Home Blog Page 12

শিব মাহাত্ম – লিলুতিনাথ শিব

শিব মাহাত্ম – লিলুতিনাথ শিব

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

শ্রাবন মাস উপলক্ষে শিব মাহাত্মতে ভারতের প্রাচীন শিব মন্দির গুলো নিয়ে আলোচনা করছি।আজকের পর্বে লিলুতিনাথ শিব মন্দির

ভারতের উত্তর প্রদেশে অবস্থিত এই লিলুতিনাথ শিব মন্দির,মন্দিরটি, রয়েছে ইউপির পিলভিট নামক স্থানে।বেশ কয়েকটি কারনে এই মন্দির বেশ রহস্যময় যার মধ্যে সবার প্রথমে বলতে হয় শিব লিঙ্গের রঙ পরিবর্তন|

এটি বিশ্বাস করা হয় যে এই মন্দিরের শিবলিঙ্গ সূর্যের রশ্মির সঙ্গে সঙ্গে দিনে তিনবার তার রঙ পরিবর্তন করেন, প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে এই ধারণা কোনো গুজব নয় একেবারেই সত্যি,এই মন্দিরে শিবলিঙ্গের রঙ সকালে কালো, বিকেলে বাদামী এবং এবং রাতে হালকা শ্বেত বর্ণ ধারণ করে
তবে আজও এই রঙ পরিবর্তনের কোনো ব্যাখ্যা বা কারন জানা যায়নি|

দ্বিতীয় যে কারনে মন্দিরটি রহস্যময় এবং অলৌকিক সত্ত্বার অধিকারী তা হলো মহাভারতের অমর চরিত্র অস্বথামার উপস্থিতি।একটি জনশ্রুতি রয়েছে যে অশ্বত্থামা আজও মধ্যরাতে এই মন্দিরে পুজো করতে আসেন এবং যখন তিনি আসেন, হঠাৎ বজ্রপাত শুরু হয় এবং বৃষ্টিও হয়|স্থানীয় দের কাছে অত্যন্ত জাগ্রত ও জনপ্রিয় এই শিব মন্দির বহু দূর দূরান্ত থেকেও দর্শনার্থীরা আসেন
লিলুতিনাথ শিব মন্দিরে

শ্রদ্ধা ও ভক্তি সংক্রান্ত বিষয় গুলিকে যুক্তি দিয়ে বিচার না করাই ভালো। দেবাদিদেব মহাদেবের ইচ্ছায় সবাই সম্ভব তার লীলা বোঝা দায়, আমরা শুধু তার সামনে নিজেদের মাথা নত করতে পারি আর প্রার্থনা করতে পারি|

  1. ফিরবো আগামী পর্বে। চলতে থাকবে শিব মাহাত্ম।
    পড়তে থাকুন। ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

শিব মাহাত্ম – জলেস্বর শিব 

শিব মাহাত্ম – জলেস্বর শিব

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আজ শিব মাহাত্মতে বাংলার আরেকটি প্রাচীন এবং প্রসিদ্ধ শিবমন্দিরের কথা আপনাদের বলবো।আজকে পর্ব নদিয়ার জলেস্বর শিব মন্দির নিয়ে।

 

এই মন্দিরের ইতিহাস খুব প্রাচীন তবে জলেশ্বর মন্দিরে কোনও প্রতিষ্ঠালিপি নেই।তাই সঠিক দিনক্ষণ জানা যায়না তবে ‘নদিয়া গেজেটিয়ার’ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রায় চারশো বছরের প্রাচীন এই মন্দির, নির্মাণ করেছিলেন তৎকালীন নদিয়া রাজ রাঘব রায়। তাঁর রাজত্বকাল ছিল আনুমানিক ১৬৩২ থেকে ১৬৮৩ খ্রিস্টাব্দ। সেই সূত্রেই মনে করা হয় ওই সময়ের মধ্যেই মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়|

 

নদিয়ার শান্তিপুরে ‘জলেশ্বর শিব মন্দির’ বাংলার অন্যতম প্রাচীন শৈবতীর্থ। এখানে রয়েছে কষ্টিপাথরের বিশাল আকারের শিবলিঙ্গ। মন্দিরকে কেন্দ্র করে রয়েছে অসংখ্য অলৌকিক কাহিনী|শোনা যায় এক বছর খরায় চাষের কাজ বন্ধ হয়ে যায়, প্রায় দুর্ভিক্ষ হওয়ার উপক্রম,প্রচণ্ড সমস্যায় পড়ে শান্তিপুরের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ|গ্রামের চাষিরা এক শিবলিঙ্গের মাথায় প্রচুর জল ঢালেন বৃষ্টির প্রার্থনায়। অলৌকিক ভাবে তার পরেই বৃষ্টি নামে। শস্য-শ্যামলা হয়ে ওঠে ধরিত্রী। সেই থেকেই মন্দিরের নাম হয় ‘জলেশ্বর’|

 

সারা বছরই শিব ভক্তদের আনাগোনা লেগে থাকে এই মন্দিরে তবে চৈত্র মাসে এবং শ্রাবণ মাস জুড়ে এই মন্দিরে প্রচুর মানুষ পুজো দেন। পাশাপাশি শিবের মাথায় জল ঢালতেও প্রতি দিন ভক্ত সমাগম হয়। আর শ্রাবণের সোমবার গুলিতে ভক্তদের ভিড় কার্যত উপচে পড়ে|চৈত্র মাস এবং নীল ষষ্ঠীতেও এখানে বিশেষ পুজো উপলক্ষে

বহু শিব ভক্ত আসেন।এই চৈত্র মাসে আসন্ন নীল সময়ে আপনারাও পারলে অবশ্যই দর্শন করবেন জলেস্বর শিব মন্দির|

 

শ্রাবন মাস উপলক্ষে চলতে থাকবে আমার এই ধারাবাহিক অনুষ্ঠান। ফিরে আসবো পরের পর্বে।পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

শিব মাহাত্ম – জল্পেশ্বর শিব

শিব মাহাত্ম – জল্পেশ্বর শিব

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

শিব মাহাত্ম পর্বে আজ উত্তর বঙ্গের বিখ্যাত এক শিব তীর্থর কথা উল্লেখ করবো|আজকের পর্বে বিখ্যাত জল্পেশ শিব মন্দির।

জলপাইগুড়ির অন্যতম প্রসিদ্ধ শক্তি পীঠ মন্দির ভ্রামরী দেবীর মন্দির।শাস্ত্র মতে ভ্রামরী শক্তিপিঠের ভৈরব হলেন জল্পেশ। শিব এখানে একটি গর্তের মধ্যে রয়েছেন, তাই তিনি অনাদি নামেও পরিচিত।তার আদি এবং অন্ত খুঁজে পাওয়া যায়না।

পশ্চিম বঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার প্রসিদ্ধ তীর্থক্ষেত্র হল জল্পেশ মন্দির।এই মন্দিরের সুদীর্ঘ ইতিহাস আছে।কোচবিহারের মহারাজা নরনারায়ণের বাবা বিশ্ব সিংহ ১৫২৪ সালে প্রথম এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।১৫৬৩ সালে মন্দিরটি পুনর্নির্মিত হয়। পরবর্তীতে ১৬৬৩ সালে রাজা প্রাণ নারায়ণও একবার মন্দিরটি নতুন করে গড়ে তোলেন।

জল্পেশ মন্দির প্রসঙ্গে একটি ভিন্ন তত্ত্বর অস্তিত্ব রয়েছে|কিছু ঐতিহাসিক মনে করেন|জল্পেশ নামে কোনো এক প্রতাপশালী রাজবংশী ক্ষত্রিয় রাজা অথবা সর্দার এই অঞ্চলে এককালে শাসন করতেন । তাঁর নাম অনুসারে মন্দিরের নাম হয়েছে জল্পেশ।অনেকে মনে করেন হয়ত তিনি কোনো দৈব শক্তির অধিকারী ছিলেন। তাই তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁকে দেবতার স্থানে উন্নীত করা হয়েছে।
আবার অনেকে ভাবেন জল্পেশ হয়ত কোনো শক্তিশালী গ্রামদেবতা বা লৌকিক দেবতা ছিলেন পরে কোচবিহারের রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় শিবের সঙ্গে একীভূত হয়ে
তিনিই উত্তরবঙ্গের প্রধান দেবতা রূপে
স্বীকৃত হয়েছেন।জল্পেশ থেকেই জলপাইগুড়ি
নাম করণ হয়েছে বলে ধরে নেয়া হয়।

বাবা জল্পেশ্বর এর দর্শন পেতে বহু মানুষ এই স্থানে আসেন |বিশেষ করে শ্রাবন ও চৈত্র মাসে দর্শণার্থী দের ভিড় বেশি হয়। শিব রাত্রি এবং নীল ষষ্ঠীতে বিশেষ পুজো হয় এবং সব মিলিয়ে উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠেন শিব ভক্তরা |বাবা জল্পেশ পরম দয়ালু তিনি ভক্তদের মনোস্কামনা
পূর্ণ করেন বলেই বিশ্বাস।

শিব মাহাত্ম নিয়ে আবার পরবর্তী পর্বে
ফিরে আসবো।থাকবে শিব সংক্রান্ত
এমনই তথ্য সমৃদ্ধ আলোচন। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

শিব মাহাত্ম – কেশবেশ্বর শিব

শিব মাহাত্ম – কেশবেশ্বর শিব

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

সারা বাংলা জুড়ে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য শিব মন্দির। শ্রাবন মাস উপলক্ষে প্রায়

সবগুলি মন্দিরই বিশেষ সাজে সেজে ওঠে।

তেমনই একটি মন্দির দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার কেশবেশ্বর শিব মন্দির যা নিয়ে আজকের পর্বে আলোচনা করবো।

 

বিখ্যাত সাবর্ণ রায় চৌধুরী বংশের অন্যতম সদস্য ছিলেন জমিদার কেশবরাম রায় যিনি ছিলেন তৎকালীন বঙ্গ সমাজের অন্যতম গুণী ও সন্মানীয় ব্যাক্তি। কেশবরাম কাশীর বিশ্বনাথের স্বপ্নদর্শনে যে সন্তান লাভ করেছিলেন তাঁর নাম রাখেন শিবদেব, যিনি সন্তোষ রায় চৌধুরী নামে পরিচিত। কেশবরাম রায় ১৬৯৯ সালে ঔরঙ্গজেবের কাছ থেকে স্বতন্ত্র ‘রায় চৌধুরী’ খেতাব পেয়েছিলেন সেই থেকে তারা রায় চৌধুরী পদবি

ব্যাবহার করছেন।

 

ব্রিটিশ আমলে সমগ্র দক্ষিণবঙ্গের সমাজপতি কেশবরাম দক্ষিণ ২৪ পরগনার মন্দিরবাজারে যে শিবমন্দির এবং শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করে যান তার কেশবরামের নামানুসারে নাম হয় কেশবেশ্বর।

মন্দিরের গর্ভগৃহে রয়েছেন মহাদেব।লোকমুখে শোনা যায় যে কাশী থেকে আনা হয়েছিল এই শিবলিঙ্গ। শিবমন্দির প্রায় ৬০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট একটি আটচালা মন্দির। মন্দিরের ২১টি সিঁড়ির মধ্যে ১৬টি ধাপের সিঁড়ির বেশি ভাগই ইতিমধ্যেই মাটির তলায় লীন হয়েছে। সামান্য কয়টি সিঁড়ি দেখা যায়।বিশাল নন্দী মূর্তিও রয়েছে এখানে।

 

প্রায় সারা বছরই এই মন্দিরে জন সমাগম হয় তবে শ্রাবনের প্রথম সোমবার গুলি, শিবরাত্রির দিন এবং চৈত্র মাসেরশেষে নীল ষষ্ঠীর সময়ে বিশেষ পূজা হয় কেশবেশ্বর মন্দিরে।সেই সময়ে বিশাল সংখ্যক ভক্তসমাগম ঘটে এই মন্দির চত্বরে।বহু মানুষ আসেন নিজের মনোস্কামনা নিয়ে। শোনা যায় বাবা কেশবেশ্বর তার ভক্তদের খালি হাতে ফেরান না।বহু মানুষের জীবনের দুঃখ কষ্ট বাবা কেশবেশ্বর দুর করেছেন বলে জানা যায়।

 

ফিরে আসবো আগামী পর্বে। শ্রাবন মাসের এই বিশেষ কয়েকটি দিনে বাংলার প্রাচিন এবং ঐতিহ্য সম্পন্ন শিব মন্দির গুলি নিয়ে

ধারাবাহিক ভাবে আলোচনা চলতে

থাকবে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন।ধন্যবাদ।

শিব মাহাত্ম – বুধেশ্বর মহাদেব

শিব মাহাত্ম – বুধেশ্বর মহাদেব

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

শুরু হতে চলেছে পবিত্র শ্রাবন মাস। সামনেই শ্রাবনের প্রথম সোমবার। প্রতি বছরের ন্যায় গোটা শ্রাবন মাস জুড়ে থাকবে। দেশ তথা বাংলার বিখ্যাত শিব মন্দিরের কথা সাথে শিব সংক্রান্ত নানা পৌরাণিক তথ্য এবং আলোচনা। আজ শুরু করবো বুধেশ্বর মহাদেব দিয়ে।

 

ছত্তিশগড়ের রাজধানী রায়পুরে চার দিকে ভোলেনাথের অনেক বিখ্যাত শিব মন্দির রয়েছে, কিন্তু ঐতিহাসিক মন্দিরগুলির মধ্যে বুধেশ্বর মহাদেব মন্দির দেখার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।

ছত্রিশ গড়ের রায়পুরের এই শিব মন্দিরের ইতিহাস প্রায় ছয়শো বছরের পুরনো। অনেকে মনে করেন বুধেশ্বর মহাদেবের নামকরণ করা হয়েছে আদিবাসী দেবতার নামে।

 

এখানে একটি বহু প্রাচীন জলাশয় আছে। স্থানীয় আদিবাসীদের আরাধ্য দেবতা বুদ্ধদেবের নামানুসারে পুকুরটির নাম বুধতালাব। এক কালে পুকুরের পাড়ে একটি শিবলিঙ্গ ছিল এবং তার চারপাশে ভয়ঙ্কর বিষধর সাপ বাস করত এবং শিবলিঙ্গের চারপাশে সাপগুলি সর্বদা আবৃত থাকত। বুধতালাবের তীরে থাকায় শিবলিঙ্গটির নাম হয় বুধেশ্বর মহাদেব। পরবর্তীতে স্থানীয় আদিবাসিদের উদ্যোগে পুকুরের পাড়ে একটি ছোট মন্দির তৈরি করে শিবলিঙ্গকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। বুধেশ্বর মন্দিরে দুশো বছরের পুরনো একটি বটগাছ রয়েছে।

 

শ্রাবন মাসে ভক্তরা আসেন মহাদেবকে জল অর্পণ করতে তাছাড়া মহাশিবরাত্রির সময়ে অসংখ্য

ভক্ত এই মন্দির দেখার জন্য ভিড় করেন।মহাশিবরাত্রির সকালে শিবলিঙ্গে ভস্ম আরতি করা হয়।বহু নারী এখানে ছুটে আসেন বট সাবিত্রী ব্রত পূজা করতে।সব মিলিয়ে শ্রাবন মাসে বুধেশ্বর মহাদেব প্রাঙ্গন উৎসবের আকার নেয়।

 

ফিরে আসবো পরের পর্বে। সঙ্গে থাকবে

নতুন এক শিব মন্দিরের কথা পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

গুরু মাহাত্ম – তোতাপুরী মহারাজ

গুরু মাহাত্ম – তোতাপুরী মহারাজ

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

আজ ভারতের মহান আধ্যাত্মিক গুরুদের নিয়ে এই ধারাবাহিক লেখনীতে লিখবো ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণদেবের দীক্ষা গুরু তোতাপুরী মহারাজের কথা।

তোতাপুরীর সন্ন্যাস পূর্ব জীবন,তার জন্ম কাল জন্মস্থান ও পরিবার সম্পর্কে সঠিক তথ্য কমই পাওয়া যায়।

তোতাপুরী লম্বা-চওড়া সুদীর্ঘ পুরুষ ছিলেন।দীর্ঘ সময় ধ্যান ও যোগ সাধনার মাধ্যমে তিনি সাধনার অত্যন্ত উচ্ছ পর্যায়ে আরোহন করেছিলেন, পুরী সম্প্রদায় ভুক্ত এই নাগা সন্ন্যাসী ছিলেন অলৌকিক শক্তির অধিকারী।

তোতাপুরী তিন দিনের বেশি কোথাও থাকতেননা কিন্তু ব্যতিক্রম হয়েছিলো দক্ষিনেশ্বর এসে|এখানে বেশ দীর্ঘ সময় তিনি কাটিয়েছিলেন রামকৃষ্ণর সান্নিধ্যে|গুরুর নাম গ্রহণ করা শাস্ত্রমতে বারণ তাই শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁকে ‘ল্যাংটা’ বা ‘ন্যাংটা’ বলে উল্লেখ করতেন|গঙ্গার ধারে পঞ্চবটি উদ্যানে ধুনী জ্বালিয়ে তিনি সাধনা করতেন এখানেই তার কাছে দীক্ষা নিয়ে নিয়ে ছিলেন স্বয়ং রামকৃষ্ণ আবার আশ্চর্য জনক ভাবে ঠাকুরের অলৌকিক ক্ষমতা ও তার অগাধ জ্ঞানের পরিচয় পেয়ে গুরু তোতাপুরী বিদায় নেয়ার আগে শিষ্য রামকৃষ্ণর কাছে দীক্ষা নিয়ে যান। ভারতের গুরু শিষ্য পরম্পরার ইতিহাসে এ এক ব্যাতিক্রমী ঘটনা।

তোতাপুরীর মতে সকলই ছিল মায়া। দেব-দেবীর মূর্তিপূজাকেও তিনি উপহাস করতেন। বিশ্বাস করতেন এক ও অদ্বিতীয় ব্রহ্মে কিন্তু রামকৃষ্ণ তার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দেন, এক্ষেত্রে এক অলৌকিক ঘটনার ও উল্লেখ পাওয়া যায়, একবার দক্ষিনেশ্বরে থাকা কালীন পেটের যন্ত্রনায় কাবু তোতাপুরী গভীর রাতে গঙ্গায় প্রান বিসর্জন দিতে গিয়ে দেখলেন কোথাও ডুবজল নেই, হেঁটেই পার হওয়া যায় গঙ্গা, তিনি উপলব্ধি করলেন ভবতারিনীর লীলা, সাক্ষাৎ করলেন স্বয়ং মা জগদম্বাকে, শরীরের সব যন্ত্রনা মুহূর্তে গায়েব হয়ে গেলো|
শিষ্য কে বললেন সব কথা মেনে নিলেন মায়ের উপস্থিতি|মেনে নিলেন ঠাকুর রামকৃষ্ণের শ্রেষ্ঠত্ব তারপরই পাল্টা দীক্ষাও নিলেন তাঁর কাছে।

যেহেতু তোতাপুরী ছিলেন পুরী সম্প্রদায়
ভুক্ত তাই আজও রামকৃষ্ণ মিশন এবং মঠের সাধু সন্ন্যাসীরা পুরী সম্প্রদায় ভুক্ত সন্ন্যাসী হিসেবে
গণ্য হন।

আজকের পর্ব এই মহান সাধককে প্রনাম জানিয়ে শেষ করলাম। গুরু মাহাত্ম নিয়ে ফিরে আসবো আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

গুরু মাহাত্মা – আদি গুরু শংকরাচার্য্য

গুরু মাহাত্মা – আদি গুরু শংকরাচার্য্য

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

শাস্ত্র মতে সনাতন ধর্মের অভিভাবক এবং রক্ষক। আদি গুরু শংকরাচার্য্য। ভারতীয় গুরু শিষ্য পরম্পরা তার দেখানো পথেই অগ্রসর হয়েছে।আজকের পর্ব আদি শংকরাচার্য্যকে নিয়ে।

 

আদি গুরুর পিতার নাম শিবগুরু ও মায়ের নাম আর্যাম্বা|কথিত আছে ত্রিশূরের বৃষভচল শিবমন্দিরে পুত্রকামনা করে পূজা দিয়ে আশীর্বাদ স্বরূপ শংকরকে পেয়ে ছিলেন তাঁরা।

তিনি মাত্র আট বছর বয়সে তিনি চারটি বেদ আয়ত্ত্ব করে ফেলেন অতি সহজে|অল্প বয়সে পিতৃ বিয়োগের পর চরম আর্থিক দুর্দশার

সম্মুখীন হতে হয় তাকে|

 

কৈশোর থেকেই শঙ্করের ইচ্ছে ছিলো সন্ন্যাস নেয়ার কিন্তু মা রাজি ছিলেন না পরবর্তীতে তাকে রাজি হতে হয়,এ নিয়েও আছে এক অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ|একবার বালক শংকর পূর্ণা নদীতে স্নান করছিলেন। এমন সময় একটি কুমির তার পা কামড়ে ধরে। শঙ্করের মা তখন সেখানেই উপস্থিত ছিলেন|তিনি মা-কে বলেন, মা যদি সন্ন্যাস গ্রহণের অনুমতি দেন, তাহলে কুমিরটি তার পা ছেড়ে দেবে। ছেলের প্রাণ বাঁচাতে মা তাকে সন্ন্যাস গ্রহণের অনুমতি দিলেন|কুমির ও সাথে সাথে পা ছেড়ে অদৃশ্য হলো|এরপর সন্যাস নিয়ে গৃহ ত্যাগ করলেন শঙ্করাচার্য্য|গুরুর খোঁজে বেড়িয়ে পড়লেন পথে|

 

দীর্ঘ সময় পদব্রজে সারা উত্তর ভারত পরিভ্রমণ করার পর অবশেষে গুরুর সাথে সাক্ষাৎ হলো|নর্মদানদীর তীরে ওঙ্কারেশ্বরে তিনি গৌড়পাদের

শিষ্য গোবিন্দ ভগবদপাদের শিষ্যত্ব গ্রহন করলেন শঙ্করাচার্য্য|গুরু শঙ্করাচার্য্যকে অদ্বৈত মত প্রচার করতে বলেন|পরবর্তীতে তিনি কাশী,বদ্রিনাথ সহ বহু স্থানে ঘুরে বেড়ান|অসংখ্য ভাষ্য ও গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেন এবং তার পাশাপাশি চালিয়ে যান

অদ্বৈতবাদের প্রচার|এই সময় অসংখ্য অনুগামী ও ভক্ত তার সংস্পর্শে আসেন ও তার শিষ্যত্ব গ্রহন করেন|বহু ধর্মীয় বিতর্কে অংশগ্রহন করে সেকালের ধর্মজগতের বহু সনামধন্য পন্ডিতকে শাস্ত্র আলোচনায় পরাস্ত করে শংকরাচার্য্য হয়ে ওঠেন এক অতি পরিচিত কিংবদন্তী স্বরূপ|মনে করা হয় কাশীতে বিশ্বনাথ মন্দিরদর্শন করতে যাওয়ার সময় স্বয়ং শিব এক চন্ডাল রূপে

তাকে দর্শন দিয়ে ছিলেন|

 

শঙ্করাচার্য্য সারাটা জীবন ধরে অদ্বৈতত্ত্বের প্রচার করে বেদ বিমুখী সমাজকে আবার বেদান্তের পথে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন| শঙ্করাচারজ্যর অদ্বৈত ত্বত্ত্বের মূল কথা ছিল- ব্রহ্ম সত্য, জগৎ মিথ্যা। জীব ও ব্রহ্মে কোনো প্রভেদ নেই|অর্থাৎ, জীব ও ব্রহ্মকে এক ভাবাই অদ্বৈতবাদ।সকল জীবের অভ্যন্তরে যে আত্মা বিরাজমান, তা পরমাত্মারই প্রকাশ। এ তত্ত্বে জীবাত্মা ও পরমাত্মা এক|

 

শঙ্করাচার্য্য দেশের চার প্রান্তে চারটি মঠ প্রতিষ্ঠা করেন|পুরী, জোশীমঠ, দ্বারকা এবং শৃঙ্গেরী।

আজও এই পরম্পরা মেনে চারটি মঠের প্রধান অর্থাৎ চারজন শঙ্করাচার্য্য পদাধিকারী সনাতন ধর্মের কল্যানে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছেন সর্বদা|চার টি মঠের একেটির অধীনে একেকটি বেদ কে রাখা হয়েছে।

 

সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা এবং সম্প্রদায়কে এক সূত্রে গেথে সনাতন ধর্মকে একটি নিরাপদ এবং মজবুত ভিত্তি প্রদান করতে মহাদেব স্বয়ং আদি শঙ্করাচার্য্য রূপে পৃথিবীতে এসেছিলেন। তিনিই আদি গুরু। তার দেখানো পথেই এগিয়েছে সনাতন ধর্মের ঐতিহ্য।

 

গুরু মাহাত্ম আজ এখানেই শেষ করলাম। তবে গুরু পূর্ণিমা উপলক্ষে ভারতের আধ্যাত্মিক গুরুদের সাধনা এবং তাদের জীবনী নিয়ে আবার পরবর্তী পর্বে ফিরে আসবো। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

গুরু মাহাত্ম – শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর

গুরু মাহাত্ম – শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

গুরু মাহাত্মর আজকের উপস্থিত হয়েছি এক মহান আধ্যাত্মিক গুরুর জীবন কাহিনী নিয়ে|আজকের পর্বে শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর কে নিয়ে।

অবিভক্ত বাংলার গোপালগঞ্জ জেলায়
যশোমন্ত ও অন্নপূর্ণা দেবীর গৃহে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন কলি যুগের এই অন্যতম শ্রেষ্ট মহাপুরুষ|তাঁর পরিবার ছিলো নিষ্ঠাবান বৈষ্ণব পরিবার|ফলে শৈশব থেকেই শাস্ত্র পাঠ ও ধর্ম আলোচনার প্রতি তার এক গভীর আগ্রহ ও নিষ্ঠা
বর্তমান ছিলো|যত বয়স বাড়তে লাগলো শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের মধ্যে এক ঐশরিক শক্তির বিকাশ হতে থাকলো|যথাযত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই তিনি একজন জ্ঞানী শাস্ত্রজ্ঞ ও বৈষ্ণব শাস্ত্রে অগাধ পান্ডিত্যের অধিকারী হয়ে উঠেছিলেন|
মূলত প্রেম-ভক্তির কথা সহজ-সরলভাবে প্রচার করতেন তিনি|

পরবর্তীতে তার প্রচলিত সাধন পদ্ধতি মতুয়াবাদ রূপে ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে|তিনি মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রান পুরুষ|সারা জীবন তিনি উৎসর্গ করেন মতুয়া আদর্শের প্রচারে এবং প্রসারে|তিনি মনে করতেন ঈশ্বর প্রাপ্তির জন্য সন্ন্যাস নেয়ার প্রয়োজন নেই অন্তরে শ্রদ্ধা ও ভক্তি থাকলে এবং নিষ্ঠা সহকারে ঈশ্বর চিন্তা করলে গৃহীরও ঈশ্বর লাভ সম্ভব|নানা শ্রেণী ও জাতি তে বিভক্ত হিন্দু সমাজ কে তিনি ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছিলেন মতুয়াবাদের দ্বারা|তৎকালীন হিন্দু সমাজের অসংখ্য নিপিড়িত, দরিদ্র ও তথা কথিত নিম্ন শ্রেণীর মানুষ দের তিনি পরম স্নেহে বুকে টেনে নিয়েছিলেন এবং তাদের সার্বিক উন্নতি সাধনই ছিলো তার জীবনের প্রধান লক্ষ্য|

আজ দেশে বিদেশে ছড়িয়ে থাকা কোটি কোটি মতুয়াদের কাছে  শ্রী শ্রী হরিচাঁদ চাঁদ ঠাকুর কলি যুগের শেষ এবং শ্রীহরি-র পূর্ণ অবতার|যথার্থ অর্থেই তিনি পতিতপাবন|

শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের মহা প্রয়ানের পর তার পুত্র শ্রী শ্রী গুরুচাঁদ ঠাকুর মতুয়া সমাজের উন্নতি সাধনে ব্রতী হন|আজও বংশ পরম্পরার শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরহরিচাঁদ ঠাকুরের সুযোগ্য বংশধরেরা মতুয়া সমাজ কে নেতৃত্ব দান করে চলেছেন|

আজ অসংখ্য মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁরঠাকুরবাড়ি ও মতুয়া ধাম একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

প্রনাম জানাই এই মহান আধ্যাত্মিক গুরু এবং পরম ব্রহ্ম স্বরূপ আধ্যাত্মিক ব্যাক্তিত্বকে।
আবার ফিরে আসবো গুরু মাহাত্ম নিয়ে যথা সময়ে। পড়তে থাকুন। ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

গুরু মাহাত্ম – শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র 

গুরু মাহাত্ম – শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র

 

পন্ডিতজি ভৃগুর শ্রী জাতক

 

আগামী সপ্তাহে গুরু পূর্ণিমা। এই পবিত্র আধ্যাত্মিক উৎসব উপলক্ষে গুরু তত্ব নিয়ে বা জগৎ বিখ্যাত গুরুদের বলা এক অনন্য সাধারণ অনুভূতি যে অনুভূতি আপনাদের সাথে প্রতিবার ভাগ করে নিই। এবারের গুরু পূর্ণিমা পর্ব শুরু করবো আমার অন্যতম প্রিয় আধ্যাত্মিক গুরু ঠাকুর শ্রী অনুকূল চন্দ্রকে দিয়ে

 

জন্ম সূত্রে আমার পরিবার ওপার বাংলার অর্থাৎ অধুনা বাংলাদেশ|পারিবারিক সূত্রেও আমরা অনুকূল ঠাকুরের আশীর্বাদধন্য কারন আমার নিজের বড়োমামা ছিলেন স্বয়ং ঠাকুরের ছায়া সঙ্গী ও তার একজন একনিষ্ট ভক্ত|সেই সূত্রে ছোটো থেকেই ঠাকুরের মহিমাশুনে বড়ো হওয়া| তাঁর আধ্যাত্মিক শক্তির উপর আস্থা ও শ্রদ্ধা সেই সময় থেকেই পরবর্তীতে জীবনের এক কঠিন সময়ে অনুকূল ঠাকুরের অনুগত হয়ে দীক্ষিত হই|আশ্চর্য ভাবে দীক্ষা গ্রহনের পর থেকেই জীবনে ভালো সময় আসতে শুরু করলো|অন্ধকার কাটিয়ে আলোয় ফিরলাম, সকল দিক দিয়েই সফল হলাম জীবনে|একে ঠাকুরের মহিমা ছাড়া আর কিবা বলি|আজও ঠাকুরের প্রতিকৃতি বিরাজমান আমার গৃহ মন্দিরের সিংহাসনে|আজও প্রতিটা দিন তাঁর কাছে প্রার্থনা করে আমার দিন শুরু হয়|

 

অনুকূলচন্দ্র চক্রবর্তী ১৮৮৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের পাবনা জেলার হিমায়তপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন|তাঁর পিতার নাম শিবচন্দ্র চক্রবর্তী এবং মাতার নাম ছিলো মনমোহিনী দেবী|

হিমায়তপুর গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাঁর শিক্ষা জীবন শুরু হয় পরে নৈহাটী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে স্কুল জীবনের পড়া শেষ করে তিনি কলকাতা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন|

 

অনুকূল চন্দ্রের ছিলো উত্তর ভারতের যোগীপুরুষ শ্রী শ্রী হুজুর মহারাজের শিষ্য তবে ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র মায়ের কাছেই দীক্ষা গ্রহন করেন|কঠোর পরিশ্রম ও দক্ষতার সঙ্গে তিনি জীবনে এগিয়ে চলেন, অনুকূলচন্দ্র ছিলেন একাধারে কবি, লেখক, ডাক্তার ও সর্বোপরি এক আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় গুরু|তিনি ছিলেন হিন্দু সমাজের একজন মহাপুরুষ, বিশ্ব মানবতাবাদী এবং পরম কৃষ্ণ ভক্ত।সারা জীবন তিনি চেষ্টা করে গেছেন কি ভাবে মানুষ ভাল থাকবে, সুস্থ থাকবে, শান্তিপূর্ণ ভাবে সবাই মিলে মিশে থাকবে|সেজন্য ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র সব সময় চাইতেন, তার অনুসারিরা সব সময় কৃষ্ণ ভক্তির পথে থাকুক|তাঁর এই দর্শন ও আদর্শ সাফল্যের সাথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তাঁর পরিবার ও অগণিত ভক্ত শিষ্যরা|

 

লোক শিক্ষার জন্য অনুকূলচন্দ্র ঠাকুর প্রায় ৪৬টি পুস্তক রচনা করেন|এগুলোতে ধর্মশিক্ষা, সমাজ সংস্কার প্রচলন প্রভৃতি বিষয়ে আদর্শ ও উপদেশসমূহ বর্ণিত হয়েছে|এগুলি ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রে অত্যান্ত গুরুত্ব পুর্ন গ্রন্থ হিসেবে সর্বত্র সমাদৃত |বই গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য, সত্যানুসরণ, পুণ্যপুথি, অনুশ্রুতি, চলার সাথী, শাশ্বতী, বিবাহ বিধায়না,সমাজ সন্দীপন ইত্যাদি|

 

পাবনা শহরের কাছে হেমায়েতপুর গ্রামে শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন সৎসঙ্গ আশ্রম ও মন্দির যা আজ লক্ষ লক্ষ ভক্ত শিষ্যর কাছে এক মহান তীর্থ ক্ষেত্র|1946 সালে অনুকূল ঠাকুর পাবনা থেকে দেওঘর আসেন ও দেওঘর আশ্রম তৈরি করেন|এই দেওঘরেই 1969 সালে ঠাকুর পরলোক গমন করেন|আজ এই আশ্রম ও ঠাকুরের সংগ্রহশালা দেও ঘরের মুখ্য আকর্ষণ হয়ে উঠেছে|

 

আমার পরম পূজনীয় গুরুকে প্রনাম ও শ্রদ্ধা জানিয়ে এই পর্ব শেষ করলাম|তবে চলবে আমার এই ধারাবাহিক লেখা গুরু পূর্ণিমা অবধি পড়তে থাকুন। ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।

জগন্নাথদেবের উল্টো রথের শুভেচ্ছা 

জগন্নাথদেবের উল্টো রথের শুভেচ্ছা

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আজ উল্টো রথ।বাস্তবে রথ যাত্রা ঠিক একদিনের উৎসব নয়। আসলে রথ যাত্রার সূচনা হয় দেবস্নান পূর্ণিমায় প্রভু জগন্নাথের স্নানের মধ্যে দিয়ে আর শেষ হয়উল্টো রথ যাত্রার দিনে।

 

জনশ্রুতি আছে এই দিন মন্দিরে ঢুকতে গেলেই লক্ষ্মী দেবী সটান মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেন কারণ তিন ভাইবোন মাসির বাড়ি থেকে আনন্দ করে এসেছেন অথচ তাঁকে নিয়ে যাননি। অভিমানী লক্ষ্মী দেবী এই কয়দিন একা একা শ্রীমন্দিরে ছিলেন। সেই থেকে তিন দিন এরকম ভাবেই বাইরে থাকে রথ সহ বিগ্রহ। এই তিন দিন পালিত হয় কিছু অনুষ্ঠান তারপর মহালক্ষীর মান ভঞ্জন হলে পুনরায় মন্দিরের রত্ন বেদিতে স্থান পান জগন্নাথ শুভদ্রা এবং বলরাম।

 

একাধিক শাস্ত্রীয় উপাচার আছে এই উল্টো রথ নিয়ে।সাধারণত উল্টো রথে যখন জগন্নাথ ফিরে আসেন এই যাত্রাকে বহুদা যাত্রা বলা হয়। এরপর আছে অধরপানা এবং নীলাদ্রি বিজয়। অধরপানায় জগন্নাথকে বিশেষ পানীয় পান করানো হয়। সেটাকে ঘিরেও উৎসব হয় । এর পরদিন নীলাদ্রি বিজয় উৎসব হয়। এক হিসেবে এই দিনেই রথযাত্রা শেষ হয়।

 

উল্টো রথ উপলক্ষে প্রভু জগন্নাথ

সহ সুভদ্রা-বলরাম ও সেজে ওঠেন নানা সোনার

গয়নার সাজে।এই বেশ কে সোনা বেশ বলা হয়।

মন্দিরে ফিরলে জগন্নাথদেবের উদ্দেশ্যে

নিবেদন করা হয় কয়েকশ হাড়ি রসগোল্লা নানা রকম মিষ্টান্ন সর্বশেষে নীলাদ্রিবিজয় উৎসবের

মাধ্যমে শেষ হয় এই সমস্ত রীতি -রেওয়াজ এবং তার পর জগন্নাথ-সুভদ্রা-বলরাম কে মন্দিরের

মূল রত্নবেদি-তে তোলা হয়।

 

আপনাদের সবাইকে উল্টোরথ যাত্রার অনেক শুভেচ্ছা। ফিরে আসবো আগামী পর্বে ধারাবাহিক শাস্ত্রীয় ওব পৌরাণিক নানা বিষয় নিয়ে

আলোচনা নিয়ে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।