শুভ নববর্ষ

492

আজ আমাদের মানে বাঙালিদের বড়ো আনন্দের দিন, আজ নতুন বাংলা বছরের সূচনা,আমরা ঢুকে পড়ছি একটি নতুন বছর 1428 এ , মহামারী আবার নতুন রূপে ফিরে আসছে, তাই কিছুটা ভয় কিছুটা অনিশ্চয়তা এই মুহূর্তে আমাদের সবার মনেই রয়েছে|তবু আজকের দিনটি বিশেষ, আজ পয়লা বৈশাখ|আমরা আশা করবো, প্রার্থনা করবো ঈশ্বরের কাছে যেনো নতুন বছরে এই প্রাণঘাতি ভাইরাস আমাদের ছেড়ে চীর তরে বিদায় নেয়|

এককালে এই দিনটায় হতো খাজনা আদায়ের শুরু, নতুন ফসল বেচে কৃষকদের হাতে অর্থ আসতো এবং তারা উৎসবে মেতে উঠতেন
আবার ভূমির মালিকরা নিজ নিজ অঞ্চলের অধিবাসীদেরকে মিষ্টান্ন দ্বারা আপ্যায়ন করতেন। এ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করা হত। এই উৎসবটি একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয় যার রুপ পরিবর্তন হয়ে বর্তমানে এই পর্যায়ে এসেছে|

ব্যবসা বাণিজ্যর ক্ষেত্রেও পয়লা বৈশাখের ভূমিকা রয়েছে|তখনকার সময় এই দিনের প্রধান ঘটনা ছিল একটি হালখাতা তৈরি করা। হালখাতা বলতে একটি নতুন হিসাব বই বোঝানো হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে হালখাতা হল বাংলা সনের প্রথম দিনে দোকানপাঠের হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া। গ্রাম, শহর বা বাণিজ্যিক এলাকা, সকল স্থানেই পুরনো বছরের হিসাব বই বন্ধ করে নতুন হিসাব বই খোলা হয়। হালখাতার দিনে দোকনদাররা তাদের ক্রেতাদের মিষ্টান্ন আপ্যায়ন করে থাকে। এই প্রথাটি এখনও অনেকাংশে প্রচলিত আছে|

পয়লা বৈশাখ থেকে বাংলা বছর গণনা শুরু হয় আকবরের আমল থেকে, সেদিক দিয়ে আলাদা করে বাংলা নব বর্ষ বা পয়লা বৈশাখ পালনের কারন কিছুটা অর্থনৈতিক|জমিদাররা এই দিন থেকে রাজস্ব দানের নতুন খাতা শুরু করতেন|
মুঘল আমলের প্রথম দিকে ইসলামিক রীতি অনুসারে হিজরি সন অনুযায়ী চলত শাসন। কিন্তু সমস্যা হত খাজনা আদায়ে। কারণ চাঁদের ওপর এই সন নির্ভরশীল হওয়ায় তা কৃষি ফলনের সঙ্গে মিলত না। খাজনা আদায়ের বিষয়টিকে আরও মসৃণ করার ব্যাপারে উদ্যোগী হন সম্রাট আকবর। তাঁর নির্দেশেই জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফতেউল্লাহ সিরাজি বাংলা সন গণনা শুরু করেন। প্রথমে একে বলা হত ফসলি সন। পরে বঙ্গাব্দ শব্দটি প্রবর্তিত হয়। সেই সময়ে চৈত্র মাসের শেষের দিন খাজনা আদায়ের শেষ দিন বলে ধরা হত।আর তারপর দিন উৎসব হিসেবে নব বর্ষের সূচনা বা পয়লা বৈশাখ পালন করা হতো|এই রীতি অনুসরণ করেছিলেন মুর্শিদকুলি খা যা বাঙালির ব্যবসা বাণিজ্যর ক্ষেত্রে এখনো চলছে, আজও এই দিনে নতুন হাল খাতা চালু হয়|

এখানে বলে রাখি বাংলায় আধুনিক নববর্ষ উদযাপনের খবর প্রথম পাওয়া যায় ১৯১৭ সালে। প্রথম মহাযুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় কামনা করে সে বছর পহেলা বৈশাখে হোম কীর্ত্তণ ও পূজার ব্যবস্থা করা হয়|

আমাদের বৈদিক জ্যোতিষ শাস্ত্রেও পয়লা বৈশাখের গুরুত্ব রয়েছে সাধারণত চৈত্র মাসের শেষ দিন অর্থাৎ চৈত্র সংক্রান্তি বা মহাবিষুবসংক্রান্তির দিন পালিত হয় চড়কপূজা অর্থাৎ শিবের উপাসনা। এইদিনেই সূর্য মীন রাশি ত্যাগ করে মেষ রাশিতে প্রবেশ করে, গ্রহের এই সঞ্চার মানুষের জীবনকে নানা ভাবে প্রভাবিত করে|সে নিয়ে পরে কখনো বিস্তারিত আলোচনা করবো|

বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গর গ্রামাঞ্চলে এবং কলকাতা শহরের উপকণ্ঠে পয়লা বৈশাখ থেকে আরম্ভ হয় বৈশাখী মেলা। এই মেলা সমগ্র বৈশাখ মাস জুড়ে অনুষ্ঠিত হয়।ঢাকার বৈশাখী উৎসবের একটি আবশ্যিক অঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রার জন্য বানানো নয় রং-বেরঙের মুখোশ ও বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিলিপি। ১৯৮৯ সাল থেকে এই মঙ্গল শোভাযাত্রা পহেলা বৈশাখের উৎসবের একটি অন্যতম আকর্ষণ।

এখন বাঙ্গালীর প্রধান উৎসব গুলোর অন্যতম এই পয়লা বৈশাখ তবে এখন আর শুধু পশ্চিমবঙ্গ বা বাংলাদেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই পয়লা বৈশাখ পালন, এই বিশ্বায়নের যুগে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে বাঙালি আর পয়লাবৈশাখ ও পালিত হচ্ছে গোটা বিশ্ব জুড়ে, আজ বাঙালির শ্রেষ্ট উৎসব গুলোর মধ্যে অন্যতম এই বর্ষবরণ উৎসব|

নতুন বছর নতুন করে শুরু করুন, পরিস্থিতি যাই হোক সঠিক চিন্তা এবং সঠিক জ্যোতিষ পরামর্শ ও শাস্ত্র সম্মত প্রতিকার জীবনের যেকোনো খারাপ সময়কে কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে,একজন জ্যোতিষী হিসেবে আমাকে পাবেন সারাটা বছর, চেম্বারে ও অনলাইনে, প্রয়োজন মনে করলে যোগাযোগ করবেন উল্লেখিত নাম্বারে|আপনাদের সবাইকে জানাই শুভ নববর্ষ|ভালো থাকুন|দেখতে থাকুন মনের কথা|নমস্কার|