ভারত আধ্যাত্মিকতার দেশ|হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসছে আধ্যাত্মিকতা ও ধর্মীয় চর্চা|বহু মহান সাধক ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব জন্ম গ্রহণ করেছেন এই দেশের পুন্যভূমি তে|নিজেদের মেধা পান্ডিত্য ও সাধনা দিয়ে তারা এগিয়ে নিয়ে গেছে সনাতন সংস্কৃতি কে|ধর্মীয় পরম্পরা ও ঐতিহ্যকে নিজের জীবন ও সাধনা দিয়ে তারা সম্পৃক্ত করেছেন|এমন বেশ কিছু মহান সাধক ও মহাপুরুষের কথা আমি ইতি মধ্যেই এই ভারতের সাধক শীর্ষক ধারাবাহিক লেখনীতে বলেছি|আজকের পর্বে লিখবো এমন একজনকে নিয়ে যার কথা না বললেন ভারতের আধ্যাত্মিক পরম্পরা বা ভারতের সাধকদের নিয়ে লেখা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে|আজকের পর্বে আদি গুরু শঙ্করাচার্য্য|
প্রথমেই বলে রাখি আদিগুরু শঙ্করাচার্য্যর প্রারম্ভিক জীবন এবং বাল্যকাল নিয়ে নানা মুনির নানা মত|তবে এ বিষয়ে সব থেকে গ্রহন যোগ্য প্রামাণ্য হিসেবে ধরা হয় শংকর বিজয়ম নামক প্রাচীন গ্রন্থকে|1788 খ্রিস্টাব্দে, কেরল রাজ্যের কালাডি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন শঙ্করাচার্য্য|তার বাবার নাম ছিল শিবগুরু ও মায়ের নাম আর্যাম্বা|কথিত আছে ত্রিশূরের বৃষভচল শিবমন্দিরে পুত্রকামনা করে পূজা দিয়ে আশীর্বাদ স্বরূপ শংকরকে পেয়ে ছিলেন তার বাবা মা|তিনি ছিলেন শিবের বর পুত্র এবং পরবর্তীতে তাকে শিবের অবতার হিসেবেই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে|রক্ষন শীল হিন্দু পরিবারে তার বড়ো হয়ে ওঠা|বাল্যকাল থেকেই শংকর ছিলেন অত্যান্ত মেধাবী ও আধ্যাত্মিক মানসিকতার|মনে করা হয় মাত্র আট বছর বয়সে তিনি চারটি বেদ আয়ত্ত্ব করে ফেলেন অতি সহজে|অল্প বয়সে পিতৃ বিয়োগের পর চরম আর্থিক দুর্দশার সম্মুখীন হতে হয় তাকে|
কৈশোর থেকেই শঙ্করের ইচ্ছে ছিলো সন্ন্যাস নেয়ার কিন্তু মা রাজি ছিলেন না পরবর্তীতে তাকে রাজি হতে হয় এ নিয়েও আছে এক অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ|একবার বালক শংকর পূর্ণা নদীতে স্নান করছিলেন। এমন সময় একটি কুমির তার পা কামড়ে ধরে। শঙ্করের মা তখন সেখানেই উপস্থিত ছিলেন|তিনি মা-কে বলেন, মা যদি সন্ন্যাস গ্রহণের অনুমতি দেন, তাহলে কুমিরটি তার পা ছেড়ে দেবে। ছেলের প্রাণ বাঁচাতে মা তাকে সন্ন্যাস গ্রহণের অনুমতি দিলেন|কুমির ও সাথে সাথে পা ছেড়ে অদৃশ্য হলো|এরপর সন্যাস নিয়ে গৃহ ত্যাগ করলেন শঙ্করাচার্য্য|গুরুর খোঁজে বেড়িয়ে পড়লেন পথে|
দীর্ঘ সময় পদব্রজে সারা উত্তর ভারত পরিভ্রমণ করার পর অবশেষে গুরুর সাথে সাক্ষাৎ হলো|নর্মদানদীর তীরে ওঙ্কারেশ্বরেতিনি গৌড়পাদের
শিষ্য গোবিন্দ ভগবদপাদের শিষ্যত্ব গ্রহন করলেন শঙ্করাচার্য্য|গুরু শঙ্করাচার্য্যকে অদ্বৈত মত প্রচার করতে বলেন|পরবর্তীতে তিনি কাশী,বদ্রিনাথ সহ বহু স্থানে ঘুরে বেড়ান|অসংখ্য ভাষ্য ও গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেন এবং তার পাশাপাশি চালিয়ে যান
অদ্বৈতবাদের প্রচার|এই সময় অসংখ্য অনুগামী ও ভক্ত তার সংস্পর্শে আসেন ও তার শিষ্যত্ব গ্রহন করেন|বহু ধর্মীয় বিতর্কে অংশগ্রহন করে সেকালের ধর্মজগতের বহু সনামধন্য পন্ডিতকে শাস্ত্র আলোচনায় পরাস্ত করে শংকরাচার্য্য হয়ে ওঠেন এক অতি পরিচিত কিংবদন্তী স্বরূপ|মনে করা হয় কাশীতে বিশ্বনাথ মন্দিরদর্শন করতে যাওয়ার সময় স্বয়ং শিব এক চন্ডাল রূপে তাকে দর্শন দিয়ে ছিলেন|
শঙ্করাচার্য সারাটা জীবন ধরে অদ্বৈতত্ত্বের প্রচার করে বেদ বিমুখী সমাজকে আবার বেদান্তের পথে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন| শঙ্করাচারজ্যর অদ্বৈত ত্বত্ত্বের মূল কথা ছিল- ব্রহ্ম সত্য, জগৎ মিথ্যা। জীব ও ব্রহ্মে কোনো প্রভেদ নেই|অর্থাৎ, জীব ও ব্রহ্মকে এক ভাবাই অদ্বৈতবাদ।সকল জীবের অভ্যন্তরে যে আত্মা বিরাজমান, তা পরমাত্মারই প্রকাশ। এ তত্ত্বে জীবাত্মা ও পরমাত্মা এক|
বিভিন্ন সম্প্রদায়, শাখা ও উপশাখায় বিভক্ত সনাতন ধর্ম কে একটা সুসংবদ্ধ রূপ দান করেন এবং এর মাধ্যমে হিন্দু ধর্মকে তিনিই রক্ষা করেন|পরবর্তীতে হিন্দু ধর্মের পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করার জন্য দেশের চার প্রান্তে চারটি মঠ প্রতিষ্ঠা করেন|এবং দশনামি সম্প্রদায়কে সুসংবদ্ধ ভাবে এই মঠের অধীনে এনে তিনি সনাতন ধর্মকে একটি সুসংগঠিত ভিত্তি প্রদান করেন|আজও এই পরম্পরা মেনে চারটি মঠের প্রধান অর্থাৎ চারজন শঙ্করাচার্য্য পদাধিকারী সনাতন ধর্মের কল্যানে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছেন সর্বদা|
এই মহামানবের জীবনের আরো অনেক বিষয়ের ন্যায়ে তার দেহ ত্যাগের প্রকৃত স্থান নিয়েও পন্ডিতদের মধ্যে মত পার্থক্য রয়েছে| কেদারনাথ মন্দিরের পিছনে আদি শঙ্করের প্রতি উৎসর্গীকৃত সমাধি মন্দির রয়েছে মনে করা হয় 1820 খ্রিস্টাব্দে শঙ্করাচার্য্য মাত্র বত্রিশ বছর বয়সে এই স্থানেই দেহত্যাগ করেন|
আজ এই মহান সাধককে নিয়ে লেখা এখানেই শেষ করছি|আমার সব লেখা, ভিডিও ও সর্বমঙ্গলা মায়ের মন্দির সংক্রান্ত সব তথ্য পেতে এখন থেকে আমার ফেসবুক প্রোফাইল ও ইউটিউব ছাড়াও নজর রাখুন আমার ওয়েবসাইটে|আর জ্যোতিষ সংক্রান্ত পরামর্শ, ভাগ্যবিচার ও প্রতিকারের জন্য ফোন করুন উল্লেখিত নাম্বারে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|