Home Blog Page 23

দেবভূমিতে পন্ডিতজি

দেবভূমিতে পন্ডিতজি

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

দেবভূমি উত্তরাখন্ড কেনো যে দেব ভূমি তা এখানকার কয়েকটি বিশেষ স্থানে এলে বেশ বোঝা যায়। এমনই একটি স্থান রানীক্ষেত এবং এর আশেপাশের এলাকা। এখানেই আছে ঝুলা দেবী মন্দির। এই পবিত্র মন্দিরটি দেবী দুর্গার উদ্দেশ্যে নিবেদিত এবং এর নামকরণ করা হয়েছে ঝুলা দেবী কারণ অধিষ্ঠাত্রী দেবীকে দোলনার উপর বসে থাকতে দেখা যায়। এই মন্দিরটি ৭০০ বছরের পুরনো। চার পাশের প্রকৃতি এক কথায় অপূর্ব।
আমি এবং আমার পরিবার আজ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করে এক কথায় মুগ্ধ।

তারপর গেলাম জিম করবেট জাতীয় উদ্যান দেখতে।এই উদ্যানটি বিপন্ন প্রজাতি, অনন্য উদ্ভিদ ও প্রাণী, শান্ত পরিবেশ এবং অনুকূল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেয়। উত্তরাখণ্ডের পৌরি গাড়োয়াল, আলমোড়া এবং নৈনিতালের মনোরম অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত, জিম করবেট কেবল ভারতের প্রাচীনতম জাতীয় উদ্যানগুলির মধ্যে একটি নয়, বরং বিপন্ন বেঙ্গল টাইগার সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।নৈনিতাল জেলায় এই অঞ্চলে এক সময় বাঘ শিকার করতেন করবেট সাহেব তার নামেই এই পার্কের নাম। তবে তিনি নিছক শিকারি ছিলেন না তিনি ছিলেন বণ্য প্রাণ প্রেমিক কেবল মাত্র নর খাদক বাঘ সংহার করতে তার ডাক পড়তো।

কৌশানির কথা আলাদা করে বলতে হয় ছোট্ট রাজ্য উত্তরাখণ্ডের কৌশানি শহর অনেকটা রূপকথার রাজ্যের মতো। তুষারশুভ্র হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত এই ছোট্ট শহরের রূপসৌন্দর্য এক কথায় অতুলনীয় ।

একবার ১৯২৯ সালে মহাত্মা গান্ধী এই স্থানে ভ্রমণ করে অভিভূত হয়েছিলেন । কৌশানির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তিনি এই শহরকে ভারতের সুইজারল্যান্ড হিসেবে আখ্যা দেন । পরবর্তী কালে গান্ধীজীর এই স্মৃতিবিজড়িত স্থানটিকে গান্ধী আশ্রমে পরিণত করা হয় । বর্তমানে এটি একটি রিসার্চ সেন্টার।
গান্ধীজীর বই এবং চিত্র সহযোগে এটি একটি মিউজিয়ামে পরিণত হয়েছে।এই সংগ্রহশালাও এখানে এসে ঘুরে দেখলাম এবিং ইতিহাসের সাক্ষী থাকলাম।

আবার পরবর্তী ভ্রমনের অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে আসবো খুব তারাতাড়ি। দেখতে থাকুন।

দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ – কাশী বিশ্বনাথ মন্দির

দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ – কাশী বিশ্বনাথ মন্দির

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

ভারতের উত্তর প্রদেশের বারাণসী তে গঙ্গার পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত “কাশী বিশ্বনাথ ” দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম|বারাণসীর অপর নাম কাশী তাই এই মন্দির কে কাশী বিশ্বনাথ বলা হয়|

কথিত আছে কাশী এই জগতের বাইরে। শিবের ত্রিশুলে অবস্থিত এই নগরী। মহা প্রলয়ে সব ধ্বংশ হয়ে গেলেও কাশী অক্ষত থাকবে।কাশীতে স্নান করে মহাদেব ব্রহ্ম হত্যার পাপ থেকে মুক্ত হয়েছিলেন তাই তাকে মুক্তেশ্বর মহাদেব ও বলা হয়।

শিব এখানে বিশ্বনাথ বা বিশ্বেস্বর রূপে প্রতিষ্ঠিত|
মন্দির ও শিব লিঙ্গ এখানে কবে থেকে প্রতিষ্ঠিত তা সঠিক ভাবে বলা যায়না|স্কন্দ পুরাণেও এই জ্যোতির্লিঙ্গের উল্লেখ আছে|কথিত আছে, সতীর দেহত্যাগের পর শিব মণিকর্ণিকা ঘাট দিয়ে কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরে এসেছিলেন|বিশ্বাস করা হয় শিব স্বয়ং এখানে বাস করতেন|এই মন্দির ও শিব লিঙ্গ নিয়ে যুগ যুগ ধরে চলে আসছে অসংখ্য প্রচলিত কিংবদন্তী যা প্রতিটি শিব ভক্তের কাছে ধ্রুব সত্য|এই মন্দিরের ইতিহাসও বৈচিত্রময় ও বর্ণময়|বহু ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী কাশী বিশ্বনাথ মন্দির|

অতীতে বিশেষত মুসলিম শাসন কালে বহুবার ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে এই মন্দির এবং পুনরায় নতুন করে সৃষ্টিও হয়েছে|পুরাকাল থেকে এই মন্দিরের অস্তিত্ব থাকলেও একাদশ শতাব্দীতে হরি চন্দ্র মন্দিরটি পুনর্নির্মাণ করেছিলেন|তারপর পর্যায়ক্রমে মোহাম্মদ ঘোরী,কুতুবুদ্দিন আইবক, ফিরোজ শাহ তুঘলক ও ঔরংযেব মন্দির টি ধ্বংস করেন|প্রতিবারই অবশ্যই পুনরায় মাথা তুলে দাঁড়ায় কাশী বিশ্বনাথ মন্দির|বর্তমান সময়ে যে মন্দিরটি রয়েছে তা ১৭৮০ সালে ইন্দোরের মহারানি অহিল্যা বাই হোলকর তৈরি করে দিয়েছিলেন|পরবর্তীকালে ১৮৩৫ সালে পাঞ্জাবের শিখ সম্রাট রঞ্জিত সিংহমন্দিরের চূড়াটি ১০০০ কিলোগ্রাম সোনা দিয়ে মুড়ে দেন|বর্তমান মন্দিরটির উচ্চতা 15.5 মিটার এবং চুড়োটি সোনায় মোড়ানো বলে অনেকে এই মন্দির কে স্বর্ন মন্দিরও বলেন|

প্রধান মন্দিরের মধ্যে একটি ৬০ সেন্টিমিটার উঁচু ও ৯০ সেন্টিমিটার পরিধির শিবলিঙ্গ রুপোর বেদির উপর স্থাপিত।মুল মন্দির প্রাঙ্গনে একটি প্রাচীন কূপ লখ্য করা যায়, কথিত আছে অতীতে একবার শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে মন্দিরের পুরোহিত শিব লিঙ্গ নিয়ে ওই কূপে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন|

সনাতন ধর্মে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলির মধ্যে একদম প্রথম সারিতে রয়েছে বারাণসী বা কাশী আর এই প্রাচীন ধর্মীয় নগরীর ধর্মচর্চার প্রানকেন্দ্র হচ্ছে কাশী বিশ্বনাথ মন্দির।

ফিরে আসবো পরবর্তী জ্যোতির্লিঙ্গ নিয়ে আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ – বৈদ্যনাথ ধাম

দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ – বৈদ্যনাথ ধাম

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আজকের পর্বে বৈদ্যনাথ ধাম নিয়ে আলোচনা করবো। এটি দ্বাদশ জ্যোৎরলিঙ্গের অন্যতম অর্থাৎ একটি শৈব তীর্থ আবার শক্তি পীঠ ও বটে।

এই মন্দিরটি বর্তমানে ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের দেওঘর জেলায় অবস্থিত।

 

পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে এখানে সতীর হৃদয় বা হৃৎপিণ্ড পড়েছিল। বৈদ্যনাথ ধামে অধিষ্ঠিত দেবী জয় দুর্গা ও ভৈরব হলেন স্বয়ং শিব যিনি বৈদ্যনাথ রূপে এখানে বিরাজমান।

 

পুরানে আছে একবার রাবন শিবকে স্থায়ী ভাবে লঙ্কায় নিয়ে যেতে কঠোর তপস্যা করেন।তপস্যয় সন্তুষ্ট হয়ে চন্দ্রহাস নামে একটি বিরাট শক্তিশালী অস্ত্রও রাবণকে উপহার হিসেবে প্রদান করেন, কিন্তু নিজের সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন রাবন, শেষমেষ শিব আত্মলিঙ্গ অর্পণ করে লঙ্কার প্রতিষ্ঠা করতে বলেন তাকে।শর্ত ছিলো কৈলাস থেকে লঙ্কার পথে যাওয়ার সময় কোথাও যদি রাবণ শিবলিঙ্গ কে কোন জায়গায় রেখে দেন, তাহলে তিনি সেখানেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবেন। দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে লঙ্কায় যাওয়ার পথে ক্লান্ত এবং তৃষ্ণার্থ রাবন এই স্থানে শিবলিঙ্গ কিছুক্ষনের জন্য নামিয়ে রাখেন আর সেখানেই শিবলিটি প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছিল। সেই শিব লিঙ্গই বৈদ্য নাথ রূপের এই শক্তি পীঠের ভৈরব রূপে বিরাজ করছে।

 

এই শিব খেত্রে শিবকে বৈদ্যনাথ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যার অর্থ হল যিনি সর্বরোগহারি, রামায়ণেও এই বৈদ্যনাথ

মন্দিরের উল্লেখ পাওয়া যায়।শিব পুরাণে এই মন্দিরকে দুটি আত্মার মিলনস্থল বলেও বর্ণনা করা হয়েছে।কারন এটিই একমাত্র শক্তিপীঠ যেখানে বৈদ্যনাথে শিব এবং শক্তি একসাথে বিরাজমান।একটি প্রচলিত বিশ্বাস আছে যে এই মন্দিরে বর ও কনের একসঙ্গে বিবাহ দিলে তাদেরও বন্ধন অটুট হয়।

 

প্রাচীন কালে মন্দিরের কিছু দূরে শ্মশান ছিল, যেখানে মায়ের হৃদয় পড়েছে বলে মনে করা হয়, এই জায়গাটি বর্তমানে “চিতাভূমি” নামে পরিচিত সকলের কাছে। মায়ের হৃদয় পতিত হওয়ার এই শক্তিপীঠ “হৃদয় পিঠ” নামেও ডাকা হয়।

 

ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী মোঘল সম্রাট আকবরের সেনাপতি মানসিংহ এই বৈদ্যনাথ মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন এবং দেওঘর রাজ্যের রাজা দ্বিধাউর এই মন্দির নির্মাণের কাজে অনেকখানি সহযোগিতা করেছিলেন। পরবর্তী কালে এই মন্দির একাধিক বার সংস্কার করা হয় এমনকি ব্রিটিশ আমলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিও এই মন্দিরের রক্ষনাবেক্ষনের ভার নিয়ে ছিলো।

 

শক্তি পীঠ হওয়ায় অমাবস্যা তিথি গুলিতে এখানে ধুমধাম করে পুজো হয় আবার জ্যোতির্লিঙ্গ থাকায় বৈদ্যনাথে বিরাট আকারে পালিত হয় মহা শিবরাত্রি।

 

আজকের একান্ন পীঠ পর্ব এখানেই শেষ করছি।

দেখা হবে পরের পর্বে থাকবে পরবর্তী জ্যোতির্লিঙ্গ নিয়ে আলোচনা। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ – মহাকালেশ্বর মন্দির 

দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ – মহাকালেশ্বর মন্দির

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের প্রায় প্রতিটির সাথেই জড়িত আছে একাধিক পৌরাণিক ঘটনা এবং ইতিহাস আজকের পর্বে জানবো জ্যোতির্লিঙ্গ মহাকালেশ্বরের কথা|

 

বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম এই মহাকালেশ্বর অবস্থিত মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনীতে, রূদ্র সাগর হ্রদের তীরে|শিব এখানে সয়ম্ভু|এই শিব লিঙ্গ কে দক্ষিনা মূর্তিও বলা হয় কারন তাঁর অবস্থান দক্ষিণ মুখী|এই জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম বৈশিষ্ট হলো তান্ত্রিক নেত্র যা আর কোনো মূর্তিতে চোখে পরে না|ওঙ্কারেশ্বর এর ন্যায় এই শিব মন্দির ও পাঁচটি তল বিশিষ্ট যা মহাকাল মন্দির নামে খ্যাত।

 

মহাদেবে’র মূর্তিটি মহাকাল মন্দিরের গর্ভগৃহের উপরে স্থাপিত|এছাড়াও মন্দিরের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে গনেশ, পার্বতী, কার্তিক ও নন্দীর মূর্তি|সুবিস্তৃত মন্দির প্রাঙ্গন ও সুউচ্ছ চূড়া মহাকাল মন্দিরের সৌন্দর্য বহু অংশে বৃদ্ধি করে|ভূগর্ভস্থ কক্ষটির পথটি পিতলের প্রদীপ দ্বারা আলোকিত হয়। মনে করা হয়, দেবতাকে এই কক্ষেই প্রসাদ দেওয়া হয়|এ এক ব্যতিক্রমী ও স্বতন্ত্র প্রথা।

 

এবার আসি পুরানের কথায় পুরাণ অনুসারে উজ্জয়িনী শহরটির নাম ছিল অবন্তিকা|অবন্তিকার রাজা ছিলেন শিব ভক্ত কিন্তু এই সৎ এবং শিব ভক্ত রাজার শত্রুও ছিলো অনেক |একবার ব্রহ্মার আশীর্বাদে দূষণ নামে এক দৈত্য অদৃশ্য হয়ে যাবার ক্ষমতা পেয়েছিল। প্রতিবেশী শত্রুরাজারা দূষণের সাহায্যে উজ্জয়িনীর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে এবং উজ্জ্বয়ীনি আক্রমণ করেন। যুদ্ধে তাদেরই জয় হয় এবং তারা সকল শিবভক্তের উপর অত্যাচার শুরু করে দেন।অসহায় ভক্তদের প্রার্থনা শুনে শিব মহাকালের রূপে উজ্জয়িনীতে আবির্ভূত হয়ে অসুর ও রাজার বাকি শত্রুদের পরাজিত করেন।ভক্ত দের অনুরোধে শিব উজ্জয়িনীতে বাস করতে রাজি হন|সেই থেকে তিনিই হন রাজ্যের প্রধান দেবতা এবং শিবভক্তদের রক্ষাকর্তা।

 

সনাতন ধর্ম বিশ্বাস অনুসারে, এই মন্দিরের প্রধান উপাস্য দেবতা শিব অনন্তকাল ধরে উজ্জয়িনীর শাসক|তিনি পার্বতী সহ এখানে স্বমহিমায় বিরাজমান|এই চত্বরেই রয়েছে শক্তি পীঠ মহাকালী ও স্বপ্নেশ্বর মহাদেবের মন্দির|

 

 

ইতিহাস অনুসারে সুলতান ইলতুৎমিসের শাসন কালে ধ্বংস করা হয় মহাকাল মন্দির|পরবর্তীতে শিব ভক্ত মারাঠা পেশোয়ারা আবার এই মন্দির পুনর্নির্মাণ করান|ভারতের স্বাধীনতার পর দেবস্থান ট্রাস্টের পরিবর্তে উজ্জয়িনী পৌরসংস্থা এই মন্দিরের ভার নেয়। বর্তমানে এটি একটি স্বাধীন কমিটির অধীনে রয়েছে।

 

অসংখ্য ভক্ত ও দর্শনার্থী প্রায় সারা বছরই আসেন মহাকাল মন্দিরে, তাদের মনোস্কামনা জানান ও প্রচলিত বিস্বাস বাবা মহাকালেশ্বর কাউকে খালি হাতে ফেরান না|প্রতি বছর শিব রাত্রিতে এখানে মেলা বসে ও সেই উপলক্ষে ব্যাপক জন

সমাগম হয়|

 

আবার আগামী পর্বে আলোচনা করবো অন্য একটি জ্যোতির্লিঙ্গ নিয়ে এবং শিব সংক্রান্ত এই ধারাবাহিক আলোচনা চলতে

থাকবে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ – ভীমা শঙ্কর শিব মন্দির 

দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ – ভীমা শঙ্কর শিব মন্দির

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

শক্তি পীঠ বা সিদ্ধ পীঠের সংখ্যা এবং প্রকৃত স্থান নিয়ে যেমন বিতর্ক আছে বা মত পার্থক্য আছে তেমনই কিছু জ্যোতির্লিঙ্গের স্থান নিয়েও বিতর্ক আছে।এমনই এক জ্যোতির্লিঙ্গ ভীমা শঙ্কর যা আমার আজকের পর্বে আলোচ্য বিষয়।

 

অনেকেই মনে করেন পুনেতে অবস্থিত ভীমা শংকর হচ্ছে প্রকৃত জ্যোতির্লিঙ্গ আবার কেউ কেউ বিশ্বাস করেন আসামে অবস্থিত এই ভীমেস্বরই হচ্ছেন ভীমাশংকর এবং এই স্বয়ংভু শিব লিঙ্গই প্রকৃত জ্যোতির্লিঙ্গ।

 

আজ আমি আসামের ভীমা শঙ্করের কথাই বলছি কারন জ্যোতির্লিঙ্গ রূপে এই মন্দির অধিক জনপ্রিয় এবং স্বীকৃত।আসামের গুয়াহাটির কাছে দীপর হ্রদের ধারে ডাইনি পাহাড় বা ডাকিনি পাহাড় নামে এক বেশ রহস্যময় স্থানে ভীমশঙ্কর অবস্থিত|এখানে শিব মন্দির ও শিব লিঙ্গ প্রায় প্রাকৃতিক ভাবেই তৈরি যা আধ্যাত্মিক ভাবে দর্শনার্থীদের মোহিত করে|

 

শিব লিঙ্গের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এক প্রাকৃতিক জলধারা বা ঝর্না|দু ধারে সবুজ বনাঞ্চল ও জল ধারা দেখতে দেখতে পাহাড়ি পথ অতিক্রম করে এই স্থানে পৌঁছানো এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।জ্যোতির্লিঙ্গ থেকে কিছু দূরেই রয়েছে একটি গণেশ মন্দির|সেখানেও ভক্তিভরে পূজা দেন দর্শনার্থীরা|

 

এই শিব লিঙ্গ ও শিব মন্দির তৈরির পেছনে রয়েছে এক পৌরাণিক ঘটনা|শিব পুরান মতে কুম্ভ কর্ণ ও পাতাললোকের রাজকুমারী কর্কটির পুত্র ছিলেন ভীমাসুর যিনি ব্রম্ভার বর লাভ করে অজেও হয়ে উঠেছিলে|অহংকার ও ঔদ্ধত্যর বশবর্তী হয়ে তিনি কামরূপ রাজ প্ৰিয়ধর্ম কে হত্যা করতে যান|রাজা ছিলেন পরম শিব ভক্ত|তিনি শিবের কাছে প্রার্থনা করলে যথা সময়ে স্বয়ং শিব প্রকট হয়ে ভীমাসুর কে হত্যা করেন ও কাম রূপ রাজ কে রক্ষা করেন|পরবর্তীতে রাজা এবং অন্যান্য ঋষি মুনি দের অনুরোধ রাখতে শিব সেই স্থানে বিরাজমান হতে সম্মতি দেন|আজও তিনি ডাকিনি পাহাড়ে অবস্থিত ভীমশংকরে জ্যোতির্লিঙ্গ রূপে স্বমহিমায় বিরাজমান|ভীমাসুরের নাম থেকেই ভীমেস্বর বা ভীম শংকর নামের সৃষ্টি|

 

বেশ কয়েক বছর আগে আমি ধন্য হয়েছি এই জ্যোতির্লিঙ্গ দর্শন করে। এখানকার প্রকৃতি এবং আধ্যাত্মিক পরিবেশ নানা দিক দিয়ে অতুলনীয়।

 

পরবর্তী জ্যোতির্লিঙ্গ সংক্রান্ত আলোচনা এবং

শিব মহিমার বর্ণনা নিয়ে ফিরে আসবো

আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ – ত্রম্ব্যকেশ্বর মন্দির

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে লগ্ন কুন্ডলি তে যে কয়েকটি অশুভ গ্রহগত সংযোগ থাকে তার মধ্যে অন্যতম কাল স্বর্প দোষ|মোট বারো প্রকারের কাল স্বর্প দোষ থাকে যার সব গুলোই একেকটা সাপের নামে।আজ যে জ্যোতির্লিঙ্গটি নিয়ে আলোচনা করবো তার সাথে এই কালসর্প দোষের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে।

 

পুরান মতে একবার গণেশ মহাদেবের পুজো করেন সেই সময়ে শিবের গলায় থাকা বাসুকি নাগের মনে হয় যে গণেশ তারই পুজো করছেন। তার এই ঔদ্ধত্যের জন্য শিব রেগে গিয়ে তাকে অভিশাপ দেন যে নাগকূল তাদের সব ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে।তাই হয়|পরবর্তীতে ক্ষমতা হারিয়ে ফেলা নাগেরা শিবের কাছে গিয়ে অভিশাপ ফিরিয়ে নেওয়ার আবেদন জানায়। শিব তখন দয়া বসত তাদের মর্ত্যে গিয়ে তাঁর পুজো করতে বলেন|নাগকুল এই ত্রম্বকেশ্বর মন্দিরে শিব পূজা করে তাদের হারানো গৌরব ফিরে পায়|

 

আরেকটি পৌরাণিক আখ্যান মতে রাহু ও কেতুও এই স্থানে মহাদেবের পুজো করেছিলেন।যেহেতু রাহু এবং কেতু নাগ রূপে গ্রহদের গ্রাস করে কাল সর্প দোষের জন্মদেয় তাই এই স্থানের সাথে জ্যোতিষ শাস্ত্র এবং বিশেষ করে কাল সর্প দোষ খন্ডনের গভীর আধ্যাত্মিক সম্পর্ক স্থাপন হয়েছে।

 

মহা রাষ্ট্রে অবস্থিত বর্তমান মন্দির টি নির্মাণ করিয়েছিলেন পেশোয়া তৃতীয় বালাজি বাজি রাও,1755 থেকে 1786 দীর্ঘ একত্রিশ বছর লেগেছিলো এই মন্দির নির্মাণ সম্পুর্ন হতে|ত্র্যম্বকেশ্বর মন্দিরের পিছনের পাহাড় ব্রহ্মগিরি থেকে উদ্ভূত হয়ে গোদাবরী গুপ্ত ভাবে পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে এসে ক্ষীণ আকারে বেরিয়ে আসছে জ্যোতির্লিঙ্গ ত্র্যম্বকেশ্বরের মধ্য থেকে। মন্দির থেকে কিছু দূরে কুশাবর্ত কুণ্ড ও গোমতী ঘাট। কুম্ভপর্বে যে তিনটি স্নান হয়, তার একটি রামতীর্থ রামঘাটে ও অপর দুটি হয় এই কুশাবর্ত তীর্থে। কয়েক বছর আগে আমি নিজে গিয়েছিলাম ত্রম্বকেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ দর্শন করতে এবং

অভিভূত হয়ে ছিলাম সেই আধ্যাত্মিক পরিবেশ এবং অলৌকিক শক্তির উপস্থিতি উপলব্ধি করে।

 

আজও বহু মানুষ আসেন এই মন্দিরে রাহু কেতুর অশুভ প্রভাব বিশেষ করে কালসর্প দোষ থেকে মুক্তি পেতে।

 

ফিরে আসবো আরো একটি জ্যোতির্লিঙ্গর কথা নিয়ে সঙ্গে থাকবে পৌরাণিক এবং শাস্ত্রীয় নানা তথ্য। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ – নাগেশ্বর শিব মন্দির

দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ – নাগেশ্বর শিব মন্দির

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আজকের পর্বে নাগেশ্বর শিব মন্দির নিয়ে।

এই বিশেষ জ্যোতির্লিঙ্গ টির সঠিক অবস্থান নিয়ে কিছু বিতর্ক বা মতপার্থক্য রয়েছে|যদিও বর্তমানে এই শিব লিঙ্গ ও মন্দির ভারতের গুজরাটের দ্বারকায় অবস্থিত কিন্তু অনেকেই মনে করেন ভারতের উত্তরে হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত যোগেশ্বর শিব লিঙ্গই আসলে জ্যোতির্লিঙ্গ তবে দ্বারকার নাগেশ্বর শিব মন্দিরই জ্যোতির্লিঙ্গের মর্যাদা পায়।

 

এই জ্যোতির্লিঙ্গ সৃষ্টি নিয়ে শিব পুরানে এক সুন্দর পৌরাণিক আখ্যান আছে|এক কালে এই অঞ্চলের শাসক ছিলো দারুক নামে এক অত্যাচারি রাক্ষস|নিজের প্রাধান্য বিস্তারের জন্য সে সবার উপর খুব অত্যাচার করতো|তার রাজ্য বাস করতো সুপ্রিয় নামে এক শিব ভক্ত|একদিন দারুক তাকে বন্দী করে ও অত্যাচার শুরু করে|সুপ্রিয় ভয় না পেয়ে আরাধ্য মহাদেব কে ডাকতে থাকেন|ভক্তর ডাকে সাড়া দিয়ে প্রকট হন মহাদেব ও বধ করেন রাক্ষস দারুককে|এর পর সুপ্রিয়র অনুরোধে এখানেই জ্যোতির্লিঙ্গ রূপে বাস করতে সম্মত হন মহাদেব|

 

নাগেশ্বর অর্থ্যাৎ নাগেদের ঈশ্বর|দেবী পার্বতীও এই স্থানে নাগেশ্বরী রূপে বিরাজিতা|সারা বছর অসংখ্য ভক্ত ও দর্শনার্থী ভীড় করেন নাগেশ্বর মন্দিরে।জ্যোতির্লিঙ্গ ও সুন্দর শিব মন্দিরটি দর্শন করে নিজেদের ধন্য করেন।

 

অন্যান্য জ্যোতির্লিঙ্গের ন্যায় শিব রাত্রিতে ও কিছু বিশেষ তিথীতে এখানেও বিশেষ পূজা হয় ও সেই উপলক্ষে ব্যাপক জনসমাগম হয়|দুর দূরান্ত থেকে মানুষ আসেন তাদের মনোস্কামনা নিয়ে|ভক্তদের বিশ্বাস বাবা নাগেশ্বর সকল ভক্তের মনোস্কামনা পূরণ করেন।

 

আজকের জ্যোতির্লিঙ্গ পর্ব এখানেই শেষ করে আজ বিদায় নেবো|দেখা হবে পরের পর্বে। থাকবে অন্য একটি জ্যোতির্লিঙ্গ নিয়ে শাস্ত্রীয় আলোচনা।

পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ – সোমনাথ মন্দির

দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ – সোমনাথ মন্দির

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

ফিরে এলাম দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের এক সম্পূর্ণ নতুন এক পর্ব নিয়ে|আজ লিখবো সোমনাথ মন্দির নিয়ে|

গুজরাটের বেরাবলে অবস্থিত সোমনাথ মন্দির দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম|এর ইতিহাস অতি প্রাচীন ও ঘটনাবহুল|ভারতের জনপ্রিয় তীর্থ ক্ষেত্র গুলির মধ্যে একদম প্রথম সারি তে আছে এই বিশেষ মন্দিরটি|সোমনাথ কে ঘিরে আছে নানা গল্প, ঐতিহাসিক ও পৌরাণিক ঘটনা আর সব কিছুর উপরে আছে এই তীর্থ ক্ষেত্র কে কেন্দ্র করে অসংখ্য মানুষের বিশ্বাস ও শ্ৰদ্ধা|সোমনাথ শব্দের প্রকৃত অর্থ হলো চন্দ্র দেবতার রক্ষা কর্তা, এই মন্দির চিরন্তন পীঠ নামেও পরিচিত কারন অতীতে একাধিক বার আক্রান্ত হয়েছে এই মন্দির, ধ্বংস প্রাপ্ত হয়েছে কিন্তু প্রতিবারই পুনরায় মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে সোমনাথ মন্দির|

কথিত আছে মন্দিরটি খ্রিস্টের জন্মের আগেও বিদ্যমান ছিলো|আরবের শাসক জুনায়েদ, আলাউদ্দিন খিলজি, মামুদ গজনী ও সুলতান মুজাফ্ফর শাহ পর্যায় ক্রমে সোমনাথ মন্দির আক্রমণ করেন লুঠপাঠ চালান ও ধ্বংস করেন|সোমনাথ মন্দির তবু অক্ষয় ও অমর |সনাতন ধর্মের প্রতীক হয়ে তা আজও স্বমহিমায় বিরাজমান|এথেকে এও প্রমান হয় যে ধ্বংসের থেকে সৃষ্টি বড়ো|বর্তমানে সোমনাথ মন্দির শ্রীসোমনাথ ট্রাস্ট দ্বারা পরিচালিত হয়|

পুরান মতে দক্ষ প্রজাপতি একবার চন্দ্র কে অভিশাপ দিয়েছিলেন এবং সেই অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে চন্দ্রদেব শিবের আরাধনা শুরু করেন|তার আরাধনায় তুষ্ট হয়ে শিব প্রকট হন ও চন্দ্র কে অভিশাপ থেকে নিষ্কৃতি দেন|চন্দ্র পরবর্তীতে শিব কে সন্তুষ্ট করার জন্য একটি স্বর্ণ নির্মিত শিব মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন যা সোমনাথ মন্দির নামে খ্যাত|সোমনাথ মন্দিরের শিব সোমেশ্বর মহাদেব নামে পরিচিত |বহুকাল পড়ে শিব ভক্ত রাবন রুপো এবং চন্দন কাঠ দিয়ে এই মন্দির পুনর্নির্মাণ করেন বলে বিশ্বাস করা হয়|তারও অনেক পড়ে ভীমদেব নামে এক রাজপূত রাজা সোমনাথ মন্দিরের সংস্কার করে পুনর্নির্মাণ করেন|তবে বর্তমান সময়ে আমরা যে মন্দির টি দেখতে পাই তার নির্মাণের রূপকার ভারতের লৌহ পুরুষ সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল|

গুজরাট তথা ভারতের অন্যতম দর্শনীয় স্থান এই জ্যোতির্লিঙ্গ যা দেখতে দেশ বিদেশ থেকে প্রতি বছর অসংখ্য ভক্ত ও দর্শনার্থী ভীড় জমান সোমনাথ প্রাঙ্গনে।

জ্যোতির্লিঙ্গ সোমনাথ নিয়ে আজ এটুকুই
ফিরবো পরের পর্বে অন্য কোনো জ্যোতির্লিঙ্গের কথা নিয়ে। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ সৃষ্টি

দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ সৃষ্টি

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আজ থেকে ধারাবাহিক ভাবে আপনাদের শোনাবো দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের কথা আজকের পর্বে শোনাবো দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ সৃষ্টি হওয়ার পৌরাণিক কাহিনী|

 

কীভাবে সৃষ্টি হল এই ১২টি জ্যোতির্লিঙ্গের, তার নেপথ্যে রয়েছে একটি পৌরাণিক কাহিনি। গল্পটা হল এইরকম। একবার ব্রহ্মা আর বিষ্ণুর মধ্যে জোর লড়াই বাঁধল। বিষ্ণু বললেন আমি শ্রেষ্ঠ আর ব্রহ্মা বললেন আমি। মীমাংসা করতে দুজনে গেলেন শিবের কাছে। শিব তখন স্বর্গ, মর্ত আর পাতাল ফুঁড়ে দেখা দিলেন এক আদি অনন্ত আগুনের স্ফুলিঙ্গ হিসেবে। তিনি ব্রহ্মা আর বিষ্ণুকে বললেন যে এই অগ্নিস্ফুলিঙ্গের শুরু বা শেষ খুঁজে বের করতে পারবে, প্রমাণ হবে সেই শ্রেষ্ঠ।বিষ্ণু শুয়োর বা বরাহের রূপ ধারণ করে নীচের দিকে যেতে শুরু করলেন। আর ব্রহ্মা একটি হংসের রূপ ধারণ করে উপরের দিকে যেতে লাগলেন।বেশ কিছুটা নিচে যাওয়ার পর বিষ্ণু বুঝতে পারলেন এ শিবের ছলনা বৈ আর কিছু না। এই স্ফুলিঙ্গের তল পাওয়া অসম্ভব। ব্রহ্মাও বেশ কিছুটা উপরে যাওয়ার পর এই সত্য বুঝতে পারলেন। অর্থাৎ আদি শিব লিঙ্গর আদি বা অন্ত নেই তা অনন্ত এবং শাস্বত। তার বিস্তার সমগ্র ব্রম্ভান্ড জুড়ে।

 

শাস্ত্রে আছে এই জ্যোতির্ময় লিঙ্গই মোট ৬৪টি জায়গায় ফুঁড়ে বেরিয়েছিল। যার মধ্যে ১২টি অত্যন্ত পবিত্র এবং আবিষ্কৃত এই বারোটি স্থানে রয়েছে বারোটি শিব মন্দির এবং এগুলোই হল দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ।

 

এই দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ গুলি হলো যথাক্রমে

 

১। গুজরাতের সোমনাথ মন্দির:

 

কথায় বলে দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের পরিক্রমা শুরু করলে এখান থেকেই করা উচিৎ।

 

২। গুজরাতের নাগেশ্বর:

 

জামনগরে অবস্থিত এই মন্দিরের দেবতা নাগেশ্বরের উল্লেখ আছে শিবপুরাণে।

 

৩। মধ্যপ্রদেশের ওঙ্কারেশ্বর:

 

নর্মদা নদীর একটি দ্বীপে অবস্থিত এই মন্দির।

 

৪। মধ্যপ্রদেশের মহাকালেশ্বর:

 

প্রাচীন শহর উজ্জয়নীতে অবস্থিত এই মন্দির। দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে এটা একমাত্র লিঙ্গ যার মুখ দক্ষিণ দিকে।

 

৫। মহারাষ্ট্রের ভীমাশঙ্কর:

 

ভীমাশঙ্করের উৎপত্তি নিয়ে বিতর্ক আছে। কারণ এই নামে উড়িষ্যা, গুয়াহাটি ও উত্তরাখণ্ডেও মন্দির আছে।

 

৬। মহারাষ্ট্রের ত্র্যম্বকেশ্বর:

 

গোদাবরী নদীর উৎপত্তির সঙ্গে জড়িত এই মন্দির অবস্থিত নাসিক জেলায়।

 

৭। মহারাষ্ট্রের গৃশ্নেস্বর:

 

এই মন্দিরের উল্লেখ আছে শিব পুরাণে।

 

৮। বেনারসের কাশী বিশ্বনাথ:

 

বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন শহরে অবস্থিত এই মন্দির আছে গঙ্গার পশ্চিম দিকে।

 

৯। ঝাড়খণ্ডের বৈদ্যনাথ:

 

দেওঘরে অবস্থিত এই মন্দির খুব জনপ্রিয়। কথিত আছে শিবভক্ত রাবণের চিকিৎসা করেছিলেন মহাদেব। তিনি হয়েছিলেন বৈদ্য। আর এখান থেকেই বৈদ্যনাথ নামের উৎপত্তি।

 

১০। উত্তরাখণ্ডের কেদারনাথ:

 

দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় এটি। একদা ঘটে যাওয়া মহাপ্রলয়ও পর্যটক ও তীর্থযাত্রীদের এখানে যাওয়া থেকে নিরস্ত করতে পারিনি। বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে এটি সবচেয়ে উত্তরে অবস্থিত এবং এটি শিবের বাসস্থান কৈলাস পর্বতের খুব কাছে। কেদারনাথ চারধামের অন্যতম।

 

১১। অন্ধ্রপ্রদেশের মল্লিকার্জুনস্বামী:

 

কুরনুল জেলার শ্রীশৈলম অঞ্চলে এই মন্দির অবস্থিত। এখানে শিবের সঙ্গে রয়েছে পার্বতীও। বাবা মাকে প্রদক্ষিণ করে গণেশের বিশ্ব ভ্রমণের গল্প জড়িত আছে এই মন্দিরের সঙ্গে।

 

১২। তামিলনাড়ুর রামেশ্বরম:

 

দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে এটি সবচেয়ে দক্ষিণে অবস্থিত।

 

আগামী পর্ব গুলিতে দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ গুলি নিয়ে

বিস্তারিত আলোচনা করবো। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

শিব মাহাত্ম – কালভৈরব রূপ 

শিব মাহাত্ম – কালভৈরব রূপ

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

শিবের বিভিন্ন রূপগুলির মধ্যে

অন্যতম কাল ভৈরব যা শিবের অংশ বিশেষ।

আজ এই এই রূপ নিয়ে লিখবো।

 

আগের পর্বে বলেছিলাম সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মাকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য কালভৈরবকে সৃষ্টি করেছিলেন করেছিলেন শিব। অর্থ্যাৎ শিবের ক্রোধ থেকে জন্ম কাল ভৈরবের আর সেই কালভৈরবই ব্রহ্মার একটি মাথা কেটে নিয়েছিল।

 

কিন্তু তারপর সেই ছিন্ন মস্তক ছুঁড়ে ফেলতে চাইলেও কালভৈরনের হাতেই আটকে ছিল সেটি।সেই অবস্থায় কিছু কাল ভ্রাম্যমান অবস্থায় কাটান তিনি। এই কপাল হাতে থাকার কারনেই শিবের আরেক নাম হয় কাপালিক।

 

এদিকে ব্রহ্ম হত্যার পাপ অন্য দিকে এই অসহায় অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে কপাল ব্রত পালন করতে হয় তাঁকে।তাতেও তেমন ফল হয়না, অবশেষে কাশীতে আসার পর গঙ্গা স্নান করে পাপ মুক্ত হন শিব এবং সেই কপাল থেকে মুক্ত হন তিনি তার পর শিব তার কাল ভৈরব রূপকে কে নিষ্ঠা সহকারে কাশী তেই স্থাপন করেন এবং কাশীকে রক্ষা করার দায়িত্ব দেন কালভৈরবকে। তাই শিব হলেন কাশীর রাজা আর কালভৈরব তাঁর কোতোয়াল। তিনিই আশীর্বাদ করেন, তিনিই অভিশাপ দেন। এমনকি স্বয়ং যমরাজেরও নাকি কাশীবাসীকে শাস্তি দেওয়ার কোনও অধিকার নেই।কাশী তে কাল ভৈরব ই শেষ কথা |

 

কাশীর কালভৈরব মন্দির ঘিরে রয়েছে অসংখ্য রহস্যময় আচার ও প্রথা,কথিত আছে কাল ভৈরব এর অনুমতি ছাড়া কাশী প্রবেশ বা এখানে থাকা সম্ভব নয়|

 

অনেকের কাছেই কালভৈরব শান্তি, সমৃদ্ধি ও সাফল্যের দেবতা, তার বাহন কুকুর, অনেকে বিশ্বাস করেন গভীর রাতে কোথাও যাত্রা করার সময় কালভৈরবের নাম নিলে নাকি তিনি সব বিপদ কাটিয়ে দেন।হিন্দু পুরাণ মতে, কালভৈরব কাল বা সময়ের শাসক। প্রতিটি হিন্দু মন্দিরে কালভৈরবের মূর্তি রয়েছে। এবং তিনি সেই মন্দিরের রক্ষক হিসেবে বিবেচিত হন।তবে সেই ভৈরব মূর্তিও অনেক প্রকার ভেদ আছে।

প্রতি শিব মন্দিরে কালভৈরব এক বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ওই মন্দিরের চাবির রক্ষক বলে বলে মনে করা হয়|

 

চলতে থাকবে ধারাবাহিক শাস্ত্রীয় আলোচনা।

ফিরে আসবো দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ নিয়ে

আগামী পর্ব গুলিতে।পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন।ধন্যবাদ।