ঐতিহাসিক মালদায় পন্ডিতজি

460

শীত জাঁকিয়ে পড়া মানেই ভ্রমণ প্ৰিয় বাঙালির সামনে বেড়ানোর হাতছানি|শীতের আমেজ গায়ে লাগিয়ে ঘুরে বেড়ানো বা সবাই মিলে দল বেঁধে পিকনিক, মজাই আলাদা|কাজের চাপে আলাদা করে বেড়ানোর সুযোগ খুব কমই আসে, তবে যখনই কলকাতার বাইরে চেম্বার করতে যাই তখনই অনেকটা রথ দেখা আর কলা বেচার ঢঙে একটু ঘুরে নিই, অজানা কে জানার চেষ্টা করি , চেষ্টা করি নতুন কিছু অভিজ্ঞতা নিজের ঝুলিতে ভরে নেয়ার|ঘেটে দেখি সেই স্থানের ইতিহাস এবং দর্শনীয় স্থান গুলির সাথে জড়িয়ে থাকা নানান গল্প|আর সেই অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিই আপনাদের সাথে|এবার ডেস্টিনেশন মালদা|কাল থাকছি মালদা চেম্বারে|প্রথমেই বলি গৌড়ের পথেই রয়েছে একটি ছোট্ট গ্রাম, রামকেলি, বাংলার মহান ধর্ম সংস্কারক শ্রী চৈতন্যের অস্থায়ী বাড়ি হিসাবে বিখ্যাত এই স্থান|এখানে তিনি বৃন্দাবনে যাওয়ার পথে কিছু দিন অবস্থান করেছিলেন।রয়েছে তার স্মৃতি বিজড়িত তাল গাছ ও কলা গাছ|রয়েছে একটি ছোট্ট মন্দির এবং মহাপ্রভুর পদচিহ্ন|মাতৃ সাধক ও মা সর্বমঙ্গলার উপাসক হিসেবে কালী ক্ষেত্র আমায় বরাবরই একটু বেশি আকর্ষণ করে|মালদা ভ্রমণ ও ব্যাতিক্রম নয়|মালদায় এলে হান্টা কালী বাড়ি ও জহুরা কালী বাড়ি যেতে আমার কখনো ভুল হয়না|মালদায় ইংরেজবাজার থানা এলাকায় একটি প্রাচীন আমবাগানের মধ্যে রয়েছে এই প্রাচীন জহুরা কালীমন্দির|দেবীর কেনো এই বিচিত্র নাম হলো সে নিয়েও আছে এক রহস্যময় তত্ব|শোনো যায় এক কালে এই অঞ্চলে ছিলো ঘন অরণ্য|ডাকাত রাই একপ্রকার শাসন করতো এই এলাকা এবং এই দেবী এক সময়ে ছিলেন ডাকাতদের আরাধ্যা। এখানে দেবী চণ্ডীর পুজো করে ডাকাতরা যেত ডাকাতি করতে। ডাকাতি করে প্রচুর ধনরত্ন আনত তারা, তারপর সেগুলোকে এখানেই মাটির তলায় রাখত। সেই ধনরত্নের ওপরই দেবীমূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয় যেহেতু ধনরত্নকে হিন্দিতে বলে ‘জওহর’। দেবীমূর্তির নিচে প্রচুর ধনরত্ন রাখা থাকত বলেই এখানে দেবী চণ্ডী ‘জহরা’ বা ‘জহুরা’ নামে বিখ্যাত|মালদায় রয়েছে আরেক প্রাচীন কালী মন্দির যা হান্তা কালী মন্দির নামে প্রসিদ্ধ|চৌত্রিশ নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া এই কালী মন্দির গোটা উত্তর বঙ্গ জুড়ে বেশ প্রসিদ্ধ|দেবী এখানে অত্যান্ত জাগ্রত তাই দূর দূর থেকে বহু মানুষ আসেন দেবীর দর্শন লাভ করতে এবং নিজের মনোস্কামনা জানাতে|বিশেষ বিশেষ তিথিতে ভিড় হয় চোখে পড়ার মতো|আজ গেছিলাম এই কালী মন্দিরে দেবীর দর্শন করে ধন্য হলাম|যদিও ভৌগোলিক ভাবে মালদায় প্রতিষ্ঠিত নয় তবু এখানে বলে রাখি মালদার অদূরেই রয়েছে বিখ্যাত বোল্লা কালী মন্দির|বহু কাল আগে স্বপ্নাদেশে পাওয়া একটি কালো পাথর খন্ডকে প্রথম মাতৃরূপে পুজো শুরু করেছিলেন স্থানীয় মানুষ পরে তৈরি হয় মন্দির|কথিত আছে একবার এই এলাকায় পরপর ডাকাতের অত্যাচার শুরু হয়, বোল্লাকালী তখন রুদ্রমূর্তি ধারণ করে বাসিন্দাদের রক্ষা করেন। এই অঞ্চলের ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থান গুলির মধ্যে এটিও নিঃসন্দেহে একটি|শুধু মন্দির বা তীর্থ স্থান নয়|প্রাচীন বাংলার বহু ঐতিহাসিক স্থাপত্য ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে সমৃদ্ধ এই মালদা জেলা|রয়েছে প্রাচীন গৌরের ধ্বংসাবশেষ, আদিনা মসজিদ, দাখিল দরজা, ফিরোজ মিনার, বড়ো সোনা মসজিদের মতো গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থান|ইতিহাস, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, এবং মালদার মানুষের আন্তরিক ও সুন্দর ব্যাবহার প্রতিবারই মুগ্ধ করে|এই শীতের মরসুমে দুরে কোথাও যাওয়ার সময় বা সুযোগ না পেলে ঘুরে আসতেই পারেন মালদা থেকে|নিরাশ হবেন না|কাল থাকছি মালদার হোটেল প্রতাপাদিত্যতে|উত্তর বঙ্গের বন্ধুরা চাইলে আসতেই পারেন|শুধু উল্লেখিত নাম্বারে আগে একবার যোগাযোগ করে নেবেন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|