Home Blog Page 2

প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে বিশেষ পর্ব : বিপ্লবীদের কালী পুজো

প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে বিশেষ পর্ব

 

বিপ্লবীদের কালী পুজো

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

 

প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রাক্কালে আজ

আলোচনা করবো স্বাধীনতা সংগ্রামীদের একটি কালী পুজো নিয়ে যে পুজোর সাথে জড়িয়ে আছে স্বাধীনতা সংগ্রামের গৌরবময় ইতিহাস।

 

এককালে স্বাধীনতা সংগ্রামী দের সঙ্গে থাকতো গীতা। স্বামী বিবেকানন্দর বই এবং আনন্দ মঠ।তারা অনেকেই কালী পুজোয় করতেন। মাতৃ আরাধনার মাধ্যমে শক্তি সঞ্চয় করে দেশমাতৃকার পরাধীনতা ঘোচানোই ছিলো প্রধান উদ্দেশ্য।

 

নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু যখন কলকাতার পাথুরিয়াঘাটার কালী পুজো নিয়ে বাস্তু তখন

জেলায়র বিপ্লবীরা কালী পুজো শুরু করেন।সালটা ১৯৩৯।

 

স্বাধীনতা আন্দোলনের আগুন জ্বলছে সারা দেশে। মেদিনীপুরে আন্দোলনের পথ দেখাচ্ছেনবিমল দাশগুপ্ত, কিষাণ সাহা। আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ছে বহু তরতাজা প্রাণ।মেদিনীপুর শহরের কাছেই লাল দীঘি।দুধারে আদিবাসী জনবসতি,শ্মশান আর ঝোপঝাড়। সেখানেই ছিল বিমল দাশগুপ্তদের গুপ্ত ডেরা। আনাগোনা লেগে থাকতো তরুণদের। গোপনে চলতো ভারতমাতার সন্তানদের দীক্ষা দেওয়া। সেসময়ই বাঁদিকে এক জায়গায় গড়ে তোলা হোল অস্থায়ী বেদী। ঘট প্রতিষ্ঠা করা হলো দেবী কালীর। সামনে চলতে থাকল দেবীরপুজো আর গোপনে অস্ত্র শিক্ষা।

 

পুজো আর শুধু পুজো ছিলোনা। হয়ে উঠেছিলো স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মিলন স্থল। সেখানে মিলিত হতেন বিপ্লবীরা। তৈরী হতো পরিকল্পনা। থাকতো অগ্নি গর্ভ ভাষণ। যা আরো অনেক তরুণকে বিপ্লবের আদর্শে উদ্বুদ্ধ করতো। সেই সময়ে ব্রিটিশ পুলিশ ও নজরদারি করতো এই সব পুজোয় তবে ধর্মীয় কারণে কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারতো না।

 

স্বাধীনতা পাওয়ার পরও বিমল দাশগুপ্তরা নিয়ম করে আসতেন এই স্থানে। স্বাধীনতার পরে ১৯৬৮ সালে দক্ষিণাকালী প্রতিমা উপাসনার সূচনা। কার্তিক মাসের অমাবস্যায় পুজোর সময় এখন বড়ো করে পুজো হয় শ্রদ্ধা জানানো হয় স্বাধীনতা সংগ্ৰামিদের।সারা বাংলায় এমন বহু পুজো আছে যা স্বাধীনতা সংগ্রামীরা শুরু করেছিলেন

এবং আজও চলছে।

 

আবার কালী তীর্থ নিয়ে ফিরে আসবো আগামী পর্বে। থাকবে অন্য একটি কালী পুজোর কথা। শুভ প্রজাতন্ত্র দিবস। জয় হিন্দ।

মৌনী অমাবস্যার আধ্যাত্মিক তাৎপর্য

মৌনী অমাবস্যার আধ্যাত্মিক তাৎপর্য

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আগামী ২৮ এ জানুয়ারি মৌনী অমাবস্যা।

আমাদের তন্ত্র ও জ্যোতিষ জগতে এই মৌনী অমাবস্যা একটি গুরুত্বপূর্ণ তিথি হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে|আজ আপনাদের জানাবো মৌনী অমাবস্যার প্রকৃত অর্থ এবং আধ্যাত্মিক তাৎপর্য|

 

পঞ্জিকা মতে মাঘ মাসে মহা শিব রাত্রির আগের শেষ অমাবস্যাই হলো মৌনী অমাবস্যা ৷ অর্থাৎ মাঘ মাসের কৃষ্ণপক্ষের অমাবস্যাই মৌনী অমাবস্যা।মৌনী অমাবস্যা তিথিতেই জন্মে ছিলেন মহান ঋষি মনু বলা হয় ঋষি মনুর নাম থেকেই মৌনী অমাবস্যা নামকরন|শাস্ত্র মতে মৌনী অমাবস্যার এই বিশেষ দিনেই সূচনা হয়েছিল দ্বাপর যুগের|

 

সংস্কৃতে মৌন শব্দের অর্থ হলো “যে কথা বলতে বা শব্দ উচ্চারণ করতে পারে না অর্থাৎ যে চুপ অর্থাৎ নিস্তব্ধ অবস্থায় থাকে ” অন্যদিকে নিঃশ্বব্দ কথার অর্থ হলো” বিশ্বভ্রমান্ডের নিঃসীম শুন্যতাকে যদি জানতে হয় এবং ঈশ্বরের স্বরূপ যদি অন্তরে উপলব্ধি করতে হয় তবে হতে হবে মৌন|এই উদ্দেশ্যে মৌনী অমাবস্যার এই তিথিতে সাধকেরা মৌনব্রত পালন করে থাকেন শাশ্বত জ্ঞানকে উপলব্ধি করতে প্রকৃত সাধক এই তিথিতে মৌন ব্রত পালনের মাধ্যমে কুন্ডলিনী জাগ্রত করতে পারেন এবং অসীম শক্তির অধিকারী হতে পারেন তাই যুগ যুগ ধরে তন্ত্র সাধনার ক্ষেত্রে মৌনী অমাবস্যা একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে|

 

জ্যোতিষ শাস্ত্রে এই দিন টির আলাদা তাৎপর্য আছে, এদিন সূর্য ও চন্দ্র মকর রাশিতে অবস্থান করে ৷প্রায় একমাস ধরে সূর্য এই অবস্থানে থাকে এবং অন্যদিকে চাঁদ থাকে আড়াই দিন|চন্দ্র ও সূর্যের এই অবস্থান ও রাশি পরিবর্তন মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে নানান ভাবে|

 

আধ্যাত্মিক দৃষ্টি ভঙ্গি থেকে এই মৌনী অমাবস্যার পূণ্য তিথিতে মৌনব্রত পালন করলে জীবনের সব আকাঙ্খা, মোহ এবং ইন্দ্রিয়কে নিজের অধীনে রাখা যায় এমনকি এই তিথিকে সঠিক ভাবে কাজে লাগালে একজন সাধক জন্ম মৃত্যুর আবর্ত থেকে মুক্তি লাভ করে মোক্ষ লাভ ও করতে পারেন|

 

বহু মানুষের বিশ্বাস এই তিথিতে স্বর্গের দেবতারা নেমে আসেন মর্তে এবং প্রয়াগরাজের গঙ্গা-যমুনা-স্বরস্বতীর মিলনস্থল ত্রিবেনীসঙ্গমে পূণ্য স্নান করেন|

 

নিজেদের কর্মফল থেকে মুক্তি লাভের আশায় ত্রিবেনী সহ দেশের বিভিন্ন নদী সঙ্গমে স্নান করেন লক্ষ লক্ষ মানুষ|শাস্ত্র মতে মৌন ব্রত পালন করে, অমাবস্যায় যদি গঙ্গা স্নান করা যায় তাহলে মানব জীবনের বহু জন্মের পাপ ধুয়ে যায়|এদিন নৈঃশব্দ্য পালন করলে মানসিক শান্তি পাওয়া যায় এবং রোগমুক্তি ঘটে|শাস্ত্র মতে গ্রহ দোষ খন্ডনের জন্য মৌনী অমাবস্যা আদৰ্শ তিথি।

 

আগামী পর্বে ফিরে আসবো প্রজাতন্ত্র

দিবস উপলক্ষে বিশেষ পর্ব নিয়ে।পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী তীর্থ – বড়ো দেবীর পুজো

কালী তীর্থ – বড়ো দেবীর পুজো

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

আজকের কালী তীর্থে কোচবিহারের বড়ো দেবীর পুজোর কথা জানাবো যে পূজোর বয়স প্রায় পাঁচশো বছর।

শতাধিক বছর আগে কোচবিহার রাজ বংশের অন্যতম রাজা মহারাজা নরনারায়ণ স্বপ্নে ওই এই দেবীকে দেখেছিলেন সেই রূপেই আজও এখানে পূজিত হন দেবী।

প্রথাগত প্রতিমার থেকে এই প্রতিমা সম্পূর্ণ আলাদা। এখানে দেবী রক্তবর্ণা এবং উগ্ররূপে তিনি বিরাজ করছেন । সঙ্গে থাকেন দুই সখী জয়া এবং বিজয়া। দেবীর বাহন বাঘ এবং সিংহ উভয়।

তবে একদম শুরুতে দেবীর এই রূপ ছিলোনা।
প্রায় পাঁচশো বছর আগে এই রাজ বংশের বিশ্ব সিংহ এবং তাঁর ভাই শীষ্য সিংহ খেলার ছলে দেবীর আরাধনা শুরু করেন। ময়নার ডালকেই দেবীরূপ দিয়ে পুজো করেন তাঁরা।
পরবর্তীতে সেই কাঠ ‘বড় দেবী’র মন্দিরে এনে, তাকে কাঠামো হিসেবে ব্যবহার করে তার উপর শুরু হয় প্রতিমা তৈরির কাজ।

একবার রাজা বিশ্ব সিংহ খেলার ছলে এক সাথীকে তরোয়াল দিয়ে আঘাত করেন। সঙ্গে সঙ্গে সেই বালকের মাথা আলাদা হয়ে যায় ধড় থেকে। সেই মাথা দেবীকে নিবেদন করেন বিশ্ব সিংহ। সেই থেকেই এক অদ্ভুত রীতির প্রচলন হয় পুজোয় তা হলো দেবীকে রক্ত দান।
‘বড় দেবী’র পুজোয় একফোঁটা হলেও প্রাণীর রক্তর প্রয়োজন হয় এবং আজও নাকি তাজা রক্ত সংগ্রহ করে দেবীকে উৎসর্গ করা হয়।

বর্তমানে পুজোর আয়োজন করে রাজ্য পর্যটন দফতরের অধীনস্থ কোচবিহার দেবত্র ট্রাস্ট। আজও পুজোতে পশুবলি হয়। অষ্টমীতে মহিষ, দশমীতে শূকর বলির প্রথা চালু রয়েছে এখনও।
তান্ত্রিক পদ্ধতিতে সমগ্র পুজো পরিচালিত হয়।

এখানে দূর্গা পুজোয় ধুম ধাম করে দেবী আরাধনা হয় এবং বিসর্জনের সময় যমুনা দীঘিতে নিয়ে যাওয়া হয় মৃন্ময়ী প্রতিমা যা খণ্ডিত করে বিসর্জন দেওয়া হয়।

বাংলার বহু এমন ঐতিহাসিক কালীপুজো এবং অলৌকিক ঘটনানিয়ে চলতে থাকবে কালী তীর্থ ।
অন্য একটি কালী পুজোর ইতিহাস নিয়ে ফিরে আসবো আগামী পর্বে।পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

নেতাজী জন্ম জয়ন্তী উপলক্ষে বিশেষ পর্ব : নেতাজীর কালী পুজো

নেতাজী জন্ম জয়ন্তী উপলক্ষে বিশেষ পর্ব

 

নেতাজীর কালী পুজো

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আজ নেতাজীর জন্মদিন সাধারণ আজকের দিনে নেতাজীর দেশ প্রেম এবং স্বাধীনতা সংগ্ৰামের ইতিহাসে তার অবদান সম্পর্কে আলোচনা হয়। আজ তার জন্মদিনে তার চরিত্রের একটি বিশেষ দিক নিয়ে আলোচনা করবো।শৈশব থেকেই নেতাজীর মধ্যে আধ্যাত্মিক চেতনার বিকাশ ঘটে ছিলো। বাড়িতে দূর্গা পুজো এবং কালী পুজোয় অংশ নেয়ার পাশাপাশি একাধিক বারোয়ারি কালী পুজোয় তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিলেন তার মধ্যে দুটি কালী পুজো সম্পর্কে আজকের পর্বে লিখবো।

 

নিউ দিল্লি কালীবাড়ি বা মন্দির মার্গের কালীবাড়ি দিল্লীর অতি পরিচিত কালী পুজো । রাজধানী দিল্লির সবচেয়ে পুরনো এই কালীপুজো প্রায় ১০০ বছরের দোরগোড়ায়। কর্মসূত্রে কলকাতা থেকে স্থানান্তরিত হয়ে দেশের নতুন রাজধানী দিল্লিতে এসে বসবাস শুরু করেছিলেন তৎকালীন বাঙালিবাবুরা।তারাই এই কালী পুজো শুরু করেন ১৯৩০ সালে সেই প্রবাসী বাঙালিদের হাত ধরেই প্রথম পুজো হয়।এই পুজো কমিটির প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। ১৯৩৫ সালে নেতাজির হাত ধরে স্থাপিত হয় পুজো কমিটি।

দিল্লীতে থাকলে তিনি স্বতস্ফূর্ত ভাবে কালী পুজোয় অংশ নিতেন।আজও এই কালী পুজো নেতাজীর কালী পুজো নামে প্রসিদ্ধ।

 

শোনা যায়, প্রাক্‌-স্বাধীনতার যুগেও দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্নিযোদ্ধা বিপ্লবীদের গোপন ঘাঁটি ছিল এই কালীবাড়ির প্রাঙ্গণ। পুজো কমিটির প্রথম প্রেসিডেন্ট নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু মন্দির প্রাঙ্গণে স্বাধীনতা ডাক দিয়ে দীর্ঘ ভাষণ দিয়ে ছিলেন।

 

বাংলার একটি বারোয়ারি কালী পুজোর সাথেও নেতাজীর নাম জড়িয়ে আছে।নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু একসময়ে ছিলেন পাথুরিয়াঘাটা বড় কালী পুজোর প্রেসিডেন্ট।

 

পাথুরিয়াঘাটা বড় কালী পুজোর সূচনা ১৯২৮ সালে। ১৯৩০ সালে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন নেতাজি। স্বদেশী আন্দোলনের সময় বিখ্যাত লাঠিয়াল অতুল কৃষ্ণ ঘোষ ছিলেন এই পুজোর প্রবর্তক। স্বদেশীদের শক্তি উপাসনার হাত ধরেই এই কালীপুজোর সূচনা হয়েছিল যেখানে বড়ো ভূমিকা নিয়েছিলেন নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু।

 

এই পুজো নিঃসন্দেহে কলকাতার বৃহত্তম কালী পুজো।প্রতিমার উচ্চতা ৩২ ফুট। মায়ের রুপোর খাঁড়ার দৈর্ঘ্য হল ৬ ফুট। সোনা ও রূপো মিলিয়ে কালী ঠাকুরের গায়ে থাকে ৭৫ কেজির অলঙ্কার। পুজোর পরের দিন অন্নকূট উৎসবে প্রায়

দেড় হাজার দরিদ্র নারায়ণের সেবার চল রয়েছে এখানে।

 

আজকের পর্ব দেশনায়ক সুভাষ চন্দ্র বসুকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা এবং প্রণাম জানিয়ে শেষ করছি। ফিরে আসবো কালীতীর্থ নিয়ে আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী তীর্থ – রঙ্কিনী দেবীর মন্দির

কালী তীর্থ – রঙ্কিনী দেবীর মন্দির

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

জামশেদপুরের কাছে এক পাহাড়ি উপত্যকায় রয়েছে রঙ্কিনী দেবীর মন্দির।এই মন্দিরকে ঘিরে থাকা কিছু অলৌকিক ঘটনা বা জনশ্রুতি নিয়ে আজকের পর্ব।

 

জনশ্রুতি অনুসারে মাতা রঙ্কিণী এই অঞ্চলের বনে জঙ্গলে বাস করতেন এবং তিনি এই দুর্গম অরণ্যের রক্ষাকতৃ ছিলেন।স্থানীয় আদিবাসীরা তাকে খুব মান্য করতো। তবে তার মন্দির ও মূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয় অনেক পরে। শোনা যায় একবার এক স্থানীয় আদিবাসির মেয়ে সন্ধ্যার পর জঙ্গলে পথ হারায় এবং এক অপদেবতার খপ্পরে পরে। দেবী রঙ্কিনি তখন আবির্ভূত হন এবং মেয়েটিকে রক্ষা করেন।

তারপর জঙ্গলে অদৃশ্য হয়ে যান।সেই রাতেই ঐ মেয়েটির বাবাকে দেবী রঙ্কিণী স্বপ্নাদেশ দিয়ে দেবীর একটি মন্দির তৈরি করতে বলেন।

 

ঠিক কোন সময়ে মূল মন্দিরটি তৈরি হয়েছে তা জানা যায়না । তবে মন্দিরের বর্তমান যে রূপ আমরা দেখতে পাই, তা তৈরি হয়েছে দেশ স্বাধীন হওয়ার কয়েক বছর পর । অনেকের কাছে মা রঙ্কিনী দেবী কালীর একটি রূপ আবার পূর্ব ভারতের বিভিন্ন উপজাতির কাছে তিনি তাদের আঞ্চলিক বা লৌকিক দেবী।

 

আবার একটি প্রাচীন কিংবদন্তি অনুসারে বহুকাল আগে স্থানীয় এক ব্যক্তি একটি আদিবাসী মেয়েকে দেবীর রূপ ধারণ করে জঙ্গলে একটি রাক্ষসকে হত্যা করতে দেখতে পান। আদিবাসী লোকটি মেয়েটিকে অনুসরণ করার চেষ্টা করেছিল কিন্তু মেয়েটি জঙ্গলে অদৃশ্য হয়ে যায়। রাতে দেবী সেই ব্যাক্তির স্বপ্নে আবির্ভূত হন তিনি তাকে তার একটি মন্দির নির্মাণের পরামর্শ দেন।স্থানীয় ভূমিজ নামের উপজাতিদের মধ্যে বিশ্বাস ছিল যে দেবী নিজেই সেই রাক্ষসকে হত্যা করেছেন তাদের রক্ষা করতে এবং দেবী এখানে তাদের রক্ষাকত্রী রূপে বিরাজ করতে চেয়ে মন্দির নির্মাণের পরামর্শ দিয়ে ছিলেন।

 

শোনা যায় এই মন্দির থেকে কেউ আজ অবধি খালি হাতে ফেরেনি। মা রঙ্কিনী সকলের মনস্কামনা পূর্ণ করেছেন। পাহাড়ি দুর্গম রাস্তা দিয়ে পৌছাতে হয় দেবীর মন্দিরে।মন্দিরের গর্ভগৃহে কোনো মূর্তি নেই। একটি পাথরকে দেবীরূপে পূজা করা হয়।মূল মন্দিরের দুই পাশে রয়েছে আরও দুটো মন্দির। ডানপাশে রয়েছে শিবমন্দির এবং বামপাশের মন্দিরে রয়েছে গণেশের মূর্তি।

 

ফিরে আসবো আরো এমন সব অজানা

এবং রহস্যময় কালী মন্দিরের ইতিহাস সংক্রান্ত আলোচনা নিয়ে।পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী তীর্থ – টাকি জমিদার বাড়ির কালী পুজো

কালী তীর্থ – টাকি জমিদার বাড়ির কালী পুজো

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

বাংলায় জাগ্রত মন্দিরের অভাব নেই আর এই সব মন্দিরকে কেন্দ্র করে আছে অসংখ্য অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ।যার মধ্যে অনেকগুলি আমি আগে কালী কথায় বলেছি। তবু অনেক গল্প, অনেক ইতিহাস এখনো বলা বাকি আছে। তাই কালী তীর্থ নিয়ে ফিরে এসেছি।

 

আজকের পর্বে টাকির প্রসিদ্ধ রায় চৌধুরী বাড়ির কালী পুজোর ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করবো।

 

জনশ্রুতি আছে বহুবছর আগে ইছামতীতে জেলেদের জালে উঠে এসেছিল একটি সুন্দর নকশা করা ঘট। সেকথা জানতে পারেন টাকির জমিদার রায়চৌধুরীরা। জমিদার গিন্নি সেই রাতেই স্বপ্ন দেখেছিলেন চালাঘর তৈরি করে ঘটটি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। খড়, বিচালি, গোলপাতা দিয়ে মাটির দেওয়ালের মন্দির বানিয়ে কালীপুজোর আয়োজন করা হয়েছিল। পরবর্তীতে মন্দিরটি নতুন করে সংস্কার করা হয়।নদীর স্থানীয় জমিদার রায়চৌধুরি পরিবারের হাত ধরেই টাকির কুলেশ্বরী কালীবাড়ির পুজো শুরু হয়েছিল। সেই থেকে আজও একইভাবে দেবীর পুজো চলে আসছে।এই দেবী রায় চৌধুরী পরিবারের কুলদেবী এবং সমগ্র টাকির মানুষের কাছের অত্যন্ত শ্রদ্ধার।

 

এই দেবী সম্পর্কে অনেকে আবার বলেন একবার এক মাতৃ সাধক ইছামতীর পাড়ে মা কালীর সাধনা করতেন এবং তার প্রতিষ্ঠিত ঘট নদীর পাড়ে পড়েছিল। এরপর টাকির জমিদারকে দেবী স্বপ্নাদেশ দেন ওই ঘট প্রতিষ্ঠা করার। তখনই টাকির জমিদার কালীমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।

 

চারশো বছর ধরে এখানে চলে নিত্যপুজো ও অন্নভোগ। বছরের বিশেষ তিথিতে এই মন্দিরে বড় আকারে পুজো করা হয়। একটা সময় এই পুজোয় কামান দাগা হত তন্ত্র মতে বলী দিয়ে পুজো হতো। সেই সব রীতির কিছু কিছু আজও বজায় আছে। ভক্তরা বিশ্বাস করেন দেবী এখানে অত্যন্ত জাগ্রত এবং তিনি ভক্তদের মনোস্কামনা পূরণ করেন।

 

নদীর কুল থেকে দেবীর ঘট উদ্ধার হয়েছিল তাই দেবীকে অনেকে কুলেশ্বরী নামেও ডাকেন।

 

চলতে থাকবে কালী তীর্থ । এখনো অনেক দেবী মন্দির নিয়ে আলোচনা বাকি আছে। ফিরে আসবো আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

ভক্তের ভগবান : জগদীশ পন্ডিত এবং প্রভু জগন্নাথ

ভক্তের ভগবান

 

জগদীশ পন্ডিত এবং প্রভু জগন্নাথ

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আজকের পর্বে আপনাদের পরম বৈষ্ণব এবং শ্রী চৈতন্যদেবের অন্যতম প্রিয় শিষ্য শ্রীল জগদিশ পন্ডিতের সাথে ঘটে যাওয়া জগন্নাথ দেবের এক অদ্ভুত লীলা প্রসঙ্গে লিখবো।

 

শ্রী চৈতণ্য দেবের নির্দেশে একবার জগদীশ পন্ডিত পুরী ভ্রমণ করেন।শ্রীধাম পুরীতে পৌঁছে জগদীশ পণ্ডিত ভগবান জগন্নাথের দিব্য দর্শন লাভ করেন।জগন্নাথ প্রেমে উন্মাদ হওয়ার পরিস্থিতি তৈরী হয়। জগদীশ পন্ডিত বেশ বুঝতে পেরে ছিলেন জগন্নাথকে ছেড়ে থাকা তার পক্ষে আর সম্ভব নয়। ভগবান ও ভক্তের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে তাকে স্বপ্নে দর্শন দেন এবং বলেন তিনি যেনো তার দারু ব্রহ্ম মূর্তি সাথে নিয়ে যান এবং নিজের মাতৃ ভূমি তে সেই মূর্তি স্থাপন করে জগন্নাথ সেবা করেন।

 

একই সাথে জগন্নাথ উড়িষ্যার রাজার কাছে আবির্ভূত হন এবং তাকে নির্দেশ দেন তিনি যেনো জগদীশ পন্ডিতকে এই মূর্তি প্রদান করেন। রাজা সেই আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন।

 

জগদীশ পন্ডিত আনন্দিত হন এবং একই সঙ্গে চিন্তায় পরে যান যে কিভাবে তিনি ওই

ভারী বিগ্রহ বাংলায় নিয়ে যাবেন। জগন্নাথ

তাকে দেখা দিয়ে আশ্বস্ত করেন যে তিনি

এই বিগ্রহের ভার অনুভব করবেন না এবং তিনি যেন বিগ্রহটি একটি নতুন কাপড় দিয়ে ঢেকে দেন এবং তাকে একটি লাঠির শেষে ঝুলিয়ে নিয়ে যান। এবং জগন্নাথ তাকে সতর্ক করেছিলেন যে একবার তিনি মাটিতে বসালে।সেই জায়গাটি তার স্থায়ী আবাসে পরিণত হবে।আর বিগ্রহ তোলা যাবেনা।

 

দুই ব্রাহ্মণের সাহায্যে জগদীশ ভগবান জগন্নাথকে বাংলার দিকে নিয়ে যান। চাকদহের কাছে গঙ্গার তীরে তারা যখন গঙ্গায় স্নান করছিলেন তখন তারা উপলব্ধি করেন যে ভগবান জগন্নাথ হঠাৎ খুব ভারী হয়ে উঠেছেন। আর তার ভার বহন করা সম্ভব নয়। জগদীশ পন্ডিত বুঝতে পারেন যে ভগবান জগন্নাথ সেই স্থানেই থাকতে চান।সেখানেই মন্দির বানিয়ে শুরু হয়

জগন্নাথ সেবা। আজও নিত্য পুজো হয়

জগদীশ পন্ডিতের বিখ্যাত এই

জগন্নাথ মন্দিরে। বিশেষ বিশেষ তিথিতে

বহু ভক্ত সমাগম হয়।

 

ভক্তের ভগবানের পরবর্তী পর্বে থাকবে এমনই

এক ভক্তের কথা এবং বিশেষ একটি

অলৌকিক লীলা। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

বিশেষ পর্ব – কপিল মুনীর মাহাত্ম

বিশেষ পর্ব – কপিল মুনীর মাহাত্ম

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

শুরু হয়ে গেছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় মিলন উৎসব গঙ্গা সাগর মেলা |প্রতিবছর মকর সংক্রান্তির পুন্য তিথিতে লক্ষ লক্ষ পূর্ণার্থী ভিড় জমান এই মেলায়|এই স্থান ঘিরে রয়েছে এক পৌরাণিক ঘটনার উল্লেখ যার প্রধান চরিত্র কপিল মুনী|গঙ্গা সাগর ও কপিল মুনীর আশ্রম প্রায় সমার্থক! কিন্তু কে এই কপিল মুনী?

আজকের পর্বে আসুন জেনে নিই কপিল মুনির আধ্যাত্মিক মাহাত্ম।

 

কপিল মুনি একজন বৈদিক ঋষি ছিলেন এবং তাঁকে সাংখ্য দর্শনের অন্যতম প্রবর্তক বলে মনে করা হয়। ভগবত গীতায় কপিল মুনির উল্লেখ রয়েছে|আবার কিছই শাস্ত্র অনুসারে অনুসারে তিনি ব্রহ্মার পৌত্র মনুর বংশধর। আবার অনেকে বলেন কপিল মুনি হলেন বিষ্ণু ভক্ত প্রহ্লাদের পুত্র|

 

কপিল মুনীর সাংখ্য দর্শনের মূল কথা হলো আত্মা মানুষের কর্ম অনুসারে দেহান্তরে প্রবেশ করে। যখন কর্ম ক্ষয় তখন আর আত্মা দেহান্তরে প্রবেশ করেনা। এই দর্শন নিরিশ্বর বাদের উপর প্রতিষ্ঠিত।সাংখ্য দর্শন আরো বলে যে জড় জগৎ প্রকৃতি থেকে উদ্ভুত।

 

আগের একটি পর্বে বলেছি কিভাবে রাজা ভগীরথ মা গঙ্গাকে মর্তে এনে তার পূর্ব পুরুষদের

মুক্ত করেন। এখানেও প্রধান চরিত্র কপিল মুনী তার ক্রোধের ফলেই ভগীরথের পূর্বপুরুষরা অভিশপ্ত হয়ে ছিলেন।

 

সূর্য বংশীয় রাজা সগর অশ্বমেধ যজ্ঞের আয়োজন করেন। নিজের আসন বিপন্ন হবে তাই ভীত হয়ে দেবরাজ কপিল মুনির অজান্তেই যজ্ঞের ঘোড়া চুরি করে বেঁধে রাখেন তাঁর আশ্রমে।

রাজার আদেশে তার ষাট হাজার সন্তান যজ্ঞর নিরুদ্দেশ ঘোড়া খুঁজতে এসে উপস্থিত হন কপিল মুনির আশ্রমে। না বুঝেই তাঁরা মুনিকে অপরাধী সাব্যস্ত করেন এবং চোর ও চক্রান্তকারী অপবাদ দেয়।অসীম ক্ষমতাধর কপিলমুনি রেগে গিয়ে তাঁদের অভিশাপ দেন এবং তাঁরা ভস্মীভূত হয়ে যায়। কপিল মুনী যেমন ক্রোধ বসবর্তী হয়ে শাস্তি দিয়ে ছিলেন তেমনই দয়ালু হয়ে তাদের মুক্তির পথ ও বলে দিয়েছিলেন।

 

বর্তমানে গঙ্গা সাগরে অবস্থিত কপিল মুনির আশ্রম এবং মন্দিরে কপিল মুনী, রাজা সগর এবং মাতা গঙ্গার মূর্তি একত্রে বিরাজমান। বহু দর্শণার্থী আসেন এই মন্দিরে পুজো দিতে এবং নিজ নিজ মনোস্কামনা জানতে।

 

ফিরে আসবো পরের পর্বে আরো একটি আধ্যাত্মিক বিষয় নিয়ে আলোচনায়। পড়তে থাকুন। ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

ভক্তের ভগবান – কৃষ্ণ ভক্ত গোপাল ভট্ট গোস্বামী

ভক্তের ভগবান – কৃষ্ণ ভক্ত গোপাল ভট্ট গোস্বামী

 

পন্ডিতজি ভ্রূগুশ্রী জাতক

 

শ্রী গোপাল ভট্ট ছিলেন শ্রী চৈতণ্যদেবের প্রিয় শিষ্যদের অন্যতম। তিনি কৃষ্ণের রাধা রমন রূপের পুজো করতেন এবং কৃষ্ণ প্রেমে নিজেকে সম্পূর্ণ রূপে বিলিয়ে দিয়েছিলেন।আজকের পর্বে এই মহান বৈষ্ণব সাধককে নিয়ে লিখবো।

 

শ্রী গোপাল ভট্ট গোস্বামীর বয়স তখন মাত্র দশ বছর যখন মহাপ্রভু দক্ষিণ ভারতে তীর্থযাত্রার সময় শ্রী রঙ্গমে তাঁর পারিবারিক বাড়িতে চার মাস অবস্থান করেছিলেন। গোপাল ভট্ট মহাপ্রভুর সেবায় নিজেকে সম্পূর্ণরূপে উৎসর্গ করেছিলেন,

বিদায় নেয়ার সময়ে গোপাল ভাটের বাবা ভেঙ্কট ভট্টকে চৈতন্য মহাপ্রভু বলেছিলেন, “গোপালকে সাধারণ মানুষ হিসাবে নেবেন না। তিনি একজন গোপীর অবতার , রাধা ও কৃষ্ণের ব্যক্তিগত সহযোগী। সময়ের সাথে সাথে, তিনি লক্ষ লক্ষ দুঃখী আত্মাকে সাহায্য করবেন।”

 

সব শুনে ভেঙ্কট ভট্ট তার পুত্রকে মহাপ্রভুর পদ্মের চরণে নিবেদন করেছিলেন, যিনি তাকে সেই বছরের কার্তিক শুক্লা একাদশীতে দীক্ষা দিয়েছিলেন।

 

মহাপ্রভু একবার আদেশ দিয়েছিলেন যে আমার পরম প্রিয় গোপাল ভট্টের ভক্তির পথ প্রচার

করা উচিত এবং নেপালের গণ্ডকী নদীতে যাওয়া উচিত, যেখানে তিনি বারোটি শালিগ্রাম শীল পাবেন । এই শীলগুলির মধ্যে আমি সর্বদা দামোদর শালিগ্রাম রূপে বিরাজ করবো।

তিনি যেনো এই শীলগুলিকে কৃষ্ণ রূপে পুজো করেন।

 

মহাপ্রভু একটি কাঠের আসনও দেন এবং আশীর্বাদ করেন যে গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের পরবর্তী গুরু হিসেবে গোপাল ভট্ট এই আসনে বসবেন বসবেন এবং রাধা ও কৃষ্ণের ভক্তি প্রচার করবেন পরবর্তীতে এই আসন বংশ পরম্পরায় গুরু হওয়ার যোগ্য গোস্বামীদের প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে হস্তান্তর করা হবে। এটা আমার আদেশ।”

 

পরবর্তীতে গোপাল ভট্ট অলৌকিক ভাবে এই দামোদর শিলা খুঁজে পান এবং স্বপ্নে রাধারমন রুপী কৃষ্ণের দর্শন পান। সেই দামোদর শিলা স্থাপন করে মহাপ্রভুর আদেশ মতো পুজো শুরু করেন এবং সর্বত্র কৃষ্ণ নামের প্রচার শুরু করেন।

 

গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজে গোপাল ভট্ট ছিলেন কৃষ্ণ প্রেম এবং ভক্তির মূর্ত প্রতীক অসংখ্য পাপী তাপী নর নারীকে তিনি কৃষ্ণ নামের মাধ্যমে উদ্ধার করেছেন।

 

ফিরে আসবো অন্য এক ভক্ত এবং এরকমই

এক দিব্য লীলা নিয়ে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

ভক্তের ভগবান – গদাধর পন্ডিতের কথা

ভক্তের ভগবান – গদাধর পন্ডিতের কথা

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

শ্রী চৈতণ্যদেব যদি যদি সাক্ষাৎ বিষ্ণু অবতার হন তবে শ্রী গদাধর পন্ডিত ছিলেন রাধারানীর অবতার। তার মধ্যে রাধা তত্ত্বের প্রকাশ ঘটেছিলো। আজ ভক্তের ভগবানের এই পর্বে শ্রী গদাধর পন্ডিতের ভক্তি নিয়ে লিখবো।

গদাধর পন্ডিত বয়সে নিমাই পন্ডিতের চেয়ে সামান্য ছোটো ছিলেন। শৈশব থেকেই তাদের মধ্যে সখ্যাতা গড়ে ওঠে। নিমাই জননী শচীমাতা গদাধরকে তার আরেক পুত্র রূপেই দেখতেন।
একবার কৃষ্ণ প্রেমে উন্মাদ প্রায় গৌরাঙ্গ যখন নিজের বুক চিরে কৃষ্ণ দর্শন করানোর উপক্রম করেন তখন গদাধর পন্ডিত বহু চেষ্টায় তাকে থামান এবং এই জন্যে শচি মাতা তাকে অত্যাধিক স্নেহ করতেন।

সন্ন্যাস নেয়ার পর নিয়মিত গদাধর পন্ডিত চৈতণ্যদেবকে ভাগবত পাঠ করে শোনাতেন।
চৈতণ্য দেব তার সান্নিধ্যে এলেই কৃষ্ণ বিরহ অনুভব করতেন এবং ভাব তন্ময় হয়ে যেতেন।
শ্রী রাধিকার সমস্ত গুন ফুটে উঠতো গদাধর পন্ডিতের মধ্যে।

একবার পুরীতে থাকা কালীন শ্রীমদ্ভাগবত শোনার পর মহাপ্রভু গদাধর পণ্ডিতাকে বললেন, “গদাধর, আমি তোমাকে আমার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পত্তি দিতে চাই। তুমি কি তা গ্রহণ করবে?” গদাধর পণ্ডিত রাজি হলে মহাপ্রভু বললেন, “এটা আমার হৃদয়ের সম্পত্তি।” এরপর তিনি বালি সরাতে শুরু করলেন এবং সেখান থেকে বেরিয়ে এলো এক সুন্দর কৃষ্ণ মূর্তি মহাপ্রভু তখন শ্রী গদাধর পণ্ডিতকে অনুরোধ করলেন, “দয়া করে তাঁকে নিয়ে যাও এবং মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত করে নিত্য পুজোর ব্যাবস্থা করো।

বাগান বা টোটার মধ্যে থেকে এই গোপীনাথ মূর্তি প্রকট হয়েছিলো তাই নাম হয় টোটা গোপীনাথ। তারপর থেকে নিজের দেহ মন সর্বস্ব গদাধর পন্ডিত সমর্পন করেন টোটা গোপীনাথকে। মহাপ্রভু যতদিন জীবিত ছিলেন তিনি নিয়মিত গদাধর পন্ডিতের গৃহে টোটা গোপীনাথ দর্শনে যেতেন।
মহাপ্রভুর অন্তর্ধানের পর বিমর্শ গদাধর পন্ডিত আর বেশি দিন দেহ ধারণ করেননি।ভগবানের বিরহ ভক্তের কাছে অসহানীয়।আজও টোটা গোপীনাথ মন্দির গদাধর পন্ডিত এবং মহাপ্রভুর স্মৃতি ধরে রেখেছে যা সব বৈষ্ণবের কাছে একটি অত্যন্ত পবিত্র এবং দর্শনীয় স্থান।

ফিরে আসবো ভক্তের ভগবানের পরবর্তী
পর্ব নিয়ে। থাকবে আরো এক ভক্ত এবং একটি
বিশেষ লীলা। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।