Home Blog Page 6

কালী কথা – রিষড়ার সিদ্ধেশ্বরী কালী

কালী কথা – রিষড়ার সিদ্ধেশ্বরী কালী

কালী কথা – রিষড়ার সিদ্ধেশ্বরী কালী

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

গঙ্গার দুই তীরজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে যে হাজারও কালী মন্দির তারমধ্যে রিষড়ার সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির অন্যতম।সাধক জটাধর পাকড়াশী কর্তৃক কালী মন্দিরে মাকে ঠাকরানী নামেও ডাকা হয়। আজ কালী কথায় এই মমদিরের কথা জানাবো।

তন্ত্র সাধক জটাধর পাকড়াশী নামে এক তান্ত্রিক হুগলী জেলার রিষড়ার সাধনা করতেন। একদিন তিনি স্বপ্নাদেশ পান। বর্তমান মন্দিরের বাম পাশে এক দীঘিতে একটি ভাসমান ঘট দেখতে পান। ঘটটিকে জল থেকে তুললেন। তারপর গোলপাতা দিয়ে মন্দির তৈরি করলেন। স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী মায়ের কৃষ্ণবর্ণের দ্বিভুজা মূর্তি তৈরি করে নিত্য পুজো শুরু করেন।

পরবর্তীতে তিনি সিদ্ধেশ্বরী মন্দির সংলগ্ন
জায়গাটি ব্রহ্মোত্তোর জমি হিসেবে পান
সেখানেই থাকতে আরম্ভ করেন জটাধর পাকড়াশী। তৈরি হয় মন্দির।

সিদ্ধেশ্বরী রূপ মায়ের শান্ত স্নিগ্ধ রূপ।
মায়ের লোল জিভ থাকে না।
অর্থাৎ তিনি জিভ বের করে থাকেন না।
কালীর গলায় নর মুণ্ডমালা থাকে। সিদ্ধেশ্বরী মায়ের গলায় মুণ্ডমালা নেই। আদপে মা কৃষ্ণকালীর আরেক রূপ।

মাতৃমূর্তির উচ্চতা ছয়।ফুট তবে আর মৃন্ময়ী নয়, দেবী কালিকা এখন মর্মর মূর্তিতে বিরাজিতা। পাশেই রয়েছে মায়ের ভৈরব শিবের মন্দির। দেবী কালিকার পদতলে শিব থাকেন না, একপাশে শায়িত থাকেন।সিদ্ধেশ্বরী দ্বিভুজা, দেবীর ডান হাতে রয়েছে খড়্গ ও বাম হাতে নরমুণ্ড। এখন নবরত্ন মন্দিরে মায়ের নিত্য পুজো হয় দু’বেলা।

প্রাচীন কিছু গ্রন্থে রিষড়ার অধিষ্ঠাত্রী দেবী রূপে শ্রীশ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালী বিরাজ করছেন রিষড়াবাসীদের বিশ্বাস মা সিদ্ধেশ্বরী তাঁদের আগলে রেখেছেন সব বিপদ আপদ থেকে।

ফিরে আসবো আগামী পর্বে আবার কালী কথা নিয়ে। থাকবে অন্য এক কালী মন্দিরের কথা। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী কথা – মুক্তকেশি কালী

কালী কথা – মুক্তকেশি কালী

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

বাংলায় এমন অনেক কালী মন্দির আছে যেগুলি শাস্ত্র মতে সিদ্ধ পীঠ না হলেও অতি জাগ্রত এবং শক্তি পীঠের মর্যাদা পায়।এমনই এক পীঠস্থান আরিয়াদহর মুক্তকেশী কালী মন্দির।আজকের কালী কথায় এই কালী মন্দির প্রসঙ্গে লিখবো।

বহু প্রাচীন কাল থেকেই আড়িয়াদহ শ্মশান তান্ত্রিক সাধকদের সাধনক্ষেত্র হিসেবে বিখ্যাত। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের মায়ের শেষকৃত্য এই শ্মশানে সম্পন্ন হয়েছিল।এই শ্মশানের কাছেই রয়েছে মুক্তকেশী কালী মন্দির। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ এই মন্দিরে আসতেন এবং পুরোহিতের আসনে বসে তিনি দেবীর পূজাও করেছেন।

এই মন্দিরের বিশেষত্ব হলো দেবীর গর্ভগৃহ দক্ষিণমুখী। তবে মন্দিরটি পশ্চিমমুখী
বহু প্রাচীন এই মন্দিরে প্রথমদিকে একটি তালপাতার এবং মাটির ছোট্ট কুঠিরে দেবী বিরাজ করতেন পরে, ১২৪৭ বঙ্গাব্দে স্থায়ী ভাবে পাকা মন্দির নির্মাণ হয় ।

পুজো তন্ত্র মতে হয় এবং আগে এখানে পাঁঠা বলি হত। বর্তমানে পশু বলি নিষিদ্ধ তার বদলে এখন দেওয়া হয় চালকুমড়া, আখ, কলা বলি।বাকি সব রীতি নীতি আগের মতোই আছে।

প্রতিদিন নিত্য সেবা হয় তাছাড়া শ্যামাপূজা, দুর্গাপূজা, অক্ষয় তৃতীয় ও অন্নকূট উৎসবে এই মন্দির সারাদিন খোলা থাকে।সেই সময়ে বহু দর্শক সমাগম হয়।জ্যৈষ্ঠ মাসে ফলহারিণী কালী পূজা, কার্তিক মাসে দীপান্বিতা কালী পূজা, মাঘ মাসের কৃষ্ণা চতুর্থীতে রটন্তী কালী পূজা এখানে মহাসমারোহে আয়োজিত হয়।

এই শক্তিপীঠের ভৈরব শান্তিনাথ। যাঁকে শিবলিঙ্গ রূপে নিত্য পুজো করা হয়। ভক্তরা বিশ্বাস করেন, দেবী মুক্তকেশী অত্যন্ত জাগ্রত।
তিনি ভক্তের প্রতিটি কামনা,
বাসনা পূরণ করেন।

দীপান্বিতা অমাবস্যা উপলক্ষে চলতে থাকবে কালী কথা থাকবে।ফিরে আসবো কালীকথার নতুন পর্ব নিয়ে।পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী কথা – কালীবরের কালী 

কালী কথা – কালীবরের কালী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আজ কালী কথায় যে কালী মন্দির নিয়ে লিখবো সেই মন্দিরে এসে একবার শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছিলেন, ”ওরে এই মা সকলের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করেন। তোদের যা যা কামনা তাই তিনি পূর্ণ করতে পারেন ” এই মন্দিরটি হচ্ছে কলকাতার প্রাচীন একটি কালী মন্দির যার পোশাকি নাম কালী বরের কালী বাড়ি।

 

সে আজ থেকে প্রায় পাঁচশো বছর আগের কথা তপস্বী কালীবর নামের এক মাতৃ সাধক হিমালয়ের এক গুহায় উপাসনা করতেন। একদিন স্বপ্নাদেশ পান তিনি। দেবী কালী তাঁকে বলেন বাংলায়

গঙ্গার তীরের এক জঙ্গলে পড়ে রয়েছেন তিনি। তাঁকে সেখানেই পুজোর আদেশ দেন কালী।সেই স্বপ্নাদেশ পেয়ে সাধক কালীবর চলে আসেন বাগবাজারের গঙ্গাপাড়ে।তখন এই অঞ্চলে ঘন জঙ্গল, বন্য জীব আর ডাকাতেরা এলাকার দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।কথা মতো কালী মূর্তি উদ্ধার করে সেখানেই এক হোগলা বনের মধ্যে তিনি শুরু করেন দেবীর উপাসনা।

 

পরবর্তীতে সেই স্থানেই অরণ্য কিছুটা পরিষ্কার

করে ছোট্ট মন্দির স্থাপন করে দেবী মূর্তি শাস্ত্র মতে স্থাপন করা হয়।সাধকের নাম অনুসারে এই কালীকে ‘কালীবরের কালী’ নামেই মানুষ চিনতে শুরু করেন।

 

সেকালে ডাকাতরা পুজো করতো বলে ডাকাত

কালী বলেও পরিচিতি আছে।আবার দেবীকে সিদ্বেশ্বরী নামেও ডাকা হয়।বর্তমানে উত্তর কলকাতার কুমোরটুলির কাছে রবীন্দ্র সরণিতে রয়েছে সিদ্ধেশ্বরী কালী বাড়ি

 

আবার ফিরে যাই সেই সুদূর অতীতে শোনা যায় এই মূর্তি স্থাপনের পরে কিছুদিন কালীবরের হাতে দেবী পুজো পেলেও পরবর্তীতে দেবীর পুজোর ভার বর্তায় এক সন্ন্যাসী কাপালিকের উপর।

সেই সময়েই শুরু হয় বলী প্রথা। এমনকি সেকালে নর বলীও হতো বলে কিংবদন্তী আছে।

জনশ্রুতি শোনা যায় একদিন গঙ্গায় ভেসে আসা দুই বালককে বলী দেবে ঠিক করে ডাকাতদল।

সেই বালকদের বাঁচান মন্দিরের পূজারী সেই কাপালিক। তারপর থেকে পুজোর রীতি নীতিতে কিছু পরিবর্তন আনা হয়। বন্ধ হয় বলী প্রথা। সেই বালক দুটির পরিবারকে পুজোর কিছু

দায়িত্বও দেয়া হয়।আজও চলছে এই সব

রীতি নীতি।

 

দীপান্বিতা অমাবস্যা সহ প্রায় প্রতি অমাবস্যা তিথিতেই বিশেষ পুজো হয় তবে দীপান্বিতা অমাবস্যায় মহা সমারোহে পুজো

অনুষ্ঠিত হয়। দেবীর পরনে থাকে বেনারসী আর দেবীর হাতে থাকে খরগ। পুজো হয় তন্ত্র মতে।

 

আবার ফিরে আসবো এমন একটি

ঐতিহাসিক এবং প্রাচীন কালী মন্দিরের ইতিহাস

নিয়ে কালী কথায়। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী কথা – খুকিমা কালী

কালী কথা – খুকীমা কালী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

এই বাংলার বুকে দেবী কালী নানা নামে নানা রূপে আমাদের কাছে ধরা দেন। কোথাও তিনি

বড়মা আবার কোথাও তিনি পুটে কালী। এমনই

এক কালী মন্দির আছে বজ বজে যেখানে দেবীকে খুকীমা নামে ডাকা হয়। আজকের পর্বে খুকীমা কালীর কথা জানাবো।

 

অদ্ভুত এই কালী মূর্তির ইতিহাস। শোনা যায় দয়াল ঠাকুর নামে এক মাতৃ সাধক এক সময়ে এই স্থানে সাধনা করতেন। পাশেই ছিলো শ্মশান এবং আদি গঙ্গা। এক রাতে এক ডাকাত দল এখানে আসে।

সাধক কে ডেকে নিয়ে যাওয়ার হয় তাদের সর্দারের কাছে।ডাকাত সর্দারের গা পুড়ে যাচ্ছে জ্বরে। পানীয় জল ও চিকিৎসারে জন্যই তাই কুটির দেখে দাঁড়িয়ে পড়া শুনশান প্রান্তরে।

সেই ফাঁকে হয়ে যাবে ভাগ-বাটোয়ারাও। জানা গেল, সুদূর বর্ধমান থেকে লুঠ করে আসছেন তাঁরা।

 

দয়াল ঠাকুর লুট করা সামগ্রীরে মধ্যে পাথরের তৈরি এক কালী মূর্তি দেখলেন এই মূর্তি যে চুরি করা আনা হয়েছে কোনো রাজবাড়ি থেকে তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল তাঁর কাছে। তার কারণ বিগ্রহের গঠন। অখণ্ড কষ্ঠীপাথরের তৈরি এই মূর্তি বড়ো কোনো পাথর থেকে কেটে বানানো। এমনকি দেবীর গলার নরমুণ্ডের মালাও খোদাই করে তৈরি। এ যে কোনো সাধারণ শিল্পীর হাতের কাজ হতে পারে না তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি তাঁর। তিনি অবহেলায় পড়ে থাকা সেই মূর্তির পুজোর ও ভোগের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিলেন। নির্দেশ পালন করতেই সেরে ওঠেন ডাকাত সর্দার।

তারা বিদায় নেয় এবং কালী মূর্তি ওই স্থানেই স্থাপিত হয় এবং খুকিমা নামে আজও তিনি সেখানে স্বমহিমায় বিরাজিতা।

 

পরে জানা যায় এই মূর্তির পুজো করতেন মাতৃ সাধক কমলাকান্ত। বর্ধমান থেকে এই মূর্তি ডাকাতি করে সেই রাতে আনা হয়। এবং হয়তো দেবীর ইচ্ছাতেই এখানে আরেক মাতৃ সাধক সেই

মূর্তির পুজোর দায়িত্ব পান।সেই থেকে দক্ষিণ বঙ্গের জনপ্রিয় এবং জাগ্রতা কালী হলেন খুকী মা কালী।

 

আবার ফিরে আসবো কালী কথা নিয়ে আগামী পর্বে। থাকবে অন্য এক কালী মন্দিরের ইতিহাস। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী কথা – বোম্বেটে কালী

কালী কথা – বোম্বেটে কালী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

নদীয়া জেলা সাধারণত মহাপ্রভুর ভক্তি আনন্দ বা বৈষ্ণব দের জন্য বিখ্যাত হলেও এই জেলার কিছু কালী পুজো বেশ প্রসিদ্ধ তার মধ্যে অন্যতম শান্তিপুরের বোম্বেটে কালী।আজকের কালী কথায় বোম্বেটে কালী নিয়ে লিখবো।

 

“বোম্বেটে” শব্দটি পর্তুগিজ শব্দ থেকে এসেছে, যার অর্থ বোমাবাজ বা জলদস্যু। এটি মূলত ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াইয়ে যুক্ত একদল স্বাধীনতাসংগ্রামীকে বোঝাতে ব্যবহৃত হতো, এবং পরে জলদস্যুদেরও বোঝাতো। অনেকটা আমাদের দেশের বর্গীদের ন্যায়।

 

প্রথমে ব্রিটিশ আমলে এই দেবীর পুজোর প্রচলন করেছিলেন একদল সসস্ত্র স্বাধীনতাসংগ্রামী, যারা ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন এবং বিদেশি শাসকদের কাছে তারা ছিলেন ভয়ঙ্কর অপরাধী। তাই তাদের প্রচলিত কালী পুজো হয়ে ওঠে বোম্বেটেদের কালী পুজো এবং দেবী হয়ে যান বোম্বেটে কালী।

 

ভিন্ন একটি মত অনুসারে জলদস্যুদের বলা হতো বোম্বেটে। একদল ডাকাত এই পুজোর প্রচলন করে ছিলো এবং তারা প্রধানত জল পথে ডাকাতি করতো। তাই তাদের কালীকে বোম্বেটে কালী বলা হয়।

 

এই কালীর মূর্তিতে দেবী শিবের বুকের ওপর বাম পা রাখেন, যা তাকে অন্যান্য কালীমূর্তি থেকে আলাদা করে। দেবীকে শাস্ত্র মতে বামা কালী রূপে পুজো করা হয়।

 

শান্তি পুর সহ গোটা নদীয়া জেলায় দেবীকে অত্যন্ত জাগ্রত বলে মানা হয় এবং লক্ষ লক্ষ ভক্ত এই দেবীর আরাধনা করেন।নিজেদের মনোস্কামনা জানান। দেবী কাউকে নিরাশ করেননা বলেই বিশ্বাস।

 

দীপান্বিতা অমাবস্যা উপলক্ষে কালী কথার পরবর্তী পর্ব নিয়ে ফিরে আসবো আগামী দিনে। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী কথা – কল্যাণময়ী কালী

কালী কথা – কল্যাণময়ী কালী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আজ আপনাদের উত্তর চব্বিশ পরগনার বাদুর কল্যাণময়ী কালীর কথা জানাবো যে কালীকে নিয়ে আছে অজস্র লোক কথা এবং অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ।

 

যে সময়ের কথা বলছি বাদু তখন গ্রামাঞ্চল।

বাদুর কাছেই কাঞ্চনতলায় বসবাস করতেন মাতৃসাধক দিলীপ চট্টোপাধ্যায়।একটি বড় নিম গাছের নীচে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঈশ্বরচিন্তা করতেন তিনি। তাকিয়ে থাকতেন সামনের এক শান্ত এবং বিরাট জলাশয়ের দিকে।একদিন

মা কালী স্বপ্নে দেখা দিলেন তার ভক্তকে।

 

স্বপ্নে দেখা দিয়ে দেবী বললেন, “নিমগাছের পাশের পুষ্করিণীতে আমার কষ্টি পাথরের মূর্তি আছে। ওই মূর্তি উদ্ধার করে তুই প্রতিষ্ঠা কর। নিত্যপুজো করবি। বৈষ্ণব মতে পুজো হবে। বলিদান বা আমিষ ভোগ নয়। এটি আমার কল্যাণময়ী রূপ।”

 

পরদিন ঠিক কথা মতো পুকুর থেকে পাওয়া গেল ছোট্ট একটি কষ্টি পাথরের মাতৃমূর্তি।

দিলীপ চট্টোপাধ্যায় পরম যত্নে মায়ের মূর্তি এনে বসালেন নিম গাছের নীচে। এখানেই তৈরি হল কল্যাণময়ী মায়ের মন্দির। মন্দির চত্বরে আছেন দেবদিদেব মহাদেবও। সেই শিবলিঙ্গও খুব জাগ্রত। তিনিও ভক্তকে সবরকম বিপদ থেকে রক্ষা করেন। আছেন শালগ্রাম শিলাও।বর্তমানে সেই নিম গাছটিকে ভক্তরা কল্যাণময়ী মায়ের কল্পতরু বৃক্ষ মনে করেন।  মায়ের কাছে মনোস্কামনা জানিয়ে গাছে ডোর বাঁধেন এবং দেবী প্রতি তাদের অগাধ আস্থা।

 

দেবীর দেয়া স্বপ্ন অনুযায়ী এবং তার শান্ত স্নিদ্ধ কল্যানময়ী রূপের জন্য দেবী কল্যাণময়ী কালী রূপেই সর্বত্র জনপ্রিয়।

 

সামনেই কালী পুজো।এখানে কালীপুজোর রাতে অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে কল্যাণময়ী মায়ের আরাধনা করেন প্রয়াত মাতৃসাধক দিলীপ চট্টোপাধ্যায়ের বংশধরেরা।মায়ের স্বপ্নে দেয়া আদেশ অনুসারে পুজো হয় বৈষ্ণব মতে। আমিষ ভোগ থাকেনা। তার বদলে ঘিয়ের পরমান্ন আর খিচুড়ি। তার সঙ্গে থকে পাঁচ রকম ভাজা, তরকারি, চাটনি। এছাড়া মায়ের পছন্দের খাদ্যতালিকায় আছে চিঁড়ে, গুড় , নারকেল এই সব প্রসাদ যা পরম আনন্দে গ্রহন করেন দুর দুর থেকে আসা ভক্তবৃন্দ।

 

কথিত আছে দেবী কল্যাণময়ী অত্যান্ত জাগ্রত তার কাছের সব মনোস্কামনা পূরণ হয়। তাই ভিড় হয় চোখে পড়ার মতো।

 

আবার কালী কথা নিয়ে আগামী পর্বে ফিরে আসবো। থাকবে অন্য এক কালী মন্দিরের ইতিহাস। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী কথা – চাঁদুনি কালী 

কালী কথা – চাঁদুনি কালী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

নদিয়ার শান্তিপুর স্টেশন থেকেব প্রায় দু কিলোমিটার দুরে অবস্থিত এক প্রাচীন কালী মন্দির যেখানে মা কালীকে চাঁদুনি কালী বলা হয়।এবং এই মন্দিরে পুজোর ক্ষেত্রে মহিলারাই প্রধান ভূমিকায় থাকেন|কেনো এই নাম এবং কেনো মহিলা দের এতো বেশি গুরুত্ব তার সাথেও জড়িত আছে এক কিংবদন্তী|সেই সব নিয়ে লিখবো আজকের পর্বে।

 

বহুকাল আগে নদিয়ার শান্তিপুর ছিল বর্ধিষ্ণু জনপদ৷ তখন শান্তিপুর দিয়ে প্রবাহিত হত মা গঙ্গা৷ আর সেই গঙ্গার পাড়ে একটি কুটিরে বাস করতেন সাত্ত্বিক গোপীনাথ সার্বভৌম যিনি ছিলেন

মহা প্রভু শ্রী চৈতন্যদেবের শিক্ষা গুরু।চৈতন্য মহাপ্রভুর গৃহশিক্ষক ছিলেন তিনি।

 

কথিত আছে এক রাতে গোপীনাথ মায়ের স্বপ্নাদেশ পান৷ স্বপ্নাদেশে তিনি জানতে পারেন মা সিদ্ধেশ্বরীরা প্রতিমা নির্মাণ করতে হবে তাঁরই পত্নীকে৷ মায়ের নির্দেশে বাড়ির পঞ্চমুণ্ডির আসনে গোপীনাথ প্রতিষ্ঠা করেন মা চাঁদুনিকে৷

 

মায়ের এহেন নাম নিয়ে নানা মুনির নানা মত রয়েছে৷ কারও মতে চাঁদুনি নামটি এসেছে চাঁদনি থেকে৷ চাঁদনি মানে জ্যোৎস্না৷মনে করা হয় পূর্ণিমার রাতে মায়ের মূর্তি তৈরি করা হয়েছিল সেই তিথি অনুসারে অর্থাৎ চন্দ্রালোকিত রাত্রির নামানুসারে দেবীর নাম ‘চাঁদুনি’ রাখা হয়।

 

সার্বভৌমর পরিবারের লোকেরাই বংশ পরম্পরায় পুজো করে আসছেন মা সিদ্বেশ্বরীরা| এখানে দুর্গাপুজোর শেষে দুর্গা দেউলেই শুরু হয় মায়ের কাঠামো গড়া৷ পারিবারিক রীতি অনুযায়ী আজও বংশের বড় বউ কাঠামোতে প্রথম মাটি দিয়ে এর শুভারম্ভ করেন এবং মায়ের কেশসজ্জা বাড়ির ছেলেরা জবাকুসুম তেল দিয়ে করে থাকেন। এই রীতি এখানে সেই শুরুর দিন থেকে চলে আসছে।

 

প্রতি অমাবস্যায় মায়ের কাঠামো শক্তিরূপে পুজো করা হয়৷ কালীপুজোর দিন মা চাঁদুনিকে দুর্গাদেউল থেকে বাতাস করতে করতে কালীমন্দিরে আনা হয়৷ দেবীর পুজো হয় নিষ্ঠা ও জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে যদিও একসময় এখানে মোষবলি হত৷ এখন তা না হলেও পাঁঠাবলি হয়|

 

আসন্ন দীপান্বিতা অমাবস্যা উপলক্ষে চলতে থাকবে কালী কথা। ফিরে আসবো কালী কথার পরবর্তী পর্ব নিয়ে। পড়তে থাকুন। ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী কথা – জীবন্ত কালী 

কালী কথা – জীবন্ত কালী

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

এক অর্থে প্রতিটি দেবী মন্দিরেই যেখানে দেবী পূজা গ্রহন করেন শাস্ত্র মতে মূর্তি প্রতিষ্ঠিত সখানেই দেবী জাগ্রতা এবং জীবন্ত তবে

কলকাতার  উত্তরে শুকিয়ে স্ট্রিটে রয়েছে

‘জীবন্ত কালী’র এক বিশাল মন্দির।আজ কালী কথায় জানাবো এই মন্দিরের বর্ণময় ইতিহাস।

 

জীবন্ত কালী মন্দির ঘিরে প্রচলিক আছে এক অলৌকিক কাহিনী। সে বহুকাল আগের কথা। দিনটি ছিল অমাবস্যা তিথি। কালী মন্দিরের তৎকালীন পুজারী বাজারে গিয়েছিলেন অমাবস্যার পুজোর বাজার করতে। সেই সময়ে বছর পাঁচেকের একটি ছোট্ট মেয়ে তাঁর কাছে চালকলা খেতে চায় এবং সে জানায়, দু’দিন ধরে সে কিছু খায়নি সে। পুরোহিতের এসব মোটেই পছন্দ হয়নি। তিনি ওই বালিকাকে অবজ্ঞা করে নিজের কাজে চলে যান।

 

সন্ধ্যায় যখন মন্দিরে দেবীর ভোগের ব্যবস্থা হয়েছিল অমাবস্যার সে রাতে। নিয়ম মেনে অন্ধকারেই চলছিল দেবীর আরাধনা। পুজো চলাকালীন পুরোহিত হঠাৎ লক্ষ্য করেন যে শুধু মহাদেবই শায়িত রয়েছেন। দেবী কালী অদৃশ্য।প্রথমে ভ্রম মনে হলেও পরে ঘি-এর প্রদীপ জ্বালিয়ে মূর্তি দেখার চেষ্টা করেন এবং একই জিনিস দেখেন। তৎক্ষণাৎ নুপুরের শব্দ কানে ভেসে আসে। পুরোহিত বুঝতে পারেন স্বয়ং দেবী কালী সকালে ছোট্ট মেয়ে রূপে খাবার চাইতে এসেছিলেন না বুঝে তিনি অবজ্ঞা করেছেন।

সেই থেকেই চলছে চালকলা দিয়ে দেবীর পুজোর রীতি।

 

এখানে দেবী বালিকা রূপে বিরাজ করছেন।

তাই অম্ববাচি পালিত হয় না এই মন্দিরে। বলির কোনও রীতি নেই। পুরোপুরি নিষিদ্ধ মাছ, মাংস।মন্দিরের বেদীতে উপবেষ্টিতা দেবী।

তাঁর গা ঘেঁসেই বসে রয়েছেন জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা। পাশের ঘরেই রয়েছেন ভৈরব।দেবী কিশোরীদের মতো সাজতে ভালো বাসেন তাই তাকে প্রতিটি বিশেষ পুজোয়

সুন্দর করে সাজানো হয়।

 

ভক্তদের বিশ্বাস, কাউকে কক্ষণও খালি হাতে ফিরিয়ে দেন না দেবী।ভক্তের কাতর প্রার্থনায় ঠিক সাড়া দেন দেবী পূরণ করেন প্রত্যেকের মনবাঞ্ছা।

জীবন্ত কালী শ্যামসুন্দরী রূপেও খ্যাত।

 

দীপান্বিতা অমাবস্যা উপলক্ষে বাংলার এমন সব প্রাচীন কালী মন্দিরের ইতিহাস নিয়ে চলতে থাকবে কালী কথা। যথা সময়ে ফিরে আসবো পরবর্তী পর্ব নিয়ে।পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

কালী কথা – আদি কালী মন্দির 

কালী কথা – আদি কালী মন্দির

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আসন্ন দীপান্বিতা অমাবস্যা উপলক্ষে আজ থেকে আবার শুরু করছি কালী কথা। ধারাবাহিক লিখবো বাংলার প্রসিদ্ধ কিছু কালী মন্দির নিয়ে। থাকবে। নানা অলৌকিক ঘটনা এবং ইতিহাস।

 

আজ শুরুতে বঙ্গোপ সাগরের মোহনায় অবস্থিত গঙ্গা সাগর দ্বীপ সংলগ্ন এক প্রাচীন কালী মন্দির।আলোচনা করবো।

 

একবার সাগরদ্বীপের এক বাসিন্দা মাকালীর স্বপ্নাদেশ পান। সেইমতো তিনি ঘন জঙ্গল পরিষ্কার করে একটি বট গাছের নিচে মন্দির তৈরি করে কালী মূর্তির প্রতিষ্ঠা করেন। এই মন্দির ছিলো সম্ভবত এই অঞ্চলের প্রাচীনতম কালী মন্দির তাই এই মন্দির আদি কালীমন্দির নামে পরিচিত।সেই থেকে ওই মন্দিরে কালী পুজাে হয়ে আসছে।

 

তবে সেই বট গাছের কিছু বিশ্বসত্ত্ব আছে।

সুন্দরবন সংলগ্ন সাগরদ্বীপ তখন ছিল ঘন জঙ্গলে ঢাকা। রুটি-রুজির টানে সুন্দরবনের উপকূলবর্তী এলাকার মানুষ এই দ্বীপে এসে কাঠ ও মধু সংগ্রহ করতেন। তখন জঙ্গলের হিংস্র জীবজন্তু এবং জল দস্যু দের হাত থেকে নিজেদের বাঁচাতে বন বিবির পুজোর পাশাপাশি এই বটবৃক্ষের তলায় কালী পূজা করে জঙ্গলে । তখন সেই স্থানে কোনো স্থায়ী মন্দির ছিলো না।স্বপ্নাদেশের পর তৈরী হয় মন্দির।

 

জাগ্রত এই কালীমন্দিরে মনস্কামনা জানাতে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বহু মানুষ ছুটে আসেন পুজো দিতে। প্রতিবছর কালীপুজোর দিন জাঁকজমকের সঙ্গে গঙ্গাসাগরে আদি কালীমন্দিরে পূজিতা হন মা কালী।শোনা যায় আদি কালী মন্দিরে করা মনোস্কামনা দ্রুত পূরণ হয়।

 

এই আদি কালী মন্দিরে নিত্য পুজোর ব্যবস্থা রয়েছে এছাড়াও প্রতি অমাবস্যা এবং

সপ্তাহে মঙ্গলবার ও শনিবার বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়। বংশ পরম্পরায় সেই শুরুর দিন থেকে মায়ের সেবা করে আসছেন এখানকার পুরোহিতরা।

 

এমন আরো প্রাচীন এবং প্রসিদ্ধ কালী মন্দিরের কথা হবে কালী কথায়।আবার ফিরে আসবো আগামী পর্বে।পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

দেবী লক্ষীর পৌরাণিক এবং শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা 

দেবী লক্ষীর পৌরাণিক এবং শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আজ দেবী লক্ষীর পুজোর দিন।লক্ষী পুজো উপলক্ষে আজ জানাবো দেবী লক্ষীর পৌরাণিক এবং শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা। জানাবো দেবী লক্ষীর আবির্ভাবএবং তার বিবাহ সম্পর্কে কিছু

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

 

দুর্বাসা মুনির শাপে স্বর্গ একদা শ্রীহীন বা লক্ষ্মী-ছাড়া হয়ে যায়। তখন বিষ্ণুর পরামর্শে স্বর্গের ঐশ্বর্য ফিরে পাবার জন্য দেবগণ অসুরদের সাথে নিয়ে সমুদ্র-মন্থন শুরু করেন। সেই ক্ষীর-সমুদ্র মন্থনের ফলে উঠে আসল নানা রত্ন, মণি-মাণিক্য, অমৃতসুধা আরও কত কি। এসব ছাড়াও সমুদ্র-মন্থনের ফলে উঠে আসলেন লক্ষ্মী দেবী এবং ঠাই পেলেন বিষ্ণুর বক্ষে।

 

শাস্ত্র মতে লক্ষী বিষ্ণুর স্ত্রী।স্কন্দ পুরানে নারায়ণ এবং লক্ষীর বিবাহের উল্লেখ আছে।লক্ষ্মী দেবী নারায়ণ বা বিষ্ণুকে পতি রূপে পাওয়ার জন্য সমুদ্রের মধ্যে প্রবেশ করে বহুকাল কঠোর তপস্যা করেন।তখন ইন্দ্রা বিষ্ণুর ছদ্মবেশে লক্ষ্মীর নিকট উপস্থিত হলে লক্ষ্মী দেবী তাকে বিশ্বরূপ দেখাতে বলেন। কারণ লক্ষ্মী দেবী জানতেন যে, একমাত্র বিষ্ণুই বিশ্বরূপ দেখাতে সক্ষম। অবশেষে বিষ্ণু দেবীকে তাঁর বিশ্বরূপ দেখালেন। তারপর তাদের বিবাহ সম্পন্ন হয়।

 

আবার লৌকিক মতে দেবী লক্ষী শিব দুর্গার সন্তান তাই দেবী দুর্গার সাথে মর্তে আসেন দূর্গা পুজোর সময়ে এবং বিজয়ার পর কোজাগরী পূর্ণিমায় দেবীর পুজো হয়। দেবী লক্ষী প্রসন্ন হলে অর্থ সম্পদ এবং সমৃদ্ধি লাভ হয়।

 

পুরান মতে কুবের ধন সম্পদের রক্ষাকর্তা তবে ধন সম্পদ বা ঐশর্য দেয়ার অধিকারিণী লক্ষী স্বয়ং। শাস্ত্র মতে লক্ষীর আশীর্বাদ এবং কৃপায় ধন সম্পদ লাভ হয়।

 

সবাই শাস্ত্র মতে দেবী লক্ষীর আরাধনা করুন।দেবী লক্ষীর কৃপায় সব অমঙ্গল এবং দারিদ্রতা দুর হবে। সবাইকে জানাই লক্ষী পুজোর শুভেচ্ছা।

 

ফিরে আসবো পরের পর্বে।আসন্ন কালী পুজো উপলক্ষে শুরু করবো কালী কথা। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।