প্রভু জগন্নাথের সঙ্গে কোহিনূরের সম্পর্ক

26

প্রভু জগন্নাথের সঙ্গে কোহিনূরের সম্পর্ক

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আগের একটি পর্বে প্রভু জগন্নাথের ঐশর্য প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে কোহিনুরের উল্লেখ করে ছিলাম। জানিয়ে ছিলাম কোহিনুর হীরা প্রভু জগন্নাথের সম্পত্তি হওয়া সত্ত্বেও প্রভুর অধীনে তা নেই। আজকের পর্বে বিস্তারিত ভাবে জানাবো কেনো এমনটা হলো।কি সেই ইতিহাস।

 

গোলকুণ্ডায় আবিষ্কার হওয়ার পর কোহিনুর বিভিন্ন শাসক দের হাত ধরে মুঘল দিল্লি, পারস্য এবং আফগানিস্তানে পৌঁছেছিল তারপর ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে শিখ সাম্রাজ্যের প্রথম শাসক মহারাজা রঞ্জিত সিং কোহিনুর অধিকার করেন

 

মহারাজা রঞ্জিত সিং 1839 সালে তাঁর মৃত্যুর আগে হীরাটি পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে পাঠানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু মহারাজার অধীনে থেকেও পাঞ্জাবের তৎকালীন কিছু ক্ষমতাবান ব্যাক্তি এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন।

আবার কিছু ইতিহাস বইয়ে মহারাজা রঞ্জিত সিং কর্তৃক পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের কাছে কোহিনূর বন্ধক রাখার উল্লেখ রয়েছে।

 

মহারাজ রঞ্জিত সিংহ তার ইচ্ছে প্রকাশ করে কোহিনুরকে জগন্নাথ মন্দিরে দান করার জন্য একটি উইল ও লেখেন যাকে ভিত্তি করে আজও পুরীর মন্দির কতৃপক্ষ কোহিনুর তাদের বলে দাবী করে আসছেন এবং সেই সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় আইনি লড়াই লড়তেও তারা প্রস্তুত।

রুঞ্জিত সিংহ নিজেই মারা যান তার এই শেষ ইচ্ছে অপূর্ন রেখে এবং রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে তার নাবালক উত্তরাধিকার রাজা দিলীপ সিংহর হাত থেকে কোহিনুর এক প্রকার ছিনিয়ে নেয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীরা।তবে খাতায় কলমে আনুষ্ঠানিক ভাবে ইংল্যান্ডের রানী কোহিনুর উপহার হিসেবে পান।

 

শিখ সম্প্রদায়ের সাথে জগন্নাথ দেবের সম্পর্ক বেশ প্রাচীন যা গুরু নানকের সময়ে শুরু হয়।

শোনা যায় গুরু নানক একবার জগন্নাথ মন্দির দর্শন করতে এসেছিলেন এবং অন্য ধর্মের হওয়ায় তিনি প্রবেশেধিকার পাননি। পরে পুরীর সমুদ্র সৈকতে তারা যখন অভুক্ত অবস্থায় ছিলেন তখন প্রভু জগন্নাথ তাদের নিজের ভোগ পাঠিয়ে তাদের সেবা করেন। তারপরে গুরু গোবিন্দ সিংয়ের সময়েও শিখ ধর্মের মানুষরা জগন্নাথের বিশেষ কৃপার পাত্র ছিলেন। আজও সেই পরম্পরা চলছে। তাই মহারাজা রঞ্জিত সিং তার দখলে থাকা সবচেয়ে দামি রত্ন কোহিনূরকে পুরী জগন্নাথ মন্দিরে দিয়ে যেতে চেয়েছিলেন।এতে তার প্রভু জগন্নাথের প্রতি ভক্তি এবং আস্থা প্রকাশ পায়।

 

এমন বহু রহস্য এবং অজানা ইতিহাস আছে পুরীর মন্দিরকে কেন্দ্র করে। রথ যাত্রা উপলক্ষে আবার এক বিশেষ পর্ব নিয়ে আগামী পর্বে ফিরে আসবো। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।