Home Blog Page 10

মহারাজা কৃষ্ণ চন্দ্রর দূর্গা পুজো

মহারাজা কৃষ্ণ চন্দ্রর দূর্গা পুজো

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

বাংলার ইতিহাসে বিশেষ করে পলাশী যুদ্ধ এবং তার পরবর্তী সময়ে কলকাতার পাশাপাশি নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্ররা ভূমিকা ছিলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

এই রাজ পরবারের দূর্গাপুজার আলাদা মাহাত্ম আছে। সেই নিয়েই আজকের পর্ব।

 

মনে করা হয় কৃষ্ণচন্দ্র মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গিরকে সাহায্য করেন প্রতাপাদিত্যকে হারাতে। তারপরে কৃষ্ণচন্দ্রকে কৃষ্ণনগরের রাজা করেন জাহাঙ্গীর|রাজত্ব লাভ করে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র জাঁকজমক সহকারে দূর্গা পুজো শুরু করেন যা আজও চলে আসছে বংশ পরম্পরায় আগে এই পরিবারে অন্নপূর্ণার পুজো হতো|

 

এই বাংলায় দূর্গা পুজোর শুরু কবে হয়েছিল তা নিয়ে ঐতিহাসিক দের মধ্যে মতপার্থক্য স্পষ্ট|তবে প্রথম দূর্গা পুজো হয়েছিল কোনো রাজ পরিবারে এবং অনেক পরে বারোয়ারি পুজোর সূচনা হয়|সে ক্ষেত্রে একদম প্রথম পারিবারিক পুজোগুলির অন্যতম কৃষ্ণনগর রাজ বাড়ির পুজো|

 

কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির দুর্গা পরিচিত রাজরাজেশ্বরী হিসেবে|দেবীর এখানে যুদ্ধবেশ পরনে টকটকে লাল শাড়ি|গায়ে বর্ম ও হাতে অস্ত্র। যেহেতু বৈষ্ণব মতে পুজো হয় তাই দেবী ঘোটকাকৃতি সিংহের ওপর আসীন|একচালা প্রতিমার পিছনে থাকে অর্ধচন্দ্রাকৃতি ছটা ও তাতে আঁকা থাকে দশমহাবিদ্যা|

 

রীতি অনুসারে কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে মহালয়ার পর দিন থেকেই শুরু হয় পুজো এবং রাজরাজেশ্বরী পাটে আসীন হন বোধনের সময়ে। প্রাচীন প্রথা অনুসারে তাকে বেহারাদের কাঁধে চড়িয়ে আনা হয়|এই পুজোর অন্যতম আকর্ষণ হল সন্ধিপুজো ও দশমীর দিন সিদুর খেলা|আজও সন্ধিপুজোর সময়ে ধোয়ায় ঢেকে যায় দেবীর মুখ এবং প্রচলিত বিশ্বাস, সেই সময়ে মা আসেন কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে, বিজয়া উপলক্ষেআশেপাশের বহু মহিলা রাজবাড়ির সিদুর খেলাতে অংশগ্রহণ করেন|পুজোতে পশু বলি বা দশমীতে নীল কণ্ঠ পাখি ওড়ানো হয়তো আজ আর নেই তবুও আবেগ ও ভক্তি রয়েছে একই রকম|

 

মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র পলাশীর যুদ্ধে তার ভূমিকা নিয়ে সমালোচিত হতে পারেন তবে তার দান ধ্যান,ধর্ম কর্ম এবং বিশেষ করে দূর্গাপুজোর জন্য তিনি আজও স্মরণীয় হয়ে আছেন এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

 

আজ বিদায় নিলাম আবার ফিরে আসবো যথা সময়ে বনেদী বাড়ির পুজোর ইতিহাস নিয়ে।

পড়তে থাকুন। ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

লাহা বাড়ির দূর্গা পুজো

লাহা বাড়ির দূর্গা পুজো

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

ধারাবাহিক ভাবে কলকাতার এক কালের বনেদি বাড়ি গুলিরা দূর্গা পুজোর ইতিহাস, সেকাল এবং একাল নিয়ে লিখছি।আজ কলকাতার আরো একটি বিখ্যাত এবং ঐতিহ্য সম্পন্ন দূর্গা পুজো লাহা বাড়ির পুজো নিয়ে লিখবো।

 

প্রথমে বর্ধমানের বড়শূলে প্রথম পুজো শুরু করেন বনমালী লাহা|পরবর্তীতে কলকাতায় এই পুজো শুরু করেন দুর্গাচরণ লাহা|এ বাড়ির পুজোর এমন কিছু বৈশিষ্ট আছে যা আর বেশ অদ্ভুত এবং আর কথাও চোখে পড়েনা|লাহা বাড়ির কুল দেবতা সিংহ বাহিনী এবং দূর্গা পুজোর সময়ের দেবী দূর্গা সিংহ বাহিনী একই সাথে পূজিতা হন|

 

সিংহ বাহিনীর পুজো নিয়ে একটি অলৌকিক ঘটনা আছে।শোনা যায় কোনো এক সময় নাকি দেবীর এই মূর্তি কোন এক গভীর জঙ্গলে ডাকাতদের হাতে লাঞ্ছিত হয়ে অনাদরে অযত্নে পড়ে ছিল এই বাড়িরই এক সদস্য দেবীর কাছে স্বপ্নাদেশ মেয়ে মূর্তি উদ্ধার করতে গিয়ে দেখেন, দেবী বড় বিপন্ন। তিনি যত্নে দেবীকে তুলে নিয়ে এসে কুলদেবী রূপে পুজো করতে শুরু করেন|সেই থেকেই অষ্ট ধাতুর সেই মূর্তি কুল দেবী রূপে এবাড়িতে প্রতিষ্ঠিত|

 

মনে করা হয় ওই ঘটনার পর থেকে লাহাদের ব্যাপক উন্নত হয়|পরবর্তীতে শিবচরণ লাহা ইংরেজদের সঙ্গে পেন খাতাপত্র এবং মূল্যবান রত্নের ব্যবসা করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেছিলেন। পুজোর জাঁকজমকও বাড়ে এই সময়|এই বাড়ির পুজো হয়ে ওঠে কলকাতার বনেদি বাড়ির বড়ো পুজোগুলোর একটা|

 

এ বাড়িতে দেবী দুর্গার রূপ অন্য|তিনি এখানে হরপার্বতী রূপের পূজিতা হন|লাহা বাড়ির পুজো হয় বৈষ্ণব মতে।শিবের কোলে দেবী দুর্গা উপবিষ্টা|মহিষাসুর থাকেনা।দেবীর হাতে কোনো অস্ত্রও থাকেনা|

 

দেবীর রূপ ছাড়াও লাহাবাড়ির পুজোর রীতিও একটু আলাদা লাহাবাড়িতে কাঠামো পুজো হয় জন্মাষ্টমীর দুই তিন পড়ে এবং দেবীপক্ষের শুরুতে বোধন হয়।প্রথা মেনে এখানে অন্ন ভোগ হয় না এখানে ভোগের বিশেষত্ব নানা ধরণের মিষ্টি|এখনো বলী প্রথা পুরো পুরি লুপ্ত হয়নি তবে প্রাণী হত্যা হয়না|বলী হয় কুমড়ো বা শসা|বিসর্জন ঘিরেও এবাড়িতে রয়েছে এক অদ্ভুত প্রথা বিসর্জন দিয়ে ফিরে বাড়ির পুরুষরা জিজ্ঞাসা করেন, ‘মা আছেন ঘরে’ ? তখন বাড়ির কোনও মহিলা ভিতর থেকে উত্তর দেন, ‘হ্যাঁ মা আছেন।‘ বাইরে থেকে ফের জিজ্ঞাসা করা হয় ‘মা আছেন ঘরে ?’ একই উত্তর দেওয়া হয় ভিতর থেকে। এভাবে পরপর তিনবার জিজ্ঞাসা করার পর সবা

ভেতরে প্রবেশ করে|

 

বাংলার বনেদি বাড়ির পুজো গুলি নিয়ে আছে এমন অনেক ইতিহাস এবং ঘটনা। সেসব নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা চলতে থাকবে।

পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন।ধন্যবাদ।

রানী রাসমণির বাড়ির দূর্গা পুজো

রানী রাসমণির বাড়ির দূর্গা পুজো

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

স্বাধীনতারা আগে বাংলার রাজবাড়ি বা জমিদার বাড়ির পূজা গুলির মধ্যে যখন দূর্গাপুজোর জাঁকজমক নিয়ে প্রতিযোগিতা চলছিল তখন তাদের মধ্যে একটি পরিবার ছিলো যারা বাহ্যিক জাঁকজমক থেকে নিষ্ঠা, সারল্য ও শাস্ত্রীয় আচরণকে বেশি গুরুত্ব দিতো|এই পুজো হতো কলকাতার জান বাজারের রানী রাশমনির পরিবারে|এই পুজোর সাথে জড়িত আছে ঠাকুর রামকৃষ্ণ দেবের নাম, রয়েছে অনেক গল্প।

 

এই বাড়িতে দূর্গা পুজোর সূচনা করেন এই বংশের প্রাণপুরুষ এবং রানী রাসমণির শশুর মশাই শ্রী প্রীতরাম দাস|তার পর পুজোর দায়িত্ব গ্রহণ করেন পুত্র রাজেন্দ্র দাস এবং স্বামীর অবর্তমানে এই পরিবারের জমিদারি, ব্যবসা এবং দুর্গাপূজার দায়িত্বে আসেন রানী রাসমণি ও তার আমলে পুজোর শ্রী আরও বাড়ল|মনে করা হয় সেই সময়েই পুজোয় খরচ হত ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। ধর্ম কর্মের ব্যাপারে রানী রাসমণির বেশ সুনাম ছিলো এবং খরচা করতেন অনেক অর্থ তার সবচেয়ে বড়ো প্রমান তো দক্ষিনেশ্বর মন্দির।

 

একবার বাবুঘাটে কলা বৌ স্নান করাতে যাওয়ার সময় রানী রাসমণির সাথে বিবাদ বাধে এক ইংরেজ সাহেবের|জল অনেক দূর গড়ায় এবং রানীকে পঞ্চাশ টাকা জরিমানাও করা হয়|কিন্তু দমবার পাত্রী ছিলেন না রানী রাসমণি|ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে তাদের উচিৎ শিক্ষা দিয়েছিলে তিনি এবং আরো বড়ো করে দূর্গা পুজোর আয়োজন করেছিলেন|বেগতিক দেখে পিছু হট তে বাধ্য হয়ে ছিলো ইংরেজরা|

 

একবার এখানে দূর্গা পুজো করতে এসেছিলেন স্বয়ং ঠাকুর রামকৃষ্ণ তবে ভিড় এড়াতে তিনি এক নারীর ছদ্মবেশ ধারন করেছিলেন|সখি বেশে চামর দুলিয়ে দূর্গাপুজো করেছিলেন রামকৃষ্ণদেব এবং জগদ্ধাত্রী পুজো অবধি তিনি এই বাড়িতেই ছিলেন|

 

পুজো উপলক্ষে রানী রাসমণির পরিবারে কখনো বাই নাচ বা খানা পিনার আসর বসেনি সেই ভাবে তবে নিষ্ঠা ও ভক্তি সহকারে শাস্ত্রীয় পদ্ধতিতে মাতৃ শক্তির আরাধনার জন্য এই বাড়ির সুনাম ছিলো|পরবর্তীতে রানী রাসমণির জামাতা মথুর বাবু এই পুজোর দায়িত্ব গ্রহণ করেন|বংশ পরম্পরায় সেই ঐতিহ্য আজও চলে আসছে|আজও এখানে সমান ভক্তি ও শ্রদ্ধার সাথে দূর্গা পুজো অনুষ্ঠিত হয়|বাড়ির লোকেরা বিশ্বাস করেন দেবী এখানে সারা বছরই বিরাজ করেন|শোনা যায় এক কালে নাকি মধ্য রাত্রে, বাড়ির ঠাকুর দালানে দেবীর পায়ের নুপুরের শব্দও শোনা যেত|

 

প্রথা মেনে রাসমণি বাড়িতে কাঠামো পুজো হয় রথের দিন।প্রতিপদথেকে ঘরে পুজো শুরু হয়। ষষ্ঠীর দিন হয় বোধন এবং বেলবরণ। ওইদিনই দেবীর হাতে অস্ত্র দিয়ে গয়না পরানো হয়|সপ্তমী, অষ্টমী এবং নবমী এই তিনদিনই কুমারী পুজো হয়|এক কালে বলী প্রথা থাকলেও বলি বন্ধ হয়ে গিয়েছে বেশ কয়েকবছর|আজও এই বাড়িতে ভোগে দেবীকে লুচি ও পাঁচরকম ভাজা অর্পণ করা হয় আর থাকে নানা রকম মিষ্টি।

 

ফিরে আসবো ধারাবাহিক লেখনীর পরবর্তী পর্ব নিয়ে থাকবে বনেদি বাড়ির পুজো নিয়ে আরো একটি পর্ব।পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন।ধন্যবাদ।

ছাতু বাবু লাটু বাবুর পুজো

ছাতু বাবু লাটু বাবুর পুজো

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

আজকের পর্বে আপনাদের কলকাতার বিখ্যাত ছাতু বাবু লাটু বাবুর বাড়ির দূর্গাপুজোর কথা জানাবো। এই পুজোর কথা না বললে কলকাতার বনেদি বাড়ির পুজোর ইতিহাস সম্পূর্ণ হবেনা।

ব্রিটিশ আমলে রাম দুলাল দে ছিলে পুরোনো কলকাতার বাবু সমাজের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র|শোনা যায় তিনি ছিলেন বাংলার প্রথম লাখপতি|তিন ব্রিটিশ আমলে আমদানি রপ্তানির ব্যবসা করে অগাধ সম্পত্তি করেছিলেন|

তিনিই প্রথম তার বসত ভিটে রামদুলাল নিবাসে দূর্গা পূজা শুরু করেছিলেন|তার অবর্তমানে তার দুই পুত্র আশুতোষ দেব ওরফে ছাতুবাবু এবং প্রমথনাথ দেব ওরফে লাটুবাবু পুজো শুরু করেন। সেই সময়েই এই পুজো বিখ্যাত হয়|প্রতি বছর প্রচুর অর্থ ব্যায় করে ও ব্যাপক ধুম ধাম করে দূর্গা পুজো হতো এই বাড়িতে|দূর্গা পূজা উপলক্ষে প্রায় গোটা কলকাতার নিমন্ত্রণ থাকতো |পুজোর সময় যাত্রা হত এমন কি বাঈ নাচের আসর ও বসতো|

শোনা যায় এককালে এখানে পশু বলীও দেয়া হতো কিন্তু একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে বলী প্রথা বন্ধ হয়ে যায় বহু কাল আগে|বলা হয় একবার বলি দেওয়ার সময় পাঁঠাটি ছুটে চলে আসে সামনে দাঁড়ানো রামদুলাল দের কাছে। সেই থেকে এই পুজোয় পাঁঠাবলি বন্ধ হয়ে তার বদলে এখন আঁখ, চালকুমড়ো, শসা বলি হয়।

সেই পুরোনো জৌলুস আর নেই তবু নিষ্ঠা সহকারে সকল প্রথা মেনে দূর্গা পুজো হয়|রথের দিন কাঠামো পুজোর পর প্রতিপদ থেকে শুরু হয় পুজো|এখানে শুরুর দিন থেকে ষষ্ঠী পর্যন্ত গৃহদেবতা শালগ্রাম শিলার পুজো করা হয় এবং তৃতীয়াতে দেবীকে আসনে বসানো হয়|এই বাড়িতে শাক্ত, শৈব এবং বৈষ্ণব তিনটি মতেই পুজো হয়|উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো এই বাড়ির পুজোয় দেবীর পাশে লক্ষ্মী সরস্বতী থাকেন না এবং পদ্মের উপর থাকেন মা দুর্গার দুই সখী জয়া আর বিজয়া।তাছাড়া পুজোর তিন দিন|এছাড়া এখানে কুমারী পুজোও হয় নিষ্ঠা সহকারে|

আজকের পর্ব এখানেই শেষ করছি|দেখা হবে পরের পর্বে অন্য একটি জমিদার বাড়ি বা বনেদি বাড়ির পূজার কথা নিয়ে ফিরে আসবো। পড়তে থাকুন। ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

মিত্র বাড়ির দূর্গাপুজো

মিত্র বাড়ির দূর্গাপুজো

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

বাংলার বিশেষ করে কলকাতার বনেদি বাড়ির পুজো গুলির মধ্যে উত্তর কলকাতার নীলমণি মিত্র স্ট্রিটের মিত্রবাড়ির পুজো ঘিরে রয়েছে

সাধক রামপ্রসাদ এবং মা সারদার স্মৃতি।এই বংশেরই অন্যতম সফল ব্যাক্তিত্ব নীল মণি মিত্রের নামেই এই অঞ্চলের নাম হয়। এ থেকেই বেশ বোঝা যায় এক কালে এই অঞ্চলে মিত্রদের কতোটা দাপট ছিলো।

 

নবাবী আমলে মিত্ররা নানা রকম ব্যবসা করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন।পরবর্তী পরিবারের বংশধররা রত্নের ব্যবসায় নামেন। এমনকি এই বংশের লোকেরাই পলাশীর যুদ্ধের আগে সিরাজউদ্দৌলার ‘কোর্ট জুয়েলার’ ছিলেন অর্থাৎ রত্ন সরবরাহকারী।

 

ইতিহাস বলছে এই বাড়ির কাছারী বাড়িতে কাজ করতে আসেন সাধক-কবি রামপ্রসাদ সেন। হিসেবের খাতায় তাঁর লেখা গান পড়ে খুশি হয়ে হয়ে তৎকালীন জমিদার দুর্গাচরণ রামপ্রসাদকে আজীবন মাসোহারার ব্যবস্থা করে দেন এবং গ্রামে ফিরে সাহিত্য এবং সঙ্গীত চর্চার পরামর্শ দেন।

তার অনুপ্রেরণাতেই সাধক রামপ্রসাদ হয়ে ওঠেন বিশ্ববন্দিত সাধক ও বহু কাল জয়ী শ্যামা সংগীতের স্রষ্টা।

 

সেকালে ধনী জমিদার বাড়িতে ধুমধান করে দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হবে এটাই ছিলো রীতি।

সেই রীতি মেনে জমিদার রাধাকৃষ্ণ মিত্র ১৮০৬ সাল নাগাদ মিত্রবাড়ির দুর্গোৎসবের সূচনা করেন।শুধু দূর্গাপুজো নয় দূর্গাপুজো এবং কালী পুজো দুই এখানে বেশ জাঁকজমক সহকারে পালিত হতো।

 

সেকালে মিত্র বাড়ির পুজোতে নামজাদা সাহেবদের ও আমন্ত্রণ জানানো হতো।

একবার এসেছিলেন লর্ড কর্নওয়ালিস স্বয়ং।ইতিহাস বলছে একবার মা সারদা এই বাড়ির পুজোর জন্য পরমান্ন রেঁধেছিলেন। আজও তাই প্রতি বছর সারদা মঠের সন্ন্যাসিনীরা এই পুজোয় আসেন।

 

এখানে তিনচালার প্রতিমায় পুজো হয়।

দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতীর দেবীমুখ এবং কার্তিক ও অসুরের মুখ বাংলা ধাঁচের হয় অর্থাৎ স্বাভাবিক মানুষের অবয়ব।সিংহের মুখ হয় ঘোড়ার মতো।

পদ্ম নয়, ১০৮টি নীল অপরাজিতা ফুলে সন্ধিপুজো হয়। এখানে চাল ও ফলের সঙ্গে মিছড়ি-মাখনের নৈবেদ্য দেওয়া হয়।অন্ন ভোগের পরিবর্তে বর্তমানে কাঁচা অনাজের ভোগ দেয়া হয়।

বর্তমানে এখানে পুজো পরিচালনা করেন বাড়ির মহিলারা।এখানে মা দূর্গাকে একটি বিশেষ পদ্ধতিতে সাজিয়ে পান নিবেদন করা হয়।

 

যেহেতু রত্ন বা দামী প্রসাধনীর ব্যবসারা সাথে যুক্ত ছিলেন এই বাড়ির সদস্যরা তাই ঘরের মেয়ে দূর্গাকেও খুব সুন্দর করে সাজানো হতো। তাই সেকালে বলা হতো মা দূর্গা এই বাড়িতে সাজতে আসেন।

 

সেই রাজকীয় জাঁকজমক আগের মতো না থাকলেও এই পুজো বাংলার ঐতিহাসিক বনেদি বাড়ির পুজো গুলির মধ্যে আজও অন্যতম।

 

এমন অনেক বনেদি বাড়ির পূজোর কথা এখনো বাকি আছে। চলতে থাকবে এই ধারাবাহিক পর্ব গুলি। অনেক ইতিহাস অনেক কিংবদন্তী থাকবে আগামী দিনে।পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

দাঁ বাড়ির দূর্গা পুজো

দাঁ বাড়ির দূর্গা পুজো

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

বনেদি বাড়ির দূর্গাপুজো। বিশেষ করে কলকাতার বনেদি বাড়ির পুজোর কথা বলতে গেলে আগে যে তিনটে বাড়ির পুজোর কথা বলতে হয় তার মধ্যে শোভা বাজার রাজ বাড়ির কথা আগেই বলেছি। আজ বলবো বিখ্যাত দাঁ বাড়ির পুজো নিয়ে।

 

কালী প্রসন্ন সিংহ তার বিখ্যাত হুতোম পেঁচার নকশা গ্রন্থে এই পরিবার সম্পর্কে অনেক তথ্যই দিয়েছেন|এই বংশের প্রতিষ্ঠা ও দূর্গা পুজোর প্রচলন করেন এই বংশের সবথেকে প্রভাবশালী ব্যাক্তি গোকুলচন্দ্র দাঁ।সময় টা খুব সম্ভবত 1840 সাল| তিনি পরবর্তীতে শিবকৃষ্ণ দাঁ কে দত্তক নেন|এই শিব কৃষ্ণ দাঁ এর আমলে এই পরিবারের ও তাদের দূর্গা পুজোর নাম ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র|পারিবারিক লোহা, কয়লা আর হার্ডওয়ারের ব্যবসায় প্রভূত লাভ করেন তিনি এবং লাভের একটা বড়ো অংশ ব্যয় করেন নিজের সৌখিনতা ও পরিবারের দূর্গা পুজোয়|শোনা যায় শিবকৃষ্ণ দাঁ সাজগোজ করতে বড় ভালবাসতেন এবং দূর্গা পুজোয় দেবীর রূপ সজ্জায় তিনি প্রচুর অর্থ ব্যয় করতেন তাই রটে গেছিলো দেবী মর্ত লোকে পা রেখে প্রথমে সাজতে আসেন দাঁ বাড়িতে।

 

শিব কৃষ্ণ দাঁ ফ্রান্স এবং জার্মানি থেকে বিশেষ কাজ করা অলঙ্কার ও পোশাক আনালেন ঠাকুরকে পরানোর জন্য|সোনা রুপো ও মূল্যবান রত্ন দিয়ে তৈরী ঝলমলে পোশাকে ও গয়নায় দেবীকে সাজানো হতো|তাই দাঁ বাড়ির পুজোয় দেবীর সাসজ্জা বাকি সব বনেদি বাড়িকে টেক্কা দিতো।

 

আর একটি মজার ঘটনা এখানে উল্লেখ করা যায়|শোনা যায় জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ির সঙ্গে ছিলো এই দাঁ পরিবারের খুব রেষারেষি তাই তাদের দেখিয়ে দেখিয়ে ঠাকুরবাড়ির সামনে দেবীকে বেশ কয়েকবার ঘুরিয়ে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে তারপর গঙ্গায় নিয়ে যাওয়া হতো বিসর্জনের জন্য। সেকালে জমিদার বাড়ি গুলির মধ্যে এমন প্রতিযোগিতা ছিলো খুবই সাধারণ বিষয়।

 

সেই রাজা আর নেই, রাজত্বও নেই|সবই ধূসর অতীত|তবু দাঁ বাড়িতে পুজো হয়|দেবীর সেই বিখ্যাত সাজ আজও হয়|এখানে রথের দিন গড়ানকাঠ পুজোর মধ্য দিয়ে প্রতিমা গড়ার কাজ শুরু হয় এবং জন্মাষ্টমীর দিন কাঠামোতে দেবীর মস্তক স্থাপন করা হয়|এ বাড়ির রীতি অনুসারে

দেবীর প্রাণ প্রতিষ্ঠার সময় তেরোটি শাড়ি ও তেরোটি কাঁসার পাত্র দেওয়া হয়। এছাড়াও একশো আটটি পেতলের প্রদীপ সাজানো হয়|এখানে বলী প্রথা নেই কারন পুজো হয় বৈষ্ণব মতে|কুমারী পুজোও এই বাড়ির পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট|

 

আজকের এই পর্ব এখানেই শেষ করলাম|

ফিরবো আগামী পর্বে|বনেদি বাড়ির দূর্গা পূজোর পরবর্তী পর্ব নিয়ে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

ঐতিহাসিক শোভা বাজার রাজবাড়ির দূর্গা পুজো

ঐতিহাসিক শোভা বাজার রাজবাড়ির দূর্গা পুজো

 

পন্ডিতজি ভৃগুর শ্রীজাতক

 

বাংলার বনেদি বাড়ির পুজো ঐতিহাসিক পুজোর মধ্যে শোভাবাজার রাজবাড়ীর পুজো থাকবে একদম প্রথম শাড়িতে|আগের একটি পর্বে জানিয়েছি যে সেকালে বলা হতো দেবী মর্তে থাকাকালীন তার মনোরঞ্জনের জন্য এই বাড়িতেই আসতেন।কিন্তু কেনো এমন ভাবনা। জানতে হলে এই পুজো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে।

 

এই পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন বিজয় হরি দেব তবে এই পরিবারের স্বর্ণযুগ বলা হয় রাজা নবকৃষ্ণ দেবের সময় কে এবং তার আমলেই শুরু হয় এই দূর্গা পূজা|নব কৃষ্ণদেব ছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন সাধারণ কর্মচারী যিনি নিজের দক্ষতায় ও পরিশ্রমে কোম্পানির মুন্সী হয়ে ছিলেন|পলাশীর যুদ্ধে তিনি নানা ভাবে ক্লাইভ কে সাহায্য করেন ও পুরুস্কার স্বরূপ প্রচুর অর্থ লাভ করেন|

 

মূলত পলাশীর যুদ্ধ জয় কে স্মরণীয় করে রাখতেই নবকৃষ্ণ দেবে দূর্গা পুজো শুরু করেছিলেন তাছাড়াও তার উদেশ্য ছিলো ক্লাইভ কে খুশি করে নিজের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা|এই উদ্দেশ্যে তিনি সফল হয়েছিলেন|তার দূর্গা পুজোয় অংশগ্রহণ করেছিলেন স্বয়ং লর্ড ক্লাইভ|আজও অনেক জায়গায় এই পুজো কে গোরা দের পুজো বা কোম্পানির পুজো বলা হয়|

 

উদেশ্য যাই থাকুক নিষ্ঠা সহকারে পুজো করতেন নবকৃষ্ণ দেব|প্রচুর অর্থ ব্যায় হতো এই পরিবারের দূর্গা পুজোয়|বসতো গান বাজনার আসর, নাচ, কবি গানের ও ব্যবস্থা থাকতো|দূর্গা পুজো উপলক্ষে অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি, ভোলা ময়রার মতো কবিয়ালরা এখানে এসেছেন কবির লড়াই করতে আবার গহরজান, মালকাজান, নুর বক্স প্রমুখ নামী নর্তকী এই বাড়িতে এসেছেন নাচ করতে|

সব মিলিয়ে এলাহী আয়োজন হতো শোভাবাজার রাজ বাড়ির দূর্গা পুজোয় আর এই কারণেই মনে করা হতো যে এটা মর্তে দেবী দুর্গার মনোরঞ্জনের স্থান|

 

শুরুর দিকে সন্ধিপুজোতে কামানের গোলার শব্দে শুরু হত পুজো এবং শেষও হত একই ভাবে|মা দুর্গা এই বাড়িতে বৈষ্ণবী হিসেবে পূজিতা হন। তাই শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজোয় অন্নভোগ থাকে না। গোটা ফল, গোটা আনাজ, শুকনো চাল, কচুরি, খাজা, গজা, মতিচুর-সহ নানা ধরনের মিষ্টি দেবীকে উত্সর্গ করা হয়|বর্তমানে এখানে বলী প্রথা নেই|এবাড়ির পুজোয়|প্রতিমার সামনে একটা বড় হাড়িতে জল রাখা হয়। সেই জলে দেবীর পায়ের প্রতিবম্বের ছবি দেখে সবাই প্রণাম করে। একে দর্পণ বিসর্জন বলা হয়|তারপর প্রথা মেনে দশমীর দিনই হয় বিসর্জন|আগে নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানোর রীতি থাকলেও সরকারি নিয়মে তা এখন বন্ধ।

 

পারিবারিক পুজো হলেও বহু সাধারণ মানুষ এবং দর্শণার্থী এই পুজো দেখতে আসেন।দুর্গাপূজার সময়ে এখানে এলে পাওয়া যায় ইতিহাসের গন্ধ এবং ঐতিহ্যর স্পর্শ।

 

আপাতত কলকাতার বনেদি বা জমিদার বাড়ির পুজোর কথা লিখলেও আগামী দিনে জেলা গুলির ঐতিহ্য সম্পন্ন পুজোর কথাও লিখবো|জানবো অনেক গল্প অনেক ইতিহাস|আজকের পর্বে শোভাবাজার রাজ বাড়ির পুজো।

পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন।ধন্যবাদ।

গণেশ চতুর্থীর শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা

গণেশ চতুর্থীর শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আজ গণেশ চতুর্থী। গণেশ শুধু আর মহারাষ্ট্র বা হিন্দি বলয়ের আরাধ্য দেবতা নন। তিনি বাঙালির খুব কাছের। সারা বাংলা জুড়ে এখন মহা সমারোহে গণেশ পুজো হয়।আজ আসুন জেনে নেয়া যাক এই তিথির আধ্যাত্মিক তাৎপর্য।

 

পৌরাণিক বিশ্বাস অনুসারে, যেদিন ভগবান শিব ও মা পার্বতীর পুত্র গণেশের জন্ম হয়েছিল, সেই দিনটি ছিল ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের চতুর্থী। তাই এই দিনটিকে গণেশ চতুর্থী ও বিনায়ক চতুর্থী নামে নামকরণ করা হয়।

 

সিদ্ধিদাতা গণেশের পূজা ঘরে সুখ, সমৃদ্ধি ও বৃদ্ধি নিয়ে আসে। শিব পুরাণে ভাদ্রমাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্থীকে গণেশের জন্মদিন হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। যেখানে গণেশ পুরাণের মতানুযায়ী এই গণেশাবতারের আবির্ভাব ঘটেছিল ভাদ্রপদ শুক্লা চতুর্থীতে।

 

পার্বতী পুত্র গণেশ প্রারম্ভের দেবতা, বিঘ্ননাশক দেবতা তাই তার অপর নাম বিঘ্নেশ বা বিঘ্নেশ্বর, আবার তিনিই শিল্পকলা ও বিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষক, এবং মহাবল, মেধা ও বুদ্ধির দেবতা। শাস্ত্র মতে পূজা ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের সময় গণেশের পূজা সর্বাগ্রে করার কথা বলা হয়েছে তাতে কাজ সফল এবং সার্থক হয়।

 

বিভিন্ন পুরানে গণেশের একাধিক নামের অস্তিত্ব পাওয়া যায় যেমন হেরম্ব, বক্রতুণ্ড, একদন্ত, মহোদর, গজানন, লম্বোদর, বিকট ও বিঘ্নরাজ।

এদের মধ্যে একদন্ত নামটি নামটি হয়েছে তার একটি গজ দন্তের জন্য। এনিয়ে একটি পৌরাণিক ব্যাখ্যাও আছে।

 

একটি ব্যাখ্যা অনুসারে একবার পরশুরাম দেবাদিদেব মহাদেবের সঙ্গে দেখা করার জন্য তাঁর গৃহে যান। কিন্তু গণপতি দরজাতেই তাঁকে আটকে দেন। ভেতরে প্রবেশ করতে দেন না। কারণ সেই সময় মহাদেব ধ্যানে মগ্ন ছিলেন। তখনই ক্রোধান্বিত হয়ে পরশুরাম গণপতির একটি দাঁত কেটে দেন তার অস্ত্র দিয়ে|

 

আবার এটাও মনে করা হয় যে বেদব্যাসের সঙ্গে মহাভারত লিখতে বসে, গণেশের কলম ভেঙে গিয়েছিল। যেহেতু ব্যাসদেব তাঁকে শর্ত দিয়েছিলেন যে, লেখা থামাতে পারবেন না। তাই গণপতি নাকি নিজের একটা দাঁত ভেঙে তা কলম হিসেবে ব্যাবহার করে লেখা চালিয়ে যান।

সেই থেকে গণেশ একদন্ত এবং এই

রূপেই তাকে পুজো করা হয়।

 

আজ শাস্ত্র মতে গণেশ পুজো করুন। বিঘ্নহর্তার আশীর্বাদে সব বিঘ্ন দূর হবে। সবাইকে জানাই গণেশ চতুর্থীর শুভেচ্ছা। ফিরে আসবো দূর্গা পুজো সংক্রান্ত লেখা নিয়েআগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

বনেদি বাড়ির দুর্গাপূজার সুবর্ণ যুগ

বনেদি বাড়ির দুর্গাপূজার সুবর্ণ যুগ

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

বাংলায় দূর্গাপুজো প্রথম শুরু হয় বনেদি বাড়ি গুলিতে। বিশেষ করে উত্তর কলকাতার সমৃদ্ধ জমিদার বাড়ি গুলিতে। পলাশী যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সেই পুজোর সুবর্ণ যুগ বলা যায় কারন সেই সময়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে সু সম্পর্ক স্থাপন করতে এই পরিবার গুলি দূর্গা পুজো খুব ধুম ধাম করে করতো এবং সাহেবদের আমন্ত্রণ করে সুনাম অর্জন করতো।

 

তবে শুধু তাই নয়। নিজেদের মধ্যে সম্পদ এবং ক্ষমতা নিয়ে প্রতিযোগিতা বা প্রভাব বিস্তারের জন্যও দূর্গাপুজোর জাঁকজমককে বেছে নিতো কেউ কেউ। এর মধ্যে শাস্ত্র বা ধর্মকে যে প্রাধান্য দেয়া হতোনা তা নয়। পুজো হতো শাস্ত্র মেনে নিষ্ঠা সহকারে। বহু বনেদি বাড়িতেই ভক্তি ছিলো প্রধান আর মা দুর্গার প্রতি অমোঘ আস্থা।

 

পুরোনো বাংলার বিশেষ করে কলকাতার পুজো নিয়ে একটি প্রবাদ প্রচলিত ছিলো। যেখানে বলা হতো মা দাঁ বাড়িতে সাজতে আসেন।মিত্র বাড়িতেখেতে আসেন এবং শোভাবাজারে মনরঞ্জনের জন্য আসেন।

 

আসলে পরিবারের এই সদস্য সাজতে ভালোবাসতেন। ঠিক করেছিলেন মাকেও সাজাবেন। সেই মতো ফ্রান্স এবং জার্মানি থেকে বিশেষ কাজ করা অলঙ্কার ও পোশাক আনালেন ঠাকুরকে পরানোর জন্য। সেই সাজ হয়ে উঠলো বিখ্যাত।অন্যদিকে মিত্র বাড়িতে মাকে নিবেদন করা হয় ৩০ থেকে ৫০ মণ চালের নৈবেদ্য। এছাড়াও থাকে নানা রকম মিষ্টি, গজা, নিমকি,লুচি, রাধাবল্লভীর ইত্যাদি খাবার।আবার শোভা বাজার রাজ বাড়িতে টানা ১৫ দিন ধরে চলতো এই নাচ গান যাত্রার আসর বসতো পুজো উপলক্ষে।

 

আগামী পর্বগুলিতে এই বাড়ি গুলির পুজো

নিয়ে আরো বিস্তারিত আলোচনা করবো।

তবে শুধু কলকাতা নয়। বাংলার বহু বনেদি জমিদার বাড়ির পুজোর রয়েছে এমন বর্নময় ইতিহাস। সেসব নিয়ে চলবে এই ধারাবাহিক আলোচনা। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

বাংলায় দুর্গা পুজোর বিবর্তন

বাংলায় দূর্গাপুজোর বিবর্তন

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আর কিছুদিন পরেই বাংলা তথা সারাদেশে পালিত হবে দূর্গাপুজো|যে দূর্গা পুজোকে কেন্দ্র করে আমাদের এতো আবেগ এতো তোড়জোড় আজ সেই দূর্গা পুজোর শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা এবং এবং বঙ্গে এই পুজোর বিবর্তন কিভাবে হয়েছিলো তা

নিয়ে লিখবো|

 

পুরান অনুসারে যখন মহিষাসুরের অত্যাচারে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হয়ে দেবতারা শ্রীবিষ্ণু ও মহাদেবের কাছে সাহায্যের জন্য উপস্থিত হন। প্রবল পরাক্রমশালী মহিষাসুরকে বধ করার জন্য সকল দেবতার তেজ থেকে এক অপূর্ব নারীর সৃষ্টি হয়।এই নারীই দেবী দূর্গা|সকল দেবতারা তাঁকে নিজেদের অস্ত্র ও অলংকার দিয়ে সজ্জিত করেন। এই নারীই মহিষাসুরকে যুদ্ধে আবাহন করেন। প্রচণ্ড যুদ্ধের পর ত্রিশূল দিয়ে গেঁথে মহিষাসুরকে বধ করেন দুর্গা। শুধু মহিষাসুর নয়, মধু কৈটভ, শুম্ভ-নিশুম্ভকেও পরাজিত করেন দেবী দূর্গা|

 

আবার তন্ত্র শাস্ত্ররা সাথেও দেবী দূর্গারা গভীর সম্পর্ক আছে।শাস্ত্র মতে সতী বা দেবি দূর্গার দশ হাতে আছেন দশ মহাবিদ্যা । এই দশমহাবিদ্যার উপর ভিত্তি করেই অনেকটা তন্তশাস্ত্র গড়ে উঠেছে।

 

আবার বঙ্গে দেবীদুর্গার রূদ্র রূপের চেয়ে সৌম স্নিগ্ধ রুপী বেশি জনপ্রিয়। যদিও দেবী অসুর নিধন করছেন। তবু তিনি ঘরের মেয়ে। এক্ষেত্রে তাঁর মর্তে আসাকে স্বামীর গৃহ থেকে পিতার গৃহে আসার সাথে তুলনা করা হয়।

 

বাংলারা বনেদি জমিদার বাড়ি গুলোতেই একসময় দূর্গা পুজো সীমাবদ্ধ ছিলো। তার ঐতিহাসিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক কারন ছিলো যথেষ্ট। ধীরে ধীরে নানা বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে গিয়ে দুর্গাপুজো বারোয়ারী পুজোর রূপ নেয়। তবে আজও আদি অকৃত্তিম এবং শাস্ত্র সম্মত দুর্গাপূজা দেখতে হলে পুরোনো পারিবারিক পুজো গুলো দেখতে হয়।

 

আজ শুধু ভূমিকা করলাম।পরবর্তীতে বিস্তারিত আলোচনা করবো।শুরু করবো সেই দুর্গাপূজারা বিবর্তনের ইতিহাস সাথে থাকবে নানা বনেদি বাড়ির পুজোর বর্ণময় ইতিহাস এবং নানা ঐতিহাসিক ঘটনা। ধারাবাহিক এই লেখনী আপনাদের আশা করি ভালো লাগবে। পড়তে থাকুন। ভালো থাকুন।ধন্যবাদ।