কালী কথা – কোন্নগড়ের শ্মশান কালী
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
দেবী কালীর বিভিন্ন রূপের মধ্যে শ্মশান কালী রূপ অন্যতম।সাধারণত তন্ত্র সাধকরাই দেবীর এই রূপের আরাধনা করে থাকেন|আজ কালী কথায় একটি শ্মশান কালী মন্দির নিয়ে লিখবো।
দেবীর এই রূপকে শ্মশানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী মনে করা হয়। শ্মশানকালী দেবীর গায়ের রং কাজলের মতো কালো। তিনি সর্বদা বাস করেন। তাঁর চোখ দুটি রক্ত পিঙ্গল বর্ণের। চুলগুলি আলুলায়িত, দেহটি শুকনো ও ভয়ংকর। বাঁ-হাতে মদ ও মাংসে ভরা পানপাত্র, ডান হাতে নর মুণ্ড। শ্মশানকালীর আরেকটি রূপে তার বাঁ-পা শিবের বুকে স্থাপিত এবং ডান হাতে ধরা খড়্গ। এই রূপটি ভয়ংকর এবং উগ্র একটি রূপ।
একটা সময় ছিল যখন বাংলা বিশেষ করে কলকাতার গঙ্গার প্রায় প্রত্যেকটা ঘাটের পাশেই শ্মশান ছিল এবং সেগুলি ছিলো ডাকাত এবং তান্ত্রিকদের আস্তানা। তারা ছিলেন শ্মশান কালীর উপাসক।আজ সেই ডাকাত ও নেই সেই প্রকৃত তান্ত্রিকের সংখ্যাও কমেছে কিন্তু কালী মন্দির গুলো রয়েছে। এমনই এক শ্বশান কালী আছেন হুগলীর কোন্নগরে।
কোন্নগরের এই শ্মশান কালী মন্দিরের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে গঙ্গা।মন্দিরটি প্রায় দুশ বছর আগেকার। প্রথমে মায়ের মূর্তিটি মাটির তৈরী ছিল।সেই সময়ে এই অঞ্চল ছিলো বেশ দুর্গম। ঘন বনে দিনের বেলায় সূর্যের আলো পৌঁছতো না। ডাকাত রা এই অঞ্চল শাসন করতো। আর ছিলো কাপালিক তান্ত্রিকদের আসা যাওয়া। তখন থেকেই এখানে শ্মশান কালীর পুজো হয়ে আসছে।
পরবর্তী কালে মানিক সাধু নামে এক মাতৃ সাধক । মায়ের মাটির মূর্তিটির পরিবর্তন করে পাথরের বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করান। মন্দির ও সংস্কার হয়।বর্তমানে মায়ের মন্দিরের ঠিক বিপরীত দিকে শান বাঁধানো আর একটি মন্দির আছে।
এই মন্দিরের সাথে ঠাকুর রামকৃষ্ণদেবের স্মৃতি জড়িত আছে।কথিত আছে ১৮৮২ সালের ৩ রা ডিসেম্বর রবিবার শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরম হংস দেব গঙ্গা পার হয়ে এই ঘাটে এসেছিলেন। এবং এখানে বেশ কিছু সময় অতিবাহিত করেছিলেন।প্রসঙ্গ উল্লেখ করতে হয় ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণও এক সময় শ্মশান কালীর আরাধনা করে ছিলেন।
এই মন্দিরে নিত্য পূজোর পাশাপাশি দীপান্বিতা অমাবস্যা বিশেষ গুরুত্ব সহকারে পালিত হয়।
এছাড়াও তারা মায়ের আবির্ভাব দিবসেও বিশেষ পূজো হয়। বহু ভক্ত আসেন এই সময়গুলিতে।
ফিরে আসবো কালী কথার পরবর্তী পর্ব নিয়ে
যথা সময়ে। থাকবে বাংলার আরেকটি
প্রাচীন কালী মন্দিরের ইতিহাস।পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন।