Home Blog Page 22

শিব অবতার – বীরভদ্র রূপ

শিব অবতার – বীরভদ্র রূপ

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

শিবের বিভিন্ন রূপের মধ্যে তার তার বীর ভদ্র রূপটি অন্যতম। এটি শিবের একটি

ভয়াল এবং উগ্র রূপ। আজকের পর্বে বীরভদ্রকে নিয়ে লিখবো।

 

বীর ভদ্র একই সাথে শিবের অনুচর এবং শিবের অংশ। শিবের শরীর থেকেই তার জন্ম। দক্ষযজ্ঞর সময়ে সতী অপমানে দেহ ত্যাগ করলে ক্রোধে ফেটে পড়েন মহাদেব তখন শিবের ক্রোধাগ্নি থেকে বীর ভদ্রর জন্ম হয়। শিব একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে বীর ভদ্র কে সৃষ্টি করেন।

 

বীর ভদ্রর রূপ অতি ভয়ঙ্কর বীরভদ্রকে বহু বাহু বিশিষ্ট জটা ধারী হিংস্র মুখভঙ্গির বিরাট দেহ ধারী রূপে পুরানে চিত্রিত করা হয়েছে।বায়ু পুরান মতে তার সহস্র বাহু সহস্র চোখ এবং সহস্র পা রয়েছে।

বীর ভদ্র তরবারি, ত্রিশূল এবং ধনুক সহ বিভিন্ন অস্ত্র ধারণ করেন।

 

সৃষ্টির পর বীরভদ্র তার অনুচর রৌম্য এবং রূদ্র তুল্যকে নিয়ে দক্ষর যজ্ঞ স্থল আক্রমণ করেন এবং সব ধ্বংশ করেন।দক্ষকে হত্যা করেন এবং তার পত্নীকে বন্দী করেন।এর পরেও তার ক্রোধ ঠান্ডা না হলে স্বয়ং ব্রম্ভা এসে তার স্তুতি করেন এবং বীর ভদ্র শান্ত হন।

 

বীরভদ্রকে প্রায়শই ধ্বংসের সাথে যুক্ত করা হয় এবং তাকে ন্যায়বিচারের রক্ষক এবং প্রয়োগকারী হিসাবে বিবেচনা করা হয়।নন্দী এন ভৃঙ্গীর ন্যায় বীর ভদ্র শিবের অত্যান্ত প্রিয় অনুচর এবং বীর ভদ্র সর্বদা শিব আজ্ঞা পালনে প্রস্তুত।

 

ফিরে আসবো পরের পর্বে শিব মাহাত্ম নিয়ে। থাকবে শিব সংক্রান্ত অন্য একটি পৌরাণিক বিষয় নিয়ে। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

শিব অবতার – শরভেশ্বর রুপ

শিব অবতার – শরভেশ্বর রুপ

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

চৈত্র মাস শিবের গুনগান করার মাস।তাই সারা চৈত্র মাস ধরেই শিব মহিমা বর্ণনা করবো।

আজকের পর্বে শিবের একটি বিশেষ রূদ্র রূপ শর্বেশ্বর বা শরভ অবতার নিয়ে আলোচনা করবো

 

নৃসিংহ দেবের হাতে হিরণ্য কশিপুর বধ হলো কিন্তু নৃসিংহদেবের ক্রোধ কম হল না। তিনি ভয়ানক ধ্বংসলীলা চালিয়ে যেতে থাকেন। এই সময়ে সব দেবতারা একসাথে শিবের শরণ নেন। তাঁরা বুঝতে পারেন একমাত্র মহাদেবই নৃসিংহ দেবের ক্রোধ থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করতে পারেন। শিব বীরভদ্র ও ভদ্রকালীকে প্রেরণ করেন নৃসিংহকে থামানোর জন্য। কিন্তু মহাপ্রতাপ নৃসিংহ সেই দুই মহাশক্তিকেও বিপর্যস্ত করে ফেলেন। এমতাবস্থায় মহাদেব নিজেই শরভ নামের এক বিচিত্রদর্শন প্রাণীর রূপ নিয়ে আবির্ভূত হন।

 

শরভ এক সুবিশাল পাখি। তাঁর সহস্রবাহু এবং পশুর মতো দেহ|নৃসিংহ ও শরভ অবতারের মধ্যে ভয়ানক যুদ্ধ হয়|শরভের আঘাতে নৃসিংহ আত্মসংবরণ করেন। শরভই শেষ করেন নৃসিংহের লীলা।নৃসিংহ দেবের ক্রোধ থেকে রক্ষা পায় সৃষ্টি |

 

শিব নিজে একজন পরম বৈষ্ণব এবং নৃসিংহ দেব স্বয়ং বিষ্ণু| ভক্তের দ্বারা ভগবানের বধ বা ভক্ত এবং ভগবানের যুদ্ধ সনাতন ধর্ম শাস্ত্রের অতি বিরল ঘটনা|এই যুদ্ধ ও দুর্লভ অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায় নৃসিংহ পুরান ও শিব পুরানে।

শরবেশ্বর শিবের উগ্র এবং ভয়াল একটি রূপ তাই সাধারণত সাধারণ ভক্তরা এই রূপের পুজো করেন না।

 

আগামী পর্বে শিব কে নিয়ে অন্য কোনো পৌরাণিক কাহিনী আপনাদের শোনাবো থাকবে তার শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা এবং তাৎপর্য। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ – ওঙ্কারেশ্বর

দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ – ওঙ্কারেশ্বর

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আজকের পর্বে জানাবো মধ্যপ্রদেশের ওঙ্কারেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গর কথা যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা পৌরাণিক ঘটনা।

 

মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর স্টেশন থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে ওঙ্কারেশ্বর মন্দির। পাঁচতলা এই মন্দিরের গর্ভগৃহেই রয়েছে শিবলিঙ্গ। জাতিধর্ম নির্বিশেষে সবাই এখানকার শিবলিঙ্গ স্পর্শ করে পুজো দিতে পারেন। সারা বছর ধরেই পুণ্যার্থীরা এখানে পুজো দিতে আসেন।

 

কথিত আছে, শ্রীরামচন্দ্রের পূর্বপুরুষ ইক্ষাকু বংশের রাজা মান্ধাতা ও তাঁর দুই সন্তান অম্বরীশ ও মুচুকুন্দ এখানেই ভগবান শিবকে সন্তুষ্ট করেছিলেন।

 

হিন্দু শাস্ত্রমতে বিন্ধ্যাচল পর্বতমালার রক্ষক অসুর বিন্ধ্য নিজের পাপ স্খলনের জন্য মহাদেবকে প্রসন্ন করেছিলেন। তিনি বালি ও পলির মিশ্রণে একটি শিবলিঙ্গ তৈরি করেছিলেন এবং সাধনা করে ছিলেন।শিব তাঁর তপস্যায় প্রসন্ন হয়ে দুটি রূপে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। একটি রূপ হল ওঙ্কারেশ্বর, অপরটি অমরেশ্বর।

নদীগর্ভের পলি ঘনীভূত হয়ে এখানে দেবনাগরী ‘ওঁ’ এর আকৃতি ধারণ করেছিল। সেই কারণে দ্বীপটির নাম রাখা হয় ওঙ্কারেশ্বর। সেখানেই আত্মপ্রকাশ করেছিল ওঙ্কারেশ্বর ও অমরেশ্বর। এখানকার মন্দিরে শিবের পাশাপাশি একটি পার্বতী ও একটি পঞ্চমুখী গণেশের মূর্তি রয়েছে।

 

ওঙ্কারেশ্বর দ্বীপটি প্রায় তিন বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত। মধ্যপ্রদেশের খাণ্ডোয়া জেলার এই মন্দির নর্মদা নদী ও তার উপনদী কাবেরীর তীরে মান্ধাতা দ্বীপে। যা ওঙ্কারেশ্বর দ্বীপ নামেও পরিচিত।রাজা মান্ধাতার নামে এই দ্বীপটি মান্ধাতা দ্বিপ নামেও খ্যাত।

 

এই ওঙ্কারেশ্বরের কাছে রয়েছে আদি শংকরাচার্যর গুহা। যেখানে গুরু গোবিন্দপাদের দর্শন পেয়েছিলেন আদি শংকরাচার্য। সেই গুহাটি রয়েছে ওঙ্কারেশ্বর মন্দিরের ঠিক নীচে। সেখানে আদি শংকরাচার্যের একটি মূর্তিও রয়েছে।

 

সারা বিশ্বের শিবভক্তদের কাছে ওঙ্কারেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। শ্রাবণ মাসে এবং শিব চতুর্দশীর সময়ে এখানে ভক্তদের বেশি সংখ্যায় ভক্তদের আগমন ঘটে।

 

ফিরে আসবো শিব সংক্রান্ত ধারাবাহিক আলোচনা নিয়ে আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ – রামেশ্বরম মন্দির

দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ – রামেশ্বরম মন্দির

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আজ দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গগুলির মধ্যে যে মন্দিরটি নিয়ে আলোচনা করবো তা হলো ভারতের শেষ প্রান্তে অবস্থিত জ্যোতির্লিঙ্গ রামেশ্বরম।

 

ভারতের উত্তরে কেদারনাথ ও দক্ষিনে রামেশ্বরম,এক সরল রেখায় অবস্থান করছে,তার সাথে আরো অনেক গুলি শিব মন্দির মিলিত হয়েছে ওই একি সরলরেখায় এও এক বিস্ময়|

 

রামেশ্বরম ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের রামনাথপুর জেলার পাম্মান দ্বীপে অবস্থিত|এই দ্বীপ পাম্মান সেতু দ্বারা ভারতের মূল ভূখণ্ডের সাথে যুক্ত এই সেতু কে অনেকে রামেশ্বর ব্রিজ ও বলে থাকেন|অপূর্ব সুম্দর এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বিশেষত সমুদ্র ও তার দুদিকের দুটি ভিন্ন রং দেখলে অবাক হতে হয়|সমুদ্র সৈকতটিও অতি সুম্দর|এখান থেকে শ্রীলংকার মান্নার দ্বীপের দূরত্ব মাত্র চল্লিশ কিলোমিটার যা দূরবীনে চোখ রাখলে বেশ স্পষ্ট দেখা যায়।

 

রামানায়নে রাম ও রাবনের যুদ্ধতে রাবন বধ হন রামের হাতে, কিন্তু রাবন ছিলো নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ ও বড়ো শিব ভক্ত তাই রাবন কে হত্যা করে ব্রহ্ম হত্যার জন্য দায়ী হন শ্রী রাম এবং সেই মহা পাপ থেকে মুক্তি পেতে তিনি ভারতের মাটিতে পা রেখে একটি শিব লিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করে তার আরাধনা করেন এবং ব্রহ্ম হত্যার পাপ থেকে মুক্ত হন।

ঠিক যেমন ব্রম্ভার একটি মাথা কেটে ফেলার পর শিব ব্রহ্ম হত্যার পাপ থেকে মুক্ত হতে কাশীতে এসে গঙ্গা স্নান করে ছিলেন সেই রকমই।

 

শ্রী রাম দ্বারা স্থাপিত সেই বিশেষ শিব লিঙ্গটি হলো এই রামেশ্বর শিব লিঙ্গ যা দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম|এই শিব লিঙ্গ শ্রীরামনাথস্বামী হিসাবে পরিচিত|

 

রামায়ন মহাভারতের ন্যায় সনাতন ধর্মশাস্ত্র গুলি যে নিছক মহাকাব্য নয়, তার প্রতিটি অক্ষর সত্যি তা উপলব্ধি করতে হলে একবার না একবার এখানে আসতেই হবে|রাম সেতু এবং রামেশ্বর মহাদেব সেই পুরাকাল থেকেই সেই সত্যকে প্রমান করে আসছে।রামেশ্বর শুধু দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ নয় ভারতের জনপ্রিয় চারধাম তীর্থের মধ্যে অন্যতম।

 

জনশ্রুতি আছে পুরী যেমন ভগবানের ভোজনের স্থান তেমনই রামেশ্বরম ভগবানের বিশ্রাম স্থান।

 

আগামী পর্বে যথা সময়ে ফিরে আসবো পরবর্তী জ্যোতির্লিঙ্গ নিয়ে আলোচনায়। পড়তে থাকুন।

  • ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ – মল্লিকার্জুন

দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ – মল্লিকার্জুন

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীশৈলমে রয়েছে মল্লিকার্জুন জ্যোতির্লিঙ্গ যা অত্যন্ত জাগ্রত বলেই ভক্তদের বিশ্বাস।আজকের পর্বে এই জ্যোতির্লিঙ্গ নিয়ে লিখবো।

 

শ্রীশৈলমের মল্লিকার্জুন মন্দির একই সাথে দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ এবং মহাশক্তিপীঠেরও অন্যতম। কথিত আছে, এখানে সতীর ওপরোষ্ঠ পড়েছিল।

তবে আজ শক্তি পীঠ হিসেবে নয় জানবো এই জ্যোতির্লিঙ্গর বিশেষত্ব এবং তাৎপর্য।

 

এখানের শিবমন্দিরটি পূর্বমুখী। এর মূল মণ্ডপে অনেকগুলো স্তম্ভ রয়েছে এবং নন্দীকেশ্বরের বিরাট মূর্তি রয়েছে।

 

শ্রীশৈলমের শিবমন্দির তৈরির পিছনে রয়েছে এক পৌরাণিক কাহিনি।যখন শিব এবং পার্বতী তাঁদের দুই ছেলে গণেশ ও কার্তিকের জন্য উপযুক্ত পাত্রীর সন্ধান করছিলেন। সেই সময় কার্তিক নাকি তর্ক জুড়েছিলেন, কে আগে বিয়ে করবেন, সেই ব্যাপারে। শিব তখন জানিয়েছিলেন, যে আগে বিশ্ব প্রদক্ষিণ করে আসতে পারবে, তারই আগে বিয়ে হবে। কার্তিক তাঁর বাহন ময়ূরে চেপে বিশ্ব প্রদক্ষিণে বেরিয়ে পড়েছিলেন। অপর দিকে বুদ্ধিমান গণেশ শুধু শিব-পার্বতীকেই সাতবার প্রদক্ষিণ করেছিলেন। শাস্ত্রমতে নিজের মা-বাবাকে প্রদক্ষিণ করলেই বিশ্ব প্রদক্ষিণ হয়ে যায়।গণেশ তাই সেই পথ বেছে নেয়।

 

পরবর্তীতে বুদ্ধি, ঋদ্ধি ও সিদ্ধির সঙ্গে গণেশের বিয়ে সম্পন্ন হয় । বিশ্ব প্রদক্ষিণ করে ফিরে এসে সেসব দেখে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন কার্তিক। তিনি কুমার এবং ব্রহ্মচারী হিসেবে থাকার জন্য ক্রৌঞ্চ পর্বতে চলে যান। ছেলেকে ফিরিয়ে নিতে শিব এবং পার্বতীও সেখানে যান। কিন্তু, কার্তিক ফিরতে রাজি হননি। তখন শিব ও পার্বতী কাছাকাছি এক স্থানে থাকা শুরু করেন। যেখান থেকে শিব প্রতি অমাবস্যা এবং পার্বতী প্রতি পূর্ণিমায় গিয়ে কার্তিককে দেখে আসতেন। যে জায়গায় শিব ও পার্বতী নির্বাচন করেন সেই জায়গাই পরিচিত হয় শ্রীশৈলম নামে।সেই পবিত্র স্থানেই জ্যোতির্লিঙ্গ রূপে স্বয়ং শিব বিরাজ করছেন।

 

সারা বছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু ভক্ত আসেন এই মন্দিরে নিজের মনস্কামনা পূরণের প্রার্থনা জানাতে। তবে, অন্যান্য শিব মন্দিরের মতই শিবচর্তুদর্শী বা শিবরাত্রির দিন এই মন্দিরে ব্যাপক ভক্ত সমাগম হয়।এই স্থান দর্শন করলে একই সাথে শক্তি পীঠ এবং জ্যোতির্লিঙ্গ দর্শনের পুন্য লাভ হয়।

 

ফিরে আসবো পরবর্তী জ্যোতির্লিঙ্গ এবং সেই

সংক্রান্ত পৌরাণিক ঘটনা নিয়ে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ – কেদারনাথ

দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ – কেদারনাথ

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গর মধ্যে অন্যতম জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির হলো উত্তর ভারতের হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত কেদারনাথ ধাম।

 

পঞ্চ কেদারের অন্যতম এই প্রাচীন তীর্থের জন্ম লগ্নের রহস্য জানতে গেলে আমাদের পিছিয়ে যেতে হবে হাজার হাজার বছর আগে মহাভারতের সময় কালে|

 

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে জিতে ছিলো পান্ডবরা কিন্তু বহু স্বজন কে হত্যা করতে হয়েছিলো যুদ্ধ ক্ষেত্রে,যুদ্ধ শেষে সেই পাপ থেকে মুক্তি পেতে পান্ডবরা শিবের শরণাপন্ন হন কিন্তু শিব তাদের ক্ষমা করতে প্রস্তুত ছিলেন না তাই তিনি একটি ষাঁড় এর রূপ ধরে গা ঢাকা দেন |কিছুকাল অনুসন্ধান চালানোর পর পান্ডব রা তার স্বরূপ চিনতে পারেন ও ভীম বহু চেষ্টার পর ষাঁড়রুপি শিব কে ধরে ফেলেন তখন শিব বাধ্য হয়ে নিজ মূর্তিতে আবির্ভুত হন, এই আবির্ভাবের মুহূর্তে ষাঁড়রুপি শিবের শরীরের যে অংশ যেখানে অবস্থান করছিলো সেখানে একটি করে শিব মন্দির সৃষ্টি হয় যেমন মাথা পশুপতি নাথে, বাহু তুঙ্গ নাথে,মুখ রূদ্রনাথে,নাভি মধ্য মহেশ্বরে চুল জল্পেশ্বরে ও পৃষ্ঠদেশ কেদারনাথে|এই পাঁচ টি মন্দির কে একত্রে পঞ্চকেদার ও বলা হয় যার মধ্যে কেদারনাথ জ্যোতির্লিঙ্গের স্বীকৃতি পায়।

 

আধ্যাত্মিক তাৎপর্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দুদিক থেকেই কেদারনাথ অতি গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় এক তীৰ্থস্থান|মনে করা করা হয় শিব স্বয়ং বাস করেন এখানে।তার এটি অত্যন্ত প্ৰিয় স্থান|স্কন্দ পুরান অনুসারে কেদারনাথ এর এই পবিত্র স্থানেই শিব তার জটা থেকে মুক্ত করে ছিলো গঙ্গাকে|দেবাদিদেব এখানে পূজিত হন কেদার হিসেবে|প্রাচীন কালে এই অঞ্চলের নাম ছিলো কেদারখন্ড|

 

স্বাভাবিক ভাবেই আদি কেদারনাথ মন্দির প্রকৃতপক্ষে কবে নির্মাণ হয়েছিলো তার কোনো নিদ্দিষ্ট নথি নেই|মন্দির প্রাঙ্গনে আছে বিশালাকার নন্দীর মূর্তি, অভ্যন্তরে কৃষ্ণ ও স্বস্ত্রীক পঞ্চ পাণ্ডবের মূর্তি খোদাই করা আছে|ত্রিকোণাকৃতি জ্যোতির্লিঙ্গ টি রয়েছে মুলমন্দিরের এক বিশেষ গর্ভগৃহে|মনে করা হয় এক হাজার বছর আগে আদি শংকরাচার্য মন্দিরটির সংস্কার করেন ও বদ্রিনাথের পূজারী কে এনে কেদারে পূজার প্রচলন করেন|তার আগে কেদারনাথ এ কোনো নিদ্দিষ্ট পূজারী ছিলো না, পরে পাঁচ জন পূজারী নিয়োগ করা হয়, যে পরম্পরা আজও চলছে|

 

চারপাশে তুষার ঢাকা পর্বত মাঝ খানে কেদারনাথ মন্দির এক অপূর্ব অনুভূতি জাগায় মনে|একাধিক বার প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হয়েও আশ্চর্য ভাবে প্রতিবার রক্ষা পেয়েছে মুল মন্দিরটি|এক কালে অতি কষ্ট সাধ্য ছিলো এই মন্দির দর্শন কারন প্রতিকূল পরিবেশ ও দুর্গম পথ|তবুও সব বাধা বিপত্তি কাটিয়ে বাবার ভক্ত রা দলে দলে ছুটে আসতেন কেদারনাথ দর্শনে|আজও আসেন |কেদারনাথ ভারতের চারধাম তীর্থের মধ্যে অন্যতম|এই অঞ্চলের তীব্র শীতের ও প্রতিকূল পরিবেশের জন্য মন্দিরটি কেবল এপ্রিল মাসের শেষ থেকে কার্তিক পূর্ণিমা অবধি দর্শনার্থী দের জন্য খোলা থাকে। শীতকালে কেদারনাথ মন্দিরের মূর্তিগুলিকে ছয় মাসের জন্য উখিমঠে নিয়ে গিয়ে পূজা করা হয়|পরে আবার নিদ্দিষ্ট সময়ে মূর্তিগুলি কেদারনাথ মন্দিরে ফিরিয়ে আনা হয়|যুগ যুগ ধরে এই পরম্পরা চলে আসছে|কেদারনাথ মন্দিরের কাছেই আছে আদি শঙ্করাচার্য্যর সমাধি মন্দির।

 

আজ জ্যোতির্লিঙ্গ কেদারনাথ নিয়ে এটুকুই।

ফিরে আসবো পরের পর্বে। অন্য একটি জ্যোতির্লিঙ্গের কথা নিয়ে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

নৈনিতালে পন্ডিতজি

নৈনিতালে পন্ডিতজি

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

আমার উত্তরাখন্ড ভ্রমণের শেষ পর্বর অভিজ্ঞতা আজ আপনাদের সাথে ভাগ করে নেবো।শেষ পর্বে নৈনিতাল এবং নৈনিতাল এবং তার আশেপাশের কিছু সুন্দর এবং ধার্মিক স্থান ঘুরে দেখলাম।

নৈনিতাল থেকে সামান্য দূরেই মুক্তেশ্ব‌রে শিবের মন্দির। পাহাড়ি নির্জনতার মাঝে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে শিব মন্দিরটি। পথ অত্যান্ত দুর্গম তাই শারীরিক এবং মানসিক জোর না থাকলে সেখানে যাওয়া অসম্ভব। তবে শিবের কৃপায় শেষ অবধি সেখানে পৌঁছতে এবং সুন্দর ভাবে সব দেখে ফিরে আসতে পেরেছি।

এই মন্দির অনেকের মতে সেই মহাভারতের যুগ থেকে আছে।মহাভারতের যুদ্ধর পর স্বজন হত্যার পাপ থেকে মুক্ত হতে পাণ্ডবদের দ্বারা শিবের আদেশে এই মন্দির গুলি নির্মিত হয়। যেহেতু পাপ মুক্তির জন্য এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা তাই মহাদেব এখানে মুক্তেশ্বর রূপে বিরাজমান।

আলমোড়া জেলায় অবস্থিত দেবী দুর্গার উদ্দেশ্যে নিবেদিত নন্দ দেবী মন্দির এই অঞ্চলের অন্যতম জনপ্রিয় এবং প্রসিদ্ধ মন্দির। দেবী “নন্দ” কে “অশুভের বিনাশক” বলে মনে করেন।তিনি হিমালয় কন্যা।দেবীর মন্দিরটি ১০০০ বছরের পুরনো এবং এটি একটি শিব মন্দিরের প্রাঙ্গণে পাহাড়ি শৈলীতে নির্মিত। এখানে এসে শুনলাম ভাদ্র শুক্লার অষ্টমীতে মন্দিরে একটি বিশাল নন্দ দেবী মেলা অনুষ্ঠিত হয় । মেলার সময় হাজার হাজার ভক্ত আসেন।

বহুদিন যাবত আমার নীম কারোলি বাবার লীলা ক্ষেত্র এবং আশ্রম দর্শন করার ইচ্ছে ছিলো। এবার ইচ্ছে পূরণ হলো। যারা নীম কারোলি বাবা সম্পর্কে জানেন না তাদের জন্য বলছি।ব্রিটিশ ভারতে উত্তর প্রদেশের ফিরোজাবাদে জন্মেছিলেন এই মহা পুরুষ, প্রথম জীবনে বিবাহ করে সংসার ও শুরু করেছিলেন কিন্তু হটাৎ একদিন সব ছেড়ে ঈশ্বর অনুসন্ধানে বেরিয়ে পড়লেন তিনি, বহু স্থান ঘুরলেন শেষে উত্তরা খন্ডের কাঁচি ধামে নিজের ছোট্ট একটি হনুমান মন্দির স্থাপন করে আধ্যাত্মিক সাধনায় নিজেকে নিয়োজিত করলেন। তিনি ছিলেন বজরংবলীর আশীর্বাদ ধন্য। অনেকেই তাকে বজরংবলীর সাক্ষাৎ অবতার বলে মনে করতো। বাবা ভিড় পছন্দ করতেন না তাই এই এই নির্জন প্রাকৃতিক স্থানে নিজের আশ্রম প্রতিষ্ঠা করে সাধনা করতেন।তার এই লীলা ক্ষেত্র তার বহু অলৌকিক কর্ম কাণ্ডের সাক্ষী থেকেছে। বহু বিখ্যাত মানুষ বাবার টানে এখানে ছুটে এসেছেন। আজও বাবা নীম কারোলির অলৌকিক উপস্থিতি অনুভব করা যায় এই স্থানে এলে।

এবার ফেরার পালা। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে আবার সিটিভিএন এর অনুষ্ঠানে এবং নিয়মিত সব চেম্বারে আমাকে পাবেন। চলতে থাকবে শাস্ত্রীয় অনুষ্ঠান এবং ধারাবাহিক লেখা লেখি।
ভালো থাকুন। পড়তে থাকুন। ধন্যবাদ।

আলমোড়ায় পন্ডিতজি

আলমোড়ায় পন্ডিতজি

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

দেবভূমি উত্তরাখণ্ডের কুমায়ুন অঞ্চলে অবস্থিত, আলমোড়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি এবং শান্ত স্থানগুলির জন্য বিখ্যাত।কেনো যে বিখ্যাত তা বেশ বুঝতে পারছি এখানে এসে।

আলমোড়ার অন্যতম দর্শনীয় স্থান হল কাসার দেবী, যেখান থেকে তুষারাবৃত হিমালয়ের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখা যায়। চার পাশ ঘন দেওদার বন এবং পাইন গাছ দ্বারা বেষ্টিত এই স্থান যুগ যুগ ধরে অসংখ্য দর্শণার্থীদের মুগ্ধ করে চলেছে।

কাসার দেবী দেবী দূর্গারই একটি রূপ।
প্রায় এক হাজার বছরের পুরনো এই মন্দিরটি চাঁদ রাজবংশের রাজারা দেবী নন্দ দেবীর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেছিলেন। এর প্রাঙ্গণে কাঠের ছাদ দিয়ে ঘেরা একটি বিশাল পাথরের মূর্তি স্থাপিত রয়েছে

এখানে ভক্তরা ইচ্ছাপূরণের পর তামার ঘণ্টা দিয়ে থাকেন।বহু যুগ থেকে ঘন্টা জমে জমে আজ আজ অজস্র ঘন্টায় মন্দির প্রাঙ্গন পরিপূর্ণ হয়ে গেছে।

স্বামী বিবেকানন্দর অন্ত্যন্ত প্রিয় ছিলো এই স্থান।
স্বামীজি প্রথমবার আলমোড়া এসেছিলেন ১৮৯০ সালে তারপর ১৮৯৭ ও ১৮৯৮ সালে বিবেকানন্দ আলমোড়ায় ফিরে এসেছিলেন। স্বামীজি এই স্থানে ধ্যানে বসে থাকতেন দীর্ঘ সময় ধরে। তার বহু লেখায় এবং তার গুরু ভাইদের লেখায় আলোমরা সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া যায়।

কাসার দেবীর মন্দিরের পাহাড়ের পাশ দিয়ে একটা পরিষ্কার রাস্তা উপরের দিকে উঠে গেছে। সেদিকে পাহাড়ের একেবারে উপরে জঙ্গলে ঘেরা নিঃশব্দ পরিবেশে রয়েছে সারদা মঠ।সারদা মঠ দর্শন করার সৌভাগ্য লাভ করে নিজেকে ধন্য মনে করছি।

আলমোড়া আকাশবাণী ভবনের কাছে। রাস্তার ওপরে স্বামীজির বিরাট মূর্তি আজও তার স্মৃতি বহন করে চলেছে। সেই মূর্তির পাশ দিয়ে নেমে গেছে সিঁড়ি। অনেকগুলো ধাপ নেমে মন্দিরে প্রবেশ করতে রামকৃষ্ণ কুঠিতে। রামকৃষ্ণ কুঠি বা মঠ দর্শন করা অত্যন্ত সৌভাগ্যর বিষয়।

আলোমোড়া এবং তার আশপাশের দর্শনীয় স্থান গুলি দেখা শেষ করে এবার যাবো নৈনিতালের দিকে। সেই অভিজ্ঞতাও যথা সময়ে আপনাদের সাথে ভাগ করে নেবো। সঙ্গে থাকুন।

দেবভূমিতে পন্ডিতজি – দ্বিতীয় পর্ব

দেবভূমিতে পন্ডিতজি – দ্বিতীয় পর্ব

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

ভ্রমণের দ্বিতীয় পর্বে মৌসুরি এবং পিথোরা গড় সংলগ্ন কিছু প্রাকৃতিক বিস্ময় এবং একাধিক প্রাচীন মন্দির ঘুরে দেখার সৌভাগ্য হলো।

মুসৌরিকে ভগবান যেনো তার নিজের হাতে যত্ন এবং সময় নিয়ে সাজিয়েছেন।এই মুসৌরির নাম মনসুর শব্দ থেকে এসেছে, যা একটি গুল্মকে বোঝায় যা এখানে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। গাড়ওয়াল হিমালয় পর্বতমালার মধ্যে অবস্থিত, মুসৌরিতে সারা বছর মনোরম আবহাওয়। ঠিক যেনো চীর বসন্তের দেশ।

মুসৌরির পর্যটন স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম কেম্পটিবীর্থি ফলস, ক্যামেলস ব্যাক রোড, লাল টিব্বা এবং কোম্পানি বাগান।চার পাশে হিমালয়ের অনেক গুলি সুন্দর তুষারবৃত শৃঙ্গ রয়েছে তবে
গান হিল হল মুসৌরির সর্বোচ্চ শৃঙ্গগুলির
মধ্যে একটি

এখানে পুরান, ইতিহাস, কিংবদন্তী এবং প্রকৃত মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে। যেমন এই সাপের চূড়া বা নাগ টিব্বা নিম্ন হিমালয় অঞ্চলের সর্বোচ্চ শৃঙ্গগুলির মধ্যে একটি। এই শৃঙ্গের নামকরণ করা হয়েছে সাপের দেবতার নামে। কিংবদন্তী অনুসারে তিনি গ্রামের গবাদি পশুদের রক্ষা করেন।

এই অঞ্চলের প্রাচীন মন্দিরগুলি ভারতের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, উন্নত স্থাপত্য শৈলী এবং ইতিহাসের কথা বলে। নন্দ দেবী মন্দির থেকে শুরু করে মা দুনাগুড়ি এবং পাতাল দেবী মন্দির পর্যন্ত প্রতিটি আলাদা করে আপনার নজর কাড়বে।

এই অঞ্চলে রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রাচীন এবং প্রসিদ্ধ শিব মন্দির। যার মধ্যের বৈজনাথ মন্দিরটি অন্যতম।বাগেশ্বর জেলার বৈজনাথ শহরের কাছে গরুড় উপত্যকায় এটি অবস্থিত। দ্বাদশ শতাব্দীর এই মন্দিরটিতে জটিল পাথরের কারোকার্য রয়েছে এবং এটি তার স্থাপত্য সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত।

তারপর গেছিলাম নকুলেশ্বর মন্দির যা পিথোরাগড় শহর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি শিব মন্দির।প্রাচীন এই শিব মন্দির এবং চার পাশের প্রকৃতি দেখে মুগ্ধ হলাম।

এরপর আছে অর্জুনেশ্বর মন্দিরটি। পিথোরাগড় শহরের এটি একটি বিখ্যাত শিব মন্দির । বিশ্বাস করা হয় যে মন্দিরটি অর্জুন কর্তৃক নির্মিত হয়েছিল।অর্থাৎ সেই মহাভারতের যুগ থেকে মন্দিরটি আছে। ভাবলেও শিহরিত হতে হয়।

আজ পাতাল ভুবনেশ্বর গুহায় যাওয়ার সৌভাগ্য হয়ে ছিলো। এখানে যাওয়ার পথটি একটি দীর্ঘ এবং সরু সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে গেছে। ভগবান শিব ছাড়াও শেষনাগ, কাল ভৈরব, গণেশ এবং আরও অনেক দেবতার রূপ পাতাল ভুবনেশ্বরে দেখা যায়। বিশ্বাস করা হয় যে এই গুহাটি ৩৩ কোটি দেবদেবীর আবাসস্থল।তাই সনাতন ধর্মে এই স্থানের আলাদা তাৎপর্য আছে।

পিথোরাগড় জেলার মনোরম পার্বত্য স্থানে অবস্থিত কপিলেশ্বর মহাদেব মন্দিরটির কথাও না বললে নয়। আধ্যাত্মিক এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যর অদ্ভুত মেল বন্ধন ঘটেছে এখানে।

জলপ্রপাত, মন্দির, পর্বত শৃঙ্গ সব মিলিয়ে বেশ স্বর্গীয় অনুভূতি হচ্ছে যার সবটা হয়তো ভাষায় প্রকাশ করা যায়না। তাও এই অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিলাম। আবার যা কিছু দেখবো। সব ভাগ করে নেবো যথা সময়ে। পড়তে থাকুন।

দেবভূমিতে পন্ডিতজি – দ্বিতীয় পর্ব

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

ভ্রমণের দ্বিতীয় পর্বে মুন্সীয়ারি এবং পিথোরা গড় সংলগ্ন কিছু প্রাকৃতিক বিস্ময় এবং একাধিক প্রাচীন মন্দির ঘুরে দেখার সৌভাগ্য হলো।

মুন্সীয়ারিকে ভগবান যেনো তার নিজের হাতে যত্ন এবং সময় নিয়ে সাজিয়েছেন।খুব সম্ভবত এই এলাকার নাম মনসুর শব্দ থেকে এসেছে, যা একটি গুল্মকে বোঝায় যা এখানে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। গাড়ওয়াল হিমালয় পর্বতমালার মধ্যে অবস্থিত, মুন্সীয়ারিতে সারা বছর মনোরম আবহাওয়। ঠিক যেনো চীর বসন্তের দেশ।

এখানকার পর্যটন স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম কেম্পটি ফলস, ক্যামেলস ব্যাক রোড, লাল টিব্বা এবং কোম্পানি বাগান।চার পাশে হিমালয়ের অনেক গুলি সুন্দর তুষারবৃত শৃঙ্গ রয়েছে তবে
গান হিল হল এখানে সর্বোচ্চ শৃঙ্গগুলির
মধ্যে একটি

এখানে পুরান, ইতিহাস, কিংবদন্তী এবং প্রকৃত মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে। যেমন এই সাপের চূড়া বা নাগ টিব্বা নিম্ন হিমালয় অঞ্চলের সর্বোচ্চ শৃঙ্গগুলির মধ্যে একটি। এই শৃঙ্গের নামকরণ করা হয়েছে সাপের দেবতার নামে। কিংবদন্তী অনুসারে তিনি গ্রামের গবাদি পশুদের রক্ষা করেন।

এই অঞ্চলের প্রাচীন মন্দিরগুলি ভারতের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, উন্নত স্থাপত্য শৈলী এবং ইতিহাসের কথা বলে। নন্দ দেবী মন্দির থেকে শুরু করে মা দুনাগুড়ি এবং পাতাল দেবী মন্দির পর্যন্ত প্রতিটি আলাদা করে আপনার নজর কাড়বে।

এই অঞ্চলে রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রাচীন এবং প্রসিদ্ধ শিব মন্দির। যার মধ্যের বৈজনাথ মন্দিরটি অন্যতম।বাগেশ্বর জেলার বৈজনাথ শহরের কাছে গরুড় উপত্যকায় এটি অবস্থিত। দ্বাদশ শতাব্দীর এই মন্দিরটিতে জটিল পাথরের কারোকার্য রয়েছে এবং এটি তার স্থাপত্য সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত।

তারপর গেছিলাম নকুলেশ্বর মন্দির যা পিথোরাগড় শহর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি শিব মন্দির।প্রাচীন এই শিব মন্দির এবং চার পাশের প্রকৃতি দেখে মুগ্ধ হলাম।

এরপর আছে অর্জুনেশ্বর মন্দিরটি। পিথোরাগড় শহরের এটি একটি বিখ্যাত শিব মন্দির । বিশ্বাস করা হয় যে মন্দিরটি অর্জুন কর্তৃক নির্মিত হয়েছিল।অর্থাৎ সেই মহাভারতের যুগ থেকে মন্দিরটি আছে। ভাবলেও শিহরিত হতে হয়।

আজ পাতাল ভুবনেশ্বর গুহায় যাওয়ার সৌভাগ্য হয়ে ছিলো। এখানে যাওয়ার পথটি একটি দীর্ঘ এবং সরু সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে গেছে। ভগবান শিব ছাড়াও শেষনাগ, কাল ভৈরব, গণেশ এবং আরও অনেক দেবতার রূপ পাতাল ভুবনেশ্বরে দেখা যায়। বিশ্বাস করা হয় যে এই গুহাটি ৩৩ কোটি দেবদেবীর আবাসস্থল।তাই সনাতন ধর্মে এই স্থানের আলাদা তাৎপর্য আছে।

পিথোরাগড় জেলার মনোরম পার্বত্য স্থানে অবস্থিত কপিলেশ্বর মহাদেব মন্দিরটির কথাও না বললে নয়। আধ্যাত্মিক এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যর অদ্ভুত মেল বন্ধন ঘটেছে এখানে।

জলপ্রপাত, মন্দির, পর্বত শৃঙ্গ সব মিলিয়ে বেশ স্বর্গীয় অনুভূতি হচ্ছে যার সবটা হয়তো ভাষায় প্রকাশ করা যায়না। তাও এই অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিলাম। আবার যা কিছু দেখবো। সব ভাগ করে নেবো যথা সময়ে। পড়তে থাকুন।

দোল পূর্ণিমার পৌরাণিক ব্যাখ্যা

দোল পূর্ণিমার পৌরাণিক ব্যাখ্যা

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আজ পবিত্র দোল পূর্ণিমা। বর্তমানে দোল একটি সামাজিক আনন্দ উৎসব রূপে পালিত হলেও আসলে দোল পূর্ণিমা কিন্তু একটি পৌরাণিক বা শাস্ত্রীয় উৎসব কারন এই উৎসবের সূচনা করে ছিলেন স্বয়ং শ্রী কৃষ্ণ।আজ জানাবো সেই পৌরাণিক ব্যাখ্যা।

 

শাস্ত্র মতে বসন্তের পূর্ণিমার এই দিনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কেশি নামক অসুরকে বধ করেন।

আবার কিছু শাস্ত্রে অরিষ্টাসুর নামক অসুর বধের কথাও আছে। অন্যায়কারী, অত্যাচারী এই অসুরকে বধ করার পর তার রক্ত ছিটিয়ে সকলে আনন্দ করে। এই অশুভ শক্তিকে ধ্বংসের আনন্দ মহানন্দে পরিণত হয়।সেই উৎসবই পরবর্তীতে রঙের উৎসব হয়ে ওঠে

 

আবার দৈত্যরাজ হিরণ্যকিশপুর কাহিনি আমরা সকলে জানি। ভক্ত প্রহ্লাদ অসুর বংশে জন্ম নিয়েও পরম ধার্মিক ছিলেন। তাঁকে যখন বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও হত্যা করা যাচ্ছিল না তখন হিরণ্যকিশপুর বোন হোলিকা প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে আগুনে প্রবেশের সিদ্ধান্ত নেয়। কারণ হোলিকা এই বর পেয়েছিল যে আগুনে তার কোন ক্ষতি হবে না। কিন্তু অন্যায় কাজে শক্তি প্রয়োগ করায় এবং বিষ্ণু ভক্তকে হত্যার অপরাধে হোলিকা প্রহ্লাদকে নিয়ে আগুনে প্রবেশ করলে আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।প্রহ্লাদ অক্ষত থাকেন এই ঘটনার জন্য এই দিনটি আনন্দ উৎসবে

পরিণত হয়।

 

বাংলায় যেদিন দোল পূর্ণিমা পালিত হয় তার আগের দিন সারা দেশে পালিত হয় হোলি। আবার বাংলার কোথাও কোথাও ওই দিন আগুন জ্বালানোর রীতি ও আছে যা অশুভ শক্তিকে ধ্বংস করার প্রতীক।

 

আবার বাঙালি তথা হিন্দু সমাজের অন্যতম মহাপুরুষ শ্রীচৈতন্যের জন্মতিথি হচ্ছে এই পূর্ণিমা তিথি তথা হোলি তিথি। এই মহান পুরুষের জন্ম উৎসবের মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে এবং গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজ ও পরবর্তীতে ইস্কন এই দোল উৎসবকে আন্তর্জাতিক স্তরে উন্নীত করেছে|আজ প্রায় সারা বিশ্ব জুড়ে পালিত হয়

দোল উৎসব।

 

সবাইকে আমার তরফ থেকে দোল যাত্রার অসংখ্য শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন। শাস্ত্রীয় এবং পৌরাণিক বিষয় নিয়ে আলোচনা চলতে থাকবে। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।