Home Blog Page 127

কবি গুরুকে শ্রদ্ধাঞ্জলি

আজ বাইশে শ্রাবন অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়ান দিবস|বাঙালিরা পৃথিবীরা যে প্রান্তেই থাকুক দুটি তারিখ তারা কখনোই ভুলতে পারেনা এক পঁচিশে বৈশাখ এবং তারপর এই বাইশে শ্রাবন|আজকের দিনটি তাকে স্মরণ করার দিন, তাকে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেয়ার দিন আর এই কাজ টা সাধারনত করা হয় তার গানের মাধ্যমে|তার কবিতার মাধ্যমে এবং তার জীবন দর্শন ও কর্মকান্ড নিয়ে আলোচনারা মাধ্যমে|

রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে বিশ্ববাসি তথা বাঙালি কে নতুন করে আর কি বলার আছে তা ভাবার বিষয়|উনি শুধু বিশ্ব কবি নন বিশ্ব গুরুও বটে | সারা পৃথিবীতে এমন প্রতিভা খুব কমই জন্মেছে | শিল্প,সাহিত্য,আধ্যাত্মিকতা, রাজনীতি, সমাজ সংস্কার,দর্শন প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই তার অবাধ ও সফল বিচরণ |নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন মানব কল্যানে| তার জীবন ও কার্যকলাপ এক রহস্য, যেন বিশাল সমুদ্র তিনি, যার খুব সামান্যই আমরা দেখতে পাই|তার জন্মদিন ও মৃত্যু দিন দুটোই বাঙালির তেরো পার্বন এর সাথে জুড়ে যাওয়া দুটি উৎসব হিসেবে আজ পালন হয় গোটা বিশ্বের দরবারে |

কিন্তু কিকরে এলো একটি মানুষের মধ্যে এতো প্রতিভা, এ এক বিস্ময় | শুধু তার কর্ম ক্ষেত্র নয় ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথ নাথ ও এক গবেষণার বিষয়, অসংখ্য শোক ও অফুরন্ত প্রান শক্তি এই দুয়ের সংঘর্ষ চলেছে তার সারা জীবন ধরে |নানা ভাবে তার জীবন ও কাজ কে ব্যাখ্যা করা হয়| ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার তাকে নিয়ে লিখেছি|তার প্রেত চৰ্চা নিয়ে|তার রসবোধ নিয়ে|আলোচনা করেছি তার আধ্যাত্মিক চেতনা নিয়ে এমনকি তার জন্মছক বিশ্লেষণ ও করেছি|তবু তাকে নিয়ে লেখা বলা যেনো শেষ হতে চায়না|তিনি এক বিরল এবং বিস্ময় প্রতিভা যার আদি অন্ত খুঁজে পাওয়া মুশকিল|

ব্যাক্তিগত ভাবে রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস করতেন আত্মার অমর তার সৃষ্টি বা ধ্বংস নেই,তিনি সকল ধর্মীয় গোড়ামির উর্ধে ছিলেন আবার ধ্যান ও প্রার্থনা সংগীত কে গুরুত্ব দিতেন |তিনি নির্দ্বিধায় বলতে পারতেন –

“তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছো আকীর্ণ করি
বিচিত্র ছলনা জলে
করি হে ছলনা ময়ী “

রবীন্দ্রনাথ নাথ কে নিয়ে, তার সৃষ্টি কে নিয়ে গবেষণা চলছে, চলবে |আগামী দিনে হয়তো তাকে নিয়ে আরো নতুন নতুন তথ্য সামনে আসবে হয়তো নতুন করে আবিষ্কৃত তার প্রতিভার অন্য কোনো দিক| আপাতত তার সৃষ্টিরা মধ্যে দিয়ে তাকে খুঁজে পাওয়ার এই প্রচেষ্টা চলতে থাকুক|প্রয়ান দিবসে গুরুদেবের চরনে রইলো প্রনাম ও শ্রদ্ধাঞ্জলি 

পুরান রহস্য – পঞ্চকেদার সৃষ্টি হলো কিভাবে?

শিব ক্ষেত্র বলতেই প্রথমেই কাশি বা অমরনাথ বা কৈলাস মানস সরোবরে নাম মনে হলেও শৈব্য দের কাছে পাঁচটি শিব মন্দিরের আলাদা মাহাত্ম্য আছে|এই পাঁচটি শিবমন্দিরকে একত্রে পঞ্চ কেদার ও বলে|এগুলি হলো যথাক্রমে কেদার নাথ, তুঙ্গনাথ যা উত্তরাখণ্ড এর রুদ্রপ্রয়াগ জেলায় অবস্থিত পৃথিবীর সর্বোচ্চ শিব মন্দির, মদমহেশ্বর,রুদ্রনাথ যা পাঁচটি কেদারের মধ্যে সবচেয়ে দুর্গম রুদ্রনাথ। কল্পেশ্বর ,কল্পগঙ্গা নদীর তীরে কল্পেশ্বর মন্দির।এই পাঁচটি মন্দির বা পঞ্চকেদার কিভাবে সৃষ্টির হোলো তা নিয়ে মহাভারতে একটি সুন্দর ঘটনার উল্লেখ আছে|কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে কৌরবদের হত্যা করলেন পঞ্চ পাণ্ডব এবং স্বজন হত্যা ও ব্রাহ্মণ হত্যার মত গুরুতর পাপের ভাগী হলেন। যুদ্ধ শেষে শোকে দুক্ষে মর্মাহত পাঁচ ভাই বেড়িয়ে পড়লেন দেবাদিদেব মহাদেব-এর খোঁজে। উদ্দেশ্য তাঁর আশীর্বাদ নিয়ে কিছুটা হলেও মনের শান্তি ফিরে পাওয়া।প্রথমেই তাঁরা গেলেন শিবধাম কাশীতে যেখানে রয়েছে অসংখ্য শিব মন্দির|কাশীতে শিবের দেখা না পেয়ে বিমর্ষ পঞ্চপাণ্ডব গেলেন গাড়োয়াল হিমালয়ে। সেখানে গুপ্তকাশীর কাছাকাছি তাঁরা দেখলেন প্রকাণ্ড এক ষাঁড় ঘুরে বেড়াচ্ছে। পঞ্চপাণ্ডবদের অন্যতম ভীম দর্শনমাত্র চিনে ফেললেন যে এই ষাঁড়ের ছদ্মবেশে লুকিয়ে আছেন স্বয়ং মহাদেব|ওদিকে পাণ্ডবদের দেখেই শিব পালানোর চেষ্টা করলেন। ছুটে গিয়ে ভীম ষাঁড়টিকে জড়িয়ে ধরলেন। শিব তৎক্ষণাৎ অদৃশ্য হয়ে গেলেন মাটীর নীচে এবং ওই আত্মগোপনরত অবস্থায় ছদ্মবেশে বিভিন্ন জায়গায় শিব পঞ্চপাণ্ডবদের দর্শন দেন। কেদারনাথে ষাঁড়ের কুঁজ আবির্ভুত হয়। তুঙ্গনাথে বাহুদ্বয়, রুদ্রনাথ-এ মস্তক, নাভি ও পেট আবির্ভূত হয় মদমহেশ্বর-এ, চুল ও জটা কল্পেশর-এ। এভাবেই খণ্ডিতভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল এই সকল জায়গায়। এরপর পাণ্ডব ভাইয়েরা এই পাঁচ জায়গাতেই শিবের মন্দির স্থাপন করলেন, যা বর্তমানে একত্রে পঞ্চ কেদার নামে হিন্দুদের পবিত্রতম তীর্থস্থান ও জগৎ প্রসিদ্ধ|আগামী পর্বে এমনই কোনো রোমাঞ্চকর পৌরাণিক ঘটনার সহজ ব্যাখ্যা নিয়ে ফিরে আসবো|আপাতত অনলাইন ও চেম্বারে পেশাগত ব্যাস্ততা বেশ বেড়েছে পাশাপাশি নিয়মিত টিভির অনুষ্ঠানতো আছেই|দেখতে থাকুন এবং পড়তে থাকুন আর জ্যোতিষ সংক্রান্ত প্রশ্ন বা সমস্যা নিয়ে সাক্ষাতের জন্যে যোগাযোগ করুন উল্লেখিত নাম্বারে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

শিব কথা – শিব অবতার পিপলাদ

সনাতন ধর্মে যেমন বিষ্ণুর দশ অবতারের উল্লেখ আছে তেমনই দেবাদিদেব মহাদেবের একাধিক অবতার ও আছে|নানা অবতারের রূপ ধারণ করে বারবার পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়েছেন মহাদেব। পুরাণ থেকে তাঁর মোট ১৯টি অবতারের কথা জানা যায়|আজ শিবের একটি বিশেষ অবতার সম্পর্কে জানবো এই পর্বে|ত্যাগের মূর্ত প্রতীক সাধু দধিচি ও তাঁর স্ত্রী স্বর্চার সন্তান পিপলাদ হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন শিব। শৈশবে পিসি দধিমতির কাছে পালিত হয়েছিলেন তিনি। প্রবল পরাক্রমী ছিলেন পিপলাদ|এই পিপলাদ ও গ্রহ রাজ শনির মধ্যে একবার বিবাদ দেখা দেয়|বড় হয়ে যখন পিপলাদ জানতে পারেন যে তাঁর বাবাকে সমস্যায় ফেলেছিলেন শনি। ক্ষুব্ধ পিপলাদ শনিকে অভিশাপ দিলে স্বর্গ থেকে পতন হয় শনির। দেবতারা এসে পিপলাদের কাছে শনির হয়ে ক্ষমাভিক্ষা করলে পিপলাদ শনিকে ক্ষমা করে দেন কিন্তু বলেন যে শনির দৃষ্টি যার ওপর পড়বে, তিনি শিবের পুজো করলে শনির দশা কেটে যাবে। আজও জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে শিবের পুজো করলে ও শিব কৃপা লাভ করলে শনি গ্রহের কু প্রভাব থেকে মুক্তি লাভ হয়|আপনারাও এই শ্রাবন মাস কে কাজে লাগিয়ে নিজের গ্রহ গত দোষ খণ্ডন করাতে পারেন|যেকোনো জ্যোতিষ সংক্রান্ত সমস্যা ও তার সমাধান নিয়ে কথা বলতে চাইলে উল্লেখিত নাম্বারে যোগাযোগ করুন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

বাংলার শিব – ঝাড়েস্বর শিব মন্দির

পন্ডিত জি ভৃগুশ্রী জাতক

বাংলার শিব শীর্ষক এই ধারাবাহিক লেখনী তে আগেও বেশ কয়েকটি পর্বে বাংলার প্রাচীন ও জনপ্রিয় শিব মন্দির গুলি কথা লিখেছি|মেদিনীপুরে কানাশোলে রয়েছে এমনই এক প্রাচীন শিবমন্দির যা ঝাড়েশ্বর শিব মন্দির নামে খ্যাত| কানাশোলের এই ঝাড়েশ্বর শিব মন্দিরের ইতিহাস বেশ প্রাচীন|সাড়ে তিনশো বছরেরও বেশি আগে থেকে এখানে ঝাড়েশ্বর মহাদেবের পুজোর প্রচলন রয়েছে|১২৪১ বঙ্গাব্দে নাড়াজোলের রাজা অযোধ্যা রাম খানের দেওয়ান রামনারায়ণ জানা এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেন। কঠিন অসুখ থেকে সেরে ওঠার পরেই তিনি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। মহাদেব এখানে ঝাড়েশ্বর রূপে পূজিত হন|শোনো যায় একটি দীঘি খননের সময়ে এখানে এই শিব লিঙ্গ আবিষ্কৃত হয়|কিংবদন্তী অনুসারে একটি গাভী গভীর জঙ্গলে প্রবেশ করে এই শিব লিঙ্গকে নিজের দুধ দিয়ে স্নান করিয়ে যেতো| রাজ্যের পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। এই মন্দির একদিকে স্থাপত্য শৈলীর অনুপম নিদর্শন, অন্যদিকে পর্যটকদের কাছেও আকর্ষণীয়। এখানে রয়েছে মহাকাল ভৈরবের থান, নাটমন্দির, ভোগমন্দির|শোনা যায় ঝাড়েশ্বর মহাদেব খুব দয়ালু বহু ভক্ত তার কাছে মনস্কামনা করে ফল পেয়েছেন| শিব রাত্রি ও শ্রাবন মাসে বিশেষ তিথি গুলিতে এখানে বহু ভক্তের সমাগম হয়|দুর দূরান্ত থেকে মানুষ আসেন ঝাড়েশ্বর মহাদেবের দর্শন করতে ও তার কৃপা লাভ করতে| আজকের পর্ব এখানেই শেষ করছি|আগামী পর্বে আবার নতুন কোনো শিব মন্দিরের কথা নিয়ে ফিরে আসবো বাংলার শিবের নতুন পর্বে|যারা সরাসরি সাক্ষাৎ চান বা অনলাইনে জ্যোতিষ সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে কথা বলতে চান তারা নির্দ্বিধায় উল্লেখিত নাম্বারে ফোন করে সরাসরি কথা বলতে পারেন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

শিব কথা – শিব ও শঙ্কর কি একজন?

শিব ও শঙ্কর কি একজন নাকি দুই ভিন্ন সত্ত্বা আজকের শিব কথার এই পর্বে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজবো|শিবপুরাণ এবং শৈবাগম শাস্ত্র এই দুই গ্রন্থে এই বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা রয়েছে|এই বই দুইটি-তে বলা হয়েছে শিব নামটি-র সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে শিবলিঙ্গের কথা। অন্যদিকে শঙ্কর নামটি হল ভগবানরূপে কল্পিত শিব-এর মানবরূপী পরিচয়। যার ফলে শিব পূজোয় যখন কল্পিত আচার পালন হয় সেখানে শিবকল্প ও শঙ্করকল্পের মধ্যে আচার-বিধির তফাৎ আসে। শিব ও শঙ্কর এই দুটি সবচেয়ে বেশি করে হিন্দু সমাজে ঘোরাফেরা করে। বিশেষ করে যারা ধর্মীয় ভাবাবেগকে দর্শন করে ঈশ্বর কল্পনায় মূর্ত হন তাদের কাছে শিব ও শঙ্কর নাম দুটি নিয়ে প্রবল ধাঁধা রয়ে গিয়েছে|শৈবাগম শাস্ত্র বলছে, শিব একটি পরমসত্তা। তিনি মহাজাগতিক চৈতন্য বা পরাচৈতন্যের প্রতিভূ। শিবলিঙ্গের অবয়ব সে সত্তা-কে স্মরণ করে। অন্যদিকে শঙ্কর হল শিবের একটি মানবায়িত রূপ। সেইসঙ্গে তিনি সুক্ষ্মদেহ সম্পন্ন এক সত্তা। তিনি ধ্যানরূপেণ পূজিত হন।শঙ্করের মাথায় অর্ধচন্দ্র, কন্ঠে সর্পাহার এবং জটায় গঙ্গাকে ধারণ করেছেন। শঙ্করেরর মূর্তিকল্পে যে যে বিষয়গুলির উপরে নজর দিতে হয় সেগুলি হল অর্ধচন্দ্র, যা মাথার জটার মধ্যে থাকে। এর অর্থ হল জ্ঞানের প্রতীক। হাতে থাকে ডমরু। এর অর্থ হল অদ্বৈত। গলায় থাকে সাপের কুন্ডল। এর মানে এটি হল কুলকুন্ডলিনীর প্রতীক। ত্রিশূল কখনও ত্রিগুণ, কখনও ত্রিকাল, কখনও বা সৃষ্টি-স্থিতি-লয়ের যে তিন তত্ত্ব আছে তাকে ব্যাখ্যা করে। গঙ্গা বিশুদ্ধতার প্রতীক। যা বিশুদ্ধ জ্ঞানকে সংযোগ করে। তৃতীয় নয়ন মানে হল ত্রিকাল দর্শন।শিব লিঙ্গ অর্থাৎ শক্তির আধার বা অফুরন্ত শক্তির প্রতীক রূপে পূজিত হন|দুই পুরাণ গ্রন্থে এমন কাহিনিও রয়েছে যেখানে বলা হয়েছে শিব ব্রক্ষ্মার মাধ্যমে সত্যযুগের সৃষ্টি করেছিলেন। এবং শঙ্কর-কে তিনি মানবরূপে নিয়ে এসেছিলেন কলিযুগে যাতে তিনি সৃষ্টি-কে সংহার করতে পারেন। সংক্ষেপে শিব হল দৈব্যভাবের প্রতীক। আর শঙ্কর মানে তার বিমূর্ত রূপকেই বোঝায়|গোটা শ্রাবন মাস জুড়েই চলবে শিব কথা|পড়তে থাকুন|সঙ্গে থাকুন|যারা গ্রহ দোষ খণ্ডন বা ভাগ্য বিচার অথবা প্রতিকার গ্রহণের জন্যে কথা বলতে চান উল্লেখিত নাম্বারে যোগাযোগ করুন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

নাগপঞ্চমীর আধ্যাত্মিক গুরুত্ব

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
আজ নাগ পঞ্চমী|মহাভারত থেকে জানা যায়, কুরু বংশীয় রাজা পরিক্ষিৎ তক্ষক নাগের আঘাতে মারা গেলে তাঁর পুত্র জন্মেজয় পৃথিবী সর্পশূন্য করবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেন। তিনি এক সর্পযজ্ঞ শুরু করেন, যেখানে মন্ত্রোচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে কোটি কোটি সাপ যজ্ঞানলে পড়ে মারা যেতে থাকে। এই সময়ে জরৎকারু মুনির পুত্র আস্তিক এই নিষ্ঠুর যজ্ঞ বন্ধ করতে জন্মেজয়ের কাছে পৌঁছান এবং তাঁরই হস্তক্ষেপে জন্মেজয় এই ভয়ঙ্কর কর্ম থেকে নিরস্ত হন। লৌকিক বিশ্বাস মতে, জরৎকারুর স্ত্রী মা মনসা। যে দিনটিতে সর্পযজ্ঞ বন্ধ হয়, সেই দিনটি ছিল শ্রাবণের শুক্লপঞ্চমী। সেই থেকেই এই পূজার প্রচলন|আজ বাংলা তথা সারা দেশে পালন হচ্ছে নাগ পঞ্চমী| হিন্দু ধর্মে অত্যন্ত প্রভাবশালী ও তাৎপর্য পূর্ণ একটি প্রাণী হলো নাগ|শিবের কণ্ঠ থেকে বিষ্ণুর অনন্ত শয্যা, পুরান থেকে মহাকাব্য সব স্থানেই তাদের অবাধ বিচরন|এই নাগেদের শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রতিবছর শ্রাবণ মাসের শুক্ল পঞ্চমী তিথিতে নাগ পঞ্চমী পালিত হয় পুরাণ মতে, নাগ লোক বা পাতাল থেকে সর্পকুল এদিন মর্তের মানুষকে আশীর্বাদ করেন| গ্রাম বাংলায় নাগ পঞ্চমী মূলত মনসা পুজো হিসেবে পালিত হয় যিনি একাধারে পৌরাণিক এবং লৌকিক দেবী|মা মনসা হিন্দুধর্মের লৌকিক সর্পদেবী। মধ্যযুগের লোককাহিনীবিষয়ক মনসামঙ্গল কাব্যের প্রধান চরিত্র। সর্পদেবী হিসেবে মনসার প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় হিন্দু ধর্মগ্রন্থ অথর্ববেদে। পুরাণে তাঁকে ঋষি কাশ্যপ ও নাগ-জননী কদ্রুর কন্যা বলা হয়েছে|আবার কিছু শাস্ত্রে তাকে শিবের কন্যা হিসেবেও দেখানো হয়েছে| হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী শিব, বিষ্ণু, কার্তিক, গনেশ সহ অসংখ্য দেব দেবীরা এই বিশেষ দিনে নাগেদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন ও নাগ কুল কে নিজেদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং যে সকল পূণ্যার্থীরা এই পূজা করে থাকে তাদের মনস্কামনা পূর্ণ হয় এই নাগ পঞ্চমীর পূজার মাধ্যমে৷ নাগ পঞ্চমীতে মোট বারোটি নাগের পূজা হয়ে৷ অনন্ত, বাসুকি, শেষ, পদ্ম, কামবালা, কারকটাকা, অশ্বতারা, ধৃতরাষ্ট্র, শঙ্খ, কালিয়া, তক্ষক ও পিংগালা নাগ বিশিষ্ট পূজা করে ভক্তগন তাদের মনস্কামনা পূর্ণলাভ করে থাকে এই তিথিতে৷ সাধারণত ঝর্ণার জল, দুধ, হলুদ, ফুল এবং সিঁদুরের দিয়ে এই পূজা সম্পন্ন হয়ে থাকে৷ বর্তমানে মহারাষ্ট্র,গুজরীটেও এই পূজার চল বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে৷ জ্যোতিষ শাস্ত্রেও নাগ পঞ্চমীর গুরুত্ব আছে, কথিত আছে এই দিনে নাগ দেবের পুজো করলে রাশিফলে রাহু ও কেতু সম্পর্কিত ত্রুটিগুলি দূর হয়। সাপের ভয় এবং সাপের কামড় থেকে মুক্তি পেতে এবং নাগ পঞ্চমীতে কালসার্প দোষ খণ্ডনের জন্যে বিশেষ পুজোও করা হয়। এই দিনে মা মণসার পুজো করে পরিবারের রক্ষা করার জন্য আরাধনা করা হয়। শাস্ত্র মতে পঞ্চমীর উপাসনা নিষ্ঠার সঙ্গে যারা পালন করেন নাগদেব গোপন তাঁর সম্পদ রক্ষা করেন। এই কারণে নাগপঞ্চমীর দিন পুজো করলে জীবনে ধন-সম্পদ ও সমৃদ্ধি লাভ করে। এই দিনে পুজো করলে মনের ইচ্ছে পূরণ হয়। যে ব্যক্তির রাশিতে কালসর্প দোষ রয়েছে, তিনি এই দোষের কু প্রভাব এড়াতে নাগ পঞ্চমী উপবাস পালন করতে পারে| ভক্তি ও নিষ্ঠা সহকারে নাগ পঞ্চমী পালন করুন|আপাতত আবার নিয়মিত কলকাতা ও কলকাতার বাইরে পেশাগত জ্যোতিষ চর্চা শুরু করেছি যারা কোনো সমস্যা নিয়ে সাক্ষাৎ করতে চান উল্লেখিত নাম্বারে ফোন করে কথা বলতে পারেন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

বাংলার শিব: মহাকাল শিব মন্দির

চলছে শ্রাবন মাস এই মাসেই সমুদ্র মন্থন থেকে উঠে আসা বিষ পান করে নীল কণ্ঠ হয়ে ছিলেন মহাদেব|এই শ্রাবন মাসেই তিনি সস্ত্রীক মর্তের অধিবাসীদের দুক্ষ কষ্ট দূর করতে আসেন বলে বিশ্বাস করা হয়|গোটা শ্রাবন মাস জুড়েই দেবাদিদেব মহাদেব কে নিয়ে লিখবো পাশাপাশি থাকবেন ইউটিউবের বিশেষ অনুষ্ঠান|আজকের পর্বে বাংলার এক জনপ্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ণ শিব মন্দিরের কথা আপনাদের জানাবো| উত্তর বঙ্গের দার্জিলিং অনেকেরই প্ৰিয় ভ্রমণ স্থান|এই দার্জিলিং এর চৌরাস্তা থেকে কয়েক মিনিটের হাঁটা পথে পৌঁছানো যায় মহাকাল মন্দিরে যা বাংলার প্রাচীনতম শিব মন্দির গুলির অন্যতম| দার্জিলিং স্থানটির সাথে আধ্যাত্মিকতার গভীর সম্পর্ক রয়েছে|শোনা যায় ঐ জায়গাটি কোনো এক সময় সিকিমের রাজারদের অধীনে থাকার সময় সেখানে বৌদ্ধদের আশ্রম ছিল। বৌদ্ধ সন্যাসীরা এই জায়গার নামকরন করেছেন ‘দোর্জে’ ও ‘লিং’ দুটি শব্দ থেকে যার অর্থ বজ্রের দেশ| মহাকাল শিব মন্দিরের মূল মন্দিরের সামনে প্রবেশ দ্বারের কাছেই রয়েছে শিবের বাহন নন্দীর মূর্তি|এই মন্দিরের বিশেষত্ব হলো এখানে হিন্দু ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে এক অপূর্ব সহাবস্থান চোখে পড়ে| গোলাকার মন্দিরের মাঝখানে শিবলিঙ্গ ও বুদ্ধ মূর্তির সাথে হিন্দুদের ব্রাহ্মন পুরোহিত ও বৌদ্ধদের সন্যাসীকে একসাথে নিজ নিজ আরাধ্য ভগবানের অর্চনা করতে দেখা যায়|হিন্দু ও বৌদ্ধ উভয় ধর্মের মানুষের কাছেই স্থানটি অত্যন্ত পবিত্র এবং আস্থার| আগামী দিনে দার্জিলিং ভ্রমন কালে পাহাড় দর্শনের পাশাপাশি অবশ্যই মহাকাল মন্দির দর্শক করুন|আগামী পর্বে অন্য কোনো শিব মন্দিরের কথা নিয়ে ফিরে আসবো|এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে যারা জ্যোতিষ পরামর্শ বা গ্রহ দোষ খণ্ডন করতে চান তারা যোগাযোগ করতে পারেন উল্লেখিত নাম্বারে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

গুরু কথা – শ্রী শ্রী ভবা পাগলা

আজ গুরু পূর্ণিমার এই পবিত্র তিথিতে বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী গুরু ভবা পাগলার কথা লিখবো|ভবা পাগলা ছিলেন একাধারে উচ্ছমানের সাধক, আধ্যাত্মিক গুরু এবং সংগীত স্রষ্টা|আজকের গুরু কথার এই পর্বে পর্বে এই মহান গুরুর কথা আপনাদের শোনাবো, জানাবো তার জীবন,তার সাধনা ও তার সাথে জড়িত কিছু অলৌকিক ঘটনা|

ভবা পাগলার জন্ম আনুমানিক ১৮৯৭ খৃস্টাব্দে বাংলাদেশে, তার পিতার নাম গজেন্দ্র কুমার সাহা, পারিবারিক সূত্রেই ভবা ছিলেন কালী সাধক|পরবর্তীতে দেশ ভাগ হলে ভবাকে চলে আসতে হয় ভারতে, সেখানেও তার সঙ্গে ছিলো একটি কালী মূর্তি,থাকতে শুরু করেন শোভাবাজার অঞ্চলে এক ভক্তের গৃহে, সেখান থেকেই ক্রমশঃ ছড়িয়ে পড়তে থাকে তার গান ও অলৌকিক কীর্তি|

ভারতের সাধকদের মধ্যে যারা সঙ্গীত ও আধ্যাত্মিকতা এক সূত্রে গেথে ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ভবেন্দ্র মোহন সাহা ওরফে ভবাপাগলা, তিনি ছিলেন পাগল সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা এবং বহু মানুষ তার আদর্শে দীক্ষিত হয়ে তার চরনে নিজেদের জীবন সমর্পন করেছেন|

শৈশব থেকেই ভবা ছিলেন ভাবুক প্রকৃতির ও সর্বদা কালী সাধনায় মগ্ন,প্রথা গত শিক্ষা খুব বেশি না থাকলেও আধ্যাত্মিক ভাবে অগাধ জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন ভবা পাগলা|

হালকা পাতলা গড়ন, গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ, মাথায় ঝাঁকড়া চুল, চিবুকে এক গোছা দাড়ি, এই অতি সাধারণ চেহারার ভবাপাগলার মধ্যে ছিলো অসীম আধ্যাত্মিক জ্ঞান ও বিশাল অলৌকিক ক্ষমতা, যা বার বার ধরা দিয়েছে তার নানান কর্ম কাণ্ডে, শোনা যায় একবার এক দুরারোগ্য ব্যাধি তে আক্রান্ত ব্যাক্তি কে অলৌকিক ভাবে সুস্থ করে দিয়েছিলেন ভবাপাগলা|

ভবা পাগলার সহজাত প্রতিভা ছিলো গান লেখার ও সুর করার, প্রায় ছেয়াশি হাজার সংগীত রচনা করেছিলেন ও তাতে সুর দিয়েছিলেন,ভবা পাগলা, শ্যামা সংগীত বা ভক্তি গীতিই ছিলো তার সংগীতের প্রধান ভিত্তি|কালী সাধনার মাধ্যম হিসেবে সংগীত কে তিনি সফল ভাবে ব্যবহার করে ছিলেন এবং হয়ে উঠেছিলেন একজন সিদ্ধ পুরুষ|তার গান ” বারে বারে আর আসা হবেনা ” আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে|

নিজের জীবদ্দশায় প্রায় সাতটি কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি|এই মহান সাধক ১৯৮৪ খৃস্টাব্দে দেহ ত্যাগ করেন, আজও তিনি স্মরণীয় তার অলৌকিক কীর্তি ও তার গানের জন্যে|

এই মহান কালী সাধককে আমার শ্রদ্ধা ও প্রনাম জানিয়ে শেষ করছি আজকের লেখা|আজ সারাদিন হৃদয়েশ্বরী সর্ব মঙ্গলা মায়ের মন্দিরের গুরু পূর্ণিমা উপলক্ষে বিশেষ পুজো হোম যজ্ঞ ও গ্রহ দোষ খণ্ডন অনুষ্ঠান অনুষ্টিত হবে আপনারা সোশ্যাল মিডিয়ায় সমস্ত আধ্যাত্মিক কর্ম কান্ড প্রত্যক্ষ করতে পারবেন|সঙ্গে থাকুন আর গ্রহ গত সমস্যানিয়ে আমার কাছে আসতে চাইলে উল্লেখিত নাম্বারে যোগাযোগ করে নেবেন|গুরু পূর্ণিমার শুভেচ্ছা রইলো সবার জন্যে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ| 

গুরু কথা – ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব

গুরু পূর্ণিমা উপলক্ষে গুরুদের নিয়ে যে আলোচনা শুরু করেছি তা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে যদি প্রেমের ঠাকুর ও বাংলার আধ্যাত্মিক জগতের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র ঠাকুর রামকৃষ্ণদেব প্রসঙ্গে না বলি|গুরু পূর্ণিমার ঠিক আগে আজ লিখবো এই মহান গুরুর কথা|

রামকৃষ্ণ পরমহংস সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর “পরমহংস রামকৃষ্ণদেবের প্রতি” কবিতাটি লিখেছিলেন:

বহু সাধকের বহু সাধনার ধারা,
ধেয়ানে তোমার মিলিত হয়েছে তারা;
তোমার জীবনে অসীমের লীলাপথে
নূতন তীর্থ রূপ নিল এ জগতে;
দেশ বিদেশের প্রণাম আনিল টানি
সেথায় আমার প্রণতি দিলাম আনি।

কবি গুরুর এই কবিতা থেকে আধ্যাত্বিক জগতে ঠাকুর রামকৃষ্ণের গুরুত্ব খুব ভালো করেই বোঝা যায়|তবু রামকৃষ্ণ স্মরণে কয়েকটি কথা লিখে দেয়া ভালো|১৮৩৬ সালে একটি সাধারণ বাঙালি গ্রামীণ পরিবারে জন্মগ্রহণকারী রামকৃষ্ণ ছিলেন একজন সাধারণ যোগসাধক, দার্শনিক ও ধর্মগুরু। তিনি উনিশ শতকের এমন এক ব্যক্তিত্ব যিনি বাঙালি নবজাগরণে এক পঞ্চমুখ ভূমিকা রেখেছিলেন। তার গর্ভে থাকাকালীন তার বাবা-মা আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুভব করেছিলেন এবং যেমনটি প্রত্যাশা করা হয়েছিল, তিনি শৈশবকালেই তিনি রহস্যময় ও অলৌকিক শক্তির অভিজ্ঞতা অর্জন শুরু করেছিলেন। তিনি বাংলায় হিন্দু ধর্মের পুনর্জাগরণের ক্ষেত্রে প্রধান ব্যক্তি ছিলেন|গুরু শিষ্য পরম্পরার মাধ্যমে ও বিবেকানন্দের নেতৃত্বে তৎকালীন বাংলার শিক্ষিত যুব সমাজের একটি বড়ো অংশ যুক্ত হয় রামকৃষ্ণর আধ্যাত্মিক কর্ম কাণ্ডের সাথে|

শ্রী রামকৃষ্ণ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এসেছিলেন তার লীলা করতে, পরমহংসদেব যখন জগৎ সমক্ষে উদয় হন, তখন ঘোরতর ধর্মবিপ্লব চলছে চারপাশে, “জড়বাদী মুক্তকণ্ঠে বলছেন – “জড় হইতেই সমস্ত,জড়ের সংযোগেই আত্মা, জড় ব্যতীত আর কিছু নাই “
ব্রাহ্ম সমাজ বলছে – “বেদ, বাইবেল, কোরান প্রভৃতি কিছুই মানিবার আবশ্যক নাই, কোনটিই অভ্রান্ত নয়, কোনটিই ঈশ্বর বাক্য নয়”
এমন সময় পরমহংসদেব প্রচার করলেন “কোন ধর্ম কোন ধর্মের বিরোধী নয়। বাহ্য দৃষ্টিতেই বিরোধ কিন্তু সকল ধর্মই মূলত এক কথা বলে
আরো সহজ করে বললেন ” যত মত ততো পথ “

কথিত আছে, ঠাকুর যখন জন্মগ্রহন করেছিলেন, কামারপুকুর বাটিতে তাদের শিব মন্দির চন্দ্রালোতে আলোকিত হয়ে উঠেছিল। রামকৃষ্ণদেবের গড়নে ছিল দৈবিকভাব|
সেটাই স্বাভাবিক, তিনি কোনো স্বাভাবিক মানুষ ছিলেন না, একাধারে সাধক ও দার্শনিক এই মানুষ টাকে হয়তো এখনো বাঙালি ঠিক চিনে উঠতে পারেনি, তার অবতার তত্ত্ব নিয়েও দ্বিমত আছে, তবে, সাধনার যে উচ্চস্তরে তিনি গিয়েছিলেন তা, কল্পনা করা কঠিন|

১৮৬১ সাল থেকে ১৮৬৩ সাল পর্যন্ত মহিলা সাধু এবং ভৈরবী ব্রাহ্মণীর কাছ থেকে তন্ত্র পদ্ধতি শিখেছিলেন। রামকৃষ্ণ তন্ত্রের ৬৪ টি সাধনা পূরণ করেছিল|১৮৬৪ সালে তোতাপুরী নামক জনৈক পরিব্রাজক বৈদান্তিক সন্ন্যাসীর কাছ থেকে রামকৃষ্ণ সন্ন্যাস গ্রহণ করেন|পরবর্তীতে বিদায় বেলায় তোতাপুরী আবার তার এই শিষ্যের কাছে দীক্ষা গ্রহন করেন|গুরু শিষ্য পরম্পরার এ এক বিরল ঘটনা|

তিনি শিব জ্ঞানে জীব সেবার আদর্শে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন তার ভাব শিষ্য নরেন কে, সেই আদর্শ আজও এগিয়ে নিয়ে চলেছে রামকৃষ্ণ মঠ,গুরু পূর্ণিমা তিথিকে মহা সমারোহে উদযাপন করা হয় মঠের প্রতিটি শাখায়,গুরু পূর্ণিমার প্রাক্কালে প্রনাম ও শ্রদ্ধা জানাই এই মহান সাধকে, চরনে রইলো শত কোটি প্রনাম|এবার আসুন জেনে নিই ঠাকুর রামকৃষ্ণর জন্মছক কি বলছে|

বেশ অল্প সময়ের মধ্যে অর্থাৎ ১৮৭৯ থেকে ১৮৮৫ সালের মধ্যবর্তী সময়ে নিজের প্রধান শিষ্যদের সঙ্গে রামকৃষ্ণ পরমহংসের সাক্ষাৎ হয়। এঁদের অনেকেই ছিলেন উচ্চ শিক্ষিত। কেউ আবার ছিলেন একান্তই নাস্তিক|নিছক কৌতূহলের বশেই তাঁরা শ্রীরামকৃষ্ণকে দেখতে এসেছিলেন। কিন্তু শ্রীরামকৃষ্ণের উপদেশ এঁদের সকলের মধ্যেই গভীর প্রভাব বিস্তার করে এবং এঁরা সকলেও তাঁর অনুরাগী ভক্তে পরিণত হন। প্রবল যুক্তিবাদী সুরেন্দ্রনাথ মিত্র তাঁকে দেখতে গিয়েছিলেন,তাকে সমালোচনা করার জন্যে|কিন্তু শেষপর্যন্ত তিনি শ্রীরামকৃষ্ণের একনিষ্ঠ ভক্তে পরিণত হন। তাঁর অননুকরণীয় ধর্মপ্রচারের ভঙ্গি অনেক সংশয়বাদী ব্যক্তির মনেও দৃঢ় প্রত্যয়ের উন্মেষ ঘটাতে সক্ষম হয়েছিল|

গুরু পূর্ণিমার এই পূর্ণ তিথিতে এই মহান গুরু ও সাধকের চরনে প্রনাম ও শ্রদ্ধা রইলো|পড়তে থাকুন|সঙ্গে থাকুন|যারা এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ভাগ্যবিচার বা শাস্ত্র মতে গ্রহ দোষ খণ্ডন করাতে চান তাদের জন্যে আগামী কাল গুরু পূর্ণিমার দিন আপনাদের মা হৃদয়েশ্বরী সর্বমঙ্গলা মন্দিরে বিশেষ হোম যজ্ঞ ও পুজোর আয়োজন হয়েছে|উল্লেখিত নাম্বারে ফোন করে কথা বলে নেবেন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ| 

গুরু কথা – শ্রী শ্রী রাম ঠাকুর

গুরু পূর্ণিমা উপলক্ষে আমার এই ধারাবাহিক লেখনী প্রায় রোজই নিয়ম করে আপনাদের সামনে আনছি|প্রতিটা পর্ব শেয়ার হচ্ছে অসংখ্য গ্রূপে কয়েক হাজার মানুষ তা পড়ছেন, অনেকেই পছন্দ করছেন এবং কেউ কেউ নিজের প্রতিক্রিয়াও জানাচ্ছেন|এই এতো সব কিছুর পেছনে প্রকৃত উদ্দেশ্য কিন্তু একটাই, আমাদের দেশের প্রাচীন গুরু শিষ্য পরম্পরা কে সহজ ভাবে তুলে ধরে তার গুরুত্ব নিরুপন করা|আপনাদের আশীর্বাদ ও ভালো বাসায় এই প্রচেষ্টা নিশ্চই সফল হবে এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস|

সহজ ভাবে বলতে গেলে গুরুতত্ত্ব হলো গুরু-বিষয়ক তত্ত্ব, গুরুর সম্যক রূপের ব্যাখ্যা, গুরুর স্বরূপ তত্ত্ব|আর গুরুর স্বরূপ সম্পর্কে বলা যায় তিনি পথপ্রদর্শক কখনো আবার তিনি ইহজগতের প্রধান ভরসাস্থল আবার গুরু কখনো স্বয়ং পরব্রহ্ম পরমাত্মা|তিনি শিষ্যের ভগবান-স্বরূপ| গুরুই হলেন স্বয়ং ত্রাতা শিষ্যের সব ভালোমন্দের দায়িত্ব গুরুর নিজের|এই সকল ভূমিকা যিনি দক্ষতার সঙ্গে পালন করবেন তিনি হবেন প্রকৃত গুরু|

এমনই এক প্রকৃত গুরুর কথা আজ বলবো তিনি শ্রী শ্রী রাম ঠাকুর যার সন্যাস জীবনের পূর্বের নাম ছিলো রাম চন্দ্র চক্রবর্তী|১৮৬০সালে বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলয় শ্রীঁরাধামাধব চক্রবর্তী ও শ্রীমতি কমলাদেবীর সন্তান হিসাবে শ্রীশ্রী রামঠাকুর জন্মগ্রহণ করেন|রাম ঠাকুরের আরেক যমজ ভাই ছিলো তার নাম ছিলো লক্ষণ|তাদের পারিবারিক গুরু ছিলেন শ্রীঁমৃত্যুঞ্জয় ন্যায়পঞ্চানন|

বালক রামচন্দ্র শৈশব থেকেই আধ্যাত্মিক চেতনার অধিকারী ছিলেন|শাস্ত্রে তার খুব আগ্রহ ছিলো মাঝে মাঝেই ঈশ্বর চিন্তা করে তিনি ভাব তন্ময় হয়ে যেতেন |ঈশ্বরে কে কেন্দ্র করে নানা আধ্যাত্মিক প্রশ্ন তার মনে ঘুরপাক খেতো এই ঈশ্বরের খোঁজেই ১৮৭২ সালে সকলের অজ্ঞাতে অজানাকে জানার লক্ষ্যে গৃহত্যাগী হন|পরে পৌঁছান পৌঁছালেন আসামের শ্রীশ্রী কামাক্ষ্যাদেবীর মন্দিরে এবং এক অক্ষয় তৃতীয়ার দিন শ্রীশ্রী রামঠাকুর দেখেন জটাধারী, দীর্ঘাঙ্গী এক জ্যোতির্ময় মহাপুরুষ সামনে দাঁড়িয়ে|গুরু হিসাবে তিনি সেই দিব্য পুরুষ কে গ্রহন করলেন শুরু হলো তার সাধনা ও আধ্যাত্মিক যাত্রা|

কঠিন সাধনায় একসময় তিনি হয়ে উঠলেন অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন রাম ঠাকুর অষ্টসিদ্ধি লাভ করলেন তিনি |এরপর গুরুর এদেশে গৃহে ফিরে মাতৃ সেবা কর্ম জীবনে কিছুকাল নিজেকে নিয়োজিত করলেন|এসবের মধ্যে থেকেও তার আধ্যাত্মিক শক্তি ও জ্ঞান গোপন রইলো না বেশি দিন|পরবর্তীতে নিজেকে পুরাপুরি সপেঁ দেন জগৎ কল্যানে ও মানব সেবায়|তার কাছে, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, শুচি, অশুচির কোনও ভেদ ছিল না|জীবনের দীর্ঘ সময় কঠিন যোগ সাধনায় মগ্ন থেকেও ভক্ত দের তিনি নিঃস্বার্থ ভাবে জীব সেবা করতে শিখিয়ে গেছেন|তার জীবন ও দর্শন তার অগণিত ভক্ত ও শিষ্য দের কাছে এক আদর্শ স্বরূপ|

শ্রীশ্রী রামঠাকুরের নির্দেশে বাংলাদেশের চট্টগ্রামে ১৯৩০ সালে কৈবল্যধাম আশ্রম এবং ১৯৪২ সালে কলকাতার যাদবপুরে কৈবল্যধাম আশ্রম তৈরি হয় যেগুলি তার ভক্ত ও শিষ্য দের কাছে আজ তীৰ্থ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে|এছাড়াও ১৯৪৩ সালে তার জন্মভিটা ডিঙ্গামানিক গ্রামে সত্যনারায়ণ সেবা মন্দির তৈরি হয় যা তার আদর্শ কে সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে চলছে|এই মহা মানব ও মহান গুরুর চরনে আমার শত প্রনাম|

আজকের পর্ব এখানেই শেষ করলাম, পরের পর্বে গুরুতত্ত্ব নিয়ে আরো কিছু কথা ও এক মহান গুরুর জীবন কাহিনী নিয়ে ফিরে আসবো|আপনাদের ভালো লাগলেই আমার এই পরিশ্রম সার্থক|আর আমার জ্যোতিষ ও তন্ত্র আপনাদের কাজে লাগলে তাতেই আমি ধন্য|গুরু পূর্ণিমার পবিত্র তিথিতে আপনাদের হৃদয়েশ্বরী সর্ব মঙ্গলা মায়ের মন্দিরে বিশেষ পুজো হোম যজ্ঞ অনুষ্ঠিত হবে ও শাস্ত্র মতে গ্রহ দোষ খণ্ডনের সকল ব্যবস্থা থাকবে আপনারা উল্লেখিত নাম্বারে যোগাযোগ করবেন যেকোনো প্রয়োজনে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|