Home Blog Page 128

গুরুকথা – শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র

গুরু পূর্ণিমার এই পবিত্র তিথী উপলক্ষে গুরু তত্ব নিয়ে বা জগৎ বিখ্যাত গুরুদের বলা এক অনন্য সাধারণ অনুভূতি যে অনুভূতি আপনাদের সাথে ভাগ করে নিতে পেরে আমি অত্যান্ত আনন্দিত|এখনো অনেক কথাই বলা বাকি রয়ে গেলো, সেটাই স্বাভাবিক কারন এই বিষয় অতি বিশাল এবং বিস্তৃত|তবুও যতটা সম্ভব সহজ সরল করে এই দর্শন আপনাদের সামনে তুলে ধরছি এবং আমার এই প্রয়াস আপনাদের ভালো লাগছে তা ইতিমধ্যে বেশ বুঝতে পারছি, ধন্যবাদ আপনাদের|

আজকের পর্বে আমি আমার গুরুর কথাই বলবো|তিনি পরম পূজনীয় শ্রী শ্রী অনুকূল ঠাকুর|তার কথা যতই বলা হোক কথা শেষ হয় না এমনই অদ্ভুত তার অলৌকিক জীবন ও আধ্যাত্মিক সাধনা|তাই আজ আরো একবার গুরু কথায় গুরুদেব কে স্মরণ করবো|

জন্ম সূত্রে আমার পরিবার ওপার বাংলার অর্থাৎ অধুনা বাংলাদেশ|পারিবারিক সূত্রেও আমরা অনুকূল ঠাকুরের আশীর্বাদধন্য কারন আমার নিজের বড়োমামা ছিলেন স্বয়ং ঠাকুরের ছায়া সঙ্গী ও তার একজন একনিষ্ট ভক্ত|সেই সূত্রে ছোটো থেকেই ঠাকুরের মহিমাশুনে বড়ো হওয়া| তাঁর আধ্যাত্মিক শক্তির উপর আস্থা ও শ্রদ্ধা সেই সময় থেকেই পরবর্তীতে জীবনের এক কঠিন সময়ে অনুকূল ঠাকুরের অনুগত হয়ে দীক্ষিত হই|আশ্চর্য ভাবে দীক্ষা গ্রহনের পর থেকেই জীবনে ভালো সময় আসতে শুরু করলো|অন্ধকার কাটিয়ে আলোয় ফিরলাম, সকল দিক দিয়েই সফল হলাম জীবনে|একে ঠাকুরের মহিমা ছাড়া আর কিবা বলি|আজও ঠাকুরের প্রতিকৃতি বিরাজমান আমার গৃহ মন্দিরের সিংহাসনে|আজও প্রতিটা দিন তাঁর কাছে প্রার্থনা করে আমার দিন শুরু হয়|

অনুকূলচন্দ্র চক্রবর্তী ১৮৮৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের পাবনা জেলার হিমায়তপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন|তাঁর পিতার নাম শিবচন্দ্র চক্রবর্তী এবং মাতার নাম ছিলো মনমোহিনী দেবী|
হিমায়তপুর গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাঁর শিক্ষা জীবন শুরু হয় পরে নৈহাটী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে স্কুল জীবনের পড়া শেষ করে তিনি কলকাতা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন|

অনুকূল চন্দ্রের ছিলো উত্তর ভারতের যোগীপুরুষ শ্রী শ্রী হুজুর মহারাজের শিষ্য তবে ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র মায়ের কাছেই দীক্ষা গ্রহন করেন|কঠোর পরিশ্রম ও দক্ষতার সঙ্গে তিনি জীবনে এগিয়ে চলেন, অনুকূলচন্দ্র ছিলেন একাধারে কবি, লেখক, ডাক্তার ও সর্বোপরি এক আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় গুরু|তিনি ছিলেন হিন্দু সমাজের একজন মহাপুরুষ, বিশ্ব মানবতাবাদী এবং পরম কৃষ্ণ ভক্ত।সারা জীবন তিনি চেষ্টা করে গেছেন কি ভাবে মানুষ ভাল থাকবে, সুস্থ থাকবে, শান্তিপূর্ণ ভাবে সবাই মিলে মিশে থাকবে|সেজন্য ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র সব সময় চাইতেন, তার অনুসারিরা সব সময় কৃষ্ণ ভক্তির পথে থাকুক|তাঁর এই দর্শন ও আদর্শ সাফল্যের সাথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তাঁর পরিবার ও অগণিত ভক্ত শিষ্যরা|

লোক শিক্ষার জন্য অনুকূলচন্দ্র ঠাকুর প্রায় ৪৬টি পুস্তক রচনা করেন|এগুলোতে ধর্মশিক্ষা, সমাজ সংস্কার প্রচলন প্রভৃতি বিষয়ে আদর্শ ও উপদেশসমূহ বর্ণিত হয়েছে|এগুলি ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রে অত্যান্ত গুরুত্ব পুর্ন গ্রন্থ হিসেবে সর্বত্র সমাদৃত |বই গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য, সত্যানুসরণ, পুণ্যপুথি, অনুশ্রুতি, চলার সাথী, শাশ্বতী, বিবাহ বিধায়না,সমাজ সন্দীপন ইত্যাদি|

পাবনা শহরের কাছে হেমায়েতপুর গ্রামে শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন সৎসঙ্গ আশ্রম ও মন্দির যা আজ লক্ষ লক্ষ ভক্ত শিষ্যর কাছে এক মহান তীর্থ ক্ষেত্র|1946 সালে অনুকূল ঠাকুর পাবনা থেকে দেওঘর আসেন ও দেওঘর আশ্রম তৈরি করেন|এই দেওঘরেই 1969 সালে ঠাকুর পরলোক গমন করেন|আজ এই আশ্রম ও ঠাকুরের সংগ্রহশালা দেও ঘরের মুখ্য আকর্ষণ হয়ে উঠেছে|

আমার পরম পূজনীয় গুরুকে প্রনাম ও শ্রদ্ধা জানিয়ে এই পর্ব শেষ করলাম|তবে চলবে আমার এই ধারাবাহিক লেখা গুরু পূর্ণিমা অবধি আর তার সাথে টিভি ও ইউ টিউবে তো নিয়মিত আসছি|আপনারাও আসতে পারেন যেকোনো জ্যোতিষ সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে, চেম্বারে বা অনলাইনে| শুধু উল্লেখিত নাম্বারে একবার ফোন করতে হবে |আমি থাকবো আপনাদের পাশে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

গুরু কথা – শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর

আসন্ন গুরু পূর্ণিমাকে কেন্দ্র করে জ্যোতিষ সংক্রান্ত ব্যস্ততা কিঞ্চিৎ বৃদ্ধি পেয়েছে কারন প্রতিটি বিশেষ তিথির ন্যায় এই গুরুত্বপূর্ণ তিথি তেও আপনাদের মা হৃদয়েশ্বরী সর্ব মঙ্গলা মায়ের মন্দিরে শাস্ত্র মতে গ্রহ দোষ খণ্ডনের সু ব্যবস্থা থাকবে|তার তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে এখন থেকেই|তবে শত ব্যস্ততার মধ্যেও আমার কলম থেমে নেই|আজ উপস্থিত হয়েছি এক মহান আধ্যাত্মিক গুরুর জীবন কাহিনী নিয়ে|গুরু কথার আজকের পর্বে শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর|

অবিভক্ত বাংলার গোপালগঞ্জ জেলার সফলাডাঙ্গা গ্রামে 1812 ক্রিস্টাব্দর 11 মার্চ যশোমন্ত ও অন্নপূর্ণা দেবীর গৃহে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন কলি যুগের এই অন্যতম শ্রেষ্ট মহাপুরুষ|তার পরিবার ছিলো নিষ্ঠাবান বৈষ্ণব পরিবার|ফলে শৈশব থেকেই শাস্ত্র পাঠ ও ধর্ম আলোচনার প্রতি তার এক গভীর আগ্রহ ও নিষ্ঠা
বর্তমান ছিলো|যত বয়স বাড়তে লাগলো শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের মধ্যে এক ঐশরিক শক্তির বিকাশ হতে থাকলো|যথাযত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই তিনি একজন জ্ঞানী শাস্ত্রজ্ঞ ও বৈষ্ণব শাস্ত্রে অগাধ পান্ডিত্যের অধিকারী হয়ে উঠেছিলেন|
মূলত প্রেম-ভক্তির কথা সহজ-সরলভাবে প্রচার করতেন তিনি|

পরবর্তীতে তার প্রচলিত সাধন পদ্ধতি মতুয়াবাদ রূপে ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে|তিনি মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রান পুরুষ|সারা জীবন তিনি উৎসর্গ করেন মতুয়া আদর্শের প্রচারে এবং প্রসারে|তিনি মনে করতেন ঈশ্বর প্রাপ্তির জন্য সন্ন্যাস নেয়ার প্রয়োজন নেই অন্তরে শ্রদ্ধা ও ভক্তি থাকলে এবং নিষ্ঠা সহকারে ঈশ্বর চিন্তা করলে গৃহীরও ঈশ্বর লাভ সম্ভব|নানা শ্রেণী ও জাতি তে বিভক্ত হিন্দু সমাজ কে তিনি ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছিলেন মতুয়াবাদের দ্বারা|তৎকালীন হিন্দু সমাজের অসংখ্য নিপিড়িত, দরিদ্র ও তথা কথিত নিম্ন শ্রেণীর মানুষ দের তিনি পরম স্নেহে বুকে টেনে নিয়েছিলেন এবং তাদের সার্বিক উন্নতি সাধনই ছিলো তার জীবনের প্রধান লক্ষ্য|

আজ দেশে বিদেশে ছড়িয়ে থাকা কোটি কোটি মতুয়াদের কাছে শ্রী শ্রী হরিচাঁদ চাঁদ ঠাকুর কলি যুগের শেষ এবং শ্রীহরি-র পূর্ণ অবতার|যথার্থ অর্থেই তিনি পতিতপাবন|

শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর ৫ মার্চ ১৮৭৮ সালে ৬৫ বছর বয়সে মর্তলোক ত্যাগ করেন|তার মহা প্রয়ানের পর তার পুত্র শ্রী শ্রী গুরুচাঁদ ঠাকুর মতুয়া সমাজের উন্নতি সাধনে ব্রতী হন|আজও বংশ পরম্পরার শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরহরিচাঁদ ঠাকুরের সুযোগ্য বংশধরেরা মতুয়া সমাজ কে নেতৃত্ব দান করে চলেছেন|

আজ অসংখ্য মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁরঠাকুরবাড়ি ও মতুয়া ধাম একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে|প্রতি বছর চৈত্র মাসে মতুয়া ধামে মতুয়া মহামেলা বসে যাতে অংশগ্রহণ করেন অগুনতি মানুষ| এই সময়ে ভক্তরা কামনা সাগর’-এ ডুব দিয়ে পুণ্যস্নান করেন|এছাড়াও বাংলাদেশে ঠাকুরের জন্ম স্থানে ঠাকুরের জন্ম তিথি উপলক্ষে উৎসব পালন হয় মহা সমারোহে|

আগামী পর্বে নিয়ে আসবো অন্য কোনো মহান গুরুর কথা|আপাতত বিদায় নিচ্ছি|তবে মনে করিয়ে দিই যারা আগামী গুরু পূর্ণিমা উপলক্ষে জোতিষ পরামর্শ বা প্রতিকারের কথা ভাবছেন আর দেরি না করে এখনই উল্লেখিত নাম্বারে যোগাযোগ করে আমার সাথে সরাসরি কথা বলতে পারেন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

গুরু কথা – শ্রী শ্রী সীতারাম দাস ওঙ্কার নাথ

সংস্কৃতে লেখা এই প্রাচীন বৈদিক শ্লোক
আমরা অনেকেই হয়তো আগে শুনেছি
‘গুরুর্ব্রহ্মা গুরুর্বিষ্ণু গুরুর্দেবো মহেশ্বর
গুরুরেব পরং ব্রহ্ম তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ’


কিন্ত ঠিক সেই ভাবে তলিয়ে খুঁজিনি এর অন্তর্নিহিত অর্থ, এই শ্লোকে বলা হচ্ছে জীবনে গুরুই হলেন ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর। তিনিই আমাদের সৃষ্টি-স্থিতি-লয়ের জ্ঞান বা পরম ব্রহ্মজ্ঞান দান করেন। সেই গুরুর উদ্দেশে প্রণাম জানাই|ভারতীয় সনাতন সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হচ্ছে এই গুরু শিষ্য পরম্পরা|আর এই পরম্পরা বা ঐতিহ্য কে উদযাপন করার দিন হচ্ছে গুরু পূর্ণিমা|আগামী 24 জুলাই এবছর গুরু পূর্ণিমা পালন হবে|আর এই বিশেষ সময়ে আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরছি আমাদের হাজার হাজার বছরের এই গুরু শিষ্য ঐতিহ্যর নানা দিক, ব্যাখ্যা করছি গুরুতত্ব কে নিজের মতো করে আর লিখছি জগৎ বিখ্যাত কিছু গুরুর কথা|

এমনই এক পরম শ্রদ্ধেয় ও মহাজ্ঞানী গুরু ছিলেন ঠাকুর সীতারাম দাস ওঙ্কার নাথ দেব|আজ এই মহান গুরুর জীবন নিয়ে কিছু কথা বলবো|
1891 সালে হুগলীর ডুমুর দহে প্রান হরি চট্টোপাধ্যায় ও মালতি দেবীর গৃহে জন্মায় এক শিশু নাম রাখা হয় প্রবোধ চন্দ্র|শৈশব থেকেই কিছুটা ভাবুক প্রকৃতির ছিলেন প্রবোধ চন্দ্র, ঈশ্বর চিন্তায় মগ্ন থাকতেন |পরবর্তীতে শিক্ষাগুরু ও সাধক দাশরথি মুখোপাধ্যায়ের কাছে দীক্ষা নিলেন|শিক্ষাগুরু হলেন দীক্ষাগুরু। প্রবোধচন্দ্রের নাম হলো ‘সীতারাম’|গঙ্গা যমুনা সঙ্গম এ রাম নাম মন্ত্রে তার দীক্ষা হয়েছিলো|আত্মীয় স্বজন রা তাকে গৃহী দেখতে চেয়েছিলো তাই ঠাকুরচরণ ভট্টাচার্য্যের কন্যা সিদ্ধেশ্বরী দেবীর সঙ্গে তার বিবাহ দিলেন|কিন্তু ক্রমে আধ্যাত্মিক ভক্তির সমুদ্রে ডুবে যেতে থাকেন সীতারাম দাস ওঙ্কার নাথ এবং দুই সন্তান এর জন্মের পর ঘর ছেড়ে সন্যাসী হয়ে বেড়িয়ে পড়লেন তিনি|সর্বত্র রাম নাম প্রচার করতেন তিনি|

ক্রমেই এক দিব্য ও অলৌকিক শক্তি উৎপন্ন হয় তার মধ্যে|সারা ভারত পরিক্রমা করে ১৯৩৬ সালের পৌষ মাসে সীতারাম ফিরে এলেন তাঁর দীক্ষালাভের স্থান ত্রিবেণীতে এবং স্থাপন করলেন একটি মঙ্গলঘট|এরপর বস্ত্র ত্যাগ করে কৌপিন পরিহিত সন্ন্যাসী রূপে পদার্পন করেন নিজের জন্ম স্থানে|ততো দিনে তিনি এক আধ্যাত্মিক শক্তি সম্পন্ন মহাপুরুষ|রাম নামের প্রচারে সপেঁ দিয়েছেন জীবন|অসংখ্য ভক্ত শিষ্য তার অনুগামী|লিখেছেন ১৫০ টি গ্রন্থ ও প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন ভাষার ১৩ টি পত্রপত্রিকা|

তিনি ছিলেন এক প্রকৃত সাধক ও আদর্শ গুরু যিনি তার ভক্ত ও শিষ্য দের আধ্যাত্মিক পথে চলতে শিখিয়েছেন,ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে জীবন উৎসর্গ করতে ও দেশকে ভালো বাসতে শিখিয়েছেন|১৯৮২ সালের ৫ ডিসেম্বর তিনি পরলোক গমন করেন|দেশ ও সারা বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে থাকা তার অগণিত ভক্ত শিষ্য আজও তার আদৰ্শ কে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে|গুরু পূর্ণিমার এই বিশেষ সময় এই গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা আমার অন্তরের শ্রদ্ধা রইলো|প্রনাম জানাই এই মহান সাধক কে|

আশা করি এই বিশেষ পর্ব গুলি আপনাদের ভালো লাগবে, আপনাদের প্রতিক্রিয়া অবশ্যই জানাবেন|যোগাযোগ করবেন ইচ্ছে হলে|আগামী পর্বে নিয়ে আসবো গুরুতত্ত্ব ও গুরু পূর্ণিমা সম্পর্কে আরো কিছু না বলা কথা এবং সাথে থাকবে আরেক মহান গুরুর জীবন কাহিনী|পড়তে থাকুন, সঙ্গে থাকুন|আর এই পুন্য তিথি তে জ্যোতিষ বা তন্ত্র সংক্রান্ত কোনো কার্য সম্পন্ন করানোর থাকলে উল্লেখিত নম্বরে যোগাযোগ করবেন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ| See less

গুরু কথা – মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্য

ভারতের মহান সাধক ও আধ্যাত্মিক গুরু দের কথা বলা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে যদি বাংলার নবজাগরনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব ও মহান সাধক শ্রী চৈতন্যদেবের কথা না বলা হয় কারন তিনি ছিলেন প্রকৃত গুরু যিনি গোটা বিশ্ব কে বৈষ্ণব আদর্শ শিখিয়েছিলেন, শিখিয়েছেন হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপের মাহাত্ম্য|প্রথমে গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজ ও পরবর্তীতে ইস্কন সেই শিক্ষা ও আদৰ্শকে এগিয়ে নিয়ে গেছে|1486 সালের এক দোল পূর্ণিমায় বাংলার শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চার তৎকালীন পীঠস্থান নবদ্বীপে জন্মে ছিলেন গৌরাঙ্গ যিনি কৃষ্ণ সাধনায় নিজেকে সম্পূর্ণ রূপে বিলিয়ে দিয়ে হয়ে উঠলেন মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্য|

নিম গাছের ছায়ায় তিনি জন্মে ছিলেন তাই নাম রাখা হয়ে ছিলো নিমাই, আসুন আজকের পর্বে জেনে নিই তার জীবনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক , কিছু অলৌকিক ঘটনা|সচি মাতার গর্ভে তার জন্ম, অকালে পিতৃ বিয়োগ,টোলে শিক্ষা দান, লক্ষী প্রিয়া এবং বিষ্ণু প্রিয়ার সাথে তার বিবাহ, পরবর্তীতে গয়ায় যাত্রা, সন্ন্যাস ও পুরী ভ্রমণ সারা বাংলায় কৃষ্ণ প্রেমের প্রচার এবং শেষে রহস্যময় অন্তর্ধান, এসবই হয়তো আপনারা জানেন, আগেও পড়েছেন বহুবার|শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর জীবন নিয়ে হয়েছে নানা গবেষণা ।

আজও অনেকঐতিহাসিক এই বিষয়ে
গবেষণা চালাচ্ছে। অসংখ্য রহস্য ময় ঘটনার উল্লেখ রয়েছে তার জীবন জুড়ে এবং সর্বোপরি তার মৃত্যু বা অন্তর্ধান আজও এক রহস্য|এর মধ্যে একটি বিশেষ ঘটনা আজ উল্লেখ করবো

বহু দূর দূর থেকে চৈতন্য দেবের ভক্তরা আসতেন তার সাথে দেখা করতে, এমনই একবার চৈতন্য দেবের সাথে সাক্ষাত করার জন্য সুদূর বৃন্দাবন থেকে নবদ্বীপ ধামে এসেছেন সনাতন নামে এক ব্যাক্তি।সারা দেহে খোস পাঁচড়া নিয়ে রোগ যন্ত্রণায় কাতর হয়ে তিনি মনে মনে স্থির করেছেন চৈতন্য দেবের সাথে দেখা করে আগামী রথযাত্রায় রথের চাকার তলায় আত্মহত্যা করবেন।
একদিন চৈতন্যদেবের সাথে সনাতন গল্প করছিলেন। হটাৎ চৈতন্য দেব, সনাতনকে বললেন – সনাতন,আত্মহত্যার সংকল্প ত্যাগ কর। আত্মহত্যা মহাপাপ। এতে কখনো কৃষ্ণ প্রাপ্তি হয়না।অবাক হয়ে গেলেন সনাতন। আত্মহত্যা করার কথা কাউকে জানাননি। তাহলে কী করে চৈতন্য দেব এই কথা জানলেন। এই ভাবেই অপরের মনের কথা জানতে পারতেন চৈতন্য মহাপ্রভু|আরো আশ্চর্য জনক ঘটনা হলো এর কিছুদিনের মধ্যেই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেলেন সনাতন|এর জন্য কোনো চিকিংসা করতে হয়নি।এবং আত্মহত্যার ভূত মাথা থেকে একদম মুছে যায়|

আরেকটি ঘটনার কথা বলা যায়,
একবার মহপপ্রভু শ্রীনিবাস ঠাকুরেরর বাড়িতে এক অপূর্ব অলৌকিক লীলা প্রদর্শন করেন। তখন প্রবলভাবে সংকীর্তন হচ্ছিল। তিনি ভক্তদের জিজ্ঞাসা করলেন যে, তাঁরা কি খেতে চান, এবং তাঁরা জানালেন যে, তাঁরা আম খেতে চান, তখন তিনি আমের আটি চাইলেন। তখন আমের সময় ছিল না, আঁটিটি যখন তাঁর কাছে আনা হল, তখন তিনি সেটি শ্রীনিবাস ঠাকুরের অঙ্গনে পুঁতলেন এবং তৎক্ষণাৎ সেই আঁটিটি অঙ্কুরিত হয়ে ক্রমন্বয়ে বর্ধিত হতে লাগল। অচিরেই সেটি একটি আম গাছে পরিণত হল এবং সেই গাছে এত সুপক্ব আম ধরল যে, ভক্তরা তা খেয়ে শেষ করতে পারলেন না। গাছটি শ্রীনিবাস ঠাকুরের অঙ্গনেই রইল এবং ভক্তরা সেটি থেকে তাঁদের যত ইচ্ছে আম নিয়ে খেল। ভক্তরা মহাপ্রভুর এই অপ্রাকৃত লীলা দেখে মুগ্ধ হলো|এখনও সেই গাছ শ্রীনিবাস গৃহের উঠোনে বর্তমান|

আধুনিকত ভারতবর্ষে মহাত্মাগান্ধী কে অহিংস আন্দোলনের প্রবর্তক মনে করা হলেও মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য তার বহুকাল আগেই অহিংসা ও ভক্তির দ্বারা জয় করে নিয়েছিলেন অসংখ্য মানুষের হৃদয়|

নিত্যানন্দ একবার জগাই ও মাধাই নামক নদীয়ার দুই পাপিষ্ঠ ব্রাহ্মণকুমারকে উদ্ধার করতে চাইলেন। সে লক্ষ্যে তিনি অনেক ভক্তদের সাথে নিয়ে নাম-কীর্তন করতে করতে জগাই-মাধাইয়ের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। জগাই-মাধাই মদ পান করে ঘুমাচ্ছিলেন। নাম-কীর্তন শুনে তাদের ঘুম ভাঙায় তারা খুব বিরক্ত হলেন। নিত্যানন্দ বারংবার তাদেরতে হরিনাম করার অনুরোধ করলেন। মাধাই তখন ক্রোধান্বিত হয়ে নিকটস্থ একটি ভাঙ্গা কলসির টুকরা দ্বারা নিত্যানন্দকে আঘাত করল। ফলে নিত্যানন্দের কপাল কেটে রক্ত ঝরতে লাগল। চৈতন্যদেব খবর পেয়ে ঐ স্থানে ছুটে আসলেন। তিনি জগাই-মাধাই শাস্তি দেয়ার জন্য সুদর্শন চক্রকে স্মরণ করলেন। কিন্তু নিত্যানন্দ তাঁকে নিরস্ত করলেন। শত্রু কর্তৃক আঘাত পেয়েও শত্রুকে ক্ষমা করার মত উদারতা আর কি হতে পারে? নিত্যানন্দের উদারতা ও মহত্ব দেখে জগাই-মাধাইয়ের বোধোদয় হয়। অবশেষে গৌর-নিতাইয়ের পরশে জগাই-মাধাই শুদ্ধ বৈষ্ণবভক্তে পরিণত হয়|

মহা প্রভুর মাত্র আটচল্লিশ বছরের জীবন কালে এমন অনেক অলৌকিক ঘটনা আছে লিখতে গেলে পাতার পর পাতা শেষ হয়ে যাবে, চৈতন্য চরিতামৃত সহ অসংখ্য গ্রন্থে লিপিবদ্ধ রয়েছে সব তথ্য, গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজ এবং পরবর্তীতে কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ মহা প্রভুকে অবতার হিসেবে প্রচার করেছে গোটা বিশ্বে|সারা বিশ্ব কে তিনি দিয়েগেছেন কৃষ্ণ নাম যে নাম আজ ছড়িয়ে পড়ছে দাবানলের মতো সারা পৃথিবীতে|জাতী ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মহা প্রভু সবাইকে আপন করে নিয়ে ছিলেন|তার সাধনা ছিলো একটাই মানুষকে ভালো বাসা, আর কৃষ্ণের চরণ যুগলে নিজেকে সম্পূর্ণ রূপে সপেঁ দেয়া, তার সাধনার পদ্ধতিও ছিলো সরল মৃদঙ্গ ও হরে কৃষ্ণ মহা মন্ত্র|

গুরু পূর্ণিমার আগে মহান গুরু মহাপ্রভুকে আমার শ্রদ্ধা ও প্রনাম জানিয়ে শেষ করলাম আজকের এই বিশেষ পর্ব, জানাবেন কেমন লাগছে আমার এই আধ্যাত্মিক লেখালেখি আর জ্যোতিষ পরামর্শ বা প্রতিকারের বিষয়ে জানতে ফোন করবেন উল্লেখিত নাম্বারে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

গুরু কথা – সাধক বামা খ্যাপা

ভারতের আধ্যাত্মিক জগতের গুরুদের নিয়ে ধারাবাহিক লেখা বামা খ্যাপা কে বাদ দিয়ে হতে পারেনা কারন তার মত মহান ও ব্যতিক্রমী সাধক এদেশে খুব কমই আছেন|তারাপীঠ নিয়ে আমি আগেও লিখেছি, সেখানে বামা খ্যাপা প্রসঙ্গ নিশ্চই এসেছে, তার জীবন,সাধনা, অলৌকিক ঘটনাবলী একাধিক বার আলোচিত হয়েছে|তবে তন্ত্র জগতে গুরু হিসেবে তার আলাদা তাৎপর্য রয়েছে কারন নিজের জীবন ও দর্শন দিয়ে তিনি দেখিয়ে দিয়ে গেছেন একজন আদর্শ মাতৃসাধক ও তন্ত্র সাধকের জীবন কেমন হওয়া উচিৎ|পরবর্তীতে অসংখ্য নবাগত তন্ত্র সাধক তার দেখানো পথে হেটে সাফল্য পেয়েছেন|আজও তন্ত্র ও আধ্যাত্মিক জগতের সাথে যুক্ত বহু মানুষের মনের মণিকোঠায় তিনি পরম গুরু|আজকের পর্বে তার জীবনের একটি বিশেষ সময় এবং ঘটনা কে আপনাদের সামনে তুলে ধরবো|

এমনটা নয় যে তারাপীঠ মন্দিরে আসার প্রথম দিন থেকেই বামার জয় জয়কার শুরু হয় বা সবাই তার অলৌকিক ক্ষমতা স্বীকার করে নেয়|তারাপীঠে মা তারার সঙ্গে বামা খ্যাপা কে ভোগ দেয়ার যে রীতি প্রচলিত হয়েছে তার সাথেও জড়িয়ে আছে এক অলৌকিক ঘটনা যা বদলে দিয়ে ছিলো বামা খ্যাপার জীবনে ও তার প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি|

তারাপীঠ মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নাটোর রাজ পরিবার, একদিন নাটোরের রানী স্বপ্নে দেখলেন মা তারা মন্দির ছেড়ে চলে যাচ্ছেন,ঘুম ভেঙে কাঁদতে কাঁদতে তাঁর আরাধ্য দেবী মা তারাকে স্মরণ করলেন রানী। দু’হাত জোড় করে মা’কে বললেন, “মা গো, আমি কি অপরাধ করেছি যে তুমি স্বপ্নে এসে আমাকে বললে… এই রাজ্য ছেড়ে তুমি চলে যাবে! মা,” উত্তরে মায়ের আদেশ ভেসে এলো রানীর কানে, মা বললেন ‘মন্দিরের পুরোহিত আর দারোয়ান মিলে আমার পাগল ছেলে খ্যাপাকে প্রচণ্ড মারধর করেছে। ওরা জানে না যে তাদের ওই মার আসলে আমার শরীরেই পড়েছে। আমার দেহ ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে। আমার খ্যাপা ছেলের অপরাধ ছিল যে, সে আমারই ডাকে আমার সঙ্গে বসে ভোগ খাচ্ছিল। ওই রকম প্রচণ্ড মার খাওয়ার পর থেকে তিনদিন হয়ে গেল, ছেলেটা আমার কিচ্ছু খায়নি… তাই আমিও তিন দিন ধরে জলস্পর্শ করিনি! তুই বল, ছেলে না খেলে মা কখনও খেতে পারে!’

মায়ের কাছে ক্ষমা চাইলেন রানী|ভোরবেলাতেই রানি ছুটলেন মন্দিরে। তাঁর মুখে গত রাতের ঘটনা শুনে সবাই স্তম্ভিত|জানা গেলো ঘটনা সত্যি,কদিন আগে, বামা মন্দিরের ভিতর ভোগ খেতে ঢুকেছিলেন।তখন পুরোহিত এবং দারোয়ান মিলে তাঁকে বেধড়ক মেরেছে|সেই থেকে বামা কিছু খাচ্ছেন না|সব শুনে সেই সময়ে রানী নির্দেশ দিলেন ‘আজ থেকে এই তারাপীঠ মন্দিরে তারা মায়ের সঙ্গে তাঁর পাগল ছেলে মহাসাধক বামাখ্যাপাকেও ভোগ দেওয়া হবে’|তারাপীঠে এই ভাবে শুরু হয়েছিলো মা তারা ও তার স্নেহের খ্যাপা সন্তান বামাকে এক সাথে ভোগ নিবেদনের রীতি|

গুরু শিষ্য পরম্পরাকে শ্রদ্ধা করতেন বাম দেব|সাধক বামাচরণ চট্টোপাধ্যায় ওরফে বামা ক্ষ্যাপা বলেছিলেন, নিগমে প্রকৃতি বা শক্তিরূপী দেবী হলেন গুরু আর শিব হলেন শিষ্য আর আগমে শিব গুরু ও দেবী শিষ্য। বামাচারীদের শাস্ত্র হল নিগম আর দক্ষিণাচারীদের আগম। এই পরম্পরা চলে আসছে আদিকাল থেকে|

বামা খ্যাপার জীবনে অলৌকিক ঘটনা এতো বেশি ও তার তাৎপর্য এতো গভীর যে একটি পর্বে শেষ করা যায়না, তবুও চেষ্টা করলাম গুরু পূর্ণিমার প্রাক্কালে এই গুরুকে স্মরণ করতে ও তাকে শ্রদ্ধা জানালাম নিজের মত করে|আজ এখান থেকে বিদায় নিলাম তবে জ্যোতিষ সংক্রান্ত প্রয়োজনে আমাকে অনলাইনে সর্বদাই পাবেন শুধু যোগাযোগ করতে হবে উল্লেখিত নাম্বারে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

গুরু কথা – আনন্দময়ী মা

আগামী 24 এ জুলাই আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের পূর্ণিমা তিথিতে দেশ জুড়ে পালিত হবে গুরু পূর্ণিমা|জীবের অন্ধকারাচ্ছন্ন মনকে শ্রীগুরুই জ্ঞানালোক দ্বারা আলোকিত করতে পারেন । গীতা তে স্পষ্ট বলা হচ্ছে যিনি শিষ্য কে সকল জাগতিক বন্ধন থেকে মুক্ত করে আধ্যাত্মিক মার্গে চালনা করবেন ও জন্ম মৃত্যুর আবর্ত থেকে নিষ্কৃতির পথ দেখবেন তিনিই প্রকৃত গুরু|অর্থাৎ পরম জ্ঞান লাভ হয় যার আশ্রয়ে, যার শিক্ষায়, তিনিই প্রকৃত গুর এই গুরু শিষ্য পরম্পরা ভারতের সংস্কৃতির ভিত্তি এবং এই গুরু শিষ্য পরম্পরাকে উদযাপন করা হয় এবং উৎসব আকারে পালন করা হয় গুরু পূর্ণিমায়|

আজ থেকে গুরু পূর্ণিমা উপলক্ষে শুরু করছি একটি ধারাবাহিক লেখনী|লিখবো ভারতের আধ্যাত্মিক জগতের কয়েকজন বিখ্যাত গুরুকে নিয়ে|আজ প্রথম পর্বে পরম শ্রদ্ধেয় আনন্দময়ী মা|

১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার খেওড়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন|
আন্দময়ীর প্রকৃত নাম ছিলো নির্মলা সুন্দরী
তাঁর মধ্যে ঈশ্বরচেতনার বিকাশ হয় শৈশব থেকেই।তখন থেকেই হরিনামকীর্তন শুনে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন|

১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে বিক্রমপুরের রমণীমোহন চক্রবর্তীর সঙ্গে তার বিবাহ হয়। ১৯২৬ সালে যখন সিদ্ধেশ্বরীতে কালীমন্দির প্রতিষ্ঠা হয় ধর্মকর্মে আত্মনিয়োগ করেন আনন্দ নির্মলাদেবী |এই মন্দিরেই একদিন দিব্যভাবে মাতোয়ারা নির্মলা আনন্দময়ী মূর্তিতে প্রকাশিত হন এবং তখন থেকেই তার নাম হয় আনন্দময়ী মা। স্বামীও পরবর্তীকালে সন্ন্যাস গ্রহণ করে ভোলানাথ নামে পরিচিত হন|১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে আনন্দময়ী স্বামীর সঙ্গে উত্তর ভারতের দেরাদুনে চলে যান এবং সেখানে তার লীলাক্ষেত্র ক্রমশ সম্প্রসারিত হয়|পরবর্তীতে সারা দেশ ভ্রমণ করেন আনন্দময়ী মা, অসংখ্য মানুষ তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহন করেন|তৈরি হয় একাধিক আশ্রম|

আনন্দময়ী মা বলতেন, ”খণ্ড আনন্দে প্রাণ তৃপ্ত হইতেছে না, তাই মানুষ অখণ্ড আনন্দ পাইবার জন্য অখণ্ডের সন্ধান করিতেছে।’ এই আনন্দের জন্যই তাঁর জীবন কেটেছে সাধনায়। কৈশোরে এবং পরবর্তীকালে বিবাহিত জীবনেও তিনি ভাবজগতে বেশিরভাগ সময় ডুবে থাকতেন|

শোনা যায় আনন্দময়ী মা-কে তাঁর ভক্তরা কখনও ছিন্নমস্তার মূর্তিতে, কখনও ভুবনেশ্বরী মূর্তিতে আবার কখনও বা সরস্বতী রূপে দেখতেন|

ইন্দিরা গান্ধী ছিলেন আনন্দময়ী মায়ের অন্যতম প্রধান শিষ্যা। সুভাষচন্দ্র বসু, কমলা নেহরু, পরমহংস যোগানন্দ ও মাধব পাগলার মতো ব্যাক্তিত্বরা মা আনন্দময়ীর শিষ্যত্ব গ্রহন করেছিলেন|

1982 সালে মহাসমাধিতে লীন হয়ে যান ভারতের এই মহান সাধিকা ও আধ্যাত্মিক গুরু|তাঁর দেহত্যাগের পর শিষ্যা ইন্দিরাগান্ধী শোক জানিয়ে বলেছিলেন ”আমার জীবনে মা আনন্দময়ীর আশীর্বাদ ছিল প্রধান শক্তি ও ভরসা। আজ আমার মর্মবেদনা জানাবার ভাষা নেই।” মহান সাধক ও গুরুরা স্থূল দেহ ত্যাগ করলেও তাদের আধ্যাত্বিক কর্মকান্ড তাদের দেয়া আধ্যাত্বিক শিক্ষা ও জ্ঞান তাঁদের অমরত্ব প্রদান করে|আনন্দময়ী মাও তাঁর অসংখ্য ভক্ত শিষ্য দের মনে সদা বিরাজমান|

এই মহান গুরু ও সাধিকা কে প্রনাম জানিয়ে শেষ করছি আজকের পর্ব|আগামী পর্বে আবার দেখা হবে|যাওয়ার আগে জানিয়ে যাই অনলাইন পরিষেবার পাশাপাশি আপাতত আবার নিয়মিত ভাবে চেম্বারে বসে সরাসরি ভাগ্যগণনার কাজে আরম্ভ করেছি যারা জ্যোতিষ সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে আসতে চান উল্লেখিত নাম্বারে যোগাযোগ করতে পারেন নির্দ্বিধায়|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

মন্দির রহস্য – বিবিমাতা মন্দির

পরিচিত পৌরাণিক ও লৌকিক দেবদেবীদের পাশাপাশি এই গ্রাম বাংলায় পূজিত হন বহু লৌকিক দেব দেবী যাদের মন্দির ঘিরে রয়েছে বহু রহস্যময় লোকগাথা বিগত একটি পর্বে আপনাদের বন বিবির কথা বলে ছিলাম আজ বলবো দক্ষিণ বঙ্গের এক জনপ্ৰিয় ও রহস্যময় দেবী বিবি মাতা ও তার প্রাচীন মন্দিরের কথা|

বিবিমাতার উৎপত্তি সম্পর্কে নানা মতবাদ আছে|একটি জনশ্রুতি অনুসারে কোন এক হিন্দু জমিদারের ৭টি কন্যা সন্তান ছিলো কিন্ত তাদের বিয়ে হয়েছিলো মুসলমান ঘরে|তারা দেবী মর্যাদা পান এবং লোকসমাজে ‘সাতমা ’ বলে পরিচিত হন।এক হিন্দুজমিদারের ৭জন কন্যা ছিলো। তারা ধর্মপ্রাণ ছিলেন। একদিন তাদের সঙ্গে দেখা করেন এক পীরবাবা।পীরবাবার দয়ায় সাত কন্যার বিবাহ হয় এক ধর্মপ্রাণ মুসলমান জমিদারেরে পুত্রের সঙ্গে এবং পরবর্তীতে ক্রমে এই নারীদের মধ্যে দৈবী শক্তির বিকাশ ঘটে।

এই সাতবোন সপ্ত মাতা নামে কিছু স্থানে
পরিচিত যযেহেতু মুসলিম পরিবারের তাদের বিবাহ হয়েছিলো তাই বিবি শব্দটি জুড়ে যায় নামের সাথে|এদের নাম যথাক্রমে ওলাবিবি, ঝোলাবিবি, ঝড়িবিবি, চাঁদবিবি, বহেড়াবিবি, মড়িবিবি ও আসানবিবি।সাতটি বিবি সাতটি রোগের নিরাময়কারী দেবী হিসাবে পুজিত হন।যার মধ্যে কলেরা বা ওলাওটা রোগের দেবী হিসাবে ওলাবিবি বা ওলাইচন্ডী দেবী নামে পরিচিত।বিবিমাতা হলেন ওলাবিবি বা ওলাইচন্ডী|

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার আলিদা গ্রামে রয়েছে প্রাচীন ও জনপ্রিয় বিবি মাতার মন্দির|তবে এই স্থানকে মন্দির না বলে থান বলা হয় কারণ হল এখানে কোন মন্দিরের স্থাপত্যর ছোঁয়া নেই।
একটি বেদীআছে|গর্ভ গৃহ আছে| দেবীর মূর্তির বৈচিত্র্য আছে।মাথায় ঘন চুল। আর ডান হাত তুলে আশীর্বাদ করছেন।আলিদাবিবি মাতা-কে নানা ধরনের শাড়ি পরানো হয়|

এই বিবি মাতার মন্দির হিন্দু মুসলিম সম্প্রদায়ের এক অপূর্ব মিলন স্থল|দুই সম্প্রদায়ের মানুষ একত্রে এই বিবি মাতার থানের পরিচর্যা করেন|
প্রতিবছর চৈত্র মাসে ২৪,২৫,ও ২৬ তারিখে বিশেষ হাজত বা পুজো ব্যবস্থা করা হয়|এই পূজা উপলক্ষে আলিদা গ্রামে বিরাট মেলা বসে|তিন দিন ধরে চলে বিরাট উৎসব এবং জাতী ধর্ম নির্বিশেষে এই উৎসবে যোগদান করেন অসংখ্য মানুষ|

আজ বিদায় নিলাম|আবার আগামী পর্বে কলম ধরবো নতুন কোনো পর্বে|মনে রাখবেন নিয়মিত ভাগ্যগণনার পাশাপাশি প্রতিটি বিশেষ তিথিতে আপনাদের মা হৃদয়েশ্বরী সর্বমঙ্গলার মন্দিরের বিশেষ পুজো ও গ্রহ দোষ খণ্ডন অনুষ্ঠানে আমি নিজে উপস্থিত থাকি|প্রয়োজনে উল্লেখিত নাম্বারে যোগাযোগ করবেন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ| 

রথযাত্রার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন

আজ পবিত্র রথযাত্রা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে যে সকল ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক উৎসবগুলি সর্বাধিক জনপ্রিয় ও পবিত্র তার মধ্যে একদম প্রথম সারিতে রয়েছে রথ এই রথ যাত্রা যা আজ আর শুধু উড়িষ্যা বা বাংলা নয় গোটা বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব গুলির অন্যতম|

শাস্ত্র মতে তখন দ্বাপর যুগ, শেষ হয়েছে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ|এক ব্যাধের বানের আঘাতে প্রান হারান শ্রী কৃষ্ণ তার সৎকার করেন অর্জুন কিন্তু অক্ষত থাকে কৃষ্ণের নাভী এই নাভী উদ্ধার করেন এক সবর রাজ তিনি নীল মাধব রূপে তা পূজা করতে লাগলেন|এর পর কেটে গেলো বহু যুগ পুরীর রাজা এক বিশাল দেবালয় গড়ে তুললেন এবং ইচ্ছা প্রকাশ করলেন নীল মাধব কে প্রতিষ্ঠিত করবেন তার মন্দিরে এবং নীল মাধবের সন্ধানে রাজা লোক পাঠালেন চারিদিকে, নেতৃত্বে রাজার বিশ্বস্ত লোক বিদ্যাপতি|এক জঙ্গলে পথ হারিয়ে বিদ্যাপতি আশ্রয় নিলেন এক সবর রাজের গৃহে, বিবাহ করলেন তার কন্যা কে এবং একদিন আবিষ্কার করলেন যে বংশ পরম্পরায় এই সবর রাজের কাছেই আছে নীল মাধব, অনুরোধ করে তা তিনি দর্শন করলেন|এবং ঘটনা চক্রে এই খবর রাজার কানে পৌছালো|সবর রাজ তার ইষ্ট দেব কে ছাড়তে না চাইলেও স্বয়ং নীল মাধবের ইচ্ছায় তা রাজার হাতে তুলে দিতে সম্মত হলেন কিন্তু|কিন্তু হটাৎ অদৃশ্য হয় নীল মাধব এবং দৈব বাণী হয় যে সমুদ্রে ভেসে আসবে কাঠ তা দিয়ে বানাতে হবে বিগ্রহ|তাই হলো কিন্তু যতক্ষণ না বিদ্যাপতি ও সবর রাজ হাত মিলিয়ে চেষ্টা করলেন নাড়ানো গেলোনা সেই কাঠ|বৃদ্ধের বেশে রাজ সভায় একদিন হাজির হয়ে মূর্তি তৈরির ভার নিলেন স্বয়ং বিশ্ব কর্মা|শর্ত রইলো একুশ দিনের আগে কেউ মূর্তি দর্শন করবেন না|কাজ শুরু হওয়ার চোদ্দো দিনের দিন রানী গুন্ডিচার কৌতূহলে খুলে গেলো শিল্পীর রুদ্ধ দ্বার|দেখা গেলো অদৃশ্য হয়েছেন শিল্পী এবং রয়েছে অসমাপ্ত তিনটি মূর্তি|রাজা মর্মাহত হলেন কিন্তু দৈব বাণী এলো যে জগন্নাথ অর্থাৎ জগতের নাথ স্বয়ং ভগবান ওই বিশেষ রূপেই পূজিত হতে চান|ওই বিগ্রহই প্রতিষ্ঠিত হলো মন্দিরের|

মনে করা হয় দীর্ঘ বিরতির পর শ্রী কৃষ্ণর বৃন্দাবন যাত্রাকেই উদযাপন করা হয় রথ যাত্রা পালনের মাধ্যমে|প্রথম ও প্রধান রথ যাত্রা নিঃসন্দেহে পালিত হয় জগন্নাথ ধাম পুরীতে|প্রথমে রাজ পরিবারের পৃষ্ঠপোষকতায় ও পরবর্তীতে সরকার জনসাধারণএর উদ্যোগে প্রতি বছর পুরীতে ওই বিশেষ তিথী তে বিরাট আকারে পালিত হয় রথ যাত্রা|এই পরম্পরা চলে আসছে যুগ যুগ ধরে|
বোন সুভদ্রা ও দাদা বলরাম বা বলভদ্রকে নিয়ে রথে চড়ে রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের পত্নী গুন্ডিচারবাড়ি যান। সেখান থেকে সাতদিন পরে আবার নিজের মন্দিরে ফিরে আসেন। এই যাওয়াটাকেই জগন্নাথের মাসির বাড়ি যাওয়া বলে। রথের দিন তিনটি রথ পর পর যাত্রা করে মাসির বাড়ি। প্রথমে যায় বলরামের রথ, তারপর সুভদ্রা এবং সবশেষে জগন্নাথের রথ। রথে চড়ে এই গমন ও প্রত্যাগমনকে সোজা রথ এবং উল্টোরথ বলে|তিনটি রথ থাকে যাদের প্রত্যেকের নিজস্ব বৈশিষ্ট আছে|জগন্নাথের রথের নাম নন্দী ঘোষ, বলরামের রথের নাম তালধ্বজ ও সুভদ্রার রথের নাম দর্পদলন|এই রথ নির্মানে কোনো আধুনিক সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি ব্যবহার হয়না এবং বংশ পরম্পরার কারিগররা সকল নিয়ম নিষ্ঠা ও প্রথা মেনে রথ প্রস্তুত করেন|আজও পুরীর বর্তমান রাজা সোনার ঝাড়ু ব্যবহার করে রথের যাত্রার আগে তার পথ পরিষ্কার করে থাকেন|প্রচলিত বিশ্বাস রথে পুরীতে বৃষ্টিপাত হবেই|

পরবর্তীতে পুরীর বাইরে বাংলায় রথযাত্রা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং মনে করা হয় এই সংস্কৃতির সম্ভবত সূচনা হয়েছিল শ্রীচৈতন্যদেবের নীলাচল অর্থাৎ পুরী যাওয়ার পর থেকে| চৈতন্যভক্ত বৈষ্ণবরা বাংলায় পুরীর অনুকরণে রথযাত্রার শুরু করেন এবং দেখতে দেখতে বহু রাজপরিবার ও এই মহা সমারোহে এই উৎসব পালন করতে শুরু করে|আরো কিছু কাল পরে ইসকন ও শ্রীল প্রভুপাদের হাত ধরে রথ যাত্রা দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতে পা রাখে ও ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে সারা বিশ্ব জুড়ে|

আজ বাংলার নানা স্থানে বিরাট আকারে রথ যাত্রা উৎসব পালন হয় যার মধ্যে মাহেশের রথ যাত্রা বিশেষ উল্লেখযোগ্য|যাত্রা শব্দের প্রকৃত অর্থ গমন তাই জগন্নাথের রথযাত্রা এবং উল্টোরথ হিন্দু-বাঙালিদের কোনও কাজ বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সূচনার পবিত্র দিন হিসেবে গণ্য করা হয়| বাঙালির অন্যতম শ্রেষ্ঠ উৎসব দূর্গাপূজোর সূচনাও হয় এই রথ কিংবা উল্টোরথের দিন|করোনা থাকার ফলে এবছর পুরী সহ সর্বত্র রথ যাত্রা অনুষ্ঠিত হবে কিছু বিধি নিষেধ বজায় রেখে তবে ধর্মীয় আবেগ ও নিষ্ঠার কোনো অভাব নেই প্রভুর অগনিত ভক্ত ও অনুরাগীদের মধ্যে|আপনাদের সবাইকে রথ যাত্রার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

দেবতাদের অস্ত্র শস্ত্র – তীর ধনুক

গতকাল অমাবস্যা উপলক্ষে আপনাদের মা হৃদয়েশ্বরী সর্বমঙ্গলার মন্দিরের বিশেষ পুজোতে যারা সরাসরি অংশগ্রহন করলেন এবং যারা সরাসরি পুজোর সম্প্রচার দেখলেন তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ|আজকের পর্বে ভারতের পৌরাণিক যুগের যে সর্বাধিক জনপ্রিয় ও বহু ব্যবহিত অস্ত্রের কথা বলবো তীর ধনুক|

পুরান, রামায়ন, মহাভারত এবং ইতিহাস সর্বত্র যুদ্ধ মানেই তীর ধনুকের ছড়াছড়ি|রামায়নে রাবনের হত্যা সম্ভব হয়েছিলো একটি বিশেষ তীরের মাধ্যমে|মহা ভারতের যুদ্ধে বীরত্বের মাপদন্ড হয়ে উঠেছিল তীর নিঃক্ষেপ করার সঠিক কৌশল ও কিছু বিশেষ তীর যেগুলির রয়েছে বিশেষ কাজ ও বিশেষ ক্ষমতা|

কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে ব্যাবহিত একটি তীর হলো নারায়ণাস্ত্র|নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে এটা নারায়ণের অস্ত্র ছিলো। এই অস্ত্রটা ছিলো তিনজনের কাছে। দ্রোণাচার্য, অশ্বত্থামা আর কৃষ্ণ। কিন্তু যেহেতু কৃষ্ণ অস্ত্রধারণ করবেননা বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিলেন, তাই যুদ্ধক্ষেত্রে এটা বাকি দুজনের কাছেই ছিলো। নিক্ষেপ করার পরে এটা একটা তীর থেকে দশ হাজার তীর সৃষ্টি করতে পারতো। আর সামনের দশহাজার জনকে একসাথে মারার ক্ষমতা ছিলো। অশ্বত্থামা এটা একবার ব্যবহার করেছিলেন পাণ্ডব সৈন্যদের একসাথে শেষ করার জন্য।

এই অস্ত্র ব্যবহার করা ও এর আঘাত থেকে বাঁচা সবাই জানতেন না কিন্তু কৃষ্ণ এর ব্যবহার জানতেন, আর অশ্বত্থামা কৌরবপক্ষ থেকে পাণ্ডবদের দিকে এই তীর নিক্ষেপ করেছিলেন, তাই কৃষ্ণ তার প্রতিরোধ ক্ষমতা দিয়ে এটাকে নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছিলেন।

আরেকটি অদ্ভুত তীর ছিলো বাসবী শক্তি|এই তীর ছিল ইন্দ্রর। দেবরাজ এই তীর দিয়েছিলেন কর্ণকে এটা কর্ণ বহুবছর ধরে সংরক্ষণ করে রেখেছিল অর্জুনকে বধ করার জন্য, কিন্তু যখন ভীমের পুত্র ঘটৎকচ এসে যুদ্ধে প্রচুর কৌরবসেনা মারছিল, তখন বাধ্য হয়েই কর্ণ এই শক্তি ব্যবহার করে ঘটৎকচকে বধ করে। এটা আসলে একটা মন্ত্রপূত তীর ব্যাবহারে শর্ত ছিল, কেবলমাত্র একবারই ব্যবহার করা যাবে এই অস্ত্র। আর এটা কখনওই বিফল হবেনা। যাকে উদ্দেশ্য করে এই অস্ত্র ছোঁড়া হবে, সে যেখানেই থাকুক, এই শক্তি গিয়ে তার মাথাতেই লাগবে, আর সাথে সাথে তার মৃত্যু ঘটবে।ঘটোৎকচ হত্যার পর কর্ণ চিরতরে হারায় এই অস্ত্রটা|

পৌরাণিক যুগের দেবতা ও বীর যোদ্ধা দের নিজস্ব ধনুকের আলাদা নামের ও উল্লেখ আছে|পিনাক নামক ধনুকের দ্বারা ভগবান শঙ্কর ত্রিপুরাসুর অসুরকে বধ করেছিলেন|গানডিভ নামক এই ধনুকটি ছিল অর্জুনের সাথে কুরুক্ষেত্রর যুদ্ধে|বিজয় নামক ধনুকটি কর্ণের কাছে ছিল, তাঁর গুরু পরশুরাম কর্ণকে এই ধনুক দিয়েছিলেন|আবার ধনুক ভঙ্গ করে নিজের বীরত্ব প্রমান করার প্রমান করার প্রথাও ছিলো যার উল্লেখ পাওয়া যায় একাধিক পৌরাণিক ঘটনায়|

আবার পরের পর্বে ফিরে আসবো অন্য কোনো অস্ত্র বা শস্ত্র নিয়ে|উল্লেখিত নাম্বারে যোগাযোগ করুন জ্যোতিষ সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে কথা বলুন সরাসরি|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

শক্তিপীঠ – ইন্দ্রাক্ষি

বহুদিন শক্তি পীঠ নিয়ে আলাদা করে লেখা হয়না, তাই আজ অমাবস্যার ঠিক আগেই একটি নতুন শক্তিপীঠ পর্ব নিয়ে আমি আপনাদের সামনে উপস্তিত|আমাদের প্রতিবেশী দেশ শ্রীলংকায় রয়েছে একটি বিতর্কিত শক্ত পীঠ যার নাম ইন্দ্রাক্ষি|আজকের পর্বে জানাবো এই শক্তিপীঠ সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য|

পীঠ নির্ণয় তন্ত্র, চন্ডীমঙ্গল কাব্য সহ বেশ কিছু প্রাচীন শাস্ত্রে সিংহলে অবস্থিত ইন্দ্রাক্ষি নামক এই শক্তি পীঠের উল্লেখ পাওয়া যায়|

এই পীঠে দেবী ইন্দ্রাক্ষি রূপে পূজিত হন এই পীঠের সাথে জড়িত আছে দেবরাজ ইন্দ্র ও এক পৌরাণিক ঘটনা|পৌরাণিক মত অনুযায়ী,প্রাচীন সিংহলে পড়েছিল সতীর পায়ের মল বা নুপুর| সতী এখানে ইন্দ্রাক্ষ্মী আর শিব হলেন রক্ষশেশ্বর৷ পৌরাণিক মত অনুসারে ইন্দ্রাক্ষ্মীর মূর্তি বানিয়ে পুজো করতেন স্বয়ং দেবরাজ ইন্দ্র কারন বৃত্তাসুরের সাথে যুদ্ধের সময় দেবী ইন্দ্রকে সাহায্য করে ছিলেন ও দেবতাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন এবং যুদ্ধ শেষে তিনি এই স্থানে ইন্দ্রাক্ষি রূপে সদা বিরাজমান থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন|

যদিও এই পীঠের সঠিক অবস্থান নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে কিছু মতপার্থক্য রয়েছে তবে বেশি ভাগ গবেষক ও শাস্ত্র বিশেষজ্ঞই মনে করেন
বৌদ্ধ প্রধান দেশ শ্রীলংকার একসময় গৃহযুদ্ধ বিধ্বস্ত জাফনাতেই আছে এই সতীপীঠ| জাফনার নাইনাতিভুতে ধুমধাম করে পুজো হয় দেবী ইন্দ্রাক্ষির|

আগামী পর্বে আবার কোনো শক্তি পীঠ নিয়ে লিখবো|আপনাদের জানিয়ে রাখি কালকের অমাবস্যা তিথিতে আপনাদের মা হৃদয়েশ্বরী সর্বমঙ্গলার মন্দিরে বিশেষ পুজো, হোম যজ্ঞ ও শাস্ত্র মতে গ্রহ দোষ খণ্ডনের সকল ব্যবস্থা থাকছে| যেকোনো গ্রহগত সমস্যা দ্বারা পীড়িত থাকলে ও সমস্যা থেকে মুক্তি চাইলে নির্দ্বিধায় যোগাযোগ করুন উল্লেখিত নাম্বারে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|