্ত্র মতে এখানে দেবীর কন্ঠ পতিত হয়। দেবীর নাম এখানে মহালক্ষী।দেবীর ভৈরব এইখানে সম্বরানন্দ নামে পরিচিত।

ভারত ও বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বের হিন্দু ভক্তদের জন্য এটি একটি পবিত্র তীর্থস্থান|প্রাচীন মন্দিরের সংস্কার হয়েছে সময়ে সময়ে এবং বর্তমানে একটি সুন্দর ও দেবী মন্দির বর্তমান যার মধ্যে একটি বিশেষ কক্ষে রয়েছেন দেবী মহালক্ষী|

মহালক্ষী শক্তিপীঠে কোনো দেবী মূর্তি নেই একটি শীলাকে দেবী রূপে পুজো করা হয়। এমনকি দেবীর ইচ্ছেতে দেবীর মন্দিরে ছাদও তৈরী করা হয়নি। উন্মুক্ত আকাশের নিচেই দেবী পুজো গ্রহন করেন।

প্রায় সারা বছরই ভিড় লেগে থাকে এই জাগ্রত দেবী মন্দিরে এবং বিশেষ বিশেষ তিথিতে বিশেষ পুজো উপলক্ষে জনসমাগম হয় চোখে পড়ার মতো।

ফিরে আসবো পরবর্তী শক্তি পীঠের ইতিহাস
এবং তাৎপর্য নিয়ে।।পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন।ধন্যবাদ।

শক্তি পীঠ – আম্বাজী

শক্তি পীঠ – আম্বাজী

 

পন্ডিতজি ভৃগুর শ্রী জাতক

 

আমাদের শাস্ত্রে বর্ণিত একান্নটি শক্তিপীঠের মধ্যে অন্যতম এই আম্বাজী মাতার মন্দির যা গুজরাটের পালনপুরের কাছে এবং মাউন্ট আবু থেকে কিছুটা দুরে অবস্থিত|আজকের পর্বে গুজরাটের আম্বাজী শক্তি পীঠ|

 

শাস্ত্র মতে এখানে দেবী সতীর হৃদয় পতিত হয়েছিলো|অত্যান্ত জাগ্রত ও প্রসিদ্ধ এই আম্বাজী মন্দির|সারা বছর লক্ষ লক্ষ ভক্তের সমাগম হয় এই মন্দিরে।

 

দেবীর কোনো মূর্তি বা প্রতিরূপ এখানে নেই তার বদলে রয়েছে একটি শ্রীযন্ত্র যা ভক্তি ভরে পুজো করেন দর্শনার্থীরা তবে কিছু বিধি নিষেধ মেনে এবং ছবি তোলা কিন্তু কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ|

রহস্যজনক ভাবে এই শ্রীযন্ত্র কিন্তু জন সমক্ষে আনা হয়না,পুজোর সময় পুরোহিতের চোখ ও ঢেকে দেয়া হয় বলে শোনা যায়|স্বর্ণ জড়িত এই প্রাচীন শ্রী যন্ত্র টি স্থাপিত আছে মন্দিরের অভ্যন্তরে একটি বিশেষ কক্ষে।

 

জনশ্রুতি আছে একবার স্থানীয় রাজা দেবীর জন্য এক বিরাট মন্দির নির্মাণ করে দেবীকে সেখানে নিয়ে যেতে চান। দেবী রাজি হলেও শর্ত দেন যাওয়ার পথে রাজা পিছনে তাকাতে পারবেন না।

চলার পথে রাজা তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে পেছনে তাকাতেই দেবী সেই স্থানে চিরস্থায়ী হন। সেখানেই অবস্থিত আজকের আম্বাজী মন্দির।

 

এখানে অমাবস্যা ও পূর্ণিমায় বিশেষ পুজো উপলক্ষে ভিড় হয় বেশি|তবে প্রায় সারাবছরই মানুষ আসেন, মন্দির দর্শন করেন ও দেবীর কাছে প্রার্থনা করেন|

 

আজ এক শক্তি পীঠের কথা এখানেই শেষ করছি, আবার দেখা হবে আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন।ধন্যবাদ।

শক্তি পীঠ – গন্ডকী

শক্তি পীঠ – গন্ডকী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আজ যে শক্তিপীঠটি নিয়ে লিখবো তা

আমাদের প্রতিবেশী দেশ নেপালে অবস্থিত

শক্তি পীঠ গন্ডকী। এই শক্তিপীঠটি একাধারে বৌদ্ধ, শাক্ত এবং শৈব্য দের কাছে সমান ভাবে পবিত্র এবং গুরুত্বপূর্ণ।

 

পুরান অনুসারে এখানে সতীর ডান গাল অথবা গন্ডদেশ পড়েছিলো । দেবী হলেন গন্ডকী যিনি চন্ডী রূপেই পূজিতা হন এবং দেবীর ভৈরব এখানে চক্রপাণি।

 

স্থানটি আদতে একটি শৈব্য তীর্থ কারন মুক্তিনাথ শিব মন্দির রয়েছে এখানেই এবং গন্ডকী চন্ডীর মন্দির পাহাড়ের উপরে অবস্থিত।মুক্তিনাথ মন্দিরের উল্লেখ বিষ্ণু পুরানেও পাওয়া যায়।

বর্তমান মন্দিরটিও বেশ প্রাচীন তবে সুন্দর এবং অপূর্ব তার নির্মাণ শৈলী।মন্দিরের পাঁচিলে একশো আটটি পিতলের নানান জন্তুর মুখ বসানো আছে প্রতিটির মুখ থেকে অজস্র ধারায় অনবরত জল পড়ছে। এই জল শিব ভক্তদের কাছে অমৃতর ন্যায়

পবিত্র। প্রচলিত বিশ্বাস এই শক্তিপীঠ দর্শন করে এই শিব মন্দিরে পুজো দিলে এবং এই জলে স্নান করলে সব দুঃখ যন্ত্রনা থেকে মুক্তি লাভ হয়।

 

পুরান অনুসারে জানা যায় যে সমুদ্র মন্থন থেকে উঠে আসা বিষ পান করে ভগবান শিবের অসহ্য জ্বালা শুরু হলে তিনি এই স্থানে এসে গন্ডকী পার্শবর্তী একটি হ্রদে স্নান করে সেই জ্বালা দূর করেন।সেই থেকে এই হ্রদের নাম নীলকন্ঠ হ্রদ।

 

তিব্বতীয় বৌদ্ধ ধর্মের অন্যতম ধর্মগুরু রিনপোচে মুক্তিনাথে এসে ধ্যান করেছিলেন বলে বৌদ্ধরা বিশ্বাস করেন তাই বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কাছেও স্থান টি অতি গুরুত্বপূর্ণ।

 

সব শেষে বলবো এই গন্ডকীতেই পাওয়া যায় শালগ্রাম শীলা। পৃথিবীর অন্য কোনো নদীতে এই শালগ্রাম শীলা দেখা যায় না। এই শালগ্রামশীলা কে সাক্ষাৎ বিষ্ণু মনে করা হয়।কারন পুরান মতে কঠোর তপস্যারত বিষ্ণুর ঘাম থেকে এই

গন্ডকী নদীর সৃষ্টি হয়েছে।

 

ফিরে আসবো আগামীপর্বে অন্য একটি

শক্তিপীঠ সংক্রান্ত লেখনী নিয়ে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

শক্তিপীঠ – ইন্দ্রাক্ষি

শক্তিপীঠ – ইন্দ্রাক্ষি

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আমাদের প্রতিবেশী দেশ শ্রীলংকায় রয়েছে একটি বিতর্কিত শক্ত পীঠ যার নাম ইন্দ্রাক্ষি|আজকের পর্বে জানাবো এই শক্তিপীঠ সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য|

 

শুরুতেই বিতর্কিত বললাম কারন এই পীঠের সঠিক অবস্থান নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে কিছু মতপার্থক্য রয়েছে তবে বেশি ভাগ গবেষক ও শাস্ত্র বিশেষজ্ঞই মনে করেন বৌদ্ধ প্রধান দেশ শ্রীলংকার একসময় গৃহযুদ্ধ বিধ্বস্ত জাফনাতেই আছে এই সতীপীঠ| জাফনার নাইনাতিভুতে ধুমধাম করে পুজো হয় দেবী ইন্দ্রাক্ষির|

 

সেই পুরাকাল থেকে সিংহল এবং ভারতের রয়েছে গভীর সম্পর্ক।পীঠ নির্ণয় তন্ত্র, চন্ডীমঙ্গল কাব্য সহ বেশ কিছু প্রাচীন শাস্ত্রে সিংহলে অবস্থিত ইন্দ্রাক্ষি নামক এই শক্তি পীঠের উল্লেখ পাওয়া যায়|

 

এই পীঠে দেবী ইন্দ্রাক্ষি রূপে পূজিত হন এই পীঠের সাথে জড়িত আছে দেবরাজ ইন্দ্র ও এক পৌরাণিক ঘটনা|পৌরাণিক মত অনুযায়ী,প্রাচীন সিংহলে পড়েছিল সতীর পায়ের মল বা নুপুর| সতী এখানে ইন্দ্রাক্ষ্মী আর শিব হলেন রক্ষশেশ্বর৷ শাস্ত্র অনুসারে ইন্দ্রাক্ষ্মীর মূর্তি বানিয়ে পুজো করতেন স্বয়ং দেবরাজ ইন্দ্র কারন বৃত্তাসুরের সাথে যুদ্ধের সময় দেবী ইন্দ্রকে সাহায্য করে ছিলেন ও দেবতাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন এবং যুদ্ধ শেষে তিনি এই স্থানে ইন্দ্রাক্ষি রূপে সদা বিরাজমান থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

 

আগামী পর্বে আবার কোনো শক্তি পীঠ নিয়ে লিখবো।থাকবে অনেক পৌরাণিক এবং শাস্ত্রীয় তথ্য।পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন।ধন্যবাদ।

শক্তিপীঠ – দন্তেশ্বরী 

শক্তিপীঠ – দন্তেশ্বরী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আজকের শক্তিপীঠ পর্বে বাংলার প্রতিবেশী রাজ্য চত্রিশগড়ে অবস্থিত একটি শক্তি পীঠ

নিয়ে লিখবো ।

 

শক্তি পীঠ দন্তেশ্বরী অবস্থিত ছত্তিশ গড়ের দান্তেওয়ারা অঞ্চলে।এই দেবীর নামেই এই

অঞ্চনের নামকরণ বলে অনেকে বিশ্বাস করেন|শাস্ত্র মতে দেবী সতীর দাঁত পতিত হয়েছিলো এখানে।দাঁত থেকেই সম্ভবত পীঠটির নাম দন্তেশ্বরী।

 

আনুমানিক চতুৰ্দশ শতাব্দীতে তৈরী হয়েছিলো এই দেবী মন্দির|মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত রয়েছে

দন্তেশ্বরী দেবীর মূর্তি যা একটি কৃষ্ণ বর্ণের পাথর থেকে তৈরী|মূল মন্দির চারটি ভাগে বিভক্ত যথা গর্ভ গৃহ,মহা মণ্ডপ, মুখ্য মণ্ডপ এবং সভা মণ্ডপ|মূল মন্দির কে ঘিরে রয়েছে একটি সুউচ্চ প্রাচীর|

 

দেবী দন্তেশ্বরীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন কাকতীয় বংশের রাজারা|দেবী দন্তেশ্বরী এই প্রাচীন রাজ বংশের কুল দেবী|

 

স্থানীয় অধিবাসী দের কাছে দেবী দন্তেশ্বরী অত্যান্ত প্রসিদ্ধ এবং শ্রদ্ধার|বিশেষ বিশেষ তিথিতে বিশেষ পুজো ছাড়াও প্রতিবছর নব রাত্রি ও দশেরা উৎসব এখানে মহাসমারোহে পালিত হয় ও সেই উপলক্ষে ব্যাপক জনসমাগম হয়|

 

সমস্ত শক্তিপীঠের মধ্যে এটিই একমাত্র মন্দির যেখানে দুটি নয় তিনটি নবরাত্রি পালিত হয়। চৈত্র ও শারদীয়া নবরাত্রি ছাড়াও এখানে ফাল্গুন মাসেও নবরাত্রি পালিত হয়। একে স্থানীয় ভাষায়

ফাগুন মাধাই বলা হয়।

 

যারা তন্ত্র নিয়ে চর্চা করেন তাদের কাছে এই স্থানের আলাদা মহাত্ম আছে।দন্তেশ্বরী শক্তিপীঠকে তান্ত্রিকদের ধ্যানের অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যুগ যুগ ধরে অনেক তান্ত্রিক ও অঘোরি এখানকার পাহাড়ের গুহায় তন্ত্র বিদ্যা চর্চা করেন।

 

স্থানীয়রা সবাই নিজের মনোস্কামনা পূরণের জন্য দেবী দন্তেশ্বরীর স্মরণ নেন এবং বিশ্বাস করা হয় দেবী কাউকে শুন্য হাতে ফেরান না।

 

আজকের পর্বে এই টুকুই। ফিরবো আগামী পর্বে|অন্য কোনো শক্তিপীঠের কথা নিয়ে।

চলতে থাকবে শক্তি পীঠ নিয়ে ধারাবাহিক এই আলোচনা।পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

শক্তিপীঠ – কাত্যায়নি

শক্তিপীঠ – কাত্যায়নি

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

বৃন্দাবনের পবিত্র ভূমিতে রয়েছে একান্ন শক্তি পীঠের অন্যতম শক্তিপীঠ যার নাম কাত্যায়নী। আজকের পর্বে এই শক্তি পীঠ নিয়ে লিখবো।

 

সতীর দেহের কোন অংশ বৃন্দাবনের এই বিশেষ স্থানে পতিত হয়েছিলো তা নিয়ে বিভিন্ন শাস্ত্রে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। একটি মত অনুসারে এখানে দেবী সতীর কেশ রাশি পড়েছিলো আবার অন্য একটি মত অনুসারে অনুসারে এই স্থানে পড়েছিলো দেবীর আংটি।

 

শক্তিপীঠটি কাত্যায়নী নামে বেশি পরিচিত হলেও দেবী এখানে উমা বা যোগমায়া নামেও পূজিতা হন এবং দেবীর ভৈরব হিসেবে এই স্থানে পূজিত হন ভূতেশ।

 

বর্তমানে রঙ্গনাথ মন্দিরের কাছে রাধাবাগে শক্তি পীঠ কাত্যায়নী অবস্থিত এবং দেবীর ভৈরব ভূতেশ বৃন্দাবনের ভূতেশ্বর রোডের কাছে ভূতেশ্বর মহাদেব মন্দিরে পূজিত হয়ে থাকেন।

 

প্রাচীন কালে কবে কে কিভাবে এই শক্তিপীঠ আবিস্কার করেন তার কোনো সঠিক এবং নিদ্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়না তবে ১৯২৩ সালে যোগীরাজ স্বামী কেশবানন্দ এই স্থানটি চিহ্নিত করেন এবং দেবী মন্দির তৈরী করেন।এই মন্দিরের অন্যতম দর্শনীয় বস্তু একটি বিশাল আকৃতির তলোয়ার আছে যাকে উচ্ছল চন্দ্রহাস বলে।

 

ভাগবত পুরাণে আছে যে ব্রজের গোপীগন

শ্রীকৃষ্ণ কে পতি রূপে পাওয়ার জন্য সারা মাঘ মাস জুড়ে কাত্যায়নী ব্রত পালন করেছিলেন।

সেই সময়ে তারা প্রতিদিন কাত্যায়নী শক্তি পীঠে

দেবীর পুজো করতে আসতেন এবং

নিজেদের মনোস্কামনা দেবীকে জানাতেন।

 

শাস্ত্র মতে কাত্যায়নী রূপ নবদুর্গার ষষ্ঠ রূপ তাই নবরাত্রির সময় এখানে বিশেষ পুজো হয় এবং বেশ বড়ো আকারে উৎসব হয়।

 

আবার ফিরে আসবো আগামী পর্বে অন্য একটি শক্তিপীঠের কথা এবং তার আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা

নিয়ে। পড়তে থাকুন। ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।