Home Blog Page 6

পুরানের দেবদেবী – অগ্নিদেব

পুরানের দেবদেবী – অগ্নিদেব

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

ঋগ্বেদ অনুসারে মানুষ ও ভগবানের মধ্যে বার্তাবাহকের কাজ করেন অগ্নি। তিনি হলেন যজ্ঞের রাজা। অগ্নি ছাড়া কোনও ধর্মীয় কাজই সম্পূর্ণ হয় না।হোম যজ্ঞ সবেতেই অগ্নি অপরিহার্য।
আজকের পর্বে জানাবো অগ্নি দেবের মাহাত্ম।

হিন্দুধর্ম অনুসারে আগুন হলেন একজন দেবতা, অগ্নিদেব। ঋগবেদের প্রথম মন্ত্রেই আগুনের উপাসনা করা হয়েছে।ঋগবেদের প্রথম অধ্যায়ের ৯টি শ্লোক অগ্নির উদ্দেশ্যে নিবেদিত। ঋগবেদের সকল মণ্ডলেই আগুনের উপাসনা করা হয়েছে।
অগ্নিকে অগ্রণী অর্থাত্‍ প্রথম হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। হিন্দুধর্মে যে অষ্টবসু অর্থাত্‍ আট দেবতার কথা বলা আছে, তার মধ্যে প্রথম হলেন অগ্নি।

একবার অগ্নির প্ররোচনায় পুলোমা নামে এক রাক্ষস সন্ন্যাসী ভৃগুর স্ত্রীকে অপহরণ করে।
ভৃগুর অভিশাপে অগ্নি সর্বগ্রাসী হয়ে যায়।

অগ্নির অর্থ হল যা সর্বদা ঊর্ধ্বমুখী। আগুনের শিখা সব সময় উপর দিকে মুখ করে থাকে। হিন্দুধর্মে আগুনের বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। আগুন সবকিছু পরিশুদ্ধ করতে পারে।আবার কেউ অন্যায় করলে তাকে শাস্তি দেওয়ার অধিকার রয়েছে অগ্নির। অগ্নিদেব তাই দণ্ডাধীশ নামেও পরিচিত। ঋগ্বেদ অনুসারে অগ্নির পিতা শক্তি। অনেক জায়গায় অবশ্য বলা হয়েছে যে তিনি ঈশ্বরের মুখ থেকে সৃষ্টি হয়েছেন। তাঁর স্ত্রী হলেন ঋষি কাশ্যপের কন্য়া স্বহা। তাঁর তিনি পুত্র- পাবক, পাবমান ও সূচী।

আগুন সব সময় উর্ধ্বগামী। সেই কারণে মৃতদেহ আগুনে দাহ করা হয় এবং যজ্ঞ হোক বা আরতি, কোনও শুভ কাজ আগুন ছাড়া সম্পূর্ণ হয় না। সারা বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে চার স্থানে অগ্নি বিদ্যমান। প্রথম আগুন হল সূর্য, যা আকাশে অবস্থিত। দ্বিতীয় আগুন হল বিদ্য়ুত্‍, যা মহাশূন্যে অবস্থিত। তৃতীয় আগুন হল সাধারণ আগুন, যা মর্ত্যে অবস্থিত। এবং চতুর্থ আগুন হল অগ্নুত্‍পাত, যা পাতালে অবস্থিত।

ব্যাবহারিক দিক দিয়ে আগুনের পাঁচটি রূপ সবথেকে বিখ্যাত। সেগুলি হলো যথাক্রমে

যজ্ঞাগ্নি: অর্থাত্‍ যজ্ঞের আগুন। এই আগুন ঈশ্বরের উপাসনা করে মানুষের কল্যানের জন্য ব্যবহার করা হয়।

ভোজাগ্নি: আগুনের এই রূপ ব্য়বহার করা হয় খাদ্য প্রস্তুত করতে হয়। অনেক বাড়িতে আগুনকে খাদ্য দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাতে খাবারের প্রথম টুকরো আগুনে নিক্ষেপ করার রীতি প্রচলিত আছে।

জঠরাগ্নি: আগুনের এই রূপ মানুষকে কাজ করার জন্য উত্‍সাহ দেয়।

দেবাগ্নি: এই আগুন অশুভকে নাশ করে এবং কোনও কিছুর শুভ সূচনা করে। দাবানল বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে যে আগুন লাগে, তাকে দেবাগ্নি বলা হয়। মহাভারতে বলা আছে অগ্নিদেবের একবার প্রচণ্ড বদহজম হয়ে গিয়েছিস। সেই জ্বালা তিনি শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুনের সাহায্যে খাণ্ডব বন দহন করে নির্বাপিত করেন। খাণ্ডব দহনের পর সেই স্থানে ইন্দ্রপ্রস্থ নির্মাণ করে পাণ্ডবরা।

পঞ্চম রূপে আগুন মানব শরীরকে মৃত্যুর পর দাহ করে পঞ্চভূতে মিলিয়ে দেয়।

সব আগুনের উৎসই অগ্নি দেব স্বয়ং তার অধীনের থাকে আগুনের সর্বগ্রাসী ক্ষমতা।

পরবর্তী পর্বে পুরানের অন্য এক দেবতা বা দেবী কে নিয়ে আলোচনা করবো। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

পুরানের দেব দেবী – বাস্তু দেবতা 

পুরানের দেব দেবী – বাস্তু দেবতা

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

বাস্তু শাস্ত্রের জন্ম হয়েছে পুরান

থেকে কারন বাস্তুদেবতার উৎপত্তি এই পুরানেই লিপিবদ্ধ হয়েছে এবং বাস্তু দেবতার পূজার্চনার ব্যাপারে একটি মজার ঘটনার উল্লেখ মেলে মৎস্য পুরানে ।

 

একটি পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী অনেকদিন আগে অন্ধক নামে এক অসুরের সাথে দেবাদিদেব মহাদেবের অনেক বছর ধরে যুদ্ধ হয় এবং অবশেষে মহাদেব অসুরকে বধ করেন ।

শিব যখন অসুরকে বধ করেন তখন তার শরীর নির্গত ঘাম থেকে এক দেবতার জন্ম হয় যিনি মৃত অন্ধকাসুর এবং তার যোদ্ধা গণের সমস্ত রক্ত পান করেন । কিন্তু তবুও তার খুদা শান্ত না হওয়াতে তিনি দেবাদিদেব মহাদেবের তপস্যা করেন । মহেশ্বর তপস্যাতে তুষ্ট হয়ে বর প্রদান করেন আর সেই বর পেয়ে তিনি ভূলোকে এসে সমস্ত প্রাণীদের খেতে শুরু করেন। তার এই ভয়ঙ্কর রূপ দেখে দেবতা, দানব, রাক্ষস এবং সমস্ত প্রাণী আতঙ্কিত হয়ে পরম পিতা ব্রহ্মাকে স্মরণ করেন । ব্রহ্মদেব তখন তাকে পেট পেতে উপুড় হওয়ার পরামর্শ দেন এবং ব্রম্হার পরামর্শ মেনে তিনি তাই করেন । এরপর ব্রম্হার পরামর্শ অনুযায়ী দেবতারা সেই ক্ষুদার্থ দেবতার পেটের ভেতর বিভিন্ন অংশে গিয়ে বসলেন।

 

ব্রহ্মা তখন তাকে বর দিলেন যে তিনি বাস্তু দেবতা রূপে সর্বত্র পূজিত হবেন । নতুন বাস ভবনের নির্মাণের আগে যদি কেউ তোমাকে বাস্তুদেবতা বলে মেনে পুজো করে এবং অন্নদান করে তাহলে তুমি তাকে সুখ সমৃদ্ধি দিয়ে ভরিয়ে তুলবে কিন্তু যদি কেউ তোমার পুজো না করে নতুন ঘরে বসবাস শুরু করে তবে তুমি তাকে ভক্ষণ করতে পারবে, এমনকি তাকে লাঞ্ছনাও দিতে পারবে ।আজও এই নীতি মেনেই ভারতবর্ষে বাস্তু পূজা হয় এবং বাস্তু দেব কে সন্তুষ্ট করা হয়।

 

সেই থেকে বাস্তু দেবতা আমাদের প্রত্যেকের গৃহে অবস্থান করছেন। তাকে সন্তুষ্ট রাখতে পারলেই বাস্তু হবে ত্রুটিমুক্ত এবং সুখ সমৃদ্ধিতে পরিপূর্ণ। অন্যথা হলেই বাস্তু দেবের রোষের মুখে

পড়তে হয়ে।

 

আবার পরের পর্বে অন্য এক পৌরাণিক দেবতার কথা নিয়ে ফিরে আসবো। থাকবে অনেক রোমাঞ্চকর পৌরাণিক ঘটনার উল্লেখ।

পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

পুরানের দেব দেবী – বিশ্বকর্মা

পুরানের দেব দেবী – বিশ্বকর্মা

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

আজ সারা বাংলা তথা সারা দেশে
মহাসমারোহে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকর্মাপূজা|
আসুন আজকের এই পবিত্র দিনে জেনে নেই দেব শিল্পী বিশ্বকর্মার আধ্যাত্মিক স্বরূপ ও তার সাথে জড়িত কিছু পৌরানিক ঘটনা|

বিশ্বকর্মা মূলত বৈদিক দেবতা|ঋগ বেদ সহ একাধিক ধর্ম গ্রন্থে এবং রামায়ন মহাভারতের মত মহাকাব্যে উল্লেখ রয়েছে বিশ্বকর্মার|তিনি ব্রহ্মা সৃষ্টি কর্মের অন্যতম সহযোগী|সৃষ্টির একদম আদি লগ্ন থেকে বিভিন্ন সৃষ্টি কর্মের মাধ্যমে তিনি জগৎ নির্মাণের কাজে যুক্ত|বিশ্বকর্মার পুত্র বিশ্বরূপকে ইন্দ্র বধ করেছিলেন এবং ইন্দ্র ও বিশ্বকর্মার শত্রুতাও দেখা দিয়েছিলো|যদিও নিজের কর্তব্যে সদা অবিচল বিশ্বকর্মা এবং নিজের সৃষ্টিকর্মে সর্বদা মগ্ন তিনি|

আমাদের সনাতন ধর্মে ভগবান বিষ্ণু তার সৃষ্টি কর্মের এক একটি গুরু দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন এক একজন দেবতার উপর যেমন বাণিজ্যর ভার দেবী লক্ষীর উপর, শিক্ষা ও সংস্কৃতির দায়িত্ব স্বরস্বতীর আবার প্রতিরক্ষার দায়িত্বে রয়েছেন দেবী দূর্গা|এদের মধ্যে বিশ্বকর্মা হলেন স্থাপত্য ও নির্মাণের দেবতা|তিনি দেব শিল্পী|

পুরান অনুসারে দেবগুরু বৃহস্পতির একমাত্র বোন যোগসিদ্ধার পুত্র বিশ্বকর্মা এবং তাঁর বাবা অষ্টম বসুর শ্রেষ্ঠ বসু প্রভাস। আবার ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে বলা আছে, প্রজাপতি ব্রহ্মার নাভিকোষ থেকে বিশ্বকর্মার উৎপত্তি।বিশ্বকর্মার স্ত্রীর নাম ঘৃতচী।

বিশ্বকর্মা চতুর্ভুজ এবং তাঁর বাহন হাতি। পুরাণ মতে, বিশ্বকর্মা মহাবীর তাকে বহন করার জন্য প্রয়োজন প্রচুর শক্তি তাই জগতের অন্যতম বলশালী প্রাণী হাতিকে তার বাহন রূপে
নির্বাচিত করা হয়েছে।

পুরান ও অন্যান্য শাস্ত্রে বর্ণিত একাধিক অস্ত্র, ও গুরুত্বপূর্ণ বস্তুর প্রধান কারিগর বিশ্বকর্মা|বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র, কুবেরের পুস্পক রথ, শিবের ত্রিশূল
পরশুরামের ধনুক, ইন্দ্রের প্রথম বজ্র এসবই বিশ্বকর্মার সৃষ্টি|রাবনের লংকা নগরী, কুবেরের অলোকা পুরী,এমনকি পুরীর বিখ্যাত জগন্নাথ বিগ্রহও বিশ্বকর্মার স্বহস্তে নির্মিত|

যখনই দেব লোকে কোনো বিশেষ স্থাপত্য বা দৈব নিদর্শন সৃষ্টির প্রয়োজন হয় ডাক পড়ে বিশ্বকর্মার|কখনো নিরাশ করেন না বিশ্বকর্মা|নিজের অলৌকিক শিল্প সত্ত্বা ও কঠোর পরিশ্রমের দ্বারা নির্মান করেন একের পর এক শিল্প কর্ম তথা স্থাপত্য শিল্পের সর্বশ্রেষ্ঠ নিদর্শনগুলি|

বিশ্বকর্মা পুজো নিষ্ঠা সহকারে পালন করেন দেশের শিল্পীরা, শ্রমিকরা এবং স্থাপত্য শিল্পের সাথে যুক্ত শ্রমিকেরা|আজ ভাদ্র সংক্রান্তি তার পুজোর দিন। সবাইকে জানাই বিশ্বকর্মা পুজোর শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন।

ফিরে আসবো ধারাবাহিক এই আলোচনার পরবর্তী পর্ব নিয়ে আগামী দিনে।থাকবে অন্য
এক দেবতা বা দেবীর কথা।পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

পুরানের দেব দেবী – কুবের দেব

পুরানের দেব দেবী – কুবের দেব

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

পুরান অনুসারে কুবের হচ্ছেন ধনরাজ তিনি যক্ষদের রাজা, বামনাকৃতি এবং স্থূল শরীরের অধিকারী।আবার তিনি দিক পাল অর্থাৎ দশটি দিকের অধিপতি এবং নিজে তিনি উত্তর দিকে বিরাজমান তাই বাস্তু শাস্ত্রে উত্তরদিককে ধনস্থান বলে ধরা হয়|

কুবেরদেব সম্পর্কে রাবনের ভাই,রাবন তাকে চক্রান্ত করে পরাজিত করে তার সোনার লঙ্কা এবং পুস্পক রথ ছিনিয়ে নেন|পরবর্তীতে মহাদেবকে তপস্যায় সন্তুষ্ট করে কুবের দেবতার স্থান পান এবং জগতের সমগ্র ধন সম্পদ তার অধীনে আসে|কুবেরদেব হচ্ছেন দেবতাদের কোষাধক্ষ্য অর্থাৎ বিশ্ব ব্রহ্মান্ডর সমস্ত ধন সম্পদ কুবেরের দখলে থাকে।কুবের দেবের বাসস্থান অলোকাপুরী যা বিশ্বকর্মা নির্মাণ করেন|

আবার কিছু গ্রন্থে কুবেরকে লোকপাল ও বলা হয় কারন তিনি ন্যায় নীতি এবং লোকহিতকর কাজ কর্মের দায়িত্বে আছেন।

ভগবান বিষ্ণু যখন শ্রীনিবাস হিসাবে পৃথিবীতে আসেন তখন রাজ কুমারী পদ্মাবতীর সাথে বিবাহের ব্যয় নির্বাহ করার জন্য কুবেরের থেকে অর্থ ধার করেন বিশ্বাস করা হয় যে ভগবান
শ্রীনিবাস যিনি তিরুপতীর বালাজি হিসাবে পরিচিত তিনি ভক্তদের দেওয়া সকল প্রণামী কুবের কে দেন ঋণ পরিশোধ করার জন্য।
তাই ভক্তরাও বালাজি দর্শনে এসে অর্থ দান করে ভগবানের ঋণ মেটাতে সাহায্য করেন|

পুরান মতে কুবের অর্থ ও সম্পদের রক্ষা কর্তা তার আশীর্বাদ ছাড়া ধনবান হওয়া বা সম্পদ টিকিয়ে রাখা অসম্ভব|তাই যারা প্রচুর অর্থ এবং সম্পদের মালিক হতে চান তারা কুবেরের আরাধনা করেন।

আবার পরের পর্বে অন্য এক পৌরাণিক দেবতার কথা নিয়ে ফিরবো। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

পুরান এবং নব গ্রহ – রাহু এবং কেতু

পুরান এবং নব গ্রহ – রাহু এবং কেতু

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

শুরু করছি পুরান এবং নবগ্রহ পর্ব গুলির শেষ পর্ব|আজ আলোচনা করবো রাহু এবং

কেতু নিয়ে।

 

পুরান মতে রাহু ও কেতু আসলে ভিন্ন নয় তার একি শরীরের দুটি পৃথক অংশ অবশ্যই এই দুটি অংশের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব ও ভূমিকা আছে|অসুর স্বরভানু সমুদ্র মন্থন কালে অমৃত চুরি করে পান করেছিলো যা জানতে পেরে সূর্য ও চন্দ্র শ্রী বিষ্ণুকে সাবধান করেন এবং ফল স্বরূপ বিষ্ণুর সুদর্শন চক্রের আঘাতে কাটা যায় অসুর স্বরভানুর মাথা|অমৃতের কয়েক বিন্দু পান করার ফলে কাটা মুন্ডু এবং ধর অমরত্ত্ব লাভ করে|ওই কাটা মুন্ডই রাহু এবং তার ধর কেতু নামে পরিচিত|এই দুই অংশ গ্রহ হিসেবে আবর্তিত হচ্ছে সৌর জগতে এবং নিদ্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে তারা গ্রাস করে সূর্য ও চন্দ্র কে|প্রতিশোধ নেয় তাদের ধরিয়ে দেয়ার|

শুধু হিন্দু নয় বৌদ্ধ ধর্মেও রাহু কেতুর নিজস্ব স্থান রয়েছে|

 

বিভিন্ন শাস্ত্রে রাহু ও কেতুকে কে স্কন্দহীন সর্পিল এক দৈত্য হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে|আট টি কালো ঘোরা বিশিষ্ট রথে তারা সৌর জগৎ পরিক্রমা করেন|এদের প্রকৃত বাসস্থান পাতাল লোক|কোথাও কোথাও আবার কেতুর বাহন হিসেবে সিংহ কেও দেখানো হয়েছে|রাহুর রত্ন হিসেবে গোমেদ এবং কেতুর রত্ন হিসেবে ক্যাটস আই ব্যবহিত হয়|

 

জ্যোতিষ শাস্ত্রে পাপ গ্রহ বলতে প্রথমেই রাহু ও কেতুর কথা ওঠে|এখানে উল্লেখ করতে হয় নব গ্রহের বাকি গ্রহ গুলি মূলত দেবতা কিন্তু এই দুই গ্রহের অসুর সত্ত্বা রয়েছে|জ্যোতিষ শাস্ত্রে বহু আলোচিত কাল সর্প দোষ সৃষ্টি করে রাহু ও কেতু|রাহু ও কেতুর অবস্থান অনুসারে মোট বারো রকমের কাল স্বর্প দোষ রয়েছে|রাহু গ্রহন দোষেরও মুল কারিগর|রাহুর বা কেতুর নিজস্ব কোনো রাশি নেই তবে তবে রাহু ও কেতু যে রাশি তে অবস্থান করে সেই রাশির অধিপতির অবস্থার উপর রাহুর ও কেতুর প্রভাব অনেকটাই নির্ভর করে|সেক্ষেত্রে রাহু কেতুর দৃষ্টি, তাদের অবস্থান বা দশা অন্তরদশা কোন জাতক জাতিকার জন্য শুভ এবং কোন জাতক জাতিকার জন্য অশুভ তা জন্মছক খুঁটিয়ে দেখে তবেই বলা সম্ভব|

 

বহু মানুষ অযথা আতংকিত হন ভয় পান এই দুই দুষ্ট গ্রহের নাম শুনলে|তবে আমি বলবো রাহু ও কেতুকে অযথা ভয় পাওয়ার কারন নেই|তামসিক প্রবৃত্তির হলেও এরা সব সময় অশুভ নয়।কখনো কখনো অত্যন্ত শুভ হয়েও দেখা দেয় জীবনে।

 

পরের পর্বে আবার এক নতুন শাস্ত্রীয় এবং পৌরাণিক বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু করবো।

থাকবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

পুরান এবং নবগ্রহ – শনি দেব

পুরান এবং নবগ্রহ – শনি দেব

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

আমাদের পুরান ও জ্যোতিষ শাস্ত্রে গ্রহ রাজ শনিকে একটি ভয়ানক গ্রহ বা রাগী দেবতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সত্যি কি তিনি এতটা ভয়ের। এতটা হানিকারক!এই সব প্রশ্নের উত্তর রয়েছে আমাদের শাস্ত্রে।

মৎস্য পুরাণ কিন্তু শনিদেবকে লোকহিতকর গ্রহের তালিকাতেই ফেলেছে। মৎস্য পুরাণে বলা হচ্ছে, দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার মেয়ে সঞ্জনার সঙ্গে বিয়ে হয় সূর্যদেবের। কিন্তু সূর্যের প্রচণ্ড তাপে প্রায় ঝলসে যান সঞ্জনা। তখন তাঁর নতুন নাম হয় সন্ধ্যা। নিজের এমন দূরবস্থায় স্বামীর প্রতি সমস্ত ভালোবাসা হারিয়ে ফেলেন তিনি। সূর্যের থেকে দূরে পালাতে চান তিনি। কিন্তু কী ভাবে? তখন সন্ধ্যা নিজেরই একটি প্রতিকৃতি সৃষ্টি করেন।
তাঁর নাম দেন ছায়া। ছায়াকে স্বামীর দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে সন্ধ্যা পিতার ঘরে ফিরে যান। এ ভাবে যে তাঁর স্ত্রী বদল হয়ে গেল তা খেয়ালই করেন না সূর্যদেব।

এই সূর্য্য দেব ও ছায়ার সন্তান হিসেবে জন্ম নেন শনি। মেয়ে তাঁর কাছে, এদিকে সূর্যের সন্তান-জন্মের খবর পেয়ে বিশ্বকর্মা ধন্দে পড়ে যান। সন্ধ্যার কাছে ছুটে গিয়ে সব জানতে চান। সব শুনে বিশ্বকর্মা সন্ধ্যাকে সেই মুহূর্তেই পতিগৃহে ফিরে যেতে নির্দেশ দেন। ক্ষুব্ধ সন্ধ্যা ফিরে গিয়ে ছায়াকে নিঃশেষ করে নিজে ফের সূর্যের স্ত্রীর ভূমিকা পালন করতে থাকেন। এ ঘটনাও সূর্যের নজর এড়িয়ে যায়|

শনির জীবনের দুক্ষ দুর্দশার সূত্রপাত এখান থেকেই, এর পর শনির প্রতি বিমাতৃসুলভ আচরণ করতে শুরু করেন সন্ধ্যা। শনিকে সূর্যের থেকে দূরে সরাতে অনবরত স্বামীর কান ভাঙাতে থাকেন সন্ধ্যা। এভাবে মায়ের স্নেহ এবং বাবার ভালোবাসা না পেয়ে ক্রুদ্ধ, বিরক্ত, অলস হয়ে উঠতে থাকেন শনি। কোনও কিছুই তাঁর ভালো লাগে না।তার মধ্যে জন্ম নেয় তামসিক প্রবৃত্তি।

পরবর্তীতে শনিকে সৌরমণ্ডলে স্থান দেন পিতা সূর্য্যদেব । কর্মফলের দেবতা হিসেবে শনিকে উন্নীত করা হয়। এ জন্যই কেউ কোনও অপকর্ম করলে শনির নজর এড়ায় না এবং শনির হাতে তার শাস্তি নিশ্চিত।অর্থাৎ তার এই ক্রোধ ও নিষ্ঠুরতা দিয়ে তাকে বিচার করলে হবেনা|তিনি কর্ম ফল প্রদান করেন|তিনি ভালোর জন্যে ভালো আবার খারাপের জন্যে খারাপ|মানুষের জীবনে তার প্রভাব দুরকমেরই হয়|তার দশায় একজন রাজাও হতে পারে আবার ক্ষতির সম্মুখীন ও হতে পারে।

রামায়ণ অনুসারে শনিদেব সহ সমস্ত গ্রহকে রাবন লঙ্কায় বন্দি করে রেখেছিলেন। যখন হনুমান সোনার লঙ্কা পুড়িয়ে দেন তখন গ্রহদের তিনি মুক্ত করেন। মুক্তি পেয়ে শনিদেব হনুমানকে আশীর্বাদ করেন যে তার ভক্তদের তিনি কোনো ক্ষতি করবেন না এবং আজও বজরংবলীর কৃপায় শনির অশুভ প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

নবগ্রহ এবং পুরান সংক্রান্ত আলোচনা নিয়ে আবার ফিরে আসবো আগামী পর্বে।
পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

নব গ্রহ এবং পুরান – শুক্র

নব গ্রহ এবং পুরান – শুক্র

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

আজকের নবগ্রহ শীর্ষক এই আলোচনায় নব গ্রহের অন্যতম শুক্রকে নিয়ে আলোচনা করবো।

দেবতা রূপে শুক্রকে কোথাও একটি সাদা ঘোড়া বা কোথাও সাতটি ঘোড়া দ্বারা টানা একটি রথে আসীন থাকতে দেখা যায়। তিনি সৌন্দর্য সব ভোগ বিলাশের দেবতা।শুক্র রাশিচক্রের চিহ্ন বৃষ এবং তুলাকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং একজন জাতক বা জাতিকার জীবনে শারীরিক সৌন্দর্য, শৈল্পিক প্রতিভা, জাগতিক সুখ শুক্রের উপর নির্ভর করে।
প্রেম বা দাম্পত্য জীবনের সাফল্য বা ব্যার্থতাও অনেকটা শুক্র দ্বারা নির্ধারিত হয়।

পুরানে শুক্রের আরো একটি পরিচয় আছে।
শুক্র হচ্ছেন ঋষি ভৃগু এবং দিব্যর পুত্র, যিনি সপ্তর্ষিদের অন্যতম।আবার তিনি দৈত্য বা অসুরদের গুরু। অর্থাৎ তার দুটি সত্ত্বা রয়েছে কোথাও তিনি একজন স্বতন্ত্র দেবতা আবার কোথাও তিনি দৈত্য গুরু।

অসুরদের আশ্রয় দেয়ার অপরাধে বিষ্ণু ভৃগু পত্নী অর্থাৎ শুক্রের মাতার প্রাণ হরণ করেছিলেন। সেই থেকেই শুক্র এবং দেবতাদের শত্রুতার সূচনা হয়।

একটি পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে শুক্র
নিজেকে দুইভাগে ভাগ করেছেন, একভাগ দেবতাদের জ্ঞানের উৎস
আরেকভাগ অসুরদের জ্ঞানের উৎস। তবে দেব গুরু বৃহস্পতিকেই দেবতাতের গুরু হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে এবং এই দুই গুরুর সম্পর্ক খুব একটা ভালো নয়।জ্যোতিষ শাস্ত্র মতেও শুক্র এবং বৃহস্পতি একসাথে মিলিত হলে সৃষ্টি হয়ে দৈত্য গুরু যোগ যা ভালো ফল দেয়না।এছাড়াও শুক্র বেশ কয়েকটি যোগের কারিগর।

আবার ফিরে আসবো নব গ্রহ সংক্রান্ত
আলোচনা নিয়ে।থাকবে অনেক পৌরাণিক
ঘটনা এবং তথ্য।পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

পুরান এবং নব গ্রহ – বৃহস্পতি

পুরান এবং নব গ্রহ – বৃহস্পতি

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

জ্যোতিষ শাস্ত্রে বা সৌর জগতে বৃহস্পতি যেমন একটি গ্রহ আবার বেদে এবং পুরানে তিনি একজন দেবতা তার পাশাপাশি তিনি আবার দেব গুরু, অর্থাৎ দেবতাদের গুরু|সব মিলিয়ে শাস্ত্রে বৃহস্পতি বেশ বর্ণময় এবং গুরুত্বপূর্ণ একটা চরিত্র।আজকের পর্বে আপনাদের সাথে
পরিচয় করিয়ে দেবো নবগ্রহ পরিবারে অন্যতম এবং বৃহত্তম সদস্য বৃহস্পতির।

বৃহস্পতি মুলত বৈদিক যুগের একজন ঋষি যিনি দেবতাদের পরামর্শদাতা হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন।স্কন্দ পুরান অনুসারে প্রভাস তীর্থে গিয়ে বৃহস্পতি ভগবান শিবের কঠোর তপস্যা করেন এবং তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে দেবাদিদেব মহাদেব তাকে দেবগুরু পদ প্রদান করেন|

জন্ম বৃত্তান্ত অনুসারে বৃহস্পতির মাতা শ্রদ্ধা , শ্রদ্ধা কর্দম ঋষির তৃতীয় কন্যা ।তার বিবাহ অঙ্গিরা ঋষি সাথে হয়েছিল|অর্থাৎ বৃস্পতি শ্রদ্ধা ও অঙ্গীরা ঋষির পুত্র|আবার ঋগবেদে বলা হয়েছে,পৃথিবীর প্রথম উজ্জ্বল ও পবিত্র মহাআলোক থেকে বৃহস্পতির জন্ম যিনি সকল আঁধার দূরীভূত করেন|বৃহস্পতির স্ত্রী তারা |তারা ও চন্দ্রের প্রেম কাহিনী ও বুধের জন্মের বৃত্তান্ত আমি আগের পর্বে বলেছি তাই আজ আর বিস্তারিত আলোচনায় যাচ্ছিনা|এক কথায় বুধ ও বৃহস্পতির পিতা পুত্রের সম্পর্ক|

প্রাচীন ভারতীয় বৈদিক গ্রন্থ মতে তিনি হলেন বাগ্মিতার দেবতা আবার কোথাও তার সম্পর্কে বলা হয়েছে যে তিনি অগ্নি দেবের অবতার এবং অগ্নি দেবের সমতুল্য তার তেজ ও প্রভাব| বৃহস্পতির দেব মূর্তি পদ্মে আসীন এবং চতুর্ভুজ তার হাতে থাকে দন্ড এবং জপমালা,তার শরীর হলুদ বর্নের|আমাদের হিন্দু ক্যালেন্ডারের বৃহস্পতিবার দেব গুরু বৃহস্পতির নামে উৎসর্গকৃত|বৃহস্পতির প্রতিকার হিসেবে প্রধান রত্ন পোখরাজ নির্ধারিত হয়েছে|বৃহস্পতি ধনু ও মীন রাশির অধিপতি|

জ্যোতিষ শাস্ত্রে বৃহস্পতি নিঃসন্দেহে একটি শুভ গ্রহ|বৃহস্পতি সন্তান লাভের কারক গ্রহ, উচ্ছ শিক্ষার কারক গ্রহ|বৃহস্পতি প্রভাবিত করে জাতক জাতিকার বিবাহিত জীবনকে|এছাড়াও মেধা, পান্ডিত্য, আধ্যাত্মিকতা, উদ্দম, বাগ্মীকতা নির্ধারিত হয় বৃহস্পতির অবস্থানের উপর নির্ভর করে। বৃহস্পতি অশুভ থাকলে জাতককে বা জাতিকাকে গোটা জীবন সংঘর্ষ করতে হয়|উচ্চ শিক্ষায়, এবং জীবনের সার্বিক উন্নতিতে বাঁধা আসে|আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা যায়|বৃহস্পতি চন্দ্রের সাথে মিলিত হয়ে যেমন গজ কেশরীর মতো শুভ যোগ সৃষ্টি করে তেমনই রাহুর মত পাপ গ্রহের সাথে মিলিত হয়ে সৃষ্টি করে গুরু চণ্ডাল দোষ|বৃহস্পতি ও শনির সংযোগে সৃষ্টি হয় গুরু শনি দোষ|সহজ ভাষায় বলতে গেলে জাতক জাতিকার জন্ম ছকে বৃহস্পতি শুভ হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ|

আগামী দিনে নব গ্রহের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রহকে নিয়ে আলোচনা করবো। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

পুরান এবং নবগ্রহ – মঙ্গলদেব

পুরান এবং নবগ্রহ – মঙ্গলদেব

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

নব গ্রহের অন্যতম প্রধান এবং প্রভাবশালী একটি

গ্রহ মঙ্গল আজকের এই পর্বে এই মঙ্গল গ্রহ নিয়ে আলোচনা করবো।

 

শাস্ত্র মতে মঙ্গল গ্রহের দেবতা মঙ্গলদেব|তিনি অকৃতদার ও যুদ্ধ বিগ্রহের দেবতা এমন কি কিছু প্রাচীন গ্রন্থে তাকে দেব সেনাপতি কার্তিকের সমতুল্য বলা হয়েছে|মঙ্গল দেব একজন প্রবল পরাক্রমী যোদ্ধা যিনি তারকাসুরকে বধ করেছিলেন|কোনো কোনো পৌরাণিক কাহিনীতে মঙ্গল দেবকে বিষ্ণুর বরাহ অবতার ও বসুন্ধরা বা পৃথিবীর সন্তান হিসেবে দেখানো হয়েছে আবার কিছু কিছু শাস্ত্রে উল্লেখ আছে যে তার জন্ম হয়েছে শিবের ঘাম বা রক্তের ফোঁটা থেকে|

 

ব্রহ্ম বৈবর্ত পুরানে মঙ্গল দেবের জন্ম ও তার স্বরূপ সম্পর্কে বহু তথ্য লিপিবদ্ধ রয়েছে|মঙ্গলদেবের শরীর রক্ত বর্নের তার পোশাকের রঙও লাল |তার চারটি হাত|চার হাতে ক্রমানুসারে অভয়মুদ্রা, ত্রিশুল, গদা এবং বরমুদ্রা শোভিত|মঙ্গল দেবের বাহন ভেড়া এবং তার বাসস্থান মঙ্গল লোক|মঙ্গলবারটি মূলত এই দেবতাকে উৎসর্গকৃত।সকল গ্রহদের মধ্যে মঙ্গলকে কুমার গ্রহ বলা হয় এবং এই গ্রহটি অত্যান্ত শক্তিশালী|পঞ্চমহাপুরুষ যোগের অন্যতম রুচক যোগের প্রধান কারিগর এই মঙ্গল গ্রহ।

 

পৌরাণিক এবং শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যার পর এবার আসি জ্যোতিষ শাস্ত্রে|মঙ্গল অগ্নি তত্ত্বর গ্রহ এবং বর্ণ লাল|আশ্চর্যর বিষয় আজকের আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের আবিষ্কারেও মঙ্গলের মাটির রং লাল|তত্ব ও বর্ণ অনুসারে মনে মঙ্গলের জন্য নির্ধারিত প্রধান রত্ন হলো রক্ত প্রবাল|

 

অন্যান্য গ্রহের ন্যায় মঙ্গলের যেমন কিছু ভালো প্রভাব আছে তেমনি খারাপ প্রভাব ও রয়েছে| মঙ্গলের মধ্যে সৃষ্টি ও বিনাশ , শুভ ও অশুভ , উভয় গুনই বর্তমান| জন্ম কুণ্ডলীতে মঙ্গল শুভ অবস্থায় না থাকলে জাতক বা জাতিকার তেজস্বীতা ও সাহস কম থাকবে|জীবনে জামেলা-ঝঞ্জাট বাড়বে , দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকবে, অশান্তি , মামলা – মোকদমা ইত্যাদির সম্ভবনা থাকবে|আবার মঙ্গল জন্মকুণ্ডলীতে শুভ হলে , জাতক বা জাতিকা স্বাধীনচেতা , সাহসী , বীরত্ব ভাব সম্পন্ন হবে। ভূসম্পত্তি লাভ,

গৃহ লাভ , অঙ্কে দক্ষতা , শাস্ত্র জ্ঞান লাভ , চিকিৎসাশাস্ত্রে পারদর্শিতা , শিল্পকলায় বা ক্রীড়া ক্ষেত্রে নাম করা ইত্যাদি মঙ্গলের অবস্থান এবং তার গ্রহগত সংযোগের উপর নির্ভর করে|

 

মঙ্গল গ্রহ জ্যোতিষ শাস্ত্রে সব থেকে বেশি আলোচিত হয় মাঙ্গলিক দোষের কারনে। জাতক জাতিকার জন্ম ছকে এক, চার, ছয়, আট এবং বারো এই ঘর গুলির একটিতে মঙ্গল থাকলে মাঙ্গলিক বলা হয়। মাঙ্গলিক যোগের ভালো এবং মন্দ দুটি দিকই আছে যা নিয়ে পরে এক সময় বিস্তারিত আলোচনা করবো।

 

পুরান এবং নবগ্রহ নিয়ে ধারাবাহিক এই

অনুষ্ঠানে আগামী পর্বে আলোচনা করবো বুধ

নিয়ে।পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

পুরান এবং নবগ্রহ – বুধ

পুরান এবং নবগ্রহ – বুধ

 

পন্ডিতজি ভৃগুর শ্রী জাতক

 

শাস্ত্রে তিন রকমের দেবতার উল্লেখ আছে। বৈদিক দেবতা, পৌরাণিক দেবতা এবং লৌকিক দেবতা। নব গ্রহের প্রত্যেক দেবতা হয়ে বৈদিক অর্থাৎ বেদে তাদের উল্লেখ আছে আবার পুরানেও তাদের পাওয়া যায়। আজ আলোচনা করবো নব গ্রহের অন্যতম বুধ গ্রহকে নিয়ে।

 

পুরান অনুসারে বুধ চন্দ্র দেব এবং দেব গুরু বৃহস্পতির স্ত্রী দেবী তারার অবৈধ সন্তান|বুদ্ধের জন্ম নিয়ে আছে এক বিতর্কিত পৌরাণিক কাহিনী|সেই কাহিনী সংখ্যে কিছুটা নিম্নরূপ –

 

দেবগুরু বৃহস্পতির বহু শিষ্য ছিল এবং চন্দ্রও ছিলেন ওনার এক শিষ্য,সৌন্দর্যের অপর নাম ছিলো চন্দ্র |অন্যদিকে বৃহস্পতির স্ত্রী তারা ছিলেন পরম সৌন্দর্যের অধিকারিণী|তারা দেবী ও চন্দ্র পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হন ও এক প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠ|পরবর্তীতে বৃহস্পতি সব জানতে পারলে চন্দ্রের সঙ্গে তার যুদ্ধ বাঁধে এই যুদ্ধে দৈত গুরু শুক্র বা শুক্রাচার্য চন্দ্রের পক্ষ নেন|অন্যদিকে দেবতারা তাদের গুরু বৃহস্পতির পক্ষ নেন|অবশেষে এই যুদ্ধ থেকে ব্রম্হান্ডকে রক্ষা করতে ব্রহ্মদেব মদ্ধস্ততা করেন ও যুদ্ধ থামে|ইতিমধ্যে চন্দ্রের ঔরসে তারার গর্ভে জন্মনেন এক পুত্র|চন্দ্র তার নাম রাখেন বুধ|পরবর্তীকালে চন্দ্রদেব বুধের দায়িত্ব সঁপে দেন ওনার প্রিয় পত্নী রোহিণীকে। তাই বুধদেবকে রৌহিণেয়ও বলা হয়| আবার চন্দ্র বা সোমদেবের পুত্র হওয়ায় বুধের অপর নাম সৌম|

 

পুরানে পাওয়া বর্ননা অনুসারে দেবতা বুধের শরীর কিয়দ পিঙ্গল বর্ণের কিংবা সবুজাভ,তিনি পিঙ্গল পোশাক পরিহিত। আগুন ও বাতাসের তৈরি তার রথ|এই রথ টেনে নিয়ে যায় আটটি বাতাসের তৈরি ঘোড়া|কিছু গ্রন্থে বুধ কে বুদ্ধিদাতা ও গন্ধর্বদের প্রণেতাও মানা হয়|শ্রীবুধের বাহন সিংহ|তিনি বুধ গ্রহের অধিপতি|

 

বাংলায় আমাদের বুধবার এসেছে বুধ দেবতার নাম অনুসারে। বুধ শব্দের অর্থ পন্ডিত, বিদ্বান বা জ্ঞানী|বৈদিক জ্যোতিষ শাস্ত্রে বুধ একটি অন্যতম শক্তিশালী এবং শুভ গ্রহ যা মূলত বুদ্ধি এবং অর্থের কারক গ্রহ হিসেবে স্বীকৃত|জ্যোতিষ শাস্ত্রে বুধ গ্রহটিকে বালকের সাথে তুলনা করা হয়ে থাকে এবং কুমার গ্রহ বলে ধরা হয়েথাকে কারন বুধের মধ্যে রয়েছে বালক সুলভ চপলতা , কর্মে চঞ্চলতা|

 

বুধের শুভ প্রভাবে জাতক জাতিকার জ্ঞান বিজ্ঞান , কাব্য , সাহিত্য চর্চা, জ্যোতিষ বিদ্যা , চিকিৎসা বিদ্যা , আইন জীব , গণিত ইত্যাদি বিষয়ে ব্যাপক উন্নতি সম্ভব আবার বুধ  অশুভ হলে অস্থিরতা , মূর্খতা , উদাসীনতা ,বাচালতা খারাপ কোনো বাবস্যার সাথে যুক্ত হওয়া  ইত্যাদি প্রবনতা লক্ষ্য করা যায়|এছাড়া বুধ একাধিক শুভ যোগের মুল কারক গ্রহ যার মধ্যে রয়েছে বুধাদিত্য যোগ|বুধ কন্যা ও মিথুন রাশির স্বামী বা অধিপতি|বুধের প্রধান রত্ন হিসেবে পান্নাকে নির্ধারিত করা হয়েছে|

 

নবগ্রহ সংক্রান্ত আলোচনা ধারাবাহিক ভাবে চলতে থাকবে। ফিরে আসবো পরবর্তী গ্রহ নিয়ে আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।