Home Blog Page 26

শিব তীর্থ – রাঘবেশ্বর শিব মন্দিরের ইতিহাস

শিব তীর্থ – রাঘবেশ্বর শিব মন্দিরের ইতিহাস

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে রয়েছে অসংখ্য শিব মন্দির।

যেগুলির সাথে জড়িত আছে ইতিহাস আছে নানা গল্প এবং কিংবদন্তী। শিব রাত্রির আগে এমনই কিছু শিব মন্দির নিয়ে আলোচনা করবো। আজকের পর্বে কৃষ্ণ নগরের রাঘবেশ্বর শিব মন্দির।

 

নদিয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের  প্রপিতামহ ছিলেন রাজা  রাঘব  রায়। তার রাজত্বকালে তিনি

কৃষ্ণনগর  থেকে   শান্তিপুর  পর্যন্ত  একটি  রাস্তা  তৈরি  করেন  এবং  জনসাধারণের  জলকষ্ট  নিবারণের  এক  বিশাল  দিঘি  খনন  করেন।

দিঘি  বা  দীর্ঘিকা  থেকে  স্থানের  নাম  হয়  দীর্ঘিকানগর।  দিঘির  পূর্ব  দিকে  রাজা  রাঘব  একটি  সুন্দর  অট্টালিকা এবং একটি সুন্দর শিব মন্দির  নির্মাণ  করেন। রাজা রাঘবের নামে শিব মন্দিরের নাম হয় রাগবেশ্বর শিব মন্দির।

 

এই শিব মন্দির এবং দীঘিকে কেন্দ্র করেই এই অঞ্চলে গড়ে ওঠে জনবসতি। সেকালে বিভিন্ন জাতের মানুষের জন্য একাধিক ঘাটও নির্মিত হয়ে ছিলো। এই মন্দির থেকে কিছু দূরেই ছিলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দিদির বাড়ি। শোনা যায় একাধিক বার কবি গুরু এখানে এসেছেন।

 

রাঘবেশ্বর শিব মন্দির  নদিয়া  জেলার টেরাকোটা  মন্দিরগুলির  মধ্যে  অন্যতম।  মন্দিরে   ব্ল্যাক  বেসল্টের  তৈরী । মন্দিরটি  একটি  উঁচু  ভিত্তি  বেদির  উপর  স্থাপিত।  বাংলা  চারচালা  রীতিতে  তৈরী  মন্দিরটিতে  দক্ষিণ,  পূর্ব  ও  পশ্চিম  দিকে  মোট  তিনটি  দরজা।  দরজার  দুপাশে  দুটি  করে  ছোট  ছোট  থাম  এবং  একটি  করে  কারুকার্য  করা  খিলান। আজ অন্য ঐতিহাসিক নিদর্শন এবং মন্দির ও অট্টালিকা সবই ধ্বংস হয়েছে তবে রাঘবেশ্বর শিব আজও   নিত্য  পূজিত হন এবং জেলার অন্যতম প্রসিদ্ধ ও জাগ্রত শিব লিঙ্গ রূপে তার জনপ্রিয়তা আছে।

 

ফিরে আসবো আরো একটি শিব মন্দিরের ইতিহাস নিয়ে আগামী পর্বে। চলতে থাকবে

ধারাবাহিক শিব তীর্থ। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

 

শিব তীর্থ – সিদ্ধেশ্বর শিব

শিব তীর্থ – সিদ্ধেশ্বর শিব

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

শিব তীর্থের আজকের পর্বে আপনাদের স্বাগত।আজকের পর্বে আপনাদের বীরভূম জেলার মল্লারপুরে অবস্থিত মল্লারপুর বা সিদ্ধেশ্বর শিবমন্দিরের ইতিহাস এবং পৌরাণিক তাৎপর্য সম্পর্কে লিখবো।

 

এখানে বিরাজ করছে গুপ্ত অনাদি অখণ্ড শিবলিঙ্গ। প্রায় ৯৩০ বছর আগে ১২০২ খ্রিস্টাব্দে মল্লারপুরের রাজা ছিলেন মল্লেশ্বর। তিনি এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই শয়ম্ভু শিবই

নাকি তারাপীঠের দেবী তারার ভৈরব।

মহাভারতের পাণ্ডবজননী কুন্তী এখানেই মহাদেবের পূজা করেছেন। মহালিঙ্গেশ্বর তন্ত্র, যেখানে স্বয়ম্ভূ শিবমন্দিরের তালিকা আছে, সেখানেও সিদ্ধিনাথ নামে এখানকার ওঁ আকৃতির মহাদেবের উল্লেখ আছে। এই মন্দির এমন এক তীর্থ যেখানে পুরাণ ও ইতিহাস একসাথে মিশে গেছে।

 

এখানকার শিবলিঙ্গ গুপ্ত। আর, তার ওপরে রয়েছে ওঁ চিহ্ন। মল্লেশ্বর শিবমন্দিরের পাশের মন্দিরেই রয়েছেন দেবী মল্লেশ্বরী বা সিদ্ধেশ্বরী। এই মল্লেশ্বর শিব মন্দিরের পিছনে তান্ত্রিকাচার্য শ্রীকৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের জীবন্ত সমাধি বা ইচ্ছাসমাধির বেদী রয়েছে। এই কৃষ্ণানন্দই ছিলেন কালীসাধক রামপ্রসাদের গুরুদেব।তিনি

বৃহৎতন্ত্রসার গ্রন্থ রচনা করে প্রসিদ্ধ হয়ে ছিলেন।

 

এই মন্দিরের কারুকাজ এবং সৌন্দর্য এক কথায় অপূর্ব। শিব ভক্তদের বিশ্বাস এখানকার শিবলিঙ্গে সাধকদের সাধনার মাধ্যমে ওঁ চিহ্ন তৈরি হয়েছে। যে চিহ্নে রয়েছে মহাদেবের তিন নয়নও।এই মন্দির চত্বরে রয়েছে চারচালা রীতি মেনে স্থাপিত আরও কিছু মন্দির।

 

সিদ্ধেশ্বর মন্দির তৈরির পর থেকে সেবাইতরা বংশ পরস্পরায় এখানে পুজো করে আসছেন। অন্যান্য শিবলিঙ্গ মাটির ওপরে থাকে। এখানে শিবলিঙ্গের বেশিটাই রয়েছে মাটির নীচে। তাই একে গুপ্ত শিবলিঙ্গ বলা হয়। এখানে শিবকে মাটি খুঁড়ে পাওয়া গিয়েছে বা স্বয়ং প্রকট হয়েছেন দেবাদিদেব এই শিবলিঙ্গ আলাদা করে এনে প্রতিষ্ঠা করা হয়নি।এখানে শিব লিঙ্গের চার পাশে বিশেষ বিশেষ সময়ে জল লক্ষ করা যায়।শিবলিঙ্গকে ঘিরে যে জলধারা অবস্থান করছে তা আসলে গঙ্গা।শুধু জল নয় মাঝে মাঝে শিবের অনুচর নাগ দেবতার দর্শন ও পাওয়া যায়।

 

ফিরে আসবো শিব তীর্থ নিয়ে আগামী পর্বে। থাকবে শিব তত্ব এবং একটি প্রাচীন শিব মন্দির নিয়ে আলোচনা। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী তীর্থ – বোলতলার কালী পুজো

কালী তীর্থ – বোলতলার কালী পুজো

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

কাটোয়ার মুস্থূলী গ্রামে প্রায় তিনশো বছর ধরে চলে আসছে বোলতলা কালীর পুজো। কথিত আছে বহু বছর আগে এক সাধক এলাকায় একটি বকুল গাছের নীচে এই কালীর পুজো শুরু করেন। আজকের পর্বে এই প্রাচীন কালী পুজো নিয়ে আলোচনা করবো।

 

বকুলতলার কালী থেকেই বোলতলা কালী নামটি এসেছে বলে মনে করা হয়। তবে দেবী এখানে এলাকা বাসীর ঘরের মেয়ে এবং ‘মেজঠাকরুন’ নামেই পরিচিত দেবী।

 

যিনি পুজো শুরু করেছিলেন সেই মাতৃ সাধকের মৃত্যুর পর তাঁর ইচ্ছানুযায়ী মন্দিরের কাছেই সমাধিস্থ করা হয়েছে তাঁকে।সাধকের মৃত্যুর পর প্রথমে এলাকার জমিদার, পরে এলাকারই এক বাসিন্দাকে পুজোর দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে বর্তমানে গ্রামবাসীরা এই পুজো চালিয়ে যাচ্ছেন।

 

পুজো শুরু হয় রাত বারোটার পর। প্রতিমা রঙ করা হয় পুজোর দিন রাতেই। পুজো হয় তন্ত্রমতে। পুজোয় পশু বলিও হয়।পুজো উপলক্ষে সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন স্থানীয় মহিলারা

 

দেবীর বিসর্জন এই পুজোর অন্যতম মুখ্য আকর্ষণ।বিসর্জনের সময় প্রতিমা মন্দির থেকে বার করার পরই গ্রামের সমস্ত আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়। দেবীর ভক্তদের হাতে হাতে জ্বলে ওঠে মশাল। কাঁধে তুলে নেওয়া হয় দেবীকে। তার পরই দেবীকে কাঁধে নিয়ে শুরু হয় দৌড়। দেবীর সঙ্গে ছুটতে থাকে সারি সারি মশালের আলো। সেই সঙ্গে চলে দেবীর জয়ধ্বনি। হেঁটে হেঁটে নিয়ে যাওয়া যায় না দেবীকে, কাঁধে প্রতিমা নিয়ে ছোটাই এই পুজোর নিয়ম। প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হয় পাশের গ্রাম আমডাঙায়। সেখানে আছেন বুড়ো শিব। বুড়ো শিবের সঙ্গে দেখা করেন দেবী। দেখা করার পর্ব মিটলে আবার একই ভাবে দৌড়ে গ্রামে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয় দেবীকে। পরে মন্দিরের পাশের একটি পুকুরে বিসর্জন করা হয় প্রতিমা।

 

আবার পরের পর্বে আরেকটি প্রাচীন কালী

পুজোর বর্ণনা এবং তার ইতিহাস নিয়ে ফিরে আসবো। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

দেবী সরস্বতী এবং ব্যাস দেব

  • দেবী সরস্বতী এবং ব্যাস দেব

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

সনাতন ধর্মে শাস্ত্র রচনার ক্ষেত্রে ঋষি ব্যাস দেবের গুরুত্ব অপরিসীম। তার কল্যাণেই আমরা মহাকাব্য এবং পুরান পেয়েছি। অসংখ্য শাস্ত্র তিনি সৃষ্টি করেছেন। এসবই হয়েছে দেবী সরস্বতীর আশীর্বাদে।ব্যাস দেব ছিলেন বাগদেবীর পরম ভক্ত।আজকের পর্ব ব্যাস দেব এবং তার সরস্বতী সাধনা নিয়ে।

 

সরস্বতী পুজোর আগে কেনো কুল খেতে নেই, বিশেষত বিদ্যার্থীদের তার উত্তর ও রয়েছে পুরানে। এবং এখানেও কেন্দ্রীয় চরিত্রে সেই ব্যাস দেব।

পুরাণ মতে, দেবী সরস্বতীকে তুষ্ট করতে একদিন বদ্রিকাশ্রমে তপস্যা করার সিদ্ধান্ত নেন মহামুনি ব্যাসদেব। তপস্যা শুরুর আগেই দেবী সরস্বতী ব্যাসদেবকে একটি শর্ত দেন তাঁকে। একটি কুল বীজ রেখে তিনি বলেন, এই বীজ থেকে গাছ হয়ে কুল হবে। সেই কুল যেদিন ব্যাসদেবের মাথায় পড়বে সেদিন দেবী সন্তুষ্ট হবেন ব্যাসদেবের তপস্যা সম্পূর্ণ হবে।

 

শর্ত মেনে নিয়ে তপস্যা শুরু করেন ব্যাসদেব। দীর্ঘ সময় কেটে গেলো সেই বীজ থেকে গাছ হল, গাছে কুল ধরল এবং কুল পেকে তা ব্যাসদেবের মাথাতেও পড়ল। ঘটনাচক্রে সেই দিনটা ছিল পঞ্চমী, এরপর সরস্বতীর অর্চনায় কুল ফল নিবেদন করেন ব্যাসদেব । সেই থেকেই বিদ্যার দেবীর প্রসাদ হিসেবেই মরসুমের প্রথম কুল খাই আমরা। এবং দেবীর পুজোর আগে কারোর কুল খাওয়া উচিত নয় বিশেষ করে ছাত্র ছাত্রীদের কারন সরস্বতীর কৃপা তাদের সবথেকে বেশি প্রয়োজ।

 

দেশের প্রচিনতম সরস্বতী মন্দিরের সঙ্গেও ব্যাস দেবের সম্পর্ক রয়েছে।মন্দির টি অন্ধ্র প্রদেশের আদিলাবাদ জেলায় অবস্থিত। এটি বাসর বা বসরা নামেও পরিচিত। মায়ের এই মন্দিরটি গোদাবরী নদীর তীরে অবস্থিত। কিছু ধর্মীয় কিংবদন্তি অনুসারে, মহাভারতের যুদ্ধের পর, ঋষি ব্যাস শান্তির সন্ধানে ঘুরে বেড়াতে গিয়ে গোদাবরী নদীর তীরে কুমারচল পাহাড়ে পৌঁছেছিলেন। এখানে তিনি দেবীর পুজো করতেন। তার পুজোয় সন্তুষ্ট হয়ে দেবী তার সামনে আবির্ভূত হয়ে ছিলেন এবং তাকে আশীর্বাদ করেছিলেন।

 

তিথি অনুসারে আজও সরস্বতী পুজো। আরো একবার আপনাদের সবাইকে জানাই সরস্বতী পুজোর শুভেচ্ছা। ফিরে আসবো আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

দেবী সরস্বতীর পৌরাণিক ব্যাখ্যা

দেবী সরস্বতীর পৌরাণিক ব্যাখ্যা

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আজ সরস্বতী পুজো, আসুন আজ জেনে নিই দেবী সরস্বতী সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পৌরাণিক তথ্য এবং তার শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা।

 

সরস্বতী শব্দের দুই অর্থ – একটি ত্রিলোক্য ব্যাপিনী সূর্যাগ্নি, অন্যটি নদী, শব্দের অর্থ অনুসারে সর শব্দের অর্থ জল অর্থাৎ যাতে জল আছে তাই সরস্বতী।পুরাকালে দেবী সরস্বতী নদীরূপে

দেশকে উর্বরা করতেন। জলকে পবিত্র করতেন। বাগদেবী বোঝাতে সরস্বতী নদীর অধীস্টাত্রী দেবীকে বোঝানো হয়।

 

পুরান মতে সৃষ্টির একদম আদি লগ্নে ধ্যানে বসেন সৃষ্টি কর্তা ব্রহ্মদেব সেই ধ্যানে তিনি তাঁর সকল ভালো গুণকে একত্র করতে থাকেন। আর ব্রহ্মার সকল ভালো গুণ একত্রিত হয়ে তা ধীরে ধীরে এক নারীর আকার নিতে থাকে।এবং সেই নারী পরবর্তীতে আবির্ভুতা হন দেবী সরস্বতী রূপে,এবং

এই ভাবেই ধ্যান মগ্ন ব্রহ্মার মুখ গহ্বর থেকে সৃষ্টি হয় দেবী সরস্বতীর|জন্মের পর সরস্বতী তাঁকে এই বিশ্বকে কী ভাবে আরও সুন্দর করে তোলা যায়, সে সম্পর্কে পরামর্শ দেন ও ব্রহ্মা দেবী সরস্বতীর উপর দায়িত্ব দেন বিশ্বের সৌন্দর্য রক্ষা ও সমস্ত সৃজন শীল কাজের|

 

দেবী সরস্বতী শ্রুতি শাস্ত্রের মধ্যে শ্রেষ্ঠা। তিনি শুক্লাবর্ণা, বীনা ধারিণী এবং চন্দ্রের

শোভা যুক্ত।দেবী কবিদের ইস্ট দেবী তাই তার নাম সরস্বতী। সৃষ্টির আদি পর্বে ঈশ্বরের শক্তি পাঁচ ভাগে বিভক্ত হয় এই পাঁচটি শক্তি হলো রাধা, পদ্মা, সাবিত্রী দূর্গা এবং সরস্বতী।

 

শ্রীকৃষ্ণই প্রথম দেবী সরস্বতীর পুজো করেন। শ্রী কৃষ্ণর পরামর্শ মেনেই দেবী সরস্বতী নারায়ণ ভজনা শুরু করেন। দেবী ভাগবত মতে সরস্বতী ব্রম্হার স্ত্রী আবার ব্রহ্মবইবর্ত পুরান মতে দেবী সরস্বতী নারায়ণের স্ত্রী।

 

দেবী সরস্বতীর বাহন রাজ হংস কারন হংসের রয়েছে এক অদ্ভুত ক্ষমতা, হংস জল ও দুধের পার্থক্য করতে সক্ষম। জল ও দুধ একত্রে মিশ্রিত থাকলে হাঁস শুধু সারবস্তু দুগ্ধ বা ক্ষীরটুকুই গ্রহণ করে, জল পড়ে থাকে। জগতে জ্ঞান থাকবে অজ্ঞানতাও থাকবে, শিক্ষা থাকবে অশিক্ষাও থাকবে, সংস্কার থাকবে কু সংস্কার ও থাকবে, তবে আমাদের সচেতন ভাবে হংসের ন্যায় ভালো টা নিতে হবে আর খারাপ টা বর্জন করতে হবে এটা বোঝাতেই সরস্বতীর বাহন হিসেবে হংসকে নির্বাচিত করা হয়েছে|

 

আজ সবাই শাস্ত্র মতে সরস্বতী পূজা করুন সবাইকে সরস্বতী পূজার অনেক শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন। ফিরে আসবো আগামী পর্বে বিশেষ ধারাবাহিক শাস্ত্রীয় বিষয় নিয়ে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

শিব তীর্থ – বড়ো কাছারি শিব মন্দির

শিব তীর্থ – বড়ো কাছারি শিব মন্দির

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

শিব রাত্রি উপলক্ষে আজ আরো একটি শিব তীর্থের মাহাত্ম এবং ইতিহাস নিয়ে

আলোচনা করবো।

 

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বিষ্ণুপুর থানার বাখরাহাটে অবস্থিত এক প্রাচীন শিব মন্দির বাবা বড়ো কাছারি নামেই জগৎ বিখ্যাত।কিছুদিন আগে নিজে গেছিলাম এই শিব তীর্থ দর্শন করতে। অপূর্ব সেই অভিজ্ঞতা।

 

এই মন্দিরের ইতিহাস বেশ প্রাচীন।এক সময়ে আজকের বাখরাহাট সংলগ্ন এলাকা ছিলো ঘন জঙ্গলে ঢাকা, এখানেই বাস করতেন এক সাধু, শোনা যায় স্থানীয় অধিবাসীদের সকল বিপদ থেকে রক্ষা করতেন ওই সাধু, তার মৃত্যুর পর তার মরদেহ না পুডিয়ে সেই শশ্মানে সমাধিস্থ করে ভক্তগণ। পরে সেই সমাধিক্ষেত্র হতে এক অশ্বত্থ গাছ জন্মায় এবং ওই স্থানে স্থাপন করা হয় এক শিবলিঙ্গ, স্থানটি ক্রমশঃ সর্বত্র বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং দূর দূর থেকে মানুষ আসতে থাকেন পুজো দিতে|

 

কেনো বড়ো কাছারি নাম হলো সে নিয়েও এক অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ আছে,জনশ্রুতি অনুসারে এই শশ্মানে নাকি গভীর রাতে স্বয়ং শিবশম্ভু ভূতনাথ বেশে বিচার সভা বসাতেন। সেকারণে স্থানটিকে অনেকে এখনো ভূতের কাছারিও বলেন। আর যেহেতু সে বিচার ভূতনাথরূপী শিবের দরবারে, সুতরাং তাঁর বিচারই সর্বশ্রেষ্ঠ তাই সব কাছারির উর্ধে এই কাছারি ও তার বিচার তাই বড়ো কাছারি নামেই পরিচিত হয়েছে এই স্থান|

 

আজও প্রতি শনি ও মঙ্গলবার বেশ ধুমধাম সহ পূজা হয় এখানে, শিব রাত্রিতে ও বিশেষ বিশেষ তিথিতে ব্যাপক জনসমাগম হয়, দূর দূরান্ত থেকে ভক্তরা আসেন বাবার মাথায় জল ঢালতে|ভক্তরা এক ছোট্ট কাগজে তাদের প্রার্থনা দরখাস্তের আকার লিখে মন্দিরের গায়ে বেঁধে দেন|শোনা যায় এখানে করা কোনো প্রার্থনাই নাকি বিফলে যায় না|সময় সুযোগ হলে একদিন ঘুরে আসুন এই বিখ্যাত শিব মন্দির থেকে|

 

আবার বাংলার এক প্রাচীন মন্দিরের ইতিহাস নিয়ে ফিরে আসবো যথা সময়ে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী তীর্থ – রসুনিয়ার ডাকাত কালীর পুজো

কালী তীর্থ – রসুনিয়ার ডাকাত কালীর পুজো

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

বর্ধমানের মঙ্গল কোটে রয়েছে প্রাচীন এক ডাকাত কালী মন্দির। প্রায় তিনশো বছর ধরে এখানে
ডাকাত সর্দার শক্তি ডোম প্রতিষ্ঠিত কালী
মূর্তির পূজ হয়ে আসছে। আজকের কালী তীর্থে এই ডাকাত কালী মন্দিরের ইতিহাস
আপনাদের জানাবো।

মঙ্গলকোটের রসুনিয়া গ্রামে বসবাস করতেন
শক্তি ডোম। দিনের বেলা তিনি নানা রকম খেলা দেখিয়ে তাক লাগিয়ে দিতেন আবার রাতের অন্ধকারে তিনিই চালাতেন বেপরোয়া ডাকাতি। তাঁর লাঠিয়াল বাহিনী হয়ে উঠেছিল মঙ্গলকোটের ত্রাস।ডাকাতির পাশাপাশি চলতো শক্তি ডাকাতের মাতৃ সাধনা।

বন জঙ্গলে ঘেরা রসুনিয়া গ্রামে পঞ্চমুণ্ডির আসন তৈরি করে মাকালীর উপাসনা করতেন ডাকাত সর্দার।সেই রসুনিয়ার কালী মন্দিরে আজও আছে পঞ্চমুণ্ডির আসন।তবে আজ আর সেই ডাকাত নেই।গ্রামের মানুষ আজও চালিয়ে যাচ্ছেন
শক্তি ডোমের আরাধ্য কালীর পুজো।

এখন এই কালীপুজোই রসুনিয়া গ্রামের মূল উৎসব। পুজো ঘিরে আনন্দে ভরে ওঠে গোটা গ্রাম।
জনশ্রুতি আছে একবার কালীপুজোর রাতে গ্রামের উপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার পরই দেবীর ঘট আনা হয়।

স্থানীয়দের বিশ্বাস, মন্দিরের পূর্বদিকে জানালা থাকা আবশ্যিক। কারণ আগে মাটির মন্দির তৈরির সময়, তার পূর্বদিকে জানালা না করায় সেই মন্দিরটি ধসে পড়ে যায়। পরবর্তীকালে পূর্বদিকে জানালা রেখে বড় পাকা মন্দির নির্মাণ করা হয়।

এই পুজোয় নিশিভোরে হয় কালীর পুজো। এখানে দেবীর আরতির প্রচলন নেই। তবে শক্তি ডোমের প্রথা মেনে আজও ছাগবলির রীতি রয়েছে।শোনা যায়, আগে প্রতি অমাবস্যার রাতে মন্দিরের কাছ থেকে ঘুঙুরের আওয়াজ শুনতে পাওয়া যেত। ওই সময় মা কালী বেরিয়ে আসতেন বলেই স্থানীয়দের বিশ্বাস। এখন প্রতি অমাবস্যায় মায়ের ভোগ দেওয়া হয়।

আবার যথা সময়ে ফিরে আসবো
একটি কালী তীর্থ নিয়ে থাকবে অন্য একটি
প্রাচীন কালী মন্দিরের ইতিহাস।পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী তীর্থ – চুঁচুড়ার বামা খ্যাপার প্রতিষ্ঠিত কালী

কালী তীর্থ – চুঁচুড়ার বামা খ্যাপার প্রতিষ্ঠিত কালী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

বাংলার হুগলি জেলার চুঁচুড়ার রয়েছে সত্যময়ী কালী মন্দির। এই মন্দির নিয়ে আছে একাধিক অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ।স্বয়ং বামা ক্ষ্যাপা এই মন্দিরে দক্ষিনা কালী মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

আজকের কালী তীর্থ পর্বে এই প্রাচীন কালী মন্দির নিয়ে লিখবো।

 

চুচুড়ার বিখ্যাত দাসী পিসির গঙ্গার ঘাট

যার নামে তার প্রকৃত নাম সত্যময়ী দেবী। তিনি ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় গড়ে তুলেছিলেন এই গঙ্গার ঘাট সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কালী মন্দির।

বিগ্রহ নিমকাঠের তৈরী ।

 

বাংলার ১২৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সেই মূর্তি।

যেহেতু এই বিগ্রহ সত্যময়ী দেবী নিজের বাড়িতে তৈরি করিয়েছিলেন।তাই এলাকাবাসীর কাছে এই মূর্তি পরিচিতি পায় সত্যময়ী কালী নামে।

 

বহু কাল আগে সত্যময়ী দেবী ও স্থানীয় এক কারিগর একইসময়ে পেয়েছিলেন দেবীর স্বপ্নাদেশ।সত্যময়ী দেবী স্বপ্নাদেশ পান যে গঙ্গায় ভেসে আসবে নিম কাঠ। স্বপ্নাদেশ পেয়ে কাঠটি গঙ্গা থেকে তুলে এনেছিলেন সত্যময়ী দেবী।কারিগর কে স্বপ্নে বলা হয়েছিল যে গঙ্গায় ভেসে যাওয়া নিমকাঠ নিয়ে দেবী মূর্তির গড়ে দিতে হবে। সেই মতো কারিগর এসে খোঁজ নেন সত্যময়ী দেবীর বাড়িতে। যা শুনে সত্যময়ী বুঝতে পারেন যে সব দেবীরই অলৌকিক লীলা। সেই মতো সূর্য অস্ত্র যাওয়ার আগে তৈরি করা হয়েছিল এই দেবীমূর্তি।দেবীর নির্দেশ মতো পারিশ্রমিক নেয়া হয় নয় টাকা মাত্র।

 

মন্দির তৈরী এবং প্রতিমা নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পরে বীরভূম থেকে সাধক বামা ক্ষেপা কে আনিয়ে এখানে মূর্তি প্রতিষ্ঠা হয়।বামাক্ষ্যাপা এখানে

দেবীর ঘটও প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছিলেন। সেই ঘট আজও এই বাড়ির মন্দিরে অবিকৃত অবস্থায় আছে।

 

আজও পুরোহিত হিসেবে বংশপরম্পরায় থাকেন পরিবারেরই এক সদস্য।

ভক্তদের দাবি এই দেবীর কাছে করা যেকোনো

প্রার্থনা দেবীর আশীর্বাদে পূরণ হয়।

 

ফিরে আসবো পরের পর্বে। কালী তীর্থর নতুন

পর্ব নিয়ে। থাকবে অলৌকিক ঘটনায় ভরা একটি দেবী মন্দিরের মাহাত্ম।পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী তীর্থ – মহা কালীর পুজো

কালী তীর্থ – মহা কালীর পুজো

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

বাংলা পুন্য ভূমিতে দেবীকালী বিভিন্ন রূপে বিরাজ করছেন বিভিন্ন স্থানে।কোথাও তিনি শ্মশান কালী আবার কোথাও তিনি ভবতারিণী আজ আপনাদের যে দেবীর কথা বলবো তিনি দেবী মহা কালী। জানবো এই ভিন্ন তবে শাস্ত্র সম্মত দেবী রূপের পুজোর ইতিহাস।

দেবীর এই রূপে পূজিতা হন মালদার ইংরেজ বাজার এলাকায়।তখন ১৯৩০ সাল, দেশে তখন শাসন করছে ইংরেজরা। মালদহে চরম অত্যাচার চালিয়েছিল ব্রিটিশ সরকার।ব্রিটিশের অত্যাচারের বিরুদ্ধে মানুষজন বিদ্রোহ করার সিদ্ধান্ত নেন। তখন নিজেদের মধ্যে শক্তি আর সাহস বৃদ্ধি করতে শুরু হয় এই মহাকালীর পুজো।

দেবীর ১০ মাথা, ১০ হাত এবং ১০ পা রয়েছে। প্রতিমায় শিবের কোন অস্তিত্ব নেই। দেবীর পায়ের তলায় রয়েছে অসুরের কাটা মুণ্ডু।কিছু ধর্ম শাস্ত্রে এই রূপের উল্লেখ থাকলেও দেবীর এই রূপের পুজোর প্রচলন খুব একটা হয়নি।শোনা যায় বিহারের বিন্দুবাসিনীতে পাহাড়ের গায়ে প্রাচীন যুগে খোদাই করা রয়েছে এই মূর্তি।এছাড়া এই মূর্তির অস্তিত্ব খুব একটা কোথাও চোখে পড়েনা।

এখানে কালী পুজোর কিছু রীতি নীতি বেশ অদ্ভুত। আজও প্রথা মেনে দিনের আলোয় পূজিতা হন দশ মাথা কালী। বলি প্রথা আজও আছে এবং শোল মাছের টক বিশেষ প্রসাদ হিসেবে চলে আসছে বহু দিন থেকে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে যেখানে মহাকালীর মন্দির রয়েছে, সেখানে তন্ত্র সাধনা করতেন এলাকার এক তন্ত্র সাধক।সাধনার জন্য তৈরি করেন পঞ্চমুণ্ডির আসন। সেই আসনের ওপরে দেবীর বেদি নির্মিত হয়েছে। আজও তন্ত্র মতেই দেবীর পুজো হয়।

প্রতিবছর কালী পুজোয় প্রথা মেনে এখানে শোভাযাত্রা সহকারে মন্দির পর্যন্ত মাকে নিয়ে যাওয়া হয়। দেবীর পুজো দেখতে আসেন দূর দূরান্তর মানুষ।দেবী এখানে উগ্র রূপে বিরাজ করলেও তার ভক্ত দের কাছে তিনি অত্যন্ত দয়াশিলা এবং বহু মানুষের বহু মনোস্কামনা এখানে পুজো দিয়ে পূরণ হয়েছে বলে শোনা যায়।

আবার ফিরে আসবো পরের পর্বে।কালী তীর্থ
থাকবে অন্য এক কালী তীর্থের ইতিহাস।
পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী তীর্থ – ঝুপো কালীর পুজো 

কালী তীর্থ – ঝুপো কালীর পুজো

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

বর্ধমানের কাটোয়াতে রয়েছে এক বহু প্রাচিন

ডাকাত কালী মন্দির যা ঝুপো কালী নামেই

বেশি প্রসিদ্ধ। আজকের কালী তীর্থ পর্বে

এই ঝুপো কালী নিয়ে লিখবো।

 

সে প্রায় তিনশো বছর আগের কথা।সেই সময় এই অঞ্চল ছিলো ডাকাত,বিষধর সাপ এবং দুর্ধর্ষ ডাকাতদের দখলে।সারাদিন জঙ্গলে লুকিয়ে থাকত ডাকাতরা তারপর রাতের অন্ধকারে

গ্রামে হানা দিয়ে লুঠ করে আনত যা পেত। সে সময় ওই দস্যুরাই নিমগাছের কাছে কালীপুজো শুরু করে।দেশ স্বাধীন হয়। স্থাপিত হয় আইনের রাজত্ব।এক সময় শেষ হয় দস্যুদের দাপট। গাছপালার জঙ্গল কেটে ওঠে কংক্রিটের জঙ্গল। তবে দস্যুদের পূজিত নিমগাছটি কাটা পড়েনি। আজও ওই গাছ পুজো পেয়ে আসছে ‘ঝুপমা’ রূপে।

 

প্রায় তিনশো বছরের প্রাচীন সেই নিমগাছকে আজও কালী জ্ঞানে পুজো করে আসছেন কাটোয়ার এই অঞ্চলের বাসিন্দারা। এই গাছকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে মন্দির। যত দিন যাচ্ছে বাড়ছে দেবীর ভক্তের সংখ্যা। ‘ঝুপো মা’ বা ‘ঝুপো কালী’ নামে পূজিত এই কালীর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ছে দিকে দিকে।

 

এমনিতে সারা বছর ধরেই চলে পুজো পাঠ। তবে দেবীর আবির্ভাব তিথি ও কালীপুজোর দিন বিশেষ পুজো পাঠের আয়োজন করা হয়। আলো দিয়ে সাজানো হয় মন্দির চত্বর। ধুমধাম করে চলে পুজো পাঠ। বিসর্জনের দিন হাজার হাজার ভক্ত প্রসাদ গ্রহন করেন।

 

এখানে ঝুপো কালীর কোনও মূর্তি নেই। প্রাচীন নিমগাছটিই স্বয়ং কালী। নিমগাছের গোড়ার অংশে তৈরি হয়েছে বেদি। গাছের গুঁড়িটি ফুল মালা দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। মাথার মুকুট থেকে হাতের খড়গ, সবই সাজানো থাকে গাছটিকে ঘিরেই।দেবীর কোনও মূর্তি না থাকায় বিসর্জনও হয় না ঝুপমায়ের। তবে প্রাচীন নিমগাছটির বাঁধানো ছবি নিয়ে শোভাযাত্রা বার করা হয় বিসর্জনের সন্ধেবেলায়।বহু বছর ধরে এই রীতিই

চলে আসছে।

 

ফিরে আসবো পরবর্তী কালী তীর্থ নিয়ে।

আগামী পর্বে। থাকবে আরো একটি

প্রাচীন কালী মন্দিরের ইতিহাস। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।