Home Blog Page 5

অম্বুবাচীর কিছু বিধি নিষেধ

অম্বুবাচীর কিছু বিধি নিষেধ

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

অম্বুবাচী সংক্রান্ত নানা শাস্ত্রীয় বিধি নিষেধ বা নিয়ম কানুন আছে আজকের পর্বে জানাবো এই সব নিয়ম এবং সেগুলির অন্তর্নিহিত তাৎপর্য|

আসলে এই বিশেষ সময় ধরিত্রী যেহেতু ঋতুমতী হয় তাই লৌকিক আচার বা প্রথা গুলিকে সাময়িক ভাবে স্থগিত রাখা হয় এর পেছনে আছে বা বিশ্বাস, শ্রদ্ধা এবং হাজার হাজার বছরের প্রাচীন পরম্পরা সাথে শাস্ত্রীয় বিধান|যদিও চতুর্থ দিন অম্বুবাচির নিভৃতির পর থেকে শুভ কাজে আর কোনো রকম বাধা থাকেনা।

শাস্ত্র মতে অম্বুবাচীর প্রথম তিন দিন কৃষি কাজ ছাড়াও আরো অনেককিছুই করা নিষেধ। এই সময় কোনো শুভ বা মাঙ্গলিক কাজের সূচনা করা হয়না যেমন বিবাহ,অন্নপ্রাসন গৃহ প্রবেশ বা মন্দিরের স্বাভাবিক পূজাঅর্চনা ইত্যাদি|

আদি শক্তির বিভিন্ন রূপকে যারা পূজা করেন অর্থাৎ কালী, চন্ডি, দূর্গা জগদ্ধাত্রী ইত্যাদি তারা দেবীমূর্তি কে একটি লাল কাপড়ে ঢেকে রাখতে পারেন।এই সময় দেবী মূর্তিকে স্পর্শ করা বা মন্ত্রউচ্চারণ করা উচিৎ নয়|গৃহী রা এই সময় কয়েকটি নিয়ম মেনে চললে গৃহের কল্যাণ হয় যেমন নতুন বৃক্ষ রোপন না করা বা দাম্পত্য জীবনে সংযম এবং শুদ্ধতা বজায় রাখা ইত্যাদি।

গ্রাম বাংলার বহু স্থানে নিষ্ঠার সাথে অম্বুবাচী পালন করা হয়|সাধারণত বিধবা মহিলারা অম্বুবাচী চলা কালীন আগুন জ্বালিয়ে খাবার রান্না করেন না|যারা ব্রহ্মচর্য পালন করেন তাদের এই সময় আমিষ খাবার বর্জন করে মূলত ফল মুল খেয়ে থাকতে হয়|এই কটাদিন বেদ পাঠ করা যায়না এবং উপনয়ন অনুষ্ঠান করা যায়না|অম্বুবাচীর আগের দিনটিকে বলা হয় ‘অম্বুবাচী প্রবৃত্তি’। তিন দিনের পরের দিনটিকে বলা হয় ‘অম্বুবাচী নিবৃত্তি’ যার পর আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার সূচনা হয় ধীরে ধীরে|

আবার তন্ত্র বা জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে অম্বুবাচী নিবৃত্তির সময় তন্ত্র সাধনা এবং শাস্ত্র মতে
গ্রহ দোষ খণ্ডনের উপযুক্ত সময়।

আগামী পর্বে আবার অম্বুবাচি সংক্রান্ত একটি বিশেষ পর্ব নিয়ে আপনাদের সামনে আসবো।
চলতে ধারাবাহিক এই শাস্ত্রীয়
আলোচনা। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

বৈকুণ্ঠ পুরের অম্বুবাচী উৎসব

বৈকুণ্ঠ পুরের অম্বুবাচী উৎসব

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

শুধু আসাম বা কামাখ্যা নয়। বাংলার বৈকুণ্ঠ পুরে বহু কাল ধরে অম্বুবাচী উৎসব পালন হয়। এই পুজোর রয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্য এবং ইতিহাস। আজকের পর্ব এই পুজোর ইতিহাস নিয়ে।

 

জলপাইগুড়ি জেলার তিস্তা নদীর দু’পার জুড়ে দেবী চৌধুরানী কে নিয়ে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য লোককথা । এখানে যেমন রয়েছে প্রাচিন বনদুর্গার পুজো, তেমনই রয়েছে ফালাকাটা, তুলাকাটা, ঢেনাকাটার পুজো। যা মূলত রাজবংশী সমাজের কৃষকেরাই করে থাকে এবং এই সব স্থানে অম্বুবাচীতে বিশেষ কিছু উপাচার অনুষ্ঠিত হয়।

 

শোনা যায় একবার শিব ঠাকুর কৈলাশ থেকে মর্তে এসে এই স্থানে লুকিয়ে ছিলেন এবং দেবী পার্বতী এই অঞ্চল থেকে শিবকে খুঁজে বের করতে মেছেনি রুপ ধারন করেছিলেন।

 

আবার প্রতি বছর আষাঢ় মাসে অম্বুবাচির পরের সপ্তাহে তিস্তা নদীর পথ ধরে জলপাইগুড়ি বৈকুন্ঠপুরে বজরায় চেপে আসতেন দেবী চৌধুরানী এবং পুজো সেরে উৎসব পালন করে আবার ফিরে যেতেন।

 

অম্বুবাচী নিবৃত্তির পর গ্রামের কৃষকরা এখানে পুজো দেন এবং তারপর আবার কৃষি কাজ শুরু করেন।একশো বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসছে এই পূজো। স্থানীয় কৃষকেরা এই পুজো না দিয়ে আমন ধান চাষ করেন না।এখানে অম্বুবাচীই প্রধান উৎসব সব অত্যন্ত পবিত্র এই সময়।

 

ফিরে আসবো ধারাবাহিক অম্বুবাচী সংক্রান্ত আলোচনা নিয়ে আবার আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

অম্বুবাচীর সূচনা

অম্বুবাচীর সূচনা

পন্ডিতজি ভৃগুর শ্রীজাতক

আষাঢ় মাসে মৃগশিরা নক্ষত্রের তিনটি পদ শেষ হলে অম্বুবাচী কালের সূচনা হয় হন|শুরুর দিনটি অম্বুবাচী প্রবৃত্তি ও ও শেষের দিনটি হলো অম্বুবাচী নিবৃত্তি। আগামী ২২ এ জুন থেকে ২৬ এ জুন থাকবে অম্বুবাচী।

সনাতন ধর্মে পৃথিবী কোনো জড় বস্তু নয় বসুন্ধরাকে কে আমরা এক দেবী বা মাতৃ রূপে দেখি ও পূজা করি তাই স্বাভাবিক ভাবেই এক নারী যেমন প্রকৃতির নিয়ম মেনে ঋতুমতী হয় ধরিত্রী ও নিদ্দিষ্ট সময়ে ঋতুমতী হয়।জীবন চক্রের এই বিশেষ পর্যায়কেই অম্বুবাচি বলা হয়।

প্রকৃতি মাকে সন্মান জানিয়ে এই সময়ে কৃষকরা কৃষি কাজ থেকে বিরত থাকেন ও ধরিত্রী কে বিশ্রাম দেন|আবার অম্বুবাচী উপলক্ষে উড়িষ্যায় ভূদেবীর বিশেষ পূজা মেলা ও উৎসবের আয়োজন করা হয় ও ব্যাপক জন সমাগম হয়|ভূদেবী কে উড়িষ্যায় স্বয়ং জগন্নাথ দেবের স্ত্রী হিসেবে কল্পনা করা হয় এবং তার ঋতুমতী হওয়ার সময় কাল কে চারদিনের রজ উৎসব হিসেবে পালন করা হয়।

দেশ তথা বাংলার প্রায় সব গুলো শক্তি পীঠেই নিষ্ঠার সাথে অম্বুবাচী পালন হয় ও সেই উপলক্ষে বিশেষ উৎসব এবং কোথাও কোথাও মেলার আয়োজন করা হয়|অম্বুবাচি সর্বাধিক জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে পালন করা হয় আসামে|দেশের অন্যতম শক্তি পীঠ কামরূপ কামাখ্যায় অম্বুবাচী একটি মহোৎসবের রূপ নেয়|

কামাখ্যার অম্বুবাচী পালন নিয়ে আছে অসংখ্য রহস্য, কিংবদন্তি ও গল্প যার সাথে জড়িয়ে আছে সনাতন ধর্মের বহু গূঢ় তত্ত্ব|সে সব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো আগামী পর্বগুলিতে।থাকবে অম্বুবাচি সংক্রান্ত নানা শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা এবং তথ্য।
পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

জয় জগন্নাথ – বলরামের কথা

জয় জগন্নাথ – বলরমের কথা

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

পুরীতে একত্রে অবস্থান করছেন ত্রিমূর্তি জগন্নাথ বলরাম এবং সুভদ্রা। আগের পর্বে সুভদ্রা কে নিয়ে আলাদা ভাবে আলোচনা করেছি। আজ জানাবো বলরামের কথা।

 

বলরাম হলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা এবং সর্পদেবতা শেষ নাগের অবতার রূপে

বিবেচিত হন।তাঁকে বলদেব বা বলভদ্র নামেও ডাকা হয়।

 

বলরাম বাসুদেব এবং দেবকীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করলেও বাসুদেবের আরেক স্ত্রী রোহিণী তাঁকে বড়ো করে তোলেন এবং বলরামকে এই কারণে ” রোহিণী পুত্র ও বলা হয়।পরবর্তীতে তাঁর বিবাহ হয়

রাজকুমারী রেবতীর সাথে।

 

শৈশব থেকেই বলরাম সর্বদা কৃষ্ণের পাশে থেকেছেন এবং বৃন্দাবনের কৃষ্ণের বহু বাল্য লীলায় অংশ নিয়েছেন।ধেনুকাসুর নামে এক শক্তিশালী দৈত্যকে বধ করে বলরাম জীব জন্তু এবং প্রকৃতিকে রক্ষা করে ছিলেন।পুরানে পাওয়া বর্ণনা অনুযায়ী বলরাম অত্যন্ত শক্তিশালী ছিলেন এবং কৃষিকাজ ভালোবাসতেন। প্রায়শই তাকে লাঙ্গল ধরে থাকতে দেখানো হয়। শ্রী কৃষ্ণর সাথে যেমন সুদর্শন চক্র এবং বাঁশি থাকে তেমনই বলরামের সাথে থাকে লাঙ্গল।

 

বলরাম মহাভারতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি গদাযুদ্ধের একজন মহান শিক্ষক ছিলেন এবং দুর্যোধন এবং ভীম উভয়কেই গদা দিয়ে যুদ্ধ শিখিয়ে ছিলেন।তবে তিনি শান্তিতে বিশ্বাস করতেন এবং যুদ্ধে অংশ নিতে চাননি।

তাই কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শুরু হলে তিনি

অন্তরালে চলে যান।

 

পুরী ধামে বলরাম বন সুভদ্রা এবং ভ্রাতা কৃষ্ণের সাথে বিরাজমান। রথ যাত্রায় নিজের স্বতন্ত্র রথে আরোহন করে তিনি জগন্নাথের সাথেই

তাঁর ভক্তদের দর্শন দেন।

 

আবার রথ যাত্রা উপলক্ষ্যে ফিরে আসবো জগন্নাথ প্রসঙ্গে আলোচনা নিয়ে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

জয় জগন্নাথ – সুভদ্রার কথা

জয় জগন্নাথ – সুভদ্রার কথা

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

পুরীতে প্রভু জগন্নাথ একা নন ভ্রাতা বলরাম এবং ভগ্নি সুভদ্রাও তার সাথে বিরাজ করছেন এবং প্রভু জগন্নাথের বিভিন্ন লীলাতে তারাও লীলা সঙ্গী।রথ যাত্রাতেও তিন জন নিজ নিজ রথে আরোহন করেন।তাই জগন্নাথদেবকে নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি বলরাম এবং সুভদ্রা সম্পর্কেও আলাদা করে আলোচনা করতে হয়।আজকের পর্ব জগন্নাথদেবের ভগ্নি সুভদ্রা কে নিয়ে।

 

মহাভারতে এবং পুরাণে সুভদ্রার উল্লেখ পাওয়া যায়।কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের বীরযোদ্ধা অভিমন্যুর জন্মদাত্রী মা তিনি। কৃষ্ণ ও বলরামের ছোট বোন সুভদ্রাকে বিয়ে করেছিলেন তৃতীয় পাণ্ডব অর্জুন। সুভদ্রা ও অর্জুনের পুত্র অভিমন্যু চক্রব্যুহ ভেদ করে সপ্তরথীর সঙ্গে একা বীরের মতো যুদ্ধ করে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন।

 

আবার পুরাণ মতে সুভদ্রা হলেন যোগমায়া।

জন্মের পর কৃষ্ণকে কংসের কারাগার থেকে সরিয়ে ফেলতে গোকূলে যান বসুদেব। সেখানে যশোদার পাশ থেকে যোগমায়াকে নিয়ে এসে সেখানে কৃষ্ণকে শুইয়ে দেয়া হয় । যোগমায়াকে কংসের কারাগারে দেবকীর পাশে শুইয়ে দেন। কংস এসে যোগমায়াকে কৃষ্ণ মনে করে নিধন করতে উদ্যত হলে তাঁর হাত ছাড়িয়ে আকাশে মিলিয়ে যান তিনি। যাওয়ার আগে কংসকে বলে যান তার নিধনকারী গোকুলে বেড়ে উঠছে।

 

এই যোগমায়াই আসলে সুভদ্রা রূপে কৃষ্ণের ভগ্নি হয়ে ফিরে আসেন।বসুদেব ও তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী রোহিনীর সন্তান হয়ে জন্ম নেন এবং প্রভু জগন্নাথ এবং বলরামের সাথে শ্রী খেত্র পুরীতে

বিরাজ করছেন।

 

আবার যথা সময়ে প্রভু জগন্নাথ সংক্রান্ত

আরো অনেক পৌরাণিক এবং শাস্ত্রীয় তথ্য নিয়ে

ফিরে আসবো। পড়তে থাকুন। ভালো থাকুন।

ধন্যবাদ।

প্রভু জগন্নাথের সঙ্গে কোহিনূরের সম্পর্ক

প্রভু জগন্নাথের সঙ্গে কোহিনূরের সম্পর্ক

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আগের একটি পর্বে প্রভু জগন্নাথের ঐশর্য প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে কোহিনুরের উল্লেখ করে ছিলাম। জানিয়ে ছিলাম কোহিনুর হীরা প্রভু জগন্নাথের সম্পত্তি হওয়া সত্ত্বেও প্রভুর অধীনে তা নেই। আজকের পর্বে বিস্তারিত ভাবে জানাবো কেনো এমনটা হলো।কি সেই ইতিহাস।

 

গোলকুণ্ডায় আবিষ্কার হওয়ার পর কোহিনুর বিভিন্ন শাসক দের হাত ধরে মুঘল দিল্লি, পারস্য এবং আফগানিস্তানে পৌঁছেছিল তারপর ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে শিখ সাম্রাজ্যের প্রথম শাসক মহারাজা রঞ্জিত সিং কোহিনুর অধিকার করেন

 

মহারাজা রঞ্জিত সিং 1839 সালে তাঁর মৃত্যুর আগে হীরাটি পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে পাঠানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু মহারাজার অধীনে থেকেও পাঞ্জাবের তৎকালীন কিছু ক্ষমতাবান ব্যাক্তি এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন।

আবার কিছু ইতিহাস বইয়ে মহারাজা রঞ্জিত সিং কর্তৃক পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের কাছে কোহিনূর বন্ধক রাখার উল্লেখ রয়েছে।

 

মহারাজ রঞ্জিত সিংহ তার ইচ্ছে প্রকাশ করে কোহিনুরকে জগন্নাথ মন্দিরে দান করার জন্য একটি উইল ও লেখেন যাকে ভিত্তি করে আজও পুরীর মন্দির কতৃপক্ষ কোহিনুর তাদের বলে দাবী করে আসছেন এবং সেই সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় আইনি লড়াই লড়তেও তারা প্রস্তুত।

রুঞ্জিত সিংহ নিজেই মারা যান তার এই শেষ ইচ্ছে অপূর্ন রেখে এবং রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে তার নাবালক উত্তরাধিকার রাজা দিলীপ সিংহর হাত থেকে কোহিনুর এক প্রকার ছিনিয়ে নেয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীরা।তবে খাতায় কলমে আনুষ্ঠানিক ভাবে ইংল্যান্ডের রানী কোহিনুর উপহার হিসেবে পান।

 

শিখ সম্প্রদায়ের সাথে জগন্নাথ দেবের সম্পর্ক বেশ প্রাচীন যা গুরু নানকের সময়ে শুরু হয়।

শোনা যায় গুরু নানক একবার জগন্নাথ মন্দির দর্শন করতে এসেছিলেন এবং অন্য ধর্মের হওয়ায় তিনি প্রবেশেধিকার পাননি। পরে পুরীর সমুদ্র সৈকতে তারা যখন অভুক্ত অবস্থায় ছিলেন তখন প্রভু জগন্নাথ তাদের নিজের ভোগ পাঠিয়ে তাদের সেবা করেন। তারপরে গুরু গোবিন্দ সিংয়ের সময়েও শিখ ধর্মের মানুষরা জগন্নাথের বিশেষ কৃপার পাত্র ছিলেন। আজও সেই পরম্পরা চলছে। তাই মহারাজা রঞ্জিত সিং তার দখলে থাকা সবচেয়ে দামি রত্ন কোহিনূরকে পুরী জগন্নাথ মন্দিরে দিয়ে যেতে চেয়েছিলেন।এতে তার প্রভু জগন্নাথের প্রতি ভক্তি এবং আস্থা প্রকাশ পায়।

 

এমন বহু রহস্য এবং অজানা ইতিহাস আছে পুরীর মন্দিরকে কেন্দ্র করে। রথ যাত্রা উপলক্ষে আবার এক বিশেষ পর্ব নিয়ে আগামী পর্বে ফিরে আসবো। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

জয় জগন্নাথ – জগন্নাথদেবের জ্বর এবং চিকিৎসা

জয় জগন্নাথ – জগন্নাথদেবের জ্বর এবং চিকিৎসা

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

জগন্নাথ ধাম এবং প্রভু জগন্নাথের দৈনন্দিন জীবন যাপন নিয়ে রয়েছে হাজারো রহস্য। তার ভোগ, সাজসজ্জা,শয়ন এবং রথ যাত্রা সব কিছুতেই রয়েছে একাধিক রহস্য ঠিক স্নানের পর জ্বর আসা বিশ্রাম এবং অসুখের চিকিৎসা নিয়েও অনেক জনশ্রুতি রয়েছে। আজকের পর্বে জানাবো স্নান যাত্রার পর কি কি ঘটে।

 

আগেই বলেছি প্রতি বছর জ্যেষ্ঠ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে জগন্নাথ নিজের ভাই এবং বোনের সঙ্গে একশো আট টি কলসির জলে পবিত্র স্নান করেন।যে স্নান যাত্রা কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হলো। এই সময়ে স্নানের কারন গ্রীষ্মের প্রচন্ড দাবদাহ থেকে সুরক্ষিত থাকা। তবে অত্যধিক স্নানের কারণে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা অসুস্থ হয়ে পড়েন।

অতিরিক্ত শীতলতার জন্য জ্বর আসে তাদের।

 

জগন্নাথ দেব বাল্য রূপে পুরীধামে বিরাজমান তাই এই সময়ে অসুস্থ্য বালকের ন্যায় তাদের সেবা করা হয় এবং সুস্থ্য করে তোলা হয়।

 

এই সময়ে একান্তবাসে থাকতে হয় তাঁদের।এই সময়ে পনেরো দিনের জন্য মন্দির বন্ধ করে দেওয়া হয়। কয়েকজন বৈদ্য এই সময়ে ভগবানের চিকিৎসা করেন। অসুস্থ হয়ে পড়ার পর রত্নজড়িত বস্ত্রের পরিবর্তে সুতির শ্বেত বস্ত্র পরিধান করেন তাঁরা। রত্ন এবং স্বর্ণ নির্মিত আভুষণও খুলে রাখা হয়।প্রতিদিনের ভোগের পরিবর্তে ভোজনে দেওয়া হয় ফল, ফলের রস, তরল পদার্থ। পঞ্চম দিন বড় ওড়িয়া মঠ থেকে ফুলেরি তেল আসে, যা দিয়ে হাল্কা মালিশ করা হয়। এর পর রক্তচন্দন ও কস্তুরির প্রলেপ লাগানো হয়। এ সময় তাঁকে হাল্কা খাবার, যেমন, দুধ, ফলের রস ও কয়েকটি আয়ুর্বেদিক ওষুধ খাওয়ানো হয় রুগী পথ্য রূপে।

 

প্রভু আরেকটু সুস্থ্য হয়ে উঠলে দশম দিনে তাঁকে নীম, হলুদ, বহেড়া, লবঙ্গ ইত্যাদি জড়িবুটির জল দিয়ে নরম মোদক বানিয়ে খেতে দেওয়া হয়।

 

রথযাত্রার একদিন আগে, জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রা সুস্থ হয়ে উঠলে তাঁদের মন্দিরের গর্ভগৃহে ফিরিয়ে আনা হয় এবং রাজ রাজকীয় সাজে সাজানো হয়। তারপর তাঁরা রথ যাত্রার জন্য বেড়িয়ে পড়েন।

 

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান ও সংক্রমক ব্যাধির খেত্রে চোদ্দ দিনের একান্ত বাসের কথা বলে। সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে প্রভু জগন্নাথের এই চোদ্দ দিনের একান্ত বাস এবং জ্বরের চিকিৎসা যথেষ্ট তাৎপর্য পূর্ণ।

 

জগন্নাথদেব সংক্রান্ত আরো অনেক এমন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে ফিরে আসবো আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

জয় জগন্নাথ – জগন্নাথদেবের ভোগ 

জয় জগন্নাথ – জগন্নাথদেবের ভোগ

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

জগন্নাথদেব ভোজন রসিক সব পুরীধাম ভোগের জন্য বিখ্যাত।পুরীর মন্দিরে জগন্নাথের ভোগ নিবেদন নিয়ে আছে অনেক পৌরাণিক ঘটনা অনেক ইতিহাস এই মন্দিরে ভোগ রান্না থেকে ভোগ নিবেদন সবেতেই আছে অভিনবত্ত্ব। সেই সব নিয়েই আজকের পর্ব।

 

শাস্ত্রে আছে ভগবান বিষ্ণু মর্ত্যলোকে এসে চার ধামে যাত্রা করেন। এই চার ধাম হল- বদ্রীনাথ ধাম,দ্বারিকা ধাম,পুরী ধাম এবং রামেশ্বরম। প্রথমে হিমালয়ের শিখরে অবস্থিত বদ্রীনাথ ধামে স্নান করেন,তারপর গুজরাটের দ্বারিকা ধামে গিয়ে বস্ত্র পরিধান করেন, ওড়িশার পুরী ধামে ভোজন করেন আর সবশেষে রামেশ্বরমে গিয়ে বিশ্রাম নেন।ভগবানের ভোজনের স্থান রূপে পুরীর ভোগের কিছু বিশেষত্ব থাকবে সেটাই স্বাভাবিক।

 

পুরীতে জগন্নাথকে অর্পণ করা হয় ছাপান্ন ভোগ।

যশোদা মা বালক শ্রী কৃষ্ণকে ছাপান্ন ভোগ অর্পণ করেছিলেন। শ্রী কৃষ্ণই কলি যুগে জগন্নাথ রূপে বিরাজমান তাই জগন্নাথদেবকেও ছাপান্ন ভোগ অর্পণ করা হয়।

 

সারাদিনের ভোগে থাকে নানা বৈচিত্র।জগন্নাথ খিচুড়ি খেতে ভালো বাসেন তাই তার জন্য বিশেষ খিচুড়ি তৈরী হয় এছাড়া জগন্নাথদেবকে দেওয়া হয় খই, চিঁড়ে, বাতাসা, মাখন, মিছরি, কলা, দই এবং নারকেল কোরা। এরপর দেওয়া হয় রাজা ভোগ। এই তালিকায় থাকে মিষ্টি চালের খিচুড়ি, ডাল, তরকারি, ভাজা এবং পিঠেপুলি। দুপুরের ভোগ মূলত অন্নভোগ। সেখানে থাকে ভাত, ডাল, শুক্তো, তরকারি ও পরমাণ্ণ। এছাড়াও থাকে ক্ষীর ও মালপোয়া। সন্ধেবেলায় দেওয়া হয় লেবু, দই দিয়ে মাখা পান্তাভাত। সঙ্গে খাজা, গজা এবং নানা ধরনের মিষ্টি। শয়নের আগে দেয়া হয় ডাবের জল। ছাপ্পান্ন ভোগের মধ্যে থাকে নানা রকম মিষ্টি। নানা রকম ভাত এবং পীঠে পুলী।

 

জগন্নাথ মন্দিরের একাংশেই হয়েছে বড় রান্নাঘর। সেখানে রয়েছে ৭৫২ টি উনুন, সেখানে এই ভোগ রান্নার কাজ করেন ৩০০-রও বেশি রাঁধুনি। এরাই বংশ পরম্পরায় যুগ যুগ ধরে ভোগ রান্না করেন।

রান্নার প্রক্রিয়াও বেশ মজার। মন্দিরের রান্নাঘরে একটি পাত্রের উপর আর একটি পাত্র এমন করে মোট ৭টি পাত্র আগুনে বসানো হয় রান্নার জন্য। এই পদ্ধতিতে যে পাত্রটি সবচেয়ে উপরে বসানো থাকে তার রান্না সবার আগে হয়। তার নিচে তারপরে রান্না হয় তাছাড়া পুরী মন্দিরের প্রতিদিন সমপরিমাণ প্রসাদ রান্না করা হয়। কিন্তু ওই একই পরিমাণ প্রসাদ দিয়ে কয়েক হাজার বা কয়েক লক্ষ মানুষ সকলেরই পেট ভরে যায়।প্রসাদ কখনও কম পড়ে না বা নষ্ট হয় না।

পুরীর মন্দিরে ভোগ গ্রহণ অত্যান্ত সৌভাগ্যর বিষয় এতে প্রভু জগন্নাথের আশীর্বাদ লাভ হয়।

 

চলতে স্নান যাত্রা রথযাত্রা উপলক্ষে

জগন্নাথদেব প্রসঙ্গে আলোচনা।

ফিরে আসবো আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

জয় জগন্নাথ – প্রভু জগন্নাথের ঐশর্য্য

জয় জগন্নাথ – প্রভু জগন্নাথের ঐশর্য্য

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

পুরীর জগন্নাথদেব শুধু পুরীর নয় সমগ্র জগতের নাথ। স্বাভাবিক ভাবেই প্রভু জগন্নাথের রয়েছে অগাধ সম্পত্তি। সেই তালিকায় রয়েছে বহু মূল্য হীরে, মূল্যবান অনেক রত্ন, সোনার এবং রুপোর নানা রকম অলংকার।শুধু জগন্নাথ নন বলরাম এবং সুভদ্রার ও রয়েছে নিজস্ব রত্ন ভান্ডার।

আজকের পর্বে প্রভু জগন্নাথের সেই বিপুল ধনভান্ডার নিয়ে লিখবো।

 

মন্দিরের অভ্যন্তরে কয়েকটি বিশেষ কক্ষে এই অতুল ঐশর্য রাখা আছে। সেখানে বাইরের কারুর প্রবেশের অধিকার নেই।বহুকাল এই রত্ন ভাণ্ডারের সমীক্ষা বা হিসেবে নিকেশ হয়নি। ভারত সরকার একবার উদ্যোগ নিয়ে রত্ন ভাণ্ডারের সমীক্ষা করান তাতে জগন্নাথের অতুল ঐশর্যর কিছুটা জন সমক্ষে বলে ধারণা।

 

বিশেষ বিশেষ সময়ে প্রভুর মাথায় ব্রহ্মজ্যোতি হীরা শোভা পায়।সেই হীরের জ্যোতি কি কেউ খালি চোখে সইতে পারেনা।এছাড়া বলরামের মাথার নীলা বা সুভদ্রার মাথার মানিক, সবই রত্নভান্ডারে গচ্ছিত আছে।বিশেষ বিশেষ সময়ে প্রভুকে সোনার গয়নায় সাজানোর জন্য তার রত্ন ভান্ডার থেকে গহনা বের করে আনা হয় তবে তারও একটা নিদ্দিষ্ট পক্রিয়া আছে।

 

পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের সিংহদুয়ারের ঠিক সামনে ইমার মঠ। সেখান থেকে একাধিক বার উদ্ধার হয়েছে গুপ্তধন।২০১১-তে ও ২০২১-এ, পরপর দু’বার এই মঠ থেকে পাওয়া যায় কয়েক কোটি টাকার সম্পদ।উদ্ধার হয় অন্তত ৫০০ রূপোর বাট।

 

তবে প্রভু জগন্নাথের সব চেয়ে মূল্যবান এবং আলোচিত সম্পদ হলো জগৎ বিখ্যাত কোহিনুর হীরা যা খাতায় কলমে জগন্নাথ দেবের সম্পত্তি হলেও তা আজও জগন্নাথ দেবের অধিকারে আসেনি। কারন কোহিনুরের মালিক মহারাজা রঞ্জিত সিংহ জগন্নাথ দেব কে কোহিনুর অর্পণ করার কথা ঘোষণা করলেও কোহিনুর জগন্নাথ চরণে অর্পণ করার আগেই তার মৃত্যু হয় এবং কোহিনুর চলে যায় ব্রিটিশ সরকারের হাতে।

তবে সমগ্র জগৎ সংসারের সম্পূর্ণ ঐশর্যর অধিকারী প্রভু জগন্নাথ তাই তার জাগতিক সম্পত্তি কি আছে কি নেই সেটা বড়ো কথা নয়। ভক্তের ভক্তি এবং সেবাই তার কাছে সব চেয়ে দামী এবং কাঙ্খিত।

 

আসন্ন রথ যাত্রা উপলক্ষে চলতে থাকবে জগন্নাথদেব এবং পুরীর ধাম নিয়ে শাস্ত্রীয় আলোচনা। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন।ধন্যবাদ।

জয় জগন্নাথ – প্রভু জগন্নাথের আশ্চর্য্য লীলা

জয় জগন্নাথ – প্রভু জগন্নাথের আশ্চর্য্য লীলা

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

স্নান যাত্রা পর্ব মিটে গেছে। প্রভু জগন্নাথ এখন বিশ্রামে আছেন। নিদ্দিষ্ট দিনে তিনি রাজকীয় রথে চেপে তার অগণিত ভক্ত দের সাথে মিলিত হবেন।

গুরুত্বপূর্ণ এই সময়ে আজ আরো একটি জগন্নাথ লীলা আমি আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি।

 

একবার এক দরিদ্র জগন্নাথ ভক্ত তার মালিকের কাছে কাছে শ্রীজগন্নাথ ধাম যাত্রার জন্য ছুটি চাইলেন।তার মালিক ও ছিলেন জগন্নাথের ভক্ত।

তিনি কর্মচারীকে ছুটি দিতে রাজি হলেন এবং বললেন। আমি তো ব্যবসায়ী মানুষ, সব সময় ব্যাবসার কাজে ব্যস্ত থাকি তার কারনে জগন্নাথ দর্শনের সুযোগ হয় না। তুমি একশো টাকা আমার নামে প্রভু জগন্নাথদেবের চরণ সেবায় অর্পণ করো।কর্মচারী টাকা নিয়ে বিদায় হলো।

 

কিছুদিন পর সে পুরী পৌছালো এবং মন্দিরে যাওয়ার সময় সে রাস্তায় দেখলো অনেক সাধুসন্ত, ভক্তজন। সংকীর্তনে মত্ত।তারা ক্ষুদার্থ এবং ক্লান্ত কিন্তু খাদ্য বা জল নেই।সে মালিকের দেয়া একশো টাকা থেকে আটানব্বই টাকা খরচা করে ফেললো সেই বৈষ্ণবদের সেবায়।বাকি দুটাকা সে জগন্নাথ দর্শন করে প্রভুর সেবায় অর্পণ করলো।

 

সেই রাতে মালিককে জগন্নাথদেব স্বপ্নে দেখা দিলেন আর বললেন তোমার ৯৮ টাকা আমি পেয়েছি,এই বলে জগন্নাথদেব অন্তর্ধান হয়ে গেলেন। মালিক জেগে গেল আর ভাবতে লাগলো, আমার কাজের লোক খুব সৎ আর বিশ্বাসী। তাও সে দুটাকা কম দিলো কেনো।কিছুদিন পর সেই ব্যক্তি মালিকের কাছে ফিরে আসলো।

মালিক স্বপ্নের কথা বললে সে সব ঘটনা খুলে বললো। জানালো ৯৮ টাকা দিয়ে সাধুসন্তদের সেবা করিয়েছে আর দুই টাকা জগন্নাথদেবের চরণে অর্পন করেছে।

 

মালিক সব বুঝে খুশি হয়ে বললো তুমি ধন্য তোমার জন্য আমি প্রভুকে ঘরে বসে দর্শন করতে পেরেছি।এও বুঝতে পেরেছি ভগবানের আসলে কোনো ধনের প্রয়োজন নেই।তিনি ওই ৯৮ টাকা স্বীকার করলেন কারণ, ওটা যে ভক্তের সেবাতে লেগেছে।কারণ ভক্তের হৃদয়ে ভগবানের বাস।

 

আবার প্রভু জগন্নাথের অন্য এক লীলা নিয়ে ফিরে আসবো আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।