Home Blog Page 132

বাংলার শিব – এক্তেশ্বর শিব মন্দির

আজ বাংলার মন্দির নগরী বা বিষ্ণুপুরের কাছেই বাঁকুড়ার একটি প্রসিদ্ধ শিব মন্দিরের কথা আপনাদের বলবো|এই মন্দিরে স্থাপিত শিব এক্তেশ্বর নামে খ্যাত|এই মন্দির ও শিব লিঙ্গ নিয়ে প্রচলিত রয়েছে অসংখ্য লোককাহিনী ও অলৌকিক ঘটনা|

প্রাচীনকালে এই অঞ্চলে যে জনগোষ্ঠী বাস করতো তাঁরা নিজেদের সূর্যের সন্তান বলে প্রচার করতেন। এই আদিবাসীরা ছিলেন একেশ্বরবাদী অনেকে মনে করেন একঈশ্বর থেকে এক্তেশ্বর নামটি সৃষ্টি হয়েছে|বর্তমানে বাঁকুড়া শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে দ্বারকেশ্বর নদের বাম তীরে এই প্রাচীন শিব মন্দির অবস্থিত|

একটি প্রচলিত জনশ্রুতি অনুসারে বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজার সঙ্গে ছাতনার সামন্তভূমের রাজার রাজ্য সীমানা নিয়ে বিবাদ চরম আকার নিলে তার মীমাংসা করতে আসেন স্বয়ং শিব পরবর্তীতে বিবাদিত অঞ্চলের সীমানার সংযোগস্থলে একতার প্রতীক হিসেবে এই এক্তেশ্বর মন্দির স্থাপিত হয়|

এক্তেশ্বরে পাথরের শিব মন্দিরটির উচ্চতা প্রায় ৪৫ ফুট। এটি পশ্চিমমুখী|মন্দিরের কুণ্ডের মধ্যে যে শিবলিঙ্গটি রয়েছে সেটি নাকি দেখতে অনেকটা মানুষের পায়ের মতো এবং শিব লিঙ্গটি কিছুটা বাঁকা ভাবে অবস্থান করছে|অনেকে মনে করেন এই কিঞ্চিৎ বাঁকা শিবলিঙ্গ থেকেই বাঁকুড়া নামের উৎপত্তি|

শুধু বাঁকুড়া বা বাংলা নয় সারা বিশ্বের শিব ভক্ত দের কাছে একটি প্রসিদ্ধ তীর্থক্ষেত্র এই এক্তেশ্বর শিব মন্দির|আজও ফাল্গুন মাসে, শিব চতুর্দশী তিথিতে এক্তেশ্বর মন্দিরে শিবরাত্রি উৎসব উপলক্ষে কয়েক হাজার দর্শনার্থীর সমাগম হয়।শিবরাত্রিকে কেন্দ্র করে মেলাও বসে|

আবার অন্য কোনো পর্বে অন্য কোনো প্রাচীন শিব মন্দিরের কথা নিয়ে ফিরে আসবো|পড়তে থাকুন|মনে রাখবেন আপাতত চেম্বারের তুলনায় অনলাইনে সময় দিচ্ছি বেশি তাই যারা কাছে আসতে চাইছেন জ্যোতিষ সংক্রান্ত কাজ নিয়ে অনুগ্রহ করে ফোন করে নেবেন উল্লেখিত নাম্বারে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

বাংলার কালী – জহুরা কালী মন্দির

আপাতত চেম্বারে বসা কমিয়ে আবার অনলাইন পরিষেবায় মননিবেশ করতে হয়েছে কিছুটা পরিস্থিতির চাপে, তাই কিছুটা অবসর মিলে গেছে অপ্রত্যাশিত ভাবে, তাই এই সুযোগে জেলার কিছু প্রসিদ্ধ কালী মন্দির ও তাদের নিয়ে জানা অজানা কিছু কথা নতুন ভাবে বলবো বলেই এই ধারাবাহিক লেখার সূত্রপাত, আজ বৈশাখী অমাবস্যার দিনে বাংলার অন্যতম প্রাচীন কালী মন্দির জহুরা কালীর মন্দির নিয়ে লিখবো|

উত্তরবঙ্গের মালদায় ইংরেজবাজার থানা এলাকায় একটি প্রাচীন আমবাগানের মধ্যে রয়েছে এই প্রাচীন জহুরা কালীমন্দির|দেবীর কেনো এই বিচিত্র নাম হলো সে নিয়েও আছে এক রহস্যময় তত্ব|শোনো যায় এক কালে এই অঞ্চলে ছিলো ঘন অরণ্য|ডাকাত রাই একপ্রকার শাসন করতো এই এলাকা এবং এই দেবী এক সময়ে ছিলেন ডাকাতদের আরাধ্যা। এখানে দেবী চণ্ডীর পুজো করে ডাকাতরা যেত ডাকাতি করতে। ডাকাতি করে প্রচুর ধনরত্ন আনত তারা, তারপর সেগুলোকে এখানেই মাটির তলায় রাখত। সেই ধনরত্নের ওপরই দেবীমূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয় যেহেতু ধনরত্নকে হিন্দিতে বলে ‘জওহর’। দেবীমূর্তির নিচে প্রচুর ধনরত্ন রাখা থাকত বলেই এখানে দেবী চণ্ডী ‘জহরা’ বা ‘জহুরা’ নামে বিখ্যাত|

অবশ্য এই মন্দিরের ইতিহাস বেশ প্রাচীন এবং কিভাবে পুজো শুরু হলো ও পরবর্তীতে মন্দির স্থাপিত হলো তানিয়ে একাধিক মতামত রয়েছে|কিছু ইতিহাস বিদ মনে করেন এই দেবীর পুজোর সূচনা হয়েছিলো সেন বংশের রাজা বল্লাল সেনের আমলে আবার মন্দিরের গায়ে যে পাথরের ফলক আছে, তা থেকে অনুমান করা যায়,আজ থেকে তিনশো বছর আগে উত্তরপ্রদেশের কোনো এক মাতৃ সাধক স্বপ্নাদেশ পেয়ে এখানে দেবী জহরা চণ্ডীর বেদি স্থাপন করেছিলেন|

কথিত আছে এক কালে এখানে দেবীর পূর্ণ অবয়ব মূর্তি ছিলো তবে বিদেশী শত্রুর আক্রমণের ভয়ে তা মাটির নিচে লুকিয়ে ফেলেন পুরোহিতরা|
বর্তমানে মন্দিরের অভ্যন্তরে লাল রঙের ঢিবির ওপর রয়েছে এক মুখোশ এবং ঢিবির দু’পাশে আরও দু’টি মুখোশ দেখা যায়। এছাড়া গর্ভগৃহে আছে শিব আর গণেশের মূর্তি|এখানে বৈশাখ মাসের মঙ্গল ও শনিবার থাকে বিশেষ পুজোর আয়োজন|উল্লেখযোগ্য বিষয় অন্যান্য কালীমন্দিরের মতো এখানে রাত্রিবেলা কোনো পুজো এখানে হয় না পুজো হয় দিনে|

দেবী জহুরা চন্ডিরই রূপ তিনি অত্যন্ত জাগ্রত ও প্রসিদ্ধ তার পুজো উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চল ছাড়াও বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ সমবেত হন এই মন্দির প্রাঙ্গনে|আপনারও আগামী দিনে সুযোগ বুঝে অবশ্যই দর্শন করবেন দেবীর মন্দির|আজ লেখা এখনেই শেষ করলাম|বাড়িতে থাকুন যতটা সম্ভব জ্যোতিষ সংক্রান্ত প্রয়োজনে ফোন করবেন উল্লেখিত নাম্বারে তাহলেই হবে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ| 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রসবোধ

আজ পঁচিশে বৈশাখ, সাধারণত এই দিনটায় আমরা বাঙালিরা গঙ্গা জলে গঙ্গা পুজো করে থাকি অর্থাৎ কবি গুরুর গান , কবিতা, নাটক ও তার অন্যান্য সৃষ্টির মাধ্যমে তাকে স্মরণ করি|গত বছর থেকে অবশ্য ছবিটা অনেকটাই আলাদা,প্রান ঘাতী ভাইরাসের তান্ডবে আমরা সবাই কম বেশি ঘর বন্দী তাই জোট বেঁধে উৎসব করে পঁচিশে বৈশাখ পালন সম্ভব নয়|কিন্তু এই দিনটা আলাদা আজ কবিগুরুকে আমার আমাদের মতো করে স্মরণ করবো শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাবো|গতকাল আমার আবৃতি করা দেবতার গ্রাস মুক্তি পেয়েছে আমার ইউটিউবে|আপনাদের প্রশংসাও পেয়েছি|আজ এই লেখার মাধ্যমে কবি গুরুর জীবনের একটি বিশেষ দিক, তার রসবোধ নিয়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ও মজার তথ্য আপনাদের সামনে রাখবো|

রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর রচিত সাহিত্যের এক বিশাল জায়গাজুড়েই রয়েছে হাস্য-কৌতুক। তবে শুধু সাহিত্যেই নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও রবীন্দ্রনাথ ছিলেন হাস্যরসের নিপুণ কারিগর, একজন যথার্থ রসিক মানুষ|কবির জীবন কথায় , প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানিতে এবং রবীন্দ্র গবেষকদের কলমে একাধিক বার উঠে এসেছে রসিক রবীন্দ্রনাথের একাধিক কান্ড কারখানা|

একবার চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় গেছেন শিলাইদহে জমিদার রবীন্দ্রনাথের কাছে লেখা আনতে। চারুচন্দ্র তখন ‘প্রবাসী’ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত। রবীন্দ্রনাথ তখন অবস্থান করছিলেন পদ্মার ওপারে বজরায়। নদীর ঘাট থেকে বজরা পর্যন্ত একটা তক্তার সাঁকো পেতে দেয়া হয়েছে।
চারুচন্দ্র পা টিপে টিপে নৌকায় উঠে আসছেন। বজরার ছাদ থেকে এ দৃশ্য দেখে রবীন্দ্রনাথ সাবধান করলেন চারুকে, ‘সাবধানে পা ফেলো। এ জোড়াসাঁকো নয়!’ তার এই মন্তব্য শুনে আশপাশের সবাই হেসে উঠে ছিলেন|

আরেকবারের ঘটনা, গুরুদেব তখন শান্তি নিকেতনে,শান্তিনিকেতনের ছেলেদের সাথে ফুটবল খেলছে অন্য এক প্রতিষ্ঠানের ছেলেরা। খেলা শেষে দেখা গেল শান্তিনিকেতনের ছেলেরা আট গোলে জিতেছে। তারাতো মহাখুশি। জানাতে গেল গুরুদেবকে। গুরুদেবও খুশি। মজা করে বললেন ‘জিতেছো ভাল। তাই বলে আট গোল দিতে হবে? ভদ্রতা বলেও তো একটা কথা আছে।’

রবীন্দ্রনাথ ও গান্ধীজির ছিলো অত্যান্ত স্নেহের সম্পর্ক|রবীন্দ্রনাথকে গুরুদেব নাম গান্ধীজিই দিয়েছিলেন|একবার রবীন্দ্রনাথ ও গান্ধীজী একসঙ্গে বসে সকালের নাশতা করছিলেন। গান্ধীজীকে দেওয়া হয়েছিল ওটসের পরিজ। কারণ গান্ধীজী লুচি পছন্দ করতেন না। তবে রবীন্দ্রনাথ খাচ্ছিলেন গরম গরম লুচি। গান্ধীজী তাই দেখে বলে উঠলেন, ‘গুরুদেব, তুমি জানো না যে তুমি বিষ খাচ্ছো।’ উত্তরে রবীন্দ্রনাথ বললেন, ‘বিষই হবে; তবে এর অ্যাকশন খুব ধীরে। কারণ, আমি বিগত ষাট বছর যাবৎ এই বিষ খাচ্ছি।’শুনে হেসে ফেললেন গান্ধীজি|

ব্যাক্তিগত জীবনে হাসিঠাট্টা করতে খুবই ভালো বাসতেন রবীন্দ্রনাথ যেমন একবার এক ভদ্রলোককে বললেন রবীন্দ্রনাথ, ‘আপনাকে আমি দণ্ড দেব।’ভীষণ বিব্রত হয়ে ভদ্রলোক জানতে চাইলেন, ‘কেন, আমি কি অপরাধ করেছি?’
রবীন্দ্রনাথ লোকটির বিব্রতভাব বুঝতে পেরে হাসি হাসি মুডে বললেন, ‘গতকাল আপনার লাঠি মানে দন্ডটি আমার এখানে ফেলে গিয়েছিলেন। এই নিন আপনার দণ্ড!’ বলে তার দিকে লাঠিটা বাড়িয়ে দিলেন|

আরেকটি মজার ঘটনা এখানে উল্লেখ করা যায় যা ঘটেছিলো কবির জাপান যাত্রার সময়ে ,এক
এক ভক্তগৃহে রবীন্দ্রনাথের নিমন্ত্রন ছিল। খেতে গিয়ে বুঝতে পারলেন তাঁরা যে ডিম দিয়েছেন তা পঁচা।এ নাকি জাপানের বিখ্যাত খাদ্য রবীন্দ্রনাথের সঙ্গিরা বিরক্ত। এ কেমন নিমন্ত্রন! কিন্তু সবাই দেখলেন রবীন্দ্রনাথের প্লেটে ডিম নেই। তিনি পঁচা ডিম খেয়ে ফেলেছেন! বাড়ি ফেরার পথে একজন জিজ্ঞাসা করলেন, গুরুদেব আস্ত একটা পঁচা ডিম আপনি কিভাবে খেয়ে ফেললেন? সবাইকে অবাক করে দিয়ে রবীন্দ্রনাথ বললেন “আরে খাইনি তো। দাড়ির ভিতর দিয়ে জোব্বার মধ্যে চালান করে বাম হাতে নিয়ে পকেটে রেখে দিয়েছি। এই যে সাথে করে নিয়ে এসেছি”

নবাগত কবি দের সাথে কবিগুরুর বিশেষ আন্তরিক সম্পর্ক ছিলো, অনেক তরুণ কবিই আসতেন কবিতা শোনাতে, অনেকেই চিঠি লিখতেন, একবার এক তরুণ কবি রবীন্দ্রনাথকে চিঠি লিখে তার কবিতার এক লাইন পাঠালেন –
“কপালটা ভিজে যাবে দুই নয়নের জলে…” কবিতার এই চরণটি কেমন হয়েছে জানতে চাইলেন|কিন্তু রবীন্দ্রনাথ উত্তর দেন না।
একবার, দুইবার, তিনবার! শেষে কবি বিরক্ত হয়ে একটু কটুভাষায় রবীন্দ্রনাথকে চিঠি লিখলেন। শেষমেশ রবীন্দ্রনাথ বিরক্ত হয়ে উত্তর দিলেন;-
” পা দুটো বেঁধে রেখো তাল তমালের ডালে,
কপালটা ভিজে যাবে দুই নয়নের জলে।”

এমনই ছিলেন রবীন্দ্রনাথ|এমনই ছিলো তার রসবোধ যা নিয়ে লিখতে বসলে পাতার পর পাতা লিখলেও ঘটনা শেষ করা যায়না|তবুও কিছু ঘটনা আজ তুলে ধরলাম যা আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে|গুরুদেবকে তার জন্মদিনে প্রনাম ও শ্রদ্ধাঞ্জলি আজ এখানেই বিদায় নিচ্ছি|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

মন্দির রহস্য – ত্রিযুগী নারায়ণ মন্দির

নমস্কার, মন্দির রহস্যর আজকের পর্বে আপনাদের স্বাগত|আমাদের এই দেশে এমন হাজারটা মন্দির আছে যা অপার রহস্য ও মহিমায় ভরা। তার মধ্যে থেকে বেশ কিছু মন্দির পুরানের পাতা থেকে খুব বেশি প্রকাশ্যে উঠে আসেনি জনমানসে|এমনই কিছু রহস্যময় প্রাচীন মন্দির নিয়ে লিখছি এই ধারাবাহিকে, আজ উত্তরা খন্ডের ত্রিযুগী নারায়ণ মন্দির|

এই মন্দির সবথেকে বেশি যে কারনে গুরুত্বপূর্ণ সেটা হলো এই মন্দির শিব ও পার্বতীর বিবাহের স্থান, হ্যাঁ শাস্ত্র মতে এইখানেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে ছিলেন পার্বতী ও দেবাদিদেব মহাদেব|মন্দিরে ঢোকার মুখেই রয়েছে বহ্মশিলা। ঠিক এই স্থানেই তাদের বিয়ে হয় বলে সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করেন।মন্দিরে ঢোকার মুখে রয়েছে একটি অনন্ত কাল ধরে জ্বলতে থাকা দীপ। মনে করা হয় এই দ্বীপকে সাক্ষী মেনেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন শিব-পার্বতী।

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৯৮০ মিটার উঁচুতে,উত্তরাখণ্ডের রুদ্রপ্রয়াগ জেলায় রয়েছে এই ত্রিযুগী নারায়ণ মন্দির|এই মন্দিরের নির্মাণ শৈলী এবং চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে|মন্দির প্রাঙ্গণে চারটি পুকুর রয়েছে|অভ্যন্তরে রয়েছে শিব-পার্বতীর মূর্তি|এছাড়া এই মন্দিরে রয়েছে ভগবান বিষ্ণুর রুপোর একটি মূর্তি। সঙ্গে দেখতে পাবেন লক্ষ্মী, সীতা, রাম ও কুবেরের মূর্তিও|

যুগ যুগ থেকে বিবাহিত দম্পতিরা ছুটে আসেন এই মন্দিরে,তাদের বিশ্বাস এই মন্দিরে পুজো দিলে ও শিব এবং পরবর্তীর আশীর্বাদ পেলে তাদের জীবনের সব সমস্যা মিটে যাবে এবং সুখ সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পাবে|আপনারাও চাইলে সময় সুযোগ বুঝে ঘুরে আসতে পারেন|আপাতত প্রয়োজন ছাড়া বেরোবেন না|সুস্থ থাকুন|জ্যোতিষ সংক্রান্ত সমস্যা থাকলে অনলাইন সমাধান পেতে যোগাযোগ করতে পারেন উল্লেখিত নাম্বারে|
ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

বাংলার কালী – বাঘ রুপী কালী

কলকাতা ও পার্শবর্তী জেলার কিছু প্রসিদ্ধ কালী মন্দিরের কথা আগেই লিখেছি, লিখেছি সেই সব মন্দিরের সেহে জড়িত অনেক অলৌকিক ঘটনা|এই পরম্পরাকে আরেকটু এগিয়ে নিয়ে যাবো এই বাংলার কালী শীর্ষক ধারাবাহিক লেখার মাধ্যমে|লিখবো গ্রাম বাংলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কিছু জাগ্রত কালী মন্দির ও তাদের অজানা কথা|আজকের পর্বে কান্দির ব্যাঘ্ররুপী কালীর মন্দির|

নামটি শুনতে অবাক লাগতে পারে তবে প্রায় হাজার বছর ধরে মুর্শিদাবাদের কান্দির দোহালিয় গ্রামে পুজো হয়ে আসছে ব্যাঘ্ররূপী দক্ষিণাকালীর। এই মন্দির ও দেবীর রূপ নিয়ে রয়েছে অনেক গুলি জনশ্রুতি|

কথিত আছে অন্য এক অন্ধ পরিব্রাজক সাধক এই কালী মন্দিরের গাছের তলায় তপ্যসা করছিলেন। তাঁর তপস্যায় তুষ্ট হয়ে দক্ষিণাকালী তাঁকে দেখা দেন। সেই সঙ্গে দক্ষিণাকালীর আশীর্বাদে পরিব্রাজক দৃষ্টিশক্তি ফিরে পান এবং লোক মুখে ছড়িয়ে পরে এই কালী মন্দিরের নাম|

কালী পুজোকে কেন্দ্র করে একটি অদ্ভুত প্রথা রয়েছে এখানে,কালীপুজোর রাতে দোহালিয়া গ্রামে অন্য কোনও পুজো হয় না। গ্রামের এই একটি মন্দিরেই কেবল পুজো হয়|এখানে মা কালী বাঘ রূপে বিরাজিতা।

আগে এই গোটা এলাকা জঙ্গল ছিল। তার মধ্যেই ছিল মন্দিরটি,শোনা যায় বল্লাল সেনের আমলে এখানে এক সন্ন্যাসী ধ্যান ভঙ্গ হওয়ার পর দক্ষিণাকালীর এই মূর্তি দেখতে পান। সেই থেকে এখানে পুজো চলে আসছে ব্যাঘ্ররুপী মা কালীর|

আজও কতইনা না রহস্য লুকিয়ে আছে বাংলার অসংখ্য প্রাচীন কালী মন্দিরগুলিতে|ফিরে আসবো পরের পর্বে অন্য কোনো রহস্যময় কালী মন্দির নিয়ে|পরুন, অনুষ্ঠান দেখুন|নিরাপদে থাকুন আর প্রয়োজনে অবশ্যই যোগাযোগ করুন উল্লেখিত নাম্বারে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

হনুমানজির পঞ্চমুখী রূপের ব্যাখ্যা

কিছুদিন আগেই আমরা হনুমান জয়ন্তী পালন করলাম, হনুমান সংক্রান্ত অনেক পৌরাণিক ঘটনাআমি ইতিমধ্যে বলেছি, আজ এই বিশেষ পর্বে জানাবো হনুমানজির পঞ্চমুখী রূপের ব্যাখ্যা ও এই রূপ ধারণের কারন|

কেনো বজরংবলী কে পঞ্চ মুখী রূপে অবতীর্ন হতে হয়েছিলো তার উত্তর রামায়নেই রয়েছে, রামায়ণ অনুসারে, প্রভু শ্রীরাম এবং রাবণের যুদ্ধ চলাকালীন পরাজয় এড়াতে রাবণ তাঁর ভাই অহিরওয়ানের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন, ওহিরাবন ছিলেন পাতালের রাজা। রাবণের ভাই অহিরওয়ান তার মায়ার মধ্য দিয়ে প্রভু শ্রীরামের সেনাকে ঘুমের মধ্যে ফেলে রাম-লক্ষ্মণকে বন্দী করে করে পাতালে নিয়ে যান।

হনুমান জি রাম ও লক্ষণকে উদ্ধার করতে পাতাল লোকে যাওয়ার পরে সম্মুখীন হন মকরধজ নামে এক যোদ্ধার তাকে পরাজিত করে পাতালের অভ্যন্তরে গিয়ে হনুমান দেখলেন সেখানে পাঁচটি মোবাতির পাঁচটি শিখা জ্বলছে এই গুলোই অহিরাবনের শক্তির উৎস|এই সময় হনুমান পঞ্চমুখী রূপে অবতীর্ন হন|

পঞ্চমুখ অবতারে হনুমান তার পাঁচটি মুখ দিয়ে একসাথে সেই পাঁচটি মোমবাতি নেভান ও পরে রাবণের ভাই অহিরাভানকে যুদ্ধে পরাজিত ও হত্যা করেছিলেন এবং ভগবান শ্রী রাম ও লক্ষ্মণকে মুক্তি দিয়েছিলেন।এই হলো পঞ্চমুখী রূপে অবতীর্ন হওয়ার কারন|ভারতীয় জ্যোতিষ শাস্ত্র, বাস্তু শাস্ত্র এবং আধ্যাত্মিক জগতে হনুমানের এই রূপের গুরুত্ব অপরিসীম|পাঁচটি মুখের রয়েছে নিদ্দিষ্ট নাম ও ব্যাখ্যা|

প্রথম মুখটির নাম শ্রী হনুমান –

এই মুখের তাৎপর্য হ’ল এই মুখটি পাপের সমস্ত দাগ দূর করে এবং মনের বিশুদ্ধতা দেয়।

দ্বিতীয় মুখটির নাম নরসিংহ –

এই মুখের তাৎপর্য হ’ল এই মুখটি শত্রুদের ভয়কে সরিয়ে দেয় এবং বিজয় দেয়। নরসিমা হলেন ভগবান বিষ্ণুর সিংহ-মানুষ অবতার, যিনি তাঁর ভক্ত প্রহ্লাদকে তাঁর দুষ্ট পিতা হিরণ্যকশিপু থেকে রক্ষা করার জন্য এই রূপ নিয়েছিলেন।

তৃতীয় মুখটির নাম গরুড় –

এই মুখের তাৎপর্য হলো এই মুখটি অশুভ শক্তি, নেতিবাচক প্রভাব দূরে সরিয়ে দেয় এবং শরীরের সমস্ত বিষাক্ত প্রভাব দূর করে। গরুড় হলেন ভগবান বিষ্ণুর বাহন।

চতুর্থ মুখটির নাম বরাহ –

এই মুখ ও বিষ্ণুর একটি অবতার অনুসারে সৃষ্ট এই মুখটি সুখ ও সমৃদ্ধি দান করে এবং মনকে শান্ত রাখে|

পঞ্চম মুখটি হয়গ্রিব –

এই মুখটি ঘোড়ার আকৃতি বিশিষ্ট |এই মুখে শক্তি ও জ্ঞান দান করে ও আধ্যাত্মিক উন্নতি ঘটায় |

রূদ্র অবতার হনুমান কল্যানের দেবতা হিসাবে বিবেচিত হন।শাস্ত্র মতে পঞ্চমুখী হনুমানজি তাঁর ভক্তদের সমস্ত দুর্ভোগকে নষ্ট করে দেন এবং নিয়মিত তার আরাধনা অপার ঐশ্বর্য ও সমৃদ্ধি প্রদান করে|পবন পুত্র হনুমানকে প্রনাম জানিয়ে শেষ করছি আজকের এই পর্ব| পড়তে থাকুন আগামী দিনে আরো অনেক এমন তথ্য সমৃদ্ধ লেখা ও অভিনব বিষয় নিয়ে আমি আপনাদের সামনে আসবো|যারা অনলাইন আমার কাছে জ্যোতিষ পরামর্শ চান বা অফলাইনে সাক্ষাৎ চান কমেন্ট বা মেসেজ না করে অনুগ্রহ করে উল্লেখিত নাম্বারে যোগাযোগ করুন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ| 

পুরান রহস্য – শ্রী কৃষ্ণের মৃত্যু রহস্য

আমাদের সনাতন ধর্মে অসংখ্য দেবদেবী থাকলেও ভগবান একজনই, তিনি স্বয়ং কৃষ্ণ|শৈশবে কালিয়া নাগ,পুতনা সহ একাধিক অসুর বধ এবং পরবর্তীতে মহাভারতের যুদ্ধে তার ভূমিকা আমরা কম বেশি সবাই জানি|কিন্তু মহাভারতের যুদ্ধের পর কৃষ্ণ কোথায় গেলেন?কিভাবে মৃত্যু বরণ করলেন তিনি? এমনকি মৃত্যুর পরেও তার শরীরের একটি অংশ নাকি জীবিত আছে! আজও তা অক্ষয় রয়েছে! কি তা?আজকের পর্বে জানাবো শ্রীকৃষ্ণের মৃত্যু সংক্রান্ত সব রহস্যময় তথ্য|

যাদব বংশ শেষ হয়ে যাওয়ার শোকে একটা গাছের তলায় বসেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। সেই সময় তাঁর রক্তবর্ণ চরণ দেখে হরিণ মনে করে তীর ছোঁড়েন সেই মত্‍স্যজীবী। এই তীর তৈরিহয়েছিল একটি বিশেষ লোহার টুকরো থেকে। পায়ে এই তীর গেঁথে মৃত্যু হয় শ্রীকৃষ্ণের|এবার এর আগের ঘটনা জানলে বোঝা যাবে কিভাবে শেষ হলো যাদব বংশ এবং এই বিশেষ তীর বা এলো কোথাথেকে|

মহাভারতের যুদ্ধের পর নিজের রাজ্য দ্বারকায় ফিরে যান কৃষ্ণ। স্ত্রী রুক্মীনি ও পুত্র সাম্বকে নিয়ে ৩৫ বছর সুখে বাস করেন।একদিন সপ্তঋষি কৃষ্ণ ও বলরামের সঙ্গে দেখা করতে দ্বারকা আসেন। তাঁদের নিয়ে একটু মজা করতে চান কৃষ্ণ-পুত্র সাম্ব ও তাঁর বন্ধুরা। মহিলার মত সাজপোশাক করে এবং পেটে লোহার টুকরো বেঁধে গর্ভবতী মহিলা সেজে সপ্তঋষির সামনে আসেন সাম্ব। ঋষিরা পুরো বিষয়টা ধরে ফেলেন|সপ্তঋষি অভিশাপ দেন যে সাম্বর শরীরে যা বাঁধা আছে, তাই এই যাদব বংশের ধ্বংসের কারণ হবে। ঠিক পরের দিন পেটে প্রচণ্ড ব্যাথায় শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন সাম্ব। কৃষ্ণ ও বলরাম তাঁকে দেখতে এলে সপ্তঋষির অভিশাপের কথা শোনের। সাম্বর পাশে রাখে লোহার টুকরোটাও দেখেন তাঁরা। ওই লোহার টুকরো গুঁড়ো করে প্রভাস নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। অনেকটা গুঁড়ো হলেও একট টুকরো লোহা থেকে যায়। তা নদীর জলে ভাসিয়ে দিলে সেই লোহার টুকরো একটা মাছ গিলে ফেলে। ওই মাছ আবার ধরা পড়ে স্থানীয় এক মত্‍স্যজীবীর জালে। মাছ কেটে পেটের মধ্যে লোহার টুকরো দেখে তা দিয়ে তীর বানান ওই মত্‍স্যজীবী|এবং ঘটনা চক্রে ওই তীরের আঘাতেই প্রান যায় কৃষ্ণর|সত্যি হয় সপ্তর্ষির অভিশাপ|

এবার আসি কৃষ্ণের মৃত্যুর পরের রহস্যে|কৃষ্ণের অন্তেষ্টি ক্রিয়া সাঙ্গ করেন পাণ্ডবরা। কিন্তু চিতা নিভে গেলেও দেখা যায় তাঁর হৃদপিণ্ডটি অক্ষত আছে । তখন সেটিকে নদীর জলে ভাসিয়ে দ্বারকার সব মহিলা ও শিশুদের নিয়ে হস্তিনাপুর ফিরে যান পাণ্ডবরা। সমুদ্রের জল এসে ভাসিয়ে নিয়ে দ্বারকাকে। সমুদ্রের নিচে ডুবে যায় দ্বারকা।কিন্তু কৃষ্ণের হৃদপিণ্ড সাগরের জলে জীবিত অবস্থায় নিমজ্জিত হয়|

এরপর কেটে যায় বহু কাল, একদিন নদীর জলে স্নান করতে করতে কৃষ্ণের দিব্য হৃদয় উদ্ধার করেন পুরীর মহারাজ ইন্দ্রদ্যুম্ন। সেই হৃদয় হাতে নিতেই স্বয়ং বিষ্ণু তাঁর কানে ফিসফিস করে বসেন যে এই হৃদয় তাঁরই। এই পৃথিবীতে এটি বরাবর থাকবে। দ্রুত জগন্নাথ মন্দিরে এসে জগন্নাথ দেবের মুর্তির মধ্যেই তা স্থাপন করেন ইন্দ্রদ্যুম্ন।বিষ্ণুর আদেশে এমন ভাবে তা করা হয়, যাতে তা কেউ দেখতে না পায়|মনে করা হয় আজও সেই দিব্য বস্তু, স্বজত্নে এবং গোপনে সংরক্ষিত আছে প্রভু জগন্নাথের মূর্তির মধ্যে|

এই তথ্য বা তত্ত্ব বহু কাল থেকেই কিংবদন্তী রূপে প্রচলিত রয়েছে ভারতের আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে| যদিও কিঞ্চিৎ মতপার্থক্য বা ভিন্ন মত ও রয়েছে|শাস্ত্রীয় ভাবে প্রমাণিত নয়, তবুও অনেকের কাছেই এই তত্ত্ব গ্রহন যোগ্য এবং সমর্থনযোগ্য|তবে ব্যাক্তিগত ভাবে আমি মনে করি, ভগবানের লীলা বোঝা তো ওতো সহজ নয়, আমরা শুধু অনুমান করতে পারি|আর কিছু রহস্য আজীবন রহস্যই থাকবে|কিছু প্রশ্নের উত্তর না খোঁজাই ভালো|শ্রদ্ধা আর ভক্তি টাই শেষ কথা|

কাজের ফাঁকে যখনই সামান্য অবসর পাবো আবার লিখবো, এমন আরো অনেক রহস্যময় পৌরাণিক বিষয় নিয়ে আগামী দিনে আপনাদের সামনে আসবো|প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন ,বাড়িতে বসেই মিলবে জ্যোতিষ পরামর্শ ও প্রতিকার|ভালো থাকুন| সুস্থ থাকুন|ধন্যবাদ| 

পুরান রহস্য – শনিদেবের এতো ক্রোধ কেনো?

আমাদের পুরান ও জ্যোতিষ শাস্ত্রে গ্রহ রাজ শনিকে একটি ভয়ানক গ্রহ বা রাগী দেবতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে|সাধারণ মানুষের মধ্যে এতটাই আতঙ্ক রয়েছে তার উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে যে তার মুখে আনতে বা সরাসরি তার দর্শন করতেও ভয় পান অনেকেই|জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে তার কুদৃষ্টি বা কু প্রভাব ছারখার করে দিতে পারে একজন জাতক বা জাতিকার জীবনে|শনিদেব বদরাগী, তিনি নিষ্ঠুর! কিন্তু কেনো?কি তার রাগের কারন? সত্যি কি তিনি এতটা ভয়ের? এতটা হানিকারক!এই সব প্রশ্নের উত্তর রয়েছে আমাদের শাস্ত্রে|উত্তর পেতে গেলে জানতে গেলে জানতে হবে শনিদেবের শৈশব কিভাবে কেটেছিলো, কি ঘটে ছিলো তার সাথে! আজ জানাবো|দেখতে থাকুন|

বিভিন্ন হিন্দু পুরাণে শনির কাহিনি সম্পর্কে ভিন্ন মতবাদ রয়েছে।হাজার বদনাম সত্ত্বেও মৎস্য পুরাণ কিন্তু শনিদেবকে লোকহিতকর গ্রহের তালিকাতেই ফেলেছে। মৎস্য পুরাণে বলা হচ্ছে, দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার মেয়ে সঞ্জনার সঙ্গে বিয়ে হয় সূর্যদেবের। কিন্তু সূর্যের প্রচণ্ড তাপে প্রায় ঝলসে যান সঞ্জনা। তখন তাঁর নতুন নাম হয় সন্ধ্যা। নিজের এমন দূরবস্থায় স্বামীর প্রতি সমস্ত ভালোবাসা হারিয়ে ফেলেন তিনি। সূর্যের থেকে দূরে পালাতে চান তিনি। কিন্তু কী ভাবে? তখন সন্ধ্যা নিজেরই একটি প্রতিকৃতি সৃষ্টি করেন| তাঁর নাম দেন ছায়া। ছায়াকে স্বামীর দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে সন্ধ্যা পিতার ঘরে ফিরে যান। এ ভাবে যে তাঁর স্ত্রী বদল হয়ে গেল তা খেয়ালই করেন না সূর্যদেব।

এই সূরদেব ও ছায়ার সন্তান হিসেবে জন্ম নেন শনি। মেয়ে তাঁর কাছে, এদিকে সূর্যের সন্তান-জন্মের খবর পেয়ে বিশ্বকর্মা ধন্দে পড়ে যান। সন্ধ্যার কাছে ছুটে গিয়ে সব জানতে চান। সব শুনে বিশ্বকর্মা সন্ধ্যাকে সেই মুহূর্তেই পতিগৃহে ফিরে যেতে নির্দেশ দেন। ক্ষুব্ধ সন্ধ্যা ফিরে গিয়ে ছায়াকে নিঃশেষ করে নিজে ফের সূর্যের স্ত্রীর ভূমিকা পালন করতে থাকেন। এ ঘটনাও সূর্যের নজর এড়িয়ে যায়|

শনির জীবনের দুক্ষ দুর্দশার সূত্রপাত এখান থেকেই, এর পর শনির প্রতি বিমাতৃসুলভ আচরণ করতে শুরু করেন সন্ধ্যা। শনিকে সূর্যের থেকে দূরে সরাতে অনবরত স্বামীর কান ভাঙাতে থাকেন সন্ধ্যা। এভাবে মায়ের স্নেহ এবং বাবার ভালোবাসা না পেয়ে ক্রুদ্ধ, বিরক্ত, অলস হয়ে উঠতে থাকেন শনি। কোনও কিছুই তাঁর ভালো লাগে না।

কিছুকাল পরে, সূর্যের ঔরসে সন্ধ্যার গর্ভে একটি ছেলে ও একটি মেয়ের জন্ম হয়। ছেলের নাম রাখা হয় যম ও মেয়ের নাম যমুনা। ক্রমে ছেলে-মেয়েরা বড় হলে তাঁদের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন সূর্য। যমকে দেওয়া হয় ধর্মরাজের দায়িত্ব। পৃথিবীর বুকে ধর্মরক্ষার দায়িত্ব তাঁর। যমুনা পবিত্র নদীর রূপ নিয়ে সব পাপ-তাপ ধুয়ে দেওয়ার দায়িত্ব পান।

ওদিকে সন্ধ্যার ক্রমাগত কান ভাঙানোর ফলে বড় ছেলে হওয়া সত্ত্বেও শনিকে কোনও দায়িত্বই দেন না সূর্য। এ ভাবে বঞ্চিত, অসহায় শনি ভাই-বোনের থেকে দূরে সরে গিয়ে আরও ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠেন। একদিন শোক ও রাগে পাগল হয়ে সন্ধ্যাকে লাথি মারেন তিনি। সেই রাগে শনিকে খোঁড়া হয়ে যাওয়ার অভিশাপ দেন সন্ধ্যা। মা-কে লাথি মারার জন্য শনির ওপর সূর্য ক্রুদ্ধ হলেও বেশি অবাক হন সন্ধ্যার ভূমিকায়। একজন মা কী করে তাঁর সন্তানকে এমন অভিশাপ দিতে পারেন! সন্ধ্যার কাছে সব কথা জানতে চান তিনি। সূর্যের জেরায় ভেঙে পড়ে অবশেষে তাঁকে সব জানাতে বাধ্য হন সন্ধ্যা।

অবশেষে শনির ওপর এতদিন এত অন্যায় হয়েছে বুঝতে পেরে নিজের ভুল স্বীকার করেন সূর্য। শনিকে সৌরমণ্ডলে স্থান দেন তিনি। কর্মফলের দেবতা হিসেবে শনিকে উন্নীত করা হয়। এ জন্যই কেউ কোনও অপকর্ম করলে শনির নজর এড়ায় না এবং শনির হাতে তার শাস্তি নিশ্চিত।অর্থাৎ তার এই ক্রোধ ও নিষ্ঠুরতা দিয়ে তাকে বিচার করলে হবেনা|তিনি কর্ম ফল প্রদান করেন|তিনি ভালোর জন্যে ভালো আবার খারাপের জন্যে খারাপ|মানুষের জীবনে তার প্রভাব দুরকমেরই হয়|তার দশায় একজন রাজাও হতে পারে আবার ক্ষতির সম্মুখীন ও হতে পারে|আশার কথা হলো তার ক্রোধ উপশম করে তাকে তুষ্ট করারও অসংখ্য পন্থা রয়েছে যা অনুসরণ করে প্রতিদিন উপকৃত হচ্ছেন বহু মানুষ|

শনিকে ভয় পাবেন না, আস্থা রাখুন নিজের সৎ কর্মের প্রতি, ভরসা রাখুন জ্যোতিষ শাস্ত্রে|আর জ্যোতিষ সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে আমার সাথে কথা বলতে চাইলে আমার নাম্বারে যোগাযোগ করতে পারেন, বর্তমানে অনলাইনে আমি ভাগ্যবিচার ও প্রতিকারের ব্যবস্থা করছি|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ

ভারতের সাধক – বামা খ্যাপা

ভারতের সাধক দের নিয়ে ধারাবাহিক লেখা বামা খ্যাপা কে বাদ দিয়ে হতে পারেনা কারন তার মত মহান ও ব্যতিক্রমী সাধক এদেশে খুব কমই আছেন|তারাপীঠ নিয়ে আমি আগেও লিখেছি, সেখানে বামা খ্যাপা প্রসঙ্গ নিশ্চই এসেছে, তার জীবন,সাধনা, অলৌকিক ঘটনাবলী একাধিক বার আলোচিত হয়েছে|আজকের পর্বে তার জীবনের একটি বিশেষ সময় এবং ঘটনা কে আপনাদের সামনে তুলে ধরবো|

এমনটা নয় যে তারাপীঠ মন্দিরে আসার প্রথম দিন থেকেই বামার জয় জয়কার শুরু হয় বা সবাই তার অলৌকিক ক্ষমতা স্বীকার করে নেয়|তারাপীঠে মা তারার সঙ্গে বামা খ্যাপা কে ভোগ দেয়ার যে রীতি প্রচলিত হয়েছে তার সাথেও জড়িয়ে আছে এক অলৌকিক ঘটনা যা বদলে দিয়ে ছিলো বামা খ্যাপার জীবনে ও তার প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি|

তারাপীঠ মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নাটোর রাজ পরিবার, একদিন নাটোরের রানী স্বপ্নে দেখলেন মা তারা মন্দির ছেড়ে চলে যাচ্ছেন,ঘুম ভেঙে কাঁদতে কাঁদতে  তাঁর আরাধ্য দেবী মা তারাকে স্মরণ করলেন রানী। দু’হাত জোড় করে মা’কে বললেন, “মা গো, আমি কি অপরাধ করেছি যে তুমি স্বপ্নে এসে আমাকে বললে… এই রাজ্য ছেড়ে তুমি চলে যাবে! মা,” উত্তরে মায়ের আদেশ ভেসে এলো রানীর কানে, মা বললেন  ‘মন্দিরের পুরোহিত আর দারোয়ান মিলে আমার পাগল ছেলে খ্যাপাকে প্রচণ্ড মারধর করেছে। ওরা জানে না যে তাদের ওই মার আসলে আমার শরীরেই পড়েছে। আমার দেহ ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে। আমার খ্যাপা ছেলের অপরাধ ছিল যে, সে আমারই ডাকে আমার সঙ্গে বসে ভোগ খাচ্ছিল। ওই রকম প্রচণ্ড মার খাওয়ার পর থেকে তিনদিন হয়ে গেল, ছেলেটা আমার কিচ্ছু খায়নি… তাই আমিও তিন দিন ধরে জলস্পর্শ করিনি! তুই বল, ছেলে না খেলে মা কখনও খেতে পারে!’

মায়ের কাছে ক্ষমা চাইলেন রানী|ভোরবেলাতেই রানি ছুটলেন মন্দিরে। তাঁর মুখে গত রাতের ঘটনা শুনে সবাই স্তম্ভিত|জানা গেলো ঘটনা সত্যি,কদিন আগে, বামা মন্দিরের ভিতর ভোগ খেতে ঢুকেছিলেন।তখন পুরোহিত এবং দারোয়ান মিলে তাঁকে বেধড়ক মেরেছে|সেই থেকে বামা কিছু খাচ্ছেন না|সব শুনে সেই সময়ে রানী নির্দেশ দিলেন ‘আজ থেকে এই তারাপীঠ মন্দিরে তারা মায়ের সঙ্গে তাঁর পাগল ছেলে মহাসাধক বামাখ্যাপাকেও ভোগ দেওয়া হবে’|তারাপীঠে এই ভাবে শুরু হয়েছিলো মা তারা ও তার স্নেহের খ্যাপা  সন্তান বামাকে এক সাথে ভোগ নিবেদনের রীতি|

বামা খ্যাপার জীবনে অলৌকিক ঘটনা এতো বেশি ও তার তাৎপর্য এতো গভীর যে একটি পর্বে শেষ করা যায়না, আগামী কোনো পর্বে আবার তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক আপনাদের সামনে তুলে ধরবো|আজ এখান থেকে বিদায় নিলাম তবে জ্যোতিষ সংক্রান্ত প্রয়োজনে আমাকে অনলাইনে সর্বদাই পাবেন শুধু যোগাযোগ করতে হবে উল্লেখিত নাম্বারে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|

পুরান রহস্য – মহাভারতে বজরংবলী

আর কিছুদিন পরই হনুমান জয়ন্তী,আমাদের সনাতন ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ ও রহস্যময় চরিত্রগুলির মধ্যে তিনি অন্যতম|রামায়ণ, পুরান এবং অন্যবহু ধর্মশাস্ত্রে তার মহিমা বর্ণিত হয়েছে|জ্যোতিষ শাস্ত্রেও তার তাৎপর্য রয়েছে,মনে করা হয় হনুমানের স্মরন নিলে গ্রহরাজ শনির প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়|তবে হনুমানের কথা উঠলেই আমরা রামায়নের কথা ভাবি, রামের কথা স্মরণ করি| কিন্তু শুধু রামায়ণ নয়, মহাভারতেও হনুমানের উপস্থিতি রয়েছে|কোথায় এবং কি ভাবে সেটাই এখন লিখতে চলেছি|

প্রথমত, বলবান ভীম তাঁর চার ভাই ও স্ত্রী দ্রৌপদীর সঙ্গে জঙ্গলে নারায়নাশ্রমে যখন ইন্দ্রের অস্ত্রের খোঁজে গিয়েছিলেন তখনও হনুমানের দেখা পেয়েছিলেন৷একদিন দ্রৌপদী ভীমকে তাঁর জন্য ফুল আনতে বলেছিলেন৷ স্ত্রীর কথা মতো ফুলের সন্ধানে বেড়িয়েছিল ভীম? কিন্তু পথ আটকায় হনুমান৷ হনুমানের লেজ ধরে তাঁকে সরানোর চেষ্টা করলেও হনুমানকে এক চুলও সড়াতে পারেননি ভীম|মহাবীর ভীমের বীরত্ব নিয়ে সব অহংকার নিমেষে দূর হয়ে গেছিলো বৃদ্ধ হনুমানের সম্মুখীন হয়ে|হনুমানের পরিচয় পেয়ে ভীম তার কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন, আশীর্বাদ চেয়েছিলেন|ভীম কে ক্ষমা করে নিজের লেজ স্বেচ্ছায় সরিয়ে ভীমকে পথ করে দিয়েছিলেন হনুমান|

দ্বিতীয়ত, মহাভারতে হনুমানের উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যায় কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের ময়দানে অর্জুনের রথের উপরে থাকা পতাকায়৷কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধকালে অর্জুনের রথের মাথায় থাকা পতাকা ছিলো আসলে হনুমান, তিনি অর্জুনকে অতিরিক্ত শক্তি জুগিয়ে রক্ষা করতেন|কিন্তু প্রভু কৃষ্ণের নির্দেশে নিজে সরাসরি পান্ডবদের হয়ে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেননি|

এছাড়া শোনা যায় তীর্থযাত্রায় বেড়িয়ে অর্জুন যখন রামেশ্বরমে গিয়েছিলেন তখনো তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছিল হনুমানের৷ এমনকি হনুমানের কথা শুনে তীর দিয়ে সেতু নির্মাণেরও চেষ্টা করেছিলেন অর্জুন|মহাভারতের কালে একবার হনুমানের অনুরোধে কৃষ্ণ তাকে শ্রী রাম রূপে দর্শনও দিয়েছিলেন|

হনুমান রামের আশীর্বাদে অমর ও অপরাজেয়, তিনি যুগে যুগে থাকবেন সেটাই স্বাভাবিক|রূদ্র অবতার হনুমানকে প্রনাম জানিয়ে শেষ করছি আজকের পর্ব|জানিয়ে রাখি আপাতত এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে চেম্বারের তুলনায় অনলাইনে জ্যোতিষ পরামর্শ ও ভাগ্যগণনায় আবার জোর দিতে হয়েছে|তাতে মানুষের সুবিধা হচ্ছে বেশি|আপনাদেরও যদি প্রয়োজন বোধ হয় যোগাযোগ করতে পারেন উল্লেখিত নাম্বারে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|