Home Blog Page 142

দেবাদিদেব মহাদেব ও নৃসিংহ দেবের যুদ্ধ

নমস্কার, আজকের পুরান রহস্যর এই পর্বে লিখবো ভগবান নৃসিংহ দেব ও তাঁর সাথে জড়িত এক রহস্য ময় পৌরাণিক আখ্যান যেখানে প্রধান ভূমিকায় রয়েছন বিষ্ণুর অবতার নৃসিংহ দেব ও দেবাদিদেব মহাদেব|

এটা আমরা প্রায় সবাই জানি যে হিন্দু দের জনপ্রিয় ও শক্তি শালী দেবতা দের মধ্যে অন্য তম নৃসিংহ দেব |তিনি বিষ্ণুর চতুর্থঅবতার|
সাধারণত দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের অন্যতম প্রতীক তিনি, তিনি বীরত্ব ও শৌর্যর ও প্রতীক তাই প্রাচীন কাল থেকে রাজারা বা শাসক রা তার উপাসনা করে আসছেন |রাজা হিরণ্য কশিপু কে বধ করে অধর্মের উপর ধর্ম কে প্রতিষ্ঠা করতে তিনি পৃথিবীতে অবতীর্ন হয়ে ছিলেন |

নৃসিংহ দেব ছিলেন অর্ধ-মনুষ্য অর্ধ-সিংহ আকারবিশিষ্ট|দক্ষিণ ভারতে তিনি অধিক জনপ্রিয়| কথিত আছে তিনি তার ভক্ত দের সকল সংকট থেকে রক্ষা করেন |

নৃসিংহ দেব অবতারের আবির্ভাবের ও একটি বিশেষ কারন ছিলো|নৃসিংহের পূর্ববর্তী অবতার বরাহ হিরণ্যাক্ষ নামে এক রাক্ষসকে বধ করেন। হিরণ্যাক্ষের ভাই হিরণ্যকশিপু এই কারণে প্রবল বিষ্ণুবিদ্বেষী হয়ে ওঠেন। তিনি বিষ্ণুকে হত্যা করার পথ খুঁজতে থাকেন। তিনি বহু বছর ব্রহ্মার কঠোর তপস্যা করেন। ব্রহ্মাও হিরণ্যকশিপুর তপস্যায় সন্তুষ্ট হন। তিনি হিরণ্যকশিপুর সম্মুখে উপস্থিত হয়ে তাঁকে বর দিতে চান। হিরণ্যকশিপু বলেন, আপনি যদি আমাকে সত্যই বর দিতে চান, তবে এমন বর দিন যে বরে আপনার সৃষ্ট কোনো জীবের হস্তে আমার মৃত্যু ঘটবে না, আমার বাসস্থানের অন্দরে বা বাহিরে আমার মৃত্যু ঘটবে না, দিবসে বা রাত্রিতে, ভূমিতে বা আকাশে আমার মৃত্যু হবে না, শস্ত্রাঘাতে, মনুষ্য বা পশুর হাতে আমার মৃত্যু হবে না,।ব্রম্হা তাই বর দেন |

কিন্তু প্রভুর এমন লীলা হিরণ্য কশিপুর পুত্র প্রহ্লাদ হয়ে ওঠেন পরম বিষ্ণুভক্ত।এতে তাঁর পিতা হিরণ্যকশিপু অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। ক্রমে প্রহ্লাদের বিষ্ণুভক্তিতে হিরণ্যকশিপু এতটাই ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত হন যে তিনি নিজ পুত্রকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু যতবারই তিনি বালক প্রহ্লাদকে বধ করতে যান, ততবারই বিষ্ণুর মায়াবলে প্রহ্লাদের প্রাণ রক্ষা পায়।

হিরণ্যকশিপু প্রহ্লাদকে বলেন তাঁকে ত্রিভুবনের অধিপতি রূপে স্বীকার করে নিতে। প্রহ্লাদ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন একমাত্র বিষ্ণুই এই ব্রহ্মাণ্ডের সর্বোচ্চ প্রভু এবং তিনি সর্বত্র বিরাজমান । ক্রুদ্ধ হিরণ্যকশিপু তখন একটি স্তম্ভ দেখিয়ে প্রহ্লাদকে জিজ্ঞাসা করেন যে ‘তার বিষ্ণু’ সেখানেও আছেন কিনা। প্রহ্লাদ উত্তর দিলেন, তিনি এই স্তম্ভে আছেন, এমনকি সৃষ্টির ক্ষুদ্রতম কনায় ও তিনি আছেন । এই কথা শুনে অত্যন্ত রেগে যান হিরণ্যকশিপু, ক্রোধ সংবরণ করতে না পেরে গদার আঘাতে স্তম্ভটি ভেঙে ফেলেন। তখনই সেই ভগ্ন স্তম্ভ থেকে প্রহ্লাদের সাহায্যার্থে নৃসিংহের মূর্তিতে আবির্ভূত হন বিষ্ণু। ব্রহ্মার বর যাতে বিফল না হয়, অথচ হিরণ্যকশিপুকেও হত্যা করা যায়, সেই কারণেই বিষ্ণু নরসিংহের বেশ ধারণ করেন: হিরণ্যকশিপু দেবতা, মানব বা পশুর মধ্য নন, তাই নৃসিংহ পরিপূর্ণ দেবতা, মানব বা পশু নন; হিরণ্যকশিপুকে দিবসে বা রাত্রিতে বধ করা যাবে না, তাই নৃসিংহ দিন ও রাত্রির সন্ধিস্থল গোধূলি সময়ে তাঁকে বধ করেন; হিরণ্যকশিপু ভূমিতে বা আকাশে কোনো শস্ত্রাঘাতে বধ্য নন, তাই নৃসিংহ তাঁকে নিজ জঙ্ঘার উপর স্থাপন করে নখের আঘাতে হত্যা করেন; হিরণ্যকশিপু নিজ গৃহ বা গৃহের বাইরে বধ্য ছিলেন না, তাই নৃসিংহ তাঁকে বধ করেন তাঁরই গৃহদ্বারে।দুষ্টের দমন হয় আবার ব্রম্হার বর ও অটুট থাকে | স্বার্থক হয় বিষ্ণুর নৃসিংহ অবতার |

হিরণ্য কশিপুর বধ করার পর কি হলো নৃসিংহ দেবের? এনিয়ে পুরানে একটি ঘটনার উল্লেখ আছে|

হিরণ্য কশিপুর বধ হলো কিন্তু নৃসিংহদেবের ক্রোধ কম হল না। তিনি ভয়ানক ধ্বংসলীলা চালিয়ে যেতে থাকেন। এই সময়ে সব দেবতারা একসাথে শিবের শরণ নেন। তাঁরা বুঝতে পারেন, একমাত্র মহাদেবই পৃথিবীকে রক্ষা করতে পারেন। শিব বীরভদ্র ও ভদ্রকালীকে প্রেরণ করেন নৃসিংহকে থামানোর জন্য। কিন্তু মহাপ্রতাপ নৃসিংহ সেই দুই মহাশক্তিকেও বিপর্যস্ত করে ফেলেন। এমতাবস্থায় মহাদেব নিজেই শরভ নামের এক বিচিত্রদর্শন প্রাণীর রূপ নিয়ে আবির্ভূত হন। শরভ এক সুবিশাল পাখি। তাঁর সহস্রবাহু এবং পশুর মতো দেহ। শরভের আঘাতে নৃসিংহ আত্মসংবরণ করেন। শরভই শেষ করেন নৃসিংহের লীলা।নৃসিংহ দেবের ক্রোধ থেকে রক্ষা পায় সৃষ্টি |

পুরানে বর্ণিত এই যুদ্ধ বেশ বিরল এবং ব্যতিক্রমী একটি ঘটনা কারন শিব নিজে একজন পরম বৈষ্ণব এবং নৃসিংহ দেব স্বয়ং বিষ্ণু| ভক্তের দ্বারা ভগবানের বধ সনাতন ধর্ম শাস্ত্রের এক দুর্লভ অধ্যায়|

পুরান রহস্যর আগামী পর্বে আবার ফিরবো নতুন এক পর্ব নিয়ে|পড়তে থাকুন আর অবশই আপনাদের মূল্যবান মতামত আর যোগাযোগ করুন যেকোনো জ্যোতিষ সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে|উল্লেখিত নাম্বারে ফোন করে সরাসরি কথা বলতে পারেন আমার সাথে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ| 

দশানন রাবন ও কিছু অজানা কথা

পুরানের পাশাপাশি যে দুটি গ্রন্থ আমাদের সনাতন ধর্মে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত তা হলো রামায়ন ও মহাভারত|এই দুইটি গ্রন্থেও লুকিয়ে আছে অনেক অজানা কথা ও বহু রহস্যময় ঘটনা যা নিয়ে তর্ক বিতর্ক বহু বছর ধরেই চলছে, চলছে নানাবিধ গবেষণা|আজ মহাকাব্য রামায়নের অন্যতম চরিত্রে রাবন সম্পর্কে কয়েকটি অদ্ভুত এবং অভিনব তথ্য আপনাদের সামনে আনবো|

রাবন ছিলেন প্রায় অপরাজেয়, মহাজ্ঞানী ও প্রবল পরাক্রমী|আমরা জানি ভগবান রামচন্দ্র লঙ্কা অভিযান করে তাকে বধ করেছিলেন কিন্তু এমন পরাক্রমী বীর রাবন যে শুধু শ্রী রামের কাছে যুদ্ধে পরাজিত হয়েছিলেন তা নয়, রাম তাকে পরাজিত ও হত্যা করেন ঠিক ই কিন্তু তার আগেও চার জন যোদ্ধার কাছে পর্যায়ক্রমে রাবন পরাজিত হন | রামায়ণ আমরা সবাই জানি কিন্তু ওই চারটি যুদ্ধ ও সেই চারজন যোদ্ধা সম্পর্কে খুব কমই শোনা যায় |

পুরানের একটি গল্প অনুসারে, একবার অহংকার বসত কৈলাস পর্বত তুলে লঙ্কায় আনার চেষ্টা করেন কিন্তু শিব তার একটি আঙ্গুল প্রয়োগ করে কৈলাস এর ভার এমন বাড়িয়ে দেন যে তার তলায় আটকে পরে রাবনের হাত |অবশেষে নিজের পরাজয় মেনে শিব এর কাছে ক্ষমা চান রাবন |শীব সন্তুষ্ট হয়ে তাকে মুক্তি দেন|রাবন নিজের ভুল বুঝতে পারেন |আজীবন শীব ভক্ত ছিলেন রাবন|

একবার রাবন কে যুদ্ধে হারান সহস্রবাহু, ক্ষত্রিয় রাজা ছিলেন সহস্রবাহু অর্জুন, তার কাছেও হেরেছিলেন রাবণ। এক হাজার হাত থাকায় তাঁকে সহস্রবাহু বলা হত। তিনি তার সহস্র বাহু দিয়ে সমগ্র নর্মদার জল একত্রিত করে নিঃক্ষেপ করেন রাবন ও তার সেনা বাহিনীর উপর, ভেসে যায় রাবন সেনা|নিজের পরাজয় স্বীকার করে নেন রাবন, রণে ভঙ্গ দিয়ে সেনা সমেত লংকায় ফিরে যান তিনি |

একটি পৌরাণিক ঘটনা অনুসারে রাবন কে পরাজিত করেন বানর রাজ বালি, তপস্যারত বালীকে বার বার উত্যক্ত করার ফলে রাবনের উপর রেগে যান বালি, রাবন কে নিজ বাহু তে আবদ্ধ করে মহা সমুদ্র পরিক্রমা করেন তিনি এবং সূর্যের অর্ঘ্য প্রদান করে |বালি ছিলেন অত্যন্ত বল শালী যিনি অতি সহজেই এই ভাবে রাবনের সকল দর্প চূর্ণ করেন | পড়ে বালির মৃত্যু হয় প্রভু শ্রী রামের হাতে|সে গল্প অন্য কোথাও শোনাবো |

এরপর রাবন কে হারান সহস্রবাহু, ক্ষত্রিয় রাজা ছিলেন সহস্রবাহু অর্জুন, তার কাছেও হেরেছিলেন রাবণ। এক হাজার হাত থাকায় তাঁকে সহস্রবাহু বলা হত। তিনি তার সহস্র বাহু দিয়ে সমগ্র নর্মদার জল একত্রিত করে নিঃক্ষেপ করেন রাবন ও তার সেনা বাহিনীর উপর, ভেসে যায় রাবন সেনা|নিজের পরাজয় স্বীকার করে নেন রাবন, রণে ভঙ্গ দিয়ে সেনা সমেত লংকায় ফিরে যান তিনি |

এছাড়াও রাজা বলীর কাছে রাবন পরাজিত হন|রাবন তার কাছে একবার পৌঁছে গেছিলো প্রায় বিনা কারণে শুধু নিজের বীরত্ব জাহির করতে,তার অনুগত যোদ্ধারা অতি সহজে পরাজিত করেন রাবন কে |পরাজিত ও লজ্জিত রাবন ফিরে আসেন লংকায় |শোনা যায় পাতাললোকের রাজা ছিলেন দৈত্যরাজ বলি। রাবণকে ঘোড়াশালে বেঁধে রেখেছিলেন বলির সঙ্গে ক্রীড়ারত শিশুরা|

সব শেষে রাবন কে পরাজিত করেন এবং হত্যা করেন শ্রী রাম এবং এর জন্যে শ্রী রাম কে ব্রহ্ম হত্যার পাপ থেকে মুক্তির জন্যে আনুষ্ঠানিক ভাবে যজ্ঞ ও প্রায়শ্চিত্ত ও করতে হয়েছিলো|সে গল্প অন্য কোথাও অন্য কোনো পর্বে শোনাবো|আপাতত বিদায় নিচ্ছি তবে যাওয়ার আগে জানিয়ে নিচ্ছি যারা অনলাইন জ্যোতিষ পরামর্শ বা চেম্বারে এসে ভাগ্যবিচার বা প্রতিকার নিতে চান তারা উল্লেখিত নাম্বারে ফোন করে একবার সরাসরি কথা বলে নেবেন আমার সাথে|ভালো থাকুন ধন্যবাদ|

কল্কি অবতার

আজ পুরান রহস্যর এই পর্বে ভগবান বিষ্ণুর কল্কি অবতার নিয়ে লিখছি, যা নিয়ে মানুষের কৌতূহল ও প্রশ্নের শেষ নেই|

অবতারবাদ বা অবতার তত্ব হিন্দু ধর্মের অন্যতম বৈশিষ্ট | যুগে যুগে ভগবান ভগবান অবতীর্ন হন একটি বিশেষ রূপে, কোনো একটি বিশেষ কার্য সম্পন্ন করতে বা জগৎ কে কোনো একটি ভয়ানক সংকট থেকে রক্ষা করতে|কাজ টি মিটে যাওয়ার পর তিনি আবার সেই বিশেষ অবতার রূপ ত্যাগ করেন যথা সময়ে |গীতা, পুরান এবং ভাগবত এ এই অবতার তত্বর ব্যাখ্যা পাওয়া যায় |

হিন্দু ধর্মে দশ অবতারের কথা বলা হয়েছে যথা মৎস্য , কূর্ম , বরাহ , নৃসিংহ , বামন , পরশুরাম , রাম , বলরাম , বুদ্ধ এবং কল্কি । এখানে , দশ অবতারের মধ্যে শ্রীকৃষ্ণের উল্লেখ নেই, কিন্তু কেনো? এর কারণ হচ্ছে , অন্যান্য অবতার ভগবানের অংশবিশেষ কিন্তু শ্রীমদ্ভাগবতপুরাণে বলা হয়েছে ” কৃষ্ণস্তু ভগবান্ স্বয়ম্ “। অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণ নিজেই ভগবান । তাই দশ অবতারের মধ্যে শ্রীকৃষ্ণের উল্লেখ নেই ।

এই দশ আবতারের সর্বশেষ অবতার হচ্ছে ‘কল্কি অবতার’ কল্ক’ অর্থ ‘পাপ’ আর ‘কল্কি’ অর্থ পাপ বিনাশকারী । কলিযুগের শেষে পৃথিবী যখন পাপে পরিপূর্ণ হবে, চারিদিকে যখন অন্যায় আর অধর্ম বিরাজ করবে তখন কল্কি বা পাপ বিনাশকারী অবতার আগমণ করবেন ।

মহা পুরান নয় তবে হিন্দু শাস্ত্রের আঠেরো টি উপপুরানের মধ্যে অন্যতম কল্কি পুরান | কল্কি পুরানে ভগবানের কল্কি অবতার এর আগমন বার্তা আছে আর আছে তার মহিমা| তার রূপ, স্বভাব, বৈশিষ্ট এবং সকল গুণাবলী ও আবির্ভাব এর উদ্দেশ্য আমরা বিস্তারিত জানতে পারি কল্কি পুরান থেকে |

কল্কি পুরানে একটি শ্লোকে বলা আছে –

“শম্ভলে বিষ্ঞুযশামে গৃহে প্রার্দুভাবাম্যহম সুমাতাং বিষ্ঞু যশম্য গর্ভ মাধব বৈষ্ঞবম ” ।

অর্থাৎ এখানে বলা হচ্ছে ভগবানের কল্কি অবতার শম্ভল শহরের প্রধান পুরোহিত গৃহে জন্মগ্রহণ করবেন । তার পিতার নাম হবে বিষ্ণুযশম এবং মাতার নাম হবে সুমতী|

শুধু তার জন্ম স্থান বা অভিভাবক নয় আরো অনেক তথ্য আছে কল্কি পুরানে | বৈশাখ মাসের শুক্লা পক্ষে তিনি জন্ম গ্রহন করবেন|আটটি গুন বর্তমান থাকবে তার চরিত্রে যথা প্রজ্ঞা, কুলীনতা, ইন্দ্রিয় দমন, শ্রুতি জ্ঞান,পরাক্রম,বাগ্মিতা, দান এবং কৃতজ্ঞতা । সাদা ঘোরা হবে তার বাহন,নানাবিধ অস্ত্র দ্বারা সজ্জিত হয়ে তিনি দুষ্টের দমন করবেন | সকল পাপ বিনাশ করে ধর্ম ও ন্যায় পুনর্স্থাপন করবেন তিনি | এই লড়াইয়ে সব দেবতারা তাকে সাহায্য করবেন |

বাকি অবতাররা পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়ে গেছেন অর্থাৎ তারা অতীত । এক মাত্র বাকি আছেন কল্কি তিনি আসবেন ভবিষ্যত থেকে |কলির শেষ প্রান্তে অন্যায় দমন করতে শ্রীবিষ্ণু কল্কিরুপে আবির্ভূত হবেন । কল্কি অবতার নিয়ে নানা মুনির না না মত কেউ বলেন তিনি এসে গেছেন কেউ আবার মনে করেন তিনি আমাদের অর্থাৎ প্রতিটি জীবের অন্তরে সদা বিরাজমান তবে গোটা বিশ্ব এবং সনাতন ধর্মে বিশ্বাসীরা কল্কি অবতারের প্রতীক্ষা করছেন এবং দৃঢ় বিশ্বাস তিনি আসবে |যারা মনে করেন শাস্ত্র সত্যি শাস্ত্রের প্রতিটি শব্দ ব্রহ্ম স্বরূপ তারা নিশ্চিত তার আগমনেই কলির সমাপ্তি ঘটবে|কল্কি পুরানে যা লিখিত আছে তা অক্ষরে অক্ষরে ফলে যাবে | শুধু সময়ের অপেক্ষা |

আবার লিখবো পরের পর্বে নতুন কোনো পৌরাণিক রহস্য নিয়ে|সঙ্গে থাকুন,পড়তে থাকুন আর অবশ্যই উল্লেখিত নাম্বারে যোগাযোগ করুন সঠিক জ্যোতিষ পরামর্শ ও প্রতিকারের জন্যে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

কালভৈরব

আজ পুরান রহস্যের এই পর্বে লিখবো কাল ভৈরব নিয়ে, জানবো কে এই কাল ভৈরব? কি ভাবেই বা তার আবির্ভাব হলো?এবং কি তার ধার্মিক ও আধ্যাত্মিক গুরুত্ব? কেনই বা তাকে নিয়ে এতো রহস্য|

শিব পুরানে আমরা এক ব্যতিক্রমী দেবতার নাম পাই, তিনি কাল ভৈরব, এছাড়া তন্ত্রেও আলাদা করে তার উল্লেখ পাওয়া যায়, সাধারণত প্রত্যেক শিব মন্দিরেই থাকে কালভৈরবের মূর্তি। দাঁড়িয়ে থাকেন কালভৈরব। তাঁর চার হাত। হাতে থাকে ডোমরু, পাশা, নরমুণ্ড ও ত্রিশূল। কোনও কোনও মূর্তিতে চারটির বেশি হাতও থাকে। তাঁর এই মূর্তি দিগম্বর|

হিন্দু পুরাণ গুলির পাশাপাশি বৌদ্ধ শাস্ত্র এবং জৈন ধর্মগ্রন্থ গুলির মাধ্যমে আমরা জানতে পারি কাল ভৈরব এর একটি বিশেষ ভূমিকা |প্রচলিত ধর্ম বিশ্বাস মতে মহাজগতের বিশেষ স্থানগুলি ভৈরব রক্ষা করেন এবং ভৈরবের মোট সংখ্য ৬৪। এই ভৈরব দের ৮টি শ্রেণিতে ভাগ করা হয় প্রত্যেক ভৈরবের একজন করে ভৈরবী থাকেন। অষ্টাঙ্গ ভৈরবের নামগুলি এই রকম —

অসিতাঙ্গ ভৈরব, রুরু ভৈরব, চণ্ড ভৈরব, ক্রোধ ভৈরব, উন্মত্ত ভৈরব, কপাল ভৈরব, ভীষণ ভৈরব এবং সংহার ভৈরব।প্রতিটি শ্রেণির আবার একজন করে প্রধান ভৈরব রয়েছেন। প্রধান ৮ ভৈরবকে ‘অষ্টাঙ্গ ভৈরব’ বলা হয়। এই আটজন মহাবিশ্বের আটটি দিকের অধিপতি। এই আট জন আবার নিয়ন্ত্রিত হন মহা স্বর্ণ কালভৈরবের দ্বারা। তিনি সাধারণভাবে কালভৈরব নামেই পরিচিত।অর্থাৎ ভৈরব ও কাল ভৈরব আলাদা এবং ভিন্ন তাদের স্বরূপ ও তাৎপর্য|

“কাল” অর্থাৎ সর্ব শক্তি মান সময় এবং “ভৈরব” একটি সংস্কৃত শব্দ যার অর্থ ‘ভয়ঙ্কর’ বা ‘ভয়াবহ’। শিবের একটি বিশেষ রূপকে বলা হয় ‘কাল ভৈরব’ শিব পুরাণবা ও অন্যান্য শাস্ত্রে কাল ভৈরব এর বিস্তৃত ব্যাখ্যা আছে |

কালভৈরব আসলে শিবেরই একটি বিশেষ রূপ বা শিবের অংশ বিশেষ । শিব অনুসারে কোনো একসময় ব্রহ্মা নাকি কোনও ধর্মবিরোধী কাজ করেছিলেন যার ফলে শিব অত্যন্ত রেগে যান ব্রহ্ম দেবের উপর। তাই সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মাকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য কালভৈরবকে সৃষ্টি করেছিলেন করেছিলেন শিব। অর্থ্যাৎ শিবের ক্রোধ থেকে জন্ম কাল ভৈরবের আর সেই কালভৈরবই ব্রহ্মার একটি মাথা কেটে নিয়েছিল। কিন্তু তারপর সেই ছিন্ন মস্তক ছুঁড়ে ফেলতে চাইলেও কালভৈরনের হাতেই আটকে ছিল সেটি।সেই অবস্থায় কিছু কাল ভ্রাম্যমান অবস্থায় কাটান তিনি |এদিকে ব্রহ্ম হত্যার পাপ অন্য দিকে এই অসহায় অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে কপাল ব্রত পালন করতে হয় তাঁকে।তাতেও তেমন ফল হয়না, অবশেষে কাশীতে আসার পর তাঁর হাত থেকে হটাৎ খোশে পড়ে যায় সেই মস্তক। তার পর শিব কাল ভৈরব কে নিষ্ঠা সহকারে কাশী তেই স্থাপন করেন এবং কাশীকে রক্ষা করার দায়িত্ব দেন কালভৈরবকে। তাই শিব হলেন কাশীর রাজা আর কালভৈরব তাঁর কোতোয়াল। তিনিই আশীর্বাদ করেন, তিনিই অভিশাপ দেন। এমনকি স্বয়ং যমরাজেরও নাকি কাশীবাসীকে শাস্তি দেওয়ার কোনও অধিকার নেই।কাশী তে কাল ভৈরব ই শেষ কথা |

তন্ত্রে এবং বৌদ্ধ ধর্মে কাল ভৈরব যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ, কাশীর কালভৈরব মন্দির নিয়েও রয়েছে নানা রহস্য|আসবো সে সব নিয়ে আলোচনায় তবে একটি অন্য পর্বে|আজ এই টুকুই|পড়ুন ভালো লাগলে জানান ও শেয়ার করুন আর জ্যোতিষ সংক্রান্ত কাজ বা সমস্যা নিয়ে কথা বলতে চাইলে যোগাযোগ করুন উল্লেখিত নাম্বারে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

বিদেশের শক্তি পীঠ – ইন্দ্রাক্ষ্মী

বিদেশের মাটিতে অবস্থিত শক্তি পীঠ গুলো নিয়ে আগের কয়েকটি পর্বে লিখেছি, আজকের পর্বে আরেকটি শক্তি পীঠ আপনাদের সামনে আনবো যা ভারতের প্রতিবেশি রাষ্ট্র শ্রীলংকায় অবস্থিত|

পুরাকালে শ্রীলংকা ছিলো রাবনের সোনার লঙ্কা এই লংকার জাফনার অন্যতম ধর্মীয় স্থান নাইনাতিভু৷ সেখানেই আছে এক প্রাচীন কালী মন্দির৷ বহু প্রাচীন এই এলাকা এক সময় কানদারোদাহ বা ভাল্লিপুরম রাজ্যের রাজধানী ছিল|এই স্থানেই রয়েছে এক প্রসিদ্ধ শক্তি পীঠ|

পৌরাণিক মত অনুযায়ী,প্রাচীন সিংহলের ওই স্থানেই পড়েছিল সতীর পায়ের মল৷ সতী এখানে ইন্দ্রাক্ষ্মী আর শিব হলেন রক্ষশেশ্বর৷ পৌরাণিক মত অনুসারে ইন্দ্রাক্ষ্মীর মূর্তি বানিয়ে পুজো করতেন স্বয়ং দেবরাজ ইন্দ্র|

আজও ধুমধাম করে কালীর আরাধনা হয় বৌদ্ধপ্রধান শ্রীলঙ্কাতে অবস্থিত ওই মন্দিরে|সারা বছর বহু দর্শনার্থীর আগমন ঘটে এই শক্তি পিঠে, তার পাশাপাশি বিশেষ বিশেষ কিছু তিথিতে বিশেষ পুজো ও সেই উপলক্ষে ব্যাপক জন সমাগমও চোখে পড়ে|

আবার কোনো নতুন শক্তি পিঠের অজানা কথা নিয়ে ফিরে আসবো আপনাদের সামনে|আপনাদের জানিয়ে রাখি নিয়মিত টিভির অনুষ্ঠানের পাশাপাশি আবার নিয়মিত ইউটিউব এ ফিরে আসবো শীগ্রই আর অনলাইন জ্যোতিষ পরামর্শ বা ভাগ্য গণনার পাশাপাশি কলকাতা ও জেলার চেম্বারেও আমাকে পাবেন আগামী দিনে|এই সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য পেতে ও ভাগ্যবিচারের জন্যে যোগাযোগ করতে পারেন উল্লেখিত নাম্বারে ভালো থাকুন

গরুড় পুরান ও নরক

আমাদের হিন্দু শাস্ত্রে গরুড় পুরান নামে একটি পুরান শাস্ত্র আছে|এই গরুড় পুরান আঠেরো টি মহা পুরানের অন্যতম |অনেক রহস্য অনেক অনেক গল্প ছড়িয়ে আছে গরুড় পুরানে যা নানা পন্ডিত না না ভাবে ব্যাখ্যা করে থাকে |আজ পুরান রহস্যর এই পর্বে আমি গরুড় পুরানের একটি রহস্যময় বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো|

পাপ পুন্য কি, নরক কেমন বা কোন পাপের কি শাস্তি, এই সব প্রশ্নের উত্তর অতি সুন্দর ভাবে দেয়া হয়েছে গরুড় পুরানে |এই প্রাচীন গ্রন্থে লিখিত আছে , খগরাজ গরুড় বিষ্ণুর কাছে জানতে চেয়েছিলেন পাপ ও তার শাস্তি বিষয়ে। বিষ্ণু যথাযত উত্তর দিয়েছেন সেই প্রশ্নের| অতি সুন্দর ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, বর্ণনা করেছেন | এই বর্ণনা সনাতন ধর্ম শাস্ত্রের এক অমূল্য সম্পদ |

ঋগবেদ, ব্রহ্ম পুরান ও ভাগবত পুরানে নরকের উল্লেখ আছে | নরক মর্ত ও পাতাল এর মধ্য বর্তী স্থানে দক্ষিণ দিশায় অবস্থিত|সেখানে পাপ পুণ্যের হিসেব হয় ও শাস্তি নির্বাচন হয় এই স্থানের শাসক স্বয়ং জমরাজ |কিন্তু নরকের সব থেকে বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায় গরুড় পুরানে | শুধু নরক বর্ণনা নয় প্রতিটি পাপের স্বাস্তি ও উল্লেখ করা আছে গরুড় পুরানে |যা এই পুরান কে এক অন্য মাত্রা দান করেছে |

গরুড় পুরানে বর্ণিত বিভিন্ন পাপের স্বাস্তি গুলি কিছুটা এইরূপ –

শুকরমুখম— যারা অন্যের উপরে অত্যাচার করে, বিশেষত যে সব রাজা প্রজাপীড়ন করেন। তাঁদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে এই নরক। এখানেও শাস্তি প্রহার।বেদম প্রহার করে যমদূতরা।

তমিশ্রম— অন্যের সম্পদ যদি কেউ আত্মসাৎ করেন, তাঁর জন্য রয়েছে এই নরক। যমদূত রা যমলোকে তাঁকে হাত বেঁধে ক্রমাগত প্রহার করবে । তাদের রক্তপাত হতে থাকবে এবং তারা জ্ঞান হারানো পর্যন্ত এই প্রহার চলবে।আদি অনন্ত কাল চলতে পারে এই প্রহার |

রৌরব— অন্যের সম্পদে বিলাসিতা, করা বা ভোগ ইত্যাদির জন্য রয়েছে এই শাস্তি। সাপে পরিপূর্ণ এই নরকে তাদের নিক্ষেপ করা হবে।

কুম্ভীপাক— জ্বলন্ত কুণ্ডে বসানো মহাকুম্ভে ফুটন্ত তেলে পাপী দের সেদ্ধ করা হবে, যারা নিজের আনন্দের জন্য পশুহত্যা করে।

মহারৌরব— এখানেও সাপ। এবং সমান যন্ত্রনা দায়ক । যারা উত্তরাধিকারী রাখে না, তাদের জন্য নির্ধারিত এই নরক।বিষধর সাপের হাতে তুলে দেয়া হবে এই পাপী দের

অন্ধকুপ— সৎ ব্যক্তকে যাঁরা পীড়ন করে এবং নিজের সামর্থ্য থাকতেও যারা কাউকে সাহায্য করে না, তাদেরই এখানে নিয়ে এসে এক কুয়োয় ফেলে দেওয়া হয়। সেখানে সিংহ, বাঘ, ঈগল থেকে শুরু করে বিষধর সাপ, বিছে ইত্যাদি তাদের নিরন্তর কামড়াতে থাকে।খুবলে খুবলে খায় ও যন্ত্রনা দেয় পাপী কে |

তপ্তমূর্তি— সোনা-রুপো চুরি করলে নরকের এই বিভাগে নিয়ে আসা হয়। লেলিহান আগুনে তাদের নিক্ষেপ করা হয়।

শাল্মলী— অসৎ ও ব্যাভিচারী স্ত্রী-পুরুষকে পাঠানো হয় এখানে। জ্বলন্ত থামকে আলিঙ্গন করতে বলা হয়। না করলে যমদূতরা জ্বলনত কাঠ দিয়ে পেটায়। মারতে থাকে যতদিন না শাস্তি সম্পূর্ণ হয় |

বজ্রকন্টকশালী— পশুকামিতার শাস্তি বিধান হয় এই নরকে। তীক্ষ্ণ হীরক-খচিত লৌহমানবকে আলিঙ্গন করতে বলা হয়। অত্যন্ত যন্ত্রনা দায়ক এই শাস্তি |

পুয়োদকম— অবৈধ যৌনতা এবং স্ত্রী দের ঠকানোর শাস্তি | রক্ত ও বিষাক্ত দ্রব্যে পূর্ন জলাধারে তাদের নিক্ষেপ করা হয়।

কালসূত্র— এই নরকও দারুণ উত্তপ্ত। গুরুজনদের ভক্তি না-করলে, অসম্মান করলে এখানে নিক্ষেপ করা হবে।

শুধু শাস্তি নয় প্রতিটি বিভাগ, যমদূত দের বর্ণনা ও জমরাজের ভূমিকা অতি সুন্দর ও নিখুঁত ভাবে চিত্রিত হয়েছে গরুড় পুরানে |গরুড় পুরান কে আত্মস্থ করে জীবনে প্রয়োগ করলে মানব সভ্যতা পাপ থেকে দূরে থাকবে এবং স্বর্গ লাভ করবে |তাই আমি বলি শাস্ত্র পড়ুন জানুন তার ব্যাখ্যা|আমি আবার ফিরে আসবো আগামী পর্বে নতুন এক রহস্য নিয়ে|যারা জ্যোতিষ সংক্রান্ত কাজের জন্যে কথা বলতে চান ফোন করুন উল্লেখিত নাম্বারে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

ইতু পুজো নিয়ে কিছু কথা

বাংলার পুজো এবং ব্রত গুলির মধ্যে একটি জনপ্রিয় ব্রত ইতু পুজোর ব্রত|আজ সেই শুভদিন, এই পবিত্র দিনে আপনাদের ইতু পুজোর ব্রত নিয়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবো|

সবার আগে জানা দরকার এই ইতু শব্দের প্রকৃত অর্থ হলো মিত্র এবং এখানে সূর্য কেই মূলত মিত্র নামেই অভিহিত করা হয় ।

অবশ্য ইতু পুজো সূর্য উপাসনা হলেও এই পুজোর রীতিও উপাচার বিশ্লেষণ করে ইতুকে মাতৃকাদেবী রূপেই গণ্য করে গ্রাম বাংলার মানুষ এবং এই পরম্পরা চলে আসছে যুগ যুগ ধরে|

এবার পুজোর রীতি নীতি বা উপাচার নিয়ে বলতে গেলে প্রথমেই যা উল্লেখ করতে হয় তা হলো ঘট|ইতুর ঘটের গায়ে পুতুল আঁকা এবং ভেতরে শস্যদানা ও তৃণগুচ্ছ রাখা হয়|প্রতীকী অর্থে শষ্যক্ষেত্র কে মাতৃ রূপে পুজো করা হয় ইতু পুজোর মাধ্যমে| শাস্ত্রীয় নিয়ম অনুসারে পুজো সম্পন্ন হলে ইতুকে বা ঘটকে বিসর্জন দিতে হয়|

এই পুজো সংক্রান্ত নিয়ম ও উপাচারে পার্থক্য চোখে পরে স্থান ভেদে|অর্থাৎ এক এক স্থানে এক একটি গোষ্ঠীর মধ্যে নিয়মের কিঞ্চিৎ রকমফের থাকতেই পারে|এই দিন পুজো চলাকালীন বাড়ির গৃহিনীরা ইতুর পাঁচালি বা ব্রত কথা পাঠও করেন কোথাও কোথাও|

তবে নিয়মের পার্থক্য যাই থাক এই পুজোর উদ্দেশ্য কিন্তু সর্বত্র একই তা হলো সূর্যদেব তথা প্রকৃতির আশীর্বাদ লাভ করে গৃহের কল্যাণ ও শ্রীবৃদ্ধি|

সবাইকে আমার পক্ষ থেকে ইতু পুজোর অনেক শুভেচ্ছা|পড়তে থাকুন আমার প্রতিটি পোস্ট এবং যোগাযোগ রাখুন যেকোনো জ্যোতিষ সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানের জন্য|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ

শুভ নানক জয়ন্তী

আজ ৩০ নভেম্বর সারা দেশ জুড়ে পালিত হবে শিখ সম্প্রদায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব নানক জয়ন্তী।কোথাও কোথাও এটি গুরু পর্ব বা প্রকাশোৎসব নামেও পরিচিত|

১৪৬৯ সালে তালবন্ডী নামক স্থানে শিখ ধর্মের অন্যতম ধর্মগুরু, গুরু নানক জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে এটি পাকিস্তানে অবস্থিত ও নানকানা সাহিব হিসেবে পরিচিত|গুরুনানকের জন্ম তিথিতেই প্রতি বছর পালিত হয় নানক জয়ন্তী|

আজ এই বিশেষ দিনে আসুন নতুন করে আরো একবার জানার চেষ্টা করি এই মহান গুরুর জীবন ও তার আধ্যাত্মিক কর্মকান্ড|

শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন উদাসীন প্রকৃতির|মনে করা হয় মাত্র ৭-৮ বছর বয়সে তিনি স্কুলে যাওয়া ছেড়ে দেন|এই সময়ে থেকেই তার মধ্যে ভগবত প্রাপ্তি সম্পর্কে নানান প্রশ্ন উঁকি দিতে থাকে|পরবর্তীতে গুরু নানক অধিকাংশ সময় আধ্যাত্মিক চিন্তাভাবনা ও সৎসঙ্গে কাটাতে শুরু করেন|

একটা সময়ের পর তার মধ্যে দৈব শক্তির প্রকাশ লক্ষ্য করা যায়|বোঝাযায় তিনি কোনো সাধারণ মানুষ নয়|তার জন্ম হয়েছে একটি বিশেষ লক্ষ্য পূরণের উদ্দেশ্য নিয়ে|কালক্রমে, আধ্যাত্মিক চর্চা ও সাধনার মধ্যে দিয়ে তিনি হয়ে উঠলেন সকলের শ্রদ্ধেয় গুরুনানক|শিখ সম্প্রদায় তথা সমগ্র মানব জাতীর কাছে এক প্রণম্য ব্যাক্তিত্ব|

এই মহান গুরুকে আমার প্রণাম ও শ্রদ্ধা জানাই|সবাইকে জানাই নানক জয়ন্তীর অনেক শুভেচ্ছা|দেখতে থাকুন আমার অনুষ্ঠান, পড়তে থাকুন আমার প্রতিটি লেখা, যোগাযোগ করুন প্রয়োজন মনে করলে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

দেবী জগদ্ধাত্রী

বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বন আর এই ধর্মীয় উৎসব গুলির অন্যতম জগৎধাত্রী পুজো|কিভাবে বাংলায় জগৎধাত্রী পুজোর প্রচলন হলো তা নিয়ে মতপার্থক্য থাকলেও নদিয়ার রাজা কৃষ্ণ চন্দ্রের হাত ধরে যে এই পুজো বাংলায় জনপ্রিয়তা লাভ করে সে বিষয়ে প্রায় সবাই একমত|

দুর্গাপুজোর একমাস পর কার্তিকের শুক্লা নবমী তিথিতে তাঁর স্বপ্নাদিষ্টের রূপের প্রতিমা নির্মাণ করিয়ে পুজোর আদেশ দেন কৃষ্ণচন্দ্রকে। সেই থেকেই নদিয়ায় জগদ্ধাত্রী পুজোর সূচনা। যা পরবর্তী কালে গোটা বাংলা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে|চন্দন নগরে প্রায় প্রধান উৎসব বলা হয় জগৎধাত্রী পুজোকে যা মহাসমারোহে পালিত হয়|ভিড় জমান দূর দূরান্তের মানুষ|

দেবী জগদ্ধাত্রী দূর্গারই এক রূপ তার বাহন সিংহের পদতলে একটি হস্তীমুণ্ড থাকে। প্রচলিত বিশ্বাস, জগদ্ধাত্রী করীন্দ্রাসুর অর্থাৎ মহাহস্তীরূপী অসুরকে বধ করেছিলেন। এই কারণে জগদ্ধাত্রী ‘করীন্দ্রাসুরনিসূদিনী’ নামে পরিচিত|

এবছর স্বাস্থ সংক্রান্ত বিধি নিষেধ বজায় রেখেই হচ্ছে জগৎধাত্রী পুজো|সেজে উঠছে মণ্ডপ|নিষ্ঠা ও ভক্তির অভাব নেই এতো টুকু|আপনারাও যোগ দিন এই পুজোয়|প্রার্থনা করুন দেবীর কাছে, নিজেদের মনোস্কামনা জানান|সবাইকে জগৎধাত্রী পুজোর শুভেচ্ছা|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

বনেদি বাড়ির দূর্গা পূজা – ছাতু বাবু লাটু বাবুর দূর্গা পুজো

আর হাতে গোনা কয়েকটা দিন বাকি তারপর শুরু হয়ে যাবে দুর্গোৎসব, যে উৎসবের জন্য সারাটা বছর অপেক্ষা করে বসে থাকেন প্রতিটা বাঙালি|এবছর দূর্গা পুজোয় নিশ্চই কিছু স্বাস্থ সংক্রান্ত বিধি নিষেধ থাকবে কিন্তু তবু পুজো কে ঘিরে মানুষের উৎসাহে ভাটা পড়েনি|যদিও আজ কাল থিম পুজোর ভিড়ে দূর্গা পুজোর আসল অন্তর্নিহিত অর্থ বা শাস্ত্রীয় আচার অনেকটাই ম্লান তবুও ব্যতিক্রম আছে|আজও বাংলার বহু জমিদার বাড়ি বা রাজবাড়ি সহ একাধিক বনেদি বাড়িতে নিষ্ঠা সহকারে, শাস্ত্রীয় মতে দূর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়|এই সব পুজোর রয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্য এবং এক গৌরবময় ইতিহাস|আজ থেকে এক নতুন ধারাবাহিক লেখনী শুরু করছি যেখানে পর্বে পর্বে এই সব বনেদি বাড়ির পুজোর কথা লিখবো|আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে এই পর্ব গুলি|আজ প্রথম পর্বে কলকাতার ছাতু বাবু লাটু বাবুর বাড়ির পুজো|

আজকের বিডন স্ট্রিটে রয়েছে একটি প্রাচীন ভগ্নপ্রায় অট্টালিকা যার পোশাকি নাম রামদুলাল নিবাস|এই বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা রাম দুলাল দে ছিলেন|পুরোনো কলকাতার বাবু সমাজের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র|শোনা যায় তিনি ছিলেন বাংলার প্রথম লাখপতি|তিন ব্রিটিশ আমলে আমদানি রপ্তানির ব্যবসা করে এই অগাধ সম্পত্তি করেছিলেন|তিনিই প্রথম এই বাড়িতে দূর্গা পূজা শুরু করেছিলেন|তার অবর্তমানে তার দুই পুত্র আশুতোষ দেব ওরফে ছাতুবাবু এবং প্রমথনাথ দেব ওরফে লাটুবাবুর সময়েই এই পুজো বিখ্যাত হয়|প্রতি বছর প্রচুর অর্থ ব্যায় করে ও ব্যাপক ধুম ধাম করে দূর্গা পুজো হতো এই বাড়িতে|দূর্গা পূজা উপলক্ষে প্রায় গোটা কলকাতার নিমন্ত্রণ থাকতো এই বাড়িতে|পুজোর সময় যাত্রা হত এমন কি বাঈ নাচের আসর ও বসতো|

সেই পুরোনো জৌলুস আর নেই তবু নিষ্ঠা সহকারে সকল প্রথা মেনে দূর্গা পুজো হয়|রথের দিন কাঠামো পুজোর পর প্রতিপদ থেকে শুরু হয় পুজো|এখানে শুরুর দিন থেকে ষষ্ঠী পর্যন্ত গৃহদেবতা শালগ্রাম শিলার পুজো করা হয় এবং তৃতীয়াতে দেবীকে আসনে বসানো হয়|এই বাড়িতে শাক্ত শৈব এবং বৈষ্ণব তিনটি মতেই পুজো হয়|উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো এই বাড়ির পুজোয় দেবীর পাশে লক্ষ্মী সরস্বতী থাকেন না এবং পদ্মের উপর থাকেন মা দুর্গার দুই সখী জয়া আর বিজয়া|

শোনা যায় এককালে এখানে পশু বলীও দেয়া হতো কিন্তু একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে বলী প্রথা বন্ধ হয়ে যায় বহু কাল আগে|বলা হয় একবার বলি দেওয়ার সময় পাঁঠাটি ছুটে চলে আসে সামনে দাঁড়ানো রামদুলাল দের কাছে। সেই থেকে এই পুজোয় পাঁঠাবলি বন্ধ হয়ে তার বদলে এখন আঁখ, চালকুমড়ো, শসা বলি হয় পুজোর তিন দিন|এছাড়া এখানে কুমারী পুজোও হয় নিষ্ঠা সহকারে|

আজকের পর্ব এখানেই শেষ করছি|দেখা হবে পরের পর্বে অন্য কোনো বনেদি বাড়ির পূজা কথা নিয়ে ফিরে আসবো|কেমন লাগছে অবশ্যই জানাবেন আর যারা আসন্ন নবরাত্রি বা দীপাবলি উপলক্ষে জ্যোতিষ পরামর্শ এবং গ্রহ দোষ খণ্ডনের কথা ভাবছেন অবশ্যই যোগাযোগ করতে পারেন উল্লেখিত নাম্বারে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|