কালী কথা – যোগেশ্বরী কালী 

19

কালী কথা – যোগেশ্বরী কালী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার মথুরাপুরের সাতঘরা ঠাকুরঝি গ্রামের যজ্ঞবাটি মহাশ্মশানে কয়েকশো বছর ধরে পূজিত হয়ে আসছেন মা যজ্ঞেশ্বরী কালী।আজকের কালী কথায় জানাবো এই যোগেশ্বরী কালীর মাহাত্ম এবং এই পুজোর ইতিহাস।

 

অতীতে এক সময় এই স্থান দিয়ে বয়ে যেতো আদি গঙ্গা।অধুনালুপ্ত আদি গঙ্গার তীরে অবস্থিত এই শ্মশান। শ্মশানে রয়েছে তিন চূড়া বিশিষ্ট মন্দির। সেখানেই পূজিত হন মা যোগেশ্বরী কালী।

এই শ্মশানে কালীর আরাধনা শুরু করেছিলেন তান্ত্রিকরা। কালের নিয়মে জঙ্গল না থাকলেও এখনও শ্মশান চত্বরে নির্জন পরিবেশ। চারিদিকে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য সমাধি। তারই মধ্যে মাথা তুলেছে লতাপাতার জঙ্গল সব মিলিয়ে এই যোগেশ্বরী কালী মন্দিরের পরিবেশ বেশ রহস্যময় এবং গা ছমছমে।এই স্থানে তন্ত্র সাধনার রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস।এখানে তন্ত্র সাধনা করতে প্রথম আসেন শিবানন্দ ব্রহ্মচারী নামে এক তন্ত্র সাধক। তিনিই প্রথম একশো আটটি টি নরমুণ্ড দিয়ে তন্ত্র সাধনা শুরু করেন বলে জনশ্রুতি আছে।

ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে মায়ের মন্দির। শুরু হয় মা যজ্ঞেশ্বরী কালীর নিত্যপূজা।

 

সাধক শিবানন্দের দেখানো পথ ধরেই মূলত সুন্দরবন এলাকার তান্ত্রিকরা তন্ত্র সাধনার জন্য এই শ্মশানে আসতেন।আগে এই জায়গায় বৈরাগী সম্প্রদায়ের মানুষের সমাধি দেওয়া হত। অনেকের ধারণা বৈরাগীরা সমাধিকে ‘যজ্ঞবাড়ি’ বলত, তাই এই এলাকার নাম হয়ে যায় যজ্ঞবাটি এবং যজ্ঞবাটির প্রতিষ্ঠিত কালী জনসাধারনের

কাছে হয়ে ওঠেন দেবী যজ্ঞেশ্বরী।আবার কথিত আছে, পৌরাণিক কালে ভাগীরথ মর্তে গঙ্গা আনয়নের সময় অধুনা যজ্ঞবাটি শ্মশানের কাছে বিশ্রাম নিয়ে যজ্ঞ করেছিলেন। সেই থেকে এই এলাকার নাম যজ্ঞবাটি। নাম করণের ইতিহাস যাই হোক। দেবী যজ্ঞেশ্বরী এই অঞ্চলের প্রধান দেবী।

 

মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্যদেবের সাথেও এই স্থানের যোগসূত্র আছে এক সময় ছত্রভোগ হয়ে নীলাচলে যাওয়ার পথে এই শ্মশানেই নাকি বিশ্রাম নিয়েছিলেন স্বয়ং চৈতন্য মহাপ্রভু।

 

এখানে আজও রীতি মেনে তন্ত্র মতে নৈবেদ্য হিসেবে দেবীকে অর্পন করা হয় মদ, মাংস ও ছোলা।বিশেষ বিশেষ অমাবস্যাতিথিতে বিশেষ পুজোর আয়োজন হয় বহু ভক্তের সমাগম হয়।

 

কালী কথায় বাংলার কয়েকটি প্রসিদ্ধ এবং প্রাচীন কালী মন্দিরের কথা ইতিমধ্যে আপনাদের বলেছি।এই ধারাবাহিকতাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবো আজ আগামী দিনে।চলতে থাকবে কালী কথা।

পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।